Free Essay

Ghost Stories

In:

Submitted By fuad1012
Words 251886
Pages 1008
।। ভূত, প্রেত, অশরীরী, আত্মা, নিয়ে কিছু কথা ।। by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, July 26, 2011 at 7:39pm
ভূত, ইংরেজীতে Ghost, যার উৎপত্তি পুরাতন জার্মান ভাষায় gaistaz শব্দ থেকে। এর অর্থ রাগ,ভয়। সুদুর অতীত থেকে ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ হিসেবে জ্বীন-ভুত-শয়তান পরিচিত। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে লোকগল্প সবকিছুতেই ভুত শব্দটা একটা ভয়ের শিহরণ জাগানো আমেজ নিয়ে আসে। এই উপমহাদেশে ভুত বলতে অতৃপ্ত আত্মাকে বুঝি। কোন কারনে কোন ব্যাক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সে ভুত হয়ে যায়,এই আমাদের বিশ্বাস। বিভিন্নক্ষেত্রে ভুতের বিশ্বাসগুলি - মেসোপটমিয়া- মৃত্যুর পর মানুষের স্মৃতি আর ব্যাক্তিত্ব যখন দেবতার কাছে চলে যায়,তখন সে ভুত হয়ে যায়। তাদের খাদ্য-পানীয় দিয়ে খুশী করতে হত,নয়তবা জাতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। মিশর- প্রাচীন মিশরীয়রা একেবারে মৃত্যুকে মানত না। প্রথমবার মৃত্যুকে তারা আফটার লাইফ বলত। পূনর্বার মৃত্যু যদি তারা কামনা করে তবেই সম্পূর্ন মৃত্যু হত। আফটার লাইফে মৃতের আত্মাকে ভুতের সাথে কল্পনা করা যায়। ফারাও Akhenaten পূর্ণমৃত্যু কামনা করে নাই,তাই সে ভুত। আধুনিক মিশরিয়রাও তার ভুতের দেখা পেয়েছে বলে দাবী করে। গ্রীস- হোমারের অডেসি আর ইলিয়ডে ভুতকে বাষ্পের মত মিলিয়ে যাওয়া অপার্থিব বস্তু হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।
মেডিভেল ইংল্যান্ড- মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে এই ভুত আর ভুতের আছর নিয়ে অনেক রোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা রয়েছে। ডাইনী হত্যা নামক আনুষ্ঠানিক ভাবে অসংখ্যক নারী-পুরুষকে হত্যার প্রমান পাওয়া যায়। আমরা এইবার ভারতীয় উপমহাদেশের ভুত নিয়ে কথা বলি- ভুত-প্রেত এক স্বতন্ত্র জাতি বিশেষ। বলা হয় যে মরার পর মানুষ তার কর্মফল অনুযায়ী ভুত বা অশরীরী আত্মা হয়ে দেখা দেয়। এদের নিজেদের কোন চেহারা থাকেনা আর তাই যেকোন আকারে দেখা দিতে পারে। এমনিতে চোখে দেখা না গেলেও ভুতেরা যেকোন জায়গায় দেখা দিতে পারে আবার অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। প্রচলিত বিশ্বাস হল যে ভুত-পেত্নীরা সবাই বাস করে ভাঙ্গা বাড়িতে, স্মশান-গোরস্থান,পুরাতন পুকুর , নিঝুম জায়গায়, বট-তেতুল-শ্যাওড়া গাছে । আমাদের মধ্যে এই বিশ্বাসও প্রচলন যে,স্মশানে না পূড়লে বা জানাজা না করা হলে মৃত ভুত হয়ে বিচরণ করে।আমাদের দেশে আমাবশ্যার রাতে ভুতদের ঈদের দিন মনে করা হয়।এর জন্যই আমাবশ্যা নিয়ে এত ভয় আমাদের মনে। আমাদের লোকগাথায় যেসব ভুতের কথা বলা হয়- শাকচুন্নি: এটি একটি পেত্নী। অল্পবয়সী, বিবাহিত মেয়ে অপঘাতে মারা গেলে শাকচুন্নিতে পরিণত হতে পারে। শুভ্র কাপড় পরিহিত শাকচুন্নি মূলত জলাভূমির ধারে গাছে বাস করে এবং সুন্দর তরুণ দেখলে তাকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলে। কখনো কখনো সে তরুণকে জলাভূমি থেকে মাছ ধরে দিতে বলে। কিন্তু সাবধান, শাকচুন্নিকে মাছ দেয়া মানে নিজের আত্মা তার হাতে সমর্পণ করা! চোরাচুন্নি: দুষ্ট ভূত, কোনো চোর মারা গেলে চোরাচুন্নি হতে পারে। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে। বাড়িতে এদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য গঙ্গাজলের ব্যবস্থা আছে। মেছোভূত: মাছলোভী ভূত। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এটি তার পিছু নেয় এবং নির্জন বাঁশঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়। পেঁচাপেঁচি: দেখতে পেঁচার মত এবং জোড়া ভূত—একটি ছেলে, অন্যটি মেয়ে। গভীর জঙ্গলে মানুষ প্রবেশ করলে এরা পিছু নেয় এবং সুযোগ বুঝে তাকে মেরে ফেলে। মামদো ভূত: হিন্দু বিশ্বাস মতে, এটি মুসলমান আত্মা। ব্রহ্মদৈত্য: ব্রাহ্মণের আত্মা, সাদা ধুতি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এরা সাধারণত পবিত্র ভূত হিসেবে বিবেচিত। বলা হয়ে থাকে, কোনো ব্রাহ্মণ অপঘাতে মারা গেলে সে ব্রহ্মদৈত্য হয়। এছাড়া পৈতাবিহীন অবস্থায় কোনো ব্রাহ্মণ মারা গেলেও ব্রহ্মদৈত্য হতে পারে। এরা কারো প্রতি খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়, কিন্তু কারো প্রতি নাখোশ হলে তার সমূহ বিপদ। দেবদারু গাছ কিংবা বাড়ির খোলা চত্বরে বাস করে। স্কন্ধকাটা বা কন্ধকাটা: মাথাবিহীন ভূত। অত্যন্ত ভয়ংকর এই ভূত মানুষের উপস্থিতি টের পেলে তাকে মেরে ফেলে। কোনো দুর্ঘটনায়, যেমন রেলে কারো মাথা কাটা গেলে, সে স্কন্ধকাটা হতে পারে। ভয়ংকর হলেও, মাথা না থাকার কারণে স্কন্ধকাটাকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। আলেয়া: জলাভূমির গ্যাসীয় ভুত। এরা জেলেদেরকে বিভ্রান্ত করে, জাল চুরি করে তাদের ডুবিয়ে মারে। কখনো কখনো অবশ্য এরা জেলেদেরকে সমূহ বিপদের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকে। নিশি: খুব ভয়ংকর ভূত। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে, কিন্তু নিশি গভীর রাতে মানুষের নাম ধরে ডাকে। নিশির ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে, আর কখনো ফিরে না। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে।
কানাখোলা: গভীর নির্জন চরাচরে মানুষকে পেলে তার গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এই ভূত। মানুষটি তখন পথ হারিয়ে বার বার একই জায়গায় ফিরে আসে, এবং এক সময় ক্লান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। শেয়ার করেছেনঃ Razib Chandra Datta

।। এক অচেনা বৃদ্ধের কাহিনী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, July 26, 2011 at 7:57pm
৪দিন আগের ঘটনা।। আমাদেরই পরিচিত একজন লোক।। উনি গ্রামের পৌরসভায় কাজ করেন।। নিজের বাড়ি দূরে হওয়ায় রাতে পৌরসভার গেস্ট রুমেই থাকেন।। ৪দিন আগে হটাত রাত ১০:৩০ এর দিকে তাঁর ঘুম চলে আসে।। কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর হটাত উনার ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো কান্নার আওয়াজ শুনে।। উনি ঘুম থেকে উঠে ভাবেন হয়তো রাত ১১-১২তার মাঝে বাজে এবং কেও বিপদে পরে পৌরসভার মাঝে এসে কান্নাকাটি করছে।। কিন্তু নিজের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলেন রাত তখন প্রায় ৩টা।। তবুও তিনি সাহস করে দরজা খুলে বারান্দা/ ব্যালকনি দিয়ে নিছে তাকিয়ে দেখলেন এক বৃদ্ধলোক নিচে বসে আছে।। বয়স ৭০-৭৫ হবে।। বৃদ্ধ খুব কান্নাকাটি করছিলেন আর একটা পাঁটের ব্যাগে কিছু ঢুকাচ্ছে।। পাঁটের ব্যাগে ঠিক কি ঢুকাচ্ছিলেন টা লোকটি দেখতে পাননি।। বৃদ্ধ কান্না করতে করতে হটাত হটাত বলছিলেন, “ওরা আমার সবকিছু নিয়ে ফেলল।। এখন আমার ছেলেমেয়েদের কি হবে??” লোকটি প্রায় ১ ঘণ্টা দাড়িয়ে বৃদ্ধ কে দেখলেন।। এর মাঝে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং খুব ভালোই বৃষ্টি পড়ছে।। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটি বৃষ্টির পানিতে একদমই ভিজছে নাহ।। এমনকি, তাঁর সাদা পাঞ্জাবি, সাদা দাড়ি কিছুই ভিজছে নাহ।। লোকটি আরও অবাক হয়ে দেখলেন, বৃদ্ধর চোখ, চেহারা, মুখ যেনও মাঝে মাঝেই চেঞ্জ হচ্ছিল।। ঠিক ৪টায় যখন মাইকে আজান দেয়ার আওয়াজ হল তখন সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকটি গায়েব হয়ে জান।। লোকটি চারদিকে তাকিয়ে খুঁজেও বৃদ্ধকে আর কোথাও দেখতে পেলেন নাহ।। শেয়ার করেছেনঃ Shada Canvas (25th July)

।। আবারো নিশির ডাক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, July 26, 2011 at 9:01pm
আমি যেই গল্পটা শেয়ার করতে যাচ্ছি তা একদম সত্যি ঘটনা।। আমার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এটি।। বিশ্বাস করবেন কি
না করবেন তা আপনার ব্যাপার, কিন্তু আমি একবিন্দুও বাড়িয়ে বলছি নাহ।। কাহিনীটা বেশীদিন আগের নয়।। এক মাসের মত হবে।। আমি গত এক বছর যাবত ঢাকায় আছি।। আগে আমাদের হোমটাউন লক্ষিপুরে থাকতাম।। ঢাকায় আসার পর মায়ের সাথে দিনে আমার প্রায় ১০-১৫ বার ফোনে কথা হয়।। এর মাঝে একদিন সকালে মা ফোনে ঘটনাটা জানালো।। মা রাতে ঘুমুতে গিয়েছে ১১টার দিকে।। গভীর রাতে কিছু একটা শব্দ শুনে মার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। তখন খুব সম্ভবত রাত ৩টা বাজে।। মা পরিষ্কার শূনতে পেলো, আমি তাকে ডাকছি।। মা কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলো।। এরপর মা শুনতে পেলো, আমি আমাদের গেটটা ধরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছি।। মা একবারের জন্য ভাবল আমি হয়তো ঢাকা থেকে হটাৎ চলে এসেছি।। মা দরজা খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় তার মনে পড়লো যে, আজ আমার সাথে মার অনেকবার ফোনে কথা হয়েছে।। আর ফোন ছাড়া এত রাতে ৬-৭ ঘণ্টার জার্নি করে আমি কোনোদিন বাসায় আসবো নাহ।। মা একটু ভয় পেলো।। তখনো নাকি মা শুনতে পাচ্ছে যে, আমি তাকে বার বার ডাকছি।। মা ভয়ে আমাকে ফোনও দিতে পারেনি।। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে মা শুনতে পেলো যে আমি গেটে ধাক্কা দিচ্ছি আর মাকে ডাকছি।। মা আগে থেকেই জানত যে, রাতে কেউ দরজা ধাক্কা দিলে বা ডাকাডাকি করলেও নিশ্চিত না হয়ে দরজা খুলতে নেই।। কিছুক্ষন পর মা খেয়াল করলো শব্দটা বন্ধ হয়ে গেছে।। পড়ে মা একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো।। কিন্তু সারারাত সে ভয়ে ঘুমুতে পারেনি।। পরেরদিন সকালে আমাকে ফোনে মা পুরো কাহিনীটা বলে।। মায়ের গলা শুনে বুঝতে পারছিলাম যে, সে তখনো ভয় পাচ্ছে।। পুরো ঘটনা শুনে আমার কাছেও একটু আজব লাগলো।। মা খুবই সাহসী প্রকৃতির।। সিরিয়াস কিছু না হলে মা কখনই আমার সাথে শেয়ার করতো নাহ।। এই হল আমার কাহিনী।। বন্ধুরা, এটা কিন্তু একদমই সত্য ঘটনা।। আপনাদের কমেন্টে জানতে চাই কি মতামত আপনাদের।।

শেয়ার করেছেনঃ Pritom Saha

।। অলৌকিক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, July 26, 2011 at 10:44pm
আমাদের বাড়ির সামনে একটা বড় তাল গাছ।। রাস্তার উওরধারে খাল আর খালের পশ্চিম পাশে হিন্দু বাড়ি।। কথাটা আমার প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না, তখন একটা গুজব উঠলো রইদা বাবু না কি তার বউকে চার দিনের ঘুমের ওষধ খাইয়ে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে।। আর তার আত্নাটা এখন ভূত হয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।। কাউকে খালে ফেলে দিয়েছে আবার কেউ না কি দেখেছে যে ভূতটা নুপুরের তালে তালে নেচে নেচে আমাদের বাড়ির তাল গাছটার নিচ পর্যন্ত এসে আবার তার কবরের(মাটি চাপা দেয়া স্থান) কাছে ফিরে গেছে।। এই ঘটনাটি শুনার পরে আমি ঐ রাস্তা দিয়ে অনেক হেটেছি কখনো কিছু দেখিনি।। সে দিন আমার আব্বু বাজার থেকে কয়েল আনতে ভুলে গেছেন তাই আমাকে পাঠালো দোকানে।। বাজারে যাওয়ার সময় আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম।। তখন বর্ষা কাল ছিল রাস্তায় কাদা ছিল তাই মানুষ একপাশ দিয়ে হাটতে গিয়ে ঐ হিন্দু মহিলার কবরের উপর দিয়ে হাটা শুরু করেছে।। যাই হোক আমি দোকান থেকে ফিরছি রাত আনুমানিক ৯-১০টার মধ্যে ঐ কবরটা আমি অনেক পিছনে রেখে এসেছি।। কিন্তু আমি আমাদের বাড়ির দিকে ঢুকব, এমন অবস্থায় আমি হাতের লাইটটা সামনের দিকে মারলাম, হঠাৎ আমার পুরা শরীর প্রচন্ড একটা ঝাঁকুনি দিলো।। আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো।। আমার হাতে এতটুকু শক্তি ছিল না যে আমি লাইটটা জ্বালাবো।। আমার দুই চোখ আধার হয়ে গেলো।। কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে আছি।। একটু পরে দেখলাম মোটামুটি শক্তি পাচ্ছি।। এবার জোরে একটা দোড় দিয়ে বাড়ি গেলাম।। দেখলাম, আমার মা উঠনে কি যেন করছে।। আমি তার পাশে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম।। এরপর কি হলো আমি জানিনা।। সকালে উঠে রাতের কথা মনে পড়লো।। আমি রাতের যখন সামনের দিকে লাইটটা মেরেছিলাম তখন দেখছিলাম তাল গাছের নিচে সাদা কাপড় পড়া এক মহিলা দাড়িয়ে।। এর পর থেকে রাতে একা হাটার সাহসটাই হারালাম।।

শেয়ার করেছেনঃ Omar Faruqe

।। নামাজের ডাক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, July 26, 2011 at 11:54pm
আমার বড় বোন একদিন ঘুমানোর সময় আমাকে বললঃ “নিলয়, রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য আমাকে ডাক দিয়ো।।” উত্তর দিলামঃ “আমি নিজে উঠলে ডেকে দিবো।।” কারন গত রমজান মাসের পর শেষ কবে তাহাজ্জুদ পড়েছি মনে নেই।। যাই হোক, সে রাতেও তাহাজ্জুদ পড়া হল না।। তবে আপু সকালে হাসতে হাসতে বলল, আমি ডাক দেয়ার পর সে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।। “আমি কখন ডাক দিলাম??” প্রশ্ন করতেই আপু উত্তর দিলো, সে ভুল দেখেনি।। আপু আমাকেই দেখেছে এবং আমারই গলার আওয়াজ শুনেছে।। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ডাক দেইনি।। আপুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।। আমারও।। হেলুসিনেসন, ঘুমের ঘোরে ভুল দেখা জা ইচ্ছে বলুন, আমার বিশ্বাস ঐ বালক, যে আপুকে নামাজের জন্য ঐদিন ডেকে দিয়েছিলো, সে আল্লাহর ফেরেস্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।। শেয়ার করেছেনঃ Niloy Arman

।। কলিং বেল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, July 27, 2011 at 12:13am
ঘটনাটা ২০০০ সালের।। আমরা যে বাসায় থাকি তার উপর তলায় আমার আব্বুর কলিগ থাকত।। প্রতিরাতে প্রায় ২ কি ৩ টার সময় আংকেল টার বাসায় কলিংবেল বাজত।। “কে কে” করে জিজ্ঞাসা করলে কোন জবাব আসত না।। তো একদিন তিনি আব্বুকে ব্যাপারটা জানালেন।। আব্বু ঘটনা শুনে আংকেলকে আসস্ত্ব করলেন যে এটা তার শোনার ভূল।। যাই হোক, সেদিন রাতে আব্বু রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়ার সময় আমাদের উপর তলায় বেল বাজার আওয়াজ পান [গভীর রাতের সময় তা স্পষ্ট শোনা গিয়েছিল]।। তো আব্বু আস্তে করে আমাদের দরজা খুলে যেই মাত্র তিন তলায় উঠেছিলেন তখন তিনি একটা সাদা ছায়ামূর্তি দেখতে পান।। ঐ সময় আব্বু কিছু দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে কাছে যেতে থাকেন।। ছায়ামূর্তিটাও ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে।। আব্বু ঐটাকে ফলো করে ছাদ পর্যন্ত গেলে দেখতে পান যে ছাদের দরজা AUTOMATICALLY ওপেন হয়ে যায় এবং মূর্তিটি ছাদের কিনারায় গিয়ে দাড়িয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে থাকে।। আব্বু তখন একটা দোয়া পড়ে আশপাশে ফুঁ দিয়ে ধীরে পিছপা হয়ে নামতে থাকে এবং হটাৎ উপরে তাকিয়ে দেখেন যে ছায়ামূর্তিটি গায়েব হয়ে গেছে।। পরদিন তিনি আংকেলকে সব খুলে বলেন।। ঐদিনের পর হতে আর ঐ ছায়ামূর্তিকে দেখা যায়নি।।

শেয়ার করেছেনঃ Udvot VoOt

।। অপদেবতা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, July 27, 2011 at 12:34am
আমাদের গ্রামের বাড়িতে কোন একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে একবার অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছিলো।। অনুষ্ঠানটি হয় রাতে বেলা।। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়, ফলে যাদের বাড়ি দূরে তারা সবাই ঠিক করে যে আজ এখানেই থাকবে।। মামার বাড়িতে মোট ৫ টা ঘর আর একটা বাংলো ঘর।। বাংলো ঘরটা তেমন একটা ব্যাবহার করা হয় নাহ।। বাংলো ঘরের ডান পাশে কিছুটা দূরে গোয়াল ঘর।। যেহেতু, অনেকেই রাতে থাকবে, তাই ঘরের অভাব শর্ট পড়ে গেলো।। তাই মামামামি সিদ্ধান্ত নিলো তারা তাদের ঘরটা ছেড়ে বাংলো ঘরে চলে যাবে।। রাতটা সেখানেই কাটাবে।। তখন রাত প্রায় ২টা।। মামার টয়লেট চাপায় তিনি জেগে উঠেন।। উনি দরজা খুলে বাইরে উঠোনে একটু দূরেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন।। এমন সময় তিনি একটা শব্দ শুনতে পান।। তিনি এদিক ওদিক তাকান।। হটাৎ টার দৃষ্টি যায় গোয়াল ঘরের দিকে।। তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘর থেকে তাদের সাদা রঙের গরুটা কিভাবে যেনও বের হয়ে পড়েছে।। মামার তখন মনে পড়ে গোয়াল ঘর সন্ধার পর সবসময় তালা লাগানো থাকে।। গরুটা বের হয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করে দেয়।। গোয়াল ঘরের ঠিক পিছনেই একটা বড় আকারের ঝোপ।। অনেকটা জঙ্গলের মত।। মামা গরুটার পিছু নেয়।। এদিকে মামার দেড়ি দেখে মামির ও ঘুম ছুটে যায়।। তিনি বাইরে এসে দাঁড়ান এবং দেখতে পান মামা হাঁটছে আর তার সামনে একটা সাদা কিছু।। মামি ভয় পেয়ে চিৎকার করে মামাকে ডাক দেন।। কিন্তু মামা মামির ডাক শুনতে পেয়েও না থেমে উল্টো হাঁটতে থাকেন।। মামি ভয় পেয়ে ছুটে গিয়ে মামাকে থামান।। মামা তখন কেমন যেনও একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন।। তিনি বার বার বলতে থাকেন, “আমাদের গরুটা চলে যাচ্ছে।। আমাদের গরুটা চলে যাচ্ছে।।” কিন্তু মামি বলেন ঐটা আমাদের গরু না, তারপর তাকে জোর করে ঘরে নিয়ে আসেন।। সকালে মামামামি ২জনই গোয়াল ঘোরের তালা পরীক্ষা করে দেখেন তালা দেয়াই আছে।। আর সবকটা গরুই ঠিকঠাক মতন নিজ নিজ জায়গায় আছে।। মামি তখন মামাকে বলেন, গতকাল রাতে তাকে “নিশা” (আমাদের গ্রামে অপদেবতা বলে পরিচিত) ডাকছিল।। তিনি (মামি) যদি তখন না উঠতেন ঘুম থেকে আর মামাকে না থামাতেন, তাহলে গরু রূপি “নিশা” মামাকে বনের ভেতর নিয়ে মেরে মাটিতে গলা অব্দি পুঁতে রাখতো।।

শেয়ার করেছেনঃ Nahian Islam Towhid

বিঃ দ্রঃ ঘটনাটি লেখক তার মামির মুখ থেকে শুনেছেন।।

।। কাজের মেয়ে ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, July 27, 2011 at 1:55pm
আমার এক পরিচিত AUNTY.. তিনি তাঁর বাড়িতে একটা কাজের মেয়ে রাখেন।। মেয়েটি খুব চুপচাপ থাকতো।। একদিন আমার AUNTY এর বাসার সবাই পুরো ফ্যামিলিসহ বাইরে এক আত্মীয়ের বাসায় যাবে।। AUNTY বাদে বাকি সবাই চলে গিয়েছিলো।। AUNTY যখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছিলেন তখন হটাৎ খেয়াল করলেন, উনি যা যা করছেন আয়নাতে তাঁর উল্টাটা হচ্ছে।। তিনি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলেন, দরজার লক খুঁজে পাচ্ছেন নাহ।। তিনি নিজেকে শান্ত করার জন্য চোখ বন্ধ করে ফেললেন।। কিন্তু পরে যখন চোখ খুললেন তখন দেখলেন কাজের মেয়েটি তাঁর সামনে দাঁড়ানো।। কাজের মেয়েটির চেহারা বীভৎস এবং সে নিচু গলায় কি যেনও বলছে।। AUNTY এটা দেখে সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।। পরবর্তীতে উনাকে ছাদের চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়।। কাজের মেয়েটাকে পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।। শেয়ার করেছেনঃ Tamanna Progga

। জীনের উৎপাত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, July 27, 2011 at 10:18pm
এই ঘটনাটা আমার মেজো খালার কাছ থেকে শোনা।। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমার মেজো খালা উনার বড় বোন, মানে আমার বড় খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।। আমার বড় খালা গ্রামে থাকেন।। উনার বাড়ির চারপাশটা খুবই নির্জন এবং জনবসতি বলতে গেলে খুবই কম।। বাসাটা এমনিতে দেখতে খুবই সুন্দর।। চারপাশটা গাছগাছালি দিয়ে ভরতি।। কিন্তু একটা দোষ ছিল যে, প্রায়ই জীনরা খুব জ্বালাতন করতো।। মেজো খালা যাওয়ার পরের একদিনের ঘটনা।। ঐদিন ভয়ানক গরম ছিল, তাই সবাই মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে গল্প করছিলো।। হটাৎ বড় খালা জীনদের উৎপাত নিয়ে বিভিন্ন ঘটনা বলা শুরু করলেন।। এভাবে গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে সবাই শুনতে পায় যে, টিনের চালে কে বা কারা যেনও বড় বড় আম ছুঁড়ছে(আম বুঝতে পারার কারন হল, টিনের চালে হটাৎ করে একটা, দুটো আম পড়লে ঠিক ঐরকম আওয়াজ হতো)।। সবাই ভয়ে অস্থির।। হটাৎ তারা সবাই পরিষ্কার শুনতে পেলেন কে যেনও বলছে, “আমাদের কথা ওদের এভাবে বললি কেনও??” আর একটা আগুনের ফুলকি ঘরের সামনে ছুটে বেড়াচ্ছিল।। বড় খালা বলে উঠেন, “আর বলব নাহ।। এবারের মত ক্ষমা করে দাও।।” এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ঢিল ছুড়া বন্ধ হয়ে যায়।। এই ঘটনা ছাড়াও প্রায় সময়ই শব্দ পাওয়া যেত যে, কে বা কারা যেনও কলের পাড়ে গোছল করছে।। গুনে গুনে তিনবার পানি ঢালত, তারপরই থেমে যেত।। আসলে ভূত বলে কিছু নেই।। অশরীরী আত্মা আছে কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান।। তবে জীন আছে এটা পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ আছে।। এবং মানুষের মত, তাদের মধ্যেও খারাপ, ভালো ২টাই আছে।।

লেখক/লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।

। মৃত্যু রহস্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, July 27, 2011 at 11:26pm
বছরখানেক আগের ঘটনা।। আমাদেরই এক বন্ধু সিহাব গিয়েছিলো তার গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরে।। সেখান থেকে এসে সে আমাদের এক রোমহর্ষক ঘটনা শোনালো।। ঘটনাটা ঐ গ্রামের এক মাঝবয়সী লোককে নিয়ে।। উনার নাম ছিল মন্নান মিয়াঁ।। ছিলো বলছি কারন লোকটা এখন জীবিত নেই।। সে যাই হোক, আমাদের এই ঘটনার মূল অংশ মন্নান মিয়াঁকে নিয়ে।। মন্নান মিয়াঁ শ্রীপুর গ্রামের স্থানীয় কেউ নন।। বছর পাঁচেক আগে গ্রামে এসেছিলেন ঘুরতে ঘুরতে।। এরপর গ্রামের লোকজন তাকে পছন্দ করে ফেলে।। একটা ঘরও তুলে দেয়া হয় তার জন্য।। লোকটা খুবই মিশুক প্রকৃতির ছিল।। কারো যেকোনো সাহায্যে তাকে ডাকলেই সাড়া দিতো।। গত ২০০৯ সালের গ্রীষ্মের এর দুপুরে মন্নান মিয়াঁ মারা যায়।। লোকমুখে শোনা যায়, ঐদিন বাজার করে এসে মন্নান হটাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।। বারবার বলতে লাগে, রাস্তায় তার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়েছে।। কিন্তু সেই খারাপ কিছুটা কি তা সে পরিষ্কার করে বলতে পারেনি।। তার আগেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।। তার লাশ সেদিনই দাফন করে দেয়া হয়।। গ্রাম্য রীতি অনুযায়ী, মানুষজন তাদের কবরস্থানে শুধু নিজেদের ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্যই জায়গা রাখেন।। মন্নানের সেই গ্রামে কোন পরিচিত ছিল না বিদায় তার কবর দেয়া হয় রাস্তার পাশেই একটা বেল গাছের নিচে।। তার মারা যাওয়ার কারন কেও আবিস্কার করতে পারেনি।। হয়তো পারেনি।। আমি হয়তো বলছি কারন মূলত এখান থেকেই আমাদের কাহিনী শুরু হতে যাচ্ছে।। আমার এক বন্ধুর নাম জাবেদ।। আমাদের মাঝে ও বলতে গেলে দুঃসাহসী।। জীবনের একটা বড় সময় সে প্যারানরমাল একটিভিটি নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছে।। বেচারার খুব কষ্ট যে, জিন-ভুত কিছুই কখনও তার দেখা হয়নি।। সিহাবের কাছে ঘটনাটা শুনেই সে লাফিয়ে উঠলো।। যে করেই হোক তাকে সেখানে জেতেই হবে।। এর পিছনে একটা বড় কারন ছিল সিহাবের শেষ কথাটি।। মন্নান মিয়াঁর কবরের রাস্তায় নাকি প্রায়ই রাতের বেলা কাউকে বসে থাকতে দেখা যায়।। কয়েকজন তো হলপ করে বলেছে তারা মন্নান মিয়াঁকে দেখতে পেয়েছে।। এরচেয়ে ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, মন্নান মিয়াঁর কবরের উপর নাকি একটা কুকুরকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।। কুকুরটা কোথা থেকে আসে, রাত শেষে কোথায় যায়, তা আজও কেউ জানতে পারেনি।। এমনকি দিনের বেলা কুকুরটাকে কেউ কখনো দেখেও নি।। প্রতি পূর্ণিমা রাতে কুকুরটা মন্নান মিয়াঁর কবরের পাশে বসে কাঁদে।। যারা রাতের বেলা গ্রামের বাজার থেকে আসেন তারা অনেকেই ঐ কুকুরকে দেখেছেন।। মন্নান মিয়াঁর কবর যেই রাস্তায় ঐ রাস্তাটা এখন প্রায় বন্ধের উপক্রম।। এই কথাগুলোই আসলে জাবেদের মাথাটা খারাপ করে দিলো।। সিহাবের এক কথা।। সে কোন অবস্থাতেই জাবেদ কে নিয়ে যাচ্ছে নাহ।। জাবেদ অনেকটা নাছোড়বান্দা পাবলিক।। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ সিহাবকে রাজি করলো যাওয়ার ব্যাপারে।। আমার নিজেরও যাবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেই সময় মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিলো দেখে যাওয়া সম্ভব হয়নি।। যাই হোক, জাবেদের প্ল্যান ছিল পূর্ণিমা রাতে উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা।। এতে কুকুরটার দেখা পাওয়া যাবে, পাশাপাশি ছবি তোলার জন্য ভালো আলোও থাকবে।। বাংলা ক্যালেন্ডার দেখে সময় নির্ধারণ করে রওনা দিলো তারা।। তারা মানে, জাবেদ আর সিহাব।। সাথে আর ২জনের যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২ জনই যাওয়া বাদ করে দেয়।। পারিবারিক কিছু ঝামেলার কারনেই ২জনের যাওয়া বাতিল হয়ে যায়।। সে যাই হোক, জাবেদরা নির্দিষ্ট সময়েই গ্রামে পৌঁছায়।। আদর আপ্যায়নে তাদের বরন করে নেয় সিহাবের আত্মীয়স্বজনরা।। মোটামুটি ফ্রি হবার পর জাবেদ, সিহাবের ছোট কাকাকে খুলে বলে আসার আসল উদ্দেশ্য।। শুনে ছোট কাকা কিছুটা গম্ভির হয়ে যান।। শেষমেশ জাবেদ আর সিহাবের প্রবল অনুরোধের মুখে নতি স্বীকার করতে হয় তার।। যাওয়ার অনুমতি দেন তিনি কিন্তু সাথে তার দেয়া পরিচিত একজনকে নিয়ে যেতে হবে।। জাবেদ চাচ্ছিল একাই যেতে।। কারন এইসব ব্যাপারে বেশি মানুষ থাকলে নাকি “প্যাঁচ” লেগে যেতে পারে।। কিন্তু ছোট কাকার শর্ত একটাই।। হয় সাথে তার দেয়া গাইড যাবে নাহলে যাওয়া বাতিল।। অগত্যা জাবেদকে রাজি হতেই হল।। সেদিন ছিল রবিবার।। সন্ধার পর পরই আকাশ উজ্জ্বল করে পূর্ণিমার চাঁদ উঠলো।। চাঁদের আলোতে চারপাশে যেনও আলোকিত হয়ে উঠলো।। বিপত্তি শুরু হল ঠিক তখনি।। সিহাব তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে দরজার চৌকাঠে ধাক্কা খেলো।। সাথে সাথে মাথা ধরে বসে পড়লো।। হাত সরাতেই দেখে গেলো ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে।। বাসা ভরতি মানুষের মধ্যে হট্টগোল বেঁধে গেলো।। একে তো গ্রাম অঞ্চল, তার উপর এখনও ফ্রিজ জিনিসটা এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।। সিহাবকে ধরাধরি করে নলকূপের পাড়ে নিয়ে যাওয়া হলে।। প্রায় ২০ মিনিট লাগলো রক্ত বন্ধ হতে।। এদিকে জাবেদ তো টেনশনে মারা যাচ্ছে।। শেষমেশ বুঝি যাওয়াটাই বাতিল হয়ে গেলো!! ঐ অবস্থায় সিহাবের পক্ষে যাওয়া একদমই সম্ভব ছিল নাহ।। কিন্তু জাবেদ কাকাকে বলে তার নিজের যাওয়া নিশ্চিত করে নিলো।। সাথে থাকবে গাইড রতন আলী।। (অনেকেই হয়তো ভ্রু কুঁচকাতে পারেন যে, চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলেকে ঐ অবস্থায় তার বাসা থেকে কিভাবে বের হতে দিলো?? তাও যখন ছেলেটা তাদের অথিতি।। ভাই, জাবেদকে আমি চিনি।। সে যদি বলে সে যাবে তাহলে তাকে আটকানো কারো পক্ষেই সম্ভব নাহ।। এমনকি সে তখন নিজের বাবা মার কথাও শুনবে নাহ।।)

রতন আলী ঐ গ্রামের সবচেয়ে সাহসী মানুষদের মাঝে একজন।। ছোট কাকা রতনকে বুঝিয়ে দিলেন যেনও কোন অবস্থাতেই জাবেদকে ফেলে চলে না আসে।। গ্রামে ছোট কাকার ভালো প্রতিপত্তি ছিল।। রতন আলী নিজের বুকে চাপর দিয়ে বলল, সে কাউকে ভয় করে নাহ।। ভুতের ভয় তার নেই।। বরং শহুরে ভাইয়ের সাথে সেও আজকে দেখবে কিসের ভূত, কার ভূত!! রতনের হাতে একটা ব্যাটারি চালিত টর্চ লাইট।। জাবেদ ঢাকা থেকেই একটা শক্তিশালী টর্চ আর একটা ভালো মানের ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে যায়।। ক্যামেরাটা গলায় ঝুলিয়ে, টর্চটা হাতে নিয়ে হাঁটতে লাগে সে।। পাশেই রতন আলী।। রতন তাকে গ্রামের বিভিন্ন ঘটনা জানাতে লাগলো।। কোন বাড়ির কে কবে কার হাতে খুন হয়েছে, কে কোথায় ফাঁস নিয়ে মারা গেছে এইসব।। জাবেদের বিরক্ত আর ভয় দুটোই লাগছিল( ভয় লাগার ব্যাপারটা আমার অনুমান, কারন সে যখন গল্পটা বলছিল তখন বলেছিল তার শুধু বিরক্ত লাগছিল আর অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছিল।। আমি ধরে নিয়েছিলাম সেই অনুভূতিটা ভয়)।। বাড়ি থেকে জায়গাটার দূরত্ব ২ মাইলের মত।। গ্রামের নিরবতায় নাকি ভূত দেখার টেনশনে কে জানে, জাবেদের ভীষণ বাথরুম চাপল।। রতন আলীকে সে টর্চটা ধরতে বলে নিজে গেলো একটা গাছের নিচে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে।। কাজ শেষ করে ফিরে এসে তারা আবার হাঁটতে লাগলো।। কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটার পর হটাৎ রতন আলী জাবেদ কে জিজ্ঞেস করে বসলো, মন্নান মিয়াঁ সম্পর্কে কতটা কি জানে সে।। জাবেদ একটু চমকে গেলো।। কারন কিছুক্ষণ আগে যেই গলায় রতন আলী কথা বলছিল তার সাথে এখনকার গলা যেনও একটু অমিল লক্ষ্য করা যায়।। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে সে বোঝার চেষ্টা করলো ব্যাপারটা কি আসলেই তাই নাকি তার দুর্বল মনের চিন্তা।। জাবেদ মন্নান মিয়াঁ সম্পর্কে যা জানত তা বলল রতন আলীকে।। শুনে রতন আলী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“মন্নান মিয়াঁ কেমনে মারা গেছে জানতাম চান??” (রতন আলীর কথা গুলো গ্রাম্য ভাষায় লেখা হল, আমি যখন গল্পটা শুনছিলাম তখন জাবেদও রতন আলীর কথা গুলো গ্রাম্য টানেই বলছিল।। এটা একটা রহস্য।। কারন জাবেদ ঐ গ্রামে মাত্র ২দিন ছিল।। তার পক্ষে এত ভালো ভাবে ভাষাটা রপ্ত করা সম্ভব নাহ।। যাকগে, আমরা গল্পে ফিরে যাই)
জাবেদ কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু সবাই যে বলে মন্নান মিয়াঁর মৃত্যুর কারন কেউ জানে নাহ!!”
রতনঃ “তারা জানে নাহ।। কারন মন্নান তাগর কাউরেই কইতাম চায় নাই।।”
জাবেদঃ “তাহলে তুমি কিভাবে জানো??”
রতনঃ “মন্নান আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড আছিল।।”
“মরার আগে কি তোমার সাথে তার কথা হয়??”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রতন বললঃ “আপনি আসল ঘটনা জানে চান??”
জাবেদের এই প্রথম গায়ে একটু কাঁটা দিয়ে উঠলো।। তবুও সে উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, তুমি যদি জানো তাহলে বলতে পারো।। আমার নিজেরও এটা জানার খুব ইচ্ছে।।” (এরপর রতন আলী জাবেদকে যা বলল তা আমি একটু সাজিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম) যেদিনের ঘটনা সেদিন সকালে মন্নান মিয়াঁ তার সপ্তাহের বাজার করতে যায়।। বাজারে পরিচিত মানুষজনের সাথে দেখা সাক্ষাত করে এবং নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে সে রওনা হয় বাসার দিকে।। পথিমধ্যে একটা কবর পড়ে ঐ রাস্তায়।। অনেকেই বলে ঐ কবরে নাকি মাঝে মাঝে এক বৃদ্ধকে দেখা যায়।। আবার অনেকে বলে ঐ কবর থেকে রাতের বেলা নানা রকম আওয়াজ আসে।। কে বা কারা কান্না করে, সেই আওয়াজ নাকি পাক খেয়ে খেয়ে বাতাসে ভাসে।। মন্নান মিয়াঁ এইশব ব্যাপারে তেমন পাত্তা দিতো নাহ।। সেদিন আসার পথে হটাৎ তার ভীষণ তৃষ্ণা পায়।। তার বাজারের ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খাওয়ার জন্য রাস্তার পাশেই বসে পড়ে সে।। এমন সময়ে একটা কালো কুকুর এসে তার পাশে বসে।। কুকুরটা দেখে একটু অবাক হয় মন্নান মিয়াঁ।। গ্রামে অনেকদিন যাবত আছে সে কিন্তু আগে কখনো এতো বড় কালো কোন কুকুর দেখেনি।। কুকুরটা মন্নানকে এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।। হটাৎ মন্নানকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠে, “আমার কবরের পাশে বসে আছিস।। তোর সাহস তো অনেক বেশি দেখছি।।” মন্নান প্রথমে ভাবল তার শোনার ভুল।। সে ব্যাগ থেকে পানি বের করে চোখে মুখে পানি দিলো।। এইবার সে আর স্পষ্ট শুনতে পেলো কুকুরটা বলছে, “কিরে, ভয় পেলি নাকি??” মন্নান মিয়াঁ এইবার পুরো ঘাবড়ে গেলো।। অনিশ্চিত বিপদের আশঙ্কায় সে তার হাতের পাশে পড়ে থাকা একটা গাছের ডাল নিয়ে ছুড়ে মারল কুকুরটার দিকে।। ডালটা সরাসরি গিয়ে লাগলো কুকুরটার মুখে।। একপাশ কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।। প্রচণ্ড রাগে গর্জে উঠলো কুকুরটা।। স্পষ্ট ভাষায় মন্নান কে বললঃ “তুই আমাকে আঘাত করেছিস।। এর পরিনাম তুই ভোগ করবি।।” এই বলে কুকুরটা ভয়ঙ্কর গর্জন করে মন্নান কে কামড়াতে আসলো।। কুকুরটার সাথে ধাক্কা লাগার সাথে সাথে মন্নান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।।
জ্ঞান হারান অবস্থায় মন্নান স্বপ্নে দেখে এক বুড়ো লোককে।। লোকটি প্রবল ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে মন্নানের দিকে।। মন্নান কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, “তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস।। আমাকে আঘাত করেছিস।। এর পরিনাম মৃত্যু।।”
মন্নান ভয়ে জড়সড় হয়ে বললঃ “আমি জানি না আপনি কে।। আপনাকে আমি আমার জীবনে আগে কখনো দেখিনি।। আমি কিভাবে আপনাকে আঘাত করবো??” তখন লোকটি নিজের বর্ণনা দিল।। “তান্ত্রিক” এই ব্যাপারটার সাথে হয়তো আমরা অনেকেই পরিচিত।। তান্ত্রিক তাদের বলে যারা তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে থাকে।। এরা প্রায়ই গোরস্থান, শ্মশানঘাটে রাত্রি বেলা কালো জাদু চর্চা করে।। তান্ত্রিক মূলত খারাপ প্রকৃতির হয়।। এরা ক্ষমতার লোভে, বলতে পারেন অমরত্তের লোভে এমনকি মানুষ খুন করে তা দিয়ে তপস্যা করে।। ঐ লোকটি একজন তান্ত্রিক ছিল।। একবার মানুষ খুন করার অভিযোগে তাকে গাছের সাথে ফাঁস দিয়ে মারা হয়।। এরপর তাকে কবর দেয়া হয় গ্রাম থেকে দূরে একটা বধ্য এলাকায়।। সেই কবরটির কথাই একটু আগে আমরা বলেছিলাম।। যাই হোক, সেই তান্ত্রিক মারা যাওয়ার পরও তার আত্মা এখনও মানুষের ক্ষতি করার জন্য ঘুড়ে বেড়ায়।। তান্ত্রিকটা মন্নানের সামনে কুকুর বেশে এসে বসেছিল এবং মন্নান তাকে আঘাত করায় সে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়।। এরপর হটাৎ মন্নানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।। সে খুব খারাপ অনুভব করতে থাকে।। তার নিঃশ্বাসে সমস্যা হতে থাকে।। সেখান থেকে কোনোরকমে বাসায় যায় মন্নান।। এরপর আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।। রতন আলী এতটুকু পর্যন্ত বলার পর হটাৎ কর্কশ শব্দে কাছেই কোথাও একটা পেঁচা ডেকে উঠে।। ঠিক সাথে সাথে চমকে উঠে জাবেদ শুনতে পায়, রতন আলী তাকে পিছন থেকে ডাকছে।। “ঐ ভাইজান, জলদি লন।। মুত্তে অতখন লাগায় নি কেও??” জাবেদ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে অস্থির চিত্তে অপেক্ষা করছে রতন আলী।। আর সে নিজেকে আবিষ্কার করে সেই গাছটার নিচে, যেখানে সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এসেছিলো।।

আমাদের গল্প এখানেই শেষ।। এখন আপনাদের কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।। প্রশ্নঃ সেদিন আসলে কি হয়েছিলো??
উত্তরঃ সেদিন কি হয়েছিলো তা আমি বলতে পারব নাহ।। একেজনের একেক রকম ধারণা।। সম্ভবত মন্নান মিয়াঁ এসে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো তার মৃত্যু রহস্য।। হয়তো বা এটা জাবেদের বিক্ষিপ্ত মনের কল্পনা।। প্রশ্নঃ জাবেদ কি তারপর ও কবরটা দেখতে গিয়েছিলো??
উত্তরঃ জী নাহ।। জাবেদ সেই গাছের নিচেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়।। রতন আলী তাকে কাঁধে করে বাসায় নিয়ে আসে।। প্রশ্নঃ জাবেদের এরপর কি হল??
উত্তরঃ জাবেদ এরপর একটানা ৪মাস অসুস্থ ছিল।। ডাক্তারদের ধারণা তার মেণ্টাল ব্রেক ডাউন হয়েছিলো।। ৪ মাস পর জাবেদ হসপিটাল থেকে ছাড়া পায়।। প্রশ্নঃ মন্নান মিয়াঁর কবরটা কি এখনও আছে??
উত্তরঃ জী, কবরটা বহাল তবিয়তে আছে।। যদিও এই ঘটনার পর কবরের পথ তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং এরপর কোনোদিন কবরের কুকুরটাকেও আর দেখা যায়নি।। তবে এখনও মাঝে মাঝে পূর্ণিমা রাতে তার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়।। প্রশ্নঃ তান্ত্রিক লোকের কবরটার কি হল??
উত্তরঃ সেই কবরটা নিয়ে আগে থেকেই মানুষের মধে এক ধরনের আতঙ্ক ছিল।। এই ঘটনার পর তা আরও বেড়ে যায়।। পড়ে শুনেছিলাম কবরটা মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ঐ রাস্তাটুকু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।। মানুষ পারত পক্ষে ঐ পথ মাড়ায় নাহ।।

আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে করুন।। আমার জানা থাকলে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।।

আমি প্রফেশনাল লেখক নাহ।। গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি।। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেবন আশা করি।।

শেয়ার করেছেনঃ ADMIN (Irfan)

।। সংগৃহীত গল্প – ০১ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, July 28, 2011 at 12:30am
ইদানীং এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে রকি। দিন-দুপুরে,রাত, মোটকথা চোখে ঘুম এলেই স্বপ্নটা ওকে তাড়া করে বেড়ায়। যে কারণে রাতে ঠিক মতন ঘুমতে পারছে না ও। ফলে দিন দিন কাহিল হয়ে যাচ্ছে রকি। ভেঙে আসছে শরীর। সবাই শুনে হাসবে ভেবে কাউকে খুলেও বলতে পারছে না ও সমস্যাটার কথা। একদিন বিকেলে পরিচিত এক ডাক্তারের চেম্বারে হাজির হলো রকি। ডাক্তার ভদ্রলোক মন দিয়েই ওর কথা শুনতে লাগলেন।
‘অস্পস্টভাবে, আবছা আবছা দেখলাম আমি বাইরে থেকে বাসায় এসেছি।’ ঘটনাটা বলতে লাগলো রকি। দুঃস্বপ্নের ঘটনা,‘মনে হলো রাতের বেলা। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাচ্ছি। চারদিকে আলো-আঁধারীর খেলা। মাঝেমধ্যে কাউকে ডাকছি বলে মনে হলো। এবং যাকে ডাকছি তাকেই সম্ভবত খুঁজছি সারা ঘরময়। এ ঘর থেকে ও ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালাচ্ছি। একসময় রান্না ঘরে পৌছুলাম। এবং যা দেখলাম...’ থেমে গেলো রকি। বিভৎস কিছু কল্পনায় এসেছে বলে কথা আটকে গেছে ওর মুখে।
ওকে অভয় দিলেন ডাক্তার,‘রিলেক্স রকি, ধৈর্য্যে নিয়ে বলতে থাকো।’
ঠোঁটজোড়া কেঁপে উঠল রকির। কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে আবার শুরু করল ও,‘দেখি...দে-দেখি সারা কিচেন জুড়ে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বেসিনে টিপটিপ করে রক্তের ফোঁটা পড়ছে। আর...চুলোয় বিভৎস এক দৃশ্য। চুলোর উপর বসানো এক হাড়িতে সেদ্ধ হচ্ছে কারো ছিন্নমুন্ডু! আরো জনাদুয়েকের কাটামাথা গড়াগড়ি খাচ্ছে ফ্লোরে উফ্!! বলতে বলতে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো রকি।
ওকে শান্ত্বনা দিলেন ডাক্তার সাহেব। তারপর প্রাথমিক কিছু টেস্ট সেরে একটা প্রেসক্রিপসন লিখে দিলেন তিনি। বললেন, দিন পাঁচেক ট্রাই করে দেখতে। প্রেসক্রিপসন হাতে ডাক্তারের চেম্বার ছাড়ল রকি।
নিকটস্থ এক ফার্মেসী থেকে ঔষুধ কিনে বাসায় ফিরলো।
এবং তারপরের দিন ঘটল আসল ঘটনা।
গভীর রাতে ঘুম ভাঙলো রকির। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে গেছে। কপালের ঘাম মুখ বেয়ে নামছে রেখা টেনে টেনে।
হাঁপাচ্ছে ও হাপরের মতন।
যেন হিস্টিরিয়া রোগী শ্বাস কষ্ঠে ভুগছে প্রচন্ড।
বেড সুইচ টিপে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালালো রকি। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
প্রচন্ড পানির পিপাসা পেয়েছে। প্রতিদিনের মতন আজও সেই একই দুঃস্বপ্ন দেখেছে ও। তবে আজ স্বপ্নে একটু অন্যরকম ছাপ এসেছে। সেই ছিন্নমুন্ডুগুলোকে শনাক্ত করতে পেরেছে রকি। মোটেও বিশ্বাস হচ্ছিল না ওর, স্বপ্নের মধ্যেই। ওগুলো ওর পরিবারের মুন্ডু ছিলো! ওর ছোটভাই, বড় বোন আর মা’র। অসহ্য!
হঠাৎ কিছু একটা ভেবে পাশের ঘরে এল রকি। এ ঘরে ওর মা আর ছোটবোন ঘুমোয়। কিন্তু অন্ধকার ঘরে কিছুই নজরে এল না। লাগোয়া ঘরটা বড়ভাই হাফিজের। ও ঘরে গিয়েও কিছুই দেখতে পেল না রকি। অথচ সবকিছুই কেমন জানি ঠেকছে ওর কাছে। মনে হচ্ছে স্বপ্নের মাঝেই ঘটছে এসব। আসলে হয়ত ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি।
ধীর পায়ে ঠলতে ঠলতে কিচেনের দিকে এগোলো রকি।
ঠিক তখুনী ওর মনে হল কেউ একজন ওকে অনুসরণ করছে। ঝট্ করে চারদিকে নজর ঢালল ও, নাহ্! কেউ নেই!
অল্প অল্প কিচেনের সামনে আসতে লাগলো ও। কিচেনে বাতি জ্বলছে। সেই আলার মধ্যে রকি হতবাক হয়ে ল্য করল কিচেনের ফোর জুড়ে টকটকে লাল তরল পদার্থের বন্যা!
অসম্ভব!

এতো হুবুহু স্বপ্নে দেখা ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটছে!
অজান্তেই আতঙ্কিত চিৎকারের আওয়াজ বেরিয়ে আসছিলো রকির মুখ দিয়ে। চট করে মুখে হাত চাপা দিল ও।
আরো কয়েক কদম এগোতেই স্টোভ থেকে স্পস্ট ফুটন্ত পানির শব্দ কানে ভেসে এল।
জায়েগায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল রকি!
স্বপ্নটা, স্বপ্নটা কি তবে সত্যি হতে চলেছে!
বিড়বিড় করে উঠল রকি।
এমন সময় পেছনে কারো গরম নিঃশ্বাসের শব্দ স্পস্ট অনুভব করল ও। ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে ততক্ষনে।।
পুরো মহল্লায় প্রচন্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকে ভীষণ গুঞ্জন। একটি বাসার সামনে বেশ ক’টা পুলিশের গাড়ি। আর পুলিশ ও সাংবাদিকদের ছুটোছুটি করতে দেখা যাচ্ছে।
সীল কওে দেয়া হচ্ছে পুরো বাসা।
উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভীড় সামলাতে পুলিশের নাজেহাল অবস্থা।
সেই ভীড়ের মাঝে ঘটনা কি কেউ একজন জানতে চাইল। এবং জবাবও দিল কেউ একজন,‘গতরাতে চারটি খুন হয়েছে ভাই্ চারজন মানুষের মুন্ডুহীন লাশ পাওয়া গেছে এ বাসায়।। বিঃ দ্রঃ গল্পটি আমাদের পেইজের কেউ শেয়ার করেননি।।

।। কবরখানার বিভীষিকা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, July 28, 2011 at 10:20pm
আমাদের বাসা একটি কবরখানার ঠিক সাথেই।। আমি বরাবরই নাস্তিক টাইপের।। তারপরো আমি এমন একটি ঘটনার সাক্ষী যার ব্যাখ্যা আজো পাইনি।। তখন আমি ৬/৭এ পড়ি।। কিছুদিন পরেই আমার বড় বোনের S.S.C. পরীক্ষা।। রাত জেগে ও পড়ালেখা করে।।
এক রাতে ও আমায় ঘুম থেকে তুলে বলে, কবরখানায় নাকি বাচ্চারা কান্না করছে!! আমি কিছুই শুনতে পেলাম না, হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললাম, কাল এমন সময় আমি যাব কবরখানায়!! যেমন বলা তেমন কাজ।। পরের দিন ঐ সময় আমি গেলাম কবরখানায় আর বোনকে বলে গেলাম ও যেন খেয়াল করে কোনো আওয়াজ পাওয়া যায় কিনা।। এই বলে আমি কবরখানায় যাই,ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে আমার গায়ের লোম দাড়িয়ে যায়!! দেখি কয়েকটা বাচ্চা খেলছে!! একটু পরেই ওদের মাঝে মারামারি শুরু হয়, আর ২/৩টা বাচ্চা কান্না শুরু করে!! এইটুকু দেখেই আমি এক দৌড়ে বাসায় চলে আসি, আর তখন থেকে এরপরের কিছুদিন প্রচন্ড জ্বরে ভুগি!! শেয়ার করেছেনঃ অমায়িক ছেলে

।। ছায়ামূর্তি রহস্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, July 28, 2011 at 11:00pm
আমরা এখন যে বাসাটায় আছি এটাতে আমরা ৭মাস হল এসেছি।। বাড়িটা দেখতেই যেনও একটু কেমন কেমন।। বাড়িটার নিচ তলায় আমরা থাকি।। বাসাটায় উঠার গত ৬ মাস পর্যন্ত আমাদের কোন প্রব্লেম হয় নি।। হটাৎ প্রায় রাতেই মনে হতে লাগলো, আমার রুমে মাঝরাতে কেউ একজন হাঁটে।। আমি প্রথমে অতটা পাত্তা দেইনি।। আগেই বলে রাখি।। আমার বেডটা হল পশ্চিম সাইডে।। বেড বরাবর পূর্বদিকে টয়লেট।। তো, একদিন রাতে হটাৎ খেয়াল করলাম আমার রুমের ভেতর সাউন্ড হচ্ছে।। ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না কিসের সাউন্ড।। পরে ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারলাম, সাউন্ডটা আসলে ইলেক্ট্রিক সুইচ অন অফ করার সাউন্ড।। পরপর কয়েকদিন একই ঘটনা ঘটলো।। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার যে, প্রতিদিন সাউন্ডটা ২টা থেকে ২.৩০ ের মধ্যে হয়।। এরপর আর সাউন্ডটা হয় নাহ।। আর সাউন্ডটা হয় ঠিক টয়লেটের সামনে থেকে।। অনেক চেষ্টা করেছি রহস্যটা বেদ করার কিন্তু কোন উত্তর পাইনি।। গতকাল রাত ২টার দিকে হটাৎ আমার মাথার পাশে “ধপাস” করে কিছু একটা পড়ে।। সেই আওয়াজে সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। ঘরে হাল্কা আলো থাকায় জিনিসটা পরিষ্কার দেখতে পেলাম।। যেখানে আওয়াজটা হল ঠিক যেনও সেই জায়গা থেকে একটা ছায়ামূর্তি সরে গেলো।। ছায়ামূর্তিটা ডানের দিকে চলে গেলো দেখলাম।। আমি সাথে সাথে লাইট জ্বালালাম, কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম নাহ।। এমনকি যেখানে সাউন্ড হয়েছিলো সেখানেও কিছু নেই।।

শেয়ার করছেনঃ Amin Islam

।। আমরা তিনজন ও একটি রাত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, July 28, 2011 at 11:33pm
মাস দেড়েক আগের কথা।। রাতে খেয়ে আমি সুমন আর মিলু যে যার মত পড়ছিলাম।। সারাদিন প্রচুর খাটুনি ছিলো।। ল্যাব আর ক্লাস।। ঘুম ঘুম ভাব সবার চোখে।। তারপরেও কেন যেন ঘুম আসছিল না।। তিন জন গল্প শুরু করলাম।। যদি ঘুম আসে এই ইচ্ছায়।। মিলু বোতল নিয়ে পানি আনতে গেল।। আমি আর সুমন প্লান করলাম মিলু ফিরে আসার সময় ওকে দরজার পাশ থেকে ভয় দেখাব।। তাড়াতাড়ি লুকিয়ে পড়লাম আমরা।। মিলূ দরজা খুলতেই আমরা হো হো করে হেসে উঠি।। কিন্তু মিলুর কোন ভাবান্তর হল না!!
আমরা হতাশ হয়ে বসে পড়লাম।। আমার কাছে বিস্কুট ছিলো।। তাই খেয়ে পানি খেলাম আমরা।। মিলু বলল,“আমার কাছে একটা নতুন ইংলিশ ম্যুভি আছে।। ভ্যাম্পায়ারের।। চল দেখি সবাই মিলে”।। অনেকদিন ধরে রুমে একসাথে মুভি দেখা হয় না।। ওর কথায় আমি আর সুমন রাজি হয়ে গেলাম।। মিলুর খাটে গিয়ে বসলাম।।
বুধবার রাত।। একটা মুড়ি পার্টি হলে মন্দ হয় না।। পাশের রুমের ইমরানকে ডাকলাম।। ইমরান মুড়ি আনতে গেল।। আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম।। মুড়ি ঢালার জন্য মিলুর খাটে পেপার বিছানো হল।। মুড়ির গন্ধ পেয়ে এর মধ্যে আবার কোত্থেকে যেন মাসুদ এসে হাজির হয়েছে।। আজকের পার্টি জমবে ভালই।। মুভি শুরু হয়ে গিয়েছে।। হরর মুভি দেখে আমাদের ভয় লাগার বদলে চরম হাসি পাচ্ছিল।। ভ্যাম্পায়ারদের কীর্তিকলাপ দেখে মজা পাচ্ছিলাম।। মুভির নাম ড্রাকুলা।। নায়ক হল ম্যাট্রিক্স মুভির নিও।। তিনটা নারী যে উদাম ভঙ্গিতে নায়কের রক্ত চোষার চেষ্টা করছে তাতে করে আমাদের ভয় লাগার বদলে যৌন সুরসুরিতে কেপে কেপে উঠছি।। মিলু তো ভাল মুভি চালিয়েছে দেখছি।।
মাসুদের আবার এইসব মুভিতে হাল্কা এলার্জি আছে।। ও ফোনে কথা বলার নাম করে বারান্দায় গেল।। মনে হয় ছাত্রীহল থেকে জরুরি কোন ফোন।। অবশ্য জিজ্ঞেস করলে বলবে যে তার ছোটবেলার বন্ধু কল দিয়েছিল।। মুড়ি খাওয়া শেষ হবার সাথে সাথে যেন আমাদের মুভি দেখার আগ্রহ দমে গেল।। মিলু বলল,“চল বারান্দায় বসে চাঁদ দেখি”।। সুমন আর আমার তেমন কোন সাড়া না পেয়ে একাই গেল বারান্দায়।। আবার ডাকলো আমাদের।। বেচারা ডাকছে, না গেলে খারাপ দেখায়।। তাই আমি আর সুমন গেলাম তার আতলামিতে সামিল দিতে।। না, আসলেই বেশ ভাল চাঁদ উঠেছে।। পুরো পরিস্কার আলো, বই পড়া যাবে মনে হয়।। প্রাচীন মণীষীদের কথা মনে পড়ে গেলো।। তারা তো আলোর অভাবে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় পড়তেন।। আচ্ছা আমি বুঝিনা, উনারা দিনের বেলায় কি করতেন?? ঘুমাতেন নাকি ঘোড়ার ঘাস কাটতেন!! এমন সময় সুমনের ফোনে একটা কল এল।। বেশ বিরক্ত মনে হল সুমনকে।। এত রাতে কল এলে কার না বিরক্ত লাগার কথা!! তাও আবার ঘুম ধরছে না এমন রাতে।। রিসিভ করতে করতেই কলটা কেটে গেল।। কেটে যাবার একটু পরেই মিলুর ফোনে কল।। সাথে সাথেই আমার ফোনে।। আমিও রিসিভ করতে পারলাম না, কেটে গেল তার আগেই।।আমরাতো তিনজনেই অবাক।। কে মজা করতেছে আমাদের সাথে?? সেট বের করে আমরা নাম্বারগুলো দেখলাম।। ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার, তবে একটার সাথে আরেকটার মিল আছে।। কিন্তু আমাদের আর রাতের বেলা খুজতে ইচ্ছে করল না কী সেই মিল।। আমরা আবার গল্প করতে শুরু করলাম।। কিছুক্ষন পরে আবার কল, সুমনের কাছে।। এইবার ও রিসিভ করল।। ওপাশ থেকে কি বলল আমরা জানিনা, তবে সুমনকে দেখে মনে হল কিছু সিরিয়াস হবে হয়ত।। ও শুধু “হ্যা হ্যা” করতে লাগল।। শেষে “আসছি” বলে কল কেটে দিল।। আমি আর মিলু কিছু বুঝলাম না,হাবার মত একে অপরের দিকে তাকালাম।। সুমন ফোন রেখে বলল, “ঢাকা মেডিকেল থেকে কল করছিল।। তাদের কাছে একটা মুমূর্ষু রোগী আসছে কিছুক্ষণ আগে, প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।। রক্ত দরকার।। এই মুহূর্তে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে সুমন কে কল দিছে সেখানকার লোক।। যেতে বলছে এখনি।। সুমন তারাতারি ড্রেস চেঞ্জ করে নিল।। আমাদেরকেও রেডি হতে বলল।। আমি আর মিলু ভাবলাম ওকে এত রাতে একলা ছাড়া ঠিক হবে না।। তাই আমরাও রেডী হয়ে নিলাম।। রুমে তালা দিয়ে বের হলাম হল থেকে।। রিকশা পাওয়া যাবে না এত রাতে, হেটেই রওনা দিলাম।। বুয়েট থেকে তো আর বেশি দূরে না, হেটে যেতে কয়েক মিনিট লাগবে মাত্র।। আর রাস্তা তো আমাদের চেনাই আছে।।
আমি কানে এফ.এম. রেডীও লাগালাম।। মিলু আর সুমন গল্প করতে করতে এগুতে থাকে।। আমি হালকা হালকা শুনতে পাচ্ছি মিলু আতলামি শুরু করছে।। চাদের বর্ণনা দিচ্ছে, জ্যোতস্নার গুণকীর্ত্তন করছে।।। আমি মনে মনে হাসতে থাকি।। যে ছেলেটা প্রোগ্রামিং করতে গিয়ে খাওয়া-গোসল ভুলে যায় তার মুখে মেঘে ঢাকা চাদের কথা শুনে একটু অবাকই হতে হয়।। বুয়েট শহীদ মিনার পার হয়ে আমরা আহসানুল্লাহ হলের পাশ দিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে চলতে থাকি।। আমি খেয়াল করলাম, আসলেই সুন্দর চাদ উঠেছে।। ই.এম.ই. বিল্ডিং এর ঠিক উপরে,যেন ছাদে উঠলেই ছোয়া যাবে।। হা হা হা,আমিও দেখি মিলুর মত আতেল্ হয়ে গেলাম! বকশী বাজার মোড়ে গেলাম খুব তাড়াতাড়ি।। আজবতো!! একদম ফাকা।। সবগুল দোকান বন্ধ।। অবশ্য এত রাতে খোলা থাকার কথাও না।। তবে পেনাং তো বন্ধ থাকার কথা না!! আমি খেয়াল করলাম মেডিকেলের হলের দিকে।। সব লাইট বন্ধ মনে হচ্ছে।। সবচেয়ে ভয় পেলাম তখনই যখন দেখি রাস্তায় আজ কোন টহল পুলিশ নাই।। এরকম তো হবার কথা না!! একটা মানুষজন নাই, গাড়িও না।। আমার খুব ভয় পেতে লাগল।। তবে ভাব নিলাম যেন কিছুই হয় নি।। ওরা দুজন জানতে পারলে পরে জ্বালিয়ে মারবে।। তাই চুপচাপ ওদের সাথে হাটতে থাকলাম।।
আমরা মোড় ধরে যাচ্ছি।। মিলু জিজ্ঞেস করল,“বামে যাব নাকি ডানে যাব”?? আমি কিছু বললাম না।। সুমন বলল ,“ইমারজেন্সিতে যেতে বলেছে।।” তাই সোজা চানখারপোলের দিকে এগোতে থাকলাম।। রাস্তার দু পাশের দোকান গুলোর সাটারগুলোকে কেমন জানি জেলখানার রডের মত মনে হচ্ছে।। আমি সুমন আর মিলুর মুখের দিকে তাকালাম।। ওদের মুখও শুকনো লাগছে।। বুঝতে পারলাম, ওরাও ভয় পাচ্ছে।। কিন্তু স্বীকার করছে না, আমার মত ভাব নিচ্ছে।। অবশেষে আমরা ইমারজেন্সি গেটের কাছে পৌছালাম।। আজই প্রথম দেখলাম এখানকার ফার্মেসী বন্ধ।। অথচ আমি দেখছি সারারাত এগুলো খোলা থাকে।। কাউকে যে জিজ্ঞেস করব ব্লাড সেন্টারটা কোনদিকে তারও চান্স নাই।। কেউ থাকলে তো জিজ্ঞেস করা যায়!!
আন্দাজে আমরা চলতে থাকি।। দেখি কে যেন ঘুপটি মেরে কলাপ্সিবল গেটের পাশে বসে আছে।। সারা গায়ে চাদর জড়ানো, মাথায় মাফলার পেচানো।। আমার তো হাসি পেয়ে যাচ্ছিল।। এই গরমের সময়ে এমন পোশাক দেখলে কার না হাসি পাবে!! তবে আমার হেসে ফেলার আগেই মিলু ফিসফিস করে ওঠে, ,“এই যে, শুনতে পাচ্ছেন”??
এক বার ডাক দিতেই লোকটা মাথা তুলে তাকালো।। মনে হয় জেগেই ছিলো।। আমি অন্ধকারেও খেয়াল করলাম তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।। কেন জানি মনে হচ্ছে লাললাল একটা আভা।।
সুমন বলল ,“ব্লাড নেয় কোথায় বলতে পারেন??”
লোকটা এমন ভাবে তাকালো যেন আমরা তাকে প্রশ্ন করে মহা অপরাধ করে ফেলেছি।। এক্ষুণি আমাদের গর্দান নেয়া হবে।।
“এত দেরি হল কেন??” কর্কশ কণ্ঠে কে যেন কথা বলে ওঠে।। খেয়াল করে দেখলাম লোকটি বলছে।। মানুষের স্বর যে এমন বাজে আর বিশ্রি হতে পারে আমার জানা ছিল না।। “আমি কি সারারাত জেগে থাকব নাকি??”
আমি খুব অবাক হলাম।। বাপরে!! মনে হয় আমরা আমাদের নিজের প্রয়োজনে এসেছি!! তাকে সময় দিয়ে আমরা দেরি করে ফেলেছি।।
“আসেন আমার সাথে” বলেই গেট খুলে ভেতরে যেতে বলে আমাদের।। আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের জন্যই বসে ছিল লোকটা।। আমরা তাকে ফলো করলাম।। ভেতরে ঢুকলাম।। আমাদের কে একটা ওয়ার্ডের দিকে নিয়ে গেল।। আমাদেরকে ভেতরে দিয়েই সে বাইরে চলে গেল।। যাবার সময় বলে গেল আমরা যেন কথা না বলি আর বাইরে না যাই।।
সুমন কিছু বলতে যাচ্ছিল।। মিলু ওকে আটকাল।।
লোকটা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।। বুঝলাম না দরজা বন্ধ করার কী আছে??
আমি কান থেকে রেডিও এর হেডফোন খুলে ফেলি।। কেন যেন ভয়টা বেশি লাগছে।। এবার বলেই ফেললাম ওদের ভয়ের কথাটা।। ওরাও স্বীকার করল।।
আধা ঘন্টা ধরে বসে আছি কারও আসার নামগন্ধ নাই।। আমরা জড়সড় হয়ে বসে আছি চুপচাপ।। কার মুখে কোন কথা নাই।।
হঠাৎ ভেতরের দরজা খুলে গেল।। কিন্তু কাউকে দেখা গেল না।। সুমন গিয়ে উকি দিল।। কেউ নাই ভেতরে।। ফিরে আসার সময় একটা কন্ঠ ডেকে ওঠে,“সুমন, তুই প্রথমে আয়”!! “তুই তোকারি করে ডাকছে কেন?”আমি মিলুকে জিজ্ঞেস করলাম।।
আমার কথা শেষ না হতেই আবার ভেসে আসে সেই কন্ঠ।“কে কথা বলে রে?? যে বলছিস সে আসবি সুমনের পর।তারপর অন্যজন”।।
আমার রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়।। আমি আর মিলু কেন?? আমাদের তো রক্ত দেবার কথা না।। তাহলে??
আমার মাথা ঘুরে ওঠে।। মিলুর দিকে যে তাকাব সেই সাহস টাও পাচ্ছি না।। মনে হচ্ছে তাকিয়ে দেখব মিলু আমার দিকে লাল লাল চোখে তাকিয়ে আছে।। আমি আমার পায়ের দিকে তাকাই।। দেখি ফোটা ফোটা রক্ত।। ভাল করে খেয়াল করে দেখি পুরো মেঝে জুড়েই রক্ত।। কেউ যেন কিছুক্ষণ আগে মুছে দিয়ে গেছে।।
এরকম ভাবে তো রক্ত পড়ে থাকার কথা না।। আমি মিলুকে দেখাব ভাবলাম।। ওর দিকে তাকাতেই যে দরজা দিয়ে ঢুকেছিলাম তা খুলে গেল।। দেখি পাহারাদার লোকটা।। তবে চাদর আর মাফলার নাই।। খালি গায়ে এসেছে।। গায়ে একফোটা মাংস নাই।। হাড় জিড়জিড়ে।। দেখে আমার তো পড়ে যাবার মত অবস্থা।। কোনমতে মিলুকে আকড়ে ধরি।।
“তোদের মোবাইল ফোনগুলো দিয়ে দে।। তাড়াতাড়ি”!!আমি নিজের অজান্তেই আমার পকেট থেকে আমারটা বের করে মিলুর হাতে দেই।। মিলু আমাদের দুইটা ফোন তার হাতে তুলে দেয়।।
লোকটা হাসতে থাকে।। আমি তাকিয়ে দেখি লোকটার উপরের পাটির দুইটা দাত বড়বড়।। আমার রক্ত হিম হয়ে আসে।। আমার ধারনা মিলুও দেখেছে।। সিওর হলাম যখন দেখলাম মিলু আমার হাত শক্ত করে আকড়ে ধরেছে।।
আমার মনে হল আজ বোধ হয় আমি শেষ।। আজই মনে হয় আমাদের জীবনের শেষ রাত।। আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম।। চোখ বন্ধ করে ফেললাম।। বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ আমার গলায় কামড় বসালো।। চোখ বন্ধ করে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম আমাদের দুজনকে কিছু অশরীরী প্রাণী কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে।। আমি চোখ খুলতে পারছি না।।
হঠাত সুমনের কথা মনে হল।। বেচারা মনে হয় এতক্ষণে শেষ।। আমার কান্না আসে।। ভাবলাম চীতকার করি।। দিতে গেলাম।। দেখি গলায় জোর নাই।। কেউ যেন আমার গলা চেপে ধরে রেখেছে।। আমি চোখ খুললাম।। দেখি সত্যি সত্যি আমার গলা চেপে ধরে আছে কিম্ভুত কিমাকার একটা প্রানী।। জীভটা ইয়া বড় হয়ে আছে।। একহাতে আমার গলা আর অন্য হাতে মিলুর গলা চেপে ধরে আছে।। আমাদের টেনে নিয়ে এগুতে থাকে ভেতরের ঘরের দিকে।। যেখানে সুমনকে নিয়ে গেছে।।
আমি বাধা দিতে থাকি।। মিলুও পিছু টান দেয়।। লোকটার গায়ে প্রচণ্ড শক্তি।। আমাদের দুজনকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে।। চামড়া ঢিলা মানুষের গায়ে এত শক্তি হতে পারে আমার জানা ছিল না।। অবশ্য ওটাতো মানুষ না,রক্ত খেকো মানুষ।।
আমি আমার শেষ সময়টুকু ভাবতে থাকি।। এমন সময় বীকট একটা চীতকার।। সুমনের কন্ঠ মনে হল।। তারমানে ও এখনো বেচে আছে।। চীতকারটা আরো কাছে আসতে থাকে।। মনে হচ্ছে সুমন দৌড়াচ্ছে আর চীতকার করছে।। খুব কাছে দরজার ওপাশে এসে গেছে মনে হচ্ছে।। হঠাত দরজা খুলে গেল।। সুমন দৌড়াচ্ছে।। সুমনের ধাক্কায় আমাদের যে লোকটা ধরে ছিল পড়ে যায়।। আমি আর মিলুও পড়ে যাই।।
“আমীন পালা,দৌড়া”।। সুমন ডেকে ওঠে।। আমি আর মিলু কী বুঝলাম জানি না।। মনে নাই।। শুধু মনে আছে প্রচন্ড একটা দৌড় দিয়েছিলাম সেই রাতে।। পিছনে ফিরে তাকাইনি।। কলাপ্সিবল গেট খোলা ছিলো।। তারা ভাবতে পারেনি যে এমন হতে পারে!! তাই আর গেট লাগায়নি।।
এখনো ভাবি যদি গেটটা বন্ধ থাকত তবে কী হত!!
না আর ভাবতে চাই না সেই রাতের কথা, যেটা মনে হলে এখনো গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।।
ইমারজেন্সি থেকে বের হয়ে দেখি আকাশে চাঁদ নাই, সবদিকে অন্ধকার।। দৌড়ানোর সময় মিলু পড়ে গিয়েছিলো হোচট খেয়ে।। আর আমার পায়ের যে আঙ্গুলটা উঠে গেছে ডাক্তার বলেছে আর ভাল হবে না।। তাতে কী!! বেঁচে যে আছি সেটাই বা কম কী!! বাস্তবে যে এমন হবে কল্পনাও করিনি কখনো।।
সুমনের গলায় দাঁত বসিয়ে ছিল।। রুমে ফিরে দেখি সারা শরীর রক্তে মাখামাখি।। এখনো সারেনি পুরোপুরি।। আর কিছুদিন লাগবে মনে হয়।। তবে দাগটা থেকে যাবে মনে হয় সারাজীবন!!

শেয়ার করেছেনঃ Areef Ameen

।। ভূত নিয়ে কিছু কথা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, July 29, 2011 at 6:27pm
( পৃথিবীর একটি বহুল প্রচলিত একটি জিনিস ভূতের ভয়। একটি রহস্যময় জিনিস। ভূতের ব্যাপারে পৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। ভূত নাই এবং আছে । কিন্তু যারা বলে ভূত নাই তারাও ভূত ভয় করে।) ভূত গোলাকার হতে পারে। ভূতের আকার হতে পারে কুয়াশা, বাষ্প বা পানির মতো। মানুষের ছায়ার মতো হতে পারে ভূত। দেখা গেল কোনো মানুষ নেই কিন্তু একটা ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। তাহলে নিশ্চিত হতে হবে ওটা ভূত। ভূত আবার একটি অদ্ভুত চেহারার আর অদ্ভুত শরীরের মানুষের আকৃতিও নিতে পারে। তবে এরকম ভূত দেখা যায় না বললেই চলে। ভূত নিজেকে যে কোনো জায়গায় প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু নির্জন জায়গায় নিজেকে হাজির করতে তাদের পছন্দ। আবার কিছু ভূত বিশেষজ্ঞ মনে করেন বুদ্ধিমান ভূতেরা নির্জন এলাকার চেয়ে জনাকীর্ণ এলাকাই পছন্দ করে বেশি। এতে তাদের ধরা পড়ার সম্ভবনা কম। বাংলার ভূতরা নানান নামে পরিচিত। ভূতদের জাতিভেদও আছে। মানে পুরুষ ভূত তো আছেই, স্ত্রী ভূতও আছে। স্ত্রী ভূতকে পেত্নী হিসেবেই ডাকা হয়। পেত্নীর পরেই দাপুটে স্ত্রীভূত হচ্ছে শাকচুন্নি। পুরুষভূতদের মধ্যে সবার প্রথমেই আছে ব্রহ্মদৈত্য। এরা সাধারনত খড়মপায়ে ঘুরে বেড়ায়। মধ্যরাতে খড়মপায়ে কাউকে হাঁটতে শুনলেই বোঝা যাবে এরাই ব্রহ্মদৈত্য। এদের বসতি সাধারনত বেলগাছে। কিংবা তালগাছ-বাশঝাড়ে হতে পারে। তবে সবচেয়ে মঝার ঘটনা হচ্ছে; মেয়ে ভূত ছেলে মানুষের সাথে, আর পুরুষ ভূত মেয়েদের সাথে দেখা করে এবং ভয় দেখায়। ভূত সমাজে প্রতিবন্ধী ভূতও আছে । যাদেরকে ল্যাংড়া ভূত অথবা কানা ভূত বলা হয় । ভূত সমাজের সবচেয়ে ভয়ংকর ভূত প্রতিবন্ধী ভূত । আরো কিছু ভূত আছে তাদের নাম কন্ধকাটা ভূত। এদের মাথা নেই আছে কেবল ধড়। আরো আছে পেঁচো ভূত। এরা টার্গেট করে শিশুদের। ওরা শিশুদের ভয় দেখিয়েই মজা পায়।
বাঁশ-ঝাড়ে থাকে ঝেরুভূত। ঝেরুভূতের কারণেই নাকি বাঁশঝাড়ের বাঁশেরা এমন শুয়ে থাকে। যেমন আমি একদিন রাতে একা একা আসছি এমন সময় পুরো বাশঝাড় আমার উপরে পড়বে অবস্থা । পরে একসপ্তাহ ঝর ছিল। রাতে ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে যায় যে ভূত, তার নাম নিশাভূত। আর হাঁড়াভূত নামে ভয়ঙ্কর ভূত আছে। এরা রক্ত পান করে, ঘাড় মটতে দেয়। ভূতেরা নানান ধরনের হয় । কেউ দুটো তালগাছের সমান লম্বা। কারো কারো হাতপা এত লম্বা যে, যত দূরেই থাকুক যে কোনো কিছু এরা ধরতে পারে। এবং যে কোনো জায়গায় এরা নিমেষে যেতে পারে। আবার ইচ্ছে মতো হাত বা পা লম্বাও করতে পারে। কারো কারো শরীর আবার কেবল হাড় দিয়েই গড়া। এদের চোখদুটো কোটরে ঢোকানো। তবে দাঁত বত্রিশটিই বর্তমান। কারো কারো আবার ফোকলা দাঁতও আছে। ফোকলা দাঁতে শিরশিরিয়ে হাসে। বেশিরভাগ ভূতেরই গায়ের রঙ কালো। মেয়ে ভূতদের নাক সবসময়ই থ্যাবড়ানো। কারো কারো আবার একটা পা। কারো আবার পায়ের পাতা থাকে পিছনের দিকে। কোনো কোনো ভূতের লেজও থাকে। শেষকথা,
ভূতকে ভয় পাবেন না। যদিও আমি ভয় পাই। আমার ক্ষুদ্র গবেষণার এখানেই সমাপ্তি। আরকিছু জানতে পারলেই আপনাদের জানাবো । কথা দিলাম । এখন আমার ভয় করছে যদি ভূতেরা আমাকে বলে আমাদের নিয়ে তুমি কেন লিখেছ ? আমি কি বলব ? আপনারাই বলে দিন।

শেয়ার করেছেনঃ Razib Chandra Datta

।। ২ টি অদ্ভুত ঘটনা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, July 29, 2011 at 10:02pm
এটা আমার নানু বাড়ির ঘটনা।। নানু বাড়িতে একটা পাগল ধরনের লোক থাকতো।। সে সবসময় একটু এলোমেলো থাকতে পছন্দ করতো।। একদিন দুপুরে সে মসজিদে গিয়ে বসে পড়ে।। কিছুক্ষণ বসে থাকতে থাকতে তার ঘুম চলে আসে এবং এক পর্যায়ে সে ঘুমিয়ে যায়।। ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রচণ্ড জোরে এক থাপ্পর খেয়ে।। সে চোখ খুলেই “কে কে” বলে চিৎকার করে উঠে।। সাথে সাথে আবারো থাপ্পর।। কে যে থাপ্পর দিচ্ছে তা সে খুঁজে পাচ্ছে নাহ।। হটাৎ সে একটা আওয়াজ শুনতে পায়।। তাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, “এই রকম অপবিত্র শরীর নিয়ে কখনো মসজিদে প্রবেশ করবে নাহ, আর মসজিদে ঘুমাবে নাহ।।” এটা শুনে সে তো ভয়েই দৌড়।। আমার নানু গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলেন।। নানু বাড়িতে এসে পাগলটা সব ঘটনা খুলে বলল।। পাগল মানুষ বলে কেউ ওর কথা প্রথমে বিশ্বাস করেনি।। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখা গেলো গালে সত্যি সত্যি থাপ্পরের বড় বড় দাগ।।

আরেকটি ঘটনা এরকম।। প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বিশাল আকৃতির কুকুর এসে উঠোনে চুপচাপ বসে থাকতো।। সন্ধার পর সে গায়েব হয়ে যেত।। আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও তাকে কোথায় পাওয়া যেত না।। আশেপাশের গ্রামে অনেক খোঁজ খবর করা হয় কিন্তু তারা কেউই সেই বিশাল আকৃতির কালো কুকুরটা সম্পর্কে কোন ধারণা দিতে পারলো নাহ।। সে প্রতি সপ্তাহেই ঐ একদিনই আসতে, চুপচাপ বসে থাকতো এবং সন্ধার পর যেনও ঠিক হাওয়ায় মিলিয়ে যেত।। কুকুরটার রহস্য আজও কেও বের করতে পারেনি।।

লেখক / লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।

।। আরেকটি কবরস্থানের রহস্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, July 29, 2011 at 10:03pm
আমার এক বড় ভাই একদিন গ্রামের ঐতিয্যবাহী বলি খেলা দেখে বাড়ি ফিরছিলেন।। রাত তখন ২.৩০ এর মত হবে।। তাদের বাড়ি থেকে একটু পশ্চিম দিকে একটা সামাজিক কবরস্থান আছে।। সেখানে গ্রামের অনেকেরই কবর আছে।। তিনি আসতে আসতে কবরস্থানের কাছে চলে আসলেন ।। তখন হটাত কেনও যেন তার খুব ভয় লাগলো।। তিনি একটা কবরের কাছে ভয়ে দাড়িয়ে গেলেন।। এমন সময় তিনি কোরান পড়ার আওয়াজ শুনতে পেলেন।। তিনি খেয়াল করলেন মসজিদের হূজুরের গলা।। তিনি সাহস করে উকি মেরে হুজুরকে দেখে কবরস্থানে উঠলেন।। গিয়ে হুজুরের পাশ দিয়ে বসলেন।। হুজুর তাকে বললেন, “এতো রাতেএখানে কেনো আসছো??” তিনি বললেন, “আমি বলি খেলা দেখে আসতেছি।। কিন্তু কবরস্থানের পর্যন্ত আসার পর আমার ভয় করতেছে।। আপনাকে দেখে উঠে এলাম।।” হুজুর বললেন, “যাও তুমি বাড়ি চলে যাও।।” তিনি বললেন, “আমার ভয় করে!! আপনি যদি একটু দিয়ে আসেন।।” হুজুর রজি হলেন এগিয়ে দিতে।। দুজন মিলে রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন।। একটু আসার পরে হুজুর বললেন, “যাও এবার চলে যাও।।” ভাইয়া বললেন, “আর একটু যদি আসতেন।।” এই ভাবে হুজুর তাকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলো।। তিনি তার মাকে ডেকে বললেন, “তাড়াতারি দরজা খুলেন।। হুজুর আসছে!!” তার মা হুজুরকে নিয়ে ঘরে আসতে বললো।। তিনি পিছন ফিরে দেখেন হুজুর নাই।। পরের দিন তিনি হুজুরকে গিয়ে বললেন, “হুজুর, কাল রাতে আমাকে দিয়ে আসার জ্ন্য আপনি আমাদের বাড়িতে গেছেন।। কিন্তু ঘরে যাননি কেন?? আম্মা খুব রাগ করেছে।।” শুনে হুজুর যেন আকাশ থেকে পড়লেন।। বললেন, “কই আমিতো কাল আমার বাড়িতে ছিলাম।। বাড়ি থেকে রাতের বেলা বেরই হইনি।।” তখন তিনি হুজুরকে সব খুলে বললেন।। এরপর কবরস্থানটির চারদিকে দেয়াল করে ঘিরে দেওয়া হল যাতে কেউ অযূ ছাড়া উঠতে না পারে।। শেয়ার করেছেনঃ Omar Faruqe

।। জীনের উৎপাত (নতুন গল্প) ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, July 29, 2011 at 10:04pm
ঢাকার এক জনবহুল ও পরিচিত জায়গায় আমাদের বাড়ি।। ১৯৬৫ সাল থেকে একই জায়গায় আমার দাদা তার স্ত্রী, সন্তান সন্ততি নিয়ে বসবাস শুরু করেন।। প্রথমে টিনের ঘর, তারপর একতলা পাকা দালান।। তারপর ৩/৪ তালা পর্যন্ত হয়েছে।। বিয়ের পর থেকে প্রতি তলায় বাপ চাচারা তাদের ঘর সংসার নিয়ে থাকেন।। এই বাড়ির সামনেই একটা উঠান ছিল যেখানে আম ও লটকন, এই দুই বৃহৎ গাছ দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি।। পরে বহুতল করার সময় গাছ দুটি কেটে ফেলা হয়।। সে যাই হোক।। আমরা ছোটো বেলা থেকেই শুনে এসেছি যে "লটকন গাছে জ্বিন থাকে"।। যদিও আমি গাছে জ্বিন কোনদিন দেখিনি।। তবে তার উপস্থিতি যে অন্যান্য জাগায় টের পাইনি সেটা বলতে পারবনা।। কাজেই ছোটো খাটো কিছু ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।। আমার এক চাচা।। অত্যন্ত সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান।। আশির দশকে তিনি যখন ২৪/২৫, তখনি উনাকে জীনে ধরে।। আমার দাদা একজন বিশাল মওলানা ছিলেন যিনি ১৯৮৮ তে গত হয়েছেন।। তার জীবদ্দশায় উনি শত চেষ্টা করেও সে জ্বিন ছাড়াতে পারেননি এবং আজও দেখা যায় সে জিন বহাল তবিয়াত এ আছে।। কিছু মুরুব্বিরা সেটাকে জ্বিন না বলে পরী (জ্বিন এর স্ত্রী লিঙ্গ) বলে থাকেন।। তো আমার ওই চাচাকে দেখা যায় উনি দিন দিন অপ্রকৃতস্থ ও অসামাজিক হতে শুরু করেন ।। মাঝে মাঝে উনাকে অত্যন্ত বোকা ও নিরীহ মনে হয়।। আবার অস্বাভাবিক রাগেও ফুসলিয়ে উঠতে পারেন।। দেখা গেল উনি ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন।। জ্বিনে ধরা অবস্থায় উনি যে সব কাজই করতে গিয়েছেন না কেন, টিকে থাকতে পারেননি।। অথবা তাকে টিকে থাকতে দেয়া হয়নি।। আমাদের এক পারিবারিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের ভাতা পেয়ে এখন উনার সংসার চলে।। কিছু ব্যাপার আমার অনেক ভয় লাগত যেমন, যখন দেখতাম উনি অদৃস্য কারো সাথে কথা বলছেন।। হয়তবা উনার ঘরে, নাহলে ছাদে, ঠিক সন্ধা বেলায়।। দেখা যেত উনি ছাদে টাঙ্কির কিনারায় দাড়িয়ে হাত দুটি উচু করে যেন অদৃস্য কাউকে উদ্দেস্য করে তালি বাজানোর ভঙ্গিতে জুতা দিয়ে পেটাচ্ছেন।। আবার কোনো অনুষ্ঠানে (আমাদের বিশাল গুষ্ঠির মিলনমেলা হয় ২/৩ মাস অন্তর) দেখা যেত সবার সামনেই উনি উপরের দিকে তাকিয়ে কারো সাথে বিড় বিড় করে কথা বলছেন।। আচমকা হেসে উঠছেন।। হাত দিয়ে ইশারা করছেন।। এছাড়াও একবার দেখেছিলাম উনি অদৃস্য কাউকে উনার পাশে নামাজের জন্য দাড়াতে বলে জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন !! এধরনের ছোটখাটো বিভিন্ন ধরনের ঘটনা যদি এখন দেখি তাহলে ভয় পাইনা তবে কিশোর বয়সে ভয়ে হতভম্ব হয়ে যেতাম!!
আমার এক সুন্দরী চাচাত বোনকেও একবার জ্বিনে ধরেছিল।। সে একদিন সন্ধার বেলায় সেই টাঙ্কির কিনারায় চুল ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে ছিল অতঃপর তাকে ওই অবস্থাতেই জ্বিনে ধরে।। তার বড় বোনকেও শুনেছি জ্বিনে ধরেছিল ঠিক একই অবস্থায় একই সময়ে আরো আগে।। আর চাচাকে ধরেছিল রাতের বেলায়।। সামনের দালানে এক লোক ছাদে উঠার পর চাচাকে দেখে বৃষ্টির মধ্যে তিনি একই ভাবে এক দৃষ্টিতে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছেন।। অতপর উনি বাসার সবাইকে ঘটনাটি জানান এবং দাদা গিয়ে চাচাকে নিয়ে আসেন।। ওই বোন দুটিকে পরবর্তিতে জ্বিন ছেড়ে দিয়েছিল কিন্তু আমার চাচাকে আজও ছাড়েনি।। অন্যান্য জ্বিনে ধরা মানুষদেরকে যেমন দেখা যায় তারা নিজেরা তাদের শরীর কেটে ফেলছে, নিজেকেই নিজে আঘাত করছে।। কিন্তু আমার চাচার সেরকম বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি তবে তিনি মানসিক ভাবে অনেক অপ্রকৃতস্থ হয়ে পরেন এবং শারীরিক শক্তিও প্রায় হারিয়ে ফেলেন।। এছাড়াও আমাদের বাসায় এক বুয়া থাকত।। তাকে ঘিরেও কিছু ঘটনা, আমার নিজের কানে শোনা জিনের অস্পষ্ট কন্ঠস্বর এবং ওই বাড়িতে বিভিন্ন অদ্ভুদ ধরনের কিছু শব্দ শোনার ছোটখাটো ঘটনাও আছে।। সেগুলো পরবর্তিতে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।।

শেয়ার করেছেনঃ মোস্তফা রাজি

।। ডরমিটরিতে ভূত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, July 30, 2011 at 10:19pm
২০০৬ সাল।। চাকুরীর সুবাদে ডর্মিটরীতে থাকতাম।। সেটা ছিল UNO এর বাসা থেকে একটু দুরে।। ২তলা বিল্ডিং।। এর দুই দিকেই ধান চাষ হতো।। জানালা গুলো ছিল গ্লাসের।। আমার খাটের পায়ের দিকে একটা জানালা ছিল।। কোন এক বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ফিরে দেখি অন্য সবাই বাড়ি চলে গেছে।। ডর্মিটরীতে আমি একা।। রাত ১টা পর্যন্ত টিভি দেখে বাল্ব অফ করে শুয়ে পড়লাম।। বাইরে ১০০০ ওয়াটের ৪টা বাল্বের কারনে ধান ক্ষেত, পুকুর সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখি জানালার গ্লাসের বাইরে থেকে কালো চাদর মুড়ো এক লোক রুমের ভিতরটা দেথার চেষ্টা করছে।। আমি চোর ভেবে ঘুমের ভান ধরে দেখছিলাম সে কি করে।। সে একই ভাবে দাড়িয়ে রুমের ভিতরটা দেখছে।। কিছুক্ষন চুপ থেকে 'এই কে' বলে শব্দ করলাম।। তখন লোকটা জানালা থেকে সরে গেল।। আমি দ্রুত বিছানা ছেড়ে জানালায় দাঁড়িয়ে স্থির হয়ে গেলাম।। দেখলাম, লোকটা আস্তে করে ধান ক্ষেতে নেমে পুকুরের দিকে যাচ্ছে কিন্তু তার পা সহ শরীরের যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে কোন মাংস নেই শুধু হাড় মানে কঙ্কাল।। আর ঐ লোকটা ধান গাছের কয়েক ফুট উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছে।। পা মাটিতে পড়ছে না।। হেঁটে পুকুর পর্যন্ত গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে UNO এর বাসার দেয়াল টপকে ঢুকে পড়লো।। সারা রাত আর ঘুমুতে পারিনি সেদিন।।
শেয়ার করেছেনঃ bachelorlife@ovi.com

।। আধিভৌতিক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, July 30, 2011 at 10:58pm
আমি মৃদুল কান্তি ঘোষ।আজ আমি আপনাদের সাথে যে ঘটনাটি শেয়ার করবো তা আজ থেকে ছয় বছর আগে আমার জীবনে দেখা একটি বাস্তব ঘটনা।।তখন আমি ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি।।তখন আমরা গ্রামে থাকতাম।।আমাদের গ্রামটা হল যশোরের নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার অন্তরর্গত একটি গ্রাম।।নাম ধোপাদহ।। আমাদের বাসার সামনে অনেকগুলো বাড়ি আছে যেটা ছিল কুমোরপাড়া।।তাদের একটা ছেলে ছিল নাম খুদিরাম।।বয়স ২২ অথবা ২৩ হবে।। তার একটা রোগ ছিল, যাকে গ্রাম্য ভাষায় “মিরগীর ব্যারাম” বলে।। তারা মাটির খেলনা, হাড়ি, কলস বানিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করত।।সব বাজার সকালে শুরু হতো তাই তারা ভোরে আযান দেওয়ার আগে নৌকায় তাদের সব তৈরি জিনিস তুলতো।।এবার আসল ঘটনায় আসি।।একবার ওই ছেলেটি ও তার বাবা আযান দেওয়ার আগে সব জিনিসপত্র নৌকায় উঠাচ্ছিল।।প্রায় সব জিনিস যখন উঠানো শেষের পথে তথন প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেবার জন্য ওই ছেলেটি টর্চলাইট হাতে নৌকার এক কোণায় বসে।।অপর দিকে তার বাবা নৌকা সাজানোর কাজে ব্যাস্ত।।হঠাৎ তার বাবা ঝপ করে একটা শব্দ শুনতে পেল।।তাকিয়ে দেখে খুদিরাম নেই।।অনেকবার ডাকার পরও কোন সাড়া পাওয়া গেল না।।তখন তিনি পানিতে ঝাপ দেন কিন্তু কোথাও সেই ছেলেটিকে পাওয়া যায়না।। তার বাবা এক দৌড়ে বাড়ি এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে নদীর ঘাটে যায়।।তখন থেকে খোজাখুজি শুরু হয়।।অনেক খোজাখুজির পর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে একজন পেল।।প্রথমে ছেলেটার চুল তার হাতে ঠেকল।।তারপর সেই চুল ধরে টেনে তুললো মৃত অবস্থায়।।সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল যখন তাকে টেনে উঠানো হল তখন দেখা গেল সে ওই ভোর বেলা প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেবার সময় যে ভাবে বসে ছিল, ঠিক পানির নিচেও সে সেই টর্চলাইট হাতে সেভাবেই বসে ছিল।। প্রানহীন দেহে।।তারপর বিকালের দিকে যখন তাকে পোড়ানো হয়েছিল তখন তার দেহের সম্পূর্ন অংশ পুড়ছিল না।।অবশেষে তার ওই অংশগুলো মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছিল।।সেদিনকার কথা মনে হলে আজও গায়ের ভিতর শির শির করে ওঠে।।

শেয়ার করেছেনঃ Mridul Ghosh

।। করুণ মৃত্যু ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, July 30, 2011 at 11:30pm
থার্টি ফার্স্ট নাইট।। রোহান ও তার কয়েক ফ্রেন্ড মিলে রাত ২ টা পর্যন্ত মজা করলো।। এখন হলে ফেরার পালা।। তারা মানুষ ৭ জন কিন্তু রিকশা পেলো দুটো।। ২ রিকশায় না হয় ৬ জন হল, কিন্তু রোহান?? ফ্রেন্ডরা তাকে বলল, “চল রোহান, এক রিকশায় ৪ জন উঠে পড়ি।।”
“নাহ রে।। তোরা যা।। আমি আসতে পারব।।” রোহানের উত্তর।। চারিদিকে নিস্তব্ধতা।। খুব দূরে একটা কুকুর মতন কিছু দাঁড়িয়ে আছে।। খোলা আস্কাহের নিচে অন্ধকারকে সাথি করে হাঁটছিল রোহান।। হটাৎ একটা রিকশা দেখতে পেলো।।
“ভাই, হলে যাবেন??”
“জী যামু।।”
“কত??”
“১০ টাকা দিয়েন।।”
রোহান আকাশ থেকে পড়লো।। এতো রাত, কোন রিকশা নেই, তবুও ২০ টাকার জায়গায় ১০ টাকা রিকশা ভাড়া চাইলো!! যাই হোক, রিকশায় চড়ে বসলো রোহান।। এই শুনশান নিরবতার মাঝে শুধু রোহান আর রিকশাওয়ালা।।
গোরস্থানের সামনে দিয়ে যাবার সময়ই রোহান কেমন যেনও আঁতকে উঠলো।। সে যা দেখল টা অবিশ্বাস্য।। দেখল, রিকশাওয়ালা উল্টো পায়ে প্যাডেল চাপছে।। রিকশাওয়ালার মুখের দিকে এই পর্যন্ত একবারও তাকায়নি সে।। চেহারা দেখার চেষ্টা করতেই আবারো আঁতকে উঠলো রোহান।। “একি!! এ কি দেখছে সে?? এ কিভাবে সম্ভব??”
এর মাঝে হলে পৌঁছে গেছে রোহান।। টাকাটা দিয়ে দ্রুত কেটে পড়লো।। রিকশাওয়ালার দিকে আরেকবার তাকানোর সাহস হল নাহ।। তাকালে হয়তো দেখতে পেত তাকে কেমন লোভী চোখে দেখছে রিচকশাওয়ালাটা!!
রুমে গিয়ে সাকিবকে সব ঘটনা খুলে বলল রোহান।। সান্তনার সুরে সাকিব বলল, “তুই বরঞ্চ আজ রাতটা আমার রুমে থেকে যা।।”
কথাটা মনে ধরল রোহানের।। রাজি হল সে।। মধ্যরাত।। রোহান, সাকিব দুজনই ঘুমুচ্ছে।। এর মাঝে কে যেনও রোহানের গায়ে আঁচড় কাটল।। চমকে উঠে জেগে গেলো রোহান।। ভীত স্বরে বলল, “সাকিব, মাঝরাতে দুষ্টমি করিস নাহ তো।।” সকালে সূর্যের আলো চোখের উপর পড়তেই ঘুম ভাঙ্গে সাকিবের।। কিন্তু ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই আবার মূর্ছা গেলো সে।।
বেলা ১০ টা।। সাকিবের রুমের সামনে অগনিত ছাত্রের ভিড়।। সাকিবের রুমে রোহানের ছিন্ন বিচ্ছিন লাশ ঝুলছে।। আর রোহানের কাঁটা মুণ্ডুটা সাকিবের টেবিলের উপরেই রাখা।। কেউ জানে না রোহানের মৃত্যুটা কিভাবে হল।।
কাঁটা মুণ্ডুটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাকিব।। অনেক দিনের বন্ধু ওরা।। অনেক দিনের।। শেয়ার করেছেনঃ Abu Sahal Fahim
Sylhet MAG Osmani Medical College

। পাপের প্রায়শ্চিত্ত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, July 31, 2011 at 12:09am
এই পোস্টে কিছু বড়দের কথাবার্তা আছে।। তাই, কম বয়সীরা নিজ দায়িত্তে পড়ুন।। ধন্যবাদ।। (অ্যাডমিন) রাখী(ছদ্মনাম) মা-বাবার একমাত্র মেয়ে।। বাবা দেশের বাইরে থাকায়, আর মা ডাক্তার হওয়ায় মা-বাবা ওর এতো কেয়ার নিতে পারেনি।। ফলে যা হয়, ইচড়েপাকা ফ্রেন্ডদের সাথে মিশে ও নিজেও অমন হয়ে যায়।। ক্লাশ ১০-এ ওর প্রেমিকের সংখ্যা ৪ এ গিয়ে ঠেকে!! জয় ওর সর্বশেষ প্রেমিক!! জয় রাখীকে সত্যিই ভালোবাসত।। বলা যায় পাগলের মত।। ৪মাসের এই রিলেশনে দৈহিক সম্পর্ক ছাড়া কিছুই বাদ থাকে না!! এতে জয় রাখীর প্রতি আরো দূর্বল হয়ে পরলেও, রাখী এই রেলেশনটাকে সিরিআসলি নেয় না।। শুধু তাই না খামখেয়ালীর বশে সম্পর্ক ভেঙ্গে দেয়!! জয় অনেক চেস্টার পরো যখন ব্যর্থ হয়, তখন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে!! ২ হাতের রগ কেটে ফেলায় রক্তক্ষরণে জয় মারা যায়।। মারা যাওয়ার ৩দিন পর শ্মশানে ওকে পোড়ানো হয়।। জয় কোনো সুইসাইড নোট না রেখে যাওয়ায় ওর ফ্যামিলির কেউ কিছুই বুঝতে পারে না।। ওর ফ্রেন্ডরা ওর বাসায় রাখীর ব্যাপারে কিছু জানায় নাই।। জয়ের মৃত্যুর কয়েকমাস পর য্খন রাখীসহ সবাই ওর কথা ভুলতে বসেছে তখন কালী পূজা আসে।। পূজার দিন রাখী ওর মাকে নিয়ে শ্মশানঘাটের কালী পূজায় যায়।। শ্মশানে ঢোকার পর থেকেই রাখীর মনে হতে থাকে কেউ যেন ওকে নজরবন্দি করে ফেলেছে!! ও যেদিকেই যায়, ওর মনে হতে থাকে কেউ যেন ওকে দেখছে।। ব্যাপারটা প্রথমে ওর স্বাভাবিক লাগলেও একসময় ওকে প্রচন্ড আতংকে পেয়ে বসে।। এতো লোকের ভীড়ে প্রচন্ড ভয়ে ও দিশেহারা হয়ে যায়।। এমন সময় ও, ওর মার সাথে মন্দিরে ঢোকে।। পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ নেয়ার সময় উনার দিকে তাকাতেই ও দেখে, এ যে জয়!! এক মুহূর্তে ওর চোখের সামনে পুরোনো সব স্মৃতি ভেসে উঠে।। সাথে সাথেই ও জ্ঞান হারায়।। পূজার মাঝে এমন একটা ঘটনা ঘটায় সবাই ভীড় করে ফেলে।। জ্ঞান ফেরানোর জন্য জলছিটা দিতেই জ্ঞান আসে।। তবে দেখে মনে হচ্ছিলো ও যেন একটা ঘোরের মাঝে আছে।। আচমকা রাখী উঠে দাড়ায়।। কেউ কিছু বুঝার আগেই দৌড়ে গিয়ে কালী মূর্তির হাত থেকে দা-টা নিয়ে নেয়!! রাখীকে দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়।। ওকে দেখে বুঝাই যাচ্ছিলো অশরীরী আত্মা ওর উপর ভর করেছে!! রাখী দা হাতে নিয়ে এক ধ্যানে ওর আর জয়ের কথা সব বলতে থাকে।। সম্পর্কের শুরু থেকে চুমু খাওয়া, একে-অন্য কে স্পর্শ করার যত কাহিনী আছে সব।। ঘোরগ্রস্থ মানুষের মত বলতে থাকে সে।। বলা শেষ হওয়ার পর ও একদৌড়ে শ্মশানের মাঠে চলে যায়।। ঠিক যেখানে জয়কে পোড়ানো হয়েছিলো।। সবাই দৌড়ে ওর পিছন পিছন গেলেও ওকে বাচাতে পারলো না!! মাঠে গিয়েই রাখী ওর হাতের দা-টা দিয়ে নিজের ২ হাতে কোপ দেয়।।
ঠিক জয়ের মতই রক্তক্ষরণে রাখী মারা যায়।। আর এতে জয়ের প্রতিশোধের সাথে সাথে হয়
রাখীর পাপের প্রায়চিত্ত!! শেয়ার করেছেনঃ অমায়িক ছেলে

।। অদ্ভুতুরে ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, July 31, 2011 at 10:29pm
ঘটনাটা ২০০৮ সালের।। তখন আমি ক্লাস ১০ এ পড়ি।। আমার আম্মু অনেকদিন ধরেই অসুস্থ।। তাই আমার বাবা আমার আম্মুকে নিয়ে ঢাকায় যায় চিকিৎসার জন্য।। পুরো বাসায় আমি একা।। যেহেতু আমি একা, তাই আমার একটা ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে আবাশায় আসতে বলি।। আমার ফ্রেন্ডের বাসা টা আমার বাসা থেকে ৪ ঘর পরেই।। আমার ফ্রেন্ডের নাম ছিল মারুফ।। যখন রাত ৯.৩০, তখন আমি মারুফকে বলি, “মারুফ, যা তোর বাসা থেকে কিছু তরকারি নিয়ে আয়।। আমি হোটেল থেকে ভাত কিনে নিয়ে আসি।।” এই বলে আমরা ২জন বাসা থেকে বের হই।। ১০ মিনিট পর হোটেল থেকে ভাত নিয়ে আসার পথে মারুফের সাথে আমার দেখা হয়।। মারুফকে খালি হাতে দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।। তাকে রাগী গলায় বলি, “কিরে, তোকে পাঠালাম তরকারি আনতে আর তুই এখানে খালি হাতে দাঁড়িয়ে আছিস!! তরকারি কই??” মারুফ কোন কথা না বলে দাঁড়িয়ে থাকে।। মেজাজ আর বেশি খারাপ হয়ে গেলো আমার।। যেহেতু সে তরকারি আনেনি, তাই আমাকে এখন আবার হোটেলে যেতে হবে তরকারি আনতে।। অগত্যা, কি আর করা।। মারুফকে ঘরের চাবি আর ভাতের বাটিটা দিয়ে বললাম, “যা তুই ঘরে যা।। আমি তরকারি নিয়ে আসি হোটেল থেকে।।” হোটেলে যাওয়ার সময় আমি যা দেখলাম তাতে আমার পা অবশ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হল।। মনে হচ্ছিল যেনও হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি আমি।। আমি পুরো হতভম্ব হয়ে যাই আর দেখি মারুফ তরকারি নিয়ে আসতেছে।।
মারুফ আমার কাছাকাছি এসে বলে, “কিরে, রাস্তায় কি করিস?? আর ভাত কই??” আমি তখন দোয়া দরুদ পড়ে বাসার দিকে দৌড় দেই।। যেয়ে দেখি, বাসার গেটে চাবি ঝুলানো।। ভাত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘরের সামনের মেঝেতে পড়ে আছে।। তাহলে আমি কাকে চাবি আর ভাত দিলাম?? ঐটা তাহলে কে?? কেনই বা এসেছিলো?? ক্ষতি করার ইচ্ছে থাকলে ক্ষতি করলো না কেন?? পরে আমি মারুফকে পুরো ঘটনা খুলে বলি।। ঘটনা শুনে মারুফ আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়।। সেই রাত আমি মারুফদের বাসায় কাটাই।।

শেয়ার করেছেনঃ কামাল ঊদ্দিন মিলন।।

।। অন্ধকারের যাত্রাসঙ্গি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, July 31, 2011 at 10:59pm
আমি আজকে যে গল্পটা বলব,অদ্ভুতভাবে সেই গল্প আমি বেশ কয়েকজনের কাছে শুনেছি।। তাদের মাঝে একজন আবার দাবী করেছে যে গল্পের নায়ক আজিমপুরে থাকেন(সত্যি মিথ্যা জানি না)।। যাই হোক গল্পটা শুরু করছি।। ঘটনাটা ঘটেছে ঈশ্বরদী রুটে।। প্রায় মধ্যরাতে।। সেই রূটের দূরপাল্লার একটি বাস রাত আনুমানিক ১২-১২.৩০ টার দিকে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।। বাসে যাত্রী ছিল একজন (গল্পের নায়ক), ড্রাইভার আর একজন হেল্পার।। পথে বেশ কয়েকটা স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠানামা করার কথা।। কিন্তু কেন জানি সেদিন কোন স্টপেজ থেকে কোন যাত্রী উঠেনি।। বাসটি শহর ছেড়ে আরো দূরে ছলে গেল এবং একটি জায়গাতে (খারাপ জায়গা,লোকের মুখে শোনা) থামল।। সেখানে দুইজন লোক দাড়িয়ে আছে দেখা গেলো।। তারা বেশ লম্বা চওড়া এবং সাদা আলখেল্লা পরা।। মুখ অন্ধকারে ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না।। তাদের মধ্যে একজনের হাতে ছোট বাচ্চার কাফনে মোড়া লাশ!! তারা ড্রাইভার কে বলল, “আমাদের সামনের কবরস্থানে নামিয়ে দিবেন।।” ড্রাইভার এবং হেল্পার একটু ভয় পেলেও কিছু বলল না।। তারা বাসে উঠে এলো।। তখন মনে হলো বাসে বেশ মিষ্টি একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।। রাতের বাস, তাই লাইটগুলো সব অফ করা।। ড্রাইভারের কাছে বাসটা বেশ ভারি হয়ে গেছে বলে মনে হলো।। যতই স্পীড বাড়ায় বাস আর তেমন এগোয়না।। অদ্ভুত লোকগুলো সারা বাসে এত জায়গা থাকতে গিয়ে বসলো একদম পিছনের সিটে।। বাসের অন্য তিন জনের ততক্ষণে কাহিল অবস্থা।। ভয়ে যেন সিটের সাথে আটকে গিয়েছে।। নড়াচড়া করতে পারছে না।। হঠাৎ মনে হলো, পিছনের সিট থেকে “কড়মড়” করে হাড় চাবানোর শব্দ আসছে!! তিন জনের বুঝতে আর বাকি থাকে না যে এরা সাধারন মানুষ না, এরা অন্যকিছু।। তারা বাচ্চাটাকে শান্তিতে খাওয়ার জন্য এই নির্জন বাসে উঠে এসেছে।। অনেকক্ষন পরে বাসটা অবশেষে কবরস্থানে এসে পৌছাল।। তখন ড্রাইভার তাদেরকে নেমে যেতে বলল।। সেই এক মাত্র যাত্রীটা এরইমধ্যে নিজের সিট ছেড়ে ড্রাইভারের পাশে, দরজার কাছের সিটে এসে বসেছে।। তার এবং ড্রাইভারের মধ্যে কোন কথা হয়ে থাকতে পারে।। ঠিক জানিনা।। লোক দুইটা যখন নেমে যাবে, দরজার কাছে আসা মাত্রই ড্রাইভার লাইট জ্বলিয়ে দিল(সেই যাত্রীর খুব কৌতহোল ছিল যেঁ তারা দেখতে কেমন!!)।। তখন দেখা গেল, তারা মানুষের মতই দেখতে কিন্তু চোখের জায়গায় বিশাল বড় বড় গর্ত।। সেটাই তাদের অশরীরি ভাবটা ফুটিয়ে তুলেছে।। তাদের হাতে আগের মতই ছোট বাচ্চার লাশ (কাফনে মোড়া)।। তারা সেই যাত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর মায়ের বুকের দুধের অনেক তেজ!! তাই আজকের মত বেঁচে গেলি।।" এই বলে তারা কবরস্থানে নেমে গেল।। (লিখতে গিয়ে আমার নিজেরই গা ছমছম করছিল।। যদিও আমি বেশ সাহসী এবং যুক্তিবাদী মানুষ।। জানিনা আপনাদের কেমন লেগেছে!!)

লেখক/ লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।

।। একটি গভীর রাত এবং কিছুকথা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, August 1, 2011 at 10:30pm
তখন ঘড়িটা হাতে নিয়ে দেখলাম।। ঠিক রাত ২.২০ মিনিট।। ঘরের লাইট অফ কিন্তু টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে।। সামনে পরীক্ষা, তাই ইচ্ছে না থাকলেও এই গভীর রাতে আমাকে পড়তে হচ্ছে।। কেমন যেনও তন্দ্রা আসছিলো।। এইভাবে পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না।। হটাৎ করে কিসের শব্দে যেনও ঘুম ভেঙ্গে যায়।। আমি কিছুটা অবাক হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।। ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটা ছুঁই ছুঁই করছে।। আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটা তাল গাছ আছে।। সেই তাল গাছটার পাশের বাসায় কিছুদিন আগে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে।। সেই বাড়ির এক মেয়ে টার রুমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।। এরপর থেকেই সবাই বলাবলি করছে যে, সেই তাল গাছটার ঐদিকে নাকি কিসব কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়।। আর কেউ যদি গভীর রাতে ঐ গাছের নিচ দিয়ে আসে তাহলে নাকি প্রায়ই একটা মেয়েকে গাছে পা দুলিয়ে বসে থাকতে দেখে।। অনেকে তো ভয়ে ঐ রাস্তা দিয়ে বেশি রাতে আসা যাওয়া করা বন্ধ করে দিয়েছে।। আমার অবশ্য এইসব ব্যাপারে বিশ্বাস ছিল নাহ।। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এইসব ভাবছিলাম, এমন সময় আমার চোখ তাল গাছের দিকে গেলো।। কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভুতি হল।। সাড়া শরীর যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।। নিজের চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতে পারলাম নাহ।। দেখলাম, একটি মেয়ে তাল গাছ বেয়ে বেয়ে নিচে নামছে।। তার নামার ভঙ্গিটা অদ্ভুত।। মাথা নিচে দিয়ে পা উপরে দিয়ে নামছে।। এইটুকু দেখে আমি চিৎকার করতে গেলাম।। কিন্তু ভয়ে আমার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল নাহ।। এর মাঝে অনুভব করলাম কে যেনও আমার কাঁধে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাত রাখল।। আমি সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।। সকালে জ্ঞান ফেরার পর মা বললেন, “কি হয়েছে তোর?? আমি তোর রুমে ঢুকে তোকে না দেখে বারান্দায় গেলাম ডাকার জন্য।। কিন্তু, কাঁধে হাত দিতেই তুই অজ্ঞান হয়ে গেলি যে??” আমি মাকে সব খুলে বলতেই মা বললেন, এতো রাত করে আর বারান্দায় যাবি নাহ।। আমি এখনও অনেক রাত করে পড়ি, কিন্তু রাতে বারান্দায় যাওয়া তো দুরের কথা, আমি জানালা দিয়েও বাইরের দিকে তাকাই নাহ।। শেয়ার করেছেনঃ Nusrat Jahan Ivy

।। সোবহানবাগের ঘটনা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, August 1, 2011 at 10:59pm
লেখক বলেছেনঃ “এই ঘটনাটি শুধু মাত্র তাদের জন্য যারা প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটিতে বিশ্বাস করেন।। এখানে শেয়ার করা প্রত্যেকটি ঘটনাই সত্য।। বিশ্বাস করা বা না করা আপনার উপর।। ধন্যবাদ।।” এই জগতে সত্যিকারের শয়তান/জিন এদের অস্তিত্ত আছে।। তারা থাকে হয়তো বা খুব গোপন কোনো অন্ধকারাচ্ছন ঘরে।। অথবা থাকতে পারে খুব সাধারন কোনো জায়গায়।। এই ঘটনাটি খুবই সাধারন একটি পরিবারে ঘটা।। অবিশ্বাস হয়তো, কিন্তু বানানো নয়।। আমার দাদা যখন তার পরিবারসহ একটি নতুন জায়গায় শিফট করেন তখন তিনি খুবই খুশি ছিলেন।। কিন্তু, চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে।। তাদের নতুন বাড়িটা ভালো ছিল নাহ।। আমরা যা দেখি এবং আমরা যা অনুভব করি তার মাঝে একটি দরজা আছে।। যখন সেই দরজাটি খুলে যায়, তখন আমাদের ভয়ঙ্করতম দুঃস্বপ্ন আমাদের জীবনে বাস্তবতা হয়ে নেমে আসে।। এটি ১৯৬৬ সালের ঘটনা।। আমার দাদা, মৃত বাসুদেব দাসগুপ্তা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেক্রেটারিতে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন।। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি সপরিবারে সোবহানবাগ অফিসার কোয়ার্টারে উঠেন।। আমার বাবা তখন ৭ম শ্রেণীর ছাত্র।। এখনকার সোবহানবাগ হয়তো আপনার কাছে খুবই আলো ঝলমলে লাগে।। রাস্তায় রাস্তায় বড় বড় দোকান, শপিং মল ইত্যাদি ইত্যাদি।। কিন্তু ৪৪ বছর আগে সেটা ছিল একটা বিরাট জঙ্গলের মত।। এখনকার জামে মসজিদটি ছিল তখন একটি ছোট টিনশেদের মসজিদ।। প্রথম দিকে বাড়িটা খুবই ভালো ছিল।। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো খারাপ জিনিসের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলো।। ছাদে গভীর রাতে কারা যেনও লাফাত।। সবাই প্রথমদিকে একটু বিরক্ত হতেন।। আমার বাবার চাচা মৃত হরপ্রশাদ দাসগুপ্তা এবং উনার বন্ধু তৌহিদ একবার আওয়াজ শুনে ছাদে উঠে যান।। তাদের হাতে পিস্তল ছিল।। উনারা ছাদে গিয়ে একটি আগুনের গোলার মত কিছু দেখতে পান।। উনারা গুলি করার সাথে সাথে তা বাতাসে মিলিয়ে যায়।। এরপর একদিন আমার বাবার এক আত্মীয় আসেন।। তিনি খুবই ধার্মিক লোক ছিলেন।। তিনি পরিষ্কার উপলদ্ধি করেন যে, বাসাটাতে খারাপ জিনিসের প্রভাব রয়েছে।। খুব সম্ভবত এই জায়গাটি আগে একটি কবরস্থান ছিল।। সেটি সরকার ভেঙ্গে ফেলে নতুন কোয়ার্টার তৈরি করেছে।। তিনি পবিত্র নাম নিয়ে ৪ টা বড় বড় গজাল বাড়ির চারপাশে ঢুকিয়ে দেন।। এরপর থেকে আর কোনোদিন সেই লাফানোর শব্দ পাওয়া যায়নি।। সম্ভবত সেই খারাপ জিনিসটি এরপর তার নতুন ঠিকানা খুঁজে নিয়েছিল।।

শেয়ার করেছেনঃ Rajat Das Gupta

। গভীর রাতের দুঃস্বপ্ন ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, August 1, 2011 at 11:29pm
এই ঘটনাটি আমার ফুফুর কাছ থেকে শোনা।। উনি ফরিদপুর থাকেন।। সেখানের এক মহিলা কলেজের শিক্ষিকা।। তিনি যেই কলেজের শিক্ষিকা সেই কলেজের মেয়েদের হোস্টেলের ঘটনা এটি।। যেইসব মেয়েরা হোস্টেলে থাকতো তারা প্রায় রাতেই কমন রুমে গিয়ে ক্যারাম খেলত, অথবা আড্ডা দিতো।। একবার কলেজের ছুটিতে সব মেয়েরা বাসায় চলে গেছে।। যারা আছে তারাও কয়েকদিন পর চলে যাবে।। হোস্টেল বলতে গেলে পুরোই ফাঁকা।। একরাতে সেই গুটিকয়েক মেয়েদের মাঝে একজন ওয়াসরুমে (টয়লেট) যাবে।। তার রুমের সবাই গভীর ঘুমে।। সে কয়েকজনকে ডাকাডাকি করলো কিন্তু কেউই ঘুম থেকে উঠলো নাহ।। পরে সে একাই গেলো টয়লেটে।। ভাবল, কখনো তো খারাপ কিছু হয়নি।। এতো ভয়ের কি আছে!! তো, তাদের টয়লেটটা ছিল কমন রুমের পাশে এবং নিচ তলায়।। মেয়েদের রুম গুলো সব দোতলায়।। যাই হোক, মেয়েটি টয়লেটে গিয়ে দরজা লাগিয়ে সুইচ অন করলো কিন্তু সুইচ অন হয় না।। মানে আলো জ্বলে নাহ।। মেয়েটি কিছুক্ষণ একটানা নাছোড়বান্দার মত সুইচ টিপতে থাকলে এক সময় আলো জ্বলে উঠে।। মেয়েটি সামনে তাকিয়ে দেখে, এক বিশাল আকৃতির মানুষ টয়লেটের উপর বসে আছে।। চোখ অন্ধ, কিন্তু মুখ হা করা।। সেই হা করা মুখ দিয়ে জিহবা বের হয়ে আছে।। মানুষটির ২ টি পায়ের একটিও নেই।। সাড়া শরীর দিয়ে রক্ত পড়ছে।। তারচেয়ে ভয়ানক হল, লোকটি সেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসি দিচ্ছে আর সেই লোকের কাঁটা জিহবা দিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে।। মেয়েটি এই ঘটনা দেখে কোনোরকমে দরজা খুলে কমন রুমে গিয়ে একটা আর্তচিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।। সেই চিৎকারে কয়েকজনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।। তারা দৌড়ে এসে দেখে মেয়েটির নিথর দেহ কমন রুমের মেঝেতে পড়ে আছে আর তার দাঁতে দাঁত লেগে গেছে।। একটি চামচ এনে তার দাঁতের ফাঁকে রাখা হয়।। এরপর কিছুক্ষণ পানি ছিটানোর পর মেয়েটির জ্ঞান ফিরে আসে।। সে খুব কান্নাকাটি করে টয়লেটে যা দেখেছে টা সবাইকে খুলে বলে।। তাদের মাঝে কয়কেজন সাহস করে টয়লেটে গিয়ে দেখে, এখানে কিছুই নেই।। মেয়েটির কথা মত সেই টয়লেটের পাশে গিয়ে দেখা গেলো সেখানে ২-৩ ফোটা রক্ত পড়ে আছে।। এই ঘটনার পর মেয়েটি একটানা অনেকদিন অসুস্থ থাকে।। একা একা টয়লেটে যেতে ভয় পেত সে।। জানিনা আজ মেয়েটি কেমন আছে, বা কোথায় আছে।। আশা করি সে তার ভয়ঙ্কর অতিতকে পেছনে ফেলে এখন সুন্দর একটি জীবন অতিবাহিত করছে।।

লেখক/ লেখিকা তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।

।। একটি বোকা ছেলের করুণ পরিণতি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 2, 2011 at 10:28pm
আজকে যে ঘটনাটি শেয়ার করতে যাচ্ছি তা আমার মার মুখে শোনা ঘটনা।। তখন আমার মা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন।। উনাদের পাশের বাড়িতে এক মহিলা তার ছেলেকে নিয়ে থাকতেন।। মহিলার ছেলেটি একটু বোকা প্রকৃতির ছিল।। একদিন ঐ ছেলেটি বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছ কিনে বাড়ি ফিরছিল।। পথে সন্ধ্যা নেমে যায়।। পথে একটা গভীর জঙ্গল পড়ে।। গ্রাম অঞ্চল, তার উপর জঙ্গলের মতন জায়গায় এতো বেলা করে মানুষ খুব একটা যায় না।। তো, ছেলেটা যখন জঙ্গলটার কাছাকাছি আসলো তখন সে শুনতে পায় কে যেনও তার নামে ধরে পেছন থেকে ডাকছে।। সে ভাবল হয়তো তার পরিচিত কেউ।। কিন্তু সে পিছনে ঘুরে কাউকেই দেখতে পেলো না।। অগত্যা সে আবার হাঁটতে লাগলো।। এইবার সে হটাৎ খেয়াল করলো যে, পেছন থেকে কে যেনও তার ইলিশ মাছ ধরে টান দিচ্ছে।। ছেলেটি একটু বোকা ছিল তাই সে ভয় না পেয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করলো, “কে?? কে এমন করছে?? আমার ইলিশ মাছ ধরে টান দিচ্ছে কে রে??” এমন সময় আচমকা একটা লোক তার সামনে উদয় হল এবং বললঃ “তোর ইলিশ মাছটা আমাকে দিয়ে যা।।” বোকা ছেলেটা জোর করে ইলিশ মাছ ছাড়িয়ে নিয়ে বললঃ “দেব না।।” বলে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো।। পিছন থেকে সেই লোকটা বলতে লাগলো, “কাজটা তুই ভালো করলি না।।” ছেলেটা সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে তার মাকে মাছটা দিয়ে বললঃ “তুমি রান্না করতে থাকো।। আমি আসছি।।” মহিলা মাছটি রান্না করতে লাগলেন।। এই ফাঁকে ছেলেটি গিয়ে তার বন্ধুদের খুলে বলল আজকে বাজার থেকে আসার পথে কি হয়েছে।। সেই রাতে খেয়ে দেয়ে মা ছেলে দুজনই ঘুমালো।। গ্রামের দিকের মানুষ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে।। তো, আসে পাশের সবাই ঘুম থেকে উঠলো কিন্তু ঐ বাড়ির কেউ উঠলো নাহ।। বেলা হয়ে গেলে সবাই ডাকাডাকি করতে লাগলো কিন্তু কেউ দরজা খুলছে নাহ।। এমনকি ভেতর থেকে কোন শব্দও আসছে নাহ।। গ্রামের সবাই মিলে ঠিক করলো দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকবে।। দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার পর দেখা গেলো, মা এবং ছেলে দুজনই মরে পড়ে আছে।। তাদের দুজনেরই ঘাড় ভাঙ্গা ছিল।। তখন ঐ বোকা ছেলের বন্ধুরা বলল, হয়তো মাছ না দেয়ার ফলেই তাদের মরতে হল।।

শেয়ার করেছেনঃ Nusrat Jahan Ivy

।। আমার রুমে ভূত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 2, 2011 at 10:58pm
আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি।। সামনে এক্সাম, তাই প্রতি রাতেই ২-৩ টা পর্যন্ত জাগা হয়।। তো, প্রায় গত ২ মাস আগে আমি একটা অদ্ভুত ঘটনা খেয়াল করলাম।। আমি সাধারণত গুনগুন করে পড়তে ভালোবাসি।। যেদিনের ঘটনা, সেদিন রাতেও আমি গুনগুন করে পড়ছিলাম।। গভীর রাত।। বাসার আর কেউ তখন জেগে নেই।। হটাৎ আমি খেয়াল করলাম কে যেনও আমার মতন গুনগুন করে পড়ছে।। আমি কিছুটা অবাক হয়ে চারপাশে দেখার চেষ্টা করলাম।। কিন্তু কিছুই দেখলাম নাহ।। যাই হোক, ব্যাপারটা বিশেষ পাত্তা দিলাম না।। এরপর হটাৎ একদিন রাতে আমি টয়লেটে গিয়েছিলাম।। কিন্তু ফিরে এসে যা দেখলাম তা শুধুমাত্র সপ্নেই দেখা সম্ভব।। আমি টয়লেটে যাওয়ার সময় আমার বায়োলজি বইটি টেবিলে উল্টে রেখে গিয়েছিলাম।। এসে দেখি বইটি খোলা এবং রুমে কেউ নেই তবুও আপনাআপনি বইটির পাতা উল্টে যাচ্ছে।। (আমার রুমের জানালা এবং ফ্যান তখন বন্ধ ছিল, তাই বাতাসের প্রশ্ন আসে নাহ)।। আমি ভয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম কি হয়।। কিছুক্ষণ পর সেই গুনগুন পড়ার আওয়াজ পেলাম।। এরপর আমাকে ভয়ে আতঙ্কে অস্থির করে দিয়ে আমার কলমটা আপনাআপনি দাঁড়িয়ে গেলো।। রুমে কেউ নেই, কিন্তু কলমটা খাতার উপর দিয়ে লিখে চলছে।। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট এরকম চলল।। ভয়ে আমি নরতে চরতেও ভুলে গেছি।। হটাৎ দেখি সব ঠিক হয়ে গেলো।। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সাহস সঞ্চয় করে গেলাম দেখার জন্য, যে এতক্ষণ কি হল।। টেবিলের কাছে গিয়ে আগে খাতা খুললাম।। দেখলাম এতো সুন্দর লেখা।। বায়োলজি বইয়ের যে পাতাটা খোলা ছিল সেটা হুবহু লিখে রেখেছে কেউ।। এতো সুন্দর লেখা আমি আমার জীবনে দেখিনি।। গভীর রাত তাই বাবা মাকে না জাগিয়ে বিছানায় শুতে পড়লাম।। আমার ধারণা ছিল, এটা হয়তো আমার মনের ভুল হতে পারে।। যদিও বিছানায় শুয়ে সারারাত এপাশ ওপাশ করলাম।। সে রাতে ঘুম আর এলো নাহ।। পরদিন সকালে আমি বাবা মাকে সব কথা জানালে উনারা একজন হুজুরকে ডেকে আনেন।। হুজুর খাতাটা দেখতে চাইলে আমি উনাকে তা দেখাই।। কিন্তু দেখা যায়, খাতাটা পুরো ফাঁকা।। কিন্তু, সকালে যখন আমি বাবা মাকে খাতাটা দেখাই তখন উনারাও লেখাটা দেখেছিলেন।। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, আমি আমার মোবাইল ফোনে ঐ লেখার একটা ছবি তুলে রেখেছিলাম।। কিন্তু পরবর্তীতে চেক করে দেখি ছবিটাও সাদা হয়ে গেছে।। এই ঘটনার পর আমাকে একটা তাবিজ দেয়া হয়।। কিন্তু, ঐদিন বিকেলেই আমার প্রচণ্ড জ্বর আসে এবং প্রায় এক সপ্তাহ আমি সেই জ্বরে ভুগি।। আমি এখনও মাঝে মাঝে ভাবি, আসলেই, কি ছিল সেটা?? শেয়ার করেছেনঃ Tariq Bin Aziz Shadin

।। সংগৃহীত গল্প – ০২ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 2, 2011 at 11:28pm
২০১০ সালের জুলাই মাসের ০৬ তারিখে আমরা চার বন্ধু সাতক্ষীরায় একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম ৩ মাসের জন্য। বাড়িটি অবস্থিত ছিল নির্জন স্থানে বিলের ধারে। আশেপাশে বাড়ি ছিল মাত্র দুটি। তবে ঐ দুটি বাড়ি আমাদের এই বাড়িটি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল। সচরাচর ঐ দুইটি বাড়ির মানুষদের সাথে আমাদের দেখা হতো না। আমাদের চার বন্ধুর মধ্যে তিন জন এক রুমে থাকতাম আর বিহীন নামে আমার আর এক বন্ধু একা এক রুমে থাকত।
আমরা রাতে বাইরে বের হতাম না। আর কোনদিন বের হলেও সবাই একসাথে বের হতাম। সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতাম কারণ আমাদের পরীক্ষা চলছিল। জুলাই মাসের ১৭ তারিখে আমাদের এই বাড়িতে এক অবাক করা ঘটনা ঘটে গেল। রাত আনুমানিক ২.৩০ মিনিটের দিকে আমাদের ঘরের দরজায় আঘাতের শব্দ হচ্ছিল খুব জোরে। আমাদের তিন বন্ধুর ঘুম ভেঙে যায়। আমরা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দেখি বিহীন ঘর্মাক্ত অবস্থায় আমাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সারা শরীর কাঁপছে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে, মুখে কোন কথা নেই। দরজা খুলতেই আমাদের রুমের ভিতরে ঢুকে মেঝের ওপর দড়াম দিয়ে পড়ে গেল বিহীন। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম। বিহীন অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে, চোখে মুখে পানি ছিটাতে লাগলাম আমরা। সাথে সাথে বাড়ি মালিককে ফোন দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি মালিক আসল। বাড়ি মালিকের সাথে স্থানীয় মসজিদের এক ইমাম ছিল। আমরা তিন বন্ধু বুঝতে পারছিলাম না বাড়ি মালিকের সাথে ইমাম কেন। ইমাম বিহীনের চোখে মুখে বিড়বিড় করে কিসব পড়ে ফুঁক দিল, চোখে-মুখে পানির ছিটা দিল। মিনিট পাঁচেক পরে বিহীন তাকালো কিন্তু তখনো ওর চোখে আমরা একটি ভয়ের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছিলাম। ওর যে কি হলো আমরা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ইমাম সাহেব ও বাড়ি মালিক বিহীনকে আমাদের রুমে রাখতে বলল। ঐ দিন সারা রাত আমাদের চোখে ঘুম ছিল না। উতকন্ঠার মধ্যে রাত কাটিয়েছিলাম আমরা তিন বন্ধু। পরের দিন সকালে বিহীনের কাছ থেকে ঘটনাটি জানার চেষ্টা করলাম। ঘটনাটি শুনে আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
গায়ের লোম কাঁটা দিচ্ছিল আমাদের। রাতে আড্ডা শেষ করে বিহীন ওর রুমে চলে গিয়েছিল। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিহীন জানালা বন্ধ করে। কিন্তু রাত ২.২০ মিনিটের দিকে বিকট এক শব্দে বিহীনের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই জানালার দিকে চোখ যায় ওর। প্রথমে অবাক হয় বিহীন কারণ ঘুমানোর আগেতো সে জানালা বন্ধ করেছিল। কিন্তু জানালা খুললো কিভাবে। কিছু না ভেবেই আবার জানালা বন্ধ করতে উঠে যায় সে। কিন্তু জানালা বন্ধ করতে যেয়েই ঘটে বিপত্তি। বাইরে তাকাতেই সে দেখে যে, একজন লোক বাইরে মাটির ওপর উপুড় হয়ে বসে আছে। শুধু পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে যে একজন মানুষ, পুরুষ কি মহিলা বোঝা যাচ্ছিল না। বিহীন চেচিয়ে উঠে জিজ্ঞাসা করে,কে ওখানে? তখন লোকটি উঠে দাঁড়ায়। লোকটি উঠে দাঁড়াতেই বিহীনের চোখ আমড়া আমড়া হয়ে যায়। নিথর হয়ে যায় বিহীনের সারা শরীর। বিহীন যে কতটা ভয় পেয়েছিল তখন তা আমাদের সাথে কথা গুলো বলার সময় আমরা বুঝতে পারছিলাম। কারন তখনও বিহীন প্রচন্ড ঘামছিল। লোকটি বিহীনের দিকে এগিয়ে আসছিল আস্তে আস্তে আর লোকটি যখন এগিয়ে আসছিল তখন বিহীন দেখল যে লোকটির কোন মাথা নেই শুধু শরীরটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। বিহীন তখন বেসামাল অবস্থায় ঘরের আলো জ্বালে আর দরজা খুলে আমাদের দরজায় নক করে। ঘটনাটি শুনে আমরা কোন কিছুই আবিস্কার করতে পারছিলাম না। কারণ আমরা ভুত, প্রেত বিশ্বাস করতাম না।
এই ঘটনার পর থেকে প্রায় রাতে বাড়ির ছাদে শিলবাটার শব্দ হতো। কখনও দূর থেকে ভেসে আসতো মেয়ে কন্ঠের হাঁসি। কখনও মুমূর্ষ রোগীর আর্তনাদ। কিন্তু এসব কিছুতে আমরা কর্ণপাত করতাম না। সেপ্টেম্বর মাসের ০৩ তারিখে আবারও এক কাহিনী ঘটে আমাদের ঐ বাড়িতে। ঐ দিনও কাহিনীটি ছিলো বিহীনকে নিয়ে। বিহীন বিকাল বেলা কিছু কেনাকাটর জন্য শহরের উদ্দেশ্যে বের হয়। ঐ দিন সন্ধ্যায় আমরা তিনজন পড়ছিলাম। হঠাত করেই বিদ্যুত চলে যায়। তখন আমরা তিনজন গল্প করছিলাম অন্ধকারে। কিছুক্ষণ পর বিহীনের গলা শোনা যায়, হাবীব গেট খোল। তখন হাবীব চাবি নিয়ে যেয়ে বারান্দার গেট খুলে দেয়। বিহীন আমাদের রুমে ঢুকে ওর খাটের উপর বসে। হাবীব জিজ্ঞাসা করে, কিরে আজ এত দেরী হলো যে, কোথায় ছিলি? বিহীন উত্তর দেয়, ঐ একটু কাজ ছিল। বিহীন রুমে আসার মিনিট সাতেক পরে হাবীব বলে, দোস্ত সিগারেট দে, সিগারেট খাবো। বিহীন উত্তর দেয়, আমার কাছে নেই যা ছিলো শেষ হয়ে গেছে। রাজু বলে, আমার কাছে একটা আছে এইটা ধরা। তখন বিহীন বলে, দাঁড়া এখন ধরাতে হবে না আমি দোকান থেকে আর তিনটা নিয়ে আসি একসাথে ধরাবানে। আমরাতো অবাক হয়ে যায় বিহীন আমাদের পিছনে এক টাকা খরচ করে না আর সে আমাদের কে তিনটা সিগারেট খাওয়াবে। আমি বলি, বিহীন এটাকি জোকস্‌? তখন বিহীন উঠে দাড়িয়ে বলে, তোরা ওয়েট কর আমি আসছি। বিহীন চাবি নিয়ে তালা খুলে বেরিয়ে যায়। বিহীন আসবে ভেবে আমরা আর গেট লক করিনা। বিহীন বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই বিদ্যুত চলে আসে। মিনিট বিশেক পরেও বিহীন আসে না। কিন্তু আমাদের ঐ বাড়ি থেকে মুদি দোকনে যেতে-আসতে বড়জোর দশমিনিট লাগবে। বিহীন আসছে না দেখে আমরা গেট লক করে দিই। ওকে নিয়ে না ভেবে আমরা আবার পড়তে বসি। কিছুক্ষণ পর বিহীনের ফোন আসে আমার ফোনে। বিহীন বলে, দোস্ত আমিতো এ্যাকসিডেন্ট করেছি। তখন আমি বলি, কোথায়? - শহরের ভিতরে মটর সাইকেলের সাথে।
- তুই আবার শহরে গেলি কখন?
- ক্যান তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? বিকালেতো তোর সামনে দিয়েই আসলাম।
- তুইতো সিগারেট আনার নাম করে বেরিয়ে গেলি মিনিট বিশেক হলো। এখন বলছিস শহরে?
বিষয়টি আমাদের কাছে ঘোলাটে লাগছিল। আমরা সবাই বিহীনকে আনার জন্য বাড়িতে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ি। হাসপাতালে গিয়ে সব কিছু বলি বিহীনের সাথে। বিহীন সবকিছু শুনে অবাক হয়। তখন আমাদের মনে একটি ভীতি ঢুকে যায়। ঐ দিন রাতে আমরা হাসপাতালেই থাকি সবাই। পরের দিন স্থানীয় মসজিদের ঐ হুজুরের কাছে বিষয়টি খুলে বলি। তখন সে আমাদের কাছে ঐ বাড়ি সম্পর্কে একটি ঘটনা খুলে বলে। সে বলে- তোমাদের সাথে প্রতিনিয়তই যে ঘটনা গুলি ঘটছে সেটি নতুন কিছু নয়। এর আগেও এই বাড়িটি তিনবার ভাড়া হয়েছে। কিন্তু তারাও এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বিধায় বাড়ি ছেড়েছে। এই বাড়িটি সলেমান নামে এক ভদ্র লোক প্রথম ভাড়া নেয়। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকত। বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার ৪ মাসের মাথায় সলেমান নামের ঐ লোক তার স্ত্রীকে মেরে ফ্যানের সাথে টাঙিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। তার পর থেকে যারা ঐ বাড়িটি ভাড়া নিয়েছে তারা বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাড়িটাতে বেশিদিন থাকতে পারেনা।
এই সব ঘটনা শোনার পর ঐ দিনই আমরা বাড়িটি ছেড়ে দিই।

সংগ্রহ করেছেনঃ Ethan Martin

।। ছায়ামূর্তি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 3, 2011 at 10:28pm
ঘটনাটা আমার টিচার থেকে শোনা।। আমার টিচার তখন গ্রামে থাকতেন।। একদিন উনার মা উনাকে উনার নানিকে দেখে আসার জন্য বললেন।। তো আমার টিচার এবং উনার ছোট ভাই রওনা হলেন।। নানির বাড়ি দুইভাবে যাওয়া যেত ১।
রোড দিয়ে
২।
নৌকা দিয়ে উনারা নৌকা দিয়ে যাবেন বলে ঠিক করলেন।। রওনা দেয়ার প্রায় ২ ঘণ্টা পর নানির বাড়ি পৌঁছলেন ।। ওখানে সারা দিন থেকে বিকাল ৪.৩০ এর দিকে রওনা হলেন।। তখন ছিল শীতকাল।। জলদি চারদিক অন্ধকার হয়ে পড়ল।। টিচার ও উনার ভাই তখনো বাড়ি পৌঁছাননি।। জলদি যাওয়ার জন্য উনারা শর্টকাট নিলেন।। কিন্তু শর্টকাট রাস্তায় একটা কবরস্থান পড়তো।। তো উনারা আসতে লাগলেন।। কবরস্থানটি যখন পার করছিলেন ঠিক তখন তারা দেখতে পেলেন যে একটা কালো মতন ছায়া মূর্তি কবরস্থান দিয়ে দৌড়ে এসে পানিতে লাফ দিল।। ওই কবরস্থান দিয়ে লোকজন আসা যাওয়া করতো না।। মূর্তিটি লাফ দেওয়ার পর আমার টিচাররা চিত্কাখর করে দ্রুত নৌকা চালাতে লাগলেন।। তাদের সবসময় যেন মনে হতে লাগল যে তাদের নৌকার পিছনে কেউ সাঁতরে আসছে।। কিন্তু টর্চ মারলে কিছু দেখা যায় না।। অবশেষে তারা নদীর ঘাটে পৌঁছে গেলেন।। নদীর ঘাটে পৌঁছে আমার টিচার লাফ দিয়ে নৌকা থেকে নামলেন।। কিন্তু ওনার ভাই নামতে গিয়ে পানিতে পড়ে গেলেন।। পড়ে গিয়ে উঠতে গিয়ে দেখেন যে কে যেন পিছন থেকে ওনাকে টেনে রেখেছে।। উনি তো ভয়ে আধমরা।। এদিকে আমার টিচারও উনাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন।। অবশেষে টেনে তুলতে পারলেন এবং দৌড়ে বাড়ি পৌছলেন।। ঘটনার পর ওনার ভাই ৪ দিন জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন।। শেয়ার করেছেনঃ Talukder Shatadru

।। অচেনা আরোহী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 3, 2011 at 10:58pm
বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে ২৫০/৩০০গজ দক্ষিনে রাস্তার পূর্ব পাশে আমার শ্বশুরের এবং আরেকটু দক্ষিনে গিয়ে রাস্তার পশ্চিমে চাচা শ্বশুরের বাসা।। চাচা শ্বশুরের শালা তার বাসায় থেকে পড়াশোনা করত।। ২০০৫সনের মার্চ বা এপ্রিল মাসে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম।। তখন এক রাতে ১১টার দিকে কাকি শ্বাশুরী ফোনে বলে তার ভাইয়ের হঠাৎ প্রচন্ড বমি শুরু হয়েছে।। আমার ডাক্তার স্ত্রী যেন দ্রুত সেখানে যায়।। আমি ওকে সেই বাসার গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসতে থাকি।। হাইওয়ে পার হওয়ার আগে উঃ দঃ উভয় দিক দেখে রাস্তার মাঝ বরাবর আসা মাত্র পিছন থেকে আমার নাম ধরে একটা ডাক শুনতে পাই।। কন্ঠটা ঠিক আমার স্ত্রীর মতো।। পিছনে ফিরে দেখি গেট পর্যন্ত কেউ নেই।। কিছুক্ষন পিছনে তাকিয়ে থেকে সামনে এগোতে গেলে আবার ডাক শুনতে পাই।। পিছনে তাকিয়ে এবারও কাউকে না দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।। চোখ ধাঁধানো আলো দেখে সামনে তাকিয়ে দেখি একটা বাস দ্রুত গতিতে আমার দিকে ছুটে আসছে।। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাস্তার কিনারে পৌছুতে না পারলে বাসটা আমাকে চাপা দিবে।। জীবন বাঁচানোর তাগিদে যখন রাস্তার কিনারে যাবো দেখি একটা সাইকেল খুব ধীর গতিতে রাস্তার পাশ দিয়ে আমার দিকে আসছে।। সাইকেল চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বাসের নিচে পরতে হবে আর সামনে এগোলে সাইকেলের নিচে পরতে হবে।। সাইকেলের নিচে পরলে প্রানে বাঁচা যাবে তাই সামনেই এগোলাম।। কিভাবে যে সাইকেলটার সামনে দিয়ে রাস্তার কিনারে পৌছে গেলাম আমি জানিনা।। এর মধ্যে বাসটা চলে গেল।। সাইকলটাও ধীর গতিতে যাচ্ছে।। যার জন্য জীবনটা খোয়াতে যাচ্ছিলাম সেই সাইকেল ওয়ালার দিকে রাগে ক্ষোভে তাকিয়ে দেখি সে একটা কাল চাদর মুড়ি দেওয়া।। এত গরমে চাদর মুড়ি দেওয়া লোক, নাম ধরে ডাকা বিষয়টা উপলব্ধি করে একছুটে শ্বশুরের বাসায় ঢুকে পরি।। কলেজ পড়ুয়া শালাটা আমার বিদ্ধস্ত চেহারা দেখে কারন জানতে চাইলে সব খুলে বলি।। স্থানটার কথা শুনে ও জানায়, ওই স্থানে আগে তিন জন বাস চাপায় মারা পরেছিল।। সর্বশেষ যে মারা যায় সে আমার শ্বশুর বাড়ির লোক।। সে এক্সিডেন্টের কয়েক ঘন্টা পরে মারা গিয়েছিল।। তাকে নাকি কে নাম ধরে ডেকেছিল।। কে ডাকে তা দেখতে গিয়েই সে বাস চাপা পরে।। সব শুনে আমি থ খেয়ে গিয়েছিলাম।। শেয়ার করেছেনঃ আউলা চুলে বাউলা আমি

।। একটি বাড়ি এবং কিছুকথা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 3, 2011 at 11:35pm
আমরা যারা ঢাকা শহরে থাকি তারা বেশিরভাগ সময়েই ভূত প্রেতের কথা তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দেই।। হ্যাঁ, দিনের আলো হয়তো আপনাকে সেরকম করে ভাবতে বাঁধা দেয়।। কিন্তু যদি আপনি গ্রাম অঞ্ছলে যান, দেখবেন সেখানে এখনও এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা আপনার আমার তথাকথিত বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নাহ।। আপনাদের সাথে আজ তেমনই একটি ঘটনা শেয়ার করতে চাচ্ছি।। আগে মেট্রিক পরীক্ষার পর আমরা তিন মাসের একটা লম্বা ছুটি পেতাম।। তাই, পরীক্ষা শেষ হবার আগেই ছেলেমেয়েদের চিন্তা ভাবনায় চলে আসতো যে কি করে তারা সেই তিনমাস অতিক্রম করবে।। কারো ইচ্ছে থাকে দেশটা ঘুরে বেড়ানো।। কারো ইচ্ছে থাকে অজানাকে জানার জন্য ছুটে চলতে।। আমি দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্য।। এক্সাম শেষ হবার আগেই ঠিক করে ফেললাম, এই ছুটিতে আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে পঞ্চগড় যাচ্ছি।। সেখানে যাওয়ার পিছনে কিছু উদ্দেশ্য ছিল।। ১।
জায়গাটা সুন্দর সবার কাছে শুনেছি কিন্তু কখনো যাওয়া হয় নি।।
২।
ইন্ডিয়া বর্ডার নাকি একদম কাছে।। চেনাজানা মানুষ থাকলে ইন্ডিয়া যাওয়া সম্ভব!!
৩।
সত্যিকারের ভূত দেখা।। ভূত দেখার ঘটনাটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করলো।। যেই বাক্তি এই ব্যাপারে বলেছেন তার কথা অবিশ্বাস করার কোন কারন আমার কাছে ছিল নাহ।। তিনি সম্পর্কে আমার মামা হন।। পঞ্চগড় আমার নানুর বাড়ি ছিল।। এখনও আছে, কিন্তু সেদিনের পর আমার আর যাওয়া হয়নি।। আমাদের পরীক্ষা শেষ হয় মার্চ মাসে।। ঠিক কত তারিখে শেষ হয়েছিলো তা মনে নেই।। পরীক্ষা শেষ হবার ২দিনের মধ্যে আমরা রওনা দেই।। আমরা মানে, আমি, শিমুল, আর সজীব।। নানু বাড়িতে এটাই আমার প্রথম যাওয়া।। তার উপর সাথে কোন গার্জিয়ান নেই।। মজা মাস্তি করে গন্তব্বে পৌঁছলাম ভোরের দিকে।। বাস থেকে নেমে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা ব্যানে করে জার্নি।। শরীর যেনও আর চলছিলো নাহ।। বলা বাহুল্য, আমরা রাতের বাসে জার্নি করেছিলাম।।
নানু বাড়িটা আসলেই সুন্দর।। ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটা নদী।। ইন্ডিয়া যাওয়া যায় ঐ নদীটা দিয়ে।। কাচভাঙ্গা নদী বা এমনি কিছু একটা নাম ছিল নদীটার।। গরমের দিনেও পানি বরফের মতন ঠাণ্ডা।। দিনের বেলা গোছল করেও কাঁপতে কাঁপতে উঠতে হল নদী থেকে।। ২দিনেই হাঁপিয়ে উঠলাম গ্রামের পরিবেশে।। মোটামুটি যা যা দেখার ইচ্ছে ছিল ঘুরে দেখে ফেলেছি।। শুধু ভূত দেখাটা বাকি!! মামা ঐ সময় বাড়িতে ছিলেন নাহ।। ঢাকায় একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন তিনি।। ছুটি না মিললে গ্রামে খুব একটা যান নাহ।। আমি যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলাম তাই ছুটি মানেজ করে রেখেছিলেন।। তৃতীয়দিন সকালে পঞ্চগড় পৌঁছান মামা।। পাওয়ার সাথে সাথে পাকড়াও করি উনাকে।। ঘটনা তখনো পর্যন্ত পরিষ্কার ছিল না আমাদের কাছে।। মামা শুধু কিঞ্চিৎ ধারণা দিয়েছিলেন যে, আমাদের এক্সপেরিএঞ্চ জীবনে ভুলতে পারব নাহ।। যাই হোক, আমরা চতুর্থ দিন বের হই ভুতের সন্ধানে।। শহরের আলোক ঝলমলে পরিস্থিতিতে থাকতে থাকতে ব্যাপারটা এমন হয়েছিলো যে, আমরা তিনজন রিতিমত মশকরা করতে লাগলাম।। ভূত, তাও আবার একবিংশ শতাব্দীতে!! আমরা যখন রউনা হই তখন ঘড়িতে ৬.০০ টার মত বাজে।। জায়গাটা একটা পরিতাক্ত বাড়ির পাশে।। কথিত আছে, সেই বাড়ির মালিকের ছোট ছেলের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে।। বজ্রপাতে মৃত্যু হলে নাকি মানুষের কোন একটা অর্গান (শরীরের একটা অংশ) খুব দামি ধাতুতে পরিণত হয়ে যায়।। তাই বজ্রপাতে মৃত মানুষের লাশ চুরি হয়ে যায়।। কিছু খারাপ লোক লাশ চুরি করে সেই অংশটা পাওয়ার জন্য।। যেহেতু লোকটা নিজেই বাড়ির মালিক ছিলেন, তাই ছেলের কবরও দিয়েছিলেন বাড়ির পাশেই।।
মামার মুখ থেকে ব্যানে যেতে এইসব কথা শুনতে লাগলাম।। আমার কাছে ব্যাপারটা তখনো ক্লিয়ার নাহ।। তাই মামাকে একনাগারে প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলাম।। মামা ধৈর্য সহকারে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছিলেন।। মামার কাছে যা জানতে পারি তা সংক্ষেপে
বলছিঃ

ঐ বাড়ির ছোট ছেলেটি এলাকায় এক প্রকার ত্রাসের মত ছিল।। মানুষজন তো দুরের কথা তার ভয়াল এবং নিষ্ঠুর মন-মানসিকতা থেকে নাকি পশু পাখি ও রেহাই পেত নাহ।। গ্রামের লোক ছেলেটির এইসব কারনে ভয় পেয়ে ঐ বাড়িটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো।। প্রায়ই নাকি ঐ বাড়ি থেকে মানুষ কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত।। ভয়ঙ্কর টর্চার করলে মানুষ যেমন বিকৃত স্বরে চিৎকার করে, অনেকটা ঐরকম।। আমার মামা ভয়ানক সাহসী টাইপের।। উনি একদিন তার কয়েকজন বন্ধু নিয়ে গিয়েছিলেন আসল ব্যাপার দেখতে।। বিকেলে উনারা বাড়িটায় পৌঁছান কিন্তু খুব বেশিদূর যেতে হয় নি।। ঠিক বাড়ির গেটের কাছে এক বিশাল আকৃতির কুকুরের মৃত দেহ পরে ছিল।। পাশবিক নির্যাতন করে কুকুরটাকে মারা হয় তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।। সারা গায়ে চাকুর অগনিত দাগ।। কুকুরটার হৃৎপিণ্ড বরাবর বিশালাকার গর্ত।। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, কুকুরটার চোখ মুখ ভয়ে বিস্ফরিত।। মুখটা যেনও দুহাতে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।। ভয়ানক এই দৃশ্য দেখে মামার বন্ধুরা আর এগোনোর সাহস পেলেন নাহ।। ঠিক তখনই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গায়ের সব পশম দাড় করিয়ে দিয়ে বাড়ির ভেতর থেকে কারো আর্ত চিৎকার শোনা গেলো।। উনারা আর সাহস করলেন নাহ।। চলে এলেন।। ছেলেটা যেদিন মারা যায় তার কয়েকদিনের মধ্যে তার লাশ চুরি করার চেষ্টা করা হয়।। এলাকায় একটা চক্র আছে যারা বজ্রপাতে মৃত্যু হওয়া লাশ কবর থেকে তুলে ইন্ডিয়াতে বিক্রি করে দেয়।। যাই হোক, তারপর দিন ঐ চক্রের কয়েকজনকে কাচভাঙ্গা নদীতে ভাসন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।। তাদের প্রত্যেকের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল।। ঐ দলের দুইজনকে প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ঐ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এক চাষের জমিতে।। তাদের একজনের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, আর আরেকজনের গায়ে কেউ যেনও চুরি দিয়ে কেটে ফালি ফালি করে রেখেছে।। তাদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, তারা ঐ বাড়িতে গিয়েছিলো লাশ তোলার জন্য, কিন্তু “কিছু একটা” তাদের আক্রমন করে।। জিনিসটা দেখতে মানুষের মতই কিন্তু আকৃতি অনেক বড়।। তাদের মাঝের একজন (যার শরীর চাকু দিয়ে ফালাফালা করা হয়েছিলো) হাসপাতালে মারা যায়।। তখনকার পেপারে এই বিষয়টা এসেছিলো।। ঐ বাড়ির আসেপাশে অন্য কোন বাড়ি নেই।। প্রায় অর্ধেক মাইল পথ গেলে কয়েকটা বাড়ি পাওয়া যায়।। ঐ বাড়ির লোকজন নাকি প্রায়ই বাসাটা থেকে অদ্ভুত সব গোঙানির আওয়াজ পান।। তাদের মাঝে কয়েকজন নাকি দেখেছেন যে, ঐ বাড়ির উঠোনে একটা সাদা ছায়া হেঁটে বেড়ায় এবং বারবার বাড়ির একটা দরজার সামনে গিয়ে গায়েব হয়ে যায়।। প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই একি জিনিস দেখেছে এবং তাদের কথার মধ্যে অদ্ভুত মিল।। কোনোরকম অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় নি দেখে গ্রাম থেকে একবার একদল লোক গিয়ে ঐ বাড়িটা ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে।। তাদের মাঝে ২জন শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয় কাজ চলাকালীন সময়ে।। (বিঃ দ্রঃ ছোট ছেলেটা মারা যাবার শোক সইতে না পেরে ঐ বাড়ির মালিক তার পরিবার নিয়ে কয়দিন পর গ্রাম ছেড়ে চলে যান)
এরপর থেকে বাড়িটা মূলত পরিতাক্ত হয়ে পড়ে আছে।। এতটুকু শোনার পর ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে আমাদের।। মজা মাস্তি তো দুরের কথা, মামার গলায় এক এমন আশ্চর্য সুর ছিল যে, আমরা রীতিমতো গরমের মাঝেও ভয়ে কাঁপুনি দিয়ে উঠলাম।। শিমুল, আর সজীবকে দেখে বুঝতে পারছিলাম মারাত্মক ভয় পেয়েছে দুইজনই।। আমার অবস্থাও কোন অংশে ভালো নয়।। তারপরও মান সম্মান রক্ষার্থে ঘাপটি মেরে রইলাম তিনজনই।।
নানু বাড়ি থেকে ঐ বাড়িটার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার।। আমরা যখন বাড়িটার কাছাকাছি পৌঁছাই তখন ঘড়িতে ঠিক ৬.৪৮ বাজে।। আজান হয়ে গিয়েছিলো।। মামা আমাদেরকে বাড়িটা দেখানোর জন্য এনেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাড়িটায় যাবার পথটা প্রায় গাছগাছালিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে।। মামা আগে থেকেই তার কিছু বন্ধুদের বলে রেখেছিলেন তাই উনারা সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।। আকাশের চাঁদটা ভালোই আলো ছড়াচ্ছে।। কিছুদিন আগে মাত্র পূর্ণিমা গেলো।। তাই হয়তো।। বাড়িটার ১০০ মিটারের মধ্যে চলে যাই আমরা।। মামাকে অনেক অনেক রিকুয়েস্ট করার পর তিনি আমাদের ঐ গেটটা পর্যন্ত নিয়ে যেতে রাজি হন।। মামার সাথের বন্ধুরা এই টাইপের অনুরোধ মনে হয় আশা করেনি।। কয়েকজনতো ভয়ে উশখুশ করতে লাগলো।। ২জন (স্পষ্ট মনে আছে) সিগারেট ধরালেন।। সেই সিগারেট নেশার জন্য ছিল না ভুতের হাত থেকে বাঁচার জন্য ছিল তা তখন জিজ্ঞেস করা হয়নি।।
বাড়িটা দেখতে পুরনো আমলের জমিদার বাড়ির মত।। ঠিক সামনেই একটা বিশাল বেদিতে একটা নিম গাছ।। মুসলমান বাড়িতে নিম গাছ সচারচর দেখা যায় নাহ, কিন্তু এখানে দেখলাম।। আমাদের সাথে টর্চ ছিল।। সজীব বুদ্ধি করে ভালো পাওয়ারের একটা টর্চ নিয়ে এসেছে।। মামা নিষেদ করার আগেই সে টর্চটা বাড়ির দিকে তাক করে সুইচ দিয়ে দিল।। প্রথমে মনে হল চোখের ভুল, কিন্তু পাশ থেকে শিমুল চিৎকার করে উঠায় বুঝতে পারলাম যে নাহ, যা দেখছি ঠিকই দেখছি।। একটা ছায়ামূর্তি!! সাদা এবং বাতাসে ভাসমান।। যেনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আমাদেরকেই দেখছিল।। সজীব লাইট মারাতে আস্তে আস্তে ভেসে চলে যেতে লাগলো।। একটা দরজার কাছে গিয়ে যেনও মিলিয়ে গেলো।। যা ঘটলো তা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম নাহ।। ঠিক তখনই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে করতে একটা বিশাল আকৃতির কুকুর ছুটে এল।। সাধারণত, রাতের বেলা কুকুরের চোখে কোনোরকম আলো পড়লে তা জ্বলজ্বল করে, কিন্তু সজীব যখন তার টর্চের আলো ঐ কুকুরটার দিকে ঘোরালো, তখন দেখলাম কুকুরটার চোখে যেনও লাল আলো প্রতিফলিত হচ্ছে।। মামা আমার হাত চেপে ধরে দৌড় লাগালেন।। আমার বাকি দুই ফ্রেন্ডকে প্রায় কোলে তুলে নিলো মামার দুই বন্ধু।। এরপর রুদ্রশ্বাসে ছুটলাম আমরা।। কপাল কখনই এতো ভালো হয় না।। কুকুরটা মামার এক বন্ধুর পা কামড়ে ধরল।। উনার চিৎকারে মামা থেমে গিয়ে আমাকে বললেন, “দৌড়তে থাক।। কোন অবস্থাতেই থামবি না।।” না বললেও অবশ্য হতো।। আমার থামার কোন ইচ্ছে ও ছিল নাহ।। তবুও ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার দেখার ঝোঁকটা সামলাতে পারলাম নাহ।। দেখলাম, মামা পকেট থেকে কি যেনও বের করে কুকুরটার দিকে ছুড়ে দিল।। সাথে সাথে কুকুরটা মামার ঐ বন্ধুর মা ছেড়ে দিয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো।। ঐ বাড়িটা থেকে কিছু পথ যাওয়ার পর ৪-৫ টা কৃষকের বাড়ি পড়ে।। সেখানে মামার বন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হল।। তিনি অচেতন হয়ে ছিলেন।। সেই রাতেই মামা উনাকে নিয়ে দিনাজপুর মেডিকেলের উদ্দেশে রউনা হন।। তার আগে আমাদেরকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে যান এবং বলেন এই ঘটনা যেনও বাসার কারো সাথে শেয়ার না করি।। কিছু কিছু মিসিং লিঙ্ক এখন ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো।। ** পরবর্তীতে মামা এবং উনার বন্ধুদের সাথে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হই যে, ঐ কুকুরটা সেই কুকুরটা ছিল যেটা মামারা ঐ বাড়িতে এক বিকেলে গিয়ে মৃত পড়ে থাকতে দেখতে পান।। ** ছায়ামূর্তিটা শুধু একজন বা দুইজন দেখলে তাকে হালুসিনাসন বা দৃষ্টিভ্রম বলা যেত।। কিন্তু সেখানে উপস্থিত সবাই সে ছায়ামূর্তিটা দেখতে পায়।। ** কিছুদিন পর ঐ পরিতাক্ত বাড়ির পাশের বাড়িগুলোর এক লোককে ঐ বাড়ির গাছটাতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।। লোকটা তার আগে কিছুদিন নিরুদ্দেশ ছিল।। ** মামা সেদিন ঐ কুকুরটার দিকে তাবিজ ছুঁড়ে মেরেছিল।। আমরা ঐ বাড়িটা দেখতে যাবো এটা জানার পরপরই মামা একজন বিখ্যাত হুজুরের সাথে দেখা করে সতর্কতামূলক বাবস্থা নিয়ে রেখেছিলেন।। এই আমাদের শেয়ার করা দ্বিতীয় গল্প।। সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই করা আপনাদের উপর।। আমি আপনার জায়গায় থাকলে হয়তো বিশ্বাস করতাম নাহ।। আসলেই করতাম না, যদি না আমার সাথে ঐ রাতের কাহিনীগুলো ঘটতো।।

শেয়ার করেছেনঃ অ্যাডমিন (SAJJAD)

।। সেই রাতে ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 4, 2011 at 10:30pm
ঘটনাটা আমার এক বড় ভাইয়ের মুখ থেকে শুনা।। সত্যি বলতেছি এজন্যে যে, কারণ আমি বিশ্বাস করি, উনি একজন শক্ত মনের মানুষ এবং উনি যা দেখেছেন তা ঠিক দেখেছেন।। ঘটনাটা এরকম।। উনার এস,এস,সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।। পরীক্ষার পর ছুটিতে উনি উনার মামাবাড়ি খুলনায় যাবেন।। উনি সিলেট থেকে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে নটায় খুলনা পৌচ্ছান।। শহর উনার মামাবাড়ি যাওয়ার রাস্তায় যাওয়ার পথে প্রায় ১০ মিনিটের মত।। টিলার মাঝখান দিয়ে যেতে হয়।। রাতে তিনি কোন রিকশা না পেয়ে একাই হেটে রওয়ানা হন।। একটু জায়গা যাওয়ার পর উনি উনার একটু সামনে একজন বৃদ্ধ লোককে দেখতে পান।। সামনে একজন লোক দেখায় উনি ভাবেন যে উনার সাথে কথা বলে বলে উনার মামাবাড়ি পর্যন্ত চলে যাবেন।। তাই উনি উনার হাটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে লোকটিকে ধরতে চান।। কিন্তু লোকটিও ওর হাটার গতি বাড়িয়ে দেয় এবং একটু পর রাস্তার একটি মোড় পার হয়ে গায়েব হয়ে যায়।। তখন তিনি ঐ মোড়ের কাছে এসে দেখেন যে, সামনে ঐ লোকটি নেই, এবং সামনে অনেকটা সরু রাস্তা যা একজন বৃদ্ধ লোকের পক্ষে এত তাড়াতাড়ি পেরোনো সম্ভব নয়।। তাই উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন, লোকটি উনার ঠিক পেছনে এবং উনার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে।। লোকটি কিছুটা ভাসমান অবস্থায় ছিল, আর চোখটা খুবই ভীতিকর ছিল।। উনার পিছনে লোকটিকে এভাবে দেখে উনি অজ্ঞান হয়ে ঐখানেই পড়ে যান।। কিছুক্ষন পর একদল লোক এ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে উনাকে এভাব পেয়ে উনার মামার বাড়ি পৌচ্ছে দেয়।। ঘটনাটা এমনিতেই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।। (বি:দ্র: আমি খুলনা শহর সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য জানিনা)

শেয়ার করেছেনঃ Tushar Das

। গোরস্থানের বধূ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 4, 2011 at 11:00pm
তখন আমি স্কুলে পড়ি।। পড়ালেখার জন্য নানুবাড়িতে থাকতাম।। একবার আমরা বাসা বদল করে একটা নতুন বাসাতে উঠলাম।। নতুন পরিবেশ।। আসে পাশের কাউকেই চিনি নাহ।। বাসাটা তিনতলা ছিল।। তবে, তিনতলার নির্মাণ কাজ তখনো চলছিলো বলে সেটা ছিল ফাঁকা।। আমরা দ্বিতীয় তলায় থাকতাম।। নিচ তলায় অন্য এক ভাড়াটিয়া থাকতো।। যাই হোক, আমাদের নতুন বাসার ঠিক সামনেই ছিল এক গোরস্থান।। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে গোরস্থানের কবর আর গাছপালা স্পষ্ট দেখা যেত।। সেই বাড়িতে উঠার পর প্রথম রাত।। রাত ১১ টার দিকে হটাৎ পুরো বাড়িতে কড়া আগর বাতির গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো।। আসে পাশে কোন উৎস খুঁজে পেলাম না।। ছোট ছিলাম।। ঘাবড়ে গেলাম।। ভয়ে ভয়ে নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।। গভীর রাতে হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো।। মনে হলে ছাদ থেকে একটা আওয়াজ আসছে।। কে যেনও স্যান্ডেল টেনে টেনে হাঁটছে ছাদে।। প্রচণ্ড ভয় পেলাম।। পাশে শোওয়া আম্মুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম।। এমনিতে কখন যেনও ঘুমিয়ে গেছি।।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ছোট মামা বললেন, উনি নাকি রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিলেন।। তখন তার চোখ যায় গোরস্থানের দিকে।। সেখানে নাকি তিনি দেখেন, এক নব বধূর মত কেউ লাল শাড়ি পড়ে বসে আছে।। বাতাসের আসা যাওয়ার তা কিছুটা দুলছিল।। এছারা আকৃতিটা সাধারন মানুষের মতন ছিল নাহ।। তার চেয়ে অনেক বড় সাইজের ছিল।।
এভাবে অনেকদিন কেটে গেলো।। মামা প্রায় রাতেই সেই অদ্ভুত নতুন বউয়ের সাজের আকৃতিটা দেখতে পেতেন।। একদিন আমরা সবাই মিলে অনুরোধ করলাম, মামা যেহেতু প্রায় রাতেই সেই আকৃতিটা দেখতে পান তাই পরে কোনবার দেখলে যেনও অবশ্যই আমাদের ডাক দেন।। একদিন রাতে মামা আমাদের রাত ২ টার দিকে ডাক দেন।। ঘুম থেকে উঠে দেখি চাঁদের আলোয় সব ঝলমল করছে।। খুব সম্ভবত সেদিন পূর্ণিমা ছিল।। দুরের জিনিশগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম চাঁদের আলোয়।। আমরা মামার রুমে গেলাম।। চারদিকে শুনশান নিরবতা আর চারপাশে কড়া আগরবাতির গন্ধ।। মাঝে মাঝে কোথায় যেনও একটা কুকুর ডেকে উঠছিল।। সবাই জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।। যা দেখলাম তাতে সবার চোখ প্রায় কপালে উঠে গেলো।। গোরস্থানের ভেতরের দিকে একটা ঘরের মত ছিল।। ঠিক ঘর নাহ, বাস টিকেট বিক্রি করার জন্য যেমন ছোট ঘর থাকে তেমন।। তবে তা চারদিক দিয়েই খোলা ছিল।। সেখানে যেনও নতুন বউয়ের মতন সেজে কে একজন বসে আছে।। মাথাটা কিঞ্চিৎ দুলাচ্ছে।। অনেকটা আমরা গুনগুন করে পড়ার সময় যেমন মাথা দুলিয়ে পড়ি, সেরকম।। ভয়ে আমার এক কাজিন চিৎকার দিয়ে উঠলো।। সাথে সাথে সেই মূর্তিটা আমাদের দিকে ঘুরে গেলো।। আশ্চর্য, এতো দূর থেকেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম তার চোখগুলো যেনও জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।। আমরা ভয়ে চিৎকার দিয়ে সরে যাই।। মামা তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করে দেন।। পড়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একবার এই গ্রামে নদীতে একটা লাশ ভাসতে ভাসতে আসে।। লাশটার গায়ে নতুন বউয়ের শাড়ি ছিল।। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সেই লাশের পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি।। সেই গোরস্থানে দাফন করা হয় লাশটা।। এরপর নাকি প্রায়ই অনেকে উল্টাপাল্টা অনেক কিছু দেখে।। মাঝে মাঝে নাকি কড়া গন্ধ পাওয়া যায় আগরবাতির।। আর সেই গোরস্থানটি আসলে প্রচলিত অর্থে শুধু মোসলমানদের কবরখানাই নয়, সেখানে বাকি সব ধর্মের মানুষেরও শেষ কীর্তি সম্পাদন করা হয়।। যাই হোক, এরপর থেকে আমরা আর জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতাম নাহ।। যতদিন সেই বাড়িতে ছিলাম ততদিনই সন্ধার পর সব
জানালা বন্ধ করে দেয়া হতো।। আর, ছাদের সেই শব্দটার কোন ব্যাখ্যা পাইনি।।

শেয়ার করেছেনঃ Onni

। একটি ভয়ঙ্কর রাত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 4, 2011 at 11:30pm
।। একটি ভয়ঙ্কর রাত ।।
আমি আজ যে ঘটনাটা শেয়ার করবো তা গত পরশুদিন রাতে(২৭ জুলাই) ঘটে যাওয়া।। সম্ভবত আমি এই পেইজের অনেক কম বছরের সদস্যদের মধ্যে একজন, কিন্তু আমি ছোটবেলা থেকেই আমার আসে পাশে অনেককিছু দেখেছি এবং অনুভব করতে পেরেছি।। যাই হোক, এইবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।। ৪-৫ দিন আগে আমি আমার রুমে শুয়ে আছি।। যেহেতু নিচ তলায় থাকি, তাই বাড়ির পাশ দিয়ে কারা যায় বা আসে তা সহজেই দেখতে পাই।। আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম।। হটাৎ একটা লোককে আসতে দেখলাম।। কেন যেনও উনাকে একটু আলাদা টাইপের মনে হল।। তাই খুব ভালো করে খেয়াল করলাম।। বয়স ৪৫-৫০ এর মধ্যে হবে।। মুখে বড় বড় দাড়ি।। হাতে একটা ব্যাগ।। আমাকে চমকে দিয়ে হটাৎ জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “ছেলের পড়ালেখা ভালো হবে!! সকল বিপদ আপদ থেকে দূরে থাকবে।। দে, এইবার শিন্নি দে!!” আপনারা হয়তো অনেকেই দেখেছেন এমন কিছু কিছু ভণ্ড থাকে যারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায় শিন্নির জন্য আর টাকা পয়সা চায়।। আমি উনার আচরণে কিছুটা বিরক্ত হলাম।। তারপরও যথেষ্ট ভদ্র ভাষায় বললাম, “আমরা তো শিন্নি দেই না।। আপনি অন্য বাড়ি যান!!” এইবার লোকটা একটু খেপে গিয়ে রাগী গলায় বললেন, “তাহলে ১৭টা টাকা দে!!”
কিন্তু আমার তখন এমন অবস্থা যে, আমার কাছে ১ টাকাও নেই।। তার উপর বাসায়ও কেউ নেই।। তাই আমি উনাকে বুঝিয়ে বলার জন্য বললাম, “দেখেন, আমার কছে এই মুহূর্তে কোন টাকা নেই।। আর বাসায়ও কেউ নেই।। তাহলে কিভাবে আপনাকে টাকা দিবো বলুন??” লোকটা ঠিক ১৭ টাকাই কেন চাইলো মাথায় ঢুকছিল নাহ।। লোকটার কথা শুনে আরও মেজাজ খারাপ হল।। আমাকে রেগে রেগে বলল, “দিলি নাহ।। দিস কিন্তু!!” মাথা তখন রাগে টগবগ করে ফুটছে।। তারপরও আমি গলা শান্ত রেখে বললাম, “মাফ করেন।। আমার কাছে এই মুহূর্তে টাকা নাই।। তাই দিতে পারছি নাহ!!” এইবার লোকটা আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, “যা করলি, করলি!! দেখিস, এর ঠেলা সামলাইতে পারবি তো??”
কথাটা বলে লোকটা খুব দ্রুত চলে গেলো।। আমি সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে কাউকেই দেখলাম নাহ।। পাশের বাসার এক অ্যান্টি বারান্দায় ছিলেন।। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, “অ্যান্টি, এইমাত্র একটা লোক এসেছিলো এইদিকে।। কিন্তু বের হয়ে দেখলাম নাহ।। কোনদিকে গেছে বলতে পারবেন??” উনি বললেন, “নাহ তো।। কাউকেই তো যেতে দেখিনি।।” অ্যান্টি অনেক্ষন যাবতই বারান্দায় ছিলেন।। কেউ আসলে উনার দেখতে পাবার কথা।। আমি ঠিক বোঝে উঠতে পারলাম নাহ।। রাগ লাগলো।। ব্যাটা মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছে।। এই ঘটনাটি দুপুর ২টার দিকে ঘটে।। ঐ রাতটা ভালো মতনই কাটালাম।। রাত ২টার দিকে একবার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো।। কিন্তু এরপর আবার আমি ঘুমিয়ে পড়ি।।
পরের দিন রাত ২টা থেকে ২.৩০ টার মাঝে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। ঠিক স্বপ্নে না বাস্তবে বলতে পারছি না তবে কে যেনও আমার পা টা ধরে নাড়ানোর চেষ্টা করছে।। পা টা এমন ভাবে রাখতে চাচ্ছে যেনও আমার নাক আমার পায়ের বৃদ্ধ আঙ্গুল বরাবর হয়।। মানে, সোজা লাইনে।। কিন্তু আমি শক্ত করে রাখলাম পা টা।। কোন মতেই নড়াতে দিবো নাহ।। এরপর হটাত মনে হল, কে যেনও টান দিয়ে আমার কোলবালিশটা আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিলো এবং আমাকে জড়িয়ে ধরে উপরের দিকে টানতে চেষ্টা করলো।। আমার গায়ের সব পশম পড়পড় করে দাঁড়িয়ে গেলো।। প্রচণ্ড ঘামাচ্ছিলাম আমি।। তারপর হটাত আমার মনে হল, আমার মাথাটা আমার বালিশে আছে কিন্তু বাকি দেহ পুরোপুরি বাতাসে।। আমি চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল নাহ।। আমি অনেক কষ্টে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।। দেখলাম কারেন্ট নেই কিন্তু আই পি এসে ফ্যান চলতেসে এবং একটা ছোট বাল্ব জলতেছে।। আমি টের পেলাম যে, কেউ যেনও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।। আমি তখন সম্পূর্ণ সচেতন।। পুরোপুরি টের পাচ্ছি মাথায় হাত বুলানোর ব্যাপারটা।। হটাত হাতটা আমার মাথা থেকে নেমে গলার দিকে আসতে লাগলো।। আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।। আমি অনেক কষ্টে ঘাড় ঘুড়িয়ে আড়চোখে আমার পিছনে দেখলাম।। দেখলাম সেই শিন্নিওয়ালা লোকটা হাসতেছে আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।। আমি ভয়ে দিশেহারা হয়ে বাম হাত দিয়ে সজোরে উনার দিকে একটা ঘুষি মারলাম।। কিন্তু আমাকে আর বেশি অবাক করে দিয়ে সেই হাতটা উনার দেহ কেটে বেড়িয়ে গেলো।। মানে অনেকটা বাতাসে ঘুষি মারলে যেমন হয়, তেমন অবস্থা।। আমি প্রচণ্ড ভয়ে জোড়ে চিৎকার করে উঠি।। সাথে সাথে পাশের রুম থেকে আমার ভাইয়া আর পরিবারের বাকি সবাই ছুটে এলো।। আমাকে শান্ত হবার জন্য কিছুক্ষণ সময় দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।। আমি আস্তে আস্তে সব খুলে বলতে লাগলাম।। ঠিক সেই সময়ে একটা প্রচণ্ড জোড়ে শব্দ হল এবং সেটা আমরা সবাই শুনতে পেলাম।। সেদিন আমি আমার ভাইয়ের পাশেই ঘুমাই।। তারপরে আমাকে এক হুজুরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি আমাকে দোয়া পড়ে দেন।। এখন আমি মোটামুটি সুস্থ।। তবে জোর গলায় এতটুকু বলতে পারি যে, ঐদিন আমি ঐ লোকটাকেই দেখেছি এবং তাও পরিপূর্ণ সজ্ঞানে।। ভুল হবার কোন সম্ভবনা নেই।। কিন্তু, ব্যাপারটা কেনও এমন হল টা আমি মিলাতে পারছি নাহ।।

এই ছিল আমার একটি ভয়াল রাত্রির অভিজ্ঞতা।। এটি কোন গল্প নয়।। যা আমার সাথে ঘটেছে, আমি তাই শেয়ার করলাম।। দয়া করে, কেউ বাজে কোন কমেন্ট করবেন নাহ।। ধন্যবাদ।। শেয়ার করেছেনঃ Candy Boy SûzÖñ

। জামিল, রূমানা, এবং একটি পরী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 5, 2011 at 10:23pm
রূমানার খুব পছন্দের একটা জায়গা ছাদ ।। সুযোগ পেলেই সে আর জামিল (তার স্বামী) ছাদে উঠে।। নতুন বিবাহিত দম্পতি তারা ।। এখনই তো সময়, জীবনকে উপভোগ করার ।। ইদানিং জামিলের আচরন ভাবিয়ে তুলল রূমানাকে ।। এমন করে কেনো জামিল ?? কিছুই ভেবে পায় না সে।। পাশের প্রতিবেশী ভাবীর সাথে এই বিষয়টা নিয়ে আলাপ করল ।। কিন্তু তাতে কোন ফল হলো না ।। এব্যাপারে কোন রকম সমাধান কেউ দিতে পারল না ।। জামিলের অদ্ভুত আচরন গুলো নিম্নরূপঃ একা একা কথা বলা ।। খুব গভীর রাতে ছাদে চলে যাওয়া, ঘুমের ঘোরে হাঁটা ও আবোল তাবোল বকা।। হাতের নানা অঙ্গভঙ্গি, যেমন কাউকে যেনো ইশারা করে ডাকছে ।। কাউকে জড়িয়ে ধরছে এমন।। রূমানার থেকে দূরে দূরে থাকা, ইত্যাদি ।।
আজ গ্রাম থেকে জামিলের বাবা মা এসেছে, জামিল অসুস্থ শুনে ।। জামিলের মা, ছেলের এমন আচরন দেখে বললেন, “এইডা নিশ্চয় ঔ পরীর কাম !! আইজো আমার পোলাডারে ছাড়লো না চুন্নীডা !! আমার পোলার জীবনডারে নষ্ট কইরা ফালাইবো ঔ পেত্নি !!” বলেই কাঁদতে শুরু করলেন ছেলের জন্য ।। শ্বাশুড়ির কথাগুলো শুনে আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইল রুমানা, “আম্মা, এইসব কি বলছেন আপনি ?? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।। আমাকে খুলে বলুন সব।।”
জামিলের মায়ের ভাষায়, “ছোড বেলাত থেক্যাই এক বদ পরী আমার পোলার দিকে নজর দিসিল ।। জামিলরে নাকি ওর ভাল লাগে।। ওরে বিয়া করবার চাইছিল ।। আমরা রাজি হই নাই দেইখ্যা, জামিলরে উঠাইয়্যা নিয়া যাইব কয়ছিল ।। আমি আর তোমার শ্বশুড় মিইল্যা হুজুর ডাইক্যা জামিলের শরীর দোয়া (তাবিজ) দিয়া আটকাইয়া দিছিলাম ।। এরপর থেইক্যা পরীডা আর ওর কাছে আইতে পারতো না , তয় মানুষের রূপ ধইরা ওরে নিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল।।” রুমানার মনে পড়ে গেলো হঠাত্।। কিছুদিন আগে তার সামনেই জামিল তার গায়ের তাবিজটা খুলে ফেলেছে।। রুমানার নিষেধ শোনেনি সে।। তাহলে এখন উপায়?? কয়েকদিন পরের ঘটনা।। জামিল এখন পুরোপুরি সুস্থ ।। রুমানা তার শ্বাশুড়ির কথা শুনে, জামিলকে এক নামকরা হুজুর দেখিয়েছিল ।। সেই হুজুর পরীটাকে একেবারের জন্য একটি কাঁচের বোতলে বন্দী করে ,ফেলে দিল নদীতে।। এখন আবার তারা সুখি-সংসার যাপন করতে লাগলো ।। আজ সকালেই ডাক্তারের রিপোর্ট হাতে পেল জামিল ।। রিপোর্টগুলো রুমানার ।। খুশির খবর রুমানা মা হতে চলেছে!!
কয়েকমাস পার হওয়ার পর চেক আপের জন্য রুমানাকে নিয়ে একদিন ডাক্তারের কাছে গেলো জামিল।। আলট্রাসনোতে যা ধরা পড়ল ,তা অবিশ্বাস্য!! মায়ের নাড়ীর সাথে কোন যোগ সূত্র নেই বাচ্চাটার।। অবাক হয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছেন ডাক্তার।। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে হাসছে বাচ্চাটি।। ঘটনাটিকে কেউ বানোয়াট ভাববেন না।। এটা সত্যি একটা অলৌকিক ঘটনা।। যা আমি জেনেছি আমার খালার মুখে।। ঘটনাটি আমি লিখেছি আমার ভাষায়।। আমার খালারা যেখানে থাকেন, ঘটনাটি সেখানেই ঘটেছে।। এখনো জামিল এবং রুমানা আছে।। শুধু নেই তাদের, দুঃখিত, পরীর সেই বাচ্চাটা।।

শেয়ার করেছেনঃ মাহমুদা আকতার বন্যা (অপরাজিতা)

।। আবারো নববধূ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 5, 2011 at 10:05pm
আমার আব্বু একজন মুক্তিযোদ্ধা।। আমি আজ যে ঘটনাটি শেয়ার করবো তা যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা।। আমাদের পুরো পরিবার তখন গ্রামে থাকতো।। গ্রাম মানে, প্রায় প্রত্যন্ত অঞ্চল।। আমার তখন জন্ম হয়নি।। আমি পরে আব্বুর মুখ থেকে ঘটনাটি শুনেছিলাম।।
আব্বু তখন প্রায়ই কাজ শেষে বেশ রাত করে বাসায় ফিরত।। তো, এমনিভাবে একদিন রাত করে বাসায় ফিরছিলেন।। তিনি কিছুদুর আসার পর দেখেলেন যে লাল শাড়ি পরিহিত একটি মেয়ে।। আব্বু ক্ষণিকের জন্য ভাবলেন মেয়েটা হয়তো বিয়ের শাড়ি পড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।। রাত্রি তখন প্রায় ২টা বাজে।। আব্বু দেখে পুরাই থ।। এতো রাতে একটা মেয়ে তাও লাল শাড়ি পড়া।। ব্যাপারটা কোন মতেই মিলছিল নাহ।। মেয়েটা হেঁটে যাচ্ছিল।। আব্বুও মেয়েটার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলেন আর মেয়েটাকে থামার জন্য বলতে লাগলেন।। কিন্তু এতে যেনও উল্টো মেয়েটার হাঁটার গতি বেড়ে গেলো।। আব্বু যতই কাছে যাচ্ছে, মেয়েটা ততই দূরে সরে যাচ্ছে।। এভাবে প্রায় ১৫ মিনিট চলার পর আব্বু জোড়ে চিৎকার দিয়ে মেয়েটিকে থামতে বলল।। তখন মেয়েটি থামল।।
এরপর মেয়েটি যখন আব্বুর দিকে ঘুরে তাকায় তখন দেখার সাথে সাথে আব্বু অজ্ঞান হয়ে যান।। পরবর্তীতে সকালে আব্বুকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।। পরে আব্বু বলেছিল, ঐরকম বীভৎস চেহারা উনি কখনো দেখেননি।।

শেয়ার করেছেনঃ Iftekhar Sajjad Rony

।। সিঁড়িঘরে ভূত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 5, 2011 at 10:40pm
এটা প্রায় বছর খানেক আগের ঘটনা।। ঘটনাটা শেয়ার করবো কি করবো না টা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম।। কারন ব্যাপারটা আমার নিজের সাথে না ঘটলে হয়তো আমিয় মানতে পারতাম নাহ।। এই ধরনের ঘটনা সবাই জানতে পছন্দ করলেও শুধু তারাই বিশ্বাস করে যারা ভুক্তভুগি।। যাই হোক, মূল ঘটনায় ফিরে আসি।। আমাদের এপার্টমেন্ট ৬ নম্বর ফ্লোরে মানে সপ্তম তলায়।। আমার বাবা, মা, ভাই, বোন, এরা ভেতরের দিকের রুমে থাকে।। আমার রুমটা একটু বাইরের দিকে।। আমার রুম থেকে কেউ বের হলে বা রুমে কেউ ঢুকলে বাকিরা টের পায় না বললেই চলে।। তো, একদিন রাতে আমি কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে ঘুম থেকে উঠি।। হাত ঘড়ি দেখলাম।। রাত ২.৩০ টার মত বাজে।। এতো রাতে কে এলো?? কিছুটা অবাক হলেও গেট খোলার জন্য রওনা হলাম।। দরজা খোলার পর দেখি কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।। সে ছেলে না মেয়ে তা দেখে বোঝা যাচ্ছিল নাহ।। আমি দরজা খোলার সাথে সাথে সেই আকৃতিটা ঘুরে চলে যেতে লাগলো।। ঠিক জানি না কেনও বা কোন সাহসে, কিন্তু আমিয় সেই মূর্তিটার পিছু নিলাম।। খানিক যাওয়ার পর আমাকে কে যেনও পিছন থেকে ডাক দিল।। পেছনে ঘুরে কাউকে পেলাম নাহ।। দ্রুত সামনে ঘুরে দেখলাম।। সেখানেও কেউ নেই।। এই ঘটনার সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা হালুসিনাসন হবে হয়তো।। যদিও আমি মানি, সায়েন্স সব কিছু ব্যাখ্যা করতে পারে নাহ।। আর যারা অতিপ্রাকৃত ঘটনার মাঝে এতসব ব্যাখ্যা খুঁজে, আমি তাদের জন্য দুঃখিত।। আমি আমার বাক্তিগত ঘটনা বা এক্সপেরিএঞ্চ শেয়ার করেছি।। নিরস মনে হতে পারে, তবে ঘটনাটি মিথ্যে নয়।। শেয়ার করেছেনঃ Dil Sadman Hossain (Turan)

। অপ্রাকৃতিক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 5, 2011 at 11:10pm
কখনো কিছু লিখি না।। তবে একটা সত্য ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা করল।। আমার নিজের গল্প না।। তবে যার কাছ থেকে শোনা তিনি বানিয়ে গল্প বলতে পারেন না এটুকু বলতে পারি।। আমার খালা (লিপি) এবং তার বড় বোনের (জানু) গল্প।। শেয়ার করছি লিপি খালামনির বক্তব্য অনুযায়ী।। প্রায় ২০ বছর আগের তাদের গ্রামের বাড়ির গল্প।। সংক্ষেপে বলছি।। “আমি আর জানু একবার পাশের গ্রাম থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।। অনেক আগের কথা তখন ঘর বাড়ি তেমন ছিল না।। গাছ পালাও ছিল অনেক।। বলতে গেলে গ্রামগুলো প্রায় জঙ্গলের মধ্যে ছিল।। ফিরতে ফিরতে বেশ সন্ধ্যা হয়ে যায়।। আমার বয়স তখন ১২-১৩ হবে।। জানুর হবে ১৫-১৬ এর মত।। বাড়ির কাছাকাছি প্রায় চলেই এসেছিলাম।। হঠাৎ কি হল জানি না, জানু বিকট চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে গড়াতে থাকে।। চোখ উলটে যায় আর মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে।। আমি প্রচণ্ড ভয়ে দিশেহারা হয়ে চিৎকার করতে থাকি।। একসময় আশে পাশ থেকে লোকজন এশে আমাদের উদ্ধার করে বাসায় এনে দিয়ে যায়।। পরের দিন জানুর জ্ঞান ফিরে।। কিছুটা অপ্রকিতস্থের মত কথা বলে।। ফলে কবিরাজ ডেকে আনা হয়।। কবিরাজ কৌশলে জানুর সাথে কথা বলে।। জানতে পারে জানুকে এক জীন বশ করেছে।। তারপর সে অনেক রকম চিকিৎসা করে।। বিস্তারিত না বলি।। কারন গল্পের মুল অংশ চিকিৎসা নয়।। যাই হোক।। আস্তে আস্তে জানু সুস্থ হয়ে উঠে।। সুস্থ হয়ে জানু জানায় সে সন্ধ্যার কথা।। হাঁটতে হাঁটতে নাকি হঠাৎ দেখে এক লম্বা কিছু একটা তার পথ আগলে দাড়িয়ে আছে।। যার চোখ রক্তের মত লাল আর গায়ে কেমন যেন আগুনের মত আলো।। এটা দেখে সে প্রচণ্ড ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।। কবিরাজ তখন একটা সমাধান দেন।। একটা তাবিজ জানু কে পড়িয়ে দেন।। আর বলেন আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না।। শুধু মাত্র একটা শর্ত পালন করতে হবে।। জানু চাইলে তাবিজ খুলতে পারবে তাতে সমস্যা হবে না।। কিন্তু জানুর শোবার ঘর যেন কোন অবস্থাতেই খালি রাখা না হয়।। অন্তত একজন হলেও যেন কেউ ঘরে থাকে।। সেটা দিনে হোক বা রাতে।। সবাই যেন সাবধান থাকে।। এভাবে সমস্যার সত্যি সমাধান হয়।। বহুদিন পার হয়ে যায়।। জানুর আর কোন সমস্যা হয় না।। আস্তে আস্তে একসময় আমরা ভুলে যেতে থাকি ব্যাপারটা।। হঠাৎ একদিন জানু একি ভাবে আবার সন্ধ্যায় মাটিতে পড়ে যায় সবার সামনে।। চোখ উলটে মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে।। একসময় অজ্ঞান হয়ে যায়।। তাড়াতাড়ি তাকে ঘরে এনে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়।। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা না।। কিভাবে হল?? চারিদিকে খোঁজ পড়ে যায়।। একসময় জানা যায় যে জানু একবার আজকে তাবিজ খুলে রেখেছিল।। আর বাসায় লোক কম থাকায় একটা মুহূর্তের জন্য ঐ শোবার ঘরে কেউ ছিল না।। আর তখনই মনে হয় জীনটা ফিরে এসেছিলো।। এবার সবাই তাবিজের খোঁজ করতে থাকে।। পরের দিন বাড়ি থেকে কিছু দূরে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে তাবিজটাকে পাওয়া যায়।।

শেয়ার করেছেনঃ Zubaer Mahmud Rupam

। পরিচিতা অশরীরী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 5, 2011 at 11:23pm
আজ থেকে ৪০ বছর আগে ঘটে যাওয়া কাহিনী বলছি।। তখন গ্রামে শিক্ষার আলো বা বিজলী বাতির আলো কোনটাই পৌঁছায়নি।। তাই বউ পিটিয়ে মেরে ফেলার বিষয়টাও অস্বাভাবিক ছিল না।। কোন একটা পরিবারে এই ঘটনাটাই ঘটল।। স্ত্রীকে হত্যা করার পর রাতেই তাকে কবর দিল স্বামী।। এর ১৭ দিন পরের কথা।। ওই লোকটার ছোটভাই যাত্রাপালা দেখে ফিরছিল।। অনেক দুরের পথ তাই স্বভাবতই মানুষ চাইবে সবচেয়ে ছোট পথে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে।। ভাবনার ভুল হল না।। বাড়িতে পৌঁছানর সবচেয়ে ছোট পথে একটা পুকুর পড়ে।। তো সে আপন মনে পুকুর পাড় ধরে আসছিল।। পুকুর পাড়ে নারিকেল গাছের নিচে একটা ছায়ামূর্তি দেখে সে থমকে যায়।। একটু কাছে যেতেই সে বুঝতে পারে ছায়ামূর্তিটা তার ভাবি।। সে আনমনে বলে উঠে, “কে?? ভাবি নাকি??” এই কথা বলার সাথে সাথেই ছায়ামূর্তি উঠে দাড়ায় এবং তার দিকে আসতে শুরু করে।। হটাত ওই লোকটার মনে পড়ে তার ভাবি তো ১৭ দিন আগে মারা গেছে।। সম্বিত ফিরে পাবার পর সে খুব ভয় পেয়ে যায়।। ততক্ষনে ওই জিনিসটা তার ১০ হাতের মধ্যে চলে আসে।। তখন লোকটা গ্রামের খুব প্রচলিত একটা নিয়মে নিজেকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ফেলে।। হাতের বাজুতে বাধা তাবিজটাকেও ছিঁড়ে ফেলে।। ছায়ামূর্তি তখন আর কিছুটা এগিয়েছে।। হটাত লোকটাকে অবাক করে দিয়ে ওই জিনিসটা চোখ ঢেকে ফেলে আর অদ্ভুত ভয়াবহ কণ্ঠে বলে ওঠে, “যাহ!! তুই সর আমার সামনে থেকে।। নইলে তর রক্ত খামু!!” এই কথা শুনে লোকটা ছায়ামূর্তির পাশ কাটিয়ে চলে যায়।। যাওয়ার সময় পিছনে খুব অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ শুনতে পায়।। তবুও সে দৌড়ায় না।। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর সে তার কানের কাছে শুনতে পায় রক্ত হিম করা কণ্ঠে কেউ তাকে বলছে, “তুই তো বাইচ্ছা গেলি।। কিন্তু তর ভাই রে তো আমি লইয়া জামু।। কইলজা খুইজা পাবি না।।” এর কিছুদিন পরেই তার ভাই মারা যায়, এবং সুস্থ একটা মানুষের এভাবে মৃত্যু।। গ্রামের কেউ কিছু বুঝল না।। সত্যিটা শুধু জানল ছোট ভাইটা।।

শেয়ার করেছেনঃ Zipped Demon

।। সংগৃহীত গল্প – ০৩ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 5, 2011 at 11:35pm
।। অমীমাংসিত ।। ঘটনাটা ৩১জুলাইয়ের। জ্বর জ্বর লাগছে সেই গতকাল দুপুর থেকে। তার ওপর প্রচন্ড গরম- কারেন্ট নেই। বিছানায় শুয়ে কেবল এপাশ ওপাশ করছি। ঘেমে বিছানার চাদর ভিজিয়ে ফেলেছি। ফেনারগান খেয়েছিলাম সর্দি আর কাশির জন্য। সারা দুপুর-রাত মাতালের মত বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছে। বার কয়েক মেঝেতে শুয়ে গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছি। মশার কামড় শুরু হতেই আবার বিছানায় মশারির ভেতর ঢুকে পরতে হয়েছে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুম। ওষুধ খেয়ে ঘুমালে স্বপ্নে যা দেখি সব হয় আবোল তাবোল। কিন্তু গতকাল সেরকম দেখিনি। প্রত্যেক ঘুমের ছোট ছোট অংশে অনেকটা খন্ড নাটকের মত স্বপ্ন দেখেছি দুপুর থেকে একেবারে ভোর রাত পর্যন্ত। স্বপ্নটা আবোল তাবোল নয়। খুব স্পষ্ট এবং প্রত্যেকবারই মনে হয়েছে আমি ঐ সময়টায় সে জায়গাতেই ছিলাম। স্বপ্নের প্রথম অংশে আমি একটা মাদ্রাসার পুকুর পাড়ে বসে ছিলাম। যোহরের আযান দেয়নি তখনো। দেবে দেবে এমন সময়। পুকুরের সবুজ শ্যাওলা ভরা পানি দাপিয়ে মাদ্রাসার বাচ্চাগুলো গোসল করছে। আমি সিঁড়িতে বসে দেখছি তা। দৃশ্যটায় কোনো বৈচিত্র নেই। খুব স্বাভাবিক। ওদের পানির ছিটে এসে আমার গায়ে পড়ছে। শ্যাওলার জমাট পানি শার্টটা ভারি করে তুলছে ক্রমশ। এ অবস্থায় হঠাৎ খেয়াল করলাম এতগুলো বাচ্চাদের ভীড়ে পানির মাঝে আরো একজন। দেখতে অনেকটা বাচ্চা ন্যাড়া মেয়েদের মত। কিন্তু গায়ের চামড়া অস্বাভাবিক রকমের ফ্যাকাসে। চুপচাপ গলা পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। এবং আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। কেমন গা শিরশিরে অনুভূতি হল হঠাৎ। আমার প্রথম বারের মত ঘুম ভাঙ্গল। এবং আমি আবিষ্কার করলাম আমার গায়ের শার্টটা সবুজ শ্যাওলায় রীতিমত মেখে আছে।
শার্টের এ দশা হবার পেছনে কোনো যুক্তি সে সময়ে দাঁড় করাতে পারিনি। তারওপর কড়া ঘুমের ওষুধের প্রভাবে যুক্তি-তর্ক-বিশ্লেষণ- কোনোটাই খাটছিল না মাথার ভেতর। লাগছিল সবটাই খুব স্বাভাবিক। মাতালের মত বিছানা থেকে সে সময় উঠে পড়তে হয়েছে, হোটেল থেকে খাবার নিয়ে এসেছে ছেলেটা। সেটা রেখে দিতে হল। খাবার নেয়ার সময় আমার শার্টের এ অবস্থা দেখে কেমন ভাবে যেন তাকাতে লাগল ছেলেটা। কিছু জিজ্ঞেস করল না অবশ্য। বুড়ো মানুষের ভীমরতি ভাবল বোধ হয়। নামায পড়ার জন্য গোসল সেরে নেয়া উচিত। তাই আর বিছানা মুখো হলাম না। যদিও এখনো ঘুমে শরীর অবশ প্রায়।
আমার দ্বিতীয় দফা ঘুম থেকে স্বপ্ন গুলো এতই জীবন্ত হতে লাগল যে আমি একবারও বুঝতে পারিনি এগুলো স্বপ্ন, এবং কোনো ধরনের প্রশ্নও জাগেনি আমার ভেতরে সে সময়। আমি গোসল সেরে নামায পড়ে শুয়ে পড়ি। খেতে ইচ্ছা করছিল না তখন। খালি পেটেই ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়া। ঘুমে মাতালের মত লাগছে। শুয়ে চোখ বন্ধ করা মাত্রই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। প্রায় সাথে সাথে চোখ মেললাম। আমি মাদ্রাসার মসজিদের বারান্দায় শুয়ে আছি। ছোট ছোট বাচ্চারা পাঞ্জাবী পাজামা পরে নামায পড়ছে আমার সামনের দিকে। আমি ওদের পেছন দিকে। কেউ আমাকে খেয়াল করছে না মনে হল। তাকাচ্ছে না কেউ আমার দিকে দেখলাম। আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। চারপাশে তাকালাম। সরাসরি চোখ চলে গেল মসজিদের দান বাক্সের গায়ে লেখাটার ওপর। মসজিদের বারান্দার একটা থামের গায়ে ঝোলানো ওটা। “ হিঙ্গুলী জামিয়া মাদ্রাসা মসজিদ মেহেদীনগর, বারইয়ার হাট, মিরসরাই, চট্টগ্রাম” আমি উঠে দাঁড়ালাম। টলছি মাতালের মত। আস্তে আস্তে হেটে এলাম দান বাক্সটার সামনে। ওখানে আরো একটা নতুন কাগজ টানানো দেখলাম। “অসুস্থ মাদ্রাসা ছাত্রের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন” একটা ছোট নোটিস দেয়া। বোধ হয় কোনো ছাত্র অসুস্থ। আমি মানিব্যাগ বের করে একটা দশ টাকার ছেঁড়া নোট বের করলাম। টাকা ঢোকানোর ছিদ্রটা জ্যাম হয়ে গেছে। ঢোকানো যাচ্ছে না। তালাটা খোলা। এমনি ছিটকিনিটার হুকে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। চুরি টুরির ভয় নেই মনে হয়। আমি তালাটা খুলে ছিটকিনি উঠিয়ে ঢাকনাটা খুললাম। সবে মাত্র টাকাটা ফেলেছি হঠাৎ দেখলাম উঠানে গায়ে চাঁদর মুড়ি দিয়ে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মাথার মেয়েটা এককোনায় বসে রয়েছে! এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! ঝটকা দিয়ে জেগে উঠলাম। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। কারেন্ট আসেনি এখনো। কিন্তু ভীষণ অবাক হলাম একটা জিনিস দেখে। আমার হাতে ছোট একটা তালা! মসজিদের দান বাক্সের সেই তালাটা......... আমার তৃতীয় দফার ঘুমটা হল শেষ বিকেলের দিকে। কারেন্ট এসেছে তখন। ক্যাপাসিটর নষ্ট ওয়ালা ফ্যানটা ঘটর ঘটর করে মাথার ওপর ঘুরছে। হাত দিয়ে ঘোরালে হয়ত আরো জোরেই ঘুরতো। চোখ বোজার সাহতে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। এবারেও নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই মাদ্রাসাটায় আবার চলে এসেছি আমি। এবার বেশ অবাক হয়ে দেখলাম মাদ্রাসার ছোট ছোট বাচ্চাগুলো একটা লাশ নেয়া খাটিয়ার চারপাশে ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। নিচু স্বরে ফোঁপাচ্ছে কেউ। আমি মাথা উঁচিয়ে দেখলাম। কোনো ছোট বাচ্চা মারা গেছে। কাফন দিয়ে পেঁচানো। কেবল মুখটা বার করা। চার পাঁচ বছর হবে বয়েস। জানাযা পড়ানো হবে এখন। মাদ্রাসার হুজুর-আলেমরা সহ সবাই এসে সারি করে দাঁড়িয়ে পরতে বললেন। ঈমাম সাহেব লাশটাকে সামনে রেখে জানাযা পড়ানো শুরু করলেন। আমি একরকম ঘোরের মধ্যেই নিয়ত বেঁধে জানাযায় দাঁড়িয়ে গেলাম। এখানে অনেক লোকজন এসেছে। গ্রামের লোকজন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যে মারা গেছে- তার কেউ বোধ হয় আসেনি। অন্তত আসলে সেটা হাব ভাবেই প্রকাশ পেত। একবার সন্দেহ হল- বাচ্চাটা অনাথ না তো?
লাশটা কবর দেয়ার জন্য মসজিদের পাশের গোরস্থানের দিকে যখন নিয়ে যাচ্ছে খেয়াল করলাম গ্রামের লোক গুলো খুব অবাক মুখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলছে না। আমি নিজেও কিছুটা দ্বিধা দন্দ্বে ভূগছি। সবার সাথে আমিও কবর দিতে এলাম। প্রকৃয়াটা খুব দ্রুত হল। মাটি দেয়ার সময় কয়েক মুঠো মাটি দেয়ার পর যেই আবার মাটি নিয়েছি হাতে- দেখলাম আমার ঠিক সামনে, কবরের অন্য পাশে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মেয়েটা! লোকজনের আড়াল থেকে স্থির চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে...... আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এবং এ দফায় আবিষ্কার করলাম আমার ডান হাতে মুঠো ভরা কাঁচা মাটি!
আমার চতুর্থ ও শেষ স্বপ্নটা দেখি মধ্য রাতে। তখন জ্বর বেড়েছে ভীষণ। থেকে থেকে কাঁশছি। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছি। জ্বরে সারা শরীর কাঁপছে। ঘুম আসতে সময় নিচ্ছিল তাই। কখন ঘুমিয়েছিলাম ঠিক মনে নেই। চোখ মেলে দেখলাম আমি মসজিদের পাশের গোরস্থানটার একটা গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসে আছি। আমার ঠিক সামনেই নতুন বাঁশের বেড়া দেয়া সেই কবর। আকাশে অর্ধেক চাঁদ। সেই চাঁদের আলোয় অস্পষ্ট একটা শব্দ পাচ্ছি গোরস্থানের ভেতর। অনেকটা ছোট বাচ্চার ভয় পাওয়া কান্নার মতশব্দ। কিন্তু শব্দটা কেমন যেন চাপা। আমি ভয় পেলাম হঠাৎ ভীষণ রকমের একটা ভয়। হাত পা সব অসাড় হয়ে আসতে নিল- এমন একটা ভয়...... খুব হাচড়ে পাচড়ে এক রকম উঠে দাঁড়ালাম গাছটা ধরে। চাঁদের আলোয় কবরটার দিকে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে উষ্ণ রক্তের একটা স্রোত বয়ে গেল মেরুদন্ডের ওপর দিয়ে। আমার স্পষ্ট মনে হল কবরটা নিঃশ্বাস নেয়ার সময় যে ভাবে বুক ওঠা নামা করে- সে ভাবে বেশ জোরেই ওঠা নামা করছে! তারপর লাগল কবরের মাটিগুলো থেকে থেকে লাফিয়ে উঠে নেমে যাচ্ছে! যেন নিচ থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে বের হতে চাচ্ছে! সেই সাথে ছোট বাচ্চার ভয় পাওয়া গুমোট-চাপা কন্ঠস্বর! আমি এত ভয় পেলাম যে দ্বিগ্বীদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে গোরস্থানের মাঝ দিয়ে মসজিদের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। তার মাঝেই দেখলাম সেই ন্যাড়া মাথার মেয়েটা একটা কোঁদাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে একটা গাছের নিচে। হাত তুলে সেই নতুন কবরটার দিকে যেতে বলছে ইসারায় আমাকে। হাতের কোঁদালটা দেখিয়ে বোঝাচ্ছে কবরটা খোঁড়ার জন্য আমাকে!
আমি প্রচন্ড ভয়ে তখন সংজ্ঞাহীন প্রায়। পেছন থেকে আসা কবরের ধুপ ধুপ শব্দটা তাড়া করছে যেন আমাকে.........
আমি জেগে উঠি ফযরের আযানের মুহূর্তে। আমার সারা গায়ে ধূলো বালি, মাটি আর নানান জায়গায় ছিলে গেছে কাঁটার ঘষা খেয়ে...... বিমূঢ়ের মত বসে রইলাম আমি......

আমি পেশায় সরকারী চাকুরীজীবি। টাইপিস্টের কাজ করি। নিজের চলে না বলে বিয়ে থা আর করিনি। পঞ্চাশের মত বয়স হয়েছে বলে এখন আর ওসব করার চিন্তাও মাথায় আনিনা। একা একা থাকি বলে নানান রোগে শোকে ভূগি। ছোট বেলা থেকে এক ফুফুর কাছে মানুষ হয়েছি। তাকে টুকটাক সাহায্য করি এখন। এছাড়া আমার জগৎ খুব সীমাবদ্ধ। সে রাতের স্বপ্ন গুলো নিয়ে খুব যে ব্যস্ত হয়ে পরব এমন মানুষও নই আমি। একা থাকি বলে হয়ত মনের ভূলে এসব দেখেছি। শার্ট, তালা, মাটি- এসবের ব্যাখ্যা মনের ভূল বলেই হয়ত চালিয়ে দিয়ে ভূলে যেতাম পুর ব্যাপারটা। কিন্তু নিছক স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিতে পারিনি আমি সেটাকে।
৩১ জুলাইয়ের বিচিত্র ঘটনা গুলো আমার পক্ষে ভূলে যাওয়া সম্ভব হল না পত্রিকায় একটা লেখা দেখে। ৩রা জুনের একটা পত্রিকায় “হিঙ্গুলী মাদ্রাসা গোরস্থানে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে জীবন্ত কবর দেয়া হয় ভূল বশত” শিরোনামে একটা আর্টিক্যাল চোখে পড়ে আমার। সব ওলোট পালট লাগতে শুরু করে তখন। কারণ সেখানে বলা হয়েছেঃ

৩১ জুলাই বিকালে জুবায়ের আলী নামের এক ছোট পাঁচ বছরের মাদ্রাসা ছাত্র মারা যায়। স্থানীয় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করার পর বাদ আসর তাকে মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। পরদিন ভোরবেলা ফযরের নামায শেষে ঈমাম সাহেব কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দেখেন কবরের মাটি সরে গেছে অনেক। যেন কেউ ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেয়েছে। তাঁর সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন দিয়ে কবর খোঁড়ানো হয় এবং সবাই বাক রুদ্ধ হয়ে দেখে কবরের কোনায় সাদা কাফন পরে ছেলেটা বাঁকা হয়ে বসে আছে। তার বসে থাকার ভঙ্গিটা খুব অস্বাভাবিক। কবরের দেয়াল জুরে ছেলেটার আঙ্গুলের আচোঁড়ের চিহ্ন। শ্বাস নিতে না পেরে দেয়াল খাঁমচে বের হবার চেষ্টা করেছিল বোঝা যায়। চোখ গুলো কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রায়। পা দিয়ে কবরের মেঝে ঘষে লম্বা লম্বা খাঁজ করে মাটি উঠিয়ে ফেলেছে ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণায়! আমি এই ঘটনা জানার পর টাকাপয়সা জমিয়ে সেই গ্রামে গিয়েছিলাম বেশ কিছুদিন পর। সেখানে গিয়ে আমি আরো কিছু ধাঁধাঁর মাঝে পড়ে যাই। কিন্তু আজ সেটা আর লিখতে ইচ্ছা করছে না।

সংগ্রহ করেছেনঃ Rudro Aimel

।। কে সে?? ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, August 6, 2011 at 10:30pm
আমার শৈশব ও কৈশর কাটে খুলনার মংলা তে। একটা সরকারী ফ্লাটবাসার আমরা থাকতাম চার তলার ফ্লাটে ঐ ফ্লাটে ওঠার কিছুদিন পরে জানতে পারলাম যে আমাদের পাশের ফ্লাটের এক মেয়ে ঐ বিল্ডিং এর ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়।ছাদে অনেক উচু রেলিং দেয়া ছিল।তারপর ও।মেয়েটি ছাদ থেকে পড়ার অনেক্ক্ষন পর খুলনা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।মারা যাওয়ার আগে শুধু এইটুকুই সে বলতে পারে যে তার মনে হয়েছে কেউ তাকে ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দেয়।এরপর থেকে ছাদে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়।আমি কয়েক দিন পালিয়ে ছাদে উঠেছি কিছু দেখতে পাই কিনা এই আশায় কিন্তু কিছুই দেখিনি।যাইহোক একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি।আমার খাট টা ছিল একদম জানালার পাশে।গরমকাল বলে জানালা খোলা রেখে ঘুমাতাম।আর বাসার সামনের রোডে স্ট্রীট ল্যাম্পের আলো জ্বলত। হঠাত্ প্রচন্ড গরম ও অসস্তিবোধ হওয়ায় ঘুম ভেঙে যায়।জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখি নীল রঙের কামিজ পরা ১৩-১৪ বছের একটি মেয়ে খুর করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।অন্য সময় হয়ত ভয় পেতাম কিন্তু অধো ঘুম আধো জাগরনে আর করুন চোখ দেখে ঘুম জড়িত কন্ঠে ডাক দিলাম কি চাই? সাথে সাথে সে যেন হাওয়ায় মিশিয়ে গেল। এটা দেখে আমার হুশ আসলো এবং ভয় ও করতে লাগলো।আমি আমার মা কে ডাকলাম এবং তাকে সব বললাম।আম্মা দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিল।ওই দিন ই আমার জ্বর আসে। অনেক দিন পর পাশের ফ্লাটে বেড়াতে গিয়ে চমকে উঠলাম।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল কারন ছবির মেয়েটিকেই আমি জানালায় দেখেছি,যে কিনা ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল। শেয়ার করেছেনঃ কে এইচ রাসেল

।। সংগৃহীত গল্প - ০৪ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, August 6, 2011 at 10:49pm
আমি ভূত বিশ্বাস করতামনা, এখন করি। জীবনের কয়েকটি ঘটনা আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে যে , "আমি যা অবিশ্বাস করি, করলেই তা মিথ্যা হয়ে যায়না। " যাই হোক আসল ঘটনায় আসি।
সময়টা হলো ২০০০সাল। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। উল্লেখ করতেই হচ্ছে ১৯৯৮ সালের ২১শে ফেবঃ তারিখে আমাদের পরিবার একটি ভয়াবহ রোড একসিডেন্টে পড়ে। আমার একমাত্র বোনটি এবং আমার নানী, যিনি আমাকে সবথকে বেশি ভালোবাসতেন, এই দুর্ঘটনায় মারা যায়। মা খুব ভুগে ভুগে বেচে আছেন। কিন্তু তিনি স্মৃতি হারিয়ে একেবারে শিশু হয়ে যান। আমাকে গাইড করার কেউ ছিলোনা। লেখা-পড়ায় বরাবরের মতই ভালো করছিলাম, তাই বাবাও খুব বেশি ভাবেননি। আস্তে আস্তে কিছু বাম দলের সাথে জানাশোনা হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সাম্যবাদের তাত্বিক লাইনটা বেশ ভালোভাবেই ধরে ফেলি, এবং পুরোপুরি নাস্তিক হয়ে যাই!! তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি।
এত কথা এজন্য বললাম যে এই ঘটনাটি ঘটেছিল যখন আমি পুরোপুরি নাস্তিক। এবং এর পরেও আরও ৮বছর নাস্তিকই ছিলাম।
এবার মুল কাহিনিতে আসি:
একসিডেন্টের পরে নানাকে আবার বিয়ে দেওয়া হয়। নতুন নানী খুবই ভালো মানুষ, তেমনই তার পরিবারের মানুষেরা। নতুন নানীর বাপের বাড়ি ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে। এই গ্রামের যে বড় বিলটি আছে তার মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপের মত আট-দশটা করে বাড়ি। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছোত ছোট নৌকা। প্রায় সব পরিবারেই একটা করে নৌকা আছে। ইলেকট্রিসিটি পৌছানোর প্রশ্নই ওঠেনা।
আমরা একবার খুব আয়োজন করে সেখানে বেড়াতে গেলাম। ফরিদপুরের মানুষের রান্নার হাত খুবই ভালো। দুপুরে আয়েশ করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে উঠলাম। এরপর নৌকো নিয়ে বিলে শাপলা তুলে বেড়ালাম। সন্ধার পরে দেখি নানীর ছোট ভাই, জাহিদ ভাই নৌকা নিয়ে মাছ মারতে চলেছেন। আমিও যাব সিদ্ধান্ত হলো। আমরা তিনজন, আমি, জাহিদ ভাই ও তার বন্ধু মেহেদি ভাই। সরন্জাম নেয়া হলো জাল, কোঁচ, হারিকেন এবং পর্যাপ্ত পরিমানে গাঁজা ও সিগারেট। আমিও তখন সিগারেট খাওয়া শিখে গেছি। বুঝতে পারছিলাম আজ ভোম শংকরেও হাতে খরি হয়ে যাবে, খুব রোমান্ঞ্চ হচ্ছিলো।
রাত আটটা। ঐ গ্রামের জন্য মাঝ রাত। আমরা রওনা হলাম।
মেহেদি ভাই গাঁজা বানাতে বসে গেলেন, জাহিদ ভাই দাঁড় টেনে মাঝ বিলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
অর্ধেক চাঁদ আছে আকাশে, আমি নৌকোর মাঝখানে বাবু হয়ে বসে আকাশ দেখছি, আর সিগারেট টানছি। অপুর্ব লাগছে প্রকৃতি!! অর্ধেক চাঁদও শহরের পুর্ণিমাকে হার মানায়।
গাঁজা পর্বে আমাকে ডাকা হলোনা। কিছুটা মন খারাপ হলো। এরপর শুরু হলো মাছ ধরা। আমি বসে আছি চালক মেহেদি ভাইয়ের কাছাকাছি। জাহিদ ভাই জাল মারছেন । মাছ খারাপ উঠছেনা। একটু দুরে বেশি মাছ পাওয়ার আশায় আমরা এগিয়ে চললাম। যতই এগুই ততই মাছের পরিমান বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে লোকালয় থেকে বেশ দুরে চলে এলাম। প্রচুর মাছ উঠছে। মাছ গুলো নৌকার খোড়লে জমা করা হচ্ছে।
আমি নিষ্কৃয় বসে আছি। হঠাত ঠান্ডা বাতাস উঠলো, গা হীম করা অনুভুতি। এর পরেই হঠাত নৌকার চারপাশ থেকে কেমন মুট-মুট শব্দ হতে শুরু করলো। জাহিদ ভাইদের কোন বিকার দেখলামনা। একমনে মাছ ধরছেন। কিন্তু শব্দটা ক্রমেই অসহ্য উঠছে। আমি একবার বলেই ফেললাম "ভাই, কেমন একটা কুট-মুট শব্দ পাচ্ছি।"
জাহিদ ভাই অভয় দিয়ে বললেন "নৌকার খোলে মাছ লাফানোর জন্য এমন শব্দ"
আমি ভাবলাম "তাই হবে"!!! তবে একটু ভয় ভয় হটে লাগলো। হারিকেনটা একটু উস্কে দিলাম।
জাহিদ ভাই বেশ কিছু মাছ তুলে মেহেদি ভাইকে বললেন " এবার তুই"।
বলে হারিকেন নিয়ে খোড়লের মাছ দেখতে গেলেন , এবং চিতকার করে লাফিয়ে সরে গেলেন। আমি লাফ দিয়ে উঠে সরতে সরতে বললাম "ভাই কি হয়েছে"।
তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন "পেত্নি, মাছ খাচ্ছে!!"
আমি একটু উকি দিয়ে তাকালাম খোড়লের ভেতর। যা দেখলাম তাতে গা শিউড়ে উঠলো। একটি মাছেরও শরির নেই, শুধু অসংখ্য মাথা পড়ে আছে, আর রক্ত মেশানো পানি!!
মেহেদি ভাই বললেন "এখান থেকে সরে যেতে হবে!"
প্রানপনে দাঁড় টানা শুরু হলো, এবার শব্দটা কুট-কুট থেকে অনেক বেড়ে গিয়ে মট-মটের মত লাগছে।
জাহিদ ভাই চিতকার করে বললেন "ওরা নৌকা ভাঙতে চাইছে...." বলেই আরও জোরে দাড় বাইতে থাকলেন, কিন্তু অদ্ভুত কারনে আমরা খুব একটা এগুতে পারছিনা। আমার মনে ঝড় বইছে! এটা কিভাবে সম্ভব??
প্রানান্তকর চেষ্টা চলছে বাড়িতে পৌছানোর, শব্দ বেড়েই চলেছে। আমি দুজনের গা ঘেষে বসে আছি। দোয়া দরুদে বিশ্বাস করতামনা বলেই পড়ছিলামনা। কিন্তু ভয়াবহ ভয় জড়িয়ে ফেলেছিলো আমাকে।
যাহোক শেষ মেশ জাহিদ ভাইদের বাড়ির দ্বীপমতো জায়গাটায় পৌছতে পারলাম। নৌকো পাড়ে ঠেকতেই ঝপঝপ করে লাফিয়ে নামলাম। নৌকাটা কোন রকম বেধে রেখেই দে দৌড়! এক দৌড়ে বাসা।
জাহিদ ভাইয়ের চিল্লাচিল্লিতে সবাই উঠে এল। কাহিনি শুনে সবাই হতবাক।
পরে শুনেছিলাম। বিল এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে অনেকেই এই বিপদে পড়েছেন। অনেকের নৌকা উল্টে দেয়া হয়েছে।
কে এমন করে মাছ খায়? ওরা কারা, যাদের বলা হয় মাছ খেকো পেত্নী?
কে উল্টে দেয় নৌকা? কে? কোথায় ওরা থাকে?
আপনাদের কি মনে হয়? সংগ্রহ করেছেনঃ অ্যাডমিন (SAJJAD)

।। করুন পরিনতি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, August 7, 2011 at 10:29pm
খুবই একরোখা আর বদমেজাজি ছিল আমাদের তানিয়া খালামনি।। তবে পরিচিত জনের কাছে শুধু এই নয়, অনেক বেশি উচ্ছলও ছিলেন তিনি।। কিন্তু হটাত করে যেনও উনার জীবনী শক্তি কমে যেতে লাগলো।। কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন।। কারো সাথে তেমন একটা কথা ও বলেন নাহ।। কিছুদিন পর হটাত উনার হাত পা ফুলে যেতে লাগলো।। তাই উনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন আমার মামা।। ডাক্তার অনেক কিছুই পরীক্ষা করতে দিলেন কিন্তু কিছুই ধরতে পারলেন নাহ।। ধীরে ধীরে উনার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হতে লাগলো।। অনেক ডাক্তার দেখানো হলে কিন্তু কেউই কিছু ধরতে পারলেন নাহ।। এদিকে তানিয়া খালামনি দিনকে দিন আর বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়তে লাগলেন।। সারাদিন শুধু কান্নাকাটি করতেন।। তানিয়া খালামনি এর কিছুদিন পর মারা যান।। মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে উনার গায়ের চামড়া খসে খসে পড়া শুরু করে।। উনার পুরো শরীর এক বীভৎস রূপ নেয়।। বাড়ির সকলে এই ব্যাপারে অনেক বেশি চেষ্টা করেও কিছু জানতে পারেনি।। অবশেষে, ১২ই ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।।
তানিয়া খালামনি মারা যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর, যখন মোটামুটি সবাই তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা ভুলতে বসেছে তখন তার মৃত্যুর আসল রহস্য উন্মোচিত হয়।। তানিয়া খালামনির ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল।। মৃত্যুর কারনটা জানা যায় সেই ডায়েরি পড়ে।। সেটায় স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল সব।। তানিয়া খালামনি লিখেছিলেনঃ “আজ আমি বিরক্ত হয়ে একটা বিড়ালের গায়ে গরম পানি ঢেলে দেই।। কিন্তু, আশ্চর্যের ব্যাপার হল, দুপুরে ঘুমানোর সময় আমি বিড়ালটাকে স্বপ্নে দেখতে পাই।। বিড়ালটা আমাকে ৪ টুকরো আপেল খেতে দেয়, কিন্তু, এক টুকরো খেয়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।।”
“আজ আবার বিড়ালটা আমার স্বপ্নে এসেছিলো।। আমি যেন শুনতে পাই যে ওটা স্পষ্ট ভাষায় বলছে, “আমাকে যেভাবে কষ্ট দিলি, তোকেও সেভাবে কষ্ট পেতে হবে।।”এরপর বিড়ালটি তার আকার পরিবর্তন করে খুব ভয়ঙ্কর একটা রূপ নেয়।।” ডায়েরিতে এতটুকু পর্যন্ত লেখা ছিল।। এরপর, একবারে একটা পৃষ্ঠাতেই “১৬ই ডিসেম্বর” লেখা ছিল।।
ডায়েরির উপরের ঘটনাটুকু পড়ার পর কারোই আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, ঐ বিড়ালটা কোন সাধারন বিড়াল ছিল না।। বরঞ্ছ অশরীরী টাইপের কিছু ছিল।। গরম পানি ঢেলে দেয়ায় বিড়ালটার গায়ের চামড়া যেমন খসে খসে পড়ে, তেমনি তানিয়া খালামনির গায়ের চামড়া ও খসে খসে পড়েছিল।। (সম্মানিত অ্যাডমিন এবং পাঠকবৃন্দ, উপরক্ত ঘটনাটি মিথ্যে অথবা বানোয়াট নয়।। এটা আমার নিজের খালামনির সাথে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা) শেয়ার করছেনঃ Samia Tasmin

।। কে, কে ওখানে?? ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, August 7, 2011 at 10:59pm
আমার জীবনে একাধিক ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে।। এরমধ্যে দুটোর সাথে আপনারা পরিচিত হয়েছেন।। ১। ডর্মিটরিতে ভূত।। ২। অচেনা আরোহী।। এখন যেটা শেয়ার করব তা ১নং ঘটনার সাথে সর্ম্পকিত।। কোন রকমের নোটিশ ছাড়াই আমার স্ত্রী ঘোষনা দিল সে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। সরকারি চাকুরি না হওয়া পর্যন্ত আর চাকুরি করবে না। এখন থেকে পতিসেবা করবে। কিছুদিনের মধ্যে যেন বাসা নেই। পরদিন ইউএনও এর সাথে দেখা করে আমার নামে কোর্য়াটারে একটা ফ্লাট বরাদ্দের অনুরোধ করি। কারন তিনি এর সভাপতি। যেহেতু ফ্লাট খালি ছিল তাই কয়েক দিনের মধ্যে ফ্লাট পেয়ে গেলাম। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ডর্মিটরী ছেড়ে কোর্য়াটারে উঠে গেলাম। পাশাপাশি দুটো দোতলা বিল্ডিং। প্রত্যেকটায় ৪টা করে ফ্লাট। ডর্মিটরী থেকে বিল্ডিং দুটো ৩০০গজের মতো পশ্চিমে অবস্থিত। আমার ফ্লাট টা ছিল নীচ তলায়। দুটো বেড রুম, অকটা ডাইনিং, একটা ড্রইং রুম এই নিয়ে আমার ফ্লাট। এর পিছন দিকটা জঙ্গলে পরিপূর্ন। তার পরেই একটা পরিত্যক্ত পুকুর। কিছুদিন পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসলাম। বিল্ডিংয়ের জানালা গুলো ছিল কাঁচের। আমরা ফ্লাটের সামনের দিকের বেডরুমে ঘুমাতাম। মাঝেমধ্যে পিছনের বেডরুমে রাত ১.00-১.৩০টা পর্যন্ত কাটাতাম। নতুন বাসায় আনন্দেই দিন কাটছিল। প্রায় ছয় মাস পর এক রাতে প্রথম বিপত্তি দেখাদিল। রাত ১টার দিকে সামনের বেডরুমে শুয়ে টিভি দেখছি হঠাত্‍ পিছনের বেড রুমে ঝনঝন করে কিছু পরার শব্দ হলো। আমি ডাইনিং রুমের বাল্ব অন করে বেড রুমের দড়জা খোলা মাত্র দড়জা দিয়ে ঢোকা আলোয় স্পষ্ট দেখলাম মানুষের ছায়ার মত কিছু একটা জানালার দিকে চলে গেল। বেডরুমের বাল্ব অন করে দেখি রুমে কিছু নেই। জানালার পর্দাটা কাঁপছে। পর্দাটা সরিয়ে দেখি জানালাটা বন্দ। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি চাঁদরটা অগোছালো। চাঁদরটা ঠিকঠাক করে বাল্ব অফ করে সামনের বেড রুমে চলে আসি। স্ত্রীকে বলি ডাইনিংয়ে ইদুরে খাবারের ঢাকনা ফেলেছে। এর কিছু দিন পর রাত ১টার দিকে সেই পিছন দিকের বেডরুমে আমি শুয়ে আছি। আমার স্ত্রী কাপড় ভাঁজ করছে আর আমার সাথে টুকটাক কথা বলছে। জানালার পর্দা ফাকা করা ছিল। ও জানালার দিকে তাকিয়ে হঠাত্‍ 'কে?' বলে চিত্কাফর করে আমার গায়ের উপরে এসে পরে। ওর সারা শরীর থরথর করে কাপছিল। আংগুল দিয়ে জানালা দেখিয়ে বলে, ঐখানে কে যেন চাঁদর মুড়ি দিয়ে দাড়িয়ে রুমের মধ্যে তাকিয়ে আছে। আমি উঠে জানালার দিকে যেতে চাইলে ও বাধা দেয়। তারপরেও টর্চ নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে আলো ফেলে দেখি কোথাও কিছু নেই। তবে জানালা ঘেসা সুপারী গাছের সাথে জড়ানো লতাগুলো অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। সেটা আমার স্ত্রীর চোঁখও এড়ায়নি। ওকে এই বলে বোঝাতে চেষ্টা করি যে, ওটা বাতাসে দুলছিল! কিন্তু কে শোনে কার কথা। এর পরে সামনের রুমে চলে আসি। পরদিন ঐ বেডরুমটা লক করে দেই। মাঝেমধ্যে ঐ রুমে অদ্ভুত সব শব্দ হতো। আর এদিকে আমার স্ত্রীর মধ্যে কেমন একটা চেন্জ লক্ষ করলাম। কথা বলা একে বারে কমিয়ে দিল। প্রায় রাতেই ঘুমের মধ্যে চিত্কাকর দিয়ে উঠত। এভাবে আরও কিছু দিন কাটার পর অবস্থা বেগতিক দেখে ওকে শ্বশুর বাড়ি রেখে আসি। এর পর একা একা এভাবে বেশ কিছু দিন কেটে যায়। একদিন অনেক রাত করে ঘুমাই। হঠাত্‍ একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি চারদিক পরিস্কার। বুয়া রুম ঝাড়ু দিচ্ছে। তাকে জিঞ্জেস করলাম সে রুমে ঢুকলো কিভাবে। সে জানালো সব কটা দড়জা থোলা ছিল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। ঘরের সব কিছু চেক করে দেখি ঠিক আছে। কিন্তু দড়জা গুলো কে খুল্লো তা বুঝতে পারলাম না।
এর মধ্যে ১/১১ চলে আসলো। আমাকে বদলী করে দেয়া হলো। বাসা ছেড়ে চলে যাই নতুন কর্মস্থলে। আমার স্ত্রী এখনও মাঝেমঝে ঘুমের ঘোরে কেপে কেপে ওঠে! উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত এটাই আমার জীবনে ঘটে যাওয়া শেষ ভৌতিক ঘটনা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে।

শেয়ার করেছেনঃ আউলা চুলে বাউলা আমি

।। বন্ধুত্ব ।। (অ্যাডমিনদের শেয়ার করা)

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, August 7, 2011 at 11:31pm
মাহের, জিতু, রকি, আর শান্ত।। চার বন্ধু।। প্রানের বন্ধু বলতে যাকে বোঝায়।। স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি অবদি সবাই একসাথে।। একজন আরেকজনের জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, পাওয়া–না পাওয়ার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।। যখন তারা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ত, তখন কত মজা করেই না দিনরাত এক করে আড্ডা দিতো।। টি, এস, সি, রমনা পার্ক, কার্জন হল, ধাপিয়ে বেড়াতো চারবন্ধু মিলে।। কিন্তু সুখপাখি কখনো চিরদিনের জন্য খাঁচায় বন্দি থাকতে চায় না।। ছাড়তে তাকে হবেই।। ভার্সিটি পাশের পর একেকজন চলে গেলো একেক দিকে।। কারো চাকরি হল টেলিকম কোম্পানিতে, তো কারো হল ব্যাংকে।। কেউ আবার চলে গেলো ঢাকা ছেড়ে সুধুর পঞ্চগড়ে।। এখন তাদের মাঝে আর দেখা সাক্ষাত হয় না তেমন একটা।। এইবার ঈদের ছুটিতে সব বন্ধু একত্র হবার প্ল্যান করলো তারা।। পরিকল্পনাকারী মূলত জিতু।। পাশ করার পর গ্রামীনফোনে চাকরি করছে।। খোলামেলা জীবনটা হটাত করে যেনও খুব বেশি যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে।। যেইসব বন্ধুদের ছাড়া আগে একটি দিন কাটানো মুশকিল হয়ে যেত, আজ তাদের সাথে ফোনে কালেভদ্রে কথা হয়।। আর দেখা প্রায় হয় না বললেই চলে।। পরিকল্পনার কথা খুলে বলল সবাইকে।। ঈদের তৃতীয়দিন টি, এস, সি তে চারবন্ধু দেখা করবে ঠিক হল।। যথাসময়ে জায়গামত পৌঁছে গেলো তিনজন।। শুধু মাহেরের দেখা নেই।। রকি জানালো, মাহেরের সাথে কথা হয়েছে তার।। মাহের নাকি অফিসিয়াল কি একটা কাজে ঈদের পরদিনই পঞ্চগড় ফিরে গেছে।। আজকে সকালে ঢাকায় এসে তাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা।। কিন্তু কথা রাখেনি সে।। হয়তো অফিসিয়াল কাজটা বেশি জরুরি ছিল, হয়তো শেষ মুহূর্তে আটকে গেছে।। পরস্পরকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল তারা।। কিন্তু মাহেরের একেবারেই যোগাযোগ না করার ব্যাপারটা কেমন কেমন যেনও ঠেকল সবার কাছেই।। তবে কি শুধু সময়ের প্রয়োজনেই বন্ধুত্ব?? আজ সবার জীবন আলাদা পথে ধাবমান।। কে কার জন্য কোথায় বসে আছে তা দেখার সময় কই?? ভুলটা ভাঙল পরেরদিনের খবরের কাগজ পড়ে।। খবরের কাগজে ছোট করে একটা খবর দেয়াঃ বেপরোয়া গাড়ি চালানোঃ বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পঞ্চগড়ে রুটে ৫জন নিহত।। ব্যাপারটা সর্বপ্রথম লক্ষ্য করে জিতু।। বাকিদের সাথে সাথে জানায়।। হতদন্ত হয়ে ছুটে মাহেরের বাসায়।। যেখানে ঈদের খুশিকে ছাপিয়ে আকাশে বাতাসে গুঞ্জন তুলে বেড়াচ্ছিল মাহেরের আত্মীয় স্বজনের আহাজারি।। যান্ত্রিক জীবনে বেঁচে থাকা এবং নিজেকে মানিয়ে নেয়ার তাড়নায় আবার নতুন করে জীবন শুরু করে তিনবন্ধু।। সেই জীবনে নেই তাদের একজন প্রিয় মানুষ।। যার জন্য তারা অপেক্ষা করে ছিল।। একবারের জন্যও শেষ দেখাটা হল না।।
প্রায় ৪-৫ মাস পরের ঘটনা।। শান্ত বিয়ে করেছে ২ বছর হল।। ভার্সিটিতে পরিচয়, সেই সুত্রেই বিয়ে।। বাবা–মা বিয়ে মেনে নেয়নি দেখে আলাদা বাসা নিয়ে থাকে জামাই বউ।। মঙ্গলবার রাত ১২টার পরের ঘটনা।। ঘুমুচ্ছিল শান্ত।। পাশেই তার বউ মাধবী শোওয়া।। হটাত শান্ত অনুভব করলো তার বিছানার পাশে বসে কে যেনও আলতো করে হাত রাখল তার গায়ে।। মাধবীর হাত মনে করে প্রথমে পাত্তা দিল না সে।। কিন্তু পরের কণ্ঠস্বরটা শুনে ঘুম ছুটে গেলো তার।। এই কণ্ঠস্বর যে তার চিরচেনা!! এ তো মাহেরের কণ্ঠ!! আস্তে আস্তে তাকে ডাকছে, “কিরে গাধা!! এখনও আগের মতই আছিস?? ঘুমুলে আর ঘুম ভাঙ্গানো যায় না রে তোর।। উঠ একটু।। তোর সাথে কথা ছিল।। আমি বেশি সময়ের জন্য আসতে পারেনি।। এখুনি আবার চলে যেতে হবে।।” ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলো শান্ত।। এইতো, সামনে তো মাহেরই বসা!! তার প্রানের বন্ধু, মাহের, ফিরে এসেছে!! শান্তর মাথায় এই বুদ্ধিটুকু তখন কাজ করছিলো না যে মাহের জীবিত নয়।। মৃত।। নিজ হাতে কবর দিয়ে এসেছে সে তাকে।। “উঠলি শেষ অবদি!!” হাল্কা করে হেসে বলল মাহের।।
উল্লসিত শান্ত মাহেরের একটা হাত নিজের হাতে নিলো, “দোস্ত, আছিস কেমন তুই??”
একটু হেসে বলল মাহের, “ভালোই রে!!”
“তারপর কেমন চলছে সব??”
“ভালোই!! শোন, তোর সাথে খুব জরুরি কথা ছিল দোস্ত।। আমার হাতে বেশি সময় নেই।। আমি যা বলব তা চুপচাপ শুনে যা।।”
“আচ্ছা” সুবোধ বালকের মতন উত্তর দিল শান্ত।। ঠিক যেনও একটা ছোট বাচ্চা তার অনেকদিনের প্রিয় খেলনাটা ফিরে পেয়েছে।।
“সেদিন আমি তোদের সাথে মিট করার জন্যই রাতের বাসে পঞ্চগড় থেকে রউনা দেই।। পথে আমাদের বাসটা এক্সিডেন্ট করে।। ঘটনাস্থলেই আমি মারাত্মক ভাবে আহত হই।। বারবার তোদের কথা মনে পড়ছিল।। মারাত্মক কষ্ট হচ্ছিল রে।। মনে হচ্ছিল কেউ যেনও আমার জ্যান্ত দেহটা থেকে চুরি দিয়ে কেটে কেটে হৃৎপিণ্ডটা খুলে নিচ্ছে।। শ্বাস নিতে পারছিলাম নাহ।। পৃথিবীটা যেনও লাটিমের মত ঘুরছিল।। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হাসপাতালে নেয়া হয় আমাকে।। ডাক্তাররা চেষ্টা করার আগেই মারা যাই আমি।।” বিমুঢ়ের মত শুনছিল শান্ত।। প্রশ্ন করলো, “তারপর??” “দোস্ত, এতো কষ্ট কেন হচ্ছিল জানি না।। বার বার চোখে তোরা ভাসছিলি।। তোদের কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি দোস্ত।। পড়ে জেনেছি সেদিন আমার জন্য রাত ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলি তোরা।। জিতুটা তো আবার একটু পাগল।। ও নাকি রেগেছিল আমার উপর।। আড়ালে কেঁদেছে আমার উপর অভিমান করে!! আমাকে মাফ করে দিস তোরা।। যাবার বেলায় তোদের বিদায় নিয়ে যেতে পারলাম নাহ।। শেষবারের মত দেখতে পারলাম না চামড়ার চোখ দিয়ে।। আমি অনেক বেশি সরি রে।। মাফ করবি তোদের এই বন্ধুটাকে??” ঘোড়ের মধ্যে বলল শান্ত, “ছিঃ, এইসব কি বলছিস তুই??” এই পর্যায়ে শান্তকে জোড়ে ধাক্কা দেয় মাধবী।। “এই, কি ঘুমের মধ্যে বসে বসে বকবক করছ?? শুয়ে পড়ো!!” সাথে সাথে যেনও ঘুম থেকে জেগে উঠে শান্ত।। নিজেকে খাটের উপর বসে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করে।। সাড়া গাঁ ঘামে ভিজে একাকার।। আসনপিঁড়ি করে বসে আছে।। ঠিক যেই ভঙ্গিতে বসে কথা বলছিল মাহেরের সাথে।।
নিজের মোবাইলের ডিসপ্লে দেখে সে।। রাত ২.৫৫।। ঘটনার ৩দিন পর।। ঢাকার একটি স্বনামধন্য রেস্তোরায় বসে আছে জিতু, রকি, আর শান্ত।। কারো মুখে কথা নেই।। শান্তর বলার জন্য অপেক্ষা করছে।। মূলত শান্তর ফোন পেয়েই এখানে ছুটে এসেছে তারা।। অনেক ইতস্তত করে অবশেষে মঙ্গলবার রাতে ঘটে যাওয়া পুরো ব্যাপারটা খুলে বলল শান্ত।। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনল বাকি দুজন।। বলা শেষ হলে রকি প্রশ্ন করলো, “ঘড়িতে তখন কটা বেজেছিল মনে আছে তোর??” “হুম।। ২.৫৫।।” শান্তর উত্তর।। “মাহের আমার কাছে ঠিক ৩.০০ টার দিকে আসে এবং ঠিক একই রকমের কথাবার্তা হয় তার সাথে।। বারবার বলতে থাকে যেনও তাকে আমরা মাফ করে দেই।।” জিতু জানালো, তার সাথেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটে।। সময় তখন ৩ টা বেজে ১০ মিনিট।।

উপরোক্ত ঘটনাটি আমার ভাইয়ের মুখ থেকে শোনা।। উক্ত কাহিনীর জিতু আমার ভাইয়ের সহকর্মী।। গ্রামীনফোনে কর্মরত।। তিনি নিজে ঘটনাটি সবার সামনে খুলে বলেন।। এর সত্যতা প্রমানের জন্য শান্ত এবং রকির সাথে কথা বলা হয়।। তারাও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।।

শেয়ার করেছেনঃ অ্যাডমিন (Irfan)

।। প্রাচীন রাজবাড়ি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, August 8, 2011 at 10:30pm
হয়তো এটা আমার একটা বিভ্রান্তি।। তবুও আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।।
তখন আমি অনেক ছোট।। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি।। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির পাশেই একটা বাসায় আমরা থাকতাম।। আমাদের বাসায় যিনি কাজ করতেন তার একটা ছোট মেয়ে ছিল।। সেই মেয়েটাই ছিল আমার প্রতিদিনের খেলার সঙ্গি।।
মূল ঘটনায় আসি।। একদিন স্কুল থেকে বাসায় আসার পর বরাবরের মতই আমি হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেরিয়েছি খেলা করতে।। সাথে আমার সঙ্গিনী।। বাসার সামনেই বড়সড় একটা মাথা যেখানে এলাকার আর অন্য সব বাচ্চারাও খেলা করতো।। মাঝে মাঝে তাদের সাথে মিলেমিশে খেলতাম আমরা।। সেদিন হটাত ২২-২৩ বছর বয়সী একটা মেয়ে আমাকে ডাকল সেই রাজবাড়ির গেটের সামনে থেকে।। আমি এলাকায় পরিচিত ছিলাম আমার বাবার জন্য।। সেখানে সবাই আমার সাথে স্নেহের সহিত কথা বলত।। তাই, উনার ডাকে সাড়া দেয়াটা খুব বেশি অস্বাভাবিক ছিল না আমার জন্য।। উনার কাছে যেতেই, উনি একটু এগিয়ে এসে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন।। নাম বলার পর জিজ্ঞেস করলেন কই থাকি, বাড়িতে কে কে আছে ইত্যাদি।। সব মোটামুটি উত্তর দেয়ার পর উনি বললেন, উনি এখানে নতুন এসেছেন আর রাজবাড়িটা একটু ঘুরে ফিরে দেখতে চান।। সম্পূর্ণ কথোপকথন আমার মনে নেই, তবে উনার ব্যাবহার আমার খুব ভালো লাগে তাই আমি রাজি হয়ে যাই উনাকে রাজবাড়িটা ঘুরে দেখানোর জন্য।। রাজবাড়িটা অনেক পুরনো।। বেশ কয়েকটি সতন্ত্র ভবন নিয়ে এখন টিকে আছে।। প্রধান ফটকটাই আকর্ষণীয় বেশি।। তার দুপাশে রাজবাড়ির কেয়ারটেকার উনার ফ্যামিলি সহ থাকতেন।। সেই ফ্যামিলির সবাই আমাকে খুব ভালো করে চিনতেন।। ঢুকবার মুখেই উনার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছি?? আমার আম্মি ভালো আছে কিনা ইত্যাদি।। আমি অল্প কোথায় উত্তর দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই।। কেয়ারটেকারের স্ত্রী আমাদের বেশি ভেতরে যেতে মানা করেন।। এমন মানা পূর্বেও অনেকবার শুনেছি।। তাই গ্রাহ্য করলাম নাহ।। সেই মহিলাকে পুরো রাজবাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখাই।। পুরনো সিন্ধুক, কুয়া, মন্দির, ফাঁসিঘর (শোনা কথা, ঘটনার সত্যতা জানি না), নর্তকীর ঘর, বল রুম ইত্যাদি।। অনেক সুন্দর জায়গা ছিল ওগুলো।। কিন্তু, ঐ মেয়েটির উচ্ছ্বাস ছিল না তেমন।। কেমন যেনও নির্লিপ্ত একটা ভাব।। আমাদের সাথে চলছে কিন্তু আমাদের কথা শুনছে বলে মনে হচ্চিল নাহ।। অবশ্য, ঐসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মতন বয়স তখন ছিল নাহ।। উল্টো নিজের বিদ্যা জাহির করার কাজে বাস্ত ছিলাম।। হটাত তিনি বলে উঠলেন, উপরের দিকে উঠবেন।।
ঐটা একদম সীমানার শেষ দিকের বিল্ডিং ছিল এবং ঐ বিল্ডিঙের ভেতরের দিকের অংশ ধসে গিয়ে বিল্ডিঙটা মারাত্মক নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলো।। কিন্তু, একজন মেহমান যেতে চাচ্ছেন।। তাই আপত্তি করলাম নাহ।। বরঞ্চ আর উৎসাহের সহিত দেখাতে নিয়ে চললাম।। হটাত দেখি, কেয়ারটেকার চাচ্চু আমাদের নিচ থেকে ডাকছেন।। “আরেহ মা রা!! তোমরা এইখানে কেন?? নাম, জলদি নাম।।”
এই বলে তিনি নিজেই উপরে উঠে এলেন এবং আমাকে কোলে করে এবং আমার সঙ্গিকে হাত ধরে ধরে নামিয়ে নিয়ে আসলেন।। আমরা দুজনই খুব ভয় পাচ্ছিলাম।। তিনি যদি এই কথা আব্বুকে বলে দেন তাহলে কপালে পিটটি আছে।। ওহ, ঐ মেয়েটার দিকে তখন আর আমাদের দৃষ্টি ছিল নাহ।। নিজের ব্যাপার নিয়েই বেশি ভাবছিলাম।। গেটের সামনে এসে কেয়ারটেকার চাচ্চু উনার স্ত্রীকে ধমক দিতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, “ এরা ভেতরে গেলো কিভাবে?? গিয়ে একবারে ভাঙ্গা ছাদে উঠছে।। যদি সেখান থেকে পড়ে যেত তাহলে কি হতো??”
এইবার আমার দিকে ফিরে বললেন, “তুমি যদি পড়ে যেতে তাহুলে কি হতো?? বল?? আমি কিভাবে তোমার আব্বাকে বলতাম?? আর কখনো এতো ভেতরে যেয়ো না কেমন?? জায়গাটা ভালো না।।”
এরপর তিনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলেন।। আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একছুটে মাঠে চলে গেলাম যেনও আম্মি কিছু বুঝতে না পারে।। ছোট ছিলাম, তাই ব্যাপারগুলো ভুলে গেলাম খুব দ্রুত।। কিন্তু এখন, এই বয়সে এসে কিছু ব্যাপার ভীষণ গোলমেলে লাগে।। কিছু ব্যাপার শেয়ার করতে চাচ্ছি।।
১।
মেয়েটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি।। ২।
তার হাতে কিছু ছিল নাহ।। মানে, কোন ব্যাগ বা এই জাতীয় কিছু ছিল নাহ।। কিন্তু সে নিজেকে একজন ট্যুরিস্ট বলে পরিচয় দেয়।। ৩।
ঢোকার পথে কেয়ারটেকার চাচ্চুর স্ত্রী শুধু আমার আর আমার সঙ্গির সাথে কথা বলছিলেন।। ঐ মেয়েটিকে তিনি কিছু জিজ্ঞেস করেননি।। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই এই অবস্থায় একজন বড় মানুষকে পাশে দেখলে তার সাথে কথা বলাটাই যৌক্তিক।। ৪।
ভেতরে যাবার পর মেয়েটা আমাদের কথার খুব একটা জবাব দিচ্ছিল নাহ।। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার যে, আমি তার মতিগতি খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করিনি।। ৫।
যখন কেয়ারটেকার চাচ্চু আমাদের বোকা দিচ্ছিলেন, তিনি ঐ মেয়েটার দিকে ভ্রুক্ষেপও করেননি।। কিন্তু এমন অবস্থায় অবশ্যই একটা পূর্ণবয়স্ক মানুষকেই প্রথমে বোকা দেয়া হয়।। তার মানে কি, চাচ্চু উনাকে দেখতে পাচ্ছিলেন নাহ?? ৬।
আমি উনাকে এরপর আর দেখিনি।। আমি জানিনা, সত্য ঘটনা বা এর পিছনে কি লুকিয়ে আছে।। তবে, আমার সেই সঙ্গীটি এই ঘটনার কিছুদিন পর ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং ১১দিনের মাথায় মারা যায়।। মারা যাওয়ার আগে সে কিছু একটা দেখতে পেত।। এবং সে বলেছিল, সে ভয় পেয়েছে।। মারাত্মক ভয়, সেই রাজবাড়িতেই।। শেয়ার করেছেনঃ Tabassum Snigdha

।। রক্তমাখা হাত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, August 8, 2011 at 10:57pm
প্রচণ্ড শীত।। আমি আর আমার জামাই এবং আমার জামাইয়ের এক বন্ধু উনার মিসেস নিয়ে বেড়াতে এসেছেন ময়মনসিংহে।। আমাদের এক আত্মীয়ের বাসা ফাঁকা পরে আছে।। সেখানেই উঠলাম আমরা।। বাসাটা ছিল খুবই নিরিবিলি।। পাশে একটা পুকুর আর চারিদিকে অনেক গাছপালা।। বাসার পিছনে অনেক দূর পর্যন্ত ফাঁকা মাঠ।। আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই।। সেদিন রাতে আমার জামাইয়ের আরেক বন্ধু রাজীব আসলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।। সে ময়মনসিংহেই থাকতো।। বিজনেস করে।। আমরা আড্ডা দিতে দিতে রাত প্রায় ১০ টা বেজে গেলো।। তখন রাজিব বলল, আমাদেরকে তার একটা প্রোজেক্টে নিয়ে যাবে।। বের হলাম।। মেইন রোড দিয়ে রাস্তা নেই।। তাই মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছিলো।। চারপাশে শুধু ফসলের ক্ষেত আর পুকুর।। মানুষজনের অস্তিত্ব চোখে পড়লো নাহ।। যাই হোক, অবশেষে উনার প্রোজেক্টে পৌঁছলাম।। সেখানে একজন দারোয়ান আর একজন কাজের লোক নিয়ে তিনি থাকতেন।। উনার রুমে বসে আবার আড্ডা জমে উঠলো।। কথায় কথায় জীন ভুতের প্রসঙ্গ আসলো।। একজন একজন তাদের জানা সত্য ভুতের ঘটনাগুলো বলছিল।। পরিবেশটা এমন ছিল যে, সামান্য কথাতেই অনেক বেশি ভয় লাগছিল।। আর রাজিব কারো কথাই বিশ্বাস করছিলেন নাহ।। আমরা যেই গল্পই বলছিলাম উনি হেসে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন।। এভাবে তর্কে বিতর্কে রাত কখন ২ টো বেজে গেছে আমরা কেউ খেয়াল করিনি।। বাসায় ফেরার কথা মাথায় আসলো।। রাজিব আমাদেরকে পৌঁছে দেয়ার জন্য গাড়ি বের করলো।। রাজিব গাড়ি চালাচ্ছে।। প্রচণ্ড কুয়াশায় ২হাত দুরের জিনিসও ভালো করে দেখা যাচ্ছিল নাহ।। হটাত ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি থেমে গেলো।। স্পষ্ট দেখতে পেলাম, রাজিবের পাশের গ্লাসে একটা রক্তমাখা হাত আঁচড়িয়ে আঁচড়িয়ে গ্লাসটা খোলার চেষ্টা করছে।। অসম্ভব ভয়ে আমার হৃদপিণ্ড যেনও থেমে গেছে।। চিৎকার দিতে ভুলে গেছি।। সেই রক্তমাখা হাতটার নখের আঁচড়ে যেনও গ্লাসটা ফেটে যাবে।। রাজিব একনাগাড়ে গাড়ি স্টার্ট করার চেষ্টা করছিলো।। হটাত গাড়ি স্টার্ট নেয় এবং রাজিব একটানে গাড়িটি বের করে ঝড়ের বেগে ছোটাতে লাগলো।। কোনোরকমে সে রাতে বাসায় পৌঁছেছিলাম।। রাজিবকে সেই রাতে আর বাসায় ফিরতে দেইনি আমরা।। পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশে রউনা হয়ে যাই সবাই।। শেয়ার করেছেনঃ Onni

।। অদ্ভুতুরে (নতুন)।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 9, 2011 at 10:27pm
আজ থেকে প্রায় বছরখানেক আগের কথা । আমি একটা কাজে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম যাই । কাজ শেষ করে আসতে আসতে রাত ১ টা বেজে যায় । বাস থেকে নেমে অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা রিকশাও পেলাম না । শেষে একা একাই হাঁটা শুরু করলাম । কিছুদুর আসার পর দেখলাম আমার বন্ধু রানা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার সাইকেল ঠিক করছে । এত রাতে ও এইখানে কেন জিজ্ঞেস করার পর ও বলল যে তার খালাত বোনের বিয়ে আজ, তাই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করতে করতে রাত হয়ে গেছে । কিন্তু পথে হঠাত্‍ করে সাইকেলটা নষ্ট হয়ে যায় । প্রায় আধাঘন্টা চেষ্টা করার পরও তার সাইকেলটা ঠিক করতে পারলোনা । পরে দুজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি চলে আসি ।তার পরদিন ছিল শুক্রবার । জুমার নামাজে রানাকে মসজিদে দেখে তার সাইকেল ঠিক হলো কিনা জিজ্ঞেস করলাম । আমার কথা শুনে সে যেন আকাশ থেকে পড়লো । সে বললো,"আমারতো সাইকেলই নেই ঠিক করবো কি"!! তখন আমার মনে হলো ঠিকইতো , রানার তো কোন সাইকেল নেই । তাকে গত রাতের সব ঘটনা খুলে বললাম । সব শুনে সে আমাকে পাগল বলে অটাক্ষ করলো । কিন্তু আমিতো জানি আমি গতকাল রাতে যা দেখেছি বা গতকাল রাতে যা ঘটেছে তা কোনভাবেই মিথ্যা হতে পারেনা । গতকাল রাতে আমি কার সাথে হেঁটে হেঁটে বাসা পর্যন্ত এলাম এবং রানার যে কোন সাইকেল ছিলনা এটা আমার মাথায় তখন কেন আসেনি তার রহস্য আমি আজও বের করতে পারলামনা ।তার পর থেকে আমি রাতে আর একা একা বের হইনা । শেয়ার করেছেনঃ মোঃ সাইফ উদ্দিন শাহীন ফেইসবুক আইডিঃ www.facebook.com/goodboyshaheen

। ভূতুড়ে চুরি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 9, 2011 at 11:06pm
কোনো এক নীরব গ্রামের মেঠো পথ ধরে এক রিকশা চালক রিকশা চালিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে। সূর্য পশ্চিমে লাল হয়ে গেছে একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে, আগে ভাগেই বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেয়ার কথা ভাবতে ভাবতে চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখে সামনে দুজন লোক দাড়িয়ে তাকে থামাবার জন্য হাত দেখাচ্ছে।
চালক ভাবলো দিনের শেষের খ্যাপটা মেরেই একবারে বাড়ি চলে যাই। তাদের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘কোথায় যাবেন বাহে’ জিজ্ঞেস করেই দেখলো তাদের সাথে পাটিতে বাধাঁ একটা লাশ। তারা বলল গোরস্তানে যাব, দাফন করতে হবে। সবাই ওখানেই আছে শুধু লাশটা নিয়ে যেতে হবে। রিকশা চালক বলল ‘গোরস্তান তো ১০ থিকা ১২ মাইল ফাড়াক, তাও আবার লাশ, পারবোনা বাহে’। তারা বলল, তোমাকে ৫০০ টাকা দেবো। চালক ভাবলো সারাদিন রিকশা চালিয়ে পেলাম ১৫০ টাকা আর এক খ্যাপে ৫০০ টাকা! ‘ঠিক আছে লাশ উঠান’। তারা বলল, লাশ কি আর পায়ের তলে নিয়ে যাব, তুমি বরং লাশ নিয়ে যাও আমরা অন্য রিকশা নিয়ে পেছন পেছন আসছি। ‘ঠিক আছে একটু সুন্দর করে ধরে উঠাই দ্যান’।
লাশ নিয়ে রিকশা চালক ছুটলো গোরস্তানের দিকে। মাইল দু’এক দূরে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে তাদের কোন খবর নেই। সে ভাবলো মনে হয় রিকশা পায়নি তাই দেরি হচ্ছে, সে আবার রিকশা চালাতে লাগল। মাটির পথের দু’ধারে কড়ই, মেহেগুনী আর কৃষ্ণচূড়া গাছের সারি, এরই মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ঘুট ঘুট অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে ভাবলো হারিকেনটা জ্বালিয়ে নেই। হারিকেন জ্বালিয়ে কিছু দূর যেতেই ধপাস করে একটা ছোট গর্তে ধাক্কা খেল, ওমনিতেই কে যেন বলে উঠল ‘অই আসতে চালা’।
রিকশা চালক ডানে বামে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই শুধু অন্ধকার আর ঝিঁঝিঁ পোকার চিং চিং করে করে শব্দ করছে যেন কানের পর্দা ফেটে যাবে। সে ভাবল ‘দূর মনে অয় বুল শুনচ্ছি, লাশ কি আর কথা কয়’। এই বলে সে আবার চালাতে লাগলো। কিছু দূর যেতেই আবার এক গর্তে ঝাকি লাগলো, ওমনিতেই আবার কে যেন বলে উঠলো ‘অই কইছি না আসতে চালা ব্যাথা পাই’। এবার তো ভয়ই পেয়ে গেল সে এবং ভয়ে জোড়ে জোড়ে চালাতে লাগলো। আবার কিছু দুর যেতেই এক গর্তে ধপাস, লাশ পরে গেল মাটিতে ওমনিতেই ‘মাগো বাবাগো ঘারটা ভাইঙ্গা ফালাইসে, ব্যাটা তরেনা কইছি আসতে চালাইতে, খাড়া আইছকা তরে খাইছি, তর ঘার মটকাইয়া খামু’। রিকশা চালক দেখে লাশ নেড়ে চড়ে আবার গালা গালিও করে। ‘খাইছে লাশ দেহি আন্ধার পাইয়া জ্যাতা অইয়া গ্যাছে, ওরে বাবারে, আল্লারে বাচাঁও.... ভূত....ভূত......!’ এই বলে রিকশা চালক এলোপাথারি ধান খেতের উপর দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ঐ দুইটা লোক অন্য একটা রিকশা করে এসে মুঠো বাধাঁ লাশটা খুলে রিকশা নিয়ে পলিয়ে গেল। দেখা গেল এতো লাশও না ভূতও না এ যে জীবিত মানুষ। এতো অভিনব পন্থায় রিকশা চুরির কৌশল। শেয়ার করেছেনঃ Ethan Martin

।। সংগৃহীত গল্প – ০৫ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 9, 2011 at 11:39pm
মৌলবি আবদুস সোবহান মৌলবি আবদুস সোবহান সাহেবের সাথে আমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। ১৯৯১ সালে গয়েশপুর হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার মাধ্যমে পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতা আরো বৃদ্ধি পায়।উনি বয়সে অনেক বড় ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে হাইস্কুলের শিক্ষক এবং গয়েশপুর জামে মসজিদের ইমাম।কন্তিু নির্বিরোধী এই ভালো মানুষটার প্রতি করা হয়েছিল খুব বড় অন্যায়। হাস্যকর এক অপরাধের ধুয়ো তুলে গ্রামের মানুষ কেড়ে নেয় তার ইমামত্ব।
চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে তিনি চলে গেলেন পুরোপুরি অবসরে। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ ছিল।ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও নানাবিধ আলোচনা করতাম আমরা।এই আলোচনার মাধ্যমেই একদিন জানতে পারলাম তিনি পানি পড়া, তাবিজ দেওয়ার পাশাপাশি ঝাড়ফুকও করেন।নতুন তথ্য হলো, আগে এইসব কম করতেন কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে এখন একটু বেশী করেন।
যাইহোক, মূল গল্পে আসি। কর্মব্যস্ততার কারণে একসময় যোগাযোগ কমে আসে। মাসখানেক পর উনার খোজ নিয়ে জানতে পারি উনি খুবই অসুস্থ।পরদিনেই দেখতে যাই।দেখি উনার দেহ কাঠামো শুকিয়ে যেন অর্ধেক হয়ে গেছে।আমি এসেছি জানতে পেরে পাশ ফিরে আমার দিকে শুলেন।তার অবস্থার কারণ জানতে চাইলে বলেন “না বাবা, এই অসুখ আমার আর সারবে না, এটা অসুখ না’!
'না না অত ভাববেন না, ভালো চিকিৎসা করালে আপনার অসুখ সেরে যাবে’।
কিন্তু তিনি মাথা এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন। সেদিন চলে এলাম। এরপর কেটে গেল আরো একটা মাস। এক ভোর বেলায় হন্তদন্ত হয়ে বাসায় এল মৌলবী সাহেবের মেজ ছেলে। বলল “ভাই, একনি হামার সাথে চলেন, আব্বা আপনার সাথে দেকা করার জন্য ছটপট করোচে’।
গেলাম তার সঙ্গে।ঘরে ঢুকে দেখি অবস্থা আসলেই খুব খারাপ।আমাকে দেখে সর্বশক্তি দিয়ে যেন নিজের কষ্ট সামলে রাখলেন।আমাকে ছাড়া ঘরের সকলকে বাইরে চলে যেতে বল্লেন।বাইরে যাওয়া মাত্র আমার হাতদুটো জাপটে ধরে ফিসফিসিয়ে বললেন ‘বাবা, মনে আছে, তোমাকে বলেছিলাম এটা কোনো অসুখ না?’
‘হ্যা মনে আছে’।
মিনিটখানেক অপলক আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর সত্যিই শোনালেন এক ভয়ানক গল্প। তার জবানিতেই তুলে ধরছি:
‘মাসচারেক আগে ঘোলাপাড়া থেকে দুজন লোক এসেছিল, বলল তদের পরিবারের এক মেয়েকে জিনে ধরেছে। তারা এসেছিল সকালে। বললাম ‘আজ আমার জরুরী কয়েকটা কাজ আছে। এখনতো যেতে পারবো না মাগরিবের পর যাবো’। বাড়ির ঠিকানা বলে লোক দুটো চলে গেল।
মাগরিবের পর হেটেই রওনা দিলাম। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। চারিদিকে জোছনায় ঝলমল করছে। গয়েশপুর স্কুল ছাড়িয়ে উঠলাম ছোট যমুনার উপরের সেতুতে।সেতুর পর ডান হাতে বড় একটা বাঁশঝাড়। খুবই খারাপ জায়গাটা। অনেক কিছু দেখেছি ওখানে। ঝাড়টার পাশাপাশি যেতেই মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো সুদর্শন এক যুবক। সাধারণ কেই দেখলে তাকে আর দশজন মানুষের মতই মনে করতো।কিন্তু দু’চোখের গনগনে দৃষ্টি মুহূর্তে আমাকে বলে দিল, ওটা কি! অনেক বছর ধরে ওরকম দৃষ্টির সঙ্গে আমি পরিচিত। কিছু না বলে পাশ কাটাতে গেলাম।
‘মৌলবি সাহেব, আছর ছাড়াতে যাচ্ছেন?’ হাসল ওটা।
চুপচাপ এগিয়ে গেলাম ওটাকে পেছনে ফেলে।
‘যাবেন না মৌলবি সাহেব’ বলল ওটা।
‘কেন?’ বললাম আমি।
‘গেলে আপনার ক্ষতি হবে, কারণ আমি ধরেছি মেয়েটিকে’।
এবার রেগে গেলাম। ‘কী ক্ষতি করবিরে তুই? তোর মত ওই রকম অনেক জিনিস দেখা আছে আমার, হুমকিও শুনেছি, কেউ ক্ষতি করতে পারেনি আমার’।
‘কিন্তু আমি পারবো’ ভেসে এল ঠান্ডা স্বর।
‘যা ভাগ, ব্যাটা!’ রাগে গা জ্বলে গেল আমার।
‘খুব ভুল করলেন মৌলবি সাহেব’।
আর কথা না বলে পা চালালাম দ্রুত। পেছনেও আর সাড়া শব্দ নেই।
ঘোলাপাড়া গিয়ে ভর-হওয়া মেয়েটির সামনে দাড়ানো মাত্র দাঁত খিচিয়ে বলল, ‘কী রে হারামজাদা, এত মানা করনো তা-ও শুনলু না?’ এরপর অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলো।
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে মেয়েটির আছড় ছাড়ালাম।
শেষমেষ ‘তাড়ালু, হামাক তাড়ালু? কুত্তার বাচ্চা, বুঝবু, একন বুঝবু!’ এই বলে বিকট এক চিৎকার করে মেয়েটি জ্ঞান হারালো।
কিছু পরে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। মেয়েটির বাবা সাথে লোক দিতে চেয়েছিল কিন্তু মানা করে দিলাম। ফিরতি পথে বাঁশঝাড়টার কাছাকাছি আসতেই দেখলাম, আবার ওটা এসে দাড়িয়েছে।এবার আর সুন্দর চেহারায় নয়, আসল রূপে! চোখ দু’টো যেন জলন্ত কয়লার টুকরো, শরীরের ওপরের অংশসহ বাম পায়ের হাঁটু পর্যন্ত ভালুকের মতো বড় বড় লোম, ডান পায়ে দগদগে ঘা, দুই হাঁটুর উপর বাড়তি দুটো চোখ, আর মনে হল রক্তের মত লাল টকটকে বিরাট এক জিভ, নেমে এসেছে বুক পর্যন্ত!
‘কী রে শুয়োরের বাচ্চা, মেয়েটির আছড় ছাড়িয়ে দিয়ে এলি? আমাকে থাকতে দিলিনা’! ভয়ংকর গলায় বলতে লাগলো। ‘হারামজাদা এত নিষেধ করলাম তাও শুনলি না কেন?’ প্রত্যেকটা কথার সাথে সাথে ছিটকে ছিটকে পড়ছে আগুনের কণা।
‘আমার কাজ আমি করেছি’ বললাম যথাসম্ভব স্বাভাবিক স্বরে।
‘কাজ করেছিস তাইনা! বল শক্তি দেখালি! এত বড় সাহস তোর! এবার দেখ আমার শক্তি!’
দপ করে জ্বলে উঠলো একটা আগুনের গোলা, কিছু বুঝে উঠার আগেই সোজা ছুটে এসে ঢুকে গেল আমার ভেতর। পড়তে পড়তে সামলে নিলাম, সারা শরীরে যেন আগুন ধরে গেছে! কোনোমতে বাড়িতে এসে সেই যে শুয়ে পড়লাম আর উঠতে পারলাম না।
‘জানতাম আর উঠতে পারবো না তাই তোমাকে বলেছিলাম এটা অসুখ না। গত কয়েক মাস ধরে ওটা কেবল আমার ভেতরে বসে খলখল করে হেসেছে আর চুষে চুষে খেয়েছে আমাকে!’
চুপ করলেন মৌলবি সাহেব, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
খানিকক্ষণ পর বললাম ‘আর কিছু বলতে চান?’
এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লেন, বলতে চান না।
কিছুক্ষণ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। বাড়ি ফিরে আসার মিনিট বিশেক পরেই খবর পাই মৌলবি সাহেব মারা গেছেন। দ্রষ্টব্যঃ খসরু চৌধুরী লিখিত “আমার যত ভৌতিক অভিজ্ঞতা” গ্রন্থ থেকে নেয়া। সংগ্রহ করেছেনঃ Shafayet Jamil

।। সংগৃহীত গল্প – ০৬ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 10, 2011 at 10:20pm
আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে একটি কাঁচা সড়ক সরাসরি যুক্ত ছিল ফরিদপুর থানার সাথে। সড়কটা ছিল ৩টি গ্রামের কৃষকদের কৃষি জমির মাঝ বরাবর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কোন এক সময় পাকিস্তানী সৈনিকদের একটি ছোট বাহিনী সেই রাস্তা দিয়ে গ্রামে প্রবেশ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু আমাদের গ্রামের সাথে রাস্তাটির সংযোগ সড়কের একটা অংশ কাটা থাকায় তারা গ্রামে প্রবেশ করতে ব্যার্থ হয়। তারা সড়ক বরাবর থানার দিকে এগিয়ে যায় এবং স্বল্প সময়েও তাদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায়। মৃতের সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারে না। কারন পাকিস্তানী সৈন্যরা হত্যা শেষে লাশগুলো রাস্তার পাশে একটা গভীর কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে যায়। কুয়োটা ছিল একটা হিজল গাছের পাশে। সেই হিজল গাছের আশেপাশের ২/৩ মাইল শুধুই কৃষি জমি। কোন বাড়ি ঘর নেই। সেই কুয়োর কোন নিশানা আজ পাওয়া না গেলেও হিজল গাছটা ঠিকই সাক্ষী হয়ে আছে সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের। এই হিজল গাছ আর কুয়ো নিয়ে অনেক গল্প চালু রয়েছে গ্রামে। রাতের বেলা অনেকেই নাকি এই গাছের পাশ দিয়ে যাবার সময় ”পানি, পানি” বলে আর্তনাদ করতে শুনেছে। আজও নাকি হিজল গাছের পাশদিয়ে আসার সময় মানুষ পথ হাড়িয়ে ফেলে। হিজল গাছ থেকে গ্রামের দুরত্ব আধা মাইলের মত। ফরিদপুর থেকে রাতের বেলা বাড়ি ফেরার সময় আশরীর কণ্ঠ শুনেছে এমন অনেক মানুষের দেখা পাওয়া যায় গ্রামে। এমনকি রাতের বেলা গ্রামে ফিরতে গিয়ে আধা মাইল পথ সারা রাতেও পার হতে পারে নি, এমন মানুষও কম নেই গ্রামে।
বেতুয়ান গ্রামের পাশের গ্রাম রামনগর। রামনগর গ্রামের আক্কাস নামের এক লোক তার ছাগল হারিয়ে ফেলেছে। সারা দুপুর ছাগল খোঁজা খুঁজির পর বিকেলে সে জানতে পারল তার ছাগল বেতুয়ানের সীমান্তে ঢুকে একজন কৃষকের সবজির ক্ষেত নষ্ট করছিল, তাই বেতুয়ানের চকপহরি (গ্রামে জমি পাহারা দেওয়ার জন্য নিয়জিত প্রতিরক্ষা বাহিনী) তার ছাগল ধরে নিয় গেছে।ঘটনা শুনে রাগে ক্ষোভে কোন কিছু না ভেবেই বেচারা রওনা দিল বেতুয়ানের দিকে। তখন মাগরিবের আযান হয়ে গেছে।
রাগের মাথায় রওনা দিলেও একসময় আক্কাস মিয়ার হটাৎ করেই মনে পরে গেল হিজল গাছের কথা। আরে সামনেই তো হিজল গাছ! ঐ-তো দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে তার সমস্ত শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। আক্কাস মিয়া আর সামনের দিকে অগ্রসর হল না। কারণ ছাগলের চাইতে জীবন অনেক বড়। ছাগল তো কালকেও আনা যাবে। কিন্তু জীবন...
ভয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যাবার জন্য যেই পা বাড়াবেন ঠিক তখনি তার মনে হল কেউ একজন তাকে ডাকছে!
-ভাই কি বেতুয়ান যাবেন?
আক্কাস মিয়া চমকে উঠে জোর গলায় বলল,
-কেডা আপনে?
-ভাই আমি মোক্তার। আমার বাড়ি বেতুয়ানের শেষ মাতায়। ঐ ইজল গাছের থেনে মাইল খানিক ফাঁকে। আপ্নের বাড়ি কোনে?
-আর কয়েন্না বাই। আমার বাড়ি রামনগর। আপ্নেগরে গাওয়ের চকপোউরি আমার বরহি(ছাগল)খান দোইরা লিয়্যা গ্যাছে। সেই বরহি আইনব্যারি যাচ্ছিলাম তিন্তুক আজকা আর যাব লয়। রাইত ম্যালা হয়্যা গেছে।
-ঐ চিনত্যাতেই তো ভাই একা জাসসিন্যা। গেছিল্যাম আপ্নেগরে গাওয়ের হাঁটে। ফিরতি ফিরতি বেলা গরা আইলো। এহন একা যাতি ক্যাবা জানি লাগতেছে। তারচে চলেন ভাই আমার বাড়িত যাই। রাইত খান থাইকা কাইলকা বরহি(ছাগল) লিয়্যা বাড়ি জায়েন্নে।
আক্কাস মিয়া দেখল প্রস্তাবটা খারাপ না। তাছাড়া আকাশে মেঘও করেছে। এই অবস্থায় বাড়ি ফিরে যাওয়া ও ঝামেলা। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে লোকটার সাথে রওনা দিলো।
দুজনে গল্প করতে করতে একসময় হিজল গাছের প্রায় কাছে চলে এলো। এমন সময় হঠাৎ করেই মোক্তার নামের লোকটা কাঁদার মধ্যে পরে গেল। সাথে সাথে আক্কাস মোক্তার কে হাত ধরে তুলতে গিয়ে চমকে উঠল। একি এই লোকটার হাত এতো ঠাণ্ডা কেন? মানুষের শরীর কি এতো ঠাণ্ডা হয়?
মোক্তার আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-দুরা। সারা গায় ক্যাদো লাইগা গেল। চলেন ভাই সামনের কুয়োত যাই। হাত মুক ধুইয়া আসি।
কথাটা বলেই মোক্তার আক্কাসের উত্তরের অপেক্ষা না করেই কুয়োর দিকে পা বাড়াল। আক্কাসের শরীরে ভয়ের শীতল স্রোত খেলে গেল। কুয়োটা অনেক দিন আগে থেকেই পরিত্যক্ত। সেখানে পানি আসবে কোথা থেকে? হঠাৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকে উঠল। বিদ্যুতের আলোতে আক্কাস স্পষ্ট দেখতে পেল, মোক্তারের পা নাই।
সারা শরীর কেমন জানি একটা ঝাঁকি দিয়ে উঠল আক্কাসের। তাহলে মোক্তার মানুষ না! আবার এতো রাতে তাকে কুয়োর দিকে নিয়ে যাচ্ছে; তার মানে কি সে আইষ্ঠাখোঁর ভূত!
আক্কাস আর এক মুহূর্তও দেরি করলনা। সোজা মাটির উপর চোখ বুজে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। (গ্রামে কথিত আছে, ভূত বা খারাপ আত্মা মাটি স্পর্শ করতে পারেনা। তাদের ক্ষমতা মাটির একহাত উপরে) কিছুক্ষণ পর আক্কাস শুনতে পেলো কেউ একজন ন্যাকা সুরে আক্কাসকে উদেশ্য করে বলছে, কুঁত্তার বাঁচ্চা বাঁইছা গেঁলু। মাঁটির উপঁর না শুঁলি আঁজক্যা তোঁক কুঁয়োর মঁদ্দি গাঁইরা থুঁল্যামনে।
ঠিক এভাবেই পরের দিন সকাল পর্যন্ত মাটির উপর শুয়েছিল আক্কাস মিয়াঁ। হয়তো আজও রাতের বেলা কোনও মানুষ সেই আধা মাইল পথ পার হতে পারেনি।। সংগ্রহ করেছেনঃ Ethan Martin

।। স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 10, 2011 at 10:23pm
মানুষের এই পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা খুজেঁ পাওয়া যায়না। আর আমি অত সহজে কোনো কিছু বিশ্বাস করিনা। আমি যুক্তিবাদী মানুষ। অনেকেই আমাকে নাস্তিক বলে। কিন্তু আমি নাস্তিক না। আমার সাথে যে গঠনাগুলো ঘটে আমি সেগুলোর ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করি কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পারিনা।
আমার যতদুর মনে পড়ে আমার ৪ বছর বয়স থেকেই ঘটনার সুত্রপাত। (এর আগে ঘটে থাকলে তা আমার মনে নেই।) তখন আমরা খাগড়াছড়িতে ছিলাম। আমি তখন ও স্কুলে ভর্তি হইনি। সম্ববত ১৯৯৪ সাল। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসার পাশে মাঠে খেলা করতাম। আম্মু ও আন্টিরা হাঁটাহাটি করত। তখন আমি দেখতাম মাঠে আমাদেরই মত, কিন্তু আমাদের চাইতে আলাদা কিছু মানুষ ও হাঁটাহাটি করছে। এককথায়, আমি একটা দেয়ালের সামনে দাড়ালে যেমন ছায়া পড়বে তেমন, কিন্তু ছায়াটা সাদা, টর্চ লাইটের আলোর মত সাদা। অনেকগুলো সাদা আলোর মানুষ মাঠে খেলছে, আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করতাম ওগুলো কি ? আম্মু বলত শেয়াল (পাশের জঙ্গলে অনেক শেয়াল ছিল, আম্মু ভাবত শেয়াল দেখে ভয় পাচ্ছি)। এভাবে প্রতিদিনই আমি তাদের দেখতাম, আমার কাছে সেটা স্বাভাবিক ছিল। আমি ভয় পেতাম না।
কাহিনীতে কিছুটা পরিবর্তন আসে ১৯৯৭/৯৮ এর দিকে। তখন আব্বুর বদলি হয়ে গেছে চট্টগ্রামে। আমি থ্রিতে পড়ি। বদলটা হল, খাগড়াছড়িতে আমি ওদের দেখতাম মাঠে, আর চট্টগ্রামে ওরা চলে যায় দেয়ালে, ছায়ার মত। অবিকল একটা মানুষের ছায়া কিন্তু টর্চ লাইটের আলোর মত উজ্জ্বল। সন্ধ্যায় খেলার সময় দেখতাম দেয়াল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অনেকগুলো আলোর মানুষ। কিন্তু ওদের পা কখনো মাটিতে লাগানো থাকতনা। শূন্যে ভাসমান থাকত। আমি ভয় পেতাম না। খেলার সাথীদের বলতাম, তারা মজা করে ধরতে যেত, কিন্তু ধরতে পারত না। (পরে জানতে পারি তারা কেউ দেখত না, দুষ্টুমি করত)
২০০৩ সালে আমরা ব্রাক্ষনবাড়িয়া চলে আসি। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। সন্ধ্যায় বের হওয়া বন্ধ। তাই আর আলোর মানুষ দেখিনা।
২০০৬ সাল। আমি এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। গ্রাম থেকে নানু ও মামা এসেছে। পরীক্ষার আর ১৫/১৬ দিন বাকী। নানু আমার সাথে ঘুমায়। আমি রাত ১.৩০ পর্যন্ত পড়ি। হঠাত এক রাতে-
আনুমানিক রাত ৩.০০টা। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। হঠাত দেখি আমার রূমে তিনজন লোক চাঁদর মুড়ি দিয়ে হাঁটছে। তাদের গাঁ থেকে আলো ছড়াচ্ছে। মুখ দেখা যাচ্ছেনা। আমি ভয়ে পাথর হয়ে গেলাম। প্রায় ৩০ মিনিট জেগে ছিলাম। নানুকে জড়িয়ে ধরলাম। নানু বলল_ "কি হয়েছে ?" আমি বললাম_ " ভয় পাই"।
সকালে আমি নানুকে জিজ্ঞেস করলে নানু বলেন সত্যিই গতরাতে গতরাতে আমি "ভয় পাই" বলেছি। (জিজ্ঞেস করার কারন আমি যুক্তি, প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করিনা) ঘটনাটা আমার স্যারের সাথে শেয়ার করলে উনি বলেন এগুলো জ্বীন। আয়াতুল কুরসী পড়ে ঘুমাতে বলেন।
এর পর কেটে গেল আরও ২ বছর।
২০০৮ সাল। আমি এইচ. এস. সি দিয়ে ঢাকা গেছি কোচিং করতে। হোষ্টেলে থাকি। হঠাত একদিন _
স্বপ্নে দেখি আমাকে আমার বড় খালা মারছে। পেটে জোরে জোরে লাথি মারছে। আমার চোখ লাল হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি মরে যাচ্ছি। ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি কোথায় ? এরা কারা ? আমি কে ? কিছুই মনে করতে পারছিনা। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা। পেটে খুব ব্যাথা। প্রায় ১৫/২০ মিনিট। হঠাত আমার রূমমেট আমার গা ধরে ঝাঁকুনি মারে। আমার সব মনে পড়ে যায়। তাকিয়ে দেখি সকাল ১১.০০ টা। তার পর দেখি আমার পেট লাল হয়ে আছে। যেন সত্যিই কেউ প্রচন্ড জোরে লাথি মেরেছে। ঘটনাটা আমার মাকে বলি। তারপর বাসায় চলে যাই। আম্মু একটা তাবিজ দিয়ে দেন। হোষ্টেলে হঠাত একদিন দেখি হাতে তাবিজ নেই। কোথাও খুঁজে পাইনা। তারপর যখন বাসায় যাই_ টানা ২১ দিন জ্বর, বমি। আর ভয়াবহ সব দুঃস্বপ্ন। প্রতিটা স্বপ্নের বিষয় বস্তু _ আমাকে মারছে, আমি মরে যাচ্ছি, মৃতু্যর এক সেকেন্ড আগে ঘুম ভেঙ্গে যেত। শরীরে খুব ব্যাথা করত। সকাল, বিকাল, দুপুর, রাত যখন তখন স্বপ্ন। এমনকি সোফায় বসে ৫ মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করলে ও স্বপ্ন চলে আসত।
তারপর, সুস্থ্য হই। হোষ্টেলে যাই। তাবিজটা খুজে পাই বিছানার তোশকের নিচে। কিন্তু তোশকের নিচে কিভাবে গেল ?
যাই হোক। ২০০৯ সালে আমরা সিলেটে। ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। আমার বয়স ১৮+ । আমার জীবনে নেমে এল ভয়াবহ বিপর্যয়। একটা রাত ঘুমাতে পারিনি। এক কথায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। স্বপ্নের মাঝে কতবার যে মৃতু্যর হাত থেকে ফিরে আসতাম...।
ভয়াবহ সেই ড্রাকুলার চেহারা আমাকে প্রতি রাতে তাড়িয়ে বেড়াত। ৫ মিনিটের জন্য ঘুমাতে পারতাম না। স্বপ্নে যে জায়গায় মারা হতো ঘুম থেকে উঠার পর সে জায়গা ব্যাথা করত। লাল হয়ে থাকত। সায়েন্স এ নাকি এ সমস্যাকে ওহাবৎঃ জবধপঃরড়হ বলে। আমার ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ প্রায় ৩ মাস। আমি কি বলি, কি করি কিছুই মনে থাকেনা। এমনকি আমার নানা_নানু নাকি ঐসময় আমাদের বাসায় ছিলেন কিন্তু আমি আজ ও মনে করতে পারিনা। অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারি আমাকে নাকি তখন দেখতে অপ্রকৃতস্থের মতো দেখাত। বিশেষ করে আমার চোখ। সাধারন ও মানসিক সব ডাক্তারই দেখানো হয়েছে। তারা শুধু ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিত। আর যখন খুব সমস্যা হত, ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত। স্যালাইন দেয়া হত। আমার মনে আছে, দিনে ৭টা ইনজেকশন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
আমার একপাশে ভাই আর একপাশে মা ঘুমাতো, আমি মাকে ধরে রাখতাম আর ভাই আমাকে ধরে রাখতো। কিন্তু স্বপ্নগুলো আমাকে ছাড়তোনা। আমি প্রতি রাতে চিৎকার করতাম, দিনে যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যেতাম। আবোল তাবোল বকতাম।
এক হুজুর (আমি এগুলোতে বিশ্বাস করতাম না) আমাকে তেলপড়া মেখে ঘুমাতে বলল। অবিশ্বাস্যরকম ভাবে যেদিন তেলপড়া মাখতাম সেদিন রাতে স্বপ্ন দেখতামনা। যেদিন মাখতামনা সেদিন ই...।
আমাকে অসহায়ভাবে "হুজুর" বিশ্বাস করতে হলো। কিন্তু সেই হুজুর আমাকে স্পষ্ট করে কিছুই বললেননা।
শাহপরাণ মাজার এর হুজুর বললেন আমার উপর জ্বীনের নজর আছে। (আমি বিশ্বাস করিনা) আমাকে পানি পড়া আর তাবিজ দিলেন। আমি ব্যবহার করিনি। ফেলে দিয়েছি সুরমা নদীতে। আর আমার সেই "হুজুর" আমাকে একটা শরীর বন্ধের তাবিজ দিলেন যা আমি ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি। (তাবিজ গলায় লাগাবার সাথে সাথে অবিশ্বাস্যভাবে সব ভয় চলে গেছে)
২০১০ সাল। আমি ২য় বর্ষে পড়ি।
হঠাৎ একদিন দেখি গলায় তাবিজ নেই। আমি ভয় পেলাম। তাবিজ খুঁজে পেলাম ঘরের এক কোণায়। কিন্তু আর গলায় দিলাম না। একদিন-
আম্মু অসুস্থ্য হয়েগেছে। আবোল তাবোল বকছে। হঠাৎ আমাকে ডাক দিল। "তোর যে বড় তাবিজটা আছে না, হুজুর যে দিছে, ঐটা ফেলে দে, ঐটা ভালো না, এক্ষন ই ফেলে দে যা ফেলে দে" (যদিও আম্মু পরে অস্বীকার করেছে)।
আমি ঘাবড়ে গেলাম। কিন্তু তাবিজ ফেললাম না। একটা কাঁচের বয়ামে রেখে দিলাম।
তারপর-
আমি আবার স্বপ্ন দেখি.....
প্রতি রাতে.....
২০১১ সাল-
একদিন রাতে বাথরূমের আয়নায় একজনকে দেখি। সেই ড্রাকুলা (অথবা অন্যকিছু)। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার চেহারা কী যে ভয়ংকর, আমার অনুভুতি নাহয় না ই লিখলাম। তবে অনেক কেঁদেছি। আমার সাথেই কেন এমন হবে? আমি কি দোষ করেছি....?
এখন আমার কাছে এটা কোন ব্যাপার না। একজনের সাথে এই ঘটনা শেয়ার করেছিলাম সে বলেছে রাতের বেলা রূমের মাঝখানে বসে তার/তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে, তারা কি চায় জানতে। করিনি। কি লাভ?
ক'দিন আগে। আমার ভাইয়ের পরীক্ষা। দেখলাম, সে আকাশি রঙের আর নীল জিন্স পড়ে ডান হাতে বোর্ড নিয়ে বাম হাতে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল। একটু পড়ে দেখি সে আবার একইভাবে বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম "কিরে তুই ঢুকলি কখন?" সে তো পুরা অবাক। - "আমি বের হলাম কখন?" আমি বললাম- "তাহলে দুই মিনিট আগে কে গেলো?" সে বলল "মানে?" আমি বুঝতে পাড়লাম ঘটনা কি। আমি ওকে যেতে বললাম। কারণ এর আগেও এ ঘটনা দুই তিন বার ঘটেছে। শুধু ভয় পাচ্ছিলাম ওর যাতে কিছু না হয়।
আমি অনেক কিছুই বলে দিতে পারতাম। যা অন্য কেউ পারতোনা। নিজেই অবাক হতাম । যেমন- আমার বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড ভালোবাসা দিবসে কার সাথে কোথায় বেড়াতে গেছে আমি সেটা পর্যন্ত বলে দিয়েছিলাম। (যেটা এখন আর পারিনা বা পারতে চেষ্টা করিনা) *** যারা এ লেখাটি পড়লেন আমি তাদের জায়গায় হলে এটি বিশ্বাস করতাম না। কারন আমি অবিশ্বাসিদের দলে। তবে আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যার সাথে ঘটে সে ই বুঝে।। লেখক/ লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।

।। বিভ্রাট ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 11, 2011 at 10:29pm
আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে আমি কানাডা গিয়েছিলাম। কানাডার ওন্টারিওতে। শীতকাল, তুষারপাত হচ্ছিল।তাপমাত্রা শূন্যর নিচে! আব্বু সেদিন সেমিনারে গেল। ঠান্ডার কারণে আমি বের হইনি। আব্বু চলে যাবার পরের ঘটনা। কি কারণে যেন বাইরে তাকালাম জানালা দিয়ে- দেখি একটা ছোট মেয়ে দাড়িয়ে আছে এদিকে ফিরে! গায়ে খুব হালকা একটা ওভার কোট, ঠান্ডায় মুখটা যেন লাল হয়ে আছে! এত ঠান্ডায় একা! ভাবলাম হারিয়ে গেছে। দরজা খুলে দৌড়ে আনতে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি নেই! ভেতরে চলে এলাম। আন্টি ঘুমাচ্ছিল। ডেকে তুলে ঘটনাটা বললাম, কিন্তু কিছু বললনা। ওইদিন রাতের কথা…. ঘুমাচ্ছিলাম..হঠাৎ কিসের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। শব্দটা পাচ্ছিলাম তখনো কিন্তু ভয়ে শুয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর সাহস করে বাতি জালালাম! যা দেখলাম বুক কেঁপে উঠলো! দেখি- ওই ছোট মেয়েটা মেঝেতে বসে একটা বল নিয়ে খেলছে! মেয়েটা আমার দিকে ঘুরে তাকালো- হঠাৎ করে দেখি মেয়েটার চেহারা আমার ছোট বেলার চেহারার মত হয়ে গেল!! ভয়ে আমি শক্ত হয়ে গেলাম, তারপর কি ঘটলো জানিনা। ভোর বেলায় দেখি আমি আন্টির রুমে! এই ঘটনার পর থেকে মেয়েটাকে মাঝেমাঝে স্বপ্নে দেখি। তখন ঘুম ভেঙ্গে গেলে মনে হয় বাইরে তুষারপাত হচ্ছে আর আমি ওই কটেজে একা।। রাইটার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।। বাংলা ফন্টে লিখতে সাহায্য করেছেনঃ Safayet Jamil

।। সম্ভব-অসম্ভব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 11, 2011 at 11:02pm
গত এপ্রিল মাসে মা একদিন এসে বলে আমাদের পাড়ার একটা পিচ্চি মারা গেছে একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে জমা রাখা পানিতে ডুবে।শুনে খুব খারাপ লাগছিল।পরদিন দুপুরে ক্লাস থেকে ফিরছি দেখলাম মসজিদের সামনে একটা খাটিয়া,অনেক মানুষজন।লাশটা দেখে চমকে উঠলাম। ওকে কত দেখেছি আমাদের বিল্ডিং এর নিচে খেলতে। এই ঘটনার ১৫/২০ দিন পর আমি আর আমার ছোটবোন(কলেজে পড়ে) সন্ধ্যার সময় গল্প করতে করতে বাসায় ফিরছিলাম।হটাৎ দেখি একটা পিচ্চি ওই নির্মাণাধীন বিল্ডিংটার নিচে দাড়িয়ে আছে। আমি কাছে যেয়ে বলি “বাবু একা একা এখানে কি করো? জানোনা একটা পিচ্চি এখানে মারা গেছে?” এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে বাবুটা মুখ তুলে তাকায়। এরপর যা দেখলাম তাতে মনে হল আমি পাথর হয়ে গেছি। একটু পর শুনলাম আমার বোন বলছে, আপু দৌড়াও। আমরা দুজনে দৌড় দিলাম, মসজিদ পর্যন্ত এসে ফিরে তাকাইছি। কিন্তু কেউ ছিল না ওখানে। কিন্তু একটু আগে আমরা দুজনে যাকে দেখেছি সে হল ওই বাবুটা যে মারা গেছে মাত্র ১৫ দিন আগে। শেয়ার করেছেনঃ Tasnuva Akhtar Riya

।। কে?? ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 11, 2011 at 11:20pm
আমি যে ঘটনাটি শেয়ার করতে যাচ্ছি সেটা আমার বাবার জীবনের ঘটনা। শবে বরাতের রাতে বাবা প্রায়ই দাদা-দাদীর কবর(বনানী) যিয়ারত করতে যান। দাদা-দাদীর কবর অনেকটা ডেড এন্ড এর মত জায়গায়। অর্থাৎ এরপর ৬/৭ টা কবর তারপর উঁচু দেয়াল দেওয়া, বেরিয়ে যাবার পথ নেই। আর বের হওয়ার গেইট অনেক দূরে। দাদা-দাদীর কবরের পাশেই মোটামুটি চওড়া (গোরস্থানের অন্যান্য রাস্তার তুলনায়) রাস্তা আছে। দাদা-দাদীর কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে বামদিকে ডেড এন্ড, ডানদিক দিয়ে আসতে হয়। আমিও বেশ কয়েকবার শবে বরাতের রাতে ওখানে গিয়েছিলাম, তাই জানি এই রাতে কবরস্থানে সাধারণত জনসমাগম বেশি হয়। আমি যেদিনের ঘটনা বলছি সেদিন অবশ্য আমি যাইনি, বাবা একা গিয়েছিলেন। বরাবরের মত সেই রাতেও বেশ জনসমাগম ছিল কবর জিয়ারতের জন্য। বাবা দাদীর কবর জিয়ারতের সময় হঠাত্‍ বিদ্যুত্‍ চলে যায়। দোয়া-দুরূদ পড়া শেষ করে বাবা তখন মোনাজাতের জন্য হাত তোলেন। ঠিক সেই সময় ডানদিক থেকে কারো আসার শব্দ পান। শব্দটা বাবার ঠিক পেছনে এসে থেমে যায়। মোনাজাতের সময় অনেকেই যোগ দেন। কেউ টাকা পাবার আশায়, কেউবা ভালো মন নিয়ে। তাই বাবা সেদিকে মনোযোগ দেননি। বাবা মোনাজাত শেষ করে পিছনে ফিরে কাউকেই দেখতে পেলেন না। এরপর তিনি চলে আসেন। আসার পথে দেখলেন গেইটের ভেতরে কেউ নেই, বাইরেও মানুষজন খুব একটা ছিল না। বাবা বের হয়ে গাড়ির কাছে আসতেই ড্রাইভার বললেন, আপনি এতক্ষণ ভিতরে ছিলেন? কারেন্ট চলে যাবার সাথে সাথেই তো সবাই বের হয়ে গেছে। শেয়ার করেছেনঃ Dil Sadman Hossain ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/dshossain বাংলা ফন্টে লিখতে সাহায্য করেছেনঃ আমাদের একজন রেগুলার রিডার, তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।

। অমীমাংসিত – দ্বিতীয় পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 12, 2011 at 11:21pm
চিনকী আস্তানা স্টেশনটা বেশ নির্জন। যখন ওখানে ট্রেনটা গিয়ে থামল তখন রাত সাড়ে দশটার মত বাজে। বাহিরে ঘুট ঘুটে অন্ধকার- তার মাঝে টিপটিপিয়ে বৃষ্টি। ছাতা আনা হয়নি। ব্যাগ হাতে প্লাটফর্মে নামার সাথে সাথে ভেজা শুরু করলাম। লোকাল ট্রেনে করে এসেছি বলে স্টেশনের বৃষ্টিতে নামা মাত্র মনে হল একটু শান্তি পেলাম। এতক্ষণ ট্রেনের টয়লেট বিহীন কামড়ায় মুরগীর খাঁচার মত অবস্থায় ছিলাম। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যে বেশি সেটা লোকাল ট্রেনে উঠলেই বোঝা যায়। ঘামে পাঞ্জাবী পিঠের সাথে লেগে গেছে। বৃষ্টির ঠান্ডা ফোঁটা গুলো গায়ে লাগতেই মনে হচ্ছে শান্তিতে ঘুম এসে যাবে। ব্যাগ হাতে হাটতে লাগলাম। হিঙ্গুলী গ্রামটা এখান থেকে আরো মাইল খানেক উত্তর-পূর্ব দিকে। এত রাতে সেখানে যাওয়াটা সামান্য ঝামেলার মনে হল। একে তো ইলেক্ট্রিসিটি নেই এ অঞ্চলটায়, তার ওপর রার দশটার পর রিক্সা-ভ্যান কোনোটাই যাবে না।
স্টেশন মাষ্টার আক্ষরিক অর্থেই মাছি মারা কেরানী গোছের লোক। দশটা প্রশ্ন করার পর একটা জবাব দেন। যাওবা দেন সেটা কাজে লাগার মত না। মাষ্টার সাহেব ম্যাচের কাঠি দিয়ে খুব যত্নের সাথে কান খোঁচাচ্ছিলেন আমি যখন তার অফিসে ঢুকি। কেবল একটা হারিকেন জ্বলেছে। ময়লা হারিকেনের তেল যাই যাই অবস্থা, আলোই নেই।
“আসসালামুয়ালাইকুম, ভাই- হিঙ্গুলী গ্রামটায় যাওয়ার নিয়মটা বলতে পারবেন? এখানের কোনো রিক্সা-ভ্যান যাবে না বলছে।”
“উঁ?”
“হিঙ্গুলী যাওয়ার ব্যবস্থাটা কি?” ভাবলাম শুনতে পায়নি, তাই আবার বললাম।
“ঊঁ?” আবারো কোনো জবাব না দিয়ে বিদঘূটে শব্দ করলেন।
“ভাই আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।” সামান্য উষ্ণ গলায় বললাম।
কান চুলকাতে চুলকাতেই বেদম জোরে কেঁশে উঠলেন মাষ্টার সাহেব। ম্যাচের বাঙ্গা কাঠিটা চোখের সামনে এনে বিরক্ত চোখে তাকালেন আমার দিকে। বাকি অংশটা কানের ভেতরে আটকা পড়েছে বোধ হয়। দেখলাম মাথা একপাশে কাত করে বার কয়েক ঝাঁকি দিলেন।
আমি গলা খাকারি দিলাম, “ ভাই? হিঙ্গুলী.........”
হাত তুলে থামিয়ে দিলেন, “ যে কোনো ভ্যান ধরে উইঠা যান, লয়া যাইবো। এখানে খাঁড়ায়া লাব নাই।” একটা চিমটা বের করে কানের কাঠি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলেন। বোঝাই গেল ভাঙ্গা কাঠি প্রায়ই কানে আটকা পড়ে তার, এবং সেটা উদ্ধার কাজেও সিদ্ধ হস্ত। কারণ আমি থাকা অবস্থাতেই কাঠিটা টেনে বের করলেন। মুখে প্রশান্তির হাসি। আমি বেরিয়ে এলাম বিরক্ত হয়ে।
হাত ঘড়িতে রাত এগারোটা দশ বাজে। বৃষ্টির পরিমান বেড়েছে আরো অনেক। এ বয়সে ভিজলে জ্বর আসতে সময় নেবে না। হিঙ্গুলী গ্রামটায় পৌছানো জরুরী। আগে যদি বুঝতাম এত রাত হবে, তাহলে আরো সকাল সকাল করে বের হতাম। ভ্যান-রিক্সা কোনোটাকেই রাজী করাতে পারলাম না শত চেষ্টার পরেও। শেষে মহা বিরক্ত হয়ে স্টেশনের একটা বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম সকাল হবার। এর বেশি আর কিছু করার নেই আমার।
রাত যত গভীর হয় স্টেশন তত বিচিত্র ভাবে জেগে উঠতে থাকে। গাঁজা আর জুয়ার আড্ডা বসল সামনে একটা প্লাটফর্মে। ট্রেন আসলে স্টেশনটা জীবন্ত হয়, নয়ত মরার মত পড়ে থাকে।
গাঁজার আড্ডায় গান ধরেছে কয়েকজন, তাস খেলা চলছে। আমি দেখছি তা...... এক সময় ঝিমানির মত শুরু হল...... গাঁজার আড্ডার গানটা কানে বাজছে...... ক্রমশ চোখের পাতা ভারি হয়ে আসতে লাগল..... দূরে কোথাও ঘন্টা বাজছে...... অদ্ভূত শোনাছে শব্দটা... মনে হচ্ছে অনেক লোকজন কথা বলছে... তার মাঝ দিয়ে গানটা ঘুর পাঁক খাচ্ছে মাথার ভেতর...
“বলেছিলে আমার হবে
মন দিয়াছি এই ভেবে
সাক্ষি কেউ ছিলনা সে সময়......” চোখ মেললাম যখন- তখন প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অবাক হয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই গোরস্থানের গাছটার নিচে! যেখানে নিজেকে পেয়েছিলাম জুলাইয়ের ৩১ তারিখে! ধরমরিয়ে উঠে বসলাম। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তবে গোরস্থানের ভেতর দিকে চার্জার লাইটের আলো। আমি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম। আমার ঠিক সামনেই আবছা ভাবে সেই বাচ্চা ছেলেটার কবরের অবয়বটা বোঝা যাচ্ছে। আমার হৃদপিন্ডটা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। চার্জারের আলো আসছে আরো ভেতরের দিক থেকে। আমি প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে দ্বিধান্বিত পায়ে হাটতে লাগলাম আলোটার দিকে। পায়ের নিচে প্যাঁচ প্যাঁচে কাঁদা। বার কয়েক পুরনো কবরে পা ঢুকে যেতে যেতে সামলে নিলাম। গাছ গুলোর অন্য পাশ থেকে আলো আসছে, তাতে বেশ কিছু মানুষকে দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা করছে সবাই। সবার হাতে ছাতা, ছাতার জন্য বোঝা যাচ্ছে না কি করছে তারা। আমি এগোতে এগোতে টের পেলাম অসম্ভব একটা ভয় ভেতরে দানা বাধতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে যতই এগোচ্ছি, ভয়টা ততই বাড়ছে...... চার্জারের আলো ভেবেছিলাম যেটাকে এতক্ষণ- কাছে আসায় স্পষ্ট হল, হ্যাজাক বাতি। সাদা কাপড় পরা বেশ কিছু লোক ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
আমি আর হাটতে পারছিলাম না, একটা গাছে হেলান দিয়ে কোনো মতে দাঁড়ালাম। অবাক হয়ে দেখলাম একটা লাশের দাফন কাজ চলছে। দুজন লোক একটা নতুন খোঁড়া কবরে নেমেছে। ওপর থেকে কাফন পরা লাশটা নামিয়ে ওদের হাতে দিচ্ছে লোক গুলো। কেউ একজন জোরে জোরে দরুদ পাঠ করছে সুর করে। আমি টলতে টলতে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। ছাতা হাতে ওরা কেউই আমাকে লক্ষ করছে না। হ্যাজাকের আলোয় দেখলাম কবরের ভেতর জমে ওঠা পানির মাঝে কাফন পরা লাশটাকে উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে নামাচ্ছে লোক দুটো। লাশটার দৈর্ঘ্য দেখেই অনুমান করলাম বয়ষ্ক, বড় মানুষের লাশ। কবরের পানিতে রাখা মাত্র কাফন ভিজে অনেকখানি ডুবে গেল লাশটা। আমার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। ভয়টা ক্রমশ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে শুধুই। তীব্র একটা ভয়।
কেউ একজন বলল, “লাশের মুখ শেষবারের মতন দেখবেন কেউ? নাইলে বাঁশ লাগায় দিক।”
দেখলাম কেউ মুখ দেখার মত আগ্রহ দেখাল না। লোক দুটো কবরের ওপর আড়া আড়ি বাঁশ দেয়া শুরু করল। দ্রুত চাটাই বিছিয়ে ঢেকে ফেলল কবরের ওপরটা। বৃষ্টিতে ভিজে মাটি দেয়া শুরু করল লোক গুলো।
আমি বসে পড়েছি মাটিতে। কেউ লক্ষ করছে না আমাকে। কিন্তু হ্যাজাকের আলোয় স্পষত দেখতে পেলাম কবরের অন্য পাশে ছাতা ওয়ালা লোক গুলোর ভীড়ে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে! শীতল শান্ত চোখ দুটোয় ক্রুড়ো একটা দৃষ্টি। সোজা তাকিয়ে আছে আমার দিকে...... তখনি মাথার ভেতর তীব্র ব্যথা শুরু হল আমার! মনে হল কেউ যেন আমার মগজটা ধারাল ক্ষুর দিয়ে পোঁচ দিচ্ছে...... ঝটকা দিয়ে জেগে উঠলাম। আমার দু পা আর প্যান্টের নিচের দিক কাঁদায় মেখে আছে! ঘড়িতে দেখলাম- রাত আড়াইটা বাজে। ট্রেন এসেছে স্টেশনে। জীবন্ত মনে হচ্ছে রাতের মৃত এ স্টেশনকে এখন। কতক্ষন জীবন্ত থাকবে? আমার হিঙ্গুলী গ্রামে আসাটা যে বিরাট একটা ধাক্কা দিয়ে শুরু হবে জানা ছিল না। আমি পরদিন সকাল বেলা একটা চা দোকানে পাউরূটি আর কলা খেয়ে রওনা দিলাম ভ্যানে করে হিঙ্গুলীর দিকে। তবে তার আগে ওয়েটিং রুমে গিয়ে কাঁদা মাখা প্যান্টটা বদলে নিলাম। সকালে ভ্যান ওয়ালারা কেউ ‘না’ বলল না, বলা মাত্রই আমাকে নিয়ে রওনা দিল। হিঙ্গুলী যাওয়ার পথটা পাঁকা না, কাঁচা রাস্তা। তারওপর বর্ষা কাল বলে রাস্তা ঘাটের করুণ অবস্থা। ভ্যান একেকবার এমন কাত হয়ে যাচ্ছে যে মনে হয় তখন সোজা গিয়ে কাঁদার ওপর পড়বো!
হিঙ্গুলী প্রামে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একটা ছোট খাট ধাক্কার মত খেলাম। আমি শৈশবে যে গ্রামটায় মানুষ হয়েছিলাম অবিকল সেই রকম গ্রাম এটা। ধাক্কাটা যে কারণে খেলাম তা হল- আমি যেখানে, যে রকম বাড়ি, গাছপালা, সাঁকো, রাস্তা দেখেছি আমার শৈশবের গ্রামে- এখানে ঠিক সে রকম- হুবহু এক! কোথাও কোনো অমিল নেই! অবাক হবার কারণটা হল আমার শৈশবের গ্রামটা দিনাজপুরে! আর এটা চট্টগ্রামে।
“হিঙ্গুলী” গ্রামটা আমার জন্য বেশ কিছু রহস্য নিয়ে অপেক্ষা করছিল। তার প্রথমটার সাথে সাক্ষাত হল গ্রামে ঢোকা মাত্রই। হিঙ্গুলী মাদ্রাসার মোয়াজ্জ্বেনের সঙ্গে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে গেল গ্রামে ঢুকেই। বাজারে যাচ্ছিলেন সম্ভবত। এখানে থাকার মত কোনো হোটেল কিম্বা বোর্ডিং আছে নাকি আর মাদ্রাসাটা কোন দিকে তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য আমি ভ্যান থেকে সবে নেমেছি - আমাকে নামতে দেখেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলেন! কিছু বোঝার আগেই চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পালালো! আমি ব্যাপারটা বোঝার জন্য কাউকে যে জিজ্ঞেস করব তা সম্ভব হল না- গ্রামের কেউ আমাকে যে’ই দেখছে এখন- সবাই ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে!
আমি ভীষণ অবাক হলাম। এক রকম হতভম্ব! আমাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে এমন? ভ্যান ওয়ালা ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ ফালাইলো ক্যান বাই?”
আমি বিমূঢ়ের মত মাথা নাড়ালাম, “জানি না, আপনি মাদ্রাসায় চলেন।”
আমি ভ্যান ওয়ালাকে নিয়ে মাদ্রাসাটা খঁজে বের করলাম। আমার স্বপ্নে দেখা মাদ্রাসাটার সঙ্গে খুব একটা মিল নেই। পুকুরটা বেশ ছোট, পানিও পরিষ্কার। শ্যাওলা নেই। তবে মিলও রয়েছে। মসজিদের সেই বারান্দা অবিকল এক। এখানীসেই আমি প্রথম রহস্যটার সাথে জড়িয়ে পড়ি। মাদ্রাসার প্রধান ঈমাম মোহাম্মদ ইদ্রীস শেখের সঙ্গে পরিচয় যখন হল তিনি আমাকে দেখে অবাক হলেন ঠিকি, কিন্তু ভয় পেলেন না। মাদ্রাসার শত শত ছাত্র ততক্ষণে আমাকে দেখতে চলে এসেছে। মসজিদের বারান্দায় বসে আমি প্রথম ইদ্রীস সাহেবের কাছে জানতে পারলাম- আমি “মোঃ নজরুল হোসেন” গত চার দিন ধরে এই হিঙ্গুলী মাদ্রাসায় ছিলাম! এবং গত কাল বিকেলে আমার মৃত্যু হয়েছে- মৃত্যুর আগে আমি বলে গেছি এখানের গোরস্থানে আমাকে কবর দিতে। এবং আমার ফুফুর জন্য চিঠিও লিখে গেছি আমি! গত রাতে আমাকে তারা সবাই কবর দিয়েছে গোরস্থানে!
আমি মসজিদের বারান্দায় বসে ঘোরের মধ্যে সেই চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়লাম যেটা ‘আমি’ ঈমাম সাহেবকে দিয়েছি আমার ফুফুকে দিতে! আমার’ই হাতের লেখা! আমি কাঁপতে শুরু করলাম মৃগী রোগীর মত। সে অবস্থাতেই আমি কবরটা খুঁড়তে অনুরোধ করলাম ঈমাম সাহেবকে।
বলা বাহুল্য আমি বলার আগেই কবর খোঁড়া শুরু হয়ে গেছে। মোয়াজ্জ্বেন সহ আরো কয়েকজন লোক কবরটা খুঁড়লো। আমি নিজে সেখানে যাওয়ার শক্তি পাচ্ছিলাম না। তাই ঈমাম সাহেব আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন সেখানে। এটা সেই জায়গা, গত কাল রাতে স্বপ্নে যেখানে আমি কবর দিতে দেখেছিলাম কাউকে!
দিনের বেলা সূর্যের আলোতেও আমার ভয়ংকর একটা অশুভ ভয় করছিল কবরটার পাশে দাঁড়িয়ে। কাঁদা আর পানিতে অর্ধেক ডুবে আছে কাফন জড়ানো লাশটা। কবরের ভেতর অনেক পানি। একজন লোক নামল কবরে মুখ দেখানোর জন্য।
মুখের কাপড় সরানোর পর যাকে দেখলাম- আয়নায় একে আমি বহুবার দেখেছি- আমি, মোঃ নজরুল হোসেন। কাঁদা লেগে থাকলেও না চেনার কোনো কারণ নেই...... আধ খোলা চোখে পৃথিবী দেখছে কবরের পানিতে ভাসতে ভাসতে।
নিজের পায়ের ওপর ভর টিকিয়ে রাখতে পারলাম না আর...... এ যদি নজরুল হোসেন হয়, তাহলে আমি কে? আর আমিই যদি আসল জন হয়ে থাকি- তবে এ কে?

আমি সেদিন গোরস্থানে মৃগী রোগীর মত কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারাই। ঈমাম সাহেব উপায় না দেখে আমাকে মস্তান নগর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে আমি প্রচন্ড জ্বরের মাঝে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তিন দিন ছিলাম। অবশ্য টানা তিন দিন অজ্ঞান থাকিনি। মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরতো। কিন্তু বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারতাম না। প্রচন্ড ভয় আর জ্বরের ঘোরে বার বার জ্ঞান হারাতাম। বলা বাহুল্য এই দীর্ঘ সময়ে আমি স্বপ্ন দেখতাম ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবে। কিন্তু প্রতিটাই একটার সাথে আরেকটা যুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হল এই দীর্ঘ সময়ে আমি নাকি কিছুই খাইনি।
আমার ঠিক মনে নেই কখন স্বপ্ন দেখা শুরু করি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। কেবল মনে আছে প্রথমবার হঠাৎ করেই আমার নাকে মুখে পানি ঢোকা শুরু করে। মাথায় যেতেই ভীষণ জোরে কেঁশে উঠে চোখ মেলে তাকাই। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে! আমি পানির ভেতরে রয়েছি অর্ধেক! ভেসে আছি পানিতে! অবাক হয়ে চারপাশে হাত বুলাতে লাগলাম। নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাটু পানি জমে থাকা একটা ছোট ঘরের ভেতর। সেটা যে একটা কবর বুঝতে সময় লাগল আমার। জায়গাটা কবর কারণ মাথার ওপরে হাত দিতেই বুঝলাম শক্ত বাঁশের টুকরো দিয়ে ঢেকে দেয়া। চার কোনা আয়তাকার ছোট একটা ঘরের মত। হাটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছি। উঠে দাঁড়ানো যায় না, মাথা লেগে যায় বাঁশের ছাদের সাথে। ওপরে মাটি মাটি দিয়ে ঢেকে থাকায় সমস্ত গায়ের শক্তি দিয়েও ধাক্কা দিয়ে বাঁশের পড়ত গুলো সরাতে পারলাম না। তবে অবাক হবার বিষয় হলঃ আমি এক সময় খেয়াল করলাম আমার গায়ে কাপড় বলতে একটুকরো থান কাপড়। কি রঙের সেটা বুঝতে না পারলেও বুঝতে পারলাম কাপড়টা বেস লম্বা।
আমি অজানা একটা ভয় পেতে শুরু করলাম। কারণ যতই সময় যেতে লাগলো, মনে হল আমি দম নিতে পারছি না...... বাতাস্র জন্য ফুসফুসটা আঁকু পাঁকু করা শুরু করেছে...... আমি পাগলের মত মাথার ওপরের ছাদটা ধাক্কা মেরে ওঠাতে চাইলাম। কিন্তু একটু নড়েই স্থির হয়ে গেল। আমি আবারও ধাক্কা দিতে লাগলাম। শক্তি কমে আসছে শরীরের...... ধাক্কা দিয়ে একচুলও নড়াতে পারছি না আর। মনে হল কবরের ওপর খুব ভারী কিছু একটা জিনিস চাপিয়ে দেয়া হল...... আমার ভয়টা দ্রুত আতংকে রুপ নেয়া শুরু করল। আমি অক্সিজেনের জন্য দেয়াল খাঁমচাতে লাগলাম, আচঁড়াতে লাগলাম পাগলের মত...পানিতে পা ছুড়তে লাগলাম পশুর মত...... তার মাঝেই খেয়াল করলাম এই ঘুটঘুটে অন্ধকার কবরের অন্য মাথায় কেউ একজন বসে আছে...... কেবল অবয়বটা বোঝা যায়...... অন্ধকারেও বুঝতে পারলাম সেই ন্যাড় ফ্যাকাসে মেয়েটা জ্বলন্ত অঙ্গার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্থির হয়ে বসে আছে কবরের পানির মাঝে...... আমি জান্তব একটা চিৎকার করে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য দেয়াল খাঁমচাতে লাগলাম। কিন্তু ফুসফুসের বাতাস ফুরিয়ে এসেছে...... ধীরে ধীরে পানিতে ডুবতে শুরু করেছি... এখনো মেয়েটা আমার দিকে স্থির চোখে চেয়ে আছে...... গভীর রাতে জ্ঞান ফিরল আমার। হাসপাতালের সব বাতি নেভানো। তারপরও বুঝতে পারলাম আমার সারা শরীর কাঁদায় লেপ্টে আছে। আমার নাকে মুখে কাঁদা পানি...... কেঁশে উঠলাম। মাথা জ্বালা করছে প্রচন্ড। পাগলের মত বুক ভরে শ্বাস নিতে পাগলাম। আহা! বেঁচে থাকাটা কত অদ্ভূত! আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসলাম। আমি এখন জানি- হিঙ্গুলী মাদ্রাসা গোরস্থানে কাল সকালে আবারো খোঁড়া হবে “মোঃ নজরুল হোসেন”-এর কবরটা। কারণ সেটার ওপর থেকে মাটি সরে গেছে অনেকখানি। আর অনেকেই একটা চিৎকার শুনেছে......
আমি শুয়ে পড়লাম ধীরে ধীরে। ভয় লাগছে ভীষণ। কেন যেন মনে হচ্ছে হাসপাতালের অন্ধকার করিডোরে, জানালার পর্দার ওপাশ থেকে সেই ন্যাড়া-ফ্যাকাসে মেয়েটা শীতল শান্ত চোখে আমার প্রতিটা নড়াচড়া লক্ষ করছে......
আমি তখনো জানতাম না আমার জন্য আরো কিছু অপেক্ষা করছে......
লেখকের নামঃ- মোঃ ফরহাদ চৌধুরী (শিহাব)
ফেসবুক আই ডিঃ- Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আই ডিঃ- Rudroaimel@yahoo.com

।। ভয়ঙ্কর রাত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, August 13, 2011 at 10:29pm
ঘটনাটা আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখনকার।। আমি ঢাকায় একটা রেসিডেণ্ট স্কুলে পরতাম তখন।। গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশের বাড়িতে বেড়াতে গেছি।। জায়গাটা ময়মনসিংহে।। আমি যেইদিন বাসায় পৌঁছলাম তার কয়েকদিন পরের ঘটনা।। আমাদের এলাকায় হাফিয নামের একজন লোক থাকতেন।। লোকটা ছিল খুবই বদমেজাজি আর রাগী।। সবার সাথেই তার ঝগড়া লেগে থাকতো।। এমনকি নিজের ভাইয়ের সাথেও জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে অনেকদিন যাবত তার ঝগড়া লেগে ছিল।। হয়তো এতো শত্রু থাকার কারনেই কে বা কারা তাকে একরাতে বাজার থেকে আসার সময় তাকে নেরে ফেলে।। গ্রাম অঞ্ছলের খুন।। তাই পুলিশ এসে লাশটাকে পোস্ট মরটেম এর জন্য লাশ কাঁটা ঘরে পাঠাতে চাইলো।। রাস্তা ভয়াবহ খারাপ থাকায় কোনও গাড়ি পাওয়া গেলো না।। শেষমেশ এক ব্যান গাড়ি চালককে তারা রাজি করাতে পারলো লাশ নিয়ে যাবার জন্য।। ব্যান চালক ছিল জুয়ান তাগড়া মানুষ তাই ভয়ভিতি তেমন একটা ছিল না।। লাশকাটা ঘরটা মোটামুটি ভালোই দূরে আর যাওয়ার পথে রাস্তায় একটা জঙ্গলের মত জায়গা পরে।। লাশ নিয়ে পরিবারের লোকদের কান্নাকাটি, বিলাপের কারনে রউনা হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।। অনেকেই লাশ এতো রাতে নিয়ে যেতে না করলেও ব্যান চালক পাত্তা দিল না।। নিজের সাহস দেখানোর জন্য তখনই রউনা হল সে।। বলা বাহুল্য, এতো রাতে তার সাথে যাওয়ার মত তেমন কেউ উপস্থিত ছিল না।। তাই সে একাই রউনা হয় লাশ নিয়ে।। গল্পের বাকি অংশটুকু ব্যান চালকের মুখ থেকে শোনা।। তার জবানবন্দিতে যা শুনতে পারলাম তা নিজের ভাষায় লিখতে চেষ্টা করছি।। নুরু ভাই(ব্যান চালক) রউনা হবার ৩০ মিনিটের মধ্যে অন্ধকার হয়ে গেলো।। তখন তিনি একটা হারিকেন জ্বালিয়ে সেটা ব্যান এর নিচে ঝুলিয়ে দিলেন।। যারা গ্রামে গঞ্জে গেছেন তারা হয়তো বা দেখেছেন।। যারা শহরে থাকেন তারা তো প্রায় কিছুই দেখেন নাহ।। যাক গিয়ে, মূল ঘটনায় ফিরে আসি।। সেদিন পূর্ণিমা রাত ছিল।। তাই রাস্তা একদম ফকফকে দেখা যাচ্ছিল।। তো, সেই জঙ্গলের পাশাপাশি আসা মাত্রই নাকি বাতাসে নাকি অন্য কোনও উপায়ে কে জানে, হারিকেন তা নিভে গেলো।। নুরু ভাই ব্যান থেকে নেমে আবারো হারিকেন জালানর চেষ্টা করলো।। কিন্তু জোর বাতাস বার বার ম্যাচের কাঠি নিভিয়ে দিচ্ছিল।। যখন নুরু ভাই ম্যাচের কাঠি জালানর চেষ্টা করছিলেন, তখন হটাত উনার মনে হল লাশটা যেনও খানিকটা নড়ে উঠলো।। গ্রাম্য আর কুসংস্কার আক্রান্ত হলেও নুরু ভাই ছিলেন বিরাট সাহসী লোক।। তাই তিনি মনকে সান্ত্বনা দিলেন যে, ও কিছু না।। শুধুই মনের ভুল।। কিন্তু তবুও তার মনের মধ্যে একটা খটকা রয়ে গেলো।। হারিকেনটা শেষ পর্যন্ত জালাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিলেন তিনি।। ভাবলেন, চাঁদের আলোতেই কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।। রাস্তাঘাট চাঁদের আলোতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাহলে আর বাড়তি আলোর দরকার কি।। ব্যান চালিয়ে কিছুদুর যাওয়ার পর হটাত উনার খটকা লাগলো।। পিছনে লাশটার নড়াচড়ার আওয়াজ পাওয়া গেলো যেনও।। মনে হলে পাশ ফিরে শুল।। নুরু ভাই পাত্তা না দিয়ে ব্যান চালাতে লাগলো।। বাইরে যতই সাহসীর ভাব দেখান, আসলে ভেতরে ভেতরে তখন ঠিকই ভয় ঢুকে গেছে।। আর কিছুদূর যাওয়ার পর তার মনে হল লাশটা যেনও উঠে বসেছে আর কষ্ট করে টেনে টেনে শ্বাস নেয়া শুরু করেছে।। তিনি সাথে সাথে পেছনে তাকিয়ে দেখলেন, এবার আর ভুল নয়।। আসলেই লাশটা উঠে বসেছে।। লাশের উপর থেকে কাপড়টা সরে গেছে।। চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মুখখানি।। চোখের জায়গাটায় বড় গর্ত।। আর মুখটা যেনও কেউ এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে।। ওটা দেখে নুরু ভাই ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে দিল।। ব্যান থেকে নেমে যেই দৌড় দিতে যাবে অমনি দেখল লাশটা সামনের রাস্তায় পরে আছে।। আড়াআড়ি ভাবে, পথ আটকে।। এটা দেখে পিছনে তাকিয়ে সে দেখল লাশটা ব্যানে নেই।। উনি আর সহ্য করতে পারলেন না।। ভয়ে দিক্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে দৌড় মারলেন।। কোন দিকে যাচ্ছেন তাতে তার কোনও হুশ নেই।। কেবলি মনে হতে লাগলো, পেছনে কে যেনও দৌড়ে আসছে।। সে দৌড়ের স্পীড বাড়িয়ে দিল।। এভাবে কিছুক্ষণ ছোটার পর সে দূরে কিছু আলো দেখে সেদিকে রুদ্রশাসে দৌড়াতে লাগলো।। আলোটা আসছিলো একটা বাড়ি থেকে।। নুরু ভাই দৌড়ে গিয়ে একটা বাড়ির দরজায় ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।। শব্দ শুনে বাড়ির লোকজন বের হয়ে এলে নুরুকে অচেতন অবস্থায় পায়।। সেবা যত্ন করার পর নুরু ভাইয়ের জ্ঞান ফিরে।। তার মুখে ঘটনার বিস্তারিত শুনে বাড়ির জউয়ানরা মিলে বের হয় লাথি সোটা হাতে।। কিন্তু নুরু ভাইয়ের দেখানো মত জায়গায় গিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না।। শুধু দেখা গেলো, যেই জায়গায় নুরু ভাই লাশটাকে শুয়ে থাকতে দেখেছিল, সে জায়গাটা কেমন যেনও উঁচু হয়ে আছে।। আমি নিজেও পরে জায়গাটা দেখেছিলাম।। অনেকটা স্পীদ ব্রেকারের মত।। গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত কিন্তু আরেকটু ঘটনা বাকি রয়ে যায়।। এর পরেরবার যখন আমি বাসায় যাই তখন শুনি যে, রাস্তার মাঝে উঁচু জায়গা থাকায় সমস্যা হচ্ছিল।। তাই রাস্তা কেটে জায়গাটা সমান করে দেয়া হয়।। কিন্তু, এর পরদিনই আবার জায়গাটা উঁচু হয়ে যায়।। আবারো গ্রামবাসী মিলে জায়গাটা কেটে সমান করে দেয়।। কিন্তু কিছুদিন পর আবার সেই আগের মতন উঁচু।। এরপর গ্রামের সকলের উপস্থিতিতে একটা বড় গর্ত খোঁড়া হয় সেখানে।। খুঁড়ে সেখানে ঐ হাফিজ নামক বেক্তির পচাগলা লাশ পাওয়া যায়।। পরে তাকে ঠিক মতন দাফন করা হয়েছিলো আর রাস্তাটাও আর কখনো উঁচু হয়নি।। শেয়ার করেছেনঃ Mehedi MD. Abdullah

।। সংগৃহীত গল্প – ০৭ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, August 14, 2011 at 10:35pm
।। লাভলু মামার ভুতের গল্প।। ''ডুমনীগড় ফরেস্ট রেঞ্জে আমার পোস্টিং অনেক দিন হলো।''....লাভলু মামা গল্প বলা শুরু করলেন। ডুমনীগড় যে মানচিত্রের ঠিক কোন জায়গাটায়, আমরা কেউই মালুম করতে পারলামনা, কিন্তু ঐ এক ধরন লাভলু মামার..... গল্পের মাঝখানে ফোঁড়ন কাটলেই মহা ক্ষেপে যান তিনি... তাই মাথা নেড়ে চুপচাপ গল্প শুনছি আমরা..... ''জায়গাটা আমার মনের মত। বড় বড় চাপালিশ আর শিরীশ গাছে ঢাকা বন.... গোটা বন জুড়ে আছে বাঁশ আর বেতের ঘন ঝোপ। সাপ, বেজি, বানর ছাড়াও আরও কত কি বন্য প্রাণী যে আছে ডুমনীগড় বনে.. তার কোন ইয়ত্তা নাই।''
হারিকেনের ভৌতিক আলোয় কাচারী ঘরে মামার গল্প শুনতে বসেছি আমরা চার কাজিন... পল্টু, বিল্টু, টগর আর আমি। অনেকদিন পরে লাভলু মামাকে পেয়েছি। সারাদেশে যুদ্ধ চলছে.... জানের ভয়ে আমরা শহর ছেড়ে গেছি নানার বাড়ীতে... গ্রামে। বড় খালা, সেজ খালা কয়েকদিন আগেই ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে এসেছেন গ্রামে। চির ব্যাচেলর লাভলু মামা বাড়ী এসেছেন আজই সন্ধ্যায়। বাড়ী ভর্তি লোকজন। বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে লাভলু মামা আমাদের গল্প শোনাতে নিয়ে গেছেন কাচারী ঘরে... আমরাও তাঁর গল্পের খুব ভক্ত। মামার অভিজ্ঞতার ভান্ডার খুব সমৃদ্ধ.... গল্প বলেনও খুব জম্পেস করে!
'' খাসিয়া পল্লীতে পরব অনুষ্ঠান.. সেখানে আমার নেমন্তন্ন।'' বলে চলেছেন মামা...'' ডুমনীগড় বনে দশ-বারো ঘর খাসিয়ার বাস। নেমন্তন্ন খেয়ে ফিরছি আমার বাংলোয়। রাত তখন.. এই ধর, দশটা। বন বাঁদারেই-তো জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম.... বনে জঙ্গলে আমার কোন ভয়-ডর লাগেনা। সাথে আছে তিন ব্যাটারীর টর্চ লাইট আর আমার অফিসের দারোয়ান প্রদীপ। সেদিন ছিল কৃষ্ণপক্ষ... চারদিকে অন্ধকার। টর্চের আলোয় ঝর্ণার ধার ধরে চলছি। পাতার ঝিরিঝিরি শব্দ... আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। এরইমধ্যে হঠাৎ খেয়াল করলাম পাতা মাড়ানোর খসখস শব্দ!''
অন্ধকার রাতে বন জঙ্গলের পরিবেশ, কাহিনীতে একটা ছমছম ভাব! আমরা নড়েচড়ে বসলাম......'' ভাবলাম কোন বন্য শুকর বা শেয়াল-টেয়াল হবে হয়তো! চারদিকে টর্চ মেরে কিছু দেখতে পেলামনা। কিছুদূর এগুতেই আবার সেই খসখস শব্দ! আমরা চলতে শুরু করলেই খসখস শব্দটা যেন আমাদের পিছু নিচ্ছে... আমরা থেমে গেলেই শব্দটাও থেমে যাচ্ছে! উহু... বুঝলাম কিছু একটা আমাদের ফলো করছে।''
গল্পে এখনই হয়তো কোন অশরীরি আত্মার আবির্ভাব ঘটবে... ভৌতিক পরিবেশ.. আর মামার গল্প বলার মুন্সিয়ানার ফলে তেমনই আশা করছিলাম আমরা। গুটিশুটি মেরে ভয়ে ভয়ে গল্প শুনছি...'' শীতের রাত! সাপ-খোপ হবার সম্ভাবনা কম। রাতের বেলায় এই এলাকায় মানুষেরও যাতায়াত নাই। প্রদীপ একটু ভয় পেয়েছে মনে হচ্ছে..... ভূত-প্রেতে বিশ্বাস আছে ওর। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কিছু। ডুমনীগড় বনের পরেই যে পাহাড়টা... ওটা ইন্ডিয়ায় পরেছে। কোন অপারেশনে গেলে এ পথ দিয়েই ওপার থেকে গোলাবারুদ নিয়ে ঢোকে মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু আজ-তো কোন অপারেশনের ইনফরমেশন নাই! কোন অপারেশন হলেই আগাম ইনফরমেশন পেতাম আমি। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিঘ্নে পাড় করার দায়িত্ব ছিল আমার।''
প্রায় জমে ওঠা একটা ভুতের গল্প হঠাৎ করে অন্যদিকে টার্ন নেওয়ায় আমরা সবাই আশাহত!... তারপরও অধীর আগ্রহ নিয়ে শুনছি...'' আবছা অলোয় হঠাৎ দেখলাম প্রদীপের চোখ কপালে.. কিছু একটা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে ও...ভয়ে ওর মুখ হা হয়ে আছে! পিছন ফিরতেই দেখি... অন্ধকারের আড়ালে সাদা আলখেল্লা পড়া এক মূর্তি...মাথায় সাদা টুপি! বাতাসে নড়ছে আলখেল্লার আস্তিন! সাক্ষাত যেন যমদূত!''
গল্পটা এবার কোন দিকে টার্ন নেবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা...''ভুত-প্রেতে আমার বিশ্বাস নাই। আমি টর্চ মারতে যাব...এমন সময় কেউ একজন আমার হাত দু'টো পেছনমোড়া করে শক্ত করে বেঁধে ফেললো। সাদা আলখেল্লা-টা দু'পা এগিয়ে এলো আমার দিকে... পরিচিত গলার আওয়াজ পেলাম -'মাফ করবেন জনাব, আপনার বড্ড বাড় বেড়েছে... আপনি পাকিস্তান বিরোধী।... বেজন্মা মুক্তির সাথে হাত মিলিয়েছেন... আপনি দেশের শত্রু... আপনাকে উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে।'..... গলা শুনেই বুঝলাম আমার অফিসেরই বড়বাবু (সিনিয়র ক্লার্ক) আব্দুল লতিফ পাটোয়ারী.... ব্যাটা রাজাকারের বাচ্চা!''
চুপচাপ শুনছি আমরা...'' বনের নির্জনতাকে ভেঙে দিয়ে হঠাৎ ঠা ঠা করে পরপর চারটা গুলির আওয়াজ। একটা আমার বুক ভেদ করে চলে গেল... আর একটা লাগলো তলপেটে! প্রদীপের লাশটা গড়াতে গড়াতে গিয়ে পড়লো ঝিরির পানিতে.... আমার লাশটা গিয়ে পড়লো বিশ ফুট নীচে ঝিরির খাদে।'' গল্পের এই পর্যায়ে এসে একটু দম নিলেন মামা। তিনি খুব চমৎকার গল্প বলেন বটে, তাঁর গল্প বলার স্টাইলই আলাদা.... গল্পের আবহ ফুটিয়ে তুলে এমনভাবে বলেন যেন সব সত্যি বলছেন!... তাই বলে এতটা?! জলজ্যান্ত শরীরে নিজের মরার গল্প বলে গেলেন অবলিলায়?! ... মামা পারেনও বটে!
কিন্তু বিটকেল বিল্টুটা এবার আর চুপ থাকতে পারলো না.... ''চাপাটা একটু বেশী হয়ে গেলনা মামা? আপনি নিশ্চয়ই এটা সত্যি কাহিনী বলে চালিয়ে দিচ্ছেন না?!'' ..... কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে মামা নিজের স্বপক্ষে অবস্থান নিলেন...'' তোদের ওই এক দোষ! তোরা সব কিছুকেই বানোয়াট ভাবিস! ডুমনীগড় বনের ঝিরির খাদে গিয়ে এখনও লাশটা দেখতে পাবি। আর হ্যাঁ.... তোদের যেটা বলার জন্য আজ এই গল্প বলা... যে যুদ্ধ আমরা শুরু করে গেছি... সেই যুদ্ধে একদিন বিজয় নিশ্চিত করতে হবে তোদেরকেই। কথাটা মনে রাখিস।''
মামার ধমক খেয়ে আমরা বিনা বাক্য ব্যয়ে চুপচাপ উঠে ঘুমাতে গেলাম। বুঝলামনা.... এমন জলজ্যান্ত ডাহা মিথ্যা গল্পটা সত্যি বলে চালিয়ে দেবার হাস্যকর প্রয়াস পেলেন কেন তিনি?! রাতে ভাল ঘুম হয়নি.... সকালে অনেক্ষণ বিছানাতেই গড়াড়ড়ি করছি। হঠাৎ শুনি বাড়ীর ভিতরে শোরগোল... সবাই কান্নাকাটি করছে। ..... ডাক পিওন চিঠি দিয়ে গেছে.... ডুমনীগড় থেকে লাভলু মামার এক সহকর্মীর চিঠি! গত প্রায় এক মাস যাবৎ মামা বিনা নোটিশে দপ্তরে অনুপস্থিত। তিন দিন আগে বনের ভিতর ঝর্ণার খাদের নীচে একটা অর্ধগলিত বিকৃত লাশ পাওয়া গেছে... পোষাক দেখে লাশটা লাভলু মামার বলে ধারনা করা হচ্ছে......
আমি আর বিল্টু মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম। তারপর চারজনে ছুটলাম বাড়ীর আশপাশে লাভলু মামাকে খুঁজতে.... কোথাও খুঁজে পেলামনা তাঁকে... আমরা চারজন.... অনেক খুঁজেছি...... কিন্তু আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে। সংগ্রহ করেছেনঃ অ্যাডমিন

।। ভিনদেশি গল্প – ০১ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, August 15, 2011 at 10:46pm
কেউ আপনারা টোকিওর আসাকাসাতে এলেই দেখতে পাবেন, আসাকাসা রোডের ধারে "কি-নো-কুনি-যাকা' নামে একটা ঢাল আছে। এটার মানে হল 'কি' প্রদেশের ঢাল। আমি জানি না, এটার নাম কেন 'কি' প্রদেশের ঢাল হল। সেই ঢালের এক ধারে দেখতে পাবেন একটি পুরোনো মোটেল। অনেক বড় আর প্রশস্ত। মোটেলের চারপাশের খালি জায়গাটুকুর কোথাও কোথাও ঘন এবং লম্বা সবুজ ঝোপঝাড়ে ঢাকা। রাস্তার আরেক পাশে সম্রাটদের প্রাসাদের সুউচ্চ দেয়াল লম্বা হয়ে রাস্তার সাথে সাথে চলে গেছে। অনেক অনেক আগে, টোকিওতে যখন রাস্তায় বিজলী বাতি আসেনি অথবা মানুষে টানা রিক্সা গাড়ি চলা শুরু করেনি, তখন আসাকাসার এই ঢালটা ছিল ভীষন ভয়ঙ্কর আর নির্জন। মানুষ পারতঃপক্ষে সূর্য ডোবার পরে এ রাস্তা দিয়ে কখনই যেত না । কখনও কোন পথচারীর সূর্যডোবার পরে বাড়ি ফিরতে হলে "কি-নো-কুনি-যাকা' অনেক লম্বা পাহাড়ি পথ ঘুরে বাড়ি ফিরত, তবুও এ পথ দিয়ে যেত না। কারণ তখন রাত হলেই "মুজিনারা" পথে নেমে আসত। সব শেষ যে মানুষটি এক মুজিনাকে দেখেছিলেন, তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি কাছেই কোবায়েশী কোয়ার্টারএ থাকতেন। বছর তিরিশেক আগেই তিনি মারা যান। একদিন রাতে তিনি কি ভাবে মুজিনা দেখেছিলেন, তার গল্পই আজ বলবো। একদিন রাতে সেই ব্যবসায়ী তাড়াহুড়ো করে "কি-নো-কুনি-যাকা'র ঢাল পার হচ্ছিলেন। তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন, মোটেলের ধারে, গুটিসুটি মেরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে এক মেয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে কাঁদছে। তিনি ভয় পেলেন এই ভেবে যে, এই অন্ধকারে, এই নির্জন রাস্তায় মেয়েটা কি ভাবে এল? আর কেনই বা কাঁদছে? ডুবে টুবে মরবে না তো!
তিনি কোন শব্দ না করে, মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে, মেয়েটার পাশে এসে দাঁড়ালেন। "মেয়েটাকে দেখে ভদ্রঘরের মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে। পরনে দামী পোশাক। চুল বাঁধার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, কুমারী মেয়ে।" তিনি ভাবলেন। কিছুটা বিষ্ময় নিয়ে তিনি মেয়েটার আরও কাছে এগিয়ে এলেন, তারপর বললেন, "ও-জোচু" তুমি কাঁদছ কেন? কেঁদ না। তোমার কি হয়েছে আমাকে খুলে বল, দেখি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারি কিনা? তোমাকে সাহায্য করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগবে। ভদ্র লোক প্রকৃতই বেশ দয়ালু ছিলেন। তাই তিনি কথা গুলো মন থেকেই বলছিলেন। কিন্তু মেয়েটা তার লম্বা হাতায় মুখ ঢেকে কেঁদে যাচ্ছে তো কেঁদেই যাচ্ছে। একবারও মুখ তুলে তাকাচ্ছে না।
ভদ্রলোক আবার বললেন, "ও-জোচু" তুমি কেঁদ না। লক্ষী মেয়ে আমার, কথা শোন প্লীজ! জায়গাটা মোটেও ভালো নয়। আর তোমার মত একটা যুবতী মেয়ের এখানে থাকা একেবারেই নিরাপদ নয়। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, কি হয়েছে আমাকে খুলে বল? দেখি তোমার জন্য আমি কিছু করতে পারি কিনা?
ভদ্রলোকের অনুরোধে তাকে পেছনে রেখে, মেয়েটা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো । তখনও সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। হাত দিয়ে মুখ ঢাকা। ভদ্রলোক চেষ্টা করে যেতেই লাগলেন, তিনি বললেন, "ও-জোচু, আর কেঁদ না প্লীজ। আমর কথা শোন, লক্ষী বোন আমার! বলে, তিনি মেয়েটার কাঁধে আলতো করে হাত রাখলেন। মেয়েটা এবার তার দিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়ালো। তার মুখ থেকে যেন খসে পড়ল, লম্ব হাতাটা। মেয়েটা তার অব্য়বে হাত বুলিয়ে, সেই ব্যবসায়ীর দিকে এগিয়ে এল। আবছা অন্ধকারে তিনি দেখলেন। একটা ভয়ঙ্কর অবয়ব- যেখানে চোখ, নাক,কান, মুখ কিছু নেই। আর তখুনি চারিদিকটা কেমন অন্ধকার আর শূণ্য হয়ে গেল। তিনি দিগ্বিদিকশূণ্য হয়ে ভয়ে দৌঁড়াতে শুরু করলেন। একবারও পেছন ফিরে তাকালেন না। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কতক্ষণ মনে নেই, তিনি দূরে একট বাতির আলো দেখতে পেলেন। দূর থেকে টিমটিমে আলোটুকুকে জ্বোনকির আলোর মত লাগছিল। তিনি ভাবছিলেন, এ আলো নিশ্চই "সোবা" দোকানীর কাছে থেকে আসছে কারণ যেখানে তিনি আলোটা দেখলেন, সেখানে রাস্তার ধারে তার এক চেনা দোকনী "সোবা" বিক্রী করেন। যেই থাক না কেন? তিনি ঐ আলো লক্ষ্য করে দৌঁড়াতে শুরু করলেন।
তারপর হুড়মুড় করে এসে তিনি সোবার দোকানে ঢুকে ধপাস করে বসে, শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।
এখানে, এখানে, সোবার দোকনী রুক্ষ স্বরে লোকটিকে কাছে ডাকল। "কেউ মেরেছে নাকি আপনাকে? ব্যাথা পেয়েছেন?
না না, ব্যাথা পাইনি- শুধু---------
শুধু কি? ভয় দেখিয়েছে? লোকটার গলা খসখসে, কোন সহানুভূতি নেই। ডাকাত নাকি?
না না! ডাকাত নয়। ভীত সন্ত্রস্ত লোকটা একটা ঢোক গিলে, কাঁপতে কাঁপতে বললেন, আমি ----আমি এক মেয়েকে দেখলাম মোটেলের পাশে------ তার মুখটা দেখে------ওহ! আমি বলতে পারবো না, কি দেখলাম।
সোব দোকানী চেঁচিয়ে বলল, সে কি তোমাকে খুব ভ্য় দেখিয়েছে? ঠিক এরকম একটা মুখ দেখিয়েছে? ঠিক আমার মত---- মুখের ওপরেরটা ডিমের মত সমান?
লোকটা সোবার দোকানীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন, একটা অবয়ব তাতে কোন নাক, মুখ আর চোখ নেই।

সংগ্রহ করেছেনঃ Tushar Rahman Sishir

ভয়

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Monday, August 15, 2011 at 4:43pm
১.
মধুপুরের বিখ্যাত ডাকাত ইদ্রিস আলি কে খুন করা হয়েছিল সন্ধাবেলা । মাথার পেছনে প্রথমে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে অজ্ঞান করা হয় , তারপর গলায় রশি পেচিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয় মধুপুর মসজিদের পাশের আম গাছটায় । ফজরের নামাজ পড়তে এসে গ্রামের সব চেয়ে বৃদ্ধ লালু শেখ যখন আমগাছ তলায় কিছু একটা দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় , খবরটা তখনও কেউ জানেনি । বোবা জামাল শীতে কাপতে কাপতে খেজুর গাছ থেকে রসের হাড়িটা নিয়ে যখন নামছিল , হঠাৎ করেই তার চোখ গেল আমগাছটার দিকে , আধহাত লম্বা জিহ্বা বের করে ইদ্রিস আলি তখন তার দিকেই চেয়ে আছে । বোবা জ়ামালের হাত থেকে রসের হাড়িটা পড়ে গেল , গাছ থেকে এলোপাথাড়ি নামতে গিয়ে দুই পা কেটে গেল , সেখান থেকে দরদর করে রক্ত বেরুতে লাগল । গাছ থেকে নেমেই সে বিকট চিৎকার করতে করতে গ্রামের দিকে ছুটল । যে খবর সারারাতে কেউ জানেনি , পরবর্তী আধ ঘন্টায় গ্রামের সকল মানুষ তা জেনে গেল । বোবা জামাল তাদের মুখে কিছুই বলতে পারে নি, কিন্তু বারবার আমগাছ তলার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করছিল , লোকজন কিছু একটা আন্দাজ করে আমগাছতলায় এসে থমকে যায় । ইদ্রিস আলীর বের করা জিভে তখন মাছি ভন ভন করছে ,সারা মুখ কালো হয়ে আছে রক্তে , কোটর থেকে চোখটা যেন বের হয়ে আসতে চাচ্ছে । জীবিত ইদ্রিস আলীর সাথে এ মৃত ইদ্রিস আলীর কোনই মিল নেই । এ ভয়ংকর মৃত্যু অনেকেই সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যায় আমগাছতলা থেকে । লাশের নিচে তখনো লালু শেখ পড়ে আছে , বিড়বিড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে ।কেউ তাকে তুলতে যাচ্ছেনা , সবাই তাকিয়ে আছে লাশের দিকে , এ যেন এক মায়া ! কুহক ! । ক্রমে মানুষ ভীড় করতে লাগল এ আমগাছতলায় । যে আমগাছতলা এতকাল ছিল নিরব নির্জন , সকাল দশটার মাঝেই সে আমগাছতলা হয়ে গেল লোকে লোকারণ্য । দশটার কিছু পরে সাবইন্সপেকটর কাওসার আহমেদ গ্রামের চেয়ারম্যান জলিল হোসেনের বাড়িতে এসে হাক ছাড়ল,
--জলিল সাব বাড়িতে আছেন নি?
জলিল হোসেন তখন উঠোনে পিড়িতে বসে নাপিত দিয়ে চুল কাটাচ্ছিলেন । বিরক্ত স্বরে বললেন
--আছি । কেডা?
--আমি কাওসার ।
--ও , সাবইন্সপেকটর সাব । আসেন ভিতরে আসেন ।
কাওসার বাড়ির ভিতরে ঢুকেই চেয়্যারম্যানকে বলল,
--তা , লাশের কি করবেন ,কিছু ঠিক করলেন ?
--না , এহনো ঠিক করি নাই ।আপনে কি কন , কি করা যায় ?
--আমি কই ,লাশ কবর দিয়া ফালান । এইটা নিয়া ঝামেলা করার ইচ্ছা করতাছেনা ।
--ঠিক আছে , ইস্নপেকটর সাব । তাই করতাছি। আপনে কিন্তু চা খাইয়া যাইয়েন ।
সাবইন্সপেকটর কাওসার চা খেয়ে চলে গেলেন ।
লাশটা তখনো গাছে ঝুলছে । কেউ লাশ নামাতে যাচ্ছে না । এ মৃত্যু স্বাভাবিক নয় । মানুষ সকল অস্বাভাবিকতাকে ভয় পায় । এটা মানুষের এক সহজাত ধর্ম । এখানে কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটেনি , কিন্তু ইদ্রিস আলীর মৃত্যু সব অতিপ্রাকৃতিক ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে । এখানে সবাই মৌন । কিছু একটা দেখার প্রতীক্ষায় তাকিয়ে আছে সবাই ।
হঠাৎ মসজিদের ইমাম সিরাজ মিয়া কোথা হতে উদয় হয়ে চেচিয়ে উঠল ,
--ওই মিয়ারা লাশ কি গাছেই পচব নাকি ? আসেন , লাশ নামাইতে অইব ।
বলেই সিরাজ মিয়া লুঙ্গি মালকোচা মেরে তরতরিয়ে গাছে উঠে গেল । লাশের নিচে দুইজন চট বিছিয়ে ধরল । সিরাজ মিয়া উপর থেকে রশি কেটে দিতেই ধপ করে লাশটা পড়ল চটে । তীব্র মানুষ পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল এলাকাজুড়ে ।
বিকেল হওয়ার আগেই, জানাজা না পড়িয়েই ইদ্রিস আলীকে পুঁতে ফেলা হল গ্রামের দক্ষিণ দিকের পোড়াবাড়ির পাশের জমিতে । অপঘাতে মরা লাশ । কি না কি হয়, এই ভয়ে গ্রামের সকল ছেলেবুড়োকে নিষেধ করা হল আগামী সাতদিন যাতে এদিকে কেউ না আসে । পরদিন সকালে লাল্টুদের মুদি দোকানে বসে সিরাজ মিয়া চা খেতে খেতে আচমকা বলে উঠল
--ও লাল্টুর বাপ । কালকে রাইতে তো মনে হয় ইদ্রিসরে দেখলাম ।
--কি কন ইমাম সাব! ইদ্রিসরে ?
--হ, ফজরের নামাজ পড়ানোর জন্য ওজু করতাছিলাম । আন্ধাইর তহনো যায় নাই । হঠাৎ চোখ গেলগা আম গাছটার দিকে । আন্ধাইরে ঠিকমতো কিছু দেহা যায়না । তবুও ছায়ার মতো দেখলাম আমগাছতলায় আন্ধইরে কিছু একটা বইয়া আছে । আমি পাত্তা না দিয়া ওজু করতে লাগলাম । আন্ধাইরে কত কিছুই দেহা যায় । সবকিছুকে পাত্তা দিতে নাই । কিন্তু কিছুক্ষণ পরে হুনলাম ,খুবই অদ্ভুত স্বরে কেডা জানি কানতাছে । আর কান্নার শব্দটা আইতাছিল ওই আমগাছের তল থেইকা । তহন পাইলাম ভয় । তাড়াতাড়ি ওজু শেষ কইরা মারলাম দৌড় ।
এ ঘটনা সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে বেশী দেরি হলনা । আমগাছতলাটা সকলের কাছে হয়ে গেল ভীতিকর এক জায়গা ।
এর একমাস পর ফজরের নামাজ পড়তে এসে গ্রামের লোকজন, ইমাম সিরাজ মিয়াকে মসজিদে না পেয়ে খুজতে খুজতে যখন আমগাছতলায় আসল , তখন আমগাছের ডালে সিরাজ মিয়ার ফাসিতে ঝুলানো বিকৃত লাশটা দেখতে পায় । ২

করপোরেট জীবনে ছুটি খুব একটা পাওয়া যায় না । এবার তিনদিনের ছুটি পাওয়াতে বন্ধু অরুণের সাথে বেড়াতে চলে এলাম মধুপুরে । মধুপুর গ্রামটি সত্যিই সুন্দর । অরুণ যতটুকু বলেছিল তার চেয়েও বেশী । সে এ গ্রামেই জন্মেছে । পৃথিবীতে কিছু স্বপ্নাবিষ্ট মানুষ জন্মায় যারা কখনো তাদের শিকড়কে অস্বীকার করে না । অরুণ তাদেরই দলে । তার কাছে এ গ্রামের কথা এতো শুনেছি যে , এখানে এসে মনে হচ্ছে মধুপুরকে আমি অরুণের চেয়েও ভাল চিনি ।
ট্রেন থেকে নেমেছি সেই দুপুরবেলা । এখন গরু গাড়িতে করে চলেছি অরুণদের বাড়িতে । বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় গরুর গাড়িতে চড়া খুবই আরামের । কিন্তু গরু গাড়ি যে এতঝাকি খায় , না চড়লে বুঝা যায়না । তীব্র ঝাকিতে আমার মাথাব্যথা শুরু হয়েছে । অরুণ আমার পাশে বসে একনাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে । শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম
--কি রে ? আর কত দূর?
--এইতো দোস্ত , এসে পড়েছি । আর আধঘন্টাখানেক ।
-- আরও আধঘন্টা ! প্রচুর ক্ষুধা লাগছে রে । এখন কি করি ?
-- চিন্তা করিস না ,বাড়িতে ফোন কইরা দিছি । সব রান্না রেডী । খাইয়া খাইয়া পেট বানাইছস বটে একখান ! দোস্ত এখন থেকে একটু কম খাওয়া শুরু কর । ডায়েট করা শুরু কর ।
--এত কথা বলিস না । এখন চুপ কর , মাথা ব্যথা করছে ।
বিকেলের আগেই পৌছে গেলাম অরুণদের বাড়িতে । অরুণের চাচা রহিম উদ্দিন আগেই দাড়িয়ে ছিলেন রাস্তায় এসে । গাড়ি থেকে নেমেই চাচাকে সালাম দিলাম, চাচা হাসি মুখে বললেন,
--এতক্ষণে আইলা তোমরা ।
--আর বইলেন না চাচা , গরুর গাড়িতে চড়ে মাথা ব্যাথা করতাছে ।
--নতুন উঠলে একটু আধটু মাথা ব্যথা করেই । লও লও ভিতরে লও।
অরুণদের বাড়িটা সুন্দর । শুধু সুন্দরই না ,সজানোও বটে । উঠোনের এক কোণায় ফুলের বাগান , ফুল ফুটে আছে সেখানে । আর এতেই এ বাড়ির সৌন্দর্য বেড়ে গেছে বহুগুণে । কিছু অচেনা ফুলের গন্ধে বাড়ি ভরে গেছে । আমি বললাম ,
-- এটা কি ফুলের গন্ধরে?
--কি জানি । চল আগে হাতমুখ ধুয়ে আসি ।
বাড়ির পাশেই বিরাট পুকুর । আমরা পুকুর থেকে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে গেলাম । খাওয়া শেষে অরুণ আমায় ঘুরতে নিয়ে বের হল । রাত তখন দশটা । হারিকেনের আলোয় অরুণ আর আমি বিছানা ঝাড়ু দিয়ে ঘুমানোর আয়োজন করছি । অরুণ হঠাৎ বলল
--সকালে আমার আবার ফজরর নামাজ পড়ার অভ্যাস আছে , তুই পড়বি নাকি ?
--আমার যা ঘুম । হাতি দিয়েও টেনে তুলতে পারবি কিনা সন্দেহ । ডাক দিয়ে তুলতে পারলে যাব ,ডাকিস ।
দুজনে শুয়ে কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানিনা । ঘুম ভাঙল অরুণের ডাকে ।
--দোস্ত উঠ ,উঠ । সকাল হয়ে গেছে । নয়টা বাজে । উঠ ।
বিছানায় উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে । রোদের আলোয় ঝলমল করছে চারপাশে । অরুণ গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছে বিছানার পাশে ,বলল
--আজকেই ঢাকা চলে যাব । উঠ । রেডি হয়ে নে ।
আমি অবাক হয়ে বললাম
--কিরে কি হয়েছে ? এসেছি তিনদিন থাকব বলে । আর তুই আজই চলে যাবি ? কিছু কি হয়েছে?
-- না কিছু হয়নি । এখন রেডি হয়ে নে । দুপুরের ট্রেন ধরতে হবে ।
আমি অবাক হয়ে অরুণের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ভাবলাম হয়তো অরুণের সাথে তার চাচা বা চাচীর ঝগড়া হয়েছে । কথা না বাড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে সোজা পুকুর পাড়ে চলে এলাম । হাত মুখ ধুয়ে পুকুর থেকে উঠেই দেখি অরুণের চাচা দাড়িয়ে
--তোমরা না কি আজই চইলা যাইতাছ ?
--অরুণতো তাই বলল । আচ্ছা চাচা কি হয়েছে যে অরুণ চলে যেতে চাচ্ছে ?
--কি জানি । বুঝবার পারলাম না । তুমি মনে কিছু লইও না , ও একটু এমনই । তয় পরে আরেকবার সময় কইরা আইস । ৩

সেদিন বিকালের ট্রেনেই আমরা ঢাকায় রওনা দিলাম । অরুণ সকাল থেকেই গম্ভীর হয়ে আছে । আমার সাথে তেমন একটা কথা বলছে না । অরুণকে আমি সবসময়ই হাসিখুশি থাকতে দেখেছি । এমন গম্ভীর মুখে তাকে কখনোই দেখিনি । আমি শতবার তাকে জিজ্ঞেস করেছি --কিরে কি হয়েছে ? একবারও সে উত্তর দেয়নি ।
রাত তখন আটটা কি নয়টা । অরুণ আর আমি ট্রেনে সামনাসামনি বসে আছি । ট্রেনের এ কামরাটা অপেক্ষাকৃত নির্জন । ট্রেনের সকল বাতি নিভানো হয়েছে অনেক আগেই । পাশের জানালাটা খোলা । খোলা জনালা দিয়ে হুহু করে বাতাস আসছে । চাঁদের আলো খানিকটা এসে পড়েছে অরুণের মুখে । আর এতেই আমি তাকে আবছাভাবে দেখছি । এ অদ্ভূত পরিবেশে হঠাৎ অরুণ আমার দিকে ফিরে আচমকা বলল
--আচছা,শহিদ, তুই কি আত্নায় বিশ্বাস করিস?
আলো ছায়াময় সেই নির্জন ট্রেনের কামরায় এমন একটা প্রশ্ন শুনে আমি শিউরে উঠলেও বলি
-- না । আমি বিশ্বাস করিনা । হঠাৎ এ প্রশ্ন করলি যে ।
অরুণ কিছুক্ষন চুপ করে কি যেন ভাবল , তারপর বলতে লাগল,
-- তাহলে শোন , তোকে একটা ঘটনা বলি ,অনেকদিন আগে মধুপুরে দুইজন মানুষ মারা যায় । একজনকে মসজিদের পাশের আমগাছটায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় । এর একমাস পরেই আরেকজন সেই একই গাছে আত্নহত্যা করে । গ্রামাঞ্চলে এইসব ঘটনা নিয়ে খুব তোলপাড় হয় । তখন থেকে আমগাছটা সবাই এড়িয়ে চলতে শুরু করে ।পারতপক্ষে কেউ রাতে ভুলেও আমগাছটার তলা দিয়ে যায়না । গতকাল রাতে ফজরের নামাজ পড়তে এই আমগাছটার তলা দিয়েই যাচ্ছিলাম । তখনো অন্ধকার কাটেনি । চাঁদের আলো হয়তো ছিল । কিন্তু আমি যখন যাচ্ছি তখন ঘোর অন্ধকার । এমনিতে আমি বেশ সাহসী । কিন্তু আমগাছটার তলা দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম , তখন খেয়াল করলাম আমি আসলে ভয় পাচ্ছি , সম্পূর্ণ বিনা কারণে ভয় । নির্জন একটা রাস্তা দিয়ে একা গেলে যে কেউ ভয় পেতে পারে । কিন্তু আমার ভয়টা সম্পূর্ণ অন্যরকম । আমার মনে হল ঠিক আমগাছের গোড়ায় কিছু একটা দাড়িয়ে আছে । আমি কিছু দেখিনি , তবুও মনে হল কিছু একটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে । তার অস্তিত্ত্ব নেই , শরীর নেই , কিছু নেই , তবুও মনে হইল কিছু একটা আমার পাশে ঠিকই আছে । ঠিক তখনি ,অন্ধকারে দেখলাম ঠিক মানুষ বলা যায়না , তবুও অনেকটা মানুষের মত অবয়ব ঠিক আমগাছের গোড়ায় দাড়িয়ে আছে । তখন এক জান্তব ভয় আমাকে গ্রাস করল । এমন তীব্র ভয় আমি জীবনে কখনো পাইনি । তখন আমি খেয়াল করলাম আমার পা কাঁপছে । আমি এক চিৎকার দিয়ে মসজিদের বারান্দায় এসে অজ্ঞান হয়ে যাই । তারপর কি হয় জানিনা । জ্ঞান ফিরলে দেখি মসজিদের বারান্দায় শুয়ে আছি । অনেক মানুষ ভীড় করে আছে ।
একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে অরুণ হাপাতে লাগল । আমি প্রচন্ড ভয়ে কথা হারিয়ে ফেলেছি । সেদিন ট্রেনে অরুণের সাথে আর কোন কথা হয়নি । অরুণ সারা পথই কি যেন ভাবছিল । রাত তিনটায় যখন ট্রেনটা ঢাকায় আসে তখন ট্রেন থেকে নেমে অরুণ শুধু বলেছিল - যাই । পরে দেখা হবে ।
অরুণ থাকে মগবাজারে , তার বাবা মাকে নিয়ে । আর আমি থাকি মালিবাগে , একা একটা ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া করে । বাসায় ফিরে সেদিন আর ভয়ে ঘুমুতে পারিনি । বই পড়ে , আলো জ্বালিয়ে রাতটা কোনমতে পার করেছিলাম ।
কিছুদিন পর প্রচন্ড কাজের চাপে অরুণের গল্প ভুলেই গেছিলাম । মধুপুরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ অরুণ আমাকে ফোন করে উদভ্রান্তের মত বলল
-- দোস্ত তুই আমারে বাঁচা
-- কেন কি হয়েছে ?
--আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
--কি হয়েছে । খুলে বল ।
--সেদিন গভীর রাতে মধুপুর থেকে ফিরে , ট্রেন স্টেশন থেকেই একটা রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম । রিকশাটা চলতে চলতে যখন একটা অন্ধকার গলিতে ঢুকল , ঠিক তখনি আমার মনে হল কিছু একটা আমার পাশের খালি জায়গায় বসে আছে । অনুভূতিটা এতই তীব্র যে আমি আমার পাশে একঝলক তাকিয়েও দেখলাম । সেখানে কিছুই নেই ।আমি বুঝতে পারলাম এটা আমার মনের ভুল । ঠিক তখনই আমার মনে একটা অদ্ভুত চিন্তা আসল , ভয়ানক কোনকিছু মধুপুর থেকে আমি আমার সাথে করে নিয়ে আসিনি তো ? মন থেকে যতই চিন্তাটা ফেলে দিতে চাইলাম ততই তা ঝাকিয়ে বসল । কিন্তু রিকশা ভাড়া মিটিয়ে যখনই আমাদের বাড়ির গলিটাতে ঢুকলাম তখনই ঐটাকে দেখলাম । সামনেই অন্ধকারে দাড়িয়ে আছে । তার চোখ নেই ,মুখ নই, পা নেই , তবু মনে হল ওটা চেয়ে আছে আমারই দিকে , তার মুখে ক্রুর হাসি ।। আমি দৌড়ে বাড়ির গেটে যেয়ে দারোয়ানকে ডাকতে থাকি । দারোয়ান আমাকে ধরে নিয়ে পৌছে দিয়ে আসে আমাদের ফ্ল্যাটে ।
এতকথা অরুণ একনাগাড়ে বলে হাপাতে লাগল । আমি বললাম
--এ সবই তোর কল্পনা । চিকিৎসা নিলে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে ।
--প্রথমে আমিও তাই ভেবেছিলাম । তিনজন সাইকোলজিস্টের সাথে দেখা করেছি , সব বলেছি, কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি । এখন আমি আমার রুমে তাকে দেখি , দেখি কিছু একটা হাটছে আমার অন্ধকার ঘরে । -ঘর অন্ধকার করে ঘুমালে প্রায়ই দেখি মশারির ওপাশে কিছু একটা দাড়িয়ে আছে । তাই এখন বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাই ।
--ঠিক আছে তোকে আরো কিছু সাইকিয়াট্রিস্টের ঠিকানা দিই , তুই গিয়ে দেখা করে আয় ।
ঠিকানা নিয়ে অরুণ ফোন রেখে দেয়।
আমার দেয়া ঠিকানাগুলোতে সে গিয়েছিল কিনা জানিনা । কিন্তু মাসখানেক পর অরুণ যখন তার রুমের ফ্যানে ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করে তখন খুবই অবাক হই । বহু কাজের মধ্যেও তার জানাজায় যাই । তার বাবা সেদিন আমাকে জড়িয়ে কাঁদলেন অনেকক্ষন । কেন অরুণ আত্নহত্যা করেছে তা কেউ বলতে পারেনি । তবে শেষের দিকে অরুণ নাকি গভীর রাতে- কে কে বলে চেচিয়ে উঠত আর একা একা কথা বলত । ৪

অরুণের লাশ কবর দিয়ে যখন বাসায় ফিরছি তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে । অরুণ আমার অনেক কালের বন্ধু । সে আর আমি একসাথে কত জায়গায় ঘুরতে গেছি । তার আর আমার বহু স্মৃতি মনে পড়ে কষ্ট হতে লাগল । জানিনা কতক্ষণ উদ্দেশ্যবিহীন হেটেছি , জানিনা কেদেছি কিনা , কত কি ভেবেছি তাও জানিনা । রাত দশটায় বাড়ির গেটে আসতই দারোয়ান বলল
--ভাইজানের কি মন খারাপ ?
--না ।
--তাইলে মুখ অমন শুকনা কে ?
আমি ঊত্তর না দিয়ে গেট দিয়ে ঢুকে পড়লাম । সিড়ি দিয়ে উঠার সময় পাশের বাসার বিড়ালটাও উঠতে লাগল আমার সাথে । আমার ফ্ল্যাট তিনতলায় । ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভিতরে তাকাতেই এক তীব্র ভয় আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল । আমার রুম তখন পুরো অন্ধকারে ডুবে আছে , পাশের বাড়ি থেকে কিছু আলো এসে পড়েছে আমার রুমে । আর এই অস্পষ্ট অদ্ভূত আলোতে আমি স্পষ্ট দেখলাম আমার শোয়ার ঘরের সিলিং ফ্যানটায় ঝুলে আছে অরুণের লাশ ! তীব্র ভয়ে কাপতে কাপতে দৌড়ে নিচে নেমে ,গেটের কাছে এসে হাপাতে লাগলাম । দারোয়ান দৌড়ে এসে বলল -- আরে ভাইজান কি হইছে?
--লাশ!
-- লাশ ? কোথায় ?
--আমার রুমে
দারোয়ান পানি দিয়ে বলল
-- লন পানি খান । আর কি হইছে একটু খুইলা কন ।
--রুমের দরজা খুলে তাকিয়ে দেখি , সামনের রুমে যে ফ্যানটা তাতে রশি পেচিয়ে কেউ একজন ঝুলে আছে ।
--কন কি? চলেন তো আমার সাথে ।
ফ্ল্যাটে এসে দেখি কিছুই নেই । দারোয়ান মৃদু হাসি দিয়ে বলল-- বেহুদাই ভয় পাইছেন ।
দারোয়ান চলে গেলেও আমি ফ্ল্যাটে ঢুকতে সাহস পেলাম না । আধ ঘন্টা পরে যখন ঢুকলাম তখন আগের ঘটনাটা নিজের কাছেই কেমন হাস্যকর লাগছে। রাতে আরেকবার গোসল সেরে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম ।
গভীর রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । আমার ঘুম এত সহজে ভাঙ্গে না । তারমানে কিছু একটা হয়েছে । ভালো করে কান পেতে কিছু একটা শুনতে চেষ্টা করলাম তখন হঠাৎ মনে হল কিছু একটা নিশব্দে হাটছে আমার বিছানার চারপাশ দিয়ে । মশারির জন্য ভালো করে কিছুই দেখতে পারছি না তবু মনে হল গাঢ় অন্ধকারে আরো গাঢ় কিছু একটা নড়াচড়া করছে । তীব্র একটা ভয় আমাকে গ্রাস করল । এতো তীব্র ভয় আমি জীবনে পাইনি । ঘরে বাতাস নেই , ফ্যান বন্ধ, তবুও আমি স্পষ্ট দেখলাম , আমার মশারিটা হঠাৎ নড়ে উঠল । হঠাৎ পায়ের দিকে মশারির দিকে আমার চোখ গেল , আর তীব্র আতঙ্ক নিয়ে দেখলাম , সেখানে একজন মানুষের মুখ দেখা যাচ্ছে , অনেকখানি জিভ বের হয়ে আছে , মুখ রক্তে কালো , চোখটা বের হয়ে আসতে চাচ্ছে বাইরের দিকে । জ্ঞান হারানোর পূর্বে টের পেলাম মানুষ পচা তীব্র দুর্গন্ধ আমার রুমজুড়ে ছড়িয়ে গেছে । ৫

গভীর রাতে এখনো আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । তাকিয়ে থাকি অন্ধকারে । কিছুই দেখি না । তবু মনে হয় কিছু একটা তাকিয়ে আছে আমার দিকে!!ভয়ানক কিছু একটা হওয়ার প্রতীক্ষায় আমি দিন গুনছি ।
বারান্দায় কিছু একটা হাটছে । ধীর পদশব্দ শোনা যাচ্ছে , আর কিছু ফিস ফিস শব্দ । নাহ! আজ আর লিখতে ইচছে করছে না , জানিনা আর কোনদিন লিখার সুযোগ পাব কিনা । লেখক : কবিশহিদুল

"অশরীরি” একটি ভৌতিক রহস্য গল্প

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Tuesday, August 16, 2011 at 7:57pm
ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় রাত পৌনে ১টা বাজে । ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে ড্রইং রুমে ফোনটা অনেকক্ষন ধরে বাজছে । এই শীতের রাতে ফোন ধরার কোন ইচ্ছেই শান্তুর নেই । শান্তু মনে মনে ভাবছে যেই ফোন করুক, ভোরে কলার আইডি দেখে কল ব্যাক করা যাবে । শান্তু এখন মনে প্রাণে চাইছে যে, ফোন বাজাটা বন্ধ হয়ে যাক । এমনিতেই শুতে শুতে অনেক রাত হয়ে গেছে, তার উপড়ে ভোরে অফিস ধরতে হবে । এতো রাতে ফোন ধরার কোন মানে হয় না ।
শান্তু কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলে । কিন্তু তবুও ফোনের একঘেয়ে ক্রিং ক্রিং শব্দটা ওর মাথায় গিয়ে লাগে । ও চিৎকার করে বলে উঠে উফ.... অসহ্য ! অসহ্য ।
যে ফোন করেছে সেও যেন নাছড়বান্দা, যেন পণ করে বসে আছে , এ প্রান্ত থেকে কেউ ফোন না ধরা পর্যন্ত রিং করেই যাবে । শান্তু নিজেকে আর কম্বলের নীচে আটকে রাখতে পারে না । যন্ত্রনারে, যন্ত্রনারে বলতে বলতে বিছানা থেকে উঠে যায় । বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে শান্তু মনে মনে ঠিক করে উল্টা পাল্টা ফোন হলে -যেই করুক চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়বে ।
গভীর রাতের ফোন গুলো সাধারনত হয় শোক সংবাদের, নয় তো উল্টা পাল্টা । কেউ মারা গেলে অথবা অসুস্থ্য হলেই আত্মীয়-স্বজনরা গভীর রাতে একে অপরকে ফোন করে । তবে বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে, এ যুগের কোমড়ের নীচে প্যান্ট পরা চেংড়া চেংড়া সব পোলাপান উল্টা পাল্টা ডায়াল খেঁজুরা আলাপ করার জন্য মেয়েদের খুঁজে বেড়ায় ।
শান্তু মনে মনে নিজেকে একরকম তৈরি করেই ড্রইং রুমে দিকে রওনা দেয় । ও ধরেই নিয়েছে যে, এটা উল্টা পাল্টা ফোন ছাড়া আর কিছুই হবে না । ড্রইং রুমের দিকে যেতে যেতে শান্তুর একবার মনে হয়, দেখা যাবে যেই ও ফোনের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে ওমনি ফোন বাজা বন্ধ হয়ে যাবে । কপাল কুচকে ড্রইং রুমের বাতিটা জ্বালিয়ে শান্তু ফোনের সামনে এসে দাঁড়ায় । দুই সোফার মাঝখানে রাখা ফোনটা তখনও বেজে চলেছে । সোফায় বসে, শান্তু রিসিভারটা তুলে নিয়ে বলে - হ্যালো, কে বলছেন ? কয়েক মুহুত কেটে যায় ।
অপর পাশ থেকে কোন শব্দ নেই । শান্তু আবারও বলে - হ্যালো, কে বলছেন ? ওপর পাশে থেকে এবারও কেউ উত্তর দেয় না । এবার শান্তু বিরক্তি আর চেপে রাখতে পারে না - প্রায় চিৎকার করে বলে - আরে কথা বলছেন না কেন ? বেশ কিছুক্ষন চুপ করে কানে রিসিভার ধরে রাখার পর শান্তুর মনে হলো, অপর পাশে কেউ একজন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।
শান্তু আবারও বলে উঠে - হ্যালো ! হ্যালো ! আশ্চর্য কথা বলছেন না কেন ? কথা না বললে এতো রাতে ফোন করেছেন কেন ? যতোসব যন্ত্রনা । ওপর পাশে থেকে আবার ও দীর্ঘশ্বাস ফেরার শব্দ ভেসে এলো । শান্তু আবার বললো - হ্যালো ! হ্যালো ! হঠাৎই ডায়াল টোন ফিরে আসাতে শান্তু রিসিভারটা প্রায় আছড়ে রেখে বলে উঠলো - যতোসব নরকের কীট । শান্তুর চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরি সড়ে গেছে । সোফা থেকে উঠে ওর রুমে যাবার জন্য যেই না মাঝখানে ডাইনিং রুমের দরজায় তাকিয়েছে, ওমনি কয়েক মুহুর্তের জন্য চমকে উঠলো শান্তু - ওর মনে হলো চট করে কে যেন সড়ে গেল । শান্তুর পুরো শরীর হঠাৎ কেঁপে উঠলো । সমস্ত শরীরে একটা শিরশির অনুভুতি ভয়ে গেল । শান্তুর মনে হলো,যে কেউ একজন দরজায় দাড়িয়ে ওকে দেখছিল । ও তাকাতেই যেন চোখের পলকে শূণ্যে একটা অবয়বটা মিলিয়ে গেল । শান্তুর পুরো শরীর ঝিম ঝিম করেছে । কেউ আছে কিনা, ভাল করে দেখার জন্য শান্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইনিং রুমের বাতিটা জ্বেলে দিল । মুর্হুতে পুরো ড্রাইনিং রুমটা আলোকিত হয়ে গেল । ড্রাইনিং টেবিল, চেয়ার, ফ্রিজ, ফ্রিজের উপড় রাখা বিভিন্ন বোতলগুলো যেন ওর দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গাত্নক হাঁসি হাসতে লাগলো ।
এছাড়া আর কোথাও কেউ নেই । নির্ঘাত চোখের ভুল বলে , মন থেকে শান্তু ব্যাপারটা সড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলো । কিন্তু ও’র অবচের্তন মন ব্যাপারটা ভুলতে পারলো না ।
শান্তু ড্রাইনিং টেবিলের নীচটায় একবার তাকিয়ে দেখলো, কেউ লুকিয়ে আছে কিনা , তারপর যেই বাতি নেভাবার জন্য সুইচে হাত দিয়েছে, ঠিক তখনই ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা আবারো বেজে উঠলো । হঠাৎ শব্দে শান্তু প্রায় চমকে উঠলো । বুকটা ধকধক করছে । রাতের বেলায় সব শব্দ বুঝি একটু জোড়ে শোনা যায় ।
শান্তু নিজেকে শান্ত রেখে থু থু করে বুকে দু’বার থুতু দিল ।তারপর ফোনের রিসিভারটা তুলে বললো - হ্যালো ! কে ? এবার অপর পাশে থেকে শো শো শব্দ শোনা গেল । ঝড় হলে দরজা জানালা বন্ধ থাকা ঘরের ভেতর থেকে যে রকম শব্দ শোনা যায়,অনেকটা সে রকম । এ ছাড়া অপর পাশে অন্য কোন শব্দ নেই । শান্তু তবুও বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো -এতো রাতে ফোন করে বিরক্ত করার মানে কি ? কথা বলছেন না কেন ? হ্যালো! হ্যালো! । হঠাৎ ফোনের শো শো শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল । এবং আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলার শব্দ শোনা গেল ।
আরে ব্যাটা ছাগলের মতো খালি খালি দীর্ঘশ্বাস ছাড়রস কেন ? বাপের ব্যাটা হলে কথা বল । অন্যদিক দিয়ে দম বেড় করে দিমু । যতোসব ইডিয়টের দল । খুঁট করে ফোন রেখে দেবার শব্দ হলো ।
শান্তু রাগে গজগজ করতে করতে কলার লিষ্টটা দেখলো ০০ দিয়ে একটা অপরিচিত নাম্বার উঠে আছে । হঠাৎ শান্তুর মনে হলো কোন ওভারসিস কল নাতো ? ওভারসিস কল হলে, নরওয়ে থেকে একমাত্র বড়মামা ফোন করতে পারে । কিন্তু মামা তো জানে মা -বাবা, টুম্পা সবাই সিলেট গেছে । তাহলে ! কে ফোন করলো ? এভাবে গালি দেওয়া কি ঠিক হলো ?
কথাটা চিন্তা করতে করতে বার্থরুম হয়ে, শান্তু ওর ঘরে চলে এলো ।
কম্বল টেনে শুতে শুতে শান্তু ঘড়ি দেখলো , পৌনে দুটো বাজে । মনে মনে দোয়া পড়ে শান্তু ডানপাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো । দুই শান্তু কতোক্ষন ঘুমিয়েছে ঠিক বলতে পারবে না । ঘুম ভাঙ্গল কোন কিছুর খুঁটুর মুঁটুর শব্দে । শান্তু মাথা তুলে শুনতে চেষ্টা করলো শব্দটা কোথা থেকে আসছে । শান্তু ওর ঘরের বাতি জ্বেলেই শুয়েছে । দরজা খোলা থাকায় ড্রাইনিং রুমের ফ্রিজ দুটো স্পস্ট দেখা যাচ্ছে । নরমাল ফ্লিজটার গা ঘেষেই রান্না ঘর - শান্তুর হঠাৎ মনে হলো-রান্না ঘরে কেউ একজন কিছু একটা করছে । খুঁটুর খুঁটুর শব্দটা রান্না ঘরে থেকেই আসছে ।
এতো রাতে কে হতে পারে ? যেহেতু পুরো বাসায় শান্তু একা । তাহলে রান্না ঘরে কে ? শান্তু বেশ ঘাবড়ে গেল । কে আসবে এতো রাতে রান্না ঘরে ? ভূতটুত না তো ? ড্রইং রুমের দরজায় দেখা অবয়বটার কথা মনে পরে গেল শান্তুর । কেমন একটা ভয়ে পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো । শান্তু কম্বলটা গাঁ থেকে সড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো । ভয়টা যাচ্ছে না । শান্তু গলা খাকারি দিয়ে বললো -কে ? কে ওখানে ? প্রায় সঙ্গে সঙ্গে খুঁট খুঁট শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল ।
শান্তু ওর ঘর থেকে পুরোপুরি না বেড় হয়ে রান্না ঘরের দিকে উকি দিল । ঠিক তখনি ওর মনে হলো, রান্না ঘরের দরজা থেকে কেউ একজন হুট করে সড়ে গেল । শান্তু চমকে উঠে বেশ ঘনঘন বলে উঠলো- কে ? কে ?
রান্না ঘরটা বেশ অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না । শান্তু রান্না ঘরে না গিয়ে ড্রইং রুমের দিকে গিয়ে ড্রইং রুমের বাতিটা জ্বালাল । ভয়ে এর পুরো শরীর কাঁপছে । ড্রইং রুমের বাতিতে রান্না ঘরের অন্ধকারটা কিছুটা কেটে গেল । শান্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে রান্না ঘরে উকি দিল । না । কেউ নেই । রান্না ঘরের বাইরে থেকেই শান্তু একটু ঝুকে রান্না ঘরের বাতিটা জ্বালাল । না । আসলেই কেউ নেই । শান্তু বেশ স্বস্থ্যিবোধ করলো । শুধু শুধু ভয় পাবার জন্য নিজেকে শান্তু ধিক্কার দিলো, এই বলে যে, ব্যাটা শান্তু , তুই একটা ভীতুর ডিম। বাবা, মা, আর টুম্পা যদি তোমার এই সাহসের কথা জানতে পারে তা হলে আর দেখতে হবে না । তোমার সাহসের কথা আত্মীয় স্বজনসহ চারিদিকে রাষ্ট্র হয়ে যাবে । রান্না ঘরের বাতিটা নিবিয়ে, শান্তু রান্না ঘরের পাশের বার্থরুমে ঢুকলো পেশাব করার জন্য ।
বাসায় কেউ না থাকলেও শান্তু বার্থরুমের দরজাটা একটু চেপে দিল । পেশাব প্রায় শেষ হয়ে এসেছে এমন সময় ও আবারও খুটুর খুটুর শব্দটা শুনতে পেল । ওর মনে হলো কেউ যেন ইচ্ছে খুটঁ খুঁট খুঁট করে মাত্র তিনটা শব্দটা করলো । এমন করে শব্দটা করলো যেন শান্তু শুনতে পায় ।
ভয়ে আবারও ওর শরীর ঝিম ঝিম করে উঠলো । শান্তু মনে মনে ভাবলো ভূত টুত নাতো ? কিন্তু পরক্ষনেই ভূতের চিন্তাটা মাথা থেকে বাদ দিয়ে ও বার্থরুমেই অপেক্ষা করতে লাগলো আরো শব্দ শুনার জন্য । কিন্তু না, আর কোন শব্দ হলো না । বেশ কিছুক্ষন বার্থরুমে অপেক্ষা করে শান্তু ওর রুমে চলে এলো ।
বার্থরুম থেকে বেড় হয়ে ওর রুমে আসার সময় শান্তু ইচ্ছে করেই রান্না ঘরের দিকে তাকালো না । ওর হঠাৎ কেন যেন মনে হলো, রান্না ঘরের দিকে তাকালে ও ভয়ণ্কর কিছু একটা দেখতে পাবে । ড্রাইনিং এর বাতি না নিভিয়েই শান্তু ওর রুমে চলে এলো । নানান আজে বাজে চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । নিজ বাসায় এমন পরিস্হিতির সন্মুক্ষিন হতে হবে ও কখনও তা কল্পনাও ভাবতে পারেনি ।
যদিও শান্তু নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে, ভয় পাবার কোন কারন নেই । সব হচ্ছে মনের ভুল । কিন্তু তবুও ভয় যাচ্ছে না । বরং একটু একটু করে অজানা ভয়টা ওকে আরো জড়িয়ে ধরে । আসলে ভয় ব্যাপারটাই এমন, একবার কেউ ভয় পেতে শুরু করলে ভয়টা আস্তে আস্তে বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে । শান্তু বিছানায় শুয়ে পুরো ব্যাপারটা বিশ্লেষন করতে শুরু করলো । ওর ধারনা তাতে ভয় ব্যাপারটা চলে যাবে । ওর বিশ্লেষনের প্রদ্বতিটা হচ্ছে নিজের সঙ্গে মনে মনে কথা বলা । শান্তু ওর বিশ্লেষন শুরু করলো -
"মিয়া শান্তু তুমি ভয় পাচ্ছো কেন ?"
"আমি ভয় পাচ্ছি না ।"
"ইমহু....নিজের সঙ্গে মিথ্যা চলে না । ডাক্টার,উকিল আর নিজের সঙ্গে মিথ্যা বলতে নেই মিয়া । তুমি এই মুর্হুতে ভয়ে কেঁচো হয়ে আছো । কি ভয় পাচ্ছো না ?"
"তা, কিছুটা ভয় পাচ্ছি ।"
"কেন পাচ্ছো ?"
"জানিনা ।"
"আবারও মিথ্যা ? ইমহু.... ঝেড়ে কাশ মিয়া । ঝেড়ে কাশ। তারপর টুক করে সত্যটা বলে ফেলো । বিশ্লেষন করতে বসে মিথ্যা বললে তো কোন কাজ হবে না ।"
"আমার মনে হচ্ছে, এই মূহুতে আমি ছাড়াও এ বাসায় কেউ একজন আছে ।" বলতে বলতে শান্তু টের পায় ও’র মধ্যে আমারও সেই জিম ধরানো ব্যাপারটা চলে এসেছে । মাথার পেছনের চুলগুলো আপনা আপনা একটু একটু করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ।
"কে আছে ?"
"আমি জানিনা ?"
"কিভাবে বুঝলে যে তুমি ছাড়াও বাসায় আরো কেউ আছে ?"
"ড্রইং রুম থেকে ফোন রেখে ফেরার সময় মনে হলো - কেউ একজন হুট করে সড়ে গেল । রান্না ঘরের দরজায় ও একই ব্যাপার ঘটলো ।"
"এটা তোমার মনের ভুল । বিজ্ঞান বলেও তো একটা বিষয় আছে মিয়া । হঠাৎ আলো থেকে অন্ধকারে তাকালে এমনটা হতে পারে । সবই আলোর খেলা ।"
"কিন্তু, একটু আগে যে, রান্না ঘর থেকে খুটুর খুটুর শব্দ শুনতে পেলাম । সেটাও কি মনের ভুল ? নাকি সেটাও আলোর খেলা ?"
"না ,সেটা মনের ভুল বা আলোর খেলা না । সেটা হলো ইঁদুরের খেলা । তুমি কি রান্না ঘরে কাউকে দেখতে পেয়েছো ?"
"না ।"
"তাহলে, তো শব্দটা ইদুঁরই করছে, নাকি ?" শান্তু যুক্তিটা একেবারে উড়িয়ে দিতে না পারলেও বললো- "আমাদের বাসায় কোন ইঁদুর নেই ।"
"তুমি কি বিলাই নাকি মিয়া ? যে জান, বাসায় কোন ইঁদুর নাই । ইঁদুরের খবর জানে বিড়াল ।"
"না, তা ঠিক না ।"
"শুন মিয়া, সব তোমার মনের ভুল । আসলে বাসায় তুমি ছাড়া আর কিছুই নাই । সব তোমার মনের ভুল । কম্বলমুড়ী দিয়া ঘুমাও । আমি তা হলে আসি ।"
শান্তু নিজের অজান্তেই মাথা নাড়লো । নিজের সঙ্গে ভয় বিষয়ক বিশ্লেষনে শান্তুর ভয়টা অনেকাংশে কমে যায় । চোখেও ঘুম চলে এসেছে । শান্তু কম্বলটা গলা পর্যন্তটেনে যে ই পাশ ফিরে শুয়েছে, ওমনি কুট করে ড্রাইনিং এর টিউব লাইটা আপনা আপনি নিবে গেল । সঙ্গে সঙ্গে শান্তুর পুরো শরীর ভয়ে আবার ও শক্ত হয়ে গেল । মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটা শিরশির অনুভুতি খেলে গেল । শান্তু চুপ করে বিছানায় পড়ে আছে কি হয় দেখার জন্য । কয়েক মূর্হুত কোন কিছু হলো না । ড্রইং রুম থেকে দেয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দটা শুনা যাচ্ছে । কিছুসময় পর আবারও রান্না ঘর থেকে খুঁটুর মুঁটুর শব্দটা শোনা গেল ।
তবে এবারের শব্দটা শান্তুর মনে হলো আগের চেয়েও একটু বেশি জোড়ে হচ্ছে । যে শব্দটা করছে তার মধ্যে কোন রাখ- ঢাকের ব্যাপার নেই । যেন কে, শব্দ শুনলো আর কে, না শুনলো তাতে তার কিচ্ছুই যায় আসে না । শান্তু কি করবে বুঝতে পারছে না । শব্দের পরিমান একটু একটু করে বাড়ছে । শান্তু হঠাৎ বলে উঠলো- কে রে ?
সঙ্গে সঙ্গে খুঁটুর মুঁটুর শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল । শান্তু কি করবে বুঝতে পারছে না । বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে । মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে বুকে ফুঁ’দিল । কি দোয়া পড়লো নিজেও বুঝলো না । ভয়ের সময় সব তালগোল পাকিয়ে যায় । শান্তু ঠিক করলো, যা হোক হবে ও একদৌড়ে রান্নাঘরে যাবে । আজ দেখতেই হবে রান্না ঘরে কে ? পাজলামোর একটা সীমা আছে । এটা তো দেখছি দুনিয়া ছাড়া ফাজলামো । ভয় পেলেই ভয় । রান্না ঘর থেকে আর কোন শব্দ শুনা গেল না । শান্তু কান খাঁড়া করে বিছানায় আধ শোয়া হয়ে আছে ।
শীতের এই রাতেও ও টের পেল যে, ও দরদর করে ঘামছে । ড্রাইনিংয়ের বাতিটা বারদুয়েক ফুরুত ফুরুত করে জ্বলে উঠে আবারও নীভে গেল । শান্তু ওর ঘরের দরজাটা দিয়ে রান্না ঘরের দিকেই তাকিয়ে আছে ।
কিছুসময় পর আবার শুরু হলো খুঁটুর মুঁটুর শব্দ । শান্তু এক ঝারা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো , এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজলো, সঙ্গে নেবার জন্য । কিন্তু কিছুই পেল না । মনে মনে বিরক্ত হলো, এই ভেবে যে, সময় মতো খুঁজলে কিছু পাওয়া যায় না । শেষমেস আলতো কম্পিউটার টেবিল এর ড্রয়ারটা খুলে, একটা প্লাস পেয়ে সেটাই হাতে নিয়ে ওর ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল । শান্তু এবার নিশ্চত হলো যে, রান্না ঘর থেকে খুঁটুর মুঁটুর শব্দটা আসছে । তবে এখন মনে হচ্ছে শব্দটা বেশ আস্তে আস্তে হচ্ছে ।
শান্তু দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে চারটা বাজে । তারপর খুব আস্তে আস্তে রান্না ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো, রান্না ঘরের ভেতরে উকি দিতেই ও যা দেখলো তাতে ওর পুরো শরীর অবস হয়ে এলো । বিস্ময়ে ওর মনে হলো মাথা ঘুরে পরে যাবে । নিজের চোখকে বিশ্বাষ হচ্ছে না । ও দেখলো রান্না ঘরে একটা মেয়ে বসে একাগ্র মনে পাটাতে কিছু একটা বাটছে । আবচ্ছা আলোয় মেয়েটা মুখটা দেখা যাচ্ছে না । ঘারের দু’পাশে আর পিঠে ঘনকারো চুল গুলো ছড়ানো রয়েছে । পাটার ঘষাতে ঘষাতে খোলা চুলগুলোসহ মেয়েটার মাথাটা সামনে পিছে দুলছে । শান্তু মুখ দিয়ে অর্স্পষ্ট ভাবে বেড় হয়ে এলো - কে ?
সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা শান্তর দিকে ঘুরে তাকায়, মেয়েটার চুলের ফাঁক দিয়ে সাদা ডিমের মতো দু’টো চোখের চাহনী দেখে শান্তু’র ভেতটা পর্যন্তু কেঁপে উঠলো । হিষ্টিরিয়ার রোগীর মতো ও কোন মতে তোতলাতে তোতলাতে প্লাস ধরা হাতটা তুলে ধরে লাফাতে লাফাতে বললো কে ? কে ? শান্তুর পুরো শরীর ওর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে । চোখে ঠিক মতো কিছু দেখছে না । হঠাৎ ওর মনে হলো ওর হার্ট আট্যাক হয়ে যাবে ।
রান্না ঘরে পাটাতে বসা মেয়েটা কোন কথা বললো না , শুধু শান্তুর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় । মেয়েটার মুখটা নীচের দিকে করা কিন্তু চোখ দুটো উল্টো করে শান্তুর দিকে কঠিন চেহারা করে তাকিয়ে আছে । সেই চোখে কোন মনি নেই । কারো চোখ যে, এতো ভয়ন্কর হতে পারে তা শান্তুর কল্পনাতেও ছিল না । মেয়েটার ভয়ন্কর চাহনির কাছে শান্তু হঠাৎ যেন আরো বেশি অসহায় হয়ে পরে । মেয়েটার গাল বেয়ে বেয়ে পচাঁ ,গলা মাংস খসে খসে পরছে । মেয়েটা মুখে পশুর মতো ক্যামন একটা গগগগগগর শব্দ করতেই শান্তু লাফাতে লাফাতে বলে- যা, যা । তারপর হাতে থাকা প্লাসটা মেয়েটার দিকে ছুড়ে মারে । মেয়েটার ভেতর দিয়ে প্লাসটা উড়ে গিয়ে রান্না ঘরের জানালায় লাগাতে জানালার কাঁচগুলো ঝনঝন করে ভেংগে পরে ।
শান্তুর এ ব্যর্থতায় মেয়েটা যেন আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠলো । চোখে মুখে কেমন একটা ভয়ন্কর হাসি ফুঁটিয়ে মুখে ঘঘঘঘঘঘরর শব্দ করে শান্তুর দিকে ছুটে আসে । হুঁট করে শান্তু ছুটে পালানোর জন্য পেছন ঘুরে দৌড় দেবার জন্য ঘুরতেই ওর রুমের দরজার সঙ্গে প্রচন্ড আঘাত খেয়ে ছিটকে পড়লো মাটিতে । এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললো । পরিশেষ : শান্তুর ছুড়ে মারা প্লাসের আঘাতে রান্না ঘরের কাঁচ ঝনঝন শব্দে ভেঙ্গে পরাতে পুরো বিল্ডিয়ের লোকজন জেগে উঠে । নীচ থেকে সিকিউরিটি গার্ডসহ বাড়ীওয়ালা এসে অনেকক্ষন বেল বাজানোর পরেও শান্তু দরজা না খুলায়, সবাই দরজা ভেঙ্গে শান্তুকে মাটিতে পর অবস্থায় পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে । যেখানে সপ্তাহ্ খানেক কোমাতে থাকার পর শান্তু মারা যায় । আর, শান্তুর মৃত্যটা রহস্য হয়ে ঐ বাড়ীর দেয়ালে দেয়ালে হাহাকার করতে থাকে ।

রক্তমাখা কাটা হাত

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, August 17, 2011 at 10:15pm
আমি ভেবেছিলাম আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই ক্লাসের পড়া শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব। রোজ রোজ রাত জাগতে ভাল লাগেনা। তাছাড়া আম্মু ঢাকার বাইরে গেছেন অফিসের কাজে। আম্মুর অনুপস্থিতিতে লক্ষী মেয়ে হয়ে চলাটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু কিভাবে কি হল জানিনা,সারা বিকেল ফেসবুকে গুঁতাগুতি করে যখন পড়ার বই খুললাম তখন বাজে রাত দশটা। গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে পড়তে বসেছি,এমন সময় হঠাৎ করে একটা কাক “কা-কা” করে কেমন যেন আর্তচিৎকার করে উঠল। আমি খুব-ই অবাক হলাম। রাতের বেলা কাক ডাকে,তাও আবার এরকম আর্তচিৎকার করে—সেটা এই প্রথম শুনলাম। যাইহোক,ব্যাপারটাকে বেশি পাত্তা না দিয়ে আমি পড়া শুরু করলাম। মাঝে দুই-এক বার কাক ডেকে আমার পড়ার মনোযোগ নষ্ট করার চেষ্টা করছিল,কিন্তু গুরুত্ব দেইনি। পড়া শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকালাম। এখন ঘুমানো যায়। আড়াইটা বাজে প্রায়। আব্বু মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। আমি পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমের দিকে গেলাম। যদি মুড়ি-টুড়ি কিছু বাসায় থাকে তাহলে উদরপূর্তি করা যাবে! ডাইনিং রুমের টেবিলের উপর রাখা টিনটাতে একটা ঝাঁকি দিলাম। ঠন ঠন করে টিনের মধ্যে শব্দ হল। যতটা জোরে হওয়া উচিত,তার থেকে অনেক জোরে। আমি একটু চমকে ঊঠলাম। টিনটা খুলে দেখলাম ফাঁকা। আশ্চর্য তো! এত জোরে শব্দ হ্‌ওয়ার কারণ কি? আমার কেমন যেন ভয় ভয় লাগল। গা ছম-ছমে একটা ভয়। যেভাবে পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমে গেছিলাম,সেভাবেই আমার নিজের রুমে ফিরে আসলাম। নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর ডিপ ডিপ করে শব্দ হতে লাগল। আমার ঘরটা আজকে অন্যরকম লাগছে। অনেক বেশি ঠান্ডা আর নীরব। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। চারপাশটা কেমন যেন নিকষ কালো হয়ে আছে। অন্যদিন সাধারণত আশেপাশের ফ্ল্যাটগুলোতে অনেক রাত পর্যন্ত আলো জ্বলে। আজকে সেই আলোর চিহ্নমাত্র নেই। এরকম তো কখনো হ্‌ওয়ার কথা না। ভাল করে আবার বাইরে তাকাতেই দেখি শোঁ শোঁ করে একটা শব্দ হচ্ছে। ঝড় হচ্ছে নাকি? বুঝতে পারছিনা। ঝড় হলে বাতাস থাকার কথা। কিন্তু বাইরে বাতাস নেই। শুধু শব্দ। শব্দটা তীব্র হচ্ছে ক্রমাগত। আমি আর বেশি কিছু চিন্তা না করে লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে গেলে দুনিয়ার সব ভয় ঠান্ডা। বিছানায় শুয়ে পড়ার পর দেখি আর ঘুম আসেনা। চুপ করে শুয়ে আছি আর কি সব যেন আগামাথাহীন ভাবে ভাবছি। এমন সময় খাটের নীচ থেকে হঠাৎ হিসহিস শব্দ ভেসে এল! আতঙ্কে আমি একেবারে জমে গেলাম। খাটের নীচে উঁকি দেওয়ার চিন্তাটা মাথায় এসেই আবার মিলিয়ে গেল। এই মুহূর্তে খাটের নীচে উঁকি দেওয়ার মানেই নেই। তার চেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়াই উত্তম। আমি চোখ বন্ধ করলাম।

কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা,ভয়ংকর গোঙ্গানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি নিথর হয়ে শুয়ে গোঙ্গানিটার উৎস খোজার চেষ্টা করছি। একবার মনে হচ্ছে খাটের নীচ থেকে শব্দ আসছে,আর একবার মনে হচ্ছে ড্রেসিং টেবিলের কাছ থেকে। এখন যে রাত কয়টা বাজে সেটাও বুঝতে পারছিনা। বাথরুমে যাওয়া দরকার। কিন্তু ভয়ে বিছানা থেকে ঊঠতে ইচ্ছা করছেনা। ভূত-প্রেতে আমার তেমন বিশ্বাস নেই—আমি আসলে ভাবছি,খাটের নীচে চোর-টোর লুকিয়ে আছে কিনা! গোঙ্গানির শব্দ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আব্বু পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে। একবার ভাবলাম আব্বুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। কিন্তু পরে মনে হল সেটা ঠিক হবেনা। এমনিতেই আব্বুর ব্লাড প্রেসার বেশি থাকে সবসময়। আর তাছাড়া আমি তো ভয়ে বিছানা থেকে নামতেই পারছিনা! হঠাৎ হাতের মধ্যে কিসের যেন স্পর্শ পেলাম,ধাতব কিছু। জোরে চিৎকার দিতে যাব,এমন সময় বুঝতে পারলাম আমার মোবাইলটা নিয়ে শুয়েছি। ধড়ে প্রাণ ফিরে এল যেন। সাথে সাথে বাটন টিপে মোবাইলের টর্চটা জ্বালালাম। টর্চ দিয়ে দেয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িটার দিকে আলো ফেললাম। ঘড়িতে দুইটা চল্লিশ বাজে। এতক্ষণে মাত্র দশ মিনিট পার হয়েছে। আমি মাত্র দশ মিনিট আগে শুয়েছি! সব কিছু কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগে আমার। আমি খুব সাবধানে টর্চের আলো মেঝের দিকে নিলাম। মেঝেতে রক্ত! মেঝেতে জমাট বেঁধে আছে রক্ত! আমি কান্ডজ্ঞানহীন ভাবে বিছানা থেকে ঊঠে ছুটে গিয়ে রুমের দরজার নবে হাত রাখলাম। প্রচন্ড শক্তি দিয়ে নব ঘুরিয়েও দরজা খুলতে পারছিনা। অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে,ঘুমানোর আগে আমি দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়েছি। বিড়বিড় করে সূরা পড়তে পড়তে নিজেকে প্রবোধ দিলাম আসলে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। আমি যা ভাবছি,শুনছি, দেখছি সব মিথ্যা। মনে হয় বেশি বেশি হরর মুভি দেখার ফল। আমি চিৎকার করে আব্বুকে ডাকতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হলনা। ঘরের ভেতর জান্তব গোঙ্গানি বেড়েই চলেছে। সাথে কান ফাটানো শোঁ শোঁ শব্দ। আমি কোন কিছু চিন্তা না করেই ঘরের সাথে লাগোয়া বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। বাথরুমের লাইট অন করেই দেখি আমার পায়ের পাতা রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে! আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা আমার জ্ঞান আছে কি নাই? হঠাৎ চোখে পড়ল বাথরুমের এক কোণে বাক্সে রাখা ফার্ষ্ট ইয়ারে পড়ার জন্য কেনা bones গুলোর দিকে। এক কাজিনকে দেব দেখে সেগুলো আর বিক্রি করা হয়নি। কেমন জীবন্ত হয়ে আছে হাড্ডিগুলো! মনে হচ্ছে এক একটা bones জোড়া লেগে কঙ্কাল হয়ে এক্ষুণি ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার উপর! আমি যথাসম্ভব চিৎকার করে বাথরুম থেকে বের হয়ে আছড়ে পড়লাম লক হয়ে যাওয়া রুমের দরজার উপর! আব্বুউউউউউ বলে চিৎকার ঢেকে গেল জান্তব অট্টহাসিতে! পিছনে ঘুরে দেখি ফার্ষ্ট ইয়ারে পড়ার সুবিধার জন্য সবগুলো হাতের আঙ্গুল জোড়া লাগিয়ে বাঁধানো কঙ্কালের হাত ভেসে আসছে আমার দিকে। কব্জির কাছ থেকে নাই হয়ে যাওয়া অংশটুকু থেকে টপটপ করে ঝরছে রক্ত। আমি আরেকবার চিৎকার দেওয়ার আগেই আমার কন্ঠরোধ করে ধরল কঙ্কালের কাটা হাত...... ............................................................ রাতের বেলা যে কেউ মেয়েটাকে এক নজর দেখলে ভাববে মেয়েটা ভুল করে মেঝেতেই ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু ভোরের আলো যখন মেয়েটার মুখে এসে পড়বে,তখন সবাই দেখবে মৃতা মেয়েটার ঠান্ডা গলার কাছে কালসিটে পড়া,সেখানে রয়েছে সরু একটা হাতের ছাপ! Story By: সরলতা (Last 2 ta story pore ami nijei moja paini, tai delete kore ai story ta post korlam.Asha kori apnader valo lagbe)

।। অমীমাংসিত ।। ঘটনাটা ৩১জুলাইয়ের। জ্বর জ্বর লাগছে সেই গতকাল দুপুর থেকে। তার ওপর প্রচন্ড গরম- কারেন্ট নেই। বিছানায় শুয়ে কেবল এপাশ ওপাশ করছি। ঘেমে বিছানার চাদর ভিজিয়ে ফেলেছি। ফেনারগান খেয়েছিলাম সর্দি আর কাশির জন্য। সারা দুপুর-রাত মাতালের মত বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছে। বার কয়েক মেঝেতে শুয়ে গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছি। মশার কামড় শুরু হতেই আবার বিছানায় মশারির ভেতর ঢুকে পরতে হয়েছে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুম। ওষুধ খেয়ে ঘুমালে স্বপ্নে যা দেখি সব হয় আবোল তাবোল। কিন্তু গতকাল সেরকম দেখিনি। প্রত্যেক ঘুমের ছোট ছোট অংশে অনেকটা খন্ড নাটকের মত স্বপ্ন দেখেছি দুপুর থেকে একেবারে ভোর রাত পর্যন্ত। স্বপ্নটা আবোল তাবোল নয়। খুব স্পষ্ট এবং প্রত্যেকবারই মনে হয়েছে আমি ঐ সময়টায় সে জায়গাতেই ছিলাম। স্বপ্নের প্রথম অংশে আমি একটা মাদ্রাসার পুকুর পাড়ে বসে ছিলাম। যোহরের আযান দেয়নি তখনো। দেবে দেবে এমন সময়। পুকুরের সবুজ শ্যাওলা ভরা পানি দাপিয়ে মাদ্রাসার বাচ্চাগুলো গোসল করছে। আমি সিঁড়িতে বসে দেখছি তা। দৃশ্যটায় কোনো বৈচিত্র নেই। খুব স্বাভাবিক। ওদের পানির ছিটে এসে আমার গায়ে পড়ছে। শ্যাওলার জমাট পানি শার্টটা ভারি করে তুলছে ক্রমশ। এ অবস্থায় হঠাৎ খেয়াল করলাম এতগুলো বাচ্চাদের ভীড়ে পানির মাঝে আরো একজন। দেখতে অনেকটা বাচ্চা ন্যাড়া মেয়েদের মত। কিন্তু গায়ের চামড়া অস্বাভাবিক রকমের ফ্যাকাসে। চুপচাপ গলা পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। এবং আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। কেমন গা শিরশিরে অনুভূতি হল হঠাৎ। আমার প্রথম বারের মত ঘুম ভাঙ্গল। এবং আমি আবিষ্কার করলাম আমার গায়ের শার্টটা সবুজ শ্যাওলায় রীতিমত মেখে আছে।
শার্টের এ দশা হবার পেছনে কোনো যুক্তি সে সময়ে দাঁড় করাতে পারিনি। তারওপর কড়া ঘুমের ওষুধের প্রভাবে যুক্তি-তর্ক-বিশ্লেষণ- কোনোটাই খাটছিল না মাথার ভেতর। লাগছিল সবটাই খুব স্বাভাবিক। মাতালের মত বিছানা থেকে সে সময় উঠে পড়তে হয়েছে, হোটেল থেকে খাবার নিয়ে এসেছে ছেলেটা। সেটা রেখে দিতে হল। খাবার নেয়ার সময় আমার শার্টের এ অবস্থা দেখে কেমন ভাবে যেন তাকাতে লাগল ছেলেটা। কিছু জিজ্ঞেস করল না অবশ্য। বুড়ো মানুষের ভীমরতি ভাবল বোধ হয়। নামায পড়ার জন্য গোসল সেরে নেয়া উচিত। তাই আর বিছানা মুখো হলাম না। যদিও এখনো ঘুমে শরীর অবশ প্রায়।
আমার দ্বিতীয় দফা ঘুম থেকে স্বপ্ন গুলো এতই জীবন্ত হতে লাগল যে আমি একবারও বুঝতে পারিনি এগুলো স্বপ্ন, এবং কোনো ধরনের প্রশ্নও জাগেনি আমার ভেতরে সে সময়। আমি গোসল সেরে নামায পড়ে শুয়ে পড়ি। খেতে ইচ্ছা করছিল না তখন। খালি পেটেই ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়া। ঘুমে মাতালের মত লাগছে। শুয়ে চোখ বন্ধ করা মাত্রই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। প্রায় সাথে সাথে চোখ মেললাম। আমি মাদ্রাসার মসজিদের বারান্দায় শুয়ে আছি। ছোট ছোট বাচ্চারা পাঞ্জাবী পাজামা পরে নামায পড়ছে আমার সামনের দিকে। আমি ওদের পেছন দিকে। কেউ আমাকে খেয়াল করছে না মনে হল। তাকাচ্ছে না কেউ আমার দিকে দেখলাম। আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। চারপাশে তাকালাম। সরাসরি চোখ চলে গেল মসজিদের দান বাক্সের গায়ে লেখাটার ওপর। মসজিদের বারান্দার একটা থামের গায়ে ঝোলানো ওটা। “ হিঙ্গুলী জামিয়া মাদ্রাসা মসজিদ মেহেদীনগর, বারইয়ার হাট, মিরসরাই, চট্টগ্রাম” আমি উঠে দাঁড়ালাম। টলছি মাতালের মত। আস্তে আস্তে হেটে এলাম দান বাক্সটার সামনে। ওখানে আরো একটা নতুন কাগজ টানানো দেখলাম। “অসুস্থ মাদ্রাসা ছাত্রের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন” একটা ছোট নোটিস দেয়া। বোধ হয় কোনো ছাত্র অসুস্থ। আমি মানিব্যাগ বের করে একটা দশ টাকার ছেঁড়া নোট বের করলাম। টাকা ঢোকানোর ছিদ্রটা জ্যাম হয়ে গেছে। ঢোকানো যাচ্ছে না। তালাটা খোলা। এমনি ছিটকিনিটার হুকে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। চুরি টুরির ভয় নেই মনে হয়। আমি তালাটা খুলে ছিটকিনি উঠিয়ে ঢাকনাটা খুললাম। সবে মাত্র টাকাটা ফেলেছি হঠাৎ দেখলাম উঠানে গায়ে চাঁদর মুড়ি দিয়ে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মাথার মেয়েটা এককোনায় বসে রয়েছে! এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! ঝটকা দিয়ে জেগে উঠলাম। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। কারেন্ট আসেনি এখনো। কিন্তু ভীষণ অবাক হলাম একটা জিনিস দেখে। আমার হাতে ছোট একটা তালা! মসজিদের দান বাক্সের সেই তালাটা......... আমার তৃতীয় দফার ঘুমটা হল শেষ বিকেলের দিকে। কারেন্ট এসেছে তখন। ক্যাপাসিটর নষ্ট ওয়ালা ফ্যানটা ঘটর ঘটর করে মাথার ওপর ঘুরছে। হাত দিয়ে ঘোরালে হয়ত আরো জোরেই ঘুরতো। চোখ বোজার সাহতে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। এবারেও নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই মাদ্রাসাটায় আবার চলে এসেছি আমি। এবার বেশ অবাক হয়ে দেখলাম মাদ্রাসার ছোট ছোট বাচ্চাগুলো একটা লাশ নেয়া খাটিয়ার চারপাশে ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। নিচু স্বরে ফোঁপাচ্ছে কেউ। আমি মাথা উঁচিয়ে দেখলাম। কোনো ছোট বাচ্চা মারা গেছে। কাফন দিয়ে পেঁচানো। কেবল মুখটা বার করা। চার পাঁচ বছর হবে বয়েস। জানাযা পড়ানো হবে এখন। মাদ্রাসার হুজুর-আলেমরা সহ সবাই এসে সারি করে দাঁড়িয়ে পরতে বললেন। ঈমাম সাহেব লাশটাকে সামনে রেখে জানাযা পড়ানো শুরু করলেন। আমি একরকম ঘোরের মধ্যেই নিয়ত বেঁধে জানাযায় দাঁড়িয়ে গেলাম। এখানে অনেক লোকজন এসেছে। গ্রামের লোকজন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যে মারা গেছে- তার কেউ বোধ হয় আসেনি। অন্তত আসলে সেটা হাব ভাবেই প্রকাশ পেত। একবার সন্দেহ হল- বাচ্চাটা অনাথ না তো?
লাশটা কবর দেয়ার জন্য মসজিদের পাশের গোরস্থানের দিকে যখন নিয়ে যাচ্ছে খেয়াল করলাম গ্রামের লোক গুলো খুব অবাক মুখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলছে না। আমি নিজেও কিছুটা দ্বিধা দন্দ্বে ভূগছি। সবার সাথে আমিও কবর দিতে এলাম। প্রকৃয়াটা খুব দ্রুত হল। মাটি দেয়ার সময় কয়েক মুঠো মাটি দেয়ার পর যেই আবার মাটি নিয়েছি হাতে- দেখলাম আমার ঠিক সামনে, কবরের অন্য পাশে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মেয়েটা! লোকজনের আড়াল থেকে স্থির চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে...... আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এবং এ দফায় আবিষ্কার করলাম আমার ডান হাতে মুঠো ভরা কাঁচা মাটি!
আমার চতুর্থ ও শেষ স্বপ্নটা দেখি মধ্য রাতে। তখন জ্বর বেড়েছে ভীষণ। থেকে থেকে কাঁশছি। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছি। জ্বরে সারা শরীর কাঁপছে। ঘুম আসতে সময় নিচ্ছিল তাই। কখন ঘুমিয়েছিলাম ঠিক মনে নেই। চোখ মেলে দেখলাম আমি মসজিদের পাশের গোরস্থানটার একটা গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসে আছি। আমার ঠিক সামনেই নতুন বাঁশের বেড়া দেয়া সেই কবর। আকাশে অর্ধেক চাঁদ। সেই চাঁদের আলোয় অস্পষ্ট একটা শব্দ পাচ্ছি গোরস্থানের ভেতর। অনেকটা ছোট বাচ্চার ভয় পাওয়া কান্নার মতশব্দ। কিন্তু শব্দটা কেমন যেন চাপা। আমি ভয় পেলাম হঠাৎ ভীষণ রকমের একটা ভয়। হাত পা সব অসাড় হয়ে আসতে নিল- এমন একটা ভয়...... খুব হাচড়ে পাচড়ে এক রকম উঠে দাঁড়ালাম গাছটা ধরে। চাঁদের আলোয় কবরটার দিকে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে উষ্ণ রক্তের একটা স্রোত বয়ে গেল মেরুদন্ডের ওপর দিয়ে। আমার স্পষ্ট মনে হল কবরটা নিঃশ্বাস নেয়ার সময় যে ভাবে বুক ওঠা নামা করে- সে ভাবে বেশ জোরেই ওঠা নামা করছে! তারপর লাগল কবরের মাটিগুলো থেকে থেকে লাফিয়ে উঠে নেমে যাচ্ছে! যেন নিচ থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে বের হতে চাচ্ছে! সেই সাথে ছোট বাচ্চার ভয় পাওয়া গুমোট-চাপা কন্ঠস্বর! আমি এত ভয় পেলাম যে দ্বিগ্বীদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে গোরস্থানের মাঝ দিয়ে মসজিদের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। তার মাঝেই দেখলাম সেই ন্যাড়া মাথার মেয়েটা একটা কোঁদাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে একটা গাছের নিচে। হাত তুলে সেই নতুন কবরটার দিকে যেতে বলছে ইসারায় আমাকে। হাতের কোঁদালটা দেখিয়ে বোঝাচ্ছে কবরটা খোঁড়ার জন্য আমাকে!
আমি প্রচন্ড ভয়ে তখন সংজ্ঞাহীন প্রায়। পেছন থেকে আসা কবরের ধুপ ধুপ শব্দটা তাড়া করছে যেন আমাকে.........
আমি জেগে উঠি ফযরের আযানের মুহূর্তে। আমার সারা গায়ে ধূলো বালি, মাটি আর নানান জায়গায় ছিলে গেছে কাঁটার ঘষা খেয়ে...... বিমূঢ়ের মত বসে রইলাম আমি......

আমি পেশায় সরকারী চাকুরীজীবি। টাইপিস্টের কাজ করি। নিজের চলে না বলে বিয়ে থা আর করিনি। পঞ্চাশের মত বয়স হয়েছে বলে এখন আর ওসব করার চিন্তাও মাথায় আনিনা। একা একা থাকি বলে নানান রোগে শোকে ভূগি। ছোট বেলা থেকে এক ফুফুর কাছে মানুষ হয়েছি। তাকে টুকটাক সাহায্য করি এখন। এছাড়া আমার জগৎ খুব সীমাবদ্ধ। সে রাতের স্বপ্ন গুলো নিয়ে খুব যে ব্যস্ত হয়ে পরব এমন মানুষও নই আমি। একা থাকি বলে হয়ত মনের ভূলে এসব দেখেছি। শার্ট, তালা, মাটি- এসবের ব্যাখ্যা মনের ভূল বলেই হয়ত চালিয়ে দিয়ে ভূলে যেতাম পুর ব্যাপারটা। কিন্তু নিছক স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিতে পারিনি আমি সেটাকে।
৩১ জুলাইয়ের বিচিত্র ঘটনা গুলো আমার পক্ষে ভূলে যাওয়া সম্ভব হল না পত্রিকায় একটা লেখা দেখে। ৩রা জুনের একটা পত্রিকায় “হিঙ্গুলী মাদ্রাসা গোরস্থানে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে জীবন্ত কবর দেয়া হয় ভূল বশত” শিরোনামে একটা আর্টিক্যাল চোখে পড়ে আমার। সব ওলোট পালট লাগতে শুরু করে তখন। কারণ সেখানে বলা হয়েছেঃ

৩১ জুলাই বিকালে জুবায়ের আলী নামের এক ছোট পাঁচ বছরের মাদ্রাসা ছাত্র মারা যায়। স্থানীয় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করার পর বাদ আসর তাকে মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। পরদিন ভোরবেলা ফযরের নামায শেষে ঈমাম সাহেব কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দেখেন কবরের মাটি সরে গেছে অনেক। যেন কেউ ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেয়েছে। তাঁর সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন দিয়ে কবর খোঁড়ানো হয় এবং সবাই বাক রুদ্ধ হয়ে দেখে কবরের কোনায় সাদা কাফন পরে ছেলেটা বাঁকা হয়ে বসে আছে। তার বসে থাকার ভঙ্গিটা খুব অস্বাভাবিক। কবরের দেয়াল জুরে ছেলেটার আঙ্গুলের আচোঁড়ের চিহ্ন। শ্বাস নিতে না পেরে দেয়াল খাঁমচে বের হবার চেষ্টা করেছিল বোঝা যায়। চোখ গুলো কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রায়। পা দিয়ে কবরের মেঝে ঘষে লম্বা লম্বা খাঁজ করে মাটি উঠিয়ে ফেলেছে ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণায়! আমি এই ঘটনা জানার পর টাকাপয়সা জমিয়ে সেই গ্রামে গিয়েছিলাম বেশ কিছুদিন পর। সেখানে গিয়ে আমি আরো কিছু ধাঁধাঁর মাঝে পড়ে যাই। কিন্তু আজ সেটা আর লিখতে ইচ্ছা করছে না।

সংগ্রহ করেছেনঃ Rudro Aimel

মেইল আইডিঃ rudroaimel@yahoo.com

।। অমীমাংসিত – দ্বিতীয় পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 12, 2011 at 11:21pm
চিনকী আস্তানা স্টেশনটা বেশ নির্জন। যখন ওখানে ট্রেনটা গিয়ে থামল তখন রাত সাড়ে দশটার মত বাজে। বাহিরে ঘুট ঘুটে অন্ধকার- তার মাঝে টিপটিপিয়ে বৃষ্টি। ছাতা আনা হয়নি। ব্যাগ হাতে প্লাটফর্মে নামার সাথে সাথে ভেজা শুরু করলাম। লোকাল ট্রেনে করে এসেছি বলে স্টেশনের বৃষ্টিতে নামা মাত্র মনে হল একটু শান্তি পেলাম। এতক্ষণ ট্রেনের টয়লেট বিহীন কামড়ায় মুরগীর খাঁচার মত অবস্থায় ছিলাম। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যে বেশি সেটা লোকাল ট্রেনে উঠলেই বোঝা যায়। ঘামে পাঞ্জাবী পিঠের সাথে লেগে গেছে। বৃষ্টির ঠান্ডা ফোঁটা গুলো গায়ে লাগতেই মনে হচ্ছে শান্তিতে ঘুম এসে যাবে। ব্যাগ হাতে হাটতে লাগলাম। হিঙ্গুলী গ্রামটা এখান থেকে আরো মাইল খানেক উত্তর-পূর্ব দিকে। এত রাতে সেখানে যাওয়াটা সামান্য ঝামেলার মনে হল। একে তো ইলেক্ট্রিসিটি নেই এ অঞ্চলটায়, তার ওপর রার দশটার পর রিক্সা-ভ্যান কোনোটাই যাবে না।
স্টেশন মাষ্টার আক্ষরিক অর্থেই মাছি মারা কেরানী গোছের লোক। দশটা প্রশ্ন করার পর একটা জবাব দেন। যাওবা দেন সেটা কাজে লাগার মত না। মাষ্টার সাহেব ম্যাচের কাঠি দিয়ে খুব যত্নের সাথে কান খোঁচাচ্ছিলেন আমি যখন তার অফিসে ঢুকি। কেবল একটা হারিকেন জ্বলেছে। ময়লা হারিকেনের তেল যাই যাই অবস্থা, আলোই নেই।
“আসসালামুয়ালাইকুম, ভাই- হিঙ্গুলী গ্রামটায় যাওয়ার নিয়মটা বলতে পারবেন? এখানের কোনো রিক্সা-ভ্যান যাবে না বলছে।”
“উঁ?”
“হিঙ্গুলী যাওয়ার ব্যবস্থাটা কি?” ভাবলাম শুনতে পায়নি, তাই আবার বললাম।
“ঊঁ?” আবারো কোনো জবাব না দিয়ে বিদঘূটে শব্দ করলেন।
“ভাই আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।” সামান্য উষ্ণ গলায় বললাম।
কান চুলকাতে চুলকাতেই বেদম জোরে কেঁশে উঠলেন মাষ্টার সাহেব। ম্যাচের বাঙ্গা কাঠিটা চোখের সামনে এনে বিরক্ত চোখে তাকালেন আমার দিকে। বাকি অংশটা কানের ভেতরে আটকা পড়েছে বোধ হয়। দেখলাম মাথা একপাশে কাত করে বার কয়েক ঝাঁকি দিলেন।
আমি গলা খাকারি দিলাম, “ ভাই? হিঙ্গুলী.........”
হাত তুলে থামিয়ে দিলেন, “ যে কোনো ভ্যান ধরে উইঠা যান, লয়া যাইবো। এখানে খাঁড়ায়া লাব নাই।” একটা চিমটা বের করে কানের কাঠি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলেন। বোঝাই গেল ভাঙ্গা কাঠি প্রায়ই কানে আটকা পড়ে তার, এবং সেটা উদ্ধার কাজেও সিদ্ধ হস্ত। কারণ আমি থাকা অবস্থাতেই কাঠিটা টেনে বের করলেন। মুখে প্রশান্তির হাসি। আমি বেরিয়ে এলাম বিরক্ত হয়ে।
হাত ঘড়িতে রাত এগারোটা দশ বাজে। বৃষ্টির পরিমান বেড়েছে আরো অনেক। এ বয়সে ভিজলে জ্বর আসতে সময় নেবে না। হিঙ্গুলী গ্রামটায় পৌছানো জরুরী। আগে যদি বুঝতাম এত রাত হবে, তাহলে আরো সকাল সকাল করে বের হতাম। ভ্যান-রিক্সা কোনোটাকেই রাজী করাতে পারলাম না শত চেষ্টার পরেও। শেষে মহা বিরক্ত হয়ে স্টেশনের একটা বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম সকাল হবার। এর বেশি আর কিছু করার নেই আমার।
রাত যত গভীর হয় স্টেশন তত বিচিত্র ভাবে জেগে উঠতে থাকে। গাঁজা আর জুয়ার আড্ডা বসল সামনে একটা প্লাটফর্মে। ট্রেন আসলে স্টেশনটা জীবন্ত হয়, নয়ত মরার মত পড়ে থাকে।
গাঁজার আড্ডায় গান ধরেছে কয়েকজন, তাস খেলা চলছে। আমি দেখছি তা...... এক সময় ঝিমানির মত শুরু হল...... গাঁজার আড্ডার গানটা কানে বাজছে...... ক্রমশ চোখের পাতা ভারি হয়ে আসতে লাগল..... দূরে কোথাও ঘন্টা বাজছে...... অদ্ভূত শোনাছে শব্দটা... মনে হচ্ছে অনেক লোকজন কথা বলছে... তার মাঝ দিয়ে গানটা ঘুর পাঁক খাচ্ছে মাথার ভেতর...
“বলেছিলে আমার হবে
মন দিয়াছি এই ভেবে
সাক্ষি কেউ ছিলনা সে সময়......” চোখ মেললাম যখন- তখন প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অবাক হয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই গোরস্থানের গাছটার নিচে! যেখানে নিজেকে পেয়েছিলাম জুলাইয়ের ৩১ তারিখে! ধরমরিয়ে উঠে বসলাম। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তবে গোরস্থানের ভেতর দিকে চার্জার লাইটের আলো। আমি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম। আমার ঠিক সামনেই আবছা ভাবে সেই বাচ্চা ছেলেটার কবরের অবয়বটা বোঝা যাচ্ছে। আমার হৃদপিন্ডটা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। চার্জারের আলো আসছে আরো ভেতরের দিক থেকে। আমি প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে দ্বিধান্বিত পায়ে হাটতে লাগলাম আলোটার দিকে। পায়ের নিচে প্যাঁচ প্যাঁচে কাঁদা। বার কয়েক পুরনো কবরে পা ঢুকে যেতে যেতে সামলে নিলাম। গাছ গুলোর অন্য পাশ থেকে আলো আসছে, তাতে বেশ কিছু মানুষকে দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা করছে সবাই। সবার হাতে ছাতা, ছাতার জন্য বোঝা যাচ্ছে না কি করছে তারা। আমি এগোতে এগোতে টের পেলাম অসম্ভব একটা ভয় ভেতরে দানা বাধতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে যতই এগোচ্ছি, ভয়টা ততই বাড়ছে...... চার্জারের আলো ভেবেছিলাম যেটাকে এতক্ষণ- কাছে আসায় স্পষ্ট হল, হ্যাজাক বাতি। সাদা কাপড় পরা বেশ কিছু লোক ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
আমি আর হাটতে পারছিলাম না, একটা গাছে হেলান দিয়ে কোনো মতে দাঁড়ালাম। অবাক হয়ে দেখলাম একটা লাশের দাফন কাজ চলছে। দুজন লোক একটা নতুন খোঁড়া কবরে নেমেছে। ওপর থেকে কাফন পরা লাশটা নামিয়ে ওদের হাতে দিচ্ছে লোক গুলো। কেউ একজন জোরে জোরে দরুদ পাঠ করছে সুর করে। আমি টলতে টলতে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। ছাতা হাতে ওরা কেউই আমাকে লক্ষ করছে না। হ্যাজাকের আলোয় দেখলাম কবরের ভেতর জমে ওঠা পানির মাঝে কাফন পরা লাশটাকে উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে নামাচ্ছে লোক দুটো। লাশটার দৈর্ঘ্য দেখেই অনুমান করলাম বয়ষ্ক, বড় মানুষের লাশ। কবরের পানিতে রাখা মাত্র কাফন ভিজে অনেকখানি ডুবে গেল লাশটা। আমার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। ভয়টা ক্রমশ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে শুধুই। তীব্র একটা ভয়।
কেউ একজন বলল, “লাশের মুখ শেষবারের মতন দেখবেন কেউ? নাইলে বাঁশ লাগায় দিক।”
দেখলাম কেউ মুখ দেখার মত আগ্রহ দেখাল না। লোক দুটো কবরের ওপর আড়া আড়ি বাঁশ দেয়া শুরু করল। দ্রুত চাটাই বিছিয়ে ঢেকে ফেলল কবরের ওপরটা। বৃষ্টিতে ভিজে মাটি দেয়া শুরু করল লোক গুলো।
আমি বসে পড়েছি মাটিতে। কেউ লক্ষ করছে না আমাকে। কিন্তু হ্যাজাকের আলোয় স্পষত দেখতে পেলাম কবরের অন্য পাশে ছাতা ওয়ালা লোক গুলোর ভীড়ে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে! শীতল শান্ত চোখ দুটোয় ক্রুড়ো একটা দৃষ্টি। সোজা তাকিয়ে আছে আমার দিকে...... তখনি মাথার ভেতর তীব্র ব্যথা শুরু হল আমার! মনে হল কেউ যেন আমার মগজটা ধারাল ক্ষুর দিয়ে পোঁচ দিচ্ছে...... ঝটকা দিয়ে জেগে উঠলাম। আমার দু পা আর প্যান্টের নিচের দিক কাঁদায় মেখে আছে! ঘড়িতে দেখলাম- রাত আড়াইটা বাজে। ট্রেন এসেছে স্টেশনে। জীবন্ত মনে হচ্ছে রাতের মৃত এ স্টেশনকে এখন। কতক্ষন জীবন্ত থাকবে? আমার হিঙ্গুলী গ্রামে আসাটা যে বিরাট একটা ধাক্কা দিয়ে শুরু হবে জানা ছিল না। আমি পরদিন সকাল বেলা একটা চা দোকানে পাউরূটি আর কলা খেয়ে রওনা দিলাম ভ্যানে করে হিঙ্গুলীর দিকে। তবে তার আগে ওয়েটিং রুমে গিয়ে কাঁদা মাখা প্যান্টটা বদলে নিলাম। সকালে ভ্যান ওয়ালারা কেউ ‘না’ বলল না, বলা মাত্রই আমাকে নিয়ে রওনা দিল। হিঙ্গুলী যাওয়ার পথটা পাঁকা না, কাঁচা রাস্তা। তারওপর বর্ষা কাল বলে রাস্তা ঘাটের করুণ অবস্থা। ভ্যান একেকবার এমন কাত হয়ে যাচ্ছে যে মনে হয় তখন সোজা গিয়ে কাঁদার ওপর পড়বো!
হিঙ্গুলী প্রামে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একটা ছোট খাট ধাক্কার মত খেলাম। আমি শৈশবে যে গ্রামটায় মানুষ হয়েছিলাম অবিকল সেই রকম গ্রাম এটা। ধাক্কাটা যে কারণে খেলাম তা হল- আমি যেখানে, যে রকম বাড়ি, গাছপালা, সাঁকো, রাস্তা দেখেছি আমার শৈশবের গ্রামে- এখানে ঠিক সে রকম- হুবহু এক! কোথাও কোনো অমিল নেই! অবাক হবার কারণটা হল আমার শৈশবের গ্রামটা দিনাজপুরে! আর এটা চট্টগ্রামে।
“হিঙ্গুলী” গ্রামটা আমার জন্য বেশ কিছু রহস্য নিয়ে অপেক্ষা করছিল। তার প্রথমটার সাথে সাক্ষাত হল গ্রামে ঢোকা মাত্রই। হিঙ্গুলী মাদ্রাসার মোয়াজ্জ্বেনের সঙ্গে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে গেল গ্রামে ঢুকেই। বাজারে যাচ্ছিলেন সম্ভবত। এখানে থাকার মত কোনো হোটেল কিম্বা বোর্ডিং আছে নাকি আর মাদ্রাসাটা কোন দিকে তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য আমি ভ্যান থেকে সবে নেমেছি - আমাকে নামতে দেখেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলেন! কিছু বোঝার আগেই চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পালালো! আমি ব্যাপারটা বোঝার জন্য কাউকে যে জিজ্ঞেস করব তা সম্ভব হল না- গ্রামের কেউ আমাকে যে’ই দেখছে এখন- সবাই ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে!
আমি ভীষণ অবাক হলাম। এক রকম হতভম্ব! আমাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে এমন? ভ্যান ওয়ালা ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ ফালাইলো ক্যান বাই?”
আমি বিমূঢ়ের মত মাথা নাড়ালাম, “জানি না, আপনি মাদ্রাসায় চলেন।”
আমি ভ্যান ওয়ালাকে নিয়ে মাদ্রাসাটা খঁজে বের করলাম। আমার স্বপ্নে দেখা মাদ্রাসাটার সঙ্গে খুব একটা মিল নেই। পুকুরটা বেশ ছোট, পানিও পরিষ্কার। শ্যাওলা নেই। তবে মিলও রয়েছে। মসজিদের সেই বারান্দা অবিকল এক। এখানীসেই আমি প্রথম রহস্যটার সাথে জড়িয়ে পড়ি। মাদ্রাসার প্রধান ঈমাম মোহাম্মদ ইদ্রীস শেখের সঙ্গে পরিচয় যখন হল তিনি আমাকে দেখে অবাক হলেন ঠিকি, কিন্তু ভয় পেলেন না। মাদ্রাসার শত শত ছাত্র ততক্ষণে আমাকে দেখতে চলে এসেছে। মসজিদের বারান্দায় বসে আমি প্রথম ইদ্রীস সাহেবের কাছে জানতে পারলাম- আমি “মোঃ নজরুল হোসেন” গত চার দিন ধরে এই হিঙ্গুলী মাদ্রাসায় ছিলাম! এবং গত কাল বিকেলে আমার মৃত্যু হয়েছে- মৃত্যুর আগে আমি বলে গেছি এখানের গোরস্থানে আমাকে কবর দিতে। এবং আমার ফুফুর জন্য চিঠিও লিখে গেছি আমি! গত রাতে আমাকে তারা সবাই কবর দিয়েছে গোরস্থানে!
আমি মসজিদের বারান্দায় বসে ঘোরের মধ্যে সেই চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়লাম যেটা ‘আমি’ ঈমাম সাহেবকে দিয়েছি আমার ফুফুকে দিতে! আমার’ই হাতের লেখা! আমি কাঁপতে শুরু করলাম মৃগী রোগীর মত। সে অবস্থাতেই আমি কবরটা খুঁড়তে অনুরোধ করলাম ঈমাম সাহেবকে।
বলা বাহুল্য আমি বলার আগেই কবর খোঁড়া শুরু হয়ে গেছে। মোয়াজ্জ্বেন সহ আরো কয়েকজন লোক কবরটা খুঁড়লো। আমি নিজে সেখানে যাওয়ার শক্তি পাচ্ছিলাম না। তাই ঈমাম সাহেব আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন সেখানে। এটা সেই জায়গা, গত কাল রাতে স্বপ্নে যেখানে আমি কবর দিতে দেখেছিলাম কাউকে!
দিনের বেলা সূর্যের আলোতেও আমার ভয়ংকর একটা অশুভ ভয় করছিল কবরটার পাশে দাঁড়িয়ে। কাঁদা আর পানিতে অর্ধেক ডুবে আছে কাফন জড়ানো লাশটা। কবরের ভেতর অনেক পানি। একজন লোক নামল কবরে মুখ দেখানোর জন্য।
মুখের কাপড় সরানোর পর যাকে দেখলাম- আয়নায় একে আমি বহুবার দেখেছি- আমি, মোঃ নজরুল হোসেন। কাঁদা লেগে থাকলেও না চেনার কোনো কারণ নেই...... আধ খোলা চোখে পৃথিবী দেখছে কবরের পানিতে ভাসতে ভাসতে।
নিজের পায়ের ওপর ভর টিকিয়ে রাখতে পারলাম না আর...... এ যদি নজরুল হোসেন হয়, তাহলে আমি কে? আর আমিই যদি আসল জন হয়ে থাকি- তবে এ কে?

আমি সেদিন গোরস্থানে মৃগী রোগীর মত কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারাই। ঈমাম সাহেব উপায় না দেখে আমাকে মস্তান নগর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে আমি প্রচন্ড জ্বরের মাঝে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তিন দিন ছিলাম। অবশ্য টানা তিন দিন অজ্ঞান থাকিনি। মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরতো। কিন্তু বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারতাম না। প্রচন্ড ভয় আর জ্বরের ঘোরে বার বার জ্ঞান হারাতাম। বলা বাহুল্য এই দীর্ঘ সময়ে আমি স্বপ্ন দেখতাম ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবে। কিন্তু প্রতিটাই একটার সাথে আরেকটা যুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হল এই দীর্ঘ সময়ে আমি নাকি কিছুই খাইনি।
আমার ঠিক মনে নেই কখন স্বপ্ন দেখা শুরু করি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। কেবল মনে আছে প্রথমবার হঠাৎ করেই আমার নাকে মুখে পানি ঢোকা শুরু করে। মাথায় যেতেই ভীষণ জোরে কেঁশে উঠে চোখ মেলে তাকাই। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে! আমি পানির ভেতরে রয়েছি অর্ধেক! ভেসে আছি পানিতে! অবাক হয়ে চারপাশে হাত বুলাতে লাগলাম। নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাটু পানি জমে থাকা একটা ছোট ঘরের ভেতর। সেটা যে একটা কবর বুঝতে সময় লাগল আমার। জায়গাটা কবর কারণ মাথার ওপরে হাত দিতেই বুঝলাম শক্ত বাঁশের টুকরো দিয়ে ঢেকে দেয়া। চার কোনা আয়তাকার ছোট একটা ঘরের মত। হাটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছি। উঠে দাঁড়ানো যায় না, মাথা লেগে যায় বাঁশের ছাদের সাথে। ওপরে মাটি মাটি দিয়ে ঢেকে থাকায় সমস্ত গায়ের শক্তি দিয়েও ধাক্কা দিয়ে বাঁশের পড়ত গুলো সরাতে পারলাম না। তবে অবাক হবার বিষয় হলঃ আমি এক সময় খেয়াল করলাম আমার গায়ে কাপড় বলতে একটুকরো থান কাপড়। কি রঙের সেটা বুঝতে না পারলেও বুঝতে পারলাম কাপড়টা বেস লম্বা।
আমি অজানা একটা ভয় পেতে শুরু করলাম। কারণ যতই সময় যেতে লাগলো, মনে হল আমি দম নিতে পারছি না...... বাতাস্র জন্য ফুসফুসটা আঁকু পাঁকু করা শুরু করেছে...... আমি পাগলের মত মাথার ওপরের ছাদটা ধাক্কা মেরে ওঠাতে চাইলাম। কিন্তু একটু নড়েই স্থির হয়ে গেল। আমি আবারও ধাক্কা দিতে লাগলাম। শক্তি কমে আসছে শরীরের...... ধাক্কা দিয়ে একচুলও নড়াতে পারছি না আর। মনে হল কবরের ওপর খুব ভারী কিছু একটা জিনিস চাপিয়ে দেয়া হল...... আমার ভয়টা দ্রুত আতংকে রুপ নেয়া শুরু করল। আমি অক্সিজেনের জন্য দেয়াল খাঁমচাতে লাগলাম, আচঁড়াতে লাগলাম পাগলের মত...পানিতে পা ছুড়তে লাগলাম পশুর মত...... তার মাঝেই খেয়াল করলাম এই ঘুটঘুটে অন্ধকার কবরের অন্য মাথায় কেউ একজন বসে আছে...... কেবল অবয়বটা বোঝা যায়...... অন্ধকারেও বুঝতে পারলাম সেই ন্যাড় ফ্যাকাসে মেয়েটা জ্বলন্ত অঙ্গার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্থির হয়ে বসে আছে কবরের পানির মাঝে...... আমি জান্তব একটা চিৎকার করে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য দেয়াল খাঁমচাতে লাগলাম। কিন্তু ফুসফুসের বাতাস ফুরিয়ে এসেছে...... ধীরে ধীরে পানিতে ডুবতে শুরু করেছি... এখনো মেয়েটা আমার দিকে স্থির চোখে চেয়ে আছে...... গভীর রাতে জ্ঞান ফিরল আমার। হাসপাতালের সব বাতি নেভানো। তারপরও বুঝতে পারলাম আমার সারা শরীর কাঁদায় লেপ্টে আছে। আমার নাকে মুখে কাঁদা পানি...... কেঁশে উঠলাম। মাথা জ্বালা করছে প্রচন্ড। পাগলের মত বুক ভরে শ্বাস নিতে পাগলাম। আহা! বেঁচে থাকাটা কত অদ্ভূত! আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসলাম। আমি এখন জানি- হিঙ্গুলী মাদ্রাসা গোরস্থানে কাল সকালে আবারো খোঁড়া হবে “মোঃ নজরুল হোসেন”-এর কবরটা। কারণ সেটার ওপর থেকে মাটি সরে গেছে অনেকখানি। আর অনেকেই একটা চিৎকার শুনেছে......
আমি শুয়ে পড়লাম ধীরে ধীরে। ভয় লাগছে ভীষণ। কেন যেন মনে হচ্ছে হাসপাতালের অন্ধকার করিডোরে, জানালার পর্দার ওপাশ থেকে সেই ন্যাড়া-ফ্যাকাসে মেয়েটা শীতল শান্ত চোখে আমার প্রতিটা নড়াচড়া লক্ষ করছে......
আমি তখনো জানতাম না আমার জন্য আরো কিছু অপেক্ষা করছে......
লেখকের নামঃ- মোঃ ফরহাদ চৌধুরী (শিহাব)
ফেসবুক আই ডিঃ- Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আই ডিঃ- Rudroaimel@yahoo.com

।। অমীমাংসিত – ০৩ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 17, 2011 at 10:36pm
আমি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারলাম না। জ্বরটা লেগেই থাকল। জ্বরের কাঁপুনি নিয়েই হাসপাতাল ছাড়লাম। সাথে টাকা পয়সা তেমন ছিল না যে আরো কিছুদিন হাসপাতাল-ওষুধের খরচ চালাবো। ঈমাম ইদ্রীস শেখের কাছে আমি কৃতজ্ঞ- কারণ শেষের দিকের প্রায় সব খরচ’ই উওনি দিয়েছিলেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে ওখানে থাকাটাও সম্ভব ছিল না। টাকা পয়সার টান পড়তেই বাধ্য হলাম শহরে ফিরে আসতে। অবশ্য চলে আসার আগে মাদ্রাসায় একদিন ছিলাম। ইদ্রীস সাহেবের সঙ্গে সে সময়টায় আমার অনেক কথা হল। সে সময় তাঁকে জানালাম এখানে আমার আসার কারণ সম্পর্কে। যদিও তিনি আগে থেকেই জানেন আমি কেন এসেছি এখানে। কারণ অন্য “নজরুল হোসেন” তাঁকে নাকি সব বলেছিল। “সে” স্বপ্ন দেখে তার সত্যতা যাচাই করতে এসেছিল। তবে ঈমাম সাহেব সে সময় তাকে যা বলেছিলেন- তা আমি জানতাম না, তাই নতুন করে আমাকে তিনি বলা শুরু করলেন। সে রাতে খাওয়ার পর ঈমাম ইদ্রীস শেখ মসজিদের বারান্দায় আমার সাথে বসে অনেক গল্প করলেন। চারপাশে নিরেট ঘন অন্ধকার। কেবল বারান্দায় একটা হারিকেন জ্বলছে। মাদ্রাসার ঘর গুলোর দু-একটা থেকে ছাত্রদের আরবী পড়ার মৃদু গুঞ্জন ভেসে আসছে। বাকিরা ঘুমিয়ে পড়েছে। আলো নেই সে সব ঘরে। রাত তখন সাড়ে এগারোটার মত। একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে, এখন আর হচ্ছে না, তবে হালকা বাতাস এদিক সেদিক থেকে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টির ছটা উড়িয়ে এনে গায়ে ফেলছে। ইদ্রীস সাহেব মুখে সবে পান পুড়েছেন। বারান্দায় হেলান দিলেন দেয়ালে। আমার দিকে তাকিয়ে সমবেদনার সুরে বললেন, “আমি বুঝতে পারতেছি আপনে অনেক পেরেশানির মধ্যে আছেন। আল্লাহ পাক কাকে কখন কি পরীক্ষায় ফালায়- তিনিই কইতে পারেন কেবল।” আমি নড়ে চড়ে বসলাম। শীত লাগছে। গায়ে একটা চাঁদর দিয়েও শীতে পোষ মানছে না। জ্বরটা ভাল মত জাঁকিয়ে বসেছে হাঁড়ের ভেতর। সামান্য দ্বিধা মেশানো গলায় বললাম, “আমি এখনো বুঝতে পারছি না আমার পরিচয়ে কে এসেছিল এখানে? আর সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মেয়েটাই বা কে? কেন আমি বার বার তাকে দেখি? গত পঞ্চাশ বছরেও আমার এরকম সমস্যা ছিল না- নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ আমি। কারো ক্ষতিও করিনি কখনো।” ঈমাম সাহেব সঙ্গে সঙ্গে কিছু বললেন না। দীর্ঘ একটা গুমোট নীরবতা। বৃষ্টি থামায় দু-একটা ঝিঁ ঝিঁ পোঁকা এখান-ওখান থেকে চাপা স্বরে ডাকা শুরু করেছে। আমি বাহিরের ঘুট ঘুটে কালি গুলে দেয়া অন্ধকারের মাঝ দিয়ে গোরস্থানের দিকে তাকালাম। কিছু বোঝা যায় না। শুধু অদ্ভূত একটা ভয় উঁকি দেয় মনের ভেতর। মিলিয়ে যায় না সেটা। ঈমাম সাহেব কেঁশে পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করলেন, “আপনে জিজ্ঞাস করছিলেন জুবায়ের আলীর কোনো বোইন আছিল নাকি?”
“আমি?” অবাক হয়ে তাকাল, “কখন?”
“না মানে আপনে না, আপনের আগের জন।”
“কি বলেছিলেন জবাবে?”
“কেউ ছিল না। জুবায়ের এতিম ছেলে। মা, বাপ, ভাই-বোইন কেউ আছিল না। তিন বৎসর বয়স যখন তখন থেইকা এই মাদ্রাসায় ছিল। বলতে পারেন এই মাদ্রাসার ছেলে।” একটু বিষাদ মেশানো কন্ঠে বললেন।
আমি কিছু বললাম না। চুপ হয়ে বসে আছি।
ইদ্রীস সাহেব আপন মনেই বলতে লাগলেন, “জুবায়ের খুবই শান্ত কিসিমের ছেলে আছিল। একদম কথা বার্তা বলত না। এই পাঁচ বছর বয়সেই পুরা অর্ধেক কুরান মুখস্ত করে ফেলছিল!”
আনমনেই বললাম, “তাই নাকি?”
“হ্যা ভাই। খুবই ভাল স্বরণ শক্তি আছিল ছেলেটার। আজব একটা খেয়াল আছিল ওর। সারা দিন রাত গোরস্থানের ভিতর গিয়া নতুন কবরের নাম, তারিখ, সাল- মুখস্ত করত।”
আমি অন্য মনষ্ক হয়ে পড়েছিলাম। কথাটা কানে যেতেই ঝট করে সোজা হয়ে বসলাম। শিরদাঁড়া পুরো টান টান, “কি বললেন?”
“ইয়ে- কবরের নাম, তারিখ, সাল মুখস্ত করত।” একটু অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে।
আমি বেশ বিষ্মিত মুখে জিজ্ঞেস করলাম, “ মানে? মুখস্ত করত?”
“জী ভাই। আরো একটা কাজ করতো- কবরের পাশে বসে কান পাইতা থাকত, যেন কিছু শুনবার চেষ্টা করতেছে।”
আমি স্থির দৃষ্টিতে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মূর্তির মত দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নড়লাম না।
“ভাই? কী ভাবতেছেন?” অবাক গলায় বললেন ইদ্রীস সাহেব।
আমি জবাব দিলাম না। আমার মাথায় বিচিত্র একটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে তখন। আমি ঠিক জানি না আমি যেটা ভাবছি- সেটা ঠিক কিনা। কিন্তু আমার যুক্তিতে সব খাঁপে খাঁপে মিলে যাচ্ছে।। (চলবে) লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী ( শিহাব )
ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

।। অমীমাংসিত – শেষ পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 18, 2011 at 11:07pm
আমি সে রাতটা মসজিদের বারান্দায় শুয়ে কাটিয়ে দিলাম। এক মুহূর্তের জন্য দু চোখের পাতা এক করলাম না। কারণ ঘুমালেই আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করবো। আমার জেগে থাকা এখন ভীষণ দরকার। ভীষণ। জ্বরের ঘোরে কাঁপতে কাঁপতে অন্ধকার গোরস্থানটার দিকে তাকিয়ে রইলাম সারা রাত। অপেক্ষা করতে লাগলাম সূর্যের জন্য। অজানা আশংকায় বুকের ভেতর হৃদপিন্ডটা পাগল হয়ে গেছে। আমি পরদিন খুব ভোরে চলে আসি রেল স্টেশনে। আসার আগে ফযরের নামাজ শেষে বিদায় নেই ঈমাম সাহেবের কাছ থেকে। আমাকে এগিয়ে দিতে তিনি রেল স্টেশন পর্যন্ত এলেন। ভদ্রলোক বুকে জড়িয়ে ধরে আমাকে বিদায় জানালেন। বহুকাল মানুষের এমন গভীর ভালবাসা পাইনি। খারাপ লাগল কেন জানি। আসার আগে তাঁকে বললাম, “ ভাই, একটা কথা বলি?”
“অবশ্যি বলেন ভাই।”
“আমাকে পাগল ভাববেন না। কথাটা শুনলে পাগল মনে হতে পারে আমাকে।” স্টেশনের প্লাটফর্ম দিয়ে হাটতে হাটতে বললাম। ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে করছে।
“কি কথা?” বেশ অবাক হলেন।
“জুবায়ের আলী নামের সেই ছেলেটার ছবি আর বর্ণনা দিয়ে পত্রিকায় একটা হারানো বিজ্ঞপ্তি দেন। ছেলেটাকে খুঁজে পাবেন আমার মনে হয়।”
ঈমাম সাহেব এমন ভাবে তাকালেন যেন আমার মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে তাঁর কাঁধে হাত রেখে মৃদু চাপ দিলাম, “আপনি আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন ভাই, আমি বুঝে শুনে কথাটা বলেছি আপনাকে।”
ট্রেনের বাঁশি দিল। আমি দরজার হ্যান্ডেল ধরে উঠে পড়লাম। ঈমাম ভদ্রলোক তখনো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্লাটফর্মে। ট্রেনটা ছেড়ে দিল। ঈমাম সাহেবের সঙ্গে এটাই আমার শেষ দেখা।

পৃথিবীতে অতিপ্রাকৃত কিছু আছে কিনা আমি ঠিক জানি না। কিন্তু এখন একটা জিনিস আমি জানি। অতিপ্রাকৃত কিছু মানুষ ঠিকি রয়েছে।
প্রকৃতি যখন সিদ্ধান্ত নেয় তার সৃষ্ট মানুষ গুলোর মাঝ থেকে কাউকে সে বিচ্ছিন্ন করবে- তখন একই সঙ্গে সেই সিদ্ধান্তের পরিপুরোক অন্য কোথাও একটা মানুষকে সৃষ্টিও করেন। আর প্রকৃতি তার সিদ্ধান্ত মাঝ পথে বদলে ফেলার জন্য তৈরি করেছেন কিছু মাধ্যম। সেই রকম একজন মাধ্যম হল “মোঃ নজরুল হোসেন” কিংবা “জুবায়ের আলী”।
আমি ৩১ জুলাই রাতে জুবায়ের আলীর দ্বিতীয় সত্ত্বাকে বাঁচাতে পারিনি। সেদিন কবর দেয়া হয়েছিল জুবায়ের আলীর দ্বিতীয় অস্তিত্বকে। আসল জুবায়ের আলীকে নয়। কবরের ভেতর মারা যাওয়া বাচ্চাটা ছিল “মোঃ নজরুল হোসেন”এর সেই দ্বিতীয় জনের মত। আসল জুবায়ের আলী আমার মত এখনো বেঁচে আছে কোথাও না কোথাও। পালিয়ে বেরাচ্ছে ভয়ের হাত থেকে বাঁচতে- কারণ সে এখনো ছোট। ভয়টাকে সহ্য করার মত শক্তি তার এখনো হয়নি।
আমার এ অদ্ভূত ব্যাখ্যার অর্থ অনেকেই বুঝতে পারবেন না। তাই একটু বুঝিয়ে বলছি- জুবায়ের আলী নামের সেই বাচ্চা ছেলেটা খুব ছোট থাকতেই একটা জিনিস জেনে গিয়েছিল। প্রকৃতি তার সৃষ্ট মানুষদের নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি টেনে নেন- মাঝে মাঝে তাদের ফিরিয়েও দেন। কিন্তু সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। সেই অল্প সময়ে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ আছে যারাই কেবল বুঝতে পারে প্রকৃতি সেই মানুষটাকে আবার ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তখন তাদের কাজ হয় সেই মৃত মানুষটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। জুবায়ের আলী নতুন কবরের নাম, তারিখ, সাল দেখে বলে দিতে পারত এই কবরের ব্যক্তি কি দ্বিতীয় বার বেঁচে উঠবে নাকি। সে এসব কিভাবে জানতে পেরেছিল সেটা আমার কাছে ধোঁয়াটে। হতে পারে সেই ন্যাড়া ফ্যাকাসে মেয়েটার মাধ্যমে জানতে পারতো।
জুবায়ের আলী ছোট ছিল বলে ভয় পেত জিনিসটা। কারণ ও শখের বশে নয়, ভয়ের বশে কাজটা করতো। খুব সম্ভব ও কোনো কবরের লাশের জীবন্ত হওয়ার পর ভয় পেয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে পালিয়ে গিয়েছিল মাদ্রাসা ছেড়ে। আর সে কারণেই শাস্তি সরুপ তার দ্বিতীয় একজন অস্তিত্বকে এখানে পাঠানো হয় এবং অসুখ হয়ে মারা যায়, তারপর কবরের ভেতরে সেই কষ্টটা পেয়ে মৃত্যু হয় তার- যে কষ্টটা অন্য কেউ একজন পেয়েছিল কবরের ভেতর দ্বিতীয়বার বেঁচে উঠেও শ্বাস নিতে না পেরে মারা যাওয়ায়।
জুবায়ের আলী যে রাতে কবরের ভেতর মারা যায়- সে রাতে আমিও একই কাজ করেছিলাম। ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। হয়ত সে কারণেই আমার দ্বিতীয় সত্ত্বাকে পাঠানো হয় এবং কবরের ভেতর জেগে উঠে শ্বাস বদ্ধ হয়ে মরার কষ্টটা পেতে হয়। আমি স্বপ্নের মাঝেই আমার যাত্রা করি- হয়ত জুবায়ের আলীও সেরকম কিছু করে। হয়ত আমার মত দুঃস্বপ্ন যাত্রা সে করে না, সে তারিখ মিলিয়ে খুঁজে বের করে কার পুনরাগমন ঘটবে আবার? কে জানে হয়ত এখনো করে।
তবে জুবায়ের কবরের নাম, তারিখ দেখে যে কাজটা করতে পারত আমি তা পারি না। হয়ত আমাদের ধরন আলাদা। আমি জানি না কে জেগে উঠবে কবরের মাঝে? শুধু এটুকু আন্দাজ করে বলতে পারি- আমি যে রাতে কবরের ভেতরে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাই- সে রাতে আমার কবরের ওপরে কিংবা আশে পাশে কেউ একজন ছিল...... হয়ত আমার মত কেউ...... যে ভয় পেয়ে আমাকে বের করতে যায়নি। হয়ত এভাবেই প্রকৃতি তার বিচিত্র শৃংখ্যলটা সৃষ্টি করেছেন। হয়ত এভাবেই এই মানুষ গুলো তাদের নিজেদেরকে আবিষ্কার করবে...... আমি দিনাজপুর চলে আসার দীর্ঘ দিন পর হিঙ্গুলী মাদ্রাসার ঈমাম ইদ্রীস শেখের চিঠি আসে আমার কাছে। চিঠিতে সাধু-চলিত মিশিয়ে ফেলেছেন ভদ্রলোক। তিনি লিখেছেনঃ-
“ভাই মোঃ নজরুল হোসেন,
আমার সালাম নিবেন। আমি আসলে ঠিক কিভাবে লেখবো ব্যাপারটা বুঝতে পারিতেছি না। আমি আপনি চলিয়া যাওয়ার পর খেয়ালের বসেই পত্রিকায় জুবায়ের আলীর নিখোঁজ সংবাদ দিয়া খবর ছাপাই। অনেকেই আমাকে পাগল ঠাউরেছিল সেই সময়।
ইহা মহান আল্লাহ তা আলার বড় অদ্ভূত কুদরত- এক মাসের মাথায় জুবায়ের আলীকে ব্রাক্ষ্মণ বাড়িয়ায় খুঁজিয়া পাওয়া যায়! বড়ই আশ্চর্যের বিষয় সে সুস্থ আছে এবং মতি ভ্রমও হয় নাই! বর্তমানে মাদ্রাসায় আছে সে। আপনি একবার তাকে দেখিতে আসলে খুশি হইতাম। সে এখনো নতুন কবরের নাম, তারিখ পড়িয়া বেড়ায়।
- আরজ গুজার
মাওলানা মোঃ ইদ্রীস শেখ” আমি যাইনি। চিঠির জবাবও দেইনি। ইদ্রীস সাহেবের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, তবুও কেন যেন এড়িয়ে গেলাম চিঠিটাকে। কারণ এখন আমার কাছে কোন প্রশ্ন জমা নেই। যেটার উত্তর জুবায়ের আলী দেবে আমাকে। হ্যা, কবরের নাম, তারিখ দেখে কিভাবে সে বের করে যে এই কবরের মানুষ পুনরুত্থিত হবে- সেটা জানার আগ্রহ ছিল। কিন্তু মনে হয় না সে আমাকে বলবে। কারণ আমরা দুজনেই ভয় পাই, অজানা একটা ভয়।। প্রচন্ড মাথা ব্যথা আর জ্বরে কাঁপছি। সাথে বুকের ভেতর কফ জমেছে। ঘড় ঘড় করে সারাক্ষণ। দুপুরে দুটো প্যারাসিটামল খেয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছি। তাতেও শীতে মানছে না। কিছুদিন হল বাসার কাজ করে দেয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি থেকে ফুফু একটা নয় বছরের বাচ্চা মেয়েকে পাঠিয়েছে। অনাথ। কেউ নেই বলেই আমার কাছে পাঠিয়েছে। আমি ত সারাক্ষণ রোগে শোকে ভূগি, তাই ও এখানে থাকলে খাওয়া দাওয়াটা অন্তত করা হয়। নামটা বলা হয়নি- পারুল। শ্যামলা মত হালকা পাতলা মানুষ। বাতাস এলে উড়ে যাবে এরকম। আমার জ্বর আসলেই খুব ব্যস্ত হয়ে পরে পারুল। মাথায় পানি ঢেলে দেয়, কপালে জলপট্টি দেয়। আজকেও মাথা ব্যথা আর জ্বরে যখন কাঁপছিলাম, পারুল আমার গায়ের ওপর আরো দুটো কাঁথা চাপিয়ে দিয়ে উদ্বিগ্ন মুখে বলল, “চাচা আপনের তো অনেক জ্বর! আপনে শুইয়া থাকেন। আমি ডাক্তার ডাকে আনতেছি, মোড়েরই ডাক্তারের দোকান।”
আমি কিছু বলার শক্তি পাচ্ছিলাম না। প্রচন্ড মাথা ব্যথায় মগজটা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার, জ্বরের ঘোরে কেবল গোঙ্গাচ্ছি...... পারুলের কথা শুনতে পেলাম না...... তলিয়ে যাচ্ছি কোথাও আমি...... ভীষণ স্যাঁত স্যাঁতে কোথাও বসে আছি। ঠান্ডা আর ভ্যাপসা একটা স্থির বাতাস। নিজের হাত পা কিছুই দেখতে পারছি না। কিন্তু হাত বুলিয়ে চারপাশে বুঝতে পারলাম একটা কবরের ভেতরে আছি। আমার পা নাড়াতেই এই কবরের লাশটার গায়ে লাগল। স্থির হয়ে গেলাম। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে লাশটা। খারাপ ধরণের একটা গন্ধ। নাকে হাত দিলাম। বুকের ভেতর ঢাকের মত আওয়াজ করা শুরু হয়েছে। শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম নিজেকে। বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি। মাথার ওপরের ছাদ মাটি চেপে সিমেন্টের মত হয়ে গেছে, তবে দেয়ালের মাটি খুব আলগা। হাত দিতেই ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ল। পুরনো কবর। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছি আমি। বাতাস ফুরিয়ে গেলে মরতে হবে...... চারপাশে পিনপতন নীরবতা। জমাট নিস্তব্ধতা।
হঠাৎ মনে হল খুব চাপা, গুমোট একটা কান্নার শব্দ কানে এল...... কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম কোত্থেকে আসছে। কিছুতে থাবড়ানো, আচঁড়ানোর শব্দ শুরু হল। আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। কবরের দেয়ালে কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম শব্দটার উৎসটা কোথায়......
হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম এই কবরের পাশেই আরেকটা কবর! ওটা থেকেই আসছে শব্দটা! বাচ্চা কোনো মেয়ের কান্নার শব্দ। কিন্তু খুব দ্রুত কান্নাটা আতংকের চিৎকারে রুপ নেয়া শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গেলাম কি ঘটতে যাচ্ছে। আমি গায়ের শক্তি দিয়ে আমার কবরের ঐ পাশের দেয়ালের মাটি খাঁমচে ভেঙ্গে ফেলতে লাগলাম। মাটি নরম। দ্রুত পাতলা হয়ে আসতে লাগল দেয়ালটা। ওপাশের চিৎকার থামছে না।
দেয়ালে ছিদ্র হওয়া মাত্রই ওপাশের বাচ্চা মেয়েটা প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে এক কোনায় চলে গেল ভয়ে। আমি আরো দ্রুত দেয়াল ভেঙ্গে ওপাশের কবরে এসে ঢুকলাম। অন্ধকারে কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু সময় নেই হাতে। আমি কেবল বললাম, “ মা, তুমি ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে বের করে দিচ্ছি।” মেয়েটার দিক থেকে আরো ভয়ার্ত কান্নার শব্দ হল। কিন্তু বেশ দূর্বল। নিঃশ্বাস না নিতে পেরে দূর্বল হয়ে আসছে মেয়েটা।
আমি দেরি না করে কবরের ছাদের এক পাশে জোরে জোরে ঠেলা দিয়ে বাঁশ, চাটাই খুলে ফেলতে লাগলাম। বাচ্চার কবর বলে সবকিছু অল্প ছিল। তাই ছাদটার এক পাশে দ্রুত একটা ফোঁকর করে ফেলতে পারলাম। গায়ে বালু মাটি লেগে একাকার অবস্থা। ঘুরে মেয়েটার দিকে তাকালাম। অন্ধকারে মেয়েটার সারা আর না পেয়ে চমকে গেলাম। তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে দেখলাম খুব দূর্বল হয়ে এসেছে শ্বাস নিতে না পেরে। কেবল মাটিতে পা ঘসছে নিস্তেজ ভাবে। আমি কোলে তুলে ওকে নিয়ে এলাম ফোঁকরটার মুখের কাছে। তুলে ধরলাম।খোলা বাতাসে শ্বাস নিতেই শক্তি পেল মেয়েটা। হাঁচড়ে পাচঁড়ে বেরিয়ে গেল কবর থেকে। ভেবছিলাম আমার জন্য দাঁড়াবে। কিন্তু দাঁড়ালো না, ভয় পেয়ে পালাতে লাগল...... চাঁদের আলোয় হারিয়ে গেল......
আমি ক্লান্ত ভঙ্গিতে একটু নিঃশ্বাস নিলাম ফোঁকরটা দিয়ে। রাতের ভাঙ্গা চাঁদের আলোয় গোরস্থানটা চিনতে পারলাম না। কে জানে কোথায় এটা?
আস্তে আস্তে বসে পড়লাম আবার কবরের ভেতর। চাঁদের আলো ঢুকছে ফোঁকর দিয়ে কবরের এ পাশে। আমি জানি অন্য পাশের অন্ধকার কোনাটায় এখনো মূর্তির মত বসে রয়েছে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মেয়েটা...... স্থির চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে...... চোখ মেললাম। জ্বরের তেজটা কমে এসেছে। মাথা ব্যথাটাও নেই একদম। হালকা লাগছে খুব মাথাটা। দেখলাম আমার মাথার কাছে একটা টুলে বসে আমার মাথায় মগ দিয়ে পানি ঢালছে পারুল আর একটু পর পর হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে। ঘরের জানালাটা খোলা। মধ্য রাতের চাঁদের আলো এসে আমার ঘরটা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কাঁপা হাতে পারুলের মাথায় হাত রাখলাম। মেয়েটা এখন আরো জোরে কাঁদা শুরু করল।
আহারে...... বুকের ভেতর অদ্ভূত একটা শূণ্যতা মোচড় দিয়ে উঠল। বিয়ে করিনি বলে জানি না সন্তান হলে কেমন লাগে। কিন্তু কেন যেন হঠাৎ মনে হল আমার মেয়ে থাকলে মেয়েটা ঠিক পারুলের মতই হত, এভাবেই হয়ত কাঁদত আমার মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে...... ঝাপসা হয়ে এল আমার চোখের দৃষ্টি......... আহারে...... মমতা বড় কঠিন জিনিস। স্রষ্টা এই একটা জিনিস দিয়ে জগৎটাকে এত সুন্দর করে ফেলেছেন! লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী ( শিহাব ) ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

অভিশপ্ত আয়না

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Friday, August 19, 2011 at 8:07pm
এক
আয়নাটির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুপ্তি। চমৎকার ডিম্বাকৃতি আয়না, চারপাশে লাল আর কালোর অদ্ভূত নকশা করা বর্ডার। কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে আয়নার উপরে বসানো ময়ূর দুটি। ময়ূর দুটির লেজ আয়নার দুই পাশে ঝুলে রয়েছে। চোখ গুলিতে কি পাথর বসানো কে জানে, লাল রঙ এর চোখগুলো আলো না পড়লেও যেন ঝিকমিক করছে। প্রথম দৃষ্টিতেই আয়নাটির প্রেমে পড়ে গেলো সে। এরপর পুরো ঘরে এক চক্কর দিয়ে আবার সেই আয়নার সামনেই এসে দাঁড়িয়েছে। মনের কল্পনায় দেখছে, আয়নাটিকে তার রুমের ওয়ার্ডরোবের পাশের দেয়ালে কি চমৎকারই না দেখাচ্ছে। আয়নার দাম যে তার নাগালের বাইরে হবে, সে নিয়ে সুপ্তির মনে কোন সন্দেহ নেই। তার স্কলারশিপের টাকা বেশীর ভাগই সে মনের আনন্দে উড়িয়েছে। সেটা নিয়ে এখন তার অনেক মন খারাপ হলো।
সে এসেছে তার মায়ের সাথে পুরান ঢাকার গলির মাঝে তস্য গলির তিনতলা এক বাড়ীতে। বাড়ীটি এত পুরনো যে যে কোন সময়ে ঝুর ঝুর করে ভেঙে পড়বে। সেই কোন আমলের জমিদার বাড়ি, বয়স প্রায় ৩০০ বছর।অনেক বছর বাড়িটি বন্ধ থাকার পর কে বা কারা যেন পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়েছে যে অ্যান্টিক পুরনো আসবাবপত্র বিক্রি হবে। তার মার সখ অ্যান্টিক শো পিসের, একারনেই শুক্রবারের সকালে আরাম ছেড়ে তারা এখন এই পুরনো বাড়ীর বৈঠক খানায় দাঁড়ানো। সুপ্তি পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে, তৃতীয় বর্ষে। শুক্রবারে তাকে বেলা ১২টার আগে বিছানা থেকে তোলা কষ্টসাধ্য নয়, একেবার দুঃসাধ্য কাজ। আজকে সেই কাজটি তার আম্মু, নাসরিন বেগম ওরফে নাসু, করতে সক্ষম হয়ে আব্বুর কাছ থেকে বাজীর ৩০০০ টাকা আদায় করেছে। সেই টাকা নিয়েই নাসরিন ঢু মারতে এসেছে এই পোড়ো বাড়িতে। তার আম্মুর ইতোমধ্যে একটা পানের বাটা আর একটি ফুলদানি খুবই পছন্দ হয়েছে। এখন সে দরদাম করতে ব্যস্ত সাদা চুলের বুড়োর সাথে। সেই এই বাড়িটি দেখাশোনা করে। বাড়িটির বর্তমান মালিক জন্মের পর থেকেই আমেরিকা। একবারো দেশে আসেনি। এখন সে চায় সব কিছু বিক্রি করে দেশের সাথে সম্পর্ক একেবারেই মিটিয়ে দিতে।
এক ফাঁকে সুপ্তি বাড়ির নীচতলা পুরোটাই ঘুরে এসেছে। সবকিছুরই ঝুরঝুরে দশা। দোতলার একটি ঘর কোনমতে আস্ত আছে, যেটিতে বুড়ো চৌকিদার থাকে। তিনতলায় কেউ ওঠে না প্রায় ১০০ বছর হয়ে গেছে নাকি। নীচ তলার রুমগুলি এখনো কিছুটা আস্ত আছে বটে, কিন্তু ভ্যাপসা গন্ধ আর প্রচন্ড ধূলা। এক কালের রঙিন কাঁচ গুলো অবহেলা আর পরিচ্ছন্নতার অভাবে ধূলি ধূসরিত। ঘুরতে ঘুরতে একটা বন্ধ দরজার সামনে এসে পড়ে সুপ্তি। বিশাল কাঠের দরজা, অতীতে হয়ত চমৎকার কাঠের কাজ করা ছিল; এখন তার উপরে কয়েক পরত ধূলার আস্তরন। সুপ্তি টানাটানি করতেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে খুলে গেলো। রুমটি বেশী বড় নয়, মাঝারি আকৃতির। ভিতরে ঢুকে সুপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। চারপাশে বিশাল বিশাল সব আলমারি, আর তাতে না হলেও হাজার দশেক বই হবে। এ বাড়ির লাইব্রেরী বোধ হয়। মাকড়সার জাল সরিয়ে সরিয়ে ঢুকতে হয়, অবস্থা এতই করুণ। ঝটপট শব্দ হচ্ছে, তার মানে ইঁদুরের সাম্রাজ্য।সাথে চামচিকাও অবশ্যই আছে। ঘরের কোনে একটা লাঠি পেয়ে সেটা নিয়েই সুপ্তি এগুতে থাকে জাল সরিয়ে।একটা আলমারি টানাটানি করে খুলতে ব্যর্থ হয়। সব মনে হয় তালা দেয়া। ঘরের এক কোনে একটা টেবিল আর ইজি চেয়ার। চেয়ারের কোন দশা নেই, কি করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে তা এক বিস্ময়। টেবিলের উপরে এখনো কিছু বই ইতঃস্তত পড়ে আছে। শত বছর আগে এই টেবিলে বসেই কেউ লিখতো, বই গুলি পড়তো – ভাবতেই সুপ্তির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। সবকিছুর উপর শত বছরের ধূলা। সুপ্তি ভাবলো তার মা এই রুমে এলেই সর্বনাশ। মার প্রবল ডাস্ট এলার্জি। বাসার সব ধূলা ঝাড়াঝাড়ি সুপ্তি আর তার বাবাকেই করতে হয়। সুপ্তি টেবিলের রাখা বইগুলোর উপর থেকে হাত দিয়েই ধূলা সরাতে থাকে। কালো মলাটের একটি মোটা বই, প্রথম পাতা খুলতেই ঝুর ঝুর করে সব খসে পড়লো। পাতা নেই বললেই চলে, যা আছে সব ইঁদুর আর পিঁপড়া মিলে ভোগে লাগিয়েছে। কিসের বই বোঝার কোন উপায় নেই। বইটির পাশে ছোট একটি ডায়েরী। সুপ্তি অবাক হয়ে দেখলো সবকিছুর ধূলার সাম্রাজ্যে ঢাকা হলেও ডায়েরীটি যথেষ্টই পরিস্কার। কেউ যেন নিয়মিত এর ধূলা ঝাড়ে। পাশেই কালির দোয়াত, তার মাঝে পাখির পালকের কলম। ধূলায় রঙ অস্পস্ট। সুপ্তি ডায়েরীটি তুলে নিল।
“এখানে কি চাই?” – গম্ভীর রাগী গলায় কেউ একজন প্রশ্ন করলো।
সুপ্তি ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে হাত থেকে ডায়েরী ফেলে দিলো। আতংকে তার গলা রুদ্ধ হয়ে গেলো, কোনমতে পিছনে ফিরে দেখলো বুড়ো চৌকিদার কোন ফাঁকে চলে এসেছে। এত তন্ময় হয়ে সুপ্তি সব দেখছিলো যে সে বুঝতেই পারেনি অন্য কেউ ঘরে প্রবেশ করেছে। তোতলাতে তোতলাতে সুপ্তি বললো,
“এই তো, এমনি। এমনি আমি সব ঘুরে দেখছিলাম”।
বুড়ো চৌকিদারের চোখ রাগে ধক ধক করে জ্বলছে। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“কখনো এমন কোথাও যেতে হয় না যেখানে তুমি অবাঞ্চিত। এমন কোন কিছু স্পর্শ করতে হয় না যা তোমার নয়। তোমার কৌতুহল তোমাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, সে সম্পর্কে তোমার কোন ধারনা নেই”।
সুপ্তির কাঁপুনি বেড়ে গেলো। আজকাল সে অনেক সাইকো থ্রীলারের ছবি দেখে তার বন্ধু চৈতীর পাল্লায় পড়ে। এই লোকটিও সাইকো নয় তো?
“আমি…… আমি দুঃখিত। বুঝতে পারিনি”। কাঁপা কন্ঠে কথা গুলো বলেই লোকটির পাশ দিয়ে দৌড় দিলো সুপ্তি। দরজা দিয়ে বের হতে হতে সে শুনতে পেলো লোকটি কারন ছাড়াই হাসছে।
বাইরে বৈঠক খানায় এসে দেখলো তার মা চার পাঁচটি প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে। যেতেই সুপ্তি ধমক খেলো।
“অ্যাই পাজি মেয়ে, কোথায় ছিলি তুই? জানিস আমি কতক্ষন ধরে খুঁজছি। বাসায় যেতে হবে না? রান্না কি ভূতে করে দিয়ে যাবে?”
সুপ্তি কথার উত্তর না দিয়ে দৌড়ে দরজা দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। রাস্তায় লোকজনের মাঝে না গেলে তার কাঁপুনি কমবে না। অদ্ভুত কিছু একটা আছে এই বাড়ীতে। এক মূহুর্ত সে এখানে থাকবে না।
বুড়ো চৌকিদার ততক্ষণে ফিরে এসেছে। সুপ্তির মা তার দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভাবে বললেন,
“মেয়েটা আমার বড় পাগলী হয়েছে। তাহলে আজ আসি?”
“জ্বী জ্বী। তবে কি আমি চায়ের সেটটি আপনার জন্য রাখবো? একেবারে খাঁটি পুরনো জিনিস কিন্তু, ১৫০ বছরের কম বয়স না”।
সুপ্তির মা দুঃখের সাথে মাথা নাড়লেন, “যে দাম বলছেন, তাতে কোন ভাবেই সম্ভব না”।
“আরেকটু না হয় কমালাম, আপনি এত জিনিস নিলেন”।
সুপ্তির মা কিছুক্ষন ভেবে বললেন, “আপনি দিন ১৫ যদি রাখতে পারেন তবে ভালো হয়, এর পর আমি এসে নিয়ে যাবো”।
“ভালো খদ্দের না পেলে রাখবো। আপনি খবর নিয়েন”।
প্রথম দুই তিন দিন সুপ্তির রাতে একা ঘুমুতে একটু ভয় ভয় করছিলো; কিন্তু তার ছোট বোন হচ্ছে পাজির পা ঝাড়া। কি ভেবে যে আব্বু তার নাম সুকন্যা রেখেছে সে আল্লাহ মালুম। একবার যদি শোনে যে সুপ্তির রাতে ঘুমুতে ভয় করছে, ফোন করে করে সবার কাছে খবর পৌঁছে দেবে। তাই সে যে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছে, তা কাউকে জানতে দিলো না। দিন তিনেক পরেই সব আগের মত। অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার ধাক্কায় সুপ্তির জীবন চলতে লাগলো আগের ধারায়।
২৪শে এপ্রিল সুপ্তির জন্মদিন। ২৩শে এপ্রিল রাতে সে খুবই আনন্দ নিয়ে জেগে থাকে। প্রতিবারই জন্মদিনে রাত ১২টা এক মিনিটে সে বেশ কিছু উপহার পায়। তার মাঝে কিছু উপহার গৎবাঁধা। তার ভালো মানুষ বাবা একটা খামে শুভ জন্মদিন লিখে কিছু টাকা দেবে, যেটাতে সে বন্ধুদের খাওয়ায়। তার পাজি বোন একটা কার্ডে হ্যাপী বার্থডে লিখেই খালাস। ছোট খালা উপহার আগেই পাঠিয়ে রাখে। প্রতি বছরই সে একটা করে জামা পায়। পাশের বাসার নীনা আন্টির কেক পুরো বিল্ডিং এ হিট। নীনা আন্টি একটা কেক বানিয়ে আনে। গত বছর নীনা আন্টির ৪ বছরের ছেলে কৌশিক একটা ললিপপ দিয়েছিল। যেটা দেয়ার আগে আবার সে খানিকক্ষন খেয়েছে। এবছর কি করবে কে জানে! তবে তার আম্মুর দেয়া উপহার সবসময়ই ব্যতিক্রম। কোনবারের সাথে কোন বারের টা মিল থাকে না। এই তো দুই বছর আগে সে পেয়েছিলো রবীন্দ্র রচনাবলীর সেট, গত বছর আম্মু তার জন্য কিনে এনেছিল মুক্তার চমৎকার একটা সেট। পার্টিতে সে প্রায়ই সেটা পড়ে। এবছর কি পাবে তা নিয়ে সে খুবই উত্তেজিত। শুয়ে শুয়ে সে ঘুমের ভান করতে লাগলো। ১২টা ১ বাজার সাথে সাথে সবাই হ্যাপী বার্থডে টু সুপ্তি বলতে বলতে রুমে ঢুকে পড়লো। সুপ্তি ভান করলো যে সে একেবারে আকাশ থেকে পড়েছে। ডাইনিং রুমের টেবিলের উপরে নীনা আন্টির কেক রাখা। চারপাশে মোমবাতি সাজানো।মোবাইলে টানা ভাইব্রেশন হচ্ছে, মেসেজ আসার জন্য। আনন্দে সুপ্তির চোখে জল এলো। কেক কাটা পর্ব শেষ করেই সবাই ঘুমানোর জন্য দে ছুট। আম্মু এসে সুপ্তির কপালে চুমু দিয়ে তার উপহারটি বিছানায় রেখে গেলো। সবাই চলে গেলে পরে গভীর রাতে সুপ্তি তার উপহারগুলো খুলতে বসলো। তার বোনের কার্ডটির মাঝে এবার বান্দরের ছবি। দাঁত বের করে বান্দরটি হ্যাপী বার্থডে জানাচ্ছে।সুখের বিষয় এবার কৌশিক কোন উপহার ছাড়াই এসেছে। ছোট খালার জামাটিও মন্দ না। আব্বুর দেয়া টাকা গুলি ব্যাগে ভরে সুপ্তি আগ্রহ ভরে আম্মুর দেয়া উপহার খুললো।
উপহার খুলে সুপ্তি খানিকক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। এরপর আবার নতুন করে চোখে জল আসা শুরু হলো। যে আয়নাটি দেখে সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওই পোড়ো বাড়িতে, আয়নাটি তার আম্মু তার জন্য নিয়ে এসেছে। মা দের চোখে কি কিছুই এড়ায় না? সুপ্তি উঠে তার ওয়ার্ডরোবের পাশের দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডারটি সরিয়ে আয়নাটা লাগায়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সে আবার মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ে। চারপাশের বর্ডারে কি সূক্ষ্ণ কারুকাজ। কাঠের মাঝে লাল আর কালো রঙ করা। উপরের ময়ূরের লেজ দুইটি কি দিয়ে বানানো যে এত বছর পরেও এতটুকু রঙ নষ্ট হয়নি? আর চোখ গুলি কি রুবী? সুপ্তির চেহারা তার নিজের কাছে বিশেষ সুবিধার কখনোই মনে হয় না। কিন্তু এখন সে নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো। আয়নায় কি সুন্দরই না তাকে লাগছে। একটা লাল টিপ এনে কপালে পড়লো। রূপকথার রাজকন্যা যেন। আনন্দ দিয়ে সুপ্তি ঘুমাতে গেলো। কিন্তু ঘুম কেন যেন খুব ছাড়া ছাড়া হলো। শেষ রাতের দিকে তার ঘুমের মাঝেই মনে হতে লাগলো কেউ তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

দুই
পরের দিন বাসায় বিকেলে হৈ হৈ করতে করতে চৈতী, সুমন আর তুলি আসলো। সুপ্তির আম্মু মানুষ কে খাওয়াতে পারলেই খুশী। ৬/৭ পদের নাস্তা বানিয়ে ফেললেন তখনই। আয়না দেখে সবাই থ। চৈতী তো পারলে নিয়েই যায়। কয়শ বছরের পুরনো জিনিস, কে এটা বানিয়েছে, কেই বা ব্যবহার করতো- এসব নিয়ে ব্যাপক আড্ডাবাজী।সুমন বরাবরই কল্পনার রঙ ছড়াতে ভালোবাসে। তার ধারণা, আয়নাটা অভিশপ্ত। সবার রক্ত চুষে নেয়। একারণেই ময়ূরগুলোর চোখ লাল। নতুবা কে কবে শুনেছে ময়ূরের চোখ লাল। সবার হো হো অট্টহাসিতে তার মতবাদ চাপা পড়লো। কিন্তু সুপ্তি বিশেষ খুশী হতে পারলো না। বন্ধুরা যখন ডাইনিং রুমে খেতে বসেছে, আর সে এসেছে তুলির মোবাইলটা তার ঘর থেকে নিতে; আবার তার সেই অনুভূতি ফিরে ফিরে এলো। কেউ তাকে দেখছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেংচি দিলো সুপ্তি। নাহ, এটা তার মনের ভুলই হবে।
সবাই চলে গেলে রাতের খাওয়া সেরে সুপ্তি নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো। ঘুমুতে যাবার আগে সে আবার আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আয়নাটা যেন তাকে আবিষ্ট করে ফেলছে। ঘড়ির আওয়াজে চমকে গেলে সে দেখলো ১টা বেজে গেছে। মানে সে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। এত সময় ধরে আয়নায় সে কি দেখছে? হঠাৎ তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি জাগলো। মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটা বইতে সে পড়েছে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ১৭শ সালের ডাইনী ব্লাডি মেরীকে ডাকলে সে আসে। অবশ্য প্রতিবার ৪৫ বার করে ডাকতে হবে অনেক দিন ধরে। সে আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো, “ব্লাডি মেরী, ব্লাডি মেরী, ব্লাডি মেরী”। নিঃশ্বাস বন্ধ করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। কিছুই হলো না। নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজেই হেসে ফেললো। কি বোকার মত সে গল্পের বই এর কথায় মেরী না কাকে ডাকাডাকি করছে। সবুজ রঙের ডিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আবার ঘুমের মাঝে সেই অস্বস্তিকর অনুভূতি। কেউ অবশ্যই তাকে দেখছে।
রাত তিনটার দিকে ঘুম ভেঙে গেলো। সারা ঘরে কেমন যেন শীতল একটা ভাব। বৈশাখ মাসের এই বিশ্রী গরমে এরকম ঠান্ডা ভাব কি করে হলো? বৃষ্টি নাকি বাইরে? পরদা সরালো সুপ্তি। নাহ, বাইরে সব শুকনো, বাতাস পর্যন্ত নেই। গাছের পাতাগুলিও চুপ চাপ, সবাই ঘুমে বিভোর। হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন বিছানার মাথার কাছ দিয়ে সরে গেলো। ঝট করে ঘাড় ঘোরালো সুপ্তি। শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত নামলো। নাক কুঁচকে গেলো তার। কেমন যেন একটা গন্ধ; বিশ্রী পচা গন্ধ। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো কপালে। এসব কি হচ্ছে? তার জানামতে বাসায় কোন ইঁদুর নেই, তেলাপোকা অবশ্য আছে। তেলাপোকা মরলে এরকম গন্ধ কখনো হয়না। বিছানা থেকে লাফিয়ে নামলো সুপ্তি। উদ্দেশ্য আয়নার পাশের সুইচবোর্ডে টিউব লাইটের সুইচ অন করবে। আয়নার কাছাকাছি গিয়ে সে কেমন যেন আওয়াজ শুনতে পেলো। কেউ গুন গুন করে কোন গান গাচ্ছে, না কবিতা পড়ছে। ধীর লয়ে নীচু সুরে কেউ গুন গুন করছে। একটু গোঙগাচ্ছেও যেন। আয়নার দিকে তাকাবে না তাকাবে না করেও সুপ্তি তাকিয়ে ফেললো।
নাহ, আয়নায় তাকেই দেখা যাচ্ছে। ওই তো সে, ফুল আঁকা টি শার্ট পড়া। সবুজ ডিম আলোতে নিজেকে দেখতে একটু অন্যরকম লাগছে, কিন্তু এটা তারই প্রতিবিম্ব। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাত বাড়ালো সুইচের দিকে। আয়নার দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো সুপ্তি। আয়নার সুপ্তি এখনো তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে; হাত দুইটা পাশে রাখা। কিন্তু সে তো বাম হাত উপরে তুলেছে সুইচ অন করার জন্য। আতংকে চিৎকার দিয়ে সে পিছনে সরে এলো। আয়নার সুপ্তি এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আয়নার সুপ্তি হাত বাড়িয়ে দিল, যেন সুপ্তিকে ছুঁতে চায়।দুই হাতে মুখ ঢেকে আকাশচূর্ণ করা চিৎকার করে উঠলো সুপ্তি। আতংকে থর থর করে কাঁপছে। বাইরে তার আম্মু আব্বু দরজা ধাক্কাচ্ছে। সুকন্যার গলাও যেন শোনা যাচ্ছে। সুপ্তি মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেখলো আয়নায় এখনো তাকে দেখা যাচ্ছে। হাত নাড়ালে আয়নার হাতও নড়ছে। কোনমতে আলো জ্বালিয়ে দরজা খুলতেই তার আম্মু ঝাঁপিয়ে পড়লো।
“কি? কি হয়েছে রে মা? সর্বনাশ, এত ঘেমে গেছিস কেন?”
“জানি না আম্মু”। বলে সুপ্তি একেবারে শুয়ে পড়লো তার মার কোলে।
১৫ মিনিট পর লেবুর সরবত খেয়ে মাথা মুছে সে মোটামোটি সুস্থির হলো। তার বাবা মার ধারনা সে কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছে। এখন এই আলোকিত রুমে এত প্রিয় মানুষের মাঝে সুপ্তির নিজেরই লজ্জ্বা করতে লাগলো। তার কোন সন্দেহ নেই যে মাঝ রাত্তিরে ঘুম ভাঙার জন্য এবং বেশী সাইকো থ্রীলার দেখার ফলাফল হচ্ছে এটা। ফিচলে সুকন্যা ঘোষনা দিলো যে রাত্রে গুরু ভোজন হবার কারণে পেট গরম হওয়ায় সুপ্তি উলটা পালটা স্বপ্ন দেখছে। ইদানিং সে নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের ভক্ত হয়েছে। কথায় কথায় টেনিদার উক্তি উদ্ধৃতি করে সবার মাথা ধরায়। সুকন্যাকে ভেংচি দিয়ে সুপ্তি আবার ঘুমুতে চলে গেলো, তবে এবার আম্মুও সাথে এলেন। আবার কি স্বপ্ন দেখে কোন ঠিক নাই।
পরের দিন দুপুরে খাবার টেবিলে রাত্রের কাহিনী নিয়ে আলোচনা হলো। আসলে ঘটনা টা কি? সুপ্তি দুঃস্বপ্ন বলে এড়িয়ে গেলো। এখন আবার সুকন্যাকে টিজ করার কোন সুযোগ দেয়ার মানে হয় না। তবে সে নিজেই চিন্তিত, আসলেই কি দুঃস্বপ্ন ছিলো? সবকিছু এত বাস্তব মনে হচ্ছিল—নাহ সুপ্তি এ নিয়ে আর ভাবতে চায় না। বিকেলে তুলি আর সুমনের সাথে সুমনের গুরুর গিটার বাজানো শুনতে যাওয়ার কথা, সে সেটা নিয়েই ভাববে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হবার সাথে সাথে সুপ্তির আবার অস্বস্তি হতে থাকে। আজ রাতে কি হবে কে জানে। আজ সে দরজা না লাগিয়ে শুয়ে পড়ে। ডাইনিং এর লাইট সারা রাত্রি জ্বালানো থাকে, তাতে করে তার রুমেও আলো পৌঁছায়। ওই ভৌতিক সবুজ আলোর চাইতে সাদা আলো যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক। রাত গভীর হতে থাকে, কিন্তু সুপ্তির আর ঘুম আসে না। চাপা অস্বস্তিতে সে জেগে থাকে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানেনা। হঠাৎ তার আবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সারা ঘরে গুন গুন একটা আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছে। সুপ্তি উঠে বসে। সাথে সাথে সব চুপ। তার ভয় ভয় করতে থাকে। ঘড়ির দিকে তাকে দেখলো, আড়াইটা বাজে। ঘরটা আবার কেমন যেন শীতল, যেন এসি চালানো হয়েছে। সাথে সেই গন্ধ। সুপ্তি নাক কুঁচকে বসে থাকে। আবার আম্মুকে ডাকার একটা ইচ্ছে জেগে উঠে। অনেক কষ্টে নিজেকে বার কয়েক গালি দিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করতেই আবার সেই গুন গুন আওয়াজ। এবার একটু জোরে। তীক্ষ্ণ স্বরে কে যেন একটানা মন্ত্র পাঠ করে চলেছে অত্যন্ত দ্রুত লয়ে। সুপ্তি লাফিয়ে নামে বিছানা থেকে। কিন্তু একটা অমোঘ আকর্ষন তাকে টেনে আয়নার দিকে নিয়ে চলে। কোন এক অজানা শক্তি তাকে বাধ্য করে আয়নার দিকে তাকাতে। না এবার আয়নায় তাকেই দেখা যাচ্ছে, ভীত মুখে তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে সুপ্তি। এবার চোখ খুলতেই সে ভয়ানক ভাবে চমকে যায়। আয়নায় এ কার মুখ? চিৎকার দেবার জন্য মুখ খোলে সে, কিন্তু আয়নার চোখটির ব্যথিত ভাব দেখে থমকে যায়। অপূর্ব এক চেহারা। তবে অনেক শুকনো। ঘন কালো চুল, বাতাসে আস্তে আস্তে দুলছে। খাড়া নাক, উন্নত ললাট, যেন এক গ্রীক দেবতা। তবে সবচেয়ে মায়াভরা তার চোখ, তার মাঝে যেন সাগরের গভীরতা। ছেলেটি ব্যথিত চোখে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। মায়াভরা বিষন্ন সেই চোখ অগ্রাহ্য করা সুপ্তির পক্ষে অসম্ভব। সুপ্তি ভুলে যায় সে কোথায় আছে, তার কাছে মনে হয় এটাই বাস্তব। আয়নার মাঝে মানুষ দেখা যাবে, এটাই স্বাভাবিক। সে চাপা কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“তুমি কে?”
ছেলেটি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপরে বলে, “আমি ইভান”।
দৃপ্ত এবং ভরাট কিন্তু ভীষন আপন করা কন্ঠ।
“তুমি আয়নার মাঝে কেন? তুমিই কি কাল রাতে এসেছিলে?”
“হ্যাঁ, আমি তোমাকে ডাকার চেষ্টা করছিলাম”।
“তুমি আয়নায় কেন? তোমার পরিচয় কি?”
আর কোন কথা না বলে আয়নার মাঝে ছবি মিলিয়ে যায়। লাইট জ্বালিয়ে সুপ্তি অনেক করে দেখে, নাহ, আয়না আবার স্বাভাবিক একটা আয়না হয়ে গেছে। লাইট নিভিয়ে সুপ্তি অনেক বার বলে, “ইভান, ইভান, শুনতে পাচ্ছ?” আয়না নিশ্চুপ থাকে, অন্ধকারে শুধু ময়ূরের চোখগুলো ঝিকমিকিয়ে ওঠে।
পরের দিন সারাটা ক্ষণ সুপ্তি ভার্সিটিতে অস্থির হয়ে থাকে। কখন সে বাড়ি যাবে, কখন রাত হবে। তার অস্থিরতা দেখে চৈতী বললো, “কি রে প্রেমে পড়েছিস নাকি কারো? এত ছট ফট কেন?” সুপ্তি না শোনার ভান করলো। ইভান দেখতে যেন রুশ দেশের রূপকথার ইভানের মত। সে কি কখনো ভেবেছিল, তার ঘরের আয়নায় কোন এক রাজপুত্র এসে দেখা দেবে?
রাত ১২টা বাজতে সুপ্তি তাড়াতাড়ি লাইট নিভিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। আজ রাতে সে ঘুমাবে না। রাত দুইটার দিকে হঠাৎ ঘরে ধীর গতিতে শীতল হাওয়া বইতে থাকে, সাথে সেই গন্ধ। এত সুন্দর দেখতে ইভান, কিন্তু এই পচা গন্ধ কেন আসে তবে? সুপ্তি তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে যায়। ইভানের মুখে স্মিত হাসি। ইভান ভীষন রকম ফ্যাকাসে।
“কেমন আছ সুপ্তি?”
“ভালো। তুমি?”
ইভানের মুখ বিষন্ন হয়ে যায়। “আয়নার মাঝে আর কেমন থাকবো?”
“তুমি আয়নায় কেন? কি হয়েছে?”
ইভান বিষন্ন কন্ঠে জবাব দেয়, “আমি কিছুই জানি না। আমি শুধু এক সকালে উঠে দেখতে পাই আমি আমার ঘরের আয়নার মাঝে বন্দি হয়ে গেছি। তারপর থেকে এখানেই আছি। কতবার কতজন কে ডাকার চেষ্টা করেছি, কেউ শোনেনি। ১০০ বছর পর আজ তুমি শুনলে”।
১০০ বছর! সুপ্তির গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
“তোমার তাহলে বয়স কত?”
ইভান হাসে।“৩০০ বছর আগে তো ২৩ ছিল, এখন তোমাদের হিসেবে নিশ্চই ৩২৩, কিন্তু আমার হিসেবে ২৩”।
“১০০ বছর পর আমি ডাক শুনলাম, আগে কে শুনেছিল?” সুপ্তি নিজের কন্ঠের আবেগ লক্ষ্য করে নিজেই অবাক হয়।
ইভান উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ ফুঁপিয়ে উঠে।
“সুপ্তি, আমার অনেক কষ্ট, অনেক কষ্ট”।
সুপ্তির বুকে আবেগের বান ডাকে। তার ইচ্ছে হতে থাকে গ্রীক দেবতার মত দেখতে ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দেয়।
“তুমি কি আমার হাতে হাত রাখবে সুপ্তি?”- করুণ ভাবে ইভান জিজ্ঞেস করে।
সুপ্তি হাত বাড়িয়ে দেয়। আয়নায় সে ইভানের হাতের উপর হাত রাখে। বরফের মত ঠান্ডা। হাত যেন বেশীক্ষন রাখা যায় না। সে সরিয়ে নিতে চায়, কিন্তু অবাক হয়ে দেখে সে হাত সরাতে পারছে না। ইভানের চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে সে। ইভানের চোখে এখন জান্তব উল্লাস। ভীষন লোভে চোখ ঝক ঝক করছে। সুপ্তি ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে। সাথে সাথে ইভান আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ছবি মিলিয়ে যায়। সুপ্তি তারপরো পরের রাতের জন্য অপেক্ষা করে। আবার ইভান আসে, হাতে হাত রেখে তারা গল্প করে। ইভান চলে যায়। ইভান দিনে দিনে আরো সুন্দর হয়।ফ্যাকাশে গালে গোলাপী ছোপ লাগে। মাত্র ৩ দিনেই সুপ্তির স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। কিছুতেই সে কোন শক্তি পায় না। চোখের কোণে কালি। তার মা ব্যস্ত হয়।
“কি হয়েছে রে সুপ্তি? তুই দেখতে এমন হচ্ছিস কেন? রাতে ঘুমাস না?”
সুপ্তি দুর্বল কন্ঠে প্রতিবাদ করে। “কই মা, ঠিকই তো আছি”।

তিন
পরের দিন ক্লাসে দ্বিতীয় পিরিয়ডেই সুপ্তি মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তাড়াতাড়ি তার বন্ধুরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে তার আম্মু আব্বু আর সুকন্যা দৌড়ে যায়। ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে অবাক হয়ে যায়। কোন রক্তপাতের ইতিহাস নেই, কিন্তু কি ভীষন রকম রক্তশূন্যতা। রক্তের রিপোর্টে দেখা যায় হিমোগ্লোবিনের লেভেল কমে ৪গ্রাম/ডিএল এ এসেছে। যেখানে তার থাকার কথা নিদেন পক্ষে ১৩। ডাক্তার বলে এখনি রক্ত দিতে হবে। আম্মুর সাথে রক্তের গ্রুপে তার মিল আছে। বন্ধুরা দৌড়ে আরো দুই ব্যাগ জোগাড় করলো। সুপ্তির আম্মু ক্রমাগত কাঁদতে থাকে, কি অসুখ ডাক্তার তখন কিছুই বলতে পারছে না। এরকম হলে নাকি ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা যায়। আম্মুর অফিসের কলিগের ফুফাতো ভাইএর ছেলের তো তাই হলো। রাত বাড়ার সাথে সাথেই সুপ্তি অস্থির হয়ে যায় বাসায় যাবার জন্য। ডাক্তারের কড়া নির্দেশ, রক্ত না দিয়ে বাসায় যাওয়া যাবে না। আম্মু আব্বুও কোন রিস্ক নেবেন না। কিন্তু ইভানের যে আসার সময় হয়ে যাচ্ছে। সারাটা রাত সুপ্তির অস্থিরতার সাথে কাটে। পরের দিনই সে কান্নাকাটি করে হাসপাতালে থেকে সন্ধায় বাসায় ফিরে আসে। সে কথা দেয় যে রক্ত নিতে সে কালই আবার আসবে। রাতে আম্মু সাথেই থাকতে চায়, কিন্তু সুপ্তি মানা করে। রাত ২টা বাজতেই সে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু ইভান কই?
সুপ্তি ইভান কে অনেক ডাকে। অনেকবার করে ক্ষমা চায়, বার বার করে তার অসুস্থতার কথা বলে। কিন্তু ইভান তো আসে না। কাঁদতে কাঁদতে সুপ্তি ঘুমিয়ে পড়ে।রাত সাড়ে তিনটার দিকে তীব্র অস্বস্তির সাথে তার ঘুম ভাঙ্গে। ঘরে বিকট গন্ধ। এত ঠান্ডা যে সুপ্তি কেঁপে কেঁপে উঠে। গন্ধে সুপ্তির বমি চলে আসতে থাকে। অনেক কষ্টে নাকে হাত চাপা দিয়ে সুপ্তি আয়নার সামনে আসে। ভিতরে আবছা একটা ছায়া। সুপ্তি ডাকে, “ইভান?”
ছায়ামূর্তি ঘুরে তাকায়। সুপ্তি আতংকে স্তব্ধ হয়ে যায়। এ কে? কি ভীষন চেহারার এক বুড়ী। সাদা শনের মত চুল, চোখ দুটো ধক ধক করে যেন জ্বলছে, কি তীব্র জিঘাংসা তার মাঝে। চামড়া শত শত বছরের পুরনো চামড়ার মত ঝুলে পড়েছে। লাল জিহবা মাঝে মাঝে সাপের মত লকলক করছে। খলখল করে বিশ্রীভাবে হেসে উঠলো বুড়ী। সুপ্তির বোধবুদ্ধি সব লোপ পায়। তার পা কে যেন পাঁচ মণ পাথর দিয়ে আটকে রেখেছে; কন্ঠস্বর হয়েছে রুদ্ধ। সে শুধু ভীত শশকের মত চেয়ে রইলো। আবার হেসে উঠলো বুড়ী। অশ্রাব্য এক গালি দিয়ে বললো্‌, “হাত বাড়া সামনে”।
সুপ্তি তীব্র আতংকে মাথা নাড়লো। বুড়ী চিৎকার দিলো, “হাত বাড়া বলছি”।
সুপ্তির ডান হাত তার আয়ত্তের বাইরে। সে প্রাণপণ চেষ্টা করেও তার হাতকে আটকাতে পারলো না, হাত আয়না স্পর্শ করলো।
ভীষণ অট্টহাসিতে ঘর ভরে গেলো। এমন জান্তব ভয়ংকর গা শিউরানো হাসির যে পৃথিবীতে অস্তিত্ত আছে সুপ্তি তাই জানে না। এর জন্ম এ পৃথিবীতে না, অন্য কোথাও। অন্য কোন জগতে। পচা মাংসের তীব্র গন্ধ সইতে না পেরে সুপ্তি বমি করে ফেললো ঘরের মাঝেই। বুড়ি খল খল করে হাসতে হাসতে বললো,
“ইভান কে পেয়েছিস তুই? তোর প্রাণের ইভান? আমিই তোর ইভান। ১০০ বছর পর আজ আমি মুক্তি পেয়েছি। আমি, আজিনাহা! আহ, কি আনন্দ!”
সুপ্তির মাথা কাজ করে না। সে মেঝেতে বসে থর থর করে কাঁপতে থাকে।
“আজ থেকে আমি তোর মাঝেই থাকবো। তুই রাতে যখনই ঘুমাবি, আমি তোর মাঝ থেকে জেগে উঠবো। ১০০ বছর আমি কোন রক্তের স্বাদ পাইনি। আজ আমার রক্ত চাই, অনেক অনেক রক্ত”।
সুপ্তি জ্ঞান হারানোর আগ মূহুর্তে অনুভব করতে পারে, একটা শীতল ছায়া তার মাঝে ঢুকে যাচ্ছে।
সকালে জ্ঞান ফিরে সে দেখতে পায়, আম্মু তাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে চলে এসেছে। তবে সে অনেক সুস্থ বোধ করছে। ডাক্তাররা রিপোর্ট দেখে অবাক। মাত্র ৩ ব্যাগ রক্ত পেয়ে হিমোগ্লোবিন লেভেল বেড়ে ১৬তে ওঠা এক কথায় অসম্ভব। বাংলাদেশের রিপোর্টের অবস্থা দেখে ডাক্তাররা ভীষন রাগারাগি করতে লাগলেন। এই রিপোর্ট অবশ্যই ভুল। কিন্তু চোখও তো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আগের দিন যে মেয়ের চোখ একেবারে কাগজের মত সাদা ছিল, তার তো এখন একদম স্বাভাবিক চোখ। রিপোর্ট নিয়ে আব্বু আম্মুর মাথা ব্যথা নেই। তাদের মেয়ে সুস্থ, তাতেই তারা খুশী। কিন্তু সুপ্তির মাথা এখনো কাজ করছে না। তার সাথে এসব কি হচ্ছে? বাসায় ফিরে সুপ্তি আয়নার দিকে তাকায়। এ যেন একদম স্বাভাবিক আয়না। তার মাঝে কি বুড়ীটা ঢুকে পড়েছে? কই? তার তো একদম স্বাভাবিক লাগছে, যেন কিছুই হয়নি। আর ইভান? ইভানকে কি বুড়ী আয়নায় বন্দি করে রেখেছে? ইভানকে ছাড়া সে বাঁচবে না।
রাত বাড়ার সাথে সাথে সুপ্তি অস্বস্তিতে ভুগতে থাকে। কি যেন তার মাঝে জেগে উঠতে চাইছে। ভীষন ঘুমে তার দুই চোখ জড়িয়ে আসছে। রাত ১২টা বাজতেই সুপ্তি গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। সারাটা রাত সুপ্তি ভয়ংকর ভয়ংকর সব দুঃস্বপ্ন দেখে। সে যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। তার মুখ দিয়ে ভক ভক করে বিশ্রী মাংস পচা গন্ধ বেরুচ্ছে। সে রক্তের স্বাদ পেতে থাকে। সে রক্তে যেন মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। কি বিশ্রী ভাবেই না সে হাসছে। চিৎকার দিচ্ছে, জান্তব উল্লাসে সে যেন ফেটে পড়ছে।
খুব ভোরে তার ঘুম ভাঙ্গে। সারা শরীরে কালসিটে পড়ে গেছে, ভীষন ব্যথা। নিজের দিকে তাকিয়ে তার মাথা ঘুরে ওঠে। টি শার্ট রক্তে মাখা মাখি। বাথরুমে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠে সে, মুখ হাত সবই রক্তে রঞ্জিত। এবং সে জানে অবশ্যই এই রক্ত মানুষের রক্ত। কাঁদতে কাঁদতে সে গোসল করতে থাকে। সে এখন পিশাচীনী। এক ভয়ংকর পিশাচ তার মাঝে ঢুকে পড়েছে। সে যখনই ঘুমাবে, পিশাচ জেগে উঠবে। এখন সে কি করবে?
আম্মু দরজা ধাক্কাতে থাকে, “এই সুপ্তি, তোর রুমে নিশ্চই ইঁদুর মরেছে রে, এত বাজে গন্ধ কেন? আজই রুম ফিনাইল দিয়ে পরিস্কার করাবো বুয়াকে দিয়ে। আগে চল বাইরে যাই”।
সুপ্তি বলে উঠে, “আমি কোথাও যাবো না আম্মু”।
আম্মু ধমকে উঠে, “কথা বাড়াবি না। কত কষ্টে তোর বাবার কাছ থেকে টাকা নিলাম, আর বলিস বাইরে যাবি না?”
সুপ্তি রেডি হয়ে ডাইনিং এ আসতেই শুনলো বুয়া আম্মুর সাথে কথা বলছে উত্তেজিত ভাবে। কয়েক গলি পরেই তার বস্তি। সেখানে নাকি আজকে একটা অদ্ভুত লাশ পাওয়া গেছে। কেউ লাশের গলায় কামড় দিয়ে ধমনী ছিড়ে সব রক্ত শুষে নিয়েছে। পুলিশ কোন কিনারাই করতে পারছে না। সুপ্তি ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকে। এটা অবশ্যই ডাইনী আজিনাহার কাজ। আম্মু তার অবস্থা দেখে বুয়াকে ধমকায়, “যাও তোমার কাজ করো। আমার মেয়েকে ভয় দেখিও না”।
আম্মুর সাথে সুপ্তি বেরোয়। আজ থেকে সে আর ঘুমাবে না। রাতে যত কষ্টই হোক সে ঘুমাবে না। ডাইনীটাকে সে জেগে উঠতে দেবে না। সে জিজ্ঞেস করে, “আম্মু কোথায় যাচ্ছি?”
আম্মু লাজুক ভাবে বললো, “চায়ের সেটটা খুবই পছন্দ হয়েছে বুঝলি। দেখি ওই বাড়ির চৌকিদার যদি এখনো সেটা বিক্রি না করে থাকে, তবে নিয়েই আসি”।
আবার সেই অভিশপ্ত বাড়ি; যেখান থেকে আয়না এসেছে। সুপ্তি আতঙ্কে ফুঁপিয়ে ওঠে, “না না আম্মু, ঐ বাড়িতে যাবো না”।
আম্মু অনুনয় করে, “লক্ষী মা, তুই বাইরে থাকিস, আমি যাব আর নিয়ে আসবো”।
বাড়িটি আগের মতই আছে, ১৫ দিনে কোন পরিবর্তনই হয় নি; তবে সাবেকী আমলের বৈঠক খানার আসবাবপত্র অনেক কমেছে। ভালোই বিক্রি হয়েছে মনে হয়। তাদের দেখেই চৌকিদার বলে উঠলো,
“আমি জানতাম, আপনারা আসবেন। তাই চায়ের সেট তুলে রেখেছি”।
চৌকিদার তীব্র দৃষ্টিতে সুপ্তির দিকে তাকালো। সুপ্তির মনে হলো, উনি সব দেখতে পাচ্ছেন। সব কিছু জেনে যাচ্ছেন। ভয়ে কুঁকড়ে গেলো সে ওই অন্তর্ভেদী দৃষ্টির সামনে। আম্মু চায়ের সেট দামাদামি করে কিনে ফেললেন। সুপ্তি বেরিয়ে যাবে, তখন বুড়ো মানুষটি তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
“তুমি তোমার একটা জিনিস ফেলে গেছো। আমি জানতাম তুমি তা নিতে আসবে”।
সুপ্তি অবাক হয়ে দেখলো, তার হাতে সেই ডায়েরী।
“এটা…… এটা আমার নয়”। ঢোক গিললো সে।
মানুষটি কোন কথা না বলে ডায়েরী বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আম্মু বাইরে থেকে তাড়া দিচ্ছেন। সুপ্তি দেখলো বুড়ো মানুষটির চোখে সহৃদয়তার ছোঁয়া। সুপ্তি হাত বাড়িয়ে ডায়রীটি নিলো। মানুষটি বললো,
“ভালো থেকো। আমারো তোমার মত একটি মেয়ে আছে”।

চার
সুপ্তি বাসায় ফিরেই ডায়েরী খুললো। ১০০ বছরের পুরনো ডায়েরী, কিন্তু সে তুলনায় অবস্থা যথেষ্ট ভালো। পাতা গুলি হলদেটে, কিছু কিছু জায়গায় কালি ছড়িয়ে গেছে; কিন্তু বেশ কিছু লাইন পড়া যায়। ডায়েরীর কিছু পাতা মাঝ থেকে নাই হয়ে গিয়েছে। ডায়েরীর প্রথম পাতায় লেখা, “আমার জীবন নামা”। নীচে লেখিকার নাম দেয়া; মালবিকা রায়। ১০০ বছর আগে এই মেয়েটিও হাসতো, খেলতো, ডায়েরী লিখতো, আজ সে কোথায়? প্রথম দিকে শুধু ঘর কন্নার গল্প। আজ তার বান্ধবী এসেছে, কাল বাবা ঘোড়া্র গাড়িতে চড়ে বেড়াতে নিয়ে যাবে বলেছে। পড়তে পড়তে টের পেলো, সে বাবা মায়ের অতি আদরের কিশোরী কন্যার লেখা পড়ছে। ডায়েরীর মাঝা মাঝি একটি পৃষ্ঠা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। একটি লাইন অতি কষ্টে পড়া যায়,
“আজ বাবা আমাকে চমৎকার একটি আয়না আনিয়া দিয়াছেন। শ্মশান ঘাটের বিখ্যাত তান্ত্রিক বাবাকে উহা দিয়াছেন”।
সুপ্তির গা শিউরে উঠলো। এর পরের পাতা গুলি সবই অল্পবিস্তর পানিতে ভেজা; কালি ছড়িয়েছে। এর পর পাতায় পাতায় যা পড়া গেলো সবই আয়নার গল্প। একটা লাইন পড়ে চমকে উঠলো সুপ্তি,
‘আয়নায় আমার জন্য বাবা রাজপুত্র পাঠাইয়াছেন’।
থর থর করে ভেতর টা কেঁপে উঠলো সুপ্তির। মালবিকাও তার মত রাজপুত্র দেখেছিল। তবে তার রাজপুত্রের নাম কুমার বীরেন্দ্র; ইভান নয়। সুপ্তি বুঝলো, ইভান যথেষ্ট আধুনিক নাম। যুগে যুগে ডাইনী রাজপুত্রের নাম বদলায়। ইভান নামে কেউ নেই, ইভান একটা মায়া। সুপ্তি ফুঁপিয়ে উঠলো। ইভানের বেশ ধরে ডাইনী তার রক্ত নিয়ে হয়েছে শক্তিশালী। সে প্রতারিত; যেমনটি হয়েছিল বেচারী মালবিকা। সুপ্তি কান্না সামলাতে সামলাতে পড়ে চললো। এর পর শুধুই ভালোবাসার গল্প; শুধুই রাজপুত্রের গল্প। সুপ্তির দুই গাল বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো।
বেশ কয়টি পৃষ্ঠা ঝরে গেছে। এর পরের পাতায় দুই তিনটা লাইন কোনক্রমে পড়া যায়। তাতে লেখা,
“আমার রাজপুত্রকে ডাইনী ধরিয়া লইয়া গিয়াছে। ডাইনী আমার মাঝে বসবাস করিতেছে। হায় ভগবান, আমি কি করিব?”
পরের পৃষ্ঠাগুলো মর্মান্তিক। ডাইনী রুপী মালবিকা নিজের বাবাসহ আরো অনেককে হত্যা করে রক্ত খেয়েছে, পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়েছে এক অজানা আতঙ্ক। তীব্র অনুশোচনায় মালবিকা পাগল প্রায়। সে ঘুমায় না, ঘুমাতে চায় না। কিন্তু তারপরো ঘুমিয়ে পড়ে।
সুপ্তি থর থর করে কাঁপতে থাকে। যদি আজিনাহা আজ রাতে তার আম্মু আব্বুকে মারে? অথবা সুকন্যাকে? না

অভিশপ্ত আয়না - By ছন্নছাড়া ত্রিনিত্রি (শেষ পর্ব)

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, August 20, 2011 at 10:55pm
সুপ্তি রান্নাঘরে গিয়ে যত কাগজের প্যাকেট পেলো সব নিয়ে তার রুমে জড়ো করলো। ছোট একটা নড়বড়ে কাঠের টুল ছিল, তাও নিয়ে এলো। ছুরিটা রাখলো তার ডান পাশে। কেরোসিন ঢেলে সে আগুন জ্বালিয়ে দিলো আয়নার সামনে। ধোঁয়ায় সুপ্তি কাশতে লাগলো। তাড়াতাড়ি করতে হবে। আগুন যদি বেশী বেড়ে যায়, তবে বিল্ডিং এ ধরে যেতে পারে। সতর্কতার সাথে সে আগুনে ভাঙ্গা টুলের পা আর কাগজ দিতে লাগলো। ধোঁয়া চারিদিক গ্রাস করে ফেললো। এর মাঝে সুপ্তির ভীষন ঘুম পেতে লাগলো। সুপ্তি টের পেলো আজিনাহা বেরিয়ে আসার তোড়জোড় শুরু করেছে। সুপ্তি জোরে জোরে বলতে লাগলো,
আজিনাহা তুই তোর রাজ্যে ফিরে যা
রক্তপিপাসু তুই নিপাত যা
হত্যাকারী তুই তোর অন্ধকার দুনিয়াতে ফিরে যা।
সুপ্তি টানা বলে যেতে লাগলো। ধোঁয়া তার ফুসফুসে ঢুকে যাচ্ছে, কাশির দমক সামলে সে বলে যেতে লাগলো। ঘুমে তার দুই চোখ জড়িয়ে যাচ্ছে। প্রাণপণ চেষ্টাতেও খুলে রাখা যাচ্ছে না। সুপ্তির মনে হতে থাকলো, আ্জিনাহা জাহান্নামে যাক, আমি একটু ঘুমাই। তখনই তার বাবা-মার চেহারা ভেসে উঠলো তার সামনে। সুপ্তির বুকে নতুন করে বল এলো যেন। সুপ্তি আরো জোরে চেঁচিয়ে উঠলো,
আজিনাহা তুই তোর রাজ্যে ফিরে যা।
উফফ, কি ব্যথা! কেউ যেন ধারালো ছুরি সুপ্তির আঙ্গুলের ফাঁকে চালাচ্ছে। তীব্র ব্যথায় সুপ্তি কাঁদতে লাগলো। কিন্তু মন্ত্র পড়া থামালো না। বরফ শীতল চাই কেউ সুপ্তির নাকে ঠেশে ধরেছে, এক বিন্দু বাতাসের জন্য ফুসফুস আকুলি বিকুলি করছে; সুপ্তি মনে প্রাণে চাচ্ছে সে এখনি মারা যাক। কিন্তু আজনাহা তাকে মরতেও দেবে না। সুপ্তি হাঁস ফাঁস করতে করতে বলতে লাগলো, তুই নিপাত যা। কতক্ষন সে কষ্ট সহ্য করছে সে জানে না, তার এখন কোন বোধও নেই। সে শুধু ভাঙ্গা রেকর্ডের মত একই কথা বলে যাচ্ছে। হঠাৎ তীব্র বোটকা গন্ধে চারিদিক ভরে গেলো। শীতল ভেজা ভেজা স্পর্শ আগুনের উত্তাপ থাকা সত্বেও টের পাওয়া যাচ্ছে। সুপ্তি আরো জোরে জোরে বলতে লাগলো। আজনাহার তীব্র বিদ্রুপাত্মক খল খল হাসির শব্দ শোনা গেলো। সুপ্তির ভয়ে গায়ে কাঁটা দিলো। সে নিজেকে সাহস দিলো, আজিনাহা তোমাকে মারবে না, তুমি ওর আবাস। ভাবতেই ঘেন্নায় তার বমি এলো।
আজিনাহার অশ্রাব্য গালাগালি শোনা গেলো।
“তুই কি চাস? তোর কি ধারণা এসব করলেই আমি চলে যাব? আমি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী! এসবে আমার কিছুই হবে না”। খল খল হাসি বয়ে গেলো চারিদিকে।
সুপ্তি কোন কথা না বলে ছুরি হাতে নিলো।
আজনাহার বিশ্রী কন্ঠ শোনা গেলো,
“তুই যে হাতের ধমনী কাটলে মরে যাবি, তা কি তুই জানিস? তুই মরে গেলে তোর বাবা মার কি হবে? তোর মাও যে আত্মহত্যা করবে তা জানিস?”
সুপ্তি কেঁপে উঠলো। আজিনাহা সন্তষ্টির হাসি হাসলো মনে মনে।
ডাইনী বলে চললো, “তোর বন্ধুরা পরীক্ষা শেষে সেন্ট মার্টিন যাবে, আর তুই যাবি কবরের তলায়। তোকে কেউ মনে রাখবে না”।
সুপ্তি ফুঁপিয়ে উঠলো।
“ছুরি নামিয়ে রাখ বদমাইস মেয়ে। নিজের কথা ভাব। তুই মরলে তুই আর ইভানকে দেখতে পাবি ভেবেছিস? আমি জানি ইভান কোথায় আছে। ইভানকে চাস না তুই?”
সুপ্তি চোখ বুজ়ে রইলো। তারপরে সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, “না না না, ইভান কে চাই না। ও একটা মায়া। তুই জাহান্নামে যা”।
বলেই ছুরি দিয়ে বাম হাতের রেডিয়াল আর্টারি কেটে ফেললো। রক্ত ধারা আগুনে পড়তে লাগলো। আগুন যেন রক্ত পেয়ে পাগল হয়ে গেলো।
আজিনাহা ভয়ংকর ভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলো, “না না না”। সাথে অশ্রাব্য সব গালাগালি।
শেষ শক্তি দিয়ে সুপ্তি তার হাত আগুনের উপরে ধরে রাখলো; এর পর আস্তে আস্তে ঢলে পড়লো। এখন সে ঘুমাবে, শান্তির ঘুম ঘুমাবে। দরজায় কে এখন ঘন্টা বাজাচ্ছে? তারা কি জানে না সুপ্তি অনেক ক্লান্ত?
পরিশিষ্ট:
অভিশপ্ত আয়নাটাকে সুপ্তি ভাঙ্গার অনেক চেষ্টা করেও না পেরে সেটিকে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দিয়েছে। ডায়েরীটি যে খুব যত্ম করে বুড়ো মানুষটিকে ফেরত দিয়ে এসেছে। বুড়ো তাকে চা খাইয়েছে, এবং যাবার সময় বলেছে, “আমি জানতাম, তুমি ভালো থাকবে”।
সুপ্তির রূপকথার রাজকুমার এখনো আসে নি। তবে সুপ্তি জানে যে সুমন তাকে নিয়ে লুকিয়ে কবিতা লেখে। প্রায়ই সে সুমনের ডায়রীর মাঝে লুকিয়ে গোলাপ, কৃষ্ণচূড়া এমনকি বাঁদরলাঠি ফুলের পাপড়িও রেখে আসে। সুমন এখনো ধরতে পারেনি কাজটা কে করে।
৬ মাস পরের ঘটনাঃ
কামরাঙ্গি চরের বিন্তি প্রতিদিনের মত আজ সকালেও দাঁতন করতে করতে নদীর পাড়ে এসেছে। দূরে কিছু একটা চক চক করছে। আলো পড়লেই ঝিকিয়ে উঠছে। আয়না নাকি? বিন্তি আগ্রহ ভরে এগিয়ে যেতে থাকে।

।। শ্মাশানঘাট ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 19, 2011 at 11:10pm
সজল ব্যাটা একেবারে মহা হারকিপটে । কখনও ভুলেও ওর কাছ থেকে একটা টাকা খসানো যায় না । এমন নয় যে ওরা গরীব। টাকা পয়সা নেই । টাকা শহরে ও’র বাবার চার-চারটে বাড়ি । এখানে সেখানে ছড়ানো ছিটানো নানা রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য । ভাইগুলো সব বিদেশে লেখাপড়া করছে । দু’দিক থেকে টাকা পয়সা ওদের বাসায় ঢুকছে কিন্তু বেরুবার পথ পাচ্ছে না । তবুও ব্যাটার এমন কিপটেমি আমাদের আর সহ্য হয় না । দিনের পর দিন আমাদের টাকায় এটা সেটা খেয়ে দেয়ে বেশ আছে । তাই আমরা একদিন ঠিক করলাম যে, ওকে একটা শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো । তাতে যাদি ওর হাড় কিপটেমি ভাবটা দূর হয়। রতনদের বাড়ী বুড়িগঙ্গা নদীর খুব কাছে । আমাদের স্কুল থেকে ওদের বাসাটা কাছে হওয়ায় স্কুল ছুটির পর কিংবা বন্ধের দিনগুলোতে আমাদের বেশির ভাগ আড্ডাগুলেই রতনদের দোতালার ছাদেই হতো । রতনদের ছাদ থেকে বড়ীগঙ্গা নদীর পুরোটা দেখা যায় । বিকেল বেলা নদীর বুকে ব্যস্ত লঞ্চগুলো দেখতে বেশ লাগে । তাই আড্ডার জন্য এর চেয়ে আর্দশের জায়গা আর হয় না । যে কোন ভাল জিনিষের পাশাপাশি যেমন একটা খারাপ জিনিষ থাকে । ঠিক তেমনি রতনদের ছাদ থেকে বুড়ীগঙ্গার সন্ধ্যাকালীন মনোরম দৃশ্য দেখার পাশাপাশি আরেকটি খারাপ জিনিসও খুব ভাল করে দেখা যায় । সেটি হলো - পোস্তগোলা শ্মশানঘাট ।
এটি মনে হয় ঢাকা শহরের একমাত্র শ্মশানঘাট । তাই মরদেহ পোড়ানোর ধুম লেগেই থাকে । কারো জন্য সেটি শেষ যাত্রা হলেও আমাদের জন্য শ্মশানঘাটটি অতি ভয়ন্কর একটা জায়গা। কেননা এই শ্মশানঘাটটি নিয়ে নানান ভৌতিক ঘটনা প্রচলিত আছে । যেগুলোর বেশির ভাগই খুব ভয়ন্কর । শুনলেই গা শিনশিন করে উঠে । শ্মশানঘাটে নাকি রাতের অন্ধকারে প্রায়ই - তেনাদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় । বিশেষ করে অমাবশ্যার রাতে । তখন যদি কেউ তেনাদের সামনে পরে তাহলে আর রক্ষা নাই । নির্ঘাত পরের দিন হয় মৃতদেহ পাওয়া যাবে নয়তো পাগল অবস্হায় পাওয়া । তাই আমরা পারতে খুব একটা ওদিকটা মারাই না । এড়িয়ে চলি ।
রতনদের ছাদ থেকে প্রায়ই দেখা যায় শ্মশানঘাটে কুন্ডুলি পাকিয়ে মরদেহ পোড়ানোর ধোয়া আকাশে উঠে যাচ্ছে । বাতাস আমাদের দিকে বইতে থাকলে চামরা পোড়ার একটু গন্ধও পাওয়া যায় বলে আমার মনে হয় । যদিও গন্ধ পাওয়ার ব্যাপারটা কেউই স্বীকার করে না । তবুও আমার মনে হয়েছে আমি বার দু’য়েক পোড়া চামরার গন্ধ পেয়েছি । একদিন সাহস করে আমরা ক’জন মিলে গিয়েছিলাম শ্মশানঘাটে লাশ পোড়ানো দেখতে। কিন্তু সে দৃর্শ্যটা আমি সহ্য করতে পারিনি ভয় পেয়ে চলে এসেছি । দু-তিন জন লোক বিরাট বিরাট লাঠি দিয়ে নেড়ে চেড়ে মরা পোড়াচ্ছে । দেখলেই গা ঘুলিয়ে উঠে। আমাদের মধ্যে ফিরোজই সব চাইতে সাহসি । ফিরোজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো লাশ পোড়ানো দেখেছে । লাশ পোড়ানো শেষে ছাইগুলো যে একটি ছোট কলসিতে ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয় ও সেটাও দেখে এসেছে । সেই ফিরোজকে একদিন ছাদে দাঁড়িয়ে শ্মশানঘাটটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়তে দেখলাম । আমরা তখন কেরাম খেলছিলাম । আমরা বলতে- আমি , বাপ্পি ,তপন আর সজল । রতন গিয়েছিল নীচে আমাদের জন্য ঠান্ডা পানি আনতে । ফিরোজ একটু দেরি করে আসায় খেলায় অংশ গ্রহন না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কখনও নদী আবার কখনও শ্মশানঘাটটি দেখছিল । ওকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে দেখে আমি আর বাপ্পি এগিয়ে গিয়ে ওর কাধে হাত রেখে - জিজ্ঞেস করলাম কিরে কি হয়েছে?
- না কিছু না । ফিরোজ মাথা নেড়ে কিছু না বলে আমাদের এড়িয়ে যেতে চাইল ।
- কিছু না বললেই হলো ! আমি স্পস্ঠ তোকে বোয়াল মাছের মতো বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে দেখলাম ।
- বললাম তো কিছু না । এমনি ....
- দেখ মিথ্যা বলবি না । আমরা না তোর বন্ধু । বাপ্পি ফিরোজ এর কাধে হাত রেখে বলল ।
- না, মানে শ্মশানঘটটা দেখে ভাবছিলাম -মানুষ মরে গেলেই তো সব শেষ তাই না ? ফিরোজ আবারও উদাস হয়ে বলল ।
- তা তো ঠিকই মরে গেলেই তো সব শেষ । বলে আমিও ওর সঙ্গে মাথা নাড়ালাম ।
- মরে গেলে সব শেষ হবে কেন ? মরে গেলে তো মানুষ ভূত হয়েওতো টিকে থাকার চেষ্টা করে । তপন এর কথায় আমরা সবাই হেসে উঠলাম ।
- শুন ব্যাটা ভূত বলে আসলে কিছু নাই । সব মনের ভূল । সজন বীরের মতো বলল ।
- তুই জানস না , আমাদের ঠাকুর মারা বলেন - যারা বেঁচে থাকতে অন্যায় জুলুম করে তারা মরে গেলে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়ায় ।
- তোর দাদি মার কি ভাবে জানলো এ কথা ? তারা কি ভূত প্রেত দেখেছে ? সজল তপনকে একেবারে তুচ্ছ তাচ্ছিল করে প্রশ্ন করল ।
- দেখেছেই তো । তপন আমতা আমতা করে উত্তর দিল ।
- যতোসব বাকোয়াস কথা ।
- বাকোয়াস না , দিদা বলছে দাহের পর তিন চার ঘন্টা পর্যন্ত নাকি তেনাদের আত্মা শ্মাশানঘটে ঘুরে বেড়ায় । তখন নাকি তেনাদের দেখাও যায় ।
- তোর দিদা চাপা মেরেছেরে । পুরো আজেন্টিনা চাপা মেরেছে। বলে সজল হো হো করে হাসতে লাগল ।
- তোর খুব সাহস মনে হচ্ছে যে । ফিরোজ সজলকে উদ্দেশ্য করে বলল ।
- সাহসই তো , তোর মতো নাকি যে, দিনের বেলায় শ্মাশানঘাটে ঘুরে এসে বাহাবা ফলাবো । আমি চাইলে রাতেও শ্মাশানঘাট ঘুরে আসতে পারি ।
- তাই নাকি ! তাহলে প্রমাণ দিয়ে দে ? দেখবো কতো বড় বুকের পাটা । ফিরোজ তেতে উঠে বলল।
- প্রমাণ লাগবে কেন , যা সত্য তাই বললাম ।
- কি ভাবে বুঝবো যে তুই রাতের বেলা শ্মাশানঘাট থেকে ঘুরে আসতে পারবি ? আমি বললাম ।
- আমি ইচ্ছে করলে প্রমাণও দিতে পারি কিন্তু দিমু না । কিন্তু দিমু না , প্রমান দিয়ে আমার লাভ কি । আমি বুঝলাম সজল ধান্ধা খুঁজছে ।
- যদি তুই রাতের বেলা শ্মাশানঘাট থেকে ঘুরে আসতে পারিস তা হলে তুই যা খেতে চাবি তাই তোকে খাওয়াবো । ফিরোজ বলে আমাদের সবার দিকে তাকালো।
- হু যা তাই খাওয়াবো । বলে আমরা সবাই মাথা নাড়লাম ।
- আবে রাখ তোদের খাওয়া দাওয়া । নগদ মাল কতো দিবি তা ক ?
- যা , সবাই মিলে তোকে একশ টাকা দিমু ।
- দিবি তো ? সজল এর চোখ দু’টো চকচক করে উঠতে দেখলাম ।
- অবশ্যই দেবে । তবে আমাদের কথাও তোকে শুনতে হবে । ফিরোজ বলল ।
- কি কথা ?
- তুই শ্মাশানে রাত ১২টা পরে যাবি । বলে ফিরোজ আমাদের দিকে চেয়ে একটু হাসল । আমি মনে মনে ভাবলাম রাত ১২টা কথাশুনে সজল হয়তো পিছিয়ে যাবে । কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ও বলে উঠলো - রাত ১২টা কেন ? মাল পেলে রাত ১টা’র পরে যেতেও রাজি আছি ।
- তাহলে আজ রাতেই যা । ফিরোজ বলল ।
- ওকে নো প্রবলেম । আগে মাল দে । আমি বাকির কাজ করিনা । জানস তো বাকি কাজ ফাঁকি । আমরা আমাদের সবার পকেটে যা ছিল তা মিলমিশ করে একশটাকা জোগার করে সজল এর হাতে তুলে দিলাম । তপন শুধু বলল ও আসতে পারবে না । এতো রাতে নাকি ও কিছুতেই বাসা থেকে বেড় হতে পারবেনা । সবাই মিলে ঠিক করা হলো যে, রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে আমরা যার যার মতো রতন এর বাসার নীচে চলে আসবো । তারপর ১২টা বাজলে সজল চলে যাবে শ্মাশানে আর আমরা শ্মাশানের কাছে কর্টন মেলের গেটে অপেক্ষা করবো ।
দুই
স্কুল বন্ধ থাকলেও এতো রাতে বাসা থেকে বেড় হওয়াটা আমার জন্য খুব একটা সহজ হলো না । শেষমেস ছোট মামাকে সব খুলে বলার পর মামা নিজেই আমাকে নিয়ে বেড় হলেন । রতনদের বাসায় নীচে আসার পর দেখলাম রতন, ফিরোজ, বাপ্পি অপেক্ষা করছে ।
সজল কোথায় জিজ্ঞেস করাতে ফিরোজ বলল - ও শালায় এখনও আসেনি ।
- মনে হয় ভেগেছে । রতন ফিরোজ এর কাধে হাত রেখে বলল।
- টাকা নিয়েছে না, ভেগে যাবে কোথায় ? ডাবোল আদায় করে ছাড়বো । আমাদের সঙ্গে মামদো বাজি চলবে না । ফিরোজ উত্তেজিত হয়ে বলল । আমি হাতঘড়ি দেখলাম রাত পৌনে ১২টা বাজে । একটু যেন শীতও পড়ছে । তবে আকাশ বেশ পরিস্কার । সাদাসাদা মেঘ মাথার উপড় দিয়ে উড়ে চাচ্ছে। আকাশে বিশাল রুপালী একটা চাঁদ । আমি মুগ্ধ হয়ে আকাশ দেখতে লাগলাম । বাপ্পি কোন কিছু না বললেও ঘুনঘুন করে গান গাইছে । ছোট মামাকে দেখলাম একটু দূরে সড়ে গিয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। আমরা যখন সজল আসবে না ভেবে ফিরে যাবার বলো ঠিক করে ফেলেছিলাম । ঠিক সে সময় সজল আসল । ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ১২টা বাজে । সজল এসেই আমাদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল- চল, যাওয়া যাক । সজলকে দেখে আমার কিছুটা অন্যমনন্স্ক আর কেমন যানি চুপচাপ মনে হলো । আমি ভাবলাম হয়তো সাহস দেখাতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফান্দে পরে গেছে সেই জন্য মন খারাপ । আমি ওর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললাম - কিরে সজল ! ভয় লাগছে ? যাওয়া বাদ দিবি?
- না , চল, যাওয়া যাক । সজল বেশ গম্ভীর ভাবে বলল ।
- তোর খারাপ লাগলে, থাক না ।
- আহা : বিরক্ত করিস না, বললাম তো চল ।
- কি হইছে রে ? ফিরোজ আমার পাশে এসে জিজ্ঞেস করল ।
- না , কিছু না । আমি জিজ্ঞেস করছিলাম ওর খারাপ লাগছে কিনা ।
- কিরে সজলা বাদ দিবিনি যাওয়া ? ফিরোজ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল । ফিরোজ এর বলার মধ্যে কেমন একটা খোঁচার আভাস পেলাম । সজল কিছু না বলে হাঁটতে লাগল ।
হঠাৎই সবাই কেমন যানি চুপচাপ হয়ে গেছি । সবাই নীরবে হাঁটছি । বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পরে আমরা কর্টন মেলের পেছনের গেটে এসে দাঁড়ালাম । কর্টন মেলের পেছনটা বেশ নীরব । সামনের দিকের মেইন রাস্তায় দু’চারজন লোকজন থাকলেও এদিকটা একেবারে জনশূন্য ।
আমরা দাঁড়িয়ে পরলেও সজল কিন্তু দাঁড়ালো না । ও সোজা শ্মাশান ঘাট এর দিকে হাঁটতে থাকলো । আমি প্রায় দৈড়ে গিয়ে বললাম - সজল দাঁড়া , ভাল করে ভেবে দেখ যাবি কি না !
- ভাবাভাবির কিছু নাই । তোরা এখানে থাক আমি শ্মাশান ঘাট থেকে ঘুরে আসছি ।
- আমরা বুঝবো কি করে যে, তুই আসলেই শ্মাশান ঘাটের ভেতরে গেছিস । বাপ্পি এসে প্রশ্ন করল ।
- আমি প্রমাণ নিয়ে আসবো ;
- কি প্রমাণ আনবি শুনি ।
- মরা পোড়ানোর লাকড়ী নিয়ে আসলে চলবে ? কথাটা বলে সজল খেক খেক করে হাসতে হাসতে এগিয়ে গেল । এ সজলকে আমার কেমন যানি খুব অপরিচিত মনে হলো । মনে হলো - ওকে যেন আমি ঠিক চিনিনা । এই প্রথম দেখলাম । ওর হাসির শব্দে আমার পুরো শরীর কাটা দিয়ে উঠল । আমি কোন কিছু না বলে দাঁড়িয়ে রইলাম । আমাদের চোখের সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সজল এক সময় অন্ধকারে মিলিয়ে গেল । আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি চাঁদটা ততোক্ষনে মেঘের আড়ালে চলে গেছে । আমার কেন যেন খুব ভয় ভয় করতে লাগল । সবাই কেমন চুপচাপ হয়ে আছি । কারো মুখেই কোন কথা নেই । ছোট বেলা থেকে পড়ে এসেছি - সময় আর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা । কিন্তু এখানে আসার পর দেখলাম সময় কি করে স্লো হয়ে যায় । ঘড়ির কাটা যেন আর চলতেই চাচ্ছে । সময় যেন আটকে আছে মহাকালের আর্বতে। (পরের খণ্ডে সমাপ্ত) শেয়ার করছেনঃ Sanjida Haque

। শ্মাশানঘাট ।। (শেষ অংশ)

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, August 20, 2011 at 10:34pm
একটু একুটু করে আধ ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পর সজলকে ফিরতে না দেখে আমরা সবাই অস্থির হয়ে উঠলাম । মনে মনে এই ভেবে ভয় পাচ্ছি সজল এর কোন বিপদ হলে ওর বাবা মাকে আমরা কি বলব ? সবাই কি ভাববে আমাদের । আমার বাবা তো আমাকে পিটিয়েই মেরে ফেলবে ।
ভয় মানুষের কল্জে শুকিয়ে যায় শুনেছি কিন্তু আমার বেলায় দেখলাম ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে । মনে হলো একটু পানি খেতে পারলে ভাল হতো । আমরা সবাই অস্থির হয়ে পায়চারি করছি । ছোটমামা একটা গাছের গুড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে আছেন । ফিরোজ একটু পর পর চুক চুক শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করছে ।
আরো আধ ঘন্টা যাবার পরে আমি বললাম - চল আমরা এগিয়ে দেখি ও এখনও আসছে না কেন ? মামা বললেন - তাই চল, আমার মনে হয় ওর কোন বিপদ হয়েছে । ফিরোজ কিছু বলতে যাচ্ছিল - বাপ্পি বলে উঠল ,তোরা যা, আমি বাবা মরে গেলেও শ্মাশানে যাবো না । মরতে হয় এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে মরে যাবো, তবু বাবা শ্মাশানে যাবো না । অগত্য আমরা রতন আর বাপ্পিকে রেখে রওনা দিলাম । যাবার সময় ওদের বলে গেলাম, আমরা যদি আধা ঘন্টার মধ্যে না ফিরি তাহলে ওরা যেন যা ভাল মনে করে তাই করে । ওরা একজন অন্যজনের গায়ে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা নাড়ল ।
শীতটা যেন হঠাতই বেড়ে গেছে । আমরা একজন অন্যজনের গা ঘেষে চাঁদের আলোয় হাঁটছি । কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই যেন বোবা হয়ে গেছি । বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর ফিরোজ হাত দিয়ে সামনের দিকটা দেখিয়ে বলল- ঐ যে দেখ, কে যেন হেঁটে যাচ্ছে । ওর হঠাৎ কথা বলে উঠায় আমি বেশ চমকে গেলেও সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম , সত্যিই কে যেন খুব ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে শ্মাশানের দিকে যাচ্ছে । আমার সাহস বেড়ে গেল - আমি বললাম সজল না তো ?
মামা বললেন - মনে হয় না, এক ঘন্টা আগে রওনা দিয়ে ও এতোক্ষন নিশ্চয়ই এখানে দাঁড়িয়ে থাকেনি !
- তাহলে হয়তো নাইট গার্ডটাড কেউ হবে, তারাতারি পা চালা কাছে গিয়েই দেখি না কে ? বলেই ফিরোজ জোড়ে হাঁটতে লাগল । আমি আর মামাও জোড়ে পা চালালাম ।
হাঁটতে হাঁটতে নদীর পার দিয়ে আমরা অনেকটা দূরে চলে এসেছি । আমাদের সামনে হাঁটতে থাকা আবয়াবটাকে এবার বেশ স্পস্টই দেখা যাচ্ছে । চাঁদের আলোয় চাদরে শরীর ঢেকে হেলে দূলে লোকটা এগিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্য করে আমারা অবাক না হয়ে পারলাম না । আমরা জোড়ে জোড়ে পা চালিয়েও লোকটার কাছাকাছি হতে পারছি না । আমার কাছে মনে হলো লোকটাও যেন আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় ফিরোজ জোড়ে হাক দিয়ে বলল- এই যে শুনছেন ? একটু দাঁড়ান না ,আমরাও ওদিকে যাবো ।
লোকটা আমাদের দিকে না তাকিয়েই মেয়েলি গলায় মিনমিন করে বলল- এগিয়ে আসো । কিন্তু, আমরা আরো জোড়ে পা চালিয়েও লোকটার কাছাকাছি হতে পারলাম না । এভাবে আরো কিছুক্ষন হাঁটার পর হঠাৎ মামা বললেন - দাঁড়াও তোমরা, আমারা মনে হয় আমরা খারাপ জিনিষের পাল্লায় পরেছি । আমি আর ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম । সমগ্র শরীর দিয়ে ঘাম টপটপ করে পরছে । ফিরোজ প্রশ্ন করল - খারাপ জিনিষ মানে কি মামা ?
- খারাপ জিনিস মানে হচ্ছে খারাপ জিনিষ । দেখছো না আমরা কতো চেষ্টা করেও ওটার কাছাকাছি হতে পারছি না । মামার কথা শুনে আমার সারা শরীর ঝিম ঝিম করে উঠল । ফিরোজ কিছু বলল না । চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল । মামা বললেন - দাঁড়িয়ে থেক না হাঁটতে থাকো ওটা যদি বুঝতে পারে যে আমরা ভয় পেয়েছি তাহলে খবর আছে । আমরা ধীর পায়ে আবারও হাঁটতে লাগলাম ।
একসময় ফিরোজ ফিসফিস করে বলল- মামা চলেন ফিরে যাই । ফিরোজ যেন আমারই মনের কথাটা বলল । মামা বললেন- আমরা অনেকটা পথ চলে এসেছি এখন সামনে যাওয়া যা,পেছনে যাওয়া তার চাইতেও ভয়ন্কর । দোয়া দুরুত পড়ে বুকে ফু দিয়ে হাঁটতে থাকো । আমি মনে মনে দোয়া দুরুত পড়তে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না । কিছুই মনে পড়ল না । বিরবির করে উল্টা পাল্টা কি সব পড়লাম ।
একটা মোড় ঘুরে শ্মাশান ঘাটের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ করে চাঁদটা মেঘের আড়ালে চলে যাওয়ায় চারিদিক অন্ধকারে ঢেকে গেল । আমি আর ফিরোজ ভয় পেয়ে মামার জামা টেনে ধরলাম । মামা বিরবির করে বললেন - ভয় পাবি না ,ভয় পাবি না । একদম না । একদম না । মামা ভয় পেতে না করলেও আমি কিন্তু ঠকঠক করে কাঁপছি । আর মামাকে ধরে একটু একটু করে এগুচ্ছি । শ্মাশান ঘাটের গেটে আসার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদটাঁ আবার মেঘের আড়াল হতে বেড় হয়ে এলো । মনে মনে আলাহকে ধন্যবাদ দিলাম । ততোক্ষনে আমাদের সামনে হাটতে থাকা লোকটা কোথায় যেন উদাও হয়ে গেছে ।
লোকটাকে কোথাও আর দেখলাম না । আমরা গেট দিয়ে শ্মাশানের ভেতরে ঢুকলাম । পুরো শ্মাশানে শুনশান নীরবতা । ঝিঝিপোকাও ডাকছে না । আমরা সজলকে খুঁজতে লাগলাম । কিন্তু কোথাও ওকে দেখা গেল না । গেটের কাছে দাঁড়িয়েই ফিরোজ - এই সজল, বলে বার দুয়েক ডাক দিলো । কিন্তু কেউ উত্তর দিলো না । রাতের অন্ধকারে সে ডাক প্রতিধ্বর্ণিত হয়ে ফিরে এলো।
মামা বললেন - চলো ভেতরে দিকে যাওয়া যাক , হয়তো ও ভেতরে আছে । মামা আমাদের জন্য আর অপেক্ষা না করে পা বাড়ালেন । আমরাও দুরুদুরু বুকে মামার পেছন পেছন যেতে লাগলাম । কিছুটা ভেতরে ঢুকে বামপাশে ঘুরতেই কিছুটা দূরে চারকোনায় চারটা কালো লোহার মোটা রর্ড পোতা উচু একটা পাঁকা জায়গা দেখে বুঝলাম - এখানেই লাশ পোড়ানো হয় । তার কিছুটা দূরেই ডান পাশ দিয়ে নদীটা দেখা যাচ্ছে । আমি ডাক দিলাম - সজল ! এ্যই সজল , তুই কোথায় ? নিজের গলা নিজের কাছেই কেমন অপরিচিত মনে হলো ।
- সজল এখানে নেই , মামা কথাটা বলে নদীর দিকে এগিয়ে গেলেন । আমরাও পেছন পেছন গেলাম । নদীর ঘাটটাও ফাঁকা কেউ নেই । এদিক সেদিকে ভাঙা মাটির হাড়ি, পাতিল , কলসি পরে আছে । বাম পাশের একটা গাছ থেকে কুরকুর করে একটা অচেনা পাখি ডেকে উঠতেই আমরা চমকে উঠলাম । একবার মনে হলো ঝেড়ে একটা দৌড় মারি । আমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মামা বললেন- আমার এখন মনে হচ্ছে, সজল তোদেরকে ফাঁকি দিয়েছে । ও এদিকটায় আসেইনি । আমি বললাম -হতেই পারেনা মামা, ওতো আমাদের সবার চোখের সামনে দিয়ে এদিকে আসলো ।
- আসলো তো আমিও দেখলাম । কিন্তু তাহলে গেল কৈ ?
- কোন বিপদ আপদ হয়নি তো ? ফিরোজ ফিসফিস করে বলল । ঠিক এমন সময় মামা বলে উঠলেন - ঐটা কে রে ? সঙ্গে সঙ্গে আমি আর ফিরোজ চমকে উঠে মামার দেখানো হাত বরাবর লাশ পোড়ানোর বেদিটার দিকে তাকালাম । তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে ফিরোজ বলল কোনটা মামা ?
- ঐ যে বেদিটার বামপাশের রডটার কাছে বসে আছে । আমার বুকের ভেতরটা তখন ধকধক করছে । হাত পা’গুলো ঠকঠক করে কাঁপছে । মনে হলো জ্ঞান হারিয়ে পরে যাবো । ভাল করে তাকিয়ে দেখি সত্যিই কে যেন হাঁটুতে ভর দিয়ে বেদীটায় বসে আছে । মামা জোড়ে জোড়ে বললেন - কেরে, কে ওখানে ? কেউ উত্তর দিল না । মামা এবার এগুতে লাগলেন । আমরাও ঘোরের মধ্যে মামার পেছন পেছন যেতে লাগলাম । বেদীর কাছে ছাঁয়াটার কাছাকাছি হতেই সেটি আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়ালো । দেখে মনে হলো না, কোন তারা আছে । মামা আবারও বললেন- কে ? কে ওখানে ?
আমার কাছে মনে হলো, কে যেন নাকি স্বরে উত্তর দিল - আমি?
- আমি কে ? মামা আর একটু জোড়ে জিজ্ঞেস করলেন । ছাঁয়াটা প্রথমে কিছু না বললেও হঠাৎ ঘোৎঘোৎ শব্দ করে বলে উঠল তুই কে রে শুয়োর ? আমাকে জিজ্ঞেস করিস আমি কে ?
আমরা চমকে উঠলাম । কেননা ছাঁয়াটা চোখের পলকে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে । হালকা পাতলা শরীরে লাল টকটকে টু-টো চোখ । আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার দসা হলো । মনে হলো আমি বুঝি ভয়েই মরে যাবো । হঠাত করেই যেন চাঁদটা আবার মেঘের আড়ালে চলে গেল । আমি আর ফিরোজ মামার জন্য অপেক্ষা করলাম না - ওরে মাগো বলে ঝেড়ে দৌড় মারলাম গেটের দিকে । টের পেলাম মামাও আমদের সঙ্গে দৌড় লাগাল । আমরা গেটেই কাছে আসতেই ধুমধাম বিকট শব্দ করে গেটটা বন্ধ হয়ে গেল । আমরা তিনজন আছড়ে পড়লাম গেটের উপড় । ভয়ে আমি জ্ঞান হারা হয়ে গেছি । গেটের মধ্যে দু’হাত দিয়ে আঘাত করতে করতে হিস্টিরিয়ার রোগির মতো দরজা খোলার জন্য চিৎকার করতে লাগলাম । পেছন ফিরে দেখি ছাঁয়াটা হাসতে হাসতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে । আমরা যা যা বলে চিৎকার করতে লাগলাম । কিন্তু ছাঁয়াটা বাতাসে ভেসে ভেসে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতেই লাগল । মনে মনে ভাবলাম আজই বুঝি জীবনের শেষ দিন । হে আল্লাহ, মাফ করে দাও । মাফ করে দাও , বলে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম । ছাঁয়াটা আমাদের কাছ থেকে যখন হাত তিনেক দূরে, ঠিক সে সময় কে যেন খুব গম্ভীর গলায় বলে উঠল - দাঁড়া ? টোন্ট মুভ । সঙ্গে সঙ্গে ছাঁয়াটা থেমে গেল ।
আমি চমকে তাকিয়ে দেখি নদীর কাছে ভাঙা হাড়িগুলোর কাছে আরেকটা খুব লম্বা ছাঁয়া দাঁড়িয়ে আছে । ছাঁয়াটা লম্বা একটা আলখাল্লা পরে আছে বলে আরো লম্বা লাগছে । চুলগুলো কানের দু’পাশে পরে আছে । ছাঁয়াটার হুকুমে আমাদের দিকে আসতে থাকা ছাঁয়াটা থেমে গিয়ে ভয়ন্কর ভাবে গোৎগোৎ শব্দ করতে করতে হুকুমকারীর দিকে ছুটে গেল । কিন্তু হুকুমকারী ছাঁয়াটার দিকে দু’হাত উপরে তুলেতেই ছাঁয়াটা ছিটকে এক দিকে পরে গিয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেল ।
আমরা এবার হুকুমকারী ছাঁয়াটার দিকে তাকালাম - দেখলাম ছাঁয়াটা আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে । আর ঠিক সে সময় ঘটাং করে গেটটা খুলে গেল । আমরা আর দাঁড়ালাম না ঝেড়ে দৌড় লাগালম । এক দৌড়ে কর্টন মেলের গেটে । কর্টন মেলের ঘেটে আসতেই দেখি রতন ওর বাবা-চাচাদের ডেকে এনেছে সবাই মিলে - শ্মাশানে যাবার জন্য প্রস্তুত হোচ্ছিল। আমরা ফিরে আসায় সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো । সজল কোথায় জিজ্ঞেস করাতে রতন বলল- ও ওর বাসাতেই আছে । ওর বাবার সঙ্গে আমার আব্বুর কথা হয়েছে । ও বাসায় গেল কি ভাবে ? জিজ্ঞেস করতে রতন কিছু বললো না । বলল কাল কথা হবে । এখন বাসায় যা ।
পরিশেষ : পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মার কাছে শুনি, সজল এসেছে । ড্রয়িং রুমে বসে আছে । আমি ড্রয়িং রুমে ছুটে গেলাম । ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি ছোট মামা সজলের সঙ্গে কথা বলছেন । আমাকে দেখে সজল উঠে দাঁড়াল । আমি বললাম - তুই ঠিক আছিস তো সজলা ? সজল মাথা নেড়ে পকেট থেকে দু’শো টাকা বেড় করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল - আমায় মাফ করে দে, আমি কাল রাতে ভয়ে তোদের কাছে আসতে পারিনি । খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । এ্যই নে তোদের বাজির দু’শো টাকা । আমার তো আক্কেল গুরুম সজলা বলে কি ? তাহলে গতরাতে আমরা কার জন্য শ্মশান ঘাটে গেলাম ? কেই বা আমাদের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে শ্মাশান ঘাটে গেল ? তাহলে কি ওটা সজল ছিল না ? ছিলো অন্য কেউ ??

শেষ রাতের ট্রেন

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, August 20, 2011 at 7:09pm
"এই চা গরম -চা গরম " - চিকন একটা গলায় চিৎকার করে চলেছে মিশকালো একটা লোক- হাতে এক বিশাল চায়ের ফ্লাক্স- চিল্লাতে চিল্লাতে রাজু সাহেবের সামনে মিনিট তিনেক ধরে ঘুর ঘুর করছে। যত বার রাজু সাহেবের সামনে যাচ্ছে ততবার রাজু সাহেব বিরক্ত হচ্ছেন- কিন্তু চা ওয়ালার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। লাকসামের রেলস্টেশনের ওয়েটিং এ রাজু সাহেব আজ রাত্রের গুটি কয়েক যাত্রির মাঝে একজন। স্যুট বুট পড়া বলে রাজু সাহেবের দিকে বার বার এগিয়ে আসছে একের পর এক হকার। তিনি সবাই কে ফিরিয়ে দিয়েছেন। উনার মা উনাকে ভরপেট খাইয়ে দিয়েছে। আর পই পই করে বলে দিয়েছে যেন তিনি কোন রাস্তার খাবার না খান। আর মায়ের কথা তিনি কোনদিন ফেলতে পারেন না। "এই ডিম- ডিম ডিম- সিদ্ধ ডিম"- বলে একটা ছোট বাচ্চা এসে ডিমের ঝুড়িটা রাজু সাহেবের সামনে রেখে বলল-
"স্যার একটা ডিম নেন- অনেক ভাল লাগবো- খাইবেন? দিমু? ছুইলা?"
বলেই একটা ডিম নিয়ে ছোলা শুরু করে দিল। রাজু সাহেব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন ডিম ওয়ালা ছেলেটার দিকে। তারপর গলাটা একটু চড়িয়ে বললেন- "তোমাকে আমি কি ডিম ভাংতে বলসি? তুমি ডিম ভাংলা কেন?"
হলদে দাঁত বের করে ছেলেটা একগাল হেসে বলল- "স্যার সবাইরে আট ট্যাহা কইরা দেই- আপনেরে ছয়টাহায় দিমু- নেন খাইয়া দেহেন- কেমুন মজা।"
বলে ডিমটা একটা কাগজে নিয়ে চামচ দিয়ে দুই ভাগ করে নুন ছিটিয়ে দিল রাজু সাহেবের হাতে। রাগে মাথা জ্বলতে শুরু করল উনার। কিন্তু একটু পড়েই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন- না আমি খাব না। তুমি টাকা নিয়ে বিদায় হও। বলেই মানিব্যাগ থেকে দশ টাকার একটা নোট দিলেন ছেলেটাকে। ছেলেটা নোট টা নিয়ে ডিম টা রাজু সাহেবের পাশে ব্যাঞ্চে রেখে চলে গেল হন হন করে। সেই ছেলেটার চলে যাওয়া দেখে উনার মাথার ভেতর রাগে জ্বলতে শুরু করল। কিন্তু তিনি মনে মনে বিড় বিড় করে কি যেন একটা বলে আবার মনযোগ দিলেন ট্রেন লাইনের দিকে তাকিয়ে থাকা কে। রাজু সাহেব থাকেন ঢাকায়। একা একটা ফ্লাট ভাড়া করে। উনি ঢাকা হাইকোর্টের একজন ঊকিল। মা থাকেন লাকসামের ফুল্গ্রামে। উনি অনেক চেয়েছেন মাকে সাথে করে ঢাকায় নিয়ে আসতে- কিন্তু উনার বাব্র কবর ছেড়ে উনার মা আসতে কখনোই রাজি হননি। উনি উনার স্বামীর কবর ছেড়ে কোথাও যান না। তাই আজ রাজু সাহেবের সাথে ও তিনি যাচ্ছেন না। উনাকে যাওয়াত দেয়া হয়েছে সুনামগঞ্জে প্রফেসর আকমল সাহেবের বাসায়। প্রফেসর আকমল এর মেয়ের সাথে রাজু সাহেবের বিয়ের কথা চলছে দুই সপ্তাহ ধরে। শেষে মেয়ে দেখার জন্য আকমল সাহেব রাজু সাহেবের পরিবার কে ডেকে পাঠান। কিন্তু রাজু সাহেবের মা যেতে রাজি হননি। তাই শেষ পর্যন্ত বিয়ে করার জন্য নিজেকেই একা যেতে হচ্ছে রাজু সাহেবের। উনার কোন ভাই বোন ও নেই যে উনার সাথে যাবেন। তাই একা এই মাঘের শীতের রাতে তিনি টিকেট কেটে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছেন ঢাকা সিলেট গামী ট্রেনের জন্য। "স্যার স্যার পেপার নেন পেপার- পেপার নেন- গরম গরম খবর - মজার মজার খবর' - বলে উনার সামনে এসে ১৮-১৯ বছরের একটা ছেলে এসে মাসিক পত্রিকা যাচতে লাগলো। তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি যাত্রা পথে ঘুমিয়ে কাটান। এই রংচঙে পত্রিকা কোনদিন উনাকে টানেনি। উনি বেশির চেয়ে বেশি দৈনিক পত্রিকা পড়েন। কিন্তু ছেলেটা নাছোড় বান্দা। উনাকে পেপার বিক্রি করে ই ছাড়বে। শেষে বিক্রি করতে না পেরে একটা নগ্ন ছবি ওয়ালা চটি বই রাজু সাহেবের চোখের সামনে ধরে নাচাতে নাচাতে বলল- ' "স্যার দেখেন- কত গরম গরম জিনিস- নেবেন? স্যার আরো ভাল ভাল জিনিস আছে।" বলে দাঁত বের করে হাস্তে লাগল। এবার রাজু সাহেব চোখ বড় বড় করে এমন ভাবে তাকালেন যে ছেলেটা প্রায় পালিয়ে বাঁচল।
উনি এবার নিজের ব্যাগ থেকে একটা শরত সাহিত্য সমগ্র বের করে পড়তে শুরু করে দিলেন। কিছু ক্ষন আগে স্টেশন মাষ্টার জানিয়েছেন- ট্রেন আসতে আসতে আরো দুই ঘণ্টা লাগবে। তাই এই দুই ঘণ্টা কিভাবে কাটাবেন তিনি বুঝে ঊঠতে পারছেন না। শরত বাবুর বইয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে তিনি খেয়াল করলেন উনার পাশের হাত বিশেক দূরে একটা দম্পতি নিজেদের মাঝে গল্প গুজব করছে। তিনি প্রথমে ঊঠে গিয়ে উনাদের সাথে ভাব জমাবেন বলে চিন্তা করেছিলেন- কিন্তু পরে চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন। একটু পড়েই ঢাকা চট্টগ্রাম গামী ট্রেন আসলে উনারা উঠে চলে গেলেন সেই ট্রেন এ করে। ভাব দেখে উনাদের নতুন বিবাহিত বলে মনে হল। মনে মনে চিন্তা করতে করতে উনি আবার পড়ায় মনযোগ দিলেন। কিন্তু হটাত করে খেয়াল করলেন উনার চারপাশ কেমন যেন শুনশান - কোন সাড়া শব্দ নেই। বই থেকে মাথা তুলে কান পেটে শুনতে চেষ্টা করলেন রাজু সাহেব। কিন্তু তিনি কোন শব্দ শুনতে পেলেন না। মাথা তুলে দুই পাশ দেখলেন। হালকা টিমটিমে ৪০ ওয়াটের বাতি জ্বলছে চারটা - এতে চারপাশের অন্ধকার আরো গাঢ় বলে মনে হল উনার। এর মাঝে মাঘ মাসের কুয়াশা ও আছে। উনি কান পেতে থাকলেন অনেকক্ষন। নাহ তিনি কোন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও শুনতে পেলেন না। এমনিতে তিনি তুখোড় উকিল হলেও একাকীত্ব কিছুটা ভয় পান। তাই বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে স্টেশন মাষ্টারের রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে ও তিনি হতাশ হলেন- সেখানে একটা পাগলি ছাড়া কেউ নেই। স্টেশন মাষ্টার কোন ফাঁকে চলে গেছে নিজের বাড়িতে এটা উনি টের ই পেলেন না। স্টেশন মাষ্টারের বেধে দেয়া সময় এর বাকি আছে মাত্র দশ মিনিট আছে।তিনি ঘড়ি দেখতে দেখতে এসে বসলেন উনার আগের সিটে। এবং বসতে গিয়ে হটাত দেখলেন উনার পাশে এক বৃদ্ধা মহিলা বসে আছেন। উনি গলা খাকড়ি দিয়ে গিয়ে বসে পড়লেন মহিলার পাশে। এই ঠান্ডায় মহিলা অনেকটা কুকড়ে আছেন। শাদা শাড়ি পড়ে আছেন তিনি। মুখ অনেক তা ঢাকা ঘোমটার আড়ালে। রাজু সাহেব ভাবতে লাগলেন এই শুনশান রাতে মহিলা বসে আছেন কেন – কে তিনি ? কেন এলেন এখানে? এমন টা ভাবতে ভাবতেই মহিলা নিজে নিজেই বললেন-
“ ভাবছেন তো কেন আমি এখানে?” শুনেই রাজু সাহেব বেশ চমকে উঠলেন। মহিলার গলার আওয়াজ অনেক ভাঙ্গা- শুনে মনে হচ্ছে উনি অনেক কষ্ট করে কথা বলছেন। কথা টা বলেই তিনি রাজু সাহেবের দিকে তাকালেন। রাজু সাহেব সেই দৃষ্টির দিকে বেশি ক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলেন না। ভয়ে শরীরের ভেতর টা ঘেমে ঊঠল উনার এই শীতের মাঝে। তিনি ভেবেছিলেন কোন এক ভুত উনার পাশে বসে থাকবে। আস্ত মানুষ দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলেও মহিলার চোখ দুটি দেখে উনি ভয় পেয়ে গেলেন। “আমি সুনামগঞ্জ যাব বাবা- সেখানে আমার ছেলের কাছে যাব- শুনেছি ট্রেন আসতে অনেক ক্ষন বাকি তাই আমি ঘর থেকে বের হয়েছি দেরিতে। এখন আসলাম- ঘরের পাশেই মাস্টার সাহেব থাকেন। তিনি আমাকে বললেন- পাঁচ মিনিট পরেই ট্রেন আসবে। তাই আমি চলে আসলাম। আপনার কোন অসুবিধা নেই তো এখানে বসলে? বলেই জ্বলজ্বল চোখে তাকালেন বৃদ্ধা রাজু সাহেবের দিকে। রাজু সাহেবের বেশ অস্বস্থি হল এই প্রশ্ন শুনে- তিনি মনে মনে অনেক কিছু চিন্তা করলেও ভদ্রতার খাতিরে বললেন- “না না কোন সমস্যা নেই আপনি বসলে- আমি তো এখানে বসার সিট দখল করে রাখতে আসিনি” বলে বইটা খুলে পড়তে শুরু করে দিলেন। আর মিনিট খানেক পড়েই ট্রেন আসল। তিনি ‘ট’ বগির সামনের একটা সিটে বসে ছিলেন। “ট” বগিটা এসে থামল উনার সামনেই। উনি আসতে করে ঊঠে পড়লেন ট্রেনে। উনার পিছু পিছু বৃদ্ধা মহিলা ও ঊঠে পড়লেন। উনাদের সিট একই বগিতে পড়েছে। এবং যথারিতি সেই বগিতে আর কোন মানুষ জন নেই। সিটে বসেই রাজু সাহেব বই টা ব্যাগে ঢুকিয়ে আসতে করে ঘুমিয়ে পড়বেন বলে মনস্থির করলেন। তিনি বই ব্যাগ গুছিয়ে বস্তে যাবেন এমন সময় স্টেশন মাষ্টারের রুমে বসে থাকা সেই পাগলি রাজু সাহেবের বগির বাইরে থেকে জানালা দিয়ে রাজু সাহেব কে চিৎকার করে বলতে লাগল- “ঐ তুই যাইসনা এই ট্রেন এ। এই ট্রেন তোর লাইগা আহেনাই। এটা তোরে শেষ কইরা দিব। তুই যাইস না- অমঙ্গল হইব- ঘোর অমঙ্গল” চিৎকার করে বলতে বলতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। রাজু সাহেব মনে মনে পাগলের প্রলাপ মনে করে হেসে ব্যাগ টা মাথার উপর র্যাদকে রেখে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। ততক্ষনে ট্রেনের গতি পেরিয়ে গেল লাকসাম স্টেশন। কিন্তু একটা গুন গুন শব্দে রাজু সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেল।তিনি গলা বাড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন উনার বগি থেমে আছে। ট্রেন চলছে না। চারদিকে প্রচন্ড বাতাসে শো শো শব্দ হচ্ছে।এই শব্দে উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উনি উঠে বাইরে যাওয়ার গেট এর দিকে গেলেন। অনেক কষ্টে সেই গেট খুলে যা দেখলেন উনার তাতে হার্ট বিট বেড়ে গেল কয়েকগুণ।দেখলেন উনার বগির কোন দিকেই কোন বগি নেই। উনি হয়ত খেয়াল করেন নি- যে উনি শেষ বগি তে ঊঠেছিলেন। এবং চলতি পথে কোন ভাবে উনার বগির সাথে মূল ট্রেনের সংযোগ ছিড়ে গেছে। ভাবতেই উনি ঘেমে গেলেন। কেউ নেই চারপাশে। সুনসান নিরবতা। এমন কি বগিতেও কেই নেই। চারদিকে ফাঁকা একটা যায়গায় তিনি একা একটা ট্রেনের বগিতে- চিন্তা করতেই উনার ঘাড়ের বাম পাশে ব্যাথা করতে লাগল।উনার কয়েক বছর ধরে হাই প্রেশার। উনি বুঝতেই পারলেন না উনি কি করবেন। মাথার উপর আকাশ ছাড়া কিছুই তিনি ভালভাবে খেয়াল করতে পারছেন না। বগিতেও বসে থাকতে পারছেন না। অন্ধকার বগি- বাইরে ঝড়। এবং এমন সময় হটাত করে ঝড় থেমে গেল। উনি এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেলেন। এবং ঠিক সেই সময় খুট করে একটা শব্দ হল। শব্দটা এসেছে বগির পেছন দিক থেকে। উনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানের বিপরিত দিক থেকে। তিনি ভালভাবে খেয়াল করতে চেষ্টা করলেন। দেখলেন সেই ঘোমটা পড়া বৃদ্ধা এসে সামনে দাঁড়াল উনার। এবং উনার গলা চেপে ধরল প্রচন্ড শক্তিতে/// এক ঝটকায় উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উনি এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলেন। বইটা কোলের উপর রেখে ই তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। চারপাশে সেই কোলাহল শুনে শরীরে কিছুটা শক্তি পেলেন। তারপর দেখলেন উনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সিলেটগামী ট্রেন। উনার বগি নাম্বার “ট”। উনি দেরি না করে ঊঠে বসলেন উনার বগিতে। উনার জিনিস পত্র গুছিয়ে নিতে নিতেই তিনি একটা চিৎকার শুনতে পেলেন বাইরে। কোত্থেকে একটা পাগলি এসে চিৎকার করে বলতে লাগল- “ঐ তুই যাইসনা এই ট্রেন এ। এই ট্রেন তোর লাইগা আহেনাই। এটা তোরে শেষ কইরা দিব। তুই যাইস না- অমঙ্গল হইব- ঘোর অমঙ্গল” তিনি স্বপ্নের সাথে মিলাতে মিলাতে ট্রেন ছেড়ে দিল।উঠে জিজ্ঞাসা করবেন ভাবছিলেন পাগলিকে।কিন্তু ট্রেন ছেড়ে দেয়ায় তিনি পাগলি কে কিছু বলতে পারলেন না। তিনি এসে তার সিটে বসতে গিয়ে ই হটাত খেয়াল করলেন- পুরো বগি খালি –কিন্তু একদম শেষে দিকে একটা কাথা মুড়ি দিয়ে কেউ একজন বসে আছে এবং তিনি সিট পেয়েছেন একদম শেষ বগিতে। উনার বগির পরে আর কোন বগি নেই ...... ( সমাপ্ত )

।। রাজসাক্ষী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, August 21, 2011 at 10:43pm
অতনুর পুরো নাম শিহাব শাহিন অতনু, ওর নানার রাখা নাম। ওদের বাড়ি উত্তর বঙ্গে, বর্ডারের কাছে। জায়গাটা ভয়াবহ রকমের দুর্গম। ইলেক্ট্রিসিটি তো দূরের কথা, একটা খাম্বাও নেই। যাতায়াতের মাধ্যম পায়ে হাঁটা পথ। প্রায় ১০মাইল হাঁটলে পাকা রাস্তা পাওয়া যায়। অতনুর এই অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম হলেও ওর আধুনিক নামই বলে দেয় ওদের পরিবার গ্রামের আর ১০টা পরিবার থেকে আলাদা। ছোটবেলা বাবা মারা যাওয়ার পর নানা বাড়িতেই বেড়ে ওঠে। ওর নানারা ওপারের লোক, যুদ্ধের পর এপারে চলে আসে। পরিবারের নামটাই যা ছিল, এছাড়া একেবারে নিঃস্ব হয়ে এপারে আসতে হয়। ও আবছা ভাবে জানে যে নানারা নাকি শুদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ওর পরিবারে ৩টা আজব ঘটনা ঘটেছে। ওর বড় মামা, মেজ খালু আর মেজ নানা তিনজনই খুন হন। বর্ডার এলাকায় এসব স্বাভাবিক ঘটনা, তাই কোন থানা পুলিশ হয়নি। লাশ পাওয়ার পর ২-৪ দিন চোখের পানি ফেলে আবার কাজে মন দিয়েছে সবাই। এইসব ঘটনা যখন ঘটে তখন ওর বয়স ১১, আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। তারপর ও বড় হয়ে এখন ঢাকায় থাকে। তিন দিন হল গ্রামে এসেছে শেষ যেটুকু ভিটামাটি ছিল তা বেঁচে দিতে। শনিবার রাত। গ্রামে এখন এক ছোট মামা ছাড়া আর কেউ থাকে না। বিশ রুমের একটা টিনশেড দোতলা বাড়ি পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। ও উপরের ঘরটা নিলো। রাতে বেশ চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমানো যাবে। গ্রামে কতদিন রাত কাটানো হয়না।
রাত তিনটায় একটু টয়লেট পেলো ওর। এখানের একটা সমস্যা হচ্ছে টয়লেট করতে নিচে নামতে হয়। কি আর করা, নেমে টয়লেট সারলো। কলপাড়ে এসে হাত ধুতে যাবে, দেখল দুজন লোক বসে আছে নিচতলার বারান্দায়। কিছু নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে ওদের মধ্যে বোঝা গেল। খেয়াল করলো টর্চ আনতে ভুলে গেছে ও। কিন্তু এত রাতে এখানে বসে ঝগড়া করছে কারা? ভালমত তাকালো, দেখলো একটা লোক উঠে দাঁড়িয়েছে। তীব্র রেগে গেছে সে, আচমকা একটা ছুরি বের করে আমুল বসিয়ে দিল সে অপর লোকটার বুকে। পিচ করে একটা শব্দ হল। আঁতকে উঠল ও, খুন!! দ্রুত লুকানোর জায়গা খুঁজল ও, পেলোনা। ওদিকে লোকটা এদিকেই এগিয়ে আসছে। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ও। কিন্তু লোকটা ওর চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল, ওর দিকে তাকালও না। লোকটা একটু দূরে ডোবার ধারে গেলে চাঁদের আলো পড়লো লাশটার মুখে। চাঁদের আলোয় চিনতে কোন সমস্যা হলনা। বড় মামা!! লাশটা আর কারো না, বড় মামার!! সারা গা ঝিমঝিম করে উঠল ওর। দ্রুত ছুটল বাম পাশের ঝোপের দিকে, ওখানে বড় মামার কবর আছে। গিয়ে যা দেখল তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। কবরটা খোঁড়া, চারিদিকে মাটি ছড়িয়ে আছে, একটা রক্ত মাখা ইট পড়ে আছে পাশে!! গ্রামের লোকদের ডাকে জ্ঞান ফেরে অতনুর। কবরের পাশে পড়ে আছে ও। চারিদিকে অনেক লোকজন, এক এক জনের এক এক জিজ্ঞাসা। তার মাঝেই কবরের দিকে তাকাল ও, সব সুস্থ, স্বাভাবিক, শান্ত। কবরের মাটি দেখে সহজেই বোঝা যায় গত ১৭ বছরে কেউ তা খোঁড়েনি। তবে কি দুঃস্বপ্ন দেখছিল ও? তাই হবে হয়ত। ধীরে ধীরে লোকের কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল ও, তখুনি চোখ আটকাল একটা ইটের দিকে। গোল, একপাশে রক্ত মাখা। বুকটা ছাঁৎ করে উঠল ওর! ঠিক তখুনি, একটু গড়িয়ে পাশের ডোবাটায় পড়ে গেলো সেটা। এই ঘটনার ২ ঘণ্টা পরেই বাসে করে ঢাকায় চলে আসে ও। কাউকে কিছু জানায় না। সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন বলে ভেবে নেয়।
দুই দিন পর। বাসায় কেউ নেই। একা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল ও, এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো। মোম জ্বালাতে রান্নাঘরে যায় ও, আইপিএস টাও আবার নষ্ট। ফিরে এসে দেখে ড্রয়িংরুম ভর্তি ৬-৭ জন লোক। সবার মুখে লাল কাপড় বাঁধা। একটা লোককে বেঁধে রেখেছে তারা। মোমের আলোয় চিনতে কষ্ট হয়না, ওটা মেজ খালু!!! হটাৎ লোকগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে খালুর উপর। মুহূর্তে টুকরো টুকরো করে ফেলে ছুরি দিয়ে। শুধু ধড় আর মাথাটা রেখে বাকি হাত,পা আলাদা হয়ে যায়। এক ফোঁটা রক্ত ছিটে এসে লাগে ওর শার্টে। ওখানেই জ্ঞান হারায় ও। জ্ঞান ফেরে পরদিন হসপিটালে। ঘরে ফেরার পর দেখে সব ঠিক আছে, তবে তার শার্টে রক্তের দাগ লাগলো কিভাবে, স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারলনা। চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন একটা মানুষিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও। তীব্র কঠিন ওষুধ খেয়ে স্রেফ বেঁচে আছে। দুটি মৃত্যু ঘটনার রাজসাক্ষী হয়ে, তৃতীয় ঘটনাটি ঘটার অপেক্ষায়। শেয়ার করেছেনঃ Kallîum Cyanîde Pîxel বাংলা ফন্টে লিখতে সাহায্য করেছেনঃ Shikdar Mohammad Nafi (Shoshi) আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাদের ২ জনকেই।।

।। একটা পরীর সাথে ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, August 21, 2011 at 10:32pm
ঘটনাটা আমার বাবাকে নিয়ে।। আমি শুনেছি আমার দাদার মুখে।। ১৯৭৭ সাল।। আমার দাদা তখন সপরিবারে নওগাঁতে থাকতেন।। আমার বাবারা ৭ ভাই।। বাবারা সবাই রাতের বেলা এক রুমেই থাকতেন।। ঘটনার শুরু এখান থেকেই।। বাবা তখন ৭ম শ্রেণীতে পড়েন।। প্রতি রাতেই সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমুতে যেত।। কিন্তু হটাত একদিন আমার অন্য চাচারা খেয়াল করলেন যে, রাত যখন গভীর হয় তখন পুরো ঘর আলোয় আলোকিত হয়ে যায় (বিঃ দ্রঃ তখন আমার দাদার বাসায় কারেন্টের লাইন ছিল না) তারপর উনারা দেখেন, একটা ফুটফুটে সুন্দরী মেয়ে আসে লাল শাড়ি পড়া।। তারা চুপচাপ শুয়ে দেখতে লাগলো কি হয়।। ঐ মেয়েটা বাবাকে হাত ধরে নিয়ে যেত।। বাবা যেনও ঘুমের ঘোরে থাকতেন।। তারপর আবার ভোর বেলা বাবাকে ফিরিয়ে দিয়ে যেত।। পরপর কয়েকদিন এই একই ঘটনা ঘটতে থাকে।। অবশেষে একদিন আমার চাচারা ঘটনাটা আমার দাদাকে জানায়।। সেদিন দাদু আমার অন্য চাচাদের আরেক রুমে থাকতে বলে তিনি নিজেই যান আমার বাবার সাথে ঘুমানোর জন্য।। সেদিনও অন্যান্য রাতের মত, আনুমানিক মধ্যরাতে সেই মেয়েটি এলো এবং আমার বাবাকে নিয়ে গেলো।। এদিন আমার দাদু তাদের পিছন পিছন যেতে লাগলেন।। কিছুদূর হাঁটার পর দাদু দেখলেন মেয়েটি আমার বাবাকে নিয়ে একটা পুরানো কবরস্থানের ভেতর ঢুকছে।। আমার দাদু ভয়ে জমে যান।। একা ছিলেন বলে তিনি ভেতরে না ঢুকে বাইরেই অপেক্ষা করতে লাগলেন।। আস্তে আস্তে রাত কেটে ভোর হল।। তখন দাদু দেখলেন আমার বাবা সেই কবরস্থান থেকে বের হয়ে আসছে।। এরপর আমার দাদু নানারকম ভাবে চিকিৎসা করে বাবাকে এর প্রভাব মুক্ত করার চেষ্টা করেন।। একসময় কাজ হয়।। বাবাকে রাতের বেলা সেই মেয়েটি আর নিতে আসতো না।। কিন্তু বাবা একটানা অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন এই ঘটনার পর।। কিন্তু আমার বাবার এখনও একটা সমস্যা রয়ে গেছে।। তিনি কখনই কোনও কাজে সফল হতে পারেন না।। কি বলবো সেই মেয়েটিকে??

শেয়ার করেছেনঃ Tariq Bin Aziz Shadin ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/shadin3 অ্যাডমিন বলেছেনঃ এই পেইজটি ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সবাই ব্যাবহার করেন।। তাই কোনো প্রকার বাজে কমেন্ট করবেন না।। করলে ব্যান করতে বাধ্য হব।। যেকোনো প্রকার জিজ্ঞাসার জন্য যিনি শেয়ার করেছেন তার ফেসবুক আইডি দেয়া হল।। সেখানে প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিন।। ধন্যবাদ।।

েমম্বারেদর েশয়ারকৃত গল্প - 2

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Sunday, August 21, 2011 at 7:18am
ঘটনা তা কে মিথ বলা যায়.এই ঘটনা বাংলাদেশের একটা নামকরা university তে হয়ছিল.যাহেতু বলছি এইটা একটা মিথ সেহতু এইটা আমি নিজে experience করি নাই . কিন্তু university administration এবং তত্কালীন ছাত্র রা জানত. তাদের ই একজনের কাছ থেকে ঘটনা তা আমি সুনেছি. সঙ্গত কারণে university র নাম এবং হালের নাম আমি বলছিনা.ঘটনা তা এইরকম ---সময়টা আসির দসকের মাঝামাঝি university র summer vacation ছিল বছর এর মাঝামাঝিতে তখন university তে ছাত্রদের হলে মেয়েদের প্রবেশাধিকার ছিল . summer vacation এর সময় সবাই যখন বাড়ি চলে যায় তখন হালের এক ছাত্র একটি মেয়েকে হলে নিয়ে আসে. যে রুমে নিয়ে আসে তার রুম number ছিল ৩১৫.ওই ছাত্র এবং তার কযেকজন বন্ধু মিলে ওই রুমে মেয়েটিকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে. এক পর্যায়ে লোক জানাজানির ভয়ে তারা মেয়েটিকে মুমুর্সো অবস্থায় ফেলে দরজা বাহির থেকে তালা মেরে হল ছেড়ে চলে যায়..দীর্ঘ দের মাস summer vacation এর পর হল এর ছাত্র রা ফিরে আসে. ধীরে ধীরে তারা বুঝতে পারে ৩১৫ নম্বর রুম থাকে কিছু একটার পচা গন্ধ আসছে. এবং এটাও বুঝে ওই রুমে কেউ নাই কারণ বাহির থেকে তালা বন্ধ. ছাত্ররা হল প্রভোস্টকে বিসয়টি জানালে তিনি ওই রুমের তালা ভাঙ্গার নির্দেশ দেন. তালা ভেঙ্গে একটি মেয়ের পচা গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়.মায়েতির পরনে ছিল চেরা পোশাক এবং পায়ে ছিল নুপুর. বিসয়টি তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় জর ফলাফল আজ পর্যন্ত জানা যায় নাই.ওই সময়কার পত্রিকায় ঘটনাটি প্রকাশ হয় কিন্তু হল এর ওই ছাত্র ছিল ক্ষমতাসীন দলের নেতা যার কারণে ঘটনাটি ধামাচাপ পরে যায়. সাভাবিক ভীতির কারণে বছর খানেক ওই রুমে কেউ উঠে নাই বা হল থেকে কোনো allotment দেওয়া হয় নাই. এটা ছিল fact .এরপর প্রভোস্ট পরিবর্তন হয় এবং ঘটনাটি ভুলে যাওয়া হয়. হলে নতুন ছাত্র আসলে তাদেরকে ওই ৩১৫ নম্বর রুম দেওয়া হয়. নতুন ছাত্ররা কিছুই জানত না. প্রথমদিন রাতে তারা ঘুমাতে যায় এরপর কিছু অসাভাবিক সব্দ সুনতে পায়. মনে হস্সিলো রুমে যেন কেউ করুন সুরে কাদছে .কেউ মৃদু পায়ে হাটছে সাথে নুপুর এর আওয়াজ পাওয়া যায় . ছাত্ররা ভয় পেয়ে যায়. পরদিন হল এর বড় ভাইদের কাছথেকে জানতে চায় বিসয়টি কি? হালের বড়ভাইরা প্রথমে তাদেরকে কিছু বলে না, পরে তাদের চাপাচাপিতে বলে দেয় ঘটনাটা কি ছিল. এতে তাদের ভয় আরো বেশি হয়ে উঠে এবং তারা ওই রুমে না থাকার সিদ্ধান্ত নেয় . হল প্রভোস্টের কাছে বিসয়টি জানালে তিনি কোনো গুরুত্ব দেন না এবং আরো তিনজনকে ওই রুমে allot দেন . তারাও প্রতি রাতেই ওই রকম সব্দ সুন্ত এবং যথারীতি তারাও রুমটি ছেড়ে দেয়. এই অবস্থা দেখে একরাতে হল প্রভোস্ট সিদ্দান্ত নেন তিনিই ওই রুমে একরাত থেকে দেখবেন আসলে কি হয়. তিনিও নারী কন্ঠে করুন সুরে কান্নার আওয়াজ পান এছাড়াও তার মনে হস্সিলো কেউ যেন তাকে কিছু বলছে এবং সারা ঘর নুপুর পায়ে হেটে বেড়াচ্ছে. তিনিও খুব ভয় পেয়ে যান এবং রাত না কাটিয়াই ওই রুম থেকে চলে যান. এরপর ওই রুমটি চিরদিনের জন্য তালাবন্ধ করে রাখার সিদ্দান্ত নেওয়া হয় . তালাবন্ধ করে রাখার পরেও ওই রুমের বাইরে করিডরে কোনো মেয়ের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত. মনে হত যেন কেউ তার জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য করুন আর্তি জানাচ্ছে. মনে হত কেউ নুপুর পায়ে সারা করিডোর ঘুরে বেড়াচ্ছে. ধীরে ধীরে ভীতি বেড়ে উঠাই কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেই ওই রুম চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার. এরপর দরজা জানালা খুলে ওই রুম চিরতরে ইটের গাথুনি দিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়. এবং ছাত্র দের হালের অভ্ভান্তরে ছাত্রীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়. আজ পর্যন্ত ওই হালের ৩১৫ নম্বর রুমটি নাই , ৩১৪ এর পর ৩১৬.মাঝখানে ৩১৫ নাই ।Shared by : Raqeeb Hasan

নিশি ভৌমিকের বাড়ি - মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Monday, August 22, 2011 at 6:59am
হাতের কাজ শেষ করে আমি যখন চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়েছে ঠিক সে সময় আমার পিয়ন নয়ন এসে বললো - স্যার, জামাল সাহেব এসেছে । ঘড়িতে তখন বাজে প্রায় সাড়ে ৫টা ।
এ সময় কাউকে নিয়ে বসার কথা নয় । অফিস ছুটি হয়ে গেছে সেই ৫টার সময় । অনেকেই ইতিমধ্যে চলে গেছে । আমিও চলে যেতাম কিন্তু হাতের কাজটুকু শেষ না করে উঠতে পারছিলাম না, তাই দেরি হয়ে গেছে । শীত কাল । এমনিতেই তারাতারি সন্ধ্যা হয়ে যায় । এ সময় জামাল মিয়াকে নিয়ে বসার কোন মানে হয় না ।
আমি একবার হাত ঘড়ি দেখে নয়ন এর দিকে তাকিয়ে বললাম - এ সময় জামাল মিয়া আবার কি মনে করে ? যাও কাল আসতে বলো ।
-স্যার কাল তো শুক্রবার ।
-ও আচ্ছা, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে, কাল শুক্রবার । ঠিক আছে জামাল মিয়াকে আসতে বল ।
জামল মিয়া আমাদের অফিসে একজন সাফলাইয়ার হিসাবে কাজ করেন । স্হানিয় বাজার থেকে কাগজ,কলম,লোহা,লক্কর এটা সেটা কিনে অফিসে সাফলাই দেয়াই তার মূলকাজ । মোটাসোটা লোকটার মাঝে সততার বিন্দুমাত্র অবশিস্ট্য আছে বলে মনে হয় না । তার উপড়ে প্রচুর মিথ্যা কথা বলে । সারাক্ষন মুখ পানের পিকে লাল হয়ে থাকে । সেই সঙ্গে আছে র্জদ্দার কড়া গন্ধ । কিন্তু তবুও জামাল মিয়া খুব কাজের লোক । আমার বিশ্বাস জামাল মিয়াকে যদি বাঘের চোখ যোগার করে আনতে বলা হয় তাহলে সে সেটাও যোগার করে এনে দিতে পারবে ।
কিন্তু জামাল মিয়ার এখন আমার কাছে আসার কারণটা বুঝতে পারলাম না । যতোটুকু মনে পরে গত সপ্তাহে ওর বিল টিল যা ছিল পরিশোধ করা হয়েছে । অফিসে নতুন কিছু লাগবে বলেও তো শুনিনি । তা হলে, এসময় ব্যাটা এলো কি মনে করে? নিশ্চই কোন ধান্ধা আছে । আমি চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম । যাক আগামি কাল যেহেতু বন্ধ আছে তাহলে আরো কিছু সময় না হয় বসা যাক । এমনিতেও বাসায় গিয়ে এক বই পড়া ছাড়া কোন কিছু করার নেই । মফোসল শহরে আছি আজ প্রায় বছর খানেক হলো । একা থাকতে থাকতে অভ্যেস হয়ে গেছে ।
- সেলাম স্যার । জামাল মিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে বিরাট করে হেসে সালাম দিল ।
- ওলাইকুমআসসালাম । তা জামাল মিয়া এ অসময়ে কি মনে করে ?
- স্যার আপনাকে নিতে এলাম ।
- আমাকে নিতে ? কোথায় ? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ।
- ঐ যে স্যার গতসপ্তাহে বললেন না যে ভৌকিম বাড়ী যাবেন !
- ভৌমিক বাড়িটা আবার কোথায় ? কি আবল তাবল বলছো জামাল !
- স্যার বুঝি ভুলে গেছেন , গতসপ্তাহে না বললেন ভুত দেখতে যাবেন । জামাল চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো । আমার হঠাৎ মনে পরে গেল গতসম্তায় বিলে আমার সই নেবার সময় কি এক প্রসঙ্গে জামাল মিয়া ভৌমিক বাড়ির কথা তুলে বলে ছিল ও বাড়িতে নাকি ভুত আছে । আমি তখন হেসে বলেছিলাম ভুত থাকলে একদিন আমায় এসে নিয়ে যেও সুখ,দু:খের কথা বলে আসবো । অনেক দিন ভুত দেখার সাধ বুকের ভেতর লালন করে আছি । আমার কথায় জামাল মিয়া কিন্চিত ব্যাথিত হলেও মাথা নেড়ে বলেছিল, ঠিক আছে স্যার আগামী সপ্তাহে এসে নিয়ে যাবনে । কিন্তু সেটা তো ছিল কথার কথা।
- কি স্যার ভয় পেয়েছেন নাকি ? আমাকে চুপকরে থাকতে দেখে জামাল মিয়া হেসে প্রশ্ন করলো ।
- না, ভয় পাবো কেন ? তুমি কি সত্যিই যাবে জামাল ?
- জ্বি স্যার , এ্যই জামাল যে মিথ্যা বলে না সেটা ভুতের সঙ্গে গিয়ে বাৎচিত করলেই বুঝতে পারবেন ।
- তোমার ভুত কথাও বলে নাকি ? আমি হেসে প্রশ্ন করলাম ।
- জ্বি স্যার বলে, কাউকে পছন্দ হইলে তার সঙ্গে কথা বার্তা কয় শুনেছি । আর পছন্দ না হইলে চড় থাপ্পর দিয়া বেড় কইরা দেয়।
- কি সব আবোল তাবল বলছো । আমি জামালের কথায় নড়েচড়ে বসলাম ।
- আবোল-তাবোল না স্যার চলেন নিজে চোক্ষে দেখবেন । মিথ্যা বললে, আপনার জুতা আমার গাল ।
আমি মনে মনে ঠিক করে ফেললাম জামাল মিয়ার সঙ্গে গেলে মন্দ হয় না । যেহেতু আগামি কাল শুক্রবার আছে , তাই যেয়ে দেখা যাক না, ব্যাটা আসলে কি দেখাতে চাচ্ছে ।
- তা, কোথায় যেন যেতে হবে জামাল ।
- আপনি সত্যিই যাবেন স্যার ? জামালের চোখ দুটো যেন চকচক করে উঠলো ।
- অবশ্যই যাবো । এখান থেকে কতো দূর তা বলো তো !
- দূর আছে স্যার , তা এখন রওনা দিয়ে ১১টা ১২ নাগাত পৌছে যাবো ।
- বলো কি তা হলে তো বেশ দূরের রাস্তা ? এতো রাতে গিয়ে কি কিছু দেখা যাবে ?
- ভুত দেখার জন্য তো গভীর রাতই আর্দশ স্যার । জামাল মিয়া ক্যামন খেকখেক হেসে বলল ।
- তোমায় দেখে তো মনে হচ্ছে খুব মজা পাচ্ছে জামাল ?
- পাচ্ছিই তো স্যার । আপনার ধারণা জামাল সারাক্ষন মিথ্যা কথা বলে বেড়ায় । এখন ভৌমিক বাড়ি গিয়ে যখন ভুতের কবলে পরে হাউমাউ করে কাঁদবেন তখন তো আমি আপনাকে উদ্বার করবো স্যার ।
- ঠিক আছে তবে চলো যাওয়া যাক ।
- শিতের কাপড় নিতে হবে স্যার । রাতে খুব ঠান্ডা পরে ।
- যাবার সময় বাসা থেকে নিয়ে যাবো ।
- ঠিক আছে স্যার । জামাল হেসে বললো ।
এমন সময় নয়ন এসে দরজার দাড়িয়ে বললো স্যার আমি ও যাবো আপনার সঙ্গে ।
- তুমি ও যেতে চাও ? আমি নয়নের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে, জামালের দিকে তাকিয়ে বললাম কি জামাল নয়ন গেলে কোন অসুবিধা হবে না তো ?
না স্যার অসুবিধা কি চলুক না । জামাল যেন অনিচ্ছা সত্তেই কথাটা বলল ।
-তা হলে যাও নয়ন তারাতারি রেডি হয়ে নাও । বেশি করে শীতের কাপড় পরে নাও । অনেকটা পথ যেতে হবে কিন্তু ।
- জ্বি স্যার,আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি ,বলেই নয়ন চট করে বেড় হয়ে গেল ।
- আমিও তাহলে একটু বাথরুম থেকে ঘুরে আসি কি বলেন স্যার ? জামাল খেক খেক করে হেসে বলল ।
- যাও । বলে আমি ড্রায়ার থেকে মোবাইল আর মানিব্যাগ বের করে পকেটে নিলাম । কেমন জানি একটা অসুস্থি লাগছে । কে যেন বারংবার ভেতর থেকে যেতে নিষেধ করছে । ফুস করে নিশ্বাস ফেলে আমি বললাম- বনের বাঘে খায় না , মনের বাঘে খায় । ঠিক সেসময় লাল রংয়ের একটা সোয়েটার পরে নয়ন ডুকলো ।
- কি রেডি ? আমি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ।
- জি স্যার , তয় একটা কথা ,
- কি কথা নয়ন ?
- স্যার জামাল মিয়ার সঙ্গে যাওনটা কি ঠিক হচ্ছে ?
- এর মধ্যে তুমি আবার বেঠিকের কি দেখলা ?
- না স্যার , লোকটারে তেমন সুবিধার মনে হয় না ।
- ভয় নেই নয়ন , জামাল অনেক বছর যাবৎ আমাদের সঙ্গে কাজ করছে আমাদের ক্ষতি হবে এমন কাজ ও করবে না । আমি বলেছিলাম ভুত বলে কিছু নাই ও বলেছিল আছে । আর এখন তাই প্রমাণ করতে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ।
- কোথায় নিয়ে যাচ্ছে স্যার ?
- কোন এক ভৌমিক বাড়ি ।
- নিশি ভৌমিকের বাড়ি স্যার ?
- হ্যা , তাই তো বলল মনে হয় । তুমি চেন নাকি ?
- চিনি স্যার । ওখানে নিশি ভৌমিকের কোন বাড়িটারি নাই । একটা ছাড়া মাঠ আর কয়েকটা ভঙ্গা দেয়ালের অংশ ছাড়া কিছুই নাই । লোকজন খুব একটা ওদিকে যায় টায় না ।
- বলো কি কোন বাড়ি নেই ?
- না স্যার, আমি নিজের চোক্ষে দেখেছি ।
- দেখার জন্য চোখের দরকার আছে নয়ন মিয়া । তোমার তা নাই । খেকখেকখেক । দরজার কাছ থেকে কথাটা বলে জামাল মিয়া হাসতে লাগল ।
- আমি নিজের চোক্ষে একবার দেইখা আইছি ঐহানে কোন বাড়িটারি নাই ।
- আছে কি নাই তা তো গেলেই দেহন যাইবো । কি কন স্যার ? জামাল আমার দিক সমর্থনের আশায় তাকাল ।
- তা ঠিকই বলেছো । আমি কেমন আমতা আমতা করে বললাম ।
- তয় চলেন বের হয়ে পরি ।
- চলো ।
- স্যার টর্চ নিয়ে নেই ? নয়ন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো ।
- টর্চ লাগবো কেন ? আমি কিছু বলার আগে জামাল যেন খেকিয়ে উঠে বলল ।
- নিয়ে নাও । গ্রামের রাস্তা ঘাট টর্চ হলে উপকারই হবে । চল চল তারাতারি চল , তা না হলে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে ।
আমি নয়ন কে তারা দিলাম । দুই অফিস থেকে বের হয়ে প্রায় ঘন্টা দু’য়েক ভ্যান আর হাঁটার পর আমরা একটা নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ালাম । সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষন হলো । হাত ঘড়ি দেখলাম পৌনে আটা বাজে । ঠান্তা খুব একটা না লাগলেও হালকা কুয়াশা পরেছে । নদীটা প্রায় শুকিয়ে গেছে । হাত দশেক নদীর ভেতর হাটু পানিতে একজনকে মাছ ধরতে দেখলাম । লোকটাকে দেখে বেশ অবাক হলাম । এই শিতের রাতে কেউ এভাবে মাছ ধরে ? কথাটা নিজের মনে মনেই বললাম ।
- ধরে স্যার । ধরে । পেটে ক্ষিধা থাকলে মানুষ সব করে । রওনা হবার পর জামাল কথা বার্তা খুব একটা বলছে না । হঠাৎ ওর নিজ থেকে কথা বলে উঠায় আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম - আর কতো দূর ?
- এ্যই তো এসে পরেছি স্যার নদীটা ওপারেই ভৌমিক বাড়ি ।
- নদী পারাবা কি করে কোন নৌকা টৌকা তো দেখছি না ।
আছে স্যার আছে । নৌকা টৌকাসব আছে । জামাল হাতে তালি দিয়ে বললো - এ্যই কে আছো মাঝি ? ভৌমিক বাড়ি যামু। আছোনি কেউ ?
- স্যার চলেন ফেরত যাই , দিনের বেলায় একদিন আসবোনে । নয়ন আমার গা ঘেষে ফিসফিস করে কথাটা বলল ।
- কেন ভয় খাইছোনি ? নয়ন কে বথাটা বলেই খেকখেক করে হেসে উঠল জামাল মিয়া । ওর এই হাসিটা আমার কাছে কেমন যেন অসহ্য মনে হলো । আমি কিছু বলার আগেই দেখলাম - অন্ধকারের ভেতর থেকে একটা ডিঙ্গি নৌকা এসে পাড়ে ভিড়ল।
- চলেন স্যার নৌকা এসে গেছে । বলেই জামাল প্রায় দৌড়ে নৌকায় গিয়ে উঠল । আমি ওর পেছন পেছন গেলাম । নয়ন যেন অনেকটা অনিচ্ছা সত্বে এসে নৌকায় দাঁড়াল । নৌকায় উঠার সময় মাছ ধরতে থাকা লোকটাকে কাছ থেকে দেখলাম । লোকটার শরীরে কোন কাপড় নেই । কোমরের নীচে ধূতির মতো কিছু একটা জড়িয়ে রেখেছে । কালো চিপচিপে শরীরটা যেন মুচরে আছে । শুকনো দুটো হাত লোকটা পানিতে শব্দ করে করে ডুবিয়ে দিচ্ছে আর একটু পর পর তুলে আনছে মাছ । লোকটার মাছ ধরার দক্ষতা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । মনে মনে ঠিক করলাম ফেরার সময় কিছু মাছ কিনে নিয়ে যাবো । ঠিক সেসময়ই যেন নাকে মাছের আশটে গন্ধ এসে লাগল । আমি নাক কুচকে এদিক সেদিক তাকালাম । জামাল যেন আমাকে দেখে বুঝতে পারল আমি কি খুঁজছি , ও আমাকে ইশারায় মাঝির সামনের অংশটা দেখিয়ে দিল । ওর ইশারা অনুযায়ি তাকিয়ে দেখলাম মাঝি লোকটার সামনে সাদাসাদা কেয়েকটা মাছ ছটফট করছে । আমি বেশ অবাক হলাম । একটু আগেওতো ওখানে কিছু দেখিনি । এখন মাছ এলো কোথা থেকে?
- এরা মাছ'টাছ ধরেই দিন কাটায় স্যার । আমি কিছু বলার আগেই জামিল বলে উঠল । নদীতে মাছ ধরতে থাকা লোকটার পাশ দিয়ে যাবার সময় লোকটার সঙ্গে আমার চোখাচোখি হলো, লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে ফেকাসে মুখে হাসলো । রক্তশূন্য মুখের সে হাসিতে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠল । আমি চোখ সড়িয়ে নিলাম ।
নদীটা পার হতে খুব একটা বেশি সময় লাগল না । কোন রকম শব্দ না করে বৈঠা চালিয়ে মাঝি আমাদের এপারে নামিয়ে দিয়ে অন্ধকারে মিশে গেল । জামালের পেছন পেছন আমরা হাঁটতে লাগলাম । কারো মুখে কোন কথা নেই । সবাই একরকম নি:শব্দে হাঁঠছি । গ্রামেটা যেন অতিমাত্রায় নির্জন হয়ে আছে । চারিদিকে এক গাছ পালা ছাড়া কোন জনমানবের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে । শীতটাও যেন হঠাৎ ঝাকিয়ে বসেছে । আমি হাত দু’টো প্যান্টর পকেটে ডুকিয়ে হাঁটছি । সুরু রাস্তাধরে হেঁটে একটা একটা খোলা জায়গায় আসতেই খালি গায়ে একটা লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম । লোকটা এক হাতে কয়েকটা মাছ ঝুলিয়ে রেখেছে । লোকটাকে দেখেআমি বেশ অবাক হলাম । এতো লোকটা এখানে মাছ নিয়ে কি করছে ? আমরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লোকটা মাছ ধরা হাতটা তুলে ধরে বললো - বাবু মাছ নেবেন মাছ । একদম টাটকা মাছ। লোকটার বলার মধ্যে এমন কিছু একটা ছিল যে, আমি ঝাটকা মেরে পেছনে চলে এলাম । জামাল চট করে পেছনে এসে বললো- যা, ভাগ ভাগ এখান থেকে ।
লোকটা কিন্তু নাছর বান্ধা আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, নেন না বাবু একটা মাছ । নদীর টাটকা !
- যা ভাগ ভাগ এখান থেকে । বলতে বলতে জামাল আমার হাত ধরে টান দিয়ে বলল স্যার আপনি আসেন আমার সাথে।
আরো ঘন্টা খানেক হাটার পর আমরা একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম । বাড়ি না বলে একে ছোট খাটো একটা প্রাসাদ বলা চলা । অন্ধকারের মাঝে মাথাতুলে দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে । নয়ন আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বলল- স্যার এখানে কয়েক দিন আগেও কোন কিছু ছিল না ।
- কি পাগলের মতো কথা বলছো নয়ন । দেখছো না কতো বড় একটা বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ।
- স্যার আমার কথা বিশ্বাস করেন । সব চোখের ভুল ।
- এতো বড় বাড়িটাকে তুমি চোখের ভুল বলছো ?
- তোমার চশমা লাগবে দেখছি । বলে আমি জামাল এর দিকে তাকালাম । জামাল কিছু বলল না চোখ বড় বড় করে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ আমার কেমন ভেতরটা কেঁপে কেঁপে উঠল। মনে হাড়ের ভেতর পযর্ন্ত শীতে কেপে উঠছে ।
- স্যার যান ভেতরটা ঘুরে আসেন । জামাল আমার দিকে তাকিয়ে খেকখেক করে হাসলো । আমি ভয় পেয়ে গেলাম । টের পেলাম তালুর চুলগুলো একটা একটা করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে । আমি হাতে হাত ঘষে বললাম - তুমি যাবেনা ?
- না স্যার । তেনারা আমারে পছন্দ করে না ।
- আপনি যান , দেখা সাক্ষ্যাত করে আসেন ।
- নয়ন তুমি যাবে ? মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে, নয়ন মনে হয় না বলব । কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও বলল - চলেন স্যার ।
- চলো । বলে আমি পা বাড়ালাম । তিন বাড়ির দেয়ালটা দেখে বোঝা যায় এক সময় কি যত্ন করে গড়ে তোলা হয়েছিল । কালের বির্বতনে সব খসে গেছে । বাড়িটার ভেতের পা রেখতেই আমার শরীর কেমন যানি করে উঠল । মনে হলো, কিছু একটা সত্যিই আছে এ বাড়িতে। ইতিমধ্যে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । নয়ন এর হাতের টর্চটা বাকিটুকু অন্ধকার ও দূর করে দিচ্ছিল । আমি ঘড়ি দেখলাম । পৌনে আটটা বাজে । ঘড়িটা কি নস্ঠ হয়ে গেছে ? একটু আগেওতো মনে হয় পৌনে আটটাই দেখেছিলাম ।
- স্যার আমার কেমন ভয় ভয় করছে ।
- চলো ভয়ের কিছু নাই, যা হবার হবে । চল ভেতরটা দেখে আসি ।
- স্যার, এ জায়গাটার খুব বদনাম আছে শুনেছি । নয়ন কাঁপাকাঁপা গলায় বলল ।
- শুনাতে কিছু আসে যায় না, নয়ন । জগতে দেখাতেই সব । এখন চল ভেতরে যাই । আমি নয়নের কাঁধে হাত রেখে বিজ্ঞের মতো বললাম । কথাটা ওকে বললেও নিজেকেই যেন শান্তনা দিলাম । পেছন ফিরে দেখলাম জামাল বুকের উপড় দু'হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে তাকাতে দেখে কেমন বিশ্রী করে হাসল ।
আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম । নয়ন আমার গাঁ ঘেষে ঘেষে এগুচ্ছে । বাড়ির প্রাচীরটা পেছনে ফেলে এসে সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে নয়নের হাতে থাকা টর্চটা নিবে গেল ।
-কি হলো ? টর্চটা নেভালে কেন ? আমি জিজ্ঞেস করাতে ও বললো - স্যার টর্চতো জ্বলছে না ।
- জ্বলছে না কেন ?
- বুঝতে পারছি না স্যার । নতুন ব্যাটারী না জ্বলার তো কোন কারণ নেই । কথাটা বলে নয়ন টর্চটা মোচড়াতে মোচড়াতে ঠিক করতে চেষ্টা করল কিন্তু পারল না ।
আমরা টর্চ ছাড়াই বাড়ির ভেতরে ঢুকলোম । গুমোট একটা বাতাস এসে চোখে মুখে লাগল । হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা পোড়ানোর গন্ধ পেলাম । দরজা দিয়ে ডুকতেই আমরা বড় একটা ঘরে এসে পরলাম । আবচ্ছা আলোয় দেয়ালগুলোকে কেমন কালো, কালো মনে হলো । নয়ন আরো কয়েকবার টর্চটা হাতের তালুতে ঝাকাতেই ওটা জ্বলে উঠলো । তবে আলোটা আগের মতো আর তেমন তীব্র নেই । তবুও সেটা কাজ চলে যাবার মতো । আমি ভূতের ভয়ের চেয়েও সাপের ভয়ে আছি । নয়ন কে ধরে ধরে খুব সাবধানে পা ফেলে ভেতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছি ।
হঠাৎ অন্যপাশ থেকে কেমন একটা ছন ছন শব্দের সঙ্গে গুমুর গুমুর শব্দ ভেসে এলো । খুব ক্ষিন্ন সে শব্দ । ভাল করে কান না পালতে যেন শুনাই যায় না । আমি আরো কয়েকবার খুব মনযোগ দিয়ে শব্দটা শুনে নয়নের দিকে তাকালাম । নয়নও তাকাল আমার দিকে ।
-নয়ন,শুনতে পাচ্ছ কিছু ?
-জ্বি স্যার, মনে হচ্ছে কোথাও বাদ্য বাজছে ।
- ঠিকই শুনেছো, কিন্তু এখানে বাদ্য বাজবে কোথা থেকে ? চলো অন্য পাশটায় গিয়ে দেখি । আমি নয়নের অপেক্ষায় না থেকে হাঁটতে লাগলাম । শরীরটা কেমন যানি লাগছ । পুরো শরীর মনে হচ্ছে ঠান্ডায় জমে যাবে । দাঁতের সঙ্গে দাঁত বারি খাচ্ছে । হঠাৎ স্পর্স্ট মেয়েলি হাসির শব্দ ভেসে এলো। আমি আর নয়ন দু’জনেই চমকে উঠলাম । খিল খিল করে কে যেন খুব কাছ থেকে হেসে, দৌড়ে অন্য দিকে চলে গেল । সঙ্গে সঙ্গে ছন ছন ছন নূপুরের শব্দ শুনতে পেলাম ।
নয়ন আমার গাঁ ঘেষে এসে প্রায় ফিসফিস করে বলল- স্যার মনে হয় নিশি ভৌমিক ।
- নিশি ভৌমিকটা আবার কে ? আমিও ওর মতো ফিসফিস করেই বললাম ।
- স্যার , তিনি ছিলেন নারায়ন ভৌমিক এর ছোট বউ ।
- তাই নাকি ?
- জ্বি স্যার , তেনাকেই নাকি এ বাড়িতে দেখা যায় ।
- কেন ? শুধু নিশি ভৌমিকেই কেন ? আমি লক্ষ্যকরে দেখলাম আমার হাত পা কেমন যেন ঠকঠক করে কাঁপছে।
- স্যার, তেনাকে নায়ায়ন ভৌমিক সাহেব মেরে ফেলেছিলেন ।
- বলো কি ?
- জ্বি স্যার, তেমনটাই শুনা যায় । নয়ন এর কথা শেষ হতে পারলো না হঠাৎ সামনের ঘরের দরজা জানালা গুলো ধুমদাম শব্দ করে খুলতে আর বন্ধ হতে লাগলো । হঠাৎ শব্দে আমরা চমকে উঠলাম । একবার মনে হলো এক দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাই । নয়নকে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না । দু’জন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম । এক সময় শব্দটা কমতে কমতে একেবারে থেমে গেল ।নয়ন বলল- স্যার চলেন এ বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যাই । আমিও চলো বলতে যাচ্ছিলাম । এমন সময় কারো কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম । কে যেন খুব কাছ থেকে গুন গুন করে কাঁদছে ।
- কে কাদে ? আমি ফিসফিস করে বললাম ।
- নয়ন বলল স্যার, চলেন ফিরে যাই ।
-দাঁড়াও আগে দেখি না কে কাঁদে ? আমি নয়নকে নিয়ে কান্নার শব্দ অনুসরণ করে একটা দরজা বন্ধ ঘরের কাছে এসে দাঁড়ালাম । ভেতরে কেউ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে । আমি দরজা ধাক্কা দিয়ে এক চুল নাড়াতে না পেরে শব্দ করে দরজায় কিল মারতে লাগলাম। হঠাৎ নয়ন আমার হাত খামছে ধরে টান দিলো । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম - কি ?
নয়ন আঙুল দিয়ে দিয়ে অন্যপাশের একটা দরজা দেখিয়ে দিলো। সেদিকে তাকিয়ে আমি চমকে উঠলাম । দরজায় সাদা শাড়ি পরা অল্প বয়সি একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে । মুখে আলতো হাসি টুকু না থাকলে আমি বোধ হয় দম বন্ধ করে মারা যেতাম । আমার ভেতরটা ধুকধুক করে লাফাচ্ছে । নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছি । হঠাৎ খুব কটু একটা গন্ধ এসে নাকে লাগল । আমি অপলোক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি । আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই ছন ছন ছন ছন নূপুরের শব্দ তুলে মেয়েটা দৌড়ে ভেতরের দিকে চলে গেল । আমি ও মেয়েটার পেছন পেছন ছুটলাম । নয়ন আমাকে আঁকড়ে ধরে থামাতে চাইল । কিন্তু পারল না । আমি নূপুরের শব্দ অনুসরণ করে এ ঘর ও ঘর ছুটতে লাগলাম । কিন্তু মেয়েটাকে আর দেখতে পেলাম না । শুধু নূপুরের শব্দ আর খিলখিল হাসির শব্দ আমাকে যেন আরো পাগল করো তুলল । ছুটতে ছুটতে হঠাৎ বারান্ধায় আসতেই মোটা আর কালো একটা লোকের সঙ্গে প্রায় ধাক্কাই খেয়ে গিয়েছিলাম । লোকটা আমাকে দেখে একটা দরজা দেখিয়ে দিয়ে বলে উঠল- ত্র্যই দিকে যান বাবু । আমি দরজা বরাবর ছুটলাম । শাড়ি পরা মেয়েটাকে দেখার জন্য আমার ভেতরটা তখন ছটপট করছে ।
ঘরটাতে ঢুকে আমি আবারও চমকে উঠলাম । কেননা ঘরটাতে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে তাদের সঙ্গে মেয়েটাও আছে । মেয়েটাকে দু’জন লোক দু’দিক থেকে ধরে আছে । আমি ঘরে ঢুকতেই মেয়েটা আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। আমার ভেতরটা কেন যেন মোচড় দিয়ে উঠল । আমি একটু এগুতেই দেখতে পেলাম ঘরের ঠিক মাঝখানে একজন বৃদ্ধ, হাতলওয়ালা একটা চেয়ারে বসে আছে । তার ঠিক সামনেই কয়েকজন একটা লোককে জোড় করে মাটিতে চেপে রেখেছে । লোকটা নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করে ও পারছেনা। আমি আরো কাছে গিয়ে বলে উঠলাম কি হচ্ছে এসব ? কিন্তু কেউ আমার দিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না । লোকগুলোর মাঝে হঠাৎ আমি জামালকে দেখতে পেলাম । হাতে একটা বড় রাম দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । দা’টা দেয়ালের মশালের আলোয় চকচক করছে । আমার বুঝতে কিছু বাকি থাকলো না ঘরে কি ঘটতে চলেছে । আমি কিছু একটা বলতে চাইলে বৃদ্ধ লোকটা আমার মুখের কাছে আঙুল নিয়ে হুসসসসসস করে শব্দ করে আমাকে কিছু বলতে নিষেধ করলেন ।
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম । নীচে চেপে রাখা লোকটা গোৎ গোৎ করে শব্দ করছে । আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলাম । জামালের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম ও মিটমিট করে হাসছে। রাগে আমরা ভেতরটা কেঁপে কেঁপে উঠল । বৃদ্ধ লোকটা হঠাৎ জামালের দিকে ইশারা করতেই জামাল খুব দ্রুত চেপে রাখা লোকটাকে উল্টো শোয়াতে বলল । লোকটাকে চিৎকরে শোয়াতেই আমি চমকে উঠলাম । সে লোকটা আর কেউ নয়, “আমি নিজে” । আমাকেই নিচে শুইয়ে রাখা হয়েছে । জামাল আমার দিকে তাকিয়ে আবারও হাসল । তারপর তাকালো বৃদ্ধার দিকে । বৃদ্ধ লোকটা মাথা নেড়ে ইশারা করার সঙ্গে সঙ্গে জামাল মাথার উপড় দা’টা তুলে চোখের পলকে নীচে নামিয়ে আনলো । ফিনকি দিয়ে রক্ত এসে আমার চোখে মুখে লাগল । আমি বিস্ফোরিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম । টু শব্দটি মুখ দিয়ে বেড় হলো না । মেয়েটার তাকিয়ে দেখি সেও বোবা হয়ে গেছে । একবার কেটে ফেলা লোকটার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আমার দিকে তাকাচ্ছে । নীচে পরে থাকা লোকটার শরীর কাটা মাছের মতো লাফাতে লাফাতে এক সময় থেমে গেল । বৃদ্ধ লোকটা এবার আমাকে ধরে থাকা লোক দু’জনের দিকে ইশারা করতেই লোক দুটো আমাকে এক টানে নীচে শুয়িয়ে ফেলল । জামালকে দেখলাম আমার বুকের দু’পাশে পা রেখে দাঁড়াতে । দা’টা থেকে টপটপ করে আমার শরীরে রক্ত পরছে । ভয় শূণ্য দৃষ্টিতে আমি দা টার দিকে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । শুধু আমার দাতের সঙ্গে সঙ্গে ঠকঠক করে বাড়ি খাচ্ছে ।
হঠাৎ বৃদ্ধ লোকটা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো - দেখ,নিশি দেখ, আমার অবাধ্য হলে কি হয় দেখ । মেয়েটা বৃদ্ধ লোকটার গলা শুনে যেন খেপে উঠল এক ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে লাফ দিয়ে জামালের হাত থেকে দা'টা কেড়ে নিয়ে চোখের পলকে বৃদ্ধ লোকটার মাথায় কোপ মেরে বসলো । ফিনকি দিয়ে আবারও রক্ত ছুটতে দেখলাম । মেয়েটা দা নিয়ে জামালের দিকে ঘুরতেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে সবাই পেছনে সড়ে গেল । মেয়েটা, তুই শুয়োর ,তুই একটা জানোয়ার বলে চিৎকার আর কান্না করতে করতে বৃদ্ধ লোকটাকে কোপাতে লাগল । একসময় ছিন্নবিন্ন হয়ে যাওয়া বৃদ্ধের দেহের উপড় থু করে এক ধলা থুতু ফেলে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আসো । তারপর দরজার দিকে ছুটতে লাগল । আমিও মেয়েটার পেছন পেছন ছুটতে লাগলাম । পেছনে অনেকগুলো পায়ের শব্দ আমাদের অনুসরণ করে আসতে লাগল । ছুটতে ছুটতে মেইন দরজার আমরা যখন মেইন দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছি তখন পেছন থেকে কয়েকজন এসে মেয়েটাকে ধরে ফেলল । মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো যাও তুমি চলে যাও । চলে যাও । আমি ছুটতে ছুটতে দরজা দিয়ে বেড় হয়ে এলাম । বাড়িটা থেকে বেড় হয়ে প্রাচীরের কাছে আসতেই কিছু একটা সঙ্গে মাথা ঠুকে যেতেই আমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে গেলাম ।

।। ভৌতিক এবং সত্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 23, 2011 at 10:35pm
আমার নানুর মুখ থেকে শোনা একটি বাস্তব ঘটনা আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।আমার নানুর বাড়ী মুন্সীগঞ্জ জেলায়।আজ থেকে ৯ বছর আগে কোন এক রমজান মাসের রাতের ঘটনা।বাড়ীতে আমার নানু,নানা এবং আমার খালামনি থাকতেন।সব সময় নানু ঘুম থেকে আগে উঠতেন কারন সেহেরীর জন্য খাবার আয়োজন করতে হত। তো যাই হোক নানু হিটারে ভাত চরিয়ে ,মূল বাড়ী থেকে একটু দূরে কলপাড়ে(স্থানিয় ভাষায়) ওযু করতে গিয়েছিলেন। তখনও চারদিকে নিশ্চুপ অন্ধকার, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত কিছু বাড়ীতে কুপির কিংবা হারিকেনের আলো দেখা যায়।নানু তার নিজের মত করে ওযু করতে লাগলেন। বলে রাখা ভাল যে কলপাড়ের পাশে ছিল বিচ্ছিন্ন কিছু বাশঁ ঝার।তা যাই হোক নানু যখন কলচাপলেন তখন মাঝ বয়সি একটি মেয়ের গুগানো কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। প্রথমে নানু ভেবেছিলেন পাশের বাড়ীর হান্নানের বউ হয়ত কান্না করছে,কারণ হিসেবে তিনি হান্নান তার বউকে প্রহার করেছে বলে ধরে নিলেন।কিন্তু পরক্ষনেই তিনি চিন্তা করলেন হান্নান আর তার বউ তো কাল রাতেই হান্নান এর বড় ভাইয়ের বাড়ী শ্রীনগর চলে গেছে। নানু তখনও বিচলিত না। নানু যখন ই কলচাপা থামাচ্ছেন তখনই কান্নার শব্দটা থেমে যাচ্ছে। আবার কল চাপলেন আবারো সেই কান্নার আওয়াজ। যাই হোক পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক না তা তিনি ইতিমধ্যো বুঝে গেছেন।তিনি মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলেন। তার হাত পা প্রায় ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল তার বর্নণায় তা তিনি উল্লেখ্য করেছিলেন।যাই হোক সাহস করে তিনি পাশের দিকে তাকালেন দেখলেন সাদা শাড়ী পরা একটা মেয়ে বিশাল বড় একটা ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে বাশঁ ঝারের গোরায় বসে কান্না করছে। তিনি এই দৃশ্য দেখার পরে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলেন না। চিৎকার দিয়ে অঙ্গান হয়ে কলপাড়ে পড়ে রইলেন।তার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে আমার নানা আর খালামনি দৌড়ে কলপারে গেলেন। সকাল হল নানুর জ্ঞান ফিরলো। খালামনি মাথায় পানি ধালছিল। তিন পর ঘটনা পুরোপুরি ভাবে জানা গেল। ঘটনা স্থলে তখন গিয়ে দেখা গেল একটি মরা কাক।কাকটি বাশঁ ঝারের মধ্যে ছিল।এর পর সেটাকে পুড়িয়ে ফেলা হল। নানু কিন্তু ভূত বিশ্বাস করেন না। তিনি এক হুজুরের কাছে ব্যাপারটা খুলে বললে তিনি এর ব্যাখায় বলেন বদ কোন জ্বীন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কাক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে মৃদু হেসে বললেন সেইটা তোমার না জানলেও চলবে। আমি পুরো ঘটনাটা আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। এর ব্যাখা আমার জানা নেই। কিন্তু এত টুকু বলতে পারি ঘটনা সত্য। শেয়ার করেছেনঃ Ahsan Kibria Moni শেয়ারকারীকে আন্তরিক ধন্যবাদ।।

।। রহস্যময় ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 24, 2011 at 10:42pm
ছোট বেলা থেকেই আমার ফুলের বাগান করার প্রতি প্রচন্ড ঝোক ছিল।। অনেক সাধনা করে একটা ফুলের বাগানের গর্বিত মালিক হতে পেরেছিলাম।। মূল ঘটনাঃ আমার পড়ার টেবিলটা ছিল জানালার কাছে। একদিন রাতে পড়া শোনা করছি। রাত ১২:৩০ টার মত বাজে। জানালার পাশে ফুলের বাগানে কেমন একটা শব্দ শুনে জানালা দিয়ে আবছা অন্ধকারে তাকিয়ে দেখি, একটা গরু বাগানের মধ্যে ঢুকে ফুল গাছ খাচ্ছে। গরুটা বাড়ির মধ্যে কিভাবে ঢুকলো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারন গেটটা আটকানোই থাকে। যাহোক, টর্চ নিয়ে বের হলাম গরুটাকে তাড়াতে। বাগানে ঢুকে আলো ফেলে দেখি, বাগানে গরুতো দূরের কথা একটা ইদুর পর্যন্ত নেই! খুব ভয় পেয়ে দ্রুত বাসায় ঢুকে বড় ভাইয়াকে ঘটনাটা বলি। ও তখন আমাকে সাথে নিয়ে সাড়া বাড়িটা ভালো করে খুজে দেখে। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। বড় ভাইয়া আমার কথা একেবারে হেসেই উড়িয়ে দেয়। পরদিন বাগানে ঢুকে খুজতে থাকি গরুর পায়ের কোন চিহ্ন দেখতে পাই কিনা। কিন্তু কোন চিহ্ন নেই। এর কিছুদিন পরে প্রায় রাত ২টার দিকে বড় ভাইয়া আমার রুমে এসে আমার ঘুম ভাংগায় এবং বলে কিছুক্ষন আগে ও গরুটাকে দেখেছে। এর পর আরও যা বলে তা ওর ভাষায় উল্লেখ করছি। "ঘুম আসছিলনা তাই একটা সিগারেট খেয়ে মুখে পানি নিয়ে কুলি করে জানালা দিয়ে ফেলি। তখন দেখি একটা কালো গরু ওয়ালের পাশে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে গরুটার চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে বেরুচ্ছে। তার পরে সোজা তোর কাছে চলে আসলাম। রাতটা তোর এখানেই কাটাব। আবার ভাবিস না আমি ভয় পেয়েছি।" এর পরে আমি ওকে বললাম, "তোর রুমে চল। দেখে আসি গরুটা এখনও আছে কিনা। ও রাজি হয়না। কাজেই দুজনে শুয়ে পরি।
পরদিন খুব সকালে সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুজেও কোথাও গরুর কোন অস্তিত্ব পাওয়া গেলনা। বাড়ির গেটও আটকানো ছিল। তাহলে কি রাতের বেলা গরুটা ওয়াল টপকে ঢুকতো আর বের হতো! আমাদের বাসার অনেকেই এর পরে গরুটাকে দেখেছে। কিন্তু গরুটা কখনো কারও কোন ক্ষতি করেনি। আমি আজ প্রায় ৩ বছর বাড়ির বাহিরে। এর মধ্যে কেউ আর গরুটাকে দেখেনি। বাসার সবাই বিশেষ করে বড় ভাইয়া দুষ্টুমি করে বলে, "তুই বাড়ি ছাড়লি আর গরুটাকেও দেখা যাচ্ছেনা। গরুটা তোর মায়ায়ই ওয়াল টপকে বাড়ির মধ্যে ঢুকতো। তুইও নাই আর গরুটাও আসেনা।" শেয়ার করেছেনঃ ডিজিটাল ভূত ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/profile.php?id=100002757351737

।। মাথাহীন লাশ (পর্ব - ০১) ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 24, 2011 at 11:05pm
রাত হলেই শ্যামপুর গ্রামে সুনসান নিরবতা নেমে আসে- এই নীরবতার মাঝে থাকে শুধুই পাতার মর্মর আওয়াজ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। একটানা সেই ডাকে মোহনীয় হয়ে থাকে যেন কুসুমপুর গ্রাম।সুনসান নিরবতার এই গ্রামে আজ ও রাত নেমে এসেছে। কিন্তু প্রতিদিনের মত চুপচাপ নেই কেউ। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত যে কৃষক সে ও এসে ভিড় করেছে কালনীর শাখা নদী সুলিনার তীরে। ব্যাপার কিছুই না- সেখানে ভেসে উঠেছে এক মহিলার লাশ। সবাই যে যার মত বলাবলি করছে, চিনতে চেষ্টা করছে লাশটাকে- কিন্তু কেউ চিনতে পারছেনা। কারন কেউ এই মহিলাকে খুন করে মাথাটা কেটে ফেলেছে। এখন চারদিকে লোক পাঠানো হয়েছে মাথার খোঁজে। মাথা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত এই লাশ দাফন করার জন্য কেউ এগোচ্ছেনা । এর মাঝেই কোন কোন উতসুক জনতা গিয়ে দূর থেকে কাঠি দিয়ে লাশের হাত পা দেখার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু কোন ফলাফল নেই। হাতে পায়ে কোন চিহ্ন নেই- যে লাশটাকে চেনা যায়। রাত যত বাড়তে থাকে –তত ভীর বাড়তে থাকে। মাঝে ভীরের চাপ কমে গিয়েছিল। কিন্তু হটাত করে শোনা যায় শেখের বাড়ির সুলেখা কে পাওয়া যাচ্ছেনা। ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে ঘর থেকে রেগে মেগে বের হয়ে গিয়েছিল সুলেখা। তারপর থেকে ওর পাত্তা নাই। সৎ মা ও সুলেখার কোন খোঁজ করেনাই। এখন ও সুলেখার মায়ের কোন দেখা নাই। শুধু ওর বড় ভাই জমির শেখ এর কান্না কাটি চলছে লাশটার পাশে। অনেকেই ওকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে- কিন্তু পারছেনা। বার বার আছাড় খেয়ে খেয়ে মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে জামাল শেখ। ছোট বোন টাকে অনেক ভালবাসত সে। সকালে ঝগড়া হবার সময় বলেছিল- “যা- দূরে যাইয়া মর গা” এখন সেই কথা শুনিয়ে বলতে বলতে চিৎকার করে কেঁদে উঠল ও। কিন্তু লাশের পরিচয় পাওয়া গেলনা। এর মাঝেই গ্রামের তিন জন মুরুব্বি এসে নিজেদের মাঝে বাহাস করতে লাগল। কেউ এই লাশ দাফন করতে চায়- কেউ নিয়ে ফেলতে চায় সেই পানিতে- যেখান থেকে ভেসে এসেছে লাশ। কেউ কেউ জানাজা পড়ার জন্যই বসে থাকল। কিন্তু লাশের পরিচয় পাওয়া গেলনা। এর মাঝেই একটা চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে গেল সেই চিৎকারের উৎসের দিকে। সেখানে এক ১২-১৩ বছরের ছেলে মাটিতে হোঁচট খেয়ে ঊল্টে পড়ে আছে। কিন্তু চিৎকার করেছে ভয়ে। কারন সে যে জিনিস টার সাথে হোঁচট খেয়েছে সেটা আর কিছু না – সেই বেওয়ারিশ লাশের মাথা।মাটিতে সামান্য গর্ত করে কেউ ঢুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু মাটি আলগা হওয়াতে তাতে হোঁচট খেয়েছে ছেলেটা। এরপর পরই ওঠে কান্না কাটির রোল। সুলেখার নাকের ফুল দেখেই সবাই চিনে ফেলে এটা সুলেখার লাশ। সাথে সাথেই দুই তিন জন মিলে সেই লাশের মাথা নিয়ে এসে লাশের পাশে রাখে। মরা কান্না জুড়ে দেয় জামাল শেখ আর তার আত্মীয় স্বজন রা।
গ্রামের মাতব্বর দের মাঝে দুই-তিনজন এই লাশের জানাজা করে দাফন করতে চায়না।চার পাঁচ জন তাদের সাথে কোরান-হাদিস নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ওই গ্রামের মসজিদের মওলানার সাথে তর্ক লেগে যায় করিম মওলা আর তার ছেলে রহমান মওলার । শেষে কোন মিমাংসা করতে না পেরে সেই লাশ দুই তিন জন মিলে কোন রকম জানাজা পড়ে দাফন করে। এর মাঝে গ্রামের হেডমাষ্টার সবুজ মিয়া ও ছিল। সবুজ মিয়া নিজের দায় থেকে এই কাজে উৎসাহ দেবার জন্য দোষি সাব্যস্থ হয় পরদিন এক সালিশে। দিন সাতেক সবার মুখে মুখে এই ঘটনা একের পর এক ডানা মেলতে থাকে। কেউ কেউ বলা শুরু করে সবুজ মিয়া এই সুলেখার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর এর রেশ ধরে কয়েকদিন পর আবার সালিস ডাকা হয়। যেই তিন জন লাশ দাফন ও জানাজা করতে চায়নি তাদের রায়ে সবুজ মিয়া কে এক ঘরে করে রাখে সবাই। আসলে ওই তিন জন খুব ক্ষমতা শালী বলে কেউ ওদের মুখে মুখে তর্ক করতে চায়নি।তাদের মাঝে রহমান মওলা পরের মাসে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাড়াচ্ছে। তাই তার সাথে কেউ কথা কাটাকাটি করতে চায়নি।ফলাফল নিরিহ সবুজ মিয়াকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে সবাই। কিন্তু সুলেখার ভাই জামাল শেখের বন্ধুত্ব ছিল।তাই সবুজ মিয়াকে নিজের ঘরে খাওয়াতে শুরু করে সে। এর মাঝে সবাই সুলেখার কথা প্রায় ভুলে যায়। দুই সপ্তাহ পর একদিন গ্রামের মসজিদের ইমাম ইসমাইল মিয়া ফজরের নামাজের আজান দিয়ে গিয়ে এক বীভৎস দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সকালে সবাই তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় মসজিদে খুঁজে পায়। কেউ বলতে পারছেনা কেন সে অজ্ঞান হয়েছে। অনেক ক্ষন পর তার জ্ঞান ফিরলে সে সবাইকে নিয়ে যায় সুলেখার লাশ যেখানে দাফন করা হয়েছিল সেখানে। সুলেখার লাশের পাশে একটা জারুল গাছ আছে – সেখানে একটা ডালে পাওয়া যায় করিম মওলার ছিন্ন ভিন্ন লাশ। প্রথমে কেউ চিনতে পারেনি। কিন্তু গাছের গোড়ায় কে যেন লাশের মাথাটা সযত্নে কেটে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। দৃশ্যটা দেখে অনেকেই সহ্য করতে পারেনি। শেষে পুলিশ দেকে পাঠানো হয়। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায় ময়না তদন্তের জন্য। এর মাঝে রহমান মওলা ক্ষেপে যায় নিজের পিতার এই অবস্থা দেখে। বিকেল যেতে না যেতেই সবুজ মিয়ার বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয় সে। সবাইকে বলে বেড়াতে থাকে যে সবুজ মিয়ে গুন্ডা লাগিয়ে তার বাবাকে হত্যা করিয়েছে। এই সময় তার সাঙ্গ পাংগরা মিলে সবুজ মিয়াকে গাছের সাথে বেধে ইচ্ছা মত মারতে থাকে। শেষে মার খেয়ে সবুজ মিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে ওকে নিয়ে স্কুল ঘরের একটা রুমে বেধে রাখে। সবাই গোপনে সুলেখার ভুতের কথা বললেও রহমান মওলার সামনে কেউ তর্ক করেনি মার খাবার ভয়ে। এর পর থেকে দুইদিন ধরে বন্দি থাকে সবুজ মিয়ে সেই স্কুল ঘরে। সকাল বেলা এসে রহমান মিয়ার লোক খাবার দিয়ে যায়। সবুজ মিয়ের খাওইয়া শেষ হলেই মার শুরু হয়। শেষে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে দড়ি বেধে রেখে যায় রহমান মওলার লোকজন। এর তিন দিন পরেই আবার শ্যামপুর গ্রামে শোর গোল ঊঠে। এবার ভোর সকালে পাওয়া যায় রহমান মওলার মাথা কাটা লাশ। মাথা কাটা লাশ গ্রাম বাসি দুইটা দেখেছে। কিন্তু এই রহমান মওলার লাশের পায়ের দিকটা ছিলনা। পাশেই পড়েছিল হাড় গোড়। যেন কেউ এসে খেয়ে গেছে লাশটাকে। এবার পুলিশ এসে সবাইকে জেরা করতে শুরু করে। এবং গ্রামের বেশ কয়েকজন লোকজন পালিয়ে যায় ভয়ে। কিন্তু পুলিশকে রহমান এর ভাই রহিম মওলা টাকা খাইয়ে বিদায় করে দেয়। গ্রাম বাসি স্বস্তি পেলেও ভয়ে বাড়ি থেকে দিনের বেলা ও লোকজন বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। সবুজ মিয়াকে নির্যাতন বন্ধ করা হয়- কিন্তু তাকে বন্দি করেই রাখা হয় সেই স্কুল ঘরে। এর সাত দিন পরেই পর পর দুই জন লোকের লাশ পাওয়া যায় মাথা কাটা অবস্থায়। এই দুই জন হল গ্রামের সেই দুই মুরুব্বি যারা সুলেখার লাশ দাফনে বাঁধা দিয়েছিল। যারা সুলেখার জানাজা পড়তে চায়নি।গ্রাম বাসি এরপর প্রায় চুপচাপ হয়ে যায়। যারা সেই রাতে মুরুব্বি দের সাথে গলা মিলিয়েছিল তারা দুরের গ্রামে পালিয়ে যায়। এর মাঝে পুলিশ এসে দুইবার সবাইকে জিজ্ঞাসা বাদ করে। কিন্তু খুনি ধরা পড়েনা। শেয়ার করেছেনঃ Ikram Hossain সংগ্রহকারীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।

।। মাথাহীন লাশ (শেষ পর্ব) ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 25, 2011 at 11:08pm
এর ঠিক দুই দিন পরে অমাবস্যা রাতে রহিম মওলা শুয়ে আছে ওর ঘরের খাটে। এই কয়দিনের মাঝেই সে নিজের প্রতিপত্তি প্রকাশে এলাকাতে টহল দিতে শুরু করেছে। মোটর সাইকেল নিয়ে এলাকার চ্যাংড়া ছেলে পেলেদের সাথে ঘুরে ঘুরে নিজেকে বাপ ভাইয়ের যোগ্য উত্তর সুরি হিসেবে জানান দিয়েছে। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে অনেক বেশি ক্লান্ত ছিল রহিম মওলা।পাশের মকবুল বুড়ার একটা খাসি জবাই করে খেয়ে দেয়ে শান্তির একটা ঘুম দিয়েছে সে। প্রতিদিনের চেয়ে এই অমাবস্যার রাত ছিল বেশি সুনসান। রহিম মওলা গভীর ঘুমে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে। গুনে গুনে তিনটা টোকার শব্দ হয়। আর তাতেই রহিম মওলা জেগে উঠে।কিন্তু দরজা খুলে হতভম্ভ হয়ে পড়ে সে।দেখে তার সামনে দাড়িয়ে ছিল একটা লাশ।দেখেই ভয়ে হতভম্ভ হয়ে যায় রহিম। কিছু বুজে ঊঠার আগেই সেই লাশের ডান হাত তার মাথার ঊপর উঠে আসে। এবং জ্ঞান হারায় রহিম মওলা। জ্ঞান ফিরেই একটা কুয়াশাচ্ছন্ন এলাকার আবিষ্কার করে রহিম মওলা নিজেকে। চারদিকে ঘন কুয়াশার মাঝে কয়েকবার নিজের বন্ধুদের নাম ধরে ডাক দেয়। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়না। মনে করেছিল ওর সাঙ্গ পাংগ দের কেউ ওর সাথে ফাজলামি করছে। চিৎকার করে বিশ্রী গালাগাল ও দিল কিছু। কিন্তু এরপর ই চার দিকে চারটা কাফনে জড়ানো লাশের অস্তিত্ব অনুভব করে সে। এবং একটু পড়েই চার দিক থেকে বেতের বাড়ি শুরু হয়ে যায়। প্রচন্ড সেই মার খেয়ে অজ্ঞান প্রায় রহিম মওলা- এমন সময় মার থেমে যায়। আসতে আসতে ঊঠে বসে সে। সামনে তাকিয়ে তার দৃষ্টি থেমে যায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রহিম-কারন তার সামনে বসে আছে সুলেখা। দেখেই ভয়ে চিৎকার করতে ভুলে যায় সে। এমন সময় সুলেখা বলে উঠে- “কি রে আমারে চিনতে পারসোস? আমি সুলেখা-এই যে দেখ আমার মাথা এহন ও কাডা”- বলেই নিজের মাথাটা দুই হাত দিয়ে একটানে খুলে রহিম মওলার সামনে ধরল। দেখেই বমি করে দিল রহিম মওলা। দুই হাত দিয়ে পেট চেপে একপ্রস্ত বমি করে রহিম মওলা বলল-
“আমারে ছাড়ি দেও- আমাক মাফ করি দেও সুলি আফা-আমাক মাফ করি দেও” বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল রহিম।
“কি? ছাড়ি দিমু? সেদিন কি আমাক ছাড়িছিলি রে তোরা দুই ভাই? আমি কতক করি কয়েছি আমাক ছাড়ি দে- তোরা আমার ছোট ভাই লাগস- নিজের বইন মনে করি ছাড়ি দে- কই সেদিন তো ছাড়িস নাই। আমাক দুই জন মিলি নষ্ট করলি। তারপর আমাক যাতে কেউ চিনতে না পারে – তুই –তুই মওলার বাচ্চা আমার মাথা কাটি ফালালি। আমার সবুজ মিয়ারে কতক মারলি তোরা- কই সেদিন মনে আছিল না? মনে আছিল না আমার কথা?” বলেই নিজের মাথাটা আবার নিজের ধরে জোড়া লাগাল সুলেখা।
এবার কেদেই ফেলল রহিম-বলল-“আফা ভুল হইয়ে গেছে আফা- তুমি আমারে এবারের মত মাফ করি দেও আফা। আমি কইতাসি আমি এর পেরাচিত্ত করি ছাড়ুম”। এবার খিল খিল করে হেসে ঊঠল সুলেখা –সেই হাসি শুনে কাঁপতে শুরু করে দিল রহিম মওলা। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে আসছে সুলেখা। সামনে ভয়ার্ত রহিম মওলা। তারপর রহিমের ধরে একটানে ছিড়ে ফেলল তার মাথাটা- গলগল করে রক্ত পড়ছিল সেই কাটা মাথা থেকে। মাথাটা হাতে নিয়ে গা হিম করা একটা চিতকার দিয়ে কেঁদে উঠল সুলেখা। এই ঘটনার কিছুক্ষন পর নিজের চোখে মুখে জলের ঝাপটা খেয়ে জেগে ঊঠল জেগে উঠল সবুজ মিয়ে। সপ্তাহ খানেক ধরে এভাবেই তার ঘুম ভাঙ্গে। মওলা দের কেউ একজন চোখে মুখে পানি ঢেলে দেয়। তারপর খাওয়া দেয়। তার কিছু খায়- কিছু খায়না। তারপর শুরু হয় মার। আজকে তাই জেগে ও চোখ বন্ধ করে রেখেছিল সে। কিন্তু মাথায় একটা কোমল স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুলেখা।আসতে আসতে ঊঠে বসল সবুজ। শরীরে এতদিন না খাওয়ার ফলে শক্তি নাই। কিন্তু কেন যেন নিজের চোখকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে তার। সে বলল- “ সুলেখা তুই?” “হ আমি –মইরা গেছিলাম। আজকা আমার মুক্তি হইতাসে-তাই শেষ বার তোমারে দেখতে আইলাম” বলেই কেঁদে ফেলল সুলেখা।
“আমার বিশ্বাস হইতেসে না রে- তুই কেমনে মরলি রে?” চোখ বড় বড় করে বলল সবুজ মিয়া।
“এত শুইনে কোন লাভ নাই মাষ্টার। তুমি আসতে আসতে ঊঠ। নাও আমি তোমারে শেষ বারের মত খাওয়াই দিতাসি দুইটা ভাত’ – বলে পাশে রাখা থালা থেকে ভাত খাইয়ে দিল সুলেখা সবুজ কে। সবুজ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা। কোন কিছুর সাথে কোন কিছু মেলাতে মেলাতে ক্লান্ত হয়ে শেষে ভাত খেতে শুরু করল মন্ত্রমুগ্ধের মত। খাওয়া শেষে সুলেখা বলল-
“আমি যাই মাষ্টার- তুমি কয়দিন পর সুন্দর দেইখে একটা নিকা কইরো। আমাকে ভুলি যাইও মাষ্টার” –বলেই পা বাড়াল সুলেখা।
এতক্ষন ঘোরের মাঝে থাক্লেও এখন জ্ঞান ফিরে আসে সবুজ মিয়ার। দৌড় দেয় দরজার দিকে। দরজা খোলাই ছিল। খুলে দেখে ভোর হয়ে গেছে। সূর্য প্রায় ঊঠে গেছে।আর সেই সূর্যের দিকে আসতে আসতে এগিয়ে চলেছে সুলেখা।কিন্তু সবুজ আর দৌড়ায়নি সুলেখার পেছন পেছন- কারন সুলেখা এগিয়ে চলেছিল তার শেষ ঠিকানা সেই কবরের দিকে। সংগ্রহ করেছেনঃ Ikram Hossain সংগ্রহকারীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।

রাজকান্দির আতংক - By ত্রিনিত্রি (প্রথম পর্ব)

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Tuesday, August 23, 2011 at 9:32pm
রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সাম্প্রতিক কালে ট্রেকিং এর ফলে আবিস্কৃত ঝরনার কিছু দূরে আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসে আছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তিন তরুন। হামহাম ঝরনার অপূর্ব বর্ননা পেপারে আর ব্লগে পড়ে মাথা আর ঠিক রাখতে পারেনি তারা। উদ্যোগী অবশ্যই সিয়াম। সিয়ামের জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে ঘুরে বেড়ানো আর অদেখা কে দেখা। তার সাথে যুক্ত হয়েছে সুজন আর অনীক। তিনজনেই পড়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। তবে সুজন আর অনীক বিবিএ আর সিয়াম আছে ইইই তে। সাবজেক্ট আলাদা হয়ে যাবার পরও তাদের বন্ধুত্বতে ছেদ পড়েনি। সুজন আর অনীক দুইজনের বাড়িই ঢাকার বাইরে। সিটি কলেজে পড়তে এসে তাদের সাথে সিয়ামের পরিচয়। তারপরে কি করে যে মানিকজোড় থেকে তারা থ্রী মাসকেটিয়ার্সে রূপান্তরিত হলো, ভালো করে কেউই মনে করতে পারে না। শুধু জানে, তিন জনে একেবারে আত্মার বন্ধু। কোন একটা পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথে তিন বন্ধু বেড়িয়ে পড়ে এখানে সেখানে। এর মাঝে অবশ্য সুজন একবার প্রেমে পড়ে গন্ডগোল করে ফেলেছিল। শক্ত ধাতানি দিয়ে বাকি দুইজন আবার তাকে পথে এনে ফেলেছে। জীবন চলছিল সেই আগের মতই। পড়াশোনা, ক্রিকেট, আড্ডাবাজী, গিটার আর অ্যাডভেঞ্চার। আহ, জীবনে আর কি চাই?

হামহাম ঝরনার কাছে আসতে অবশ্য তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। পেপারে পড়ে এসেছিলো যে গাইড পাওয়া কোন ব্যাপার না। কিন্তু এখানে এসে দেখে ব্যাপার ভিন্ন। কেউই এ পথ মাড়াতে চায় না। চাম্পারাই টি এস্টেটের কলাবন পাড়া তো দূরস্থান, কাছের তৈলংকামী গ্রাম থেকেও কেউ রাজী হলো না। গ্রামবাসী কি যেন বলতে চেয়েও বললো না। গ্রামে ঢুকার পর থেকে গ্রামবাসী খুবই আদর যত্ম করেছে। ১৫ বছর বয়সী ফেলনার সাথে তো রীতিমত বন্ধুত্বই বলা যায়। কিন্তু ঝরনায় রাত কাটাবে শুনেই সবার মুখ শুকিয়ে গেলো। ফেলনাকে কোনভাবেই রাজী করানো গেলো না। ফেলনা তাদেরো যেতে দেবে না। ভয়ার্ত কন্ঠস্বরে বলতে লাগলো, “ দানু! ওবাইদি দানু আছুইন। যাইও না রে বা। এনো থাকি যাউক্যা”। দানোর কথা শুনে সুজনের মুখ শুকিয়ে গেলেও অনীক আর সিয়ামের হাসি আর ধরে না। এমনিতেই দুইজন কুসংস্কার মিটানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। পড়াশোনা শেষ করে তারা প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চলে গিয়ে গিয়ে কুসংস্কার দূর করবে – এই তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা। সুজন একটু মিন মিন করলেও দুইজনের টিজের যন্ত্রনায় শেষ মেষ হাল ছাড়লো।

তৈলংকামী গ্রামবাসীদের বিদায় জানিয়ে বেশ কয়েকটি টিলা ট্রেকিং করে তবেই ঝরনার দেখা পেয়েছে। কিছুদূর যেতেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক নাই হয়ে গেলো। জুন মাসের ভ্যাপসা গরমে দর দর করে ঘামতে থাকে তিন জন।
“ধূরো! দেখ কেমন লাগে। এত সকালেই নেটওয়ার্ক গেলো!” বিরক্ত হয় সিয়াম। তারচেয়েও বিরক্ত সুজন।
“জানলে একটু আগেই ছবি তুলে ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচারটা চেঞ্জ করতাম! যত্তোসব”। শুধু অনীক মাথা দোলায়। তার মোবাইল এমনিতেই পছন্দ না; নেটওয়ার্ক আসা যাওয়ায় তার মাথা ব্যথা নেই। ট্রেকিং করতে গিয়ে সিয়ামের কেমন যেন খটকা লাগছিলো। এটাই তাদের প্রথম ট্রেকিং নয়। মাত্র ৫ মাস আগে তারা ট্রেকিং করে বগা লেক সহ কেওকারাডং এর উপরে উঠেছে। সিলেটের লাউয়াছড়ায় ট্রেকিং করেছে। এমনকি সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্রামেও তারা গেছে, যেখানে বাঘের আক্রমনে প্রতি বছরই মানুষ মারা যায়। কিন্তু এরকম নীরব নিথর বন কোথাও সে পায় নি। না আছে কোন পাখ পাখালির ডাক, না আছে কোন পোকা মাকড়ের শব্দ। এমনকি ঝিঁঝিঁ পোকার যে টানা ডাক বন মাতিয়ে রাখে, তাও ভীষনভাবে অনুপস্থিত। কেমন যেন অশুভ এক চাপা আতংক বিরাজ করছে চারিদিকে। সিলেটের যে কোন বনে বানরের আধিক্য। এখানে এই পর্যন্ত একটাও তাদের চোখে পড়েনি। সুজনই প্রথম কথা বলে উঠলো,
“দোস্ত, দেখেছিস এই বনে কোন পাখি ডাকে না?” সিয়াম হেসে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করলো।
“ডাকবে কি করে? দানো এসে সব খেয়ে ফেলেছে না?” এবার অনীক ও হাসিতে যোগ দিলো। “হ্যাঁ, দানো পাখি, বান্দর মায় পোকা সবই খেয়ে ফেলেছে”। তাদের অট্টহাসি যেন প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে ফিরে এলো। সুজন তখনকার মত চুপ করলো বটে; কিন্তু অনীক আর সিয়াম একবার চোখাচোখি করে নিলো। তারাও একটু চিন্তিত। কিন্তু এখন সেটা প্রকাশ করলে সুজনকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাদের এই বন্ধুটির নার্ভ কিঞ্চিত উত্তেজিত থাকে সবসময়ই। ঝরনা দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কি টলটলে নির্মল পানি। কলকল শব্দে পাথুরে পাহাড়ের গা ঘেঁষে প্রায় ৭০ ফুট উপর থেকে পড়ছে। তাদের কষ্ট সার্থক। অনীকের প্রফেশনাল ক্যামেরার শাটার পড়তে লাগলো ঝটপট। এই ছবি যে পরশু দুপুরের মাঝেই ফেসবুকে আপ হয়ে একটা তোলপাড় কান্ড ঘটাবে, যে নিয়ে সিয়াম পুরোপুরি নিঃসন্দেহ। পানিতে পা ডুবিয়ে সুজন আনন্দে তার প্রিয় গান ধরলো,
“ও পরানের পাখি রে, দিলি তুই ফাঁকি রে! শূন্য করলি খাঁচাটা! আ আ!” অনীক আর সিয়ামও গলা মেলালো, “তোরে ছাড়া আর না রে, কি করে বাঁচি রে! বুঝলি না মনের জ্বালাটা! আ আ !” এরপরে সম্মিলিত হাসি। কিছুক্ষনের মাঝেই সব অস্বস্তি ভুলে তাঁবু আর রান্না করার কাঠ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি পড়ে গেলো। তিন বন্ধু হাসছে, একে ওকে মারছে, ক্লাসের জিনাত বেশী সুন্দর না রূপা – এই নিয়ে জটিল তর্ক চলছে। সুজন দুইজনেরই প্রেমে পড়ে বসে আছে; সে খুবই চিন্তিত কাকে সে প্রপোজ করবে। আসার পথেই ঠিক হয়েছে, রাতের খাবার শেষ করে ঝরনার পাড়ে কয়েন টস করা হবে। হেড উঠলে জিনাতকে সুজন প্রপোজ করবে; টেইল উঠলে রূপা। এইসব বড়লোকি কারবার দেখে অনীক বেচারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“শালার চেহারা খারাপ বইলা কোন মাইয়াই পাত্তা দেয় না। এত সুন্দর ছবি তুলি; সবাই তেংকু অনীক বইলা ছবি নিয়া চইলা যায়। আর এই বদমাইস সুজইন্যা কুন কামের না। তারপরেও সব মাইয়া ওরে লইয়াই যাইবো কফি খাইতে। আবার বিল মাইয়ারাই দিব। দুনিয়ার এই কি বিচার!আইজ ওরে মাইরা ঝরনায় ফালামু”। বলেই তাড়া করে সুজনকে। সুজন “অ্যাই খবরদার, অ্যাই খবরদার” বলে চেঁচিয়ে দেয় ছুট। এদের কাজ কারবার দেখে হাসতে হাসতে সিয়াম পাশের জংগলে ঢোকে শুকনো কাঠ পাতা জোগাড়ের জন্য। কেমন যেন অস্বস্তি হতে থাকে সিয়ামের। কেউ যেন গভীর দৃষ্টিতে সিয়ামকে লক্ষ্য করছে। ঝট করে ঘাড় ঘোরালো সিয়াম। কেউ নেই; কেউ থাকার কথাও না। সিয়াম বেশ ডাকাবুকো ধরনের ছেলে। এই ধরনের অনুভূতির সাথে সে বেশী পরিচিত না। দানো বলতে কি সত্যি কিছু আছে? ভূত-প্রেত তো অবশ্যই না; তবে বন্য কোন প্রানী হতে পারে। নাহ, সতর্ক থাকতে হবে। হাতের দা দিয়ে সিয়াম শক্ত দেখে নীচু হয়ে থাকা একটা গাছের ডাল কেটে নেয়। ফিরে এসে দেখে, সুজন আর অনীক মিলে প্রায় এক হাঁড়ি মাছ ধরে ফেলেছে। মাছগুলি বড্ড বোকা। আগুন জ্বালাতে গিয়ে সবার নাভিশ্বাস অবস্থা। “সরকারের উচিত সব জায়গায় গ্যাস সাপ্লাই দেয়া”-এরকম যুগান্তকারী মতবাদ যখন সুজনের মাথা থেকে বেরুচ্ছে, তখনই আগুনটা জ্বলে উঠলো। রান্না করতে গিয়ে দেখা গেলো লবণ নেই। কি ব্যাপার? লবণ ছিলো সুজনের ব্যাগপ্যাকে। কোন ফাঁকে যে তা পড়ে গেছে, সেও বলতে পারে না। সুজনকে ইচ্ছা মত গালি দিতে দিতে সিয়াম আরেক প্যাকেট লবণ বের করলো। সুজন অবাক।
“কি রে? তুইও লবণ এনেছিস?” “অবশ্যই। তোর কি ধারনা আমার মাথায় এতই কম ঘিলু যে তোর ব্যাগে আমি ব্যাকআপ ছাড়া কোন কাজের জিনিস রাখবো? মাথামোটা কোথাকার!” সুজন ভেংচি দিলো। খেতে বসে সবার অভিমত, “এত চমৎকার খাবার জন্মে খাইনি!” সুজন বললো যে সে অবশ্যই তার প্রেমের সিভিতে এই মূল্যবান তথ্যটি যোগ করবে যে সে রাঁধতে পারে। যদিও কুটা বাছাতেও সুজন হেল্প করতে পারে নাই। “সুজন কোন কাজ করে নাই”- এই যুক্তিতে হাড়ি পাতিল সুজনকে মাজতে দিয়ে সিয়াম আর অনীক আরাম করে ঝরনার পাশে শুয়ে পড়লো। কলকল ধ্বনিতে চারপাশ মুখরিত। রাগে গজগজ করতে করতে কিছুদূরে গেলো সুজন বাসন মাজতে। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো,
“ওই! অনীক! সিয়াম! দেখ দেখ এইডা কি!” দূর থেকেই চেঁচালো অনীক, “কি? কুনো মাইয়ার ফডু? না ফুন নাম্বার?” “আরে ধ্যাত্তেরিকা! খালি বেশী কথা বলে। দেখ না”। বলে সুজন তা তুলে ধরে। সিয়াম অবাক হয়, “কি রে, দেখে তো মনে হচ্ছে একটা খাতা”। সিয়াম এবার কাছে গিয়ে সুজনের হাত থেকে খাতাটা নেয়।একটা ডায়েরী। খুলে দেখে লিখা, “অর্থহীনের অর্থহীন প্রলাপ”। আর কোন নাম ধাম কিছু লেখা নেই। এক ঝলকে সব পাতা উল্টিয়ে সিয়াম দেখে ডায়েরীর বেশ কিছু পাতা ভরা লিখা। ঝরনার পানি এবং বৃষ্টিজলে বেশ ভিজলেও মলাটের উপর পলিথিন থাকায় ভিতরটা বেশ অক্ষত আছে। তিনজনেই ভয়াবহ উত্তেজিত। ততক্ষণে সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। হাঁড়ি পাতিল ওখানেই রেখে তারা আগুনের পাশে ফিরে এসে গোল হয়ে বসে। সিয়ামের হাতে ডায়েরী। তবে আশার কথা, আঁধার নামার সাথে সাথে ঝিঁঝিঁ পোকারা কোরাস শুরু করেছে। পোকার ডাক এত ভালো লাগবে, জীবনেও ভাবেনি সিয়াম। সাথে পানির কলকল শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। গল্প শোনার চমৎকার পরিবেশ। অনীকের গা ঘেঁষে বসে সুজন বললো,
“দোস্ত, ডায়রী টা পড়। দেখি কে ফেলে গেছে এই ডায়রী”। সিয়াম পাতা উলটালো।

ডায়রীর প্রথম দিকে কিছু কবিতা লিখা। কিছু পড়া যায়, কিছু পানিতে ভিজে নষ্ট। এই বছরেই শুরু করা হয়েছিল ডায়েরী লিখা।ঝকঝকে মুক্তার মত হাতের লেখা। সিয়াম কবিতা আবৃতির মত করে পড়লো, ৪ঠা জানুয়ারী ২০১১, রাত ৩:১০
মাঝে মাঝে মনে হয় হাঁটতেই থাকি, হাঁটতেই থাকি জানি না কোথায় যেতে চাই,
জানি না কি দেখতে চাই
এটাও জানি না কাকে স্পর্শ করতে চাই...
শুধু মনে হয়, ঘর থেকে বের হয়ে যাই...
কোন একটা পথ খুঁজে হাঁটতেই থাকি। অন্যসময় হলে কবিতা শুনে অনীক আর সুজন দুইজনেই সিয়ামের ভাবুকতা নিয়ে টিজ করতো। কিন্তু এখন এই পরিবেশে তারা শান্ত ভাবে শুনতে লাগলো। ৭ই জানুয়ারী ২০১১, রাত ৯:৪০
অসহ্য হয়ে গেলাম পরীক্ষা নিয়ে। নতুন বছরে একটু প্লান প্রোগ্রাম করবো, তা না; টানা পরীক্ষা। ছাতা, মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলাম কোন দুঃখে! আজ ওয়ার্ড থেকে ফিরেই লিখতে বসলাম, মনটা ভীষন খারাপ লাগছে। একেবারে চোখের সামনে বাচ্চা একটা মেয়ে মারা গেলো। ভাইয়ারা দৌড়াদৌড়ি করেও কিছুই করতে পারলোনা। আর ভালো লাগে না, কবে যে ডাক্তার হবো। এর পরে পাতাগুলি সবই পানিতে ভিজে নষ্ট। সিয়াম চোখ কুঁচকে অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুই পড়তে পারে না। অনীক কেড়ে নিয়ে সে খানিক চেষ্টা করে। ধূর, সবই প্রায় নষ্ট। প্রায় ৩০/৩২পৃষ্ঠা। এখনো লেখকের পরিচয় ই বোঝা যাচ্ছে না। অন্তত এটুকু জানা গেছে যে সে কোন এক মেডিকেলের ছাত্র। মেডিকেলে পড়ে এত চমৎকার হাতের লিখা? অবাককর ঘটনা। “আরে দে দে, পরের টুকু পড়ি। এই যে আছে, তাই তো অনেক; পানিতে তো সবই নষ্ট হবার কথা”। সিয়াম বলে। “ঠিক” সুজন তাল মেলায়। “এছাড়া এখন এই রাতে আমাদের করার কিছুই থাকতো না। নেক্সট বার কোন ট্রেকিং এ গেলে কিন্তু আমরা গান নিয়ে আসবো”। “আচ্ছা আচ্ছা, এখন পড় তো। আগুন নিভে গেলে কিন্তু সর্বনাশ হবে”। অনীক বলে। “কেন? সর্বনাশ হবে কেন? দুইটা যে পাঁচ ব্যাটারীর টর্চ আনলাম? সেগুলি দিয়ে পড়বো”। বলেই সিয়াম টর্চের বাটনে চাপ দেয়। সে কি! জ্বলছে না। সিয়াম অস্থির ভাবে বার বার চাপ দেয়। “এই অনীক, তোর টর্চটা দেখ তো”।
অনীক টর্চ জ্বালানোর চেষ্টা করতে থাকে; জ্বলে না। ব্যাটারী খুলে আবার ভরে; তাও টর্চ জ্বলে না। রাগে অনীক গালি দিতে থাকে দোকানদারকে। সুজন আতংক ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে।
“দোস্ত, এই জায়গার কোন সমস্যা আছে। চল, আমরা গ্রামে ফিরে যাই”। “হু, এখন এই অন্ধকারে তুই গ্রামে যাবি!! রাস্তা চিনবি? এই রাস্তা যে আমরা গাইড ছাড়া এসেছি, তাই তো বেশী। দেখিস না কি বিশাল জঙ্গল”। সিয়াম রাগত স্বরে বলে। তিন বন্ধু চুপ হয়ে যায়। সুজনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তিনজনেরই বুকের মাঝে কেমন যেন ধড়ফড় শুরু হয়েছে। ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ বড্ড কানে বাজছে। গাঢ় অন্ধকারের মাঝে শুধু তাদের জ্বালানো আগুন দপ দপ করছে। সিয়ামই প্রথম নিজেকে সামলে নেয়। কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলে,
“দোকানদারের একদিন কি আমার একদিন! আগে ঢাকা যেয়ে নিই, দাঁড়া”। -নিজেই কেমন যেন বল পায় না। এই ভয়ংকর বন থেকে কি তারা কোনদিন বের হতে পারবে? একেকটা সেকেন্ড সিয়ামের কাছে এক এক ঘন্টার মত দীর্ঘ মনে হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমটা যেন হঠাৎ করে অসহ্যকর হয়ে যাচ্ছে। বাতাস এত কম কেন? অনীক পরিস্থিতি শান্ত করতে ডায়েরী হাতে নেয়।
“চুপ করে বস তো তোরা। এখন কি আর দোকানদারকে গালি দিয়ে লাভ আছে? দোষ আমাদেরই। আরো ভালো ভাবে চেক করা দরকার ছিলো। এখন শোন, আলো থাকতে থাকতেই আমরা ডায়েরী পড়ে ফেলি”। ((( শেষ পর্ব আগািমকাল )))

রাজকান্দির আতংক - By ত্রিনিত্রি (শেষ পর্ব)

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, August 24, 2011 at 7:30pm
অনীক শব্দ করে পড়তে থাকে। ২৭শে এপ্রিল, ভোর ৫:২০
উফফ, পড়তে পড়তে মাথা ধরে গেলো। তবে আশার কথা, আর মাত্র দুইটা পরীক্ষা। এরপরেই প্রফ শেষ। প্রফ টা পাশ করতে পারলেই ডাক্তার! ভাবতেই অন্যরকম লাগে। ডাক্তার হবার পরো কি আমাদের বন্ধুত্ব এমনই থাকবে? না সময়ের সাথে আমরা সবাই হারিয়ে যাব? ব্যস্ত হয়ে যাব নিজ নিজ কাজে? নাহ, অন্তত শাহরিয়ার, তন্বী, রাহাত-এরা আমার মতই থাকবে। “ধূর, কি সব রোজনামচা লিখেছে এই ছেলে!” বিরক্ত হয় সুজন। “তো তুই কি আশা করেছিলি? প্রেমের গল্প?” অনীক মুখ ভ্যাংচায়। “হলে মন্দ কি হতো? এসব পড়াশোনা নিয়ে ভ্যাজর ভ্যাজরের চাইতে তো ছ্যাঁকার গল্প ভালো”। “আচ্ছা, আজকের আকাশে মেঘ কি অনেক বেশী নাকি রে?” অন্যমনস্কভাবে বলে উঠে সিয়াম। “আকাশ এত অন্ধকার কেন? কাল রাতে ট্রেনে আসতে আসতেও না দেখলাম প্রায় পূর্নিমা?” তাই তো! টনক নড়ে বাকি দুইজনের। কাল তো ভীষন রকম জোছনা ছিলো আকাশে। সিয়াম পারলে ট্রেনেই কবিতা লিখা শুরু করে, অনেক কষ্টে ওকে আটকানো গেছে। আজ এরকম মেঘে ঢাকা কেন আকাশ? কতটা মেঘ জমলে পরে এরকম জোছনা ঢাকা পড়ে? অনীক চিন্তিত মুখে বলে, “লক্ষণ তো ভালো না রে। মনে হয় ঝড়-বৃষ্টি হবে”। “সর্বনাশ। যেই না তাম্বু খাটাইছি, এ তো উড়েই যাবে। সিলেটের ঝড় মানে তো ঝড়ের বাপ”। ফ্যাকাশে মুখে বললো সুজন। আগুন প্রায় নিভু নিভু। আরো কিছু শুকনো পাতা তাতে গুঁজে দেয় সিয়াম।
“ওহি হোগা যো মাঞ্জুরে খোদা হোগা”। “ভুল হিন্দি বলে মেজাজ খারাপ করবি না খবরদার! বাংলা না পারলে ইংলিশ বল”। ঝাড়ি দিয়ে অনীক আবার জোরে জোরে পড়তে শুরু করে। ৭ই মে, ২০১১ রাত ১২:৩০
অবশেষে পরীক্ষা শেষ হলো। সব ক্লান্তি শেষ। আজ বিকেলেই আড্ডা হচ্ছিল, এখন আমরা করবোটা কি। কোথাও বেড়াতে যাওয়া দরকার। নবীন বলছিল সেন্ট মার্টিনের কথা। সেন্ট মার্টিন তো গতবারই গেলাম। তবে শুনে এখন আবার যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ১৭ তারিখ তো ভরা পূর্নিমা। পূর্নিমার সেন্টমার্টিন-ভাবতেই আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সোনিয়ার আবার ইচ্ছা রাঙামাটি। কি করা যায় ভাবছি। ১৩ই মে ২০১১ রাত ৯:০০
ইউরেকা!! পেয়ে গেছি। এর নামই তো জীবন! আজ শাহরিয়ার হলে এসেছিলো। এসে কাজের কথা বললো। এসব সোনিয়া তন্বীদের নিয়ে আসলেই হবে না। এদের সাথে নিলে হয় সেন্ট মার্টিন বা রাঙামাটিতেই যেতে হবে। ধ্যাড়ধ্যাড়ে পানসে লাইফ আর পড়াশোনা নিয়ে বিরক্ত হয়ে গেছি। অজানার উদ্দেশ্যে যেতে চাই। শাহরিয়ারের মামা শ্রীমঙ্গল চা বাগানের ম্যানেজার। চা বাগানেই থেকে আসবো দিন কয়েক। কালই বেড়িয়ে পড়বো। “মামা সঠিক ডিসিশন নিসে!” হাসতে হাসতে বললো অনীক। “মেয়ে মানেই ঝামেলা”। উত্তরে সুজন কিছু একটা বলতে যাবে, হঠাৎ চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক বন্ধ হয়ে গেলো। পুরো বনাঞ্চল একেবারে নিশ্চুপ, শুধু পানির কলকল শব্দ। তিনজন একসাথে সোজা হয়ে বসলো। প্রায় সাথে সাথেই দূরে কোন বন্য প্রাণীর জোরালো ডাক ভেসে এলো। তিন বন্ধু চমকে উঠলো। বুঝতে পারলো না ডাকটি কোন দিক থেকে এলো। ক্ষণকাল পরেই আবার সেই হুংকার। তীব্র রাগে যেন গজরাচ্ছে। আতংকে সুজন আগুন বাড়াতে গিয়ে বেশী পাতা ঠুসে দেয়ায় আগুন নিভে যায় যায় অবস্থা। সিয়াম দ্রুত ফুঁ দিয়ে কোন ক্রমে আগুনটাকে টিকিয়ে রাখে। সুজন তোতলাতে থাকে, “ওটা……ওটা কি-ক্কিসের ডাক রে?” “মনে হয় শেয়াল”। সিয়াম শুকনো গলায় বলে; কিন্তু সে খুব ভালো করেই জানে, শেয়াল এভাবে ডাকে না। এবারে অনীক বলে ওঠে, “আমি যদি খুব বেশী ভুল করে না থাকি, তবে এটা নেকড়ে বা হায়েনার ডাক”। “কি?”- একসাথে সিয়াম আর সুজন লাফিয়ে উঠে। “এই অঞ্চলে কোন নেকড়ে বা হায়েনা নেই। আর হায়েনা বা নেকড়ে কি দেশে আছে নাকি?” অবাক কন্ঠে সিয়াম বলে। “সে তো আমিও জানি”। অনীক মাথা নাড়ে। “কিন্তু এটা ওই জাতীয় কোন প্রানীরই ডাক। আমি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি নিয়মিত দেখি। আমি নিশ্চিত”। আবার ডেকে উঠে প্রাণীটা। এবার মনে হয় আরেকটু কাছে।
“গাছে উঠবো নাকি রে?”- সুজন প্রায় কেঁদে ফেলে। “না, আমাদের আগুন টিকিয়ে রাখতে হবে। বন্য প্রাণী আগুন ভয় পায়”। বিপদে পড়লেই সিয়ামের মাথা ঠান্ডা। একারনেই সিয়ামের উপর এত ভরসা অনীক আর সুজনের। যত পাতা আর শুকনো কাঠ কুড়িয়েছিলো, সব এনে কাছে রাখে তিনজনে মিলে। গুমোট আবহাওয়ার সাথে চারিদিকের নিস্তব্ধতা যেন গলা টিপে ধরছে। ঘড়ি দেখলো অনীক। মাত্র সোয়া ১০টা বাজে। এখনো পুরো রাত পড়ে আছে। চিন্তা করেই অনীকের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। যদি এখান থেকে সুস্থ বেরুতে পারে, আর জীবনে কোনদিন রাতে দুই/তিনজন মিলে জঙ্গলে থাকবে না।

আবার ঝিঁঝিঁ পোকার স্বস্তিদায়ক ডাক শুরু হলো। মেঘও একটু যেন কাটলো। মেঘের কিনারা দিয়ে একটু একটু জোছনার আলো আসছে। সবাই শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এখন পরিস্থিতি এত ভয়াবহ মনে হচ্ছে না। অনীক পন্ডিতি শুরু করলো,
“শোন, এত ঘাবড়াসনে। আজ ভরা পূর্নিমা! তাও জুন মাসের। জানিস জুনের পূর্নিমা কে নর্থ আমেরিকাতে কি বলে? হানিমুন বলে”। “হানিমুন কেন? সবাই কি মধুচন্দ্রিমায় যেত নাকি এই দিনে?” অবাক প্রশ্ন সুজনের। “আরে না রে গাধা। ওদের দেশে এই সময়ে প্রচুর মধু উৎপন্ন হত। তাই এই মাসের পূর্নিমাকে বলে হানিমুন। তবে হানিমুন শব্দ নাকি এইখানে থেকেই এসেছে। প্রচলিত নিয়মে, গ্রীষ্মকালে যাদের বিয়ে হত, সেই সব নবদম্পতিকে বিয়ের অনুষ্ঠানের পরে মধু খেতে হত। অবশ্য অনেকের মতে এর উৎপত্তি প্রাচীন ব্যাবিলনে……” “ওরে আল্লাহ রে! থাম থাম! আর আমাদের হানিমুন শব্দের উৎপত্তি শুনে কাজ নেই”- অনীককে একসাথে থামিয়ে দেয় সিয়াম আর সুজন। একবার যদি অনীক জ্ঞান দিয়ে শুরু করে, আর রক্ষা নেই। অনীক ভেংচি দিলো। “তা শুনবি কেন? ভালো জিনিসে তো তোদের অরুচি”। অনীককে অগ্রাহ্য করে সিয়াম বললো, “কিন্তু আজই যে পূর্নিমা তুই সিওর হলি কি করে?” “কারণ এই অজানা ডাক্তার ভাই তার ডায়েরীতে লিখেছেন ১৭ই মে ছিল পূর্নিমা। আজ ১৫ই জুন। চাঁদের এই পরিবর্তনকে ব্যখ্যা করা হয় লুনার সাইকেল দিয়ে। যদিও চাঁদ একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আসে ২৭.৩ দিনে, বা ধর ২৭ দিনে; লুনার সাইকেল কিন্তু সাড়ে ২৯ দিনের বা ২৯ দিনের। এই বাড়তি সময়টা চাঁদ নেয় কারণ পৃথিবী এর মাঝে সূর্যের চারিদিকে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মাইল প্রদক্ষিণ করে ফেলে। তো সেই অনু্যায়ী আজ ১৫ই জুনই তো ফুল মুন, বা পূর্ণচন্দ্র দিবস; নাকি?” “বাহ বাহ, স্যার! আপনার তো ভবিষ্যত অন্ধকার। অচিরেই আপনি শিক্ষক পদে আসীন হতে যাচ্ছেন!” সুজনের গলা শোনা যায়। “জ্বী, ধন্যবাদ”। অনীক ব্যাঙ্গ করে। “এবার তাহলে আমরা ডায়েরীতে ফিরে যাই?”

১৪ই মে ২০১১, রাত ৮:০০
কি অপূর্ব পরিবেশ। আমার তো মনে গান আসছে, “এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো”। ভাগ্য এইটা ডায়েরী, শাহরিয়ার শুনলে এতক্ষনে টিজের জ্বালায় ভেসে যেতাম। তবে শাহরিয়ারকেও ভাবুকই দেখতে পাচ্ছি। ডায়েরী লিখছি মামার বাংলোর বারান্দায়।টেবিলের উপরে আমার রূপা দিয়ে মোড়া ছুরিটা রাখা। ছুরি দেখে মামা ভীষন অবাক। শুধু আগার তীক্ষ্ণ ভাগ রূপা দিয়ে বানানো। মধ্যভাগ স্বাভাবিক ছুরির মত; আর বাটে চমৎকার রূপার কারুকাজ। এই ছুরি আমি সবসময় বেড়াতে গেলে নিয়ে যাই। মামাকে বললাম, এই ছুরি আমাদের বংশে কবে থেকে আছে তা কেউ জানে না, তবে বংশের বড় ছেলেকে এটা দেয়া হয়। আমাকেও আমার বড় ছেলেকে দিতে হবে। শাহরিয়ারের প্রশ্ন, “যদি তোর ছেলে না হয়?” এটা অবশ্য আমি ভাবিনি। তবে কি মেয়েকে দিয়ে যাব? ইশ, কি আবোল তাবোল ভাবছি। কবে বিয়ে করবো কোন ঠিক আছে? যাক, চা বাগানের ম্যানেজারদের এত বিশাল বাংলো দেয়; দেখে তো আমি অবাক। শুনলাম ডাক্তারদেরো নাকি এইরকম বড় বাসা দেয়। পাশ করে চা বাগানের ডাক্তারের পদের জন্য অ্যাপ্লাই করবো নাকি? শহরের ভীড় আর কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির মাঝে কিছুদিন কাটিয়ে গেলে মন্দ হয় না। আর এখানকার মানুষগুলো ভীষন ভালো। সহজ সরল জীবন। এদের জন্য কিছু করতে পারলে আমার ভালোই লাগবে। শাহরিয়ারের গলা শুনতে পাচ্ছি, রাতের খাবারে নাকি স্পেশাল বনমোরগ আছে। ডায়েরী পরে লেখা যাবে।

১৬ই মে ২০১১ রাত ১০:০০ টা
কাল ডায়রী লেখার একদম সময় পাইনি। দুইটা দিন যেন উড়ে গেলো। হাকালুকি হাওর ঘুরলাম, মাধবপুরের শান্ত লেক দেখলাম, মামার গাড়ি চেপে চা বাগানের আনাচে গানাচে গেলাম। ৭ রঙা চা খেলাম। চা দেখে তো আমি অবাক। সত্যি সত্যি সাত রঙ! পেপারে তবে ঠিকই লিখেছিলো। চা খেয়ে বিশেষ মজা পেলাম না, তবে বিস্ময়কর চা; মানতেই হবে। কাছেই নাকি বাইক্যা বিল আছে। শীতকালে পাখির অপূর্ব মেলা বসে। শীতকালে আসতেই হবে। মামা একলা মানুষ; এখনো বিয়ে করেন নি। আমরা আসাতে যে কি খুশীটাই হয়েছেন, বলার নয়। আবার আসলে নিশ্চই মাইন্ড করবেন না। সারাদিন ঘুরে খুবই ক্লান্ত। চোখের পাতা যেন লেগে আসছে। এর মাঝে বাবুর্চির হাতের যে রান্না, দুই দিনেই মনে হয় ৪ কেজি ওজন বেড়ে গেছে। এখন আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কাল সকালে যাবো চম্পারাই টি স্টেটে। মামার নাকি কি কাজ আছে, সাথে আমরাও ঘুরে আসবো। “বাহ, এদের তো ভালো এনার্জি রে, এই ডাক্তার গুলির। এইভাবে এখনো মানুষ ডায়রী লিখে, জানতাম না”। - সুজন বলে উঠে। “তোর মত আইলসা ভাদাইম্যা পোলা ছাড়া সবাই পারে এসব করতে। তুই তো আছিস শুধু মেয়েদের পিছে ঘুরাঘুরিতে”- ভেংচি কাটে অনীক। “তবে রে” বলে সুজন অনীক কে ধরতে যেতেই সিয়াম বাঁধা দেয়। “দোস্ত, এখন না” – বলেই ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলে। বাতাস এসে অনেক মেঘ সরিয়ে নিয়ে গেছে। আগুনের তেজ অনেক কম হলেও আশে পাশে সবই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। চাঁদের প্রায় অর্ধেকটাই এখন মেঘের বাইরে; জোছনার আলোতে সব কিছু কেমন যেন ভয়াবহ দেখাচ্ছে। অনীক আর সুজন চুপ হয়ে যায়, প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে থাকে। হ্যাঁ, একটা হালকা শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘন পাতার উপরে যেন কেউ পা টিপে টিপে হাঁটছে। সুজনের দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেতে থাকে। এই শান্ত পরিবেশে শব্দটা বড় কানে বাজে। অনীক সুজনের মুখ চেপে ধরে। অবশ্যই কেউ হাঁটছে; ঘন অরন্যের দিকে তাকিয়ে কিছু ঠাওর করতে পারলো না সিয়াম। আস্তে করে বন থেকে কেটে আনা ডালটা হাতে নেয় সে। সে জানে না, কোন প্রাণী না মানুষ; তবে বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করার ছেলে সিয়াম না। আবার সেই অসহ্যকর নীরবতা। ঝিঁঝিঁ পোকা গুলি কেন ডাকা বন্ধ করে দেয়? এদের সমস্যা কি? শব্দ যেন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। কেউ বার বার এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত হেঁটে যাচ্ছে, আবার ঘুরে আসছে। সিয়াম লাঠি বাগিয়ে দাঁড়ায়। চেঁচিয়ে বলে, “কে? কে হাঁটে?” কোন উত্তর নেই। অনীক এক হাতে সুজনকে সামলাতে সামলাতে আরেক হাতে আগুন উসকে দেয়। ঠিক সেই সময়ে মেঘ এসে আবার চাঁদকে ঢেকে দেয়। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ফেরত আসে; আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না। এবার সিয়ামও ভড়কে যায়। অশুভ কিছু একটা আছে এই জায়গায়। গ্রামবাসী এমনি এমনি ভয় পায় নি। কোন বন্য প্রাণী আছে; যাকে সবাই দানো বলে।সিয়াম ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
“রাতে ঘুমানো যাবে না। তোরা ছুরি দুইটা কাছাকাছি রাখ। আমি দাটা নিচ্ছি”। সুজন ফোঁপানো শুরু করে। অনীক রাম ধমক দিলো,
“গাধামী করিস না তো। এখন ভয় পাওয়ার সময় না, বাজে সবে রাত সাড়ে ১১টা। সারা রাতই পড়ে আছে এখনো”। “আগুন নিভতে দেয়া যাবে না। যতক্ষন আগুন আছে, এই প্রাণী কাছে আসবে না”। সিয়াম গম্ভীর গলায় বলে। সুজন আয়াতাল কুরসি পড়ে সবাইকে ফুঁ দিয়ে দেয়। তিন জন সতর্ক ভাবে চুপ করে বসে থাকে। ঝরনার দিক থেকে কিছু আসার সম্ভাবনা নেই। বাকি রইলো জঙ্গলের তিন দিক। তিন জনে এমন ভাবে এবার বসে যেন সব দিকেই নজর রাখতে পারে। কিছু কাহাতক আর চুপ করে বসে থাকা যায়? ডায়রী হাতে নিলো অনীক।

১৭ই মে ২০১১, বিকেল ৩:৩০
এখন আমি বসে আছি তৈলংকামী গ্রামে। চমৎকার একটি গ্রাম। পাহাড়ের এপাশে ওপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঁশ-শণে তৈরী মাত্র ১০-১২টি ঘর নিয়ে আদিবাসী দের গ্রাম। চম্পারাই টি স্টেটে মামা কাজ করতে করতে বললেন আমাদের ঘুরে আসতে। শাহরিয়ারকে নিয়ে আর পারিনা, এত ছটফটে। কি করে যে এই ছেলে ডাক্তারি করবে, ভেবে মাঝে মাঝে টেনশন লাগে। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম কলাবন পাড়া। এখানে এসে ছেলের মাথায় অ্যাডভেঞ্চারের কি যে ভূত চাপলো, তার পরিণামে এখন আমি এই গ্রামে বসে আছি। কলাবন পাড়ার এক শ্রমিকের কাছ থেকে শুনেছে যে এখানে নাকি চমৎকার একটা ঝিড়ি পথ আর ঝরনা আছে। টলটলে কাকচক্ষু জল নাকি তার। শ্রমিকের ছেলের নাম কাল্টু। কাল্টুর গাইডেই এতদূর এসেছি। গ্রামের মানুষ খুবই ভালো। সাদরে অ্যাপায়ন করলো আমাদের। খেয়ে এখন বাঁশের চাটাই এর উপরে শুয়ে ডায়েরী লিখছি। শাহরিয়ার গেছে লোক জোগাড় করতে, যে আমাদের ঝরনা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। কেন জানি না, কেউই যেতে ইচ্ছুক না। আমারো যে খুব ইচ্ছে তা নয়, মামাকে না জানিয়ে… এরপরের পৃষ্ঠা ছেঁড়া। অনীক কৌতূহলী হয়।
“কে ছিঁড়লো এই দুই তিন পৃষ্ঠা? দেখেই বুঝা যাচ্ছে কেউ টেনে ছিঁড়েছে”। আগুন দপ দপ করে উঠলো। নেকড়ের মত প্রাণীটি ডেকে উঠলো। ডাকটা এমন যে একেবারে বুকের মাঝখানে গিয়ে কাঁপিয়ে দেয়। যন্ত্রণায় কাতর কোন প্রাণীর ডাক। সিয়াম দাটা শক্ত করে চেপে ধরে। মেঘ পুরোপুরি সরে গেছে। তীব্র জোছনা চারিদিকে দিনের আলোর মত স্পস্ট করে দিচ্ছে। সিয়াম মনে মনে প্রার্থণা করে, মেঘ যেন আর চাঁদকে না ঢাকে। আগুন যদি নিভেও যায়, দেখতে আর সমস্যা হবার কথা না। সুজন থর থর করে কাঁপছে। এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সে। হঠাৎ শুরু করলো, “এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো……” “চুপ” অনীক ধমকে ওঠে। “একটা বাজে কথা না, আর যেই মরুক, আমরা আজ মরব না”। “দোস্ত, আ-আমার বাথরুম ধরেছে”। সুজন তোতলাতে তোতলাতে বলে। এই পরিস্থিতিতেও না হেসে পারে না অনীক। সুজনের ছোট বেলার সমস্যা। ভয় পেলেই তার বাথরুমে যেতে হয়। পরীক্ষার সময় অনীকের সুজনের জন্য সবসময় পরীক্ষা হলে যেতে দেরী হতো। শেষ মূহুর্তে সুজন বাথরুমে যাবেই।
“সামনের ঝোপের ধারে যা” “দোস্ত, তোরা প্লিজ এইখানেই থাক। কোথাও যাইস না”।
“আরে যা, আমরা তোর পিঠের দিকে তাকিয়ে আছি”। অনীক আশ্বস্ত করে তাকে।

অনীক ডায়েরী হাতে নিতেই সিয়াম বলে, “রাখ তো ওটা”। “না, এর শেষ পড়ে ছাড়বো”। কয়েক পাতা উল্টিয়ে লেখা পাওয়া যায়। এতে তারিখ নেই। মুক্তার মত হাতের লিখাও নেই। লেখা পড়াই দুঃসাধ্য। কেউ কাঁপতে কাঁপতে লিখেছে লেখা গুলো। লাইন গুলি এঁকে বেঁকে গেছে। হরফের সাথে হরফ মিশে করেছে লেখাকে দুর্বোধ্য। অনীক কষ্ট করে পড়তে থাকে। আমি জানি না আমি কি এই দুনিয়াতে আছি কিনা। শরীফ নেই; শরীফ মরে গেছে। আমার বন্ধু, যে আমার জন্য প্রাণ দিয়েছে, আমি তাকে ফেলে ঝরনায় চলে এসেছি। আমি আমার বন্ধুর মৃত্যুর জন্য দায়ী। এটা কি দুঃস্বপ্ন? তবে আমার লিখে যেতেই হবে। আমি যদি মারা যাই; কেউ এই ডায়রী পেলে যেন জানে কি করে আমরা মারা গেলাম। শরীফ আসতে চায়নি, আমিই মামাকে না জানিয়ে জোর করে ওকে টেনে এনেছি। হায় আল্লাহ, এ আমি কি করলাম।ঝিড়ি পথের ডান দিক দিয়ে যে রাস্তাটি যায়, ওখানে এক দূর্গ আছে। সন্ধায় আমরা যখন ওখানে যাই, ওটা ছিলো না। পুরো সময় কেউ আমাদের লক্ষ্য করেছে। শরীফ অনেকবার ফিরে যেতে চেয়েছে, আমি কান দেইনি। রাত্রে পূর্নিমার চাঁদ যখন মাথার উপরে, তখন দূর্গটি ভেসে উঠলো। উফফ, কি ভয়ংকর সেই দূর্গ। একেক পৃষ্ঠায় কয়েকটি করে শব্দ লেখা। রক্ত মাখা সেই লেখা পড়া প্রায় দুঃসাধ্য। লেখকের যে নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছিল তা নিশ্চিত। সিয়াম প্রায় ছিনিয়ে নেয় ডায়রী অনীকের হাত থেকে। আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো পূর্নিমার আলোয়, আমি শরীফকে টেনে নিয়ে গেলাম তার মাঝে। একটা মানুষ অন্ধকারে বসে আছে। কি ভয়ানক দৃষ্টি; আমাদের দিকে তাকালো। শরীফ তাকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কে?” তখনই দেখলাম… হে আল্লাহ আমাকে শক্তি দাও আমাকে লিখতেই হবে। মানুষটি চাঁদের আলোয় এলো। আসামাত্র তার মাঝে কি যেন ঘটে গেলো। মুখ নীচু করে জান্তব আক্রোশে চিৎকার করতে লাগলো। পিঠ বেঁকে গেলো। হাত থেকে নখ বের হয়ে চারপাশে সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে ফেললো। আমরা চিৎকার করে উঠলাম। এই একবিংশ শতাব্দীতে কি ওয়ারউলফ থাকা সম্ভব? এই তবে গ্রামবাসীর দানো! হায়, আমি কি মূর্খ! আমি তাদের বিশ্বাস করিনি। তখনই সে আমাদের দিকে তাকালো। হলুদ চোখে কি তীব্র জিঘাংসা। আমরা দৌড় দিলাম। কিছু বুঝার আগেই সে শরীফের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। নখের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেললো শরীফকে। মরার আগ মূহুর্তে শরীফ আমার দিকে তাকিয়েছিলো। হায়, আমার বন্ধু! সিয়াম আর অনীক ঢোক গিলতে থাকে; এ তবে শাহরিয়ার। শাহরিয়ার কোথায় তাহলে এখন? সেও কি মারা গেছে? এক ঝটকায় অনীক তাকায় সুজনের দিকে। সুজন এখনো প্রাকৃতিক কর্ম সারতে ব্যস্ত। পরের পৃষ্ঠা গুলি রক্তে রঞ্জিত; ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। আমি দৌড়াতে থাকি। অন্ধের মত। নেকড়ে মানব আমাকে তাড়া করে। কিছুক্ষণের মাঝেই সে আমাকে ধরে ফেলে। সে লাফ দেয়, তবে আমি সরে যাওয়ায় আমার পা কামড়ে ধরে। যন্ত্রণায় আমার বোধ লুপ্ত হয়। হাতে পাই সেই ছুরিটি যেটা শরীফ আমাকে রাখতে দিয়েছিলো। মনে পড়ে নেকড়ে মানব কে মারতে হলে রূপার বুলেট লাগে। রূপার ছুরিতে কি হবে? অন্ধের মত আমি হৃদপিন্ড বরাবর আঘাত হানতে থাকি। তীব্র আক্রোশে সে আমাকে মারতে চায়, কিন্তু পড়ে যায়। আমি তার পিঠের উপর উঠে আঘাত হানতেই থাকি বিরামহীন ভাবে। আমার নীচেই নেকড়েটি একটা মানুষে রূপান্তরিত হয়। এর পরে আমি কোনক্রমে ঝরনার কাছে আসি। এই ডায়রী পাই। চাঁদের আলোয় আমার কেমন যেন লাগছে। কি ভীষন ব্যথা আমার প্রতিটি অঙ্গে। তীব্র ঘৃণা বোধ হচ্ছে। আর পারছি না। আমার পা… আমার বুক… ডায়েরী শেষ। অনীক আর সিয়াম দুইজন তাকিয়ে থাকে একজন আরেকজনের দিকে। এও কি সম্ভব? শাহরিয়ার কোথায় তারা এখন জানে। মায়া নেকড়ের কারণেই কি এই অঞ্চলে অন্য কোন প্রাণী নেই? ঝিঁঝিঁ পোকা ডাক থামিয়ে দেয় যখন মেঘ সরে চাঁদ উন্মুক্ত হয়? আজ না পূর্ণচন্দ্র দিবস? কিন্তু এসব তো সবই মিথ; বানানো। ধপ শব্দে চমকে যায় তারা। আগুনের শেষ বিন্দু প্রাণপণ যুদ্ধ করে যেন হার মানে; নিভে যায়। সুজন…… সুজন কোথায়?

অনীক আর সিয়াম ঘাড় ঘোরায়। সুজন নেই। কিছুক্ষন আগেও সুজন এই সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল; এখন নেই।অনীক অস্ফুট শব্দ করে। সিয়াম থর থর করে কাঁপছে। হাত ধরা ধরি করে তারা ঝরনার দিকে পিছাতে থাকে। যে কোন দিক থেকে জন্তুটা আসতে থাকে। তাদের কাছে রূপার তৈরী কিছুই নেই। পিছনে মৃদু গড়গড় শব্দ শোনা যায়। হঠাৎ কানের কাছে যেন বাজ পড়ে; ভীষন শব্দে নেকড়ে ডেকে ওঠে। তাকাবে না তাকাবে না করেও সিয়াম আর অনীক একই সাথে পিছনে ঘোরে। বোটকা গন্ধ নাকে বাড়ি দেয়। হলুদ বীভৎস নিষ্ঠুর এক জোড়া চোখ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নেকড়ে শরীর নিচু করে; লাফ দেয়ার পূর্ব মূহুর্তে মাংসাসী প্রাণীরা যেমন করে থাকে। দুই বন্ধু হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকে। আকাশে তখন ভীষন রকম জ্যোৎস্না; বাতাসে তীব্র হাহাকার। দূরে তৈলংকামী গ্রামের এক আদিবাসী মা নেকড়ের ডাক শুনে প্রাণপণে তার তিনমাসের শিশুটিকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে।

বাঘ - By টিনটিন রকস

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Thursday, August 25, 2011 at 10:28pm প্রচণ্ড শীতে থরথর করে কাঁপছে রতন। গায়ে চাদর আছে, পাশে বেশ বড় করে আগুন জ্বালিয়েছে কিন্তু এতসব আয়োজন করেও মাঘ মাসের এই প্রচণ্ড শীতকে বশে আনা যাচ্ছেনা। রতন নিরালা আবাসিক এলাকার নাইট গার্ড। অল্প কিছুদিন আগে সে এই চাকরিটা নিয়েছে কিংবা বলা যায় নিতে বাধ্য হয়েছে। খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য কিছু একটা তো করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে এই চাকরিটা নিয়েছে। মোটেই সুখকর কোন চাকরিনা এটা। সারারাত ধরে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে জেগে থাকতে তো হয়ই, তার উপর গত কিছুদিন ধরে যুক্ত হয়েছে বাঘের ভয়। গত পাঁচদিন হলো খুলনা শহরে প্রতি রাতে একটা করে লাশ পাওয়া গেছে। প্রতিটা লাশ পাওয়া গেছে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায়। যেন কোন হিংস্র জন্তু প্রচণ্ড আক্রোশে ছিঁড়ে কামড়ে একাকার করেছে লাশগুলোকে। পেপারে এনিয়ে প্রতিদিন লেখালিখি হচ্ছে। ডাক্তারদের মতে কোন মানুষের পক্ষে এভাবে হত্যা করা সম্ভব না। শুধুমাত্র বুনো কিছু হিংস্র প্রাণী, যেমন- বাঘ, সিংহ, নেকড়ে বা হায়না এই ধরনের প্রাণীর পক্ষেই এভাবে হত্যা করা সম্ভব। খুলনা কেন সারা বাংলাদেশের কোন বনেই সিংহ, নেকড়ে বা হায়না নেই। কিন্তু বাঘ আছে, এই খুলনার সুন্দরবনেই। ডাক্তারদের এই মতের উপর ভিত্তি করে সারা খুলনা শহর চষে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও বাঘের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। হতভাগ্য লাশগুলোর আশেপাশেই বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। সুন্দরবন থেকে বিশাল ভৈরব নদী পার হয়ে খুলনা শহরে ঢোকা কোন বাঘের পক্ষে সম্ভব না।
আর যদি কোনভাবে ঢুকেও থাকে তাহলে কোথায় লুকিয়ে থাকছে বাঘটা, সেটা এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি। রাততো দূরের কথা, মানুষ এখন দিনের বেলাতেও ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে। গতকাল রতন একটা চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। চায়ের দোকানের মালিক কাদের ভাইয়ের দেশের বাড়ি সুন্দরবনের পাশেই কোন গ্রামে। সেখানে একটা গল্প প্রচলিত আছে, সুন্দরবনের মির্জা বাড়ি এলাকায় অনেক আগে মির্জা আসাদ ওয়ালি নামে এক জমিদার বাস করতেন। একটা পোষা বাঘ ছিল তার। বাঘটার হিংস্রতা বাড়ানোর জন্য প্রায়ই তাকে অল্প খাবার দেয়া হত। একদিন কোনোভাবে বাঘটা খাঁচা থেকে বের হয়ে আসে। দুর্ভাগ্যক্রমে জমিদার তখন তার বাগানে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। অভুক্ত বাঘটা ক্ষুধার জ্বালায় তার মনিবকেই আক্রমণ করে বসে। জমিদারের ভাগ্য ভালো, মারা যাননি তিনি কিন্তু গুরুতর ভাবে আহত হন। মির্জা আসাদ ওয়ালি যেদিন আহত হন, সে রাতেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। কথিত আছে এর পর থেকে প্রতি রাতে আকাশে চাঁদ উঠার পর থেকে তিনি বাঘের রূপ ধারণ করেন এবং প্রতি রাতেই একটা না একটা খুন করেন। মির্জা আসাদ ওয়ালি আহত হবার পর থেকে প্রতি রাতেই একজন করে গ্রামবাসি মায়া বাঘের আক্রমণে মারা যেতে থাকল। গ্রামের মানুষরা মায়া বাঘের ভয়ে একে একে গ্রাম ত্যাগ করতে লাগল। ধীরে ধীরে পুরো গ্রাম জনশুন্য হয়ে গেল। কথিত আছে আজও সেই মায়া বাঘ মির্জা বাড়ির আসে পাশে ঘুরে বেড়ায়। আজও সুন্দরবনের আশেপাশের গ্রামের মানুষ প্রায় রাতেই সেই মায়া বাঘের রক্তহিম করা গর্জন শুনতে পায়। কাদের ভাইয়ের মতে মির্জা আসাদ ওয়ালি রূপী সেই বাঘটা আজ প্রায় একশ বছর পর জঙ্গল ছেড়ে শহরে চলে এসেছেন। দিনের বেলায় মানুষরূপে থাকলেও রাতে তিনি বাঘের রূপ ধারণ করে একের পর এক হত্যা করে চলেছেন। রতন জানে এটা কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু বাঘতো একটা আছেই, যেটা প্রতি রাতে নির্মম ভাবে একটার পর একটা হত্যা করে চলেছে। আবার কেঁপে উঠল রতন। শীতে না ভয়ে তা নিজেও ঠিক বুঝতে পারল না। হঠাৎ পিছনে একটা শব্দ শুনে চমকে ঘুরে তাকাল। নাইটগার্ডের ইউনিফরম পরা একজন লোক ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিরাতে দুজন করে নাইটগার্ড এই এলাকা পাহারা দেয়। এই লোকটাকে ও আগে কখনও দেখেনি। নতুন বোধহয়। লোকটা একটু হেসে রতনের পাশে এসে বসল।
“নতুন নাকি? কবে জয়েন করলা”, রতন জিজ্ঞেস করল।
বিদঘুটে ভাবে একটু হাসল লোকটা। “আজকেই”, বলল লোকটা।
“নাম কি?”
“জলিল”
“ঘটনা শুনছ নাকি?”একটু উদাস ভাবে জিজ্ঞেস করল রতন।
“কি ঘটনা?” চোখ দুটো সরু করে জিজ্ঞেস করল জলিল ।
নিজে পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও কাদের ভাইয়ের কাছে শোনা ঘটনাটা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য করে বলে গেল রতন। কিছু কথা বানিয়ে যোগ করতেও ভুললনা। গল্প বলা শেষ করে লোকটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল রতন। হিংস্র চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা।
“আপনি এইসব বিশ্বাস করেন”, রাগত স্বরে জিজ্ঞাসা করল সে।
“বিশ্বাস না করার কিছুই নাই, অনেক আজব ঘটনা ঘটে এই দুনিয়ায়”, দার্শনিকের মত জবাব দেয় রতন, লোকটাকে ভড়কে দিতে পেরে মনে মনে খুশি হয়েছে সে। ক্রূর হাসি হাসল জলিল । চোখদুটো যেন মুহূর্তের জন্য জ্বলে উঠল।
“ঠিকই বলেছেন অনেক আজব ঘটনা ঘটে এই দুনিয়ায়। যে মায়া বাঘের কথা আপনি ভাবছেন সে হয়তো আপনার আশেপাশেই কোথাও ঘাপটি মেরে আছে কিংবা মানুষ রূপে আপনার সামনেই রয়েছে, আপনি হয়তো বুঝতেও পারছেন না”, ধ্বক করে জ্বলে উঠল জলিলের চোখজোড়া।
ভয়ের একটা শীতল শিহরন বয়ে গেল রতনের মেরুদণ্ড বেয়ে। একটা অশুভ চিন্তা উঁকি দিচ্ছে মনের ভিতরে। সত্যি না তো কাদের ভাইয়ের কাছে শোনা ঘটনাটা? হয়তো সত্যিই কোন মায়া বাঘ আছে, হয়তো মির্জা আসাদ ওয়ালি নামে সত্যিই কারও অস্তিত্ব আছে যে শহরে এসে প্রতি রাতে নির্মম ভাবে একটার পর একটা হত্যা করছে। জলিলের দিকে তাকাল রতন। কি যেন একটা অশুভ ব্যাপার আছে লোকটার চোখদুটোতে। হঠাৎ মনের মধ্যে উঁকি দিল ভয়ংকর চিন্তাটা, বুঝতে পারল কি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আছে সে। আবার জলিলের দিকে অকাল রতন। এখনও সেই ভয়ংকর হাসিটা লেগে আছে জলিলের ঠোঁটে।
“তাহলে এতক্ষণে চিনতে পারলে আমি কে?”, বাজ পরল যেন লোকটার কন্ঠ থেকে।
ঢোক গিলল রতন। বুঝতে পারছে কাদের ভাইয়ের কাছে শোনা গল্পটা মোটেও বানোয়াট না। কিন্তু বুঝেও আর কোন লাভ নাই, মৃত্যু ওর থেকে মাত্র দুইফুট দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
আবার বিশ্রী করে হেসে উঠল জলিল, কিন্তু এবারের হাসিটা আর ভয়ংকর শোনাল না বরং মনে হল কিছুটা ব্যঙ্গ করে হাসছে জলিল । অবাক হয়ে তাকাল রতন। জলিলের হাসি যেন থামতেই চায়না। হাসির দমকে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছে।
“আপনি...আপনি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন। আপনি তো দেখি মিয়া ভয়ে প্যান্ট খারাপ করে ফেলেছেন”, হাসতে হাসতে বললো জলিল।
এতক্ষণে রতন আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারল। লোকটা এতক্ষণ যা বলেছে সব মিথ্যা। রাগ হল রতনের। কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না।
“তুমি কি মনে করেছ, তুমি যা বলছ আমি তা বিশ্বাস করেছি? তোমার একটা কথাও আমি বিশ্বাস করিনি। শুধুমাত্র ভয়ের অভিনয় করেছি।” জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল রতন।
খ্যাঁক খ্যাঁক করে আবার হেসে উঠল জলিল। বুঝিয়ে দিল রতনের কথা সে বিশ্বাস করছে না।
“আমি তোমার কথা এক বর্ণও বিশ্বাস করিনি”, ঝিক করে জ্বলে উঠল রতনের চোখ জোড়া, “আমি প্রথম থেকেই জানি তুমি মিথ্যা কথা বলছ, তুমি মায়া বাঘ না”।
“আচ্ছা, তো কি করে বুঝতে পারলেন আমি মায়া বাঘ না” জিজ্ঞসা করল জলিল।
“ আমি জানি তুমি মায়া বাঘ না”, ঘরঘর করে উঠল রতনের কন্ঠস্বর, “কারণ মায়া বাঘ আমি নিজেই।”
অবিশ্বাস ভরে রতনের দিকে তাকাল জলিল । হঠাৎ ধ্বক করে জ্বলে উঠল রতনের চোখ জোড়া, চোখ তুলে তাকাল পূর্ণিমার বিশাল চাঁদটার দিকে। ঘনঘন নিশ্বাস নিতে শুরু করল, যা অতি দ্রুত রূপান্তরিত হল চাপা গোঙানিতে। চোখের কালো মণি বদলে গিয়ে হলুদ রং ধারণ করল। হলুদ হয়ে উঠল চামড়া, শরীর ফুঁড়ে বেরুতে শুরু করল থোকা থোকা লোম। কান দুটো আকারে বড় হয়ে উঠল। ফাঁক হয়ে গেল রতনের মুখটা, চোয়ালে ঝিকিয়ে উঠল ক্ষুরধার দাঁতের সারি। রূপান্তরের যন্ত্রণায় হাত দিয়ে মাটি খামচে ধরল রতন, চোখের নিমিষেই ও দুটো পরিণত হল বিশাল রোমশ থাবায়। ধীরে ধীরে রতন পরিণত হল এক বিরাট রয়েল বেঙ্গল টাইগারে।
বিকট এক গর্জন ছেড়ে জলিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘরূপী রতন ওরফে এককালের প্রতাপশালী জমিদার, মির্জা আসাদ ওয়ালি।

আগুনটা একটু উস্‌কে দিল রতন। শীতটা যেন আজকে একটু বেশীই পরেছে। হঠাৎ পিছনে একটা শব্দ শুনে চমকে ঘুরে তাকাল। নাইটগার্ডের ইউনিফরম পরা একজন লোক ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা একটু হেসে রতনের পাশে এসে বসল।
“নতুন জয়েন করলা মনেহয়” একটু হেসে বলল রতন।
“আজকেই”, প্রত্যুত্তরে বলল লোকটা।
“নাম কি?”
“ইদরিস।”
“ঘটনা শুনছ নাকি?”, একটু উদাস ভাবে জিজ্ঞাসা করল রতন।
“কি ঘটনা?”, জিজ্ঞাসা করল লোকটা।
কাদের ভাইয়ের কাছে শোনা ঘটনাটা বলতে শুরু করল রতন।

।। পান খাওয়া সাদা বুড়ি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, August 25, 2011 at 10:28pm
আব্বা WAPDA তে চাকুরী করতেন। সেই জন্য ওনার পোস্টিং হতো কয়েক বছর পর পর দেশের বিভিন্ন শহরে। আমি তখন ক্লাস ২ তে পরি। এবার আব্বা বগুড়া তে পোস্টিং পেয়েছেন। নতুন স্কুল, নতুন জায়গা, নতুন বন্ধু সব কিছুই এলো মেলো। গোছাতে সময় লাগবে। স্কুলটা কিন্তু WAPDA এর ভেতর ছিলনা,আমাদের যেতে হতো প্রায় ১ KM হেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর স্কুল এ। স্কুল এর বন্ধুরা বলতো তোমাদের কলোনিতে ভূত আছে। বিশ্বাস করতাম ছোটো ছিলাম বলে। রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় তাই বড় ভাইকে ধরে ঘুমাতাম। সেদিন যে খাটে শুয়েছি পা বরাবর অনেক বড় জানালা। গরম বেশি থাকাতে জানালাটা খুলেই ঘুমিয়েছি দুভাই। আমার বড় ভাই সব সময় আমাকে ঘুমানোর আগে দোয়া পরিয়ে ঘুম পারাত, কিন্তু সেদিন আমি দোয়া না পরেই ঘুমিয়ে গেছি। মাঝ রাত্রে স্বপ্নে দেখলাম এক সাদা কাপড় পড়া বুড়ি পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। তার হাসি দেখে পিলে চমকে যাওয়ার মত অবস্থা সেই ঘুমের মধ্যেই। স্বপ্নের মধ্যেই দেখলাম মা আমাকে তুলে ছুঁড়ে দিল ঐ বুড়ির দিকে আর বুড়িটা আমাকে নিয়ে চলে যাওয়া মুহূর্তে মা আমাকে আবার ছিনিয়ে নিচ্ছে ঐ বুড়ির কাছ থেকে। মা আমাকে শক্ত করে ধরে আছে আর বুড়িটা মায়ের কাছে থেকে আবার আমাকে নিয়ে নেয়ার জন্য হাত বাড়াচ্ছে। আমাকে অবাক করে দিয়ে মা আমাকে আবার তার কাছে ছুঁড়ে দিল এবং বুড়িটি আমাকে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আবার মা আমাকে ছিনিয়ে নিল তার কাছ থেকে। এভাবে চলল কিসুক্ষন এবং আমি জোরে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। বাসার সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলো আমাকে নিয়ে, আমি জানালা থেকে দূরে সরে আসার অনেক চেষ্টা করতে লাগলাম, মা যখন আসলো তখন তাকে এমন জোরে ধরেছি যে আমাকে ছুটানর জন্য আব্বা আর ভাই দুই জন শক্তিশালী মানুশ এর প্রয়োজন হয়েছিল। আর আমি বারবার বলছিলাম আমাকে দিয়ে দিওনা ঐ বুড়ির কাছে। মা আমাকে আয়াতুল কুরসি পরে বুকে ফুঁক দিলেন এবং ঐ রাত্রের জন্য আমরা সবাই এক ঘরে ঘুমালাম। কারন জানলাম যে বড় ভাইও ভয় পেয়েছেন আমার চিৎকারে। পরের দিন মসজিদের হুজুর কয়েক আয়াত পরে বুকে ফুঁ দিলেন আমার জন্য। এর পর থেকে প্রায় রাত্রেই গোঙাতাম আর ঘুম ভেঙ্গে যেত ভাই এর ডাকে। এত গেল স্বপ্নে দেখা সাদা বুড়ি। এই বুড়িকে আমি বাস্তবে দেখেছি ৬ বছর পর। আসছি শেই ঘটনায়। আল্লাহ্‌ বলেছেন, “অয়ামা খালাক্তুল জিন্নাহ অয়াল ইনসা ইল্লা লিয়াবুদুন”---“আমি জিন ও মানব জাতিকে আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি”। মানুষের মদ্ধে যেমন ভালো খারাপ আছে তেমনি ওদের মদ্ধে ও ভালো খারাপ আছে। মানুষ এক প্রজাতি হয়ে যেমন অন্য প্রজাতির ক্ষতি করে তেমনি জিনরাও অন্য প্রজাতির (মানুষ সহ) ক্ষতি করে। তাই খারাপ জীন আছে এটা বিশ্বাস করলে দোষের কিছু হবেনা। আর ভুতের কথা বলছেন? এরাও জীন, কেও ভালো আবার কেউবা খারাপ। ভুত শব্দটা আমরা আমাদের কথিত বাংলা ভাষায় ব্যাবহার করে থাকি। আমি তখন ক্লাস এইট এ পড়ি। গ্রামে নতুন বাড়ি কেনা হয়েছে মুনশিগঞ্জের শ্রীনগর থানার হাঁসারা গ্রামে। ভাই চলে গেছেন বিদেশে চাকরির খাতিরে তাই বাড়ির বড় ছেলে বলতে আমি। জিবনে কখনো গ্রামে থাকিনি নানির বাড়ি বেড়াতে যাওয়া ছাড়া, তার উপর ইলেক্ট্রিসিটি অথবা ভাল রাস্তাঘাট ছিলনা ঐ সময়। ভুতের ভয়ের চাইতে বিষাক্ত শাপের ভয় বেশি ছিল ঐ বয়সে। বাড়ির পাশেই একটা মাঝারি ধরনের বট গাছ, তার পর বড় বড় কতগুলো দিঘি, এগুলর বা দিকে আছে একটা অনেক বড় খালি বাড়ি। বাড়িটাতে অনেক বড় বড় আম গাছ আর করই গাছ। সামনে আসে একটা ভয়ঙ্কর রকমের ভাঙ্গা জমিদার বাড়ি নাম সেনের বাড়ি, অনেক বড় এলাকা জুড়ে ছিল এই বাড়িটি। হাজার রকমের বড় বড় গাছ দিয়ে ঘেরা। ভেতরে ঢুকলে সূর্যের আলো চোখে পরেনা। তার ২০০ গজ দুরেই আমাদের স্কুল। মুনশিগঞ্জের সবচেয়ে পুরনো স্কুল। বাজারে যাওয়ার সময় আমি এই দিক দিয়ে না যাওয়ার চেষ্টা করতাম আর যদি জেতাম তবে মানুষ থাকত। অন্য দিক দিয়ে বাজারে গেলে সোজা রাস্তা। বর্ষার সময় এই রাস্তাটা দুবে যেত তাই বাধ্য হয়েই আমাকে এই রাস্তা দিয়ে প্রাইভেট পরতে যেতে হত বিকাল বেলায় সেই ভাঙ্গা বাড়ির সামনে দিয়ে আর ফিরতে হত সন্ধ্যার সময় কখনো কখনো রাত ১০ টার পর। এখন বর্ষাকাল তাই আমাকে বিকাল বেলায় কাজের ছেলে করিম নৌকায় করে স্যারদের এলাকায় দিয়ে গেল। জায়গাটার নাম পালের বাড়ি। করিম বয়সে আমার চাইতে বছর ২ এর ছোট হবে, দুজনেই নৌকা বাইতে খুব পছন্দ করতাম, তাই আমাকে হেটে যেতে হলনা। ও বাড়িতে চলে গেল আর আমি গেলাম স্যার এর বাসায় পরতে। পরালেখায় মোটামুটি ছিলাম তাই ক্লাস ৮ এর বৃত্তির জন্য খুব প্রস্তুতি চলছিল। পরতে পরতে রাত সাড়ে ১০ টা বেজে গেল। স্যার বলল যেতে পারবি বাড়িতে না দিয়ে আসতে হবে? প্রেস্টিজে লেগে গেল যদি ও ভয় পাচ্ছিলাম, বললাম স্যার কি যে বলেন না। কাল দেখা হবে স্কুলে বলে আমায় যেতে বললেন। আমার হাতে একটা কলমের সাইজ এর মত একটা টর্চ ভাই পাঠিয়েছে বিদেশ থেকে। কিন্তু এটার একটা সমস্যা হল ৫ থেকে ৬ সেকেন্ড পর বন্ধ করতে হয় কিচুক্ষনের জন্য। যেহেতু করিম আসবেনা এত রাতে তাই আমাকে হেটে যেতে হবে সেই ভাঙ্গা বাড়ি দিয়ে।
আয়াতুল কুরসি পরে বুক এ ফুঁ দিয়ে হাটা শুরু করলাম। মহাসড়ক দিয়ে ১৫ মিনিট হাটার পর ডানদিকে বাক নিতে যাওয়ার সময় আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালাম কারন সামনে দেখি একলোক যাচ্ছেন আমার রাস্তা বরাবর। তার পিছু নিলাম। ৩ মিনিট পর সেই ভাঙ্গা সেনের বাড়ি। আমি এটাকে এড়িয়ে অন্য দিক দিয়ে গেলে আমাদের স্কুল দিয়ে যেতে পারি কিন্তু গেলাম না কারন আমার সাথে ঐ ব্যাক্তি আছেন। মজার ব্যাপার হল এতক্ষনের জন্য আমি একবার ও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি উনি কেমন আছেন বা কোথা থেকে এলেন। আর তাছাড়া এলাকায় নতুন বলে অনেকে আমাকে ঠিক মত চিনেও না, আমিও অনেক কম চিনি। চুপচাপ তাকে ফলো করে সেনের বাড়ি যেটা এখন শবাই বলে সেনের বাগে ঢুঁকে গেলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর ঐ ব্যাক্তি আমার সামনে থেকে একটু দূরে কোথায় গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমার পেন্সিল টর্চ দিয়ে খোঁজার চেষ্টা বৃথা কারন উনি কথাও নেই। ডাকলাম কিন্তু অনেক বাদুড়ের শব্দ ফিরে এল। টর্চটা জালিয়ে আর বন্ধ করলাম না। দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে বাড়ি পার হয়ে এলাম এবং সামনে গ্রাম্য পোষ্টঅফিস। সেখান থেকে একটা বাঁশের পুল প্রায় দেড়শ গজের মত লম্বা হবে ওপাড়ের এক বন্ধুর বাড়ি আলামিন দের বাড়িতে সংযুক্ত। আমাকে বাড়ি পৌছতে হলে এ পুল বা সাকো পার হতেই হবে। আয়াতুল কুরসি পরছি আর আল্লাহ, আল্লাহ্‌ করছি। সাঁকোর মাঝ খানে এসে হঠাত আমার চোখ যায় ডান দিকে সেই খালি বাড়িটার দিকে। আমার জান বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্তা। দেখলাম একটা অনেক বড় আম গাছের নিচে সেই সাদা বুড়িটা পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে নাচানাচি করছে আর আমাকে ডাকছে হাত দিয়ে ওখানে যেতে। তার হাসি দেখেত আমার হার্টবিট আর বেড়ে গেল। আমি এখন না পারি আলামিনদের বাড়ি যেতে না পারি সেনের ভাঙ্গা বাড়ি পথ দিয়ে স্যার এর বাসায় ফিরে যেতে। অগত্যা আল্লাহ নাম করে সাঁকো শক্ত করে ধরে পাড়ি দিচ্ছি খুব সাবধানে। তারাতারি যেতে পারছিনা কারন একেত ভয় তার উপর গ্রামের সাঁকোতে নতুন নতুন চরার অভিজ্ঞতা। যতই আলামিন্দের বাড়ির কাছে যাচ্ছি বুড়ির গলার শব্দ শুন্তে পাচ্ছি। কি? আমায় চিনতে পারছিস? আমি এসেছিলাম তোকে নিতে, তোর মা দেয় নি। আজ কে আটকাবে? বন্ধুরা, তার চেহারা দেখতে আমাদের বুড়ো নানি দাদিদের মতই দেখতে। কিন্তু লম্বায় প্রায় ২০ ফুট এর মত হবে। বুড়ির তামশা মনে হয় আর বেড়ে গেল। এখন চাঁদের আলোয় তাকে আর পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বুড়ি নাচছে আর আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আমাকে বলছে তোকে আজ এই গাছের নিচে পুঁতে রাখব। আমি চার কুল পরে বুকে ফুঁ দিয়ে ওর দিকেও তাক করে ফুঁ দিলাম। এখন আমি আলামিন্দের বাড়ির নামায় এসে পরেছি। আমি দৌড় দিলাম না। তাকিয়েই ছিলাম ঐ বুড়ির দিকে। হঠাত সেই বুড়িটা নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। আর দেখতে পেলাম না। আমি আর দেরি না করে বাড়ির দিকে রউনা হলাম। দিঘি পার হয়ে বট গাছ আসল। আমি আগে থেকেই করিমকে ডাকলাম নৌকা নিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে বট গাছের কাছ থেকে। করিম ঘুমিয়ে পরেছিল। গ্রামের সবাই ঘুমে। মা করিমকে ডাকছে উঠোন থেকে আমি শুনতে পাচ্ছি বট গাছের ওখানে দারিয়ে থেকে। বট গাছের ডাল পালা ভেঙ্গে যাওয়ার মত অবস্থা। আমি মাকে জোরে বললাম আমার ভয় লাগে করিম কে তারতারি পাঠাও। মা বলল, “ভয় পাবিনা আমি দারিয়ে আছি এই পারে”। করিম ঘুম থেকে উঠলো ঠিকই কিন্তু ওর ও ভয় লাগে। ও আগে নিশ্চিত হয়ে নিল আমার নাম ধরে ডেকে যে এটা আমি কিনা। মা চলে গেল তার ঘরে আর করিম আশ্ছে নৌকা নিয়ে কচুরিপানা সরিয়ে আছতে আছতে। গাছ থেকে ফিশ ফিশ শব্দ করে কে জেন বলল তোর মা তোকে অনেক কিছু শিখিয়েছে বেচে গেলি আজ। বাড়ি আসলাম মাকে কিছু বললাম না। পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখব কি সেটা। কিন্তু পরদিন স্কুলে যাওয়ার সময় আমি ভুলে গেলাম সম্পূর্ণ রূপে। জানিনা এত বড় ঘটনাটা কিভাবে একটা মানুষ ভুলতে পারে। স্যার জিজ্ঞেস করলেন কিরে বাড়ি ফিরতে সমস্যা হয়নিত? আমার মনে পরে গেল সেই ঘটনা। আমি বললাম না স্যার কোনও সমস্যা হয়নি। স্কুল ছুটির পর বাড়িতে ফেরার সময় সেই গাছটির দিকে তাকালাম। কিছুই দেখলাম না। দেখার কথাও না। কারন আমার সাথে স্কুল বন্ধুরাও ছিল। আমাকে প্রাইভেট পড়ার ছলে এই যন্ত্রণা আর দুর্ভগ আর ৩ দিন সইতে হয়েছিল, তারপর এই বুড়িকে আর দেখিনি। দরুদ, কোরানের আয়াত আর নতুন আয়ত্ত করা সাহস আমাকে শিখিয়েছিল ঐ রকম পরিবেশে কিভাবে চলতে হয়। এখন আমি ইউকে তে থাকি। আমার বাসার পাশের কবরস্থান। এখানে ও আমি অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিশ দেখি সেটা নাহয় আরেকদিন বলব? ভালো থাকবেন। যে যে ধর্মই পালন করেননা কেন। সৃষ্টিকর্তা কে সব সময় মনে রাখবেন। উনি আপনাকে, আমাকে সবসময় রক্ষা করবেন।

শেয়ার করেছেনঃ Aminul Islam ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/suvo.shokal শেয়ারকারীকে অসংখ্য ধন্যবাদ ঘটনাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।।

।। হাহাকার ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, August 26, 2011 at 11:13pm
সাত্তার মিয়াঁর ইদানিং টাকা পয়সার বড় আকাল যাচ্ছে।। ছোট ছেলেটার মেট্রিক পরীক্ষা সামনে।। বড় মেয়েটা বিবাহের উপযুক্ত।। সারাদিন ঘরে মন খারাপ করে বসে থাকে মেয়েটা।। পাড়ার লোকে নানান কথা বলে।। কিন্তু সাত্তার যে নিরুপায়।। যেই হারে যৌতুক চায় ছেলে পক্ষ, তাতে সাত্তারের মত একজন হতদরিদ্র ড্রাইভারের পুষায় না।। এইতো সেদিন ঘটক কাসেম আলী একটা সমন্ধ নিয়ে এসেছিলো।। কিন্তু ছেলে পক্ষের দাবি, কমপক্ষে একটা মোটর সাইকেল দিতে হবে আর সাথে দিতে হবে ৫০,০০০ টাকা ক্যাশ।। হতাশ হয়ে চলে এসেছে সে ছেলের বাসা থেকে।। সাত্তার মিয়াঁ একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার।। ঢাকা শহরে ট্যাক্সি বলতে যেমন বোঝায় তেমন না।। গ্রাম অঞ্ছলে বেশিরভাগ ট্যাক্সি ড্রাইভারেরই দিন আনি দিন খাই অবস্থা।। যেখানে মানুষের ভাত খাওয়ার টাকা নেই, সেখানে ট্যাক্সি উঠাটা একপ্রকার বিলাসিতা।। যদিও নিজের ট্যাক্সি তারপরেও এর মাঝে নিজের বা পরিবারের জন্য টাকা জমানো হয়ে উঠেনি সাত্তারের।। টাকার তাড়নায় কয়েকদিন ধরেই অবৈধ খেপ মারা শুরু করেছে সাত্তার মিয়াঁ।। এলাকায় এখন করিম বাহিনীর হেভি দাপট।। বাহিনীর প্রধান করিম এখন লাখ লাখ টাকার মালিক।। বছরখানেক আগেও একটা ময়লা প্যান্ট পরে গ্রামের বাজারে বসে থাকতো।। মালামাল টানত।। “কুলি” “কামলা” ইত্যাদি কত নামেই না তাকে ডাকতো মানুষ।। আজকে ঐ মানুষগুলোই করিমকে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠে।। সালাম দিয়ে পথ ছেড়ে দেয়।। করিমের এই দ্রুত উত্থানের পিছনে একটাই কারন রয়েছে।। চোখের পলক না ফেলে মানুষ মারতে পারে সে।। বয়স ২৭-২৮ বছর হবে।। কিন্তু এরই মাঝে ডজন খানেক খুন করে ফেলেছে।। তার মাঝে ২জন আবার পুলিশ।। তাকে ভয় না পেয়ে উপায় কি??
সাত্তার মিয়াঁ এই করিমের দলেই যোগ দেয়।। যোগ দেয় মানে তাদের চোরা পথে আসা বিভিন্ন জিনিসপত্র মাঝে মাঝে নিজের ট্যাক্সিতে করে অন্য খানে দিয়ে আসে সে।। গ্রামে যানবাহনের অভাব আছে।। তাই দ্রুত সাপ্লাই দেয়ার জন্য সাত্তারকে ব্যাবহার করে তারা।। বিনিময়ে করিম তাকে টাকা দেয়।। সেই টাকা থেকে কিছু টাকা সাত্তার মিয়াঁ জমা করতে শুরু করেছে।। খারাপ না।। এভাবে কিছুদিন চললে হয়তো এক সময় মেয়েটাকে বিয়ে দেয়ার মত টাকা সাত্তারের হাতে চলে আসবে।। তারপর সে এই কাজ ছেড়ে দিবে।। টাকা পয়সা ঠিকই কামাচ্ছে, কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে মনে শান্তি নেই।। খারাপ কাজে কখনো মনে শান্তি আসে না।।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টা।। খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সাত্তার মিয়াঁ।। হটাত ঘরের দরজায় কে যেনও জোরে নক করতে লাগলো।। সাত্তার মিয়াঁ উঁচা গলায় বলল, “কে??” কিন্তু কোনও উত্তর না দিয়ে আরও জোরে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো আগুন্তক।। বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো সাত্তার মিয়াঁ।। তার স্ত্রী তখন রান্না ঘরে।। থালা বাসন সাজিয়ে রাখছে।। ছেলে-মেয়ে ২ টোই গভীর ঘুমে আছন্ন।।
“আরে সাত্তার মিয়াঁ, আছো নাকি?? দরজাদা খোল একটু।। জরুরি তলব আছে।।”
গলা শুনে আঁতকে উঠলো সাত্তার।। এতো সেলিমের গলা।। করিমের ডান হাত।। এতো রাতে সেলিম কেন আসলো?? আর জরুরি তলব মানে কি??
দরজা খুলল সাত্তার মিয়াঁ, “সেলিম ভাই যে।। অত রাত করি কি মনে করে??”
“আমার লগে যাইতে হবে তোমার।। একটা খেপ আছে।।”
“অত রাত করি কেমনে যাবো?? আমিত খায় নিয়ে ঘুমতে যাচ্ছিলাম।।”
“করিম ভাই বইলেছে তোমারে নিয়ে জাতি।। ভালোয় ভালোয় সাথে চল।।”
“আপনি খারান।। আমি আমার বউরে কয়ে আসি।।”
মনে মনে করিম আর সেলিমকে হাজার খানেক কুৎসিত গালি দিল সাত্তার মিয়াঁ।। রাগে গাঁটা জ্বলে যাচ্ছে।। বউকে ভালো মত দরজা জানালা আটকে শুয়ে পড়তে বলে বের হল সে সেলিমের সাথে।। ট্যাক্সি স্টার্ট দিল সাত্তার মিয়াঁ।। ১০ টা মানে গ্রাম অঞ্ছলে ভালো রাত।। মানুষজন তো দুরের কথা, একটা কুকুরও চোখে পড়ছে না।। একটানা ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।। দূরে কোথায় একটা শিয়াল ডেকে উঠলো।। রাতটা কেমন যেনও থেমে থেমে আছে।। এমন রাতে বাইরে বেরুলেই গাঁ ছমছম করে।। সাত্তারের বাসা থেকে করিম মিয়াঁর আড্ডাখানা মোটামুটি ভালো দূরত্বে।। হটাত করে নিজেকে খুব অসহায় মনে হল সাত্তারের।। নিজেকে এমন করে বিক্রি করে দেয়া ঠিক হয়নি।। এখন সে হয়তো বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে ঘুমুতে পারত।। তা না করে যেতে হচ্ছে “জরুরি তলবে”।। করিমকে দেখে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো সাত্তারের।। শার্টের কয়েক জায়গায় রক্তের দাগ।। হাতে একটা দেশি মদের বোতল।। একটু পরপর সে বোতল থেকে খানিকটা গলায় ঢালছে।। সাত্তার আর সেলিমকে দেখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল।। চিনতে পারছে না যেনও।। তারপর হটাত বলে উঠলো,
“ভালো আছো সাত্তার??”
একটা ঢোক গিলে উত্তর দিল সাত্তার, “জে ভাইজান, ভালো আছি।। আপনি জরুরি তলব দিছেন দেখি চলি আইসেছি।।”
“ভালো করেছ।। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাম দিতে চাই তোমারে।। ঠিক মতন করে দিতে পারলে মেলা টেকা পাবা।। কিন্তু কথাটা যেন চাপা থাকে খেয়াল করবা।। নইলে কইলাম জানে বাছবা না।।” এই বলে সেলিমকে কাছে ডাকল করিম।। কি যেনও ফিসফাস করলো।। সাত্তারের দিকে তাকিয়ে একটা ভয়ঙ্কর হাসি দিল সেলিম।। তারপর এগিয়ে এসে সাত্তারকে নির্দেশ দিল তার পিছু পিছু যাওয়ার জন্য।। বাড়িটায় অনেকবার এসেছে সাত্তার।। কিন্তু বাড়ির অন্দরমহলে ঢোকেনি কখনো।। আজ ঢুকতে পারলো।। আসলে, তাকে ঢোকান হল।। সেলিমের পিছু নিয়ে ৩-৪ টা ঘর পেরিয়ে একটা ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ২ জন।। সাত্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল সেলিম, “এদা আমরার করিম ভাইয়ের ঘর।। জুতা খুইলে ধুকবা।। ভাই কইলাম মেলা পরিষ্কার কিসিমের।।” ঘরটা সুন্দর করে সাজানো।। মেঝের কার্পেটটা রেশমের।। পা দিলেই আরাম আরাম একটা অনুভুতি হয়।। টিভি মনিটরটা অন করে।। তাতে বাংলা গানে কোমর দুলিয়ে নাচছে এক জলহস্তি সাইজের নায়িকা।। সব ঘুরে বিছানার দিকে নজর গেলো সাত্তারের।।
বিছানাটা ঘরের পরিপাটি অবস্থার সাথে একদমই মিলছে না।। চাদরটার উপর যেনও কয়েকদফা যুদ্ধ হয়ে গেছে।। দলা মোচরা করে পাকান একটা কম্বল পরে আছে দেয়াল ঘেঁষে।। আর তার পাশে পরে আছে একটা লাশ।। একটা মেয়ের লাশ।। সেলিম গিয়ে দক্ষতার সাথে লাশটা কম্বল দিয়ে মুরিয়ে দিল।। অনেকদিনের অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো।। তারপর ডাক দিল সাত্তার মিয়াঁকে।। “আরে মিয়াঁ, খারাই খারাই কি দেহ?? আহ, হাত লাগাও।। গাড়ি পন্ত নেয়ন লাগব।।” মনে মনে একনাগাড়ে দোয়া দরুদ পড়ছিল সাত্তার মিয়াঁ।। সেলিমের ডাক শুনে অপ্রকিতস্থের মত এগুল।। লাশটা ঠিক মত ঢাকতে পারেনি সেলিম।। মনে হয় ঠিক মত ঢাকার চেষ্টা ও করেনি।। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখটাকে ঢেকে রেখেছিল এতক্ষণ।। চুলগুলো সরে যেতেই ছোট একটা চিৎকার বের হয়ে গেলো সাত্তারের মুখ দিয়ে।। খুবই কম বয়সী একটা মেয়ের মুখ।। চোখগুলো কেমন মায়া মায়া।। মেয়েটাকে এর আগেও দেখেছে সাত্তার মিয়াঁ।। এই গ্রামেরই এক রিকশাচালকের মেয়ে।। শেফালি নাম।। সাত্তারের ছেলের সাথে একই ক্লাসে পড়ত।। নিথর হয়ে পরে আছে দেহটা।। গলা চেপে মারা হয়েছে দেখে কিনা কে জানে, জিহ্বাটা বের হয়ে এসেছে।। বড় বড় হয়ে যাওয়া চোখ দুটোতে যেনও রাজ্যের জিজ্ঞাসা।। লাশটা নিজেই ঢেকে দিল সাত্তার।। চোখ দুটো বন্ধ করে দিল।। মৃত মানুষের চোখ যত দ্রুত বন্ধ করা যায় ততই মঙ্গল।। নইলে পরে বন্ধ করা যায় না।। শরীরটা এখনও গরম।। মেরেছে বেশি সময় হয়নি হয়তো।। দুইজন ধরাধরি করে লাশটা বাইরে নিয়ে আসলো।। আসার পথে একবার করিমের দিকে চোখ পড়েছিল সাত্তার মিয়াঁর।। একটু ভয়ার্ত কি মনে হল?? লাশটা ট্যাক্সির পিছন দিকে রাখা হল।। রেখে ট্যাক্সি স্টার্ট দেয় সাত্তার।। সেলিমের নির্দেশ অনুযায়ী গোপালপুর স্টেশনের দিকে চলল সে।। পথে একটা জংলা মত জায়গা পরে।। সেখানে লাশটা ফেলে রাখার প্ল্যান করেছে পিশাচটা।। মানুষজন জায়গাটা এড়িয়ে চলে।। দিনের বেলায়ও কেউ তেমন একটা যায়না।। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে গেলো সাত্তারের।।
প্রায় ৩০ মিনিটের রাস্তা।। কিন্তু ৭-৮ মিনিট পড়ি হটাত পেছন থেকে জোরে ডেকে উঠলো সেলিম, “অমা গো।। ঐ কাকা, খারাও।। কাকা খারাও।।” সাথে সাথে ব্রেক কষে সাত্তার।। চোখের পলকে গাড়ি থেকে নেমে দৌড় মারে সেলিম।। কিছুদুর গিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে গাড়ির পেছনের সিটে রাখা লাশটার দিকে।। তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে সেলিমের কাছে ছুটে যায় সাত্তার।।
“ও বেদা কি হইছে?? নামই পড়লে কেনে??”
ভয়ে সেলিমের গলা দিয়ে যেনও কথা বের হচ্ছে না।। আঙ্গুল তুলে লাশটাকে দেখাল সে,
“ঐটা জ্যান্ত কাহা।। একটা হাত বাড়ায় আমারে দইরল।। আমি টের পাইলাম।। বাস্তব কইলাম কাকা।। আমার পা ধইরা যেন টান মাইরল।।”
কিছুটা ভয় পেলো সাত্তার।। কিন্তু আমল না দিয়ে বলল, “ধুরু ভাই, এদি কি কউ?? লাশ আবার পা ধরি টান দেয় নাহি??”
“আমি ইমানে কইলাম কাহা।। দেহ, আমার গায়ের বেবাক পশম খারায় গেছে।। দেহ কাহা, দেহ।।”
হাতের দিকে তাকাল সাত্তার।। ঠকঠক করে কাঁপছে সে দুটো।। এতো বিরাট বিপদে পড়া গেলো।। এতো রাতে ভুতের ভয়ে কাবু একজনরে নিয়ে কিভাবে যাবে সে।।
বলল, “আচ্ছা ভাই, তুমি আমার লগে সামনে বহ।। বেশিদূর তো না।। আর আমিতো আছি লগে।।”
কিছুক্ষণ ভয়ে না করলো সেলিম।। কিন্তু শেষমেশ রাজি হয়।। সামনের সিটে উঠে বসে সাত্তারের সাথে।।
সেলিমকে চোখ বন্ধ করে রাখতে বলল সাত্তার।। এতে ভয় কম লাগবে।। ভয়ে সুবোধ বালকের মত আচরণ করছে সেলিম।। চোখ আসলেই বন্ধ করে ফেলল।। মনে মনে খানিকটা অস্বস্তি বোধ করছে সাত্তার মিয়াঁ।। জীবনে বহু লাশ সে দেখেছে।। এক সময় মাটিকাটার কাজ করতো।। বহু লাশ দাফন করেছে নিজের হাত দিয়ে।। এইসব তার কাছে বড় কোনও ব্যাপার না।। কিন্তু আজকে এমন লাগছে কেনও?? কেনও মনে হচ্ছে যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে না।। তার এখন কি করা উচিত?? কিছুদূর আসার পর হটাত পেছনে কেমন যেনও একটা আওয়াজ হল।। অনেকটা ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙ্গার মত।। সাত্তার মিয়াঁ পাত্তা না দিয়ে চালাতে লাগলো।। কিন্তু ততখনে সেলিমের খবর হয়ে গেছে।। তড়াক করে জেগে উঠলো, “কাহা, পেছনে কিয়ের আওয়াজ হইল?? সুইনলে??”
“আরেহ না।। কিয়ের আওয়াজ হবে আবার?? ব্যাটা ভয় পেয়েছ তাই লাইগছে।। চুপচাপ থাকো।। আইশা পড়লাম বলি।।” এইবার সত্যি সত্যিই দোয়া দরুদ পড়া শুরু করলো সাত্তার মিয়াঁ।। কেন যেনও মনে হচ্ছে কোথাও কোনও একটা সমস্যা আছে।।
রাস্তার পাশের জংলাটার কাছাকাছি চলে এসেছে তারা।। গাড়ি থেকে নেমে পিছনের সিটের দিকে যেতে লাগলো সাত্তার।। লাশটা নামাতে হবে।। সেলিমকে ডাকল।। কিন্তু ভুলেও লাশের আশেপাশে যাবে না সেলিম।। ভালো ভয় পেয়েছে।। সাত্তার কোন মতেই রাজি করাতে পারলো না।। অগত্যা, নিজেই নেমে গেলো।। গাড়ি থেকে নেমে অপেক্ষা করতে লাগলো সেলিম।। এখনও ভয়ে কাঁপছে।।
গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে এইবার ঠিকই ভয় পেলো সাত্তার।। লাশটার মুখ বেড়িয়ে এসেছে।। চোখ দুটো খোলা।। কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে যখন সেলিমকে সামনের সিটে নিয়ে যায় তখনো লাশটার মুখ ঢাকা ছিল।। শুধু ঢাকা না, রশি দিয়ে বাঁধা ছিল।। ঘটনা কিছুই বুঝে পেলো না সাত্তার।। আবছা ভাবে মনে পড়লো, নিজের হাতেই চোখ বন্ধ করেছিল সেটার।। সব কেমন যেনও তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।। আর ভাবতে চাইলো না সাত্তার।। লাশটা তোলার জন্য হাত বাড়ালও।। একা মানুষ, তাই পাঁজাকোলা করে তুলে নিবে ঠিক করলো।। আশ্চর্য, লাশটার গা একজন জীবিত মানুষের মত গরম।। কিন্তু যেই সময় তাদের লেগেছে আসতে আসতে তাতে এটা গরম থাকার কথা নয়।। রাতের বেলা বাতাস অনেক ঠাণ্ডা থাকে।। সাধারন একটা মানুষেরই গা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, আর সেখানে লাশের গা তো অনেক আগেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবার কথা।। মনে মনে একনাগাড়ে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো সাত্তার।। খারাপ কোনও সম্ভবনা টের পাচ্ছে সে।। কিছু যেনও হতে যাচ্ছে।। চারপাশের ভারি হয়ে থাকা বাতাস যেনও তারই সঙ্কেত দিচ্ছে।। একাই লাশটা জংলা পর্যন্ত নিয়ে গেলো সাত্তার।। সেলিম দূর থেকে ফলো করছে।। লাশটা নামানর পর থেকে সাত্তারের কাছাকাছি আসেনি।। এইবার ধমক লাগাল সাত্তার, “ঐ ভাই, জলদি আহ এইদিক।। গর্ত করো একটা দাফন দেই।।”
বিস্মিত হল সেলিম, “আ?? পাগল হইলা নি কাহা?? লাশ ফালায় রাখি চলে আউ।। দাফন কইরবার লাগব না।।”
“এভাবি লাশটা ফালায় রাখলি পড়ে, শেয়াল কুত্তায় খাইয়ে ফেলবে।। দাফন দি যাই।। বেশি টাইম তো লাগবে না।।”
“কাহা জলদি উঠি আউ, নইলে পড়ে করিম ভাইরে দিয়ে বেবস্থা নিব তোমার।।” এইবার আর কথা বাড়ায় না সাত্তার।। লাশটাকে আস্তে করে মাটিতে নামিয়ে রাখে সে।। করুন দৃষ্টিতে শেষবারের মত দেখে মেয়েটাকে।। এখনও ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে।। নিরব থেকেই যেনও চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।।
জংলা থেকে উঠে আসতে যাবে, এইসময় যেনও পরিষ্কার মেয়েলি গলায় কেউ বলে উঠলো, “আমারে এমনি ফালায় রেখে চলে যাবে তোমরা??”
“ওমা গো”, “ও বাবা গো” বলে গাড়ির দিকে দৌড় দিল সেলিম।। সাত্তার বুঝেছে কাহিনি খারাপ।। ধীর পায়ে গাড়ির দিকে যেতে লাগলো সে।। একবারও চোখ ঘুড়িয়ে পেছনে তাকাল না।। একবারের জন্যও না।। তাড়াহুড়াও করলো না।। আস্তে হেঁটে যেতে লাগলো যেমন কিছুই হয়নি।। সে শুনেছে, এইসব ব্যাপারে ভয় পেলে তাদের সাহস আর বেড়ে যায়।। তাই ভয় পাওয়া যাবে না।। কোনও অবস্থাতেই না।। ভালোয় ভালোয় গাড়ি পর্যন্ত আসলো সাত্তার।। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে মৃগী রোগীর মত কাঁপছে সেলিম।।
বিকারগ্রস্থের মত বলতে লাগলো, “কাহা জলদি স্টার্ট দাও।। ঐ *গীর আত্মা বাইর হয়নাই।। *গী আমগরে পাইলে মারি ফালব।। কাহা জলদি স্টার্ট লউ।।”
গাড়ি স্টার্ট দেয় সাত্তার।। এই পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি সে।। শেষে জিজ্ঞেস করলো, “করিম মাইয়াদারে মাইরল কেন??”
অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল সেলিম।। করিমকে সবসময় করিম ভাই বলে সম্বোধন করে সাত্তার মিয়াঁ।। আজকেই প্রথম তার মুখ থেকে শুধু করিম শুনল সে।।
প্রথমে ভাবল বলবে না।। কিন্তু সাত্তার দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন করলো।। এবার প্রশ্ন নয়, কেমন যেনও আদেশের মতন লাগলো কথা গুলো।।
ধ্যানে পাওয়া মানুষের মত বলতে লাগলো সেলিম,
“করিম ভাই মাইয়াদার লগে ফুর্তি করবার লাগি ধরে আনছিল।। ফুর্তি শেষ করার পরে যাইতে দিতে চাইছিল।। কিন্তু মাইয়াদা চিৎকার করি কইতে লাগলো, সবাইরে কয়ে দেবে।। করিম ভাইরে জেইলের ভাত খাওয়াবি।। করিম ভাই নেশায় আছিল।। গলা টিপি ধইরল।। আমাগ চোখের সামনেই মারি ফালাইল।। কিছুই করতি পারলাম না।।”
“কুত্তার বাচ্চা, তোর বইন হইলে পরে মরতে দিতি?? ফুর্তি করতে দিতি?? জবাব দে, নইলে জানে মারি ফাইলবো।। জবাব দে।।”
আতঙ্কে থরথর করে কেঁপে উঠলো সেলিম, “না দিতাম না।।”
এই সাত্তারকে যেনও চেনে না সে।। এই সাত্তার করিমের তোয়াক্কা করে মনে হয় না।। রাত ৩টার দিকে সাত্তারের ট্যাক্সি করিমের বাসায় থামে।। সে রাতে ঐ বাসা থেকে কয়েকজন মানুষ গায়েব হয়ে যায়।। তার মধ্যে করিমের নামও রয়েছে।। পরিশেষঃ প্রায় ১০ দিন পর রাস্তার পাশের ঐ জংলাটা থেকে ২টা লাশ উদ্ধার করা হয়।। তার মাঝে একটা
মেয়েলোকের লাশ।। আরেকটি লাশের পরিচয় মেলেনি।। তবে গায়ের পোশাক দেখে পুলিশ অনুমান করে যে সেই লোকটা করিম।। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এই ১০ দিনেই লাশটিতে পচন ধরেছে এবং প্রায় অর্ধেক লাশ শেয়াল কুকুরের পেটে চলে গেছে।। মুখটাতে খামচানোর দাগ স্পষ্ট।। একটা চোখ পিঁপড়া খেয়ে ফেলেছে, আরেকটা কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে প্রায়।। অনেকটা ফাঁসিতে ঝোলা আসামিদের যেমন হয়, তেমনই।। মূলত লাশ পচার গন্ধেই আকৃষ্ট হয়ে মানুষ সেই লাশ ২টা উদ্ধার করে।। অথচ মেয়েটির লাশটি প্রায় তেমনই আছে, যেমন মরার সময় ছিল।। ঘটনার পরদিন থেকেই সেলিমের মাঝে আকুল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।। সে এখন নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে।। খুব ঘনিষ্ঠ জনের কাছে সে জানিয়েছে, সে রাতে করিমের বাসায় ঢুকার পর তারা ঘুমুতে যায়।। কিন্তু সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তখনো মাথায় গুরপাক খাচ্ছিল দেখে ঘুমুতে পারেনি সেলিম।। কিছু সময় পর করিমের রুমে ধস্তাদস্তির শব্দে সে উঠে পড়ে।। সাহসে কুলিয়ে উঠেনি তাই নিজের দরজার কাছ থেকে গলা বাড়িয়ে উকি দেয়।। সে নাকি দেখতে পায় একটা লম্বা ছায়ামূর্তি মাটিতে হেচরিয়ে কাউকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।। ঘর অন্ধকার থাকায় সে মূর্তি অথবা টেনে নিয়ে যাওয়া বস্তুটা দেখতে পায়নি।। তবে যেই মুহূর্তে ঘর ছেড়ে বের হতে নেয় তখন চাঁদের আলো এসে ঐ ছায়ামূর্তির গায়ে পড়ে।। স্পষ্ট দেখতে পায়, সেটা আর কেউ না, বরং শেফালি।। সাত্তার মিয়াঁ এই রাতের পর ট্যাক্সি চালানো ছেড়ে দেয়।। ট্যাক্সি বিক্রি করে দিয়ে মেয়ের বিয়ে সে ঠিকই ধুমধাম করে দিয়েছে।। সে এখন সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করে।। সাত্তার কাঠের দোকানে কাজ করে।। ভালোই কেটে যায় তাদের তিনজনের পরিবার।। শেফালির মতন অনেক মেয়েই বেঘোরে প্রান হারায় বা নিহত হয় আমাদের সমাজে বসবাসকারী কিছু কীটের নোংরামির স্বীকার হয়ে।। সবাই হয়তো সেই খুনের বদলা নিতে পারে না।। হয়তো শেফালি পেরেছিল।। হয়তো পারেনি।। কে জানে, কিছু রহস্য হয়তো তৈরিই হয় অমীমাংসিত থাকার জন্য।। ** আমি কোনো প্রোফেসনাল রাইটার নই।। তাই ভুল-ভ্রান্তি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি।। - ইরফান

ফোঁড়া - By নষ্ট কবি

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Friday, August 26, 2011 at 11:19pm
অনেক ক্ষন ধরে সামনে বসা মানুষ টার দিকে তাকিয়ে আছেন ডঃ তাহসিনা। মাথাটা নিচু করে বসেই আছে সেই লোক। অনেকক্ষণ ধরে বসে থেকে থেকে শেষে বলতে শুরু করল- "আমার যে সমস্যা সেটা হল আমার পেটে একটা ফোঁড়া ঊঠেছে।"
বলেই শুন্য দৃষ্টিতে ডঃ তাহসিনার দিকে তাকিয়ে থাকল। ডঃ তাহসিনা অনেক ভাল একজন সাইকায়াট্রিষ্ট। উনি এর আগে ও অনেক মেন্টাল রুগীকে ভাল করেছেন। কিন্তু আজকের এই রুগি এসে বসেছে তো বসেছে কথা বলার কোন নাম গন্ধ নাই। অনেক ক্ষন মাথা নিচু করে চুপ করে থেকে শেষে বলতে শুরু করল। " আমার সমস্যার শুরু যখন আমি আমার স্ত্রি মাহমুদা কে খুন করি। আমার স্ত্রি কে নিয়ে আমি খুব সুখে ছিলাম। কিন্তু আমার একটা এক্সিডেন্টের কারনে ডাক্তার আমাকে বলেন যে আমি আর কোন দিন বাবা হতে পারবোনা। এর পর মাহমুদা আমাকে প্রথম প্রথম মেনে নিয়েছিল। আমাদের বিয়ে হবার পর ঠিক করেছিলাম ৩ বছর পর বাচ্চা নেব। এর মাঝেই ঘটে যায় সেই এক্সিডেন্ট। এরপর মাস ছয়েক ঠিক ছিল। কিন্তু একদিন আমি জানতে পারি মাহমুদার সাথে আমার এক আত্মীয়র অবৈধ সম্পর্ক হয়েছে। এটা শোনার পর আমার মাথা ঠিক ছিলনা। আমি দুইবার আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। এর মাঝেই আমাকে মাহমুদা ওর অবৈধ সম্পর্কের কথা জানায়। আমি বিমূঢ় ছিলাম বেশ কিছু দিন। কিন্তু এর মাঝেই জানতে পারি মাহমুদা কনসিভ করেছে। এটা শুনে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। ওর পেটে বাচ্চা যখন ৮ মাস - তখন আমি একদিন মাহমুদা কে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলি। মেরে ফেলি পেটের বাচ্চা টাকে ও। আমি একজন পুলিশ অফিসার ছিলাম সেই সময়। এখন আমি রিটায়ার্ড। সেই সময় আমার ক্ষমতা বলে মাহমুদা কে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কোন রকমে দাফন করে আসি। এর পর আমি অনেক দিন দেশের বাইরে ছিলাম।" বলেই একবার দম নিল লোকটা। তারপর টেবিল থেকে পানির জগটা নিয়ে অদ্ভুত ভাবে পানি গ্লাসে না ঢেলে জগ থেকেই ঢকঢক করে খেয়ে ফেলল অর্ধেক পানি। তারপর আরেকটা দম নিয়ে আবার বলা শুরু করল সে -
" এর পরের বছর আমি দেশে ফিরে আসি। চাকরি থেকে ছুটি নিয়েছিলাম। সেখানে আবার জয়েন করি। কিন্তু দুই মাস আগে আমি ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাই। সেখানে ঈদের দিন রাতে আমি একাকী বসে ছিলাম আমার বাড়ির পেছনের বারান্দায়। তখন দেখি মাহমুদার কবর থেকে একটা বাচ্চা ছেলে বাবা বাবা করে ডেকে আমার দিকে দৌড়ে এসে আমার মাঝে ঢুকে গেছে। সেদিন রাতে আমি খানিকটা নেশা করেছিলাম। তাই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সব আজগুবি মনে করে ভুলে যাই। কিন্তু পরদিন আমার পেটে নাভীর গোড়ায় একটা ফোঁড়া ঊঠে। প্রথমে এটা ফোঁড়ার মতই ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে এটা বড় হতে থাকে। আমি এই কয়দিন প্রায় সময় স্বপ্নে দেখছি একটা বাচ্চা ছেলে আমাকে বাবা বাবা করে ডাকছে আর বলছে আমার পেট থেকে নাকি তার জন্ম হবে। এই যে দেখেন আমার পেটের মাঝে এটা কি”- বলে শার্টের ভাজ খুলে দেখায় ডঃ তাহসিনাকে।
তাহসিনা কিছুক্ষন দেখেন ফোঁড়া টা। বেশ বড় আকারের একটা ফোঁড়া। লালচে ভাব ধরেছে। তারপর হেসে লোকটাকে বললেন- “দেখুন মি.”- বলে নামটা জানার জন্য তাকালেন উতসুক দৃষ্টিতে লোকটার দিকে।
উনি বললেন “ রাকিব- মোঃ রাকিব”। “হুম – দেখুন রাকিব সাহেব- আপনার হ্যালুসিনেশন হয়েছিল- সেই দিন রাতে। আপনি আপনার স্ত্রীকে অনেক ভালবাসতেন। সেই ভালবাসা আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই আপনি উনাকে এবং উনার সন্তান কে মেরে ফেলে অনেক কষ্ট পাচ্ছিলেন। সেইদিন আপনার পিতৃসত্ত্বা আপনার মাঝে আপনার মৃত সন্তান কে ঢুকে যেতে দেখিয়েছে। এটা নিছক ই কল্পনা। আর বেশি কিছু না”। বলে মিষ্টি করে হেসে রাকিব সাহেবের দিকে তাকালেন। “ কিন্তু আমার পেটের এই ফোঁড়া কিভাবে আসল?” এবার ক্ষেপে গেলেন রাকিব সাহেব। “এটা কো- ইন্সিডেন্স মাত্র। এটার সাথে আপনার স্বপ্ন কিনবা হ্যালুসিনেশন কে মেলালে তো চলবেনা”-বললেন ডঃ তাহসিনা। “ দেখেন আমি মেলাচ্ছিনা। কিন্তু ইদানিন আমার পেটের ভেতর কিছু একটা লাথি মারে। কিছু একটা হচ্ছে আমার পেটের ভেতর”- বলেই প্রায় কেঁদে ফেলে রাকিব সাহেব। “ দেখুন আপনাকে আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি।এগুলো খান। আশা করি আপনার ভাল ঘুম হবে। এবং আপনার এই বিশাল ফোঁড়া ও কমে যাবে” বলেই খস খস করে কিছু ঔষধ লিখে প্যাড থেকে কাগজ ছিড়ে দেন রাকিব সাহেব কে। তারপর বললেন-“ আপনার যে কোন সমস্যা হলে আমি নিজে গিয়ে আপনাকে দেখে আসব। আপনার এখানে আসার আর দরকার নেই। এইখানে আমার ফোন নাম্বার দেয়া আছে। সেখান থেকে আমাকে ফোনে জানাবেন কি হয়েছে”- বলেই ঊঠে পড়লেন ডঃ তাহসিনা। “আমার একটা সেমিনার আছে- আমাকে এখন সেখানে যেতে হবে” বলে বের হয়ে গেলেন ডঃ তাহসিনা।
..............

তিন মাস পর রাত ১টায় ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল ডঃ তাহসিনার। উনি ফোনটা ধরেই আরেক পাশ থেকে শুনতে পেলেন- রাকিব সাহেবের কন্ঠ- “ আপা একটু আসবেন আমার বাসায়? প্লিজ আপা আসেন।প্লিজ আসেন। আমার পেটে প্রচন্ড ব্যাথা করছে” বলেই বাসার ঠিকানা দিলেন ডঃ তাহসিনাকে। সারাদিন মেডিক্যাল এ সেমিনারে ছিলেন তিনি। তাই বাসায় এসে মাত্র শুয়েছেন। কিন্তু এই রকম কল এলে প্রায় সময় তিনি ঘুম রেখেই দৌড় মারেন রূগীর বাসায়। নিজের জীবনের চেয়ে রোগীকে অনেক গুরুত্ব দেন তিনি। আর এই রাকিব সাহেবের ব্যাপারটা নিয়ে তিনি অনেক পড়াশুনা করেছেন ইদানিন। তাই তিনি এত রাতে ফোন পেয়ে কোন রকমে পোশাক পাল্টে গাড়ি নিয়ে বের হলেন। রাকিব সাহেবের বাসায় বাসা গুলশানে। সেখানে পৌছে একটা সাদা রঙ এর বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে নিজেই ঢুকে পড়লেন ভেতরে। বাড়িতে গিয়ে বেল টেপার পর খুলে দিল একজন বৃদ্ধা মহিলা। তিনি রাকিব সাহেব কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই মহিলা তাহসিনাকে নিয়ে গেলেন একটা ঘরে। সেখানে শুয়ে আছেন রাকিব সাহেব। কিন্তু রাকিব সাহেব কে দেখেই ভয় পেয়ে যান তিনি।রাকিব সাহেবের পেটটা অস্বাভাবিক ভাবে ফোলা। ঠিক যেন সন্তান সম্ভবা মায়ের মত। আর ঠিক সেই সময় রাকিব সাহেব চিৎকার করে ঊঠে অজ্ঞান হয়ে যান। এবং সেই সময় তাহসিনার চোখের সামনে ঘটল এক বিষ্ম্য় কর ব্যাপার। রাকিব সাহেবের নাভির উপরের ফোঁড়া থেকে একটা লালচে পিণ্ড বের হতে লাগল। আস্তে আস্তে পিন্ড টার কিছু অংশ বের হয়ে চোখ আর মুখে অস্তিত্ব জানান দিল। এর পর তাহসিনা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দেয়া মহিলা কে গামছা আর কুসুম গরম পানি আনতে বলে নিজে কোন রকম টান দিয়ে বের করেন বাচ্চা টাকে। অদ্ভুত সুন্দর সেই সন্তান টাকে কোলে নিয়ে হতভম্ভ হয়ে যান তিনি। বাচ্চা টা যেন ঘুমাচ্ছে। এর মাঝে তোয়ালে নিয়ে সেই মহিলা আসলে তিনি তোয়ালে দিয়ে কোন রকম বাচ্চা টাকে মুছিয়ে দেন। তারপর খেয়াল করেন বাচ্চা টা কাঁদছে না। তিনি অনেক চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনভাবেই বাচ্চাটাকে কাঁদাতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত দেখলেন বাচ্চাটা মারা গেছে। বাচ্চাটা মারা যাবার পর তিনি রাকিব সাহেবের দিকে খেয়াল দিলেন। এতক্ষন তিনি যেন ঘোরের মাঝে ছিলেন। মেডিক্যাল সায়েন্স কে বোকা বানিয়ে এই মাত্র এই লোকটা একটা বাচ্চা জন্ম দিল। কিন্তু বাচ্চাটাকে তিনি বাঁচাতে পারলেন না। আগে জানলে তিনি ঠিক ই রাকিব সাহেবের ব্যাবস্থা করতেন। তিনি তাড়াতাড়ি রাকিব সাহেব এর নার্ভ দেখলেন। কিন্তু হতাশ হলেন। তিনি ভেবেছিলেন রাকিব সাহেব অজ্ঞান হয়েছেন। আসলে তিনি মারা গেছেন সেই চিৎকার দিয়েই। এবার কিছু টা মুষড়ে পড়লেন তাহসিনা। তিনি লোকটাকে বিশ্বাস করলে দুইজন কেই হয়ত বাচানো যেত। এরপর তাহসিনা সেই বাচ্চাটাকে গোপনে সরিয়ে ফেলার ব্যাবস্থা করেন। সেই বৃদ্ধা মহিলা কে দিয়েই বাচ্চাটাকে সেই বাড়ির এক কোনায় কবর দেবার ব্যাবস্থা করেন। আর রাকিব সাহেব কে কবর দেয়া হয় তার গ্রামের বাড়িতে। এই সব ব্যাপার ভাল মত সারতে সারতে উনার কয়েকদিন লেগে যায়। এর তিন দিন পর রাতে ক্লান্ত ডঃ তাহসিনা মাত্র হাসপাতাল থেকে এসে বাসায় খেয়ে দেয়ে শুয়েছেন।এমন সময় উনার ঘরের বারান্দায় একটা আলতো টোকা দেয় কেউ একজন। তখন ও ঘুমান নি তাহসিনা। আস্তে করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে ঊঠে বারান্দার দরজা খুলেই দেখেন একটা বাচ্চা ছেলে দাড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে।মুখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আন্টি আন্টি বলে ঝাপিয়ে পরে তাহসিনার শরীরের সাথে মিশে যায়। ব্যাপারটা এতই তাড়াতাড়ি হয়েছে যে তাহসিনা বেশ কিছুক্ষন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর অজ্ঞান হয়ে পড়লেন তিনি সেখানেই। পরদিন জ্ঞান ফিরে নিজেকে মাটিতে দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে যান তিনি।তারপর রাতের ঘটনা কে নিছক স্বপ্ন ভেবে হেসে ঊড়িয়ে দিলেন তিনি। তারপর ফ্রেশ হবার জন্য বাথরুমে গেলেন। হাত মুখ ধুয়ে বের হতে যাবেন তখন পেটে চিনচিনে একটা ব্যাথা টের পেলেন। তাড়াতাড়ি নাইট গাঊনটা সরিয়ে পেটে হাত বুলালেন তিনি। এবং দিনের আলোতেই পরিষ্কার টের পেলেন তিনি – উনার পেটের যেখানে নাভি- ঠিক তার উপরেই একটা ফোঁড়া ঊঠেছে। লালচে ফোঁড়াটা দেখতে ঠিক রাকিব সাহেবের সেই ফোঁড়াটার মত। সাদৃশ্য টা টের পেতেই আবার জ্ঞান হারালেন সাইকিয়াট্রিষ্ট ডঃ তাহসিনা...... ( সমাপ্ত )
Like+Comment na dileo cholbe, kin2 kindly keu slang/offensive comment korben na...TC

।। রাতের অ্যাম্বুলেন্স ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, August 27, 2011 at 8:02pm
আজ কাজে আসতে কামালের একটু দেরী হয়ে যায় । এখন বাজে সকাল প্রায় ৯ টা ৪৫ মিনিট । হাজিরা খাতায় সই করতে করতে কামাল একবার আশে পাশে চোখ বুলায় তারপর ঝট করে হাজিরের ঘরে লিখে ফেলে ৯টা ৩০ মিনটি । তার পর পাশের টেবিলে বসা এক বুড়োকে লক্ষ্য করে বলে- বুঝলেন কলিম চাচা বউডার শরীর বেশি ভালা না । আট মাস চলতাছে । অনেক চিন্তায় আছি । বাসায় কেউ নাই যে দেখভাল করবো । কি যে করি ? একটু থেমে আবার বলে -আমারই সব করতে হয় । তার উপর টাকা পয়সার সমস্যায় আছি । -একটা কামের লোক রাখতে পারো না মিঞা ? পাশের টেবিলে বসে থাকা ৬০ বছর বয়সের বৃদ্ব কলিম মিয়া কথাটা বলে কিছুটা থামে , তারপর আবার বলে - জানো তো পরপর তিনদিন লেট হইলে এক দিনের বেতন পানিতে যাইবো । তোমার এ মাসে ওলরেডি ৭ দিন লেট । মানে ২ দিনের বেতন নাই । ব্যাপারটা মাথায় রাইখো ।
কামাল কিছু বলে না মাথা নাড়ায় । সে ব্যাপারটা জানে । সরওয়াদি হাসপাতালের এ্যম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসাবে গত মাস দু’য়েক আগে যোগ দিয়েছে কামাল । ওর কাজ হলো সারাদিন এ্যম্বুলেস চালান । যেদিন কাজের চাপ থাকে সেদিন এতো বেশি থাকে যে খাওয়া দাওয়ার সময় থাকে না । আর যেদিন কাজের চাপ কম থাকে সেদিন দেখা যায় দু’একটা ট্রিপ মারার পরই বসে বসে ঝিমোতে হয় । তবে কাজের মধ্যেই থাকতে বেশি ভাল লাগে কামালের । তার উপর কখন ও সখন ও দু’পয়সা উপরি পাওয়া যায় । শুরুতে রুগি ,লাশ পরিবহন করতে একটু খারাপই লাগত । কিন্তু এখন তা সয়ে গেছে । ও চিন্তা করে দেখেছে যাত্রী পরিবহন করার চেয়ে রুগি আর লাশ পরিবহন করাই নিরাপদ। হাউকাউ চেচামেচি কম করে । সই করে এ্যম্বুলেন্সের চাবির জন্য দোতালায় উঠতেই শান্তি দিদির সঙ্গে দেখা হয়ে যায় । তিনি প্রায় দৈড়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছিলেন । শান্তি দিদি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স । কামালকে বেশ স্নেহ্ করে । ঠিক কামালের মতো দেখতে নাকি তার এক ভাই ছিল ।
- কি দিদি কি খবর ?
- ২১ নম্বর রুগির অবস্হা বেশি ভাল না রে । স্যারদের খবর দিতে গেছিলাম । তোর বউ কেমন আছে ? কোন চিন্তা করবি না আমরা আছি । শান্তি দিদি দাঁড়ায় না ।
কামাল কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে হেসে অফিস রুমে ঢুকে যায় । সেখান থেকে চাবি নিয়ে সোজা বাহার ভাইয়ের চায়ের দোকানে । চাবি নেয়ার মানে কামাল গাড়ি সহ রেডি । কল আসলেই চলে যাবে । বাহার ভাই এর দোকানে কামাল এলাহি ভাইকে দেখতে পায় । আরো কয়েকজনকে নিয়ে বসে চা খাচ্ছে আর হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে । এলাহি ভাই এই হাসপাতালের ড্রাইভার ইউনিয়নের নেতা । তার হুকুম ছাড়া হাসপাতালের একটা গাড়িও চলে না । তার কথাই আইন । কামাল কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে বলে ভাই কেমন আছেন ?
সালামের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে এলাহি মিয়া বলে - কি ব্যাপার কামাল আজকাল থাকো কৈই ? ইউনিয়িন অফিসে আসো টাস না । শুধু কি রুগিগো সেবা করলে চলবো ? নিজের ভবিষ্যতের দিকে ও তো তাকাইতে হইবো, না কি ? সর্মথনের আশায় এলাহি মিয়া পাশে বসে থাকা অন্য সবার দিকে তাকায় । সবাই মাথা নেড়ে তাকে সর্মথন দেয় ।
- লিডার কামাল মিয়ার তো বাচ্চা হইবো । পাশে বসে লম্বা মতো তেল চোরা জহির বলে ।
-আবে কামালের বাচ্চা হইবো নাকি ? ক’ওর বউ এর বাচ্চা হইবো । আরেকজন কথাটা বলার সাথে সাথে সবাই হো হো করে হেসে উঠে । কামাল কিচ্ছু বলে না । মুখে হাসি হাসি একটা ভাব করে রাখে । যেন খুব মজা পাচ্ছে ।
-বস । চাটা খাও । তয় ভাই বাচ্চা হওনের পর কিন্তু ইউনিয়নের জন্য সময় দিবা । আমি তো শালায় তোমগো লাইগা খাটতে খাটতে শেষ । আর যে কোন দরকারে আমার ফোন দিবা । তোমগো লাইগা আমার জান কোরবান । বলে এরাহি মিয়া দল বল নিয়া চলে যায় ।
কামাল বুঝতে পারে আজকের দিনটা ওর বসে বসেই কাটবে । চায়ের দোকানে দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর ও কোন কল আসেনা । কামাল উঠে ওর এ্যম্বলেন্সের কাছে চলে আসে । ১৭ নম্বর এ্যম্বুলেন্স । দরাজা খুলে ও এ্যম্বুলেন্সে উঠে রেডিও চালিয় কতোক্ষন খবর শুনে ।
এমন সময় সোলেমান এসে একটা ঠিকানা দিয়ে যায় । গুলশান যেতে হবে । রুগী নিয়ে আসতে হবে । কামাল বের হয়ে যায় । যাবার সময় একটা কলা আর বন রুটি নিয়ে নেয় বাহার এর দোকান থেকে দুপুরের খাবার হিসাবে খাবে বলে । খাতায় লিখে রাখতে বলে ও টান দিয়ে গাড়ী নিয়ে বেড় হয়ে যায় । হাসপাতালের গাড়ি চালালে আরেকটা সুবিধা হলো রাস্তায় সাজেন্টের সঙ্গে ঝামেলায় পরতে হয় না । কথায় আছে এ্যম্বুলেন্সের সাইরেন শুনলে প্রধান মন্ত্রীর গাড়ীও নাকি সাইড দেয় । কথাটা অনেকটা সত্য ।
দেশের অবস্থা খুব একটা ভাল না । রাস্তা ঘাটে প্রচুর জ্যাম । তাড়াতাড়ি গুলশান থেকে ফিরতে পারলেই দ্বায়িত্ব শেষ করে বাসায় ফেরা যায় । মায়া বাসায় একলা । দুবার এর মধ্যে ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে । মায়া বলেছে ও ভাল আছে । কোন সমস্যা নাই । তাই ও এখন অনেকটা নিশ্চিন্তে আছে । গুলশান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় । দোতালায় চাবি জমা দেবার জন্য আসতেই কামাল খবর পায় শান্তি দিদি ওকে কয়েকবার খুঁজেছে । অফিস রুমে খবর দিয়ে রেখেছে যেন ও আসলেই যেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চলে আসে ।
৭ নম্বর ওয়ার্ডটা খুব বড় । ঢুকতেই হাতের ডান পাশে নার্সদের বসার জায়গা । শান্তি দিদি সেখানেই বসে আছেন । ওকে দেখে বলেন- কামাল এদিকে আয় । তোর সঙ্গে কথা আছে ।
-দিদি বাসায় যেতে হবে । তাড়াতাড়ি কও কি কইবা । কামাল একটা খালি চেয়ার টেনে বসে পরে ।
-তোর বউ কেমন আছে ?
-আছে কোনরকম । দিদি রাইত হইছে । কাজের কথা কও । বউডা একলা ঘরে । কামাল তাড়া দেয় ।
-আরে বছ না ছেমরা । কাজ ছাড়া কি তোরে ডাকছি ? কামাল মাথা নাড়ে দিদি ঠিক বলেছ কাজ ছাড়া ডাকেনি । শুন ২১ নম্বর বেডের রুগীডা মারা গেছে । লাশ মর্গে আছে । তোরে একটু দিয়া আইতে হইবো ।
-কি কও ? এ্যই রাইতের বেলা ? জাকিরের তো নাইট ,ও’রে কও ? কামাল চলে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে যায় ।
-আরে শুন ; শুন; তোর তো টাকা দরকার । মালদার পাটি ; পাথের খরচ বাদ দিয়াও মনে হয় হাজার পাঁচেক দিবো । জাকির গেছে সাভারে আসলে কমু । ও মনে হয় রাজি হইয়া যাইবো । সামনে তোর পোলা পাইন হইবো হাতে টাকা পয়সা দরকার তাই আমি তোরে কইলাম । এখন যাওয়া না যাওয়া তোর মর্জি ।
পাঁচ হাজার ! কামাল একটু দ্বিধায় পরে যায় । আসলেই তো ওর হাতে তেমন টাকা পয়সা নাই । প্রতি মাসে মাটির ব্যাংটাতে এতোদিন যা জমিয়েছে সব মিলিয়ে হয়তো হাজার পাঁচেকই হবে । এ সময় পাঁচ হাজার টাকা হলে বাচ্চা হওনের সময় অনেক নিশ্চিত হওয়া যায় ।
-কিন্তু দিদি মায়া তো বাসায় একলা । দেরী করলে ভয় পাইতে পারে ।
-আরে ছেমরা কয় কি ? ভয় পাইবো কেন ? লাগলে আমি যাওনের সময় একবার দেইখা যামু । শান্তি দিদি খাতায় কিছু লিখতে লিখতে বলে ।
- কৈই যাইতে হইবো ? মাথা চুলকাতে চুলকাতে কামাল জিজ্ঞাসা করে ।
-কুমিল্লা । শান্তি দিদি লেখা বন্ধ না করেই বলে ।
-ও মা কও কি দিদি ? কুমিল্লা ! কামাল আতকে উঠে । তাইলে তো ফিরতে ফিরতে ভোর হইয়া যাইবো ।
-আরে না । ভোর হইবো না । এ্যই ধর তিনটা চারইটা বাজতে পারে ।
-হেইডা তো ভোরই । কাইল আবার ডিইটি আছে না ? কখন ঘুমামু কখন কামে আমু ।
-কাইল ১২ দিকে আবি ।সুপার স্যাররে আমি কইয়া রাখুম । কোন অসুবিধা হইবো না । শান্তি দিদি ফাইলটা আলমারিতে রাখতে রাখতে বলে ।
-একটা কথা কও তো দিদি তোমার এতো গর্জ কেন ? ভালাই পাইছো মনে হয় ।
-আরে ছেমরা মর । আমার আবার গর্জ কি ? তুই যখন মরবি তখন তোর লাইগাও আমি মাইষের হাতে পায়ে ধরমু ।
-আহা দিদি রাগ করো কেন ?
-শুন । দিদি কামালের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে । যে মরছে সে অনেক বড় লোক আছিল । বড়লোকগো যেমন খাসলত ভালা হয় না । এই ব্যাডারও তাই আছিল । শেষ বয়সে তিনডা বিয়া করছে । কচি কচি মাইয়া গুলি এই এক সপ্তাহ বুইড়াডার লাগি যা করলো । এখন মরার পরও লাশ নিয়া বইয়া আছে । তুই যাইয়া পৌছে দিয়ে আয় । তোর কাম শেষ । শান্তি দিদি ওর হাতে একটা সাদা খাম দেয় ।
-কি এইডা ? কামাল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ।
-কি আবার টাকা আর ঠিকানা যেহানে যাবি । যা গাড়িতে গিয়া ব।
-কিন্তু দিদি এতোটা পথ এই রাইতের বেলায় লাশ নিয়া একলা যাইতে পারুম না ।
-আরে ছেমড়া একলা যাবি কেন । বুইড়ার তিন বউ যাইবো তোর লগে । দেখিস আবার না তুই বুইড়া হইয়া যাছ ।নিজের রসিকতায় নিজেই শান্তি দিদি হেসে উঠে ।
-কি যে কওনা দিদি ? আমি তাইলে গাড়িতে যাই ।
-যা । আর শুন বউরে নিয়া চিন্তা করবি না । আমি তোর দিদি আছি । যা ভাগ ।
কামাল বের হয়ে যায় । হঠাৎ করে টাকাটা পেয়ে মেজাজ ভাল হয়ে গেছে । যেতে যেতে মায়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলে । মায়াকে জানায় - ওকে এখন কুমিল্লা যেতে হচ্ছে , ফিরতে রাত হবে । মায়া যেন কোন চিন্তা না করে । যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ও ফিরে আসবে ।
কামাল নীচে নেমে দেখে লাশ ওর গাড়িতে তোলা হয়ে গেছে । মনির মিয়া গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে ।
এতো ভারী কারো শরীর হয় ? চাইর জন মিল্লাও তুলতে যে কষ্ঠটা হইলো । কামালের দিকে তাকিয়ে হাত ঢোলতে ঢোলতে কথা গুলো এক নি:শ্বাসে বলে মনির মিঞা ।
-অনেক ভারী নাকি ? পাল্টা জিজ্ঞাসা করে কামাল তাকায় এ্যম্বুলেন্সের ভেতরে । বাম পাশের বেডের উপর লাশটা রেখে সাদা একটা চাদর দিয়ে লাশটা ডেকে দেওয়া হয়েছে । মিনির মিঞা বাম দিকের দরজা বন্ধ করে দেয় । কালো বোরকা পরা লম্বা মতোন দু’জন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির পাশে । একবার কামালের দিকে তাকিয়ে দু’জন নীচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে । কামালের কান পর্যন্ত সে কথার আওয়াজ পৌছায় না । কাগজ নিয়ে আরেক জন বোরকা পড়া মহিলা কামাল এর কাছে এসে বলে - আপনিই কি যাবেন ভাই ?
-কামাল উপরে নীচে হা সূর্চক মাথা নাড়ে ।
-তা হলে চুলুন রওনা হই । মহিলা মিনির মিয়ার হাতে কয়েকটা একশ টাকার নোট দিয়ে অন্য দুজন মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে - কৈই তোমরা আস ।
সবাই উঠে বসতেই কামাল এ্যম্বুলেন্স ছেড়ে দেয় । ঘড়িতে তখন কাটায় কাটায় রাত ১২ টা বাজে ।
রাস্তায় খুব একটা গাড়ি নেই । সোডিয়াম বাতির আলোয় পথ ঘাট কেমন ভৌতিক মনে হচ্ছে । কামাল এমনিতে ভুত প্রেত বিশ্বাস করে না । তবু এ নির্জন রাতে কেন যেন ওর শরীরে কাটা দিয়ে যায় । গাড়ির গতি ঘন্টায় ৬০ রাখে কামাল । মনে মনে ঠিক করে কোন অবস্থাতেই গাড়ির গতি ৬০কি.মি: এর উপড় নেবে না । কামালের শশুরই ছিল ওর ওস্তাদ । সে শিখিয়েছে রাতের বেলা রাস্তা ঘাট যতোই ফাঁকা হোক না কেন একটা নিদিষ্ট গতিতে গাড়ী চালালে কোন এক্সিডেন্ট হয় না । কামাল কথাটা বিশ্বাস করে । তাই আগে বাগে মনে মনে গাড়ির গতি ঠিক করে নেয় ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার ।সংসদ ভবন এর সামনে আসতেই বৃষ্টি শুরু হলো । কামাল মনে মনে বলে- বৃষ্টি হবার আর সময় পেল না । কামাল গাড়ীর গতি আরো কমিয়ে আনে । আসাদ গেটে আড়ং এর সামনে আসতেই সিগনাল পরে গেল । কামাল একবার ভাবলো টান দিয়ে চলে যাবে কিনা ? কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো; না । অস্থির হবার কিছু নাই ।
ও গাড়ী থামিয়ে গ্রীন বাতির জন্য অপেক্ষা করে । রাস্তা প্রায় ফাঁকা । কোন জন মানব নেই । ডানে বামে তাকালে ওর কেমন একটা গা ছমছম করে উঠে । দুর ! যতোসব ফালতু চিন্তা ভাবনা । এক কিলোও আসতে পারলাম না আর ভুতের চিন্তা পেয়ে বসেছে । নিজেক নিজেই সান্তনা দেয় কামাল । হঠাৎ বাম পাশের জানলা দিয়ে একটা মুখ উকি দিতে চমকে উঠে চিৎকার করে কামাল কে ? কে ?
জানালায় দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে আছে এক বুড়া । মাথায় এলোমেলে সাদা চুল । দু’হাত দিয়ে জানালার কাঁচ চেপে আছে । দাঁত গুলোও কেমন ফাঁক ফাঁক । লোকটা বলে উঠে- দে ; দে; টাকা দে । ভাত খামু টাকা দে ।
মেজাজ খারাপ হয়ে যায় কামালের । মনে হয় নাইমা দুইটা চড় মারে । হারমজাদা ভিক্ষা চাওনের আর কোন সময় পায় না । মর যাইয়া । ও শার্ট ফাঁক করে বুকে থুতু দেয় ।
মনে মনে গজগজ করলেও বুক পকেট হাতরে পাঁচ টাকার একটা নোট বেড় করে লোকটার দিকে বাড়িয়ে ধরে । লোকটা টাকা না নিয়ে বলে -ভাগ । ভাগ । তাড়াতাড়ি ভাগ ।
কথার আগা মাথা বুঝতে পারে না ও । কামালের মনে করে হয়তো পাগল- টাগল হইবো । ঠিক এই সময় ওর পেছনের ছোট জানলায় টোকা দেবার শব্দ হয় । কামাল ওর ঠিক পিঠ লাগোয়া যে জানালাটা সেটা একটু ফাঁক করে ও ০পেছনে না তাকিয়েই বলে- জ্বি বলেন ?
-কি হয়েছে ? পেছন থেকে তিন জনের একজন জিজ্ঞাসা করে ।
-না কিছুনা ।
সিগনাল ছেড়ে দেওয়ায় কামাল গাড়ী টানদেয় । কামাল বাম পাশের মিররে তাকিয়ে বুড়োটাকে আর দেখতে পায় না । মনে মনে ভাবে আরে গেলো কোথায় ? ও একটু সামনে ঝুকে ফুটপাতটা দেখতে চেষ্টা করে ;কিন্তু বুড়োকে আর দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হয় ও ; তারপর ফার্মগেটের দিকে টার্ন্ নেয় ।
পেছন থেকে ফিস ফিস করে কথা বলার শব্দ কানে আসে কামালের । এই নিরবতায় তাতে ও কিছুটা সাহস পায় কামাল । মাঝে মাঝে দু’একটা গাড়ি শো শো করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে । রাতে রাস্তায় বেশির ভাগ ট্রাকই চলে । দানবের মতো ট্রাকগুলি ঘোত ঘোত শব্দ করে চলে যায় । সায়দাবাদ ; যাত্রাবাড়ি হয়ে কামাল গাড়ি চালাতে থাকে শনির আখড়া দিয়ে কুমিল্লার দিকে । এ রাস্তাটা ওর বেশ পরিচিত । একটানা বৃষ্টি হচ্ছে । মনে হয়ে আজ সারা রাতই হবে । মাঝে মাঝে বিকট শব্দে বিদ্যুত চমকাচ্ছে । শীত; শীত একটা ভাব চলে এসেছে । কামাল পানির বোতল খুলে পানি খায় । আশে পাশের দোকান পাট সব বন্ধ । আজ মনে হচ্ছে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও কম । পেছন থেকে আবারও টুক টুক করে শব্দ হয় ।
- জ্বি বলেন ? কামাল মাথাটা একটু পেছনে নিয়ে বলে ।
-আমরা একটু নামবো ? এক জন বলে । কামাল অবাক হয় ।
-এখানে ?
-জ্বি । আপনি কি একটু থামেন ।
-মনে হয় দাউদকান্দি এসে পরেছি । সেখানে থামলে হতো না ?
-না । সামনের বড় গাছটার কাছে থামুন । পেছন থেকে অন্য একটি কন্ঠ বলে উঠে । কথাটা আদেশেয মতো শুনার ওর কাছে । কামাল এ্যম্বুলেন্সটা রাস্তার পাশে একটা বড় গাছের গা ঘেষে দাঁড় করিয়ে দেয় । পেছনের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ও জানালাটা দিয়ে পেছনে তাকায় । আধো আলোয় যা দেখতে পায় তাতে কামাল এর মাথা ঘুরে উঠে । সিটের উপর মৃত ব্যক্তি বসে আছে । শুধু বসেই নেই ; হাত নেড়ে নেড়ে কি যেনো বলছে । ও প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়ে যায় । কামাল পেছন থেকে চোখ সরিয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখতে চেষ্টা করে । সামনে তাকালে দু’ছায়া দেখতে পায় ও । কোন শরীর নেই । শুধু বোঝা যাচ্ছে দেহের অস্তিত্ব । বাতাসে ভেসে ভেসে ছায়া দু’কামালের দিকেই আসছে । ভয়ে ওর জান বের হয়ে যাবার জোগার । মনে হচ্ছে মরে যাবে । নিজেকে সিটের সঙ্গে চেপে রাখে ও। মনে হচ্ছে নিজেকে সিটের ভেতর ডুকিয়ে ফেলতে পারলে ভয় কিছুটা কমে যেতো । মনে মনে আল্লাহ্ ; আল্লাহ্ করতে থাকে । ছায়া দু’টো ওর পাশ দিয়ে পেছনে চলে যায় । পেছন থেকে হঠাৎ হাসির শব্দ ভেসে আসে । কামাল সাহস সঞ্চয় করে আবার পেছনে তাকায় ।
লাশটা গাড়ি থেকে নেমে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে । শরীরে জড়ানো মুদ্দারের কাপড় এলোমেলো ঝুলে আছে । লোকটার হাতে সাদা কাপরের একটা পুটলির মতো কিছু । দু’জন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে লোকটার ঠিক সামনে । একজন পুটুলিটি একটু ফাঁক করেতেই কামাল একটি শিশুর মাথা দেখতে পায় ।
লোকটা পুটুলিটা গাড়ির ভেতরে ছুরে মারে । প্রায় সাথে সাথে হুরমুর করে সবাই গাড়িতে উঠে পরে গাড়িতে। কামালের শরীর শক্ত হয়ে গেছে । একবার ভাবলো গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেবে কিনা । কিন্তু কোথায় যাবে ? তার চেয়ে ভাল কিছু না দেখার ভান করে থাকলে হয়তো জানে বেচে যাওয়া যাবে । ও মনে মনে প্রার্থনা করে আল্লাহ্ বাঁচাও । পেছন থেকে টোকা দেবার শব্দ আসতেই কামাল চমকে উঠে - গাড়ি চালান । ভারী এটা কন্ঠ বলে । কামাল চাবিতে হাত দিতেই গাড়ি স্টাট হয়ে যায় । কামালের মাথা কাজ করছে না । গাড়ি রাস্তায় উঠার সময় সাইড মিররে দেখতে পায় ছায়া দু’টো এখনও দাঁড়িয়ে আছে । হাতে ধরে আছে সাদা মতো দু’টো পুটুলি । এখন আর বৃষ্টি পড়ছে না ; তবে মাঝে মাঝে বিদ্যূত চমকাচ্ছে । মেইন রাস্তা ধরে গাড়ি চালাচ্ছে কামাল । ও চালাচ্ছে না বলে গাড়ি নিজে নিজে চলছে বললেই ভাল শুনায় । কেননা এই মুর্হুতে গাড়ির উপর ওর কোন কন্টোল নেই । ও শুধু চুপচাপ বসে আছে । গাড়ি নিজে নিজে চলছে । পেছন থেকে চুক চুক শব্দ ভেসে আসছে । কামাল নিজেকে সামলে সাহস সঞ্চয় করে আবার পেছনে তাকায় । দেখতে পায় দু’জন করে দুপাশে বসে সবাই সামনের দিকে ঝুকে বাচ্চাটাকে খাচ্ছে। দু’জনের হাতে বাচ্চাটার ছেড়া পা ; অন্য দু,জনের হাতে বাচ্চাটার ছেড়া দুটো হাত । বাচ্চার মাথাটা নীচে পড়ে আছে । চোখ দুটো খোলা । কামাল এ সমগ্র শরীর গুলিয়ে উঠে । বমি পেয়ে যায় । কি করবে বুঝতে পারে না । সারা শরীর কাঁপছে । মনে হচ্ছে ও মরে যাবে । সামনে ডান পাশে একটা বাড়ী দেখা যাচ্ছে । বারান্দায় আলো জ্বলছে । কামাল সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্রেক চেপে ধরে । এ্যম্বুলেন্সটি একটা প্রচন্ড ঝাকি খেয়ে থেমে যায় । পেছনে বসে থাকা সবাই ধাক্কা খেয়ে কামাল এর দিকে চলে আসে । পেছন থেকে হালকা একটা কাশির শব্দ শোনা যায় । পুরুষ কন্ঠে কেউ একজন বলে - কি হলো ; কি হলো ? আগে বলেছিলাম তোরা ধৈর্য্য ধর । আমার কথা শুনলি না । এখন হলো তো । ড্রাইবার হারামজাদা সব দেখেছে । ধর হারামজাদাটারে । তারপর আবারও কাশির শব্দ । ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেল । কামালের পেছনের জানালা দিয়ে একটা হাত বেড় হয়ে আসে কামালের দিকে -থামলি কেন চালা চালা । হাতটা থেকে তখনও টপ টপ করে রক্ত পড়ছে । কামাল সামনের দিকে সড়ে এসে পেছনে তাকালে দেখতে পায় শেয়ালের মতো একটা মুখ । চোখ দুটো জ্বলছে । জিহ্বাটা বের হয়ে আছে । কামাল জ্ঞান হারিয়ে সিটের উপর লুটিয়ে পরে ।
পরিশেষ : পরের দিনে ভোরে মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে ফেরার সময় মুসুল্লিরা কামাল কে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে । জ্ঞান ফিরে আসার পর কামাল আর কিছু মনে করতে পারে না । আর ওর এ্যম্বুলেন্সটি থেমে ছিলে রাস্তার পাশের একটি বাড়ীর সামনে । এ্যম্বুলেন্সটির পেছনে একটি সাদা কাপড়ের মোড়ান অবস্থায় পাওয়া যায় একটি বাচ্চা ছেলের দেহের অবশিষ্ট্র অংশ ।

সংগ্রহ করেছেনঃ Nusrat Nahar Tithi (প্রাক্তন অ্যাডমিন)

।। মধ্যরাতের মিষ্টি হাসি ।। (১ম পর্ব)

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, August 28, 2011 at 11:18pm
পৃথিবীর যে বিষয়টা নিয়ে আমি একেবারেই লিখতে পারিনা তা হচ্ছে ভূত। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে ভূত-টুত বিশ্বাস করা চিরকালই হারাম ছিল। আর আমার কথা হচ্ছে, যে জিনিসটা জীবনে দেখিইনি এবং যা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই, তা সম্বন্ধে আবার লিখে কিভাবে? মাঝখানে কিছুদিন অবশ্য চেষ্টা করেছিলাম, লেখার শেষমেষ দেখা গেল ওই ভাঁটার মতো চোখ, মূলার মতো দাঁত, পচা সিঙাড়ার মতো নাক, বিরাট বিরাট কান আর শনের মতো চুলওয়ালা জন্তুবিশেষ জানালার পাশ থেকে কিংবা খাটের নিচ থেকে উঁকি দিচ্ছে। নামও দেখা গেল মাথা থেকে ওইরকমই বের হচ্ছে, ‘মামদো ভূত,’ ‘স্কন্ধকাটা,’ ‘বাঁশভূত, ‘মাছভূত’ ইত্যাদি ইত্যাদি। নতুন কিছুই খুঁজে পাচ্ছিনা। বরং সবগুলো গল্পই বিশ্রী ধরনের রম্য হয়ে যাচ্ছে। একবার শাকচুন্নি পরিবার নিয়ে লেখা একটা ভূতের গল্প বিরাট উৎসাহ নিয়ে ম্যাগাজিনে পাঠিয়েছিলাম, দেখি তারা রম্য নামে ছাপিয়ে দিয়েছে। তাই বিরক্ত হয়ে ছেড়েই দিয়েছি ভূতের গল্প লেখা। যাই হোক, আমার রম্যরূপী ভূতূড়ে লেখাটাই ব্লগে দেব বলে দিনকয়েক আগে লিখে শেষ করছিলাম, এমন সময় ঘটল কান্ডটা। সে এমনই কাণ্ড, যার কাছে আমার অখাদ্য সে গল্প তুচ্ছ তো বটেই, পান করারও অযোগ্য বলা যায়।
আইডিয়াটা পেয়েছিলাম আমার দাদীর কাছে অনেক আগে শোনা এক কাহিনী থেকে। কাহিনী আমার ছোটকাকাকে নিয়ে, যিনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন যুবক। একটা মাদ্রাসায় পড়াতেন, কালো চাপদাড়িতে তার চেহারায় আলাদা একটা নূরানী ভাব চলে এসেছিল। তো ঘটনা হল, কাকা একবার গভীর রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠোন পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে গিয়েছেন, এমন সময় নারী কন্ঠে নিজের ডাক শুনতে পেলেন। যতোটা অবাক হওয়ার কথা ততোটা হলেন না, কারণ তিনি জানেন এটা হচ্ছে মেয়ে জ্বিন। জ্বিনদের কাজই হচ্ছে সুন্দর সুন্দর মানুষদের বিরক্ত করা। আমাদের সমাজে তো ইভটিজিং প্রচলিত, জ্বিনেরা ইভটিজিং-অ্যাডামটিজিং দুটোতেই অভ্যস্ত। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল যখন সেই মিস জ্বিন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। শুনে তিনি ঠায় দুই মিনিট তাঁর সামনের সাদা ইয়া লম্বা পর্দার মতো ‘জিনিস’টার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, তারপর গোঁ গোঁ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। আর মিস জ্বিন তার প্রপোজালের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে রেগেমেগে কাকাকে এমনই থাপ্পড় দিল যে তাঁর চাপদাড়ির শেপ বদল হয়ে গেল, এমন কি ডান গালে পার্মানেন্টলি দাগ কালো ক্ষত পর্যন্ত পড়ে গেল। সে ক্ষত নাকি আবার অমাবস্যার রাতে কাকার কাছে ভিজে ভিজে লাগত, তিনি বলতেন জ্বিনটা নাকি তাঁর জন্যে কান্নাকাটি করছে। পরে তিনি মাঝে মাঝেই উদাস গলায় বলতেন, ‘অজ্ঞান হওয়া উচিত হয়নাই। বিয়া কইরা ফালাইলেই পারতাম। জ্বিনও আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি, তাদের বিয়া করলে পাপ নাই। বরং অবলা এক নারী জ্বিন বড়ই খুশি হইত।‘ তাহলে কেন তখন বিয়ে করেননি, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন কেন জিজ্ঞেস করলেই অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলতেন, ‘মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি নাই নাকি? বাচ্চাটা কিরাম হবে ভাইবা দেখছ?’ এবং কাকার সেই দাগের জন্যেই পরে তাঁর বিয়ের সময় কনে পেতে জান বের হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাকে ভিত্তি ধরে সেই গল্প ফাঁদলাম। পার্থক্য হচ্ছে কাকার জন্যে ফিদা হওয়া নায়িকা ছিল জাতে জ্বিন, আর আমার গল্পের নায়িকা পরমাসুন্দরী এক শাকচুন্নি। সে এতোই সুন্দরী যে, সে যে শ্যাওড়া গাছে থাকে সে শ্যাওড়া গাছই আলোকিত হয়ে যায়।
এখানে বলা দরকার, আমার দৃষ্টিতে ভূতেদের সবকিছুই হচ্ছে মানুষের উলটা। তাই আলোকিত মানে আসলে অন্ধকারাচ্ছ হয়ে যাওয়া, যেটা ভূতের খুব পছন্দ। আমাদের সুন্দরীরা হয় টানা টানা চোখের, টিকোলো নাকের, চিকন ঠোঁটের। তাদের চুল হয় রেশমের মতো, গায়ের ত্বক হয় মাখনের মতো। আর শাকচুন্নি সুন্দরীরা হয় সিরিশ কাগজের মতো ত্বক বিশিষ্ট, মুখ তাদের বর্ষার ঘনকালো মেঘের চেয়ে কয়েক পোঁচ কালো! চুল হয় তাদের শনের মতো, জট পাকিয়ে এমন বিতিকিচ্ছিরি হয়ে থাকে যে মনে হয় দড়ির গোছা। আমাদের সুন্দরীদের চুল থেকে স্ট্রবেরী শ্যাম্পুর ঘ্রাণ বের হয়, আর শাকচুন্নিদের চুল থেকে বের হয় পঁচা শ্যাওলার গন্ধ! কিন্তু ভূতদের কাছে এসবই হচ্ছে রূপের লক্ষণ। যে শাকচুন্নির চুলে যতো জট থাকে, তার চুল হচ্ছে ততো সুন্দর। আমার মাথায় ভূতদের রূপ সম্বন্ধে এমন আজব ধারণা ঢুকল কিভাবে বলা মুশকিল, কিন্তু বিখ্যাত ভূতূড়ে গল্প লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ও শাকচুন্নিদের রূপ(!) এভাবেই বর্ণনা করেছেন! তো, সেই রূপসী শাকচুন্নিকে নিয়েই গল্প লিখেছিলাম, যে কিনা নিজের কুচকুচে কালো রঙে, শনের মতো চুলে আর চুলের অতি উৎকট শ্যাওলা পচা গন্ধ নিয়ে তিতিবিরক্ত। যেখানেই যায়, চুলের প্রশংসা শুনতে শুনতে সে শেষ। সব যুবক ভূতরা হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রাণভরে শ্যাওলার গন্ধ উপভোগ করে। অনেক মাস্তান ধরনের ভূত আবার তার দিকে প্রায়ই ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়। আগে এসবে বিরক্ত হত ংঙ্যুণ্রী (সরি, উচ্চারণ বলতে পারব না!), এখন আর হয়না। সুন্দরীদের জীবনে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়, এই সত্যটা সে মেনে নিয়েছে। এই ংঙ্যুণ্রীকে নিয়েই সে গল্প। সে রাতে খালার বাসায় ছিলাম, গাজিপুর। ঘন্টাখানেক হল কারেন্ট চলে গিয়েছে, আমি গল্পটা শেষ করতে খটাখট টাইপ করে চলেছি ল্যাপটপে। গ্রাম এলাকা, নিশুতি রাতে চারিদিক নিঝুম। প্রায় শেষ করে এনেছি, একটু পরই ভাবছিলাম পোস্ট করব। তো, শেষদিকে যে ভূত ছেলেটির প্রেমে পড়ে ংঙ্যুণ্রী তার কথা লিখছি, এমন সময় হঠাৎ একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। আমি ভূত লেখার জন্যে ‘V’ চাপতেই বাটনটা কী-বোর্ডের ভেতর ঢুকে গেল। আমিতো অবাক! এ কী ব্যাপার! টানাটানি করেও উঠল না। যাই হোক, আবার শিফট চেপে ধরে ‘U’ চাপতেই সেটাও ভেতরে ঢুকে বসে গেল! আমার তো মাথা বনবন করে ঘুরছে। রাত প্রায় দেড়টা, এ কি ভূতূড়ে কাণ্ড! অন্য কী চেপে দেখলাম, কোনটাই আর বসল না। কিন্তু ভূত লিখতে গেলেই অক্ষর দেবে যাচ্ছে। কিন্তু শুধু ‘ভূ’ লিখে লেখা পোস্ট করি কিভাবে! এমনিতেই V আর U দেবে যাওয়ায় খুব অসুবিধা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে একটা ‘ভূ’-এর পাশে গিয়ে ‘T’ চাপলাম। আর যায় কোথায়! চপাৎ করে T-ও দিব্যি নিচে দেবে গেল! ঠিক এইসময় অসম্ভব মিষ্টি, খিলখিলে একটা হাসি শুনতে পেলাম। এমন সুন্দর হাসি আমি জীবনে শুনিনি!
অজ্ঞান এখন হব, নাকি ভূতের চেহারাটা দেখেই হব ভাবছি, এমন সময় রিনরিনে গলায় কেউ বলল, ‘নামের বানান ভুল করেছ কেন?’ আমি সাথে সাথে অজ্ঞান হওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না। এতো মিষ্টি কণ্ঠ যে ভূতের, তার সামনে আবার অজ্ঞান হয় কিভাবে! বরং মানুষ হিসেবে ভূতের সামনে প্রেস্টিজ রাখা আমার কর্তব্য! ঘরে মোমবাতির মিটিমিটি আলো আর ল্যাপটপের স্ক্রীনের আলো ছাড়া অন্য কোন আলো নেই, এবং সে আলোতে ঘরে কাউকে দেখা গেল না। এ ঘরটা মূল বাড়ি থেকে একটু দূরে, উঠানের শুরুতে। খালারা নিশ্চয়ই অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে, নইলে হাসি শুনেই এগিয়ে আসত। (পরের পর্বে সমাপ্ত)
এমন সময় আবার রিনরিনে কন্ঠটা শোনা গেল, ‘বানান ঠিক করতে বললাম না!’
আমিতো হতভম্ব হয়ে গেলাম, তারমানে সত্যি আমি কারো কথা শুনছি! সারা গা কেমন যেন কেঁপে উঠল। ঘরে কি আসলেই কোন ভূত এসেছে?
‘কথা কানে যায় না? আমার নাম ংঙ্যুণ্রী? এটা কোন নাম হল? লেখ, গায়ত্রী।‘
আমি ধাক্কামতন খেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভূতের নাম গায়ত্রী?’
মনে হল দাঁত খিঁচাল ভূতটা, ‘কেন, আমার নাম গায়ত্রী হলে তোমার অসুবিধা আছে? হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে তোমাদের মাথা গেছে। উনি ভূতেদের নাম দিচ্ছেন হ্রিহ্রিলা, ভোভোয়া। ছি ছি…না জেনে আমাদের এভাবে অপমান করার অর্থ কী?’
‘তু-তু-তুমি হুমায়ুন আহমদের বই পড়?’ তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞাসা করলাম। এবং আবিষ্কার করলাম, হঠাৎ করে ভয়টা কমে গেছে। যে ভূতের নাম গায়ত্রী হয় এবং যে হুমায়ূন আহমদের বই পড়তে পারে, সে নিশ্চয়ই খারাপ হতে পারেনা! শাকচুন্নি সম্বন্ধে অনেক ধারণাই আমাদের ভুল দেখা যায়।
‘আগে পড়তাম, এখন আর ভাল লাগেনা,’ গায়ত্রীর কন্ঠ একটু খুশি খুশি শোনা গেল। তাকে ভুল করে তুমি বলে ডেকে ফেলেছি, সেজন্যেই নাকি! যাই হোক, কিছু যখন বলেনি, তুমি করেই বলা যাক! গায়ত্রী বলল, ‘কয়েকদিন আগে ভূত নিয়ে হুমায়ূন সাহেবের একটা লেখা পড়লাম, “সালাউদ্দিনের মহাবিপদ”। উনি যা ইচ্ছে তাই লিখেছেন। ভূত নাকি ব্যাটারী খায়…কী আশ্চর্য! এতো কিছু থাকতে আমরা ব্যাটারী খাবো কেন? অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড কি খাওয়ার জিনিস?’
খুবই সত্য কথা। কিন্তু এতো দেখি শিক্ষিত শাকচুন্নি, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড পর্যন্ত চেনে! রয়েসয়ে কথা বলতে হবে দেখা যায়। বললাম, ‘তাহলে তোমরা খাও কি?’
‘আমাদের সাথে গাছেদের অনেক মিল আছে। পার্থক্য হচ্ছে আমরা নাইট্রোজেন খাই, তারা কার্বন ডাইঅক্সাইড। এজন্যেই আমাদের শরীর অনেক শীতল থাকে। আমাদের ব্যাপারে এই একটা ধারণাই তোমাদের সত্যি, আমাদের শরীর অনেক ঠাণ্ডা। মাঝে মাঝে তোমাদের কাতুকুতু দিই, তোমরা বল, কি ঠাণ্ডা বাতাস!,' হিহি করে হাসল গায়ত্রী, 'আর আমাদের বেশি কিছু ত্যাগ করতে হয়না, প্রয়োজনীয় পরিমাণ নাইট্রোজেন গ্রহণ করে বাকিটা বের করে দেই!’
আমি মুগ্ধ হলাম। কি সুন্দর ব্যবস্থা! বাথরুমের ঝামেলাটা পর্যন্ত নেই!
ল্যাপটপে ংঙ্যুণ্রী নামটা শুদ্ধ করে গায়ত্রী করতে করতে বললাম, ‘তা গায়ত্রী, আমার কী-বোর্ডের বাটনের এই অবস্থা নিশ্চয়ই তুমি করেছ?’
খিলখিল করে হেসে উঠল গায়ত্রী। আমি আবারও মুগ্ধ হয়ে সে হাসি শুনলাম। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি করেছি। এতো ভুলে ভরা লেখা লিখলে হবে কিভাবে? তুমি রীতিমতো আমার জীবন নিয়েই লিখেছ, কিন্তু আমার এ কি বর্ণনা দিয়েছ! আমার চুল থেকে পঁচা শ্যাওলার গন্ধ বের হয়? আমার দাঁত মাদ্রাজি মুলার মতো? আমার স্কিন সিরিশ কাগজের মতো?,’ শাকচুন্নি মনে হচ্ছে রেগে গেল, ‘তুমি…তুমি জানো আমি স্কিনের জন্যে কতো কষ্ট করি?’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘তোমার সাথে জীবনকাহিনী মিলে গিয়েছে নাকি? আমিতো ভেবেছি আমার গল্পের নায়িকাও শাকচুন্নি দেখেই তুমি গায়ত্রী নাম রাখতে বলছ। তারমানে তুমিও ংঙ্যুণ্রীর মতো সুন্দরী?’
‘আর বোলোনা,’ বিষণ্ণ শোনাল গায়ত্রীর কন্ঠ, ‘এই জীবন আর ভাল লাগেনা। ফাজিল ছোকরাদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি! গত একমাসেই বিয়ের প্রস্তাব এসেছে সাতটা। কিন্তু কাউকেই আমার পছন্দ হয়না। সবাই শুধু আমার রূপটাই দেখে, কেউ আমার ভেতরটা দেখে না। গত সপ্তাহে এক ছেলে দেখতে এল, আমার সম্বন্ধে কিছুই জিজ্ঞেস করল না। শুধু বলে তোমার দাঁতটা দেখি, চুলটা দেখি,’ গলা ধরে এল গায়ত্রীর, 'এমনভাবে আমার দিকে তাকায় যেন আমাকে গিলে খাবে!'
‘আহাহা,’ বললাম, ‘দুঃখ কোরোনা গায়ত্রী। কেউ না কেউ অবশ্যই একদিন তোমাকে বুঝবে।‘
উজ্জ্বল শোনাল গায়ত্রীর কন্ঠ, ‘হ্যাঁ, একজন বুঝেছে তো বটেই!’
‘এইতো বললাম না, কেউ না কেউ অবশ্যই তোমাকে বুঝবে! তা কে সেই সৌভাগ্যবান ভূত? নাম কি?’
‘সেতো ভূত না,’ কেমন আদুরে কন্ঠে বলল গায়ত্রী, ‘সে হচ্ছে জ্বলজ্যান্ত মানুষ! আমার সামনেই বসে আছে!’
‘তো-তো-তোমার সামনে! মা-মা-মানে আ-আ-আমি???’
‘হ্যাঁ। তুমি ছাড়া আর কে? ইস, কি সুন্দর করে আমাকে নিয়ে লিখেছ! তুমি ছাড়া আমাকে আর কে এভাবে বুঝবে, বল?’
এই সেরেছে! আমি দাঁতে দাঁত চেপে চেষ্টা করতে থাকলাম অজ্ঞান না হওয়ার। অনেক কষ্ট করে বেশ ফ্রেঞ্চকাটটা বাগিয়ে এনেছি, গায়ত্রীর চড় খেয়ে সেটার শেপ চেঞ্জ করার কোন মানে হয়না।
আমি কোনমতে বললাম, ‘কি-কিন্তু আমি, মানে আমার কি ক-করার আছে? আ-আমি কি করতে পারি তোমার জন্যে?’
‘আশ্চর্য! তুমি আমাকে বিয়ে করবে!’
নাহ, মনে হচ্ছে পারা গেল না! অজ্ঞান হয়ে যাবোই! আর গায়ত্রী যেরকম ভূত, মনে হচ্ছে ঘাড় মটকাতে মোটেই দ্বিধা করবে না। তাও ভাল...অবশ্য শ্যাওলার গন্ধওয়ালা কোন শাকচুন্নি সাথে সংসার করার চেয়ে কবরের নিচে শুয়ে থাকা ঢের আরামের!
হাঁটুর কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল আমার। শ্রাবণীর মুখটা মনে পড়ল। হায়…ওকে কি আর এ জীবনে বিয়ে করা হবেনা! আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলে কি হবে, পাঁচ বছরের প্রেম আমাদের। একমাস আগে বাগদান হয়ে গেছে। আচ্ছা, মারা যাবার আগে কি ওকে একটা ফোনও দিতে পারব না?’
‘তুমি ভয় পেও না সোনা,’ মিষ্টি করে হাসল মনে হল গায়ত্রী, ‘আমার চুলে শ্যাওলার গন্ধও নেই, রঙও আলকাতরার মতো না। আমাদের সবকিছুতেই টক টক গন্ধ। আর আমাদের তো দেখা যায়না, তবে সংসারের প্রয়োজনে একটা রূপ ধারণ করতে হবেই। আমিতো এতোক্ষণ হাওয়া হয়ে তোমার সাথে কথা বলছিলাম। চোখ বন্ধ কর, এবার আমি আসল রূপে তোমার সামনে হাজির হব!’
‘ওহ মাই গড!’ বিড়বিড় করে চোখ বন্ধ করলাম। আচ্ছা, আর যদি না খুলি গায়ত্রী কি খুব রাগ করবে?
‘চোখ খোল।'
কি আশ্চর্য, এরই মধ্যে হয়ে গেল? আমি একটা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে চোখ খুললাম।
একি! এতো মানুষই! এরকম হলেতো বিয়েও করে ফেলা যায়, মন্দ হয়না! সুন্দর মুখ, এমনকি একটা চেনা আদলও আছে! সুন্দর চুল, সুন্দর চোখ, আর…আর…
‘তো-তো-তোমার হা-হা-হাত…,’ দাঁতকপাটি সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম।
‘ওহ! তুমি এটাই জানোনা! তোমাদের সাথে আমাদের মূল পার্থক্য হচ্ছে আমাদের হাত আর পায়ের গোড়ালি থাকে পেছন দিকে। মানে তোমরা হাঁটো সামনের দিকে, আর আমরা পেছন দিকে…’
আমার গায়ত্রীর পায়ের দিকে চোখ গেল। নূপূর পরা পা, কিন্তু…কিন্তু…গোড়ালি সামনের দিকে…পায়ের পাতা পেছন দিকে…
নিজের দাঁতকপাটির শব্দে নিজেরই কানে তালা লেগে যাচ্ছে। মূর্ছা যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে শুনতে পেলাম, ‘হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া!!’
*
ল্যাপটপের বাটন উঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি, কিছুতেই উঠছেনা, মেজাজ খিঁচড়ে আছে। এমনসময় রুনা ঘরে ঢুকল, ‘ভাইয়া…’
‘আরে রাখ তোর ভাইয়া! খুব তো চাপতে চাপতে বাটন ডাবিয়ে ফেলেছিস, এখন উঠাবো কিভাবে?’ চেঁচিয়ে বললাম।
হিহি করে হাসতে লাগল রুনা, আমার গা জ্বলে গেল। বললাম, ‘আমি কিছু ঠিকভাবে লিখতে পারছিনা, আর হাসতে হাসতে জান শেষ তোদের! জয়া, বিণু, নদীও হয়েছে যেমন! ভূতের ভয় দেখাবি ভাল কথা, আমার কী-বোর্ডটা নষ্ট করার কি দরকার ছিল?’
‘আস্তে, আস্তে,’ বলতে বলতে যে ঘরে ঢুকল, তাকে দেখে তড়াক করে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নামলাম।
‘তুমি!’
‘চিৎকার করছ কেন! আমিও কি ভূতের ভয় দেখিয়েছি নাকি?’ শ্রাবণী বলল।
‘কিন্তু তুমি এখানে কি করছ! আমার খালার বাড়ি এটা…’
‘তোমাদের গ্রামের বাড়িতে আমার আসা নিষেধ? তোমার মিমি খালা আমার চাচি, দূর সম্পর্কের চাচি, ভুলে গেছ?'
থতমত খেলাম। বললাম, ‘না না, তা না…কিন্তু…’
‘কিসের কিন্তু! এই ধরো,’ কাঁধের ঝোলানো ব্যাগটা নিচে নামালো শ্রাবণী, ‘তোমার নতুন ল্যাপটপ!’
‘নতুন ল্যাপটপ মানে!’ চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করলাম।
‘নতুন ল্যাপটপ মানে নতুন ল্যাপটপ,’ বিরক্ত হয়ে বলল শ্রাবণী, ‘দশ বছর আগের এটা দিয়ে আর কতোদিন চালাবে? এই বার্থডে তে তাই আমরা সবাই টাকা দিয়ে তোমার জন্যে নতুন ল্যাপটপ কিনে এনেছি! ব্যাচেলর হিসেবে এটাই মনে কর তোমার শেষ বার্থডে গিফট!'
আমি আনন্দে বিকট এক চিৎকারে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিলাম, ঠিক সেই সময় ইলেকট্রিক শক খেয়ে যেন পিছিয়ে এলাম। হায় খোদা...একি দেখছি আমি! ঠকঠক যে শব্দটা হচ্ছে, সেটা কি আমার হাঁটু বাড়ি খাবার শব্দ?
শ্রাবণী, রুনা সবার পায়ের গোড়ালি সামনের দিকে…
গোঁ গোঁ করে করতে করতে অজ্ঞান হওয়ার আগে দিয়ে আবারও রুনার কন্ঠ শুনলাম, ‘আরে আপু! তুমি জুতোটা এখনো বদলাওনি! আরে আরে...আমিওতো বদলাইনি!'
'রুনা, তাড়াতড়ি এক জগ পানি নিয়ে এসো!,' দৌড়ে আমার কাছে চলে এল শ্রাবণী, 'ও আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে!'
রুনার যাওয়ার শব্দ শুনতেই চোখে মেলে শ্রাবণীর মুখটা আমার উপর ঝুঁকে থাকতে দেখলাম। ও কিছু বোঝার আগেই টপাটপ ওর মুখে কয়েকটা চুমু খেয়ে বললাম, 'থ্যাঙ্কস সো মাচ, শ্রাবণী! রুনা ঘর থেকে না গেলে কিভাবে এই কাজটা করতাম বল তো! এতোবড় আমি প্রেজেন্ট তুমি আমাকে দিয়েছ, আমি যদি এতোটুকুও না দিই...' বলে চোখ টিপলাম, 'সামলাতে পারলাম না!'
'যাও!,' চোখমুখ লাল করে বলল শ্রাবণী, 'এরই জন্যে অজ্ঞান! যদি কেউ দেখে ফেলত...'
কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই দরজার কাছ থেকে রুনা, বিণুর চিৎকার শোনা গেল, 'দেখে ফেলেছি! দেখে ফেলেছি!' নদী আরও এক ডিগ্রী উপরে, 'চল চল, খালুর কাছে চল! বিয়ের দিন আরও দু সপ্তাহ আগাতে হবে...এরা অতদিন অপেক্ষা করতে পারবেনা!'
হতভম্ব হয়ে আমি শ্রাবণীর দিকে তাকালাম। আচ্ছা...শ্রাবণী কি আমার চেয়ে বেশি লাল হয়ে গিয়েছে?? একি! এবার ভূতের গল্প লিখতে গিয়ে রোমাণ্টিক গল্প হয়ে গেল দেখি! যথারীতি ব্যর্থ চেষ্টা...নাহ, আর চেষ্টাই করা যাবে না!! একটি সংগৃহীত গল্প।।

একটি সংগৃহীত গল্প।।

অন্ধকারে একা - By ত্রিনিত্রি

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Sunday, August 28, 2011 at 9:58pm
এক
প্যাথোলজী ল্যাবে মাইক্রোস্কোপ আর স্লাইড নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে জিনান ঘড়ির দিকে তাকালো। আড়াইটায় ক্লাস শেষ হবার কথা, পৌনে তিনটা বেজে গেছে। আজকেও ক্যান্টিনে কিছু পাওয়া যাবে না। অথচ স্যাররা কোনদিন ব্যাপারটা বুঝবেন না। শেষ মূহুর্তে নতুন কিছু স্লাইড ধরিয়ে দেবেনই, যার মাথা মুন্ডু কিছুই বোঝা যায় না। মেডিকেলে পড়তে পড়তে নাকি মানুষের স্বাভাবিক বোধ অনেক লোপ পায়, কে জানে আর ১০ বছর পর জিনানের কি অবস্থা হবে। আজকে নীলক্ষেত যেতেই হবে, মাইক্রোবায়লজীর একটি বই কিনতে। বিকেলে আবার তিথির রুমে আম উৎসব হবার কথা। আর এখন বাজে পৌনে তিনটা, এখনো স্যারের ক্লাস শেষ করার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রাগে জিনানের স্লাইডগুলি মটমট করে ভাঙতে ইচ্ছে হচ্ছে। পাশে অনিমেষ মনোযোগ সহকারে স্লাইড গুলি যেন গিলে খাচ্ছে। জিনান তাকাতেই এক গাল হেসে বললো, “আইটেমগুলি কিন্তু এবারের কার্ডে ছোট ছোট। আমরা চাইলে এক সাথে তিন/চারটা করে পরীক্ষা দিতে পারি”। মাইক্রোস্কোপটা তুলে অনিমেষের মাথায় একটা বাড়ি দেয়ার দুর্দান্ত ইচ্ছা জিনান অনেক কষ্টে চাপা দিলো। আর বেশীক্ষন থাকলে কি হতো বলা যায় না, কিন্তু স্যার দয়া করে তিনটার সময় ক্লাস শেষ করে দিলেন।
খাতা বই নিয়ে দৌড় দিলো জিনান। হোস্টেলের গেটে এসে মিলির সাথে দেখা। একই সাথে এক প্লেট ফুচকা আর আরেক প্লেট চটপটি খাচ্ছে। কোন মানে হয়?
“ওই, একসাথে দুই প্লেট খাচ্ছিস কেন? দিন দিন যে মোটা হচ্ছিস, কোন খেয়াল আছে?”
“তা তুই না খেয়ে কি এমন শুকনা হাড়জিরেজিরে হয়েছিস শুনি?” মিলি ভেংচি দিলো।
“নীলক্ষেত যাবি?”
“নীলক্ষেতের আমভর্তা কিনে দিলে যাবো”। খিক খিক করে হাসি দিলো মিলি। উফফ, কেন যে একটা বয়ফ্রেন্ড নেই! জিনান সখেদে ভাবলো। সোনালীর কত আরাম! পরীক্ষার আগের রাতে একটা ফোন দিলেই হয়, রুশো দৌড়ে আসবে সব নোট ফটোকপি করে নিয়ে। ক্যান্টিন যথারীতি বন্ধ। দোকান থেকে একটা লিচি জুস কিনে স্যারকে বকা দিতে দিতে মিলির সাথে নীলক্ষেত রওনা দিলো জিনান।
বিকেল ৫টায় তিথির রুমে উপস্থিত হবার কথা। ৬টার সময় গিয়ে জিনান পেলো মাত্র ৪ জনকে।
“কি রে? আম উৎসব তো মাঠে মারা গেলো। এত কম কেন মানুষ?”
“আর বলিস না, কাল যে শুক্রবার সেতো মনেই ছিল না। সব পাবলিক বাসায় গেছে”। রাগ করে পারভীন উত্তর দিলো।
“আর যাদের ঢাকায় বাসা নেই তারা মামা-খালার বাসায় গেছে”।– কামরুন যোগ করলো।
“চমৎকার! তাহলে শুধু আমরা ৫ জনই কি বলিস? টেনশন লেনে কা নেই! এমন মজা করবো যে সবাই রাতে কান্না কাটি করবে! এখনি আম ভর্তার প্রতি স্টেপের ফটো তুলে ফেসবুকে আপ্লোডাইতেছি, খাড়া”।
“তোর সাথে না মিলি ছিল? সে কই গেলো?”- তিথি জিজ্ঞেস করলো।
“সে গেছে ডেটিং মারতে, শর্মা হাউজে। উহার বয়ফ্রেন্ড নাকি উহাকে দেখে নাই প্রায় ৩৬ ঘন্টা হইয়াছিলো, আর অপেক্ষা করিতে পারে নাই”। ভেংচি দিয়ে জিনান জানালো।
মুখে যাই বলুক, আম উৎসব মোটেই জমলো না। একটু পর সাচী বিদায় নিলো, তার নাকি মাথা ব্যথা। আসল কথা হচ্ছে প্রতিদিন পড়াশোনা না করলেই তার মাথা ব্যথা হয়। কিন্তু সবার সামনে বললে এখন টিজ খাবার ব্যাপক সম্ভাবনা, তাই এই কথা। এবারে পারভীন সিনেমা দেখার প্রস্তাব দিলো। সবাই ব্যাপক উৎসাহে রাজী। প্রায়ই পারভীনের রুমে সিনেমার আসর বসে। কিন্তু কি মুভি? পারভীন জানালো, গ্রাজের দুইখানা পার্ট টাটকা পড়ে আছে, সে কিসের জন্য? গ্রাজের কথায় জিনান একটু থমকালো, সে মোটেই ভূতের মুভি দেখতে পারে না। একবার দেখলে সাতদিনের জন্য তার অবস্থা শেষ। প্রতিটা দৃশ্যে চিৎকার দিয়ে পরিবেশ আরো ভয়াবহ করা তার জন্মগত স্বভাব। একারনেই তার বন্ধুরা তাকে ছাড়া ভূতের মুভি দেখতেই চায় না, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তাদের নাকি ভালো লাগে না। কিন্তু আজকে পরিস্থিতি ভিন্ন। জিনান হলের যে ফ্লোরে থাকে সেখানে সে, কুলসুম আর তৃষা ছাড়া বাকি সব জুনিয়র। ফার্স্ট প্রফ শেষ, তাই পুরো ফ্লোর ফাঁকা। তার নীচের ফ্লোরের ৮০ ভাগ আপু প্রায় ২০ দিন ধরেই নেই, কারণ তাদের ফাইনাল প্রফ শেষ। এখন কি মুভি দেখা ঠিক হবে?
পারভীন তার মনের কথা বুঝেই যেন বললো, “ওহ হো! ভুলেই গেছি! আমাদের জিনান তো আবার ভূতের মুভি দেখলে ১০ দিন একা ঘুমাতে পারে না। আচ্ছা আচ্ছা, চল কোন কার্টুন দেখি”। সাথে সবার সম্মিলিত খিক খিক হাসি। অপমান গিলে জিনান বললো, “তোদের মাথা! দেখলে গ্রাজই দেখবো, চল”। প্রথম পর্ব দেখেই জিনানের অবস্থা খারাপ। কিন্তু মুভির নেশাও সেইরকম, দ্বিতীয় পর্ব না দেখে তো উঠা যায় না। মুভি শেষ হতে হতে রাত ২টা। কামরুন বললো, “ওই তোর ফ্লোরে তো কেউই নাই রে, তৃষা আর কুলসুম ও গেছে বাড়ি, তুই আমার রুমে থাক আজকে রাতে”। “আরে নাহ, রাতে সিমস না খেললে আমার ভালো লাগে না, আবার ল্যাপটপ তোর রুমে আনা আনি, রুমেই যাই। মুভি দেখে ভয় পাওয়ার দিন শেষ”। টি শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে জিনান উত্তর দিলো। তাকে চাপাচাপি করে রুমে না রাখার জন্য পরবর্তীতে জিনান কামরুনকে যে কতবার দোষারোপ করেছে তার হিসেব নেই।

দুই
গুনগুন করে একটা সুর ভাঁজতে ভাঁজতে জিনান উপরে উঠে এলো। পুরো ফ্লোর কেমন যেন নিস্তব্ধ। সিঁড়িতে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো সে। আবার দোতালায় ফিরে যাবে কিনা – ডিসিশন নিতে পারছে না। “দুত্তোরি, নিকুচি করেছি ভয়ের”- বলে সে সিঁড়ি বেয়ে উঠলো। করিডোরের এই মাথা থেকে ওই মাথা পুরোটাতে যতগুলি লাইট ছিল, সব জ্বালিয়ে দিলো। ফ্লোরের কমলি বিড়াল আরাম করে ঘুমাচ্ছিল, লাইট জ্বালিয়ে ধাপধুপ শব্দ হওয়ায় বিরক্ত হয়ে নীচে চলে গেলো। রুমে ঢুকে জিনান ভাবলো আজ বরং লাইট জ্বালিয়েই ঘুমাই। ল্যাপটপে জোরে প্রিয় নিকেল ব্যাকসের গান ছেড়ে শুয়ে পড়লো। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না, ঘুম ভাঙলো শোঁ শোঁ আওয়াজে। ঘুম ভেঙে প্রথমে জিনান কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। প্রথম কথা, রুম অন্ধকার কেন? সে নিশ্চিত জানে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছে। বেশী ভাবাভাবির অবকাশ নেই, খোলা জানালা দিয়ে পাগলের মত বাতাস ঢুকছে। জিনান বড় বড় করে ঢোক গিলতে লাগলো। একটু পর অন্ধকার টা সয়ে এলে করিডোর থেকে আসা আবছা আলোয় সে দেখলো, রুমের কোন অবস্থা নাই। টেবিল থেকে খাতা বই উড়ে, প্রাকটিক্যাল খাতার খোলা পেজ দিয়ে রুম সয়লাব। বাইরে প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়েছে। লাফিয়ে উঠে জিনান সুইচ জ্বালাতে গেলো। সুইচ তো জ্বালানোই আছে, তার মানে লাইট ফিউজ হয়েছে। আতংকে জিনানের মনে হলো, আবছা আলো মাখা এই আঁধার এখনি তার গলা চেপে ধরবে। জোর করে সে নিজেকে স্বান্তনা দিলো, “এটা ঝড়, প্রায়ই হয়। মাথা ঠান্ডা করো, কিচ্ছু হয়নি। তোমার রুমে আরো লাইট আছে”। দ্বিতীয় টিউবটি জ্বলতে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বাতাসের শব্দে কান ঝালাপালা। জানালা বন্ধ করতে গিয়ে জিনান দেখলো, হলের সামনের গাছ গুলি আজকে যেন পাগল হয়ে গেছে। উন্মত্ত ভাবে শুধু এদিক সেদিক পাতা দোলাচ্ছে, কেউ কেউ অবসন্ন ভাবে অস্থির বাতাসের কাছে আত্মসমর্পণ করছে যেন। নারিকেল গাছের পাতা গুলিকে মনে হচ্ছে অসহ্য জোরে শুধু না না বলে যাচ্ছে এক নাগাড়ে। কল্পনার ডাল পালা আকাশ ছোঁয়ার আগেই জিনান সশব্দে জানালা বন্ধ করলো। বাতাসের শব্দ কমলো কই তাতে? করিডোরে যেন অশরীরি আত্মা অসহ্য রাগে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। একটু পর পর ঝন ঝন করে শব্দ হচ্ছে, কেউ যেন ইচ্ছে মত করিডোরে রাখা জিনিস গুলি লাথি মেরে সরিয়ে রাগ কমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে। ক্ষনে ক্ষনে জিনান চমকে উঠতে লাগলো। তার শুভ বুদ্ধি তাকে জানাচ্ছে, করিডোরের শেষ প্রান্ত পুরোটা খোলা হওয়ায় সব বাতাস পাগলের মত ঢুকে এই কান্ড ঘটাচ্ছে। কিন্তু কাঁপুনি থামছে কই? ঠিক সেই সময় শুরু হলো তীক্ষ্ণ কিন্তু টানা একঘেয়ে ক্যাচ ক্যাচ শব্দ। জিনানের মুখ দিয়ে চিৎকার বেড়িয়ে এলো। শব্দটি ঠিক গ্রাজ মুভিতে আত্মা আসার আগে যেমন হয়, তেমন। শব্দ থামছেই না। আতংকে জিনান থর থর করে কাঁপছে। কোনমতে বিছানার পাশে রাখা পানি খেতে শুরু করলো সে, উদ্দেশ্য অ্যাড্রেনালিন রাশের জন্য যে আতংক সে অনুভব করছে তা থামানো। এটা ২০১১ সাল, এবং সে পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ন দেশে এমন একটি বিল্ডিং এ সে আছে, যেখানে না হলেও ৫০/৬০ জন মানুষ আছে।সুতরাং কোন আত্মা এখানে আসবে না। ভাবতে ভাবতেই ঝন ঝন করে কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ, সাথে কান্নার শব্দ। কে যেন ইনিয়ে বিনিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে কাঁদছে। জিনানের হাত থেকে পানির বোতল পড়ে গেলো। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত ঠিক তখন গেলো কারেন্ট। জিনান আর পারলো না, একমনে প্রার্থনা শুরু করলো যাতে সে এখন অজ্ঞান হয়ে যায়। তার হলে কখনোই কারেন্ট যায় না, গত ৬ মাসে একবারো গেছে কিনা সন্দেহ। আজ রাতে কেন অন্ধকার হয়ে গেলো? কান্নার শব্দ বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজটি থামছে, আবার শুরু হচ্ছে।তার মনে হলো এখন অবশ্যি তাকে এই ফ্লোর ছেড়ে যেতে হবে।কিন্তু তার বুকে আর এক বিন্দু সাহস নেই যা দিয়ে দরজার ছিটকিনিটা খোলা যায়। জিনান অন্ধকারে মোবাইলের জন্য হাতড়ানো শুরু করলো। পাওয়া মাত্র কামরুনকে ফোন দেয়া শুরু করলো। বেজেই চললো, ওপাশে কেউ ধরছে না। পারভীনের মোবাইল বন্ধ থাকে জেনেও ফোন দিলো।এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও মহিলা অবিচল ভাবে বললো, “দুঃখিত, এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না”। মোবাইল ছুড়ে ফেলে দিলো ফুঁপিয়ে উঠল জিনান। সাথে সাথে কারেন্ট চলে এলো। আলো আসায় জিনানের মাথা অনেকাংশে ঠান্ডা হলো। কান্নার শব্দ অবশ্যই বিড়ালের। ক্যাচ ক্যাচ শব্দে কোন গ্রাজের আত্মা আসছে না, সেটি অবশ্যই বাথরুমের দরজা। তীব্র বাতাসে এদিক সেদিক যাচ্ছে। এখানে আর কিছুক্ষন থাকলে সে মারা যাবে, তাকে অবশ্যই দোতালায় তার বন্ধু দের কাছে যেতে হবে।

তিন
বেশ কয়েকবার আয়াতুল কুরসি পড়ে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ফেললো জিনান। বাতাসের তান্ডব একবিন্দু মনে হচ্ছে কমেনি, তীব্র বাতাসে পড়ে যাবার মত অবস্থা। কে যেন এসে আবার করিডোরের বাতি গুলি নিভিয়েছে, মাত্র দুইটি আলো কেমন গা ছম ছমে এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কোন দিকে না তাকিয়ে কাঁপা হাতে দরজায় তালা লাগালো জিনান। পিছন ফিরতেই বরফের মত জমে গেলো। সবুজ একজোড়া চোখ। সেকেন্ডের জন্য জিনানের মনে হলো, তাকে এখনি কেউ চেপে ধরবে। চাবিটা হাত থেকে পড়ে শব্দ হতেই “ম্যাও” শব্দে সবুজ চোখ সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। কমলি বিড়াল! চেপে রাখা নিঃশ্বাস টা বের করে নিজেকে গালি দিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো সে। সিঁড়ি ঘরে গিয়ে দেখলো আবছা অন্ধকারে একটা মানুষের অবয়ব সিঁড়ির উপরে বসে আছে। অন্ধকারেও বোঝা যাচ্ছে, মানুষটি হাঁটুর মাঝে মুখ লুকিয়ে বসে আছে, আর মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে। “কে? কে ওখানে?” – নিজের গলার ফ্যাঁসফ্যাঁস আওয়াজে নিজেই চমকালো সে।
কোন উত্তর নেই।
“কে?” – চেঁচিয়ে উঠলো এবার সে।
ধীরে ধীরে মুখ তুললো অবয়ব।
“ওহ! সাচী!উফফফ, তুই? তুই, দোস্ত? দোস্ত আমি অনেক ভয় পাইছি রে! আমার ফ্লোরে আমি ছাড়া কেউ নাই। কি ভয়ংকর ঝড়, দেখ তুই। বিড়াল কেমন করে কাঁদছে দেখ। আমি কামরুনের রুমে যাচ্ছি”। -এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো জিনান থামলো।
সাচী শুধু চেয়ে রইলো। বিদ্যুত চমকানোর আলোয় জিনান দেখলো সাচীর গালে চোখের জল গড়িয়ে পড়ার দাগ।
“দোস্ত তোর কি হইছে? তোর রুম না নীচ তলায়? এত উপরে এসেছিস কি জন্য এই ঝড়ে? কাঁদছিস কেন? রাফি ঠিক আছে?”
সাচীর ছোট ভাই অনেকদিন ধরে হজকিন্স লিম্ফোমার সাথে যুদ্ধ করে চলেছে, জানে জিনান। এই রাতে তার এই ব্যবহারের আর কোন কারন তার মাথায় এলো না।
সাচী কোন কথা না বলে উঠে ছাদের দিকে যেতে লাগলো। জিনান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
“এই? সাচী? কই যাস?”। সাচী উঠতেই থাকলো। জিনান এবারে নিশ্চিত, বাসা থেকে কোন খারাপ খবর এসেছে, সাচীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিকট শব্দে বাজ পড়লো। জিনান চমকে গেলো। নাহ, সাচীকে একা ছাড়া যাবে না। জিনান দৌড় দিলো, সাচী ততক্ষনে ছাদে পৌঁছে গেছে। জিনানের কেমন যেন বোধ হতে থাকলো। কোথাও কোন একটা সমস্যা আছে, সাচী এই ঝড়ের মাঝে ছাদে কেন যাচ্ছে? আর ছাদের দরজা বিকেল ৪টায় প্রতিদিন তালা দেয়া হয়, আজকে খোলা কেন? নাকি সাচীর কাছে চাবি ছিল? যেটা মূলত অসম্ভব।
বাতাসের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। এখন শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ভিজতে ভিজতে জিনান দেখলো সাচী রেলিং এর উপরে উঠে বসেছে। জিনানের এবার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। ছুটে গিয়ে সাচীর হাত ধরলো। উদ্দেশ্য টেনে হলেও সাচীকে রুমে নিয়ে যাবে। হাত ধরা মাত্র জিনানের মনে হলো, সে একটা বরফের চাই ধরেছে। শক খাওয়ার মত করে ছিটকে সরে যেতেই সাচী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো, “ আমি আর নেইরে জিনান, আমি আর নেই। আমি খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছি। অনেক বড় একটা ভুল। আমার আম্মুকে এখন আমি কি বলবো? সে যে নতুন একটা অ্যাপ্রনে এখনি আমার নামের আগে ডাঃ লিখে সেলাই করেছে, এখন আমি কি করবো?”
জিনান বজ্রাহতের মত দাঁড়িয়ে থাকলো।
সাচী বলে চললো, “আমি আসিফকে অনেক ভালোবাসতাম, কিন্তু তার জন্য আমি এত বড় ভুল কেমন করে করলাম?” হঠাৎ সাচী জিনানের দিকে হাত বাড়ালো, “তুই ও চল না দোস্ত, আমার অনেক ভয় করছে। আমি একা একা কি করে থাকবো এখন? দোস্ত তোর পায়ে পড়ি, আমার সাথে চল”। জিনানের মনে হলো তার গলায় শক্ত কি যেন চেপে বসেছে, প্রানপণ চেষ্টাতেও সে “না” শব্দটি মুখ দিয়ে বের করতে পারলো না, শুধু শব্দহীন ঠোঁট দুটো নড়ছে। সাচী রেলিং থেকে নেমে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।

পরিশিষ্টঃ
৩ বছর পরের কথা। মেডিসিন ফিমেল ওয়ার্ডে জিনান ব্যস্ত ভাবে অ্যাডমিশন ডিউটি করছে। ইন্টার্নদের কোন শান্তি নেই। সারাক্ষন দৌড়ের উপর। বারান্দায় মাত্র এক রুগীর এক্সরে হাতে নিয়েছে, ওয়ার্ড থেকে কান্নাকাটির শব্দ ভেসে এলো। দৌড়ে ওয়ার্ডে ঢুকে দেখলো, ট্রলিতে করে ২০/২১ বছর বয়সী এক মেয়ে এসেছে। তার পাশে এক মহিলা চিৎকার করে কাঁদছে। ঝাড়ি দিয়ে লোকের ভীড় কমিয়ে মেয়ের হাত ধরলো জিনান। পালস অত্যন্ত দুর্বল। মেয়েটির মা কাঁদতে কাঁদতে জানালো, মেয়ে বিষ খেয়েছে। মুখের দিকে তাকিয়ে জিনান যেন সাচীকেই দেখতে পায়। ৩ বছর আগে সাচীর আম্মুর অবিশ্বাসে ভরা চোখ দেখতে পায়। না, দুর্বল মূহুর্তের ভুলের মাসুল আর কোন সাচীকে সে পেতে দেবে না। দ্রুত হাতে সে ট্রিটমেন্ট লেখার কাগজে ঔষধের নাম লিখতে থাকে।

। নেশা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, September 2, 2011 at 11:06pm
এই গল্পটা আমার আব্বুর মুখে সোনা।। গল্প বললে ভুল হবে।। মূলত, এটি একটি সত্য ঘটনা।। এটাকে আমি পাথকদের কাছে সেভাবেই তুলে ধরছি।। তখন ছিল পবিত্র রমজান মাস।। পাকিস্তানের এক মুসলিম পরিবারে ইফতার বানানোর আয়োজন চলছে।। তখন সালমা বেগম তার মেয়ে ফাতেমাকে বললেন, “মা, ইফতার বানাতে আমাকে একটু সাহায্য করবে কি??” তখন ফাতেমা উত্তর দিল, “তোমাকে যদি ইফতার বানাতে সাহায্য করি তাহলে টিভিতে আমার একটি প্রিয় অনুষ্ঠান মিস হয়ে যাবে।। আমি পারবোনা।।” বলে নিজের ঘরে ঢুকে ফাতেমা দরজা আটকে দিল।। এদিকে অনেক সময় গড়িয়ে গেলো কিন্তু ফাতেমা ঘর থেকে বের হল না।। সালমা বেগম একটু চিন্তিত হলেন।। তিনি বার দুয়েক দরজায় গিয়ে ডাকলেন কিন্তু কোনও সারা শব্দ পেলেন না।। এদিকে, ফাতেমার বাবা এবং ভাইয়েরা নিজ নিজ কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসলো।। ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে প্রায় অথচ ফাতেমা নিজের ঘরে থেকে বের হচ্ছে না দেখে তারা সকলেই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন।। তখন সালমা বেগম তাদের সব কথা খুলে বললেন।। অজানা আশঙ্কায় সালমা বেগমের মন দুলে উঠলো।। ফাতেমার বাবাও খানিকক্ষণ তাকে ডাকলেন।। কিন্তু কোনও সাড়া না পেয়ে তারা দরজা ভাঙার প্রস্তুতি নিলেন।। দরজা ভেঙ্গে ভিতরে যা দেখলেন তা দেখে সালমা বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়লেন।। ফাতেমা উপর হয়ে মেঝেতে পড়ে ছিল।। দেহে কোনও প্রান ছিল না।। কান্নার রোল উঠলো ফাতেমার বাড়িতে।। তবে আসল সমস্যা দেখা দিল লাশ নিয়ে।। লাশটিকে সোজা করা যাচ্ছিল না।। সবাই চেষ্টা করে দেখল কিন্তু লাশটি কেউ একচুল নড়াতে পারছিল না।। তখন কেউ একজন পরামর্শ দিল টিভিটা সরিয়ে নিতে।। টিভিটা সরাতেই ফাতেমার দেহ নড়ে উঠলো।। অস্বাভাবিক হলেও টিভির মাধ্যমেই ফাতেমার জাবতিয় পরিশুদ্ধি করা হল।। গোরস্থানেও টিভিসহ নিয়ে যাওয়া হল।। কবর খুঁড়ে ফাতেমার লাশ নামানো হল।। দাফন শেষে তারা যখন টিভিটা নিয়ে রউনা হল অমনি মাটি ফুরে ফাতেমার দেহটা ছিটকে বেড়িয়ে এলো।। তখন সবাই বুঝতে পারলো, টিভি ছাড়া যেহেতু ফাতেমাকে নড়ানো যায়নি সেহেতু টিভিসহই তাকে কবর দিতে হবে।। শেষ পর্যন্ত টিভিসহই তাকে কবর দেয়া হল।। আমার জানা মতে ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য।। কারন এটি একটি ইসলামিক পত্রিকা “আদর্শ নারী” তে দেয়া হয়েছিলো।। এখন বিশ্বাস করা না করা আপনাদের উপর।। তবে এই গল্পের মাধ্যমে যেই মেসেজটা আমি বুঝতে পেরেছি তা হল, শুধু না খেয়ে থাকাই রোজা নয়, বরং সকল প্রকার ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে দূরে থাকাও রোজার অন্তর্ভুক্ত।।

। অদ্ভুত কংকাল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 30, 2011 at 10:37pm
রাত ১২ টা বেজে ৫ মিনিট। কুমিল্লা জেল। জেলের মধ্যে আজ অনেক মানুষের কোলাহল একটু পরে একটা ফাঁসি হবে। আসামির নাম রসু খাঁ। সেই বিখ্যাত সিরিয়াল কিলার। যে কিনা ১১ টি নিরাপরাধ তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। রসু খাঁর খুনের স্টাইল খুবই বীভৎস। রাতের আঁধারে নির্জন মাঠে ধর্ষণের পর ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মারত। আদালতের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। রাত ৩ টা ১ মিনিটে সেই ফাঁসি দেওয়া হবে। কুমিল্লা জেলের সেকেন্ড অফিসার মিলন সাহেব একটু পর পর ঘেমে উঠছেন। তার চাকরি জীবনে অনেক ফাঁসি দেখেছেন তবু কেন আজ এত ভয় লাগছে তিনি জানেন না। জেলার সাহেব একটু পর আসামির প্রিজনে যাবেন। সাথে তাকেও যেতে হবে। এই ভয়ে তিনি অস্থির কিনা কে জানে। মিলন সাহেব এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেলেন। ঠোঁট হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে মুছতে মুছতে মনে পড়লো রসু খাঁর কোন আত্তিয় কিনবা তার বউ তাকে শেষ দেখা দেখতে আসেনি। ফাঁসির তারিখ ঠিক হবার পর রসু খাঁর বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিন্তু কোন জবাব না পেয়ে থানার একজন জুনিয়র অফিসারকে রসু খাঁর বাড়ি পাঠানো হয়েছে। সে ফিরে এসে জানিয়েছে রসু খাঁর বাড়ি পুর খালি। বাড়িতে কেউ থাকেনা। আশেপাশে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো রসু খাঁর বউ বাচ্চা ঢাকায় থাকে কিন্তু কই থাকে তা কেউ বলতে পারলো না। এ কথা রসু খাকে জানানো হয়েছে, কিন্তু রসু খাঁ খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে ব্যাপারটা। রসু খাঁ কথা কম বলে। কুমিল্লা জেলে রসু খাঁ মিলন সাহেবের তত্ত্বাবধানে ছিল। মিলন সাহেব অনেক চেষ্টা করেছেন তার সাথে কথা বলার। কিন্তু রসু খাঁ ফাঁসির কথা শুনার পরি কেমন চুপচাপ থাকা শুরু করে। তবে যখন তার বিড়ি শেষ হয়ে যায় তখন- খুব করুন সুরে মিলনকে বলতো- সার, এক প্যাকেট বিড়ি এনে দেন না। কদিন পরে তো মরেই যাব জাহান্নামে বিড়ি আছে কিন তা তো জানি না। বলে মিলনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিশব্দে হাসত। রসু খাঁর দাড়ি গোঁফের মধ্যে হলুদ দাঁতের সেই নিশব্দ হাসি দেখে মিলন সাহেবের অন্তর কেঁপে উঠত। এরকম বীভৎস হাসি মিলন সাহেব কখনো দেখেননি। জেলার সাহেবের ডাকে মিলন সাহবের ছিন্তার সূত্রে বাধা পড়লো। জেলার সাহেব এখন আসামির সাথে দেখা করবেন। তারপর ইমাম সাহেব আসামিকে তওবা পড়াবেন। জেল খানার এক নির্জন সেলে রসু খাঁকে রাখা হয়েছে। কেমন স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা। সেলের ভিতর। ৬০ ওয়াটের একটা বাতি মিটমিট করে জ্বলছে। মিলন সাহব জেলার সাহেবের পিছপিছ সেলের ভিতর ঢুকলেন। রসু খাঁ সেলের এক কোনে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে। কোন সাড়া শব্দ নেই। জেলার সাহেব জিজ্ঞাস করলেন- “রসু খাঁ, কেমন আছ?
রসু খাঁ কোন জবাব দিল না। সুধু মুখ তুলে একবার জেলারের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলল। মিলন সাহেব অবাক করে তাকিয়ে দেখলেন রসু খাঁর চোখে কোন ভয় নাই। তার অভিজ্ঞতায় তিনি জানেন এই সময়ে ফাঁসির আসামির অনেক হেলুসিনেশন হয়। তারা ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার এক মিনিট আগেও ভাবে কোন এক দৈব শক্তি তাকে রক্ষা করবে। কিন্তু যখন আসামিকে ফাঁসির কাষ্ঠে উঠানো হয় তখন আসামি একদম শান্ত হয়ে যায়। যেন সে তার মৃত্যুকে সে ইতিমধ্যে গ্রহন করে ফেলেছে।
রসু খাঁ কোন জবাব দিল না। সে আবার তার চোখ নামিয়ে ফেলল। জেলার সাহেব আবার জিজ্ঞাস করলেন- তোমার বউ কিনবা সন্তান তো এল না, তাদের কিছু বলতে হবে? রসু খাঁ এইবার বলল- আমি জানি তারা আমার মরার পরও আমার লাশ নিতে আসবে না। তাদের কিছু বলার দরকার নেই।
জেলার সাহেব বললেন- ঠিক আছে, সে দেখা যাবে। একটু পর একজন তোমাকে গোসল করাতে নিতে আসবে, গোসল শেষে ইমাম সাহেব এসে তোমাকে তওবা পড়াবেন। তুমি তওবা পড়ে নিও।
রসু খাঁ বলল- তওবা পরতে হবে না। আপনি আমার জন্য একটু বিড়ির বেবস্থা করেন।
জেলার সাহেব রসু খাঁর জন্য বিড়ি পাঠিয়ে দিলেন। মিলন সাহেব ভেবেছিলেন রসু খাঁ মুখে বললেও সে তওবা পড়বে। কিন্তু মিলন সাহেবের ধারনা মিথ্যা করে রসু খাঁ তওবা পড়লো না।
রাত ৩ টা ১ মিনিতে রসু খাঁর ফাঁসি হয়ে গেল। কিন্তু মিলন সাহেবকে অবাক করে দিয়ে ফাঁসির ঠিক আগ মুহূর্তে রসু খাঁ – মা, মাগো বলে চিৎকার করে কেঁদে দিল। ফাঁসির পাটাতন সরে যাওয়ার আগ মুহুতেও রসু খাঁ কাদছিল। এক বছর পর- মিনু একটা লক্ষ্মী মেয়ে। সদা হাস্য মিষ্টি চেহারার মেয়েটা ছাত্রি হিসাবেও অনেক ভাল। এইবার সে কুমিল্লা সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে। হোস্টেলে এখনো সিট পায়নি সে, তাই তারা ৩ জন বান্ধবি মিলে কুমিল্লার ঠাকুর পাড়ায় একটা বাসা নিয়েছে। বুয়া এসে রান্না করে দেয়। বাসা থেকে কলেজ মাত্র ১০ টাকার রিক্সা ভাড়া। যেতে আসতে কোন সমস্যা হয় না।
ক্লাস শুরু হয়েছে প্রায় ১ মাস হয়ে গেল। নতুন জীবনে মিনু অভ্যস্ত হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি।
মেডিক্যাল কলেজ ৩ দিনের বন্ধ পড়েছে। মিনুর অন্য ২ বান্ধবি দুপুরেই বাড়ি চলে গেছে। মিনু যেতে পারেনি অন্য কারনে।
কারন হল মিনু তার ক্লাসের জন্য এখনও কঙ্কাল কিনতে পারেনি। নতুন কিনতে চাইলে কিনতে পারত, দাম পড়ত ১০ হাজার টাকা কিন্তু মিনুর এক বান্ধবি বলল- নতুন কিনে ফায়দা কম, তার চেয়ে সিনিয়র ব্যাচের কোন আপুর থেকে কিনে নে, কম দামে পাবি। টাকা বাঁচবে। মিনুও তাই ভাবল। সুধু সুধু এত টাকা দিয়ে নতুন না কিনে পুরান কিনবে যে টাকা বাঁচবে সে টাকা দিয়ে ছোট ভাইটার জন্য গল্পের বই কিনবে। অনেক খোঁজ করেও যখন পুরানো কঙ্কাল পাওয়ার আশা ছেড়ে দিল তখন আজ সকালেই কলেজের একজন পিওন বলল তার কাছে একটা পুরানো কঙ্কাল আছে তবে বেশি ব্যাবহার করা হয়নি। আজ সন্ধায় ছুটির পরই পিওন কঙ্কাল দিতে পারবে।
সেই জন্য মিনু বাড়ি যেতে পারেনি। সে আজ কঙ্কালটা আজ পেলে কাল বাড়ি যাবে। ঠিক সন্ধ্যা ৭ টায় পিওন মিনুর বাসায় কঙ্কাল দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেল। কিন্তু পিওন মিনুকে একটা তথ্য বলল না যে- এই কঙ্কালের আগের মালিক যে মেয়েটি ছিল সে খুন হয়েছে এক মাঠের মাঝে ধর্ষিত অবস্থায়। রাত ১১ টা। মিনু ভাত খেয়ে কঙ্কালটা নিয়ে বসল। হুম। খারাপ না। নতুনের মতই আছে। এত নতুন কঙ্কাল মাত্র ৩ হাজার টাকায় পেয়ে মিনু খুব খুসি। অনেক টাকা বেচে গেল। এই টাকা দিয়ে অনেক মজা করা যাবে। মিনু এরই মধ্যে কয়েকটা এনাটমি ক্লাস করেছে, বান্ধবিদের কঙ্কাল গুল দেখেছে। তাই তার কঙ্কাল নিয়ে বিশেষ কোন ভয় নেই। একটা কঙ্কাল জাস্ট একটা সাবজেক্ট, এর বেশি কিছু নয়। তবে মিনু একটু খেয়াল করে দেখল- কঙ্কালটির হনুর হাড়টি যেন একটু উঁচু। এটা মনে হল কোন পুরুষ মানুষের কঙ্কাল।
রাত ১১.৩০ এ মিনু ঘুমাতে গেল লাইট বন্ধ করে। এই ঠাকুর পাড়া এলাকাটি একটু নির্জন টাইপের পাড়া। পুরা এলাকা যেন থ মেরে আছে। তার উপরে কারেন্ট চলে গেছে। মিনু খোলা জানালা দিয়ে দেখল পূর্ণিমার চাঁদ ঢেকে গেছে কাল মেঘে। এই দৃশ্য দেখতে দেখতে মিনু এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো। হতাথ মিনুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে নিজেকে আবিস্কার করল স্যাঁতস্যাঁতে এক মাঠে! মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে লাগছে ।
যাহ্! আমি স্বপ্ন দেখছি। আমিতো আমার বাসায় শুয়ে আছি। এ ভেবে যখন মিনু পাস ফিরতে যাবে তখন সে চাঁদের আবছা আলোয় দেখতে পেল একটা বিশাল দেহি পুরুষ একটু দূরে একটা বড় দায়ে শান দিচ্ছে। চাঁদের আলো পড়ে দায়ের বুক চকচক করছে। চাঁদের আলোয় মানুষটিকে আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে। মুখ ভর্তি দাড়ি মোচ, গালের দুপাশে হনুর হাড় একটু উঁচু। মিনু আবার নিজেকে সান্ত্বনা দিল- আমি স্বপ্ন দেখছি। এ সত্যি হতে পারেনা। এক পশলা হিমেল হাওয়া মিনুর শরির যখন ছুয়ে গেল তখন মিনু বুঝতে পারলো তার পুরো শরির ঘাম দিয়ে গেছে।
চাঁদের উপর থেকে কাল মেঘের ভেলা যখন সরে গেল তখন পূর্ণিমার আলোয় দেখতে পেল কোন এক নির্জন মাঠের মাঝখানে শুয়ে আছে মিনু। মিনু উঠে বসতে গেল কিন্তু তার পুরো শরিরে কোন শক্তি পেল না। অসহায় হয়ে সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে রইল।
চাঁদের আলোয় দেখতে পেল লোকটি দায়ের সাদা বুকে আঙ্গুল দিয়ে ধার পরিক্ষা করে সন্তুষ্ট হয়ে মিনুর দিকে ফিরল। মিনুর কাছে এসে দাঁড়ালো বিশাল ছায়া মূর্তিটি। মিনুর মনে হল এই লোকটিকে সে চিনে এবং অনেক ভাল করেই চিনে।
মিনু ভয়ে অস্থির হয়ে গেল। সে ভয়ে এপাস ওপাশ করতে লাগলো। ছায়ামূর্তিটি শান্ত ভঙ্গিতে মিনুর শরীরের উপর নিজের শরীর চাপিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল- আমি রসু খাঁ, আমি সেই খুনি রসু খাঁ! পরদিন-
পরদিন মিনুর লাশ পাওয়া গেল ঠাকুর পাড়া থেকে ৭ মাইল দুরের এক নির্জন ক্ষেতে। ধর্ষিত এবং ক্ষতবিক্ষত অবস্থায়। কে যেন নির্মম আক্রশে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে নিস্পাপ মেয়েটিকে। মিনুর পাশে পাওয়া গেল গতকাল কেনা হনুর হাড় উঁচু কঙ্কালটি।
মিনু হত্যার রহস্য আর উন্মোচিত হল না। পিয়ন মতিন পুলিশকে বলল- মিনু তার কাছ থেকে কঙ্কালটি কিনেছে কিন্তু মিনু বলেছিল টাকা পরে দেবে তাই পুলিশ পিয়ন মতিনকে কঙ্কালটি দিয়ে দিল। মিনুর মৃত্যুর এক বছর পর-
মতিন সকাল ১০ টায় দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। মাথায় উস্কু খুস্কু চুল। গালে দাড়ি মোচের ঘন জঙ্গল। যেন তার মাথায় অনেক দুশ্চিন্তা।
নতুন ব্যাচের একটা মেয়ে মতিনকে এসে বলল- মতিন ভাই, একটা কঙ্কাল জোগাড় করে দেননা। টাকার সমস্যা তাই নতুন কিনতে পারব না।
মতিন বলল- আফা, কোন ছিন্তা কইরেন না। আমার কাছে একটা আছে। এক আপা পাস করে যাওয়ার সময় আমাকে দিয়ে গেছে। আপনের বাসার ঠিকানা দিয়ে যান আমি সন্ধায় ডিউটি শেষ করে দিয়ে আসবো।
মেয়েটি সরল মনে ঠিকানা দিয়ে হাসি মুখে চলে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটি যদি একটু পিছনে ফিরে তাকাত দেখতে পেত মতিনের মুখে ক্রুর হাসি, হাসির দমকে মতিনের হনুর হাড় দুপাশে ফুলে উঠেছে। অস্বাভাবিক ভাবে। (এটি একটি বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত)

শেয়ার করেছেনঃ সাবিনা জেসমিন অরিন গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।।

।। চতুরঙ্গ – প্রথম পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, August 31, 2011 at 11:34pm
চতুরঙ্গ – প্রথম পর্ব
মোঃ ফরহাদ চৌধুরী (পেজ ১)
ডাঃ এমরান তাঁর ইলেক্ট্রিক হুইল চেয়ারে হেলান দিয়ে আমার দিকে চশমার ওপর দিয়ে তাকালেন। ভ্রুঁ জোড়া কাছাকাছি হল তাঁর। হাল্কা নীলচে চোখ। সচরাচর বাঙ্গালীদের মাঝে এমন চোখ দেখা যায় না। হঠাৎ করে এভাবে তাকালে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। আমি নড়ে চড়ে বসলাম চেয়ারটায়। সামনা সামনি বসেছি দুজন। মাঝখানে টি টেবিল। টি টেবিলের ওপর একটা ফ্লাওয়ার ভাস, একটা ডায়েরী আর আমার ফাইল। ফ্লাওয়ার ভাসটা এক নজর দেখেই বলে দেয়া যায় অ্যানটিক মূল্য অনেক হবে। নঁকশা কাটা কাঁসার ফ্লাওয়ার ভাস। কবেকার আর কোথাকার বুঝতে পারলাম না। তবে খুব দামী জিনিস সেটা বোঝা গেল।
যে ঘরটায় বসে আছি, সেটা প্রায় একটা হল রুমের মত বিশাল ঘর। অনেকটা চার্চের বিশাল প্রার্থনা ঘরের সমান। মাথার ওপরের ছাদটা প্রায় চার তলা উঁচুতে। ছাদ কিম্বা সিলিং যাই বলি না কেন – বেশ অদ্ভূত। যেন বিশাল কোনো দাবার বোর্ড ছাদটা। সাদা কালো ঘর কাটা। তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানান ঘরে উলটো ভাবে বিশাল বিশাল একেকটা ঘুটি ঝুলছে! প্রত্যেক ঘুটিই মানুষের সমান কিন্তু বর্ম পরা, অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত। হঠাৎ করে ছাদময় বিশাল দাবার বোর্ড আর উলটো ভাবে ঝুলে থাকা মূর্তি গুলোকে দেখলে ভয় লাগে। আধো অন্ধকারে কেমন যেন রহস্যময় দেখাচ্ছে অত উঁচু ছাদময় দাবার বোর্ডটাকে। ছাদটা হল রুম পেরিয়ে অন্যদিকে বাঁক নিয়েছে। হল রুমটা বেশ বড় বোঝাই যাচ্ছে, কয়েকটা মোড় ঘুরে চলে গেছে আরেকদিকে। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না ওদিকটা। ছাদটাও সেভাবেই চলে গেছে। দেখা না গেলেও বোঝা যাচ্ছে অন্য দিকেও ছড়ানো এরকম হল রুম, জিনিস পত্রে ঠাসা, এবং দাবার বোর্ডে ঝুলন্ত মূর্তিতে ভরা সেদিকের ছাদটাও।
নিচ তলা থেকে শুরু করে একেবারে চার তলা পর্যন্ত কুন্ডলী পাঁকিয়ে উঠে গেছে একটা ধাতব সিঁড়ি। সেটা হল রুমের এক পাশে। ওপরে বোধ হয় থাকার ঘর। কারণ দেখলাম একপাশে ছোট একটা লিফটও রয়েছে। ডাঃ এমরানের জন্য নিশ্চই। হুইল চেয়ার নিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে ওপরে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ তলা পর্যন্ত পুরো হল রুমের মত ঘরটার চার দেয়াল জুড়ে শুধু বই আর বই। বুক শেলফ উঠে গেছে চার তলা উঁচু ছাদ পর্যন্ত! আমি আমার জীবনে এত উঁচু বুক শেলফ দেখিনি, শেলফ গুলোর পাশে অনেক বড় মুভিং লেডার। মইটা একেবারে ছাদ পর্যন্ত উঠে গেছে। কিন্তু ডাঃ এমরান কিভাবে বই নামান? কেউ নামিয়ে দেয় হয়ত। সারা ঘর জুড়ে ঠাসা সব অ্যানটিক্সের জিনিস পত্র। পেইন্টিং , মূর্তি, কাস্কেট, স্টাফ করা জন্তু জানোয়ার, শো পিস- কি নেই। হাটা যায় না ঠিক মত। হল রুম বোঝাই করে ফেলেছেন এসব দিয়ে। গলা খাকারি দিলেন ডাঃ এমরান। আমি আবার তাঁর দিকে তাকালাম।
“তো মিস নোভেরা – হঠাৎ কেন আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালার ‘কিউরেটর’ হতে আগ্রহী হলেন?” অদ্ভূত কন্ঠস্বর ডাঃ এমরানের। কেমন যেন কম্পনহীন শব্দ। ভারী আর ভরাট একটা গলা।
অস্বস্তিটা দূর করতে হাসার চেষ্টা করলাম, “ স্যার ছোট থেকে আপনাকে ঘিরে আমার বিরাট একটা আগ্রহ। আপনার লেখা বই যেখানে যখন পেয়েছি তখনি পড়েছি। এক রকম পাগল ছিলাম আপনার বইয়ের জন্য। আপনাকে দেখার জন্য বহুবার আপনার গেটের সামনে এসেছিলাম। ছোট বলে ঢুকতে পারিনি। কিন্তু হঠাৎ করে আপনি লেখা লেখি ছেড়ে দেয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তার ওপর যখন আপনার দূর্ঘটনা ঘটল – আমি মেনে নিতে পারিনি।”
“আবেগ...... আবেগ......” হতাশ ভাবে মাথা নাড়ালেন, “ আবেগের চোখে দুনিয়া দেখার বয়স আপনার এখন। তাই খুব স্বাভাবিক জিনিস গুলোকে অনেক বড় করে দেখছেন।”
“ স্যার, প্লিজ আমাকে ‘আপনি’ করে বলবেন না। আমি আপনার অনেক ছোট।” ক্রমশ অস্বস্তিটা বাড়ছে। যার লেখার জন্য এত পাগল ছিলাম – সে মানুষটাকে সামনে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখে অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছে।
“ হুম......” চশমাটা চোখ থেকে খুলে আমার ফাইলটা ইঙ্গিত করলেন, “ তোমার ফাইলে দেখলাম তুমি ডাক্তারি পাস করেছো। ডাক্তারি বাদ দিয়ে হঠাৎ আমার এখানে আসাটা – ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না।”
“ পত্রিকায় দেখলাম কিউরেটর চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। আর স্যার আমি শুনেছি আপনার ২৪ ঘন্টা একজন ডাক্তার দরকার পরে। তাই ভাবলাম আমিই যাই। আপনার কিউরেটর কাজের পাশাপাশি ডাক্তারিটাও চলল।”
“ কিঊরেটর হতে কিছু জ্ঞান থাকা দরকার, হুট করে চাইলেই সেটা সম্ভব না।”
“ আমি জানি স্যার, আমার বাবা ন্যাশনাল মিউজিয়ামের কিউরেটর ছিলেন। ছোট থেকেই তাই এসব জিনিসের প্রতি একটা আগ্রহ ছিল।”
উনি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললেন, “ বাবা-মা কি বলে তোমার?”
এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললাম, “ নেই। দু বছর আগে কার একসিডেন্টে মারা গেছেন।”
“ স্যাড...... আর কে কে আছে তোমার?”
“ আমার খালা আর আমার ছোট বোন।”
“ বোন কতটুকু? মানে বেশি ছোট? নাকি পড়াশোনা করে?”
“ দু বছরের ছোট আমার থেকে। পড়াশোনা করছে এখনো।”
“ আর খালা?”
“ ওনার আর কেউ নেই। বিয়ের পরেই স্বামী মারা যান লিভার সিরোসিস হয়ে। তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে আছেন।”
“ খুব একটা ভাল হল না তাহলে। তোমার কোনো হাসপাতালে প্র্যাক্টিস করা উচিত। পঙ্গু বুড়ো মানুষের পেছনে ডাক্তারি বিদ্যা খরচ করে লাভ নেই।” হুইল চেয়ারটা আপনা আপনি নড়া শুরু করল। অন্য দিকে চলে যাচ্ছেন। আমার সঙ্গে কথা বলা শেষ – আমি যেতে পারি এখন এ রকম ইঙ্গিত করলেন যেন।
আমি ভাবতেই পারিনি এভাবে হুট করে ‘না’ করে বসবেন। ব্যাপারটা বোঝার সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে মড়িয়া হয়ে বললাম, “প্লিজ স্যার, এটা আমার স্বপ্ন আমি আপনার সাথে কাজ করবো, আপনার দেখাশোনা করবো।”
একটা বুক শেলফ থেকে বসে বসে বই নামাতে নামাতে আমার দিকে পেছন ফিরে বললেন, “ তোমার ফাইলটা হাতে নাও, এন্ড জাষ্ট গেট আউট। উনিশ বছরের পড়াশোনা পানিতে ফেলার কোনো অর্থ হয় না।”
“ স্যার প্লিজ......” চোখে পানি এসে গেল, ঠোঁট কাঁমড়ে কান্না ঠেকালাম।
“ অযথা কান্না কাটি করে লাভ নেই।” আমার দিকে না তাকিয়ে বইয়ের পাতা ওল্টাতে লাগলেন, “ আমার বয়েস হয়েছে। যখন তখন মরে যেতে পারি। ঝামেলা সামলাতে কোনো শক্ত সামর্থ ছেলের দরকার। তুমি পারবে না।”
আমি চোখের পানি মুছে হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা হলুদাভ কাগজ বের করে বাড়িয়ে ধরলাম, “ আমি যখন ছোট ছিলাম আপনাকে প্রায়ই চিঠিতে লিখতাম – আমি বড় হয়ে আপনার মত ডাক্তার হবো, বই লিখতে না পারি – আপনার সাথে সাথে থাকবো। আপনার লেখা পান্ডুলিপি সবার আগে পড়বো। আর হাসপাতালে আপনার সাথেই প্র্যাক্টিস করবো। আপনি বহুদিন পর একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কি লিখেছিলেন জানেন?”
বেশ অবাক হয়ে ঘুরে তাকালেন ডাঃ এমরান আমার দিকে। আমার হাতে ধরা কাগজটার দিকে কৌতুহলি চোখে তাকালেন।
“ আপনি লিখেছিলেন – মা, দোয়া করি তুমি বড় হয়ে অনেক বড় ডাক্তার হও। কথা দিলাম তোমার সাথে কাজ না করতে পারি – তোমার রুগী অবশ্যই হব!” পড়ে শোনালাম চোখের পানি মুছতে মুছতে। এভাবে যে চোখে পানি চলে আসবে ভাবিনি। খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম ওনার সামনে।
ডাঃ এমরান তাঁর জট পাঁকা দাড়িতে আঙ্গুল বুলালেন বিভ্রান্ত মুখে, বিড়বিড় করলেন, “ আমি লিখেছিলাম? কবে?......... মনে পড়ছে না তো......”
চোখের পানি মুছে জেদ চেপে ফাইলটা তুলে নিলাম, “ মনে থাকবে কিভাবে? বয়স তো আর কম হয়নি আপনার। তার ওপর লাখ লাখ পাঠক পাঠিকা। আমার কথা আর মনে থাকে?” আমি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে বের হয়ে এলাম ডাঃ এমরানের বিশাল দূর্গ রুপি মিউজিয়াম থেকে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। ট্যাক্সি করে বাসায় ফিরলাম। সারা পথ একটু পর পর আপনা আপনি দু চোখ ভরে যেতে থাকল পানিতে। বোধ হয় খুব বেশি আশা করেছিলাম। সেটা ভেঙ্গে যাওয়ায় নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ট্যাক্সি থেকে নেমে যখন ভাড়া দিচ্ছিলাম, হাত থেকে ফাইলটা পড়ে গেল বেখেয়ালে। লাইট পোষ্টের আলোয় তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়া কাগজ গুলো তুলতে লাগলাম। কাগজ তুলতে গিয়ে অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম সেখানে হলুদ একটা খাম; ভেতরে চিঠি! আমার না এটা, আমি রাখিনি। ল্যাম্প পোষ্টের পোঁকা ওড়া আলোতে চিঠিটা খাম থেকে বের করতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। গুটিগুটি হাতের লেখা – “ নোভেরা,
আশা করছি সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দীর্ঘ চাকরিটা করতে গিয়ে হাফিয়ে উঠবে না। আমি সময়ানুবর্তিতা পছন্দ করি।
- ডাঃ এমরান চৌধুরী ” কখন দিলেন এটা? সারাক্ষণ তো হুইল চেয়ারেই ছিলেন আমার সামনে! বিমূঢ়ের মত লাইট পোষ্টের নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম।
রাতের বেলা খবরটা জাহিদকে ফোন করে জানালাম। বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারছিলাম না চাকরি পাওয়ার কথাটা। রীতিমত হড়বড়িয়ে সব বলে ফেললাম, “ জাহিদ তুমি বিলিভ করতে পারবে না! ডাঃ এমরানের চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি! কাল থেকে যাবো!”
জাহিদ ঘুমের ঘোরে হাই তুলতে তুলতে কেবল বলল, “ বুড়োকে বেশি ভাও দিও না। লেখক মানুষ, তাদের আদি অন্ত - অনন্ত যৌবন। শেষ মেষ আমার কপাল ফাটিয়ে তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছে শুনবো!”
আমি হাসতে লাগলাম।
“ ওই আমি রাখি। ঘুমের জন্য দুই চোখের পাতায় দশ কুইন্টল পাত্থর চেপে আছে।” জাহিদ ফোন রেখে দিল।
আমি ঘুমাতে পারলাম না। সারা রাত এপাশ ওপাশ করলাম কেবল। তখনো জানতাম না যেচে পড়ে গিয়ে চাকরিটা নিয়ে কত বড় ভূল করে ফেলেছি.........
শেষ রাতের দিকে ঘুমের মধ্যে দেখলাম আমি সেই বিশাল হল রুমটায়। বৃষ্টি হচ্ছে খুব। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বাহিরে। কাঁচের জানালা দিয়ে লম্বা আলো-ছায়া সৃষ্টি হয়েছে হল রুমের দেয়ালে। আমি ওপরে ছাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছি সেই বিশাল দাবা বোর্ডের দিকে। অন্ধকারের মধ্যেও মনে হচ্ছে মূর্তি গুলো নড়ছে...... জীবন্ত মানুষের মত হাটাহাটি করছে......
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ডাঃ এমরানের দূর্গ রুপি ব্যক্তিগত মিউজিয়ামের দায়িত্য বুঝে নিতে চার দিন লেগে গেল আমার। একজন মানুষ এক জীবনে এত বিশাল সংগ্রহ শালা কি করে তৈরি করেন আমাকে বারবার বিষ্মিত করল। পৈতৃক সূত্রেই ডাঃ এমরানের পরিবারটা দেশের সবচেয়ে ধনী পরিবার গুলোর মধ্যে একটা ছিল। আর কর্ম জীবনেও ডাঃ এমরান তাঁর পূর্ব পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছেন। তাই এরকম মিউজিয়াম তৈরি করা খুব একটা অসম্ভব না তাঁর জন্য।
ডাঃ এমরানের বিশাল মিউজিয়াম তুল্য বাড়িতে মানুষ বলতে ছিলাম কেবল আমি, ডাঃ এমরান আর তিন জন কর্মচারী। তাদের একজন হলেন রাধুনী কাম হাউস মেড। নার্গিস নাম। মধ্যবয়সী, শান্ত স্বভাবের এক মহিলা। আরেক জন হলেন ড্রাইভার আবু নাসের। তার বয়স প্রায় ষাটের ঘরে। অন্য জন ওয়াচ ম্যান, সোলেমান আলী। চল্লিশের মত বয়স। পাহাড়-পর্বতের কথা মনে আসে তাকে দেখলেই। মোটামুটি এ কয়েকজন মানুষ ডাঃ এমরানের দূর্গের বাসিন্দা।
আমি চাকর্রিটা শুরু করার পর থেকেই দেখতাম ডাঃ এমরান দিন রাত তাঁর দো’তলার ঘরে শুয়ে বই পড়েন আর একা একা দাবা খেলেন বিছানায় বোর্ড রেখে। আর নামাযের সময় হলে হুইল চেয়ার ছেড়ে অন্য একটা কাঠের চেয়ারে বসে নামায পড়েন নিজের ঘরের ভেতর। কথা বার্তা একেবারে দরকার না পরলে বলেন না। আমি তাঁর বি.পি. একদিন চেক করার সময় কেবল আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন নিজে থেকে, “ দাবা খেলতে পারো?”
“ খুব একটা না। নিয়ম মনে থাকে না কোন ঘুটি কত ঘর চলে।” স্টেথোস্কোপ কানে লাগিয়ে হাতের পালস ধরার চেষ্টা করলাম, শুকিয়ে গেছেন খুব, যদিও হাত গুলো জোয়ান মানুষের মত মোটা এখনো। পালস পাওয়া যায় না। সেটা খোঁজার চেষ্টা করছি টিপেটিপে।
“ দাবা ইংরেজী জানো?”
“ হুম। CHESS?”
“ সমার্থক শব্দ?”
“ দাবার আবার সমার্থক শব্দ আছে নাকি?” পালসটা পেতেই স্বস্তি পেলাম।
“ আছে। চতুরঙ্গ।” বিড়বিড় করলেন তিনি।
আমি ঠিক মত খেয়াল করলাম না তাঁর কথাটা।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

( পেজ ২)
আমি এখানে আসার পর প্রথম যেদিন এই দূর্গের রহস্যের সাথে জড়ানো শুরু করি সেটা প্রায় এক মাস পরের কথা।
সকাল থেকেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। থেকে থেকে কান ফাটানো বজ্রপাতের শব্দ। তার ওপর দূর্গের দেয়াল গুলো মিলে সেই শব্দকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে শত গুণ। ডাঃ এমরানের জ্বর গত রাত থেকে। তাই বাসায় যাইনি। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছেন। আমি তাঁকে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দিলাম।
সন্ধ্যার দিকে যখন তাঁকে দেখতে গেলাম তখন জ্বর আরো বেড়েছে। নিজের দেয়া হাসপাতাল আছে তাঁর, অথচ হাসপাতালে বিচিত্র কোনো কারণে যেতেই চান না তিনি। কিন্তু এ অবস্থা চলতে থাকলে হস্পিটালাইজড করা ছাড়া উপায় থাকবে না। নার্গিসকে নিয়ে ওনার মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করলাম। ভেজা কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে দিলাম। তাতে অবস্থার একটু উন্নতি হল। নার্গিসকে পানি আনতে যখন পাঠিয়েছি তখন হঠাৎ ডাঃ এমরান কথা বলা শুরু করলেন, “ নামায পড়ো?” বেশ পরিষ্কার কন্ঠেই জিজ্ঞেস করলেন। হাতের ইসারায় তাঁর পাশে বসতে বললেন।
আমি একটু অবাক হয়ে তাকালাম, “ মিস্ যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায বোধ হয় রোজা ছাড়া আর কখনো পড়া হয়নি।”
“ তোমার বয়সে আমিও নামায খুব একটা পড়তাম না। তবে বিয়ের পরে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে হতো। আমার স্ত্রী জয়নাব খুব ধার্মীক স্বভাবের মেয়ে ছিল। জোর করেই ঠেলে, ধমকে নামায পড়তে পাঠাতো মসজিদে। মসজিদে নামায পড়তে গিয়ে নামাযের অভ্যাসটা পেয়ে গেল। বলতে পারো নেশার মত। নেশা খারাপ অর্থে বোঝাচ্ছি না – জাস্ট অবস্থাটা বোঝাচ্ছি।” দম নিলেন।
আমি চুপ করে বসে আছি। একবার ভাবলাম বলি এ অবস্থায় কথা না বলার জন্য। কিন্তু বললাম না। তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ খুব কম মেলে।
আবার বলা শুরু করলেন, “ এক ওয়াক্ত নামায না পড়লে সারা দিন অশান্তিতে কাটত। যে কোনো অপারেশন করতে O.T. তে ঢোকবার আগে সব সময় নফল নামায পড়ে নিতাম। একবার সে রকমই একটা মেজর অপারেশনের আগে নামায পড়ছিলাম নিজের চেম্বারে। খুব আশ্চর্যের বিষয় আমি প্রথমবার যখন রুকু করার জন্য হাটুতে দু’হাত রেখে সামনের দিকে ঝুঁকেছি – কেন যেন হঠাৎ মনে হল আমার পেছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। আমার চেম্বারে কেউ না জিজ্ঞেস করে ঢুকবে না। আপনা আপনি সেজদার দিক থেকে চোখ চলে গেল দু পায়ের মাঝ দিয়ে পেছনের দিকে। মধ্য বয়সী কোনো পুরুষ লোকের পা, আর সাদা পাজামার অংশ বিশেষ দেখা যাচ্ছে। অনেকটা জামাতে নামাযে দাঁড়ালে ইমামের পেছনের জন যেভাবে থাকে – ঠিক সেভাবে। এবং মনে হল একজন নয়, আরো কয়েকজন।
নামাযের এ অবস্থায় নামায ভাঙ্গার প্রশ্নই আসে না। তাই নামাযটা শেষ করে যখন সালাম ফেরালাম, অবাক হয়ে দেখলাম আমার পেছনে কেউ নেই। তার থেকেও খুব আশ্চর্যের ব্যাপার – আমার পেছনে যদি কেঊ নামায পড়ে – তার সেজদা যেখানে হবে- সেই জায়গা গুলোতে নির্দিষ্ট দুরুত্ব পরপর পাশাপাশি কয়েক ফোঁটা করে পানি। ঠিক যেন তিন জন লোক সেজদায় গিয়ে চোখের পানি ফেলেছে! আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম।
সেদিনের অপারেশনে রোগীটাকে বাঁচাতে পারিনি আমি। ” থামলেন। হাঁফাচ্ছেন কথা বলতে গিয়ে।
আমি তাঁর কপালে হাত রেখে জ্বর দেখলাম একবার। বাহিরে বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছেই। আজকে বাড়ি যাওয়া কপালে আছে কিনা কে জানে। ফোন করে দিতে হবে নয়তো।
“ সেদিনের যে রোগীটাকে আমি বাঁচাতে পারিনি, সে ছিল খুব বৃদ্ধ লোক। তোরাব আলী নাম। অপারেশনের আগের দিন গুলোতে একা একা দাবা খেলতেন হাসপাতালের বেডে শুয়ে। দাবা খেলাটা আমার নেশা ছিল ছোট থেকেই। আমার নেশা দেখে আব্বা এই বাড়ির পুরো ভেতরের ছাদ জুড়ে উলটো ভাবে বিচিত্র দাবার বোর্ডের ডিজাইন করিয়েছিলেন। হাসপাতালের কাজের ফাঁকে দু’এক দান খেলে ফেলতাম তোরাব চাচার সঙ্গে। কোনো দিনই হারাতে পারিনি। জেতার পর উনি হাসতে হাসতে বলতেন, “ বাজান, আমার দেখা সব চাইতে ভালা ছেলেটা হইলা তুমি। রুগির সাথে ডাক্তারেরা যে কত খারাপ ব্যবহার করে – এই জীবনে কম দেখি নাই। কিন্তু তুমি পুরা অন্যরকম। আমি খাস দিলে দোয়া করি আল্লাহ্ পাক তোমারে দেইখা রাখবো। আর যদি আমি মইরা যাই কখনো- সেই দিন থেকে তোমারে আর কেউ হারাইতে পারবো না।”
কথাটা কতটুকু ফলেছে জানি না। তবে সত্যি সত্যি তার মৃত্যুর পর আমি দাবা খেলায় কারো কাছে হারিনি আজ পর্যন্ত। বিভিন্ন দেশের গ্রান্ড মাষ্টারদের সঙ্গে খেলেছি, দাওয়াত দিয়েও এনেছিলাম এখানে। অদ্ভূত কোনো কারণে কেউ’ই আমাকে হারাতে পারেনি।” আবার থামলেন।
আমি লাইটের দিকে তাকালাম। যেভাবে মিটমিটিয়ে আসছে- তাতে কারেন্ট চলে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। চার্জার দরকার নেই। জেনারেটর আছে। কারেন্ট গেলেই সোলেমান আলী সেটা চালু করে দেবে। আমি মোম বাতি আর ম্যাচ বের করে রাখলাম তাও। যেন আমার মোম বাতি বের করার অপেক্ষাতেই ছিল, বের করার সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেল। আমি অন্ধকার খুব ভয় পাই। তাড়াতাড়ি মোম জ্বালিয়ে ফেললাম। বাহিরে ব্জ্রপাত আর ঝড় যেন মহা প্রলয় লাগিয়ে দিয়েছে।
“ তোরাব চাচা মারা যায় যে বিকালে, সে রাতটা এ রকমই ঝড় বৃষ্টির ছিল। জয়নাবকে নিয়ে ঘুমিয়েছি। তাহাজ্জুদের নামায পড়ার অভ্যাস আছে। কিন্তু সে রাতে খুব ক্লান্ত থাকায় তাহাজ্জুদের নামায পড়বো না ভেবেছিলাম। খুব বিচিত্র একটা ঘটনা ঘটল সেই রাতে। আমি মাঝরাতে ঘুম ভাঙতেই আমার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভূত জিনিষটা দেখলাম। প্রথমে মনে হল বিশাল কোনো দাবার বোর্ডে শুয়ে আছি! তারপরেই উঠে বসার সাথে সাথে চমকে উঠলাম। আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম হল রুমের ছাদের সেই বিশাল দাবার বোর্ডে! বাদুরের মত উলটো হয়ে ঝুলে আছি! এবং আশ্চর্যের বিষয় হল আমার গ্রাভিটেশন ঠিক বোর্ডের দিকে! আমি অবলীলায় সেখানে উলটো ভাবে দাঁড়িয়ে আছি! আমার মাথার দিকে পুরো হল রুমের বিছিয়া থাকা অসংখ্য জিনিস পত্র, লাইব্রেরী! আমার আশে পাশে সেই বিশাল মানব আকৃতির দাবার মূর্তি গুলো। এবং বজ্রপাতের ক্ষণিক আলোয় দেখতে পেলাম আমার ঠিক সামনের দিকে বড় বড় দাবার চারটা ঘরে চারজন সাদা কাপড় পরা মানুষ নামায পড়ছেন আমার মত উলটো ভাবে! একজন ইমাম এবং বাকি তিন জনের জামাত!
আমি প্রচন্ড ভয় পেলেও ধীরে ধীরে হাটতে লাগলাম তাদের দিকে। আমি পড়ে যাচ্ছি না! অনায়াসে হেটে যাচ্ছি উলটো ভাবে ছাদে পা রেখে! মুর্তি গুলোর আড়াল থেকে ব্জ্রপাতের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম জামাতের ইমাম হলেন তোরাব চাচা! যিনি আজ বিকেলে অপারেশন থিয়েটারে আমার সামনে মারা গেছেন!
আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হল রুমের একটা সোফার ওপর আবিষ্কার করি। বলার অপেক্ষা রাখেনা আমার কোমরে তখন মারাত্মক ব্যথা। যেন আমি খুব ওপর থেকে পড়ে গেছি।” আবার থামলেন ডাঃ এমরান। হাঁফাচ্ছেন খুব।
আমি তাঁর কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। জ্বরের ঘোরে মানুষ কত কথাই বলে। তার ওপর সে যদি হয় লেখক মানুষ তাহলে তো কথাই নেই। আমি তাঁকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কথা বলে অবস্থা খারাপ করে ফেলছেন তাই।
সে রাতে চলে আসার সময় ঘটল ঘটনাটা। রাত দশটা বাজে। বৃষ্টি থেমেছে। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ট্যাক্সি পাবো না বলে ড্রাইভার আবু নাসের গাড়ি বের করলেন আমাকে পৌছে দেয়ার জন্য। আমি হল রুমের তালা লাগিয়ে দেবো- শেষ বারের মত সব কিছু দেখে নিচ্ছি। এমন সময় আরবী সুরা পড়ার শব্দ পেলাম হল রুমে। লাইট প্রায় সব নিভিয়ে দিয়েছি। অবাক হয়ে এদিক সেদিক তাকালাম, সুরা কে পড়ছে? ক্রমশ সুরটা চড়ছে। কেন যেন মনে হল শব্দটা ওপর দিক থেকে হচ্ছে। ওপরে অন্ধকার ছাদের দিকে তাকিয়েছি সবে – জমে গেলাম বরফের মত। হাত থেকে তালা চাবির থোকাটা খসে পড়ল শব্দ করে। তীব্র একটা ভয় আমার মাথা থেকে দৌড়ে যেন পায়ের দিকে চলে গেল!
বজ্রপাতের সাদাটে আলোতে ছাদের বিশাল দাবা বোর্ডের মূর্তি গুলোর লম্বা ছায়া পড়েছে বোর্ডের ঘর গুলোতে। তার মাঝেই একটা ফাঁকা জায়গায় জায়নামায বিছিয়ে উল্টো ভাবে কেউ নামায পড়ছে! এবং এত নিচ থেকেও তাঁকে স্পষ্ট চেনা গেল – ডাঃ এমরান! ডাঃ এমরানের চতুরঙ্গ রহস্যের সঙ্গে সে রাতেই আমার প্রথম পরিচয়। From: Textile Engineering College, Chittagong facebook id: Nithor Shrabon Shihab
E-mail id: Rudroaimel@yahoo.com

। চতুরঙ্গ – দ্বিতীয় পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 1, 2011 at 10:49pm
চতুরঙ্গ – দ্বিতীয় পর্ব
মোঃ ফরহাদ চৌধুরী ( পেজ - ১ )
“ আলু-ছিলে-ছুইন...... না, কি একটা বল না? কি ওটা?” জাহিদ মাথা চুলকালো।
“ হ্যালুসিন্যাসন?” তাকালাম ওর দিকে।
“ হ্যা! ওইটা! ওটা দেখেছো।” যেন বিশাল এক আবিষ্কার করে ফেলেছে এমন ভাবে রায় দিল।
“ রাম ছাগল। হ্যালুসিন্যাসন ছাড়া আর কোনো যুক্তি কি মাথায় আসে না? ভিজুয়্যাল আর অডিটরি- দুই হ্যালুসিন্যাসন এক সাথে হয়েছে আমার?”
“ এর থেকে ভাল কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারলাম না। আমার স্বল্প বুদ্ধিতে আলু ছিলে ছুইন-ই বড় ব্যাখ্যা। তুমি আলু ছিলার সময় ডাঃ এমরানকে দেখেছো তিনি হুইল চেয়ার ছাড়াই দাঁড়িয়ে উলটো ভাবে ছাদ থেকে ঝুলে ঝুলে নামায পড়ছেন।” উদাস ভাবে গাছের গায়ে হেলান দিল। বসেছি পার্কের একটা গাছের নিচে।
গত রাতের ঘটনাটা কাউকে বলতে না পেরে জাহিদকে বলার জন্য ডেকে এনেছি। কিন্তু ছাগলটা তার হাটুর মগজ দিয়ে চিন্তা করা শুরু করেছে।
বিরক্ত গলায় বললাম, “ রাখো তো! তোমার সব কিছু নিয়ে ফাজলামি! আমার হয়েছে আমি বুঝেছি, তুমি হলে বুঝতে কেমন লাগে।” কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম দু’জনে। তারপর আবার বলে উঠলাম, “ একটা ব্যাপার জানো- উনি নাকি কখনো দাবায় হারেননি তোরাব আলী মারা যাবার পর থেকে।”
“ তাই নাকি! দুই দান খেলা দরকার তো তাহলে! আমিও জীবনে কখনো হারি নাই এই খেলায়। অবশ্য দাবাই খেলি নাই এখনো, তাই হারার সুযোগ হয় নাই!”
“ ধুর! তোমার সাথে কথা বলাটাই আমার ভূল হয়েছে!” রাগ লাগলো।
জাহিদ উদার ভাবে হাসতে লাগল, “ হয়েছে বাবা! এখন মাফ কর। এই উদ্ভূট্টু কান্ড কারখানা শুনে দিনের বেলাতেই হাটুতে নোকিয়া ভাইব্রেশন ধরেছে, রাতের বেলা ঘুম হারাম হবে। এখন সাবজেক্টটা বাদ দাও। আসো, প্রেমালাপ করি বেগাম।” হঠাৎ যেন মনে পরতেই বলে উঠলো, “ ওউ! তোমাকে তো শুভ সংবাদটা দিতেই ভূলে গেছি বেগাম! শুভ সংবাদটা হল গিয়ে – আমার টিউশ্যনিটা চলে গেছে।”
“ কি! এটাও?” আৎকে উঠলাম। “ কি ছাত্র পড়াও যে টিউশ্যনি চলে যায়?”
“ আমার মত ছাত্র আর কি। যারা সারা বছর ফেল মেরে বার্ষিক পরীক্ষায় ফার্ষ্ট হয়, কিন্তু এভারেজে গিয়ে প্রমশন জোটে না।” উদাস মুখে আমার দিকে তাকাল।
“ চাকরি বাকরি ধরবে? নাকি গাছ তলায় সংসার পাতবে বলে ঠিক করেছো?” বিরক্ত হলাম।
জাহিদ গাছটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, “ খারাপ বল নাই তো! সংসার পাতার জন্য গাছতলাই উত্তম। যাও সপ্তাহে তিন দিন মশারী আমি লাগায় দিবো। বাকি কয়দিন তোমার পালা।”
“ উফ! অসহ্য!” রাগতে গিয়েও হেসে ফেললাম শেষ মুহূর্তে। জাহিদও হাসতে লাগল। ও হাসলে ওর চোখে পানি চলে আসে। খুব মায়া লাগে কেন জানি তখন।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

সে রাতের ঘটনার কথা অবশ্য ডাঃ এমরানকে জিজ্ঞেস করলাম না। জাহিদের সাথে কথা বলার পর নিজের ভেতরেই সন্দেহ হচ্ছে – কে জানে হয়ত চোখের ধাঁধাঁ ছিল পুরো ব্যাপারটা। দিনের আলোতে পুরো ঘটনাটা অবাস্তব লাগল যত বার ভাবলাম। শেষে বেশি চিন্তা করা বাদ দিয়ে কাজে মন দিলাম। ডাঃ এমরান আস্তে আস্তে সুস্থ হতে লাগলেন। আমি প্রতিদিন তাঁর মিউজিয়াম কাম বাড়িতে যাই। মাঝে মাঝে দু চার জন বিদেশী পর্যটক আসেন তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ শালা দেখতে। ডাঃ এমরান মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে দেখান। কখনো আমি। কেউ কেউ বই লেখার জন্য এখান কার অ্যানটিক্সের সম্পর্কে জানতে এলে আমি নয়ত ডাঃ এমরান ছোট খাট ক্লাস নিয়ে ফেলি। প্রায় সময় নানান স্কুল-কলেজ থেকে ছাত্র ছাত্রীরা আসে তাঁর মিউজিয়াম দেখতে। ডাঃ এমরান তখন মহা উৎসাহ নিয়ে তাদের সব ঘুরিয়ে দেখান। নানান গল্প শোনান কোথায়, কিভাবে এসব পেয়েছেন। শুনতে ভালই লাগে। শিক্ষক হিসেবে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কারণ হঠাৎ হঠাৎ উনি আমার কার্ড একজাম নেয়ার মত করে প্রশ্ন করা শুরু করেন। শুরুতে সামান্য ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও পরে বুঝে গিয়েছিলাম উনি কেন এটা করেন। আমি হাসপাতাল, প্র্যাক্টিস সব বাদ দিয়ে তাঁর সাথে পড়ে আছি এটা তাঁকে খুব বিব্রত করত। তাই নিজের জ্ঞান দিয়ে আমার জ্ঞানটাকে ঝালিয়ে নিতেন। যাতে আমি আবার চার্চার অভাবে সব ভূলে না যাই। তাঁর একরকম জোর পূর্বক জারি করা আইনের ফাঁদে পরে আমাকে সপ্তাহে দুই দিন তাঁর নিজের দেয়া নতুন হাসপাতালটায় গিয়ে রোগী দেখে আসতে হত। তাঁর বদ্ধমূল ধারনা আমি তাঁর সাথে থেকে থেকে সব ভূলে যাচ্ছি এত দিন যা শিখেছি। কিন্তু ওনাকে এটা বোঝাতে পারিনি ওনার এহেন আইটেম, কার্ড, প্রফ লেগে থাকলে কারো পক্ষে একটা চ্যাপ্টারও ভোলা সম্ভব না।
মাঝে মাঝে মিউজিয়ামে নানান জায়গা থেকে মালপত্র আসে। ডাঃ এমরানের কথা মত আমাকে প্রায়ই অনেক জায়গায় গিয়ে নিলাম থেকে অনেক জিনিস কিনে আনতে হয়। ব্যাপারটা দারুন লাগে। প্রথম প্রথম উনি আমাকে নিয়ে যেতেন কিভাবে নিলাম থেকে কিনতে হয় শেখাতে। এখন আমি একাই যাই। উনি বলে রাখেন কত থেকে কত’র মধে্য হলে কিনবো। আমি সে রকমই করি। খুব অল্প দিনে বেশ কয়েকটা দেশ ঘোরা হয়ে গেল ডাঃ এমরানের সঙ্গে। কখনো বা কুরিয়ারে অ্যানটিক্স এলে আমাকে মালপত্র মিলিয়ে রাখতে হয়। এভাবেই বেশ নির্বিঘ্নে কেটে গেল দুই মাস। কাজটার প্রতি কেমন যেন নেশা ধরে গেল। ডাঃ এমরান প্রতি মাসের প্রথম দিন একটা সাদা খামে আমার সেলারী তুলে দেন। বলার অপেক্ষা রাখে না চোখ কপালে ওঠার মত মতই টাকার অংক। যে কোনো হাসপাতাল থেকে তিন গুণ বেশিই দিচ্ছেন আমাকে। জাহিদ তো প্রথম মাসের টাকা দেখেই শিস দিয়ে উঠেছে, “ তোমার চাকরিটা আমাকে দিয়ে দেও বেগাম। তোমার এত কষ্ট আমার আর সহ্য হয় না। মাস শেষে যে টাকা দিতেছে- আমারে দশ বার ধোলাই খালে বেঁচলেও আসবে না! আমি বেকার পোলা, একটা চাকরি ধরায় দেও ওই বাড়িতে। মালি হলেও চলবে।”
কাজের প্রতি অনিহা কখনই ছিল না আমার। তার ওপর ডাঃ এমরানের দেয়া এত সব সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পর কাজের প্রতি একটা দায়ভারও জন্ম নিলো। গত কয়েকদিন হল ডাঃ এমরান একটা অক্টোপাস কিনেছেন। মিউজিয়ামের হল রুমটা মোড় নিয়েছে এদিক সেদিক। একটা অংশে বিশাল এক ইনডোর সুইমিং পুল। যদিও এখন কেউ নামে না সেখানে। ওখানেই অক্টোপাসটাকে রাখার ব্যবস্থা করেছি আমি। সাইড গুলো উঁচু রেলিং দিয়ে ইলেক্ট্রিফায়েড করা। যাতে অক্টোপাসটা উঠে আসতে না পারে। ডাঃ এমরান প্রায়ই এখানে এসে সময় কাটান। একা থাকেন বেশির ভাগ সময়। মাঝে মধ্যে আমার ভাইবা নেয়া ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথাই বলেন না দিনের পর দিন।
উনি তাঁর স্ত্রী জয়নাব আরার প্রতি ভীষণ দূর্বল ছিলেন সেটা বুঝতে পারলাম দু মাসের মাথায় এসে। সেদিন রাতে আমি চেক আপ শেষে তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো- এমন সময় হ্যান্ড ব্যাগের ধাক্কা লেগে দরজার পাশে ঝোলানো একটা বিরাট ঝিনুকের ডোরবেল মাটিতে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যায়। আমি ঘটনার আকষ্মিকতায় আৎকে উঠি। কিন্তু আমার থেকে শত গুণ বেশি আহত হলেন ডাঃ এমরান। বিছানায় শুয়েই পাগলের মত বলে উঠলেন, “ হায় হায়! এটা কি করলে তুমি? ওটা জয়নাবের কত পছন্দের ছিল জানো? ও নিজ হাতে ওখানে লাগিয়েছিল ডোর বেলটা।” কান্না সামলাতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।
আমি অপ্রস্তুত ভাবে বললাম, “ আ-আমি ইচ্ছা করে করিনি স্যার...... আমি খুবই স্যরি......” কি করবো বুঝতে পারলাম না। তাকিয়ে দেখলাম তিনি বিছানার কিনারে হেচড়ে চলে এসেছেন মরিয়া হয়ে। বিছানা থেকে ঝুঁকে মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ঝিনুকের একটা টুকরা তুলে নিলেন। চোখে ভূলও দেখতে পারি- এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল তাঁর গাল বেয়ে। আমি অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে রইলাম।
ডাঃ এমরান সঙ্গে সঙ্গে খুব অসুস্থ হয়ে পরলেন। এভাবে হুট করে অসুস্থ হয়ে পরবেন কল্পনাও করিনি। দেখতে দেখতে জ্বর উঠে গেল একশো তিন ডিগ্রী। কাঁপতে লাগলেন বিছানায় শুয়ে। আমার বাসায় যাওয়া হল না। থেকে যেতে হল। ওনার এ অবস্থায় বাসায় যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু জ্বরের ঘোরে উনি বারবার বলতে লাগলেন, “ তুমি এখনি বাসায় চলে যাও। আমি ঠিক আছি।”
কিন্তু সেটা আমি করতে পারি না। থেকে গেলাম। খারাপ লাগছিল খুব ওনার জন্য। আমার কারণে হল এসব।
রাত দু’টার দিকে ওনার জ্বর আরো বাড়ল। আমি উপায় না দেখে হল রুমে নেমে এলাম, হাসপাতালে ফোন করা দরকার। এখানেই শুধু ফোন রাখা। ডাঃ এমরান ফোনের শব্দ একেবারেই সহ্য করতে পারেন না বলে তাঁর ঘরে ফোন নেই।
আমি হল রুমে আসা মাত্র বিচিত্র একটা ঘটনা ঘটল। হঠাৎ করেই প্রচন্ড ঘুম এসে ভর করল আমার দু চোখে। মাতালের মত টলতে লাগলাম। টেলিফোন পর্যন্ত পৌছাতে পারলাম না। সফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম মুহূর্তের মধ্যে......... চোখ মেলার পর বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি। ঘুমিয়ে ছিলাম তো সোফার ওপর। কিন্তু এখন শক্ত কোথাও শুয়ে আছি। চোখ কোচলে উঠে বসলাম। ফ্লোরে বসে আছি। আবছা অন্ধকারে বেশ অবাক হলাম। সোফা থেকে পড়ে গেলে তো নরম-গোড়ালি ডুবে যাওয়া কার্পেটের ওপর পড়তাম। কিন্তু যেখানে আছি সেটা টাইলসের মত ফ্লোর। অবাক হয়ে এদিক সেদিক তাকালাম। ধীরে ধীরে চোখে অন্ধকার সয়ে এল। চমকে উঠলাম। বিশাল কোনো দাবার বোর্ডে বসে আছি আমি! বিরাট বিরাট সব সাদা কালো দাবার ঘর, আমার চারপাশে আধো অন্ধকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে বর্ম পরা অনেক গুলো মূর্তি! নড়ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে এখনি নড়ে উঠবে। আমি টের পেলাম আমার দু কানের পাশ দিয়ে যেন আগুণের হল্কা ছুটে গেল। উষ্ণ রক্তের একটা স্রোত বয়ে গেল মাথা থেকে পায়ের দিকে। আমি কম্পিত মুখে ধীরে ধীরে মাথার ওপরের দিকে তাকাতেই তীব্র একটা ভয় চেপে ধরল আমাকে! আমার মাথার ওপর দিকে ডাঃ এমরানের সেই হল রুম, হাজার হাজার অ্যানটিক্স আর বিশাল বিশাল বুক শেলফ! আমি ছাদ থেকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছি! নিজের অজান্তেই একটা চিৎকার দিয়ে উঠে দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু দৌড়ে কোথায় যাবো? মাটিতে একটা মানুষ যে ভাবে দৌড়ায়- আমি সেভাবে ছাদময় দৌড়াচ্ছি! আমার মধ্যাকর্ষন বল যেন ছাদের দিকে! ভয়ার্ত চোখে ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ডাঃ এমরানের পুরো মিউজিয়ামের হাজার হাজার জিনিস পত্র উড়ে ছুটে আসছে এই বিশাল দাবার বোর্ডের দিকে! যেন এই বিশাল বাড়িটাকে কেউ উল্টো করে বসিয়ে দিয়েছে। ছাদ নিচে, ফ্লোর ওপরে! ফ্লোরের দিক থেকে ছুটে আসা জিনিস পত্র গুলো বৃষ্টির মত আমার চারপাশে আছড়ে পড়া শুরু করল। প্রচন্ড শব্দ করে কাঁচের জিনিস গুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হতে থাকল। লাইব্রেরীর বই গুলো শেল্ফ থেকে উড়ে এসে পড়তে লাগল মূর্তি গুলোর ওপর। আমি আতংকে দিশেহারা হয়ে ছুটতে লাগলাম। আমার গায়েও এসে পড়ল দু একটা অ্যানটিক্স। তবে খুব ভারী না হওয়ায় বেশি কিছু হল না, কেবল ব্যথা পেয়ে পড়ে গেলাম। আবারও হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে পাগলের মত ছাদময় দৌড়ে বেরাতে লাগলাম। ডাঃ এমরানের হল রুমটা কয়েকটা বাঁক নিয়ে ঘুরে গেছে। ছাদটাও তাই। আমি বাঁক গুলো হয়ে হল রুমের অন্য দিকে ছুটলাম। হল রুমের কয়েকটা মোড় ঘুরতেই বিশাল ইনডোর সুইমিং পুলটা। যেখানে অক্টোপাসটা পোষেন ডাঃ এমরান। আমি বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে দেখলাম সুইমিং পুলের পানি সোজা উড়ে আসছে দাবার বোর্ডের দিকে! ছাদের এ অংশে মূর্তির ঘনত্ব বেশি। মূর্তি গুলোর ওপর রীতিমত সমুদ্রের গর্জন হেনে আছড়ে পড়ল সুইমিং পুলের টন খানেক পানি! পানির তোড়ে আমি খড় কুটোর মত ছিটকে গেলাম একদিকে! ভেসে যেতে যেতে একটা মূর্তির পা ধরে আটকে ফেললাম নিজেকে। আতংকিত হয়ে দেখলাম বিশাল মাকড়শার মত অক্টোপাসটাও উড়ে নেমে আসছে ছাদের দিকে! আমার নাকে মুখে পানি ঢুকেছে। বেদম জোরে কাঁশতে কাঁশতে উঠে দৌড়াতে লাগলাম। টাইলসে পানি পড়ায় পা পিছলে গেল হঠাৎ। দড়াম করে আছাড় খেতেই মাথার একপাশে একটা ভয়ংকর বাড়ি খেলাম। তীব্র যন্ত্রণায় কোনো শব্দই বেরুল না মুখ দিয়ে। জ্ঞান হারালাম।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
( পেজ - ২ )
হাসপাতালে জ্ঞান ফেরে আমার।
জ্ঞান ফিরে চোখ মেলতে জাহিদের মুখটা চোখে পড়ল। উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে ছিল, আমাকে চোখ খুলতে দেখেই দাঁত বের করে হাসল, “ এখন কেমন আছো বেগাম?”
আমি সামান্য নড়াতেই মাথার একপাশে তীব্র একটা ব্যথা অনুভব করলাম। মাথাটা যেন ছিঁড়েই যাবে! ব্যথায় মুখ বাঁকিয়ে ফেললাম, “ উফ! মাথাটা শেষ! ফেটে চার টুকরা হয়ে গেছে!”
“ সমস্যা নেই। ডাক্তারেরা সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে। এখন রোদে শুকাতে হবে। আর বলেছে এরপর যেন আর সোফায় শুয়ে ঘুমালে যেন সিট বেল্ট বেঁধে দেয়া হয়। তুমি তো ট্রাক ড্রাইভারের মত সোফায় ঘুমাও। ওখান থেকে পড়েই এই অবস্থা। আল্লায় বাঁচাইছে আরেকটু ওপর থেকে পড়ো নাই!”
আমি দূর্বল গলায় বললাম, “ আমি সোফা থেকে পড়িনি জাহিদ। পা পিছলে ছাদে পড়েছি। আমি চার তলা উঁচু ছাদের সেই দাবার বোর্ডে ছিলাম উল্টো ভাবে।”
জাহিদের মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গেল। থমথমে মুখে বলল, “ ডাক্তার মাথাটা জোড়া দেয়ার সময় নাট-বল্টু যে খুলে রেখে দেবে ভাবিনি। এতদিন জানতাম টি.ভি. মেকানিকরা এই কাজ করে। ডাক্তাররাও যে করে এই প্রথম জানলাম।” ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলল, “ তুমি ঘুমাবার চেষ্টা কর। নড়া চড়া একদম করবে না। আমি আছি এখানে।”
আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই জিজ্ঞেস করতে পারলাম না আমি এখানে কিভাবে এলাম? ডাঃ এমরান কি জানেন আমার এ অবস্থা কিভাবে হয়েছে? আর তিনিই বা কেমন আছেন এখন? ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের অবস্থা কি হয়েছে সেটা দেখতে যাওয়ার মত সুস্থ হতে হতে দশ দিন লেগে গেল। শুনলাম তিনি নাকি আমাকে দেখতে এসেছিলেন। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, তাই কথা হয়নি। জাহিদের সঙ্গেই তাঁর আলাপ হয়েছে। অনেক্ষণ কথা বলেছে তারা শুনলাম মিথিলার কাছে। জাহিদ যে কি এত বকবক করতে পারে বুঝি না! হাসপাতালে এ কয়দিন জাহিদ, খালা আর মিথিলা ছিল আমার সঙ্গে প্রায় সারাক্ষণ। জাহিদের স্বরচিত অখাদ্য কবিতা শুনে শুনে কানের পোঁকা বেরিয়ে যাবে এমন যখন অবস্থা- তখন হাসপাতাল থেকে ডিকসাস করে দিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কাজে ফেরার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রায় পাগল হয়ে উঠেছিলাম।
মিথিলা ব্যাগ গোছাচ্ছিল হাসপাতাল ছাড়ার আগে। আমি জামা পালতে সবে ওড়না দিয়েছি, এমন সময় কেবিনের দরজায় নক করার শব্দ হল। ফিরে তাকালাম।
“ কে?” মিথিলা জিজ্ঞেস করল।
“ ছোট বেগাম, আমি।” জাহিদের গলা শোনা গেল।
“ ও, ভাইয়া ভেতরে এসো।” গিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে দিয়ে এসে মিথিলা ব্যাগ গোছানয় মন দিল। জাহিদ দরজা খুলে মুখ ঢুকিয়ে উঁকি দিল। আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দিল, “ ডার্লিং ভাল আছো?”
“ ভেতরে ঢোকো।” হাত নেড়ে বললাম।
“ উঁহু! চোক্ষু বন্ধ করো গো বেগাম! সারপ্রাইজ গিফট এনেছি তোমার লাগি।”
“ তোমার এত ঢং করার এনার্জি আসে কোত্থেকে?” বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম। কিন্তু পরক্ষণেই চোখ খুলে মিথিলার দিকে তাকালাম, মিটিমিটি হাসছে, মুখে হাত চেপে হাসি আটকাবার চেষ্টা করছে। ধমক দিলাম আমি, “ হাসবি না ফ্যাঁক ফ্যাঁক করে।” আবার চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম।
শুনলাম জাহিদ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আমার সামনে এসে বোধ হয় হাটু গেড়ে বসল।
“ বেগাম, তোমার জন্য দুনিয়া তন্য তন্য করে একশো আটটা নীল পদ্ম না আনতে পারি। এই অধম প্রেমিক তার নতুন টিউশ্যনির জোরে একশো আটটা সিঙ্গারা ঠিকি আনতে পেরেছে! চোখ খুলো বেগাম, দেখে ধন্য হও!”
আমি চোখ খুলে ছানা বাড়া হয়ে গেলাম। জাহিদ বড় একটা কাটুনে করে একগাদা সিঙ্গারা নিয়ে এসেছে! গরম সিঙ্গারার ঘ্রানে কেবিনের বাতাস মোঁ মোঁ করছে!
দাড়াজ হাসি হেসে বলল জাহিদ, “ একটা কবিতাও লিখেছি বেগাম। তোমার শুভ মুক্তি উপলক্ষে – ” কেঁশে গলা পরিষ্কার করল – “ মনে পড়ে আমার দিকে
তাকিয়ে ছিলে ভীরু চোখে?
প্রহর শুরুর ক্ষুদ্র ক্ষণে
স্বপ্ন দেখা সপ্তালোকে?
পথটা যখন শুরুয় ছিল
রঙ্গিন নেশায় ভোর,
তোমার কোমল ভালবাসার
পাইনি সে আদর।
বেলায় কেবল অল্প করে
লাগত রঙের টান,
দূর বহুক্ষণ প্রত্যাশাতেই
প্রেমের আহবান।
প্রহর শেষে তোমার কাছে
এসেছি আজ তাই,
পথের শুরুয় পাইনি তো কি?
পথের শেষে চাই!” ভ্রুঁ নাচাল, “ কেমন হয়েছে বেগাম?”
আমি কিছু বলার আগেই মিথিলা জোরে হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল, “ ওয়াও জিজু! চো চুইট! ইস ক্যামেরা থাকলে ভিডিও করতাম।”
ওর দিকে তাকিয়ে এক হাতে বাক্সটা ধরে বাউ করার মত করল জাহিদ, “ শুকরিয়া, শুকরিয়া ছোট বেগাম!”
আমি কোমরে দু হাত দিয়ে নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম, “ এই টন খানেক সিঙ্গারা কে খাবে? টাকা হাতে পেলে ওড়াতে ইচ্ছা করে? ভাল একটা শার্ট কিনতে পারো না? একটা নীল শার্টে কি দশ বছর চালাবে?”
বিন্দু মাত্র মলিন হল না জাহিদের হাসি, “ ওটা যৌতুকের খাতায় জমা আছে। বিয়ের আগে এই এক শার্টে পার করে দেবো।” বাক্সটা হাতে উঠে দাঁড়াল, “ তোমার শুভ মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে মিষ্টি কেনা ঠিক হবে না। তাই ঝাল জিনিস বিলাবো ভেবেছি। ছোট বেগাম- ” মিথিলার দিকে তাকাল, “ চল সারা হাসপাতালে এগুলো বিলিয়ে আসি।”
মিথিলা ফিঁক করে হেসে দিল। আমি রেগে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাত ধরে, নাহ- কনুইয়ে কনুই ধরে বেরিয়ে গেল সিঙ্গারা বিলাতে!
বিরক্ত হলাম খুব। ঘুরে ব্যাগটা গোছাতে লাগলাম। জাহিদের কবিতাটার শেষ লাইন দুটো মাথায় ঘুরছে কেন জানি। খারাপ লেখেনি। কিন্তু প্রশংসা করলে পেয়ে বসবে। থাক। যেমন আছে থাকুক। আপন মনে হাসলাম ওর পাগলামীর কথা ভেবে।
সেন্ডেল নিতে ঝুঁকেছি মেঝেতে – হঠাৎ জমে গেলাম বরফের মত। ভয়ংকর একটা ভয় মাথা থেকে ছড়িয়ে গেল সারা শরীরে। রুমের লাইট জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে, তার ছায়া পড়েছে মেঝেতে। আমি বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে দেখলাম ফ্যানের ছায়ার সঙ্গে একটা মানুষের উল্টো ছায়া! সিলিং থেকে কেউ ঝুলে থাকলে যেমন হবে- ঠিক তেমন! আমি কাঁপতে লাগলাম আতংকে। খুব ধীরে ধীরে ঘুরলাম। রুমের সিলিংটা ঠিক সেই দাবার বোর্ডের মত হয়ে গেছে!
সেখান থেকে গম্ভীর মুখে ঝুলে আছেন ডাঃ এমরান! তাকিয়ে রয়েছেন সরাসরি আমার দিকে! দ্রষ্টব্যঃ "চতুরঙ্গ" কোনও সত্য ঘটনার উপর নির্মিত নয়।। লেখক মূলত ঘটনাটি সপ্নে দেখেন এবং পরবর্তীতে সেটাকে গল্পে রূপান্তরিত করেন।।

।। চতুরঙ্গ - তৃতীয় পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, September 2, 2011 at 11:25pm
চতুরঙ্গ – তৃতীয় পর্ব
মোঃ ফরহাদ চৌধুরী ( শিহাব ) ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরী হয়ে পড়ল। হাসপাতেলের ঘটনাটার পর আমি জ্ঞান হারিয়েছিমাল অল্প সময়ের জন্য। জাহিদ আর মিথিলা এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে আমার জ্ঞান ফেরায়। জ্ঞান ফেরার পরপরই আমি ওদেরকে বাসায় চলে যেতে বলে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের দিকে রওয়ানা দেই। জাহিদ আমাকে অসুস্থ শরীরে যেতে দিতে চাচ্ছিল না। কিন্তু আমি শুনলাম না। কারণ ডাঃ এমরানের সঙ্গে আগে কথা বলা দরকার। কথা না বলে আমি এক মুহূর্ত স্বাভাবিক থাকতে পারবো না। জাহিদ আমার সঙ্গে যেতে চাইলো – কিন্তু সেটাও নিষেধ করে দিলাম। কারণ ব্যাপার গুলো ওকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না, অবশ্য ওর জায়গায় আমি নিজে হলেও বিশ্বাস করতাম কিনা সন্দেহ আছে। আজগুবী এসব কথা বার্তা কেউ বিশ্বাস করবে না। তাই হাসপাতেলের ব্যাপারটা চেপে গেলাম ওর কাছে। আর মিথিলা তো আগা গোড়া কিছুই জানে না, বলিনি। শেষে খালাকে বলে দিলে আমার চাকরি করা নিয়ে টানা টানিতে পড়ে যাবো।
আমাকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে জানালায় দু হাত রেখে সামনে ঝুঁকলো জাহিদ, সামান্য সন্দিহান গলায় বলল, “ তুমি শিওর যে তুমি ঠিক আছো? না হলে বল, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পিছে পিছে আসি?”
মাথা নাড়াতে গিয়ে ব্যথাটা আবার টনটন করে উঠল, “ হুম। ঠিক আছি। তুমি চিন্তা কোরো না। ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করেই বাসায় ফিরে যাবো। তুমি মিথিলাকে বাসায় পৌছে দিও।”
একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়াল, “ বাসায় ফিরে ফোন দিও বেগাম। রাতে আবার মিউজিয়ামে থেকে যেও না। আমি কিন্তু খুব সন্দেহ প্রবণ জামাই। যদি টের পাই আমাকে ছেড়ে ওই বুড়োর ঘাড়ে ঝুলে পরার তালে আছো- তাহলে কিন্তু পানি পথের চতুর্থ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।”
“ জানি।” মৃদু হেসে বিদায় জানালাম জাহিদকে। ট্যাক্সি ছেড়ে দিল ড্রাইভার। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম জাহিদ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ না চোখের আড়াল হলাম দাঁড়িয়ে রইল। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।
উল্টো পাল্টা বাতাস শুরু হয়েছে। বৃষ্টি আসবে বোঝা যাচ্ছে। থেকে থেকে মেঘের গুর গুর শব্দ শোনা যাচ্ছে। ট্যাক্সি থেকে নামলাম মিউজিয়ামের সামনে এসে। সন্ধ্যার আলোতে দেখা যাচ্ছে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে কুন্ডলী পাঁকিয়েছে জীবন্ত প্রাণির মত, ঠিক দূর্গটার ওপর দিকে। খুব স্বাভাবিক দৃশ্যটাও বড় অবাস্তব লাগল।
সোলেমান আলী আমাকে দেখার সাথে সাথে গেট খুলে দিল, “ আপা এখন কেমন আছেন? মাথার ঘাঁ শুঁকাইছে?”
“ হ্যা এখন একটু ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?” বাতাসে চুল বারবার উড়িয়ে মুখের ওপর এনে ফেলছে দেখে ওড়নাটা ভাল করে মাথায় চাপিয়ে নিলাম।
“ কি যে চিন্তায় ফালায়া দিছিলেন আপনি!” সরল হাসি হাসল। বিশাল দেহী এই মানুষটার হাসি দেখলে মনে হয় ছোট বাচ্চা হাসছে।
“ স্যার আছেন? নাকি বাহিরে গেছেন?”
“ না। আছেন। যায় নাই কোথাও। আপনারে দেখতে গত পরশু দিন হাসপাতালে গেছিলান একবার। তারপর আর কোথাও যায় নাই।” গেটটা আবার লাগিয়ে দিতে দিতে বলল।
আমি খোয়া বিছানো পথ ধরে বিশাল সবুজ লনের মাঝ দিয়ে দূর্গটার দিকে হেটে গেলাম। লনের মাঝে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় কালো মূর্তি, গ্রীক পুরাণের নানান দেবতা, দেবীর আদলে গড়া সেগুলো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে লনের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আজকে এখনো জ্বালানো হয়নি। আবছা অন্ধকারে মূর্তিগুলো খুব রহস্যময় লাগছে তাই। হাটার সময় বারবার মনে হচ্ছিল ওগুলোর আড়াল থেকে কেউ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। অদ্ভূত একটা গা ছমছম করা অনুভূতি!
নার্গিস আশে পাশেই ছিলেন। ডোর বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, “ ওফ! শান্তি পেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে আর সুস্থ দেখবো কিনা! যে ভাবে মাথা ফেটে রক্ত দিয়ে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছিলে!” আমার হাত ধরে ভেতরে ঢোকালেন, “ আছো কেমন এখন?” শান্ত স্বভাবের এই মহিলাটির আন্তরিকতাটুকু খুব ভাল লাগল হঠাৎ।
আমি ওড়নার ওপর দিয়ে মাথার পেছন দিকে হাত বুলালাম নিজের অজান্তেই। চুলের আড়ালে ব্যান্ডেজটা ঢাকা পড়ে আছে। “ এখন একটু ভাল আছি...... স্যারের সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল- উনি জেগে আছেন?”
“ মনে হয়। ওনার রুমের লাইট জ্বলতে দেখলাম একটু আগেও। স্যার তোমাকে নিয়ে কি যে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন! পুরো দিশেহারা!” সিঁড়ির দিকে এগুতে লাগলাম দুজনে।
“ তাই?” ভাবলেশহীন কন্ঠে বললাম।
“ হ্যা। বারবার বলছিলেন- ‘মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে সারা জীবনেও ক্ষমা করতে পারবো না আমি’। নিঃসন্তান মানুষ তো, তোমাকে নিজের মেয়ের মত ভাবে।” সিঁড়ি পর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়ালাম আমি। হল রুমের দরজাটা খোলা। তার মাঝ দিয়ে স্পষ্ট দেখলাম পুরো হল রুম বহাল তবিয়তে রয়েছে! একটা জিনিসও এদিক সেদিক নেই! কোনো কাঁচের জিনিসও মিসিং নেই। অথচ সে রাতে তো কেয়ামত হয়ে গিয়েছিল! আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। এর মাঝেই আবার কারেন্ট চলে গেল। বাহিরে ভীষণ শব্দে বাজ পড়ছে। দূর্গের প্রতিটা ইট কাঁপছে থর থর করে। কাঁচের সব জিনিস পত্র ঝন ঝন করে উঠল।
অন্ধকারের মধ্যে নার্গিস বিরক্ত গলায় বললেন, “ দেখো দেখি কান্ড! সময় অসময় নাই কারেন্ট চলে যায়। তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি মোম জ্বালিয়ে আনি। জেনারেটরটা কয় দিন হল ঝামেলা করছে খুব। সোলেমান আজ সকালেই ঠিক করতে বসেছিল। কি জানি একটা পার্টস নতুন কিনে আনতে হবে। আজকে কেনা হয়নি। মোমবাতিই ভরসা আজকে।” অন্ধকারের মাঝে হারড়ে হাতড়ে চলে গেলেন তিনি। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সিঁড়ির কাছে। অন্ধকারের মাঝেও কাঁচের জানালা দিয়ে বাহির থেকে আসা ম্লান আলোতে আবছা ভাবে ঘরের জিনিস পত্র গুলো দেখা যায়। আমি সিঁড়ির রেলিং ধরে গলা বাড়িয়ে দো’তলার ঘরের দিকে তাকালাম। অন্ধকার। ডাঃ এমরান কি করছেন কে জানে। নার্গিসও আসছে না মোমবাতি নিয়ে। অস্বস্তি লাগছে খুব। বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাঁচের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চমকানোর সাদা আলো হঠাৎ হঠাৎ এসে দূর্গের ভেতরটাকে রহস্যময় করে তুলেছে।
হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। আমি ছাড়া মিউজিয়ামের, অর্থাৎ হল রুমের দরজা কেউ খোলে না। তালার চাবি আমার কাছেই থাকে সব সময়। অন্য আরেক সেট চাবি থাকে ডাঃ এমরানের কাছে। আমি না থাকলে খুব একটা আসেন না তিনি এখানে। কিন্তু অন্য কারো এখানে আসার কথা না। তাহলে হল রুমের দরজা খোলা কেন? নাকি ডাঃ এমরান এসেছেন এখানে? কথাটা মাথায় আসতেই কৌতুহল হল। আবছা আলো ছায়ার মাঝ দিয়ে ত্রস্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেলাম হল রুমের দরজাটার কাছে। নিজের অজান্তেই চোখ চলে গেল চার তলা ওপরের ছাদের দিকে। বজ্রপাতের সাদা আলোতে দেখা যাচ্ছে বিশাল দাবার বোর্ডে স্থির হয়ে ঝুলে আছে মূর্তি গুলো, কোনো স্পন্দন নেই। কেবল রহস্যময় একটা ভাব ওদের মাঝে।
অন্ধকারে ডুবে থাকা মিউজিয়ামটার ভেতর ঢুকতেই হাটুতে বাড়ি লাগল একটা ছোট কাঁচের মূর্তিতে। সতর্ক হয়ে গেলাম। পায়ে লেগে কোনো কিছু ফেলে দিয়ে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের ক্ষতি করতে চাই না।
কেমন যেন একটা চাপা অস্বস্তি লাগছিল। ভূতুড়ে কিম্বা অবাস্তব কিছু একটা দেখবো- এরকম একটা ভয় করছিল ভেতরে ভেতরে। কাঁপা গলায় ডাকলাম, “ স্যার? ডাঃ এমরান? আপনি এখানে আছেন?”
কথা গুলো প্রতিধ্বনিত হতে লাগল বিশাল হল রুমের দেয়ালে।
প্রায় সাথে সাথেই হল রুমের অন্য প্রান্ত থেকে ডাঃ এমরানের গলা ভেসে এল, “ কে? নোভেরা? এই অসময়ে তুমি এখানে?” গলা শুনেই মনে হল ভীষণ খুশি হয়েছেন আমাকে এখানে পেয়ে। আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। অস্বস্তি জড়ানো গলায় বললাম , “ আপনি কোথায় স্যার? এই অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।” পায়ের ভার বদল করলাম।
হল রুমের অন্য মাথা থেকে টর্চেরর আলো নড়া চড়া করতে দেখা গেল। “ দাঁড়াও, আসছি। লাইব্রেরীতে এসেছিলাম মাত্র। কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেল না। আর জেনারেটরটাও কিনা আজকেই নষ্ট হয়েছে।”
দেখলাম মাঝারি একটা ব্যাটারিওয়ালা টর্চ হাতে হইল চেয়ারে করে নিঃশব্দে কার্পেটের ওপর দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলেন ডাঃ এমরান। এ ক’দিনে আরো শুকিয়ে গেছেন। চোখ ঢুকে গেছে কোটরে। চশমার ওপাশের চোখ দুটো কেবল জ্বল জ্বল করছে। মুখে হাসি। খুব কম সময়ই এই হাসিটা দেখেছি আমি।
“ এখন কেমন আছো?” টর্চটা একটা বক্সের ওপর শুইয়ে রাখলেন যাতে সব দিকে আলো যায়।
“ মোটামুটি ভাল। আপনি এত শুঁকিয়ে গেছেন! খাওয়া দাওয়া করেন না?” একটা টুল টেনে বসে পড়লাম তাঁর সামনে।
“ আমার কথা বাদ দাও। আছিই দু-চার দিন। তার আবার খাওয়া দাওয়া। তোমার কথা বলো। আজকেই ডিকসাস হলে? ওষুধ পত্র খাচ্ছো ঠিকমত?”
“ হ্যা।” কথার খেঁই হারিয়ে ফেললাম। এত সহজ সরল মানুষটার কারণে আমার জীবনে যে বিরাট একটা আতংকের সৃষ্টি হয়েছে- কেমন করে বলি?
“ কি ব্যাপার? তোমাকে খুব টেন্সড লাগছে। কোনো সমস্যা?” ভ্রুঁ জোড়া কাছাকাছি হল তাঁর। আমার ওপর স্থির হল দৃষ্টি।
অস্বস্তিতে নড়ে চড়ে বসলাম। বার কয়েক খুঁক খুঁক করে কেঁশে জড়তা কাটিয়ে বলা শুরু করলাম, “ স্যার, আমি বোধ হয় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছি।”
“ কি রকম?” তীক্ষ্ণ হল তাঁর চোখের দৃষ্টি।
“ আমি মে বি আপনাকে নিয়ে হ্যালুসিন্যাসনে ভূগছি। আমি প্রায়ই আপনাকে দেখছি আপনি ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো ভাবে ঝুলে হাটা চলা করছেন, নামায পড়ছেন। এমনকি হাসপাতালেও আপনাকে আমার কেবিনে উল্টো ভাবে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। আমি...... আমি খুব কনফিউজড স্যার...... “ বিব্রত গলায় বললাম।
ডাঃ এমরান হাসতে লাগলেন আমার কথা শুনে, “ সে দিন জ্বরের ঘোরে তোমাকে কি না কি বলেছি আবোল তাবোল- আর ওমনি তুমি ভয় পেয়ে গেলে? বুঝ্রছি। আমার কথাতে হিপনটাইজড হয়ে গেছো। তাই এসব উল্টো পাল্টা জিনিস দেখছো। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। ডাক্তার হয়ে অবাস্তব জিনিসকে বস্তব ভাবো কি করে?”
আমি অপ্রস্তুত ভাবে বসে রইলাম, কিছু বললাম না।
“ তুমি ছোট মানুষ। তোমাকে সে দিন এত সব কথা বলা উচিত হয়নি। ভয় পেয়ে গেছো। ভয়টা কাটাও।” হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন।
প্রায় শোনা যায় না, এমন ভাবে আস্তে আস্তে বললাম, “ তার মানে সবটাই সম্মোহন?”
“ হুম। আনওয়ান্টেড হিপনোটাইজিং।” গম্ভীর মুখে হেলান দিলেন হুইল চেয়ারে।
“ তার মানে যা কিছু দেখেছি – সবটাই আমার ঊর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা? বাস্তবে এর অস্তিত্বই নেই?” হতাশ গলায় বললাম।
“ ঊর্বর মস্তিষ্ক না। অনুর্বর। মস্তিষ্ক ঊর্বর হলে এসব দেখতে না, বিশ্বাসও করতে না।”
আমি খুব আশাভঙ্গ হলাম। উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “ আজ তাহলে যাই আমি স্যার? কাল সকাল থেকে আবার আসা শুরু করবো।”
“ সুস্থ মনে করলে এসো। না হলে আরো কয়েকদিন ছুটি নিতে পারো। সমস্যা নেই।”
“ নাহ। যথেষ্ট ছুটি কাটিয়েছি। এবার কাজে ফেরা দরকার। আসি।” ঘুরে হাটা শুরু করলাম দরজার দিকে। বাহিরে যে হারে ঝড় বৃষ্টি চলছে- তাতে আজ বাসায় দাঁড় কাকের দশায় ফিরতে হবে।
মিউজিয়ামে একা বসে রইলেন ডাঃ এমরান। আমি দরজার কাছে চলে এসেছি- হঠাৎ বিচিত্র একটা জিনিস খেয়াল করলাম। ডাঃ এমরানের টর্চটা একটা বাক্সের ওপর রাখা ছিল। সেটার আলোটা এতক্ষণ দরজার এদিকে ছিল, তাই আমার ছায়াটা লম্বা হয়ে ছিল সামনের দিকে। কিন্তু আচমকাই ছায়াটা দ্রুত ছোট হয়ে আসা শুরু করল। যার অর্থ হল পেছন থেকে আলোক উৎসটা সোজা ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে! তাই আমার ছায়াটা খাঁড়া হয়ে এসেছে। আমি তীব্র একটা আতংক নিয়ে পেছন দিকে ঘুরলাম। ডাঃ এমরান হুইল চেয়ারটা ছেড়ে ধীর গতিতে শূণ্যে ভাসতে ভাসতে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছেন! তাঁর সঙ্গে সেই টর্চটাও শূণ্যে উঠে ওপরের দিকে চলে যাচ্ছে! তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নেই, লাইব্রেরীর উঁচু শেল্ফ থেকে বই নামাচ্ছেন ভাসতে ভাসতে! শুধু তাই না, বই বের করে শূণ্যে ছেড়ে দিচ্ছেন আর বই গুলো বজ্রপাতের আলোয় দেখা যাচ্ছে সেই দাবার বোর্ডের দিকে উঠে চলে যাচ্ছে!
আমি ভয়ে চিৎকার দেবো সেই শক্তিটাও পাচ্ছি না! বিদ্যুতের সাদাটে আলোয় স্পষ্ট দেখলাম ডাঃ এমরান বই গুলো ওপরের দিকে পাঠিয়ে নিজেও উঠে যেতে লাগলেন। হল রুমের ফ্লোর আর ছাদের মাঝা মাঝি উচ্চতায় গিয়ে তিনি দড়াবাজিকরদের মত ডিগবাজি খেয়ে উলটে গেলেন! পা চলে গেল ছাদের দিকে, মাথা চলে এলো ফ্লোরের দিকে! আমি হতভম্ব হয়ে আবিষ্কার করলাম ছাদের দাবার বোর্ডে অন্ধকারের মাঝে একটা টেবিল আর দুটো মুখোমুখি চেয়ার উল্টো ভাবে ঝুলে আছে। ডাঃ এমরান ধীর গতিতে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলেন। যেন মধ্যাকর্ষন শক্তি ছাদের দিকে তৈরি হল। ঠিক এ সময়ে-ই আবার বিদ্যুৎ চমকালো। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ও অদ্ভূত দৃশ্যটা দেখলাম-
ডাঃ এমরানের সামনের দিকের সেই চেয়ারে কম বয়সী নীল শার্ট পরা এক যুবক উল্টো ভাবে বসে আছে। গম্ভীর মুখে টেবিলের ওপর দাবার ঘুটি সাজাচ্ছে! যেন দাবা খেলবে এখন তাঁরা! একটা মোমবাতি উল্টো ভাবে টেবিলের ওপর জ্বলছে। টেবিলের একপাশে সেই বই গুলো একটার ওপর একটা সাজিয়ে রাখা। পড়ে যাচ্ছে না কোনোটাই। ভয়টা ধীরে ধীরে আতংকে রুপ নেয়া শুরু করল হঠাৎ । এসব দেখে চমকাইনি আমি। যেটা দেখে আমার মাথা ঘুরে উঠল ভয়াবহ আতংকে – সেটা হল – বজ্রপাতের ক্ষণিক সাদাটে আলোয় দেখা যাচ্ছে নীল শার্ট পরা যুবকের মুখটা............ জাহিদ!
আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল! (চলবে) দ্রষ্টব্যঃ "চতুরঙ্গ" কোনও সত্য ঘটনার উপর নির্মিত নয়।। লেখক মূলত ঘটনাটি সপ্নে দেখেন এবং পরবর্তীতে সেটাকে গল্পে রূপান্তরিত করেন।। From: Textile Engineering College, Chittagong facebook id: Nithor Shrabon Shihab
E-mail id: Rudroaimel@yahoo.com

।। চতুরঙ্গ - চতুর্থ পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, September 3, 2011 at 10:51pm
চতুরঙ্গ – চতুর্থ পর্ব
মোঃ ফরহাদ চৌধুরী ( শিহাব ) আমি ট্যাক্সিতে উঠেই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখের পানি মুছলাম। বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। মোবাইলটা বের করে ফোন দিলাম জাহিদের নাম্বারে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। ট্যাক্সির উইন্ডশীল্ডের ওয়াইপার দুটো একনাগারে এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমেছে। তার মধ্যেও জ্যাম।
ওপাশে রিং হচ্ছে। দীর্ঘ একেকটা ডায়াল টোনের শব্দ। লাগছে অনেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফোন ধরছে না জাহিদ। অস্থির হয়ে উঠলাম। কিন্তু অস্থির হওয়ার কিছুই নেই। মাত্র দু’বার ডায়াল টোন হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর যেন ফোন ধরল জাহিদ, “ হ্যালো? নোভেরা? বাসায় ফিরেছো?”
“ তুমি এখন কোথায় জাহিদ?” কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম।
“ কেন? স্টুডেন্টের বাসায়। পড়াতে এসেছি।” খুব অবাক হল। শুনতে পেলাম ছাত্রকে ধমক দিয়ে বলছে, “ কি হল? পড়ো না ক্যান? কান টান দিয়া ছিঁড়া ফালাবো!” সাথে সাথে গলা ফাটিয়ে পড়ার শব্দ শুরু হয়ে গেল। মনে হচ্ছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, ছোট ছোট।
আমি ক্লান্ত ভাবে সিটে হেলান দিলাম, “ মিথিলাকে পৌছে দিয়েছো?”
“ হ্যা। তুমি কোথায়? এখনো বাসায় যাওনি?”
“ যাচ্ছি। জ্যামে আটকা পরেছি। বাসায় গিয়ে ফোন দিবো। রাখি?”
“ আচ্ছা।” লাইন কেটে গেল।
খুব ক্লান্ত লাগছে। ঘুম ঘুম একটা ভাব দুই চোখে। জেগে থাকার চেষ্টা করছি। ট্যাক্সিতে একা। ঘুমিয়ে পড়লে ট্যাক্সি ড্রাইভার কোথায় না কোথায় নিয়ে যাবে, ঠিক নেই। বিপদ আপদ তো আর বলে কয়ে আসবে না।
শত চেষ্টার পরও ঘুম ঘুম ভাবটাকে কাটাতে পারলাম না। সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। মিষ্টি একটা মাদকীয় গন্ধ পাচ্ছি এর মাঝে। খুব কড়া গন্ধ। মাতাল করে ফেলে। আমি ঝাঁকি খেয়ে জেগে উঠলাম। চারপাশে গাড়ি আর রিক্সার সমুদ্র। রাস্তায় এত পানি জমেছে যে – যে কোনো মুহূর্তে পানি ঢুকে যেতে পারে ইঞ্জিনে। বৃষ্টি খুব। ওয়াইপার গুলো একটানা ক্লান্তিহীন ভাবে উইন্ডশীল্ড মুছে যাচ্ছে। গাড়ির ভেতরে আলো নেই। কেবল গ্যাসের ডায়াল আর স্পিড মিটারের নীলচে সবুজ আলো। বাহির থেকে মাঝে মাঝে আলো আসছে।
আমি সামান্য নড়েছি কেবল, আমার ডান হাতটা পাশের সিটের ওপর পড়তেই চমকে উঠলাম। বরফ শীতল একটা হাতের ওপর হাত রেখেছি! আমার কাঁধের দিকটায় যেন উষ্ণ রক্তের স্রোত বয়ে গেল। পেছনের দিক থেকে আন্যান্য গাড়ির হেড লাইটের আলো আসছে কাঁচ ভেদ করে। তার মাঝে বিস্ফোরিত চোখে দেখলাম আমার পাশে অসম্ভব সুন্দরী এক মহিলা বসে আছেন। লম্বা হাতা ওয়ালা ব্লাউজ। বাম হাতের ওপর হাত পড়েছিল আমার, সেখানে একটা বেল্টওয়ালা কালো ঘড়ি। আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে হাসলেন। এই মানুষটার ছবি আমি হাজার বার দেখেছি ডাঃ এমরানের বেড রুমের দেয়ালে – তাঁর স্ত্রী জয়নাব আরা!
আমি আতংকে পিছিয়ে ট্যাক্সির দরজায় সেঁটে গেলাম। দরজা খুলে যে পালাবো সে কথাও মনে পড়ল না।
জয়নাব আরা আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন, “ কি ব্যাপার? ভয় পাচ্ছো আমাকে?”
আমি একটা কথাও বলতে পারলাম না। জমে গেছি যেন।
একটা হাত বাড়িয়ে আমার হাত ধরলেন, বরফের মত ঠান্ডা। হাসলেন, “ আমাকে ভয় পেও না। স্বাভাবিক হও।”
আমি এতই ভয় পেয়েছি যে ওনার হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়াতেও পারলাম না।
“ সামনে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। তাই এত জ্যাম।” বাহিরের বৃষ্টি হতে থাকা বিশাল জ্যামটার দিকে তাকালেন, “ তুমি ঘুমিয়ে পড়ছিলে দেখে চিন্তা হল। একা একা এভাবে বের হওয়া ঠিক না।” জয়নাব আরা ফিরলেন আমার দিকে, “ ভিজে গেছো দেখি। ঠান্ডা বাঁধবে তো!” আমি ভয় এবং বিষ্ময় নিয়ে লক্ষ করলাম উনি ওনার শাড়ির আচোঁলের এক প্রান্ত দিয়ে আমার হাত, মুখ, মাথা মুছে দিতে লাগলেন...... যেন কোনো মা তার ছোট বাচ্চাকে বৃষ্টিতে ভেজার পর আচোঁল দিয়ে মুছে দিচ্ছেন......
হীম শীতল হাত গুলোর স্পর্শ্বটুকু বাদ দিলে আমার ভয় পাওয়ার মত কিছুই ছিল না। উনি আমার আমার মাথা মুছে দিতে দিতে বললেন, “ এত বড় একটা মেয়েকে কোন আক্কেলে এই ঝড় বাদলের রাতে বাড়ি থেকে বের হতে দিয়েছে এমরান? ওর কান্ড জ্ঞান দেখি দিন দিন লোপ পাচ্ছে! ড্রাইভার দিয়ে বাড়ি পৌছে দেয়া যেত না? নাসের ভাই তো সারাদিন বেকার বসেই থাকেন। আমি নেই, এমরানেরও বোধ বুদ্ধি কমা শুরু করেছে!”
আমি ঘোরের মধ্যে ডুবে আছি। আতংক আর মমতা- এ দুটোকে আলাদা করে চেনার মত ক্ষমতাটুকু কাজ করছে না। প্যারালাইজড রোগীর মত দরজার গায়ে এলিয়ে আছি স্পন্দনহীন ভাবে।
“ এমরানকে বলবে আমি বলেছি যে তোমাকে বিকেল পাঁচটার পর ছুটি দিয়ে দিতে। রাত আটটা পর্যন্ত কিসের এত কাজ?” কঠোর গলায় বললেন জয়নার আরা।
জ্যামের মধ্যে গাড়িটা নড়তে শুরু করেছে। খুব ধীরে ধীরে এগুচ্ছে শামুকের মত গতিতে। বড় সড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে সামনে। আমাদের গাড়িটা সেটার পাশ কাটানোর সময় দেখলাম একটা মাইক্রো বাস পুরো থ্যাঁতলে গেছে একটা ট্রাকের বাড়ি খেয়ে। কেউ বাঁচেনি মনে হচ্ছে। দেখলাম অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তোলা হচ্ছে সাদা কপড়ে ঢেকে। বৃষ্টি হচ্ছে খুব।
ড্রাইভারকে বলতে শুনলাম, “ ইসসিরে! দুইটা ছোট বাচ্চাও মরছে! আল্লায় যে কারে কখন তুইল্যা নেয়।”
জয়নাব আরা কথাটা শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন। আমি ঢোক গিললাম। ড্রাইভার কি জয়নাব আরাকে দেখতে পাচ্ছে?
রাতের নিকশ কালো অন্ধকারের মাঝ দিয়ে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে আমাদের গাড়িটা ছুটে চলেছে। অজানা একটা ভয় আর বোধহীন শূণ্যতা ঘুরপাক খাচ্ছে আমার ভেতরটায়।
আমাদের এলাকাটার সামনে এসে যখন ট্যাক্সিটা থামল জয়নাব আরা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কোমল স্বরে বললেন, “ যাও। তোমার বাসায় ফেরাটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল। সন্ধ্যার পর বাহিরে থেকো না। কেমন?”
আমি যন্ত্রের মত দরজা খুলে নেমে গেলাম। ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে গিয়ে হাত গুলো কাঁপছিল। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি আবার। পেছনের জানালাটার দিকে তাকালাম। জয়নাব আরা এখনো বসে আছেন, স্নেহ ভরা চোখে তাকিয়ে আছেন; আমি তাকানো মাত্র আবার বলে উঠলেন, “ ভিজে যাচ্ছো তো! তাড়াতাড়ি যাও!”
আমি মাথায় ওড়না দিয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করলাম। চাবি দেয়া পুতুলের মত বাসার দিকে দৌড়াতে লাগলাম। পেছন দিকে ফিরে তাকাবার সাহস আমি হারিয়ে ফেলেছি।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

বাসায় যেতে দুটো গলি পরে রাস্তায়।
মাত্র একটা গলি ঘুরেছি – সামনে দেখলাম একটা ল্যাম্প পোষ্টের হলুদ লাইটের নিচে নীল শার্ট পরা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখেই বোঝা গেল – জাহিদ।
আমাকে দেখেই দাঁতগুলো সব বের করে হাসল, “ বাসায় ঠিক মত এসেছো কিনা দেখতে এলাম। টিউশ্যনি শেষ হতেই এক দৌড়ে এখানে।” বৃষ্টিতে অনেক্ষণ ধরেই ভিজছে, শার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেগে আছে ওর।
জাহিদকে হঠাৎ এখানে দেখে যতটা না অবাক হলাম, তার চেয়ে খুশি হলাম অনেক বেশি। প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিলাম এতক্ষণ। কিন্তু ওকে দেখা মাত্র ভয়টা দূর হয়ে গেল মুহূর্তেই। যদিও কোনো কথা বলতে পারলাম না, কেবল বললাম, “ ভাল করেছো।”
হাটতে লাগলাম দুজন। জাহিদ বলল, “ ফোনে তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছিল খুব টেনসিত তুমি। তাই ভাবলাম দেখে যাই। তোমার জে.এব.বি. খালা তো আর এত রাতে ঘরে ঢুকতে দেবে না, তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
“ সাবধানে হাটো। এখানে জায়গায় জায়গায় ম্যনহলের ঢাকনা নেই। চোরে নিয়ে যায়। ল্যাম্প পোষ্টের লাইটও চুরি যায় লাগাতে না লাগাতেই।”
এক গাল হেসে আমার হাত ধরল জাহিদ, “ অসুবিধা নাই। ম্যানহলে পড়লে তুমি ওম্যান আছো, টানে তুলবা।”
“ আমার অত শক্তি নেই যে তোমার মত হাতি টেনে ম্যানহল থেকে বের করবো।” কেউ দেখে ফেলবে এই ভয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। কিন্তু ম্যানহলে পড়ে যাবে এই ভয়ে ওর শার্টের একটা অংশ মুঠো করে ধরে রাখলাম। সেটা দেখে জাহিদ উদাস গলায় ল্যাম্প পোষ্টের হলুদ বাল্বটার দিকে তাকিয়ে বলল, “ বেগাম, জগতের শেষ ল্যাম্প পোষ্টের বাল্বটা চুরি যাওয়ার পরেও আমি হারিকেন জ্বালিয়ে তোমার পাশে পাশে এভাবে শার্ট ধরিয়ে হাটবো...... কারণ, তোমার পাশে হাটতে আমার বড় ভাল লাগে! মনে হয় যেন বয়সটা একুশের ঘরে আটকে আছে এখনো!”
আমি অন্য সময় হলে হাসতাম, আজ হাসতে পারলাম না। (চলবে) দ্রষ্টব্যঃ "চতুরঙ্গ" কোনও সত্য ঘটনার উপর নির্মিত নয়।। লেখক মূলত ঘটনাটি সপ্নে দেখেন এবং পরবর্তীতে সেটাকে গল্পে রূপান্তরিত করেন।। From: Textile Engineering College, Chittagong facebook id: Nithor Shrabon Shihab
E-mail id: Rudroaimel@yahoo.com

।। চতুরঙ্গ - পঞ্চম পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, September 4, 2011 at 10:48pm
চতুরঙ্গ – পঞ্চম পর্ব “ স্যার আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো আমি। প্লিজ জবাবটা দেবেন।”
“ কি প্রশ্ন?” নামায পড়ার কাঠের চেয়ারটায় বসেছিলেন। অবাক হয়ে মাথা থেকে টুপিটা খুলে বেড সাইড টেবিলের ওপর রাখলেন। নামায শেষ হয়েছে। এতক্ষণ নামায পড়ছিলেন দেখে বাহিরে করিডোরে পায়চারি করছিলাম অস্থির ভাবে। বারবার উঁকি দিয়ে যাচ্ছিলাম নামায শেষ হয়েছে কিনা। গত রাতে এক ফোঁটা ঘুম হয়নি আমার। সারা রাত মিথিলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অজানা একটা ভয়ে সারাক্ষণ কাঁপছিলাম। দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি এক মুহূর্তের জন্য।
ডাঃ এমরান দাঁড়িতে আঙ্গুল বুলালেন কৌতুহলি মুখে, আবার জিজ্ঞেস করলেন, “ কি প্রশ্ন? এত অস্থির দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”
“ স্যার, আপনার অ্যাক্সিডেন্টটা সম্পর্কে বলুন প্লিজ। জয়নাব আরার মৃত্যু সম্পর্কে জানা ভীষণ প্রয়োজন আমার।” রীতিমত অনুনয় মেশানো গলায় বললাম।
ডাঃ এমরান গম্ভীর হয়ে গেলেন প্রশ্নটা শুনে। আর চোখে দেয়ালে ঝোলানো তাঁর স্ত্রীর ছবিটার দিকে তাকালেন, কাঁশলেন, “ হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
“ স্যার প্লিজ বলুন। আমি নয়ত পাগল হয়ে যাব!” মিনতি ভরা কন্ঠে বললাম। “ আমার ধারণা আমি তাঁকে দেখেছি গতকাল সন্ধ্যায়।”
আমার কথা শুনে সামান্য তম চমকালেন না তিনি। কেবল গম্ভীর মুখে হাতের নখ দেখতে লাগলেন।
“ It was just an ordinary road accident. nothing to explain. গাড়ি আমি ড্রাইভ করছিলাম সেদিন। নাসের অসুস্থ ছিল। তাই গাড়ি আমাকেই ড্রাইভ করতে হয়েছিল। সেটাই কাল হল। সঙ্গে ছিল জয়নাব। একটা ব্রীজ পাড় করার সময় অন্য দিক থেকে আসা কারের হেড লাইটের আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। আমি ড্রাইভিং-এ কাঁচা ছিলাম। ব্যস, যা হবার হয়ে গেল। ফলাফল তোমার সামনেই দেখতে পাচ্ছো। আমি হুইল চেয়ারে বন্দী, জয়নাব দেয়ালে ফ্রেমে বন্দী।” ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন।
“ ব্যস? এটুকুই?” আমি নিজের পায়ের ওপর ভর রাখতে পারছিলাম না, একটা টুল টেনে বসে পরলাম।
“ হুম। আর কিছুই নেই।” টেবিল থেকে একটা কোরআনের তাফসির বই তুলে নিলেন। স্পষ্ট বোঝা গেল আমাকে চলে যেতে ইঙ্গিত করছেন। আমি ক্লান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালাম, মুখের ওপর এসে পরা চুল গুলোকে কানের পেছনে পাঠিয়ে দিলাম, “ স্যার, আমি প্রচন্ড মানসিক সমস্যায় ভূগছি মে বি। আমি জানি না এর থেকে পরিত্রাণের উপায়টা কি।” দরজার দিকে হাটা লাগালাম।
হঠাৎ শুনলাম পেছন থেকে ডাঃ এমরান বলছেন, “ আচ্ছা নোভেরা, বলতে পারো ধর্মের উৎপত্তি কোত্থেকে?”
ফিরে তাকালাম অবাক হয়ে, মাথা নাড়ালাম, “ জানি না স্যার।”
“ যেখানে বিজ্ঞানের সমাপ্তি, সেখান থেকেই ধর্মের শুরু। তুমি বিজ্ঞাকে স্বীকৃতি দিতে পারো, অথচ ধর্মকে কেন নয়? তুমি প্রাইমারি স্কুল পড়বে অথচ হাই স্কুলে যাবে না- কেমন দেখাবে? ইদানীং কালে চারপাশে খুব বেশি নাস্তিক ছেলে মেয়েদের দেখা যাচ্ছে- কেন বলতে পারো?”
“ জানি না স্যার।” বিমূঢ়ের মত একই উত্তর দিলাম।
“ জ্ঞান অর্ধেক কিংবা অপূর্ণ থাকায়। স্বল্প জ্ঞান নিয়ে এরা ধর্মকে ব্যাখ্যা করতে যায়- এবং ব্যাখ্যা করতে না পেরে স্রষ্টা ও ধর্ম- দুটোকেই অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেয়। এরা নিজেরাই বিভ্রান্ত এদের স্বল্প জ্ঞান নিয়ে। যার কারণে সরল অংক করতে গিয়ে এরা মাঝ পথে আটকে যায় এবং বলে অংকে ভূল আছে। তার যোগ বিয়োগ জানায় যে ভূল আছে সেটাই বোঝে না। সেটাকে ঢাকতেই নাস্তিকতা বাদের এত চর্চা। দুনিয়াতে সব বড় বড় বিজ্ঞানীদের তুমি আস্তিক হিসেবে পাবে। কিন্তু বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখবে কট্টর নাস্তিক হিসেবে। যারা নিজেদের অজান্তেই তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু নাস্তিক ছাত্র-ছাত্রী প্রসব করছে। বুঝতে পারছো ব্যাপারটা? বর্তমানে গ্লোবাল ভিলেজ র্যািভুলিউশনের মত এটাও গ্লোবালাইজেশনের পর্যায়ে পড়ে গেছে। তাতে বোঝা যাছে শূণ্য কলস বিদ্যাধারী স্টুডেন্টদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। বিজ্ঞানের অক্ষমতাকে এরা অস্ত্র বানিয়ে ধর্মকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে- কিন্তু সেটা কতটুকু যৌক্তিক?”
আমি হঠাৎ করেই হেসে ফেললাম।
ডাঃ এমরান ভ্রুঁ কোঁচকালেন, “ হাসছো কেন?”
“ আপনাকে দেখে হঠাৎ ডাঃ জাকির নায়েকের কথা মনে পরে গেল। ওনার কথা বলার ধরনটা অনেকটা আপনার মত।”
হাতের বইটা টেবিলের ওপর রেখে হতাশ ভাবে মাথা নাড়ালেন ডাঃ এমরান, “ সিরিয়াস কথার মাঝ খানে তোমরা যে কিভাবে হাসতে পারো!”
“ স্যরি স্যার।” অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
“ হুম........ বসো।” টুলটা ইঙ্গিত করলেন। আমি এসে বসার পর উনি বলা শুরু করলেন-
“ তোমাকে কথা গুলো বলার পেছনে কারণ ছিল। তাই বলেছি। কারণ তুমি দুনিয়াতে খুব অদ্ভূত কিছু কিছু জিনিস দেখবে- যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানে পাবে না। কিন্তু বিজ্ঞান তোমাকে ব্যাখ্যা না দিতে পারলেও ধর্ম তোমাকে সেটার ব্যাখ্যা এনে দেবে। আমার জীবনে সেরকম কিছু ঘটনা ঘটেছিল যার ব্যাখ্যা কিংবা বিশ্লেষণ করার মত ইচ্ছা জাগেনি মনে। সব কিছুর ব্যাখ্যা থাকতে হবে- এটা দাবি করা অন্যায়। যদি না সে ব্যাখ্যাটা গ্রহণ করার মত পূর্ণ জ্ঞান তোমার থাকে। জগতের স্রোত খুব বিচিত্র।” দম নিলেন। কাঠের চেয়ারটায় বসে থাকায় হেলান দিয়ে বসছেন না। পিঠ সোজা করে বসে আছেন।
“ আমার স্ত্রী জয়নাব খুব ধার্মীক মেয়ে ছিল এটা তো আগেই বলেছি। বিয়ের দীর্ঘ দশটা বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও কোনো সন্তান হয়নি আমাদের। সমস্যাটা জয়নাবের ছিল, ভেঙ্গে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।” মৃদু কাঁশলেন খুঁক খুঁক করে।
“ সন্তান না হওয়ার কারণে জয়নাব সারাক্ষণই মন মরা হয়ে থাকতো। একা একা এই বিশাল বাড়িতে ঘুরে বেড়াত। এটা সেটা গুছিয়ে সময় কাটাবার চেষ্টা কবত। কিন্তু কখনো আমাকে ওর দঃখটা মুখ ফুটে বলেনি। সারাদিন নামায আর কোরআন নিয়ে পড়ে থাকত। দেখতে দেখতে কোরআন হেফয করে ফেলল। বিড়বিড় করে অন্ধকারের মধ্যে প্রায় রাতেই শুনতাম কোনো না কোনো সুরা পড়ছে আমার পাশে শুয়ে। ভাবতাম জেগে আছে, কিন্তু পরে একদিন দেখলাম ঘুমের মধ্যেই ওভাবে সুরা গুলো পড়ে যায় জয়নাব।
তোরাব চাচা মারা যাওয়ার চল্লিশ দিন পর্যন্ত আমি কোমরের ব্যথার জন্য বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। সে সময়টা জয়নাব সারাক্ষণ আমার পাশে থেকেছিল। রাতে ভয় পেতাম বলে সারা রাত জেগে আমার মাথার কাছে বসে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করত। আমি কখনো ওর কাছে কিছু লুকাইনি। তাই সেই রাতে দাবার বোর্ডে তোরাব চাচাকে দেখার ঘটনা ও জানত। অবিশ্বাস করেনি আমাকে। আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিল, “ ভাল মানুষের সাথে আল্লাহ সব সময় ভালই করে। তুমি চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তোরাব চাচা মারা যাওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরের কথা। জয়নাব বেশ কিছুদিন ধরেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে আছে। কথা বলে খুব কম। কিছু জিজ্ঞেস করলে হ্যা-না বলে উত্তর দেয়। রাত জেগে আমার মাথার কাছে বসে থাকে। ঘুমাতে বললেও ঘুমায় না। আমি জানতাম না মানুষের মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে টের পাওয়া যায় নাকি- কিন্তু জয়নাব বোধ হয় টের পেত। প্রায়ই আমাকে বলত, “ এ বাড়ির সব আয়না গুলোতে কোনো সমস্যা হয়েছে এমরান। আমি সামনে দিয়ে হাটলেই দেখি আমার শাড়ি, স্কার্ফ- সব সাদা রঙের।” আমি ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি ওর যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। ও মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে কেমন যেন অস্বাভাবিক রকমের চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল, অ্যাক্সিডেন্টের আগের রাতের কথা-
জয়নাব আমার পাশে সুরা বিড়বিড় করে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমিও অঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম। মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ। খুব অদ্ভুত স্বপ্ন! দেখলাম যে আমি ছাদের সেই দাবা বোর্ডে উল্টো হয়ে একটা চেয়ারে বসে আছি। সামনে একটা টেবিল, টেবিলের অন্যপাশে ছোট একটা বাচ্চা ছেলে। নয়-দশ বছর বয়স হবে। নীল শার্ট পরা। আমার সঙ্গে দাবা খেলছে। আমাদের মাথার দিকে পুরো হল রুম, মিউজিয়াম। আমি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাচ্চাটার সাথে দাবা খেলছি। বাচ্চাটা অসম্ভব ভাল খেলে। মাত্র অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই আমার সব ঘুটি গায়েব করে দিল। ষোল চালে নেমে এল খেলা! আমি হারার ভয়ে রীতিমত ঘামছি। কিন্তু ছেলেটার সেদিকে ভ্রুঁক্ষেপ নেই। গম্ভীর মুখে খেলে যাচ্ছে। আমি হারতে হারতে খেলাটা ড্র করলাম কোনোমতে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখি দুষ্টু একটা হাসি ফুটেছে চোখের তারায়। মুখে চাপা হাসি।
“ হাসছো কেন?” জিজ্ঞেস করলাম।
“ আপনাকে হারানো নিষেধ। তাই।” হাসতে লাগল ছেলেটা। হাসিটা এত নিষ্পাপ যে বুকের ভেতর কেমন যেন ব্যথা জাগে। দেখলাম হাসির চোটে চোখে পানি এসে গেছে বাচ্চাটার।
“ কে নিষেধ করেছে আমাকে হারাতে?” অবাক চোখে তাকালাম।
“ দাদু।” চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ছেলেটা। কালো হাফ প্যান্ট আর নীল শার্ট গায়ে। খালি পা। আমার দিকে না তাকিয়ে ছাদের বোর্ডের বিশাল বিশাল মূর্তি গুলোর দিকে হাত তুলে বলল, “ এখানে তো শুধু এক সেট ঘুটি। কালো। সাদা নাই?”
আমি মাথা নাড়ালাম, “নাহ।”
“ আমি বড় হলে একদিন এই বোর্ডে খেলবো। সেদিন হারাতে পারবেন না আমাকে। ড্র-ও করতে পারবেন না।”
“ তোমার দাদুর নাম কি?” পেছন থেকে বললাম।
জবাব দিল না বাচ্চাটা। দেখলাম মহাশূণ্যের নভোচারীদের মত ধীর গতিতে ওপর দিকে উড়ে যাচ্ছে! বোর্ড ছেড়ে হল রুমের ফ্লোরের দিকে উঠে যাচ্ছে শূণ্যে ভাসতে ভাসতে! মাঝামাঝি গিয়ে একটা ডিগবাজি খেয়ে পা চলে গেল হল রুমের দিকে, মাথা বোর্ডের দিকে। অন্ধকারের মাঝে মিউজিয়ামে হারিয়ে গেল।
আমার ঘুম ভাঙ্গল তখন। কিছু বলার আগেই জয়নাব অন্ধকারের মধ্যে অদ্ভূত কন্ঠে বলে উঠল, “ বাচ্চাটা তোরাব চাচার নাতি। সাভারের একটা অনাথ আশ্রমে আছে।”
আমি কোনো কথা বললাম না। বিয়ের পর থেকেই জয়নাব আমার কাছে একটা বিষ্ময় ছিল, আজ নতুন না যে অবাক হতে হবে।
পরদিন গাড়ি নিয়ে সাভারের সেই অনাথ আশ্রমে গিয়েছিলাম আমি আর জয়নাব। কিন্তু গিয়ে লাভ হয়নি। শুনলাম তোরাব চাচার নাতি গত কয়দিন আগে পালিয়ে গেছে আশ্রম ছেড়ে। থানায় জি.ডি. করা হয়েছে। আমার খুব অবাক লাগল। অপারেশনের আগে কিন্তু একবারও তোরাব চাচাকে তাঁর নাতির কথা বলতে শুনিনি। এমন কি বাচ্চাটাকে কেউ হাসপাতালেও নিয়ে আসেনি। রেজিষ্ট্রার কাগজ ঘেটে ছেলেটার ছবি বার করলাম। নীল শার্ট পরা সেই বাচ্চাটাই- যাকে আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম! নামটা দেখলাম- মোঃ জহুরুল ইসলাম জাহিদ।” থামলেন ডাঃ এমরান। একটানা কথা বলে হাফিয়ে গেছেন। টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিলেন। ঢক ঢক করে খেয়ে ফেললেন সবটা।
আমি বজ্রাহতের মত বসে আছি। কারণ আমার জাহিদের পুরো নাম “মোঃ জহুরুল ইসলাম জাহিদ”! কিন্তু জাহিদ তো অনাথ না। ওর মা বাবা আছে, বড় ভাই, ভাবী- সবাই আছে। খুব বেশি কাকতালীয় হয়ে গেছে যেন নামের ব্যাপারটা।
শূণ্য গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে ডাঃ এমরান বললেন, “ সাভার থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল। তখনই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়। আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অ্যাক্সিডেন্ট........” শেষ কথাটা বিড়বিড় করে আপন মনেই বললেন। খেয়াল করলাম ওনার মুখে তীব্র একটা কষ্টের ছাপ ফুটে উঠেছে হঠাৎ করে। কি বললেন বুঝতে পারলাম না। এক মুহূর্ত বিরতী নিয়ে আবার বলা শুরু করলেন, “বিচিত্র কোনো কারণে সেদিন সন্ধ্যা থেকেই আমার কাছে লাগছিল আমাদের পেছনের সিটে মধ্যবয়স্ক সাদা পাঞ্জাবী পরা একটা লোক বসে আছে। কড়া মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছি লোকটার গা থেকে। আমি তিনবার রিয়ার ভিউ মিররে দেখলাম লোকটাকে – পেছনের দিকে ফিরে ব্যাক সিটে অন্ধকারে কাউকে দেখলাম না! জয়নাব সাবধান করে দিল, “ কি হল? গাড়ি চালাতে চালাতে এতবার পেছনে তাকাচ্ছো কেন?”
আমি দুবার সামনের দিক থেকে আসা দুটো গাড়িকে ঠুকে দিতে দিতে কোনো মতে সামলে নিলাম। জয়নাব ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ তুমি ঠিক আছো তো এমরান? এরকম করছো কেন?”
আমি জবাব না দিয়ে আবার তাকালাম মিররে। বিস্ফোরিত চোখে আয়নাতে এবারে দেখলাম পেছনের কিছুই দেখা যাচ্ছে না! তার বদলে দেখা যাচ্ছে আমার বাড়ির ছাদের দাবার বোর্ডটা! সোজা হয়ে আছে বোর্ডটা। মূর্তি গুলো ঢাল তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে বোর্ডের ঘর গুলোয়! হঠাৎ শুনলাম জয়নাব চিৎকার দিল, “ এমরান! গাড়ি সামলাও!” একটা ব্রীজ পার করছিলাম নদীর ওপর দিয়ে। আমি চমকে সামনে তাকাতেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল! সামনের দিক থেকে আসা কোনো গাড়ির হেডলাইটের আলোয় আমি কিছুই দেখতে পেলাম না। কিন্তু গাড়িটা কিছুতে বাড়ি খাওয়ার বদলে অদ্ভূত একটা ঘটনা ঘটল-
কিছু বোঝার আগেই আমাদের গাড়িটা আলোক উৎসটা ভেদ করে লাফ দিয়ে এসে পড়ল বিশাল একটা দাবা বোর্ডের ওপর! আমাদের বাড়ির ছাদের সেই দাবা বোর্ডটায়! গাড়ি উল্টো ভাবে ছুটছে বোর্ডের ওপর দিয়ে! মধ্যাকর্ষণ যেন বোর্ডের দিকে! জয়নাব আতংকিত গলায় চিৎকার দিল। আমি পাগলের মত স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে কয়েকটা মূর্তির সাথে বাড়ি খেতে খেতে সামলে নিলাম। ছাদটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার। গাড়ির হেড লাইটের আলোই যা ভরসা। ব্রেকটাও কাজ করছে না ঠিক মত। তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে নিয়ন্ত্রনহীন গাড়িটা। মনে হচ্ছে অন্য কেউ একজন চালাচ্ছে সেটা! স্টিয়ারিং পর্যন্ত ঘুরিয়ে সোজা করা যাচ্ছে না! নিজে থেকেই ঘুরছে! তার মাঝ দিয়েই আমি ঢাল তলোয়ার হাতে দাঁড়ানো মূর্তি গুলোকে বাঁচিয়ে, পাশ কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কোনোমতে।
কিন্তু এত চেষ্টার পরও দূর্ঘটনা এড়াতে পারলাম না। আমি খেয়াল করিনি যে সামনের দিকে একটা বড় মূর্তি বর্শা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যখন দেখলাম চিৎকার দিয়ে ব্রেক কষলাম। ব্রেক লাগল এবারে। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ পেতেই পাশে তাকালাম। জয়নাব মূর্তির মত বসে আছে আমার পাশে। ওর ডান হাতটা দিয়ে কাঁপা কাঁপা ভাবে আমার মুখটা স্পর্শ্ব করল। এই অন্ধকারের মাঝেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওর দু’চোখ বেয়ে হীরের মত দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। ফিস ফিস করে বলল, “ খুব ইচ্ছে ছিল এই বাড়িতে মারা যাবো। ভাল থেকো এমরান। তুমি আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষটা। আমি খুব ভাগ্যবতী পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষটাকে ছুঁয়ে বিদায় নিতে পারছি.....” আমি কাঁপা হাতে ওর হাতটা আমার মুখে ধরে রাখলাম। জয়নাব অস্ফূট একটা শব্দ করল।
উইন্ডশীল্ডের কাঁচ ভেঙ্গে সামনের দাঁড়ানো মূর্তিটার হাতের বর্শাটা ঢুকে গেছে জয়নাবের বুকের বাম পাশে। ওর ঠোঁট দুটো কাঁপছে কেবল অসহ্য মৃত্যু যন্ত্রনায়........
আমার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এল, ফিসফিস করে বললাম, “ তোমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা কেটেছে জয়নাব। I think I’ll miss you rest of my life.”
জয়নাব হাসার চেষ্টা করল। আরো দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল ওর চোখের কোন বেয়ে। চোখের পাঁপড়ি গুলো ভিজে কাঁটার মত হয়ে আছে। একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে?
অনুভব করলাম গাড়িটা ছাদ থেকে খসে পড়ার মত প্রচন্ড গতিতে নিচের হল রুমের দিকে পড়ছে। কিন্তু আমার কোনো ভয়, আতংক কিছুই হচ্ছে না.......
প্রচন্ড শব্দ আর ঝাঁকুনি দিয়ে সুইমিং পুলের নীলচে পানি ভেদ করে ডুবে গেলো গাড়িটা। আমার পাশে জয়নাব হাত বাড়িয়ে আমাকে ছুঁয়ে দেখছে, মুখে একটুকরো নিষ্পাপ হাসি........ ওর বুকের বাম পাশ থেকে বর্শার ভাঙ্গা অংশ বিশেষ বেরিয়ে আছে...... রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীরটা ওর। উইন্ডশীল্ডের ভাঙ্গা কাঁচ দিয়ে সজোরে পানি ঢুকছে গাড়ির ভেতর।
আমার দু’পায়ে ভয়ংকর একটা ব্যথা টের পেলাম। গাড়ির কিছু একটা বেঁকে আমার দু পায়ে এসে চেপে ধরেছে......
কিন্তু জয়নাবের দিকে তাকিয়ে রয়েছি মুগ্ধ চোখে...... আহা! এই মুখটা যদি চিরকাল এভাবে দেখতে পারতাম.....” চুপ হয়ে গেলেন ডাঃ এমরান। অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝতে পারলাম চোখে পানি এসে গেছে তাঁর। সেটা আড়াল করতেই অন্য দিকে তাকিয়েছেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, “ সুইমিং পুলের নিচ থেকে বের হলেন কি করে? গাড়ি নিয়ে ডোবার পরও ইনজুরড অবস্থায়....” বুঝতে পারলাম বিষ্ময়ে মুখটা হা হয়ে গেছে আমার।
ডাঃ এমরান চোখের কোন ডললেন আঙ্গুল দিয়ে, “ পানির নিচে দম আটকে মারা যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু অদ্ভূত একটা ঘটনা ঘটল তখন। গাড়ির ভেতর ভাঙ্গা উইন্ডশীল্ড দিয়ে পানি ঢুকে আমার নিঃশ্বাস আটকে গেছে- হঠাৎ দেখলাম পানির নিচের নীলচে জগৎটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে যাচ্ছে। সুইমিং পুলের তলদেশটা সাদা কালো ছক কাটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যতদূর চোখ যায়। তার মাঝ দিয়ে আবছা ভাবে চোখে পড়ছে সাদা কত গুলো মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে একেকটা ঘরে। তুমি হয়ত খেয়াল করেছো এ বাড়ির ছাদের চারটা মূর্তি বাদে সব গুলোই কিন্তু কালো পক্ষের ঘুটি। সাদা ঘুটি না। কিন্তু পানির নিচের ঘুটি গুলো সব সাদা। আমি দম যেতে যেতে দেখতে পাচ্ছি চারটা সাদা বর্ম পরা বিশাল দেহী মূর্তি আমার গাড়ির চার কোনার মাটি ফুঁড়ে যেন গজিয়ে উঠল। খুব আশ্চর্যের বিষয় চার জনের একটা করে হাত আমার গাড়িটার চার কোনায় ধরা! কিছু বোঝার আগেই তীব্র গতিতে পানি ফুঁড়ে মূর্তি গুলো গাড়িটাকে নিয়ে উঠে গেল সুইমিং পুলের ওপর দিকে। সোজা ছাদের দিকে উঠে যেতে লাগল। মাঝা মাঝি উচ্চতায় এসে গাড়িসহ চার মূর্তিই উল্টে গেল। চাকা চলে গেল ছাদের দিকে, সুইমিং পুল চলে এল মাথার ওপর দিকে। গাড়িটা নিয়ে নামল ছাদের বোর্ডে। আমি তখন পাগলের মত নিঃশ্বাস নিচ্ছি বাতাস পেয়ে। তার মাঝেই দেখলাম সাদা মূর্তি চারটা গাড়ির চারপাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রীক পুরাণের যোদ্ধাদের মত মূর্তি।
আমি আমার দুই পা নাড়াতে পারছি না। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এর মাঝেই আবিষ্কার করলাম আমি দরজা খুলে দাবার বোর্ডে নেমেছি। আমার দুই পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে সাদা দাবার ঘর ভেসে যাচ্ছে লাল হয়ে। অথচ আমি আমার দুই পায়ে অদ্ভূত একটা শক্তি অনুভব করছি। নিজের অজান্তেই মাথার ওপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম হল রুমের নানান জিনিস পত্র, সুইমিং পুলের পানি, নতুন মূর্তি সব কিছু নড়ছে! যেন বৃষ্টির মত নেমে আছড়ে পড়বে এই বোর্ডের ওপর। কিন্তু আমি তাকানো মাত্রই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যার যার স্থানে বসে গেল! আমি বাদূরের মত ঝুলে আছি, আমার গাড়িটাও। তার ভেতরে জয়নাবের লাশ। আধ খোলা চোখে ভাঙ্গা উইন্ডশীল্ড দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মিষ্টি একটা হাসি ফুঁটে আছে ওর ঠোঁটের কোনায়।
সে রাতেই ছাদে চারটা নতুন সাদা মূর্তি যোগ হয়। যে গুলোর কারিগর সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।
মানুষের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য স্রষ্টা অদ্ভূত সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা পুরণের ব্যবস্থাটার মাঝে জয়নাবের সহযাত্রীও পড়ে গিয়েছিল সেদিন।” শেষের কথা গুলো বিড়বিড় করে আপন মনে বললেন। চোখে পানি জমে উঠেছে তাঁর।
“ মানে?” আমি বুঝতে পারলাম না।
বিচিত্র ভাবে হাসলেন, “ বুঝবে না এখন। বয়স বাড়ুক তোমার। একদিন বুঝে যাবে।” দেয়ালে ঝোলানো জয়নাব আরার ছবিটার দিকে তাকালেন।
আমি বিভ্রান্তের মত তাকিয়ে রইলাম, “ আপনি আসলে সে রাতেই আবিষ্কার করেন যে আপনি উল্টো হয়ে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে পারেন? শুধু নিজের না, অনেক কিছুর গ্র্যাভিটির দিক বদলে ফেলতেও পারেন- তাই না?”
ফিরে তাকালেন অবাক হয়ে ডাঃ এমরান। আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না। কিন্তু বিষ্ময়ের সাথে দেখলাম ডাঃ এমরানের অশ্রু জমে ওঠা দু’চোখে অদ্ভূত একটা হাসি ফুটে উঠেছে। রহস্যময় একটা হাসি। (চলবে) আগামী পর্বে সমাপ্ত।। দ্রষ্টব্যঃ "চতুরঙ্গ" কোনও সত্য ঘটনার উপর নির্মিত নয়।। লেখক মূলত ঘটনাটি সপ্নে দেখেন এবং পরবর্তীতে সেটাকে গল্পে রূপান্তরিত করেন।। From: Textile Engineering College, Chittagong facebook id: Nithor Shrabon Shihab
E-mail id: Rudroaimel@yahoo.com

।। চতুরঙ্গ - শেষ পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, September 5, 2011 at 10:38pm
চতুরঙ্গ – শেষ পর্ব “ জাহিদকে আমি আপনার সাথে দাবা খেলতে দেখেছি স্যার। ছাদে, উল্টো ভাবে......। আপনি বোধ হয় বুঝতে পারছেন আমি কাকে বোঝাচ্ছি। আমার খুব কাছের বন্ধু। হাসপাতালে আপনারা মিট করেছিলেন......”
“ জানি। তোরাব চাচার নাতি সে-ই। হাসপাতালে ওকে পেয়ে খুব অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমাকে চিনবে ও। কিন্তু একেবারেই চিনতে পারেনি। একটা নতুন ফ্যামিলিতে অ্যাডপ্ট করা হয়েছিল বোধ হয় ওকে। কারণ আমার জানা মতে অনাথ ছিল ছেলেটা।” কপাল ডললেন চিন্তিত ভাবে।
“ আপনাকে চিনতে পারেনি ঠিক আছে। কিন্তু ছাদ থেকে ঝুলে আপনার সাথে দাবা খেলার ব্যাপারটা বুঝলাম না। এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটার সাথে জাহিদ জড়াচ্ছে কি করে? আমি যতটা ওকে চিনি- ও অনেক সহজ সরল একটা ছেলে। পড়া শোনা আর কবিতা লেখা-লেখি ছাড়া জীবনেও ওকে আর অন্য কিছু করতে দেখিনি। দাবা খেলা তো দূরের কথা।” ভ্রুঁ কুটি করলাম।
ডাঃ এমরান দু’হাতের আঙ্গুল গুলো এক সাথে লাগিয়ে মোচার মত করে সেটার দিকে তাকালেন, “ তুমি তো বুঝেই গেছো আমি ছোট খাটো একটা ক্ষমতা হঠাৎ করেই পেয়ে গেছি। এটা ক্ষমতা না অভিশাপ সেটাই জানি না......” একটু থামলেন। আমি কিছু বললাম না, কেবল কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে রইলাম।
“ ক্ষমতাটা পাওয়ার অল্প কিছুদিন পরের কথা, তখনো আমি ক্ষমতার ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি। হঠাৎ করেই একদিন লক্ষ করলাম – আমার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে ভিন্ন ভিন্ন হাতের লেখা। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি ঘটনাটা কি ঘটেছে। আমি ভেবেছি কেউ আমার অগোচরে আমার ডায়েরী খুলে তাতে হাবি জাবি সব অংক, ফিজিক্স এসব লিখে ভরিয়ে দিয়েছে। যে গুলোর আগা মাথা আমি কিছুই বুঝি না। কিন্তু কার এমন ঠেকা পরল যে আমার ডায়েরীতে এসে অংক নিয়ে গবেষণা পত্র লেখতে যাবে? খুব অবাক হলাম। এরকম ঘটনা পর পর তিন দিন ঘটল।” দাঁড়িতে আঙ্গুল চালালেন অস্বস্তি নিয়ে।
“ বুঝলাম না! আপনার ডায়েরীতে অন্য মানুষ লিখবে কেন?” আমি অবাক গলায় বললাম।
“ কথাটা সেখানেই। আমার খঁটকা লাগল। এই বিশাল বাড়িতে কাজের মানুষ তিন জন ছাড়া আর কেউ থাকে না। আর তারাও সবাই বিশ্বস্ত। বহু দিন ধরে এখানে আছে। আমার অজান্তে এসে আমার ডায়েরীতে লিখবে- এটা পুরোপুরি অসম্ভব! তার ওপর ডায়েরীটা থাকে আমার বালিশের নিচে। কেউ এসে যে ওটা নেবে- সেটাও সম্ভব না। তাই পরের রেতে জেগে রইলাম সারা রাত। সারা রাতে কেউ এল না আমার ঘরে। শেষ রাতে তন্দ্রা মত এসে গিয়েছিল। অল্প সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করেছিলাম। হঠাৎ চোখ মেলতেই দেখলাম বিছানার ওপর ডায়েরীটা পরে আছে, খোলা- তাতে নতুন নতুন সব ফিজিক্সের আংক! আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এত কম সময়ে কে এল- আর লেখলোই বা কি এসব? ব্যাপারটা নিয়ে আমি এত চিন্তায় পড়ে গেলাম যে আমার এক প্রোফেসর বন্ধুকে ডায়েরীটার লেখা গুলো পাঠিয়ে দিলাম ফ্যাক্স করে। ফিজিক্সের টিচার ও, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটেতে পড়ায়- ড. নিকোলাস অগাস্টাস। সে তো ফ্যাক্স পেয়ে পরের ফ্লাইটেই বাংলাদেশে এসে হাজির! আমি তো তাকে দেখে অবাক! আমার বাড়িতে এসেই আমাকে বলে বসল, “ কে লিখেছে এটা? যে লিখেছে তাকে আমার সামনে হাজির করো! তাকে আমার চাই! সে সায়েন্সের কি বিশাল বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে নিজেও জানে না।”
আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। কিছুক্ষন পর একটু ধাতস্থ হয়ে আমাকে পুরো ব্যাপারটা বোঝাতে লাগল নিকোলাস। যা বোঝালো তার সারমর্ম হলঃ এই ডায়েরীতে লেখা অংক গুলো হল স্পেস টাইমিং এবং গ্র্যাভিটি বিষয়ক একটা এম্যানুস্ক্রিপ্ট প্যাপার, গবেষণা পত্র। যদিও অর্ধেক, কিন্তু সায়েন্স ওয়ার্ল্ডে হূল স্থূল ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এক বস্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিভাবে মুহূর্তেই চলে যাবে, এবং তার গ্র্যাভিটিকে কিভাবে সেই হাইপার ডাইভের জ্বালানি কিংবা বল রুপে ব্যবহার করবে- তার বিশাল বর্ণনা। আমি নিজে ডাক্তার মানুষ, এক সময় আগ্রহ করে এইচ.জি.ওয়েলসের বই পড়ার সময় ঝোঁকের বশে ফিজিক্স নিয়ে এক আধটু নাড়া চাড়া করেছিলাম। টুকটাক লেখা লেখি করতাম বলে পড়তে হত। ব্যস এটুকুই। কিন্তু এত কঠিন ফিজিক্স বোঝার মত জ্ঞান আমার নেই। তাই নিকোলাসের সব কথা বুঝতে পারলাম না।
নিকোলাস আমাকে জিজ্ঞেস করল কে লিখেছে এটা? আমি কিছুই চাপলাম না। বলে দিলাম সব। খুব অবাক হল নিকোলাস। কি যেন ভাবল অনেক্ষণ ধরে। তারপর বলল রাতে সে আমার বাড়িতেই থাকবে। কে এসে লেখে যায় বের করা দরকার। আমিও তাই চাচ্ছিলাম। বলার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম।
সেদিন বিকালেই সারা বাড়িতে দশ বারোটা ক্লোসড সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে দিল নিকোলাস। বিজ্ঞানী ভদ্রলোক আসলেও ক্যামেরা এড়িয়ে আসতে পারবে না। ধরা পড়তেই হবে ক্যামেরার চোখে।
সব ঠিক করে রাতে খাওয়ার পর অপেক্ষা করতে লাগলাম দু’জনে। বসে আছি তো আছিই। কোনো কিছুই হল না। নিকোলাস লম্বা জার্নি করে এসেছিল। তাই ক্লান্ত ছিল। জেগে থাকতে পারল না। ঘুমিয়ে পড়ল খুব তাড়াতাড়ি। আমিও বসে বসে ঢুলতে লাগলাম ঘুমে।” দম নেয়ার জন্য থামলেন।
আমি বসে আছি। অপেক্ষা করছি ওনার বাকি কথা গুলো শোনার জন্য। জাহিদের প্রসঙ্গ থেকে এই প্রসঙ্গে চলে আসার ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারছি না। কিন্তু চুপ থাকলাম।
ডাঃ এমরান বলা শুরু করলেন আবার, “ পরদিন সকালে নিকোলাসকে হিষ্টোরিয়া রোগীর মত কাঁপতে কাঁপতে পাগলের প্রলাপ বকতে দেখা গেল। রীতিমত উন্মাদ হয়ে গেছে! দু-তিন জন মিলেও ধরে রাখা যাচ্ছে না। বারবার আমাকে দেখিয়ে বলছে, “ He's not a human! something else! I saw him that he was walking on the roof of the hall room! It seems like - he was hanging from the roof!”
আমি তো হতবাক ওর কথা শুনে। কি বলে এসব? কোনো মতে ওকে হাসপাতালে পাঠিয়ে সি.সি. ক্যামেরা গুলোর ভিডিও দেখতে বসে গেলাম। কি এমন দেখেছে ও যে এরকম ভয় পেল?
ভিডিও দেখতে গিয়ে আমি নিজেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। মনিটরের মধ্যে আটটা ভাগ, আমার পুরো বাড়িটার ভেতর বাহির সব দেখা যাচ্ছে। আবছা অন্ধকার। ভিডিওর প্রথম কয়েক ঘন্টা সব কিছু স্বাভাবিক, স্থির, চুপচাপ। তার পরেই ঘটনাটার শুরু। আবছা অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে আমার দোতলার রুমের দরজা খুলে ভাসতে ভাসতে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি। হাতে কলম আর ডায়েরীটা। নভোচারীদের মত শূণ্যে ডিগবাজি খেয়ে সোজা হল রুমের ছাদের দাবা বোর্ডের দিকে উঠতে লাগলাম। গিয়ে ঝুলে পড়লাম উল্টো ভাবে। গম্ভীর মুখে হাটতে হাটতে ডায়েরীতে লিখে যাচ্ছি কি যেন! এবং লিখছি আমার বাম হাত দিয়ে! যদিও আমি রাইট হ্যান্ডেড!
আমি বজ্রাহতের মত বসে রইলাম। নিকোলাস সরাসরি আমাকে এ অবস্থায় দেখেছে কাল রাতে! কারণ আমি ভিডিওতেই দেখতে পেলাম নিকোলাসের ভয়ার্ত চিৎকার- হল রুমের নিচে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছে। আর ছাদে ঝুলে থাকা “আমি” খুব বিরক্ত হয়ে নিকোলাসের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে ইসারা করতেই নিকোলাস শুণ্যে উঠে ঝুলতে থাকল বিচিত্র ভঙ্গিতে! চেঁচাচ্ছে সে অবস্থাতেই!
আমি সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করি আমার Split personality বা দ্বৈত সত্ত্বা রয়েছে। রোগটা কবে থেকে হয়েছে আমি নিজেও জানি না। যেখানে নিজের ভেতরেই আরো একটা অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছে! আমি ঘুমিয়ে পড়লেই ওটা জেগে ওঠে। সেই অস্তিত্বটাই এতদিন বাম হাতে আমার অজান্তেই ডায়েরীতে এসব লিখে এসেছে!” থামলেন ডাঃ এমরান।
আমি প্রায় শোনা যায় না এমন ভাবে আস্তে আস্তে বললাম, “ আমার অ্যাক্সিডেন্টটা আসলে আপনার Split personality’র ঐ অংশটা ঘটিয়েছে- তাই না স্যার?” গলার স্বরই বলে দিলো আমি ভয় পাচ্ছি।
ডাঃ এমরান কাঁশলেন খুঁক খুঁক করে, “ দুঃখ জনক হলেও ব্যাপারটা সত্যি। সেরাতে আমি তোমাকে বারবার চলে যেতে বলেছিলাম, ভয় পাচ্ছিলাম রাতে আমার ওই অংশটা জেগে উঠলে তোমার ক্ষতি করতে পারে। তাই। কিন্তু তুমিই শুনলে না কথাটা।”
আমি ভয়ার্ত চোখে তাকালাম তাঁর দিকে, “ অন্যদিন ক্ষতি না করে সে রাতেই করতে গেলেন কেন?” নিজের কাছেই নিজের কন্ঠটা কেমন বেখাপ্পা শোনালো।
“ সে রাতে জয়নাবের ডোর বেলটা ভেঙ্গেছিলে তুমি, আর আমি কষ্ট পেয়েছিলাম তখন- তাই।” নির্লিপ্ত গলায় বললেন।
আমি ঢোক গিললাম, “ তাহলে আমাকে মিথ্যা বলেছিলেন কেন? যে আমি সম্মোহিত হয়েছি?”
“ ভয় পাবে তাই বলতে চাই নি।” পানির গ্লাসটার দিকে হাত বাড়ালেন। খালি ছিল সেটা। আমি উঠে গিয়ে জগ থেকে পানি ঢেলে দিলাম তাঁকে। এসে আবার বসলাম টুলে, “ আর জাহিদের ব্যাপারটা কি?” জিজ্ঞেস করলাম।
পানি খেতে খেতেই বললেন, “ এখনো বোঝোনি? ওর-ও একই সমস্যা আছে। স্প্লিট পারসোন্যালিটি ডিসওর্ডার। বিচিত্র কোনো কারণে ওর অন্য অস্তিত্বটা আমার সঙ্গে দাবা খেলে। মানে আমার অন্য অস্তিত্বের সাথে দাবা খেলে। হারানোর জন্য। সেদিন হাসপাতালে পরিচয়ের সময়েই বোধ হয় ওর অন্য সত্ত্বাটা আমাকে চিনেছিল।”
“ আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না স্যার।” বিভ্রান্ত গলায় বললাম।
“ জাহিদের অন্য সত্ত্বাটা অসম্ভব স্ট্রং। বলতে পারো ওর ক্ষমতাটার সামনে আমার কোনো শক্তিই নেই। গ্র্যাভিটিকে ফোর্স বানিয়ে হাইপার ডাইভ দেয়ায় রীতিমত ওস্তাদ জাহিদের অন্য অস্তিত্বটা। এ জন্যই ওকে হঠাৎ করেই এখানে সেখানে চলে আসতে দেখা যায়। নিজের অজান্তেই করে। অবশ্য তুমি দেখেছো কিনা সেটা জানি না।” এক মুহূর্ত থামলেন। “ ছাদের বিশাল দাবা বোর্ডে ওর সঙ্গে খেলা হওয়ার কথা ছিল। অনেক ছোট বেলা থেকে। ওর দাদুই সেটা বলে গিয়েছিলেন। কখন, কিভাবে বলেছেন জানি না। জাহিদ ভূলে গেলেও ওর অন্য অস্তিত্বটা ভোলেনি। সেটাই খেলবে জাহিদ।”
“ কবে?”
“ আজ রাতেই হওয়ার কথা ছিল। অন্তত আমার ডায়েরীতে আমার অন্য অস্তিত্বটা সে কথাই লিখে গেছে।” টেবিলের ওপর থেকে তাঁর ডায়েরীটা তুলে একটা পাতা খুলে দেখালেন।
দেখতে পাচ্ছি এখান থেকেই, সেখানে অন্য কারো হাতের লেখাঃ “ ২৬ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় জাহিদের সঙ্গে বড় বোর্ডে দাবা খেলা হবে।” আমি বিড়বিড় করে বললাম, “ এটা আপনার অন্য অংশের লেখা?”
“ হ্যা।” হাসতে লাগলেন হঠাৎ, চিকচিক করে উঠল ডাঃ এমরানের চোখ।
আমি মূর্তির মত বসে রয়েছি। মাথা কাজ করছে না আমার। আবার বিড়বিড় করলাম, এসব কেন হচ্ছে স্যার?”
হাসতে লাগলেন মিটিমিটি। চোখের দৃষ্টিটা কেমন যেন রহস্যময়। আমি টুল ছেড়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। আমার মাথা ঘুরছে, অসুস্থ গলায় বললাম, “ আপনি এর ব্যাখ্যাটাও জানেন?”
উনি জবাব না দিয়ে বসে রইলেন কাঠের চেয়ারে। চোখে রহস্যময় সেই হাসি।
“ স্যার প্লিজ?” অনুনয় করে বললাম, চোখে পানি এসে গেল।
“ সব ক’টা জিনিসের ব্যাখ্যা জানতে নেই নোভেরা। মানুষকে তার জ্ঞান আর মেধা খাঁটিয়ে সেটা আবিষ্কার করার সুযোগ দেয়া উচিত। তুমি আসতে পারো- আমার নামাযের সময় হয়ে গেছে।”
আমি নিজের অজান্তেই ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে দৌড়ে চলে এলাম। ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ সে রাতে হল রুমে তালা লাগিয়ে যখন চলে আসবো- ছাদের দিক থেকে ইকামাত দেয়ার শব্দ শোনা গেল। কন্ঠটা খুব পরিচিত লাগলো। কিন্তু কার মনে পড়ল না। আমি ফিরে তাকালাম। অন্ধকারের মাঝে দেখা যাচ্ছে, ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো হয়ে অসংখ্য সাদা পোশাক পরা মানুষ জামাতে নামাযে দাঁড়িয়েছে! কোথাও কোনো মূর্তি নেই! ইমামের পেছনে নীল শার্ট পরা কেউ একজন দাঁড়িয়েছে, নিচ থেকেও চিনতে পারলাম- জাহিদ! এবং ইমাম আর কেউ নন- ডাঃ এমরান!
আমি জানি নামাযের পরেই হয়ত সেই বড় খেলাটা শুরু হবে...... আমি দাঁড়িয়ে রইলাম দরজার কাছে। দেখতে পাচ্ছি লম্বা নামাযটা শেষে সাদা পোশাক পরা মানুষ গুলো মিলিয়ে যাচ্ছে..... দাবা বোর্ডে আগের মূর্তি গুলো একে একে ফিরে আসছে...... যেন বোর্ড ফূঁড়ে গজিয়ে উঠল।
আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি দ্রুত। দেখতে পাচ্ছি দাবা খেলার শুরুর সমত যেভাবে ঘুটি সাজানো হয়- তেমন ভাবে ঘুটি সজ্জিত হচ্ছে আপনা আপনি। অভাব থাকা ঘুটিটা হিসেবে হল রুম থেকে বেশ কিছু মূর্তি শূণ্যে উথে যাচ্ছে! গিয়ে ছাদের ওই ঘর গুলোতে বসছে নিজে নিজে! আমি নিজের পায়ের ওপর ভর রাখতে পারছি না। ওপরে খেলা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বাহিরে প্রকৃতিও যেন ঝড়ের তান্ডব লীলা শুরু করেছে! বজ্রপাতের আলোয় দেখা যাচ্ছে মূর্তি গুলো যুদ্ধের ময়দানের মত একটা আরেকটাকে গিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে গুড়িয়ে দিচ্ছে। উপর থেকে ভেঙ্গে সেগুলো হল রুমের ফ্লোরে আছড়ে পড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে! চারপাশে ধূলো বালুর ঝড় হল রুমের ভেতর! যেন যুদ্ধ লেগেছে!
ডাঃ এমরান ছাদের এক মাথায় ঝুলে আছেন- অন্য মাথায় জাহিদ। দু জনের চোখেই অদ্ভূত উল্লাস ভরা রহস্যময় একটা হাসি.....
সমস্ত বাড়ির জিনিস পত্র গুলো মাটি থেকে দু তিন হাত ওপরে উঠে যাচ্ছে, আবার নেমে বসে যাচ্ছে...... আমার ভয়টা ছড়িয়ে পরছে দ্রুত সারা শরীরে..... ওপরে ছাদের দাবা বোর্ডের অতি প্রাকৃত খেলাটা আমার ভেতরে আতংকের সৃষ্টি করছে ক্রমশ...... তার থেকেও ভয়ংকর ব্যপার হল হল রুমের অল্প আলোতে দেখা যাচ্ছে শাড়ি পরা, মাথায় স্কার্ফ দেয়া একজন মহিলা এলোমেলো জিনিস পত্র গুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছেন..... জয়নাব আরা!
আমি অস্বাভাবিক রকম আতংকিত হয়ে পাগলের মত দৌড়াতে লাগলাম। মিউজিয়ামের পরিধি যেন বাড়ছেই..... পথ আর শেষ হচ্ছে না......
লনের সব গ্রীক দেবতা মূর্তি গুলো সে রাতে মাটি থেকে দু তিন তলা উঁচুতে ভাসছিল লনের ওপর- আমি যখন পালাচ্ছিলাম....... ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ সেদিনের পর আমি ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের চাকরি ছেড়ে দেই। বলা বাহুল্য ডাঃ এমরানের সঙ্গেও আর দেখা করিনি। আমি সুস্থ থাকতে চাই। পাগল হয়ে মরতে চাই না। আমার ধারণা ওই বাড়ির বাকি তিন জন মানুষ ডাঃ এমরানের এই অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানে। নইলে কখনই তাদেরকে কাছে পাই নি কেন?
আমি চাকরি ছেড়ে চলে আসার অনেক দিন পর আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন ডাঃ এমরান। তিনি হাসপাতালে ভর্তি তখন। খুব অসুস্থ। মেরুদন্ডে ভর রাখতে পারেন না এখন আর। শুয়ে শুয়ে থাকতে হয় তাঁকে। এসব ফোনে জেনেছিলাম নার্গিসের কাছ থেকে। দেখা করতে যাইনি।
ডাঃ এমরান এক পৃষ্ঠায় কাঁপা হাতে পেন্সিল দিয়ে চিঠি লেখেছিলেন। শুয়ে থেকে কলম দিয়ে লিখতে পারেননি।
“ মা নোভেরা,
জানি হয়ত এ বুড়োর ওপর তোমার অভিমান কিংবা ভয় এ জীবনে যাবে না। তবুও বলি জয়নাবকে হারানোর এত বছরের বন্দী জীবনে তুমি ছাড়া কেউ আমার কাছে কখনো জেদ ধরে বাচ্চাদের মত কেঁদে ফেলত না। কখনো কেউ জিজ্ঞেস করত না ‘শুঁকিয়ে এ কি অবস্থা করেছেন শরীরের?’ তুমি যখন জিজ্ঞেস করতে বড় মায়া লাগত। খুব কষ্টে চোখের পানি আড়াল করতাম। কাঠ খোট্টা মানুষের চোখে পানি মানায় না। তোমার সাথে জয়নাবের একটা মিল ছিল- সে যখন তখন আমার সাথে কথা বলার জন্য টুল টেনে বসে পড়ত। সেখানে চেয়ার থাকলেও টুলেই বসত। সারা বাড়িতে টুল আর টুল ছড়িয়ে রেখেছিল সে। অবাক লাগছে? এই বুড়ো এত কিছু খেয়াল করত? হাঃ হাঃ! তাহলেই বোঝ, আমি কতটা চুপচাপ একা একা সময় কাটাতাম যে তোমাকে এতটা লক্ষ করার সময় পেয়েছি। ব্যস্ত হবার জন্য বোধ হয় মিল খোঁজাই ছিল আমার এক মাত্র কাজ।
আমি জানি আমাকে তুমি ভয় না পেলেও আমার চারপাশটাকে খুব ভয় পাও। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। আজ যা রহস্য- কাল তা সাধারণে পরিণত হবে। তুমি জাহিদ বিষয়ক একটা দো টানায় আছো জানি। তাই তোমাকে বলি। আমরা বিভক্ত। আমাদের আরো অস্তিত্ব রয়েছে। অনেক ‘তুমি’ আছো, অনেক ‘আমি’ আছি, অনেক ‘আমরা’ আছে। তুমি এগুলোকে যতই অস্বীকার করো না কেন, এড়াতে পারবে না। তাই এদের নিয়েই বসবাস করতে হয় আমাদের। কারণ এরাও ভালবাসার কাঙ্গাল।
অনেক স্নেহ আর ভালবাসা রেখে গেলাম তোমার জন্য। কে জানে এই ‘অনেকের’ মাঝে নিশ্চই কোথাও না কোথাও তুমি আমার সন্তান ছিলে। নইলে এতটা কষ্ট লাগে কেন?
-ডাঃ এমরান চৌধুরী” চিঠি পাওয়ার তিন মাস পর মারা যান ডাঃ এমরান। আমি দেখা করতে যাইনি তখনো। কেবল একা একা কাঁদতাম। আমার দেখা পৃথিবীর সব চেয়ে ভাল মানুষটা মারা যাবার সময় আমাকে কাছে পাননি।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
জাহিদের সঙ্গে আমার বিয়েটা হল আরো এক বছর পর। ও তখন একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চিফ ইঞ্জিনীয়ার পদে কাজ করছে।
রাতে জাহিদকে প্রায়ই বলি, “ তোমার সেই ‘পথের শেষ’ কবিতাটা শোনাবে?”
“ হঠাৎ?” খুশি খুশি গলায় বলে ও।
“ কটন বার্ডের প্যাকেটটা খুঁজে পাচ্ছি না। কানে ময়লা হয়েছে। পরিষ্কার করা দরকার। তোমার কবিতার মূল্য পাবলিক বুঝলে এতদিনে কটন বার্ডের কোম্পানি গুলো উঠে গিয়ে তোমার কবিতার ক্যাসেট বের করত।”
“ অ!” হতাশ গলায় বলে জাহিদ।
“ কি হল? বল?”
“ ও!” গলা খাকারি দেয় জাহিদ, বলা শুরু করে- “ কতই শত টানা পোড়েন
নিত্য এ সংসার,
অশ্রু জলে সাজিয়ে তুমি
হারিয়ে যাবে আর?
একাই অনেক পথ হেটে আজ
হাত বাড়ালাম তাই,
পথের শুরুয় পাইনি তো কি?
পথের শেষে চাই।” “ কবিতাটা তো অন্য রকম ছিল! শেষের লাইন দুটো বাদে।” অবাক হয়ে বলি।
মাথা চুলকায় জাহিদ, “ অ! তাই নাকি? ভূলে গেছি আগের লাইন গুলো। শেষের লাইন দু’টো মনে থাকে কেবল।”
“ অসুবিধা নেই। প্রত্যেক রাতে নতুন নতুন লাইন বানিও তুমি, কেবল শেষের লাইন দুটো ঠিক রেখো।”
“ কেন? শেষের লাইন দুটো বেশি ভাল?”
“ নাহ। ও দুটো শুনলে মনে হয় কানের পোঁকা বেরিয়ে গেল। তাই।” হেসে ওর চুল গুলো এলোমেলো করে দেই। জাহিদও হাসতে থাকে।
ঠিক এই সময়েই পাশের দোলনা থেকে আমাদের বাবুটা ‘ওয়া ওয়া’ শুরু করে দেয়। বলিনি তো, আমার একটা বাবু হয়েছে। ছয় মাস বয়স। নাম রেখেছি “বাবাই”। ভাল নামটা বলবো না। বাবুদের বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত ডাক নামেই ভাল শোনায়। বড় নাম বললে মনে হয় বড় বড় মানুষ!
বাবাই ওয়া ওয়া শুরু করলে জাহিদ কৃত্রিম বিরক্তি নিয়ে বলে, “ ওহহো রে! মাম্মি- ডেডির রোমান্সের মাঝখানে ‘ওয়া ওয়া’ ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক ক্যান? তোমার ছেলে তো বড় হলে ডি.জে. হবে দেখছি!”
তখন উঠে লাইট জ্বালিয়ে গিয়ে দেখি বাবাই মহা আনন্দে একটা নতুন দাবার ঘুটি নিয়ে খেলছে। ফোকলা মাড়ি দিয়ে সেটাকে কামড়াচ্ছে। আমাদের বাবাই প্রতি রাতে একটা করে দাবার ঘুটি পায়। আমি জানি কে দেয়। খুব যত্ন করে সে গুলোকে জমিয়ে রাখি আমি। আমাদের বাবাই বড় হলে দাবা খেলবে। আমি জানি, কেউ ওকে হারাতে পারবে না। অন্তত বাবাইয়ের দ্বিগ্বীজয়ী ফোকলা হাসিটা সেটাই বলে দেয়! লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী ( শিহাব ) From : Textile Engineering College, Chittagong facebook id : Nithor Shrabon Shihab
E-mail id : Rudroaimel@yahoo.com

।। গভীর রাতে ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, September 4, 2011 at 11:21pm
ব্যাপারটা ঘটেছিল ২ বছর আগে। আমাদের দেশের বাড়িতে। তখন এস, এস, সি এক্সামের পর ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। আমাদের গ্রাম বাংলাদেশের পশ্চিম দিকে। রাজশাহী, নওয়াবগঞ্জ জেলার ভেতর। দুর্গাপুরের পাশের গ্রাম। নাম বালিয়াদাঙ্গা। পাশ দিয়ে মহানন্দা নদী। নদির এই পারে আমাদের গ্রাম, অন্য পারে ইন্ডিয়ার বর্ডার। আমি আগে এসব জিনিস অনেক ভয় পেতাম। কারন ছোটবেলায় একটা অস্বাভাবিক জিনিস দেখেছিলাম নানু বাড়ির ছাদে। সন্ধ্যার দিকে। তখন থেকেই গ্রামে গেলে রাতের বেলা অনেক ভয় লাগত। কিন্তু সেবার ভেবেছিলাম সাহস করে অনেক রাতে নদীর ধাঁরে যাবো। একা একা হাঁটাহাঁটি করবো। অনেক্ষন বসে থাকবো। এই ভেবে রাত একটার দিকে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল, তখন বের হয়েছিলাম। ঐদিন চাঁদটা অনেক বড় আর উজ্জ্বল ছিল। সম্ভবত পূর্ণিমা। ক্যালেন্ডার দেখিনি তাই বলতে পারবোনা। সাথে ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলাম। পাছে যদি কিছু দেখি তবে ছবি তুলবো।
রাতে গ্রামের দিকে সব কটা লাইটই বন্ধ থাকে। এতো রাতে কেউ বাইরেও থাকে না। অন্ধকার রাস্তায় একাই হাঁটছিলাম। নদীর ধাঁরে যেতে প্রায় ২০ মিনিট হাঁটা লাগে। রাস্তার দুই পাশেই বড় বড় গাছ আর নদীর ধাঁরে অনেক ঘন বাঁশবন। আমার অন্ধকারে এই গাছ আর বাঁশবন অনেক ভয় লাগে। আমার সাথে একটা পাওয়ারফুল টর্চ ছিল। রাস্তায় আলো ফেলতে ফেলতে যাচ্ছিলাম। নদীর প্রায় কাছে চলে এসেছি, এমন সময় মনে হল কেউ যেনও হেসে উঠলো। আমি নিশ্চিত নই তা হাসি কিনা কিন্তু আওয়াজ শুনে অনেকটা তেমনই লাগছিল। আমি চমকে গেলাম। এদিক সেদিক টর্চ মারলাম। হটাত খেয়াল করলাম আক্তা বাঁশ গাছের পাতার ফাঁক থেকে জোড়া পায়ের মত কিছু একটা নেমে আসছে। আমি ঐ দিকে টর্চ মারতেই “সেটা” পাতার ফাঁকে লুকিয়ে গেলো। আমি টর্চ নামিয়ে ফেললাম। ওটা আবার পাতার ফাঁক দিয়ে উকি দিল। আমি কখনো পেত্নী দেখিনি। কিন্তু ওটা দেখে মনে হচ্ছিল একেই বোধহয় পেত্নী বলে। লম্বা লম্বা এলোমেলো চুল। অন্ধকার চোখের কোঠর। লম্বা লম্বা হাত পা। ভয়ঙ্কর চেহারা। আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে আর নাকি সুরে হাসছে। আমি প্রচণ্ড ভয় পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “কে ওখানে??” ঐ জিনিসটা আবার হেসে আমার নকল কর বলল, “কে ওখানে??”
আমি আবার ভয়ে জিজ্ঞেস করি, “কে তুই??”
ঐটা বলে, “কে তুই??” আমার মাঝে ভয় কাজ করছিলো। মনে হচ্ছিল, আমি যদি দৌড় দেই তাহলে হয়তো সেটাও আমার পেছনে দৌড় দিবে। তাই কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, “হামি এই গাঁয়ের লোক। তোকে লিয়া যাইতে আসছি।” এটা বলার সময় অনেক ভয় লাগছিল। পাছে, সেটা আমাকে কিছু করে। কিন্তু ঐটা উত্তর দিল, “হামি যাবো না। তুই চইলে যা।” এটা বলার পর আমার দিকে হাত থেকে কিছু একটা ছুঁড়ে মারে। আমি দ্রুত সরে যাই এবং সাথে সাথে ঐ দিকে টর্চ মারি। ঐটার গায়ে টর্চ পড়তেই তা এক লাফে বাঁশগাছ থেকে নেমে পড়ে, তবে আমার সৌভাগ্য যে আমার দিকে না। উল্টো দিকে। নেমেই দৌড় মেরে নদীর দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর নদীতে কিছু একটা ঝাঁপিয়ে পড়ার আওয়াজ শুনতে পাই। আমি তখন আমার পাশে টর্চ মেরে দেখি যে ঐটা কি ছুঁড়ে মেরেছিল। দেখলাম ছুঁড়ে মারা জিনিসটা একটা আধা খাওয়া মাছ। ঐটার একটা ছবি তুলে নিয়ে দোয়া পড়তে পড়তে বাসার দিকে রওনা দেই। ঘড়িতে দেখি রাত প্রায় ২টা। রাতে ঘুম হয়নি। ভোরে আযান দেয়ার পর মসজিদে যাই। সেখানে গ্রামের কিছু মুরব্বী চাচা ছিলেন, আমার পূর্বপরিচিত। উনাদের এই ঘটনাটা খুলে বলি। উনারা বলেন, উনাদের মাঝে কেউ কেউ নাকি ঐ জিনিস দেখেছেন। কিন্তু কারো সাথেই নাকি কোনরূপ কথা হয়নি। উনারা বলেন, আমি অনেক বড় বাচা বেঁচে গেছি। কারন অনেক রাতে নাকি একবার এক মহিলা এমন নদীর পারে একা গিয়েছিলো কিন্তু আর ফিরে আসেনি। এমনকি, পরবর্তীতে ঐ মহিলার কোনও খোঁজও পাওয়া যায়নি। উনারা আমাকে অনেক দোয়া দরুদ পড়ে দেন এবং বলেন এই ঘটনা যেনও আমি কাউকে না বলি। বললে নাকি আমার ক্ষতি হবে। কিন্তু আমি আর ভয় পাইনি। এরপরও অনেকবার একা গিয়েছিলাম, কিন্তু কখনও কোনও কিছু দেখিনি আর। ক্যামেরাটা ডিজিটাল না। ফিল্ম সিস্টেমের। পড়ে পুরো ফিল্মটা ওয়াস করিয়েছিলাম। সব ছবি এসেছিলো। শুধু ঐ ছবিটা বাদে। ঘটনাটি যার সাথে ঘটেছেঃ Mefhtahul Haque
উনার ফেসবুক আইডিঃ http://www.facebook.com/Reezon বাংলা রি-রাইটিং করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন)

।। ভয়াল রাত্রি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, September 5, 2011 at 11:18pm
পাবনা জেলার একটা প্রত্যন্ত গ্রামে আমার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে। এখানকার স্কুল থেকেই আমি এস, এস, সি পাশ করেছি। এরপর অবশ্য শহরে চলে আসি। এতো কথা বলছি কারন আমার ঘটনাটা এই গ্রামেই ঘটেছে। আমার সাথে ঘটেছে বললে আসলে ভুল হবে। কারন ঘটনাটি ঘটে আমার মায়ের সাথে। আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী। ১৯৯৪ সাল। আমি তখন বেশ ছোট। ক্লাস থ্রি তে পড়ি। একে তো গ্রাম অঞ্চল তার উপর আমাদের বাড়ি ছাড়া আসে পাশের কোনও বাড়িতে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। বলা উচিত, আমাদের আসে পাশের বেশিরভাগ বাড়িঘরই কৃষকদের। তাই সন্ধ্যা হবার পরপরই চারদিকে সুনসান নিরবতা নেমে আসে। ঝি ঝির শব্দ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ পাওয়া যায় না। আমাদের বাড়িটা অনেক বড় জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। বাড়িতে একটা এক তলা বিল্ডিং, একটা টিনের ঘর, আর একটা রান্নাঘর। গ্রাম বলে রুমের সাথে কোনও লাগানো টয়লেট নেই। বাড়ির পশ্চিম দিকে একটা বিশাল বাঁশ বাগান। তার সামনে কিছুদূর এগুলেই ২ টা কবর। আমাদের পরিচিত কারো না। আমার বাবা বাড়িটা বানানোর আগে থেকেই সে কবর ২ টা ছিল। যেদিনকার ঘটনা সেদিন রাতে আম্মা আমাকে রাত ২ - ২.৩০ দিকে ঘুম থেকে জাগান টয়লেটে যাবার জন্য। ছোট মানুষ তো, তাই প্রতিদিন ঐ সময়টাতে আমাকে ডেকে উঠানো হতো যাতে বিছানা না ভেজাই। যাই হোক, ঘুম জড়ানো চোখে আমি উঠে টয়লেটে গেলাম। এসে আম্মাকে পেলাম না। কি ভাবলাম মনে নেই, কিন্তু আমি ঘরে ঢুকে বিছানায় উঠে যাই এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। এভাবে কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম মনে নেই, তবে কিছু সময় পর বিকট চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে দৌড়ে রুম থেকে বের হই। দেখি উঠানে আমার আম্মা সেন্সলেস হয়ে পরে আছেন। আমার দুই বড় ভাই জলদি জলদি আম্মাকে ধরে ঘরে নিয়ে আসে। সে রাতে অনেক চেষ্টা করেও আম্মার জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। আমার বাবা সরকারী চাকরি করে। সেই কারনে উনি প্রায়শই ঢাকা থাকতেন। বাড়িতে থাকতাম আমরা ৪ ভাই বোন। সেই রাতে আমরা অনাথের মত কেঁদে রাত পার করলাম। আমার আম্মার জ্ঞান ফিরে সকালে ফজরের নামাজের পর। জ্ঞান ফিরলেও তিনি আমাদের সাথে নরমাল কোনও কথা বার্তা বললেন না। যা বললেন আবল তাবল এবং ছোট থাকার কারনে আমি প্রায় কিছুই বুঝতে পারলাম না। এভাবে প্রায় বছর খানেক কেটে গেলো। আমার বাবা, আম্মাকে ডাক্তার কবিরাজ সব খানেই নিয়ে গেলো কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। আম্মা প্রায়ই ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠে বলতেন, “আমার হাতটা খেয়ে ফেলল। তোরা জলদি কিছু কর। আমাকে বাঁচা।” কিন্তু আমরা ছোট ছিলাম তাই কিছুই করতে পারতাম না। শুধু কাঁদতাম পাশে বসে। এভাবে চলার পর হটাত একদিন এক কবিরাজের সন্ধান পাওয়া গেলো। তিনি আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমার আম্মাকে দেখলেন। কবিরাজ এমনিতে খুবই কম কথা বলতেন, তাই আমার বাবা অনেক প্রশ্ন করলেও তিনি বেশিরভাগেরই কোনও উত্তর দিলেন না। শুধু বললেন, একটু পায়েশ রান্না করতে। পায়েশ রান্না করা হলে তিনি তা একটা কলা পাতায় ঢেলে পশ্চিম দিকের কবর গুলোর পাশে রেখে আসলেন। তারপর আমদের বাড়ির চতুর্দিকে ৪ কোণায় ৪ টা খুঁটি পুঁতে দিলেন এবং শেষে আমার আম্মাকে কয়েকটা তাবিজ দিয়ে চলে গেলেন। বলা বাহুল্য, সেদিনের পর থেকে আমরা আম্মার মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পেলাম। আম্মা সপ্তাহ ঘুরতেই প্রায় সুস্থ হয়ে গেলেন। তারপর আম্মার মুখেই আমরা শুনেছিলাম যে সেদিন কি হয়েছিলো, সেদিন আমি এক পাশের টয়লেটে ঢুকার পর আম্মা অন্য পাশের টয়লেটে ঢুকেন। আমি টয়লেট করে চলে আসার কিছু সময় পর আম্মা টয়লেট থেকে বের হন। হটাত একটা দমকা বাতাস বয়ে যায় এবং আম্মাকে অবাক করে দিয়ে বাঁশঝাড় থেকে একটা কুকুর বের হয়। উল্লেখ্য, আমাদের টয়লেটটা বাঁশঝাড়ের পাশেই ছিল। কুকুরটার সাইজ একটা ৬ মাসের বাছুরের সমান ছিল। মাথায় ২ টা শিং এবং চোখ দুটো যেনও আগুনের গোলার মতন জ্বলজ্বল করছিলো। জিহ্বাটা বেড়িয়ে আছে এবং তা থেকে অনবরত লালা গড়াচ্ছে। কুকুরটা বাতাসের বেগে আম্মার সামনে আসে এবং ঠাণ্ডা চোখে আমার আম্মার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপরের ঘটনা আর আমার আম্মার মনে ছিল না। এবার একটা রহস্য উদঘাটন করা যাক। আম্মা যখন অসুস্থ ছিলেন তখন তিনি প্রায়ই ঘরের মধ্যে বলতেন, “আমার হাতটা খেয়ে ফেলল।” এটা যখন উনাকে জানানো হয় তখন তিনি বলেন, “তিনি দেখতেন সেই কুকুরটা এসে চিবিয়ে চিবিয়ে উনার হাতটা খাচ্ছে।” পাঠকদের উদ্দেশে কিছু কথাঃ আপনারা হয়তো বলবেন গল্পটা বানানো। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তবে যেই অবস্থা আমরা ৪ ভাই বোন পার করেছি, মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এমন সময় যেনও কারো কাটাতে না হয়। কারন আম্মা ঘরের মধ্যে তখন অনেকরকম কথা বলতেন যা শুনে প্রায়ই মনে হতো, আম্মা হয়তো আর বাঁচবেন না। আম্মা কি কথা বলতো তা এখন আমার পুরোপুরি মনে নেই। তবে খাওয়া দাওয়ায় অনেক সমস্যা হতো। কারন আমরা কেউই রান্না করতে পারতাম না। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমার আম্মা এখন পরিপূর্ণ সুস্থ। আপনারা সবাই আমার আম্মার জন্য দোয়া করবেন। ঘটনাটি পাঠিয়েছেনঃ Tilok Hossain উনার ফেসবুক আইডিঃ http://www.facebook.com/Ttilok বাংলা রি রাইট করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন)

সাবধান, মিসির আলি সাবধান!!" (একটি ছোট ভৌতিক উপন্যাস) - লিখেছেন জাহাজী পোলা [১ম খন্ড]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Friday, September 2, 2011 at 10:54pm
১।
বর্ষণ মুখর একটা সন্ধ্যা।
৭ টা বেজে ৩১ মিনিট।
সেই সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। ইউনুস মিয়া তার বাগান বাড়ির পাশে যে শান বাঁধানো পুকুর ঘাটলা আছে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। জমাট অন্ধকারে একা, মাথার উপর শরিফ মার্কা ছাতা ধরা। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি। ভয়ে বেচারার মুখ পাংশু হয়ে আছে। গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলেও ইউনুস মিয়া তার এই বাগান বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগান নাই। কারন এতে তার বড় ভাই ইউসুফের কড়া নিষেধ আছে। ইউসুফ আলো সহ্য করতে পারেন না, তার অন্ধকার খুব প্রিয়। পুকুর ঘাটে দুই পা তুলে ইউসুফ বসে আছে, দুই হাত বুকের সামনে কাঙ্গালের মত ভাঁজ করে ধরা। একটা মাত্র আধ ছেঁড়া লুঙ্গি পরা সে। বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেছে। কপাল বেয়ে পানি নামছে সরু ধারায় সে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই, ইউসুফের মেজাজ অনেক বেশি কড়া। এই যেমন এখন খুব কড়া হয়ে আছে ছোট ভাই ইউনুসের উপর। ইউনুস একটু কেশে আবার বলল “ভাইজান, মিসির আলি নামের এক ভয়ানক বুদ্ধিমান মানুষ আমার বাড়িতে এসেছেন, আমি ভাবতেছি আপনার সমস্যার কথা উনাকে বলব”। ছোট ভাইয়ের উদ্ধত্তে ইউসুফ একটু বিরক্ত হলেন। চোখ তুলে চাইলেন ছোট ভাইয়ের দিকে। বড় ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা ভয়ে হিম হয়ে গেল ইউনুসের। এই অন্ধকারেও বিড়ির আগুনের মত জ্বলছে ইউসুফের চোখ। ইউসুফ শ্লেষ মেশানো কণ্ঠে বললেন, আমার কোন সমস্যা নাই। তুমি ওকে বলতে পার, তবে লাভ নাই। গতবার তো ঐ স্কুল মাস্টারকে বলচিলা। মনে নাই ঐ স্কুলের মাস্টারকে কিভাবে মারছিলাম? বলেই কেনা কেনা কণ্ঠে উচ্চস্বরে হেসে উঠল ইউসুফ। সেই হাসি যেন ইউনুসের বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল। ইউনুস অতিদ্রুত বলে উঠল, “মিসির আলি সাহেব ভয়ানক বুদ্ধিমান, সে ঐ স্কুল মাস্টারের মত বোকা না, আপনি তার বুদ্ধির সাথে পারবেন না”। ইউসুফ একদলা থু থু ফেলল ঘাটের পাকা ফ্লোরে। তারপর বলল “ও আচ্ছা, তাই নাকি? ঠিক আছে তাকে যেভাবেই হোক এখানে নিয়া আস। দেখা যাক”। বলেই ইউসুফ আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে পুকুরের পানিতে নেমে গেল। হাঁটু পানি থেকে কোমর পানি, কোমর থেকে গলা- একসময় পুরো শরীর ডুবে গেল পুকুরের কাল জলে।
ইউনুস কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল পুকুরের দিকে তারপর অন্ধকার বাগান বাড়ি থেকে ধিরে ধিরে পা বাড়াল মূল বাড়ির দিকে। ☯ ☯ ২.
মিসির আলি সাহেব টিনের তৈরি আধাপাকা ঘরের বারান্দায় বসে আছেন। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে টিপটিপ করে। মিসির আলী সাহেবের টিপটিপ বৃষ্টিই খুব পছন্দ। টিপটিপ বৃষ্টির দিয়েছেন অলস বৃষ্টি! বয়সের কারনে তার নিজের গতিও একটু মন্থর হয়ে গেছে- আর সেই কারনেই অলস জিনিস ইদানিং কালে ভাল লাগছে তার। লক্ষন ভাল না। গ্রামে গ্রামে এখন বিদ্যুতের ছড়াছড়ি, এই বাড়িতেও বিদ্যুৎ আছে। তবে মিসির আলি সাহেব বারান্দার লাইট অফ করে দিলেন। কারন বিদ্যুতের আলোয় বৃষ্টি দেখতে ভাল লাগনা। কই যেন পড়েছেন চাঁদের জ্যোৎস্না দেখতে হয় খোলা মাঠে আর রাতের বৃষ্টি দেখতে হয় অন্ধকারে বসে! মিসির আলী অনেক চেষ্টা করলেন কথাটা কার মনে করতে কিন্তু পারলেন না। স্মৃতি বেঈমানি কারা শুরু করে দিয়েছে। লক্ষন ভাল না। বেতের চেয়ারে দুই পা তুলে বসলেন মিসির আলি। হাতে ধোঁয়া উঠা এক কাপ লাল চা। চায়ে একটু লবন দেওয়া, তবে খেতে ভালই লাগছে তার। মিসির আলি একটা সিগারেট ধরালেন। বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বৃষ্টি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তারপর হটাৎ একটা কবিতার দুই লাইন আবৃতি শুরু করলেন “আয় বৃষ্টি ঝেপে, ধান দিব মেপে”। এই দুই লাইনই উনি আবৃতি করতে থাকলেন।
মিসির আলী এই পুরা কবিতাটা মুখস্থ পারেন, তার স্মৃতি শক্তি ভাল। তবুও কেন তিনি শুধু এই দুই লাইন আবৃতি করছেন তা বুঝতে পারলেন না। এই অজপাঁড়া গাঁয়ে এসেছেন একটা বিয়ের দাওয়াতে, কিন্তু শহরে ফেরার আগেই বৃষ্টি শুরু। রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ, তাই শহরে ফিরতে পারেন নি। বিয়ে বাড়িতে অনেক লোকজন। তাদের থাকার বেবস্থা হল প্রতিবেশিদের বাড়িতে। মিসির আলীর দায়িত্ব পড়ল ইউনুস সাহেবের ঘাড়ে। ইউনুস সাহেব একজন অবস্থা সম্পন্ন মানুষ। গঞ্জে বিরাট দোকান পাট আর গ্রামে তো জমিজমার অভাব নাই। সব অবস্থা সম্পন্ন মানুষের মধ্যে যেমন একটু অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায় ইউনুস সাহবও তার বেতিক্রম নন। পঞ্চান্ন বছরের এই লোকটি কখনই মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেন না! এটা নিজে মিসির আলী একটা লজিক দাঁড় করেছেন। হতে পারে এই লোকটির পুরানো পাপ আছে মনে, তার ভয় হয় তার চোখের দিকে তাকালে সবাই বুঝে ফেলবে যে পাপটা উনিই করেছেন!
ইউনুস সাহেবকে নিয়ে এইধরনের চিন্তা করেছেন বলে মিসির আলী একটু লজ্জিত হলেন। ইউনুস লোকটা যথেষ্ট অমায়িক এবং মিশুক। মিসির আলির সিগারেট শেষ হয়ে গেল, তিনি আবার একটা সিগারেট ধরালেন। চায়ের খালি কাপটা মেঝেতে রাখলেন। তারপর ঘড়ি দেখেলেন, রাত ৯ টা। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। টিনের চালে শব্দ হচ্ছে অবিরত। ইউনুস সাহেব মিসির সাহেবের ফরমাশ খাটার জন্য পাশের বাড়ির একটা ছেলেকে ডেকে এনেছেন। ছেলের নাম মতিন। তবে মতিন এই মুহূর্তে বারান্দার মাটিতে বিছানা পেতে শোয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে চলে গেল। গ্রামের মানুষ খুব দ্রুত ঘুমাতে পারে। মতিন ঘুমে বিছানায় কাত হয়ে ফোঁস ফোঁস করে ঘুমাচ্ছে। ঘুমান্ত মানুষের দিকে তাকাতে ভাল লাগে মিসির আলির। কারন সেই সময় মানুষের মুখ থেকে সকল দুশ্চিন্তা সরে গিয়ে স্বর্গীয় আবেশ চলে আসে। মিসির আলি পরম মমতায় তাকালেন মতিনের দিকে। পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ছেলেটা। মিসির আলি ঠিক করলেন ইউনুস সাহেবকে বলে একে মিসির আলি ঢাকায় নিজের কাছে নিয়ে যাবে। তিনি ছেলেটিকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবেন। তবে ছেলেটির পড়াশোনায় আগ্রহ একেবারে কম। গ্রামের স্কুলে যায় মাসে দুই তিন দিন, এখনো সে ক্লাস টু পাশ দিতে পারে নাই। সে গত ৪ বছর ক্লাস টু তে, এটা নিয়ে সে গর্বিত। তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়-“কিরে মতিন কোন ক্লাসে পড় তুমি??”
মতিন অনেক গর্ব করে উত্তর দেয় “ কেলাশ টু তে পড়ি”!!
সে ফেল করবে তবু স্কুল ছাড়বে না, আবার স্কুলে নিয়মিত যাবেও না। এমন সময় ইউনুস সাহেব বারান্দায় ঢুকলেন। লোকটা পুরোপুরি ভিজে গেছেন। মিসির আলী একটু অবাক হলেন কারন ইউনুস সাহবের হাতে একটা প্রায় নতুন ছাতা আছে! তবে মিসির আলি কিছু বললেন না। শুধু চেয়ার থেকে পা নামিয়ে বসলেন। “স্যার, আপনে বসেন, পা নামানোর দরকার নাই”। বললেন ইউনুস সাহেব।
মিসির আলি একটু বিব্রত বোধ করলেন, এই বয়সের একজন মানুষ তাকে স্যার বালে ডাকে এটা শুনতেও একটু অন্যরকম লাগে। মিসির আলি মৃদু হেসে বললেন- সমস্যা নেই। আপনি যান, কাপড় চেঞ্জ করেন, ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
ইউনুস সাহেব ভিতরে চলে গেলেন, মিসির আলি আবার পা উঠিয়ে আরাম করে বসলেন। একটা মজার ব্যাপার হল ইউনুস সাহবের এত বড় বাড়িতে শুধু ইউনুস সাহেব একা থাকেন। বিয়ে করেছিলেন তবে বউ বিয়ের দুই মাসের মাথায় চলে যায় আর ফেরত আসেনি, ইউনুস সাহবও বিয়ে করেন নি। পাশের বাড়ি থেকে মতিনের মা এসে রান্না করে দিয়ে যায়। এত বড় বাড়িতে ইউনুস সাহব কিভাবে থাকেন তা ভাবতেই একটু অবাক হলেন মিসির সাহেব। কোথায় যেন একটু অস্বাভাবিকতা আছে একটু। মন বলছে “ সাবধান, মিসির আলি সাবধান”!! ☯☯ ৩।
রাত ১০ টা।
সামনা সামনি দুইটা বেতের চেয়ারে বসে আছেন মিসির আলি আর ইউনুস সাহেব। যথারীতি ইউনুস সাহবের চোখ নিচের দিকে। পাশে এখনো মতিন ঘুমাচ্ছে বেঘোরে। বারান্দায় দুটা পাঁচ টাকা দামের মোম বাতি জ্বলছে। বাইরে বৃষ্টির বেগ বাড়ছে ধিরে ধিরে। বাতাসে মোমের শিখা তিরতির করে কাঁপছে। বারান্দায় গভির নিস্তব্ধতা ভর করেছে। মিসির আলি একটু অসস্থি বোধ করলেন। শেষে তিনি নিজেই নিরবতা ভংগ করলেন- আপনাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর। আমার ভাল লেগেছে।
ইউনুস সাহেব চোখ তুলে একটু মিসির সাহেবের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেললেন। বললেন- জী ঠিক বলেছেন স্যার। আবার নিস্তব্ধতা নেমে এল, মিসির আলি সাহেব এবার সত্যি সত্যি অসস্থিতে পড়ে গেলেন। তবে এইবার নিরবতা ভংগ করলেন ইউনুস সাহেব- “স্যার, আমি আপনার কথা অনেক শুনেছি, আপনি অনেক বিজ্ঞলোক এটা আমি জানি। আমার একটা সমস্যা আছে।
মিসির আলি এবার নড়ে চড়ে বসলেন, একটা বেনসন ধরালেন তিনি। তারপর বললেন- হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন। আমি শুনছি। ইউনুস সাহেব একটা পুরাতন ছবি দিলেন মিসির আলিকে। তিনি ছবিটা নিয়ে মোমের আলোতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন। একজন যুবকের সাদাকাল ছবি। চেহারায় কিছুটা কাঠিন্য আছে যা ইউনুস সাহেবের চেহারায় অনুপস্থিত। ইউনুস সাহেব মাটির দিকে তাকিয়ে শুরু করলেন- এটা আমার বড় ভাইয়ের ছবি। আজ থেকে ঠিক বত্রিশ বছর আগের, তার নাম ইউসুফ। আমার থেকে তিন বছরের বড়। আমাদের দুই ভাইয়ের মদ্ধে অসম্ভব মিল ছিল। আমি বয়স তখন বিশ কি একুশ বছর। আমরা দুই ভাই বাপের ব্যাবসা দেখাশোনা করি। বাপের বিরাট কারবার ছিল গঞ্জে। রাতের বেলা আমরা দুই ভাই পালা করে দোকানে থাকি। আমার মা অনেক আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। বাবা অনেক সখ করে ঐ পাশের বাগান বাড়িটা করেছিলেন। আমাদের বাড়িতে আমি, আমার ভাই ইউসুফ, বাবা ছাড়াও একজন অন্য মানুষ থাকতো। তার নাম ছিল মনি, আমার এক খালাত বোন। বাপ মা মরা মেয়ে ছিল সে। তাই আমার বাবা ওকে আমাদের বাড়িতে এনে রাখেন। ইচ্ছা মনি বড় হলে তাকে বিয়ে দিবেন। মনির তখন প্রায় সতের আঠার বছর। দেখতে অনেক রুপবতি ছিল মনি। মনি সেই ছোট বেলা থেকে আমাদের বাড়িতে মানুষ, আমরা এক সাথে বড় হইচি। বাবা অনেক দেখে একটা ভাল সমন্ধ ঠিক করলেন মনির জন্য। ছেলেও গঞ্জে ব্যাবসা করে। বিয়ে প্রায় ঠিক তখন।
সে দিন এমন এক বৃষ্টির রাত। আমি গঞ্জের দোকানে। রাতে ঐখানে থাকব। বাইরে অনেক ঝড়। দোকানে আমি একা থাকি। রাতের বেলা সব কর্মচারীর ছুটি থাকে। গঞ্জ থেকে আমাদের বাড়ি প্রায় ৩ কিলো দূরে।
সেই রাতেই মনি আমার বড় ভাই ইউসুফের সাথে পালিয়ে গেল। বুঝলাম ভাইয়ের সাথে মনির মন দেওয়া নেওয়া ছিল অনেক আগ থেকেই।
মিসির সাহেব, আপনি কি আমার কথা শুনছেন? মিসির আলি তন্ময় হয়ে শুনছিলেন। কিছু প্রশ্ন এসেছে মনে- এই যেমন, ইউনুস সাহেব বললেন যে তাদের দুই ভাইয়ের মদ্ধে অনেক মিল ছিল তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই বড় ভাইয়ের প্রনয়ের কথা তার আগে থেকেই জানার কথা! যাই হোক, মিসির আলি আর প্রশ্ন করলেন না। তিনি একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন- হু, বলেন আমি শুনছি। মিসির আলির সাড়া পেয়ে ইউনুস সাহেব আবার শুরু করলেন- “আমার বাবা তখন ছেলের জন্য পাগল প্রায় হয়ে গেলেন, আমার বাবা অতি ভাল মানুষ ছিলেন। ভাই যদি বলত যে ও মনিকে বিয়ে করতে চায় তাহলে বাবা নির্ধিধায় রাজি হয়ে যেতেন কোন ভুল নাই। বাবা তখন ব্যাবসা বাণিজ্য পুরা ছেড়ে দিলেন। সারাদিন বাগান বাড়িতে থাকেন একা একা। আমি তখন ব্যাবসা চালাই। আমরা অনেক জায়গায় লোক পাঠিয়েছি তাদের খোঁজে কিন্তু ওদের পাইনি কোথাও। এভাবে প্রায় বছর খানেক চলে গেল। একদিন সন্ধায় বাবা আমাকে বাগান বাড়িতে ডেকে বললেন, “আমি সপ্নে দেখেছি তোর ভাই আর মনি আর এই দুনিয়াতে নাই। ওরা দুজন আমাকে ডাকছে। আমার সময় বুঝি শেষ হয়ে গেলরে বাপ”। বলে কান্নাকাটি শুরু করেলন।
আমি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে দোকানে চলে গেলাম। পরদিন সকালে বাবার মৃত দেহ পাওয়া গেল বাগান বাড়ীর পুকুরে! রাতের বেলা যে কোন কারনে হোক বাবা পুকুরে নেমেছিলেন তারপর আর উঠে আসতে পারেন নি।

মিসির আলি এইবার একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করে থাকতে পারলেন না- “কোন থানা পুলিশ হয়েছিল?
ইউনুস সাহেব একবার চোখ উঠিয়ে আবার নামিয়ে ফেললেন। বললেন- আসলে তখন তো থানা এত কাছে ছিল না, পুলিশে খবর দিতে অনেক সময় লাগত, তা প্রায় আট দশ ঘণ্টার পথ ছিল সেটা। তাই গ্রামের ইমাম সাহেব সহ আমরা লাশ দাফন করে দেই। জানেন তো মৃত দেহ বেশি সময় মাটির উপরে রাখা ঠিক না, এটা মৃতের আত্মা কষ্ট পায়। মিসির আলি সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ফেলে দিলেন, বললেন- হুম সেটা জানি। আচ্ছা ঐ ইমাম সাহেব কই আছেন এখন যিনি আপানার বাবাকে দাফন করেছিলেন? ইউনুস সাহেব বললেন- ঐ ইমাম ভিনদেশি মানুষ ছিলেন, ওনার বাড়ি ছিল রংপুর, তিনি একদিন রাতে কাউকে কিছু না বলে চলে যান, ওনার বাড়ির ঠিকানা আমাদের কারো জানা ছিল না। উনিও আর কোনদিন ফিরত আসেন নি। মিসির আলি বললেন- আচ্ছা খুব ভাল, তারপর?
ইউনুস সাহেব বললেন- পরপর আমার তিনজন পরিবারের মানুষকে হারিয়ে আমি একটু বিবাগি হয়ে যাই। ব্যাবসা বাণিজ্য ছেড়ে দেই কর্মচারীদের উপর, আমিও বাবার মত ঐ বাগান বাড়িতে আশ্রয় নেই। সারাদিন সারারাত ওখানেই থাকতাম। আমার খুব মন খারাপ হতো, আমি বাবা বাবা করে কাঁদতাম। এভাবে কত দিন গিয়েছিল জানি না হটাৎ এক গভির রাতে আমি বাগান বাড়ির বারান্দায় বসে ছিলাম। তখন শীত কাল। বাইরে তখন ঘন কুয়াশা, কুয়াশার কারনে আকাশের চাঁদ দেখা যায় না ঠিক মত। আমি কাঁদছি। হটাৎ দেখি সেই কুয়াশা ভেদ করে একজন মানুষ এসে দাঁড়াল আমার সামনে। অন্ধকার আর চাঁদের আলোর লুকচুরির কারনে লোকটাকে বুঝা যাচ্ছে না, তবে এটুকু বুঝতেসি লোকটির সারা শরীর পানিতে ভেজা! আমি অবাক হয়ে গেলাম, কারন এ দিকে শীত অনেক বেশি পড়ে আর এই শীতের রাতে কেউ একজন খালি গাঁয়ে মাত্র একটা লুঙ্গি পরে থাকতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করার মত না।
আমি বললাম- কে? কে ওখানে?
লোকটা জবাব দিল- আমি তোর বড় ভাই ইউসুফ, তুই আমার সাথে আয়। বলে লোকটা উল্টো হাঁটা দিল। আমার মনে তখন অনেক আনন্দ! আজ এত বছর পরে আমার ভাই এসেছে!! ভাইকে পাবার আনন্দে তখনকার অস্বাভাবিক ব্যাপার গুলো চোখে পড়ল না। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত হাঁটা ধরলাম ভাইয়ের পিছে পিছে। দেখি আমার ভাইটি বাগান বাড়ির গাছের ফাক দিয়ে আস্তে আস্তে পুকুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমিও গেলাম। দেখি ভাই আস্তে আস্তে হিম শীতল পানিতে গলা পর্যন্ত নেমে গেল। আমি পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ালাম।
আমার ভাই তখন আমাকে বলল- “ইউনুস, আমি ফিরা আসছি। আমি বললাম- ভাই এদ্দিন তুমি কই ছিলা?
ভাই আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল- “ইউনুস, আমি আর মনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার পরে একটা রাস্তায় আমাদের ডাকাত ধরল। তারপর ওরা আমাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিল আর মনিকে কোথায় যেন নিয়ে গেল। সেই থেকে আমি পানি ছাড়া থাকতে পারি না। আমি এখন থেকে এই পুকুরেই থাকব।
আমার তখন ভয়ে হাত পা বরফ হয়ে গেছে। আমি একটা ঢোক গিলে বললাম- মরে গেছ মানে কি?
ভাই একটু খন খনে গলায় বলল- মরে গেছি মানে মারা গেছি। ইন্তেকাল করছি। এইবার বুঝচস? আমার তখন অবস্থা খারাপ। আমি কোনমতে বললাম- আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার যতদিন ইচ্ছে থাকবা। সমস্যা নেই।
ভাই হেসে বলল- তুই ভয় পাইস না, আমি তোর কোন ক্ষতি করব না, তুই শুধু আমি যা যা বলি তাই করবি। এই পুরো বাগান বাড়ির পাশে দেওয়াল তুলে দিবি যেন কেউ না আসতে পারে, আর এই পুকুরের পশ্চিম পাশে একটা পাকা ঘাটলা তুলে দিবি। আমি রাতের বেলা ওখানে বসে আরাম করব। আর শোন আমার কথা কাউকে বলবি না যেন, নাহলে তোর ক্ষতি হবে আর যাকে বলবি তাকে আমি মেরে ফেলব আমার নিজের জন্য। মনে থাকে যেন। আমি বললাম ঠিক আছে ভাই। তারপর আমি পুরো বাগান বাড়ির চারপাশে দেওয়াল তুলে উপরে কাচের টুকরা দিয়ে দেই। আর একটা সুন্দর শান বাঁধানো পাকা ঘাটলা তৈরি করে দেই।
মিসির আলি এবার একটু নড়ে বসলেন। হুম। খারাপ না। ভাল একটা গল্প। যদিও অনেক ফাক ফোঁকর আছে। তবুও গ্রামের একজন সামান্য ব্যাবসায়ি এত সুনিপুনভাবে গল্প ফাঁদতে পারেন তবে বলতে হবে লোকটির মেধা অনেক!
মিসির আলি বললেন- আপনি এই ঘটনা কাউকে বলেছিলেন? ইউনুস সাহেব বললেন- হু, একজনকে বলেছিলাম, আমাদের গ্রামের স্কুলের অঙ্কের মাস্টার, উনি বললেন ঠিক আছে আমি একরাত পুকুর পাড়ে থাকব, পরদিন সকালে অনাকে মৃত অবস্থায় পুকুরের পানিতে ভাসতে দেখা যায়।
মিসির আলি বললেন- তো আপনি আমার কাছে আসলে কি চাচ্ছেন?
ইউনুস সাহেব একটু কেশে নিলেন। তারপর বললেন- দেখেন মিসির সাহেব, আমি গ্রামে থাকতে পারি কিন্তু আমি বি এ পাশ করেছিলাম সেই সময়ে। আমি দেশি বিদেশি লেখকের অনেক বই পড়ি, সেই সুবাদে আপনারও কয়েকটা বই পড়েছি। আমি জানি আমার ধারনা আমি ঐ পুকুর পাড়ে এক ধরনের হেলুসিনেশান হয়।
হটাৎ যেন ইউনুস সাহবের গলা কেঁপে উঠল- আমি চাই আপনি আমার এই রোগের চিকিৎসা করে দিবেন, আমি সুস্থ হতে চাই! মিসির সাহেব কিছু বললেন না। তার মাথায় অনেক কিছু চিন্তা চলছে।
তারপর মিসির সাহেব বললেন- ঠিক আছে, আপনি ঘুমান। আমি কাল ঐ বাগান বাড়িটা দেখব আর কাল রাতে আমি ওখানে থাকব। ☯☯৪।
পরের দিন মিসির আলির অনেক ব্যাস্ত একটা দিন গেল। সারাদিন বৃষ্টি ছিল। তবুও উনি সেদিন গ্রামে মসজিদে গেলেন। মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে কথা বললেন। গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধ মানুষের সাথে কথা বললেন। দুপুরে গেলেন থানায়। চেষ্টা করলেন কিছু তথ্য জোগাড় করার। একটা অদ্ভুত তথ্য পেলেন তিনি- বাগান বাড়ির ঘাটলা বানানোর জন্য মাত্র একজন লোক রেখেছিলেন ইউনুস সাহেব! আর ঐ লোকটিও ঘাটলার কাজ পুরোপুরি শেষ হবার আগে মারা পড়ে, তার লাশও পাওয়া যায় ঐ পুকুরের পানিতে! এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কেন ইউনুস সাহেব গোপন করলেন বুঝতে পারলেন না মিসির আলি। বিকেলে যখন ইউনুস সাহেবের বাড়ি ফিরলেন তখন মিসির সাহেব পুরা কাক ভেজা হয়ে গেছেন। শরীর গরম হয়ে আসছে। জ্বর জ্বর ভাব।
ইউনুস সাহেবও জ্বরে পড়েছেন। প্রায় একশ দুই ডিগ্রির মত।
মিসির আলি একটা ফ্লাক্সে কিছু চা আর এক প্যাকেট বেনসন নিয়ে ইউনুস সাহেবকে বললেন “আমাকে আপনার বাগান বাড়িতে রেখে আসুন, আমি আজ রাতে ওখানে থাকব”। ইউনুস সাহেব মিসির আলিকে বাগান বাড়িতে নিয়ে গেলেন। মূল ফটকে বিশাল লোহার গেট। গেটে এত বড় এক তালা। সেই তালা খুললেন ইউনুস সাহেব। মিসির আলি অবাক হয়ে দেখলেন গেটের চাবি ইউনুস সাহেবের কোমরে একটা কাল সুতা দিয়ে আটকানো, এবং সেখানে মাত্র একটাই চাবি! বুঝতে পারলেন এই চাবি তিনি এক মিনিটের জন্যও হাত ছাড়া করেন না।
মিসির আলিকে বাগান বাড়িতে রেখে ইউনুস সাহেব চলে গেলেন বাড়িতে। যাওয়ার সময় মিসির আলি খেয়াল করলেন ইউনুস সাহেব জ্বরে কাঁপছেন। ☯☯ ৪.
রাত আটটা।
মিসির আলি পুরা বাগান বাড়ি দেখা শেষ করলেন মাত্র। এত বড় বাগান বাড়িকে পুরা মৃত নগরির মত মনে হচ্ছে। অনেক আগাছা আর শুকনো পাতায় ভরে আছে জায়গাটা। কতগুলো দিন এখানে মানুষের আনাগোনা নেই ভাবতেই একটু বিস্ময় অনুভব করলেন তিনি।
আকাশে এখন কাল মেঘের খেলা। এই আসছে এই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আকাশের মেঘ ফুঁড়ে পূর্ণিমার চাঁদ উকি মেরেই আবার লুকিয়ে যাচ্ছে। মিসির আলি আগে থেকেই একটা ছাতা আর একটা চেয়ার নিয়ে রেখে আসেছিলেন পুকুর পাড়ে, শান বাঁধানো ঘাটলার ঠিক অপরপাশে।
মিসির আলি পুকুর পাড়ে গিয়ে চেয়ারে বসলেন। কাঁধের উপর ছাতাটা ফেলে এক কাপ চা নিলেন। চা শেষ করে একটা সিগারেট ধরালেন।
বর্ষাকালে চারপাশে বেঙের ডাকে মুখরিত থাকে, তবে এই পুকুরে কোন বেঙ-এর ডাক শুনতে পাচ্ছেন না তিনি। অবাক করা বিষয়! ব্যাপারটা কেমন ভৌতিক মনে হল।
মৃদু হেসে দিলেন মিসির আলি। তিনি ভূতে ভয় পান না, তবে সাপ খোপে ভয় পান। তাই তিনি মাটি থেকে চেয়ারে পা তুলে নিলেন। শুরু হল অপেক্ষার পালা। তিনি কোন আলো জ্বালাননি। শুধু পকেটে একটা ছোট টর্চ রেখেছেন। ইউনুস সাহেবের ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছেন মিসির আলি। তিনি একটা সাধারন মানুষিক রোগে ভুগছেন। এই রোগের রুগিরা নিজেদের চারপাশে এক ধরনের আলাদা জগত তৈরি করে নেয়। সে জগতে দ্বিতীয় কোন সত্ত্বার প্রবেশ নিষিদ্ধ।
যে খুন গুলো হয়েছে এই পুকুরে সেগুলো একদিক থেকে দেখলে খুবই সাধারন খুব হতে পারে, এতে কোন রহস্য নাই। যেমন স্কুল মাস্টার খুব সাধারন একজন মানুষ ছিলেন, পরকালে ভয়ানক বিশ্বাস করেন তিনি। এই তথ্যগুলো মাস্টার সাহেবের বাড়ির লোকজন থেকে জেনেছেন মিসির আলি। হয়ত ইউনুস সাহেবের গল্প তার মনে দাগ কাটে, রাতে এই নির্জন বাগান বাড়িতে বেড়াতে এসে তিনি হেলুসিনেশানের জন্য কিছু একটা দেখেন। তারপর পুকুরে লাফিয়ে পড়েন। মাস্টার সাহেব সাঁতার জানতেন না, তাই সহজেই মারা যান। ইউনুস সাহেবের বাবার ক্ষেত্রেও একই ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। বৃদ্ধ মানুষ ছিলেন উনি তার উপরে পুত্র শোক। তাছাড়া অনেকদিন একা একা এই নির্জন বাগান বাড়িতে থাকার কারনে উনিও একধরনের মানুষিক সমস্যায় পড়েন।
মসজিদের হুজুর হয়ত সত্যি সত্যি দেশের বাড়ি চলে গেছেন। ইউনুস সাহেবের এই রোগ সারাতে হলে প্রথমে প্রমান করতে হবে যে তার ধারনা ভুল, তিনি কোন মৃত ভাইকে দেখেননি। কাল সকালে যখন মিসির আলি অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরবেন তখনই একমাত্র তাকে বিশ্বাস করান যাবে।
মিসির আলির এই একটা গুন খুব ভাল, সব সমস্যা আগে সবচাইতে সহজ সমাধান ধরে উনি শুরু করেন। সহজ সমাধান থেকে আস্তে আস্তে জটিলের দিকে যান, এভাবে শুরু করলে কোন পয়েন্ট মিস করবার সম্ভাবনা কম থাকে। রাত অনেক হল। প্রায় একটা বাজে। মিসির আলি বসে থেকে থেকে কোমর ব্যাথা করে ফেলেছেন। তিনি একটু নড়ে বসলেন। বৃষ্টি অবিরাম ঝরছে, টিপ টিপ শব্দে। পুকুরের পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে এক চমৎকার শব্দ করছে। মিসির আলি মুগ্ধ হয়ে শুনছেন সেই শব্দ। এমন সময় পুকুরের পানিতে কিছু একটা আলোড়নের শব্দ শোনা গেল, মিসির আলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন পুকুরের দিকে। কই? নাতো কিছু না, হয়ত কোন বড় মাছ শব্দ করেছে। মিসির আলি ভাল করে খেয়াল করলেন। এই তো এই তো কিছু একটা নড়ছে পুকুরের ঠিক মধ্যখানে! অন্ধকারে ভাল বুঝা যাচ্ছে না।
জিনিসটা আস্তে আস্তে শান বাঁধানো পুকুরের ঘাটলার দিকে এগিয়ে আসছে! মিসির আলি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না!
কেউ একজন মিসির আলির মাথার ভিতর থেকে আর্তনাদ করে চিৎকার করে বলে উঠল- পালাও, মিসির আলি পালাও!!
- > চলবে ...

" সাবধান, মিসির আলি সাবধান!!" (একটি ছোট ভৌতিক উপন্যাস) - লিখেছেন জাহাজী পোলা [শেষ খন্ড]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, September 3, 2011 at 10:18pm
৫.
জিনিসটা যখন বাঁধানো ঘাটে এসে উঠল তখন একটা মানুষের আকার ধারন করল। কিছুটা গুঁজো হয়ে উঠে বসল ঘাটের সিঁড়িতে। তারপর মিসির আলির দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা শ্লেষ মিশানো কণ্ঠে ডাকল- মিসির সাহেব আমি এসেছি, আমার নাম ইউসুফ, আমি ইউনুসের বড় ভাই!! মিসির আলি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর ধীর শান্ত পায়ে ঘাটলার দিকে এগিয়ে গেলেন।
ইউসুফ দুই পা ভাঁজ করে কাঙালের মত দুই হাত জড় করে বসল। তার থেকে ঠিক দশ ফুট দূরে বসলেন মিসির আলি। তার চোখে তখনো বিস্ময়। দুজনই বৃষ্টিতে ভিজচ্ছেন।
মিসির আলি ইউসুফের দিকে তাকালেন, অন্ধকারে ঠাহর করতে পারলেন না ঠিক মত। তবে যতটুকু দরকার ততটুকু দেখে নিয়েছেন মিসির আলি। লোকটির পরনে শত ছিন্ন একটা লুঙ্গি আর পুরা শরীর খালি। মিসির আলির ও কি হেলুসিনেশা হচ্ছে? তিনি আজ সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজেছেন-জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে তাই হেলুসিনেশান হওয়া স্বাভাবিক, তারমানে তিনিও কি ইউনুস সাহেবের বাবা, সেই রাজমিস্ত্রি আর মাদ্রাসা শিক্ষকের পরিনতি বরন করতে যাচ্ছেন? মিসির আলি মনকে স্থির করলেন। তারপর বললেন- ইউসুফ সাহেব, আপনার কোন অস্তিত্ব নেই, আপনি আমার কল্পনা মাত্র।
ইউসুফ ঘোঁত ঘোঁত স্বরে হেসে উঠল- বলল তাহলে আমাকে ছুয়ে দেখেন আপনি!
মিসির আলি বললেন- আমার খুব সম্ভব হেলুসিনেশান হচ্ছে, তবুও আমি আপনাকে ছোঁব না। কারন এই সময় মানুষ অনেক কিছু অনুভব করে যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। তবে আমি আমার যুক্তি দিয়ে প্রমান করব আপনি আমার কল্পনা মাত্র। ইউসুফ আবার ঘোঁত ঘোঁত করে হেসে উঠল। একটা হাত নিয়ে ঘাটলার সিঁড়িতে ঘষতে লাগলো। তারপর বলল- জী আপনে শুরু করেন।
মিসির আলি বললেন- প্রথমত আমার ধারনা আপনাকে কোন ডাকাত খুন করে নি, আর আপনি কোন রাস্তায় খুন হননি আপনি খুন হয়েছেন এই বাগান বাড়িতে!
আমি কি ঠিক বললাম?
ইউসুফ কোন কথা বলল না- মনে হল সে শুরুতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেল। তারপর আমার ধারনা- আপনার বাবা নিছক পানিতে পড়ে মারা যান নি বরং তিনি খুন হয়েছেন, সেই সাথে সেই রাজমিস্ত্রি, স্কুলের শিক্ষক এবং সেই হতভাগা মসজিদের ইমাম সবাই এই বাড়িতেই একে একে খুন হয়েছে।
ইউসুফ বললেন- হ্যাঁ, আমিই সবাইকে খুন করেছি, আমার বাবা আমার অস্তিত্ব টের পায় তাই তাকে খুন করেছি, মসজিদের ইমাম বুঝতে পারে যে বাবা খুন হয়েছেন তাই ওকেও খুন করেছি, স্কুলের শিক্ষক সেও আমার উপস্থিতি পায় তাই তাকেও আমি সরিয়ে দিয়েছি, আর সেই রাজমিস্ত্রি যে কিনা একসময় বুঝতে পারে যে আমি এই পুকুরেই বাস করি তাই তাকেও খুন করেছি!! যে যে আমার অস্তিত্ব টের পাবে তাদের সবাইকে আমি খুন করব। আমি একা থাকতে চাই, আমি মৃত্যুর পর শান্তিতে থাকতে চাই। মিসির আলি একটু ভয় পেয়ে গেলেন, তবুও প্রকাশ করলেন না। তিনি জানেন শত্রু যদি তার দুর্বলতা টের পায় তাহলে সে মানসিক ভাবে শক্তিশালি হয়ে যাবে।
মিসির আলি একটু হেসে বললেন- খুব ভাল, আপনি আপনার বাবাকে খুন করেছেন ভাল কথা, তাহলে আপানার ছোট ভাইকে খুন করেন নি কেন? বরং তাকে আপনি নিজে থেকেই দেখা দিয়েছিলেন। মিসির আলির এই কথার তিরে ইউসুফ একটু অসহায় হয়ে গেল বুঝতে পারলেন মিসির আলি। তিনি হেসে বললেন- আপনি তো তাকে কখনই খুন করতে পারবেন না ইউসুফ সাহেব। কারনটা কি জানেন?
ইউসুফ কিছু বলল না, ঠায় মিসির আলির দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ দুটো জ্বলছে ভাটার মত, এক অমানুষিক ক্রোধ চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে ইউসুফের।
মিসির আলি খুব শান্ত স্বরে এবং দৃঢ় কণ্ঠে বললেন- আপনি ইউনুসকে খুন করতে পারবেন না কারন আপনি আসলেই তার বড় ভাই ইউসুফ নন বরং আপনি ইউনুস! ☯☯ ৬।
এই কথার পরে বসা অবস্থা থেকে লাফ দিয়ে মিসির আলিকে লক্ষ করে উঠে এল ইউসুফের ভূতবেশি ইউনুস সাহেব। যেন মিসির আলিকে ছিঁড়ে খুড়ে খাবেন তিনি। কিন্তু তার আগেই পুকুর পাড়ের চার পাশ থেকে দশ বারটা শক্তিশালী টর্চের আলো নিকষ কাল পুকুর পাঁড়কে ধাধিয়ে দিল। চার পাঁচ জন পুলিশ এসে ইউনুসকে ধরে ফেলল। রাগে ক্রোধে ইউনুস হাত পা ছুঁড়ছে। পুলিশরা তাকে নিয়ে বাগান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। ওসি সাহেব মিসির আলির পাশে এসে দাঁড়ালেন। বললেন- অনেক ধন্যবাদ স্যার।
মিসির আলি বললেন- আমার কি মনে হয় জানেনা ওসি সাহেব- এই শান বাঁধানো ঘাঁটটা ভেঙ্গে কিছুদূর মাটি খুঁড়লেই পেয়ে যাবেন হতভাগ্য ইউসুফ, মনি আর ঐ মসজিদের ইমামের কঙ্কাল।
ওসি সাহেব তার অধনস্ত একজন অফিসারকে হুকুম দিলেন- লোক এনে এখনই এই ঘাট ভাঙ্গা শুরু করা হোক। ☯☯ ৭।
রাত চারটা বেজে এগার মিনিট।
দশ বার জন লোক অনেক উৎসাহের সাথে পাকা ঘাটলা ভাঙ্গা শুরু করল।
মিসির আলি আর ওসি সাহেব বাগান বাড়ির বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন।
ওসি সাহেব একটু ইতস্তত করে বলল- স্যার অনুমতি দিলে একটা সিগারেট ধরাব।
মিসির আলি একটু স্মিত হাসলেন, বললেন- ধরাও।
সিগারেট ধরাতে ধরাতে ওসি বললেন- স্যার, আমার চাকুরি জীবনে এমন কেস একটাও পাই নাই। আপনি শুরু থেকে একটু যদি খুলে বলতেন। মিসির আলি শুরু করল- ঘটনার শুরু মনি মেয়েটিকে নিয়ে। ইউনুস সাহেব বলেছিলেন মনি মেয়েটা অনেক সুন্দরি ছিল, দুই ভাই ঐ মেয়েটার ভালবাসায় পাগল ছিল বলে আমার ধারনা। আর মেয়েটি বোধহয় বড় ভাই ইউসুফকেই ভালবাসত। তারপর যখন মনির বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তখন ঐ রাতে ইউনুস কোন কারনে বাড়ি দুর্ভাগ্যক্রমে বাড়ি এসেছিল। কিন্তু নিজের ঘরে বড় ভাইকে না দেখে একটা সন্দেহ মাথায় আসে, সে সোজা চলে যায় বাগান বাড়ি। এই বাগান বাড়িতে ঐ সময়েও কেউ থাকতো না। ইউনুস এসে দেখে তার ধারনাই ঠিক। ইউসুফ আর মনি দুজন এই বাগান বাড়িতে গোপনে দেখা করতে এসেছে। ইউনুস বোধহয় ছোট বেলা থেকেই একটু মানসিক ভারসাম্যহীন। সে এই দৃশ্য দেখে আর ঠিক থাকতে পারে নি। দুইজনকেই রাগের মাথায় খুন করে। তারপর লাশ নিয়ে যায় পুকুর পাড়ে। সেখানে গর্ত করে পুঁতে ফেলে সে। তারপর ভোর হবার আগেই দোকানে চলে যায়। যেহেতু গ্রামের রাস্তা আর দোকানে কেউ ছিল না সেই রাতে তাই ইউনুস যে দোকানে ছিল না রাতে এটার প্রমান রইল না কোথাও। সবাই ভাবল ইউসুফ আর মনি পালিয়ে গেছে। মিসির আলি একটু থেমে আবার শুরু করলেন- চিন্তা কর, সেই বয়সের একটা ছেলে একরাতে দুটা খুনের পর লাশ গুম করে ফেলা রাতারাতি! সেই সময়ই তার মধ্যে দ্বৈত সত্ত্বার জন্ম নেয়। এক সত্ত্বায় সে সাধারন ইউনুস আরেক সত্ত্বায় সে ইউসুফ যে কিনা মৃত অবস্থায় নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়।
বৃদ্ধ বাবা হয়ত পুকুর পাড়ের ঐ গোপন কবর দেখে ফেলেছিলেন তাই তাকেও খুন করা হয়। ইমাম সাহেব বুঝতে পারেন যে ইউনুসের বাবা সাধারনভাবে মারা যান নাই সেই জন্য তাকেও খুন করে লাশ আগের দুইটা লাশের সাথে পুঁতে ফেলা হয়, এই বার সে একটা বুদ্ধি করে, কবরের উপর একটা পাকা ঘাট তৈরি করে যেন কখনো মাটি সরলেও লাশ বের না হয়ে আসে। এই ব্যাপারে সে যথেষ্ট সতর্কতা নেয়, একজন রাজমিস্ত্রি নিয়গ দেয়। কিন্তু বিধি বাম, রাজ মিস্ত্রি কাজ শেষ করার আগেই ঐ লাশের কংকাল দেখতে পায়। তাই তাকেও খুন করতে হয়। আর তার বউয়ের ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারছি না। মনে হয় স্বামীর অদ্ভুত আচারনে কিছুটা ভিত হয়ে চলে গেছেন। মিসির আলি থামলেন। আবার এক কাপ চা নিয়ে বসলেন।
ওসি সাহেব থেকে থেক খাবি খাচ্ছেন। এমন জঘন্য ঘটনা তিনি কখনই দেখেননি।
সব শেষে বললেন- স্যার সব বুঝলাম, তবে একটা জিনিস বুঝতেছি না। হটাৎ সে আপনাকে এর মদ্ধে জড়িয়ে কেন সে নিজের সর্বনাশ করল? মিসির আলি একটু হাসলেন। বললেন- ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যারা সিরিয়াল কিলার হয়ে থাকে তারা সাধারণত নিজেকে অনেক বুদ্ধিমান মনে করে। যে ভাবে দুনিয়াতে তার মত আর কেউ এত বুদ্ধিমান নাই। তাই সে একটা গেম খেলতে চায়। সেই জন্যই সে স্কুলের ঐ শিক্ষককে ঘটনা বলে। ঠিক একই কারনে আমার সাথে সে এই গেমের আয়োজন করে!
অফিসার, আমি এতখন যা বললাম সব লজিক দিয়ে বলেছি, জ্ঞানিরা বলেন “যুক্তিযুক্ত অনুমান বাস্তবাতার চেয়ে বেশি শক্তিশালী! আশা করি আমার কথার প্রমান পাবে। আমি ঘুমাতে গেলাম কাল সকালে আমার ঢাকার বাস! ☯☯ ৮। মিসির আলি মতিকে নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। মতিকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটার মেধা ভাল, অল্প দিনেই অনেক কিছু শিখে ফেলেছে।
মিসির আলির দিন আগের মতই চলতে শুরু করল।
মিসির আলি শুয়ে শুয়ে একটা বই পড়ছেন, বইটার নাম “পাগলা দাশু”। খুব মজা পাচ্ছেন তিনি। থেকে থেকে হেসে উথছেন। এমন সময় মতি একটা চিঠি এনে দিল। মিসির আলি খুললেন- ঐ ওসি সাহেব চিঠি দিয়েছে! স্যার,
সালাম জানবেন। আশা করি ভাল আছেন। আমরাও এদিকে ভাল আছি।
স্যার, ঐ ঘাটের নিচ থেকে বেশ কয়েকটা কঙ্কাল পেয়েছি আমরা।
একটা ঘটনা জানানোর জন্য চিঠিটা লেখা। ইউনুস সাহেব আর নেই। উনাকে কোর্ট বিল্ডিঙে নেওয়ার পরে হটাৎ করে ছয় তালা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
আর আগামি মাসে আমার ট্রান্সফার হবে অন্য থানায়।
আপনি ভাল থাকবেন।
আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
ইতি,
জহির
ওসি, শান্তি পুর থানা


মিসির আলি সাহেবের মন খুব খারাপ হয়ে গেল। তিনি চিঠিটা ভাঁজ করে বুকের উপর রেখে শুয়ে পড়লেন। মনে মনে ভাবলেন- আবার একবার যাবেন ঐ শান্তিপুরের বাগান বাড়িতে। একটা রাত কাটাবেন ঐ পুকুর পাড়ে। আত্মা বলে যরি কিছু থেকে থাকে হয়ত ঐ রাতে ইউনুস সাহেবের আত্তার সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে! সেক্সপিয়ার বলে গেছেন- “দেয়ার আর মেনি থিংস ইন আর্থ এন্ড হেভেন”!! হটাৎ ঘুমিয়ে পড়লেন মিসির আলি। আর ঘুমানোর সাথে সাথেই একটা স্বপ্ন দেখলেন তিনি!
ইউনুসের ভাই ইউসুফ! গভির রাতে সেই শান বাঁধা ঘাটে আধ ছেঁড়া লুঙ্গি পরে ভেজা শরীরে কাঙালের মত দুই হাত জড় করে বসে আছেন
সমাপ্ত ।

নিছক গল্প নয় - তানভীর রায়হান

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Sunday, September 4, 2011 at 11:05pm
আমি তানভীর বলছি রাজশাহী থেকে।আজ আমি আমার একটা অভিগ্গতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।আমার বাসা রাজশাহী শহরের ভেতরে।ঘটনাটি ছিল আজ থেকে ৬ বছর আগের।তখন আমি HSC পাশ করছি মাত্র।সময়টা ছিল বর্ষাকাল।পদ্মাতে প্রচুর পানি।আমরা কয়জন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম যে একটা নৌকা ভ্রমন করবো।আমরা চারজন ছিলাম একসাথে।সবাই রাজি হল।ঠিক করলাম তারপর দিন আমরা T বাধ থেকে যাত্রা শুরু করবো সকাল ৯টায়।কোথায় যাব ঠিক নাই।সারাদিন নৌকায় কাটাবো ঠিক করলাম।পরদিনটা ছিল রবিবার।সকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছিল।সকাল দশটায় আমি T বাধ এ পৌছালাম। কিন্তু কেউ আসেনি।আমাদের বন্ধুদের কারও কাছে পারসোনাল মোবাইল ছিলনা শুধুমাত্র রিংকু ছাড়া।তাই আমি দোকান থেকে রিংকুকে ফোন করে T বাধএ আসতে বললাম।রিংকু আসলো প্রায় ১ ঘন্টা পর।তখন প্রায় বেলা এগারোটা।আর কেউ আসলোনা।আমি আর রিংকু ঠিক করলাম আমরা দুজনেই ঘুরতে বের হব নৌকা নিয়ে।ঠিক তখন বৃষ্টিটা আবার জোরে শোরে এল।এ বৃষ্টি আর যেন থামতেই চায়না।তারপর যখন বৃষ্টি থামলো তখন প্রায় দুপুর ৩টা।আমরা একটা হোটেলে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করলাম।তারপরে একটি নৌকা ভাড়া করলাম।কিন্তু আমরা আমাদের প্লানটা একটু চেন্জ করলাম।আমরা ঠিক করলাম নদীর ওপারে ভারতের বর্ডারের কাছে একটি গ্রাম আছে সেখানে যাব।তারপর আমরা রওয়ানা হলাম।গ্রামে পৌছানোর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আগে চর এর ভেতর নৌকাঘাটে নৌকা আমাদের নামিয়ে দিল।বাকিটা পথ হেটে যেতে হবে।মাঝিকে জিজ্ঞেস করলাম যে কত রাত পর্য্ন্ত এখানে নৌকা পাওয়া যাবে?সে বলল যে আনুমানিক রাত নয়টা পযন্ত নৌকা পাওয়া যাবে। তখন আমরা সেই গ্রামের দিকে হাটা ধরলাম।গ্রামে পৌছে আমরা দুজনে এদিকে ওদিকে ঘোরাফেরা শুরু করলাম।গ্রামে কোন বিদ্যুতের লাইন নেই।জনবসতি ও কম।যখন সন্ধা নামলো তখন চারিদিকে শেয়াল ডাকা শুরু করলো।আমরা শেয়াল ডাকার শব্দে আরও মজা পাচ্ছিলাম।
রাত বাড়তে থাকলো।বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া দরকার।দুজনে নৌকাঘাটে এসে পৌছালাম।তখন রাত ৯টা প্রায়।আমরা ঘাটে এসে একটু অবাক হলাম।একটা নৌকা ও আমরা নৌকাঘাটে দেখতে পেলাম না।পড়লাম চরম এক বিপদে।তখনও টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল।এর মধ্যে আমাদের একমাত্র ছাতাটার স্টিকগুলো বাতাসের চাপে অলরেডী ভেঙ্গে গেছে।আমরা পুরোপুরি ভিজে গেছি।এখন কি করা যায়? সেই চিন্তায় করছিলাম।এমন সময় রিংকু ওর এক বড় ভাইএর কাছে ফোন দিল।সে বড় ভইএর বাসা T বাধের পাশেই।এমনিতেয় আবহাওয়া খারাপ,তার ভেতর চর এলাকায় নেটওয়ার্কের সমস্যা তো আছেই।কিন্তু আশ্চযজনক ভাবে প্রথম বারেই রিং হয় এবং ওপাশ ফোন রিসিভ হয়।রিংকু ওর সে বড় ভাইকে অনুরোধ করে যে একটা নৌকা ম্যানেজ করে তারাতারি T বাধ সোজা চড়ে পাঠিয়ে দিতে, নাহলে আমাদের খুব বিপদ হবে।ভাড়া ডবল চায়লে ডবল দিব।বড় ভাইটা বলল আচ্ছা দেখছি।তারপর আমরা ওখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম।চারিদিকে শেয়ালের ডাক আর টিপটিপ বৃষ্টি।আমরা ব্যাপারটা ইনজয় করছিলাম।একটু একটু ভয় ও করছিল।এতবর একটা চর আমরা মাত্র দুইজন।শুনেছিলাম বর্ষার দিনে অনেক জেলেরা নৌকায় করে সারা রাত মাছ ধরে।দুর্ভাগ্যবসত সে রাতে একটা ও জেলে নৌকা চোখে পরলোনা।
রাত যখন প্রায় ১০ তখন একটা ডিঙ্গি নৌকা দেখতে পেলাম।তখন আমরা প্রায় ভিজে চুপসে গেছি।নৌকাটা ঘাটে এসে ভিড়লো।অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছিলোনা।নৌকার মাথায় বৈঠা হাতে একজন মানুষ বসে ছিল।আমরা দুজনে গল্পে অনেক মুশগুল ছিলাম যে আমাদের মনে হয়েছিল যে নৌকাটা হয়তবা রিংকুর সেই বড় ভাই ই পাঠিয়েছে।তাই আমরা মাঝিকে কোন কথা না জিঙ্গাসা করে সরাসরি নৌকায় উঠে পড়লাম।তখন মাথায় একটাই চিন্তা কাজ করছিল যে তারাতারি বাসায় যেতে হবে কারন অনেক রাত হয়ে গেছিল।এর মধ্যে রিংকু ওর বাসায় ফোন করেছিল।অনেক বার ফোন ট্রাই করার পর আন্টিকে ফোনে পেয়েছিল।আমি খালাদের বাসায় থাকতাম আর আমার বাবা মা থাকতো নাটোরে।বাসার গেটের একটা এক্সটা চাবি সবসময় আমার সাথে থাকতো আর আমি HSC পরীক্ষার পর থেকে প্রতিদিন ই একটু রাত করে বাসায় ঢুকতাম। তাই আমি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করছিলাম না।চিন্তা হচ্ছিল রিংকুর মা কে নিয়ে কারন আন্টি বাসায় একা থাকেন।
আমরা নৌকার ওঠার পর মাঝি ও আমাদের সাথে কোন কথা বললনা, নৌকা ঘুড়িয়ে সোজা T বাধের মুখে রওয়ানা হয়।নদীতে তুমুল স্রোত।বাতাসের বেগ ও বাড়তে থাকলো।আমি রিংকু দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে কথা বলছি। আমাদের প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছিল।নৌকায় ওঠার ৫মিনিট পর আমার চোখ গেল সেই চরের দিকে যেখানে আমরা এতক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম।হটাত ওদিকে তাকাতেই আমার সারা শরীর অবশ হওয়ার দশা।দেখি অনেক গুলো জোড়া জোড়া চোখ আমার দিকে নিশ্চল ভাবে তাকিয়ে আছে।চোখগুলো যেন জ্বলছে।রিংকুও দেখি ওদিকে তাকিয়ে আছে।পরে বুজলাম যে এগুলো তারা, যাদের চিতকারে আমরা এতক্ষন মজা পাচ্ছিলাম।ভাবলাম এত শেয়াল এতক্ষন আমাদের পাশে ই ছিল তারপর ও আমাদের কোন ক্ষতি করলোনা কেন?আমি রিংকু দুজনেই ব্যপারটায় একটু অবাক হলাম।হটাত আমরা খেয়াল করলাম যে আমাদের নৌকাটা নদীর প্রায় মাঝখানে আর মাঝির দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই। নৌকাটা অস্বাভাবিক ভাবে দুলতে শুরু করলো।এ দৃশ্য দেখে আমার শরীর প্রায় অবস হওয়ার পথে। ঠিক তখনই চারিদিকে মনে হল হাজার হাজার শেয়াল ডাকা শুরু করল।যেই শেয়ালের ডাক শুনে একটু আগে আমরা মজা পাচ্ছিলাম সেই শেয়ালের ডাক শুনে আমরা সেই মুহূর্ত্বে সবচেয়ে বেশি ভয় পেলাম।ঘটনাগুলো ঘটলো মাত্র কয়এক মিনিটের মধ্যে। অবশেষে একসময় মুর্ছা গেলাম।যখন গ্ঙান ফিরলো তখন আমি আমার বাসায়। পরে শুনলাম যে আমাদের কাদাতে লেপ্টানো অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন রাজশাহী পঞ্চবটী এলাকায় এক রাজশাহী প্যারামেডিকেলের একজন প্রিন্সিপাল। উনি সকালের প্রাতভ্রমনে এসেছিলেন। আমাদের কে প্রিন্সিপাল সাহেব ওখানে দেখতে পান ।তারপর আমার মানিব্যাগ থেকে আমার বাসার ঠিকানা নিয়ে কিছু লোকের সাহায্য নিয়ে আমাদেরকে আমার বাসায় পোছৈ দেন। পরে জেনেছিলাম যে রিংকুর সেই বড়ভাই একটা নৌকা পাঠিয়ে ছিল সেই রাতে তবে আমাদের কে ওপাশে না পেয়ে মাঝি নৌকা নিয়ে ফিরে এসেছিল।এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা আমার আমরা আজও বের করতে পারিনি।সেদিন কি হয়েছিল।আমরা দুজনেই সাতার জানতাম না । তাহলে আমরা কিভাবে নদী পাড় হলাম?কোনকিছুর ই আমরা দুজনে কোন সমাধানে আসতে পারিনি।তবে আমরা আজ ও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করছি। (অনুরোধ: সত্য-মিথ্যা যাচাই করার দরকার নাই)

একটি ভৌতিক গল্প

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Monday, September 5, 2011 at 10:15pm
যাঁরা বিদেশের ক্যাম্পাসে থেকেছেন তাঁরাই জানেন লম্বা ছুটি পড়লে ক্যাম্পাস অঞ্চল মোটামুটি একরাতেই ভৌতিক চেহারা ধারণ করে। আমেরিকান ছেলেমেয়েরা শেষ পরীক্ষাটা দিয়েই হয় বাড়ি চলে যায় কিংবা আর কোথাও, পড়ে থাকে শুধু যত বিদেশিরা যাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা ভয়ানক লম্বা, তাদেরও অনেকে আত্মীয়বন্ধুর বাড়িটাড়ি চলে যায় সম্ভব হলে। ফলে গরমের ছুটিটা যখন পড়লো
তখন খুশি হওয়ার বদলে বেজায় বিরক্ত লাগতে লাগলো, কী করে এই ভয়ানক রকমের লম্বা ছুটি কাটবে সেই ভেবে।"আমারও পরিকল্পনা আছে বেড়াতে যাবার, কিন্তু গোটা ছুটি তো ঘুরে বেড়ানো যায় না। কাজেই আপাতত একমাত্র উপায় বন্ধুরা মিলে ডাউনটাউনে গিয়ে হুল্লোড় ও মদ্যপান, যতদিন এরা দু-একজন শহরে আছে ততোদিন অন্তত। সেই ভেবেই আমার নিকটবন্ধু যারা তাদের টেক্সট করলাম বিকেল হতেই। সারা দিনের চাঁদিফাটা রোদে বাড়ি থেকে বেরোনো দুষ্কর, রোদ পড়ে এলে ফুলবাবু সেজে বেরোবো এই ছিলো আশা। কিন্তু সে গুড়ে বালি, একে একে উত্তর আসতে থাকলো না-বাচক। এ হেন অবস্থায় বাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আর কী করার থাকে, একা একা বারে গিয়ে অচেনা জনতার সাথে গপ্পো মারার বিন্দুমাত্র বাসনা অনেক চেষ্টাতেও জাগানো গেলো না। অতএব টিভিটা চালিয়ে সোফায় সঁেধোলাম। দু ঘন্টা সম্পূর্ণ আজেবাজে জিনিসপত্র দেখে যখন বুঝলাম আজ টিভিও বিনোদনের কাজে লাগবে না তখন একটা বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিলাম। একা একাই যাবো আজ টহল দিতে, এবং নিয়ম যখন একটা ভাঙছিই তখন আমাদের চেনা বারগুলোয় না গিয়ে আজ নতুন জায়গায় যাবো। ভালো না লাগলে তো সেগুলোয় ফিরে আসাই যাবে।গাড়িটা নিয়ে শহরের মাঝখানটা ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম। একে একে সরে গেলো আমাদের চেনা আড্ডাস্থলগুলো সব, মূল রাস্তা থেকে পর পর ঢুকে গেছে জুনিপার স্ট্রীট, এলম স্ট্রীট, আরো সব গাছের নামে নামে রাস্তা যেখানে শহরের চেনা বার ও পাবগুলো সার দিয়ে সাজানো। সে সব ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম, অ্যাডভেঞ্চার কী আর বাড়ির হাতায় হয়! নাগরিক প্রাচুর্য আর রোশনাই ক্রমে কমে এলো, এ দিকে বাড়িঘরগুলোও হতশ্রী। দেয়ালে গ্রাফিটি, রাস্তায় বিয়ারের বোতল ছড়িয়ে আছে, আর পথের আলোগুলোও যেন টিমটিম করছে। এদিকটা মোটামুটি অচেনা, যদিও ছোটো শহরে পথ হারানোর ভয় নেই বলে ফেরৎ যাবার কথা ভাবতে হয় না। তবে মুশকিল হলো যে কোনো বার কি পাব চোখে পড়ছে না। চোখে পড়লেও এই এলাকায় সেসব জায়গায় যাওয়া খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, এবং অন্যদিন হলে আমি এতো দূর আসার কথাও ভাবতাম না। কিন্তু আজ বিরক্তিটা এমন পর্যায়ে গেছে যে দুচ্ছাই বলে কোথাও ঢুকে দুপাত্তর চড়াতে দ্বিধা করবো না এই আঘাটাতেও। খানিক দূর গিয়ে একটা মোড় ঘুরতে চোখে পড়লো একটা সাইন, বিগ বাব্বা'স বার। নামেই পরিচয় কারা এর অভিষ্ট খদ্দের, নিশ্চিতভাবেই আমি সে দলে পড়ি না। কিন্তু তাতে কি, আমি ভাঙাচোরা পার্কিং লটে গাড়ি ঢুকিয়ে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লাম ভেতরে।আমি বারের দরজা ঠেলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েস্টার্ন সিনেমায় যেমন দেখায়, তেমনি অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি হলো। যদিও বারে লোকজন মোটামুটি আছে, কিন্তু আমি গাত্রবর্ণ, আকারআকৃতি, পোষাক ইত্যাদিতে এতোটাই আলাদা যে লোকজন রীতিমতো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো এই নব্য চিড়িয়াটিকে। ইচ্ছে হচ্ছিলো কোমরবন্ধ থেকে বন্দুক বার করে ঠাঁই ঠাঁই করে গুলি করে অব্যর্থ লক্ষ্যে দুটো বোতল উড়িয়ে দিয়ে সবার মাথা ঘুরিয়ে দিই, কিন্তু সে তো হবার নয়। অতএব গুটি গুটি পায়ে কাউন্টারের সামনের একমাত্র খালি বারস্টুলে চড়ে বসলাম, এবং একটা ভদ্‌কা অর্ডার করলাম। চোখে এতোক্ষণে সয়ে গেছে ভেতরের অনুজ্জ্বল আলো, ঠাহর করে দেখছিলাম চারপাশের জনতাকে। এরাও বোধ হয় মেনে নিয়েছে আমার উপস্থিতি, আর কেউ পাত্তা দিচ্ছে না তেমন। আমার ডান দিকে আর কোনো আসন নেই, কাউন্টার সেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে। বাঁ দিকের স্টুলে এক কৃষ্ণাঙ্গ রমণী, মোটামুটি পৃথুলা তবে এদেশের ভাষায় যাকে ওবিস বলে সেই রকম কিছু নয়। সে-ই বোধ হয় একমাত্র আমার প্রতি তখনও কিছুটা কৌতূহল দেখাচ্ছে, খানিকটা ভদ্রতার খাতিরে খানিকটা একঘঁেয়েমি কাটাতে তাকে উদ্দেশ করে হ্যালো বললাম। প্রতিসম্ভাষণের সময় হাসি দেখে মনে হলো কন্যার এইটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণ, সুন্দরী না হলেও হাসিটা আকর্ষক, অন্তত প্রোফাইলে। টুকটাক আলাপ শুরু করলাম। কথোপকথনে একজন বিদেশি হলে দুপক্ষেরই সুবিধা, আপনি-কোত্থেকে দিয়ে চমৎকার সূচনা করা যায়। ভারতবর্ষ নিয়ে সুদীর্ঘ বক্তৃতা দেয়ার মেজাজ ছিলো না, তাই কথাপ্রসঙ্গ ঘোরাতে হলো। বাম অনামিকায় আংটি নেই, কাজেই নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করলাম, "তুমি কি একা এসেছো?"উত্তরে সেই মোহিনী হাসি, "তা নয় তো কি, বারে একা এলেই তো আসল মজা!"চারদিক দেখে আরেক বার বোঝার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনোভাবেই এটাকে সিঙ্গলস বার মনে হচ্ছিলো না। আদ্ধেক মাতাল আর বাকি আদ্ধেক সেই দিকেই চলেছে গেলাসের পর গেলাস কোহল উড়িয়ে, এর মধ্যে মার্থা কাকে খুঁজে পাবে এই রহস্যের সমাধান আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। বলতে ভুলেছি, তার নাম মার্থা। বারে হৈ-হট্টগোলের কোনো কমতি নেই, এর মধ্যে তার অ্যাকসেন্ট সামলে সব কথার মর্মোদ্ধার করা সহজ হচ্ছিলো না। মার্থার পরের আসনে এক শ্বেতাঙ্গ মাঝবয়সী বিশাল চেহারার লোক, একা বসে পান করছিলো, কী কারণে কে জানে সে মাঝে মাঝেই আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো। কলেজশহরে নানাদেশীয় মানুষ দর্ুলভ কিছু নয়, কাজেই আমি তার জন্য শুধু চেহারার জন্যই এতো আগ্রহের কারণ হবো এইটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কিন্তু সরাসরি জিজ্ঞেস করাটাও নেহাৎ অভদ্রতা, কাজেই তার দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করা ছাড়া বিশেষ কোনো পথ নেই। বারটেন্ডার মাত্র একজনই, সে যুবকটি মোটামুটি দৌড়ে বেড়াচ্ছিলো সবার অর্ডার নেওয়ার জন্য। সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম বলেই বোধ হয়, মার্থা সে প্রসঙ্গে চলে এলো, বললো, "কেভিন খুব কাজের ছেলে।" আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি কেভিনটা কে, মার্থাই বললো, "ওই যে বারটেন্ড করছে তার কথা বলছি।" "তুমি ওকে চেনো নাকি?" "চিনি তো বটেই, আমি এখানকার নিয়মিত খদ্দের, আর জানোই তো, ভালো বারটেন্ডারের সব কাস্টমারকে চেনার কথা। তাছাড়া," এই পর্যন্ত বলে নাটকীয়তা আনার জন্যেই কিনা জানি না, একঢোঁক পান করলো সে, তারপর ধীরেসুস্থে বললো, "আমরা একসময় ডেটও করতাম।কেভিন বারকতক আমাদের সামনে দিয়ে যাতায়াত করলেও তার চোখে পরিচিতির কোনো চিহ্ন দেখি নি। তবে কে জানে, খুব মধুর সমাপ্তি হয় তো ছিলো না এদের গল্পের, তাই দোস্তি কিছু অবশিষ্ট নেই এমন হতেই পারে। মার্থার চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কী বলতে চাইছে সে। কিন্তু হঠাৎই যেন তার পানীয়ের প্রতি আকর্ষণটা বেড়ে গেছে, অত্যধিক রকমের মনোযোগ দিয়ে দেখছে গেলাসের দিকে। মরুকগে যাক গোছের কিছু একটা ভেবে আমিও আমার পানীয়ের দিকে মনোযোগ দিলাম। তাতে কাজ হলো অবশ্য, সে আবার মুখ তুলে আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। তারপর ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, "কী, বিশ্বাস হলো না? সে খুব রূপবান বলেই বুঝি? আমি খুব হতকুচ্ছিত?মার্থা দেখতে কেমন সে কথা তো আগেই বলেছি। আর সত্যি বলতে কি, কেভিন যে খুব কিছু দ্রষ্টব্য তাও মনে হয় নি। এখন মার্থার কথা শুনে ভালো করে দেখলাম তাকে। ছোকরা আসলেই রূপবান, কিন্তু সেটা চোখে পড়ে না তার কারণ সেই রূপের উপর একটা পর্দা পড়ে গেছে। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে যেমন সুদর্শন জমিদার লম্পটে পরিণত হয় সেই রকম, রাত্রিজাগরণ-মদগাঁজা ইত্যাদি জনিত বাড়াবাড়ি রকমের অত্যাচারের ফল হয়তো। তাছাড়া দু বাহুতে নানা ধরণের উল্কিটুল্কি এঁকে রেখেছে, কাটাছঁেড়া দাগও অনেক, লক্ষ্য করলাম। তাছাড়া রূপটাই যে শেষ কথা নয় এইটা মার্থাকে বোঝাবো কি না ভাবছিলাম, তবে সে অবশ্য আমার সান্ত্বনার বিশেষ ধার ধারলো না। বুঝলাম গল্পটা শোনানোর জন্য তার পেটে বুড়বুড়ি কাটছে। আমারও ব্যস্ততা কিছু নেই, কাজেই শুনতে শুনতে মদ্যপান করা যেতেই পারে।কেভিন তখন এই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, আন্ডারগ্র্যাড। আমি স্কুলে পড়ি। আমাদের কমিউনিটি সেন্টারে সে ভলান্টিয়ারিং করতে আসতো, সেখানেই আমাদের আলাপ। বাস্কেটবলে, জানোই তো, কালোদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ। সেখানে ওর কেরামতি দেখে মহল্লার ব্রো'রাও মেনে নিলো তার প্রতিভার কথা, আর আমি নবযুবতী প্রেমে পড়বো এ আর আশ্চর্য্য কী! আমার সখীরাও পড়েছিলো প্রেমে, কীভাবে তাদের হারিয়ে আমি সামনের সারিতে এলাম সে গল্প শুনিয়ে তোমাকে বোর করবো না। মোট কথা আমরা স্টেডি ডেটে যেতে শুরু করলাম, এবং," এই জায়গাটায় মার্থা অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে একটা নষ্টামি মার্কা ইঙ্গিত করলো, "কেভিন শুধু যে বাস্কেটবল কোর্টেই দক্ষ খেলুড়ে তা নয় সেটা আবিষ্কার করে আমার নেশা ধরে গেলো। মানে বুঝলে তো, বিছানায়-" আমি মোটামুটি লাফিয়ে উঠতে যাচ্ছি দেখে সে লজ্জা পেয়েই থামলো বোধ হয়। কথা ঘোরাতেই হয়তো বললো, "ভালো কথা, তুমি স্মোক করো?করি, যখন মদ খাই তখন।তবে চলো, একটা সিগারেট ফুঁকে আসা যাক। আহা আগে কী চমৎকার দিনকাল ছিলো, ভেতরে বসেই দিব্বি ধূমপান করা যেতো ...পরের পেছনের দরজা দিয়ে বেরোলে একটা ছোটো উঠোন, চার ধারে পুরোনো পরিত্যক্ত আসবাবপত্র ইত্যাদিতে কণ্টকিত। বেশ আধা আঁধারি জায়গাটা, এমনিতে ঠান্ডা না থাকলেও আমার কেমন শীতশীত করতে লাগলো সেখানে গিয়েই। মার্থা একটা সস্তাগোছের সিগারেটের প্যাকেট বার করে একটা ধরালো, আমিও আমার সিগারেট ধরালাম। আবার শুরু হলো তার গল্প।আমি তো কেভিনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি, দেখে মনে হয় সেও মার্থা বলতে অজ্ঞান। তার ডর্মে আমার নিয়মিত যাতায়াত আর রাত্রিযাপন, কিন্তু ভয় পেও না, সে সব শোনাচ্ছি না। তবে শুধু শরীরের ব্যাপার নয়, তার ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছিলো সে-ও প্রেমে পড়ছে একটু একটু করে। অন্তত অন্য মেয়েতে যে সে আর আগ্রহী নয় এইটা মোটামুটি বোঝা গিয়েছিলো। তাছাড়া খুবই কেয়ারিং ছিলো, জানো, আর এই জিনিসটা আমরা মেয়েরা সবচাইতে বেশি পছন্দ করি। আমি তখন একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতাম, খুবই ধকলের কাজ। কেভিনও একসময় বাসবয়ের কাজ করেছে কিছুদিন, সে জানে খাটুনি কীরকম। আমার শিফ্ট শেষ হলে সে চলে আসতো গাড়ি নিয়ে প্রায়দিনই, যাতে আমাকে সেই রাত্তিরবেলা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। তো ততোদিনে তার আন্ডারগ্রাড পড়া প্রায় শেষ, এইসময় একদিন আমি দুম করে প্রেগনান্ট হয়ে গেলাম। কিন্তু দু জনের কারোরই চালচুলো নেই, একটা বাচ্চা এনে শেষে বিপদে পড়ি। তাই অ্যাবর্শন ছাড়া উপায় নেই। তুমি হয়তো ভাবছো এ আর এমন কী, কিন্তু ক্যাথলিক পরিবারে অ্যাবর্শন বিশাল গুনাহ! জানতে পারলে মা তো আমাকে কেটে ফেলবেই, কিন্তু আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগছিলো। জন্মায় নি বলে তাকে মেরে ফেললে একটা মানুষ খুন করা হবে না, এই উত্তুরে যুক্তি আমাদের সাদার্নারদের জন্য নয়।কথাটা মার্থা ভুল বলে নি, আমার নিজেরও উত্তর দক্ষিণ দু রকমেরই অভিজ্ঞতা আছে, দৃষ্টিভঙ্গির সুবিশাল ফারাকটা আমারও চোখে পড়েছে। মার্থার বিষণ্ণতা কিম্বা দোলাচল আমার অচেনা নয়। ঘোর ক্রিশ্চান এই অঞ্চলে গর্ভপাত অনেকেরই চোখে মানুষ খুনের মতো, প্রোলাইফের সমর্থক গোটা আমেরিকায় প্রায় অর্ধেক হলেও এই এলাকায় অনেক বেশি। মার্থার সমস্যাটা বুঝতে আমার অসুবিধা হচ্ছিলো না। যাই হোক, বলে চললো সে।কত রাত জেগে কাটালাম, চোখের জল ফেললাম, শেষে একবার ভাবলাম রেখে দিই বাচ্চাটা। কিন্তু কেভিন অনেক বোঝালো আমাকে, বাচ্চার ভালোর জন্যই নাকি অ্যাবর্শন করা উচিত, ভবিষ্যতে সংসার হলে তখন একপাল বাচ্চা এনে আমার কোল ভরিয়ে দেবে, এই সব হাজার গল্প শুনিয়ে মন ভোলালো। তাতেও আমি রাজি হতে পারছিলাম না, তুমি তো এশিয়ার মানুষ, তুমি বুঝবে আমার কষ্টটা। শেষে সে গোঁ ধরে বসলো, বাচ্চা কোলে আমাকে হয়তো সিঙ্গল মাদার হয়ে যেতে হয়, তখন একরকম বাধ্য হয়েই আমি রাজি হয়ে গেলাম। উপায়ও তো বিশেষ ছিলো না, তুমিই বলো, শেষে যদি সে বিগড়ে বসে তখন এতোদিনের প্রেম ঘুচে যাবে। ভবিষ্যতের মোহেই হয়তো আমি রাজি হয়ে গেলাম এমন পাপকাজ করতে। এখনো ভুলতে পারি না সেই কথা, এখন বঁেচে থাকলে সে খেলে বেড়াতো, আমি তাকে খুন করে হাত ধুয়ে ফেললাম একটা ছেলের জন্য। আর সে ছেলেই-আমি জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু করতে হলো না। মার্থার বিষণ্ণ চোখে তখন কেমন একটা ক্রোধ ফুটে উঠেছে, দাঁতে দাঁত ঘষছে বোধ হয়। এ সেই চিরচেনা প্রবঞ্চনার আরেকটা গল্প, তবে মার্থা ঠিক অবলা বাঙালি ললনা নয়, সহ্য করা তার অনিবার্য নিয়তি নয়। তাছাড়া আমরা যতো ধর্মভীরুই হই, দক্ষিণের ক্যাথলিকেদের কাছে গর্ভপাতের অপরাধবোধের আসল তীব্রতা অনুভব করা বোধ হয় আমার সাধ্য নয়। একটা খুন করে মানুষ যেমন যন্ত্রণায় ভোগে, এতো দিন পরেও মার্থার চোখে সেই বেদনা দেখতে পাচ্ছিলাম। সে পাশ ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলো আগাগোড়া, হয়তো চোখের জল লুকোতেই। শুধু ডানচোখটাই দেখতে পেলাম, আর সন্ধ্যার আঁধারে সেটা রাগে জ্বলছিলো মনে হলো। স্বল্পক্ষণের আলাপে কেউ এই নিয়ে বেশি প্রশ্ন করে না, তাই কৌতূহল দেখানো ঠিক নয় ভেবে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু সে নিজেই ফিরে এলো গল্পে।ততোদিনে আমরা একসাথে থাকি, আমি একটা হাসপাতালে কাজ নিয়েছি। একদিন শিফ্ট সেরে বাড়ি ফিরেছি প্রায় শেষরাতে, দেখি তালা বন্ধ। কেভিন তখন মাস্টার্স করছে আর রাত্তিরে এক জায়গায় বারটেন্ডিং করে। কিন্তু তার কাজ এতোক্ষণে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, তার বারই এতোক্ষণে বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন ধরেই তার ভাবগতিক ভালো ঠেকছিলো না, একদিন তুমুল ঝগড়াও হয়ে গিয়েছিলো। তালা খুলে আর ঢুকলাম না ভিতরে, সোজা চলে গেলাম তার বারে। কোন বারটা জানো, এই রাস্তাটার শেষে ছিলো সেই বারটা, এখন আর নেই। পৌছে দেখি বারের দরজা বন্ধ। একটা সিগারেট ধরিয়ে চলেই যাচ্ছিলাম, এমন সময় সন্দেহ হলো-এই সময় বারের পেছনের দরজা ঠেলে একজন বেরোলো যার জন্য গল্পে ছেদ পড়লো, আমাকে দেখে ভুরু কুঁচকে তাকালো যেন লোকটা।, তখনই চিনতে পারলাম, এ সেই মার্থার পরের আসনে বসা অতিকৌতূহলী বিশালাকায় লোকটি! ভুরু কুঁচকে থাকাটা বোধ হয় তার মুদ্রাদোষ। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিলাম মার্থার গল্প, লোকটি যেন তাকে দেখেও দেখলো না, আমার উপস্থিতি নিয়ে এতোটাই চিন্তিত সে! আমিও কেয়ার না করে গল্পে মন দিলাম। সে আবার দরজা ঠেলে ঢুকে গেলো ভেতরে, ধূমপান না করেই।মার্থা বলে চললো, "আমার সন্দেহ হলো বারের ভিতরে কেউ আছে, একটা কিছু শব্দ শুনলাম যেন। আমি জানতাম পেছনের দরজাটার কথা, ঘুরে সে দিক দিয়ে গিয়ে দেখলাম সেটা তালাবন্ধ নয়। কোনো শব্দ না করে ধীরে ধীরে ঢুকলাম ভেতরে। বার একেবারেই খালি, চেয়ার উল্টিয়ে টেবিলের উপরে রাখা, মেঝে সাফ। দু একটা আলো জ্বলছে, বাকি সব নেভানো। দেখে ফিরেই চলে যাচ্ছিলাম সেই পথে, এমন সময় আবার একটা শব্দ শুনলাম মনে হলো কাউন্টারের পেছন থেকে। উঁচু হয়ে ঝুঁকে দেখলাম ভেতরের মেঝেতে-" সে দিন যে সে চমকে গিয়েছিলো তার চিহ্ন আজও দেখা গেলো তার চোখে, "মেঝেতে সম্পূর্ণ উলঙ্গ নির্লজ্জ দুটো শরীর আলিঙ্গনে বদ্ধ, কেভিন আর কোনো এক নষ্ট মেয়েছেলে! বারের নিভু নিভু রঙিন আলোয় সে যে কী কদাকার দৃশ্য কী বলবো তোমায়, সেই দিন প্রথম মনে হলো কেভিন আসলে ততোটা সুদর্শন নয়, আসলে সে একটা শরীরলোভী জানোয়ার। তার জন্য আমি নিজে হাতে খুন করেছি আমার অজাত শিশুকে, সে পাশবিক উন্মাদনায় তখন রমণ করছে আর এক নারীর সাথে। দুটো ন্যাংটো শরীর লাফাচ্ছে এক পৈশাচিক নৃত্যে, তাদের শীৎকার আমার কানে গরম সীসা ঢেলে দিচ্ছে। আমার হৃদপিণ্ড ঘৃণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলো, সব রক্ত মাথায় উঠে আসছিলো একসাথে! যাকে ভালোবাসি তাকে অন্যের শরীরে উপগত হতে দেখলে ক্রোধ তো হয়ই, কিন্তু আমার তখন মাথায় খুন চেপে গিয়েছিলো এই ভেবে, যে এর জন্য আমি আমার বাচ্চাকে খুন করেছি, এই নরপিশাচ আমাকে খুনি বানিয়ে এখন ফুর্তি করছে!একটা জান্তব চিৎকার বেরিয়ে এলো আমার বুক ফেটে, বারের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ অবধি পৌছে গেলো সেই আর্তনাদ। শুনতে পেয়েই কেভিন লাফিয়ে উঠল, আর তার শরীরের নিচ থেকে মুক্তি পেয়ে মেয়েটা ছিটকে বেরিয়ে এলো। আমি সে সব দেখতে পাচ্ছি না, আমার চোখ দিয়ে ঘৃণা তখন রক্ত আর অশ্রু হয়ে বেরোচ্ছে। হাতের কাছে মদের বোতল ছিলো, এক আছাড়ে ভেঙে ফেললাম, চারিদিকে মদ কাঁচ ছড়িয়ে গেলো। ভাঙা বোতল ছুঁড়ে মারলাম কুকুরটার দিকে, সে সরে গেলো দ্রুত, কিন্তু মেয়েটা ততো চটপটে না, সোজা গিয়ে লাগলো তার মাথায়, গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগলো! আমি তখন সম্পূর্ণ উন্মাদ, হাতের কাছে যা পাচ্ছি ছুঁড়ে মারছি, কাউন্টারের পিছনের বোতল সব ভেঙে মদ গড়াচ্ছে আর কেভিন আতঙ্কে সঁিটিয়ে গেছে অর্ধমৃত মেয়েটার পরিণতি দেখে। সে বুঝতে পেরেছে আমি তাকে সহজে ছেড়ে দেবো না। আমার হাতের জ্বলন্ত সিগারেট পড়ে কখন আগুন লেগেছে জানি না, সে সব নজর করার সময় তখন আমার নেই, মাথায় আমার খুন চেপে গেছে। বিপদ বুঝতে পেরে কেভিন লাফিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরাতে গেলো, আমি ভাঙা বোতল দিয়ে খুঁচিয়ে দিলাম তাকে। শরীর মিস করে গেলাম কিন্তু হাত কেটে ফালাফালা হয়ে গেলো। যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠলো কেভিন। সে এক নরকের দৃশ্য, মদ আগুন আর রক্তে ভেসে যাওয়া এক তাণ্ডব চলছে যেন। তিনটি কণ্ঠে প্রতিহিংসা, যন্ত্রণা আর আতঙ্ক গগনবিদারী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সেই লেলিহান আগুনের শিখার সাথে।" মার্থা এমন জীবন্ত ভাবে বলছিলো যেন গতকাল ঘটেছে এই ঘটনা, যেন সেই রাত্রের পর পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেছে তার, আর সেই যন্ত্রণা বুকে নিয়ে জ্বলছে সে প্রতি দিন। আমি এই অন্ধকারেও দেখতে পাচ্ছিলাম তার বর্ণনার সেই আগুনের ছবি, সেই তাপ আমাকেও ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। অথচ আতঙ্কের অনুভূতিতে শরীর শিউড়ে উঠছিলো, অদ্ভুত সে অভিজ্ঞতা! আমি জানতে চাই না এর পর কী হলো, কিন্তু অদম্য এক কৌতূহল আমাকে তাড়িত করছিলো, মার্থা আবার একটা সিগারেট ধরাতেই আমি বললাম, "তারপর?তার
পরের কথা আমার আর মনে নেই, কেভিন আর আমি পরস্পরকে আঘাতের পর আঘাত করে চলেছি, আমার সারা দেহের ক্ষতে কাঁচ আর অ্যালকোহল জ্বালা ধরাচ্ছে, আগুনের তাপে আমার শরীর পুড়ছে একটু একটু করে, আর অনন্ত এক ক্রোধে আক্রোশে আমি চিৎকার করে চলেছি, এই শেষ পর্যন্ত মনে আছে। আমার কাপড়ে আগুন লেগে গেলো, আগুন দেখে আমার হাত ছাড়িয়ে কেভিন পালাতে চেষ্টা করছিলো কিন্তু আমি জ্ঞান হারানোর আগে পর্যন্ত তার হাত ছাড়ি নি। ক্রমশ গোটা বিল্ডিংয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, পরে বাড়িটা ভস্মীভূত হয়ে যায়। অন্য মেয়েটাও নাকি মারা যায়। কিন্তু ততক্ষণে আমি জ্বালাযন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি।আর কেভিন?" প্রশ্ন না করে পারি না আমি। সব কিছু কেমন ঘোলাটে লাগছিলো আমার, মার্থার গল্প সত্যি হলে এমন অভিজ্ঞতার পরে তারা যদি বঁেচেবর্তেও থাকে তাহলেও কেভিন তাকে চোখের সামনে দেখে সহ্য করছিলো কীভাবে আমার মাথায় আসে না। মার্থাই বা কী করে সেই বারে আসে যেখানে রয়েছে এমন কেউ যার ওপর তার এমন দুর্মর রাগ! গল্পটার শেষটায় এমন কী রয়েছে যা দিয়ে এর ব্যাখ্যা হয়? আমার অস্থির লাগে, জিজ্ঞেস করি তাকে। মৃদু হাসে মার্থা, বলে, "আমি কেভিনকে মাফ করে দিয়েছি, অনেক শাস্তি পেয়েছে সে তার প্রবঞ্চনার, তবে এই সব জানোয়ারদের শাস্তি দিতে গেলে মেয়েদের মরতে হয় চিরতরে।আর কেভিন, সে কী করে সহ্য করছে তোমাকে? তোমাকে দেখে তো চিনতেও পারছিলো না প্রায়!আমার কথা শুনে তার মুখের মৃদু হাসি আরো প্রসারিত হয়, অন্ধকারে তার কালো শরীর চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে সেই হাসি, "চিনবে কী করে, আমি কি আর সেই আগের মতো দেখতে আছি? এই দেখো না, নিজেই দেখো, বলে সে ঘুরে দাঁড়ায় আমার দিকে, এতোক্ষণে দেখতে পাই তার মুখের বাঁ দিকটা। আগুনে পোড়া সেই মুখে চামড়া নেই, মাংস নেই, মুখগহ্বর আর দাঁত দেখা যাচ্ছে গাল ফুঁড়ে, আর তার বাঁ চোখের জায়গায় এক বিশাল গর্ত! ভাঙাচোরা ঘরবাড়ির মাঝে ঝুপসি আঁধারিতে সেই পুড়ে যাওয়া মুখে ছড়িয়ে পড়ছিলো হাসি, হাসির দমকে কাঁপছিলো তার গোটা শরীর, আর হাহাকারের মতো সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ছিলো পরিত্যক্ত উঠোনে, পুরোনো আসবাব আর ভাঙা ছাউনি ঠেলে ব্যপ্ত হচ্ছিলো চারিদিকে! আমার যুক্তি কাজ করছিলো না, আতঙ্ক গ্রাস করছিলো আমার বোধ, বোবায় ধরলে যেমন হয় সেই রকম প্রাণপণে চীৎকার করেও কোনো শব্দ বেরোচ্ছিলো না আমার গলা দিয়ে, আর পা দুটোকে যেন মাটিতে গঁেথে দিয়েছিলো কেউ! অন্ধকার আকাশের নিচে ক্রোধে উন্মাদ এক বিদেহী নারীর বায়বীয় শরীর আর গগনবিদারী বীভৎস অট্টহাসি জেগে আছে চরাচরে, জ্ঞান হারানোর আগে শেষ পর্যন্ত এইটুকু মনে ছিলো।পরদিন সকালে চোখ খুলি হাসপাতালে। আমার বন্ধুরা এসেছে আমার খবর পেয়ে, তাদের কাছ থেকে বাকি গল্পটা জানতে পারি। সন্ধ্যেবেলা বারের ভিতর আমাকে একা একা কথা বলতে দেখে বারের সেই বিশাল চেহারার লোকটার সন্দেহ হয়, তাই সে আবার যখন ফিরে আসে ততক্ষণে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছি। বারের লোকেরাই পৌছে দেয় হাসপাতালে। পরে সে লোকটিও দেখা করতে আসে, ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগ পাই আমি। সে-ই জানায়, মার্থা যে এখনো ফিরে আসে কেভিনকে দেখতে, আমি তার প্রথম সাক্ষী নই। এই সব ঘটনায় শঙ্কিত বার-মালিক কেভিনকে তাড়াতে চেয়েছিলো, কিন্তু একরকম করুণার বশেই রেখে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত। সেই দুর্ঘটনার পর থেকে কেভিনও আর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নেই, অর্ধদগ্ধ শরীর আর আইনি ঝামেলা কাটিয়ে ফিরে এসেছে, কিন্তু সাজানো জীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তার। ভগ্নপ্রাণে সে বঁেচে আছে কোনোক্রমে এক বিদেহী উন্মাদিনীর ক্ষমার আশায়।
( সংগৃহিত )

।। বাজী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, September 7, 2011 at 11:31pm
আজ আমি যে ঘটনা শেয়ার করতে যাচ্ছি , তা বেশ কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া । এর আগে কারো সাথে এই ঘটনা শেয়ার করি নি । আজই প্রথম......... ঘটনাটি আমার নানুবাড়িতে ঘটা । জায়গাটি মুন্সীগঞ্জে । আমি তখন ক্লাস নাইনে উঠব । এইটের বার্ষিক পরীক্ষা শেষের ছুটিতে বেড়াতে নানুবাড়িতে গিয়েছি । আমার নানুবাড়ি সম্বন্ধে আগেও বেশ কিছু ঘটনা শুনেছিলাম । ওই পুরো ভিটে জুড়েই নাকি বেশ রহস্যময় ঘটনা ঘটতে দেখেছে মানুষজন । তবে এখন নাকি আগের মত আর দেখা যায় না ।
যাই হোক , সেবার ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে বেশ ভালই শীত পড়েছিল । আমরা সব খালাতো ভাই বোন খালা মামারা একত্রিত , শীতের ছুটিতে । সীমাহীন আনন্দ । তাদের মধ্যে আমাদের দুজন খালার নতুন বিয়ে হয়েছে । সুতরাং , নতুন কম বয়সী খালুরাও আমদের মজা মাস্তিতে শামিল । সবাই দারূণ সময় কাটাচ্ছি । কিন্তু , আমাদের কিছু কম বয়সীদের তাতেও যেন মন ভরছিল না । বুঝতেই পারছেন , উঠতি বয়স । রক্তে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা ! সাত-আট দিন না যেতেই আমাদের আর সময় কাটে না । করার মত সব কাজ শেষ । এরপরই এল সেই দিন । আজও বারবার পস্তাই । কেন যে সবার মাথায় সেই দুঃসাহসের ভূত চাপিয়েছিলাম । যদি আমাকে আজ কেউ সুযোগ দিত , তবে অবশ্যই ওই দিনের ঘটনা বদলে দিতাম............ গ্রামে সবাই একটু আগেই ঘুমুতে যায় । তাই আমরা কাজিনদেরও আগে ভাগে বিছানায় যেতে হত । তাই বলে অবশ্য ঘুমিইয়ে পড়ার মত সুবোধ বালক আমরা কেউ ছিলাম না । রাত ভর গল্প-গুজব, তাস খেলা, কিছু বড় ভাইদের (এতও বড় নয় অবশ্য ) সিগারেট খাওয়া চলত অনেকক্ষণ । তবে সেদিন রাতে কিছুই ভাল লাগছিল না । রাত তখন ১০ টার মত বাজে । কথায় কথায় সেদিন আলোচনাতে ভূত প্রসঙ্গ এল । সেখান থেকে এসে পড়ল আমাদের নানুবাড়ির প্রসঙ্গ । সবার ভিন্ন মতামত থাকলেও আমি একেবারেই গাঁজাখুঁড়ি গল্প বলে সব উড়িয়ে দিতাম । সেদিনও তার ব্যতিক্রম হল না । এক পর্যায়ে তর্ক-বিতর্ক থেকে সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেললাম । অস্বীকার করব না , আমি ওখানে সবার ছোট হওয়ার পরও একটু বেশিই বেপরোয়া প্রকৃতির ছিলাম । তাই , সবাইকে এক কথায় 'ভীতুর ডিম' বলতে লাগলাম । তখন দুজন ভাইয়া কিছু না মনে করলেও, বাকি দুজনের আঁতে কিছুটা ঘাঁ লাগল । তারা আমাকে বলতে লাগল আমিই বা কী এমন করেছি ! আমার তখন গরম অবস্থা । সাথে সাথে বলে বসলাম, " ঠিক আছে ! হয়ে যাক বাজি । প্রমাণ হয়ে যাবে, কার বুকের পাঁটা কত বড় ?" তারা তৎক্ষনাৎ রাজি । বাকি দুই ভাই একটু আপত্তি জানালেও, তাদের আপত্তি ধোপে টিকল না ।
আমি নিজেই ঠিক করলাম বাজির বিষয় । আমাদের নানুবাড়ির পারিবারিক গোরস্থান ছিল বাড়ির বেশ কাছেই । গোরস্থানটি ছিল রাস্তার ধার ঘেষে । গোরস্থানের পাশ দিয়ে রাস্তা গিয়ে সেই রাস্তাতে পড়েছে । সবাই চলাচলের জন্য সেই রাস্তা ব্যবহার করে । আমি বাজি ঠিক করলাম , ওই গোরস্তানের মধ্যে দিয়ে কোন আলো ছাড়া পার হয়ে উলটো দিকের রাস্তায় উঠতে হবে । বাজির বিষয় শুনে সবাই একটু থতমত খেয়ে গেল । তারা আশা করেনি , আমি এই ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস । আসলে , সত্যি হল আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল , এরকম কিছু একটা করে দেখার, দেখানোর । সেদিন আর এমন মোক্ষম সুযোগ ছাড়লাম না ।
"যেমন কথা তেমন কাজ । রাত তখন প্রায় ১০ টার মত বাজে । আমরা ৫ জন দুটো টর্চ নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লাম । বাড়ির কেউ জানলে আর কষ্ট করে ভূতের খপ্পরে পড়তে হবে না । আমার আম্মাজানই আমাদের জ্যান্ত কবর দিবেন । যাই হোক, হাঁটা চলতে লাগল । চাঁদের বেশ আলো ছিল সেদিন । হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গেলাম গোরস্থানের উলটো ধারের ফটকের কাছে । সেখান থেকে আমাদের দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা । বাজিটা মূলত ছিল আমার, মাসুম ভাই আর রুম্মান ভাইয়ের মাঝে । সাথে ছিল আমার আপন বড় ভাই নিশাত আর আমার আরেক খালাতো ভাই সনেট ( যিনি আমাদের মাঝে সবার বড় ) । ঠিক করা হয়েছিল - সেখান থেকে নিশাত আর রুম্মান ভাইয়া চলে যাবে উলটা পাশে , রাস্তার পাশের মূল ফটকের কাছে । প্রথমে , আমি এপাশ থেকে ওপাশে যাব । আমি পৌছলে সেখান থেকে রুম্মান ভাইয়া আসবে এপাশে । তারপর সবার শেষে মাসুম ভাই চলে যাবে অন্য পাশে । শুধু তো ভূত নয় , এত রাতে রাস্তার ধারে চোর-ডাকাতেরও ভয় ছিল । তাই , কোনো পাশেই যেন কাউকে একা পড়তে না হয় , তাই আমার মস্তিষ্কপ্রসূত এই বুদ্ধি . . . . . .
কথা মত রুম্মান আর নিশাত ভাইয়া চলে গেলেন রাস্তা ধরে অন্য পাশের গেটে । তাদের যাওয়ার ১০ মিনিট পরে আমি রওয়ানা হব । সময় হল । ভাইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে আমি ঢুকে পড়লাম গোরস্থানের ভিতরে ।
চারিদিকে সুনসান নীরবতা । শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক । কবরখানাটি ছিল লম্বাটে আকৃতির । মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা চলে গেছে । দুপাশ ঘেঁষে সারি দিয়ে কবর । ভয়ের বিষয় গাছ আর বাঁশঝাঁড়ের জন্য আলো আসছিল না সেখানে । তার উপর বাজির শর্ত অনুযায়ী আমাকে আলো ছাড়াই পুরোটা পাড় হতে হবে । অস্বীকার করব না , শুরুতে আমার একটু ভয় লাগছিল না এমন নয় । তবে একটু বাদেই সব আজেবাজে ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম । মনে মনে এটা নিশ্চিত করলাম - ভূত-ফূত কিছু যদি আসেও , আমি মরার আগে ওকে দু-চার ঘাঁ না দিয়ে মরব না । দোয়া দূরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে এগুনো শুরু করলাম । অন্ধকারে কোথায় পা ফেলছি দেখতে পাচ্ছি না । তাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেতে পারি - ভেবে বাধ্য হয়ে কবরগুলোর পাকা ধার গুলো ধরে হাতড়ে হাতড়ে এগুতে থাকলাম । তেমন কোন সমস্যা হচ্ছিল না ।
হঠাৎ কিছু একটা ব্যাপার অদ্ভুত ঠেকতে লাগল । বুঝতে পারলাম না ব্যাপারটা কি ? সাবধানে ঘাড় ঘুড়িয়ে চারপাশে খেয়াল করলাম । নাহ ! আশ্চর্যজনক কিছুই চোখে পড়ল না । কিন্তু , আমি নিশ্চিত ছিলাম - কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে । কোন কিছু দেখতে না পেয়ে , ভাবলাম - নিজের মনের ভুলই হবে হয়তো । পরে বুঝতে পেরেছিলাম কোন ভুল হয় নি আমার । তখন একটি ঘটনা ঘটেছিল । যা তখন বুঝতে না পারলেও, পরে ধরতে পেরেছিলাম । যা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে । যাই হোক , তখন কি হয়েছিল , পরেই বলব । ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে একসময় উলটো ধারের গেটের কাছেও পৌছে গেলাম । কোন বিপদ আপদ ঘটল না । কিন্তু খুব আশ্চর্যজনক কারণে আমি পুরো গুম মেরে গিয়েছিলাম । কিছু একটা অস্বাভাবিক কিছু আমার স্নায়ুর উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল । কেন যেন মনে হতে লাগল - খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে । আমি উলটো পাশে পৌছে যাওয়াতে , নিশাত - আমার আপন ভাই , যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । তবে রুম্মান ভাইয়ের তো আরো মাথায় জেদ চেপে গেল । আমি যখন সবার ছোট হয়ে বাজিমাত করেছি , উনার এখন পার হওয়াটা যেন কর্তব্য । একবার ভাবলাম , ভাইকে মানা করি । কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম , এখন মানা করে কোন লাভ হবে না। উনারা কেউই হার মানার ছেলে না । তো রুম্মান ভাইও চলে গেলেন গোরস্থানের ভেতর দিয়ে । এপাশে রয়ে গেলাম আমি আর নিশাত । নিশাত খেয়াল করল , বাজি জেতার উচ্ছলতা নেই আমার মাঝে , বরং কেমন যেন বেমানান রকমের চুপচাপ ছিলাম আমি । ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে ? অস্বীকার করলাম না । ভেতর দিয়ে আসার সময়কার সেই অনুভূতির কথা । ও বলল , এটা তেমন কিছু না । অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকে হয়ে থাকবে হয়তো । ও বরং এই বাজির বিষয় ভালয় ভালয় শেষ হলে খুশি । সময় যেতে লাগল । কে জানে রুম্মান ভাইয়া পৌছতে পেরেছে কিনা ? রুম্মান ভাইয়া তখন কিভাবে কি করল - পরে তা উনার মুখে শুনেছি । ভেতরে ঢোকার পর আমার মত উনারও একই আলোর সমস্যা হয়েছিল । তবে কিছুদূর যাওয়াড় পর আমার মত উনারও আশ্চর্য কোন অনূভুতি হয়েছিল । কি তা উনিও বুঝতে পারে নি । কোন কারণে উনিও ভয় পেয়েছিল । ঠিক কি তা জানে না, জানার প্রয়োজনও বোধ করেন নি । সোজা দোয়া দূরুদ জপতে জপতে হেঁটে গেছেন এবং অবশেষে অন্যপ্রান্তে পৌছেও গেছেন । তবে একটা গুমোট চাপা আতংক ভর করেছিল উনার মাঝে । উনি পরে স্বীকার করেছিলেন । পরবর্তীতে ওপাশ থেকে মাসুম ভাইয়াও রওয়ানা দেন । ইতোমধ্যে আমি আর নিশাত এদিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম , কখন মাসুম ভাইয়া আসবে ; কখন এইসব শেষ হবে ! হঠাৎ করেই পিছনে শব্দ ! পুরোপুরি জমে গেলাম আমরা দুজন । শব্দটা আমাদের কাছে আসতে লাগল । তাকিয়ে দেখলাম আলো । আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে । কাছে আসতেই হাঁফ ছেড়ে বাচলাম । আমাদের ইনু নানা । উনি তখন মসজিদের দায়িত্বে ছিলেন । রাতে অনেকক্ষণ ওখানে থেকে উনি বাড়িতে ফিরতেন । পরহেযগার মানুষ । আমাদের এমন সময়ে এমন জায়গায় দেখে উনার তো চক্ষুচড়কগাছ । জিজ্ঞেস করলেন কি করছি ওখানে । আমরা সত্য-মিথ্যা দুই-ই বললাম । কারণ , জানতাম উনি আমাদের বাড়িতে না নিয়ে ফিরবেন না ; আর আমরাও মাসুম ভাইকে ফেলে যেতে পারি না । তাই বললাম, মাসুম একটু সাহস দেখিয়ে কবরস্থানের ভিতরে গিয়েছে, এখনি চলে আসবে । উনি তখনই আমাদের বকাঝকা শুরু করলেন । ঠিক তখনই গগন বিদারি চিৎকার ভেসে আসল ভিতর থেকে । মাসুম ভাইয়ের গলা চিনতে ভুল করলাম না কেউই । সাথে সাথে নানু আমাদের বাইরে থাকতে বলে ভিতরে ঢুকে গেলেন । আমরা যেতে চাচ্ছিলাম । কিন্তু উনার চাউনি দেখে আর সাহস করলাম না …. নানা ভিতরে ঢুকে গেলেন । একটু পরেই ভিতর থেকে এক ধরনের হুটোপুঁটির শব্দ ভেসে এল । কিছুক্ষণ পরে নানুজান টলতে টলতে বের হয়ে আসছেন , সাথে মাসুম ভাই । থরথর করে কাঁপছেন । কি হয়েছে - জিজ্ঞেস করার মত পরিস্থিতি কারো ছিল না । নানুকে দেখলাম কেমন যেন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছিল । উনাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, "নানু, কি হয়েছে ? " উনি বলল ,তেমন কিছু না । মাসুম ভাই মনে হয় এমনিই ভয় পেয়েছে । আমার স্পষ্ট মনে হল উনি কিছু এড়িয়ে গেলেন । মাসুম ভাইকে আমরা শক্ত করে ধরলাম । তবে সামনে হাঁটতে গিয়েই উনি মূর্ছা গেলেন । দিন দুয়েক বাদে , সব শান্ত হয়েছিল । আমরা মাসুম ভাইকে ধরাধরি করে অন্যপাশে নিয়ে এসেছিলাম । ওখানে রুম্মান আর সনেট ভাইকে দেখে নানু বুঝতে পেরেছিলেন আমরা মিথ্যা বলেছি । লজ্জায় আমরা উনার দিকে তাকাই নি আর । ইতোমধ্যে মাসুম ভাইয়ের চেতন ফিরেছিল । বাকি পথটুকু উনি টলতে টলতে আমাদের সাথে হেঁটে ফেরেন । তখন কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করার মত অবস্থা ছিল না । আমরা শুধু নানুকে অনুরোধ করি বাড়ির কাউকে না জানানোর জন্য । উনি কোনো জবাবই দেননি । তবে উনি কাউকে বলেন নি । আর সেদিন থেকে উনার কি যেন হয়েছিল । একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন । আর মাসুম ভাই প্রচণ্ড জ্বরে পড়েন । প্রায় ৩ দিন উনি জ্বরে ভোগেন । একটু ধাতস্থ হলে উনার কাছে আমরা শুনি আসল ঘটনা । রুম্মান ভাইয়া ফেরার পর উনি স্বাভাবিকভাবেই ভিতরে ঢোকেন । আমাদের মধ্যে উনিই ছিলেন গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা । তাই উনার এত ভয়ও ছিল না । তবে উনিও ভয় পেয়েছিলেন । ঠিক যেখানে আমাদের সেই আজব অনুভূতি হয়েছিল । তবে উনি সেখানে দাঁড়িয়ে পরে বোঝার চেষ্টা করেন কি হয়েছে । সাহস করে উনি হেঁটে কবরগুলোর ধারে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন । ঠিক তখনই উনি চমকে গিয়ে লক্ষ্য করেন একটা অংশ স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশিই অন্ধকার এবং কেমন যেন জমাট বাঁধা । উনি ওটার কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেই চমকে গিয়ে উনি লক্ষ্য করেন ওটা যেন ধীরে ধীরে মানুষের অবয়ব নেয়া শুরু করে । সাথে সাথে উনাকে অমানুষিক আতংকে পেয়ে বসে । চিৎকার করে উঠেন উনি । উলটো দিকে ঘুরেই উনি দৌড়ানো শুরু করেন । কিন্তু উনার মানে হয় উনি যতই আগানোর চেষ্টা করছেন , পারছেন না । ঠিক তখনই উনি সামনে কিছুর সাথে ধাক্কা খান । সে তাকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরে । কানের সামনে উনি আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত শুনতে পান । পরে বুঝতে পেরেছিলান ওটা নানা ছিল । নানা তাকে সামনে ঠেলে দিয়ে কিছু একটা থেকে আড়াল করেন । যাই করে থাকেন না কেন সেদিন ,নানা আসার পরেই উনি যে বেঁচে ফিরেছেন তা আমরা সবাই হারে হারে টের পেয়েছিলাম । কিন্তু এর ফল আমাদের অন্য ভাবে দিতে হয়েছিল । এর কিছুদিন পরেই নানা অসুস্থ হয়ে পড়েন । অনেক চেষ্টা করা হয় । ঢাকায় আমাদের এখানে এনে চিকিৎসা করানো হয় । কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না । আমি উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম । আমাকে দেখে উনি শুধু এক চিলতে হাসি দিয়েছিলেন । ওই হাসিতে কিছু একটা ছিল । আমার আজো ওইদিন যদি আমরা এমন কিছু না করতাম , তবে নানা আজো আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন । বড্ড তাড়াতাড়ি উনি আমদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । আমদেরকে , মাসুম ভাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে উনি মৃত্যুটাকে বুকে আগলে নিয়েছিলেন । এটাই ছিল আমার গল্প । আমার জীবনের নির্মম এক গল্প । কিছু প্রশ্ন থেকে যেতে পারে . . . . মাসুম ভাইয়া আসলে কি দেখেছিলেন ? উত্তরঃ জানি না । কখনো জানতে চাইও না । আর আমাদের ওই অনুভূতির কি ব্যাখ্যা ছিল ? এটা আমি পরে বুঝতে পেরেছিলাম । কারণ , বহুবার আমার দুঃস্বপ্নে ওই কালরাত ফিরে এসেছিল ।
উত্তরঃ ঝিঁ ঝিঁ পোকা । ওই বিশেষ জায়গায় যেতেই পুরো গোরস্থানে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে । এমনকি ঝিঁ ঝিঁ ডাকাও বন্ধ হয়ে যায় । পরে আমি অনেক জায়গায় পড়েছি এরকম অশরীরী, ভূত-প্রেত - যে যাই বলে . . . . . তারা যেখনে আসে, সেখান থেকে সকল প্রাণ পালিয়ে যায় । আমার আর রুম্মান ভাইয়ের অনেক সৌভাগ্য , আমরা সেদিন তার পাল্লায় পড়ি নি । পড়েছিল দুর্ভাগা মাসুম ভাই , আর জীবন গিয়েছিল আমদের সবার প্রিয় ইনু নানার ! ! !

লেখক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। ** বাইরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।। বেশ ভূতুড়ে আবহাওয়া।।

।। একান্ত সাক্ষাৎকারঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী ( শিহাব ) ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, September 7, 2011 at 10:56pm
আমি আসলে কি বলব? হা হা! খুব কম সময়ে না চাইতেই অনেক কিছু পেয়েছি আমি। আমি আগে অনেক লেখা লেখি করতাম। কিন্তু পরে সেটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। নেট এ লেখা লেখি খুব কম করি। চোখের সমস্যার জন্য কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে কষ্ট হয়। ভুতুড়ে গল্প পেজটা আমার জন্য এক রকম পাঠকদের কাছে যাওয়ার জন্য অনেকটা বই প্রকাশনার মত কাজ করেছে। এই কয়েকটা দিন আমি সারা দিন অপেক্ষা করে থাকতাম কখন একটা করে পর্ব দিবে আর পাঠকদের কথা শুনবো। আজ খারাপ লাগছে আমি আজকের পর সেটা আর শুনতে পারবো না। যারা আমাকে এত বড় লেখা লেখার জন্য দোষ দিচ্ছিলেন তারা আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে পারতেন আমি ৬ পর্বে শেষ করেছি যেটা, সেটা ৬০ পর্বেও শেষ করার জন্য মন চাইছিল না। আমি আর কোথায় পাঠকদের এত খোলা মেলা কথা শুনবো? তাদের এত ভালবাসা পাবো? নিজের জন্য হলেও এতটুকু স্বার্থপরতা করতে হল। ক্ষমা করে দেবেন। মানুষ তো। অন্য কিছু তো আর নই। যা সারা জীবন চেয়েও পাইনি তা পেলে কেমন দিশেহারা লাগে সেটা আমি পেয়েছি বলে জানি। আপনারাও একদিন জানবেন হয়ত। আজ আমার লেখার শেষ রাত। চতুরঙ্গ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাতে কষ্ট লাগলেও পাশাপাশি একটা দ্বায় বদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছি। পাঠকদের কতটা খুশি করতে পেরেছি জানি না। কিন্তু আমার বুকটা যে তারা ভরিয়ে দিয়েছেন এটা তাদের জানিয়ে দিলাম আজ, অকপোটে স্বীকার করলাম। আমি খুব আবেগী মানুষ এটা নতুন কিছু না, কিন্তু চোখে পানি আসার মত ঘটনা আমার জীবনে খুব কম ঘটেছে, গত কয়দিন সেটা আপনাদের অজান্তেই আপনাদের কারনে হয়েছে। এত বেশি কিছু পেয়েছি যে আমার বুকটা ভরে গেছে কানায় কানায়। আমি মুখস্ত বলে দিতে পারি কে কোথায় কখন আমাকে কি লেখেছিলেন গল্প নিয়ে। আমি এতই বেশি পড়েছি আপনাদের লেখা গুলো... মজা লেগেছে আপনাদের কিছু কিছু কমেন্ট পড়ে। জাহিদকে সবাই অনেক পছন্দ করেছে দেখে ভাল লেগেছে! মাঝে মাঝে কারা যেন লিখেছিলেন আমি জাহিদকে মেরে ফেলবো নাকি? আমি তখন দারুণ মজা পেয়েছি! কেউ কেউ লিখেছেন হলিউড মুভি বানানোর কথা! হা হা! আবার কেউ কেউ ধর্মকে নিয়ে লেখায় বিরক্ত হয়েছেন। মূর্তি বিষয়ক আপত্তিও দেখিয়েছেন। আমি টাইপ করার সময় জয়নাবের বেশ কিছু অংশ বাদ দিয়েছিলাম কাহিনীর দৈর্ঘ্য কমাতে। মূর্তি বিষয়ক কিছু কথা সেখানে ছিল। যা হোক আমি এখানে সেরকম কিছু দেখাতে চাইনি। ভূল হতেই পারে, সব মিলিয়েই তো লেখা। চেষ্টা থাকবে পরে যেন এগুলো থেকে উদ্ধার পেতে পারি। একটা কমেন্ট পড়ে অনেক হেসেছিলাম। সেটা হল কেউ একজন লিখেছিলেন "Sob theke bestest part>''তোমার ছেলে বড় হয়ে ডি.জে হবে...'' - দারুণ লেগেছে এটা! এবার আসি "ভূতুড়ে গল্প" প্রসঙ্গে। বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ব্যাখ্যাতীত ও ভূতুড়ে সব ঘটনা প্রকাশ এই পেইজটা এর মধ্যেই ফেস বুকে নিজেদের জন্য আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছে। ছেলে বেলা ফেলে আসার সাথে সাথে আমাদের শৈশবের মজার সব ভূতুড়ে গল্প গুলো আর তার রেশ টুকু ফেলে এসেছি। এখনো সেই স্বাদটা টিকিয়ে রাখার দারুণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভূতুড়ে গল্প পেইজটা। নির্দিধায় এই পেইজটার স্বকীয়তা অন্যদের ছাড়িয়ে গিয়ে নিজেকে আলাদা করে ফেলেছে সবার থেকে। পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকবে ১৬০০০টা লাইকারের মত ১৬০০০ না হলেও ৮০০০টা পাঠক যেন থাকে এই পেইজের। তাহলে এই পেইজের এডমিনদের পরিশ্রম একটু হলেও স্বার্থক হয়েছে বলে তারা মনে করবেন। কারন নিঃস্বার্থ ভাবে এটা করা হচ্ছে। শুধু মাত্র আমাদের জন্যই। তাই একটু পড়ার অভ্যাস বাড়ানো দরকার। সব এডমিনদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আর আমি ইরফান ভাইকে থ্যাংক্স দিয়ে ছোট করব না। একটা মানুষকে তার না পাওয়া প্রাপ্তির সাথে খুব কম মানুষই মেলাতে পেরেছে। আমি বলব ইরফান ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম। আপনি মানুষের চোখে পানি উৎপাদনের কাজটা করে যান, এই অনুরোধ করছি। হয়ত অনেক শিহাব এখনো বাকি রয়ে গেছে। আর আমি এটা নির্দিধায় বলতে পারি, আমার লাইফের খুব গুরুত্ব পূর্ণ কয়েকজন মানুষের মাঝে আপনার নাম রয়েছে এখন। অনেক ধন্যবাদ। আমার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে এই পেজের জন্য, আপনাদের সবার জন্য লিখে যাওয়ার। এবং আমি সিরিয়াসলি বই বের করার চেষ্টা করবো কথা দিচ্ছি আপনাদের। আল্লাহ চাইলে একদিন নিশ্চই আপনারা আমার লেখা বই পাবেন। আমি তাকিয়ে আছি। ইনসাআল্লাহ একদিন হয়ত গাঢ় মোটা মলাটে আমার নিজের আঁকা প্রচ্ছদের মাঝ দিয়ে আমার বই বের হবে! সবাই কে অনেক ধন্যবাদ। @ শিহাব ভাই >> কিছুটা এডিটিং এর জন্য দুঃখিত।। সালাম গ্রহন করলাম।। ওয়ালাইকুম আস সালাম ভাই।। আশা করি ভবিষ্যতে আরও লেখা পাব আমরা।। অপেক্ষায় রইলাম।। যারা জানেন না তাদের জানাচ্ছি, ইনি অমীমাংসিত এবং চতুরঙ্গ নামক গল্প দুটির লেখক।।

।। বিভীষিকাময় ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, September 7, 2011 at 10:39pm
আমাদের চারপাশে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার কোন ব্যাখ্যা করা যায় না ।রক্ত হিম করা সেইসব ঘটনা যদি নিজের জীবনে ঘটে তাহলে ??? আমি এখনো মাঝে মাঝে ঘুম থেকে জেগে উঠি সেই স্বপ্নটা দেখে। যেই স্বপ্লটা বাস্তবে ঘটেছিল আমার জীবনে ।সময়টা ছিল শীতকাল ।আমার s.s.c exam এর আগে ।আমাদের বাড়ির পাশের এক লোক রক্তবমি করতে করতে মারা গেল ।উনি আমাকে অনেক পছন্দ করতেন ।তাই আমার খারাপ লাগছিল ।জানা গেল উনি যে সময়ে মারা গেছেন সেই সময়ে তিথি ভাল ছিল না ।ফলে ত্রিপাদ দোষ হয়েছিল । এটা হিন্দুরা বুঝবেন ।বড়রা বলাবলি করছিল এ দোয হলে নাকি মরা মানুষটির আত্মা ফিরে আসে ।আমি বিশ্বাস করলাম না । না করে ভুল করেছিলাম । দুদিন পরে রাত ২ টা : আমি পড়ছিলাম ।হঠাত্‍ বাইরে গোঙ্গানির মত শব্দ শুনলাম ।যাব নাকি যাব না ?শেষে যাব বলে ঠিক করলাম ।গিয়ে যা দেখলাম তা ভাবলে এখনো গায়ে কাটা দেয় ।আমি দেখলাম ওই লোকটি ।যে লোকটা মারা গিয়েছিলেন ।সারা গায়ে রক্ত ।মাটিতে বসে আছেন ।কালচে রক্তে ভিজে আছে জায়গাটা ।উনি আমার দিকে আসছেন আর কি জানি বলতে চাচ্ছেন ।আমি কিছুই চিন্তা করতে পারছিলাম না ।আর কিছুই মনে নাই । পরের দিন ভোরে আমাকে বাবা বাড়ির বাইরে পড়ে থাকতে দেখেন ।এবং বাড়িতে নিয়ে আসেন ।তাদেরকে সব কথা বললাম ।বেশ কয়েকদিন জ্বরে ভুগলাম ।এরকম নাকি ঘটে । ওহ বলতে ভুলে গেছি আমি যেখানে পড়েছিলাম তার চারপাশে কিছু রক্তের দাগ ছিল । ঘটনাটা যদি হ্যালুসিনেশন হয় তাহলে রক্ত আসলো কোথা থেকে ????? ঘটনাটি পাঠিয়েছেনঃ নিঃসঙ্গ গ্রহচারী

।। অদ্ভুত যুবক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, September 6, 2011 at 11:50pm
তখন আমরা ময়মনসিংহের ত্রিশালে থাকি। আমি তখন খুব ছোট। যেইদিনের ঘটনা সেদিন আমার আম্মু রান্না ঘরে মাছ ভাঁজছিলেন। এমন সময় খাকি প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়া এক যুবক আসলো আমাদের কোয়ার্টারের বারান্দায়। আব্বু বাসায় ছিলেন। তিনি ভাবলেন হয়তো সাহায্য চাওয়ার জন্য এসেছে, কারন যুবকটি কোনো কথা বলছিল না। তখন আব্বু একটি ২ টাকার নোট বের করে ছেলেটিকে দিতে চাইলেন। কিন্তু সে তা নিলো না। তখন আব্বু আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ছেলেটা তো টাকা নিচ্ছে না।” তখন আম্মু বললেন ৫ টাকা দেয়ার জন্য। তখন আব্বু ৫ টাকা বের করে বারান্দায় এলেন ছেলেটিকে দেয়ার জন্য। আম্মুও বেরিয়ে এলেন এই অদ্ভুত যুবকটিকে দেখার জন্য। কিন্তু এবারো সেই যুবক টাকা গ্রহন করলো না। বরং ইশারায় আব্বুকে বললেন টাকাটা তিনি যেনো আম্মুর হাতে দেন। আব্বু আম্মুর হাতে টাকাটা দিলেন। ছেলেটি এবার ইশারায় আম্মুকে বললেন তার টাকা ধরা হাতটি মুঠো করার জন্য। এই পর্যন্ত ছেলেটি একটি কথাও বলেনি। আম্মু কৌতূহল বশত হাতটি মুঠো করলেন। এবার সে দুই হাত মুঠো করে একটার পিছনে আরেকটি ঘসে দিল এবং আম্মুকে তাই করতে বলল। আম্মু মন্ত্রমুগ্ধের মত তাই করলেন। এবার ছেলেটি আম্মুকে ইশারা করলো যাতে আম্মু নিজের হাতের গন্ধ শুঁকেন। আম্মু হাত নাকের কাছে নিয়ে খুব আশ্চর্য হয়ে গেলেন। উনার হাত দিয়ে আগর বাতির গন্ধ বের হচ্ছিল। কিন্তু তিনি একটু আগে যখন রান্না ঘর থেকে বের হন তখনো তার হাতে হলুদের গন্ধ ছিল। গন্ধ শোঁকার সাথে সাথে লোকটি চলে গেলো। আম্মু তাকে দাঁড়াতে বললেন। কিন্তু সে দাঁড়ালো না। আম্মু তড়িঘড়ি করে গেটের বাইরে গেলেন কিন্তু আসে পাশে কোথাও সেই লোকটিকে দেখতে পেলেন না। আমাদের কোয়ার্টারের সামনে বিশাল খোলা মাঠ ছিল। তাই কেউ যদি খুব দ্রুত হেঁটেও চলে যায় তবুও তাকে দেখা যাবে সে যত দূরেই থাকুক। এমন সময় এক রিকশাওয়ালা আম্মুর সামনে এসে থামল এবং তাকে ঐ লোকটির কথা জিজ্ঞেস করলো। আম্মু রিকশাওয়ালাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন যে সে ঐ লোকটিকে চেনে কিনা। রিকশাওয়ালা জানালো যে লোকটি তার রিকশাতে করেই এসেছিলো। টাকা চাইতে, কিছু ময়লা কাগজ একত্রে করে ফুঁ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। এরপর তাকে দাঁড়াতে বলে এইদিকে আসে। রিকশাওয়ালা তাই টাকার জন্য লোকটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কে এই অদ্ভুত যুবকটি? আপনাদের কাছে কি এর কোনো উত্তর আছে? আমার কাছে লোকটি আজো এক রহস্য। আর আপনাদের কাছে? ঘটনাটি পাঠিয়েছেনঃ Mahfuz Murshed , DRMC উনার ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/mahfuz.murshed বাংলায় রি রাইট করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন)

।। জীনের উৎপাত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, September 6, 2011 at 11:03pm
সাম্প্রতিক একটা ঘটনা শেয়ার করছি। ঘটনাটা আমার এক আত্মীয়ার। উনি একজন ষাটোর্ধ মহিলা। হাসিখুশী এবং মিশুক স্বভাবের। সব ঠিকঠাক মতই চলছিল। কিন্তু হঠাত করেই উনি রাতে ভয় পাওয়া শুরু করলেন এবং সেটা নিয়মিতই চলতে লাগলো। কখনো প্রচন্ড ভয় পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠতেন আবার কখনোবা ঘুমের মধ্যে থিরথির করে কাঁপতেন। কেউ তাকে যেন জোরে ঝাকুনি দিচ্ছে। ঘরের ভিতর নানা কিছু দেখতেন। মৌলানা ডেকে ঘর পবিত্র করা হল,বিছানার পাশে লোহার জিনিস রাখা হল,কিছুতেই কিছু হয়না। উনারা অনেক খুজে শেষে এক কামেল হুজুর এর সাক্ষাত পেলেন। হুজুর সব শুনে তাবিজ দিলেন,পড়া পানি ছিটালেন এবং সারা বাড়ি ঘিড়ে বালি দিয়ে এক ঘোলাকার বৃত্ত একে দিলেন। সেই সাথে বারবার করে বলে দিলেন উনি যেন ৪০ দিন পর্যন্ত ঘরের ভিতর থাকেন যেন বাইরে না যান। আর যদি বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তবে যাওয়ার আগে একটা এবং আসার পরে একটা মোমবাতি অবশ্যই জ্বালাতে বললেন। এরপর অবস্হার কিছু উন্নতি হল। পার হল ৩৭ দিন। ৩৮ দিনের মাথায় হঠাত করে উনি বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন,কারো কোনো কথা না শুনে ,হুজুর এর কথা অমান্য করে গ্রাম থেকে শহরে উনার মেয়ের বাসায় চলে গেলেন। শহরে যাওয়ার পর উনি যেইমাত্র মেয়ের বাসায় প্রবেশ করবেন ঠিক তখনি কিসে যেন উনাকে ভর করল,উনি প্রচন্ড ভয় পেয়ে কাপতে কাপতে মুর্ছা গেলেন। সাথে সাথে উনাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হল। এরপর উনি মাসখানেক এর মত ক্লিনিক এ ছিলেন অচেতন অবস্হায়। মাঝে মাঝে আর্তচিত্কা র,ঘোঙ্গানীর শব্দ,সেই সাথে পেটের ভিতর তীব্র যন্ত্রনা,কেউ যেন খুবলে খুবলে পেটের ভিতর চিরে নিচ্ছে। খাওয়া বলতে শুধু তরল খাবার। ডাক্তাররা সকল রকম টেস্ট করালেন কিন্তু কোনো রোগ ধরা দিলনা। সব স্বাভাবিক। এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা! শেষে উনার পরিবার উপায়ন্তর না দেখে আবার হুজুরের ধারস্ত হলেন। কিন্তু হুজুর ক্লিনিকে যেতে চাইলেন না ক্লিনিক অপবিত্র বলে। এদিকে রোগীর অবস্হা সিরিয়াস দেখে ডাক্তাররা রিলিজ দিতে রাজী নন। শেষে অনেকটা জোর করে তারা উনাকে বাড়ীতে নিয়ে আসলেন অর্ধমৃত অবস্হায়। উনি কাউকে চিনছেন না। শেষে হুজুর পুনরায় হাজিরা দেখে একে খারাপ জ্বিনের আসর বলে শনাক্ত করলেন। পরে সেই হুজুরের চিকিত্সাুথে আমার সেই আত্নীয় এখন পুরোপুরি সুস্হ! কাকতালীয়ভাবে হুজুর ও জ্বিনের হাজিরার মাঝে পড়ে গেলাম আমি। অন্ধকার রাত। কি যে ভয় পেয়েছিলাম সেদিন! আমার মনে হয়েছিল আমার শরীর যেন কয়েক গুন ভারী হয়ে গেল। কাপতে কাপতে দোয়াদরুদ যা জানি তা পড়তে পড়তে ঘরে গেলাম। মুহুর্তের মধ্যে কাপুনি দিয়ে জ্বর চলে এল। আমার কেবল মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমার ভেতর ঢুকে বসে আছে। প্রচন্ড ভয়ে সারারাত ঘুমাতে পারি নি। আমি বাস্তববাদী মানুষ,কিন্তু এই কদিনে চোখের সামনে যা ঘটে গেল তা দেখে আর নিজের মনোবল ঠিক রাখতে পারিনি। আমি ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করিনা ,কিন্তু চর্মচোখে যা দেখলাম তাই বা অবিশ্বাস করি কিভাবে। ডাক্তাররা যেখানে কিছু ধরতে পারলেন না সেটাই তো অবিশ্বাস্য! এছাড়াও আমার জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যার কোন বৈঙ্গানিক ব্যাখা নেই। যেগুলো সময় সুযোগ পেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। লেখাটি পাঠিয়েছেনঃ quazi ajmal hossain chy উনার মেইল আইডিঃ ajmalbd@ovi.com

“ভুতুড়ে বাড়ি ” - By মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, September 7, 2011 at 10:39pm
আমাদের ক্লাসে আমিই ছিলাম সব চাইতে আসর জমানো ছাত্র । মেজ মামার কাছে ছোটবেলা গল্প শুনতে শুনতে আমি ও গল্প বলায় বেশ তুখোর হয়ে উঠে ছিলাম । যে কোন বিষয়ে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলায় আমার জুরি ছিল না । আর এর জন্য ক্লাসে আমার কদর ও ছিল বেশ। গল্প শুনাবার বাহানা দিয়ে কতো বার যে কতো জনকে দিয়ে হোম ওয়াক করিয়ে নিয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই । কিন্তু আমার এই একক রাজত্বে ভাগ বসালো কোথা থেকে উড়ে আসা জামাল । ও আমাদের স্কুলে ভর্তি হবার পর আমার রাজত্বে ফাটল ধরতে শুরু করলো । এমনি তে জামাল বেশ চুপচাপ টাইপের ছেলে । কিন্তু যখন গল্প বলে তখন একেবারে সত্যিকারের মতো করে বলে ।
মিথ্যা বলবো না , ওর কিছু কিছু গল্প যে আমারও ভাল লাগতো না তা কিন্তু নয় । বিশেষ করে ভুতের গল্পগুলো জামাল বলতো একেবারে সত্যিকারের মতো করে । একবার শুনলে রাতে আর সহজে ঘুমানো যেতো না । তাই খুব দ্রুতই জামাল আমাদের ক্লাসে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো । আমিও সব সময় ওকে নাজেহাল করার জন্য তর্কে তর্কে ছিলাম । পেয়েও গেলাম একবার সুযোগ ।
ছোট বেলা থেকেই শিখেছিলাম যুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে শুধু বাহু বলে হয় না । মাথা ও খাটাতে হয় । তাই আমি আমার হারতে বসা রাজত্ব ফিরে পাবার জন্য মাথা একেবারে ঠান্ডা করে ফেললাম । একদিন টিফিনের পরে একটি ক্লাসের জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম । ১০ মিনিট চলে যাবার পর আমাদের স্কুলের পিয়ন এসে বললো - আজ ক্লাসটা হবে না । কি এক কাজে জামান স্যার চলে গেছেন । হেড স্যার আমাদের সবাই কে চুপচাপ বসে থাকতে বলেছেন । নো হান্কি পান্কি । হেড স্যারকে আমরা আবার বেশ ভয় পাই । তিনি একবার রেগে গেলে আর রক্ষে নেই ,এক দু’জনকে নয় পুরো ক্লাসশুদ্ব পিটান ।
সুতারাং কোন রকম হান্কি পান্কি না করে আমারা জামালের কাছে গল্প শুনতে বসলাম । বৃষ্টির দিন হওয়ায় জামাল ভুতের গল্প বলতে শুরু করলো । একটি ভুতারা বাড়ীর গল্প । গল্পটা ঠিক এ রকম । এক ভদ্রলোক নিজের বাড়ীতে আরেকটি ঘর তুলেছেন ধান চাল রাখবেন বলে । কিন্তু ঘর তৈরির পর দেখা গেল তিনি কিছু আর সে ঘরে রাখতে পারেন না । যা ই রাখেন না কেন পরের দিন সে সব জিনিষ পাওয়া যায় ঘরের বাহীরে । এভাবে এক দিন , দুই দিন ,তিন দিন করে কেটে গেল বেশ কয়েক দিন । ভদ্রলোক কোন জিনিসই আর ঐ ঘরে রাখতে পারেন না ।
অবশেষে উপস্থিত সকলের বুদ্ধিতে ক্ষেত থেকে কেটে আনা ধান ঘরের ভেতর রেখে ঘরের জানালা গুলো সব বন্ধ করে দরজায় তালা দিয়ে দিলেন । সেই সঙ্গে পাহারা রাখলেন দু’জন লোককে । এবার সবাই বললো আর চিন্তা নেই । এতো দিন কেউ নিশ্চই মজা করেছে , কিন্তু আর না । দরজায় তালা থাকায় কেউ আর ঐ ঘর থেকে কিছু বেড় করতে পারবে না । কাজেই আর কোন চিন্তা নেই । সবাই যে যার মতো খেয়ে দেয়ে শুয়ে পরলো । শুধু দু’জন মোটাতাজা লোক থাকলো পাহারায় । পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল ঘরের ভেতর রাখা সব ধান গুলো কে বা কারা যেন ভদ্রলোক যে ঘরে থাকেন সে ঘরের চালের উপড় তুলে রেখেছে । প্রায় ৪০ থেকে ৮০ মন ধান চালের উপড় তুলতে গেলে কম করে হলেও দশ বারো জন লোকের দরকার । তা ছাড়া কোন রকম শব্দ করা ছাড়া কি ভাবে ধান গুলো চালের উপড় তুলে রাখা সম্ভব হলো ? সেটা কেউ ভেবে পেল না । রাতে যারা ঘরে ঘুমিয়েছে তারা বিন্দু মাত্র কোন শব্দ শুনতে পায়নি । শেষে সবাই একবাক্যে স্বীকার করলো এটা ভুতের কান্ড । ভুত ছাড়া এমন কান্ড আর কারো পক্ষে ঘটানো সম্বভ নয় । তখন খোঁজ পরলো পাহারাদার দু’জনের । যারা রাতে ঘরটি পাহারার দায়িত্বে ছিল । কিন্তু, কোথাও পাওয়া গেল না তাদের । শেষে বিকাল বেলা বাড়ী লাগয়া ক্ষেত থেকে লোকজন এসে বললো -আপনাদের তাল গাছে মানুষের মতো কি যেন দেখা যায় । তাল গাছে লোক উঠিয়ে দেখা গেল ,তালগাছের উপড় পাহারাদার দু’জন অচেতন হয়ে পরে আছে । অনেক কষ্টে পাহারাদার দু’জনকে তাল গাছে থেকে নামিয়ে আনা হলো। ঘটনাটা গ্রাম ছাড়িয়ে আসে পাশের দশ গ্রামে ছড়াতে বেশি সময় লাগল না । বাড়িটি লোকে লোকারন্য হয়ে গেল । কেউ বলতে লাগলো -ভুতের কান্ড , কেউ বলতে লাগল জ্বিনদের কান্ড । তবে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারলো না আসলে কার কান্ড ।
অনেক চিন্তা ভাবনা করেও কেউ যখন কোন উপায় বেড় করতে পারলো না । তখন গ্রামের ঈমাম সাহেব কে ডেকে আনা হলো । তিনি সব শুনে বললেন -এটা জ্বিনেদের কাজ । কোন কারনে হয়তো তাদের এ ঘরটি পছন্দ হয়েছে । আপাততো কিছু করার নেই । হুজার দোয়া কালাম পড়ে চলে গেলেন ।
মাস ছয় অতিবাহিত পরেও যখন ঘরটিতে কোন কিছু রাখা যাচ্ছিল না । তখন বাড়ির মালিক ভদ্রলোক ঠিক করলেন ঘরটি ভেঙ্গে ফেলবেন । ৪ জন মিস্ত্রি নিয়ে সন্ধ্যায় তিনি বারান্ধায় বসে কথা বলছেন , আগামি কাল কি ভাবে ? কখন ঘরটি ভাঙা হবে । এমন সময় দেখা গেল সাদা কাপড় পড়া একটা লোককে বাড়ীর বাহির থেকে ভেতর ঢুকতে , লোকটা বাড়ীর ভেতর ঢুকে সরাসরি চলে গেল ঘরটির কাছে তারপর দরজা দিয়ে ঘরটির ভেতরে চলে গেল । সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছুটলো, লোকটা কে ? কেনইবা ঘরে ভেতর ঢুকলো তা দেখতে । কিন্তু পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁছেও কাউকে পাওয়া গেল না । এরে পরে কেউ আর ঘরটি ভাঙ্গতে সাহস করলো না । উপস্হিত মিস্ত্রি বিভিন্ন বাহানা করে চলে গেল । এর পর আরো বেশ কয়েকবার সাদা কাপড় পরিহিত লোকটিকে ঘরের ভেতর ঢুকতে দেখা গেছে । কিন্তু ভেতরে কারো অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি । সেই থেকে ঘরটি , তেমনিই পরে আছে । বাড়ীর মালিক ভদ্রলোক আর কিছু করার সাহস পায়নি ।
গল্পটি এখানে শেষ করে জামাল যখন বললো এটা একটি সত্য ঘটনা, তখন আমি পেয়ে বসলাম জামালকে । কেননা আমি জানি ভুত-প্রেত বলে কিছু নেই । তবে জ্বিন আছে । যার প্রমান স্বরুপ পবিত্র কুরআন শরীফে জ্বিন সূরাটি রয়েছে । আমি ফিরোজ ,বাপ্পী সবাই যখন বললাম ঘটনাটি মিথ্যা । এটা শুধুই গল্প । তখন জামাল খুব রেগে গেল , এবং বললো ও নাকি প্রমান দিতে পারে যে , ও মিথ্যা বলছে না । আমরাও কম যাই না । প্রমান চেয়ে বসলাম ।তখন জামাল বললো ভীতুরা শুন ঘটনাটা আমার দাদা বাড়ীর । গল্পের ভদ্রলোক আর কেউ নান আমার দাদা ভাই । এখন প্রমান চাইলে আমার সঙ্গে আমাদের দাদা রাড়ী চল দেখবো একেক জন কেমন সাহসি ? জামালের উল্টো চেলেন্জ ছুড়ে দেওয়ায় আমরা বেশ ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম । জামাল মাথা নেড়ে নেড়ে আরো বললো কি ভীতুর দল ; এখন নেবেনা প্রমান । যাও বাসায় গিয়ে দুধু খাও । প্রমান চাইতে এসো না ।
এমন সময় একজন বললো পাহারাদারদের কি হলো ? তারা কি কিছু বলেনি কে তাদের গাছের উপড় তুললো ?রাতে কারাইবা ধান গুলো চালের উপড় তুলে রাখলো ? আমারা সবাই তাকালাম জামালের দিকে ।
আমাদের সবার চোখে মুখে একই প্রশ্ন আসলেই তো পাহারাদারদের কি হলো ? তখন জামাল বললো - পাহারা দারদের কাছ থেকে তেমন কিছু আর শোনা যায়নি । কেননা তাদের কে চিকিৎসার জন্য শহরে নিয়ে যাওয়া হলে , সুস্থ্য তারা আর কেউ গ্রামে ফিরে আসেতে রাজি হয়নি। কারো কোন প্রশ্নের উত্তর ও দেয়নি ।
(২)
আমি ফিরোজ , বাপ্পি ,তপন মিলে ঠিক করলাম আমরা যাবো জামালদের গ্রামের বাড়ী । সময়ক্ষন ঠিক করে আব্বা আম্মুকে বলে কয়ে একদিন রওনা ও হয়ে গেলাম । শীত কাল শুরু হয়ে গেছে । জামালদের বাড়ী গ্রামের বাড়ী ঝালকাঠি জেলায় । আমরা সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়ে বসলাম আমরা । জামালের বাবা আছেন আমাদের সাথে । লঞ্চে তিনি আমাদের সর্বক্ষন চোখে চোখে রাখলেন । দীর্ঘ এক রাত্রি লঞ্চে থাকার পর , পরের দিন সকাল ১১টার সময় আমরা গিয়ে পৌছালাম ঝালকাঠিতে । সেখান থেকে নৌকাতে করে যখন জামালদের বাড়ীতে পৌছালাম তখন দুপুর হয়ে গেছে । এ দীর্ঘ যাত্রাও আমাদের কোন ক্লান্তি নেই । চারিদিকে পানি আর নয়ন মুগ্ধকর দৃশ্য আমাদের সকল ক্লান্তি কেড়ে নিল ।
জামালের দাদা ভাই বেশ শক্ত পোক্ত মানুষ । আমাদের দেখে খুব খুশি হলেন । জামাল অবশ্য আমাদের আগেই বলে রেখেছে আমরা যেন আবার- জ্বিনদের ব্যাপারে দাদা ভাইকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করি । কেননা তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে পছন্দ করেন না । যা দেখাবার জামালই আমাদের দেখাবে । আমরা ওর কথার কোন প্রতিবাদ করলাম না । জামালদের বাড়ীটি বেশ সুন্দর । ছায়া সু-নিবিড় যাকে বলে । বাড়ীর সামনে বিশাল একটি পুকুর । টলটলে পানি । নারিকেল বিথীকায় ঘেরা পুকুরে রাজ হাসের সাঁতার কাটা দেখার মতো একটি দৃশ্য । জামালের দাদা ভাই ঘরের বাম পাশেই রয়েছে ঐ ভুতুড়ে ঘরটি । দেখতে অতি সাধারন একটি একতলা টিনের ঘর । তবুও ঘরটি দেখে আমার শরীর কেমন ভয়ে ছম ছম করে উঠলো । নিজেকে ভয় পেতে দেখে , মনে মনে নিজেকেই তিরস্কার করলাম । ঘরটির জানালা গুলো সব বন্ধ । দরজাটাতে একটা ছোট্র তালা ঝুলছে । মনে হলো খুব জোরে একটা মোচড় দিলেই তালাটি খুলে যাবে ।দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সামান্য একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা গ্রামটা ঘুরতে বেড় পরলাম । ধান কাটা শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্ষেত গুলো খালি পরে আছে । ক্ষেত গুলোর মধ্যে এখানে সেখানে খর কুটো স্তুপ হয়ে আছে । আমরা ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতে হাঁটতে জামালকে প্রশ্ন করলাম - ঘরটাতে কখন ঢুকবো ? জামাল জানালো আগামীকাল হাটের দিন । দাদা ভাই সকালে হাটে যাবেন সেই সুযোগে আমরা ঘরটাতে ঢুকতে পরাবো । ক্ষেতের পর ক্ষেত ; বাড়ীর পর বাড়ী হেঁটে আমরা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম । বাসায় এসে দেখি দাদা ভাই পুকুর থেকে ইয়া বড় এক রুই মাছ তুলেছেন । আমাদের দেখার জন্য মাছটা না কেটে অপেক্ষা করছেন দাদিমা । মাছটা দেখে আসলেই আমরা চমৎকিত হলাম । এতো বড় মাছ সচারাচর দেখা যায় না ।
রাতে মাছের দোপেয়াজা দিয়ে দারুন খাওয়া দাওয়া হলো । জামালের দাদা ভাই আমাদের পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন । তিনি খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের নানান গল্প শুনালেন । গল্পের একফাকে ভুতড়ে ঘরের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি একেবারে চুপ হয়ে গেলেন । আমাদের এ সব বিষয়ে মাথা ঘামাতে না করে শুয়ে পরতে বললেন । আমরা উঠানের ওপাশে বার্থরুম থেকে ঘুরে এসে শুয়ে পরলাম । নতুন জায়গায় আমার সহজে ঘুম আসেনা । কিছুক্ষন ছটফট করতে করতে , কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বলতে পারবো না । ঘুম ভাংলো পরের দিন সকাল বেলা । চোখ খুলে দেখি আমি ছাড়া বিছানায় আর কেউ নেই । বাহিরে এসে দেখি বাপ্পি ,ফিরোজ ,তপন ওর উঠানে বসে গ্লাসে করে রস খাচ্ছে । হাত মুখ ধুয়ে এসে আমিও রস খেতে বসলাম ।
আমার কাছে খুব একটা ভাল লাগলো না । দাদা ভাই কোথায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তিনি ফজরের নামাজের পর নদীতে ভাটার সময় হাটে চলে গেছেন । জামাল গেছে দাদিমার কাছ থেকে চাবি আনতে গেছে তাও নাকি অনেকক্ষন । কিছু সময় পরে জামাল দাদিকি নিয়ে হাজির ।
তিনি আমাদের অনেক বোঝালেন আমরা যেন ঘরটাতে না ঢুকি । দাদা ভাই শুনলে রাগ করবেন । তেনাদের বিরক্ত করা উচিত না । তেনারা মানে ভুত বা জ্বিনেরা । আমাদের হয়ে জামালই সব বললো । আমরা মোটেই তেনাদের বিরক্ত করবো না । ভেতরটা একবার দেখেই বেড় হয়ে আসবো । কিন্তু কিছুতেই তিনি আমাদের চাবি দিতে রাজি হলেন না । শেষ মেশ দাদি মা বলে গেলেন- আমারা যদি পারি তবে যেন দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকি । তিনি কিছুতেই আমাদের চাবি দেবেন না । এই বলে তিনি হনহন করে হেঁটে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন ।
আমাদের মন খারাপ হয়ে গেল । সাথে সাথে খুট করে একটি শব্দ শুতে আমরা চমকে উঠলাম । শব্দের উৎস লক্ষ্য করে তাকাতেই দেখতে পেলাম - ভুতুড়ে ঘরের দরজার তালাটি খুলে গেছে । আমরা অবাক হয়ে এক জন আরেক জনের দিকে তাকাতে লাগলাম । কিছুটা ভয়ও আমাদের গ্রাস করলো । কি করবো বুঝতে পারলাম না । কিছুক্ষন সবাই বাকহীন হয়ে বসে রইলাম । শেষটাতে ফিরোজই বললো চল- এখন ঢুকে দেখি ঘরের ভেতর কি আছে ? আমি মুখে বললাম চল ঠিকই কিন্তু মনে মনে সাহস পেলাম না । জামালই খুলে ফেললো দরজাটা । আমরা একে একে ভেতরে ঢুকলাম । ঘরের ভেতরটা কিছুটা অন্ধকার থাকায় জামাল আর আমি মিলে জানালা গুলো খুলে দিলাম । আলোতে ভরে উঠলো ঘরটি । ভেতরটা আহামরি তেমন কিছু না । মেজেটা মাটির । এখানে সেখানে ইদুর গর্তখুঁড়ে রেখেছে । গর্তগুলো থেকে মাটি উঠে আছে । ডান পাশে রয়েছে এটা বাঁশের মই । পাটাতনে উঠবার জন্য । বাপ্পি বললো সাবধান সাপটাপ থাকতে পারে । হঠাৎ করেই ভয় ডর সব চলে গেল । সবাই নানান বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলাম । হাসাহাসি ও শুরু হয়ে গেল । সামান্য কথাতেই একে অন্যের শরীরে ঢোলে পরছি । ফিরোজ জামালকে কিছুটা ব্যঙ্গ করেই বললো- কিরে জামাল তোর ভুত বন্ধুরা কৈই ? নাকি আমাদের ভয়ে সব পালিয়েছে ? জামাল কিছু বললো না । হঠাৎ পাটাতনটা মচমচ করে উঠলো । মনে হলো কে যেন পাটাতনের এ মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত হেঁটে গেল ।আমরা ভয় পেয়ে গেলাম । আমি দৌড় দেব কিনা ভাবছি । ফিরোজ বললো, ‘ইঁদুর টিইদুর হবে হয়তো ! এই দিনের বেলায় ভয় পাবার কিছু নেই । আমি দেখছি কি আছে উপড়ে’। বলে ফিরোজ মই বেয়ে উপড়ে উঠতে লাগল । আমারা সবাই দাঁড়িয়ে আছি ঘরের মাঝামাঝি । তাকিয়ে আছি ফিরজের দিকে । ও সিঁড়িতে আধেক উঠে দেখতে লাগলো পাটাতনে কে শব্দ করলো । আমরা ওর কোমড় পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । হঠাৎ ফিরোজ খুব দ্রুত উপরে উঠে গেল । আমি ভয় পেয়ে বলে উঠলাম- কি হয়েছে ? কি হয়েছে ? ফিরোজ উঠাতে পাটাতনের কাঠে ধুপ দাপ শব্দ হতে লাগল । আমি ভয় ডর ভুলে লাফ দিয়ে উঠলাম মই টাতে তারপর দু’টো স্ট্রিক উঠে উকি দিলাম পাটাতেন । দেখি পাঠাতনের ঠিক মাঝ খানটাতে চিৎ হয়ে মরার মতো শুয়ে হয়ে আছে ফিরোজ । হাত পা নাড়ছে না । আমি খুব দ্রুত উঠে গেলাম ওর কাছে । এই কি হয়েছে ? কি হয়েছে ? বলে চিৎকার করছি আর ওকে ঝাকাচ্ছি । হঠাৎ ফিরোজ হো হো করে হেসে উঠে বললো -কেমন ভয় পাইয়ে দিলাম ? তার পর হাসতে লাগলো । আমি ওকে ঘুষি মারার ভঙ্গি করলাম । ঠিক সেই সময় ফিরোজের শরীরটা অদ্ভুত ভাবে নড়ে উঠলো । তার পর চোখের পলকে উপড়ে উঠে গেল । আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ছিটকে পড়লাম একপাশে । মনে হলো কেউ আমাকে তুলে ছুড়ে ফেলে দিলো । কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফিরোজের শরীরটা শূন্যে ভেসে থেকে দুম করে কাঠের উপড় পরলো । কোন দিকে না তাকিয়ে আমি আর ফিরোজ ছুটে গেলাম নীচে নামার মইটার দিকে । তারপর হুরমুর করে নেমে গেলাম নীচে । সেখান থেকে সোজা বাহীরে । নীচে দাড়িয়ে থাকা জামাল,বাপ্পি,তপন ও ছুটলো আমাদের সঙ্গে । মাথার উপর পাঠাতনে খেয়াল করলাম কে যেনো খুব জোরে জোরে হাঁটছে । কাঠে মটমট করে শব্দ হচ্ছে । ভয়ে আমাদের আত্ম শুকিয়ে গেছে । এমন ভয় কোন দিন পাইনি । ঘর থেকে বেড় হয়ে উঠানে আসতেই ধুম করে ঘরের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল । তার পর জানালা গুলো একে একে বন্ধ হতে লাগল আর খুলতে লাগল । আমরা উঠানে দাঁড়িয়ে ভয়ে চিৎকার করতে লাগলাম । আমাদের চিৎকার দাদিমা দৌড়ে এলেন তারপর আমাদের ভেতরের ঘরে নিয়ে গেল ।
(৩)
এ ঘটনার পর যে তিনটি দিন আমরা জামালদের বাড়ীতে ছিলাম সে তিনটি দিন ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে ছিলাম । বিকালে দাদা ভাই হাঁট থেকে ফিরে , ‘সব শুনে, ফিরোজের দিকে তাকিয়ে বললেন- তোমার ওভাবে মজা করে কথা বলা ঠিক হয়নি । তোমরা যখন দাদিমাকে অনুরোধ করছিলে যে শুধু ভেতরটা দেখে বেড় হয়ে আসবে । তখন ও ঘরে যিনি থাকেন তিনি হয়তো তোমাদের কথা রাখতে চেয়েছেন । কিন্তু তোমরা যখন ভিতরে ঢুকে হাসাহাসি শুরু করলে , তেনাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করছিলে তখন তিনি রেগে গিয়ে তোমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছেন’; এখন চল আমার সঙ্গে তেনার কাছে মাপ চাইবে । দাদা ভাই এর পিছু পিছু আমরা ঘরটার দরজার কাছে গিয়ে হাত জোড় করে মাপ চাইলাম বললাম - আমাদের ভুল হয়ে গেছে । আমাদের মাপ করে দিন । আর কোন দিন এমন করবো না ।
পাঠক ; আপনারা হয়তো আমাদের ক্ষমা চাওয়ার দৃশ্যটি কল্পনায় দেখে হাঁসছেন । কিন্তু সেই সময়ে আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে থাকতেন তবে আপনারাও হাত,পা,কান ,চোখ ,মুখ সব এক করে আমাদের মতো করে ক্ষমা চাইতেন । পরের দিন সকাল বেলা আমরা যখন ঢাকায় ফেরার জন্য জামালদের বাসা থেকে বেড় হচ্ছিলাম । রেডি হয়ে সবাই উঠানে দাঁড়িয়েছি ঠিক সে সময় ঘরের দরজাটা খুলে গেল । আমাদের চোখের সামনে ঘর থেকে বেড় হয়ে এলোন সাদা জোব্বা পরা একটি লোক । দাদা ভাই সালাম দিতে -ওলাইকুম আসসালাম বলে লোকটা আমাদের দিকে তাকিয়ে মৃর্দু হাসলেন । (The End)

বন্ধু জগল ও আকবরি মুদ্রা (১ম পর্ব) - By মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Tuesday, September 6, 2011 at 10:37pm
হঠাৎ বন্ধু জগলুর ফোন পেয়ে মনটা খুশিতে ভরে উঠল । আহাঃ কতোদিন দেখিনা ব্যাটাকে । দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু শুয়ে ছিলাম । কিন্তু চোখ বুঝে আসতে না আসতেই জগলুর ফোন । অপরিচিত নম্বর দেখে মনে মনে তেতে উঠেছিলাম কিন্তু শেষতক - কন্ঠস্বর শুনে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলাম না । উল্টাপাল্টা কাজ কর্ম আর কথা বাতার জন্য জগলু অন্য সবার কাছে অপ্রিয় হলেও কছে একজন আর্দশ মানুষ । প্রায় মাস পাঁচের ধরে নিখোঁজ থাকা জগলুর হঠাৎ ফোন আমাকে পুলকিত করে তুলল । আমি আন্দোলিত কন্ঠে বললাম - কি রে জগা কি খবর ? বেঁচে আছিস তা হলে ?
- মামারে , শুধু বাঁইচা নাই কেল্লা ফতে আলী লোহানী কইরা ফেলাইছি । জগলু বাজখাই গলায় বলল ।
- মানে ? ওর কথা বুঝতে না পেরে আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ।
- দোস্তরে কোটিপতি হয়ে গেছি !
- মানে কি ? আমি না বুঝতে পেরে আবারও জিজ্ঞেস করলাম । জগলুরা এমনিতেই বিশাল বড়লোক । বাড়ি-গাড়ি টাকা পয়সার কোন কিছুর অভাব নেই । ও আবার নতুন করে কি সব বলছে । তাহলে কি ওর বাবা মারা গেছে । সম্পতির ভাগা ভাগিতে ও কোটিপতি হয়ে গেছে ? মানুষের মন এক বিচিত্র জিনিস মুর্হুতের মধ্যে অনেক কিছু ভেবে ফেলে ।
- কোটিপতি বুঝতো শালা ? কোটিপতি ? জগলু হাসতে হাসতে বলল । কৈ এতোদিন পর কথা হলো কোথায় ছিল ? কেমন ছিল ? তা জিজ্ঞেস করবো । না, এসেই শালা চমক দেওয়া শুরু করে দিয়েছে । শালা গত পাঁচ মাস যাবৎ নিখোঁজ । আর্মি,পুলিশ দিয়ে ওর বাবা ভাইয়েরা সমস্ত দেশ চোষে ফেলেছে । কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি । শেষমেষ সূত্রাপুর থানায় গুম কেইস ফাইল করেছিল ওর বাবা । সন্দেহের তালিকায় আমরা ও ছিলাম ।
আর এতোদিন পর উদয় হয়ে ও কিনা বলছে কোটিপতি হয়ে গেছে । পাগল টাগল হয়ে যায় নিতো ?
কিরে কথা বলছিস না কেন ? আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে জগলু প্রশ্ন করলো ।
-কি বলবো ?
- ভোরকে গেছিস তাই না ? আমি কিছু না বলে শুধু “হুম” করলাম ।
- আবে কেরাণী শুন, কোটিপতি মানে, শত লক্ষ টাকার মালিক বুঝেছিস ?
- তুই এতো টাকা পেলি কোথায় ? আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম ।
-সেটাইতো বলতে চাচ্ছিরে হাদারাম ,
- তা হলে এতো ভনিতা না করে বলে ফেল না ।
-আরে গাধায় বলে কি ? ফোনে কি এসব কথা বলা যায় নাকি?
-তাহলে ?
-বাসায় চলে আয় । ফিরোজ,বাপ্পি,রনিকেও নিয়ে আসিস । তোদের জন্যও খুঁশির খবর আছে ।
- কিসের খুঁশির খবর ? আমি কৌতুহলি হয়ে উঠলাম ।
- সেটাও সমনা সামনি বলবো । জগলু রহস্য রেখে বললো ।
-কিন্তু ওরা তোর বাসায় আসবে কিনা সন্দেহ আছে । তোর বাবা এবার তোর মিসিং নিয়ে যা করেছে না , আমাদের দিনরাত পুলিশের সঙ্গে ঘুরতে হয়েছে ।
-তাই নাকি ?
-জ্বি স্যার ।
- যা পুষিয়ে দেবনে ।
- কিভাবে? তোদেরকেও কোটিপতি বানিয়ে দেব ।
- মজা করছিস ?
- আবে কেরানী শুন, এই জগলু কখনও মজা করে না । তোরা সন্ধ্যায় চলে আয় । বলে জগলু ফোন রেখে দিল । আমি কিংকতব্যবিমুঢ় হয়ে কানে মোবাইল চেপে বসে রাইলাম ।
কিছুক্ষন পর ফিরোজকে ফোন দিয়ে জগলুর কথা বলতেই ও সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো - শালারে মাটিতে পুইত্তা ফেলামু । আর একটু হইলেই শালায় সবাইরে জেলের ভাত খাওয়াইত । আমি বললাম- ও নাকি কোটিপতি হয়ে গেছে । কথাটা শুনে ফিরোজ একটু সময় নিলো । তারপর বললো - কি করে রে ?
সেটাইতো বলার জন্য আমাদের ডেকেছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেললাম । আসলে জগলুর কথায় আমি ইতিমধ্যে যর্থেষ্ট ইমপেষ্ট হয়ে গেছি ।
-শালায় গুল মারছে । তুই ওরে ক’ ওগো বাড়ির নীচের হোটেলে নান আর সিক কাবাব না খাওয়ালে আমরা যামু না। পেটুক ফিরোজের এই এক সমস্যা খানা-খাদ্য ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না ।
-তুই কি আসার সময় বাপ্পি আর রনিরে নিয়ে আসতে পারবি ?
-সেইটা আমুনে তুই আগে খানা-খাদ্য কনফারম কর । ফিরোজ হাসতে হাসতে বললো । তারপর একটু থেমে জিজ্ঞেস করল- হালায় আছিল কৈ এতোদিন ?
- সেটাও নাকি বলবে ? জগা আরো বলেছে আমরাও নাকি কোটিপতি হয়ে যাবো ?
-বলিস কি গুপ্তধন টন পেয়েছে নাকি ?
-সেটাতো বলেনি । তোরা আয় গেলেই সব বুঝা যাবে ।
-আমি তো যেয়েই শুয়োরটারে দু’ইটা জুতার বারি মারমু । ফরোজ আবারও ফোস করে বলল ।
-সেটাও তুই করিস ! এখন বল কখন আসছিস ?
-সন্ধ্যার পর ।
-ওকে , তাহলে আমি জগাকে সেটা জানিয়ে দিচ্ছি । বলে আমি ফোন রেখে দিলাম ।
জগলুকে ফোন করে ফিরোজের দাবি কথা বলতেই ওর বললো - পেটুকটার অভ্যাস আর গেল না । ঠিক আছে তোরা নীচের হোটেলে বসে আমাকে ফোন দিলেই আমি নেমে আসবো । দুই জগলুদের বাড়ির নীচের হোটেলটার নাম হোটেল পিপাসা ! বেশ বড় একটা হোটেল । সবসময় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। বয় বেয়ারাদের ব্যস্ততা আর হাক ডাক শুনলে মনে হয় পৃথিবীতে মানুষের প্রধান কাজ হচ্ছে শুধু খাওয়া আর খাওয়া। দু’দু বার পঁচা আর বাসি খাবার রাখার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতের হাতে ধরা খেলেও হোটেল পিপাসার প্রতি মানুষের পিপাসা একটুও কমেনি । হোটেলের ভেতরে পর্দা দেয়া একটা রুমে বসে জগলুকে ফোন দিতেই ও নেমে আসলো । জগলুকে দেখে আমরা চমকে উঠলাম । শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । কিন্তু চোখ আর গলার স্বর একই রকম আছে । আমাদের সবার সঙ্গে হাত আর বুক মেলাবার পর ও আমার পাশে বসতে বসতে - বলল, কিরে কেরানী ? খবর কি ? জগলুর ধারণা একাডেমিক পড়াশুনা করে কোন লাভ নেই । একান্তই যদি পড়তে হয় তবে পড়তে হবে প্রকৃতির কাছ থেকে । একাডেমিক পড়াশুনা করে কেউ কেরানীর চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে না । আমিও নাকি তাই হমু। তাই আমাকে কেরানি বলে ক্ষেপ্যাতে চেষ্টা করে ।
আমি ভাল আছি, বলে চেপে বসলাম । জগলুকে দেখে হোটেলের ম্যানেজার ক্যাশ থেকে নেমে এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল- ভাইজান কি খাবেন । জগলু নানা আর সিকের অর্ডার দিল।
আমি বললাম এবার বল - এতোদিন কোথায় ছিলি ?
-সেটা অনেক কথারে দোস্ত । জগলু হেসে রহস্য করে বলল ।
-তারপর বল তুই কোটিপতি না কি যেন বলছিলি ?
-কোটিপতি মানে ! কোটিপতি । তোদের এই বন্ধু এখন একজন কোটিপতি মানুষ । জগলু গলা নামিয়ে একটু ঝুকে সামনে এসে ফিসফিস করে বলল ।
-কিভাবে কোটিপতি হলি ?
-সেটাইতো বলার জন্য তোদেরকে ডেকেছি ।
-দেখ জগা, খাবারের জন্য অপেক্ষা আর রহস্য করে কথা বলা এ’দুটোর কোনটাই আমার পছন্দ হয় না । তুই মামা একটু ঝেড়ে কাশ না । ফিরোজ বলতে বলতে নড়েচড়ে বসল ।
-এখানে বলা যাবে না । খেয়েদেয়ে উপড়ে চল । সব বলছি । আমরা চটপট গরম গরম সিক কাবাব আর নান রুটি খেয়ে জগলুদের পাঁচতলায় চলে এলাম । পাঁচ তলার চিলে কোঠায় জগলুর জন্য একটা আলাদা করে রুম তৈরি করা আছে । আমরা আসলে সেখানেই বসি । আমাদের বসিয়ে রেখে জগলু একটু নীচে গিয়ে আবার চট করে ফিরে এল । ওর হাত একটা সোনালী রং এর ধাতব মুদ্রা । আমাদের দেখিয়ে বলল - এটা চিনিস ? আমরা এক সঙ্গে মাথা নেড়ে না করতেই । ও বলল - এটার নাম আকবরি মুদ্রা । আকবরের নাম শুনেছিস নিশ্চই । আমরা সবাই বড় বড় চোখ করে মাথা ঝাকালাম । জগলু মুদ্রাটা আমাদের হাতে দিয়ে বলল - এটার দাম কত বলতে পারবি ? আমরা মুদ্রা পরোখ করে দেখত দেখত “মাথা নাড়লাম, যার মানে, না, দাম বলতে পারবো না ।
-তোরা যে পারবিনা সেটা আমিও জানতাম । শুন এটার বর্তমান বাজার মূল্য তিন কোটি পচিশ হাজার টাকা মাত্র । দামটা বলে জগলু হাসত লাগল । আমাদের চোখ আর চোখের জায়গায় নেই। আমরা মুদ্রাটা নেড়ে চেড়ে দেখছি - একপাশে মুকূট পরা একজন লোকের ছবি অন্য পাশে আরবি বা ফরাসিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিছুলেখা । রনি বলল - দোস্ত এটা কি স্বণের ?
- একেবারে খাঁটি সোনা কোন ভেজাল নেই ।
-এখানে আর কতোটুকু সোনা হবে ? ফিরোজ হাতের তালুতে ওজন করতে করতে বলল ।
-এক ভরি নয় আনা । জগলু খাটের পাশে রাখা কম্পিউটারটা ছাড়তে ছাড়তে বলল ।
- এক ভরি নয় আনার আর বাজার মূল্য কত হবে ?
- প্রায় ৪০ হাজার টাকা ।
-তাহলে এতো দাম বলছিস কেন ? রনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।
- আমি এটা বর্তমান এন্টিক মূল্য বলছিরে গাধা । এদিক আয় গুগলে দেখ । জগলু আমাদের ইন্টানেটে মুদ্রাটার ছবি আর তার বর্তমান দাম দেখিয়ে হাসতে লাগল । আমরা ছবির মুদ্রার সঙ্গে হাতের মুদ্রাটা মিলিয়ে দেখলাম দু’টো মুদ্রাই হুবুহু এক । আমাদের অবস্থা তখন বেআক্কেলের শেষ পর্যায়ে । মাথা চুলকে তোতলাতে তোতলাতে বললাম- এটা তুই কোথায় পেলিরে জগা?
-নিজে অর্জন করেছি ।
-সেটা কিভাবে ?
-শুনতে চাস ? আমরা সবাই একসঙ্গে মাথা ঝাকালাম হ্যা শুনতে চাই ।
-শুন,এ পাঁচ মাস আমি কোথায় ছিলাম জানিস ?
- না , কোথায় ছিলি ? ফিরোজ জিজ্ঞাসা করল ।
-কামরুক কামরুখার নাম শুনেছিস ? আমরা মাথা নাড়লাম, যে শুনেছি ।
-সেটা কোথায় জানিস ? সবাই মাথা নাড়ল,না জানে না । আমি বললাম- ভারতে ।
-এটাইতো ভুল ধারনারে, এটাইতো ভুল ধারণা । জগলু মাথা নেড়ে একটু অন্য মনস্ক হয়ে বলল ।
-মানে ?
-শুন কেরাণী, কামরুক কামরুখা বলে আসলে নিদিস্ট কোন জায়গা নেই । যেখানে আত্মাতিক জগতের অতি উর্চ্চ পর্যায়ের সাধু সন্যাসিরা এক হয়ে ধ্যান করে সে জায়গাটাই কামরুক কামরুখায় পরিনত হয় । আমাদের জগার কামরুক কামরুখা নিয়ে ব্যাখ্যা শুনায় কোন ইন্টারেষ্ট নেই । আমাদের ইন্টারেষ্ট মুদ্রাটাও কোথায় পেলে সেটা শুনা ।
-তুই এটা কোথায় সেটা বল না । রনি অস্থির হয়ে বলল ।
-তোদের আসলে ধর্য্য নেই । শুন, এমন মুদ্রার অনেক গুলো আমার কাছে আছে । ইচ্ছে করলে তোরাও পেতে পারিস ।
-আমরা ? ফিরোজ ঢোক গিলে জিজ্ঞাসা করল ।
-হ্যা, তোরা ।
-কিভাবে ?
-তার জন্য কিছু কস্ট অবশ্য করতে হবে । তবে আমি যে কষ্ট করে এটা অর্জন করেছি, সেটার কাছে তোদের কষ্ট হবে শিশু । মানে কোন কষ্টই না ।
-আহাঃ এতো ভনিতা না করে আসল কথা বলে ফেলনা । আমি একটু জোড়েই বলে উঠলাম ।
-শুন, আমাকে এটার জন্য শ্মাশানে শ্মাশানে রাতের পর রাত সাধু সন্যাসির সঙ্গে সঙ্গে হয়েছে ঘুরতে হয়েছে । রাতের পর রাত সাধু বাবার সঙ্গে জেগে সাধনা করতে হয়েছে । তাদের তার কিছুই করতে হবে না । তোরা শুধু আমাকে সাহায্য করবি। আমি যা, যা বলব শুধু বিনা বাক্যে তা পালন করে যাবি । ব্যাস, কাজ শেষে হয়ে যাবি কোটিপতি । বুঝেছিস ?
-সেটা কি অন্যায় কিছু ? আমি ভয়ে ভয়ে বললাম ।
-আরে না , তাহলে আসল কথাটা শুন বতমানে আত্মাতিক জগতে আমিও একজন শক্তিশালি মানুষ । ধ্যানে বসে আমি মৃতমানুষদের ডাকতে পারি । তাদেরকে বশ মানিয়ে, তাদের দিয়ে নানান কাজ করিয়ে নিতে পারি । আমি সেরকম এক আত্মাকে চিনি যে কিনা সম্রাট আকবরের কোষাঘাররে দ্বায়িত্বে ছিল । সেই আমাকে এই মুদ্রা দিয়েছে ।
-দেখ জগা, আমার কেমন যানি ভয় ভয় করছে । রনি আমতা আমতা করে বলল ।
-তোদের কোন ভয় নাই । ভয়ের কাজ শেষ । তোরা শুধু ভেলেন্টিয়ার হিসাবে কাজ করবি ।
- ভেলেন্টিয়ার মানে ? ফিরোজ আমার মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল ।
-শুন বলরামকে একা ডাকা যায় না। ডাকা ঠিকও না । তাকে ডাকতে কম করে হলেও চারজন লাগে । এবং তাদের হতে হবে পরস্পরের উপড় বিশ্বাসী । কি তোদের উপড় বিশ্বাস করতে পারি তো ?
-সেটা ১০০% পারিস, কিন্তু বলরামটা আবার কে ? আমি জিজ্ঞাসা করলাম ।
- ঐ যে বললাম না সম্রাট আকবরের কোষাঘারের রক্ষাকর্তা ।
-তারমানে তুই প্লানচেট এর কথা বলছিসরে জগা ।
- প্লানচেট,মেলানচেট ওসব ফালতু বিষয় ওভাবে কাউকে ডাকা যায় না । সব ভেলকি বাজি । নকল ছেলে খেলা । কথাগুলো একসাথে বলে জগলু একটু হাপিয়ে উঠল ।
-তাহলে তুই কিভাবে ডাকবি ?
-সেটা যখন ডাকবো তখনই দেখতে পাবি । আগে বল আমার কথায় তোরা রাজি আছিস কিনা । যদি সব ঠিক ঠাক মতো করতে পারিস তাহলে একেক জন নিশ্চিত কোটিপতি ।
- ভয়ন্কর কিছু হবে না তো ?
- আমার কথা মতো সব করলে কোন কিছুই হবে না । তবে তোরা লোভ করবি না । জানিস তো লোভে পাপ, পাপে সোজা গোরস্তান । বলে জগলু হাসতে লাগল । আমার শরীর কেমন কাটা দিয়ে উঠল । আমি সবার দিকে তাকালাম ওরা কি বলে সেটা দেখার জন্য । ফিরোজ একটু সময় নিয়ে বলল- ঠিক আছে আমি রাজি । জগলু আমার দিকে তাকাল আমিও বললাম রাজি । রনি একটু আমতা আমতা করলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল । আলোচনা শেষে ঠিক হলো, আসছে শনিবার রাতে আমরা সবাই জগলুদের বাসায় এক হব । সেদিন রাতটাও নাকি ওদের বাসাতেই কাটাতে হবে ।কেননা বলরামকে ডাকা হবে রাত ১২টার পর । সেটাই নাকি তিথি অনুযায়ি মোক্ষম সময় । কোটিপতি হবার চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে আমরা জগলুর বাসা থেকে বেড় হয়ে এলাম । চলবে ........

বন্ধু জগলু ও আকবরি মুদ্রা (২য় পর্ব )- Byমুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, September 7, 2011 at 8:25pm
তিন

শনিবার সকাল থেকে অজানা এক আতন্কে মনের ভেতর কাপাঁকাপি শুরু হয়ে গেলেও রাত ১১টার মধ্যে আমরা তিনজন জগলুর বাসায় ঠিকই পৌছে গেলাম । আকবরি মুদ্রার লোভ এবং কৌতুহল দুই আমাদের মধ্যে এমন ভাবে চেপে বসেছিল যে তাকে উপেক্ষা করার মতো শক্তি আমাদের কারোই ছিল না।
কালো এক আলখাল্লা পরে জগলু সন্ধ্যা থেকেই নাকি রেডি হয়ে ছিল । আমরা পৌছতেই তিনটা আলখেল্লা তিনজনের হাতে দিয়ে বলল- চট করে গোসল করে তৈরি হয়েনে ।
গোসলের কথা শুনে আমি চমকে উঠলেও ফিরোজ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু জগলু ওর মুখের কাছে আঙুল নিয়ে বলল - আমি যা বলল, তোদের কাজ হলো বিনা বাক্যে তা পালান করে যাওয়া । আমরা আর কোন কথা বললাম না । জটপট কাক গোসল করে ফেললাম । ফ্লাক্সে চা রাখা ছিল আমরা তিনজন চা খেতে একটু আলাদা হয়ে সোফার উপড় বসে রইলাম ।
জগলু ঘরের এক কোনায় চারকোনা একটা টিবেলের সামনে বসে বিরবির করে কি সব মন্ত্রটন্ত্র পড়ে যাচ্ছিল । যার মাথামুন্ড কিছুই আমরা বুঝছিলাম না ।
ঘরে হালকা একটা ডিম বাতি জ্বলছে । আগরবাতি আর কপুরের গন্ধ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । আগর বাতি আর কপুরের ধোয়া বাতাসে ভেসে ভেসে একটা পাতলা জালের আভরনের মতো সৃষ্টি করেছে । ফিরোজ একসময় ফিসফিস করে বলল - শালায় মনে হয় আমাগো মদন বানাচ্ছে । যদি আকবরি মুদ্রা না পাইনা তাইলে দেখবি আমি কি করি ? আমি আর রনি কিছু বললাম না । চুপচাপ চায়ে চুমুক দিতে লাগলাম । গোসল করার পর আমার কেমন কাঁপন শুরু হয়েছে আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম- চুপ করতো দেখ না ও কি করে ।
-আমার কেমন জানি ভয় ভয় করছেরে । রনি কাঁপতে কাঁপতে বলল ।
-ঐ ছাগল ভয় কিসের ? ফিরোজ রনির দিকে চোখ পাকিয়ে বলল ।
-যদি সত্যি সত্যি ভূত চলে আসে ?
-আসলেই তো ভাল । সবাই কোটিপ্রতি হয়ে যাবো । বাড়ি কিনমু,গাড়ী কিনমু , সুন্দর দেইখা বিয়া করমু । আহাঃ সুখ রে সুখ বলে ফিরোজ একটা টান দিল । ও’র কথা বলার ভঙ্গিতে আমরা সবাই হেসে উঠলাম । ধনী হবার সুখ স্বপ্নে আমরা বিভোর হয়ে রইলাম । আমার ভেতরের ভয়টা আস্তে আস্তে কেঁটে গিয়ে কেন যেন খুব হাসি পেতে লাগল । আমি ফিক করে হেসে উঠলাম । আমার দেখা দেখি ওরাও হাসতে লাগল । হাসতে হাসতে একজন আরেক জনের উপড় গড়িয়ে পরতে লাগলাম । জগলুর দিকে চোখ যেতেই দেখলাম ও কালো রং এর একটা বিড়াল দু’হাতে উপড়ের দিকে তুলে ধরে খুব জোড়ে জোড়ে মন্ত্র পড়ছে । হঠাৎ বিড়াল দেখে আমাদের হাসি বন্ধ হয়ে গেল । আমরা চোখ বড় বড় করে জগলুর দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
কিছুক্ষন মন্ত্র পড়ে পাশে রাখা একটা ঝোলা থেকে একটা হাড্ডি বের করে জগলু বিড়ালটার মাথার উপড় কয়েকবার ছোঁয়াল। তারপর আবারও মন্ত্র পড়তে লাগল । একটানা গুন গুন মন্ত্র পড়ার শব্দে আর কপুরের গন্ধে আমার কেমন নেশা হয়ে গেল আমি মেঝেতে বসে পরে জুমতে লাগলাম । রনি,ফিরোজ ও আমার উপড় হেলান দিয়ে সোফা ছেড়ে মাটিতে বসে পরল । এভাবে কতোক্ষন বসে ছিলাম বলতে পারবো না । একসময় মনে হলো যুগের পর যুগ এভাবে বসে আছি । হঠাৎ জগলুর দিকে চোখ যেতেই দেখলাম ওর বিড়ালটাকে ঝোলার মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে - নেশাতুক চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল -তোরা আয় টেবিলের পায়াগুলো ধর বস । আমরা গোর লাগা চোখে টলতে টলতে এগিয়ে গিয়ে জগলুর সামনে রাখা টেবিলটার তিনটা পা ধরে বসে পরলাম ।
টেবিলের অন্য পা’টার সামনে জগলু বসে পরে হাতে হাড্ডিটা তুলে নিয়ে আমাদের মাথায় আলতো করে ছুইয়ে দিয়ে আবার মন্ত্র পড়তে লাগল । টেবিলটার উপড় নানান রকমের আকিবুকি আঁকা । তার মধ্যে উলন্গ একটা মেয়েকে একটা কুকুর পাশে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম । হাত দু’টো তুলে আছে উপরের দিকে । আকাশ থেকে বিদ্যূত নেমে আসছে মেয়েটাকে লক্ষ্য করে । ছবির আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না । ফিরোজ এর দিকে তাকিয়ে দেখি ও চোখ বন্ধ করে ঝুলছে । রনি আমার দিকে তাকিয়ে কেমন একটা ভঙ্গি করল । আমি চোখ ফিরিয়ে নিয়ে জগলুর দিকে তাকালাম । একঘেয়ে মন্ত্রপড়ার ফাঁকে ফাঁকে জগলু আমাদের শরীরে একটা বোতল থেকে একটু পর পর পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল । তারপর একসময় বললো - সবাই মনকে প্রশস্ত করে দাও । চোখ বুজে তাকে দেখতে চেষ্টা করো, যে অন্য জগত থেকে আমাদের জগতে এসেছে । হে পরমআত্মা, আমরা তোমার প্রতিক্ষায় আছি, আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে তুমি এখন আমাদের সন্মুখে আসতে পার । হে পরমআত্মা, আমরা তোমার প্রতিক্ষায় আছি । আমরা সবাই চুপ হয়ে অপেক্ষা করছি কি ঘটে তা দেখবার জন্য । আমাদের সবার ষস্ঠ ইন্দ্রিয় টানটান হয়ে আছে । কিন্তু কিছুই ঘটল না । অনেকক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে এক সময় তাকালাম। ফিরোজ বলেই ফেলল - ধ্যাত কেউ আসবে না । সব বাকোয়াস ।
-ধৈয্য ধর । শান্ত থাক । যে আসবে সে আসে পাশেই আছে । বলে জগলু আবার মন্ত্র পড়তে লাগল । আমার ভেতরটা কেন যেন কেঁপে কেঁপে উঠল । কে যেন ভেতর থেকে বলতে যাচ্ছে পালা , বাঁচতে চাইলে পালা ।
-কে আছে ? আশে পাশে আমরা ছাড়া কেউ নেই । কথাটা বলে ফিরোজ আমার দিকে তাকিয়ে বলল চল উঠি । আর সময় নষ্ট করে কোন লাভ নেই । আমিও মনে মনে তাই ভাবছিলাম । ফিরোজ উঠার কথা বলাতে সাহস পেয়ে গেলাম আর একটু হলে বলতেই যাচ্ছিলাম -চল উঠি । কিন্তু ঠিক সেই সময় ঝোলার ভেতর থেকে বিড়ালটা ভয়ন্কর স্বরে মিয়াও মিয়াও করে ডেকে উঠল । ভয়ে আমরা আতকে উঠলাম । প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জগলু বলে উঠল - এসেছে, এসেছে । ত্র্যই তোরা কথা বলিস না,চুপ, একদম চুপ । কথা বললে অনিস্ট্য হয়ে যাবে । আমরা চুপ হয়ে গেলাম ।
বিড়ালটা আরো কয়েক বার ডাকার পরে কেক করে একটা শব্দ করে চুপ হয়ে গেল । মনে হলে কেউ যেন গলা টিপে বিড়ালটার ডাক বন্ধ করে দিল । আমার মাথার চুলগুলো একটা একটা করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে টের পেলাম । বিড়ালটার ডাক থেমে যেতেই পুরো ঘরে পিন পতন নিরবতা নেমে এলো ।
পরস্পরের শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না । আমরা সবাই চোখ বন্ধ করে বসে আছি । রনি ভয়ে একটু পরপর খুব আস্তে কো কো করে শব্দ চেপে রাখতে চেষ্টা করছে। আমি এই ভেবে ভয় পাচ্ছি যে, ভয়ে ও না আবার কেঁদে ফেলে।
জগলু হঠাৎ বলে উঠল - হে পরমআত্মা আপনি কি এসেছেন ? চুপ করে থাকবেন না, দয়া করে বলুন আপনি কি এসেছেন? কোন শব্দ হলো না । কিন্তু হঠাৎ মনে হলো - ঘরের ভেতর একটা গরম বাতাস খেলে গেল । জগলু আবার বলতে শুরু করল, আমি আপনার উপস্থিতি টের পাচ্ছি, হে পরমআত্মা আপনি কি এসেছেন ? এসে থাকলে আপনার উপস্থিত জানান দিয়ে আমাদের ধন্য করুণ । সঙ্গে সঙ্গে ঠাস করে ঘরের ভেতর জলতে থাকা বাতিটা ফুটে গেল । আমরা ভয়ে চিৎকার করে উঠতে গিয়েও থেমে গেলাম । নাকে তীব্র একটা পঁচা গন্ধ এসে লাগল । মনে হলো পেটের নাড়িভূড়ী সব উল্টে বের হয়ে যাবে। অনেক কষ্টে বর্মি চেপে রাখলাম । অজানা এক ভয়ে কাঠ হয়ে আছি । হঠাৎ মনে হলো ঘরটা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে । আর আমি ছাড়া যেন ঘরের ভেতর আর কেউ নেই । চোখ, কান বন্ধ করে করে কিছু একটা ঘটার প্রতিক্ষা করছি । জগলু আবার কাঁপা কন্ঠে বলল - হে পরমআত্মা আমাদের উপড় রুষ্ট্য হবেন না । আপনি এসেছেন তার জন্য আমরা ধন্য । ঠিক সে সময় ঠাস ঠাস করে জগলুর উপড় কেউ আঘাত করতে লাগল । ভয়ে কি করবে বুঝতে পারছি না । একবার ভাবলাম এক দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই । কিন্তু উঠে দৌড় দেবার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । চোখ খুলে দেখলাম জগলু মেঝেতে পরে কাঁপছে আর বলছে - আমায় ক্ষমা করুণ, হে পরম আত্মা,আমার ভুল হয়েছে আমায় ক্ষমা করুণ ।
হঠাৎ ফিরোজকে দেখলাম -জগলুর দিকে ছুটে যেতে । ফিরোজ ছুটে গিয়ে জগলুকে মেঝে থেকে তুলে বলল - কি হয়েছে তোর ? ত্র্যই কি হয়েছে ? কে মারছে তোকে ? কোথায় তোর পরম আত্মা? জগলু ভয়ন্কর চোখে ফিরোজের দিকে তাকাল । তারপর আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলাম -ফিরোজ উড়ে গিয়ে ঘরের এক কোণায় পরল । প্রচন্ড ভয়ে আমার অন্তর আত্মা চপি দিয়ে উঠল । রনি হাউমাও করে কেঁদে উঠতেই । জগলু প্রচন্ড একটা ধমক দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলো । তারপর ঝোলা থেকে বিড়ালের মৃত দেহটাকে বেড় করে একটা ছুরি দিয়ে একটানে বিড়ালের শরীর থেকে মাথাটা আলাদা করে ফেলল । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল - যা ফিরোজকে নিয়ে এসে বসিয়ে দে । আমি ছুটে গিয়ে ফিরোজকে নিয়ে এসে আগের জায়গায় বসিয়ে দিলাম । জগলু উঠে গিয়ে বিড়ালের কাটা মাথা থেকে ঝরতে থাকা রক্ত দিয়ে আমাদের ঘিরে একটা বৃত্ত তৈরি করে ফেলল । তারপর আগের জায়গায় বসে পরে বলল - যে ঘরের ভেতর এসেছো দেখা দাও , তা না হলো কঠিন আজাব দেবো । তুমি এখন আমার হুকুমের গোলাম। দেখা দাও বলছি ।
কিছুই হলো না ।কেউ দেখাও দিল না । জগলু তখন ঝোলা থেকে একটা কালো রং এর পুতুল বের করে হাতে থাকা ছুরিটা পুতুলের গলায় রেখে বলল -দেখা দাও বলছি । তা না হলে শেষ করে ফেলবো বলছি । জগলুর এমন ভয়ন্কর রুপ আমরা আগে কখনও দেখিনি । সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভেতর কেউ ছোটাছুটি শুরু করে দিল । আমরা ভয়ে টেবিলের পায়া চেপে ধরলাম । জগলু বলল - ভয় নেই । বৃত্তের ভেতরে কেউ আসতে পারবে না । তোরা কিছুতেই বৃত্তের বাইরে পা দিবি না । কিছুতেই না । মনে রাখবি বৃত্তের বাইরে পা দিলেই মৃর্ত্য । আমরা মাথা নাড়লাম । আস্তে আস্তে ঘরের এককোনায় একটা মানুষ্য আকৃতির ছাঁয়া ভেসে উঠল । মনে হলো ঘরের ভেতর ভাসতে থাকা ধোঁয়াগুলো একত্রে হয়ে ছাঁয়াটা একটু একটু করে মানুষের আকৃতির নিচ্ছে । জগলু ভয়ন্কর গলায় বলে উঠল - তুই কে ? কে তুই ? প্রশ্নের জবাব দে । কিছুক্ষন ফোস ফোস শব্দ শুনতে পেলাম । তারপর ছাঁয়াটা তীরবেগে ছুটে এলো আমাদের দিকে । ভয়ে আমরা আঁতকে উঠলাম। কিন্তু ছাঁয়াটা বৃত্তের কাছে এসেই ছিটকে পেছনে পরে গেল । জগলুকে দেখলাম বোতল থেকে ছাঁয়াটাকে লক্ষ্য করে পানি ছুঁরে মারতে। হঠাৎ ছাঁয়াটা গোংগাতে লাগল । তারপর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে নাকি স্বরে ফারসিতে বলল - আমি বলরাম ! আমি বলরাম, কি চাস ! কি চাস লোভী শয়তানের দল !
-আমাদের আকবরি খাজানার সন্ধ্যান দে, জগলু কঠোর কন্ঠে বলে উঠল ।
-কখনও না, কখনও না, তোদেরকে কখনওই তা দেব না । তোদের দেব মৃর্ত্যু । মৃর্ত্যুর জন্য তৈরি হ । বলরাম রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল ।
-কি আমাদের মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছিস ? তা হলে এ্যই নে তোর মৃর্ত্যু । বলেঁই জগলু বোতল থেকে পানি ঢেলে হাতের পুতুলটাকে ভিজিয়ে দিয়ে । ছোরাটা দিয়ে খোঁচাতে লাগল । বলরাম চিৎকার করতে করতে বলল - থাম, থাম । দিচ্ছি যা চাস দিচ্ছি , কিন্তু পরিনাম ভাল হবে না বলে রাখলাম । ভয়ন্কর বিপদ হবে । তারপর আমাদের চারপাশে বিভিন্ন আকৃতির স্বন্য রৌপের মুদ্রা ঝনঝন করে পরতে লাগল । আমরা খুশিতে দিশেহারা হয়ে উঠলাম । ভয় ঢর সব উবে গেছে । জেগে উঠেছে আমাদের ভেতরকার লোভ । আমরা দু’হাতে মুদ্রা কুঁড়াতে লাগলাম । জগলু কিছু বলার আগেই আমরা তিনজন মুদ্রা কুড়াতে কুড়াতে কখন যে বৃত্তের বাইরে চলে এসেছি বলতে পারবো না । হাঠাৎ কান ফাঁটান ভয়ন্কর হাসির শব্দে আমাদের সমগ্র দেহ মন কেঁপে উঠল । জগলুকে দেখলাম চিৎকার করে বলছে - এটা তোরা কি করলি ? এটা তোরা কি করলি ? বৃত্তের বাইরে কেন গেলি ? কেন গেলি । সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কেউ মাথার উপড় তুলে ধরল তারপর ঘুরাতে ঘুরাতে ছুরে মারল দেয়ালের দিকে। প্রচন্ড বারি খেয়ে মুখ থুবরে মেঝেতে পরে জ্ঞান হরালাম। জ্ঞান হারারার ঠিক পূর্ব মুর্হুতে জগলুর দিকে চোখ যেতে দেখলাম- ও হাতের ছুরিটা দিয়ে পুতুলটাকে কেটে কুটি কুটি করে ফেলছে আর বলছে -তুই জাহান্নামে যা, তুই জাহান্নামে যা।

।। কিছু অদ্ভুত ঘটনা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, September 9, 2011 at 10:55pm
প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের যেই ঘটনাটি বল তার প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই ছিলাম এবং ঘটনাটি সত্য।। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের ১২ তারিখ।। চট্রগ্রামের বিশাল সরকারী বাংলো বাড়িতে শুধু আমরা ৪ জন মানুষ।। আমি, ভাইয়া, আমার ছোট ভাগ্নে এবং বাবুর্চি।। বাকি মানুষজন, মা, বড় বোন, বাবা, এবং দুলাভাই আমার আরেকটা নতুন ভাগ্নির আগমন কে কেন্দ্র করে হসপিটালে ছিল।। বলা বাহুল্য, আমার আপুর একটি ছেলে হবার প্রায় এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন।। সেই সময়ে আপু যতদিন হসপিটালে ছিল তখন আমি এইচ, এস, সি এক্সামের প্রস্তুতি নিয়ে খুব বেস্ত থাকা সত্ত্বেও একমাত্র খালা হিসেবে ছোট্ট ১১ মাসের ভাগ্নে ফাহিমকে দেখাশোনা করছিলাম।। প্রথম দিকে ছোট বাবু দেখাশোনার ব্যাপারে আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করতাম।। এর প্রধান কারণগুলো ছিল- ১।
এতো বড় বাড়িতে আমরা ৩ জন মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম।। এক প্রান্তে কোনও বিপদ হলে অন্য প্রান্তের মানুষ টের পাবেনা এমন একটা অবস্থা।।
২।

আমি কখনো এর আগে এতো ছোট বাচ্চাকে সাথে নিয়ে একা ঘুমাইনি।। তাই কিছুটা অস্বস্তি কাজ করছিলো।।
যেহেতু আমার ভাগ্নে ফাহিম তখন অনেক ছোট, যে কিনা শুধু মাত্র কোনমতে কোনও কিছু অথবা কারো হাতের সাহায্য নিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়াতে পারে।। তাই প্রথম রাতে আমি ওকে বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ে জানলার সাথে লাগানো বিছানার দেওয়ালের দিকে আমার ও দেওয়ালের মাঝে শোয়াবো ঠিক করলাম।। কিন্তু এরপর সেই রাতে প্রচণ্ড ঝড় বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ঝড় হওয়াতে আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম।। কারন এই ভাবে যে ওকে জানালার পাশে শোওয়ানোতে রাতে ঝড়ের সময় বৃষ্টি এসে পড়তে পারে ওর গায়ে।। যাই হোক, সব দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে আমি মশারি টানিয়ে ভালো মতন গুজে দিয়ে ওকে নিয়ে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।। ঘরে কিছুটা বাইরের সিকিউরিটি লাইটের আলো এসে রুমে বিভিন্ন দেয়ালে আলো ছায়ার আভা ফেলল।। আমার চোখের রড এবং কোণ সেলগুলো আস্তে আস্তে সেই অন্ধকারের মৃদু আলোয় নিজেদের মানিয়ে নিলো।। তাই কিছু সময় পর আমি প্রায় প্রতিটা জিনিসই স্পষ্ট দেখতে শুরু করলাম।। আমি আমার পাশে উকি দিয়ে ফাহিমকে দেখলাম।। ও ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে নিশ্চিত হলাম।। এরপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।। হটাত রাত ৩ টার দিকে প্রচণ্ড বজ্রপাতের আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। স্বাভাবিক ভাবেই আমি আমার ঘুমন্ত ভাগ্নের দিকে হাত বাড়ালাম এবং ও ঠিক আছে কিনা বা ভয় পেলো কিনা বোঝার চেষ্টা করলাম।। কিছুটা ঘুম ঘুম চোখেই অনভব করলাম ও আমার পাশে নেই।। আমি তখন অস্থির হয়ে আরও সচেতন হয়ে ওকে খুঁজতে শুরু করলাম।। ওর বালিশ ফাঁকা।। ওয়াল ক্লথ, কাঁথা সব ঠিক থাক মতন পড়ে আছে, কিন্তু ও বিছানার কোথাও নেই।। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস না করতে পেরে পাগলের মত বিছানা থেকে নেমে বাতি জালানর জন্য প্রস্তুত হলাম।। যেই বাম পাশে ফিরলাম মাটিতে নামার জন্য অমনি আমার চোখ বিছানার পায়ার দিকে গেলো।। দেখলাম, ফাহিম ঠিক আমার পায়ের দিকে খাটের কিনারা ধরে মশারির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।। অথচ মশারি আগের মতই গুঁজানো।। বাইরের সিকিউরিটি লাইটের আলো জানালা দিয়ে ওর মুখে এসে পড়ছিল।। তাতে দেখলাম, ও স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। বরফের মত অদ্ভুত শীতল দৃষ্টি।। এই অবস্থা দেখে আমি কয়েক সেকেন্ড ভয়ে এবং ঠাণ্ডায় জমে গেলাম কিন্তু আল্লাহ আমাকে হটাত শক্তি দিলেন এবং আমি কোনও কিছু তোয়াক্কা না করেই প্রানেপ্রনে মশারি তুলে মেঝেতে নেমে ওকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে ফেললাম।। আর রুমের সমস্ত লাইট জ্বালিয়ে দিলাম।। সাথে সাথেই দেখলাম ও স্বাভাবিক বাচ্ছার মত চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।। আমি জোরে জোরে দোয়া পড়া শুরু করলাম আর ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম শক্ত করে।। এখানে একটু বলে নেই, যে আমার উচ্চতা খাটের উচ্ছতার প্রায় সমান।। তাই যখন আমি খাটে শুয়েছিলাম তখন আমাকে না ডিঙ্গিয়ে এতটুকুন বাচ্ছার পক্ষে নিচে নামা সম্ভব না।। আর তাছাড়া, মশারি উঠিয়ে নিচে নেমে আবার মশারি গুজে দেয়ার মতন উপযুক্ত তখন সে ছিল না।। সেই রাত্রিতে আমি আর ঘুমুতে পারিনি।। সারারাত লাইট জ্বালিয়ে রেখেছিলাম।। ওকে পাহারা দিচ্ছিলাম কিছুটা অস্থির চিত্তে।। ওর বাবা মাকে ব্যাপারটা বলেছিলাম কিন্তু এর মাঝে আর কোনোদিন এমন ওর সাথে হয়নি।। এরপর প্রায় ৫ বছর পরের ঘটনা।। আমি আর্কিটেকচারের স্টুডেন্ট তখন।। অনেক রাতে কমন রুম থেকে প্রোজেক্ট শেষ করে ঘুমুতে এসে দেখলাম ও আমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।। ছোট্ট বাবুর এতো আদরের ঘুম আর ভাঙ্গাতে ইচ্ছে হলনা।। তাই আমি ঘরের দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে, ডিম লাইট জ্বালিয়ে, এবং মূলবাতি নিভিয়ে ক্লান্ত হয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।। ওহ, বলে রাখা দরকার, ঐ রুমের দরজাটা দুই পাল্লার ছিল এবং ছিটকিনিটা দরজার উপরের অংশে ছিল।। মাঝ রাতে হটাত আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। সেই রাতেও ভয়ঙ্কর বৃষ্টি হচ্ছিল।। একদম সন্ধ্যা থেকে একটানা।। আমি পাশ ফিরে তাকালাম।। আজো সেই একই কাহিনী।। ফাহিম আমার পাশে নেই।। মুহুরতেই আমি দরজার দিকে চোখ দিলাম দেখার জন্য যে সেটা খোলা কিনা।। ফাহিম হয়তো টয়লেটে গিয়েছে।। কিন্তু না।। দরজাটা লাগানো।। আমি তখন উঠে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দরজার ছিটকিনিতে হাত রাখলাম।। সেটা আগের মতই বন্ধ।। খেয়াল করলাম, এতটুকুন ছেলে কখনই এতো উপরের ছিটকিনি নাগাল পাবে না।। আসে পাশে কিছু নেই যার উপর দাঁড়িয়ে ধরতে পারে।। আমার সাড়া শরীর অবশ হয়ে আসলো।। কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রাখলাম।। বিছানার পাশের ফ্লোরে দেখলাম, যদি আবার পড়ে-টরে যায় বিছানার পাশের ফাঁকা দিয়ে।। কিন্তু না, তাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।। আমি এবার ভয় পেয়ে ওকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলাম।। রুম পুরা ফাঁকা।। দরজা লাগানো।। আমি আর বেশি অস্থির হয়ে গেলাম এবং তন্ন তন্ন করে ওকে খুঁজতে লাগলাম।। মাথা ঠিক মতন কাজ করছিলো না হয়তো।। নইলে এতো বড় একটা ছেলে রুমে নেই দেখে নিশ্চয়ই পরে আর নাম ধরে ডাকতাম না।। অবশেষে আমি পাগলের মত শেষ সম্ভাব্য স্থান সোফার উপর রাখা বারান্দায় বৃষ্টিতে আধাভেজা একগাদা জমা করে রাখা কাপড় গুলো হাতড়ানো শুরু করলাম।। একটার পর একটা কাপড় মাটিতে ছুঁড়ে ফেলছি।। বিছানার চাদর, শাড়ি, অনেকগুল বড় বড় কাপড় মাটিতে ফেলার পর কাপড়ের গোছার নিচ থেকে হটাত খুঁজে পেলাম ফাহিমকে।। তখনো ওর চোখ খোলা এবং সেদিনের মত আজো স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। ভয়ঙ্কর সেই দৃষ্টি।। আমি ভয় পেলাম।। কিন্তু ওকে বুঝতে না দিয়ে সোফা থেকে ওকে টেনে তুলে নিলাম।। একটা কথাও বললাম না।। বিছানায় শুইয়ে দিলাম।। ও শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে পড়লো।। আমি আজো এই ঘটনা দুটো ভুলতে পারিনি।। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা ঘাঁটাঘাঁটি করিনি কারন এটা বেশি জানাজানি হলে হয়তো মানুষ ওকে নিয়ে বা ওর নামে খারাপ কিছু ছড়াবে।। ও এখন আরেক্তু বড় হয়েছে।। খুব শান্ত, সহজ সরল ছেলে।। আমার বাসায় এলেই আমার সাথে থাকার জন্য ভীষণ আবদার করে।। কিন্তু এরপর থেকে আমি ওর সাথে কখনো একা ঘুমানোর সাহস করিনি।। লেখক/লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।
বনানী, ঢাকা।।

। কঙ্কাল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 8, 2011 at 10:59pm
ঘটনাটা ২০০৬ সালের। সদ্য মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। তাই মনে অনেক উত্তেজনা। ক্লাস শুরু হতে আরও দেরি আছে, এর মাঝেই সব বই কিনে ফেললাম। শুধু কঙ্কাল কিনা বাকি। একদিন তাও কিনা হল। যার কঙ্কাল সে যে কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছে, হাড় দেখে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। বিশাল আকৃতির বক্স টা বাসায় আনতেই বিশাল হইচই পরে গেল। আম্মু তো দেখেই চিৎকার শুরু করল যে এই বক্স অন্য কোথাও রাখা হোক। আমি বললাম এটা আমার রুমেই থাকবে। আমার মধ্যে কোন ভয় কাজ করেনি। বিপুল উৎসাহে সব খুলে খুলে দেখলাম। তারপর বিছানার নিচে যত্ন করে রাখলাম। ঐদিন কিছু হয়নি। পরদিন বাসায় ফুফুরা আসল। ওদের খুব আনন্দ নিয়ে সব দেখালাম। সারাদিন অনেক মজা করলাম। রাতে ঘুমানোর আয়োজন হল। বাসায় রুম কম থাকায় আমার ছোট ভাইয়ের রুমে গেস্টদের থাকতে দেয়া হল। আর আমার ছোট ভাইকে পাঠানো হল আমার রুমে। বিছানা ছিল দুইটা। ও একটাতে শুয়ে ঘুমিয়ে পরল আর মেঝেতে আমাদের কাজের মেয়ে। আমি ঠিক একটা বাজে রুমের লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। পাঁচ মিনিটও হয়নি হঠাৎ অনুভব করলাম কে যেন আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ভাবলাম আম্মু হয়তো, কারণ আম্মু প্রায় আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে আর ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিক আমার কানের পাশে পরতে লাগলো। তখুনি বুঝলাম এটা আর যেই হোক আম্মু না। আমি পাশ ফিরতে চাইলাম কিন্তু আমার হাত পা যেন অচল হয়ে ছিল। কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না শরীরে। আমার চোখ খোলাই ছিল। তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছিলাম হাল্কা ডিম লাইটের আলোয়- ঐ তো আমার ভাই শুয়ে আছে, মেঝেতে কাজের মেয়েটা, আমার পাশে আমার মোবাইল সেট, সবই। কিন্তু আমি নড়তে পারছিলাম না। কথাও বলতে পারছিলাম না। উপায় না দেখে সূরা পড়া শুরু করলাম। এভাবে ৫-৭ মিনিট যাওয়ার পর যেন আমার শক্তি আসলো। উঠেই আমার ভাইয়ের বিছানায় গেলাম। সারারাত নির্ঘুম কাটল। পরদিন সকালে আব্বু আম্মুকে জানালাম। আব্বু বলল, এটা হেলুসিনেসন. আম্মু একেবারে উড়িয়ে না দিলেও বিশ্বাস করেনি তা বেশ বুঝা যাচ্ছিল। আমিও তাই ভেবে হাল্কা হলাম যে নতুন কেনা কঙ্কালটা হয়তো আমার মনে প্রভাব ফেলেছে, আর তাই হয়তো এইরকম লেগেছে। পরেরদিন আম্মু সহ ছিলাম। আম্মু শুয়েই ঘুমিয়ে পরেছে আর আমি ঘুমাব বলে লাইট অফ করে শুয়ে পরলাম। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে আবার সেই অনুভূতি। আর কানের কাছে ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ। আবার সূরা পড়া শুরু করলাম। এভাবে কতক্ষন ছিলাম জানিনা। অনেক কষ্টে মা মা বলে চিৎকার দিলাম। আম্মু তাড়াতাড়ি উঠে লাইট অন করে আমাকে এসে ধরল। আমি কাঁদতে শুরু করলাম, বললাম, ঐ লোকটা আবার এসেছিল। সারারাত আমি আর আম্মু জেগে কাটালাম। আমার রুমে কুরআন শরীফ রাখা হল যাতে এরকম কিছু আর না ঘটে।

কয়েকদিন ঠিক ছিল সবকিছু। একদিন দুপুরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল কেও একজন খুব কাছ থেকে ঝুকে আমাকে দেখছে। চোখ খুলতে পারছিলাম না। অনেক পরে চোখ খুলে দেখি কিছু নেই। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা বাসায় থাকতে আশা কাওকেই জানাতাম না। হয়তো ভয় পাবে এই ভেবে বলতামনা। তবুও আমার রুমে ছিল এরকম কয়েকজন বন্ধু একি ঘটনার শিকার। তারা যাওয়ার আগে বলেও গিয়েছে যে এই রুমে কিছু একটা আছে। আরেকবার আমার দাদি ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ জোরে চিৎকার করে উঠেছিল। উনার মনে হয়েছিল কে জানি উনার হাত ধরে আছে। এইরকম ধারাবাহিক কিছু ঘটনার পর বাসায় মিলাদ পরানো হয়। আল্লাহর রহমতে এখন সব ঠিক, তবুও মাঝেমাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই মৃত মানুষের আত্মা কি পৃথিবীতে থাকে? পড়াশুনার খাতিরে পরে কঙ্কালের হাড় পাশে নিয়েও ঘুমাতে হয়েছিল। কিন্তু এরকম কিছু কখনো আর হয়নি। তবে প্রথমেই কেন এত কিছু হয়ে গিয়েছিলো তা আজো ভেবে পাইনা। শিক্ষা জীবনের শেষের দিকে এসে শুরুর দিকের সেই কথা খুব বেশি মনে পরছে। তাই আজ এটা সবার সাথে শেয়ার করলাম। হয়তো আপনাদের পড়ে বিরক্ত লাগতে পারে, তবুও মেডিকেল এ যারা পড়েন তারা কঙ্কাল নিয়ে অনেক গল্প শোনার সুযোগ পেয়ে থাকেন। সব গল্পই যে উড়িয়ে দেয়ার মত না তা জানাতেই আমার জীবনের সত্যি কাহিনীটা বললাম। ভাল থাকবেন আপনারা সবাই। লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। দ্রষ্টব্যঃ গল্পটি লেখিকা অন্য একটি পেইজে শেয়ার করেছিলেন। তাই, কারো হয়তো কমন পড়তে পারে। লেখিকার অনুমতি সাপেক্ষে গল্পটি আমাদের পেইজে দেয়া হল।

।। রহস্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 8, 2011 at 10:35pm
যারা অনেক ভয়ের কোন গল্প পড়ার জন্য আমার লিখাটি পড়ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি দয়া করে এই গল্পটি পড়বেননা কারণ গল্পটি তেমন ভয়ঙ্কর নয়, আপনারা হতাশ হবেন। তবে ভয়ঙ্কর না হলেও নিশ্চয়তা দিতে পারি এটি সত্যি ঘটনা। আমি খুবই সাহসী একটি মেয়ে। কোনদিনই কোন কাজকে আমার কঠিন মনে হয়নি। কোন মানুষকেই কখনো ভয় পাইনা। উল্টো মানুষজন আমাকে সমঝে চলে ; )। তবে সারাজীবন বিজ্ঞানের ছাত্রী থাকলেও কোন এক বিচিত্র কারনে আমি ভূত ভীষণ ভয় পাই। ঘটনাটি প্রায় আড়াই বছর আগের। চাকুরী সূত্রে আমি আর আমার বর দুজনেই ময়মনসিংহ শহরে ছিলাম। আমাদের বাসা ছিল সাহেব কোয়ার্টারের একটি বাংলোতে। বাংলোটি একতলা এবং মোটামুটি একর দুয়েক জায়গা নিয়ে ছিলো। পুরোনো ডিজাইনের বাংলো, বিশাল বিশাল দরজা চারিদিকে, কোনো জানালা নেই। বাইরেই টানা বারান্দা। সাঁপ, মশা বা অন্য কোন পোকা-মাঁকড় যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য পুরো বারান্দা নেট দিয়ে ঢাকা। বারান্দা থেকে তিন ধাঁপ সিঁড়ি নামলেই গাড়ির রাস্তা আর ব্যাডমিন্টন কোর্ট। বাইরে ছিলো একটি ছোট পুকুর আর বিভিন্ন রকমের অনেক গাছ। একবার কোন একটা কারনে আমার ডাক্তার দেখানো জরুরী ছিল। দিনের বেলায় নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাই ঠিক করলাম সন্ধ্যের পর বের হব। আমার ছেলের বয়স তখন পাঁচ। আমাদেরকে বাইরে যেতে দেখলেই তার বাইরে যাওয়া চাইই চাই। সেদিন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি বলেই আমি চাচ্ছিলামনা ছেলেকে নিয়ে যেতে। তাই আমার বর আমাকে বললো "আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, তুমি ছেলেকে কিছু একটা বুঝিয়ে বাইরে বের হয়ে এসো।" আমি ছেলেকে ওর প্রিয় টম এন্ড জেরী চালিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন পাশে বসে আস্তে আস্তে বাইরে বের হয়ে আসি। তখন প্রায় ৭-৩০টার মত বাজে। চারিদিকে অন্ধকার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার অংশ হিসেবে সবসময় আমাদের বাসার অপ্রয়োজনীয় সব বাতিই বন্ধ রাখা হয়। আমরা বাইরে বের হতে চাইলে সবসময় গাড়ী বারান্দার নীচেই রাখা হয় অথবা বাংলোর ডানদিকে বাউন্ডারী ঘেষে যে বিশাল আম গাছ তার নীচে রাখা হয়। বাংলোর বামদিকে রাস্তা ধরে মিনিট খানেক হাটলে বাড়ীর মূল গেইট। বারান্দায় এসে দেখলাম সিঁড়ির কাছে গাড়ী নেই। বাংলোর ডানদিকের আমগাছের নীচে গাড়ী আছে কিনা দেখার জন্য তাকিয়ে দেখি গাড়ী নেই, অল্প আলোতে দেখা গেল আমার বর কার সাথে যেন জোরে জোরে মোবাইল ফোনে কথা বলছে। সেই চিরাচরিত ভঙ্গি। এক হাতে মোবাইল ফোন কানে ধরা, আরেক হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলা। আমাকে দেখেই সে হাত নেড়ে ডাকলো "মেরী, এদিকে এস।" আমি তিন ধাপ সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় নেমে ডানদিকে যাচ্ছি, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তার অবয়ব, শুনতে পাচ্ছি গলার আওয়াজ। এমন সময় বরের বডিগার্ড ইমরান উল্টোদিকের মূল গেইটের কাছাকাছি থেকে জোরে ডেকে উঠলো "ম্যাডাম, ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন? স্যার গেইটের বাইরে গাড়ীতে বসে আছেন আপনার জন্য!" আমি ঝট করে ডানে তাকাতেই দেখি ওখানে কেউ নেই! অথচ একটু আগেই সেখানে আমার বরের গলার আওয়াজ স্পষ্ট শুনেছি, আর এত পরিচিত অবয়ব, ভূল হওয়ার কথাই নয়! সাথে সাথে এক দৌড়ে উল্টোদিকে গেইটের কাছে চলে গেলাম। যেয়ে দেখি গেইটের বাইরে গাড়ী স্টার্ট দেয়া কারন তারা দেখতে পেয়েছিলো আমি বারান্দা থেকে বের হয়েছি। উল্টোদিকে আমাকে যেতে দেখেই তারা আমাকে ডেকেছিলো। আর আমার ছেলে যাতে গাড়ী স্টার্ট দেয়ার শব্দ শুনতে না পায় এজন্যই তারা দূরে গেইটের বাইরে গাড়ী রেখেছিল। আমি সেদিন প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। এরপর কখনোই আমি সন্ধ্যের পর আর একা বারান্দায় বেরুতাম না। ঘটনাটি যিনি পাঠিয়েছেনঃ মারিনা নাজনীন।

দ্রষ্টব্যঃ উনি গল্পের শুরুতেই খুব সুন্দর করে বলে দিয়েছেন যে এখানে হয়তো খুব বেশি ভয় পাওয়ার মত কিছু ছিল না।। এবং আপনাদের অনুরোধও করেছেন বেশি ভয় খুঁজলে যেনও লেখাটা না পড়েন।। কমেন্ট করার সময় ব্যাপারটা মাথায় রাখলে ভালো করবেন।। - অ্যাডমিন

অর্গ্যানের সুর - By ঊর্মি খান

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Friday, September 9, 2011 at 9:59pm
সকাল থেকে রাত অব্দি একটানা বৃষ্টি হচ্ছে । সেই সাথে মাঝে মাঝে বজ্রপাত । বিদ্যুৎ নেই তাই মোম জ্বালিয়ে শেলী উপন্যাস লিখছে । খুব শীঘ্রই তার এ উপন্যাসটা প্রকাশিত হবে । ঔপন্যাসিক হিসেবে শেলী রোজালীন বেশ নাম করা । নির্জনতা শেলীর ভাল লাগে । তাই হেনরিভিলে একটা বাড়ি কিনেছে কয়েক মাস আগে । বাড়িটা অর্ধ পুরোনো । বাড়ির মালিক ছিলেন হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জেন কারমাইকেল । বাড়িটার একটা ভুতুড়ে গুজব রয়েছে বলে কেউ কিনতে চায়নি । এ বাড়িতে রাতের বেলায় নাকি অর্গ্যানের সুর ভেসে আসে মাঝে মাঝে ।
অনেকদিন বাড়িটা খালি পড়ে ছিল । পত্রিকায় বাড়ি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে শেলী একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল । তখনই হেনরিভিলে এই বাড়িটার খোঁজ পেয়ে অতি অল্প দামে শেলী বাড়িটি কিনে নেয় । তার মনের মত জায়গায় বাড়িটা পেয়ে শেলী এ জন্য আনন্দিত , উৎফুল্ল । এ বাড়িতে বেশ কিছু পুরোনা আসবাবপত্রের সাথে একটা পুরোনো অর্গ্যান ছিল । জিনিসগুলো একটা আলাদা ঘরে রেখে শেলী নিজের জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজিয়ে নিয়েছে ।
অবিবাহিত শেলীর রান্নাবান্নার কাজ করে হাউজকিপার জুন মারিয়া । বেশ হাসি খুশি মহিলা । শেলী তাকে খুব পছন্দ করে । বৃষ্টির কারণে আজ আসতে পারেনি । তাই শেলীকে আজ খাবার কিনে খেতে হয়েছে । তার উপন্যাসটা প্রায় শেষের পথে । কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশককে দিয়ে দেবে ।
শেলী এক মনে লিখে চলেছে । ওদিকে টেবিলে রাখা মোমটা গলে গলে প্রায় শেষ । কিন্তু সেদিকে শেলীর খেয়াল নেই । বসার ঘরে ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বলছে । দপ করে মোমটা নিভে গেলে শেলী চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে আর একটা মোম জ্বালিয়ে আনল । হঠাৎই সে খেয়াল করল তার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে । মোম হাতে নিয়ে রান্না ঘরের ফ্রিজ খুলে স্যান্ডউইচের প্যাকেট আর মিল্কশেক বের করল । টেলিফোনের শব্দ পেয়ে খাবারগুলো রান্না ঘরের টেবিলে রেখে নিজের ঘরে ফিরে এলো । হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে জুনের কণ্ঠ ভেসে এলো । জুন বলল, ‘মিস শেলী আপনার কোন অসুবিধা হয়নিতো ? আসলে আমি বৃষ্টির কারণে আসতে পারিনি । লাইন খারাপ থাকায় ফোনও করতে পারিনি ।` শেলী হেসে বলল , ‘না না আমার কোন অসুবিধা হয়নি । তুমি কোন চিন্তা কর না । কাল বৃষ্টি কমলে চলে এসো ।` ‘আচ্ছা ঠিক আছে রাখি ।` শেলী ফোন রেখে রান্না ঘরে এসে দেখল খাবারগুলো নেই । হঠাৎই পাশের ঘর থেকে দুপদাপ শব্দ ভেসে এল শেলীর কানে । শেলী রান্না ঘর থেকে ছুটে বের হল । শব্দ শেষ হতে না হতেই পুরোনো অর্গ্যানটা বেজে উঠল মৃদুভাবে । ভীষণ ভয় পেল সে । পুরোনো অর্গ্যান কে বাজাতে পারে ভাবতে ভাবতে রুমের দিকে এগিয়ে গেল । আলতো করে দরজাটা খুলে উঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেল না সে । পুরোনা অর্গ্যানটা পড়ে রয়েছে অনড় হয়ে । দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল । ভাবল সবই তার মনের কল্পনা । ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতে যাবে অমনি আবার অর্গ্যানটা বাজতে লাগল আগের চেয়ে কিছুটা জোরে । শেলী আবার দরজা খুলে উঁকি দিয়েই স্থির হয়ে গেল । ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল তার শরীরে । দেখল বেশ মনোযোগ দিয়ে অর্গ্যান বাজাচ্ছে কালো আলখেল্লা পড়া কেউ একজন । শেলী কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কে আপনি ? এখানে কেন ?` শেলীর কথায় আগন্তুক অর্গ্যান বাজানো বন্ধ করে দিয়ে ধীরে ধীরে শেলীর দিকে আসতে লাগল । শেলী স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আগন্তুকের চেহারা দেখেই তার গলা চিরে বেরোলো চিৎকার । হাত থেকে মোমটা পড়ে গিয়ে নিভে গেল । প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হল কাছাকাছি কোথাও । সেই সাথে বিদ্যুৎ চমকলো । সেই আলোয় দেখল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোমশ শরীরের এক ভয়ঙ্কর জীব । মানুষের মত দুটি করে হাত পা থাকলেও মুখটা দেখতে একেবারে নেকড়ের মত । চোখ দুটো টকটকে লাল। দুটি বড় বড় দাঁত বেরিয়ে আছে ঠাঁটের বাইরে । অজ্ঞান হয়ে গেল শেলী । অনেক পরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে শেলী প্রাণপণে দৌড় দিল নিজের ঘরের দিকে । বসার ঘর দিয়ে যাওয়ার সময় সোফার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল সে । কোন রকমে উঠে আবার দৌড় দিয়ে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল । কাঁপা হাতে টর্চ জ্বেলে টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেল শেলী কিন্তু টেলিফোনের রিসিভার তুলতেই তার মুখ শুকিয়ে গেল । টেলিফোন ডেড । কিছুক্ষণ আগেই সে জুনের সাথে কথা বলেছে । বাইরে বৃষ্টির বদলে এখন ঝড় শুরু হয়েছে । ঝড়ের কারণে কোথাও হয়ত তার ছিড়ে গেছে । নেকড়েরূপী জীবটা দরজায় আঘাত করছে । শেলী দৌড়ে গিয়ে ড্রয়ার খুলে তার লাইসেন্স করা রিভলভারটা হাতে তুলে নিল । অদ্ভুত প্রাণীটা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে শেলী গুলি চালাল । প্রাণীটা লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে । শেলী প্রাণপণে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের দরজার কাছে চলে গেল । কিন্তু দরজাটা খুলতে পারল না । ওদিকে অদ্ভুত প্রাণী উঠে দাঁড়িয়ে শেলীকে আবার ধরার জন্য ছুটে এলো । শেলী চিৎকার করলেও তার কান্না বৃষ্টির শব্দে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে । প্রাণীটি বিকট শব্দ করতে করতে তার দিকে ধেয়ে আসছে দেখে ক্লান্ত বিধ্বস্ত শেলী দৌড়ে জানালা খুলতে চেষ্টা করল । কিন্তু খুলতে পারল না । পাশে রাখা একটা চেয়ার নিয়ে জানালার কাঁচে আঘাত করল । কাঁচ ভাঙার পর কোন রকমে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে । জ্ঞানশূণ্য হয়ে এই নির্জন জায়গায় শেলী ছুটতে লাগল প্রাণপণে । কাদায় হোচট খেয়ে পড়ে গেল বার কয়েক । প্রাণীটাও ছুটে চলেছে তার দিকে । শেলীও প্রচন্ড বেগে দৌড়াতে লাগল । হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল রাস্তার পাশের ছোট্ট একটা খাদে । কোন রকমে উঠে দেখল প্রাণীটা নেই । বৃষ্টির মধ্যে যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে দেখল প্রাণীর কোন চিহ্নই নেই । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধপ করে বসে পড়ল রাস্তার পাশে । শহরটাতে বাড়িঘরের ঘনত্ব কম । দূরে একটা খামার বাড়ি চোখে পড়ল তার । ক্ষণিকের জন্য সে বাড়িটা দেখলো বজ্রপাতের আলোয় । শেলী বাড়িটার দিকে দৌড়াতে লাগল । হঠাৎ রাস্তায় দেখতে পেল হেড লাইট জ্বেলে দ্রুতবেগে ছুটে আসছে একটা গাড়ি । রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শেলী বাঁচার আনন্দে গাড়িটা কাছে আসতেই সে চিৎকার করে থামতে বলল । সাহায্য প্রার্থনা শুনে গাড়ির ড্রাইভারের সহানুভুতি হল । তাড়াতাড়ি শেলী বলল, ‘আমাকে বাঁচান একটা ভুত আমাকে তাড়া করেছে । যে কোন সময় সে চলে আসতে পারে ।` ড্রাইভার কোন কথা বলল না । শেলী তার চেহারা দেখতে পেল না। কারণ লম্বা একটা হ্যাটের কোণা দিয়ে সে মুখ ঢেকে রেখেছে । তুমুল বৃষ্টি শুরু হতে লাগল । সেই সাথে ঘন ঘন হতে লাগল বজ্রপাত । শেলী আবার করজোরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, `প্লিজ আমাকে বাঁচান ।` লোকটা হ্যাট খুলে ফেলল । শেলী অন্ধকারে লোকটার মুখ দেখতে পেল না । লোকটা বলল, `এত তাড়া কিসের ?` শেলী আবার কেঁদে বলল, `আমাকে একটা ভুত তাড়া করেছে ।` লোকটা খনখনে হাসি দিয়ে বলল, `তাই নাকি !’ শেলী চমকে উঠল । লোকটার মুখের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখল গাড়ির ড্রাইভার আর কেউ নয় স্বয়ং সেই অদ্ভুত প্রাণী । কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শেলী উল্টো দিকে দৌড়াতে লাগল । ভুতটাও গাড়ি নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করল । এক সময় গাড়ির ধাক্কায় শেলী উল্টে পড়ে গেল রাস্তার উপর । ভুতটা বাইরে বেরিয়ে শেলীর দূরবস্থা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল । শেলী ভয়ার্ত গলায় চিৎকার করে বলল, `তুমি কেন আমাকে মারতে এসেছ ?` বিকট কণ্ঠে ভুতটা বলল, `আমি এই বাড়িতে কাউকে থাকতে দেব না ।` কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে গাড়িতে উঠে ভুতটা শেলীর গায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দিল । তারপর হাসতে হাসতে অদৃশ্য হয়ে গেল বাতাসের মধ্যে । পড়ে রইল শেলী রোজালীনের রক্তাক্ত বিকৃত লাশ ।

নিয়তি - By আহমেদ মামুন

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Thursday, September 8, 2011 at 11:26pm
এক.
জেবা। বয়স ২১।
বললেন ডা. মহিত কামাল স্যার। প্রখ্যাত মানষিক রোগ বিশেষজ্ঞ। এখন আমি তার চেম্বারে। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি মিষ্টি করে হেসে বললেন, আপনার সমস্যা কি?
কি ভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না।
যেখান থেকে তোমার বলতে সুবিধা হয়। শুরু করো। তুমি করে বললাম রাগ কর নায় তো?
না, স্যার।
তাহলে শুরু কর।
স্যার আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।
কি দেখতে পাও।
স্যার আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।
কতদিন ধরে?
জানি না।
স্বপ্নে দেখ না জেগে জেগে দেখ?
স্বপ্নে না, জেগে থাকলে দেখি। সব সময়ই দেখি না হঠাৎ হঠাৎ।
হঠাৎ হঠাৎ? রাতে ঘুম হয়?
পৃথিবী সব মানষিক রোগ বিশেষজ্ঞ এই একটা প্রশ্ন দিয়ে সব উত্তর পান। যদি বলি ঘুম ঠিক মতো হয় তাহলে তিনি হতাশ হবেন। কারণ আমার কোন মানষিক রোগ নেই। সত্যি কথা বলতে আমার ঘুমের সমস্যা নেই। ঘুমের জন্য প্রতিদিন মায়ের বকুনি খাই । আমি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা কুমিড়ের মতো বিছনায় পড়ে ঘুমাতে পারি।
স্যার আমার ঘুম নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
ও, হ। তুমি যেহেতু ভবিষ্যৎ দেখ বলতো আমার ভবিষ্যৎ কি?
আমি তো বলেছি হঠাৎ হঠাৎ দেখি।
চেষ্টা করে দেখ।
আমি চেষ্টা করলেও পারি না।
শেষ বার কত দিন আগে দেখেছ?
পাঁচ দিন আগে।
কি দেখেছ, বিস্তারিত বল?
আমাদের বাড়ি মিরপুর। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। মিরপুর ১নাম্বার বাসস্টপে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি থামে। একদিন কাস শেষে বাড়ি ফিরছি। সাথে আমার দুই বন্ধু মিনহাজ, হুমায়ূন।
হুমায়ূন কি শুধুই বন্ধু?
ও আমাকে..। স্যার আপনি বুঝতে পারলেন কি ভাবে?
তুমি হুমায়ূন নামটি উচ্চারণ করে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললে। ওসব থাক আমরা মূল কথায় ফিরে আসি।
মিরপুর ১নাম্বার বাসস্টপে একটা ওভারব্রিজ আছে। হঠাৎ আমি চোখের সামনে ভাসতে দেখি মিনহাজ রাস্তা পার হচ্ছে ওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে। একটা নীল মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ও রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। আমার সাদাজামা রক্তে লাল হয়ে গেছে। আমি রাস্তার মাঝে মিনহাজের পাশে বসে কাঁদছি। নিজেদের আবিস্কার করলাম ওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি আমরা। আমি মিনহাজের জামা টেনে ধরলাম। সাথে সাথে একটা নীল মাইক্রোবাস এসে মিনহাজকে চাপা দিয়ে চলে গেল। আমি ছিটকে পড়লাম। মিনহাজ আমার সামনে ছটফট করছে। রক্তে রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে কাঁদছি। মিনহাজকে দ্রুত একটি প্রাইভেট কিনিকে নেওয়া হলো। কতর্ব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।
আচ্ছা এমন হতে পারে না। ঘটনাটি ঘটার পর তোমার মনে হয়েছে তুমি আগে দেখেছিলে?
তাহলে আমি মিনহাজের জমা শক্ত করে চেপে ধরব কেন?
মেয়েরা এম্নিতেই রাস্তা পার হওয়ার সময় কাউকে না কাউকে ধরে পার হয়।
সেটা সত্যি কিন্তু মিনহাজকে আমি শক্তা করে চেপে ধরেছি। যেন ও থেমে যায়। ওর জামার একাংশ ছিড়ে আমার হাতের মধ্যে রয়ে গিয়েছিল।
আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি। আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। বরিশাল মেঘনা নদীর তীরে আমার জন্ম। বরিশালে জায়গা জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে ভাই ভাইকে খুন করে। আমাদের গ্রামে এক ছোট ভাই বড় ভাইকে বুকের উপর চাকু দিয়ে কোপ দিয়ে হত্যা করল। বড় ভাইয়ের লাশ হাসপাতালের বারান্দায় চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হল। আমার মনে আছে আমি লাশ দেখতে গেছি। একজন এসে বুকের কাপড় সরিয়ে লাশ দেখাল। বুকের উপর একটা কালচে গর্ত। বাস্তবতা হলো এই লাশ আমি দেখিনি। হাসপাতাল ছিলো আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় পনের কিলোমিটার দূরে। আমার মা লাশ দেখতে গিয়েছিলেন। আমি ছোট এই জন্য সাথে নিয়ে যাইনি। হয়ত লাশ দেখে ভয় পাবো এই জন্যও হতে পারে। অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি লাশ দেখেছি। এখন তুমি কি বলবে যে আমি বাসায় বসে দূরে ঘটনা দেখতে পাই।
কিন্তু স্যার আমার ক্ষতেরেই বিষয়টা ভিন্ন!
দেখ মৃত্য হত্যা দূর্ঘটনা সবই ঘটনা। জগত সংসারের নিয়ম। কিন্তু মানব মন এসব আশা করে না। তবুও ঘটে। মনের বিপরিত ঘটনা মনকে বিশৃঙল করে দেয়। ফলে এর একটা প্রতিক্রিয়া মানুষে স্মৃতিতে অভিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই অভিক্রিয়া একেক জনের েেত্র একের রকম। দেখবে কোনে দূর্ঘটনা ঘটলে মেয়েরা বলে এখানে আসার আগে আমার মনে হয়েছিল একটা বিপদ হবে। তখন কেন যে বাড়ি থেকে বের হলাম। এটা সব মেয়েদের ক্ষেতেেত্রই বেশি হয়। তুমি কি তাকে বলবে তারা ভবিষ্যৎ দেখেছে।
স্যার এটা সত্যি তো অনেক মানুষের অতিরিক্ত মতা থাকতে পারে।
তুমি দাবি করছ তোমার অতিরিক্ত মতা আছে। যাক আমি তোমাকে আমার সেলফ ফোন নাম্বাটা দিচ্ছি। আবার যখন দেখবে আমাকে জানাবে। আমি সময় আর ঘটনা লিখে রাখব। দেখি ঘটে কিনা!
স্যার তার কার্ড বের করে হাত দিলেন। আমি কার্ড নিয়ে বের হলাম।

দুই.
কলাভবনের সামনে বসে আছি। অপরাজেয় বাংলার সামনে দিয়ে একটি মিছিল যাচ্ছে। বেশ বড় মিছিল। আমার চোখের সামনে ভাষছে মিছিল জসীম উদ্দিন হলের সামনে। সেখানে মিছিল দুইভাগস হয়ে যায়। একভাগ নিচে থাকে। আরেক ভাগ তিন তলায় উঠে যায়। তিন তলা থেকে তারা একটি ছেলেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। নিচে দাড়িয়ে থাকা ছেলেরা রড হকিস্টিক গজারি নিয়ে রেডি ছিল। তারা ছেলেটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
আমি সেলফোনে মোহিত কামাল স্যারকে সব বললাম।
সে বলল, মিছিল এখন কোথায় আছে?
এখনো অপরাজেয় বাংলায়।
আর কিছু?
যে ছেলেটিকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে তাকে নিচের ছেলেরা পিটিয়ে মেরে ফেলবে। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হবে। স্যাররা গিয়ে ডাক্তারকে বলবেন লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাচিয়ে রাখতে। কারণ আজ মৃত্যুর সংবাদ ক্যাম্পাসে পৌছলে বড় ধরনের গন্ডোগোল হবে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে হল ত্যাগের নোটিশ দেওয়া হবে।
এসব তো একজন ছাত্র মারা গেলে প্রতিবারই হয়ে থাকে।
মনে পড়েছে। যে ছেলেটি মারা যাবে তার নাম আজাদ। পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হবে। স্যাররা ইচ্ছা করে ছেলেটিকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে শুক্রবার পর্যর্ন্ত রাখবেন। তারপর ক্যাম্পাস খালি হলে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হবে। শুক্র বার কাজটি করা হবে। কারণ সেদিন ক্যাম্পাস থাকবে খালি।
আচ্ছা জেবা আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খবর রাখব। তুমি লèী মেয়ের মতো বাড়িতে চলে আস।
স্যার আমার কিছু হবে না। হলে আমি দেখতাম।

তিন.
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বসায় বসে আছি। হাতে পত্রিকা। সেখানে আজাদের দুটি ছবি ছাপা হয়েছে। একটা হাসপাতারের বেডে। লাইফ সাপোর্ট পরা। আরা একটি ওর জানাজার দৃশ্য। শ্রক্রবার খালি ক্যাম্পাসে স্যাররা জানাজা পড়াচ্ছেন। এমন সময় ডাঃ মোহিত কামাল স্যার ফোন করলেন। বললেন আমার যদি বিশেষ কাজ না থাকে তাহলে দপুর দুটার পর তার সাথে দেখা করতে। আমারও বিশেষ কাজ নেই। স্যারের বাসায় একজন লোক বসে আছেন। গায়ের রং কালো। বয়স পঞ্চাশের শেষ কোঠায় হবে। হাসি খুশি। তাকে কোথায় জনি দেখেছি। মনে পড়ছেনা। মনে করার চেষ্ট করছি। তখন মোহিত স্যার বললেন, আমার শিক। হেদায়েতুল ইসলাম।
আমি তাকে চিনতে পারলাম। অনেক বার টিভিতে দেখেছি তাকে। হেদায়েত স্যার বললেন,বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ তাই না?
আমি বলাম, জ্বি।
আমি পেপারে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যায় অনিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। তাছাড়া তোমার কথা আমাকে মোহিত বলেছে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। তবে শুক্রবার যখন ছেলেটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হল। তখন বিশ্বাস হল।
মোহিত স্যার বললেন, আমার কাছেও বিষয়টা প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। কিন্তু এখনো বুঝতে পারছি না। কি করে ভবিষ্যদ্বাণী অরে অরে সম্ভব হয়।
হেদায়েত স্যার বলল, স্টিফেন হকিং এর মতে ভবিসত্যত হলো অতীতের মতোই একটি ঘটনা। আমারা যেমন অতীতকে পাল্টাতে পারিনা তেমন ভবিস্যতকেও পাল্টাতে পারব না। ভবিস্যাত হলো পূর্ব নির্ধারিত একটা বিষয়। আধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত। সব পূর্বনির্ধারিত? আমার উত্তর হ্যা। কিন্তু উত্তরটা না হতে পারে কারণ কি পূর্বনির্ধারিত সেটা আমরা কোনদিনই জানতে পারব না। জানতে পারলে তো আর পূর্বনিধারিত থাকল না। মোট কথা আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী করার দেখার মতা নেই তাই বলি ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তবে কেউ যদি ভবিষ্যৎ দেখতে পায় তাহলে ভবিষ্যৎ বলতে পারবে।
আমি বললাম, স্যার আমার কি সেই মতা আছে?
থাকতেও পারে। একশ কোটি মানুষের মধ্যে একজনের এই মতা থাকতে পারে। তাহলে পৃথিবীর ছয়জনের এই মতা আছে। তুমি হতে পারে ছয় জনের একজন। চীনে এক মেয়েকে পাওয়া গেল। সে তার ডাক্তার বাবার পাশে বসে রুগির কোথায় হাড় ভেঙেছে বলে দিতে পারে। এই মতা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। শেষে একদল বিজ্ঞানী পরীাকরে দেখলো মেয়েটার চোখ থেকে এক্স-রে বের হয়। তাই সে মাংশের ভেতরের অংশ দেখে। এক্স-রে মতো একটা শক্তিশালী রেডিয়েসন মানব চোখ দিয়ে বের হওয়া অসম্ভব ঘটনা। তবে এটা বাস্তবে ঘটেছে। এটা মেয়েটার একটা অতিরিক্ত মতা। তোমারও হয়তো একটা অতিরিক্ত মতা আছে। তবে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু প্রামাণ করাটা হবে অনেক কঠিন।
মোহিত স্যার বলল, স্যার আমাদের ধর্মেও বলা হয়েছে তোমাদের ভবিষ্যতকে আমি তোমাদের হাড়ের সাথে আটকে দিয়েছি। অর্থাৎ আমাদের ভবিষ্যতটা হলো একটা পূর্বনির্ধারিত এবং অলঙ্ঘনিয়। হাড়ের মতো কঠিন ভাবে আটকে আছে।
হেদায়েত স্যার বলল, তুমি কি শুধু দূর্ঘনা দেখ না সুসংবাদও দেখ।
আমি জবাবে বললাম, কখনোই সুসংবাদ দেখি না।
তুমি দেখার পর বদলে দেবার চেষ্টা কর না?
চেষ্টা করেছি। কিন্তু বদলাতে পারি না। একদিনের ঘটনা। আমাদের পাশের ফাটে একটা মেয়ে থাকে। আমার মতোই বয়স। আমার সাথেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আমি রয়সায়ন বিজ্ঞানে আর ও ইতিহাসের ছাত্রী। নাম তানজিলা। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে এক ইতালি প্রবাসী ছেলের সাথে। আমাদের পাশের মহল্লার এক ছেলের তানজিলার সাথে রিলেশন ছিল। ওরা একজন অপর জন ভালোবাসতো কি না আমি তখন জানতাম না। তানজিলা খাটে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছে। আমি ওর পাশে বসে একটা বই পড়ছি। তানজিলা আমার হাত টান দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, শোন আমাদের মদন আলাউদ্দিন কি বলে জানিস? আমার বিয়ে হলে সে আত্মহত্যা করবে। এখনি তার হাত ধরে পালাতে হবে! তানজিলা ওর মোবাইল লাউড স্পিকারে দিয়ে বলল। গধাটায় এক থেকে একশ পর্যন্ত গুনবে। এর মধ্যে রাজি হতে হবে। নয়তো সে ছাদ থেকে লাফ দিবে! আমরা শুনছি আলাউদ্দিন গুনছে। একুশ, বাইশ, তেইশ.....। আমার চোখে ভাসছে আউদ্দিন ছাদ থেকে লাফ দিচ্ছে। পীচ রাস্তায় পড়ে তার মাথাটা থেতলে গেল। একটা রক্তের ধারা বয়ে গেল পীচ রাস্তার উপর দিয়ে। আমি মরিয়া হয়ে বললাম, তুই বল রাজি। আমার কথা শুনে তানজিলা ভড়কে গেল। সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল আলাউদ্দিন আমি রা...। তানজিলা আমার চোখের সামসেন মোবাইলফোন ধরে বলল, নেটওয়ার্ক ফেইল। আমি অন্য কম্পানি মোবাইল ফোন ব্যাবহার করি। আমি আমারটার ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখি আমারটাও নেটওয়ার্ক নাই। আমি তখন তানজিলাকে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসলাম। একটা রিকসা নিয়ে আলাউদ্দিনের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি একদল লোক জটলাপাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখি যা আসঙ্কা করছি তাই ঘটেছে। আলাউদ্দিনের নিথর দেহ পড়ে আছে পীচ রাস্তায়। একটা রক্তের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে।
মোহিত স্যার বলল, তাহলে কি স্যার ও বিপদের সময় নীরব দর্শকের মতোই থাকবে?
সেটাই প্রকৃতি চায়।
বুঝলাম না?
এখানে আলাউদ্দিন মারা গেছে। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনার সাথে পৃথিবীর সব মানুষের সম্পর্ক রয়েছে। আলাউদ্দিনকে কবর দিতে গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়েছে। নিশ্চই একটা এ্যম্বুলেস ভাড়া করা হয়েছে। এতে এ্যম্বুলেসের ড্রাইভার ভাড়ার টাকা পেয়েছে। মালিক টাকা পেয়েছে। তেল নেওয়ার জন্য প্রেট্রল মাম্প মালিক টাকা পেয়েছে। পেট্রল মালিক এই টাকা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রেট্রল কিনবে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের খনিতে আমেরিকার লোক কাজ করে। আমেরিকা আবার আফ্রিকার কালো মানুষদের অর্থ সাহায্য করবে। যদিও আলাউদ্দিন দেশের অখ্যাত একটা ছেলে। অথচ তার সাথে সম্পর্কিত সৃথিবীর সকল মানুষ। পৃথিবীর সব মানুষ যদি একটা পুকুরের বাসিন্দা হয় প্রতিটি ছোট বড় ঘটনা হলো এক একটা ঢেউ। পুকুরের মাঝে ঢিল ছুড়লে যেমন সারা পুকুর ছাড়িয়ে পড়ে। ঘটনাগুলোও সবাকেই আলোড়িত করে। এখন যদি ও আলাউদ্দিনকে বাচিয়ে দেয় তাহলে পৃথিবীর সবার ভাগ্যকে বদলাতে হবে। এখন একজন আলাউদ্দিনের জন্য প্রকৃতি কখনো এতবড় দায়ভার নিবে না। আর প্রকৃতি কাউকে সেই সুযোগও দিবে না।
তাহলে তো জেবা আমাদের থেকে অনেক বেশি দূর্ভাগা। সে তার চোখে সামনে নীরব দর্শকের মত দূর্ঘটনাগুলো দেখবে। একবার ঘটার আগে একবার ঘটার পর।
সেটা আমি জানি না। তবে এটুকু জানি। প্রকৃতি তার নিয়ম মতোই চলবে।

চার.
ঈদের ছুটি। আমি গ্রামের বাড়িতে যাব। আমি আর ছোট মামা এক সাথে যাব। মামা দু'টো টিকিট যোগার করেছেন। আমরা উঠেছি আসাদ গেট থেকে। এরপর গাড়ি গাবতলি বাস স্টেশন হয়ে চলে যাবে আরিচার দিকে। সাধারণত আমার গাড়িতে ঘুম হয় না। হেডফোনে গান শুনছি। হুমায়ূনের ফোন আসে।
হ্যালো তুই কোথায়।
গাড়িতে।
আমি গাবতলী স্টেশনে আছি। অনেক চেষ্টা করেছি। কোন টিকেট যোগাড় করে পারি নায়।
না পারলে বসে আছিস ক্যান। বাড়ি চলে যা।
আশায় আছি। আশায়ইতো মানুষ বেচে থাকে। কোন যাত্রি না আসলে। তার জায়গায় চলে যাবো। কাউন্টারে আমার দেশি ভাই আছে। সে বলেছে একটা ব্যাবস্থা করে দিবে।
বদ মতলব নিয়ে অপে না করে বাড়ি চলে যা।
আচ্ছা রাখি। দোয়া করিস কেউ যেন এসে গাড়ি মিস করে।
আচ্ছা রাখি।
আমি ফোন বন্ধ করে গান শুনছি। মামার ফোন এসেছে। সে কথা বলছে। ফোন রেখে বললল, মামনি, আমার অফিসের একউন্স সেকশনে গোলমাল হয়েছে। আজ মনে হয় যেতে পারব না।
মামা ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নেমে গেল। তন্দ্র এসেছে চোখে। চোখ বন্ধ করেছি। দেখি আমাদের গাড়িটা একটা ফিলিং স্টেশনে দাড়িছে। সিএসজি নেওয়ার জন্য। হুমায়ূন আমার হাত ধরে আছে। এমন সময় প্রচন্ড শব্দে গাড়ি কেপে উঠল। তার সাথে কুন্ডলি পাকিয়ে হলুদ আগুনে শিখা উপরে উঠছে। সমস্ত গাড়ি এক সাথে জ্বলে উঠল। আমি কেপে উঠলাম।
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে হুমায়ূন দাড়িয়ে । হুমায়ূন বলল, জেবা! তুই এই গাড়িতে।
বলার মতো শক্তি আমার গায়ে নাই। আমি শুধু তাকিয়ে আছি। হুমায়ূন আমার হাত ধরে ঝাকি দিল। আমি ভয়ে ভয়ে বাহিরে তাকালাম। গাড়িটা একটা ফিলিং স্টেশনে দাড়িয়ে আছে। গ্যাস নেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ হলো। আমি দেখি আমাদের ছেড়ে আরেকটা গাড়ি যাচ্ছে। সেই গাড়ির জানালায় আমি বসে আছি। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছি নিজেকে। সমাপ্ত

।। একটি অন্যরকম গল্প ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, September 10, 2011 at 10:47pm
ভূতুড়ে গল্পের পেইজে ভালোবাসার গল্প দেয়ার জন্য প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।। যারা গল্পটি পড়বেন তারা দয়া করে পরবর্তীতে "ভালোবাসার গল্প ভূতুড়ে পেইজে কেন??" "এই গল্প দেয়ার মানে কি??" "ভাই, ভুতের গল্প চাই।।" এই টাইপের কমেন্ট করবেন না।। আগেই ঠিক করে নিন আপনি গল্পটি পড়বেন কি পড়বেন না।। না পড়লে সমস্যা নেই, তবে উটকো কমেন্ট পরিহার করুন।। আর আজকে কিছু সমস্যার কারনে ভূতুড়ে গল্প দেয়া গেলো না।। আশা করি, আগামীকাল থেকে আবার নিয়মিত গল্প পাবেন।। ধন্যবাদ।। অজুর বদনা হাতে তুলে সাপটা দেখতে পেল মেঘনা। বদনার আড়ালে মেটে রঙের ছোট্ট বিষধর কি করছিল কে জানে! বিপদ বুঝে ফণা তুলে চক্র গেড়ে
বসলো সে। দুলতে শুরু করল ছোবলের আকাঙ্খায়। সাপ দেখে ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে এলেও হাত থেকে বদনা খসে পড়লো না মেঘনার। বুকও
কাঁপলো না। ফিসফিস করে সে বলল--কামড়াবি নাকি, আয়, দেখি তোর বিষে কত জ্বালা! গ্রাম-জীবনের সবখানে সাপে-মানুষে সহবাস। মানুষ সাপকে এড়িয়ে চলে। সাপও মানুষকে। সাক্ষাত
সংঘাত হয় খুব কম। একপক্ষ ছুটে পালায়। সংঘাত মানেই তো অনিবার্য মৃত্যু একজনের। গোরস্থান থেকে রান্নাঘর, সাপের চরাভূমি সবখানে। মানুষের চোখের আড়ালে থাকতে সদা-সচেষ্ট
এই সরীসৃপ। বিপদ বুঝলেই ফণা তোলে। আত্মরক্ষার তাগিদে ছোবল মারে। তেমন-ই এক জীব
মেঘনার কথা শুনলো কিনা কে জানে। ফণা নামিয়ে সুড়সুড় করে চলে গেল কলতলার দিকে।
বারান্দায় মোড়ার উপরে বসে মেঘনার দাদি সিরাজুন্নেসা। মেঘনার চমকে পিছিয়ে যাওয়া তাঁর
মোটা ফ্রেমের চশমায় ধরা পড়েছে। বললেন--কি হলো মেঘনা? মেঘনা জানে, সাপের কথা শুনলে দাদি চেঁচিয়ে লোক জড়ো করবেন। শ্রাবণের মেঘের মতো
মানুষের মাথার ভিড়ে হাজারো সম্ভাবনা তথা প্রতিকারের বৃষ্টি হবে। অত্যুৎসাহীদের বে-পরোয়া
সন্ধানে মেঘনার বহু যত্নে তৈরী করা ফুলের বাগান তছনছ হবে। গর্তের গোলকধাঁধা খুঁড়ে সাপ পাওয়া না গেলেও কিছু বিষাক্ত-দৃষ্টি মেঘনাকে জর্জরিত করবে।
ওদের হাবভাব দেখে মনে হয়, মেঘনার আহ্বানে জীবন দিতে পিছ-পা হবে না কেউ।
অস্বস্থিকর সেই পরিস্থিতি এড়াতে মেঘনা মৃদু হেসে বলল--কিছু হয়নি দাদিজান, বদনা নিতে
গিয়ে পা পিছলে গেল। বদনা নিয়ে কলতলা গেল মেঘনা। সিরাজুন্নেসাকে অজুর পানি দিয়ে অজু করবে সে। সেই
অবসরে যদি সাপটার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে যায়, তখন নিশ্চয় ছোবল মারতে ভুল করবে না সে। তা
যদি মারে কাউকে কিছু বলবে না মেঘনা। নামাজ শেষে না হয় বলবে--কি-সে যেন কামড়ালো
দাদিজান!

সিরাজুন্নেসার আর্তনাদে ছুটে আসবে পাড়ার ভালমন্দ সকলে। পাশের বাড়ি থেকে ফোন হবে।
দেড়শো টাকা ভাড়ার প্রত্যাশায় আঠারো কিলোমিটার দূরের মহুকুমা হাসপাতাল থেকে ছুটে
আসবে অ্যাম্বুলেন্স। ততক্ষণে নিশ্চয় আজরাঈলের ডানার শব্দ শ্রুতিময় হবে। কলতলার আশেপাশে সাপের নামগন্ধ নেই। কলের পরিতক্ত পানিতে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠা গাছগুলি মৃদু বাতাসে তিরতির করে পাতা দোলাচ্ছে। ফুলের পাপড়ির ঝিরিঝিরি কাঁপন দেখে মেঘনার মনে পড়লো, দু-বছর আগে অনার্স গ্রাজুয়েট হয়েছে সে। ততদিন এই গাছগুলি সুবাস ছড়াচ্ছে। তবু একটি মালা গাঁথার খেয়াল হয়নি তার। মগরিবের নামাজ পড়ে স্টোভে চা তৈরী করলো মেঘনা। সিরাজুন্নেসা মাড়ি-সম্বল। মুড়ি, চায়ে
ভিজিয়ে চামচে তুলে খান। এটিই তাঁর নৈশ আহার। খেতে-খেতে তিনি বললেন--বেসিক না
কি-যেন ট্রেনিং দিবি বলছিলি, তা কর না একটা দরখাস্ত। জমিন-মোড়ল ক'দিন ধরে ঘুরছে,
ভাবছি শামপুকুরের ডাঙাটা ওকেই বেচবো। মেঘনার ঠোঁটের পাপড়িতে হাসির রোদ। নিস্প্রভ ত্বকের আড়ালে সিরাজুন্নেসাকে বিস্ময়কর উজ্জ্বল
মনে হয় তার। দু-সপ্তাহ ধরে বিভিন্নভাবে মেঘনাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছেন তিনি। আশ্চর্য
মনের জোর এই বৃদ্ধার। কত ঝড় তাঁর জীবনময়। নুইয়ে গেছেন, তবু ভেঙে পড়েননি কখনও! মেঘনার হাসিতে অশনি-সংকেত অনুমান করলেন সিরাজুন্নেসা। মুখের ভাঁজগুলি আরো গভীর হলো
তাঁর। তবু স্নিগ্ধ-স্বরে বললেন--নামাজ পড়িস আর এটা ভাবতে পারিস না, আল্লাহপাক যা করেন,
আমাদের ভালোর জন্যে করেন। --কে বললো ভাবছি না? এই-রে, হেঁশেলে আবার বেড়াল ঢুকলো, বিল-বিল-বিল! বলতে-বলতে
ছুটে রান্নাঘরের দিকে গেল মেঘনা। সিরাজুন্নেসা বোঝেন, প্রসঙ্গ এড়াতে ছুটে পালালো মেঘনা। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয় তাঁর।
সারা সন্ধ্যা লন্ঠনের আলোয় ঘর গুছিয়ে গেল মেয়ে। বইপত্তরের ধুলো ঝেড়ে তাকে রাখলো। জামা-
কাপড় গুছিয়ে রাখলো আলনায়। চুপচাপ সব দেখলেন সিরাজুন্নেসা। জন্মলগ্নে বাপ মরেছে,মেয়ে তাই অত অভিমানী। কিন্তু তোর
বাপ যে আমার পেটের ছেলে। মা হয়ে তার মরণ আমি সয়েছি, তুই কেন সয়বি না? এশার নামাজ পড়ে হেঁশেলের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেঘনা। বাসনমাজা, ধোয়া, সব কলতলার
অন্ধকারে। কতবার লন্ঠনের কথা বললেন সিরাজুন্নেসা। মেয়ে কানে তুললো না। সিরাজুন্নেসা মানছেন, তিনি অন্যায় করেছেন। আজ থেকে বিশ বছর আগে তিনি নিজের মেয়ের
হাত ধরে বলেছিলেন, মেঘনাকে তোর আলফাজের বউ করিস মা। সে-মেয়ে বেঁচে থাকলে, তার কাছে জবাবদিহি করতেন সিরাজুন্নেসা। এমনকি হাঁটাচলার ক্ষমতা
থাকলে, আলফাজকেও ছাড়তেন না তিনি। মুখে স্যান্ডেল ছুঁড়ে মেরে বলতেন, তোর মনে যদি
এই ছিল, তবে সেদিন আমাকে কথা দিয়েছিলি কেন? প্রাচীন বনস্পতির মতো এ-বাড়িতে মাটি আঁকড়ে পড়ে আছেন সিরাজুন্নেসা। চোখের সামনে কত
মহীরুহ-পতন দেখলেন! সব সয়তে হয় মেঘনার মুখ-চেয়ে। জন্মলগ্নে বাপ-মরা, শৈশবে মা-হারা
মেয়ে। সিরাজুন্নেসা ছাড়া কেউ নেই তার। বারান্দায় বিছানা পাতছে মেঘনা। এখনও সে বাচ্চা মেয়ের মতো সিরাজুন্নেসার গলা জড়িয়ে
ঘুমোয়। আলফাজের মাস্টারণী বউ কি মেঘনার চেয়ে সুন্দর? অনেক মেয়ে দেখেছেন সিরাজুন্নেসা,
মেঘনার মতো স্নিগ্ধতা কোথাও নজরে পড়েনি তাঁর। মশারী খাটিয়ে সিরাজুন্নেসাকে বাতরুমে নিয়ে গেল মেঘনা। নিজেকে বড় বোঝা বলে মনে হয়
সিরাজুন্নেসার। তাঁর পেছনে কত সময় এবং শ্রম দিতে হয় মেঘনাকে। তবু মেয়ের মুখভার হয় না।
আলফাজ নামের শিক্ষিত-শয়তানটা মানুষ চিনলো না। সহকর্মী শিক্ষিকাকে রেজিস্ট্রি-ম্যারেজ
করে সে নিশ্চয় সুখী হয়েছে। কিন্তু মেঘনার স্বপ্নদেখা চোখে তা যে কতবড় আঘাত সিরাজুন্নেসা
টের পাচ্ছেন। মেঘনা বরাবর চাপা এবং মৃদুভাষী। তবু তো কখনো-সখনো গুনগুনিয়ে উঠতো নজরুল-সংগীত।
এখন তা করে না। যন্ত্রের মতো কাজ করে যায়। প্রয়োজন ছাড়া একটিও কথা বলে না। কথা না
বলা মানে মনের ভেতর অনর্গল কথা বলা। মেয়ের দোষ কোথায়, আশৈশব সে শুনে আসছে, আলফাজের সঙ্গে বিয়ে স্থির হয়ে আছে
তার। প্রতিদিন আঠারো কিলোমিটার যাওয়া-আসা করে কলেজ করেছে সে। কষ্টার্জিত সেই
বিদ্যার বুঝি দাম নেই, বৃথা শ্রম সব? বাথরুম থেকে সিরাজুন্নেসাকে তুলে এনে বিছানায় বসিয়ে ওষুধ দিলো মেঘনা। বললো--ওষুধটা
খেয়ে নিন দাদিজান। ওষুধ খেতে ইচ্ছে করে না সিরাজুন্নেসার। বাঁচার ইচ্ছে মরে গেছে তাঁর। তবু বেঁচে আছেন শুধু
মেঘনার মুখ চেয়ে। জমিজমা সব বর্গাদারের দখলে। তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে প্রতিবছর প্রাপ্য ধান আদায় করেন
সিরাজুন্নেসা। মেঘনা তা পারবে না। কিন্তু আজরাঈলেরও যে তর সয়ছে না। তাঁর ডানার শব্দ
স্পষ্ট শুনছেন সিরাজুন্নেসা। প্রতিদিন, প্রতিরাতে! আজরাঈলের ডানার শব্দে সন্ত্রস্ত সিরাজুন্নেসা ঘটক ডাকছেন প্রতিদিন। তারা আসছে। জামাই-
আদরে খাওয়া-দাওয়া করছে। পকেট-ভর্তি রাহা-খরচ নিয়ে রওনা হচ্ছে। আর আসছে না।
বিয়ে স্থির হয়ে থাকা মেয়ের সমন্ধ ভেঙে গেলে বুঝি সে লগ্নভ্রষ্টা হয়? নইলে ওই ঘটকগুলোই
তো এতদিন কত ডাক্তার-মাস্টার-ব্যারিস্টারের ফটো এনে অনুনয়-বিনয় করেছিল। সব নাকচ
করেছিলেন সিরাজুন্নেসা। আলফাজ শুনেছে তা। মনে রাখেনি। ওষুধ খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন সিরাজুন্নেসা। লক্ষী-মেয়ের মতো মেঘনাও শুয়ে পড়লো তাঁর পাশে। মনেমনে হাসলেন সিরাজুন্নেসা। ইদানিং তিনি লক্ষ্য করছেন, মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় মেঘনা। আঙিনায় পায়চারি করে। ভয়ে শিউরে ওঠেন সিরাজুন্নেসা। বলেন--আর টহল দিতে হবে না। আমার কাছে আয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেব। কখন ঘুম আসবে টের পাবি না। লক্ষী-মেয়ের মতো আবার বিছানায় আসে মেঘনা। মেয়ের সুবুদ্ধি দেখে সিরাজুন্নেসার দমবন্ধ হৃৎপিন্ড আবার সচল হয়। সিরাজুন্নেসার এই উৎকন্ঠা আজরাঈলের ডানার চেয়েও তীব্র শব্দময়। এখনকার রাতগুলিতে
টুপ-টাপ্ শব্দে ঢিল পড়ে আঙিনায়। সিরাজুন্নেসা বোঝেন, মেঘনার সমন্ধ ভেঙে গেছে তাই
পাড়ার শয়তানরা পরখ করছে, মেঘনার মন ভেঙেছে কিনা। ঢিলের কথা মেঘনা জানে। সে মুখটিপে হাসে। সিঁদুরের সব লাল তার গালে জড়ো হয়। দু-চোখে
খেলা করে উজ্জ্বল চাঁদ। বলে--ঢিল মেরে আমার মাথা কেউ ফাটাতে পারবে না দাদিজান,
আপনি মিছিমিছি চিন্তা করছেন। বুক থেকে ঢেউয়ের পাহাড় নেমে যায় সিরাজুন্নেসার। তবু প্রতি রাতে শোবার আগে তিনি
মোনাজাত করেন--আমার নাক-চুলের সম্মান তুমি রেখো-গো মওলা ! সিরাজুন্নেসার নিরুচ্চার মোনাজাত শুনতে পায় না মেঘনা। সে শোনে তাঁর নাক-ডাকার শব্দ।
অন্য রাতগুলির মতো মশারীর বাইরে বেরিয়ে আসে সে। আলুথালু খোঁপা খুলে কুঞ্চিত চুলের
প্লাবন ছড়িয়ে দেয় পিঠের উপর। আকাশে চাঁদ নেই। তারা নেই। ফুলের সুবাস ছড়ানোর মত একটুখানি বাতাসও নেই। তবু কিসে
যেন টানছে মেঘনাকে। নেশাগ্রস্থ মানুষের মতো নিথর প্রকৃতিতে কান পাতে মেঘনা। তার মন বলছে, আজরাঈল আসছে।
কেমন তার ডানার শব্দ? কলতলার পাশে সযত্নে- লালিত বাগানের মধ্যে হাঁটছে মেঘনা। ছোট ফুলগাছ-গুলি ছুঁয়ে-ছুঁয়ে
সবুজ-সজীবতা পরখ করে সে। পাপড়ির স্নিগ্ধতা গাল-ঠোঁটে অনুভব করতে-করতে মনের ভেতরের
মেঘনা বলে--সাপটা এখন কোথায়? সাপের কামড়ে মৃত্যু মানে তো জান্নাতী। মেঘনার মৃত্যু কোন পর্যায়ে পড়বে, ইচ্ছামৃত্যু নাকি অপমৃত্যু?
পোস্ট-মর্টেম হবে? আইবুড়ো মেয়ে মারা গেলে তো অনেক গুঞ্জন ওঠে। মেঘনার অকালমৃত্যু
কলঙ্কের গন্ধ ছড়াবে বুঝি? যে সাপের খোঁজে মেঘনা দিশেহারা। সে তার উপস্থিতি বুঝিয়ে গেল সিরাজুন্নেসাকে।
কাশতে-কাশতে সিরাজুন্নেসা ডাকলেন--মেঘা দ্যাখ তো বুবু কিসে যেন কামড়ালো, নাকি
খুয়াব দেখলাম কে জানে? মেঘনা ছুটছে। তার হৃদয়ের সব গতিবেগ পায়ের তলায়। বারান্দায় জ্বেলে রাখা লন্ঠনের শিখা
দপ্-দপ্ করছে। সেটি যেন হৃৎপিন্ড হয়ে গেছে মেঘনার! মেঘনার দৃঢ়-বিশ্বাস, তার ডাকে সাড়া দিয়েছে সাপ। বিছানায় গেছে। মশারীর শাসন অগ্রাহ্য
করে ছোবল মেরেছে। অবুঝ সরীসৃপ খেয়াল করেনি, তরুণী নয়, লোলচর্ম এক বৃদ্ধার পা সেটি।
আর্তনাদ করে উঠলো মেঘনা। পড়শীদের জমায়েত। টেলিফোন। অ্যাম্বুলেন্স। ভিড়ের মত মেঘ জমে গেছে আকাশেও। বিজলী
যেন মেঘনার হৃদয় হয়ে চমকায়। হাসপাতালের এমার্জেন্সী-তে ডিউটি-রত তরুণ ডাক্তারের উজ্জ্বল মুখে জড়ুলের মতো
হতাশা জমে উঠেছে। মেঘনাকে পাশে ডাকলো সে। বললো--সবরকম চেষ্টা করে দেখলাম,
উন্নতির লক্ষণ নেই। আপনি মানসিক ভাবে প্রস্তুত হোন। একটু আগেও মেঘনাকে কাছে ডাকছিলেন সিরাজুন্নেসা। নাকি বিকারে প্রলাপ বকছিলেন!
চোখের পাতা খোলার সে-কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। সারাজীবনের অপূর্ণ ঘুমের অভিযান যেন
মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরেছে সিরাজুন্নেসার চোখের পাতা। যে ঘুম তাঁকে একটু-একটু করে নিয়ে
যাচ্ছে চিরঘুমের দেশে। চাহারম হয়ে গেছে। পড়শী-মেয়েরা ফিরে গেছে নিজের-নিজের সংসারে। যে যখন ফাঁক পায়
খোঁজ নিয়ে যায়। এই কয়দিন মায়ের মতো মেঘনাকে আগলে রেখেছে ওরা। নিজেরা সিদ্ধান্ত
নিয়েছে, পালা করে রাতে এসে মেঘনার কাছে শোবে। মেঘনার সামনে উন্মুক্ত দিন। চোখ-মুখ, এলোচুলে এলিয়ে পড়েছে পড়ন্ত বেলার রোদ। ঠিক
যেন সিরাজুন্নেসার অস্থি-চর্মসার হাতের পরশ। কর্কশ তবু স্নেহে মায়াময়। কলতলায় হুটোপুটি করছে তিনটে কাক। এঁটোকাটার সন্ধানে তাদের তেড়ে যাচ্ছে দুটো কুকুর।
সিরাজুন্নেসার উপস্থিতিতে এই ' বেলেল্লাপনা' সম্ভব ছিল না। তাঁর গলার জোরে ঘাবড়ে যেতো
কাক-কুকুর, এমনকি মানুষও। মেঘনা শুধু জানে ভেতরের মানুষটি কত মোলায়েম ছিল। সে
আরও জানে, মেঘনাকে রক্ষা করতেই তিনি এঁটেছিলেন রুঢ়তার মুখোশ। সিরাজুন্নেসা নেই। তাঁর স্মৃতি ছড়িয়ে আছে এ-বাড়ির সবখানে। মেঘনার প্লাবিত চোখ-দুটি
সিরাজুন্নেসাকে খুঁজছে। অনর্থক সেই সন্ধানের সামনে এসে দাঁড়ালো হাসপাতালের সেই ডাক্তার।
আজরাঈলের মতো তার নিঃশব্দ উপস্থিতি মেঘনাকে চমকে দিলো। রুঢ়-স্বরে সে বললো-- আপনি এখানে? মেঘনার রুঢ়তায় তরুণ-ডাক্তার হতচকিত। পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখচোখের অপ্রস্তুত-ভাব মুছে ফেললো সে। সাবধানী উচ্চারণে বললো--আপনার মানে তোমার এখনকার
অবিভাবক কে, আমি তাঁর সাথে কথা বলতাম। ডাক্তারের উঁচু নাক টিয়াপাখির নাকের মতো বাঁকা। মাথার চুলে টাঁকের আভাষ। কুকুর এবং
কাকের দল তা দেখছে না। হঠাৎ নিজেকে মেয়েমানুষ মনে হয় মেঘনার। তবু স্পষ্ট উচ্চারণে সে
বললো--আমার অবিভাবক আল্লাহ, যান তাঁর সাথে কথা বলুন। একটানা কথা বলা নাকি টেনশনে ডাক্তারের চোখ ক্রমান্বয়ে বন্ধ হচ্ছিল এবং খুলে যাচ্ছিলো।
সে কাঁপা-স্বরে যা বললো তা হলো--আমি ওয়াশিম হায়দার, মহুকুমা হাসপাতালে আর মাস
ছয়েক আছি। বাপ-মায়ের একমাত্র সন্তান। তাঁরা নেই তাই নিজের বিয়ের কথা নিজেকেই
বলতে হচ্ছে। আমাকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি আছে? সাপটা কোথায় যেন ফোঁস করে উঠলো। মেঘনার পায়ে কাঁটার অনুভব। ঠোঁট একটু কাঁপলো।
তবু সে উচ্চারণ করতে পারলো--আমার বিয়ের বিষয়ে যা বলার তা আমার দাদিজান বলে
গেছেন, তাঁর অবর্তমানে আপনি আমার পড়শি-মায়েদের সাথে কথা বলতে পারেন।
-
-ধন্যবাদ। বলে মৃদু হাসলো ওয়াশিম। উচ্ছিষ্টের খোঁজে হয়রান কুকুর এবং কাকের দল। মেঘনার ফুলবাগানের একটি গাছ নড়ে উঠলো
যেন। মনেমনে সেখানে ঢিল ছুঁড়লো মেঘনা। তার বিশ্বাস, এই ঢিলে সাপটা মরবে।

।। কিছু অদ্ভুত ঘটনা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, September 9, 2011 at 10:55pm
প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের যেই ঘটনাটি বল তার প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই ছিলাম এবং ঘটনাটি সত্য।। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের ১২ তারিখ।। চট্রগ্রামের বিশাল সরকারী বাংলো বাড়িতে শুধু আমরা ৪ জন মানুষ।। আমি, ভাইয়া, আমার ছোট ভাগ্নে এবং বাবুর্চি।। বাকি মানুষজন, মা, বড় বোন, বাবা, এবং দুলাভাই আমার আরেকটা নতুন ভাগ্নির আগমন কে কেন্দ্র করে হসপিটালে ছিল।। বলা বাহুল্য, আমার আপুর একটি ছেলে হবার প্রায় এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন।। সেই সময়ে আপু যতদিন হসপিটালে ছিল তখন আমি এইচ, এস, সি এক্সামের প্রস্তুতি নিয়ে খুব বেস্ত থাকা সত্ত্বেও একমাত্র খালা হিসেবে ছোট্ট ১১ মাসের ভাগ্নে ফাহিমকে দেখাশোনা করছিলাম।। প্রথম দিকে ছোট বাবু দেখাশোনার ব্যাপারে আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করতাম।। এর প্রধান কারণগুলো ছিল- ১।
এতো বড় বাড়িতে আমরা ৩ জন মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম।। এক প্রান্তে কোনও বিপদ হলে অন্য প্রান্তের মানুষ টের পাবেনা এমন একটা অবস্থা।।
২।

আমি কখনো এর আগে এতো ছোট বাচ্চাকে সাথে নিয়ে একা ঘুমাইনি।। তাই কিছুটা অস্বস্তি কাজ করছিলো।।
যেহেতু আমার ভাগ্নে ফাহিম তখন অনেক ছোট, যে কিনা শুধু মাত্র কোনমতে কোনও কিছু অথবা কারো হাতের সাহায্য নিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়াতে পারে।। তাই প্রথম রাতে আমি ওকে বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ে জানলার সাথে লাগানো বিছানার দেওয়ালের দিকে আমার ও দেওয়ালের মাঝে শোয়াবো ঠিক করলাম।। কিন্তু এরপর সেই রাতে প্রচণ্ড ঝড় বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ঝড় হওয়াতে আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম।। কারন এই ভাবে যে ওকে জানালার পাশে শোওয়ানোতে রাতে ঝড়ের সময় বৃষ্টি এসে পড়তে পারে ওর গায়ে।। যাই হোক, সব দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে আমি মশারি টানিয়ে ভালো মতন গুজে দিয়ে ওকে নিয়ে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।। ঘরে কিছুটা বাইরের সিকিউরিটি লাইটের আলো এসে রুমে বিভিন্ন দেয়ালে আলো ছায়ার আভা ফেলল।। আমার চোখের রড এবং কোণ সেলগুলো আস্তে আস্তে সেই অন্ধকারের মৃদু আলোয় নিজেদের মানিয়ে নিলো।। তাই কিছু সময় পর আমি প্রায় প্রতিটা জিনিসই স্পষ্ট দেখতে শুরু করলাম।। আমি আমার পাশে উকি দিয়ে ফাহিমকে দেখলাম।। ও ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে নিশ্চিত হলাম।। এরপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।। হটাত রাত ৩ টার দিকে প্রচণ্ড বজ্রপাতের আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। স্বাভাবিক ভাবেই আমি আমার ঘুমন্ত ভাগ্নের দিকে হাত বাড়ালাম এবং ও ঠিক আছে কিনা বা ভয় পেলো কিনা বোঝার চেষ্টা করলাম।। কিছুটা ঘুম ঘুম চোখেই অনভব করলাম ও আমার পাশে নেই।। আমি তখন অস্থির হয়ে আরও সচেতন হয়ে ওকে খুঁজতে শুরু করলাম।। ওর বালিশ ফাঁকা।। ওয়াল ক্লথ, কাঁথা সব ঠিক থাক মতন পড়ে আছে, কিন্তু ও বিছানার কোথাও নেই।। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস না করতে পেরে পাগলের মত বিছানা থেকে নেমে বাতি জালানর জন্য প্রস্তুত হলাম।। যেই বাম পাশে ফিরলাম মাটিতে নামার জন্য অমনি আমার চোখ বিছানার পায়ার দিকে গেলো।। দেখলাম, ফাহিম ঠিক আমার পায়ের দিকে খাটের কিনারা ধরে মশারির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।। অথচ মশারি আগের মতই গুঁজানো।। বাইরের সিকিউরিটি লাইটের আলো জানালা দিয়ে ওর মুখে এসে পড়ছিল।। তাতে দেখলাম, ও স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। বরফের মত অদ্ভুত শীতল দৃষ্টি।। এই অবস্থা দেখে আমি কয়েক সেকেন্ড ভয়ে এবং ঠাণ্ডায় জমে গেলাম কিন্তু আল্লাহ আমাকে হটাত শক্তি দিলেন এবং আমি কোনও কিছু তোয়াক্কা না করেই প্রানেপ্রনে মশারি তুলে মেঝেতে নেমে ওকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে ফেললাম।। আর রুমের সমস্ত লাইট জ্বালিয়ে দিলাম।। সাথে সাথেই দেখলাম ও স্বাভাবিক বাচ্ছার মত চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।। আমি জোরে জোরে দোয়া পড়া শুরু করলাম আর ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম শক্ত করে।। এখানে একটু বলে নেই, যে আমার উচ্চতা খাটের উচ্ছতার প্রায় সমান।। তাই যখন আমি খাটে শুয়েছিলাম তখন আমাকে না ডিঙ্গিয়ে এতটুকুন বাচ্ছার পক্ষে নিচে নামা সম্ভব না।। আর তাছাড়া, মশারি উঠিয়ে নিচে নেমে আবার মশারি গুজে দেয়ার মতন উপযুক্ত তখন সে ছিল না।। সেই রাত্রিতে আমি আর ঘুমুতে পারিনি।। সারারাত লাইট জ্বালিয়ে রেখেছিলাম।। ওকে পাহারা দিচ্ছিলাম কিছুটা অস্থির চিত্তে।। ওর বাবা মাকে ব্যাপারটা বলেছিলাম কিন্তু এর মাঝে আর কোনোদিন এমন ওর সাথে হয়নি।। এরপর প্রায় ৫ বছর পরের ঘটনা।। আমি আর্কিটেকচারের স্টুডেন্ট তখন।। অনেক রাতে কমন রুম থেকে প্রোজেক্ট শেষ করে ঘুমুতে এসে দেখলাম ও আমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।। ছোট্ট বাবুর এতো আদরের ঘুম আর ভাঙ্গাতে ইচ্ছে হলনা।। তাই আমি ঘরের দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে, ডিম লাইট জ্বালিয়ে, এবং মূলবাতি নিভিয়ে ক্লান্ত হয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।। ওহ, বলে রাখা দরকার, ঐ রুমের দরজাটা দুই পাল্লার ছিল এবং ছিটকিনিটা দরজার উপরের অংশে ছিল।। মাঝ রাতে হটাত আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। সেই রাতেও ভয়ঙ্কর বৃষ্টি হচ্ছিল।। একদম সন্ধ্যা থেকে একটানা।। আমি পাশ ফিরে তাকালাম।। আজো সেই একই কাহিনী।। ফাহিম আমার পাশে নেই।। মুহুরতেই আমি দরজার দিকে চোখ দিলাম দেখার জন্য যে সেটা খোলা কিনা।। ফাহিম হয়তো টয়লেটে গিয়েছে।। কিন্তু না।। দরজাটা লাগানো।। আমি তখন উঠে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দরজার ছিটকিনিতে হাত রাখলাম।। সেটা আগের মতই বন্ধ।। খেয়াল করলাম, এতটুকুন ছেলে কখনই এতো উপরের ছিটকিনি নাগাল পাবে না।। আসে পাশে কিছু নেই যার উপর দাঁড়িয়ে ধরতে পারে।। আমার সাড়া শরীর অবশ হয়ে আসলো।। কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রাখলাম।। বিছানার পাশের ফ্লোরে দেখলাম, যদি আবার পড়ে-টরে যায় বিছানার পাশের ফাঁকা দিয়ে।। কিন্তু না, তাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।। আমি এবার ভয় পেয়ে ওকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলাম।। রুম পুরা ফাঁকা।। দরজা লাগানো।। আমি আর বেশি অস্থির হয়ে গেলাম এবং তন্ন তন্ন করে ওকে খুঁজতে লাগলাম।। মাথা ঠিক মতন কাজ করছিলো না হয়তো।। নইলে এতো বড় একটা ছেলে রুমে নেই দেখে নিশ্চয়ই পরে আর নাম ধরে ডাকতাম না।। অবশেষে আমি পাগলের মত শেষ সম্ভাব্য স্থান সোফার উপর রাখা বারান্দায় বৃষ্টিতে আধাভেজা একগাদা জমা করে রাখা কাপড় গুলো হাতড়ানো শুরু করলাম।। একটার পর একটা কাপড় মাটিতে ছুঁড়ে ফেলছি।। বিছানার চাদর, শাড়ি, অনেকগুল বড় বড় কাপড় মাটিতে ফেলার পর কাপড়ের গোছার নিচ থেকে হটাত খুঁজে পেলাম ফাহিমকে।। তখনো ওর চোখ খোলা এবং সেদিনের মত আজো স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। ভয়ঙ্কর সেই দৃষ্টি।। আমি ভয় পেলাম।। কিন্তু ওকে বুঝতে না দিয়ে সোফা থেকে ওকে টেনে তুলে নিলাম।। একটা কথাও বললাম না।। বিছানায় শুইয়ে দিলাম।। ও শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে পড়লো।। আমি আজো এই ঘটনা দুটো ভুলতে পারিনি।। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা ঘাঁটাঘাঁটি করিনি কারন এটা বেশি জানাজানি হলে হয়তো মানুষ ওকে নিয়ে বা ওর নামে খারাপ কিছু ছড়াবে।। ও এখন আরেক্তু বড় হয়েছে।। খুব শান্ত, সহজ সরল ছেলে।। আমার বাসায় এলেই আমার সাথে থাকার জন্য ভীষণ আবদার করে।। কিন্তু এরপর থেকে আমি ওর সাথে কখনো একা ঘুমানোর সাহস করিনি।। লেখক/লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।।
বনানী, ঢাকা।।

।। কঙ্কাল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 8, 2011 at 10:59pm
ঘটনাটা ২০০৬ সালের। সদ্য মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। তাই মনে অনেক উত্তেজনা। ক্লাস শুরু হতে আরও দেরি আছে, এর মাঝেই সব বই কিনে ফেললাম। শুধু কঙ্কাল কিনা বাকি। একদিন তাও কিনা হল। যার কঙ্কাল সে যে কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছে, হাড় দেখে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। বিশাল আকৃতির বক্স টা বাসায় আনতেই বিশাল হইচই পরে গেল। আম্মু তো দেখেই চিৎকার শুরু করল যে এই বক্স অন্য কোথাও রাখা হোক। আমি বললাম এটা আমার রুমেই থাকবে। আমার মধ্যে কোন ভয় কাজ করেনি। বিপুল উৎসাহে সব খুলে খুলে দেখলাম। তারপর বিছানার নিচে যত্ন করে রাখলাম। ঐদিন কিছু হয়নি। পরদিন বাসায় ফুফুরা আসল। ওদের খুব আনন্দ নিয়ে সব দেখালাম। সারাদিন অনেক মজা করলাম। রাতে ঘুমানোর আয়োজন হল। বাসায় রুম কম থাকায় আমার ছোট ভাইয়ের রুমে গেস্টদের থাকতে দেয়া হল। আর আমার ছোট ভাইকে পাঠানো হল আমার রুমে। বিছানা ছিল দুইটা। ও একটাতে শুয়ে ঘুমিয়ে পরল আর মেঝেতে আমাদের কাজের মেয়ে। আমি ঠিক একটা বাজে রুমের লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। পাঁচ মিনিটও হয়নি হঠাৎ অনুভব করলাম কে যেন আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ভাবলাম আম্মু হয়তো, কারণ আম্মু প্রায় আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে আর ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিক আমার কানের পাশে পরতে লাগলো। তখুনি বুঝলাম এটা আর যেই হোক আম্মু না। আমি পাশ ফিরতে চাইলাম কিন্তু আমার হাত পা যেন অচল হয়ে ছিল। কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না শরীরে। আমার চোখ খোলাই ছিল। তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছিলাম হাল্কা ডিম লাইটের আলোয়- ঐ তো আমার ভাই শুয়ে আছে, মেঝেতে কাজের মেয়েটা, আমার পাশে আমার মোবাইল সেট, সবই। কিন্তু আমি নড়তে পারছিলাম না। কথাও বলতে পারছিলাম না। উপায় না দেখে সূরা পড়া শুরু করলাম। এভাবে ৫-৭ মিনিট যাওয়ার পর যেন আমার শক্তি আসলো। উঠেই আমার ভাইয়ের বিছানায় গেলাম। সারারাত নির্ঘুম কাটল। পরদিন সকালে আব্বু আম্মুকে জানালাম। আব্বু বলল, এটা হেলুসিনেসন. আম্মু একেবারে উড়িয়ে না দিলেও বিশ্বাস করেনি তা বেশ বুঝা যাচ্ছিল। আমিও তাই ভেবে হাল্কা হলাম যে নতুন কেনা কঙ্কালটা হয়তো আমার মনে প্রভাব ফেলেছে, আর তাই হয়তো এইরকম লেগেছে। পরেরদিন আম্মু সহ ছিলাম। আম্মু শুয়েই ঘুমিয়ে পরেছে আর আমি ঘুমাব বলে লাইট অফ করে শুয়ে পরলাম। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে আবার সেই অনুভূতি। আর কানের কাছে ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ। আবার সূরা পড়া শুরু করলাম। এভাবে কতক্ষন ছিলাম জানিনা। অনেক কষ্টে মা মা বলে চিৎকার দিলাম। আম্মু তাড়াতাড়ি উঠে লাইট অন করে আমাকে এসে ধরল। আমি কাঁদতে শুরু করলাম, বললাম, ঐ লোকটা আবার এসেছিল। সারারাত আমি আর আম্মু জেগে কাটালাম। আমার রুমে কুরআন শরীফ রাখা হল যাতে এরকম কিছু আর না ঘটে।

কয়েকদিন ঠিক ছিল সবকিছু। একদিন দুপুরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল কেও একজন খুব কাছ থেকে ঝুকে আমাকে দেখছে। চোখ খুলতে পারছিলাম না। অনেক পরে চোখ খুলে দেখি কিছু নেই। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা বাসায় থাকতে আশা কাওকেই জানাতাম না। হয়তো ভয় পাবে এই ভেবে বলতামনা। তবুও আমার রুমে ছিল এরকম কয়েকজন বন্ধু একি ঘটনার শিকার। তারা যাওয়ার আগে বলেও গিয়েছে যে এই রুমে কিছু একটা আছে। আরেকবার আমার দাদি ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ জোরে চিৎকার করে উঠেছিল। উনার মনে হয়েছিল কে জানি উনার হাত ধরে আছে। এইরকম ধারাবাহিক কিছু ঘটনার পর বাসায় মিলাদ পরানো হয়। আল্লাহর রহমতে এখন সব ঠিক, তবুও মাঝেমাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই মৃত মানুষের আত্মা কি পৃথিবীতে থাকে? পড়াশুনার খাতিরে পরে কঙ্কালের হাড় পাশে নিয়েও ঘুমাতে হয়েছিল। কিন্তু এরকম কিছু কখনো আর হয়নি। তবে প্রথমেই কেন এত কিছু হয়ে গিয়েছিলো তা আজো ভেবে পাইনা। শিক্ষা জীবনের শেষের দিকে এসে শুরুর দিকের সেই কথা খুব বেশি মনে পরছে। তাই আজ এটা সবার সাথে শেয়ার করলাম। হয়তো আপনাদের পড়ে বিরক্ত লাগতে পারে, তবুও মেডিকেল এ যারা পড়েন তারা কঙ্কাল নিয়ে অনেক গল্প শোনার সুযোগ পেয়ে থাকেন। সব গল্পই যে উড়িয়ে দেয়ার মত না তা জানাতেই আমার জীবনের সত্যি কাহিনীটা বললাম। ভাল থাকবেন আপনারা সবাই। লেখিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। দ্রষ্টব্যঃ গল্পটি লেখিকা অন্য একটি পেইজে শেয়ার করেছিলেন। তাই, কারো হয়তো কমন পড়তে পারে। লেখিকার অনুমতি সাপেক্ষে গল্পটি আমাদের পেইজে দেয়া হল।

। রহস্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 8, 2011 at 10:35pm
যারা অনেক ভয়ের কোন গল্প পড়ার জন্য আমার লিখাটি পড়ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি দয়া করে এই গল্পটি পড়বেননা কারণ গল্পটি তেমন ভয়ঙ্কর নয়, আপনারা হতাশ হবেন। তবে ভয়ঙ্কর না হলেও নিশ্চয়তা দিতে পারি এটি সত্যি ঘটনা। আমি খুবই সাহসী একটি মেয়ে। কোনদিনই কোন কাজকে আমার কঠিন মনে হয়নি। কোন মানুষকেই কখনো ভয় পাইনা। উল্টো মানুষজন আমাকে সমঝে চলে ; )। তবে সারাজীবন বিজ্ঞানের ছাত্রী থাকলেও কোন এক বিচিত্র কারনে আমি ভূত ভীষণ ভয় পাই। ঘটনাটি প্রায় আড়াই বছর আগের। চাকুরী সূত্রে আমি আর আমার বর দুজনেই ময়মনসিংহ শহরে ছিলাম। আমাদের বাসা ছিল সাহেব কোয়ার্টারের একটি বাংলোতে। বাংলোটি একতলা এবং মোটামুটি একর দুয়েক জায়গা নিয়ে ছিলো। পুরোনো ডিজাইনের বাংলো, বিশাল বিশাল দরজা চারিদিকে, কোনো জানালা নেই। বাইরেই টানা বারান্দা। সাঁপ, মশা বা অন্য কোন পোকা-মাঁকড় যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য পুরো বারান্দা নেট দিয়ে ঢাকা। বারান্দা থেকে তিন ধাঁপ সিঁড়ি নামলেই গাড়ির রাস্তা আর ব্যাডমিন্টন কোর্ট। বাইরে ছিলো একটি ছোট পুকুর আর বিভিন্ন রকমের অনেক গাছ। একবার কোন একটা কারনে আমার ডাক্তার দেখানো জরুরী ছিল। দিনের বেলায় নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাই ঠিক করলাম সন্ধ্যের পর বের হব। আমার ছেলের বয়স তখন পাঁচ। আমাদেরকে বাইরে যেতে দেখলেই তার বাইরে যাওয়া চাইই চাই। সেদিন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি বলেই আমি চাচ্ছিলামনা ছেলেকে নিয়ে যেতে। তাই আমার বর আমাকে বললো "আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, তুমি ছেলেকে কিছু একটা বুঝিয়ে বাইরে বের হয়ে এসো।" আমি ছেলেকে ওর প্রিয় টম এন্ড জেরী চালিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন পাশে বসে আস্তে আস্তে বাইরে বের হয়ে আসি। তখন প্রায় ৭-৩০টার মত বাজে। চারিদিকে অন্ধকার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার অংশ হিসেবে সবসময় আমাদের বাসার অপ্রয়োজনীয় সব বাতিই বন্ধ রাখা হয়। আমরা বাইরে বের হতে চাইলে সবসময় গাড়ী বারান্দার নীচেই রাখা হয় অথবা বাংলোর ডানদিকে বাউন্ডারী ঘেষে যে বিশাল আম গাছ তার নীচে রাখা হয়। বাংলোর বামদিকে রাস্তা ধরে মিনিট খানেক হাটলে বাড়ীর মূল গেইট। বারান্দায় এসে দেখলাম সিঁড়ির কাছে গাড়ী নেই। বাংলোর ডানদিকের আমগাছের নীচে গাড়ী আছে কিনা দেখার জন্য তাকিয়ে দেখি গাড়ী নেই, অল্প আলোতে দেখা গেল আমার বর কার সাথে যেন জোরে জোরে মোবাইল ফোনে কথা বলছে। সেই চিরাচরিত ভঙ্গি। এক হাতে মোবাইল ফোন কানে ধরা, আরেক হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলা। আমাকে দেখেই সে হাত নেড়ে ডাকলো "মেরী, এদিকে এস।" আমি তিন ধাপ সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় নেমে ডানদিকে যাচ্ছি, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তার অবয়ব, শুনতে পাচ্ছি গলার আওয়াজ। এমন সময় বরের বডিগার্ড ইমরান উল্টোদিকের মূল গেইটের কাছাকাছি থেকে জোরে ডেকে উঠলো "ম্যাডাম, ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন? স্যার গেইটের বাইরে গাড়ীতে বসে আছেন আপনার জন্য!" আমি ঝট করে ডানে তাকাতেই দেখি ওখানে কেউ নেই! অথচ একটু আগেই সেখানে আমার বরের গলার আওয়াজ স্পষ্ট শুনেছি, আর এত পরিচিত অবয়ব, ভূল হওয়ার কথাই নয়! সাথে সাথে এক দৌড়ে উল্টোদিকে গেইটের কাছে চলে গেলাম। যেয়ে দেখি গেইটের বাইরে গাড়ী স্টার্ট দেয়া কারন তারা দেখতে পেয়েছিলো আমি বারান্দা থেকে বের হয়েছি। উল্টোদিকে আমাকে যেতে দেখেই তারা আমাকে ডেকেছিলো। আর আমার ছেলে যাতে গাড়ী স্টার্ট দেয়ার শব্দ শুনতে না পায় এজন্যই তারা দূরে গেইটের বাইরে গাড়ী রেখেছিল। আমি সেদিন প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। এরপর কখনোই আমি সন্ধ্যের পর আর একা বারান্দায় বেরুতাম না। ঘটনাটি যিনি পাঠিয়েছেনঃ মারিনা নাজনীন।

দ্রষ্টব্যঃ উনি গল্পের শুরুতেই খুব সুন্দর করে বলে দিয়েছেন যে এখানে হয়তো খুব বেশি ভয় পাওয়ার মত কিছু ছিল না।। এবং আপনাদের অনুরোধও করেছেন বেশি ভয় খুঁজলে যেনও লেখাটা না পড়েন।। কমেন্ট করার সময় ব্যাপারটা মাথায় রাখলে ভালো করবেন।। - অ্যাডমিন

। বাজী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, September 7, 2011 at 11:31pm
আজ আমি যে ঘটনা শেয়ার করতে যাচ্ছি , তা বেশ কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া । এর আগে কারো সাথে এই ঘটনা শেয়ার করি নি । আজই প্রথম......... ঘটনাটি আমার নানুবাড়িতে ঘটা । জায়গাটি মুন্সীগঞ্জে । আমি তখন ক্লাস নাইনে উঠব । এইটের বার্ষিক পরীক্ষা শেষের ছুটিতে বেড়াতে নানুবাড়িতে গিয়েছি । আমার নানুবাড়ি সম্বন্ধে আগেও বেশ কিছু ঘটনা শুনেছিলাম । ওই পুরো ভিটে জুড়েই নাকি বেশ রহস্যময় ঘটনা ঘটতে দেখেছে মানুষজন । তবে এখন নাকি আগের মত আর দেখা যায় না ।
যাই হোক , সেবার ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে বেশ ভালই শীত পড়েছিল । আমরা সব খালাতো ভাই বোন খালা মামারা একত্রিত , শীতের ছুটিতে । সীমাহীন আনন্দ । তাদের মধ্যে আমাদের দুজন খালার নতুন বিয়ে হয়েছে । সুতরাং , নতুন কম বয়সী খালুরাও আমদের মজা মাস্তিতে শামিল । সবাই দারূণ সময় কাটাচ্ছি । কিন্তু , আমাদের কিছু কম বয়সীদের তাতেও যেন মন ভরছিল না । বুঝতেই পারছেন , উঠতি বয়স । রক্তে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা ! সাত-আট দিন না যেতেই আমাদের আর সময় কাটে না । করার মত সব কাজ শেষ । এরপরই এল সেই দিন । আজও বারবার পস্তাই । কেন যে সবার মাথায় সেই দুঃসাহসের ভূত চাপিয়েছিলাম । যদি আমাকে আজ কেউ সুযোগ দিত , তবে অবশ্যই ওই দিনের ঘটনা বদলে দিতাম............ গ্রামে সবাই একটু আগেই ঘুমুতে যায় । তাই আমরা কাজিনদেরও আগে ভাগে বিছানায় যেতে হত । তাই বলে অবশ্য ঘুমিইয়ে পড়ার মত সুবোধ বালক আমরা কেউ ছিলাম না । রাত ভর গল্প-গুজব, তাস খেলা, কিছু বড় ভাইদের (এতও বড় নয় অবশ্য ) সিগারেট খাওয়া চলত অনেকক্ষণ । তবে সেদিন রাতে কিছুই ভাল লাগছিল না । রাত তখন ১০ টার মত বাজে । কথায় কথায় সেদিন আলোচনাতে ভূত প্রসঙ্গ এল । সেখান থেকে এসে পড়ল আমাদের নানুবাড়ির প্রসঙ্গ । সবার ভিন্ন মতামত থাকলেও আমি একেবারেই গাঁজাখুঁড়ি গল্প বলে সব উড়িয়ে দিতাম । সেদিনও তার ব্যতিক্রম হল না । এক পর্যায়ে তর্ক-বিতর্ক থেকে সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেললাম । অস্বীকার করব না , আমি ওখানে সবার ছোট হওয়ার পরও একটু বেশিই বেপরোয়া প্রকৃতির ছিলাম । তাই , সবাইকে এক কথায় 'ভীতুর ডিম' বলতে লাগলাম । তখন দুজন ভাইয়া কিছু না মনে করলেও, বাকি দুজনের আঁতে কিছুটা ঘাঁ লাগল । তারা আমাকে বলতে লাগল আমিই বা কী এমন করেছি ! আমার তখন গরম অবস্থা । সাথে সাথে বলে বসলাম, " ঠিক আছে ! হয়ে যাক বাজি । প্রমাণ হয়ে যাবে, কার বুকের পাঁটা কত বড় ?" তারা তৎক্ষনাৎ রাজি । বাকি দুই ভাই একটু আপত্তি জানালেও, তাদের আপত্তি ধোপে টিকল না ।
আমি নিজেই ঠিক করলাম বাজির বিষয় । আমাদের নানুবাড়ির পারিবারিক গোরস্থান ছিল বাড়ির বেশ কাছেই । গোরস্থানটি ছিল রাস্তার ধার ঘেষে । গোরস্থানের পাশ দিয়ে রাস্তা গিয়ে সেই রাস্তাতে পড়েছে । সবাই চলাচলের জন্য সেই রাস্তা ব্যবহার করে । আমি বাজি ঠিক করলাম , ওই গোরস্তানের মধ্যে দিয়ে কোন আলো ছাড়া পার হয়ে উলটো দিকের রাস্তায় উঠতে হবে । বাজির বিষয় শুনে সবাই একটু থতমত খেয়ে গেল । তারা আশা করেনি , আমি এই ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস । আসলে , সত্যি হল আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল , এরকম কিছু একটা করে দেখার, দেখানোর । সেদিন আর এমন মোক্ষম সুযোগ ছাড়লাম না ।
"যেমন কথা তেমন কাজ । রাত তখন প্রায় ১০ টার মত বাজে । আমরা ৫ জন দুটো টর্চ নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লাম । বাড়ির কেউ জানলে আর কষ্ট করে ভূতের খপ্পরে পড়তে হবে না । আমার আম্মাজানই আমাদের জ্যান্ত কবর দিবেন । যাই হোক, হাঁটা চলতে লাগল । চাঁদের বেশ আলো ছিল সেদিন । হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গেলাম গোরস্থানের উলটো ধারের ফটকের কাছে । সেখান থেকে আমাদের দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা । বাজিটা মূলত ছিল আমার, মাসুম ভাই আর রুম্মান ভাইয়ের মাঝে । সাথে ছিল আমার আপন বড় ভাই নিশাত আর আমার আরেক খালাতো ভাই সনেট ( যিনি আমাদের মাঝে সবার বড় ) । ঠিক করা হয়েছিল - সেখান থেকে নিশাত আর রুম্মান ভাইয়া চলে যাবে উলটা পাশে , রাস্তার পাশের মূল ফটকের কাছে । প্রথমে , আমি এপাশ থেকে ওপাশে যাব । আমি পৌছলে সেখান থেকে রুম্মান ভাইয়া আসবে এপাশে । তারপর সবার শেষে মাসুম ভাই চলে যাবে অন্য পাশে । শুধু তো ভূত নয় , এত রাতে রাস্তার ধারে চোর-ডাকাতেরও ভয় ছিল । তাই , কোনো পাশেই যেন কাউকে একা পড়তে না হয় , তাই আমার মস্তিষ্কপ্রসূত এই বুদ্ধি . . . . . .
কথা মত রুম্মান আর নিশাত ভাইয়া চলে গেলেন রাস্তা ধরে অন্য পাশের গেটে । তাদের যাওয়ার ১০ মিনিট পরে আমি রওয়ানা হব । সময় হল । ভাইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে আমি ঢুকে পড়লাম গোরস্থানের ভিতরে ।
চারিদিকে সুনসান নীরবতা । শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক । কবরখানাটি ছিল লম্বাটে আকৃতির । মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা চলে গেছে । দুপাশ ঘেঁষে সারি দিয়ে কবর । ভয়ের বিষয় গাছ আর বাঁশঝাঁড়ের জন্য আলো আসছিল না সেখানে । তার উপর বাজির শর্ত অনুযায়ী আমাকে আলো ছাড়াই পুরোটা পাড় হতে হবে । অস্বীকার করব না , শুরুতে আমার একটু ভয় লাগছিল না এমন নয় । তবে একটু বাদেই সব আজেবাজে ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম । মনে মনে এটা নিশ্চিত করলাম - ভূত-ফূত কিছু যদি আসেও , আমি মরার আগে ওকে দু-চার ঘাঁ না দিয়ে মরব না । দোয়া দূরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে এগুনো শুরু করলাম । অন্ধকারে কোথায় পা ফেলছি দেখতে পাচ্ছি না । তাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেতে পারি - ভেবে বাধ্য হয়ে কবরগুলোর পাকা ধার গুলো ধরে হাতড়ে হাতড়ে এগুতে থাকলাম । তেমন কোন সমস্যা হচ্ছিল না ।
হঠাৎ কিছু একটা ব্যাপার অদ্ভুত ঠেকতে লাগল । বুঝতে পারলাম না ব্যাপারটা কি ? সাবধানে ঘাড় ঘুড়িয়ে চারপাশে খেয়াল করলাম । নাহ ! আশ্চর্যজনক কিছুই চোখে পড়ল না । কিন্তু , আমি নিশ্চিত ছিলাম - কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে । কোন কিছু দেখতে না পেয়ে , ভাবলাম - নিজের মনের ভুলই হবে হয়তো । পরে বুঝতে পেরেছিলাম কোন ভুল হয় নি আমার । তখন একটি ঘটনা ঘটেছিল । যা তখন বুঝতে না পারলেও, পরে ধরতে পেরেছিলাম । যা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে । যাই হোক , তখন কি হয়েছিল , পরেই বলব । ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে একসময় উলটো ধারের গেটের কাছেও পৌছে গেলাম । কোন বিপদ আপদ ঘটল না । কিন্তু খুব আশ্চর্যজনক কারণে আমি পুরো গুম মেরে গিয়েছিলাম । কিছু একটা অস্বাভাবিক কিছু আমার স্নায়ুর উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল । কেন যেন মনে হতে লাগল - খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে । আমি উলটো পাশে পৌছে যাওয়াতে , নিশাত - আমার আপন ভাই , যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । তবে রুম্মান ভাইয়ের তো আরো মাথায় জেদ চেপে গেল । আমি যখন সবার ছোট হয়ে বাজিমাত করেছি , উনার এখন পার হওয়াটা যেন কর্তব্য । একবার ভাবলাম , ভাইকে মানা করি । কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম , এখন মানা করে কোন লাভ হবে না। উনারা কেউই হার মানার ছেলে না । তো রুম্মান ভাইও চলে গেলেন গোরস্থানের ভেতর দিয়ে । এপাশে রয়ে গেলাম আমি আর নিশাত । নিশাত খেয়াল করল , বাজি জেতার উচ্ছলতা নেই আমার মাঝে , বরং কেমন যেন বেমানান রকমের চুপচাপ ছিলাম আমি । ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে ? অস্বীকার করলাম না । ভেতর দিয়ে আসার সময়কার সেই অনুভূতির কথা । ও বলল , এটা তেমন কিছু না । অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকে হয়ে থাকবে হয়তো । ও বরং এই বাজির বিষয় ভালয় ভালয় শেষ হলে খুশি । সময় যেতে লাগল । কে জানে রুম্মান ভাইয়া পৌছতে পেরেছে কিনা ? রুম্মান ভাইয়া তখন কিভাবে কি করল - পরে তা উনার মুখে শুনেছি । ভেতরে ঢোকার পর আমার মত উনারও একই আলোর সমস্যা হয়েছিল । তবে কিছুদূর যাওয়াড় পর আমার মত উনারও আশ্চর্য কোন অনূভুতি হয়েছিল । কি তা উনিও বুঝতে পারে নি । কোন কারণে উনিও ভয় পেয়েছিল । ঠিক কি তা জানে না, জানার প্রয়োজনও বোধ করেন নি । সোজা দোয়া দূরুদ জপতে জপতে হেঁটে গেছেন এবং অবশেষে অন্যপ্রান্তে পৌছেও গেছেন । তবে একটা গুমোট চাপা আতংক ভর করেছিল উনার মাঝে । উনি পরে স্বীকার করেছিলেন । পরবর্তীতে ওপাশ থেকে মাসুম ভাইয়াও রওয়ানা দেন । ইতোমধ্যে আমি আর নিশাত এদিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম , কখন মাসুম ভাইয়া আসবে ; কখন এইসব শেষ হবে ! হঠাৎ করেই পিছনে শব্দ ! পুরোপুরি জমে গেলাম আমরা দুজন । শব্দটা আমাদের কাছে আসতে লাগল । তাকিয়ে দেখলাম আলো । আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে । কাছে আসতেই হাঁফ ছেড়ে বাচলাম । আমাদের ইনু নানা । উনি তখন মসজিদের দায়িত্বে ছিলেন । রাতে অনেকক্ষণ ওখানে থেকে উনি বাড়িতে ফিরতেন । পরহেযগার মানুষ । আমাদের এমন সময়ে এমন জায়গায় দেখে উনার তো চক্ষুচড়কগাছ । জিজ্ঞেস করলেন কি করছি ওখানে । আমরা সত্য-মিথ্যা দুই-ই বললাম । কারণ , জানতাম উনি আমাদের বাড়িতে না নিয়ে ফিরবেন না ; আর আমরাও মাসুম ভাইকে ফেলে যেতে পারি না । তাই বললাম, মাসুম একটু সাহস দেখিয়ে কবরস্থানের ভিতরে গিয়েছে, এখনি চলে আসবে । উনি তখনই আমাদের বকাঝকা শুরু করলেন । ঠিক তখনই গগন বিদারি চিৎকার ভেসে আসল ভিতর থেকে । মাসুম ভাইয়ের গলা চিনতে ভুল করলাম না কেউই । সাথে সাথে নানু আমাদের বাইরে থাকতে বলে ভিতরে ঢুকে গেলেন । আমরা যেতে চাচ্ছিলাম । কিন্তু উনার চাউনি দেখে আর সাহস করলাম না …. নানা ভিতরে ঢুকে গেলেন । একটু পরেই ভিতর থেকে এক ধরনের হুটোপুঁটির শব্দ ভেসে এল । কিছুক্ষণ পরে নানুজান টলতে টলতে বের হয়ে আসছেন , সাথে মাসুম ভাই । থরথর করে কাঁপছেন । কি হয়েছে - জিজ্ঞেস করার মত পরিস্থিতি কারো ছিল না । নানুকে দেখলাম কেমন যেন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছিল । উনাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, "নানু, কি হয়েছে ? " উনি বলল ,তেমন কিছু না । মাসুম ভাই মনে হয় এমনিই ভয় পেয়েছে । আমার স্পষ্ট মনে হল উনি কিছু এড়িয়ে গেলেন । মাসুম ভাইকে আমরা শক্ত করে ধরলাম । তবে সামনে হাঁটতে গিয়েই উনি মূর্ছা গেলেন । দিন দুয়েক বাদে , সব শান্ত হয়েছিল । আমরা মাসুম ভাইকে ধরাধরি করে অন্যপাশে নিয়ে এসেছিলাম । ওখানে রুম্মান আর সনেট ভাইকে দেখে নানু বুঝতে পেরেছিলেন আমরা মিথ্যা বলেছি । লজ্জায় আমরা উনার দিকে তাকাই নি আর । ইতোমধ্যে মাসুম ভাইয়ের চেতন ফিরেছিল । বাকি পথটুকু উনি টলতে টলতে আমাদের সাথে হেঁটে ফেরেন । তখন কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করার মত অবস্থা ছিল না । আমরা শুধু নানুকে অনুরোধ করি বাড়ির কাউকে না জানানোর জন্য । উনি কোনো জবাবই দেননি । তবে উনি কাউকে বলেন নি । আর সেদিন থেকে উনার কি যেন হয়েছিল । একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন । আর মাসুম ভাই প্রচণ্ড জ্বরে পড়েন । প্রায় ৩ দিন উনি জ্বরে ভোগেন । একটু ধাতস্থ হলে উনার কাছে আমরা শুনি আসল ঘটনা । রুম্মান ভাইয়া ফেরার পর উনি স্বাভাবিকভাবেই ভিতরে ঢোকেন । আমাদের মধ্যে উনিই ছিলেন গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা । তাই উনার এত ভয়ও ছিল না । তবে উনিও ভয় পেয়েছিলেন । ঠিক যেখানে আমাদের সেই আজব অনুভূতি হয়েছিল । তবে উনি সেখানে দাঁড়িয়ে পরে বোঝার চেষ্টা করেন কি হয়েছে । সাহস করে উনি হেঁটে কবরগুলোর ধারে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন । ঠিক তখনই উনি চমকে গিয়ে লক্ষ্য করেন একটা অংশ স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশিই অন্ধকার এবং কেমন যেন জমাট বাঁধা । উনি ওটার কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেই চমকে গিয়ে উনি লক্ষ্য করেন ওটা যেন ধীরে ধীরে মানুষের অবয়ব নেয়া শুরু করে । সাথে সাথে উনাকে অমানুষিক আতংকে পেয়ে বসে । চিৎকার করে উঠেন উনি । উলটো দিকে ঘুরেই উনি দৌড়ানো শুরু করেন । কিন্তু উনার মানে হয় উনি যতই আগানোর চেষ্টা করছেন , পারছেন না । ঠিক তখনই উনি সামনে কিছুর সাথে ধাক্কা খান । সে তাকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরে । কানের সামনে উনি আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত শুনতে পান । পরে বুঝতে পেরেছিলান ওটা নানা ছিল । নানা তাকে সামনে ঠেলে দিয়ে কিছু একটা থেকে আড়াল করেন । যাই করে থাকেন না কেন সেদিন ,নানা আসার পরেই উনি যে বেঁচে ফিরেছেন তা আমরা সবাই হারে হারে টের পেয়েছিলাম । কিন্তু এর ফল আমাদের অন্য ভাবে দিতে হয়েছিল । এর কিছুদিন পরেই নানা অসুস্থ হয়ে পড়েন । অনেক চেষ্টা করা হয় । ঢাকায় আমাদের এখানে এনে চিকিৎসা করানো হয় । কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না । আমি উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম । আমাকে দেখে উনি শুধু এক চিলতে হাসি দিয়েছিলেন । ওই হাসিতে কিছু একটা ছিল । আমার আজো ওইদিন যদি আমরা এমন কিছু না করতাম , তবে নানা আজো আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন । বড্ড তাড়াতাড়ি উনি আমদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । আমদেরকে , মাসুম ভাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে উনি মৃত্যুটাকে বুকে আগলে নিয়েছিলেন । এটাই ছিল আমার গল্প । আমার জীবনের নির্মম এক গল্প । কিছু প্রশ্ন থেকে যেতে পারে . . . . মাসুম ভাইয়া আসলে কি দেখেছিলেন ? উত্তরঃ জানি না । কখনো জানতে চাইও না । আর আমাদের ওই অনুভূতির কি ব্যাখ্যা ছিল ? এটা আমি পরে বুঝতে পেরেছিলাম । কারণ , বহুবার আমার দুঃস্বপ্নে ওই কালরাত ফিরে এসেছিল ।
উত্তরঃ ঝিঁ ঝিঁ পোকা । ওই বিশেষ জায়গায় যেতেই পুরো গোরস্থানে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে । এমনকি ঝিঁ ঝিঁ ডাকাও বন্ধ হয়ে যায় । পরে আমি অনেক জায়গায় পড়েছি এরকম অশরীরী, ভূত-প্রেত - যে যাই বলে . . . . . তারা যেখনে আসে, সেখান থেকে সকল প্রাণ পালিয়ে যায় । আমার আর রুম্মান ভাইয়ের অনেক সৌভাগ্য , আমরা সেদিন তার পাল্লায় পড়ি নি । পড়েছিল দুর্ভাগা মাসুম ভাই , আর জীবন গিয়েছিল আমদের সবার প্রিয় ইনু নানার ! ! !

লেখক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। ** বাইরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।। বেশ ভূতুড়ে আবহাওয়া।।

রহিমার রহস্যময় বিয়ে - By মুকুল

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, September 14, 2011 at 10:02pm
ঘটনার সময়কাল ১৯৪০। গ্রাম তো দুরের কথা, তখন অনেক মহকুমা শহরেও বিদ্যুতের নাম গন্ধ ছিলো না। রহিমার বাস কদমতলি গ্রামে। কদমতলি গ্রামের নাম শুনেছেন তো? ওই যে আমাদের পাশের গ্রামের শেষ প্রান্তে বড় যে আমবাগান ছিলো, তার পশ্চিম পাশের গ্রামটা। - এ কথা বলে মিজান সাহেব একটু দীর্ঘ থামলেন। মিজান সাহেব আমাদের পাশের বাড়ীতে থাকেন। বয়স প্রায় ৮০ ছুই ছুই। সন্ধ্যার পর আমাদের আড্ডা হয় তার দোতলা বাড়ীর ছাদে। মিজান সাহেবের ছাদ আবার একটু অন্ধকার। গাছের আড়ালের কারণে ল্যাম্পপোস্টের আলো পুরোপুরি পৌছায় না। একেবারেই ভুতুড়ে পরিবেশ। আজ হঠাত করে আড্ডায় মধ্যে ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার বয়ান শুরু হলো। এই বিষয়ে মিজান সাহেবের দেখলাম ব্যাপক আগ্রহ। তার নাকি জীবনে অনেক অদ্ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা আছে। তার একটি আজ বলবেন। সবাই আগ্রহ নিয়ে কান খাড়া করে আছি। পরিবেশটাই ভুতের গল্প শোনার জন্য মানানসই। মিজান সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন। আমার দিকে ফিরে বললেন, বুঝলেন নাফিদ সাহেব, ঘটনাটা আজও একটা রহস্য হয়ে আছে। যা বলছিলাম, রহিমার বয়স তখন ১৪। গ্রামে আমাদের প্রতিবেশী। তখনকার দিনে এই বয়সের আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেতো। রহিমার বিয়ে একটু দেরিতেই হয়েছিলো। মা বাবার আদরের ছিলো বলে দেরিতে বিয়ে দিয়েছিলো। রহিমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছিলো, আমরা পরিস্কার জানতাম না। রহিমার বাবা ফকির দরবেশ টাইপ মানুষ ছিলেন। খেয়ালি প্রকৃতির। হঠাত করে তার এক মুরিদের পাল্লায় পড়ে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। বরের সম্পর্কে আগাম কিছুই আমাদের জানা ছিলোনা। রহিমার বাবাকে ভয় মিশ্রিত ভক্তি শ্রদ্ধা করতাম বলে কিছু জিজ্ঞেসও করা হয়নি কারো। ফকির দরবেশ মানুষ। কার উপর গোস্বা হয় কে জানে! বিয়ের সময় মাগরিবের পরে ঠিক হয়েছিলো। পাত্র পক্ষ মাগরিবের পরে অন্ধকার নামতেই হাজির হলো। বরের সাথে মাত্র দুইজন মানুষ। একজন রহিমার বাবার মুরিদ সেই মানুষটি, পাত্রের মামা। আরেকজন পাত্রের বাবা। এত কম বরযাত্রী আসাতে আমরা সবাই অবাক হলেও কিছু বললাম না। খেয়ে দেয়া হুজুর কলেমা পড়ালেন। পাত্রের চেহারা দেখলাম তখন। চেহারাটা কেন জানি সুবিধার লাগলো না। চোখগুলো ঘোলাটো ঘোলাটে। প্রথম দর্শনেই আমাদের কারো পছন্দ হলো না। কিন্তু কিছুই করার নাই। আমরা খেয়েদেয়ে বাড়ীতে চলে এলাম। পরের দিন ভোরে হইচই শুনে ঘুম ভাঙলো। রহিমাদের বাড়ীতে প্রচন্ড গোলমালের আওয়াজ পেলাম। এক দৌড়ে গিয়ে হাজির হলাম। দেখলাম রহিমা অজ্ঞান পড়ে আছে। সবাই তার মুখে পানির ছিটকা দিচ্ছে। জ্ঞান ফেরার পর সবার কথায় ঘটনা পরিস্কার হলো আমাদের কাছে। জানলাম, বরপক্ষের দুইজন বরকে রেখে রাতেই চলে যায়। রহিমার বাসর ঘরে যখন বর প্রবেশ করে, তখন রাত হয়েছে অনেক। গ্রামের বাড়ী। চারদিক ততক্ষণে নিশ্চুপ। শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। হারিকেনের মৃদু আলো জ্বলছে। বরের মুখ একবার মাত্র দেখেছিলো রহিমা। ঘোলাটে চোখ দেখেই ভয়ের একটা শিরশিরে অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরে। আরো ভালো করে দেখার আগেই বর হারিকেনের আলো এক ঝটকায় নিভিয়ে দিলো। তারপর নি:শব্দে রহিমার পাশে এসে বসলো। রহিমার কেন যেন অস্বস্তি লেগে উঠলো। তবুও কিছু করার নেই। এই ছেলেই এখন তার সবকিছূর মালিক। সহ্য তো করতেই হবে। কিন্তু ছেলেটি যখন তাকে জড়িয়ে ধরলো, হাতগুলো কেমন যেন লোমশ লোমশ লাগলো। গা সিড়সিড় করে উঠলো রহিমার। অস্বস্তিকর অনুভূতি নিয়েই স্বামীসঙ্গ হলো। তার পুরো শরীর কেমন যেন অসাড় হয়ে উঠলো। তান্ডব শেষে ক্লান্ত রহিমা মরার মত ঘুমালো। ভোরে যখন ঘুম ভাঙলো, পাশ ফিরতেই দেখলো তার বিছানা খালি। বাইরে তখন গন্ডগোলের শব্দ। রহিমার বাবা দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন। দরজা খোলার পরপরই তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠলেন। তারপরের ঘটনা শুনেই রহিমাও অজ্ঞান। ঘটনা হলো, যার সাথে রহিমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো, তারা নৌকায় করে আগের দিন দুপুরে রওনা দিয়েছিলো। কিন্তু আসার পথে বিকেলে নৌকাডুবিতে পাত্র তার দুই সাথী সহ মারা যায়। সকাল বেলা তাদের লাশ ভেসে উঠে নদীতে। গ্রামের মনু মাঝি লাশগুলো পাড়ে নিয়ে আসে। - এই হলো ঘটনা। বুঝলেন নাফিদ সাহেব। এইটা এখনো এক রহস্য আমার কাছে। পাত্র যদি আগেই মারা যায়, রহিমার বাসর হলো তাহলে কার সাথে! আরো অবাক করা ঘটনা হলো, রহিমা পরবর্তীতে গর্ভবতী হয়। একটি সন্তানও হয়। ছেলে সন্তান। চেহারা অবিকল বাবার মতই। চোখগুলো ঘোলাটে ঘোলাটে।

মায়া নেকড়ে - By তিমুর

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Tuesday, September 13, 2011 at 9:58pm
'আপনাদের এখানকার জঙ্গলে একটা বুনো জানোয়ার আড্ডা গেড়েছে,' স্টেশনে যাবার পথে বললেন শিল্পী কানিংহ্যাম । একবারই মুখ খুলেছিলেন তিনি, কিন্তু যেহেতু তার সঙ্গী ভ্যান চিল, নিজের সম্পর্কে একটানা বক বক করে চলেছিলেন, তাই এই নিরবতা বেশি কানে বাজেনি । 'এক আধটা পথ ভুল করে চলে আসা শেয়াল বা আর কয়েকটা উইজেল আসতে পারে, এর বেশি মারাত্বক কিছু নয়,' বললেন ভ্যান চিল । আর কোনো কথা বললেন না শিল্পী । 'আচ্ছা "একটা বুনো জন্তু" বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন?' তাঁরা প্রায় প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে গেছেন এমন সময় জানতে চাইলেন ভ্যান চিল । 'ও কিছু না, আমার কল্পনা, আমার ট্রেন এসে গেছে,' বললেন কানিংহ্যাম । সে দিন বিকেলে ভ্যান চিল তাঁর বনে ছাওয়া বিশাল সম্পত্তির মধ্যে হাঁটতে বেড়িয়েছিলেন । তাঁর স্টাডিতে একটা স্টাফ করা বিটার্ন পাখি আছে, বেশ কিছু বুনো ফুলের নাম জানেন তিনি; সুতরাং তাঁর খালা যে তাঁকে একজন বিশিষ্ট প্রকৃতিবিদ ভাবেন তাতে হয়তো কিছুটা সত্যের অপভ্রংশ আছে । সে যাই হোক, বেশ হাঁটতে পারেন তিনি । আর যখন তিনি হাঁটতে বের হন তখন চারপাশের সবকিছু খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস আছে তাঁর । কোনো বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য থেকে নয়, স্রেফ পরে যাতে এ ব্যাপারে আলাপ করতে পারেন তাই এই পর্যবেক্ষণ । যখন ব্লু বেল ফুলেরা কুঁড়ি মেলে, আশপাশের সবাইকে ভ্যান চিল জানিয়ে দেন কী ঘটছে । তবে এই বিশেষ বিকেলে ভ্যান চিল এমন একটা জিনিস দেখেছিলেন সেটা তাঁর সাধারন অভিজ্ঞতার বাইরে । ওক গাছে ঘেরা একটা খোলা মাঠের ধারে পানির একটা ডোবা, ডোবার ঠিক পারেই একটা পাথরের তাক মতো জায়গা । যেখানে বছর ষোলো বয়সের একজন দিগম্বর কিশোর চিৎ হয়ে রোদের মধ্যে শুয়ে আছে । ওর ভেজা খাটো চুল মাথার ঠিক মাঝখানে দু' ভাগ হয়েছে । হালকা বাদামী চোখ , এতো হালকা যে প্রায় বাঘের মত জ্বলজ্বলে চোখজোড়া মেলে ছেলেটা ভ্যান চিল কে দেখছে । দৃশ্যটা এতোই অভিনব যে ভ্যান চিল জমে গেলেন পথের উপর । ছেলেটা কে হতে পারে? মিলারের বউ তার ছেলে হারিয়েছে প্রায় মাস দুই আগে, ধারনা করা হয় মিলের পাশ দিবে তোড়ে বয়ে যাওয়া স্রোতে হারিয়ে গেছে সে । কিন্তু সে তো স্রেফ বাচ্চা ছিল, এ তো সাবালকত্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে প্রায় । 'তুমি এখানে কী করছো?' জানতে চাইলেন ভ্যান চিল । 'রোদ পোয়াচ্ছি, আর কী করব?' জবাব দিল ছেলেটা । 'কোথায় থাকো তুমি?' 'এই বনেই থাকি আমি ।' 'বনে থাকতে পারো না তুমি,' বললেন ভ্যান চিল । 'এখানকার বন থাকার জন্য চমৎকার,' খানিকটা গর্বের ছাপ ছেলেটার গলায় । 'কিন্তু রাতে ঘুমাও কোথায় তুমি?' 'রাতে ঘুমাই না আমি । রাত হচ্ছে আমার জন্য সবচেয়ে ব্যাস্ত সময় ।' বিরক্তি বোধ করলেন ভ্যান চিল । রহস্যটা তিনি ঠিক ধরতে পারছেন না । 'তুমি খাও কী?' জিগ্যেস করলেন তিনি । 'মাংস,' যেন জিভে পানি এসে গেছে এমন ভাবে বলল ছেলেটা । 'মাংস? কীসের মাংস?' 'আপনি যদি এতোই জানতে উৎসাহী হয়ে থাকেন তো বলি । খরগোশ, বুনো মুরগি, পোষা মুরগি, ভেড়ার বাচ্চা, মানুষের বাচ্চা যদি ধরতে পারি । যদিও ওগুলো সাধারনত রাতে তালা মারা থাকে । দু'মাস হয়ে গেল আমি কোনো বাচ্চার মাংসের স্বাদ নিয়েছি ।' শেষ বিদঘুটে মন্তব্যটা উপেক্ষা করে সম্ভাব্য চোরাশিকার সংক্রান্ত আলোচনায় টেনে আনতে চাইলেন ভ্যান চিল । 'কী বাজে বকছ তুমি, তুমি খড়গোশ খাওয়ার ব্যাপারে,' বললেন তিনি । 'আমাদের এসব পাহাড়ী খড়গোশ ধরা চাট্টিখানি কথা নয় ।' 'রাতে আমি চার পা দিয়ে শিকার করি ।' আরেকটা বিদঘুটে জবাব এল ছেলেটার কাছ থেকে । 'মানে বলতে চাইছো তুমি কুকুর দিয়ে শিকার করো?' আন্দাজে ঢিল ছুঁড়লেন ভ্যান চিল । গড়িয়ে পিঠের উপর শুলো ছেলেটা । গলা দিয়ে যে নীচু পর্দার হাসিটা বের হল তার, সেটা খুব প্রীতিকর নয়, শব্দটা অনেকটা চাপা গর্জনের মত । 'আমার মনে হয় না কোনো কুকুর আমার সঙ্গ চাইবে, বিশেষ করে রাতের বেলায় ।' এই অদ্ভুত চোখওয়ালা, আজব ছেলেটার মধ্যে কোনো আস্বাভাবিকতা আছে, ক্রমেই অনুভুতিটা গাঢ় হচ্ছে ভ্যান চিলের মধ্যে । 'তুমি এই বনে থাকতে পারবে না,' জোরগলায় বললেন ভ্যান চিল । 'আমার মনে হয়, আমার বনে থাকা আপনার বাসায় থাকার চেয়ে ভাল ।' বলল অচেনা কিশোর । এই বুনো, দিগম্বর কিশোরকে ভ্যান চিলের গোছানো সংসারে নেয়ার চিন্তাটা সত্যি বেশ আতংকজনক । 'তুমি যেতে না চাইলে আমি জোর খাটাবো,' বললেন ভ্যান চিল । একঝলকের মধ্যে পুকুরের পানিতে ডাইভ দিয়ে পড়ল ছেলেটা । তার পরের মুহুর্তে ভ্যান চিল যে পারে আছেন সেখানে পৌঁছে ভোঁদরের ক্ষিপ্রতায় নিজের শরীরটাকে ডাঙ্গায় এনে ফেলল । এতই চমকে গেছিলেন ভ্যান চিল যে এক পা পিছনে হটতে গিয়ে পা হড়কে শ্যাওলা পারে চিৎপাত হয়ে পড়ে গেলেন । বাঘের মত বাদামী চোখজোড়া নিজের চোখের খুব কাছে দেখতে পেয়ে নিজের অজান্তেই একটা হাত গলার কাছে উঠে এল তাঁর । আবার সেই বিদঘুটে হাসিটা হাসল ছেলেটা, তবে এবারে গর্জন, হাসিকে প্রায় তাড়িয়ে দিয়েছে । তারপরেই আরেকটা ঝটিতি দেহ সঞ্চালনে ফার্ন আর ঝোপঝাড়ের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল সে । 'কী আশ্চর্য একটা বন্য জন্তু!' কোনোমতে আঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আপন মনে স্বগোতোক্তি করলেন ভ্যান চিল । তারপরেই মনে পড়ল কানিংহ্যামের মন্তব্যটা 'আপনাদের এখানকার জঙ্গলে একটা বুনো জানোয়ার আড্ডা গেড়েছে,।' ধীর পায়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে আজকের দেখা আশ্চর্য কিশোরের কোনো ব্যাখ্যা দেয়া যায় কি না ভাবতে লাগলেন ভ্যান চিল । ইদানিং বনের পশুপাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে লক্ষণীয় ভাবে । খামার থেকে মুরগি হারিবে যাচ্ছে, খড়গোশ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ছে । পাহাড় থেকে ভেড়ার বাচ্চা চুরি যাওয়ার খবর এসেছে তাঁর কানে । ব্যাপারটা কী এমন হতে পারে যে আজকে দেখা অচেনা ছেলেটা পোচিং এ চৌকস কিছু কুকুর নিয়ে রাতের বেলা শিকার করে বেড়াচ্ছে ? ও বলল রাতের বেলায় ও 'চারপায়ের' সাহায্যে শিকার করে । তারপরে আবার ও বলেছে ওর কাছে কোনো কুকুর আসবে না, 'বিশেষ করে রাতের বেলায় ।' গত দু'মাসে পোচিংএর কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বজ্রাহতের মত পথের উপর দাঁড়িয়ে পড়লেন ভ্যান চিল । দু'মাস আগে মিল থেকে হারানো বাচ্চাটা । এতো কাল ধরে নেয়া হচ্ছিল যে মিলের পাশের স্রোতে ভেসে গেছে ও । কিন্তু বাচ্চার মা বলেছে, পাহাড়ের দিক থেকে, মানে পানির বিপরীত দিক থেকে একবার বাচ্চার চিৎকার শুনেছিল সে । ছেলেটা বাচ্চার মাংস খাওয়ার ব্যাপরে যেন কী বলেছিল? ছি! ছি! এমন কথা ঠাট্টা করেও বলা উচিত না । স্বভাব মত বাড়ি ফিরে কী দেখেছেন সে ব্যাপারে মুখ খুললেন না ভ্যান চিল । এমন একজন দুর্বৃত্তকে নিজের জমিদারীতে রেখেছেন জানলে, এলাকার কাউন্সেলর এবং জাস্টিস অভ দ্য পিস হিসেবে নিজের অবস্থান তো খর্ব হবেই, এমন কী হারানো জানোয়ারগুলোর ক্ষতিপুরণের দাবিও উঠতে পারে । ডিনারের সময় স্বভাব বিরুদ্ধভাবে মুখে কুলুপ এঁটে রাখলেন তিনি । 'এমন চুপ করে আছ কেন তুমি?' জানতে চাইলেন তাঁর খালা । 'লোকে ভাবতে পারে তুমি একটা নেকড়ে দেখেছ ।' পুরনো প্রবাদটা জানেন না ভ্যান চিল । তাঁর মনে হল কথাটা লাগসই হল না । এস্টেটে কোনো নেকড়ে দেখলে গোটা দুনিয়াকে জানান দিতেন তিনি । পরদিন নাশতার সময়েও গতকালের অস্বস্তি যায় নি, ভ্যান চিল টের পেলেন । পাশের শ্হরটাতে গিয়ে কানিংহ্যামকে খুঁজে বের করার তাগিদ অনুভব করলেন তিনি । তিনি এখানে একটা বুনো জন্তু আড্ডা গেড়েছে বলতে তিনি ঠিক কী বলতে চেয়েছিলেন জানা দরকার । এ সংকল্প করা মাত্রই আগের হাসখুশি ভাব খানিকটা ফির এল তাঁর । মর্নিং রুমে গিয়ে সিগারেট ধরাতে যাবর সময় এমন কী একটা গানের কলিও গুন গুন করে ভাঁজতে লাগলেন তিনি । কিন্তু দরজা পেরিয়ে ঘরে পা দিতেই গান বন্ধ হয়ে গেল তাঁর । ডিভানের উপর আয়েশ করে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে গতকালের সেই রহস্যময় উলঙ্গ কিশোর ! তার গা এখন ভিজে নেই, তবে আর কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ল না ভ্যান চিলের । 'এতো বড় সাহস তোমার?' ভ্যান চিলের ক্রুদ্ধ প্রশ্ন । 'আপনিই আমাকে বনে থাকতে নিষেধ করেছেন,' শান্ত গলায় উত্তর দিল ছেলেটা । 'কিন্তু আমি তোমাকে এভাবে আসতে বলিনি! এখন যদি আমার খালা এসে দেখে তোমাকে ?' বিপর্যয় এড়ানোর জন্য মর্নিং পোস্টের কাগজটা ছেলেটার গায়ে চাপা দিয়েছেন এমন সময় তাঁর খালা পা রাখলেন ঘরে । 'একটা পথ হারানো ছেলে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে খালা--আর ও, ও স্মৃতিও হারিয়েছে । 'ও কে, কোথা থেকে এসেছে সব ভুলে বসে আছে ।' ছেলেটার মুখের দিকে চাইলেন তিনি, পাছে আবার সব ফাঁস করে দেয় অচেনা অতিথি । মিস ভ্যান চিল উৎসাহী হয়ে উঠলেন । 'হতে পারে ওর অন্তর্বাসে ধোপার বাড়ির দাগ দেয়া আছে?' 'আমার মনে হয়ে ও সে সবও হারিয়েছে ।' মর্নিং পোস্টটা জায়গা মত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ভ্যান চিল । একটা ঘরছাড়া, ন্যাংটো বালককে দেখে মিস ভ্যন চিলের দরদ উথলে উঠল, যত উথলে উঠত কোন রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বেড়াল-কুকুরের ছানাকে দেখলে । 'আমাদের যা কিছু করার তা আমরা করব,' ঘোষনা করলেন তিনি । কিছুক্ষনের মধ্যেই লোক পাঠিয়ে রেকটরি থেকে এক প্রস্থ জামা-কাপড় আনিয়ে নিলেন তিনি । কিন্তু জামা-কাপড় পরেও ছেলেটার অদ্ভুত ভাব গেল না ভ্যান চিলের চোখে । যদিও মিস ভ্যান চিলের মায়া পড়ে গেল অনাথ বালকের উপর । 'ওর আসল নাম কী জানার আগে পর্যন্ত ওকে আমাদের একটা কিছু নামে ডাকতে হবে । "গাব্রিয়েল আর্নেস্ট" নামটা বেশ চলনসই ।' বললেন খালা । সায় দিলেন ভ্যান চিল, যদিও কোনো শান্ত সুবোধ বালককে ঘরের মধ্যে পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে ভ্যান চিল । পোষা বুড়ো স্প্যানিয়েল কুকুরটা যখন ছেলেটাকে এক নজর দেখেই ঘর ছেড়ে ছুটে ফলবাগানের দূরের এক কোনায় গিয়ে কুঁই কুঁই করতে লাগল মনের খুঁতখুঁতানি আরো বেড়ে গেল তাঁর । কাঁচার ক্যানারি পাখিটা যে সাধারনত কিচির মিচিরে ভ্যান চিলকে পাল্লা দেয়, খাঁচার কোণায় তার ভয়ার্ত ক্যাঁচর ক্যাঁচর শুনে কানিংহ্যামের সাথে সময় নষ্ট না করে সাক্ষাতের সংকল্প করলেন তিনি । তিনি যখন স্টেশনের দিকে যাচ্ছেন, তাঁর খালা তখন বিকেলের চায়ের দাওয়াতে সানডে স্কুলের পিচ্চিদের আপ্যায়নের ভার বুঝিয়ে দিচ্ছেন । দেখা করার পর কানিংহ্যাম প্রথমে মুখ খুলতে চাইলেন না । 'আমার মা মাথার সমস্যায় মারা গেছেন, আর সেজন্যই আশা করি আপনি বুঝবেন যে কোনো প্রায় অবাস্তব ব্যাপারে আমি খুব মাথা ঘামাই না ।' 'কিন্তু আপনি ঠিক "কী" দেখেছেন ?' জোর দিয়ে জানতে চাইলেন ভ্যান চিল । 'আমি যা দেখেছি তা এতো অদ্ভুত যে কোনো মানুষ তা বাস্তব বলে ভাবতে পারবে না । গতকাল বিকেলে আমি আপনার সাথে সাথে ফলের বাগানের গেটে ঝোপের বেড়াটার কাছে দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত দেখছিলাম । হঠাত আমি দেখলাম একজন নগ্ন কিশোর, ধরে নিলাম আশপাশের কোনো পুকুরে সাঁতার কাটতে এসেছিল, আমার মতই পাশের ন্যাড়া পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত দেখছে । ও বসার ভঙ্গিতে এতোটাই বুনো, পৌরানিক কোনো চরিত্রের ভাব ছিল যে ওকে আমি কোনো মডেল হিসেবে ব্যবাহার করব কি না ভাবতে লাগলাম । কিন্তু যেই না সুর্য দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল আর আকাশ ধুসর রং নিল, তক্ষুনি সেই আজব ঘটনাটা ঘটল । দেখি ছেলেটা স্রেফ অদৃশ্য হয়ে গেছে!' 'কী! স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে?' জানতে চাইলেন উত্তেজিত ভ্যান চিল । 'না, এইখানেই সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটা ঘটল,' বললেন শিল্পী । 'পাহাড়ের ঢালে খোলা জায়গাটায় যেখানে ছেলেটা দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে দেখলাম একটা কালচে ধুসর, হলদে চোখে মস্ত বড় নেকড়ে । আপনি ভাবতে পারেন--' চিন্তা ভাবনা করার মত ফালতু কাজে সময় নষ্ট করলেন না ভ্যান চিল । সোজা স্টেশনের দিকে উধর্্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করেছেন তিনি । টেলিগ্রাম করার চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলেন তিনি মন থেকে । 'গাব্রিয়েল আর্নেস্ট একজন মায়ানেকড়ে,' তাঁর খালা এ রকম টেলিগ্রামের নাও অর্থ উদ্ধার করতে পারেন । তাঁর একমাত্র আশা হচ্ছে সুর্য ডোবার আগেই বাসায় ফেরা । যে ক্যাবটা ভাড়া করে রেখেছিলেন স্টেশনের ও পারে তা অসম্ভব ঢিমে তালে চলছে বলেই তাঁর ধারনা । পড়ন্ত সুর্যের আলোয়, গাঁয়ের রাস্তা গোলাপী-বেগুনি রং নিয়েছে যখন বাসাব পৌঁছে খালাকে কিছু না খাওয়া কেক আর জ্যাম সরিয়ে রাখতে দেখলেন তিনি । 'গাব্রিয়েল আর্নেস্ট কই?' প্রায় চিৎকার করে জানতে চাইলেন তিনি । 'ও টুপদের বাচ্চাটাকে বাসায় পৌঁছে দিতে গেছে । এতো দেরী হয়ে গেছে যে একা একা ছাড়তে পারলাম না বাচ্চাটাকে । কী সুন্দর সুর্যাস্ত তাই না?' কিন্তু সুর্যাস্তের সৌন্দর্য নিয়ে কোনো মন্তব্য না করেই টুপ পরিবারের ঠিকানার দিকের সরু রাস্তা ধরে দৌড়াতে শুরু করেছেন ভ্যান চিল । রাস্তার একদিকের বাঁকে একদিকে নেমে গেছে মিল-পারের সেই স্রোতধারা, অন্য পাশে উঠে গেছে ন্যাড়া পাহাড়ের ঢাল । দিগন্ত রেখার উপর অপসৃয়মান সুর্যের লালচে গোলকটা দেখা যাচ্ছে । আরেকটা বাঁক ফিরলেই যাদের খুঁজছেন সেই যুগলটিকে দেখা যাবে আশা করছেন তিনি । ঠিক তখনই সুর্য অস্ত গেল, রঙহীণ হয়ে পড়ল গোটা পৃথিবী । একটা ভয়ার্ত চিৎকার শুনে থমকে দাঁড়ালেন ভ্যান চিল । টুপদের বাচ্চাটা বা গাব্রিয়েল আর্নেস্ট কাউকে আর এর পরে দেখা যায় নি । তবে দ্বিতীয়জনের কাপড়চোপড় ঠিক নালাটার ধারেই পাওয়া গেছে, যাতে মনে হয় যে বাচ্চাটা পানিতে পড়ে গেছিল আর তাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাপ দিয়েছে ছেলেটা । তবে একজন একই পথে বাড়িফিরতি শ্রমিকের ভাষ্য অনুযায়ী একটা শিশুর আতংকিত চিৎকার শূনেছে সে ওই জায়গায় । এগারো সন্তানের মা মিসেস টুপ সন্তান হারানো বেদনা স্থৈর্যের সাথেই মেনে নিয়েছেন, কিন্তু ভ্যান চিলের খালা, তাঁর সদ্য পাওয়া পোষ্য হারানোর বেদনা এতো সহজে মেনে নিতে পারলেন না । তাঁর চেষ্টাতেই স্থানীয় গির্জায় একটা পিতলের স্মারক-ফলক লাগানো হলো, যাতে লেখা ছিল অচেনা বালক গাব্রিয়েল আর্নেস্টের স্মৃতির উদ্দেশ্যে, যে কি না অন্যকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে খালার প্রায় সমস্ত আব্দারে সন্মতি দিলেও এই স্মারক ফলকে এক পয়সা দান করতে অস্বীকার করলেন মি. ভ্যান চিল । শেষ

আঁধার বিলাস - By লিপিকার

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Monday, September 12, 2011 at 10:14pm
ক্লাস চলাকালীন সময়ে জামিল হঠাৎ রাহাতকে কনুই দিয়ে খোঁচা দিল। রাহাত তাকাতেই সে বললো, "ভুডুচর্চার নাম শুনেছিস?"
"কিসের নাম?"
"ভুডুচর্চা। একধরনের ডাইনীবিদ্যা। প্রেতসাধনা টাইপ ব্যাপার স্যাপার।"
"জানিস এখন স্যার কি নিয়ে লেকচার দিচ্ছে। 'মলিকিউলার সিমেট্রি' আর তোর মাথায় ভুডুচর্চা! পাগলা তুই মানুষ হবি কবে?"
"ক্লাস শেষে সব বলব।" জামিল রাহাতকে টেনে রহিম মিয়ার চায়ের ঝুপড়ির পাশে নিয়ে গেল। কন্ঠ নামিয়ে বললো,"আমার সাথে এক জায়গায় যাবি?"
"কোথায়?"
"লালমাটিয়ার একটা বাসায়।"
"সেখানে গিয়ে কি হবে?"
"আগে চল তারপর বলব। ঐখানে আমার ওস্তাদ থাকেন। প্রেত সাধনা করে"
রাহাত অট্টহাসি দিয়ে বললো,"কে থাকে? তোর ওস্তাদ?প্রেত সাধনা করে?"
"হ্যাঁ আমার ওস্তাদ। আমাকে বুধবার মানে আগামীকাল তার বাসায় দাওয়াত করেছেন। তিনি একা থাকেন। আমি বলেছি আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আসব। আমরা রাতেও ওখানে থাকব। একা থাকতে কেমন জানি লাগে, এজন্য তুইও থাকবি।"
"রাতে থাকব কেন?"
"আগে বল তুই যাবি কিনা?"
"ভেবে দেখি।"
"ভাবাভাবির কিছু নাই। ঐখানে ওনার সাথে একটু পরিচিত হবি। তোর থাকতে ইচ্ছা হলে থাকবি নাহলে চলে আসবি.....সোজা হিসাব। কি... রাজি?"
"ওকে। যা রাজি।"
"থ্যাঙ্কস্‌ দোস্ত।" ঢাকা শহরে এমন জঙ্গলময় বাড়ি আছে এটা রাহাত জানতনা। বিশাল একতলা বাড়ি, চারপাশে অনেক বড় বড় গাছ, লনের ঘাসগুলো না কাটতে কাটতে অনেক লম্বা হয়ে গেছে। চারপাশে অযত্নের ছাপ। জামিল রাহাতকে প্রায় না শোনার মত ফিসফিস করে বলল, "ওস্তাদ কিছুদিন আগে মেক্সিকো থেকে আসছে।"
"এর সাথে তোর পরিচয় কিভাবে হয়েছে?"
"ইন্টারনেটে.....চ্যাট করতে করতে পরিচয়।"
"ওরে বাবা। আমি এতদিন জানতাম ইন্টারনেটে চ্যাট করে প্রেমিক প্রেমিকা হওয়া যায় আর এখন দেখি ওস্তাদ আর সাগরেদও হয়......হা হা হা"
"ফাইজলামি করিসনা।"
জামিল কলিংবেল টিপলো। ডিং ডং........রাহাত হঠাৎ টের পেল অজানা আশঙ্কায় তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।
যে ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলেন তাকে দেখে মুহুর্তেই সকল আশঙ্কা উবে গেল। চশমা পরা ভালোমানুষ টাইপ চেহারার একজন ৫০-৫৫ বছর বয়সের লোক। তিনি অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। রাহাত আর জামিল এত সুন্দর করে সাজানো ঘর খুব কমই দেখেছে। দুজনই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, এত দামী আসবাববপত্র দেখে নিজের অজান্তেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ভদ্রলোক সোফায় বসতে বসতে বললেন, "তোমাদেরকে তুমি করেই বলি।"
জামিল বললো, "'অবশ্যই, আমরা আপনার ছেলের বয়সী। স্যার আমার বন্ধু আপনার সম্পর্কে জানতে চায়। ভুডুচর্চার ব্যাপারে তার খুব আগ্রহ।"
জামিলের বানানো কথা শুনে রাহাতের কান খাড়া হয়ে যায়। ভুডুচর্চা নিয়ে রাহাতের আগ্রহ এটা ভাবতেই তার হাসি পাচ্ছে। আপাতত তার আগ্রহ হলো এই ভাঁড় দুইটা কি করে সেটা দেখা।
ভদ্রলোক বলতে লাগলেন,"আমি যখন তোমাদের মত তখন পড়তে চলে যাই কানাডায়। সারাদিন ক্লাস আর সারারাত পড়াশোনা দিয়েই কাটাতাম। বাপের প্রচুর টাকা থাকার কারনে কখনও পেটের চিন্তা করতে হয়নি। একদিন পরিচয় হয় এক সাউথ আমেরিকানের সাথে......ডেভিড রোজারিও। আমি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলাম বলে অনেক পরিচিতি পেতাম। ডেভিডের সাথে পরিচয় পর্বটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিলো। একদিন পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম। ডেভিড আমার দিকে সুন্দর করে হেসে বললো, "'আমি জানতাম তুমি এখন পড়ে যাবে, তোমার নিয়তিতে তাই লেখা ছিল, আমি ডেভিড... তুমি?"........হয়ত এখানেই তার পর্ব শেষ হয়ে যেত কিন্তু তা হয়নি। সে আমার জীবনে আজও ছায়ার মত আছে।" এইটুকু বলে ভদ্রলোক রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললো, "ইয়াং ম্যান, ইউ ডোন্ট বিলিভ মি? হাহ্‌!"
রাহাত হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কি বলবে ভেবে পেলনা। সে বললো,"ডেভিড কোন দেশের ছিল?"
"পেরু"
"আচ্ছা। তারপর......"
"তারপর ডিনার....." ডিনার শেষে রাহাত আর জামিল ড্রইং রুমে বসে আছে। রাহাত জামিলকে বললো,"দেখ, এত কথা শুনলাম অথচ বেটার নামটা জানিনা। বেটার নাম কি?"
"উনার নাম খালেকুজ্জামান।"
"এই বেটাতো একটা পাগল। শোন আমি পাগক ছাগলের সাথে থাকবোনা। খাওয়া শেষ এখন চলে যাব।"
লোকটা হঠাৎ রুমে ঢুকে বললো....."এখনতো যাওয়া যাবেনা। আসল মজা বাকি রয়ে গেছে।"
রাহাত মুখটা সুবোধ বালকের মত করে বললো, " আপনার কাহিনী এখনও শেষ হয়নি।"
"হ্যাঁ, ডেভিডের সাথে ঘুরাঘুরি করতে করতে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও একটু অদ্ভুত ছিলো। আজব এক সংগ্রহশালা ছিলো তার...মানুষের হাড় থেকে শুরু করে গাছের শিকড় সব ছিলো তার সংগ্রহে........আমার থিসিস কমপ্লিট হবার পর ডেভিড আমাকে একদিন অফার দিলো.....খালেক তুমি হাইতি যাবে?...আমি বললাম হাইতি গিয়ে কি হবে?...সে বললো, অন্যদের যা হয়না তা হবে।" তোমরা হয়ত বিশ্বাস করবেনা পরের মাসেই আমি তার পিছন পিছন হাইতি চলে গেলাম। ডেভিড গেল ভুডু শিখতে আর আমি গেলাম বেড়াতে"
জামিল বললো,"ওখানে গিয়ে কি করলেন?"
লোকটা হেসে বললো,"ওখানে গিয়ে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা দেখলাম"
"সেটা কী?"
খালেকুজ্জামান রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললেন"রাহাত দেখতো বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা?"
রাহাত উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলো বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
সে ফিরে আসতেই লোকটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,"তুমি কি মনে কর প্রেতসাধক হতে হলে আলখাল্লা পরতে হয় আর চুলে জট পাকাতে হয়?"
কথাটা শুনে রাহাত থমকে গেল কারন শুরু থেকেই সে এই লোককে অবিশ্বাস করে আসছে.........কিন্তু মনে হয় এই লোকের সুক্ষ কোন অজানা ক্ষমতা আছে মানুষের মন বোঝার।
রাহাত বললো, "এটা ২০০৮ সাল। আই ডোন্ট বিলিভ ইন ঘোস্ট।"
লোকটা রক্ত হিম করা হাসি দিয়ে বললো, "হা হা হা হা......মি টু। তুমি ভাগ্যবান এবং বুদ্ধিমান।" লোকটা আবার বলা শুরু করলো, "হাইতিতে আমি ছিলাম ১৮ বছর। এতদিনে দেশের সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে ফেলেছি। আমি সেটাই চেয়েছিলাম। প্রথম তিন বছর ডেভিড ছিলো আমার সাথে........তারপর আমি একা।"
"ডেভিড কি চলে গিয়েছিলো?"
"না মরে গিয়েছিলো। একদল জনতা তাকে জ্যান্ত আগুনে পোড়ায় আমার সামনে।"
শুনে জামিল আর রাহাত চমকে যায়। জামিল বলে, "কেন?"

লোকটা কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বললো......"এখন ১২টা বাজে....তোমরা প্রস্তুত?"
রাহাতের ঘাঁড়ের রোমগুলো খাড়া হয়ে গেল। লোকটা কিসের প্রস্তুতির কথা বললো?
সে নাকে কিসের যেন গন্ধ পেল। খুব বাজে গন্ধ। গন্ধটা থেকে থেকে আসছে। রাহাত বার বার জামিলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে লাগলো। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখলো জামিল খালেকুজ্জামানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
খালেকুজ্জামান আবার বলতে লাগলো........"আমি অজ্ঞান অবস্থায় তিনদিন ছিলাম। যেদিন জ্ঞান ফিরল সেদিন নিজেকে আবিষ্কার করলাম জনতার মাঝে, শয়ে শয়ে মানুষ আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঝুঁকে আছে। সবাই অর্ধ উলঙ্গ। কালো কালো বিদঘুটে চেহারার মানুষ। । আমাকে চোখ মেলতে দেখে লাঠি হাতে একজন মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসল। সে ছিলো ঐ গ্রামের নেতা। সে আমার বুকে লাঠি ঠেকিয়ে বললো, "আইডা কোথায়?" আমি কোন কথা বলতে পারলামনা...শুধু ইশারা দিয়ে বললাম যে আমি কিছুই জানিনা আমার কি হয়েছে। লোকটা আরেকটা লোককে ইশারা দিয়ে কি যেন বললো.......খেয়াল করে দেখলাম অনেক মানুষ মিলে এক জায়গায় কাঠ জড়ো করছে....তার মাঝে দুটো খুঁটি আড়াআড়ি করে ক্রস করে লাগানো......জেসাস ক্রাইস্টের ক্রসের মত। মুহুর্তের মধ্যে আমার মনে পড়ে গেল যে এরা আমাকে পোড়ানোর ব্যবস্থা করছে। আমার পাদুটো টলে গেল। কোনমতে বসে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগলাম....হঠাৎ খেয়াল করলাম সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে আমি ডাকছি "আইডা, আইডা, আইডা".........লোকগুলা আগুন জ্বালালো....তারমাঝে কিছু লাল রং ছিটিয়ে দিল....তারপর আমার মাথায় একরকম হলদে দুর্গন্ধময় তরল ঢেলে দিল....আমাকে চাবুক দিয়ে পেটাতে লাগলো....তিনদিন নাখাওয়া মানুষকে এভাবে পেটালে সে বেঁচে থাকার কথানা। কিন্তু আমি বেঁচে গেলাম। আর যে বাঁচালো সে হলো ডেভিড......." জামিল হাঁ করে শুনতে থাকলো.....তার চোখ দুটো যেন কোটর ছেড়ে বের হয়ে আসছে। সে মূর্তির মত বললো...."কীভাবে?"
রাহাত একটা কুকুরের কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। কুকুরের কান্না সে আগেও বহুবার শুনেছে কিন্তু আজকে সে এই শব্দটাকে ভয় পাচ্ছে। সে মনে মনে নিজেকে বলছে...."রাহাত তুমি ভয় পেওনা। সিচুয়েশনের কারনে তুমি ভীত।"
লোকটা চট করে রাহাতের দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর বলতে লাগলো....
"আমাকে যখন সবাই মারছে তখন এক লোক হঠাৎ দৌড়ে এসে আমার নিশ্চল দেহের উপর শুয়ে পড়লো। এই আকস্মিক ঘটনায় গ্রামবাসী কিছুটার জন্য চমকে গেল। তারা লোকটাকে দাঁড় করালো.....আমি আধচোখ মেলে দেখলাম.....ডেভিড।" সেদিনের জন্য আমরা বেঁচে গেলাম....ঐদিন আর আমাদেরকে তারা পোড়ালোনা। গ্রামবাসী একটা মাচা বানালো.....তার উপরে আমাদের দুজনকে বেঁধে রাখলো..মাচার নিচে তিনটা বিশাল বিশাল নেকড়ে ছুটোছুটি করছে.....পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে দুজন পড়ে রইলাম। আমি বারবার এলিয়ে পড়ছিলাম....ডেভিড হঠাৎ ফিসফিসিয়ে আমাকে বললো....কালকেই সব শেষ হয়ে যাবে। আমি বললাম...."আইডা কোথায়?" ডেভিড কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো..."সে মিলিয়ে গেছে...তার অনন্য ক্ষমতা দিয়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে যখন সে জানতে পেরেছে গ্রামবাসী তার খোঁজ পেয়ে গেছে।"
"সে কোথায় মিলিয়ে গেছে?"
"তোমার মাঝে"
আমার হঠাৎ মনে পড়লো আইডার হাতে হাত রাখার পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গিয়েছিলো। আমি দম নিয়ে বললাম..."আইডা আমার মাঝে। কিন্তু আমি টের পাচ্ছিনা কেন?"
"জানের বদলা জান।"
"মানে?"
"আইডা তখনই ক্ষমতা দেখাতে পারবে যদি তার নামে কাউকে বলি দেওয়া হয়।"
"মানে?"
"তুমি কি ক্ষুধা অনুভব করছ?"
আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম আমার শরীরে ব্যথা কিন্তু কোন ক্ষুধা নেই। ডেভিড হেসে বললো....."এটাই আইডার অস্তিত্বের প্রমান। আমি আইডার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করব। তুমি শুধু আমার মৃত্যুর পর রক্তটুকু পান করবে তাহলেই আইডা ক্ষমতা ফিরে পাবে।"
"আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। আমার কি হবে?"
"তুমিতো তুমিই থাকবে। আইডাকে তুমি ধারন করবে।"
এরপর লোকটা দম নেয়ার জন্য থামল। রাহাতের শিড়দাঁড়া বেয়ে বারবার যেন শীতল কিছু বয়ে যাচ্ছে। সে আস্তে বললো....."তারপর কি হলো?..."
খালেকুজ্জামান হেসে তার দিকে তাকিয়ে বলল...."তারপর ভোর হলো। গ্রামবাসী আবার কাঠ জড়ো করল...দুটো ক্রস বানালো...ডেভিডকে আমি জিজ্ঞেস করলাম "আমাকে এরা পেল কোথায়?"
"আইডার ঘরে অজ্ঞান অবস্থায়। আমি গ্রামবাসীকে দেখে প্রথমে পালিয়ে গিয়েছিলাম। তাদের হাতে পড়লে তোমাকে বাঁচানো যাবেনা।"
"এখন কি আর বাঁচব?''
ডেভিড হাসলো। দুটো লোক মাচার উপরে উঠলো। তাদের দুজনের হাতেই ধারালো দুটো বড় বড় ছোরা। আমাদের দুজনকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামালো। ডেভিড আমার কানের কাছে মুখ নামিয়ে বললো...."তুমি শুধু রক্তটুকু পান করবে"
এই বলেই সে হঠাৎ পাশে দাঁড়ানো লোকটার হাত থেকে ছোরা নিয়ে নিজের গলায় পোঁচ দিল। আমি চিৎকার করে উঠলাম.....ডেভিড ঘড়ঘড় জাতীয় শব্দ করতে থাকলো। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো....আমি দেখলাম আমার চারপাশে বালি কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুরছে....একটা বাজে গন্ধ নাকে লাগছে...গ্রামবাসী ভয়ে দূরে সরে গেল। কিছু একটা প্রচন্ড শক্তিতে আমাকে ডেভিডের কাছে নিয়ে ফেলল.......তারপর নিজ থেকেই আমার মুখ ডেভিডের গলার দিকে এগিয়ে গেল.........."
খালেকুজ্জামান আবার কিচুক্ষন চোখ বন্ধ করল। চোখ মেলে তীক্ষ্ণ চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল......"নোনা রক্তের স্বাদ......ডেভিড ঘড়ঘড় করে আমাকে বলল যে সে এখনও মরেনি। আমি নিজেকে কোনভাবেই নাড়াতে পারছিলামনা। কেউ আমাকে প্রচন্ড ভারী করে ফেলেছে....ততক্ষনে সাহসী কিছু গ্রামবাসী এগিয়ে আসল....তাদের কেউ কেউ আমাদের দিকে জ্বলন্ত কাঠ ছুঁড়ে মারলো...দুজন এসে ডেভিডকে তুলে ধরল। তাকে টেনে নিয়ে গেল আগুনের কাছে....আমার দিকে কারো খেয়াল ছিলোনা.....আমি ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে মাটিতে ঘেঁসে ঘেঁসে পিছাতে থাকলাম...কেউ বুঝতে পারছিলনা কিছুই....যেতে যেতে দেখলাম তারা রক্তাক্ত ডেভিডকে ক্রসে বেঁধে ফেলল। ডেভিড আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি একমনে বলে গেলাম..."আইডা একটা কিছু কর।"......দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। গ্রামের মানুষগুলো আনন্দ ধ্বনি তুলে নাচতে লাগলো......কারো কারো মুখে গান..কেউ কেউ মন্ত্র পড়ছিলো.....ডাইনী তাড়ানোর মন্ত্র। আমি একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম...গ্রামের লোকগুলোর যখন খেয়াল হলো আমার কথা ততক্ষনে আমি অনেক দূরে চলে গেলাম...গ্রাম ছেড়ে বহু দূরে...প্রচন্ড শক্তিতে আমি দৌড়াতে থাকলাম.........এ এক ভয়ানক ছুটে চলা......বাকি ১৫ বছর হাইতিতে ছুটে চলেছি....তারপর পেরু.....এর পর মেক্সিকো....। আমি আজও ছুটে চলছি।" রাহাত থেকে থেকে গন্ধটা পাচ্ছে। এখন গন্ধটা বেশী লাগছে। জামিলের চোখ কোটর ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তার গা কেঁপে কেঁপে উঠছে। জামিল জড়ানো কন্ঠে বললো....."আইডার কি হলো?" লোকটা ঝট করে উঠে দাঁড়ালো তারপর হাতদুটো দুপাশে মেলে ধরে দাঁড়িয়ে বলল, "আইডা এখানে।"
রাহাত চমকে গেল। লোকটা আবার বসে বলল...."আমি ডেভিডের রক্ত পান করতে পারিনি.....যেটুকু পান করেছি সেটা ছিল জীবিত ডেভিডের। আইডা এখনও আমাকে তাগাদা দেয় ডেভিডের রক্তের জন্য......সে তার পূর্ন ক্ষমতা প্রকাশ করতে পারছেনা।"
"তার পূর্ন ক্ষমতা কি?" জামিল জিজ্ঞেস করল।
"তার পূর্ন ক্ষমতা হলো যে কোন মানুষের দেহে যখন তখন নিজেকে ধারন করে অনন্তকাল বেঁচে থাকা। এর জন্য দরকার তার উদ্দেশ্যে বলী দেওয়া কোন মানুষের রক্ত। পান করলেই সে মুক্ত হয়ে চলে যাবে অন্য কারো দেহে।"
"আপনাকে সে মুক্ত করেনি?"
"হা হা হা.......না।"
"কেন?"
"কারন আমি এতদিন বলী দেওয়ার জন্য ডেভিডের মত কাউকে পাইনি।" রাহাত বিপদ আঁচ করতে পেরে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, তারপর জামিলের হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে দরজার দিকে ছুটে যায়। কিন্তু খালেকুজ্জামান ভয়ানক শক্তিতে তাকে আটকে ফেলে। রাহাতের হাত মুচড়ে পিছনে নিয়ে যায় সে। রাহাত ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকে। জামিল দৌড়ে ঘরের কোনায় রাখা সেলফ্‌ থেকে একটা ফুলদানী এনে সজোরে আঘাত করে লোকটার মাথায়। লোকটা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে রাহাতের হাত ছেড়ে দেয়। তারপর তারা দুইজন উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যায় দরজার দিকে.......কিন্তু তার আগেই একটা কালো ধোঁয়া তাদের ঘিরে পাক দিয়ে ঘুরতে থাকে। একটা নারী কন্ঠের চাপা হাসি শুনতে পেল তারা। হঠাৎ দুইজন দুইদিকে ছিটকে পড়ে....... রাহাত দেখলো লোকটা জামিলের বুকের উপর বসে পড়লো। সে নিজেকে টেনে জামিলের কাছে চলে যায়। তারপর হাত দিয়ে লোকটাকে জাপটে ধরে। এক অশরীরী শক্তি তাকে আবারো ছিটকে দূরে নিয়ে ফেললো। লোকটা ভয়ানক হাসি দিয়ে বলল ..."জামিল! তুমি জান আমি কত বছর ডেভিডের মত একজনকে খুঁজছি! তুমি আমাকে মুক্ত করলে চীরজীবনের জন্য। আমি তোমার কাছে ঋনী।"লোকটা ততক্ষনে অস্বাভাবিক সুরে মন্ত্র জপতে জপতে একটা ধারালো ছোরা উপরে তুলে খুব জোরে বসিয়ে দিল জামিলের গলায়। রাহাত এই দৃশ্য দেখে ভয়ানক জোরে চিৎকার করে উঠলো। জ্ঞান হারানোর আগ মুহূর্তে রাহাত দেখলো লোকটা মৃত জামিলের গলার দিকে মুখ নামিয়ে নিচ্ছে।

জ্ঞান ফিরে আসার পর রাহাত নিজেকে তার অতি পরিচিত মেসের বিছানায় আবিষ্কার করল। তার মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কেন করছে সে বুঝতে পারছেনা.....কাল রাতে সে কোথায় ছিলো........ইউনিভার্সিটি থেকে সে কখন মেসে ফিরেছে তাও মনে করতে পারলোনা। পা টলতে টলতে হেলে দুলে সে বাথরুমে গেল। মুখের কোথাও কোথাও হেঁচড়া খাওয়ার মত দাগ দেখে সে অবাক হলো। তারপর ঘর থেকে বের হয়ে সে মেসের সামনের চা দোকানে গেল। সেখানে এক লোক জোরে জোরে আরেক লোককে খবর পড়ে শুনাচ্ছে........."বুঝলেন ভাই.....দেখেন দেশের আইন শৃঙ্খলা কোথায় গেছে। কাল রাত তিনটার দিকে পুলিশ ধানমন্ডির এক রাস্তায় জবাই করা এক যুবকের লাশ পাইছে। কে বা কারা তারে জবাই করছে পুলিশ কিছুই কইতে পারেনা। দেখছেন কী অবস্থা!"

বেফাস হৃদয়

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Sunday, September 11, 2011 at 9:59pm
সত্যি, অনেক বেশী ঘাবড়ে গিয়েছিলাম; খুব ভংঙ্করভাবে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু কেন, আপনার কি ধারণা আমার মাথা ঠিক নেই। সেই ঘাবড়ে যাওয়া আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে আরো তীক্ষ্ণ করেছে; ধ্বংশ করে নি, ভোঁতাও করে নি। মোটের ওপর আমার শ্রবণ শক্তি ছিল অসাধারণ। আমি স্বর্গ এবং মর্ত্যের সব কিছুই শুনতে পেতাম। নরকের অনেক শব্দই শুনেছি আমি। কিভাবে? তবে, আমি কি উন্মাদ? মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং দেখেন কত গুছিয়ে, কত শান্ত ভাবে আমি আপনাকে সমস্ত ঘটনাবলীর বিবরণ দিই।
আসলে এটা বলা কঠিন কত তাড়াতাড়ি উদ্দেশ্যটা আমার মাথায় বাসা বেঁধেছিল। তবে এটুকু বলতে পারি, মাথায় আসা মাত্রই আমার মগজের মধ্যে সেঁটে গিয়েছিল এবং সেই থেকে দিন-রাত আমাকে তাড়া করে বেড়াতো। বলবার মত কোন বিষয় সেখানে ছিল না। ছিল না বিশেষ কোন আবেগ। আমি বৃদ্ধ লোকটিকে ভালোবাসতাম। সে কখনোই আমার ওপর কোন অবিচার করে নি, অপমানও করে নি । তার গুপ্ত ধনের ওপর আমার কোন লোভ ছিল না। আমার মনে হয় তার চোখটিই সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী ছিল! হ্যাঁ, আমি হলফ্ করে বলতে পারি এ কথা! তার চোখ ছিল শকুনের মতন তীক্ষ্ণ, পর্দাটি ছিল ফেকাসে নিলাভ। যখনই চোখে চোখ পড়ত, আমার গা ঘিন ঘিন করতো, রক্ত যেত জমে; ফলে আস্তে আস্তে, অনেক ভেবে চিন্তে আমি ঠিক করেছিলাম বৃদ্ধ লোকটিকে মেরে এই বিভৎস চোখ দুটির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবো।
এখন আপনারা আমাকে পাগল বললেও বলতে পারেন। উন্মাদগ্রস্থ ব্যক্তিরা তাদের কাজ কর্ম সম্পর্কে অবগত থাকে না। কিন্তু আপনারা দেখে থাকবেন আমাকে-দেখে থাকবেন কত গুছিয়ে, কত সতর্কতার সাথে, কতটা দূরদৃষ্টি নিয়ে, কতটা ছলনার সাহায্যে আমি কাজটি করেছিলাম! আমি বৃদ্ধ লোকটির ওপর এতটা দয়া কখন প্রদর্শণ করিনি যতটা আমি তার ওপর করেছি যে সপ্তাহে তাকে আমি মারার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। প্রতিদিন রাতে- ঠিক মধ্যরাতে, আমি ছিটকিনি টেনে তার দরজা খুলতাম, আপনি ভাবতেই পারবেন না কতটা সাবধানে আমি কাজটি করতাম! এবং যখন আমার মাথা ঢুকানোর মত যথেষ্ট ফাঁক হয়ে যেত আমি অন্ধকার কক্ষে লণ্ঠন প্রবেশ করতাম। সব বন্ধ, একেবারে বন্ধ, যাতে করে বাইরে থেকে কোন আলো দেখা না যায়। এবং তারপর চট করে আমি আমার মাথাটা ভেতর ঢুকিয়ে দিতাম। আপনি শুনে হাঁসবেন কতটা চতুরতার সাথে আমি ভিতরে ঢুকতাম! খুব সাবধানে পা ফেলতাম, খুবই সাবধানে যাতে করে বৃদ্ধ লোকটির ঘুমের ব্যঘাত না ঘটে। আমার এক ঘন্টা সময় লেগে যেত সব কিছু স্বাভাবিক করতে, ব্যস! এখন বলুন, একটা পাগল কি এই মুহূর্তে এতটা বিচক্ষণ হতে পারে? এবং তারপর যখন আমি সম্পূর্ন স্বাভাবিক হয়ে উঠতাম, খুব সতর্কতার সাথে লণ্ঠনটা বন্ধনমুক্ত করে ফেলতাম, খুবই সতর্কতার সাথে, যাতে করে একটা হালকা আলোকচ্ছটা শকুনরুপী চোখের ওপর গিয়ে পড়ে। সাত রাত ধরে আমি একই কাজ করেছিলাম; প্রতি বারই মধ্যরাতে। কিন্তু সবসময় চোখটিকে বন্ধ অবস্থায় দেখতে পেতাম; ফলে আমার পক্ষে তাকে খুন করা সম্ভব হত না, কারণ বৃদ্ধ লোকটি আমাকে বিক্ষুব্ধ করত না, বিক্ষুব্ধ করত তার ঐ জ্বালাতনময়ী চোখ। প্রতিদিন সকালে, সবকিছু স্বাভাবিক হলে, আমি বেশ সাহস সঞ্চার করে বেহায়ার মত তার চেম্বারে যেতাম, আন্তরিকতার সাথে তার নাম ধরে তার সাথে কথা বলতাম, এবং বুঝতে চেষ্টা করতাম গত রাতটি সে কেমন কাটিয়েছে। এখন আপনারা বুঝতে পারছেন, সে খুবই বয়স্ক একজন মানুষ। আমি যে প্রতি রাতে ঠিক বার টার সময় তার রুমে যাই এ ব্যাপারে তার সন্দেহ করার কোন কারণ ছিল না।
অষ্টম রাতে আমি দরজা খোলার ব্যপারে অন্যান্য রাতের থেকে অনেক বেশী সতর্ক ছিলাম। ঘড়ির কাটাও আমার থেকে বেশী জোরে নড়াচড়া করছিল। ঐ রাতের পূর্বে কখনো আমার নিজের শক্তি এবং বিচক্ষণতাকে এতটা তীব্রভাবে অনুভব করিনি। আমি খুব কমই আমার বিজয়োল্লাসকে চেপে রাখতে পারতাম। আমি যে কুমতলব এঁটে রাতের অন্ধকারে চুপিসারে দরজা খুলে তার কাছে গিয়েছিলাম, তা সে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি; এসব ভেবেই আমি মুরগীর ছানার মতন ডেকে উঠেছিলাম, এবং খুব সম্ভবত সে তা শুনতে পেয়েছিল; যার জন্য সে বিছানাতে নড়েচড়ে উঠেছিল , যেন সে চমকে গেছে। এখন আপনি ভেবে থাকবেন, আমি পিছিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু না। তার কক্ষটি ছিল পিচের মতন কালো, নিবির অন্ধকারে ঢাকা (কারণ চোরের ভয়ে জানালা পাল্লাগুলো টানা ছিল)। আমি জানতাম সে দরজা খোলা দেখতে পাবে না। তাছাড়া আমি দরজার পাল্লাটা ভিড়িয়ে দিয়েছিলাম।
আমার মাথা ভেতরেই ছিল, লন্ঠন জ্বালাতে যাবো এমন সময় লণ্ঠনের গায়ে আঙুল পিচলিয়ে যাবার শব্দে বুড়ো বিছানা থেকে ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে উঠে বলে উঠল, “কে ওখানে?”
এতকিছুর পরেও আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলাম। এক ঘন্টার মত আমি এক চুলও নড়িনি এবং বৃদ্ধের ঘুমানোর শব্দ শুনতে পাইনি। সে তখনো বিছানায় কান পেতে বসে দেয়ালে গুবরে-পোকার কাঠ কাটার শব্দ শুনছিল; যেমনটি আমি করেছি রাতের পর রাত।
কিছুক্ষণ পরে আমি হলকা গোঙানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। বুঝতে পারলাম এটা তার মরণ ভয়ের আতঙ্ক। এটা কোন অসুখের গোঙানি নয়, নয় কোন কষ্টের; এটা ছিল অধিক ভয় পাওয়ার ফলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার শব্দ। এ শব্দটি আমার বেশ ভালো করেই চেনা। বহুরাতে, ঠিক মধ্যরাতে, যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে তখন এটা আমার বুক চিরে বেরিয়ে আসে। বুঝতে পারছিলাম, মুরব্বি কেমন অনুভব করছিল। আমার তার জন্য করুণা হচ্ছিল যদিও ভেতরে ভেতরে বেশ তৃপ্তি অনুভব করছিলাম। আমি জানতাম সে প্রথম থেকেই ঘুমানোর ভান করে জেগে ছিল। তার ভয়গুলো ক্রমেই তার ওপর চড়াও হচ্ছিল। সে যারপরনায় চেষ্টা করছিল সবকিছু স্বভাবিক করতে, কিন্তু কিছুতেই পারছিল না। সে নিজেকেই নিজে বলল,“চিমনি দিয়ে বাতাস ঢুকছে এছাড়া আর এটা তেমন কিছু না! এটা একটা ইঁদুরের মেঝের এপাশ থেকে ওপাশ যাওয়ার শব্দ,” কিম্বা, “এটা শুধুমাত্র একটা ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ।” এগুলো বলে সে নিজেকে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করছিল মাত্র কিন্তু কোনটাই কাজে আসল না। কেননা ততক্ষণে, মৃত্যু অন্ধকারকে আকড়ে তার সন্নিকটে এসে তাকে আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল। কিছু একটার উপস্থিতি তার ভেতরকে বিষিয়ে দিচ্ছিল যদিও সে ঘরের ভেতর আমার অবস্থানকে টের পাওয়ার মতন তেমন কিছু দেখেওনি-শোনেওনি।
তারপর আমি অনেক্ষণ ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করি। সে তখনো ঘুমায়নি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, লণ্ঠনের আলোটা হালকাভাবে বের করার, খুবই হালকাভাবে। আমি তাই করলাম যতক্ষণ না মাকড়োসার সুতার মত হালকা আলোকরশ্মী তার শকুনের মতন চোখের ওপর গিয়ে পড়ল। আপনি ভাবতেই পারবেন না কতটা চুপিসারে আমি কাজটি সেরেছিলাম। তার চোখ খোলা ছিল প্রসস্থভাবে। তার চোখের দিকে তাকাতেই ক্রোধোম্মত্ত হয়ে পড়লাম। আমি পরিস্কারভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম, বিরক্তিকর নীলাভ চোখের ওপর খুব জঘন্য একটি পর্দা যা দেখে আমার হাড়ের মজ্জাগুলো ঠাণ্ডায় কাঁপতে শুরু করেছিল। আমি কিন্তু বৃদ্ধ লোকটির চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। তার ঐ জঘন্য জায়গাটি যেন আমার সমস্ত চেতনাকে গুম করে রেখেছিল। এখনো কি আমি আপনাদের বলিনি যে পাগলামীর জন্য যে ভুলগুলো হয় তা হল ইন্দ্রিয়গুলোর খুব বেশি তীব্র হওয়া? এখন আমি একটি চাপা-বিরক্তিকর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম, এ ধরনের শব্দ সাধারণত ঘড়ি প্যাকেটে অথবা কাপড় দিয়ে মোড়ানো থাকলে শোনা যায়। এ শব্দটিকেও আমার বেশ ভালো করেই চেনা। এটা ছিল বৃদ্ধ লোকটির হার্ট বিটের শব্দ। এটা আামার ক্রোধকে বাড়িয়ে দিচ্ছিল বহুগুণে, ড্রামের শব্দ যেমন করে সৈনিকদের সাহসকে বাড়িয়ে দেয়। এত কিছুর পরেও আমি সংযত ছিলাম এবং যতটা সম্ভব চুপচাপ থাকার চেষ্টা করছিলাম। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস যেন থেমে আসছিল। আমি লণ্ঠনটি খুব শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম এবং চেষ্টা করছিলাম আলোকরশ্মীটাকে যতটা সম্ভব তার চোখের ওপরে রাখার। ইতিমধ্যে হার্টবিটের নরকতুল্য শব্দটা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। এটার শব্দ এবং গতি বেড়েই চলেছিল। বৃদ্ধ লোকটির ভয় হয়ত চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠে পড়েছিল! আমি পূর্বেই আপনাকে বলেছি যে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, আসলেই আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এই নিশুতি রাতে, পৌড় বাড়ীর ভয়ংকর নিরবতাকে ভেদ করে আসা এই শব্দটি আমার ক্রোধকে করে তুলেছিল নিয়ন্ত্রণহীন। কিছুক্ষণ পূর্বেও আমি যথেষ্ট সংযত ছিলাম। কিন্তু এখন হার্ট বিটটা যে গতিতে বেড়ে চলেছে তাতে আমার মনে হচ্ছে, খুব শ্রীঘ্রই তার বিস্ফোরণ ঘটবে। এখন আরো একটা উদ্বেগ কাজ করছে : আশে পাশের কেউ শব্দটি শুনে না ফেলে! আমি তীব্র চিৎকার দিয়ে লণ্ঠনটা উম্মুক্ত করে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম। সে একবার চেচিয়ে উঠল, শুধুমাত্র একবার। নিমিষে আমি তাকে মেঝেতে টেনে হিঁচড়ে নামালাম এবং ভারী বিছানার তোশকটা তার শরীরের ওপর ফেলে দিলাম। আমার কাজের নিস্পত্তি ঘটার আনন্দ আমার চোখে মুখে ফুটে উঠল। তারপর অনেক সময় ধরে আমি আমার হার্ট বিটের চাপা শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। এটা আমাকে বিন্দু মাত্র ভাবিয়ে তোলেনি। জানতাম, দেয়ালের বাইরের কেউ এটা শুনতে পাবে না। অবশেষে এটা কমে আসলো। বৃদ্ধ মরে পড়ে ছিল। আমি তোশকটা তার ওপর থেকে সরালাম এবং মৃত দেহটি পরীক্ষা করলাম। সে পাথরের মতন জমে গিয়েছিল। আমি আমার হাতটা তার বুকের ওপর রেখে তার হার্টবিটকে অনুধাবণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম। সে ততক্ষণে মরে ভূত হয়ে গিয়েছিল। তার চোখটি আর আমাকে জ্বালাতে পারবে না।
এখনও যদি আপনি আমাকে পাগল মনে করেন তবে আমার মৃত দেহ সরানোর বুদ্ধি ও কৌশলের বর্ণনা শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারবেন। রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছিল বিধায় আমি নীরবে কিন্তু বেশ দ্রুততার সাথে কাজ সারছিলাম। প্রথমে আমি মৃত দেহের প্রতিটা অঙ্গকে পৃথক করলাম। মাথা কাটলাম, হাত কাটলাম, পা দুটো কাটলাম। তারপর মেঝের পাটাতন থেকে তিনটা তক্তা ছাড়ালাম এবং দেহের প্রতিটা অঙ্গকে তক্তাগুলোর ওপরে সাজালাম। অত:পর তক্তাগুলোকে তাদের পূর্বের স্থানে এমন নিখুঁতভাবে সেঁটে দিলাম যে কারও সন্দেহ করার বিন্দু মাত্র অবকাশ রইল না। মেঝেতে ধুয়ে ফেলার মত রক্ত, নোংরা কিংবা এ জাতীয় কিছুই লেগে ছিল না। আমি এ ব্যপারে যথেষ্ট সচেতন ছিলাম। একটা পাত্রই এসবের জন্য যথেষ্ট ছিল, হাঃ হাঃ হাঃ ! ভোর চারটার দিকে আমার সকল পরিশ্রমের সমাপ্তি ঘটল। তখনও মধ্যরাতের মত গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা ছিল চারপাশ। ঘন্টা বাজার সাথে সাথে সম্মুখ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা গেল। আমি বেশ হালকা মেজাজে দরজা খোলার জন্য এগিয়ে গেলাম- এখন আমার ভয় পাবার কি আছে? তিনজন লোক প্রবেশ করল যারা বেশ ভদ্রভাবে নিজেদেরকে পুলিশের অফিসার হিসাবে পরিচিতি দিল। রাতের বেলায় প্রতিবেশীদের কয়েকজন নাকি একটা চিৎকারের শব্দ শুনতে পেয়ে তাদের খবর পাঠিয়েছে এবং সেই চিৎকারের তদন্ত করার জন্যই তাদের এখানে আসা। আমি হাসলাম, কেননা আমি এখন নির্ভার, আমার ভয় পাবার কি আছে? আমি ভদ্রলোকদের ওয়েলকাম জানালাম। আমিই রাতে স্বপ্নের মধ্যে চিৎকারটি করেছিলাম, তাদেরকে বললাম। আরো বললাম যে বৃদ্ধ লোকটি দেশের বাইরে গেছে। আমি তাদেরকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে সার্চ করার আমন্ত্রণ জানিয়ে বললাম, ভালো করে খুঁজে দেখুন। আমি শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ঐ কক্ষেও নিয়ে গেলাম। তার জিনিস-পত্র দেখালাম। আমার অধিক আত্মবিশ্বাস দেখাতে তাদের অবসাদ ঘুচানোর ছলে কক্ষের ভেতর চেয়ার এনে দিলাম; এবং আমি নিজের চেয়ারটা বেশ সাহস নিয়ে যেখানে মৃতের দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছে তার ওপর পেতে বসলাম। অফিসাররা আমার ব্যবহারে বেশ মুগ্ধ হল। আমি বেশ উৎসাহ সহকারে তাদের প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম এবং মাঝে মধ্যে তারা চলতি সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলছিল। কিন্তু অনতি-বিলম্বে, সবকিছু আমার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠল এবং তাদের চলে যাবার জন্য আমি মনে মনে প্রার্থনা করলাম। আমার মাথা ব্যথা করছিল এবং অদ্ভুত একটা শব্দ এসে আমার কানে বাড়ি মারছিল। তাদের ওঠার কোন লক্ষণ দেখছিলাম না। এদিকে সেই অদ্ভুত শব্দটা বেড়েই চলেছিল এবং এটা ক্রমেই আরো অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। আমি এটা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আরো সহজভাবে কথা বলছিলাম কিন্তু এটা বেড়েই চলেছিল এবং ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। একসময় অনুভব করলাম শব্দটির উৎস আমার কান না। কোন সন্দেহ নেই আমি আরো বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, এবং উঁচু গলায় ঝড়ের বেগে কথা বলছিলাম। শব্দটির গতি আরো বেড়ে গিয়েছিল, মনে হচ্ছিল কানের ভেতর কে যেনো ঢোল পেটাচ্ছে। আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি হাঁপাতে শুরু করেছিলাম। এতকিছুর পরেও অফিসারেরা কিছুই টের পাচ্ছিল না। আমি আরো দ্রুত, আরো আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিলাম; কিন্তু শব্দটা বেড়েই চলেছিল। আমি উঠে দাঁড়ালাম, এবং খুবই তুচ্ছ বিষয়ে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে তর্কাতর্কি শুরু করে দিলাম, শব্দটা কিন্তু বেড়েই চলেছিল। তারা যে কেন চলে যাচ্ছে না! আমি লম্বা লম্বা পা ফেলে মেঝের এদিক ওদিক পায়চারি করছিলাম; বোঝাতে চাচ্ছিলাম তাদের পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট হয়েছে। শব্দটা বেড়েই চলেছে। হায় খোদা ! আমি এখন কি করবো? আমি এতটাই খেঁপে গিয়েছিলাম যে মুখ দিয়ে ফেনা উঠছিল এবং বার বার দিব্যি কাটছিলাম। আমি যে চেয়ারটিতে বসে ছিলাম সেটা মেঝের সাথে টানা হিচড়া করে একধরনের বিরক্তিকর শব্দ করছিলাম কিন্ত সেই শব্দটা এই শব্দটাকে ছাড়িয়ে আমার কানে এসে গুতা মারছিল। শব্দটা বেড়েই চলেছিল। এতকিছুর পরেও তারা বেশ আয়েশ করে গল্প করছিল। তারা কি তবে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না ? এটা কি করে সম্ভব ? হায় খোদা! তারা বোধহয় শুনতে পাচ্ছে, বুঝতে পেরেছে সবই, তারা আমার ভয়টাকে নিয়ে উপহাস করছে! এসব সাত পাঁচ ভাবনা আমার মাথায় ভর করছিল। আমি যেকোন ভাবে এই নিদারুণ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি কামনা করছিলাম। তাদের উপহাস এবং ভণ্ডামি মার্কা হাসি আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। ইচ্ছে করছিল মরে যেতে অথবা চিৎকার দিয়ে সব বলে দিতে। ওহ্ আর পারছিলাম না, শব্দটা আমার কান ভেদ করে যেনো মাথার ভেতর ঢুকে পড়েছিল!
“শয়তানেরা,” আমি চেচিয়ে বললাম, “আমার সাথে আর ছলচাতুরী করিস না! আমি! হ্যাঁ আমিই খুন করেছি! এইখানের তক্তা গুলো তুলে দেখ, ঠিক এইখানে! এটা তার ভয়ংকর হৃদপিন্ডের ধুক ধুক শব্দ!” গল্প: এডগার এ্যলান পো
অনুবাদ: মোজাফফর হোসেন

ছাঁয়া - লিখেছেনঃ জোবায়ের বিন ইসলাম

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, September 10, 2011 at 10:05pm
আমি তখন মেডিকেল কলেজের ফিফ্থ ইয়ার এর ছাত্রী। ঢাকায় বাসা হবার কারনে অন্য সব ছাত্রীদের মত আমাকেও মেডিকেল কলেজের হলেই থাকতে হত। সেদিন ইভিনিং শিফ্ট সেরে হলে ফিরতে অনেক রাত হয়েছিল বলে তাড়াহূড়ো করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম আর প্রায় সাথে সাথেই ঘুম এসে গেল। ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখলাম কলেজের মর্গে লাশ কাঁটার বিছানায় আমি শুয়ে আছি আর ফরেনসিক বিভাগের এক ডাক্তার একে একে আমার পড়নের সমস্ত পোশাক খুলে ফেলছেন। বুঝলাম আমি তখনও জীবিত, কিন্তু সবাই ভাবছে আমি মরে গেছি আর তাই পোস্টমর্টেমের জন্য আমাকে এখানে রাখা হয়েছে। আমি তখন হাত পা নাড়তে কিংবা কোন শব্দ করতে পারছিলাম না, শুধু বুঝতে পারছিলাম ডাক্তার এখন আমার পোস্টমর্টেম না করে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আমাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে কাপড় গুলা দূরে একটি বিছানায় সরিয়ে রাখলেন তিনি। তারপর ডাক্তার আমার দিকে এগুতেই হঠাৎ আমার মোবাইলের পরিচিত রিং-টোন শুনতে পেলাম। বুঝলাম বিছানায় রাখা আমার কাপড়ের ভিতর থেকে মোবাইল ফোন বাঁজছে। রিং এর আওয়াজ ক্রমেই বেড়ে চলেছে আর ডাক্তার ক্রমশ এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। হঠাত মনে হল এটা একটা দুঃস্বপ্ন। তাই প্রাণপনে ঘুম ভাংগার চেষ্টা করলাম আর এক সময় ঘুম ভেংগে গেল। ঘুম ভাংগার পর দেখলাম সত্যি আমার মোবাইলে রিং হচ্ছে। মনে মনে কলার কে ধন্যবাদ দিলাম, কারন তিনি ফোন না করলে ঘুমের মাঝে আরো কত কি হত কে জানে! -হ্যালো -ভাল আছ এষা? -হ্যাঁ। কে বলছেন? -কেন চিনতে পারছ না? -না। কে হাসান ভাই নাকি? -না হাসান না। -তাহলে কে? -তুমি এখন কি পড়ে আছ এষা? স্কার্ট না সালোয়ার কামিজ? -থাপড়ায় গালের দাঁত ফেলে দিব হারামীর বাচ্চা। এই বলে ফোন রেখে দিয়ে কলারের নাম্বার চেক করলাম। অপরিচিত নাম্বার, মোবাইলে সেইভ করা ছিল না। ব্যাটা জানত যে আমি ঘুমাচ্ছি, তাই ফোন ধরার আগে নাম্বার চেক করব না। তাই পরিচিত মানুষের মত কথা বলার চেষ্টা করছিল। হঠাত মনে হল আমিই বা হাসান ভাই নাকি জিজ্ঞেস করলাম কেন? হাসান ভাই ত মারা গেছেন অনেকদিন হল। রাগ নামিয়ে আবার ঘুমাবার চেষ্টা করলাম। রাত তখন ক’টা বাজে জানতে ইচ্ছা হচ্ছিল, কিন্তু মোবাইলের আলো চোখে লাগবে বলে আর সময় দেখলাম না। এর কিছুক্ষন পর আবার ফোন বেঁজে উঠল। বুঝতে পারলাম ওই বদমাশ্ লোকটা আবার ফোন করেছে। তাই কল রিসিভ করলাম না। ফোন বন্ধ করে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম আর হঠাত লোড শেডিং শুরু হল। এখন যে আর গরমে ঘুম আসবে না তা পুরোপুরি নিশ্চিত। তবু গরমে হাসফাস করতে করতে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন কাজ হল না। পাশের খাঁটের দুই রুমমেট তখন রুমে ছিল না। বোধহয় ওদের আজ নাইট ডিউটি। থাকলে নাহয় ওদের সাথে গল্প করে সময় পার করা যেত।

অনেক্ষন অপেক্ষার পরও ইলেকট্রিসিটি না আসায় মনে হল এভাবে কষ্ট করে শুয়ে থাকার কোন মানে হয় না। ছাঁদে গিয়ে বসে থাকি, তাতে গরম কিছুটা হলেও কম লাগবে। মোবাইল অন করে মোবাইলের আলোয় পথ দেখে ছাঁদে চলে এলাম। ছাঁদে আসার পর আবার মোবাইল বাঁজতে শুরু করল। এবার কল না কেঁটে বদমাশটা কে কিছু শক্ত কথা শুনিয়ে দেবার কথা ভাবলাম। তা না হলে ব্যাটা হয়ত কালও আবার ফোন করবে। তাই ফোন ধরে ধমকের সুরে বললাম, -হ্যালো কে আপনি? -আমি অনেক দূর থেকে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি এষা। প্লিজ আমায় ভুল বুঝো না। -আপনি কে সেটা কি বলবেন? নাহলে আমি ফোন রেখে দিব। -আমি হাসান। -আপনি হাসান ভাই না আমি জানি। কারন হাসান ভাই মারা গেছেন। আপনি কে সত্যি করে বলুন। -সত্যি এষা আমি হাসান। আমি এখন ছাঁদে তোমার কাছে এলে কি তুমি আমায় বিশ্বাস করবে?

একথা শুনার পর আর কথা বাড়ানোর সাহস রইল না। বুঝতে পারলাম লোকটা আশে পাশের কোন বিল্ডিং থেকে আমাকে দেখতে পাচ্ছে। তাই কল কেটে দিলাম। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হল। কিছুদিন আগেই মোবাইলের সিম্ পাল্টেছি। এরই মাঝে হয়ত ক্লাসের কারো কাছ থেকে নাম্বারটা কেউ পেয়ে গেছে। অথবা ক্লাসের কেউই আমাকে ফোন করে পরীক্ষা করছে। আমি তাঁর কথায় সাড়া দিলে হয়ত কথা রেকর্ড করে ক্লাসের সবার কাছে তা কোনভাবে পৌছে দিবে আর আমাকে খারাপ সাজাবার চেষ্টা করবে। এ অবস্থায় আর ছাঁদে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না, কারন লোকটা আমায় ঘুমাবার পোশাকে দেখতে পাচ্ছে। তবে অন্ধকার থাকায় তা নিয়ে আমি খুব একটা শঙ্কিত হলাম না। আমি তখন ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভিতর আশে পাশের বিল্ডিং গুলার দিকে তাকিয়ে কিছু বের করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না। তাই রুমে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। মোবাইলের আলো জ্বেলে ছাঁদের দরজার দিকে এগুতে যাব আর ঠিক তখন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম কে যেন আমার কানের কাছে ফিস্ ফিস্ করে বলে উঠল, এষা যেয়োনা দাঁড়াও। আমি আসছি। একথা শুনার পর প্রচন্ড ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাবার মত অবস্থা হল। মনে হল যেন ছাঁদে আমি ছাড়া আর অন্য কেউও আছে। ভয়ে আমি তখন মারা যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম ছাঁদে যে আছে সে যদি মানুষ হয় তাহলে হয়ত আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আর যদি সেটা অন্য কিছু হয় তাহলে যেন সেটা আমার চোখের সামনে না আসে, কারন আমি সেই ভংকর দৃশ্য সহ্য করতে পারব না। কিছু বুঝে উঠবার আগেই আরো একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। হঠাত কোথা থেকে যেন একটা আলোর ঝলকানি এসে ছাঁদের মেঝেতে পড়ল আর আমি দেখতে পেলাম মেঝেতে একটা কালো ছাঁয়া মূর্তি বসে আসে।ছায়ামূর্তিটার মানুষের মত হাত পা আছে কিন্তু শরীরের গঠন মানুষের মত নয়। আমায় দেখতে পেয়ে ছায়ামূর্তিটা দ্রুত পানির ট্যাংকির দিকে হামাগুড়ি দিয়ে চলে গেল আর ধীরে ধীরে পানির ট্যাংকির দেয়ালে মিশে যেতে শুরু করল। এর পরে কি হয়েছিল আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। সম্ভবত আমি সেখানেই জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরে পাবার পর জানতে পারি আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম আর চিৎকার করে মা’কে ডাকছিলাম। আমার চিৎকার শুনে নিচ থেকে ছাত্রীরা ছুটে এসে আমাকে রুমে নিয়ে যায়।

মেডিকেলের ছাত্রী হিসেবে ভূত প্রেতে বিশ্বাস করাটা আমার মোটেই শোভা পায় না। তবুও আমি পরবর্তীতে এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারিনি। জানিনা হাসান ভাই কি সত্যি সত্যি সেদিন আমাকে স্বপ্নের ওই ডাক্তারের হাত থেকে বাঁচাতে এসেছিলেন কিনা। কারন সেই স্বপ্ন আমি এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছিলাম। এই স্বপ্নের পিছনে একটা কারনও আছে, তবে সেই কারনের সাথে এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই বলে তা উল্লেখ করছি না।

এষা ময়মনসিংহ

চিঠিটি পড়ার পর এষাকে ফোন করলেন সিদ্দিকুর রহমান। -হ্যালো স্লামালাইকুম -মিস্ এষা বলছেন? -জ্বী। কে বলছেন প্লিজ? -আমি মাসিক হরর পত্রিকার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান । -ও আচ্ছা। আমার লেখাটা কি ছাঁপানো হচ্ছে? -জ্বী। তবে তাঁর আগে আপনার আরো সাহায্যের প্রয়োজন। -বলুন আমি কি করতে পারি? -আপনি বোধহয় জানেন আমাদের চিঠিপত্র বিভাগে এধরনের লেখার সাথে সম্পাদকের দাড় করানো একটা ব্যাখ্যা থাকে। আর সেটার জন্য আপনার সাহায্যের প্রয়োজন। -আমাকে কি আপনাদের অফিসে আসতে হবে? -যদি আসতে পারেন তাহলে খুবই ভাল হয়। আর নাহলে ফোনেই কাজটা সেরে নেয়া যাবে। কখন ফোন করলে আপনার সাথে সময় নিয়ে কথা বলা যাবে? -আমি আসলে এখন একটু ব্যাস্ত আছি। আপনি চাইলে আমি নিজেই কাল আপনাকে ফোন করব অথবা আপনাদের অফিসে এসে দেখা করে যাব। -আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। -আপনাকেও। ভাল থাকবেন।

ফোন রাখার পর সিদ্দিকুর রহমান তাঁর রহস্য ডায়েরীর একটি খালি পাতা খুলে বসলেন। সেখানে দ্রুত কিছু নোট লিখে ফেললেনঃ

১) হাসান সাহেব কে? প্রথমে যেই লোকটি টেলিফোন করেছিল তাঁর গলার স্বর কি হাসান সাহেবের মত ছিল? ধরে নেয়া যাক হ্যাঁ। আর সে কারনেই এষা তাকে প্রথমে হাসান সাহেব মনে করেছিল। কিন্তু এষা কেন ফোনে হঠাত একজন মৃত মানুষের কথা স্মরণ করবে? তাহলে কি হাসান সাহেব এষার খুব কাছের কেউ ছিলেন যাকে এষা এখনো প্রত্যাশা করে? সেই তীব্র প্রত্যাশা থেকে কি এষা মনে করে হাসান ভাই তাঁর কাছে এসেছিল তাঁকে সেই ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারের হাঁত থেকে রক্ষা করার জন্যে? আর তাই সে সাধারন একটা ব্ল্যাংক কল কে হাসান সাহেবের কল মনে করে অনেক কিছু ভেবে বসে? হতে পারে হাসান সাহেবের মৃত্যুর সময় এষা তাঁর কাছে ছিল না, তাই তাঁর অবচেতন মন সব সময় চাইত হাসান সাহেবের সাথে শেষ আরেকটিবার দেখা করতে? কিন্তু মৃত মানুষের কোনভাবেই ফিরে আসা সম্ভব না বলে তাঁর অবচেতন মন সেই ইচ্ছা নিয়ে হতাশায় ভুগছিল। তাই সেদিন সেই স্বপ্ন আর ব্ল্যাংকল এর সাথে কোন সংযোগ ঘটিয়ে তাঁর অবচেতন মন সাধারন কোন ছাঁয়া কে হাসান সাহেবের ছাঁয়ামূর্তিতে রুপান্তর করে? যদি তাই হয় তাহলে এই ঘটনার প্রভাবক হিসেবে অন্য কোন ঘটনা কাজ করেছে যা এষা তখন খেয়াল করেনি। সেই না জানা ঘটনা কে বের করতে পারলেই অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে।

২) এষা লিখেছে কেউ তাঁর কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলেছিল এবং সে তা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিল। এই স্পষ্ট শুনতে পাবার ঘটনাই হাসান সাহেবের ছাঁয়ামূর্তির ঘটনার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়াও আরেকটি কারন এই ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বকে জোড়ালো করতে পারে। এষা লিখেছে তাঁর তখন দুই ধরনের ভয় হচ্ছিল। প্রথমত ছাঁদে যা ছিল তা যদি মানুষ হয় তাহলে তাঁর বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত সেটা যদি মানুষ না হয় তাহলে সে প্রচন্ড ভয় পাবে। একজন মেডিকেলের ছাত্রী হিসবে এষা কখনো ভূত প্রেত বিশ্বাস করত না। তাই লোকলজ্জার ভয়ে তাঁর জাগ্রত মন চাচ্ছিল এটা যেন কোন মানুষ না হয়, কারন এষা জানে ভূত বলে কিছু নেই, আর এটা মানুষ না হলে ভূত হবারও সম্ভাবনা নেই, হয়ত মনের ভুল হতে পারে যা ভাল করে লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে। অপরদিকে এষার অবচেতন মন প্রচন্ডভাবে হাসান ভাই কে প্রত্যাশা করছিল। সেই ভয়ংকর মূহুর্তে এষার চেতন ও অবচেতন দু’টা মনের ইচ্ছাই এক হবার কারনে এষা ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেছিল।

ঘটনার ব্যাখ্যা দাড় করাতে অবশ্যই আমাদের কোন অলৌকিক ঘটনা কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এষার কানে কে ফিস্ ফিস্ করে কথা বলেছিল? আশেপাশে যদি কেউ না থাকে তাহলে একমাত্র মোবাইল ফোনেই সে কথা শুনতে পাবে। কিন্তু এষা তখন কলারের সাথে কথা বলছিল না। তাই মোবাইলে সে ফিস্ ফিস্ কন্ঠটি শুনেনি। আবার এষা লিখেছে সে মোবাইলের আলোয় পথ দেখে ছাঁদের দরজার দিকে এগুচ্ছিল। তাহলে কি হতে পারে সে যখন মোবাইলে আলো জ্বালবার জন্য মোবাইলের বোতামে চাপ দেয় তখন সেই কলারের কল রিসিভ হয়ে যায় আর সেই কলার কাছের কোন বিল্ডিং থেকে এষাকে ছাঁদের দরজার দিকে না যেতে বলে? আর মোবাইলের সে কথাই এষার কানের কাছে ফিস্ ফিস্ করে কথা বলার মত মনে হয় কারন সে জানত না সে ভুলে কল রিসিভ করে ফেলেছে? এই ব্যাখ্যা যুক্তি সংগত।

৩) এখন ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করতে হলে যে কারনটি দাড় করানো যেতে পারে তা হল এষা যা দেখেছিল তা ঘুমের ঘোরে দেখেছিল। অর্থাৎ, এষা লিখেছে ছাঁদে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল কারন লোডশেডিং হচ্ছিল। কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোন ছাঁয়ামূর্তি দেখা সম্ভব নয়। তাহলে এষা আরো আগেই অন্য কোন কারনে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু জ্ঞান ফিরে পাবার পর সেই ভয়ের কারন তাঁর মনে থাকে না বরং অজ্ঞান থাকাকালীন সময়ে স্বপ্নে যেই ছাঁয়ামূর্তি দেখতে পায় তাকেই সে সত্যিকার ছাঁয়ামূর্তি বলে মনে করেছিল।

এবার ধরা যাক এষা সত্যি ছাঁয়ামূর্তি দেখার পর জ্ঞান হারিয়েছিল।আর যদি এষা সত্যি ছাঁয়ামূর্তি দেখে জ্ঞান হারায় তাহলে অবশ্যই সেই সময় কিছুটা হলেও আলো ছিল। এষার মতে ছাঁয়ামূর্তিটা এসেছিল একটা আলোর ঝলকানির মাধ্যমে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় তখন হঠাত ইলিকট্রিসিটি চলে আসে বলে আসে পাশের বাড়িগুলা তে আলো জ্বলে উঠে আর এষা সেই আলোকেই আলোর ঝলকানি মনে করে? এই ঘটনা কে সাহায্য করতে আরেকটি ঘটনার বাস্তব রুপান্তর প্রয়োজন। এষা কেন ইলিক্ট্রিসিটি ফিরে আসা খেয়াল করবে না? হতে পারে সে ইলেক্ট্রিসিটি ফিরে আসার সময় প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল অর্থাৎ ছাঁয়ামূর্তিটাকে দেখেছিল? আর যদি ছাঁয়ামূর্তিটা কে দেখেই থাকে তাহলে সেই ছাঁয়ামূর্তিটা এষার কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে গেল কেন? হতে পারে এষার কাছের বিল্ডিং থেকে যেই মানুষ টা এষার সাথে কথা বলছিল হঠাত ইলেকট্রিসিটি চলে আসবার কারনে সে দ্রুত জানালা থেকে সরে যায় আর তাঁর ছাঁয়া ধীরে ধীরে দেয়ালে মিলিয়ে যায়? কিন্তু এষা লিখেছে ছাঁয়ামূর্তির মানুষের মত হাত পা ছিল কিন্তু শরীরের গঠন মানুষের মত না। শরীরের গঠন মানুষের মত না বলতে সে কি বুঝিয়েছে? ছাঁয়ামূর্তিটিকে যদি তাঁর অবচেতন মন নিয়ে আসে তাহলে সেই অবচেতন মন তাঁর শরীরের গঠন মানুষের মত করে কেন আনল না? আর সে যদি কোন মানুষের সাধারন ছাঁয়া দেখেও ভয় পায় তাহলেই বা সেই ছাঁয়ার শরীর মানুষের মত ছিল না কেন? এখানেই যুক্তি কাজ করছে না। তাই ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্ব সত্যি কি মিথ্যা তা মোবাইলে ফিস্ ফিস্ কন্ঠ শুনবার মত সহজে প্রমাণ করা গেল না।

৪) ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তার কে? এষা কেনই বা এধরনের স্বপ্ন আগে দেখত? তা একমাত্র এষার সাথে কথা বলেই জানা যাবে।

৫) উপরের কোন যুক্তিই কাজ করবে না যদি হাসান সাহেব এষার খুব কাছের মানুষ না হয়ে থাকেন। অর্থাৎ এষার অবচেতন মন যদি হাসান সাহেব এর দেখা পেতে না চায়। কিন্তু তা হবার সম্ভাবনা কম কারন এষা চিঠির শেষে লিখেছে যে হাসান সাহেব কি সত্যি এষা কে ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার এর হাত থেকে রক্ষা করতে এসেছিল কিনা তা সে জানে না। খুব কাছের মানুষ না হলে দূরের কাউকে এভাবে ছুটে আসার কথা এষা কখনো চিন্তা করবে না। আর এসব কারনেই এষার সাথে কথা বলে আরো কিছু তথ্য জানতে হবে, যা রহস্য সমাধানে সাহায্য করবে। আপাতত শুধু একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে যে এষা আসলে মোবাইলে সেই কলারের ফিস্ ফিস্ কন্ঠ শুনেছিল। এই সূত্র ধরেই সামনে এগুতে হবে। এখন এষাকে যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে হবে তা হলঃ

১) হাসান সাহেব কে ছিলেন? ২) জ্ঞান ফিরে পাবার পর এষা মোবাইলে সেই কলারের কল কতবার রিসিভ করেছিল সেটা কি চেক্ করেছিল ? দু’বার না তিনবার? ৩) সেই কলারের নাম্বার নিশ্চয়ই এষা মোবাইল থেকে সংগ্রহ করে রেখেছিল? সেই নাম্বারে কি পরে কখনো ফোন করা হয়েছিল কলারের সন্ধান জানতে? ৪) ছায়াঁমূর্তির শরীরের গঠন তাঁর কাছে মানুষের মত মনে হয়নি কেন? ৫) ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তার কে?

এর পরদিন সিদ্দিকুর রহমান এষার সাথে ফোনে কথোপকথোন সেরে নিলেন এবং মূল পাঁচটি প্রশ্নের জবাব তাঁর ডায়েরীতে লিখে রাখলেনঃ

১) হাসান সাহেব এষার মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টুডেন্ট ছিলেন। এষার সাথে তাঁর বিয়ে হবার কথা ছিল। হাসান সাহেব এম,বি,বি,এস শেষ করে লন্ডনে চলে যান লেখাপড়ার জন্য কিন্তু লন্ডনে একটা রোড এক্সিডেন্টে তিনি মারা যান দু’বছর আগে। হাসান সাহেবের সাথে এষার সম্পর্ক খুব বেশিদিনের ছিল না বলে এষা হাসান সাহেবের পরিবার এর ঠিকানা জানত না। তাই হাসান সাহেবের মৃত্যুর সংবাদটি পায় হাসান সাহেবের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে।

২) কল কতবার রিসিভ করা হয়েছিল কিংবা কলারের নাম্বার কি ছিল তা এষা জানতে পারেনি,কারন তাঁর মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে গিয়েছিল। সে যখন চিৎকার করে জ্ঞান হারায় তখন তাঁর চিৎকার শুনে হলের ছাত্রীরা ছুটে এসে তাকে রুমে নিয়ে যায়, আর পরবর্তীতে কেউ তাঁর ফোনটি সরিয়ে ফেলে।

৩) তিন নম্বর মন্তব্য অনুযায়ী -জানা যায় নি।

৪) এষা বলতে চাচ্ছে ছাঁয়ামূর্তির বুক থেকে কোমরের দিকটা ছিল অস্বাভাবিক রকমের চওড়া অর্থাৎ তাঁর শরীরের অনুপাত কখনোই মানুষের মত ছিল না। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার ছিল যে ছাঁয়ামূর্তির দুপাশে দু’টি পাখা ছিল। এই পাখার কারনেই সে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছিল যে এটা কোন মানুষের ছাঁয়া নয়।

৫) ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তার এষা কে পছন্দ করতেন। হাসান সাহেবের মৃত্যুর পর এষার সাথে তাঁর কিছুটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে অনেক রোগীর অভিযোগে সেই ডাক্তারের নামে একটা স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়লে এষা সেই সম্পর্ক কে আর এগুতে দেয়না। কিন্তু ডাক্তার তারপরও এষাকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে যায়।

এর প্রায় পনের দিন পর ‘মাসিক হরর’ পত্রিকায় সম্পাদকের ব্যাখ্যা সহ এষার চিঠিটি ছাঁপা হয়। সম্পাদকের ব্যাখ্যার খানিকটা অংশঃ …………লন্ডনে হাসান সাহেবের একটা রোড এক্সিডেন্ট হয় ঠিকই কিন্তু তিনি তাতে মারা যান না। বেঁচে গেলেও তিনি শারীরিকভাবে পংগু হয়ে যান এবং হুইল চেয়ার ব্যাবহার করতে শুরু করেন। এমতাবস্থায় তিনি এষা ও তাঁর পরিবারের কথা চিন্তা করে এষা কে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন।কারন এই পংগুত্বকে এষা সহজভাবে নিলেও এষার পরিবার হয়ত সার্বিকভাবে এই বিয়েতে খুশী থাকবে না, তাছাড়া তিনিও চান না তাঁর ভালবাসার মানুষটি সারাজীবন একজন হুইলচেয়ারে বসে থাকা মানুষের সাথে ঘর করুক। তাই তিনি তাঁর বন্ধুর মাধ্যমে এষাকে তাঁর মৃত্যুর খবরটি পৌছে দিয়েছিলেন। হাসান সাহেবের বাবা মা গ্রামে থাকতেন বলে এষাও পরে আর তাঁর বাবা মা’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। লন্ডন থেকে ডিগ্রী নিয়ে হাসান সাহেব তখন দেশে ফিরে এসেছিলেন। সম্ভবত অল্প কিছুদিন পর তিনি আবার লন্ডন ফিরে যেতেন কারন ফোনে তিনি বলেছিলেন তিনি অনেক দূর থেকে এষার সাথে দেখা করতে এসেছেন। এষা যেন জানতে না পারে তাই তিনি এষার হোস্টেলের পাশের একটি বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন কিছুদিনের জন্যে। হাসান সাহেব যেহেতু একই মেডিকেলের ছাত্র ছিলেন তাই তাঁর জন্য এ কাজটি করা খুব একটা অসুবিধের কিছু ছিল না। তিনি কিছুদিন এষা কে লুকিয়ে লুকিয়ে সেই বাড়ী থেকে দেখে চোখ জুড়াতেন। কখনো ভাবেন নি এষার সামনে তিনি যাবেন। এষা সাধারনত বিকেলের মধ্যে হলে ফিরে আসে, কিন্তু সেদিন এসেছিল অনেক রাত করে। তাই তিনি এষাকে দেখতে পাননি। আর এই না দেখার কষ্ট তাকে এষাকে ফোন করতে বাধ্য করে, কারন হয়ত পরদিনই তিনি দেশে ছেড়ে চলে যাবার কথা ভাবছিলেন। ফোন ধরার পর এষা যখন জিজ্ঞেস করে কে ফোন করেছে তখন তিনি ভুল করে বলে ফেলেন ‘কেন চিনতে পারছ না?’ এর জবাবে এষা হাসান সাহেবের কন্ঠ চিনে ফেললে তিনি তা অস্বীকার করেন আর তাঁর মিথ্যা কে আরো জোড়ালো করার জন্য তিনি ইচ্ছে করে এষাকে অশ্লীল একটা প্রশ্ন করেন বসেন, যেন এষা এটা কে একটা ব্ল্যাংক কল হিসেবে মনে করে। এষার অবচেতন মন সব সময়………………… এষাকে ছাঁদে দেখে হাসান সাহেব প্রচন্ডভাবে এষার সাথে কথা বলতে ইচ্ছাপোষন করেন।তখন ছিল গভীর রাত। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে মানুষের আবেগ অনেক সময় প্রবণ হয়ে উঠে এবং তা অনেক কিছু মানতে চায় না। তাই এই পর্যায়ে তিনি এষার সাথে দেখা করে সব কিছু খুলে বলতে চেয়েছিলেন। সেই সময় হঠাত ইলেকট্রিসিটি চলে আসে আর এষা হুইল চেয়ারে বসা হাসান সাহেবের ছাঁয়া ছাঁদের মেঝেতে দেখতে পায়। এষা যে হাসান সাহেবের ছাঁয়া দেখতে পেয়েছে তা তিনি বুঝতে পারেন এবং সেকারনে দ্রুত তিনি জানালা থেকে সরে যান। এখন প্রশ্ন থাকতে পারে হাসান সাহেব ত এষার সাথে দেখা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাহলে তিনি কেন দ্রুত সরে গেলেন? হতে পারে ইলেকট্রিসিটি চলে আসার পর তিনি এষাকে ছাঁদে আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন আর তখন তিনি মত পাল্টান।চারদিকের আলো তাঁর আবেগ কে দমন করতে সাহায্য করে। অথবা এমনো হতে পারে এষাকে শোবার পোষাকে দেখে ফেলায় এষা লজ্জিত হতে পারে বলে তিনি পাশের বাড়িতে থাকবার বিষয়টি গোপন করতে চেয়েছিলেন। এষাকে ফোন করা থেকে শুরু করে এষার জ্ঞান হারানো পর্যন্ত যা কিছু হয়েছিল তার সব কিছুর মূলে রয়েছে হাসান সাহেবের অনিয়ন্ত্রিত আবেগ। আর সেই আবেগ হাসান সাহেবকে অনেক যুক্তিহীন সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা দ্রূত সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করেছিল। তিনি যখন হুইল চেয়ারে করে জানালা থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছিলেন তখন এষা তাঁর হুইল চেয়ারের ছাঁয়াকে ছাঁয়ামূর্তিটির পাখা ভেবে ভুল করে। আর তখনই এষা নিশ্চিত হয়ে যায় এটা কোন মানুষের ছাঁয়া নয়। হাসান সাহেবের হুইল চেয়ারে করে দ্রুত সরে যাবার ঘটনা কে এষা ছাঁয়ামূর্তির হামাগুড়ি দিয়ে দূরে সরে যাওয়া মনে করে………… ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তারের সাথে এষার কিছুটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আর পরবর্তীতে তা এগুতে পারেনি ডাক্তারের স্ক্যান্ডালের কারনে ( সম্ভবত স্ক্যান্ডালটি নারীঘটিত কোন ব্যাপার ছিল )। তাই সেই সব মিলিয়ে এষা প্রায় সেই ডাক্তার কে নিয়ে এধরনের স্বপ্ন দেখত। সেদিন হাসান সাহেবের ফোনের রিং এ এষার কাঁচা ঘুম ভেংগে যায় আর ফোন ধরে সে হাসান সাহেবের কন্ঠ শুনতে পায়। হাসান সাহেবের পরিচিত কন্ঠ ও সেই স্বপ্ন এষার অবচেতন মনকে হাসান সাহেবের ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে সাহায্য করে আর এষা তখন ভয়ে জ্ঞান হারায়।

আমার এই ব্যাখ্যা শুধুমাত্র এষার সাথে কথোপকথোনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ব্যাখ্যা তখনই গ্রহনযোগ্য হবে যদি হাসান সাহেব মারা না যান। তা জানা সম্ভব নয় কারন হাসান সাহেবের একমাত্র বন্ধু যাকে এষা চিনত তিনি কিছুদিন আগে মারা যান। এছাড়াও মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রি অফিস থেকে হাসান সাহেবের গ্রামের ঠিকানা সংগ্রহ করতে চাইলে খুবই অদ্ভুতভাবে হাসান সাহেবের ঠিকানার পাতাটি ছেঁড়া পাওয়া যায়। তবে এষার বর্ণিত ছাঁয়ামূর্তির সাথে প্রাচীন গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর পাখাওয়ালা শয়তানের মিল পাওয়া যায়। কাহিনীর বর্ণনা অনুযায়ী শয়তান অমাবশ্যার রাতে প্রজননের জন্য মৃত আত্মার উপর ভর করে কুমারী মায়েদের সাথে মিলনের মাধ্যমে নতুন শয়তানের জন্ম দেয়। আর তার জন্য অবশ্যই পরিচিত মানুষের বেশ ধরা প্রয়োজন। হতে পারে এষার গর্ভে তখন ওই ডাক্তারের সন্তান ছিল যা সে সবসময় গোপন করে চলেছে এবং তাই সে লেখাতেও স্বপ্নের কারন উল্লেখ করেনি। হয়ত আমার কাছে সেই পৌরাণিক কাহিনীর শয়তানের কথা শুনে এষা নিজেই রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করে হাসান সাহেবের ঠিকানার পাতাটি ছিঁড়ে ফেলে, কেননা হাসান সাহেবের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটিত হলে হয়ত নতুন কোন অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে যা এষা কাউকে জানতে দিতে চায়না।

অর্গ্যানের সুর - By ঊর্মি খান

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Friday, September 9, 2011 at 9:59pm
সকাল থেকে রাত অব্দি একটানা বৃষ্টি হচ্ছে । সেই সাথে মাঝে মাঝে বজ্রপাত । বিদ্যুৎ নেই তাই মোম জ্বালিয়ে শেলী উপন্যাস লিখছে । খুব শীঘ্রই তার এ উপন্যাসটা প্রকাশিত হবে । ঔপন্যাসিক হিসেবে শেলী রোজালীন বেশ নাম করা । নির্জনতা শেলীর ভাল লাগে । তাই হেনরিভিলে একটা বাড়ি কিনেছে কয়েক মাস আগে । বাড়িটা অর্ধ পুরোনো । বাড়ির মালিক ছিলেন হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জেন কারমাইকেল । বাড়িটার একটা ভুতুড়ে গুজব রয়েছে বলে কেউ কিনতে চায়নি । এ বাড়িতে রাতের বেলায় নাকি অর্গ্যানের সুর ভেসে আসে মাঝে মাঝে ।
অনেকদিন বাড়িটা খালি পড়ে ছিল । পত্রিকায় বাড়ি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে শেলী একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল । তখনই হেনরিভিলে এই বাড়িটার খোঁজ পেয়ে অতি অল্প দামে শেলী বাড়িটি কিনে নেয় । তার মনের মত জায়গায় বাড়িটা পেয়ে শেলী এ জন্য আনন্দিত , উৎফুল্ল । এ বাড়িতে বেশ কিছু পুরোনা আসবাবপত্রের সাথে একটা পুরোনো অর্গ্যান ছিল । জিনিসগুলো একটা আলাদা ঘরে রেখে শেলী নিজের জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজিয়ে নিয়েছে ।
অবিবাহিত শেলীর রান্নাবান্নার কাজ করে হাউজকিপার জুন মারিয়া । বেশ হাসি খুশি মহিলা । শেলী তাকে খুব পছন্দ করে । বৃষ্টির কারণে আজ আসতে পারেনি । তাই শেলীকে আজ খাবার কিনে খেতে হয়েছে । তার উপন্যাসটা প্রায় শেষের পথে । কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশককে দিয়ে দেবে ।
শেলী এক মনে লিখে চলেছে । ওদিকে টেবিলে রাখা মোমটা গলে গলে প্রায় শেষ । কিন্তু সেদিকে শেলীর খেয়াল নেই । বসার ঘরে ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বলছে । দপ করে মোমটা নিভে গেলে শেলী চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে আর একটা মোম জ্বালিয়ে আনল । হঠাৎই সে খেয়াল করল তার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে । মোম হাতে নিয়ে রান্না ঘরের ফ্রিজ খুলে স্যান্ডউইচের প্যাকেট আর মিল্কশেক বের করল । টেলিফোনের শব্দ পেয়ে খাবারগুলো রান্না ঘরের টেবিলে রেখে নিজের ঘরে ফিরে এলো । হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে জুনের কণ্ঠ ভেসে এলো । জুন বলল, ‘মিস শেলী আপনার কোন অসুবিধা হয়নিতো ? আসলে আমি বৃষ্টির কারণে আসতে পারিনি । লাইন খারাপ থাকায় ফোনও করতে পারিনি ।` শেলী হেসে বলল , ‘না না আমার কোন অসুবিধা হয়নি । তুমি কোন চিন্তা কর না । কাল বৃষ্টি কমলে চলে এসো ।` ‘আচ্ছা ঠিক আছে রাখি ।` শেলী ফোন রেখে রান্না ঘরে এসে দেখল খাবারগুলো নেই । হঠাৎই পাশের ঘর থেকে দুপদাপ শব্দ ভেসে এল শেলীর কানে । শেলী রান্না ঘর থেকে ছুটে বের হল । শব্দ শেষ হতে না হতেই পুরোনো অর্গ্যানটা বেজে উঠল মৃদুভাবে । ভীষণ ভয় পেল সে । পুরোনো অর্গ্যান কে বাজাতে পারে ভাবতে ভাবতে রুমের দিকে এগিয়ে গেল । আলতো করে দরজাটা খুলে উঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেল না সে । পুরোনা অর্গ্যানটা পড়ে রয়েছে অনড় হয়ে । দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল । ভাবল সবই তার মনের কল্পনা । ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতে যাবে অমনি আবার অর্গ্যানটা বাজতে লাগল আগের চেয়ে কিছুটা জোরে । শেলী আবার দরজা খুলে উঁকি দিয়েই স্থির হয়ে গেল । ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল তার শরীরে । দেখল বেশ মনোযোগ দিয়ে অর্গ্যান বাজাচ্ছে কালো আলখেল্লা পড়া কেউ একজন । শেলী কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কে আপনি ? এখানে কেন ?` শেলীর কথায় আগন্তুক অর্গ্যান বাজানো বন্ধ করে দিয়ে ধীরে ধীরে শেলীর দিকে আসতে লাগল । শেলী স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আগন্তুকের চেহারা দেখেই তার গলা চিরে বেরোলো চিৎকার । হাত থেকে মোমটা পড়ে গিয়ে নিভে গেল । প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হল কাছাকাছি কোথাও । সেই সাথে বিদ্যুৎ চমকলো । সেই আলোয় দেখল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোমশ শরীরের এক ভয়ঙ্কর জীব । মানুষের মত দুটি করে হাত পা থাকলেও মুখটা দেখতে একেবারে নেকড়ের মত । চোখ দুটো টকটকে লাল। দুটি বড় বড় দাঁত বেরিয়ে আছে ঠাঁটের বাইরে । অজ্ঞান হয়ে গেল শেলী । অনেক পরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে শেলী প্রাণপণে দৌড় দিল নিজের ঘরের দিকে । বসার ঘর দিয়ে যাওয়ার সময় সোফার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল সে । কোন রকমে উঠে আবার দৌড় দিয়ে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল । কাঁপা হাতে টর্চ জ্বেলে টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেল শেলী কিন্তু টেলিফোনের রিসিভার তুলতেই তার মুখ শুকিয়ে গেল । টেলিফোন ডেড । কিছুক্ষণ আগেই সে জুনের সাথে কথা বলেছে । বাইরে বৃষ্টির বদলে এখন ঝড় শুরু হয়েছে । ঝড়ের কারণে কোথাও হয়ত তার ছিড়ে গেছে । নেকড়েরূপী জীবটা দরজায় আঘাত করছে । শেলী দৌড়ে গিয়ে ড্রয়ার খুলে তার লাইসেন্স করা রিভলভারটা হাতে তুলে নিল । অদ্ভুত প্রাণীটা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে শেলী গুলি চালাল । প্রাণীটা লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে । শেলী প্রাণপণে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের দরজার কাছে চলে গেল । কিন্তু দরজাটা খুলতে পারল না । ওদিকে অদ্ভুত প্রাণী উঠে দাঁড়িয়ে শেলীকে আবার ধরার জন্য ছুটে এলো । শেলী চিৎকার করলেও তার কান্না বৃষ্টির শব্দে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে । প্রাণীটি বিকট শব্দ করতে করতে তার দিকে ধেয়ে আসছে দেখে ক্লান্ত বিধ্বস্ত শেলী দৌড়ে জানালা খুলতে চেষ্টা করল । কিন্তু খুলতে পারল না । পাশে রাখা একটা চেয়ার নিয়ে জানালার কাঁচে আঘাত করল । কাঁচ ভাঙার পর কোন রকমে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে । জ্ঞানশূণ্য হয়ে এই নির্জন জায়গায় শেলী ছুটতে লাগল প্রাণপণে । কাদায় হোচট খেয়ে পড়ে গেল বার কয়েক । প্রাণীটাও ছুটে চলেছে তার দিকে । শেলীও প্রচন্ড বেগে দৌড়াতে লাগল । হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল রাস্তার পাশের ছোট্ট একটা খাদে । কোন রকমে উঠে দেখল প্রাণীটা নেই । বৃষ্টির মধ্যে যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে দেখল প্রাণীর কোন চিহ্নই নেই । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধপ করে বসে পড়ল রাস্তার পাশে । শহরটাতে বাড়িঘরের ঘনত্ব কম । দূরে একটা খামার বাড়ি চোখে পড়ল তার । ক্ষণিকের জন্য সে বাড়িটা দেখলো বজ্রপাতের আলোয় । শেলী বাড়িটার দিকে দৌড়াতে লাগল । হঠাৎ রাস্তায় দেখতে পেল হেড লাইট জ্বেলে দ্রুতবেগে ছুটে আসছে একটা গাড়ি । রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শেলী বাঁচার আনন্দে গাড়িটা কাছে আসতেই সে চিৎকার করে থামতে বলল । সাহায্য প্রার্থনা শুনে গাড়ির ড্রাইভারের সহানুভুতি হল । তাড়াতাড়ি শেলী বলল, ‘আমাকে বাঁচান একটা ভুত আমাকে তাড়া করেছে । যে কোন সময় সে চলে আসতে পারে ।` ড্রাইভার কোন কথা বলল না । শেলী তার চেহারা দেখতে পেল না। কারণ লম্বা একটা হ্যাটের কোণা দিয়ে সে মুখ ঢেকে রেখেছে । তুমুল বৃষ্টি শুরু হতে লাগল । সেই সাথে ঘন ঘন হতে লাগল বজ্রপাত । শেলী আবার করজোরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, `প্লিজ আমাকে বাঁচান ।` লোকটা হ্যাট খুলে ফেলল । শেলী অন্ধকারে লোকটার মুখ দেখতে পেল না । লোকটা বলল, `এত তাড়া কিসের ?` শেলী আবার কেঁদে বলল, `আমাকে একটা ভুত তাড়া করেছে ।` লোকটা খনখনে হাসি দিয়ে বলল, `তাই নাকি !’ শেলী চমকে উঠল । লোকটার মুখের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখল গাড়ির ড্রাইভার আর কেউ নয় স্বয়ং সেই অদ্ভুত প্রাণী । কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শেলী উল্টো দিকে দৌড়াতে লাগল । ভুতটাও গাড়ি নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করল । এক সময় গাড়ির ধাক্কায় শেলী উল্টে পড়ে গেল রাস্তার উপর । ভুতটা বাইরে বেরিয়ে শেলীর দূরবস্থা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল । শেলী ভয়ার্ত গলায় চিৎকার করে বলল, `তুমি কেন আমাকে মারতে এসেছ ?` বিকট কণ্ঠে ভুতটা বলল, `আমি এই বাড়িতে কাউকে থাকতে দেব না ।` কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে গাড়িতে উঠে ভুতটা শেলীর গায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দিল । তারপর হাসতে হাসতে অদৃশ্য হয়ে গেল বাতাসের মধ্যে । পড়ে রইল শেলী রোজালীনের রক্তাক্ত বিকৃত লাশ ।

নিয়তি - By আহমেদ মামুন

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Thursday, September 8, 2011 at 11:26pm
এক.
জেবা। বয়স ২১।
বললেন ডা. মহিত কামাল স্যার। প্রখ্যাত মানষিক রোগ বিশেষজ্ঞ। এখন আমি তার চেম্বারে। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি মিষ্টি করে হেসে বললেন, আপনার সমস্যা কি?
কি ভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না।
যেখান থেকে তোমার বলতে সুবিধা হয়। শুরু করো। তুমি করে বললাম রাগ কর নায় তো?
না, স্যার।
তাহলে শুরু কর।
স্যার আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।
কি দেখতে পাও।
স্যার আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।
কতদিন ধরে?
জানি না।
স্বপ্নে দেখ না জেগে জেগে দেখ?
স্বপ্নে না, জেগে থাকলে দেখি। সব সময়ই দেখি না হঠাৎ হঠাৎ।
হঠাৎ হঠাৎ? রাতে ঘুম হয়?
পৃথিবী সব মানষিক রোগ বিশেষজ্ঞ এই একটা প্রশ্ন দিয়ে সব উত্তর পান। যদি বলি ঘুম ঠিক মতো হয় তাহলে তিনি হতাশ হবেন। কারণ আমার কোন মানষিক রোগ নেই। সত্যি কথা বলতে আমার ঘুমের সমস্যা নেই। ঘুমের জন্য প্রতিদিন মায়ের বকুনি খাই । আমি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা কুমিড়ের মতো বিছনায় পড়ে ঘুমাতে পারি।
স্যার আমার ঘুম নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
ও, হ। তুমি যেহেতু ভবিষ্যৎ দেখ বলতো আমার ভবিষ্যৎ কি?
আমি তো বলেছি হঠাৎ হঠাৎ দেখি।
চেষ্টা করে দেখ।
আমি চেষ্টা করলেও পারি না।
শেষ বার কত দিন আগে দেখেছ?
পাঁচ দিন আগে।
কি দেখেছ, বিস্তারিত বল?
আমাদের বাড়ি মিরপুর। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। মিরপুর ১নাম্বার বাসস্টপে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি থামে। একদিন কাস শেষে বাড়ি ফিরছি। সাথে আমার দুই বন্ধু মিনহাজ, হুমায়ূন।
হুমায়ূন কি শুধুই বন্ধু?
ও আমাকে..। স্যার আপনি বুঝতে পারলেন কি ভাবে?
তুমি হুমায়ূন নামটি উচ্চারণ করে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললে। ওসব থাক আমরা মূল কথায় ফিরে আসি।
মিরপুর ১নাম্বার বাসস্টপে একটা ওভারব্রিজ আছে। হঠাৎ আমি চোখের সামনে ভাসতে দেখি মিনহাজ রাস্তা পার হচ্ছে ওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে। একটা নীল মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ও রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। আমার সাদাজামা রক্তে লাল হয়ে গেছে। আমি রাস্তার মাঝে মিনহাজের পাশে বসে কাঁদছি। নিজেদের আবিস্কার করলাম ওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি আমরা। আমি মিনহাজের জামা টেনে ধরলাম। সাথে সাথে একটা নীল মাইক্রোবাস এসে মিনহাজকে চাপা দিয়ে চলে গেল। আমি ছিটকে পড়লাম। মিনহাজ আমার সামনে ছটফট করছে। রক্তে রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে কাঁদছি। মিনহাজকে দ্রুত একটি প্রাইভেট কিনিকে নেওয়া হলো। কতর্ব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।
আচ্ছা এমন হতে পারে না। ঘটনাটি ঘটার পর তোমার মনে হয়েছে তুমি আগে দেখেছিলে?
তাহলে আমি মিনহাজের জমা শক্ত করে চেপে ধরব কেন?
মেয়েরা এম্নিতেই রাস্তা পার হওয়ার সময় কাউকে না কাউকে ধরে পার হয়।
সেটা সত্যি কিন্তু মিনহাজকে আমি শক্তা করে চেপে ধরেছি। যেন ও থেমে যায়। ওর জামার একাংশ ছিড়ে আমার হাতের মধ্যে রয়ে গিয়েছিল।
আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি। আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। বরিশাল মেঘনা নদীর তীরে আমার জন্ম। বরিশালে জায়গা জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে ভাই ভাইকে খুন করে। আমাদের গ্রামে এক ছোট ভাই বড় ভাইকে বুকের উপর চাকু দিয়ে কোপ দিয়ে হত্যা করল। বড় ভাইয়ের লাশ হাসপাতালের বারান্দায় চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হল। আমার মনে আছে আমি লাশ দেখতে গেছি। একজন এসে বুকের কাপড় সরিয়ে লাশ দেখাল। বুকের উপর একটা কালচে গর্ত। বাস্তবতা হলো এই লাশ আমি দেখিনি। হাসপাতাল ছিলো আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় পনের কিলোমিটার দূরে। আমার মা লাশ দেখতে গিয়েছিলেন। আমি ছোট এই জন্য সাথে নিয়ে যাইনি। হয়ত লাশ দেখে ভয় পাবো এই জন্যও হতে পারে। অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি লাশ দেখেছি। এখন তুমি কি বলবে যে আমি বাসায় বসে দূরে ঘটনা দেখতে পাই।
কিন্তু স্যার আমার ক্ষতেরেই বিষয়টা ভিন্ন!
দেখ মৃত্য হত্যা দূর্ঘটনা সবই ঘটনা। জগত সংসারের নিয়ম। কিন্তু মানব মন এসব আশা করে না। তবুও ঘটে। মনের বিপরিত ঘটনা মনকে বিশৃঙল করে দেয়। ফলে এর একটা প্রতিক্রিয়া মানুষে স্মৃতিতে অভিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই অভিক্রিয়া একেক জনের েেত্র একের রকম। দেখবে কোনে দূর্ঘটনা ঘটলে মেয়েরা বলে এখানে আসার আগে আমার মনে হয়েছিল একটা বিপদ হবে। তখন কেন যে বাড়ি থেকে বের হলাম। এটা সব মেয়েদের ক্ষেতেেত্রই বেশি হয়। তুমি কি তাকে বলবে তারা ভবিষ্যৎ দেখেছে।
স্যার এটা সত্যি তো অনেক মানুষের অতিরিক্ত মতা থাকতে পারে।
তুমি দাবি করছ তোমার অতিরিক্ত মতা আছে। যাক আমি তোমাকে আমার সেলফ ফোন নাম্বাটা দিচ্ছি। আবার যখন দেখবে আমাকে জানাবে। আমি সময় আর ঘটনা লিখে রাখব। দেখি ঘটে কিনা!
স্যার তার কার্ড বের করে হাত দিলেন। আমি কার্ড নিয়ে বের হলাম।

দুই.
কলাভবনের সামনে বসে আছি। অপরাজেয় বাংলার সামনে দিয়ে একটি মিছিল যাচ্ছে। বেশ বড় মিছিল। আমার চোখের সামনে ভাষছে মিছিল জসীম উদ্দিন হলের সামনে। সেখানে মিছিল দুইভাগস হয়ে যায়। একভাগ নিচে থাকে। আরেক ভাগ তিন তলায় উঠে যায়। তিন তলা থেকে তারা একটি ছেলেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। নিচে দাড়িয়ে থাকা ছেলেরা রড হকিস্টিক গজারি নিয়ে রেডি ছিল। তারা ছেলেটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
আমি সেলফোনে মোহিত কামাল স্যারকে সব বললাম।
সে বলল, মিছিল এখন কোথায় আছে?
এখনো অপরাজেয় বাংলায়।
আর কিছু?
যে ছেলেটিকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে তাকে নিচের ছেলেরা পিটিয়ে মেরে ফেলবে। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হবে। স্যাররা গিয়ে ডাক্তারকে বলবেন লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাচিয়ে রাখতে। কারণ আজ মৃত্যুর সংবাদ ক্যাম্পাসে পৌছলে বড় ধরনের গন্ডোগোল হবে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে হল ত্যাগের নোটিশ দেওয়া হবে।
এসব তো একজন ছাত্র মারা গেলে প্রতিবারই হয়ে থাকে।
মনে পড়েছে। যে ছেলেটি মারা যাবে তার নাম আজাদ। পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হবে। স্যাররা ইচ্ছা করে ছেলেটিকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে শুক্রবার পর্যর্ন্ত রাখবেন। তারপর ক্যাম্পাস খালি হলে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হবে। শুক্র বার কাজটি করা হবে। কারণ সেদিন ক্যাম্পাস থাকবে খালি।
আচ্ছা জেবা আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খবর রাখব। তুমি লèী মেয়ের মতো বাড়িতে চলে আস।
স্যার আমার কিছু হবে না। হলে আমি দেখতাম।

তিন.
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বসায় বসে আছি। হাতে পত্রিকা। সেখানে আজাদের দুটি ছবি ছাপা হয়েছে। একটা হাসপাতারের বেডে। লাইফ সাপোর্ট পরা। আরা একটি ওর জানাজার দৃশ্য। শ্রক্রবার খালি ক্যাম্পাসে স্যাররা জানাজা পড়াচ্ছেন। এমন সময় ডাঃ মোহিত কামাল স্যার ফোন করলেন। বললেন আমার যদি বিশেষ কাজ না থাকে তাহলে দপুর দুটার পর তার সাথে দেখা করতে। আমারও বিশেষ কাজ নেই। স্যারের বাসায় একজন লোক বসে আছেন। গায়ের রং কালো। বয়স পঞ্চাশের শেষ কোঠায় হবে। হাসি খুশি। তাকে কোথায় জনি দেখেছি। মনে পড়ছেনা। মনে করার চেষ্ট করছি। তখন মোহিত স্যার বললেন, আমার শিক। হেদায়েতুল ইসলাম।
আমি তাকে চিনতে পারলাম। অনেক বার টিভিতে দেখেছি তাকে। হেদায়েত স্যার বললেন,বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ তাই না?
আমি বলাম, জ্বি।
আমি পেপারে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যায় অনিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। তাছাড়া তোমার কথা আমাকে মোহিত বলেছে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। তবে শুক্রবার যখন ছেলেটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হল। তখন বিশ্বাস হল।
মোহিত স্যার বললেন, আমার কাছেও বিষয়টা প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। কিন্তু এখনো বুঝতে পারছি না। কি করে ভবিষ্যদ্বাণী অরে অরে সম্ভব হয়।
হেদায়েত স্যার বলল, স্টিফেন হকিং এর মতে ভবিসত্যত হলো অতীতের মতোই একটি ঘটনা। আমারা যেমন অতীতকে পাল্টাতে পারিনা তেমন ভবিস্যতকেও পাল্টাতে পারব না। ভবিস্যাত হলো পূর্ব নির্ধারিত একটা বিষয়। আধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত। সব পূর্বনির্ধারিত? আমার উত্তর হ্যা। কিন্তু উত্তরটা না হতে পারে কারণ কি পূর্বনির্ধারিত সেটা আমরা কোনদিনই জানতে পারব না। জানতে পারলে তো আর পূর্বনিধারিত থাকল না। মোট কথা আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী করার দেখার মতা নেই তাই বলি ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তবে কেউ যদি ভবিষ্যৎ দেখতে পায় তাহলে ভবিষ্যৎ বলতে পারবে।
আমি বললাম, স্যার আমার কি সেই মতা আছে?
থাকতেও পারে। একশ কোটি মানুষের মধ্যে একজনের এই মতা থাকতে পারে। তাহলে পৃথিবীর ছয়জনের এই মতা আছে। তুমি হতে পারে ছয় জনের একজন। চীনে এক মেয়েকে পাওয়া গেল। সে তার ডাক্তার বাবার পাশে বসে রুগির কোথায় হাড় ভেঙেছে বলে দিতে পারে। এই মতা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। শেষে একদল বিজ্ঞানী পরীাকরে দেখলো মেয়েটার চোখ থেকে এক্স-রে বের হয়। তাই সে মাংশের ভেতরের অংশ দেখে। এক্স-রে মতো একটা শক্তিশালী রেডিয়েসন মানব চোখ দিয়ে বের হওয়া অসম্ভব ঘটনা। তবে এটা বাস্তবে ঘটেছে। এটা মেয়েটার একটা অতিরিক্ত মতা। তোমারও হয়তো একটা অতিরিক্ত মতা আছে। তবে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু প্রামাণ করাটা হবে অনেক কঠিন।
মোহিত স্যার বলল, স্যার আমাদের ধর্মেও বলা হয়েছে তোমাদের ভবিষ্যতকে আমি তোমাদের হাড়ের সাথে আটকে দিয়েছি। অর্থাৎ আমাদের ভবিষ্যতটা হলো একটা পূর্বনির্ধারিত এবং অলঙ্ঘনিয়। হাড়ের মতো কঠিন ভাবে আটকে আছে।
হেদায়েত স্যার বলল, তুমি কি শুধু দূর্ঘনা দেখ না সুসংবাদও দেখ।
আমি জবাবে বললাম, কখনোই সুসংবাদ দেখি না।
তুমি দেখার পর বদলে দেবার চেষ্টা কর না?
চেষ্টা করেছি। কিন্তু বদলাতে পারি না। একদিনের ঘটনা। আমাদের পাশের ফাটে একটা মেয়ে থাকে। আমার মতোই বয়স। আমার সাথেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আমি রয়সায়ন বিজ্ঞানে আর ও ইতিহাসের ছাত্রী। নাম তানজিলা। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে এক ইতালি প্রবাসী ছেলের সাথে। আমাদের পাশের মহল্লার এক ছেলের তানজিলার সাথে রিলেশন ছিল। ওরা একজন অপর জন ভালোবাসতো কি না আমি তখন জানতাম না। তানজিলা খাটে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছে। আমি ওর পাশে বসে একটা বই পড়ছি। তানজিলা আমার হাত টান দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, শোন আমাদের মদন আলাউদ্দিন কি বলে জানিস? আমার বিয়ে হলে সে আত্মহত্যা করবে। এখনি তার হাত ধরে পালাতে হবে! তানজিলা ওর মোবাইল লাউড স্পিকারে দিয়ে বলল। গধাটায় এক থেকে একশ পর্যন্ত গুনবে। এর মধ্যে রাজি হতে হবে। নয়তো সে ছাদ থেকে লাফ দিবে! আমরা শুনছি আলাউদ্দিন গুনছে। একুশ, বাইশ, তেইশ.....। আমার চোখে ভাসছে আউদ্দিন ছাদ থেকে লাফ দিচ্ছে। পীচ রাস্তায় পড়ে তার মাথাটা থেতলে গেল। একটা রক্তের ধারা বয়ে গেল পীচ রাস্তার উপর দিয়ে। আমি মরিয়া হয়ে বললাম, তুই বল রাজি। আমার কথা শুনে তানজিলা ভড়কে গেল। সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল আলাউদ্দিন আমি রা...। তানজিলা আমার চোখের সামসেন মোবাইলফোন ধরে বলল, নেটওয়ার্ক ফেইল। আমি অন্য কম্পানি মোবাইল ফোন ব্যাবহার করি। আমি আমারটার ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখি আমারটাও নেটওয়ার্ক নাই। আমি তখন তানজিলাকে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসলাম। একটা রিকসা নিয়ে আলাউদ্দিনের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি একদল লোক জটলাপাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখি যা আসঙ্কা করছি তাই ঘটেছে। আলাউদ্দিনের নিথর দেহ পড়ে আছে পীচ রাস্তায়। একটা রক্তের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে।
মোহিত স্যার বলল, তাহলে কি স্যার ও বিপদের সময় নীরব দর্শকের মতোই থাকবে?
সেটাই প্রকৃতি চায়।
বুঝলাম না?
এখানে আলাউদ্দিন মারা গেছে। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনার সাথে পৃথিবীর সব মানুষের সম্পর্ক রয়েছে। আলাউদ্দিনকে কবর দিতে গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়েছে। নিশ্চই একটা এ্যম্বুলেস ভাড়া করা হয়েছে। এতে এ্যম্বুলেসের ড্রাইভার ভাড়ার টাকা পেয়েছে। মালিক টাকা পেয়েছে। তেল নেওয়ার জন্য প্রেট্রল মাম্প মালিক টাকা পেয়েছে। পেট্রল মালিক এই টাকা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রেট্রল কিনবে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের খনিতে আমেরিকার লোক কাজ করে। আমেরিকা আবার আফ্রিকার কালো মানুষদের অর্থ সাহায্য করবে। যদিও আলাউদ্দিন দেশের অখ্যাত একটা ছেলে। অথচ তার সাথে সম্পর্কিত সৃথিবীর সকল মানুষ। পৃথিবীর সব মানুষ যদি একটা পুকুরের বাসিন্দা হয় প্রতিটি ছোট বড় ঘটনা হলো এক একটা ঢেউ। পুকুরের মাঝে ঢিল ছুড়লে যেমন সারা পুকুর ছাড়িয়ে পড়ে। ঘটনাগুলোও সবাকেই আলোড়িত করে। এখন যদি ও আলাউদ্দিনকে বাচিয়ে দেয় তাহলে পৃথিবীর সবার ভাগ্যকে বদলাতে হবে। এখন একজন আলাউদ্দিনের জন্য প্রকৃতি কখনো এতবড় দায়ভার নিবে না। আর প্রকৃতি কাউকে সেই সুযোগও দিবে না।
তাহলে তো জেবা আমাদের থেকে অনেক বেশি দূর্ভাগা। সে তার চোখে সামনে নীরব দর্শকের মত দূর্ঘটনাগুলো দেখবে। একবার ঘটার আগে একবার ঘটার পর।
সেটা আমি জানি না। তবে এটুকু জানি। প্রকৃতি তার নিয়ম মতোই চলবে।

চার.
ঈদের ছুটি। আমি গ্রামের বাড়িতে যাব। আমি আর ছোট মামা এক সাথে যাব। মামা দু'টো টিকিট যোগার করেছেন। আমরা উঠেছি আসাদ গেট থেকে। এরপর গাড়ি গাবতলি বাস স্টেশন হয়ে চলে যাবে আরিচার দিকে। সাধারণত আমার গাড়িতে ঘুম হয় না। হেডফোনে গান শুনছি। হুমায়ূনের ফোন আসে।
হ্যালো তুই কোথায়।
গাড়িতে।
আমি গাবতলী স্টেশনে আছি। অনেক চেষ্টা করেছি। কোন টিকেট যোগাড় করে পারি নায়।
না পারলে বসে আছিস ক্যান। বাড়ি চলে যা।
আশায় আছি। আশায়ইতো মানুষ বেচে থাকে। কোন যাত্রি না আসলে। তার জায়গায় চলে যাবো। কাউন্টারে আমার দেশি ভাই আছে। সে বলেছে একটা ব্যাবস্থা করে দিবে।
বদ মতলব নিয়ে অপে না করে বাড়ি চলে যা।
আচ্ছা রাখি। দোয়া করিস কেউ যেন এসে গাড়ি মিস করে।
আচ্ছা রাখি।
আমি ফোন বন্ধ করে গান শুনছি। মামার ফোন এসেছে। সে কথা বলছে। ফোন রেখে বললল, মামনি, আমার অফিসের একউন্স সেকশনে গোলমাল হয়েছে। আজ মনে হয় যেতে পারব না।
মামা ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নেমে গেল। তন্দ্র এসেছে চোখে। চোখ বন্ধ করেছি। দেখি আমাদের গাড়িটা একটা ফিলিং স্টেশনে দাড়িছে। সিএসজি নেওয়ার জন্য। হুমায়ূন আমার হাত ধরে আছে। এমন সময় প্রচন্ড শব্দে গাড়ি কেপে উঠল। তার সাথে কুন্ডলি পাকিয়ে হলুদ আগুনে শিখা উপরে উঠছে। সমস্ত গাড়ি এক সাথে জ্বলে উঠল। আমি কেপে উঠলাম।
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে হুমায়ূন দাড়িয়ে । হুমায়ূন বলল, জেবা! তুই এই গাড়িতে।
বলার মতো শক্তি আমার গায়ে নাই। আমি শুধু তাকিয়ে আছি। হুমায়ূন আমার হাত ধরে ঝাকি দিল। আমি ভয়ে ভয়ে বাহিরে তাকালাম। গাড়িটা একটা ফিলিং স্টেশনে দাড়িয়ে আছে। গ্যাস নেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ হলো। আমি দেখি আমাদের ছেড়ে আরেকটা গাড়ি যাচ্ছে। সেই গাড়ির জানালায় আমি বসে আছি। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছি নিজেকে। সমাপ্ত

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০১

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, September 11, 2011 at 10:36pm ।। নদী ভ্রমনের এক রাত ।।
আমি তানভীর বলছি রাজশাহী থেকে।আজ আমি আমার একটা অভিগ্গতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।আমার বাসা রাজশাহী শহরের ভেতরে।ঘটনাটি ছিল আজ থেকে ৬ বছর আগের।তখন আমি HSC পাশ করছি মাত্র।সময়টা ছিল বর্ষাকাল।পদ্মাতে প্রচুর পানি।আমরা কয়জন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম যে একটা নৌকা ভ্রমন করবো।আমরা চারজন ছিলাম একসাথে।সবাই রাজি হল।ঠিক করলাম তারপর দিন আমরা T বাধ থেকে যাত্রা শুরু করবো সকাল ৯টায়।কোথায় যাব ঠিক নাই।সারাদিন নৌকায় কাটাবো ঠিক করলাম।পরদিনটা ছিল রবিবার।সকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছিল।সকাল দশটায় আমি T বাধ এ পৌছালাম। কিন্তু কেউ আসেনি।আমাদের বন্ধুদের কারও কাছে পারসোনাল মোবাইল ছিলনা শুধুমাত্র রিংকু ছাড়া।তাই আমি দোকান থেকে রিংকুকে ফোন করে T বাধএ আসতে বললাম।রিংকু আসলো প্রায় ১ ঘন্টা পর।তখন প্রায় বেলা এগারোটা।আর কেউ আসলোনা।আমি আর রিংকু ঠিক করলাম আমরা দুজনেই ঘুরতে বের হব নৌকা নিয়ে।ঠিক তখন বৃষ্টিটা আবার জোরে শোরে এল।এ বৃষ্টি আর যেন থামতেই চায়না।তারপর যখন বৃষ্টি থামলো তখন প্রায় দুপুর ৩টা।আমরা একটা হোটেলে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করলাম।তারপরে একটি নৌকা ভাড়া করলাম।কিন্তু আমরা আমাদের প্লানটা একটু চেন্জ করলাম।আমরা ঠিক করলাম নদীর ওপারে ভারতের বর্ডারের কাছে একটি গ্রাম আছে সেখানে যাব।তারপর আমরা রওয়ানা হলাম।গ্রামে পৌছানোর প্রায় পাচ কিলোমিটার আগে চর এর ভেতর নৌকাঘাটে নৌকা আমাদের নামিয়ে দিল।বাকিটা পথ হেটে যেতে হবে।মাঝিকে জিঞ্গাসা করলাম যে কতরাত পযন্ত এখানে নৌকা পাওয়া যাবে?সে বলল যে আনুমানিক রাত নয়টা পযন্ত নৌকা পাওয়া যাবে। তখন আমরা সেই গ্রামের দিকে হাটা ধরলাম।গ্রামে পৌছে আমরা দুজনে এদিকে ওদিকে ঘোরাফেরা শুরু করলাম।গ্রামে কোন বিদ্যুতের লাইন নেই।জনবসতি ও কম।যখন সন্ধা নামলো তখন চারিদিকে শেয়াল ডাকা শুরু করলো।আমরা শেয়াল ডাকার শব্দে আরও মজা পাচ্ছিলাম। রাত বাড়তে থাকলো।বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া দরকার।দুজনে নৌকাঘাটে এসে পৌছালাম।তখন রাত ৯টা প্রায়।আমরা ঘাটে এসে একটু অবাক হলাম।একটা নৌকা ও আমরা নৌকাঘাটে দেখতে পেলাম না।পড়লাম চরম এক বিপদে।তখনও টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল।এর মধ্যে আমাদের একমাত্র ছাতাটার স্টিকগুলো বাতাসের চাপে অলরেডী ভেঙ্গে গেছে।আমরা পুরোপুরি ভিজে গেছি।এখন কি করা যায়? সেই চিন্তায় করছিলাম।এমন সময় রিংকু ওর এক বড় ভাইএর কাছে ফোন দিল।সে বড় ভইএর বাসা T বাধের পাশেই।এমনিতেয় আবহাওয়া খারাপ,তার ভেতর চর এলাকায় নেটওয়ার্কের সমস্যা তো আছেই।কিন্তু আশ্চযজনক ভাবে প্রথম বারেই রিং হয় এবং ওপাশ ফোন রিসিভ হয়।রিংকু ওর সে বড় ভাইকে অনুরোধ করে যে একটা নৌকা ম্যানেজ করে তারাতারি T বাধ সোজা চড়ে পাঠিয়ে দিতে, নাহলে আমাদের খুব বিপদ হবে।ভাড়া ডবল চায়লে ডবল দিব।বড় ভাইটা বলল আচ্ছা দেখছি।তারপর আমরা ওখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম।চারিদিকে শেয়ালের ডাক আর টিপটিপ বৃষ্টি।আমরা ব্যাপারটা ইনজয় করছিলাম।একটু একটু ভয় ও করছিল।এতবর একটা চর আমরা মাত্র দুইজন।শুনেছিলাম বর্ষার দিনে অনেক জেলেরা নৌকায় করে সারা রাত মাছ ধরে।দুর্ভাগ্যবসত সে রাতে একটা ও জেলে নৌকা চোখে পরলোনা। রাত যখন প্রায় ১০ তখন একটা ডিঙ্গি নৌকা দেখতে পেলাম।তখন আমরা প্রায় ভিজে চুপসে গেছি।নৌকাটা ঘাটে এসে ভিড়লো।অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছিলোনা।নৌকার মাথায় বৈঠা হাতে একজন মানুষ বসে ছিল।আমরা দুজনে গল্পে অনেক মুশগুল ছিলাম যে আমাদের মনে হয়েছিল যে নৌকাটা হয়তবা রিংকুর সেই বড় ভাই ই পাঠিয়েছে।তাই আমরা মাঝিকে কোন কথা না জিঙ্গাসা করে সরাসরি নৌকায় উঠে পড়লাম।তখন মাথায় একটাই চিন্তা কাজ করছিল যে তারাতারি বাসায় যেতে হবে কারন অনেক রাত হয়ে গেছিল।এর মধ্যে রিংকু ওর বাসায় ফোন করেছিল।অনেক বার ফোন ট্রাই করার পর আন্টিকে ফোনে পেয়েছিল।আমি খালাদের বাসায় থাকতাম আর আমার বাবা মা থাকতো নাটোরে।বাসার গেটের একটা এক্সটা চাবি সবসময় আমার সাথে থাকতো আর আমি HSC পরীক্ষার পর থেকে প্রতিদিন ই একটু রাত করে বাসায় ঢুকতাম। তাই আমি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করছিলাম না।চিন্তা হচ্ছিল রিংকুর মা কে নিয়ে কারন আন্টি বাসায় একা থাকেন। আমরা নৌকার ওঠার পর মাঝি ও আমাদের সাথে কোন কথা বললনা, নৌকা ঘুড়িয়ে সোজা T বাধের মুখে রওয়ানা হয়।নদীতে তুমুল স্রোত।বাতাসের বেগ ও বাড়তে থাকলো।আমি রিংকু দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে কথা বলছি। আমাদের প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছিল।নৌকায় ওঠার ৫মিনিট পর আমার চোখ গেল সেই চরের দিকে যেখানে আমরা এতক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম।হটাত ওদিকে তাকাতেই আমার সারা শরীর অবশ হওয়ার দশা।দেখি অনেক গুলো জোড়া জোড়া চোখ আমার দিকে নিশ্চল ভাবে তাকিয়ে আছে।চোখগুলো যেন জ্বলছে।রিংকুও দেখি ওদিকে তাকিয়ে আছে।পরে বুজলাম যে এগুলো তারা, যাদের চিতকারে আমরা এতক্ষন মজা পাচ্ছিলাম।ভাবলাম এত শেয়াল এতক্ষন আমাদের পাশে ই ছিল তারপর ও আমাদের কোন ক্ষতি করলোনা কেন?আমি রিংকু দুজনেই ব্যপারটায় একটু অবাক হলাম।হটাত আমরা খেয়াল করলাম যে আমাদের নৌকাটা নদীর প্রায় মাঝখানে আর মাঝির দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই। নৌকাটা অস্বাভাবিক ভাবে দুলতে শুরু করলো।এ দৃশ্য দেখে আমার শরীর প্রায় অবস হওয়ার পথে। ঠিক তখনই চারিদিকে মনে হল হাজার হাজার শেয়াল ডাকা শুরু করল।যেই শেয়ালের ডাক শুনে একটু আগে আমরা মজা পাচ্ছিলাম সেই শেয়ালের ডাক শুনে আমরা সেই মুহূর্ত্বে সবচেয়ে বেশি ভয় পেলাম।ঘটনাগুলো ঘটলো মাত্র কয়এক মিনিটের মধ্যে। অবশেষে একসময় মুর্ছা গেলাম।যখন গ্ঙান ফিরলো তখন আমি আমার বাসায়। পরে শুনলাম যে আমাদের কাদাতে লেপ্টানো অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন রাজশাহী পঞ্চবটী এলাকায় এক রাজশাহী প্যারামেডিকেলের একজন প্রিন্সিপাল। উনি সকালের প্রাতভ্রমনে এসেছিলেন। আমাদের কে প্রিন্সিপাল সাহেব ওখানে দেখতে পান ।তারপর আমার মানিব্যাগ থেকে আমার বাসার ঠিকানা নিয়ে কিছু লোকের সাহায্য নিয়ে আমাদেরকে আমার বাসায় পোছৈ দেন। পরে জেনেছিলাম যে রিংকুর সেই বড়ভাই একটা নৌকা পাঠিয়ে ছিল সেই রাতে তবে আমাদের কে ওপাশে না পেয়ে মাঝি নৌকা নিয়ে ফিরে এসেছিল।এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা আমার আমরা আজও বের করতে পারিনি।সেদিন কি হয়েছিল।আমরা দুজনেই সাতার জানতাম না । তাহলে আমরা কিভাবে নদী পাড় হলাম?কোনকিছুর ই আমরা দুজনে কোন সমাধানে আসতে পারিনি।তবে আমরা আজ ও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করছি। (অনুরোধ: সত্য-মিথ্যা প্রমান করতে যাওয়ার দরকার নাই) দিয়েছেনঃ তানভীর রায়হান

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০২

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, September 11, 2011 at 11:20pm ।। অবিশ্বাস কিন্তু সত্যি ।। আমার নাম গাজী রেজা । আমী CTG তে থাকি । আমি IIUC তে BBA করছি । একজন মুসলিম হিসেবে জ্বীন বিশ্বাস করি । কিন্তু জীবনে কখনো দেখিনি বলে হইত বিশ্বাস টা খূব বেশি গাড় ছিল না । আমি খূব ভীতু কিন্তু এইসব বিষয়ে আমার INTREST ছিল খূব বেশি । এবার মূল ঘটনাই যাওয়া যাক। আমি আমার ছোট নানুর বাসা থেকে ২০০৮ সালে ssc exam দিয়েছিলাম । আমি প্রতি বৃহস্পতিবার আমার বাসায় যেতাম আর শুক্রবার রাতে আবার নানুর বাসায় ফিরে আসতাম । ঘটনাটা ২০০৭ এর । একবার আমি বৃহস্পতিবার আমার বাসায় আসলাম । প্রথমেই বলে রাখি , আমার নানুদের বিল্ডিংটা ছিল ৬ তলা । ৬ তলা তে মোট ১২ টা ফ্লাট ছিল । নানুরা ছিল নিচ তলায় । শুক্রবার সকালে হঠাত আমার নানু ফোন করে এক অদ্ভুত ঘঠনা বলল । উনি বলল যে , ভোর ৪ টার দিকে নাকি উপর তলার সবাই এসে নানুর দরজা নক করতে লাগল । আমার নানা দরজা খুলতেই সবাই নানাকে বলল যে ছাদ থেকে একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ আসছিল । কান্নার আওয়াজ শুনে তারা কেউ ভয়ে ছাদে যাওয়ার সাহস পেল না । আমার নানা অনেক সাহসী এবং ফরহেজগার ছিলেন বলে সবাই আমার নানাকে ব্যাপার টা বলল । আমার নানা ছাদে দরজা খুলেই দেখল একটা ছোট ১১-১৩ বছরের মেয়ে ছাদের এক কোনায় বসে বসে কাঁদছে । মেয়েটার চোখে মুখে ছিল ভয়ের ছাপ আর শরীরের কিছু জায়গায় অদ্ভুত চিকন আঁচড়ের দাগ । সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করে নিচে নামিয়ে আনল । সবাই তো পুরা অবাক যে , ছাদের বাইরে তালা মারা , নিচে গেইটে তালা মারা । মেয়ে টা এত ভোরে ছাদে এল কেমনে ? কেউই কোন ব্যাখা খুজে পাচ্ছিলনা । রাতে ১০ টার পর গেইট , ছাদের দরজা সব তালা মারা থাকে । ঐ মেয়েটার ছাদে থাকার কোন সুযোগই নাই । মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে সে ভয়ে কিছুই বলতে পারেনা । পরে সে সব ঘটনা খুলে বলল । মেয়েটার ভাষায় , সে নাকি পাশের এক এলাকায় এক বাসায় কাজ করে । রাত ১০:৩০-১১ টার দিকে সে ময়লা পানি ফেলতে পিছনের দরজা দিয়ে বের হয় । সে যখনই পানি ছুড়ে বাইরে ফেলে , ঠিক তখনই পিছন থেকে কিছু একটা এসে তাকে খামছি দিয়ে ধরে , আর মেয়েটা দেখে যে ওটা তাকে উরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । মেয়েটা ভয়ে এবং ব্যাথায় সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । পরে যখন তার জ্ঞান ফিরে সে দেখতে পাই যে সে ছাদে । মেয়েটাকে পরে তার মালিকের বাসায় ফিরিয়ে দেওয়া হল । আমি ঐদিন নানুর বাসায় গিয়ে বিল্ডিং এর সবাই কে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করলাম । ঐ ঘটনা আমি ছাড়া বিল্ডিং এর সবাই দেখেছিল । আমি অনেক চেষ্টা করেও আজও ঐ ঘটনার কোন ব্যাখা খুজে পাইনি । ( এই ঘটনার পর আমি আমার জীবনে আরো আরও অনেক ভৌতিক ঘটনা শুনি । আমাদের নতুন বাসায় অনেক ঘটনা ঘটে যার কোন ব্যাখা খুজে পাইনা । আস্তে আস্তে সব শেয়ার করব । ইনশাল্লাহ । ) দিয়েছেনঃ Gazi Reza
ফেসবুক আইডিঃ www.facebook.com/gzreza ** উনি মেইলে মোবাইল নাম্বারসহ দিয়ে দিয়েছেন।। হাই কনফিডেন্স।।

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০৩

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, September 12, 2011 at 10:34pm ।। অচেনা জগত ।। সবে ১৫ রোজা চলছে।ছাত্রাবাসে আজ থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে।সকল ছাত্র খুব তাড়াতাড়ি করে বাড়ী চলে গেলেও আমি ব্যক্তিগত ঝামেলায় ছাত্রাবাস পরিচালককে রাজি করিয়ে আরো কয়েকদিন ছাত্রাবাসে আছি।ঝামেলাটা হয়েছে রাজনীতি নিয়ে।প্রতিপক্ষের সাথে একটু বুঝাপড়া আছে তো,তাই ঠান্ডা মাথায় আমাদের দলের বড়ভাই নতুন প্ল্যান করছে আর আমাদের দলের সবাইকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে বলেছে।এইসব রাজনৈতিক বড়ভাইদের পাল্লায় পড়ে শেষ পর্যন্ত ঈদের আনন্দ মাটি হতে চলল।ঝামেলা শেষ হতে হতে বোধ হয় শবে কদর শেষ হয়ে যাবে।ঝামেলার কারণে বাড়ী যেতে পারছি না এজন্য মন খুবই খারাপ,সেই সাথে দুঃচিন্তায় রাতে ঠিকমত ঘুম আসে না।রাত হয়েছে।রুমে তথা গোটা ছাত্রাবাসে আমি একা।ছাত্রাবাসের কর্তৃপক্ষ সবাই নিজের বাসায় চলে গেছে।খুব ভয় পাচ্ছি তা নয়,দুঃচিন্তায় আছি।রাতে তাই ঘুমাতে পারছি না।অগত্যা ঘুমানোর জন্য পাশের বেডের শফিউলের ব্যক্তিগত ডায়েরিটা পড়তে লাগলাম- "রাত প্রায় দুইটা।অন্ধকার রুমে একাকী শুয়ে আছি।কিছুতেই ঘুম আসছে না।ইদানিং রাতে ঠিকমত ঘুম হচ্ছে না।তো একদিন ঘুমানোর আগে গোছল করেছি,এতেই কেল্লা ফতে।রাতে এত ভালো ঘুম হল কিন্তু হঠাত্‍ কে যেন আমাকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জাগাতে লাগলো আর বলতে লাগলো,"ঐ বেটা উঠ,যা ভাগ এখান থেকে।"আমি লাফ দিয়ে ওঠলাম।কিন্তু এ আমি কোথায়?এযে লাকসাম রেল স্টেশন!আমার গায়েও দেখছি ছেড়া-ময়লা জামা কাপড়!আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি একটা টোকাই। আমি কি স্বপ্ন দেখছি?কিন্তু ঐ আনসারের লাঠির গুতোঁয় যে ব্যথা পেয়েছিলাম,তা এখনো অনুভূত হচ্ছে।আচ্ছা এককাজ করি,আমি ঢাকায় আমার ছাত্রাবাসে চলে যাই।কিন্তু এভাবে টোকাইয়ের বেশে কিভাবে যাব?যাক সে পরে দেখা যাবে।আমি এখন যে জগতে আছি,সে জগতে আমি একটা টোকাই।তাই আমাকে এখন টোকাইয়ের কাজ করতে হবে।দেখি কেমন লাগে। সারাদিন মানুষের দৌড়ানি খেয়ে অনেক কাগজ টোকাইছি।এবার প্লাটফর্মে ঘুমাতে যাব।আজকে রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে হবে কিভাবে ঢাকায় যাওয়া যায়।কৌতূহল বশত একটি আয়নায় নিজের টোকাইরূপী চেহারা দেখার ইচ্ছে হল।আমার চেহারা দেখে আমি তো অবাক।এটা কার চেহারা,একে তো আমি জীবনেও দেখিনি।দুনিয়াটা খুব আজব লাগছে।কাল ঘুম থেকে ওঠে যেভাবেই হোক ঢাকায় আমার ছাত্রাবাসে যাব।এরকম ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন মাত্র সকাল হয়েছে।কিন্তু একি,আমি আমার ছাত্রাবাসের সীটে।আরো অদ্ভুত ব্যপার,পত্রিকায় তারিখ দেখলাম।আমি মাত্র গতকালই গোছল করে ঘুমিয়ে ছিলাম,এবং সে ঘুম মাত্র ভেঙ্গেছে।তাহলে টোকাইয়ের ঘটনাটা নিশ্চয়ই স্বপ্ন ছিল। কিন্তু না।ঐ দিন রাতেও গোছল করে ঘুমালাম এবং ঘুম ভাঙ্গলো লাঠির গুঁতোয়।মাত্র একটি ট্রেন এসেছে।আমি এই নতুন জগত
সম্পর্কে জানতে ট্রেন থেকে নামা একজন পত্রিকার হকারকে বলি আজ কয় তারিখ।জবাবে সে যেই তারিখের কথা বলে,তা আমার ঢাকার জগতের হিসেবে ভবিষ্যত্‍ কাল।এই জগতে এখনো ঈদের পাঁচদিন বাকী।আর ঢাকায় মাত্র রমজান শুরু হল।আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম।হঠাত্‍ ট্রেন থেকে একটি কফিন নামল।কফিনে একজন ছাত্রের লাশ,ঢাকা থেকে এসেছে।রাজনীতি করতো,প্রতিপক্ষের গুলিতে গতকাল রাতে মারা যায়।লাশের কফিনটি প্লাটফর্মে পড়ে থাকে।কিছু লোক এসে কফিনটি নিয়ে লাশের বাড়ীতে রওনা হয়।আমিও গেলাম লাশ দেখতে।লাশের বাড়ীতে যাওয়া মাত্র দেখলাম,ঘর থেকে আমার রুমমেট মামুনের আব্বা ও আম্মা পাগলের মত ছুটে আসছে।তাহলে কি মামুনের কোন সমস্যা হয়েছে?কফিনের ঢাকনা সরিয়ে যেই না লাশের মুখের কাপড় সরানো হল,আমি শোকে পাথর হয়ে গেলাম।এ যে আমার রুমমেট মামুনের লাশ!তার বুকে গুলি লেগেছে।কিছুতেই নাকি তাকে বাচাঁনো গেল না।আমি সারাদিন মামুনের বাড়ীতেই ছিলাম।বাড়ীর মানুষজন দয়া করে আমাকে পেট ভরে খেতে দিল।কিন্তু কেউই জানলো না যে,আমি মামুনের রুমমেট।কারণ এই দ্বিতীয় জগতে আমি একটা টোকাই।ঐ রাতে আমি মামুনের বাড়ী থেকে চলে আসার সময় মামুনদের বাড়ীর পাশ থেকে একটা স্বর্ণের আংটি খুঁজে পাই।আমি কাউকে না বলে আংটিটা আমার পকেটে রাখি।কারণ আংটির কথা বললে সবাই আমাকে চোর ভাববে।ঐ রাতেও আমি স্টেশনে এসে ঘুমাই এবং যথারীতি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আমার ছাত্রাবাসে।দূর যতসব আজগুবি স্বপ্ন।হঠাত্‍ আমি আমার পকেটে ঐ আংটিটি খুঁজে পাই।মামুনকে অবশ্য আংটির কথা বলি নি।তার বাড়িতে গিয়েই আংটি টা ফেরত দেব ভাবছি। ঐ দিন রাতেও গোছল করে ঘুমাতে গেলাম কিন্তু আমি আর আমার স্বপ্নের বা দ্বিতীয় জগতে যেতে পারলাম না।তারপর দিনও কিছু হল না।আমি মামুনকে আংটির কথা ছাড়া সব খুলে বললাম কিন্তু সে হেসে সব উড়িয়ে দিয়ে বলল আমি নাকি তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে এসব গল্প বানাচ্ছি।আমি তাকে আর কিছু বললাম না,শুধু সাবধানে থাকতে বলেছিলাম।ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে যাব।তবে অবশ্যই ঐ নির্দিষ্ট দিনে আংটিটি পকেটে করে লাকসাম রেল স্টেশনে থাকব।" আমি ডায়েরিটা পড়া শেষ করলাম।শফিউল ব্যটা একটা চাপাবাজ এবং আংটি চোর।তবে আমি সাবধানে থাকার চেষ্টা করব।রাজনীতি মানেই রিস্ক। ২৩রোজার দিন আমাকে শফিউল ফোন করে বলল"মামুন তুই কই?"যখন বললাম যে আমি ঢাকায়,ও পাগলের মত বলতে লাগল,"বন্ধু ঢাকায় থাকলে আর মাত্র একদিন তুই বাচঁবি,তাড়াতাড়ি বাড়ী চলে আয়।"আমি কল বন্ধ করে দেই।যত্তোসব ভীতুলোক।
একটুপরেই আমার রাজনৈতিক দলের বড়ভাই ফোন দিয়ে বলে,"মামুন,কালকে সন্ধ্যায় ধোলাইখালে একটা অপারেশনে যেতে হবে।ভয়ংকর এবং চূড়ান্ত অপারেশন।আমাদেরকে অবশ্যই কঠিন লড়াই করতে হবে।তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নাও।আর অপারেশনে যারা যোগ দেবে না,তাদেরকে আমি নিজ হাতে গুলি করব।তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবা।"মূহুর্তেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে।আমি ভয়ে ভয়ে বলি,"জ্বী,ঠিক আছে বড়ভাই।"আমি ভালো করেই জানি বড়ভাইয়ের নির্দেশ অমান্য করলে তিনি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবেন আর "ভয়ংকর লড়াই"তে অংশ নিলে বেশ ক'জন মারা যাবে নিশ্চিত।এখন বাচঁতে চাইলে পালাতে হবে।আমি তাড়াতাড়ি ছাত্রাবাস থেকে বেড় হলাম।বের হয়েই দেখি বড়ভাইয়ের লোক আমাকে নিতে এসেছে।বুঝলাম,মৃত্যু ছাড়া গতি নাই।বড়ভাইয়ের বাসায় গেলে তিনি আমার হাতে একটা রিভলবার তুলে দেন এবং টুকটাক প্রশিক্ষণ দেন।আমি অন্যমনস্ক হয়ে থাকি। তারপর যা ঘটেছিল তা খুবই মর্মান্তিক।বুকে গুলি লাগে আমার।অচেতন হয়ে যাই।তবে মারা গিয়েছিলাম কিনা জানি না।চেতনা ফিরলে নিজেকে আবিস্কার করি একটা পাগল হিসেবে যে লাকসাম রেল স্টেশনে সারাক্ষণ পাগলামি করে বেড়ায়।তবে অনেক চেষ্টা করেও আমি আমার সেই পুরোনো জগতে যেতে পারি নি।কিন্তু রহস্যজনক ভাবে সেই মামুন নামধারী আমাকে এবং পরিচিতজনদেরকে আমি বহু চেষ্টা করে কোথাও খুজেঁ পাই নি।এমনকি আমার বুকেও কোন গুলির চিহ্ন নেই।হয়তো আমি অতিরিক্ত ভবিষ্যতে চলে এসেছি। লেখকঃ Muhammad Abdullah Al Mamun

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০৪

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, September 12, 2011 at 11:36pm ।। একটি ভৌতিক রাত ।। আমার দাদার ছোট বেলা থেকেই মাছ ধরার মাছ ধরার দিকে খুব টান ছিল। তিনি খুব ভালবাসতেন মাছ ধরতে। আমাদের দেশের বাড়ি তখন অনেক চাকর ছিল। তাদের ২ জনকে নিয়ে একদিন রাতে তিনি মাছ ধরতে বের হলেন। তখন ছিল বর্ষাকাল। খুব বর্ষার কারনে নদীর পানি অনেক বেড়ে যায়। তো তারা খাওয়া দাওয়া করে রাত ৯ টায় বাড়ি থেকে বেড় হলেন। তখনকার দিনে রাত ৯ টা গ্রামে অনেক রাত। বের হয়ে তারা ৩০ মিনিট নৌকা বেয়ে একটা বড় মোহনায় এসে পৌছলেন। সেই মোহনা থেকে চার দিকে চারটি নদী গেছে। তারা যখন মোহনার মাঝামাঝি তখন হঠাত্‍ নদীর পানি খুব জোরে তাদের নৌকা দোলাতে লাগল। আকাশ ঘুটঘুটে অনধকার। তারা পূর্ব দিকে মাছ ধরতে যেতে চেয়েছিলেন কিনতু বাতাস যে তাদের উওর দিকে নিয়ে যাছিল তারা আঁধারে বুঝতে পারেন নি। এভাবে অনেক সময় চলে যাবার পর একসময় তারা বুঝতে পারেন যে তাদের নৌকা একটা পাড়ে এসে ঠেকেছে। তাদের কাছে আগুন বলতে ছিল একটি মাত্র দেয়াশলাই এর বাক্স। কিন্তু সেটিও ভিজে গেছে। কিছুতেই তারা আগুন ধরাতে পারলেন না। তাদের কাছে রেডিও ছিল কিন্তু সেটিও কাজ করছিল না। তারা বাড়ির দিকে ফিরে যাবার জন্য নৌকা বাইতে লাগলেন। এভাবে প্রায় ১ ঘনটা চেষ্টা করেও নৌকা একটুও এগোয়নি। ক্লান্ত হয়ে তারা বসে রইলেন সকাল হবার জন্য। একটু পরে আকাশ পরিষ্কার হতে লাগল। চাদের আলোয় তারা দেখলেন তারা একটা উঁচু পাড়ের ঠিক নিচে তারা একটা ছোট নদীর একপাশে আছেন। তারা কেউই জায়গাটা চিনতে পারলেন না। নদীর ওপারে ছিল অনেক বেত আর হোগলা গাছের সারি। নৌকা নিয়ে তারা নদীর ওপার গিয়ে ঢোকা মাত্রই তারা দেখতে পান অনেক মাছ পানির ভিতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সেখান পানি ছিল পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত। যাই হোক তারা অনেক মাছ ধরলেন। এভাবে ধরতে ধরতে তারা তিন জনই তিন দিকে চলে গেলেন। একপর্যায়ে তারা একে অপরের ডাকাও শুনতে পারছিলনা। আমার দাদা মাছ ধরতে ধরতে কখন যে গলা পানিতে নেমে গিয়েছিলেন বুঝতে পারেন নি। হঠাত্‍ তিনি দেখলেন তার সামনে অনেক গুলো ছেলেমেয়ে কোথা থেকে যেন বেরিয়ে এল। তিনি তাদের ডাকতে যাবেন এমন সময় দেখলেন তার চোখে দেখা ছেলেমেয়েগুলোর কারো হাত নেই কারো চোখ নেই কারো মাথার খুলি অরধেক নেই। তিনি ভয়ে জায়গা থেকে নড়তে পারলেন না। একটু পরে দেখেন সেখানে এক বুড়ি এল। সাদা কাপড় পরা। সে এসেই একসাথে সবগুলো ছেলেমেয়েকে দুধ খাওয়াতে লাগলেন। আমার দাদা আরো ভয় পেলেন। কোনমতে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে দাড়ালেন। এমন সময় দেখলেন সেই মহিলা তার মাথাটা ছিঁড়ে তার ডান হাতে নিয়ে দেখতে লাগলেন। চারপাশ মাথাটার ভিতরে দুটো চোখের মনি লাল হয়ে জলছিল। তার হাতটা লমবা হয়ে অনেক দুরে যাচছিল। এটা দেখে তিনি পাগলের মত চিত্‍কার দিয়ে দৌড়াতে লাগলেন। নৌকার কাছে এসে দেখেন নৌকাটি বালির ভিতরে ডুবে যাচিছল। তিনি বাকি দু জনকে ডাকলেন কিনতু কেউ আসলনা। নৌকাটাকে জোর করে নদীতে তুলে চালাতে লাগলেন। একটু পরে দেখেন তার সাথের বাকি ২ জন বালির ভিতরে ঢুকে আছে। তাদের তুলে তাড়াতাড়ি তিনি নৌক চালানোর চেষটা করেন। অবশেষে তারা সেই জায়গা পার হলেন। নদীর পার দিয়ে তারা বেয়ে যেতে লাগলেন। তাদের ধরা মাছগুলো নৌকার চালির ভিতরে লাফাচছিল। হঠাত্‍ একটি লোক তাদের ডাক দিলেন নদী পার হবার জন্য। তারা তাকে চিনতে পারনেন। তিনি ছিনেন আমার দাদার ফুফাতো ভাই। নদীর ওপারে ওঠে তিনি তাদের চোখের সামনে হাওয়ায় মিশে গেলেন। তারা এরপর অনেক কষটে বাড়ি ফিরলেন। বাড়ি আসার পর তারা দেখলেন তাদের ধরা মাছগুলো সব মানুষের হাড়। সেই নৌকাটি এই ঘটনার ২ দিন পরে নিজে থেকেই ভেংগে যায়। সেই তিনজন খুব আসুখে পড়েন। তাদের ভিতরে একজন মারা যান আর একজন পাগল হয়ে যান আমার দাদার সার গায়ে গুটি উঠেছিল চার মাস পরে তিনি সুসথ হন। দিয়েছেনঃ দিবাকার মেইল আইডিঃ dibakar37@ovi.com

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০৫

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, September 13, 2011 at 10:31pm ।। একটি অদ্ভুত ঘটনা ।। আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক আর্শ্চয ঘটনা।তখন গ্রামে থাকতাম,বয়স ও খুব বেশী একটা হয় নি।ক্লাস থ্রি তে পড়ছি।থাকতাম যৌথ পরিবারে।দাদু,ছোটআব্বুরা,এবং আমরা।আমরা তিন ভাই,এবং আমার দুই চাচাতো বোন একসাথে ঘরের সামনের বারান্দায় পড়তাম।আমার বড় ভাই পড়ত ক্লাস সিক্সে,মেজ ভাই ফাইভে।রাতের বেলা সবাই একসাথে সুর করে পড়তাম।ছোট ছিলাম বলে সবার মাঝে ভুতের ভয় কাজ করতো,তাই দরজা,জানালা ভালো করে বন্ধ করে আমরা পড়তে বসতাম।তো একদিন রাত্রিবেলা সবাই পড়তেছি।আব্বুরা সবাই রান্নাঘরে গল্প করতেছেন।দরজা খিল এবং হুড়কো দিয়ে আটকানো।আমরা শব্দ করে পড়তেছি,দরজাটা আমাদের পড়ার টেবিলের একদম পাশেই।আমরা পড়তেছি এমন সময় সবাই হঠাত্‍ খেয়াল করলাম দরজার খিল,হুড়কো এক এক করে খুলে যাচ্ছে,এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। কেউ যেন রিমোট এর মাধ্যমে দরজাটা খুলে দিচ্ছে।একসময় দরজাটা সম্পূর্ন খুলে গেল।এবং বাহিরেও দেখা গেল কেউ নেই।আমরা প্রচন্ড ভয় পেলাম।ভয়ে আমরা এক দৌড়ে সবাই রান্নাঘরে চলে গেলাম যেখানে আব্বুরা ছিলেন।আমরা উনাদেরকে সব কথা খুলে বললাম।উনারা আমাদের কথা বিশ্বাস করলেন না উল্টো আমাদের বকা দিলেন পড়া না পড়ে সবাই এখানে চলে আসার জন্য। আমরা কি করব কিছুই বুঝতেছি না।দোয়া দরুদ যা জানি সব পড়ে বুকে ফু দিলাম সবাই।এবং নিশ্চিত হলাম আমরা সবাই এই ঘটনাটা দেখেছি,এবং দরজা এখনো খোলা।আমরা ভয়ে কেউ পড়ার টেবিলে বসতে পারছিলাম না।শেষে সবাই সাহস করে গেলাম সেখানে।আমার মাথায় একটা আইডিয়া খেলে গেল।বড় ভাইয়াকে বললাম উচু স্হানে দাড়িয়ে আঝান দিতে,সে চেয়ার এর উপর দাড়িয়ে আজান দিতে শুরু করল।সবচেয়ে আর্শ্চয্যের বা ভৌতিক ঘটনাটা ঘটল ঠিক তখনিই,যেই না বড় ভাই "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলে আজান শেষ করলেন অমনি দরজা আগের মতো খিল,হুড়কো লেগে বন্ধ হয়ে গেল।নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলাম না।প্রথিবীতে এমন ঘটনাও ঘটে!আমার একজোড়া চোখ এ ঘটনাকে হ্যালুসিনেশন বলে চালিয়ে দিতো,কিন্তু পাঁচ জোড়া চোখ তো আর ভুল দেখে নাই।অন্য কেউ হলে চাপা বলে বিশ্বাস করতাম না,কিন্তু এতগুলো লোক আমরা!ঘটনাটা এখনো মনে পড়লে গা শিউরে উঠে।এর কোনো গ্রহনযোগ্য ব্যাখা আমি আজো দাড় করাতে পারি নি।ঐদিন আর কেউ পরতে বসতে পারি নাই অজানা আতংকে।

name:Quazi ajmal hossain chowdhury. fb id : ajmal hcy email : ajmalbd@ovi.com

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০৬

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, September 13, 2011 at 11:28pm
।। মৃত্যু শিকল (Death Chain) ।।


একটা দুঃস্বপ্ন। স্বপ্নটা চলছেই। থামার কোন নাম নেই। হঠাৎ উঠে বসল সুমন। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেন। এরকম স্বপ্ন মানুষ দেখে!! ডানদিকে ফিরে তাকাতেই চমকে ওঠে। আরে ওটাতো আয়না। আয়নায় নিজেকেই দেখেছে ও। সারারাত আর ঘুম আসবে বলে মনে হয়না। এমন একটা দুঃস্বপ্ন। কে যেন ওকে বেঁধে দিয়েছিল। পা দুটো খোলা ছিল। হাঁটছিল ও। আর কোথা থেকে যেন অজস্র কুড়াল উড়ে আসছিল ওর দিকে। কিভাবে যে বেঁচেছে কয়েকবার। একবার ভাবে স্বপ্নটা নিয়ে। তারপর চিন্তা করে দুঃস্বপ্ন নিয়ে ভেবে কি হবে? ঘুমানোর চেষ্টা করি। শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ মিলির কথা ভাবলে হয়তো ঘুম চলে আসবে। কিন্তু তাও হলনা। রাতটা কোনমতে পার করল সুমন। ২
মিলি সুমনকে দেখে চমকে উঠল।
: কি হয়েছে তোমার?
: কিছুনা।
: এমন চেহারা কেন?
: কিছুনা বললাম তো
: বলনা কি হয়েছে?
: চুপ কর তো। কথা বলতে ভাল লাগছেনা।
এটা ইদানীং সুমনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কথায় কথায় রেগে যায়। মিলি কিছু বলেনি। ভেবেছে সময় হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সুমনের এই অভ্যাসটা দিন দিন বাড়ছে। কি হয়েছে ওর? কিছুতো বলেও না। এ দিকে সুমনের মাথায় অন্য চিন্তা। ফটোগ্রাফী কোর্সের জন্য ওকে সোনারগাঁ যেতে হবে। আগামীকাল। কোনভাবেই মনোযোগ দিতে পারছেনা। যেভাবেই হোক আজ রাতে ওর ভালভাবে ঘুমাতে হবে। কোনভাবেই আজে বাজে কিছু চিন্তা করা যাবেনা। বাসায় ফিরে এল ও।
রাতে সময়মত ঘুমাতে গেল। কিছুক্ষণ পর ওর ঠান্ডা লাগতে শুরু করল। এসি টা বোধহয় বেশি বাড়ানো। রিমোট নিয়ে অফ করে দিল এসি। তারপরও ঠান্ডা লাগছে। ব্যাপার কি? বাইরে কি বাতাস বেশি? জানালা তো সামান্য খোলা। উঠে বসল ও। ডানে আয়নার দিকে তাকিয়ে ভয়াবহ চমকে গেল। ওটা কি? গাছের উপর সাদা আলখেল্লা পরা কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে।
না, শুধু দাঁড়িয়ে আছে তা না। হাততালি দেয়ার মত করছে। আয়নায় দেখছে। তারমানে জিনিসটা ওর পেছনে। ভয়ের শীতল শিহরণ নেমে গেল ওর মেরুদন্ড দিয়ে। পেছনে ফিরে তাকাবেনা চিন্তা করেও পেছনে তাকাল। কিছুই নেই। আবার আয়নার দিকে তাকাল। সেখানেও কিছু নেই। চোখের ভুল? মনের ভুল? সে রাতেও ঘুম হলনা ওর। ৩
ভোরেই ঘুম ভাঙ্গল। সোনারগাঁ যেতে হবে। খেয়ে দেয়ে রেডি হল। বের হয়ে পড়ল। সঙ্গে থাকবে ওদের টীম। সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছে গেল। টীম নেমে প্রথমে এলাকাটা ভালভাবে ঘুরল। মনে খটকা লেগে আছে সুমনের। জায়গাটা কোথায় যেন দেখেছে ও। মনে করতে পারছেনা। কিছুতেই পারছেনা। ওইতো দাবার বোর্ডের মত মার্বেল পাথরের মেঝে। ওপরে ঝাড়বাতি লাগানোর জায়গা। কিন্তু এটা ও আগে কোথায় দেখেছে। মনে করতে করতেই ক্যামেরার লেন্সে ছবি তোলার জন্য চোখ লাগায়। আর তখনই দেখতে পায় একটা কুড়াল ওর দিকে ছুটে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়ে ও। কিন্তু কোথায় কি? কিচ্ছু নেই। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল কোথায় দেখেছে এই জায়গাটা। স্বপ্নে। খুব ভয় পায় সুমন। ভয়ে ভয়ে আবার ক্যামেরার লেন্সে চোখ লাগায়। নাহ, এবার কিছু নেই। বিভিন্ন জায়গার ছবি তুলে টীমসহ ফিরে আসে ঢাকায়। ৪
দিনে দিনে কাজে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে সুমন। ও এ পর্যন্ত যা যা দেখেছে সেগুলো নিয়েই ভাবে। মনে মনে সেগুলো ওর করতে ইচ্ছা করে। পরের দিন রাতে গাড়িটা নিয়ে চলে যায় আবার সেই জায়গায়। চিন্তা করে আজ কিছু একটা হয়ে যাক। মরে গেলে মরেই যাব। চারদিক অন্ধকার। দূরে স্ট্রীট লাইটের আবছা আলো। মেইন গেট খুলে ভিতরে ঢুকে ও। কিছু দেখতে পায়না। হাটতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সেই ঘরটা খুজে পায়। কিন্তু চিন্তা করে স্বপ্নের মত কে ওকে বেধে দেবে যাতে শুধু পা দুটো খোলা থাকে। চিন্তাটা বাদ দিল। সাথেই ছিল ক্যামেরা। ছবি তুলল কয়েকটা। বাসায় ফিরে এল। ওয়াশ করল ছবিগুলো। ছবিগুলো দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠল সুমন। প্রত্যেকটা ছবিতে সাদা কাপড় পরা ভূতটা। লেন্সের সামনে বা আশেপাশে। কিন্তু একবারও দেখা দেয়নি। ভয় পেল ও। মেজাজ ও খারাপ হল। চিন্তা করল যেই গাছে ভূতটা দেখেছিল সেখানে যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে গাছটার নিচে গিয়ে দাড়াল। কিছুই নেই। কিছুক্ষণ পর ভূতটা ভেসে এল কোথা থেকে। ভয় পেল সুমন। থেমে গেল ভূতটা। তারপর উল্টো দিকে ভেসে চলতে লাগল। অবাক হল সুমন। কিন্তু ভূতটার পিছনে পিছনে যেতে লাগল সে। ভূতটাও যাচ্ছে। সুমনও হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর মনে হল আর যাওয়া উচিত হবেনা। ফিরতে হবে। কিন্তু সুমন দেখে পিছনে যেতে পারছেনা ও। সামনেই চলেছে ওর পা। সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে ভূতটার পিছনে পিছনে। কখন যে একটা গোরস্থানের ভেতর ঢুকে পড়েছে খেয়াল করেনি ও। হাঁটতে হাঁটতে একটা গর্তে পড়ে গেল ও। ভূতটাকে এখন আর দেখতে পাচ্ছেনা। উপুড় হয়ে পড়েছে ও। ঘুরে আকাশের দিকে তাকাতেই সজোরে একটা কুড়াল এসে আঘাত করল ওর মাথায়। মারা গেল সুমন। ৫
সুমনের বাসায় এসেছে মিলি। সুমন মারা গেছে আজ চারদিন। মিলাদে এসেছে ও। কেউ কিছু বোঝেনি যে কেন সুমন ওভাবে মারা গেল। কেঁদে কেঁদে চোখ লাল হয়ে গেছে মিলির। অনেক ভালোবাসতো ও সুমনকে। সুমনের ঘরে ঢুকল ও। সুমন ব্যবহার করে এরকম কিছু জিনিস নেবে। সুমনের স্মৃতি হিসেবে। সুমনের রুমের আয়নার সামনে বসল মিলি। চোখ লাল। নিজেকে আয়নায় দেখে অঝোরে কান্না এল ওর। মুখ নিচু করে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে আয়না দিয়ে জানালাটা দেখল। গাছটা চোখে পড়ল। মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকাল মিলি।
কিন্তু........... মিলির প্রতিবিম্বটা মিলির মত উল্টো দিকে জানালার দিকে ফিরে তাকায়নি। আয়নায় মিলির প্রতিবিম্বটা লাল চোখে আর ক্রূর হাসি ঠোঁটে নিয়ে মিলির দিকেই তাকিয়ে আছে।
মিলি এখনও জানেনা কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে ও................. সুমনের পর এবার হয়ত ওর পালা.......... দিয়েছেনঃ কাজী ইরফান বিন ইউসুফ

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০৭

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, September 14, 2011 at 10:19pm ।। একটা ভুতের গল্প ।। প্রতিদিন বিকেল হলেই বাড়ী ফিরে আসে জাহিদ । বাসা বেশ খানিকটা দুর তো বটেই.. তাছাড়া তার নতুন বিয়ে করা বউ বাসায় একা থাকতে ভয় পায় । বিকেলের দিকে গ্রামের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ শেষ করে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । নতুন চাকরি একটু কষ্ট তো করতেই হবে । এইভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সে । তার বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা অনেক ঘুর পথে । কয়দিন আগে একটা সর্টকাট আবিষ্কার করেছে সে । রাস্তাটা একটু নির্জন অবশ্য কিন্তু দিনের বেলায় যায় বলে ভয় লাগেনা জাহিদের ।
সেদিন কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । প্রচন্ড শীতের সময় , ছয়টা বাজতে না বাজতেই রাতের মত হয়ে গেল। বের হওয়ার সময় একবার মনে হল ঘুরপথেই যাবে নাকি!! কিন্তু পরমুহূর্তেই হেসে উড়িয়ে দিল ও । ধুর, এই শী্তের মধ্যে এত দূর ঘুরে যাব!! তাই বড় টর্চটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি সাইকেল বের করে রওনা হয়ে গেল জাহিদ ।
রাস্তাটা পাকা নয় । পাকা হবার কথাও না । এমনিতেই মানুষজন খুব কম চলাচল করে এখান দিয়ে । প্রচন্ড শীতের মধ্যে এখন তো কারো আসার প্রশ্নই আসে না ।
হঠাৎ করেই ফুশ করে শব্দ , আর সেই সাথে সাইকেল নড়বড় ।
সাইকেল খুব জোরে চলছিল । তাই সরাসরি মাটিতে ।
শব্দ শোনার পর আর বলে দিতে হল না কি হয়েছে । জাহিদ তিক্ত মনে ভাবল বাঙালী বাঘা জিনিস । কী কী প্রবাদ যে বানাইছে । যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই কিনা সন্ধ্যা হয় ! টায়ারটাও এখনই পাংচার হইতে হইল ! হাত থেকে পড়ে টর্চটা নিভে গিয়েছিল । শংকিত মনে জাহিদ মাটি হাতড়ান শুরু করল । টর্চের মত কিছু একটা হাতে ঠেকল । তুলে নিয়ে সুইচ চাপতেই মনটা আবারো তিক্ততায় ভরে গেল । "চমৎকার !! আর কী চাই !!" এইটাও শেষ । সোজা হয়ে দাড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করল জাহিদ । কি করা যায় ! অনেকক্ষন ভেবে এটুকুই বুঝল যে এখানে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করতে থাকলে মাথা চিরদিনের মত ঠান্ডা হয়ে যাবে !
প্রথমে সাইকেলটাকে ঝোপের আড়ালে নিয়ে রাখলো কোনরকমে। নিজে কোনরকমে বাসায় পৈছতে পারলেও সাইকেলটা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না । সকালে নিয়ে গেলেই হবে ।
তারপর আবার রাস্তায় দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আশায় বুকটা নেচে উঠল । দূরে গাড়ির দুটো হেডলাইট এদিকেই আসছে । এই জায়গায় গাড়ি কিভাবে এল এ চিন্তা মাথায় এলেও জাহিদ তা মাথায় স্থান দিল না । জাহিদ অপেক্ষা করতে থাকল । কিন্তু গাড়িটা খুব বেশী স্লো । জাহিদ নিজেও একটু এগিয়ে গেল । গাড়িটা ওর সামনে এসেই থামল । জাহিদ খুশি মনে গাড়ির পেছনের সীটে গিয়ে উঠল । আস্তে করে গাড়ীর দরজা লাগাতেই গাড়িটা আবার চলতে শুরু করল ।
গাড়ির ভেতরটা বেশ গরম । জাহিদের মনে হল ও যেন ঠান্ডা দোযখ থেকে গরম বেহেশতে এসে পড়ল । গাড়ীর চালককে কিভাবে ধন্যবাদ দেবে বুঝতে পারছিল না জাহিদ । পেছন থেকে ও বলল-
" থ্যাংকিউ ভাই । জীবনটা বাঁচালেন ।"
চালক জবাব দিল না ।
একটু অস্বস্তিতে পড়ল জাহিদ । আবার বলল-
"রাস্তায় হঠাৎ সাইকেলের চাকা পাংচার হয়ে গেল আরকি হে হে।"
এবারো কোন জবাব নেই ।
জাহিদ বুঝতে পারছিল না এই লোক কথা বলে না কেন?
আবারো ও বলল
"এদিকে কার বাসায় যাবেন?"
এবারো কোন জবাব নেই।
এবার একটু মেজাজ খারাপ হল জাহিদের । ব্যাপার কি? যাই হোক ও চুপ করে গেল ।
কিছুক্ষণ পর ওর টনক নড়ল । কি ব্যাপার !! গাড়ী এত আস্তে আস্তে চলছে কেন ? সামনে ঝুকে জাহিদ ঐ লোককে ডেকে বলতে চাইল "ভাই গাড়ি এত আ-
মেরুদন্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতল স্রোত তার কথা মাঝপথেই থামিয়ে দিল । চালকের আসনে কেউ বসে নেই । সবার আগে যে সম্ভাবনাটা মাথায় এল তা আর ভাবতে চাইল না জাহিদ। গাড়ি থেকে নেমে যেতে চাইল ও । কিন্তু আতংকে ও নড়তে পারছিল না । সামনে রেল ক্রসিং । গাড়িটা খুব আস্তে আস্তে ঐ রেললাইনের উপর গিয়ে দাড়াল । হঠাৎ ট্রেনের হুইসেলের শব্দে জাহিদের মাথা পরিষ্কার হয়ে গেল । তাহলে ভুতটার তাহলে এই মতলব ! এখন ট্রেন এলে জাহিদ একদম চ্যাপ্টা হয়ে যাবে । তাড়াতাড়ি ও দরজার হাতল ধরে টান দিল । আবারো ভয়ে ও পাগল হয়ে গেল । বারবার হাতল ধরে টান দিলেও ওটা খুলছিল না । গাড়িটা আবারো নড়তে শুরু করছিল । ওদিকে ট্রেন কাছে চলে আসছিল । ভয়ে আর পরিশ্রমে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ও জীবনের আশা প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিল তখনই ও খেয়াল করল দরজাটা তো লক করাও থাকতে পারে । তাড়াতাড়ি লকে হাত দিয়ে লকটা খুলে ও বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ল । মাটিতে গড়িয়ে ও কিছুটা দুরে সরে এলো । তখনই আবারো গাড়িটা চলতে শুরু করল । গাড়িটা রেললাইন পার হয়ে গেলেই ট্রেন চলে গেল । জাহিদ মাটিতে শুয়ে চোখে আতংক নিয়ে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিল । গাড়িটা আবারো ওর সামনে এসে দাঁড়াল । গাড়ির পেছন থেকে হঠাৎ এক যুবক বের হয়ে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছিল । তার সারা গায়ে এই শীতের রাতেও ঘাম । জাহিদের একটু খটকা লাগল । ভুতেরাও ঘামে ?!! যুবক জাহিদকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বলল ''কী ব্যাপার, মাটিতে শুয়ে আছেন কেন ? আমার গাড়িটা যে রেললাইনের উপর হ্যাং হয়ে ছিল দেখেন নি ? ''
জাহিদ কোনরকমে ঘাড় নাড়ল ।
''আচ্ছা মানুষতো আপনি ! আরেকটু হলেই মারা যাচ্ছিলাম আর আপনি হেল্প করতে আসলেন না ? পাক্কা দুই কিলোমিটার ধরে গাড়িটাকে ঠেলছি !! আসুন আসুন , আমার সাথে ঠেলুন । জাহিদ বিনা বাক্য ব্যয়ে উঠে যুবকের সাথে গাড়ি ঠেলতে শুরু করল । দিয়েছেনঃ Shabreen Saka দ্রষ্টব্যঃ গল্পটি ভুতের না আমিও জানি।। কিন্তু মজার এবং একি সাথে গাঁ ছমছমে তাই দেয়া হল।।

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০৮

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, September 14, 2011 at 11:02pm
।। একটি আত্মা এবং অন্যান্য ।। ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজছে শ্রীকান্তের গান- মনের জানালা ধরে উঁকি দিয়ে গেছে যার চোখে/ তাকে আর মনে পড়ে না। শ্রীকান্তের গানের মধ্যে কী যেন একটা যাদু আছে! এই গানগুলো অন্য শিল্পীরাও গেয়েছে কিন্তু তাদের কণ্ঠ এতোটা মাদকতা সৃষ্টি করতে পারেনি ভাবে দুলাল। দুলাল মাইক্রোবাসের ভিতরে বসে বসে গান শুনছে। আজ একটা ভাড়াও পায়নি। ওর সহকারী দশ বছরবয়সী লিটু জ্বরে আক্রান্ত বলে আজ আসতে পারেনি। লিটুর সঙ্গ সুপ্রসন্ন। লিটু আছে থেকেই প্রতিদিন তিন-চারটা ভাড়া জুটে যায়। আজ লিটু আসেনি বলেই কি ভাড়ার খরা? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মাঝবয়সী একটা লোক কাঁচের জানালায় মোবাইলের আলো ফেলে দুলালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জানালার কাঁচ নিচে নামিয়ে হাসি মুখে দুলাল সম্ভাষণ জানায় ভাবী কাস্টমারকে। আসসালামুআলাইকুম চাচা। গাড়ি লাগবে নাকি? লোকটি সালাম নিয়ে বলে, কালীগঞ্জ যাবেন?
- কালীগঞ্জেই না গ্রামের ভিতরে?
- একটু ভিতরে। গেলে বলেন।
কালীগঞ্জ, সে তো এখান থেকে অর্থাৎ রংপুর মেডিকেল থেকে অনেক দূর। যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগবে। এখন বাজে রাত নয়টা। ফিরতে ফিরতে রাত তিনটা বেজে যাবে। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজি হয় দুলাল।
- ভাড়া সাড়ে তিন হাজার দেওয়া লাগবে। দুলাল ভাড়া বলার মাধ্যমেই তার সম্মতি জ্ঞাপন করে।
- আনার সময় তো আড়াই হাজার দিয়া নিয়া আসছি। আজ দুপুরেই আনছি। এতো ভাড়া চাইলে কেমন করি হয়!
কাস্টমারকে ফিরানোর কোনো ইচ্ছা নেই দুলালের। শেষ পর্যন্ত ঐ আড়াই হাজারেই থিতু হয় দুলালের চাহিদা। হাসপাতালের গেটের কাছে গাড়ি নিয়ে আসলে উপর থেকে স্ট্রেচার আসে। সঙ্গে আসা মহিলার বুকফাটা আর্তনাদ আর কান্নায় দুলাল বুঝে নেয় স্ট্রেচারে রোগী নয়, লাশ আর কান্নারত মহিলাটি- লাশটি এতোদিন পৃথিবীতে যে অস্তিত্ব নিয়ে ছিলো তার মা। লাশটা গাড়িতে তোলার সময় দুলালও সাহায্য করে। ধরাধরি করার সময় ঢেকে রাখা মুখটা উন্মোচিত হলে দুলাল দেখতে পায় লাশের মুখের চারপাশে ফেনা। কী রকম একটা চেনা চেনা গন্ধ! কিশোরী মেয়েটি যে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে তা আর বুঝতে বাকি থাকে না দুলালের। মেয়েটির চোখ দুটো আধা খোলা। যেন চেয়ে চেয়ে দেখছে ওকে। লাশের সহগামী চারজন।
লালমনিরহাট পেরিয়ে, আদিতমারী পেরিয়ে কালীগঞ্জে মাইক্রোবাস এলে লাশ হওয়া কিশোরীর বোন জামাই পথ বাতলায়। ভিতরে আরো অনেক দূর আসতে হয়। নিতান্ত পল্লী এলাকা। কাঁচা রাস্তা। চারপাশে আবাদী জমি। বসত বাড়ির সংখ্যা কম। বিদ্যুৎ নেই। রাস্তাঘাটও সংকীর্ণ। তাই আস্তে আস্তে গাড়ি চালাতে হয়। বারবার দুলাল জিজ্ঞাসা করে, ভাই আর কতোদূর? পথ প্রদর্শনকারী ‘এই তো আরেকটু সামনে’ বলতে বলতে দুলালের মেজাজটা বিগড়িয়ে দেয় কিন্তু তা প্রকাশের কোনো সুযোগ পায় না সে। এমনিতেই মানুষগুলো শোকে আছে। কিশোরীর মায়ের কান্নার শব্দে কানে তালা লেগে গেছে ওর। মেয়ের ভাই দু’জন একবার ‘আম্মা কাঁদেন না তো’ বললে মা চিৎকার করে ওঠে- চুপ পাষাণের দল।
ইতিমধ্যে বাড়ির লোকজন মোবাইলে খবর পেয়েছে। বিদ্যুৎ না আসলেও এসব এলাকায় মোবাইল ঠাঁই করে নিয়েছে স¦স্থান। হ্যাজাক লাইট জ্বলছে দুইটা। অনেক লোকের সমাগম। গাড়ি আসলে কান্নার শব্দ আরো তীব্র হতে থাকে। পাড়া প্রতিবেশিরা এসে কিশোরির প্রস্থানে তাদের হৃদয়ে কতোটুকু ব্যথা তা প্রদর্শনার্থে গলা জুড়ে দেয় পরিবারের অন্যান্যের সাথে। দু’একজন সান্ত¦না বাক্য শোনায়। কাঁদেন না। আল্লাহর নাম নেও। কলমা পড়ো।
ভাড়া পাওয়ার জন্য বাইরে দেয়া একটা চেয়ারে বসে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় দুলালকে। গ্রামের মানুষদের টাকা-পয়সা সবসময় রেডি থাকে না তা জানে সে। তাই অপেক্ষা করতে কোনো সমস্যা নেই ওর। তাছাড়া এতোগুলো মানুষের কান্নায় ভারী হওয়া পরিবেশ ওর মনেও ব্যথার সৃষ্টি করে। কতোই বা বয়স হয়েছিলো মেয়েটির? পনের-ষোলোর বেশি নয়। মেয়েটি কেনো আত্মহত্যা করলো তার কারণ প্রেমঘটিত কিছু, একপ্রকার ধারণা পোষণ করলেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাশ দিয়ে যাওয়া একটা ছেলেকে ডেকে সে জিজ্ঞাসা করে। ছেলেটি জবাব না দিয়ে নীরবে চেয়ে থেকে ভিতরে চলে যায়।
গাড়ি নিয়ে যখন সে রংপুর অভিমুখে রওনা হয় তখন রাত একটা। কাঁচা রাস্তাই পেরুতে হবে প্রায় দশ মাইল। কিছুদূর আসার পর একটা কান্নার শব্দ দুলালের কানে আসে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কান্নার শব্দ। ছোট্ট মেয়েরা কোনো আবদার করে না পেলে যেমন নাকি সুরে কান্না জুড়ে দেয় তেমন। শব্দটা আসছে মাইক্রোবাসের পিছন থেকে। শরীরটা হিম হয়ে দুলালের। কান্নার সুর নাকি থেকে তীব্র হলে দুলাল গাড়িটা থামায়। গাড়ি ঐ বাড়িতে রাখার সময় ভিতরে কোনো বাচ্চা ঢুকে বসে আছে না তো? দুলাল ভিতরের লাইটটা জ্বালিয়ে দিয়ে পিছনের সিটগুলো উঁকি দিয়ে দেখে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কান্নার শব্দটা আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসে। বড় দোয়া পড়ে আল্লাহর নাম নিয়ে সে সাহস সঞ্চারের চেষ্টা করে। তারপর গাড়ি থেকে নেমে ব্যাকডালা খুলে চেক করতে ধরলে কানের পাশ দিয়ে শো শো করে কী যেন একটা চলে যায়! পাশ দিয়ে প্রচ- গতিতে কোনো গাড়ি গেলে যেমন মনে হয় তেমন। হঠাৎ গাড়ির লাইট বন্ধ হয়ে যায়। দুলাল যেন আর পৃথিবীতে নেই। সেই সাথে পিঠের মধ্যে একটা আঁচড় অনুভব করে সে। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে একটা ডাল পড়ে আছে পায়ের কাছে। তারপর সে উপরের দিকে তাকায়। একটা বিরাট বড় বটের গাছ। এতোক্ষণ লক্ষ্যই করেনি সে। তখন বটগাছের মধ্যে ঝড় শুরু হয়ে যায়। তীব্র বাতাস। সেই সাথে কতোগুলো সম্মিলিত কণ্ঠের কান্না ভেসে আসে গাছটা থেকে। তখনই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় দুলাল।
যখন জ্ঞান ফেরে তখন রাত দু’টা। বাতাস থেমে গেছে। মাইক্রোবাসের লাইটগুলো জ্বলছে। সে এবার উঠে দাঁড়ায়। আবার বুকে সাহস সঞ্চারের চেষ্টা করে। মরতেই যদি হয় তবে সাহস দেখিয়ে মরবে। ব্যাকডালা লাগাতে গিয়ে একটা সাদা কাগজ চোখে পড়ে ওর। কাগজের ভিতরে কিছু একটা মোড়ানো আছে। দুলাল খুলে দেখে পাসপোর্ট সাইজের একটা ছবি। সে ছবিটা ওর নিজের। এ ছবি এখানে এলো কী করে? এ ছবি তো সে তোলেনি কখনো! ছবিটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সে এবার জোরে গাড়ি টান দেয়। সারা রাস্তায় কান্নার আর কোনো শব্দ না পেয়ে আশ্বস্ত হয় সে। আকাশে যখন শুকতারা তখন সে রংপুরে পৌঁছে। কান্ত অবসন্ন শরীর আর বাধ মানতে চায় না। দু’চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে। গাড়িটা গ্যারেজে রেখে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখতে থাকে। এ এক আজব স্বপ্ন। কোনো দৃশ্য নেই শুধু শব্দ। সেই কান্নার শব্দ। এটা স্বপ্ন না বাস্তব- ভ্রম হয় দুলালের।
দুলালের যখন ঘুম ভাঙ্গে ঘড়ির কাঁটা তখন দশটার ঘরে। ঘুমানোর পর শরীরের অবসাদ কেটে গেলেও জ্বর এসেছে প্রচ-। খাওয়া-দাওয়া সেরে সে সোজা চলে যায় কেরামতিয়া মসজিদে। দানবাক্সে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে সে পীরের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে গতকালের সেই ভয়াবহ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চায়।
জ্বর শরীরে নিয়েই সে গাড়ি নিয়ে আসে মেডিকেলে। লিটুও এসেছে আজ। কাছাকাছি একটা ভাড়া খেটে এসে সন্ধ্যা নাগাদ আবার একটা ভাড়া পায়। নীলফামারির ভাড়া। দূরে হলেও লিটু থাকায় কোনো ভয় নেই আজ। কিন্তু রোগী পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসার সময় ঐ কান্না আবার তার কানে বাজতে থাকে। এরপর হাসির শব্দ শুনতে পায়। হাসির কোমলতা লাঘব হয়ে তা ধীরে ধীরে হিং¯্র আকার ধারণ করে। সে লিটুর কাছে জানতে চায় সে কোনো শব্দ পাচ্ছে কিনা। লিটু না-সূচক জবাব দিলে কথা বাড়িয়ে লিটুকে ভয় দেখাতে আগ্রহ পায় না সে। হাসির শব্দ কানে বাজতে থাকে। এ শব্দ বর্তমানে চলছে নাকি শ্রুতিভ্রম তা ঠাহর করতে পারে না দুলাল।
রাতে মেসে এসে ঘুমালে আবার সেই হাসির শব্দ সে শুনতে পায় ঘুমের মধ্যে, স্বপ্নে। এবার শুধু শব্দ নয়, দৃশ্যও দৃষ্টিগোচর হয়। সেই মেয়েটার মুখ। লাশটা গাড়িতে তোলার সময় কাপড় সরে গেলে যে মুখটা সে দেখতে পেয়েছিলো। মেয়েটা একবার হাসে, একবার কাঁদে। আসতে আসতে তার দিকে এগিয়ে আসে। খুব কষ্ট করে ঘুমটা ভাঙ্গাতে সমর্থ হয় দুলাল। সারারাত আর ঘুমাতে পারে না। পাছে আবার সেই মেয়েটি, মেয়েটির আত্মা তাকে আক্রমণ করে বসে। অপমৃত্যু হলে সে আত্মা আত্মার জগতে ঠাঁই পায় না। ঘুরে বেড়ায়, মানুষের অনিষ্ট করে- এই গল্প সে ছোটবেলায় শুনেছে। মেয়েটির আত্মা কেন তাকে আক্রমণ করেছে তা সে বুঝে উঠতে পারে না। মন না চাইলেও চোখ দু’টি দুলালের জাগরণ মেনে নিতে পারে না। ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে সে।
গভীর ঘুমের মধ্যে আবার মেয়েটির আত্মা সশরীরে ফিরে আসে। চড়ে বসে দুলালের বুকের উপর। দুলাল কিছুতেই ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না। মেয়েটি ছড়ানো এলোমেলো চুলের ভিতর থেকে তার মুখটা বের করে আনলে দুলালের পিলে চমকে যায়। মেয়েটির সামনের দাঁত দু’টো বের হয়ে আছে। চোখ কোটর থেকে ঠিকরে বের হয়ে আসতে চাইছে। দুলাল তখন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, কে তুমি? মেয়েটি উত্তর দেয়, ‘শয়তান আমাকে চিনতে পারিসনি তুই? আমাকে না চেনার ভান করছিস’ বলেই দুলালের গালে-মুখে কিল-ঘুষি দিতে থাকে। কিন্তু কিল-ঘুষির শক্তি অতো তীব্র নয়। দুলাল এবার প্রশ্ন করে, এটা স্বপ্ন না বাস্তব?
- এটাই স্বপ্ন, এটাই বাস্তব। মেয়েটি উত্তর দেয়।
- আমার কাছে কেন এসেছো তুমি?
- তোকে আমি মারতে এসেছিরে শয়তান। বলেই হাসতে থাকে মেয়েটি। সে হাসি বড় ভয়ংকর।
- আমি কী ক্ষতি করেছি তোমার?
- আমার মনের মানুষকে তুই হত্যা করেছিস?
- আমি? না না। আমি কাউকে কোনোদিন হত্যা করি নি। দুলাল কথার খেই হারিয়ে ফেলে। ভেবে পায় না কখন সে কাকে হত্যা করেছে।
- তুই করিস নি তোর জাত ভাইয়েরা করেছে। সে যখন বাসে রংপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছিলো তখন বাসের ড্রাইভার কথা বলছিলো মোবাইলে। একসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস পড়ে যায় পাশের খাঁদে। সেসহ আরো অনেক মানুষ মারা গেছে সেদিন। কী দোষ করেছিলো তারা? বল শয়তান বল। আবার কিল-ঘুষি মারতে থাকে মেয়েটি।
- এক ড্রাইভারের কারণে তোমার মনের মানুষ মারা গেছে তার প্রতিশোধ নিচ্ছ আরেকজনের উপর? এ কেমন বিচার তোমার? দুলাল শান্ত করতে চায় মেয়েটিকে।
- হ্যাঁ হ্যাঁ তোদের সবাইকে মারবো আমি। তাই তো আমি এপথ বেছে নিয়েছি। তোদের কাউকে বাঁচতে দেবো না।
- তাহলে আমাকে মারছো না কেন?
- কারণ তোর উপর আমার দয়া হচ্ছে।
- দয়া? কীসের দয়া? অবাক হয় দুলাল।
- কেননা তুই হচ্ছিস ওর মতো দেখতে। তাই আমি পারছি না। বলেই মেয়েটি এতোক্ষণ হাতের মুঠিতে ধরে রাখা দুলালের গেঞ্জির কলার ছেড়ে দেয়। যেন হাল ছেড়ে দিলো।
দুলাল এবার মনে করে সেই দিনের সেই ছবিটার কথা। যে ছবিটা ছিলো ঠিক তার মতোই। এরপর আরো অনেক কথা হয় দু’জনের। অনেক তথ্য পায় দুলাল। একসময় মেয়েটি একটা ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। বলে, তোকে আমি না পারছি মারতে, না পারছি ছাড়তে। দুলালের ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন। দেখে সে বিছানার নিচে পড়ে আছে। পুরো শরীর ঘেমে-নেয়ে গেছে।
সকালবেলাই রহস্য উদঘাটনের জন্য দুলাল রওনা হয় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ছেলেটির গ্রামে। ছেলেটির নাম একবারো উচ্চারণ করে নি মেয়েটি। শুধু গ্রামের নামটা বলেছে। আর বলেছে যে ছেলেটি কারমাইকেল পড়তো। মেয়েটি পড়তো কাস টেনে। দুলাল বুঝতে পারে খুব আবেগী ছিলো মেয়েটি। তা নাহলে এভাবে আত্মহত্যা করে কেউ প্রতিশোধ নিতে চায়?
বাসে করে যায় দুলাল। ভোটমারিতে নেমে একটা রিকশা নিয়ে রওনা হয় চামটাহাটের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে কিছুদিন আগে যে ছেলেটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে তার বাড়ি কোথায়? কাঁচা রাস্তা ধরে রিকশা চলছিলো। একজন মাঝবয়সী মানুষ সাইকেলে করে আসছিলো। দুলাল ভাবে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করবে। রিকশা কাছে আসতেই লোকটা দুলালকে দেখে সাইকেল থেকে নেমে দু’চোখ বিস্ফোরিত করে বলে, জামিল? দুলালের ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগে। সে বুঝতে পারে স্বপ্নটা সত্যি হলে এমনই হওয়ার কথা। সে রিকশা থেকে নেমে লোকটাকে বুঝানোর চেষ্টা করে। বলে যে, সে আসলে জামিল নয়। আরো সামনের দিকে যাওয়া নিরাপদ নয় জেনে সে লোকটাকে নিয়ে বিপরীত দিকে আসে।
আলাপ শেষে দুলাল যা জানতে পারে তার সমীকরণ আরো জটিল। জামিলের বাবার সাত ছেলে। বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। জামিলের বাবা তিন ছেলেকে দত্তক দিয়েছিলো। জামিল ছিলো জমজ। জমজের আরেকজনকে তার বাবা দত্তক দিয়েছিলো। ব্যাপারটা বুঝতে দুলালের আরো কিছু সময় লাগে। দত্তক দিলে সাধারণত এমন পরিবারে দেয়া হয় যারা ভালোভাবে ভরণ-পোষণ দিতে পারে। তারা দত্তক সন্তানকে খুব আদরে রাখে। কিন্তু তার কপালে এমন হবে কেন? দুলালকেই পরিবারের জন্য আয় করতে হচ্ছে। অবশ্য পড়ালেখা করতে না পারার জন্য দুলালই দায়ী। এদিকে জামিল মারা-যাওয়ার পর তার পরিবারের সবাই হতাশ ও শোকগ্রস্থ। কেননা জামিলের উপরই পরিবারটি ভরসা করে ছিলো। জামিলের মেধা ভালো ছিলো। পড়ালেখা ছিলো শেষের দিকে।
দুলাল দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায়। মেয়েটির আত্মাটিকে আর কতোদিন আশ্রয় দিতে হবে? কোনদিকে সে যাবে? আজ যা জানতে পারলো তাতে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। সে ভাবে একবার কী তার প্রকৃত বাবা-মাকে দেখে আসবে। নাকি গিয়ে বলবে, আমিই জামিল। আমি মারা যাই নি। তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা? পরক্ষণেই সে ভাবে কেন সে যাবে। তাকে তো ভরণ-পোষণ দেয় নি তার প্রকৃত বাবা-মা। যারা আদর-স্নেহ দিয়ে এতোদিন তাকে মানুষ করলো তাদের কী হবে? তাই সে ফিরতে চায় তার এতোদিনের স্থানেই। কিন্তু তার পা দুটো ভারি হয়ে আসে। দিয়েছেনঃ শাহেদুজ্জামান লিংকন

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ০৯

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 15, 2011 at 10:16pm ।। বামন ভূত ।। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙল রুদ্রের।
প্রথমে কিছুক্ষণ কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারল না।
তারপর চোখ গেল হাতঘড়ির দিকে। সকাল
ছয়টা বেজে পনেরো মিনিট। ব্যাপার কি, এত
সকালে তো তার ঘুম ভাঙে না! এতক্ষণে ঘরের
কোনার গাছটি লক্ষ করল সে। গাছ! তার শোবার
ঘরের ভেতর গাছ আসল কোত্থেকে?
সাথে সাথে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রুদ্র।
ঘরের মধ্যে একটি খুদে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
মেরেকেটে দেড় ফুট লম্বা হবে কি না সন্দেহ।
পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল
প্যান্ট।
- আহ্! ঘুম ভাঙল তাহলে।
রুদ্র কী বলবে ভেবে পেল না।
তাকিয়ে আছে হাঁ করে।
- অবাক হচ্ছ? অবশ্য অবাক হবারই কথা।
আমি একজন পাতালবাসী বামন ভুত। তুমি এর
আগে কখনও ভুত দেখনি মনে হচ্ছে? কী উদ্ভট
ব্যাপার!
রুদ্র এখনও বিছানায় বসে আছে। কথার উত্তর
দেবে কি, ভয়ে তার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত
শুকিয়ে গেছে।
- আরে ভেবো না, আগেও আমি এ ধরনের
ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমার নাম
আভান্তিকা রাপ্টাপুলাস। এসো পরিচিত হই।
বামন ভুতটি এখন তার বিছানার
দিকে এগিয়ে আসছে!
রুদ্র খিঁচে বাথরুমের দিকে দৌড় দিল। হৃদপিণ্ড
ধুকপুক করছে, তবু এর মধ্যেই তাকিয়ে দেখল পেছন
দিকে। না, ভুতটা তাকে তাড়া করছে না।
বাথরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল ভেতর
থেকে।
রাপ্টাপুলাস একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। খুবই
অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই
অবশ্য মনোযোগ দেয়ার মতো একটা জিনিস
খুঁজে পেল সে। ঘরের চতুর্দিকের দেয়ালে দুর্দান্ত
সব তৈলচিত্র ঝোলানো।
খুটিয়ে খুটিয়ে ছবিগুলো দেখতে শুরু করল সে, যেন
কতই না জরুরি কাজ এটা!
***
শেষ বিকেলে রুদ্র আবার পা টিপে টিপে শোবার
ঘরে ঢুকল।
“যাক, ফিরে এলে তাহলে!” ভুতটার কণ্ঠ
খুশি খুশি শোনাল, “আমি ভেবেছিলাম আর তোমার
দেখা পাব না।”
“এসব আমার কল্পনা। তুই মোটেও সত্যি না।”
রুদ্র ভয়ে ভয়ে বলল।
রাপ্টাপুলাসকে বেশ হতাশ দেখাল।
“শুনে খুশি হতে পারলাম না। তোমার
ব্যাপারে আমাকে এমন কিছু কি বলতে শুনেছ?”
“ভাগ!” রুদ্র এবার চিৎকার করল।
রাপ্টাপুলাস তার লম্বা নাকখানি চুলকাল। “এই যে,
বর্দ্দা। আমরা এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না?”
জবাবে রুদ্র তার পায়ের জুতো খুলে ছুড়ে মারল
রাপ্টাপুলাসের দিকে।
বামন ভুতটি কুঁই কুঁই করে উঠল কুকুরছানার মতো।
তবে রুদ্র বুঝতে পারল আসলে এটা তার আতঙ্কিত
চিৎকার। কারণ ভুতটি ঝাঁপ দিয়ে গাছের
আড়ালে চলে গেছে।
***
রাতটা বাথটাবেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল রুদ্র।
বাথরুমের দরজা লক করা আছে ভেতর থেকে। বামন
ভুতটা ভেতরে আসতে পারবে না।
ভন্ ভন্ ভনন্। একটা নীল রঙের বড়
ডুমো মাছি অনেকক্ষণ ধরে ঘুরছে। একটু পরপরই
বসতে চাইছে রুদ্রের নাকের ওপর। এক
থাবড়া দিয়ে মাছিটাকে মেরে ফেলল সে। ধুত্তরি!
ঘুমটাই চটকে গেল।
বাথটাব থেকে উঠতে যাবে, চারদিকের দৃশ্য
দেখে চমকে গেল রুদ্র। বাথরুমটা ঘন
ঝোপঝাড়ে ভর্তি হয়ে গেছে। অটুট
নিস্তব্ধতা চারদিকে। রুদ্র তার পায়ের
দিকে তাকাল। সাদা বাথটাবটা ধীরে ধীরে গাঢ়
রং ধারণ করছে!
দেখতে দেখতে ওটা ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল। রুদ্র
নড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কী এক অদ্ভুত জড়তায়
যেন পেয়ে বসেছে তাকে। কয়েক মিনিটের ব্যর্থ
লড়াই শেষে রুদ্র আর
বলতে পারবে না কী হলো তার...
***
“তো,” ডাক্তার মশাই তার
লম্বা নাকখানি চুলকালেন। “তোমার সর্বশেষ
মতিভ্রম সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল?”
রাপ্টাপুলাস মাথা নেড়ে সায় দিল। সে বিছানায়
মাথা এলিয়ে পড়ে আছে। পরনে কটকটে হলুদ রঙের
জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।
সাইকিয়াট্রিস্ট চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন।
“কিন্তু তুমি ঔষধ খাওয়ার পরেই আবার সব গায়েব
হয়ে গেল?”
- হ্যাঁ, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন নিজ হাতে খুন
করলাম।
- ও, এজন্যই তুমি ঔষধ খাওয়া বন্ধ রেখেছ?
“হ্যাঁ,” রাপ্টাপুলাসের কণ্ঠে স্পষ্ট অস্বস্তি।
“আমার কেন যেন মনে হয় এটা ঠিক না। সবকিছু
এত বাস্তব মনে হয়! ঔষধ খেলেই আবার সব
কোথায় গায়েব হয়ে যায়! কোথায় যায় তারা?”
ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “দেখো আভান্তিকা,
মতিভ্রমে আসক্ত হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই।
কিন্তু এই কল্পনার রাজ্যে ভেসে ভেসে আনন্দ
খোঁজা কতটুকু যুক্তিযুক্ত
তা ভেবে দেখবে আশা করি।”
ভুতের ডাক্তার হাসলেন, “আমি বলতে চাইছি,
আমরা সকলেই জানি যে মানুষ
বলতে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই।
এটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক।”
দিয়েছেনঃ Midnite Prince
মেইল আইডিঃ midnite.prince1@gmail.com

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ১০

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 15, 2011 at 11:13pm ।। নিঁখোজ‍ ।। রাত ১০:৩৭৷ হামিদুর রহমান সাহেব মোহাম্মদপুর এলাকার খিলজী রোডে এক নির্জন মাঠের পাশে দাড়িয়ে আছেন৷ পুরান ঢাকার লালবাগে ছোট একটা চাকরি করেন হামিদুর রহমান৷ যে বেতন পান, তা দিয়ে ৩ ছেলে মেয়ের সংসার চালানো অনেক কঠিন৷ বাধ্য হয়েই কোম্পানী তে তাকে ওভারটাইম কাজ করতে হয়৷ জিনিসপত্রের দাম তো কখনো কমেনা৷ প্রতিদিনের মত আজ ও কাজ শেষ করে তিনি এই মাঠের পাশের রাস্তায় দাড়িয়ে আছেন রিকশার অপেক্ষায়৷ অত তাড়া নেই৷ কিছুক্ষন মাঠের ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করেন মাঠের বাউন্ডারির পিলারের উপর বসে৷ রাস্তাটাও মোটামুটি নির্জন থাকে সবসময়৷ রাত হলে তো আরও খারপ অবস্থা৷ ছিনতাইকারীরাও কম যায়না৷ ২-৩ বার ধরাও খেয়েছিলেন৷ এখন আর ভয় পান না৷ রাত এখন ১০:৪৫৷ এখনও এদিক দিয়ে একটা রিকশা ও আসছেনা৷ অবশ্য এর আগে একটা রিকশা আসছিল৷ কিন্তু অনেক বেশি ভাড়া চায়৷ যাওয়া সম্ভব না৷ “কি ব্যাপার? আজ রিকশাওয়ালাদের কি হইল? ১১ টা বাইজা যাইতাছে একটার ও খবর নাই” নিজে অনেকটা বিরক্ত৷ বাসায় স্ত্রী তার জন্য অপেক্ষা করছে৷ এত দেরী হলে কি চলবে? “আপনি কোথায় যাবেন?” পিছন থেকে অচমকা একটি লোক হামিদ সাহেব কে প্রশ্ন করেলন৷ পিছনে ফিরে হামিদ সাহেব দেখলেন এক বয়সী লোক, পাকা চুল আর দাড়ি৷ হাসিমুখে হাত বাড়িয়েছেন হাত মেলানোর জন্য৷ লোকটার হাসিমুখ একদম অমায়িক৷ হামিদ সাহেব এর আগে কখন ও এত সুন্দর মুখ আর হাসির কোন পুরুষ কে দেখেন নি৷ এরকম সুন্দর শুধু তার স্ত্রী কেই দেখেছেন৷ লোকটাকে কেন জানি অনেকিদনের চেনা জানাও মনে হচ্ছে কিন্তু ……..থাক……এখন ভাল লাগলেই তো আর হবেনা৷ লোকটা তো অপরিচিত৷ হামিদ সাহেব ভাবতে লাগলেন ছিনতাইকারীদের কথা৷ তবুও লোকটার সাথে হাত মেলালেন৷ “জ্বী, আদাবর যাব৷ কিন্তু আপনি……..” “আমি এই সামনের বাড়ীতেই থাকি৷ এই সময় আমি সবসময়ই এখানে আসি৷ আপনাকে প্রায়ই দেখি এই সময় এই মাঠের পাশে দাড়াতে৷ তাই একটু আগ্রহ বশতই……..” “তাই তো আপনাকে চেনা লাগতেছে৷ আপনাকে আমি এখানেই কোথাও দেখেছি৷৷” “আপনি এখন বাসায় যাবেন? কিন্তু আজ এই এলাকায় রিকশাওয়ালাদের একটা ধর্মঘট চলছে৷ আপনি তো এখন রিকশা পাবেননা৷” “কিসের ধর্মঘট?” “আপনি জানেন না বুঝি! গতকাল এলাকায় রাতে এক রিকশাওয়ালা নিঁখোজ হয়৷ সবাই এ জন্য মালিক কে দায়ী করে এ ধর্মঘট করে৷” “ও৷ জানতাম না” “আচ্ছা আমি আপনার জন্য একটা ব্যবস্থা করছি৷” “না ধন্যবাদ৷ আমি অন্য ব্যবস্থা করব” “এসব কি বলছেন? আপনার বিপদে আমি আপনাকে সাহায্য করবনা!! আপনি আমার বাসায় আসেন৷ চা নাস্তা খান৷ আমি নুরু কে বলি আপনার পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে” হমিদ সাহেব প্রথমে যেতে রাজি হননি৷ অনেক বিনয়ের সাথে লোকটি অনুরোধ করাতে হামিদ সাহেব তার সাথে যেতে রাজি হলেন৷ নুরু ঐ বাড়ীর কাজের লোক৷ কিন্তু কি কাজ করে তা বঝা দায়৷ একটা পা নেই৷ দেখে মনে হচ্ছে পা টা কেটে ফেলা হয়েছে বা কাটা পড়ছে৷ হামিদ সাহেব বাড়ীতে ঢুকতেই অনেক অবাক হলেন৷ কিছুটা ভয় ও পেলেন৷ বাড়ীটা অনেক পুরানো৷ বিশাল এক ড্রইং রুমের এক কোণে ৬০ ওয়াটের একটা বাল্ব জ্বলছে৷ যা ঘরটিকে খুব অল্পই আলোকিত করতে পেরেছে৷ বিশাল ড্রইং রুম এর আর এক কোণে বৃত্তাকার কাঠের সিঁড়ি ৩ তলা পর্যন্ত উঠে গেছে৷ আসবাবপত্র গুলো অনেক পুরানো মনে হল৷ ৬০ ওয়াটের সেই বাল্ব ছাড়া পুরো বাড়ীটাই অন্ধকার মনে হল৷ হামিদ সাহেবের জন্য কিছু চা নাস্তার ব্যবস্থা করে নুরু বের হয়ে পড়ল৷ “আপনি এই বাড়ীতে একলাই থাকন?” “কোথায় একলা? এই যে নুরু আছে৷ আমার সকল কাজ তো ওই করে দেয়৷ ওর জন্য খুব মায়া হয়৷ ওর একটা পা……” “কি হয়েছিল ওর পায়ের?” “ট্রেনে কাটা পড়ছে৷ ওর অনেক কষ্ট হত দেখে আমার সাথেই রেখে দিছি” হামিদ সাহেব আর লোকটির মধ্যে অনেক কথা হল৷ হামিদ সাহেব বললেন তার অভাবের জীবনের কথা আর লোকটি তার নি:সঙ্গতার কথা৷ তার এক ছেলে মারা গেছে৷ স্ত্রী গত হয়েছে বহুবছর৷ এভাবেই তাদের গল্প চলতে থাকে৷ রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু গল্প শেষ হয়না৷ নুরু ও আসছেনা৷ এক সময় লোকটি বলল “আমার এই সম্পত্তি কোন কাজে আসবেনা৷ আমি আমার সব তোমার নামে লিখে দেব৷ তুমি নিবে?” হামিদ সাহেব অবাক হলেন৷ “আমি আপনার সম্পত্তি কেন নেব?” “দেখ হামিদ, তুমি আমার ছেলের মত৷ আর আমি জানি তুমি অনেক অভাবে দিন কাটাও৷ আমার এ সম্পত্তি তো দেখার কেউ নেই৷ তুমি মানা কইর না৷আমি আর কয়দিন বাঁচব?” হামিদ সাহেব অজানা এক কারণে নুরুর কথা ভুলে গেল৷ তিনি ভাবলেন অভাবের সংসারে যদি একটু আনন্দ……..৷ “তবে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে৷” “আচ্ছা বলুন কি কাজ?” হামিদ সাহেব লোকটির সাথে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলেন৷ পুরো অন্ধকার একটি করিডোর পেরিয়ে একটি রুমে ঢুকে লোকটি টর্চ লাইট দিয়ে একটি ট্রাংক দেখিয়ে বললেন “এই টাংকের ভিতর কি আছে? বা কি থাকতে পারে? যত ইচ্ছা সুযোগ নাও৷ কাছাকাছি গেলেও চলবে৷ পারলে সম্পত্তি তোমার৷” অনেক চেষ্টা করলেন৷ বিরক্ত ও হলেন৷ কিন্তু লোকটার বিষন্ন বদন যেন সব কথা বলে৷৷ “পারতেছিনা আর পারতাছিন৷ আমারে ছাইরাদেন৷ লাগবনা আমার কিছু” “তাহলে ট্রাংকের ভিতর কি আছে এটা তো জেনে যাও” লোকটা ট্রাংক খুলল৷ সঙ্গেসঙ্গেই উৎকট পচা মাংসের গন্ধ বেরুলো৷ ”এইটা!!??…………..” “এইডা আমার সন্তান……আপনেরে এখন ওর লাগব৷ “আমারে ছাইড়া দেন ভাই৷ আমার ঘরে বউ বাচ্চা আছে৷ আমার লাইগা অপেক্ষা করতাছে৷”
]]]]]
রক্তমাখা জামা পাল্টিয়ে এক তৃপ্তির ঘুম দিল লোকটি৷ আরও কয়েকদিন আরামে ঘুমানো যাবে৷ পরশু সকালের পত্রিকা দেখে লোকটির সেই অমায়িক হাসি আবার দেখা গেল৷
“রাজধানীতে হামিদুর রহমান নামে এক ব্যাক্তি নিঁখোজ” দিয়েছেনঃ Sifat Haider মেইল আইডিঃ sifat_007008009@yahoo.com

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ১১

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, September 16, 2011 at 10:33pm ।। আংটি রহস্য ।। ধুর !!!
মশার জালায় আর কিছু করা গেল না...
ঃ ওস্তাদ, মশা তো জালায়া মারল
আমার মনে হচ্ছে আমি ওকে এই অপারেশন এ এনেই ভুল করেছি...
ঃওই গেদু চুপ করবি??
গেদু ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেল।
আমি বললাম ঃ প্ল্যান্ টা আবার শোন
ঃবলেন ওস্তাদ।
ঃ এখণ শুধু গিয়ে ওই দোকান থেকে টাকা গুলো আনবি। পিস্তল টা নিতে ভুলবি না।
ঃজে বস
ঃতারপর রাস্তায় আমার কাছে দৌড়ে আসবি।আমরা পরে কোনো গাড়ি থামিয়ে উঠে পালিয়ে যাব।
ঃতারপর ওস্তাদ অই গাড়িওয়ালাকে মেরে আবার কিছু হাতাব।
ঃসেটা পরের বিষয়, আগে এই কাজ শেষ করে নে।
ঃইয়েস বস।
তারপর গেদু দৌড়ে গেল দোকানে।দোকানে জিনিস দেখতে দেখতে হটাৎ কি মনে পরে গেছে এমন অভিনয় করে ব্যাগ থেকে পিস্তল টা বের করল। দোকানের উজ্জল আলোতে সব স্পস্ট দেখা যাচ্ছে। গেদুও সব কাজ ঠিক মত করছে। প্ল্যান মত সে দৌড়ে এসে বলল
ঃঅপারেশন খতম বস !
ঃশাবাস গেদু কা বাচ্চা ! এখন জলদি পালা!
রাস্তায় এসে আর দাড়াতে হল না। সাথে সাথেই একটা গাড়ি এসে থামল আমার সামনে।আমি পিস্তল দেখিয়ে তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলাম।
ঃচল
ঃআপনারা কারা?
ঃকথা কম ! চল !
গাড়ি চলতে লাগল। গেদু বলল,
ঃবস, আরও কিছু হাতামু?
ঃতোর লোভ তো দিন দিন বাড়তাছে রে গেদু !! যাহ ! আরও কিছু হাতা এই লোকের কাছ থেইকা...
পাহাড়ি এলাকা। তাই রাস্তা আকা বাকা। আর নিচেই খাদ ! পড়লেই শেষ।
গেদু বললঃগাড়ি থামা শালা !
লোকটা থামাল।
ঃযা কিছু আছে সব দে !!
ঃএই যে নেন। আমাকে মারবেন না প্লিজ !!
ঃতর আংটীটা বাদ রাখলি কেন? দে!!
ঃএটা আমার বাবার স্মৃতি । এটা আমি আমার জীবন গেলেও দেব না।
আমি পিস্তল টা তার দিকে তাক করলাম
ঃজীবন গেলে ঠিকই দিবি !!
ঃনা না না !!!!
ঠাসসসস!!!
একটা ছোট শব্দ। তারপর বেচারার জীবন শেষ।
গেদু আংটিটা খুলে নিজের হাতে পড়ল।
গাড়ির সিট রক্তে ভেজা।
গেদুকে বললাম ঃ এই গাড়ি রাস্তার মাঝে ফেলে রাখলে তো ভীড় হবে, তখন তো ওই দোকানের (যেটা থেকে ডাকাতি করলাম) সব লোক আমাদের কথা বলবে। তখন আমাদের খোজ বেড়ে যাবে না?
ঃঠিক বলসেন বস।
ঃতাইলে আর কি? গাড়িটারে দেই খাদে ফালাইয়া ! তারপর আরেকটা গাড়িতে উথমু। এবার কিন্তু আর ডাকাতি করবি না।
ঃ আইচ্ছা বস
আমরা দুজন মিলে ঠেলতে লাগলাম.
তারপর...
দুম !!
গাড়ীটা নিচে পড়ে গেল।
আমরা দাঁড়িয়ে আরেকটা গাড়ী পেলাম।
এবার বেশ ভদ্রভাবে সাধারন মানুষ হিসেবেই গাড়িটাতে উঠলাম।
গাড়ী চলতে শুরু করলো।
গেদুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার মুখ সাদা হয়ে গেছে।
যেনো কিছু দেখে ভয় পেয়েছে
ঃকি হয়সেরে গেদু?
ঃ ও...ও...ওওসস্তাআআদ ! এই গা আড়িটা না আ আমরা নি নি চে ফালাইয়া দিসি ??
আমি বুঝতে পারলাম , গেদুর কথাই ঠিক ! ড্রাইভারের সিটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম...
সেই লোকটা !!!!!
যার লাশ আমরা গাড়ির সাথে নিচে ফেলে দিয়েছি !!!!
আমাদের দিকে তাকিয়ে লোকটা মুচকি হাসলো ..
তার হাতের আংটিটা জ্বলজ্বল করছিলো !!!
আর গাড়িটা দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে সেই খাদের দিকে...
যেখানে আমরা একে ফেলে দিয়েছিলাম !!!!
তার পরদিন সকালে...
খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামঃ
রহস্যজনক দুরঘটনা !
গতকাল রাতে পুলিশ এর একটি উদ্ধারকারী দল খবর পেয়ে ৪০০ ফিট গভীর একটি পাহাড়ী খাদ থেকে একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার করেছেন। সেই গাড়ির ভিতর বদি ও গেদু নামের দুজন কুখ্যাত ডাকাত এর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই গাড়ির লাইসেন্স নাম্বার দেখে শনাক্ত করা গেছে যে গাড়িটি ধনী ব্যাবসায়ী আশরাফ মিরজার। কিন্তু গাড়ীতে তাকে পাওয়া যায়নি। এবং তিনি গত রাত থেকে নিখোজ।তার কোনো খোজ পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে এই ডাকাত দুজন তার গাড়ী ছিনতাই করে পালাবার সময় এই দুরঘটনা ঘটে।তবে রহস্যজনক ভাবে গাড়িটি অক্ষত রয়েছে।
(এবং আরেকটি কথা , আংটিটা তাদের দুজনের থলিতে পাওয়া যায় নি।)

এটা আমার জীবনে প্রথম লেখা গল্প। আশা করি ভালো লেগেছে। লেখকঃ sami sami মেইল আইডিঃ goonsami@gmail.com

। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ১২

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, September 16, 2011 at 11:04pm ।। অতৃপ্ত নারী ।। বিকেল বেলা আকাশটা খুব পরিস্কার ছিল। আকাশে ছিটে ফোটা মেঘও ভাসতে দেখিনি। লাল হতে হতে সূর্যটা যখন বিদায় নিলো তখনো ছিল মেঘ মুক্ত স্বচ্ছ আকাশ। আমার ঘরে বিদুৎ নেই মাস খানেক যাবৎ। বিদুৎ অফিসের লোকজন মিটার খুলে নিয়ে গিয়েছে। তাদের দাবী আমি নাকি গত পাঁচ মাস বিদুৎ বিল দিচ্ছি না। তাদের এতো করে বললাম যে আমার কাজের ছেলে হানিফ মিয়া প্রতি মাসে বিল দিয়েছে, তারা আমার কথা বিশ্বাস করলো না। বাধ্য হয়ে হানিফ কে ডাকলাম। অবাক কান্ড হানিফকে কোথাও খুজে পেলাম না। অথচ গত চার বছর সে আমার কাছে ছিল। হানিফের বিস্থতা প্রশ্নাতিত ছিল। সে কি শুধু বিদুৎ বিল মেরেছে নাকি আরো কিছু করেছে? ডজন খানেক মোমবাতি কিনে ছিলাম। সাথে হারিকেন আর কেরোসিন তেল। মোমবাতি শেষ, তাই হারিকেনের লাল আবছা আলোয় বসে তিন দিনের বাসি পেপার পড়ছি। অজপাড়া গা না হলেও এই গ্রামটা থানা সদর থেকে অনেক দুরে। রাস্তা ঘাট তেমন সুবিধের না। কাচা মাটির রাস্তার উপর ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়ে ছিল। তবে সেই ইট এখন আর তেমন একটা নেই, আছে কেবল মাটি। আমার বাবা কবি ছিলেন। তিনি শেষ জীবনটা গ্রামে কাটাবেন বলে এই সেমিপাকা বাড়িটা করে ছিলেন। কিন্তু তিনি শেষ জীবনটা কাটাতে পারেন নাই। কারন বাড়ির কাজ শেষ হবার আগেই তিনি এই বাড়িতে আসার পথে বাস দুঃর্ঘটনায় মারা যায়। তখন আমি স্কুলে দশম শ্রেনীতে পড়তাম। বাবার সরকারী চাকুরি ছিল। মা পেনশন আর জমানো টাকা দিয়ে আমাদের বড় করেন। আমরা তিন ভাই। সবাই ভাল চাকুরি করছি। ছোট দু’ভাই শহরে বেশ ভাল রোজগার করছে। তবে বাবার ইচ্ছে পুরন করার জন্য আমি এই গ্রামে পড়ে আছি। আমার শহরের বন্ধুরা আমাকে পাগল ভাবছে। ওদের ধারনা আমার মাথার স্কু ঢিলা আছে। তবে আমি স্কু নিয়ে ভাবছি না। আমার মায়ের ধারনা বাবার সব কিছু আমি পেয়েছি। সে আমাকে নিয়ে বেশ বিচলিত। তবে আমার খুব ভাল লাগছে এখানে থাকতে। আমি স্থানীয় কলেজের বাংলায় অধ্যাপনা করছি। প্রতিদিন পুরো পত্রিকা পড়া আমার নেশা কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এখানে সঠিক সময় পত্রিকা পৌছায়না। পিয়নটাও বজ্জাত কখনো কখনো তিন চার দিনের পত্রিকা এক সাথে দিয়ে যায়। দু’দিন পর আজ বিকেলে পিওন পত্রিকা দিয়ে গেল। বাসি পত্রিকাই মনোযোগ দিয়ে পড়তে ছিলাম, হটাৎ করেই ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলো। ধপাস করে জানালার কবাট আছড়ে পড়ল। বিকট শব্দ হল। খোলা জানালা দিয়ে প্রবল বাতাস ঘরে ঢুকে সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে যেন। আমি দ্রুত জানালা বন্ধ করে ফেললাম। আশে পাশে কোথাও ব্যাপক শব্দে বাজ পড়ল। বিদুৎ চমকাচ্ছে খুব। বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। আকাশে মেঘ জমার ফলে অন্ধকার এত গভির। আধার আমার ভাল লাগে। গভির রাতে আমি জানালা খুলে আধার দেখি। হানিফ অবশ্য আধার খুব ভয় পায়। ওর ধারনা এ বাড়িতে একটা মেয়ে ভুত আছে। যে সাদা শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ায়। ভুতটার বয়স বেশি না। উনিষ কুড়ি বছর হবে। তবে সে ভয়ানক সুন্দরী। পুকুর ঘাটে প্রায়ই রাতে তাকে দেখা যায়। হানিফ ভুতের ভয়ে অস্থির! আমি ছোট বেলায় মায়ের মুখে অনেক ভুতের গল্প শুনেছি। তাই হানিফের গল্প বেশ পরিচিত মনে হয়েছে। আমি জানি ভুত বলতে কিছু নেই। সবি দূর্বল চিত্তের মানুষের কল্পনা মাত্র। হানিফ এই গল্প সারা গ্রাম ভরে শুনিয়েছে কিনা কে জানে? পরসু সন্ধায় চায়ের দোকানদার ফজুলু মিয়া আমাকে ডাকলো,কাছে যেতেই মোলায়েম স্বরে বললো
বাবাজি ভালো আছোনি?
জ্বি। ভালো।
বসো, চা খাও।
না চাচা, আমার হাতে সময় নেই।
এবার তিনি সিরিয়াস ভংঙ্গিতে বললেন, কি দরকার বাবা ঐ অভিশপ্ত বাড়িতে একলা পড়ে থাকার ! তুমি শহরের মানুষ তোমার কি এত বড় রিস্ক নেওয়া ঠিক হইতাছে? ভুত-প্রেত কি বাবা শিক্ষিত দেইখা তোমারে সুযোগ পাইলে ছাইড়া দিবো?
এ ব্যাপারে অন্যদিন কথা বলবো আজ আমার হাতে সময় নেই। আমি মুচকি হেসে চলে আসায় ফজুলু কাকা বেশ আহত হল।ফজলু মিয়া খুব সুন্দর করে গল্প বলে, তার চায়ের দোকানের কাষ্টমার গণ খুব ভাল ¯্রােতা। ভুত-প্রেত নিয়ে তার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া দু একটা গল্প সে হয়ত আমাকে শুনাতে চেয়ে ছিল। কিন্তু বিকেল বেলা আমার কফি খাওয়ার নেশায় ধরে তাই তাকে রেখে চলে আসি। ফজলু মিয়া বিরবির করে কি যেন বললো। বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল আমার। কিন্তু পিছন ফিরে তাকাইনি। পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে আমার রুমে পূর্ব দিকের কোনায় তাকালাম। বাতাস প্রবেশের জন্য যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে সেখানে একটা চড়–ই পাখি বাসা বেধেছে। পাখিটা প্রতিদিন আমার কাজ কর্ম মনোযোগ সহ লক্ষ করে। আজ চড়–ই পাখিটাকে দেখছি না। সে হয়ত তার কোন আতিœয়র বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। আচ্ছা পাখিদের কি আতিœয়র বাড়ি আছে? নাকি সেও ভুতের ভয়ে চলে গিয়েছে! আমার বাবা বাড়িটা বেশ বড় করেই তৈরী করে ছিলেন। সামনে পুকুর ঘাট। আর উত্তরের দিকে ফুলের বাগান। দক্ষিনে ফাকা মাঠ। সুযোগ পেলে আমি মাঠে গিয়ে বসি। তেমনী গতকালও বসে ছিলাম। তখন মিজান এসে আমার সামনে দাড়ালো। মিজান এই গ্রামেরই ছেলে। বয়স ১৭ বছর হবে। সে কৃষি কাজ করে। আমি বললাম কি কেমন আছ মিজান? মিজান বললো আপনী অনেক সাহসী, না?
হেসে বললাম না, আমি একটা ভিতুর ডিম! মিজান বললো আমি অনেক দিন ধরে গরু চরাই কিন্তু আপনাদের মাঠে এত ঘাস থাকলেও গরু বাধতে পারি না। আমি অবাক হয়ে বলি কেন?
মিজান নিচু স্বরে বলে, যত বারই গরু বাধি এসে দেখি রশি ছিড়ে গরু পলাইছে। এমন কি আপনাগো বাড়ির সামনে দিয়ে গরু নিয়ে যাবার সময় গরু দৌড় দেয়!
আমি হেসে বললাম তোমার গরুর দৌড় দেয় কেন? ও অবাক হয়ে বললো কেন দেয় আপনী জানেন না? আমি মাথা দুলিয়ে বললাম নাতো? কেন দেয়? ও আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো, আপনাদের বাড়িতে ভুত আছে। গরুরা ভুত দেখতে পায় তাই ওরা দৌড় দেয়।
আমি বললাম এমন আজব তথ্য তুমি কোথা হতে পেলে? ও আহত হয়ে বলে ,আমার দাদা বলেছে। দাদা ভুতের ওঝা সে সব জানে। তার দাদা ওঝা বলে মিজানের চোখে খুব অহংঙ্কার। কিন্তু আমি তার বা দাদার সর্ম্পকে কোন আগ্রহ না দেখানোয় সে খুব আহত হয়। আমার উপর রাগ করে চলে যায় মিজান। আমি ছেলেটার রেগে চলে যাওয়া দেখে ভাবি সত্যি পৃথীবিতে সবাই তাদের কাঙ্খিত মূল্যায়ন টুকু চায় না পেলে আহত হয়। ধপ করে হারিকেন নিভে গেল। ভাবনায় ছেদ পড়ল। টেবিলের ড্রয়ারে আমি নিজ হাতে ম্যাচটা রেখেছি কিন্তু এখন খুজে পাচ্ছিনা। কালো অন্ধকারে চারপাশ ছেয়ে গিয়েছে। দু’চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কে যেন আমার রুমে প্রবেশ করল। হাটা চলার শব্দ পাচ্ছি। পায়ের নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ শুনছি। কিন্তু কাউকে দেখছি না। বুকের ভেতর আচমকা শূন্যতা অনুভব করছি। ভয় লাগছে। ভীষন ভয় পাচ্ছি। কে যেন আমার কাধে হাত রাখল। ভয়ানক ঠান্ডা সেই হাত। ভাবছি দরজা খোলার শব্দ পেলাম না কিভাবে ঢুকলো আগন্তুক!!
হটাৎ করে কেউ একজন আমার কাধে হাত রাখলো ভয় পেয়ে আতকে উঠে বললাম, কে কে আপনি?। বেশ গম্ভীর স্বরে এক নারী কন্ঠ বলল, ভয় পেওনা আমি সুরভি। এই নাও তোমার দিয়াসলাই। ম্যাচ দিয়ে দ্রত হারিকেন জ্বালালাম। আমার সামনের চেয়ারে সাদা সালোয়ার পড়া এক নারী বসে আছে। তার মুখটা মায়াবী। চোখের নিচে কালি জমেছে, তার ঠোট কাঁপছে। তার এই আচমকা ঘরে প্রবেশ দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে ছিলাম তবে এখন কিছুটা সাহষ পাচ্ছি। আমি সুরভির দিকে তাকিয়ে বললাম আপনী কি করে ঘরে ঢুকলেন? আমিতো ঝড়ের রাতে আপনাকে এভাবে আচমকা প্রবেশ করতে দেখে ভয় পেয়েছি। ভেবেছি আপনী একটা ভুত! হাঃ হাঃ করে ঘর কাপিয়ে হেসে উঠল সুরভী। র্শ্লেষমাখা কন্ঠে বললো, তুমি ঠিকই ভেবেছো আমি একটা ভুত! কিন্তু আমি একটা ভাল মানুষ ছিলাম। একটা লক্ষি মেয়ে ছিলাম। আমার বুকে কত স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আমি জীবনে কিছুই পেলাম না। ডুকরে কেদে উঠে নিজেকে ভুত দাবী করা সুরভী। আমার দিকে তাকিয়ে বলে তোর বাবা একটা খুনি! আমাকে মেরে ফেলেছে তোর বাবা বিখ্যাত কবি রশিদ আহম্মেদ। কথা শেষ করে আমার দিকে ক্রোদ্ধভরা দৃষ্টিতে তাকায় সুরভী। ওর দৃষ্টি আগুনের মত আমার শরীরে বিদ্ধ হয়। হতবিহব্বল হয়ে পড়ি আমি। হৃদয়ে সুনামীর মত তোলপাড় শুরু হয়। কি বলছে এই নারী! পাগলের প্রলাব নয়তো? আমি শুধরে দেবার চেষ্টায় বললাম, দেখুন আমার বাবা ১৬ বছর হল মারা গিয়েছে। কেন তাকে নিয়ে এমন বাজে কথা বলছেন? কেন আমাকে আহত করছেন? আমার বাবা আমার জীবনের সব, তার দেখানো পথে চলছি আমি। সে আমার কাছে চাদেঁর মতই নিস্পাপ। এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে বুকটাকে হালকা করার চেষ্টা করি আমি। সুরভীর কোন ভাবান্তর হয়না। সে তাকিয়ে আছে শূন্যে। তার চোখে জ্বল। হারিকেনের লাল আলোতে তার মুখটা ভারি মায়াবী মনে হয়। সুরভী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। আমার দিকে তাকিয়ে বলে তুমি কি তোমাদের বাড়ির পূর্ব দিকের কোনর ঘরটা কোন দিন খুলে দেখেছো?
না। ওটাতো বোধহয় ষ্টোর রুম।কোথাও চাবি পাইনী খুজে পাইনী। কেন?
শিতল গলায় সুরভী বলে ওখানে আমার কঙ্কাল ঝুলে আছে।
ভয়ে আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে যায়। গলা শুকিয়ে যায় , কাপা গলায় বলি কি বলছেন? তা হবে কেন?
তোমার বাবা আমাকে ঐ রুমে তালাবদ্ধ করে রেখে ছিল।
কেন?

জানিনা তুমি বিশ্বাস করবে কি না তারপরও বলছি, তোমার বাবা যখন বদলী হয়ে আমাদের চট্রগ্রাম শহরে এল তখন সে আমাদের পাশের বাসা ভাড়া নিয়ে ছিল। একদিন কলেজে যাবার পথে তার সাথে পরিচয় হল। জানলাম সেই আমার প্রিয় কবি রশিদ আহম্মেদ। তার লেখা রোমান্টিক কবিতা গুলো ছিল অসাধারন! সে আমাকে তার স্বরচিত কবিতা আবৃতি করে শুনাতো। কিছুদিন তার সাথে চলার পর দেখলাম তার কবিতার চেয়েও সে বেশি অসাধারন। আমিই প্রথম তার প্রেমে পড়ে ছিলাম। বড় অসম ছিল সেই প্রেম। তোমার বাবা আমাকে বুঝাতে চেয়েছে অনেক। কিন্তু আমি জানতাম সেও ভালবেসে ফেলেছে আমাকে।
কথা থামিয়ে উড়নায় চোখ মুছে সুরভী। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে। আমার শরীর অবশ হয়ে আসতে ছিল। মনে হচ্ছে ভয়ানক কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি আমি। তারপর কি হল? সে কিছুটা ক্লান্ত যেন। তারপর দায়সরা উত্তর দেয় আর কি হবে? তোমার বাবা এক সময় আমার কাছে স্বিকার করলো যে সেও আমাকে ভালবাসে। তারপর সে গ্রামে বাড়ি বানালো। সে জানতো তোমার মা শহরের মেয়ে সে কোনদিন গ্রামে আসবে না। গ্রামে থাকবো আমরা দু’জন। বাড়ি বানানো যখন শেষ তখন সে আমার জোড়াজুড়ির কারনে নিয়ে আমাকে এই অভিশপ্ত বাড়িতে নিয়ে আসলো। সারা রাত ট্রেন জার্নি কওে বেশ ক্লান্ত ছিলাম। সে তাই আমাকে বললো তুমি ঘুমাও আমি এখন যাচ্ছি বিকেলের আগেই ফিরবো। তারপর বিকেল গড়িয়ে রাত। সে আর এলনা। বন্দি আমি না খেয়ে দুশ্চিন্তায় কাটিয়ে দিলাম আরো একটা দিন। কেউ এল না। তৃতীয় দিন এত বেশি দূর্বল হলাম যে নড়তে পারলাম না। ভারি অভিমান হল আমার। মনে হল তোমার বাবা আমাকে খুন করার জন্যই এখানে নিয়ে এসেছে। সে আমাকে না খাইয়ে মেরে ফেলার জন্যই আমাকে রেখে ভেগেছে। তখন চারদিক ছিল জনশূন্য এখনের মত এত বাড়ি ঘর ছিলনা। চিৎকার করে ছিলাম অনেক কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নী। তাই ধুকে ধুকে না মরে অভিমান করে উড়না দিয়ে আতহত্যা করলাম। সুরভী কথা থামিয়ে আমার দিকে তাকালো। কষ্টে আমার বুক ভেঙে যাচ্ছিল। নিয়তির নির্মমতায় একটি তাজা প্রাণের অপমৃত্য মানতে পারছিলাম না। আমি বললাম আপণী এখন হয়ত জানেন বাবা সেই রাতে বাস এ্যাকসিডেন্টে মারা গিয়ে ছিলেন। সুরভী ফ্যাকাসে হেসে বললো এসব জেনে আর লাভ কি? আমি বোধহয় ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। যখন উঠলাম তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। রাতের ঘটনা মনে পড়ল। ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। তারমানে আমি স্বপ্ন দেখে ছিলাম? হাফ ছেড়ে বাচলাম!
বিছানা থেকে উঠে শাবল দিয়ে পূর্বের রুমের তালা ভেঙে ফেললাম। আতকে উঠে চিৎকার দিলাম! ফ্লোরে পড়ে আছে সুরভীর কংকাল।

গল্পটি প্রতিযোগিতার জন্য পাঠিয়েছেনঃ Razib Talukder ফেসবুক আইডিঃ Razib Talukder

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ১৪

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, September 19, 2011 at 10:31pm ।। ছায়ার অভিশাপ ।। --‘ডাক্তারবাবু......আমি কি বেঁচে আছি?’
প্রশ্নটা শুনে ডাক্তারবাবুর ভুরুতে সামান্য ভাঁজ পড়ল।
মাথার উপরে একটা টিমটিমে আলো জ্বলছে। তাতে সামনের মানুষটাকে স্পষ্ট দেখতে না পেলেও তার অস্পষ্ট ছায়া ছায়া অবয়ব বোঝা যাচ্ছিল। নাকের উপর ভারি চশমার কাঁচ ঐ আধা আলো আধা অন্ধকারেই চকচক করে উঠছে। মুখের চাপদাড়ির জঙ্গল বুঝতেও অসুবিধা হচ্ছিল না।
মনস্ত্বত্ববিদের ঘর যেমন হয়, এ ঘরটাও তেমনই। আলোর চেয়ে অন্ধকারই বেশি। ডাক্তারবাবু টেবিলের ওপ্রান্তে বসে আছেন, আর রোগী এ প্রান্তে। কাউকেই বিশেষ স্পষ্ট দেখার উপায় নেই। শুধু দেওয়ালে দুটো ক্ষীণ ছায়া মাঝে মাঝে নড়েচড়ে উঠছে।
ডক্টর সিনহা প্রশ্নটায় বেশ কৌতুকবোধ করলেন। আস্ত একটা জলজ্যান্ত লোক জিজ্ঞাসা করছে যে সে বেঁচে আছে কিনা!
--‘এমন মনে হচ্ছে কেন আপনার?’
লোকটা যেন একটু ইতস্ততঃ করল।একটু উশখুশ করে উঠে বলল—‘একটা সিগ্রেট খেতে পারি?’
এখানে ধূমপান মানা হলেও লোকটার অবস্থা দেখে ডাক্তারবাবুর দয়া হয়।অসম্ভব ভয়ে সে জড়োসড়ো! গলার স্বর কাঁপছে! একটু যেন ফ্যাঁসফ্যাঁসেও!
--‘নিশ্চয়ই’।
সে কাঁপা কাঁপা হাতে সিগ্রেট ধরাল। হাত দুটোও থরথর করে কাঁপছে। লাইটার জ্বালাতেই ডাক্তারবাবু তার চোখ দুটো একঝলক দেখতে পেলেন। লাল টকটকে চোখ। যেন রক্ত জমে আছে চোখে! একবারের জন্য যেন মনে হল—লোকটার চোখের মণিটা লাল!
মুহূর্তের জন্য হলেও চমকে উঠেছেন তিনি। পরক্ষণেই সামলে নিলেন। হয়তো বহুদিন লোকটা ঘুমোয়নি। সেই জন্যই চোখ অমন লাল।
কিন্তু চোখের মণি অমন লাল হয় কি করে?......
নাঃ, তিনি নিজেকে বোঝালেন। হয়তো লাইটারের সামান্য আলোয় তার চোখের ভুল হয়েছে। একটা স্বাভাবিক মানুষের চোখের মণি লাল কখনই হয়না।
একেই বলে ইল্যুশন!
লোকটা সিগ্রেটে উত্তেজিত কয়েকটা টান মেরে যেন একটু শান্ত হয়। বলে—‘ডাক্তারবাবু, আপনি একটু দেওয়ালের দিকে তাকাবেন প্লিজ?’
এমন উদ্ভট আবদারে তিনি অবাক ও বিরক্ত দুই-ই হলেন। কিন্তু মনস্ত্বত্ববিদের চটে যাওয়ার উপায় নেই।
—‘কেন?’
সে ফিসফিস করে বলে—‘দেখুন তো দেওয়ালে কটা ছায়া দেখা যাচ্ছে?’
--‘আপনি নিজেই তো দেখে নিতে পারেন...!’
--‘আমার ভয় করছে!’ অসম্ভব ভীত, সন্ত্রস্ত গলা তার—‘বলুন না। কটা দেখা যাচ্ছে?’
তিনি আরও অবাক—‘সে কি! কটা আবার দেখা যাবে! দুজন আছি, তাই দুটোই দেখা যাচ্ছে!’
--‘তিনটে নয় তো?’
--‘তিনটে! তিনটে কেন থাকবে?’
লোকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে—‘থ্যাঙ্কস। তাহলে তিনটে নেই......’
এবার বোধহয় ডক্টর সিনহা ভদ্রলোকের বিষয়ে কৌতুহল বোধ করলেন। লোকটার হাবভাব যেন কেমন উদ্ভট! ত্রিশ বছরের কেরিয়ারে অনেক উদ্ভট রোগীর দেখা তিনি পেয়েছেন। কিন্তু এমন রোগী দেখেননি। ওকে একটু গুছিয়ে নেওয়ার সময় দিলেন তিনি। তারপর আলতো গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন—
--‘কি হয়েছে আপনার? কি সমস্যা?’
--‘বলবো...’ সে আস্তে আস্তে বলে—‘বলবো বলেই তো এসেছি। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়!’
--‘কোথায়?’
লোকটা এবার অদ্ভুত ভাবে তাকায় তার দিকে। ডাক্তারবাবুর মনে হল লোকটার চোখ যেন হঠাৎ জ্বলে উঠল...
--‘আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন তো?’
--‘কেন করবো না?’
সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে—‘তবে শুনুন...আমার নাম তপন মিশ্র। আমি রাইটার! থ্রিলার লিখি...’
--‘তপন মিশ্র!’ ডক্টর সিনহা অবাক হয়ে বলেন—‘আপনি তপন মিশ্র!রাতের ভয়ঙ্কর’গল্পটার লেখক?’
--‘হ্যাঁ। আমিই...’।
তপন মিশ্রের কথা---
প্রত্যেকবার এইসময়টাই আমার বড্ড চাপ যায়।
পূজাবার্ষিকীতে থ্রিলারের কদর খুব বেশি। বিশেষ করে কিশোর পত্রিকাগুলোতে। তাই প্রায় জানুয়ারি থেকেই আসতে থাকে সম্পাদকদের ফরমায়েশ! জানুয়ারি থেকে জুলাই অবধি দম ফেলার ফুরসতও থাকে না।
এবার এক সম্পাদক এলেন অদ্ভুত এক ফরমায়েশ নিয়ে। বললেন—‘দাদা, গোয়েন্দা গল্প নয়, এবার একটু অন্যরকম লেখা চাই আপনার’।
কিরকম লেখা চান জানতে চাইলে বললেন—‘একদম টানটান থ্রিলার। একটা বিভৎস চরিত্রকে নিয়ে। ভিলেন চরিত্র। সাইকো আজকাল বাজারে খুব খাচ্ছে! খুনের সিকোয়েন্স থাকবে অনেকগুলো। রক্তারক্তি কান্ড! দেখবেন—পুরো হটকেক হয়ে যাবে’।
--‘যখন সব ফর্মুলাই জানেন, তখন নিজেই একটা হটকেক বানিয়ে ফেলুন না!’
না...না...এ কথাটা বলিনি! ভাবছিলাম বলবো কিনা। কিন্তু চেপে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ মনে হল। মুখে শুধু বললাম—‘বেশ’।
বলে তো দিলাম--কিন্তু এমন চরিত্র আমদানি করি কোথা থেকে! প্রচুর থ্রিলার পড়তে শুরু করলাম। ইংরাজি, বাংলা, হিন্দি সবরকম থ্রিলার ফিল্ম দেখলাম। অনেক দেখে শুনে একটা চরিত্রের আইডিয়া পাওয়া গেল।
চরিত্রের নাম রাখলাম—অগ্নি। ছ’ফুট হাইটের এক মাঝবয়েসী লোক। হঠাৎ করে তার শখ হল ব্ল্যাকম্যাজিক নিয়ে গবেষণা করবে। সেই মতো কাজও করতে শুরু করল। ব্ল্যাক ম্যাজিকের উপর কাজ করতে করতেই একটা বই পড়ে জানতে পারল যে, মানুষের হৃৎপিন্ড শয়তানকে উৎসর্গ করে, তারপর সেই প্রসাদ খেলে নাকি অমরতা লাভ করা যায়।
সেই বই পড়েই তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। অমরত্বের লোভে সে আর মানুষ থাকলো না। শুরু হলো তার নারকীয় হত্যাকান্ড। প্রথমে আশেপাশের লোক, কাজের লোক এমনকি নিজের স্ত্রী-পুত্রকেও সে ছাড়ে নি! সবাইকে খুন করে, তাদের হৃৎপিন্ড শয়তানকে উৎসর্গ করে খেতে শুরু করেছিল! শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে ধরে এবং তার ফাঁসি হয়।
এই হলো গল্পের মূল কাঠামো। ভাবনা আসা মাত্রই দাঁড় করিয়ে ফেললাম গল্পটাকে। সম্পাদক পান্ডুলিপি পড়ে খুব খুশি!বলেই ফেললেন—‘দাদা, যত লেখা আপনার পড়েছি, এটা হচ্ছে বেস্ট! দেখবেন, পাব্লিক একেবারে গপগপিয়ে খাবে’।
সম্পাদকের প্রশংসা পেয়ে খুব খুশি হলাম। কিন্তু সে সুখ আমার কপালে সইল না।
সেদিন রাত্রে খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। বাইরে ঝড়ের দাপাদাপি! মাঝে মাঝেই প্রচন্ড শব্দ করে বাজ পড়ছে! এমন সময় হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল।
আমি বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছিলাম!ঘুম আসছিল না। পাশেই আমার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে ঘুমিয়ে কাদা। কিন্তু আমি ঘুমোতে পারছি না। কি যেন অস্বস্তি কাজ করছিল মনের মধ্যে!
আমার বেডরুমের জানলার কাঁচে মাঝেমধ্যেই বিদ্যুতের নীল আলো ঝলসে ঝলসে উঠছে। বাইরে যেন একটা নীল কুয়াশা কখন আস্তে আস্তে এসে জমাট বাঁধছিল!বৃষ্টির জলটাকেও যেন নীল মনে হয়!
ঘরে একটা মোমবাতি জ্বলছিল। তাও সেটার প্রায় ফুরিয়ে আসার সময় হয়েছে। একদম স্তিমিত আলোয় হঠাৎ মনে হল...—কেউ যেন আমার ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে!
অসম্ভব!কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না! চোখের সামনে কেউ নেই! অথচ দেওয়ালে ওটা তবে কার ছায়া!
প্রায় ছ’ফুট লম্বা একটা ছায়া! বেশ বুঝতে পারলাম তার পরনে ওভারকোট! মাথায় টুপি!
অবিকল তেমন...ঠিক তেমন...যেমন বর্ণনা আমি বইয়ে দিয়েছি! অগ্নির পরনেও এই পোষাকই থাকতো...! এই পোষাকই...
--‘তোমরা লেখকরা নিজেদের কি ভাবো...?’
কানের কাছে একটা অদ্ভুত হিসহিসে আওয়াজ। যেন এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া শিস দিয়ে বলে উঠল—‘যতই অমরত্বের লোভ থাক—নিজের স্ত্রী-সন্তানকে খুন করা অত সহজ! নিজের হাতে নিজের আপনজনকে টুকরো টুকরো করে কাটতে কি প্রচন্ড কষ্ট হয়, তোমার বিন্দুমাত্রও ধারণা আছে?’
আমি বুঝে উঠতে পারলাম না ঘটনাটা ঠিক কি ঘটছে! স্বপ্ন দেখছি! না সত্যিই এ সব আমার সাথে ঘটছে!
কিছু বোঝার আগেই সেই কন্ঠস্বর আবার বলল—‘তুমিই আমাকে এই ঘৃণ্য অভিশপ্ত জীবন দিয়েছ। আমার হাত দিয়েই আমার সন্তানকে খুন করিয়েছ! আমি কষ্ট পেলেও কিছু করতে পারিনি!কারণ তুমি লেখক! যা করাবে তাই করতে হবে। এটাই নিয়ম!’ বলতে বলতেই সে নিষ্ঠুরভাবে হিসহিসিয়ে উঠল—‘এবার তোমাকেও তার দাম দিতে হবে। আমার জীবন এবার তুমিও একবার বেঁচে দেখো। আমি যা যা করেছি, সব এবার করে দেখবে তুমি। আর আমার মতোই তোমারও কিছু করার থাকবে না!’
এতক্ষণ যেন আমার জ্ঞান ছিল না! এবার কথাগুলো শুনে প্রায় লাফিয়ে উঠতে গেলাম!
ঠিক তখনই দপ্‌ করে মোমবাতিটা নিভে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই কাছে প্রচন্ড শব্দে বাজ পড়ল! জানলাগুলো তার দাপটে কেঁপে ওঠে!
তারপর আর কিছু মনে নেই!
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই টের পেলাম পাশের বাড়িতে ভীষণ শোরগোল। কারা যেন ভীষণ কাঁদছে!
স্ত্রী বেড টি নিয়ে এসেছিলেন। কিছু বলার আগেই উত্তেজিত স্বরে বললেন—‘জানো, রথীনবাবুকে কাল কে যেন খুন করে গেছে!’
রথীনবাবু আমাদের প্রতিবেশী!
--‘পুরো টুকরো টুকরো করে কেটেছে!’ আমার স্ত্রীয়ের চোখ দুটো আতঙ্কে বিস্ফারিত—‘সবচেয়ে আশ্চর্য কি জানো! ওনার হৃৎপিন্ডটা নেই! কে যেন খুবলে তুলে নিয়েছে!’
আমার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরোল না! গত রাত্রের কথা মনে পড়ে গেল! টের পেলাম ভীষণ আতঙ্ক আমার বুকের ভিতরে চেপে বসছে!
বেড টি খেতে গেলাম। কিন্তু মুখে ভালো লাগল না। মুখ থেকে কেমন যেন বদগন্ধ বেরোচ্ছিল। অল্প অল্প গা গুলোচ্ছিল। কাঁচা মাংস খেলে মুখের স্বাদ যেমন হয়ে যায় টের পেলাম, মুখটা তেমনই হয়ে আছে!
ভাবলাম ব্রাশ করলেই ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো হজম টজম ঠিক মতন হয়নি তাই এই...
বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করতে গিয়েই যা দেখলাম তাতে আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেল!
আমার দাঁতে কালচে কালচে লাল ছোপ! শুকনো রক্তের দাগ যেমন হয়, ঠিক তেমন! আর জিভ...!
জিভটা পুরো লাল! রক্ত তখনও শুকিয়ে যায়নি!
আমি হতভম্ব! মনে হচ্ছিল এক্ষুনি পড়ে যাবো। আস্তে আস্তে বাথরুমের মেঝেতেই বসে পড়লাম!
বসে পড়তেই আরেকটা অদ্ভুত জিনিস চোখে পড়ল। আমার বসে থাকা ছায়াটার পাস থেকেই আরেকটা দীর্ঘদেহী ছায়া ভেসে উঠেছে! ওভারকোট, টুপি পরা! ও ছায়া আমার নয়! হতেই পারে না। অথচ ছায়াটা ঠিক আমার পিছনেই......!
এরপরই ছায়াটা গোটা দেওয়ালে হেঁটে বেড়াতে শুরু করলো! ঠিক যেমন সরীসৃপ দেওয়াল বেয়ে বেড়ায়...তেমনিই সারা দেওয়ালে, ছাতে শরীর ঘেঁষটে বেড়াচ্ছে সে!
বুঝলাম ও আমায় নিষ্কৃতি দেবে না! সৃষ্টি এবার স্রষ্টাকে ধ্বংস করেই ছাড়বে!
কাউকে কিছু বললাম না। কিন্তু সারাদিন, সারারাত সেই ছায়া আমার সাথে লেগেই থাকলো। কখনও সে আমার পিছন পিছন আসে, কখনও দেওয়ালময় হেঁটে বেড়ায়! কিন্তু পিছু ছাড়ে না! আমার অদ্ভুত আচরণ দেখে স্ত্রী অবাক হলেন। কিন্তু ভাবলেন যে হয়তো রথীনবাবুর মৃত্যু সংবাদে আমি ভয় পেয়ে গেছি। তাই এমন অবস্থা!
এর ঠিক দুদিন পরের কথা!
আমাদের কাজের মেয়েটা সেদিন বিকেলে একটু দেরি করে এলো! সে নতুন একটা কাজ ধরেছে বলে এখন থেকে একটু দেরি হবে বলে জানালো।
আমার স্ত্রী-পুত্র সেদিন একটু বেরিয়েছিল। ঘরে একা আমিই ছিলাম। নতুন একটা লেখা নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেও ওকে ঘাড় নেড়ে জানাই যে খবরটা বৌদির কানে পৌঁছে দেবো!
--‘চা দেবো বাবু?’
অন্যমনস্ক হয়ে বলি—‘দাও’।
ও চলে গেল রান্নাঘরে। শুনতে পেলাম বাসনপত্রের আওয়াজ! বাসন মাজার শব্দ!
--‘কচি মেয়ে...কচি হৃৎপিন্ড!’ হঠাৎ একরাশ ঠান্ডা হাওয়া আবার আমার কান ছুঁয়ে গেল! ফিসফিস করে বলল—
--‘কেমন লাগবে খেতে?’
সেই শেষ কথা...বিশ্বাস করুন তারপর আমার আর কিছু মনে নেই! আমি কি করেছি না করেছি...কিচ্ছু বলতে পারবো না!
শুধু যখন জ্ঞান এলো তখন দেখলাম...
মেয়েটা আমার সামনে পড়ে আছে...ভীষণ আতঙ্কে চোখ দুটো খোলা...সারাঘরে রক্ত...আর রক্ত...! আমার গায়ে...মুখে...হাতে...সর্বাঙ্গে...
আর লাশের পাশে পড়ে আছে কিচেনের একটা ছুরি! সেটাও যেন রক্ত মেখে পাশবিক জিঘাংসায় হাসছে!
আমি কি করবো...কি করবো...লাশটা লুকোনো দরকার...রক্তটা মুছে ফেলা দরকার...নিজের হাত পা পরিষ্কার...
কোনটা আগে করবো? ভীষণ কান্না আর ভয় বুকের মধ্যে এসে ধাক্কা মারছে! ভয়ে, অনুতাপে কান্নায় ভেঙে পড়লাম! কি কষ্ট! মৃত্যুযন্ত্রণার মতো...!আমি একটা জানোয়ার...জানোয়ার...! খুনী...সাইকো...ওঃ ঈশ্বর!
অনেকক্ষন কান্নাকাটির পর মনের জোর ফিরে পেলাম। লাশটাকে স্টোররুমে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে ফেলি। স্টোররুমে এখন আর কেউ ঢোকে না! চতুর্দিকে শুধু ধুলো আর মাকড়সার জাল! সেখানেই বর্জ্য জিনিসপত্রের স্তূপে লুকিয়ে ফেললাম তাকে।
তখনই ফের নজরে পড়ল---সেই ছায়া! আমার ছোটখাটো চেহারার ছায়ার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে! হ্যাট-কোট পরা...লম্বা ছায়া...যেন তাকিয়ে দেখছে আমি কি করছি!
না,ওর কাছে হেরে যেতে পারবো না আমি! এক্ষুনি কিছু করতে হবে।
তাড়াতাড়ি সব দাগ মুছে ফেললাম। টয়লেটে ঢুকে স্নান করছি এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ। আমার স্ত্রী ফিরে এসেছেন। কোনমতে গা মুছে তাকে দরজা খুলে দিই। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হলেন—‘তুমি এই ভর সন্ধ্যায় স্নান করেছ যে!’
কি বলবো ভেবে পেলাম না। শুধু বলি—‘এই...মানে ইচ্ছে করল’।
তিনি সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে আমায় একবার মেপে নিলেন।
--‘ভারতী এসেছিল?’
ভারতী আমাদের কাজের মেয়ের নাম।
ভয়ে কুলকুল করে তখনও ঘামছি। মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। কোনমতে বলি—‘ভারতী? কই...ননননাঃ...আসেনি তো!’
স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বকবক করতে করতে কিচেনের দিকে গেলেন। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বেরিয়ে এসে বিস্মিত স্বরে বললেন—‘ভারতী আসেনি? তবে বাসনপত্র কে মাজলো?’
কোনও উত্তর দিতে পারলাম না!
সেরাত্রে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর চুপিচুপি উঠে রান্নাঘরে গেলাম। যেখানে যত ছুরি, কাঁচি, ধারালো জিনিস আছে পাগলের মতো খুঁজতে শুরু করি। এক্ষুনি এগুলো সরানো দরকার! আমার নিজের উপর নিজেরই বিশ্বাস আর নেই। আমারই চরিত্র আমায় হারিয়ে দেবে! অসম্ভব! কিছুতেই হারবো না আমি ওর কাছে!
সমস্ত ছুরি, কাঁচি, কাটার জিনিসপত্র আঁতিপাতি করে খুঁজে জড়ো করলাম। তারপর প্যাকেট করে সব ফেলে দিলাম আস্তাকুঁড়েতে। কাল সকালে ময়লা তোলার লোক এসে নিয়ে যাবে প্যাকেটটা!
সমস্ত কাজ করার পর যেন অদ্ভুত স্বস্তিবোধ করলাম! এবার আর কিচ্ছু হবে না! কিচ্ছু হবে না......! সব ঠিকঠাক আছে...সব ঠিক...
ঘুমিয়ে পড়ার আগে চোখে পড়ল সেই লম্বা ছায়াটা তখনও দেওয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি তৃপ্তির হাসি হাসলাম—এইবার ওকে হারিয়েছি আমি! আর আমাকে ও কষ্ট দিতে পারবে না।
মনে খুব শান্তি নিয়ে ঘুমোতে গেলাম! চমৎকার ঘুম হল।কোন দুঃস্বপ্ন নয়, নিপাট সুখের ঘুম।
পরদিন বেশ দেরিতে ঘুম ভাঙে। তাকিয়ে দেখি বেলা এগারোটা বাজে! অবাক হলাম! সে কি! এত দেরী! আমার স্ত্রী আমায় ডাকেননি কেন! বেড টি ও বিছানার পাশে নেই! কি অদ্ভুত!
অবাক হয়ে উঠে বসতেই চোখে পড়ল দৃশ্যটা!
আমার দুই হাতে, সারা গায়ে রক্ত! সারামুখে......!
বুকের ভিতরটা ধ্বক করে উঠল...আমার আর দিগবিদিক জ্ঞান থাকলো না!...ছুটে গেলাম বাইরের ঘরের দিকে...নেই...কেউ নেই...আমার স্ত্রী...আমার ছেলে...কেউ নেই...ছাতে, বসার ঘরে, বাথরুমে, বাগানে...কোথাও নেই...
...হঠাৎ টেবিলের উপরে চোখ পড়ল!সেখানে একটা পাত্রে দুটো হৃৎপিন্ড সাজানো! একটা বড়......আরেকটা ছোট......!
বলতে বলতেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন তপন মিশ্র—‘বিশ্বাস করুন! আমি...আমি সজ্ঞানে এসব করিনি! আমি কি করে নিজের সন্তানকে মারবো!কি করে আমি...নিজের হাতে নিজের ছেলেকে-স্ত্রীকে......’।
বাদবাকি কথাগুলো উচ্ছ্বসিত কান্নায় ঢেকে গেল। ডাক্তারবাবু রুদ্ধশ্বাসে তার কথা শুনছিলেন। অসম্ভব যন্ত্রণায় লোকটা বুকফাটা হাহাকার করে উঠল—
--‘আমার আর কেউ রইল না ডাক্তারবাবু...আমি...আমি...একটা জানোয়ার...একটা সাইকো...একটা ঘৃণ্যজীব...ওঃ...ওঃ ভগবান...আমি...আমি ভাবলাম এবার কি করবো! এবার কি...বাঁচার আর কোন মানে রইলো না যখন...তখন কি করি! তখন...তখন...বেডকভারটা দিয়ে ফ্যানে ফাঁস এঁটে...ওঃ যন্ত্রণা! যন্ত্রণা!...আর পারছি না!...আমি আর পারছি না ডাক্তারবাবু...আমি...’
--‘আপনি খুনি!’
লোকটা অস্পষ্ট মুখ তুলে তাকায়। তার চোখ চকচক করে উঠল।
--‘আপনাকে এই মুহূর্তে পুলিশে দেওয়া দরকার’।
--‘পুলিশে দেবেন?’ শান্ত গলায় তপন মিশ্র বলে—‘দিন। পুলিশে ফোন করুন। তাই ভালো...তাই ভালো’।
টিমটিমে বাতিটার পাশেই একটা বড় আলো থাকে। রোগীরা সবসময় অন্ধকার পছন্দ করে বলেই বড় আলোটা জ্বালান না তিনি। এবার পুলিশে ফোন করার জন্য বড় আলোটার দরকার পড়ল!
কিন্তু আলোটা জ্বালিয়েই...চিৎকার করে উঠলেন ডক্টর সিনহা!
সব যেখানে থাকার—আছে। দেওয়ালে দুটো ছায়া তখনও মুখোমুখি বসে আছে! তপন মিশ্রের ধরানো সিগ্রেটটা তখনও জ্বলছে!
কিন্তু.........শূন্যে!
আর কেউ নেই!!!!!! লেখকঃ তানজিনা নিলা ফেসবুক আইডিঃ Nil Rajkonna

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ১৫

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, September 19, 2011 at 11:21pm ।। একটি জীন তাড়ানোর গল্প ।। আজকে আপানাদের সাথে একটি ছোট ঘটনা শেয়ার করবো। গল্প বলবো না। কারন এটি একটি সত্য ঘটনা। ঘটনাটা ঘটে আমার দাদার বাড়িতে। একবার খবর পেলাম আমার চাচাতো ভাইকে নাকি জীনে ধরেছে। তাও যেনতেন জীন না। সে নাকি ভয়ঙ্কর আছর করেছে। ছেলেটিকে এখন সারাদিন বেঁধে রাখা হয় রশি দিয়ে। এরই মাঝে সে সেইসব রশি ছিঁড়ে কয়েকবার করে মানুষকে আক্রমন করেছে। আর রশিগুলো যেনতেন রশি নয়। ভারি রশি, যেইসব দিয়ে বড় বড় লঞ্ছ পাড়ে লাগানো হয় সে রকম। খবর শুনে খারাপ লাগলো, পাশাপাশি কৌতূহল হল। ভাবলাম, আপাতত কোনও কাজ নেই। গিয়ে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আশা যায়। আর ঘটনা যদি আসলেই সত্য হয় তাহলে তাকে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা উচিত। আমার ধারণা ছিল এটা তেমন গুরতর কিছু নয়। মানুষ রঙ চং মাখিয়ে ছড়াচ্ছে। যাই হোক, বাড়িতে গেলাম বুধবার সকাল বেলা। আমার চাচাতো ভাইয়ের অবস্থা যথেষ্ট করুন। অনধকার একটা ঘরের মধ্যে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা। জানালার শিখ ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে দেখছিল। আর সমানে জানালা ঝাকাচ্ছিল। সাহস করে এগুলাম তার সাথে কোথা বলার জন্য। কিন্তু আমাকে দেখেই খেঁকিয়ে উঠলো। কুৎসিত কিছু গালি দিয়ে উঠলো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এমনিতেই এতো রাস্তা ভ্রমন করে এসেছি, তার উপর এমন অভ্যর্থনা, ঠিক যেনও মানিয়ে উঠতে পারছিলাম না।
জানতে পারলাম, আগামীকাল বৃহস্পতিবার এক হুজুর দিয়ে ওর জীন ঝারান হবে। যথাসময়ে হুজুর এলেন। প্রথমে ভাবছিলাম, থাকবো না। কিন্তু কৌতূহলের কাছে হার মানলাম। গেলাম জীন তারানো দেখার জন্য। প্রথমে আমার চাচাতো ভাইকে শক্ত রশি দিয়ে খাটের পায়ার সাথে বাঁধা হল। এরপর ধূপ জ্বালা হল ঘরটি পূর্ণ করে দেয়া হল ধুয়ায়। আমার ভাই কিছুক্ষণের জন্য ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। হুজুরের সাথে তার বাক্যালাপের কিছু অংশ তুলে ধরছি। হুজুরঃ সাড়া দে।
**********(গালি) {অন্য কেউ বলল, কারন সেহতা আমার ভাইয়ের গলা ছিল না}
হুজুর (ঝারু দিয়ে বাড়ি লাগালেন) বললেনঃ এই দেহ তোর ছাড়তে হবে।
ছারমু না। আমি এরে ছারমু না। আমারে খেপাইস না। জানে বাছবি না।
হুজুরঃ জানে বাছব নাকি পড়ে দেখা যাবে। এখুনি দেহ ছেড়ে বের হ। সংলাপের পুরোটা উল্লেখের প্রয়োজন নেই। তবে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল সেদিন। • হটাত টিনের চালে ব্যাপক হারে ঢিল পড়তে লাগলো, সেই সাথে যেনও এক সাথে শত শত সিংহ গর্জন করে উঠলো।
• আমার চাচাতো ভাই হটাত দাঁড়িয়ে পড়লো। কিন্তু তাকে যেই অবস্থায় বাঁধা হয়েছিলো, তাতে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
• ঘরের মধ্যে অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছিলো। কারন সবাই খুব অশস্থি বোধ করছিলাম। শুধু একা আমি নই, অনেকেই বলল, শরীর ভার ভার ঠেকছে।
• প্রায় ২ ঘণ্টা নানা কসরত করার পর জীন তারান সম্ভব হয়। ঠিক সেই সময় আমার ভাই এবং হুজুর একি সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
• জীন যাওয়ার সময় আমাদের বারিরি পাশের একটা গাছ উপড়ে দিয়ে যায়। এতো বড় গাছ যে উপ্রান সম্ভব টা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।
• এরপর আমার ভাই সুস্থ হয়ে উঠে, কিন্তু তাকে অনেক তাবিজ এবং সুতো পড়তে হয়। বাক্তিগত স্বার্থে নাম, জায়গার নাম দেয়া সম্ভব নয়। কারন, ঘটনাটা আমরা ছড়াতে চাচ্ছি না। পাঠিয়েছেনঃ Mamun Ur Rashid তিনি ফেসবুক আইডি দিতে ইচ্ছুক নন।

।। ভূতুড়ে গল্পের প্রতিযোগিতা ।। গল্প নাম্বার - ১৬

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, September 19, 2011 at 11:33pm ।। এটি একটি সত্য ঘটনা ।। আমি সৌরভ, ময়মনসিংহের একটি প্রত্যন্ত অঞ্ছলে আমার নানার বাড়ি। আজ আপনাদের যেই ঘটনাটির কথা বলবো তা ঘটেছিল আমার উপস্থিতিতে। পরিবারের সবাই ঢাকায় সেটেল্ড বলে গ্রামের বাড়িতে তেমন একটা যাওয়া হয় না। আর যদিও যাই তবে থাকা হয় না। সেবার পুজার ছুটিতে অনেক আয়োজন করে নানার বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলাম সবাই। তখন বর্ষাকাল ছিল। জানি না কেন কিন্তু ময়মনসিংহ মনে হয় বৃষ্টি কিছুটা কম হয়। তবে মাটি মারাত্মক পিচ্ছিল। সেই মাটিতে একবার আছার খাওয়ার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যাই বলেন, হয়েছিলো আমার। আসছি সেই প্রসঙ্গে। আমার নানারা জমিদার বংশের লোক। এলাকায় ভালো প্রতিপত্তি আছে। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরপরই চারপাশ থেকে অনেকেই গাড়ি আঁকড়ে ধরল। তাদের মাঝে কাউকেই আমি চিনি না। তবে এর মাঝেও একজন লোককে বিশেষ ভাবে নজরে পড়লো। কেন পড়লো জানি না। তবে লোকটি অন্য সবাইকে দেখা বাদ দিয়ে এক নজরে আমাকেই দেখছিল। হয়তো এই কারনে।
যাই হোক, সেদিন রাতে আমারা সবাই খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে প্রবল নিম্নচাপে আমার ঘুম ভাঙ্গে। একে তো নতুন পরিবেশ তার উপর টয়লেট বাসা থেকে অনেকটা দূরে। তাই আমার এক মামাত ভাইকে জাগালাম। আমি সেই রাতে তার সাথেই ঘুমিয়েছিলাম। আমার মামাত ভাই ভীষণ ঘুম কাতুরে। অনেক ডাকাডাকির পর সাড়া দিল। তাকে নিয়ে চললাম টয়লেটের দিকে। ঘরের বাইরে বের হতেই এক পলশা ধমকা বাতাস পুরো শরীর কাঁপিয়ে দিল। একটানা ঝি ঝি পোকার ডাক। বৃষ্টির দিন বলে ব্যাঙের কোলাহল শুনতে পাচ্ছিলাম। এর মাঝে দূরে কিছু একটা চিৎকার করে উঠলো। হয়তো শিয়াল হবে। ঠিক জানি না। গাঁ ছমছমে পরিবেশ। নিজের প্রশংসা করছি না, কিন্তু আমার এইসব ব্যাপারে ভয় বরাবরই একটু কম। একটা চারজার বাতি হাতে নিয়ে ছুট লাগালাম টয়লেটের দিকে। কাজ শেষ করে বের হতে নিবো, এমন সময় ঠিক পাশের ঝোপেই কি যেনও নড়ে উঠলো। মাথা ঠিক রাখলাম। আলো মেরে দেখার চেষ্টা করলাম কিসের শব্দ। কিন্তু কিছুই চোখে পড়লো না। টয়লেট থেকে বের হতে যাবো এমন সময় আবার শব্দটা হল। এবার আর জোড়ে। কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। নিশি রাতে একা পেলে মানুষকেও নাকি শিয়ালের দল আক্রমন করে। আসলেই যদি শিয়াল হয় তাহলে খারাপ কিছু ঘটতে পারে। বড় করে একটা দম নিলাম। তারপর টয়লেট থেকে বের হয়েই দে ছুট। ঠিক এরপরেই আমার সাথে যা ঘটলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। পেছন থেকে কে যেনও বলে উঠলো, “ভয় পাইস না। তরে কিছু করমু না। তুই আমার বংশের বাতি।” পাই করে ঘুরে গেলাম। মনের সমস্ত শক্তি এক করে আলো ফেললাম সেখানে যেখান থেকে আওয়াজটা এসেছে। কিন্তু কিছুই নজরে পড়লো না। আগেই বলেছি, আমার এইসব ব্যাপারে ডর ভয় কম। তাই আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে লাগলাম চারপাশ। হয়তো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম তাই মনে হল কিছু যেনও একটা দেখতে পেলাম। একটা আবছা ছায়া। ঠিক যেনও বাতাসে ভর করে ভেসে চলেছে। পাগলের মত চিৎকার করে উঠলাম, “কে? কে ওখানে? ঐ কে?” পাঠক, আমি তখন হয়তো ভয়ে গুলিয়ে ফেলেছিলাম, তাই উল্টাপাল্টা দেখেছি। এমনকি পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার নিজের কাছেই তা মনে হয়। আমি ঘটনাটা চেপে যাই। কারো সাথে শেয়ার করি না। সেই সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় একদল ভিক্ষুককে দাওাত করে খাওয়ানো হয়। খাওয়ানোর ভার পড়ে আমার সকল মামাত ভাই এবং তাদের বন্ধুদের উপর। অনেকটা কৌতূহলের বসে আমিও তাদের সাথে যোগ দেই। সবার পাতে ডাল বেড়ে দেয়ার দায়িত্ব পড়েছিল আমার উপর। লক্ষ্য করলাম, একজন ভিক্ষুক তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে বসেছে। আমি ডালের বাটি হাতে নিয়ে উনার দিকে আগালাম। ঠিক যেই মুহূর্তে লোকটি চোখ তুলে আমার দিকে তাকাল, সাথে সাথে আমার যেনও অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। সেই লোকটা! যে কিনা আমি যেদিন গ্রামের বাড়িতে আসি সেদিন গাড়িতে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। মানুষ জনের উপস্থিতিতে সাহস হারালাম না। এগিয়ে গেলাম যেমন কিছুই হয়নি এমন মনে করে। ডাল লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে লোকটি কোনও উত্তর না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বলল, “কাল রাতে কি বেশি দরাইছিলি?” কথাগুলো কানে ঢোকা মাত্র আমি চমকে উঠলাম। এতটাই চমকে গেলাম যে হাত থেকে ডালের বাটি পড়ে গেলো। মাটিতে পড়ে ধুপ করে আওয়াজ হওয়া মাত্রই আমার এক মামাত ভাই ছুটে এলো। জিজ্ঞেস করলো এখানে কি করছি। আমি ঘুরে ওকে বলতে লাগলাম যে ডাল দেয়ার জন্য এসেছিলাম, একজন লোক একা বসে আছে, তাই তার ডাল লাগবে কিনা অথবা অন্য কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম। সে আমার পিছনে উকি দিয়ে বলল, কোন লোক? চূড়ান্ত বিস্ময়ে আমি আমার পিছনে ঘুরে তাকালাম। ফাঁকা। সেখানে কোনও লোক তো দূরের কথা এমনকি কোন কিছুই নেই। অথচ আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম যে লোকটি হাতে ভাতের পেয়ালা নিয়ে ভাত খাচ্ছিল। কিছু বুঝে পেলাম না। সে রাতে আমি ভয়ঙ্কর কিছু দুঃস্বপ্ন দেখলাম। তার মাঝে একটা ছিল, যে গভীর কোনও পুকুরে আমি ডুবে যাচ্ছি। আমি এমনিতেই খুব ভালো সাঁতারু। কিন্তু এরপরেও ডুবে যাচ্ছি। পাশ থেকে ঐ আগুন্তক লোকটা সমানে চিৎকার করছে আর বলছে, “আমাকে ধর! আমাকে ধর! আমাকে ধরলে ডুববি না। আমাকে ধর!” দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। আমার পাশে আমার এক মামাত ভাই ঘুমিয়ে কাঁদা। আমার সাড়া গাঁ বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছিল। স্বপ্নের রেশ তখনো চোখে মুখে। ভয় না, এ যেনও এক অজানা আতঙ্ক। যার সাথে আমার আগে কখনো পরিচয় ঘটেনি। কলপাড়ে যাওয়ার সাহস হল না। দরজা খুলে মুখে প্নি ছিটিয়ে রুমে ঢুকলাম। বাটি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মাঝেই গভীর ঘুমে হারিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে আমি আমার সব মামাত ভাইকে গতরাতের কথা বলি। ওরা শুনে কিছুটা অবাক হয়। পুকুরটার বর্ণনা দিতেই একজন চিন্তিত মুখে বলে উঠে সেই পুকুরটা সে চিনে। শুধু সেই না। দেখলাম বাকি সবাই চিনে। আমাদের নানার বাড়ি থেকে প্রায় ৪ কি মি দূরে একটা ভাঙ্গা বাড়িতে ঐ পুকুরটা। কেউ নাকি দিনের বেলায়ও যায় না। পুকুর ভর্তি মাছ। মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে কিছু মানুষ এসে পুকুরে জাল মারে। ট্রাক ভর্তি করে মাছ নিয়ে যায়। আমি বায়না ধরলাম যে, সেই পুকুরে আমাকে নিয়ে যেতেই হবে। কিছুতেই তাদের রাজি করান গেলো না। সকলের একি কথা। সেখানে আমাকে নিয়ে যেতে পারবে না। পাছে কিছু হয়। আমি হাল ছারার পাত্র নই। শেষ মেশ ঠিকই রাজি করালাম। ঠিক হল আমি, সায়েম, আর রিপন যাবো পরদিন বিকেল বেলা। খাওয়াদাওয়ার পর মোটর সাইকেল নিয়ে বের হলাম তিনজন মিলে। আম্মুকে বলা হল, বাজারে যাচ্ছি, ফিরতে দেরি হবে। আম্মু আপত্তি করলেন না। বাইক চালাচ্ছিল সায়েম। বাইক তো নয়, যেনও রকেট চালাচ্ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। একটা ইট বিছানো রাস্তা দেখা গেলো। মেইন রোড থেকে বাড়ির দিকে গিয়েছে। সায়েম বলল, এতটুকু রাস্তা পায়ে হেঁটে যাবার জন্য। বাইকের মায়া তার প্রচুর। ইট বিছানো রাস্তায় ঝাকি লাগলে বাইকের ক্ষতি হবে। এটা চায় না সে। তিন ভাই মিলে বাইক স্ট্যান্ড করে রওনা হলাম। বাড়িটা বহুদিন কেউ ব্যাবহার করে না দেখলেই বুঝা যায়। জংলায় পরিণত হয়েছে সামনের উঠানটা। বাড়িটা ঘুরে কিছুদূর এগুলেই সেই পুকুর। আশ্চর্য হলাম। হুবুহু সেই পুকুর। আমি সেই পুকুরটা সেদিনই প্রথম দেখলাম। তাহলে? তাহলে ,এটা আমার স্বপ্নে এলো কি করে? বিমুরের মত এগিয়ে গেলাম পুকুরের পার ধরে। পেছন থেকে সায়েম আর রিপন ডাকতে লাগলো। ভয় পাচ্ছিলো দুজনই। আমি তখন হিতাহিত জ্ঞানশুন্য। নিজেও বলতে পারব না কখন একবারে পুকুরের পানির কাছাকাছি চলে গিয়েছি। একটু ঝুকে পানি ধরার লোভ সামলাতে পারলাম না। পানি ঠাণ্ডা। ভয়ানক ঠাণ্ডা। সাতারে এক্সপার্ট হবার কারনে অনেক পুকুরেই আমি সাতার কেটেছি। কিন্তু এতো ঠাণ্ডা পানি কোনোদিন পাইনি। আরেকটু ঝুকে আবার ধরতে গেলাম। ঠিক তখনই ঘটলো ঘটনা। পুকুরের শেষ সিঁড়িতে ছিলাম আমি। একটা ক্ষয়ে যাওয়া ইটের উপর দাঁড়িয়ে। ঝোঁকার সময় মনে হয় পা পড়লো প্সহের কাদামাটিতে। পিচ্ছিল মাটিতে পা দিয়েই ধরাম করে আছড়ে পড়লাম। একবারে পুকুরের পানিতে। মাথায় প্রচণ্ড বাড়ি লাগলো। কিছুক্ষণ চোখে আঁধার দেখলাম। এর মাঝেই খানিকটা পথ পেরিয়ে পুকুরের আর গভীরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিছুতেই এগুতে পারছি না। সেদিন ভয়ে নাকি ঠাণ্ডায় জানি না, কিন্তু সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারছিলাম না। আর কিছুদূর যাওয়ার পর হাল ছেড়ে দিলাম। এদিকে সায়েম আর রিপন পাড়ে এসে চিৎকার করছে। নামতে সাহস করছে না কেউ। পড়ে শুনেছিলাম, এই পুকুরে নাকি প্রায়ই মাছ চুরি করতে এসে কয়েকজন মারা যায়। অনেক ভালো সাঁতারুও নাকি মারা গেছে। আমাকে বাঁচানোর জন্য কোত্থেকে যেনও একটা বড় লাঠি নিয়ে এলো সায়েম। চিৎকার করে বলতে লাগলো লাঠিটা আঁকড়ে ধরার জন্য।
আমি প্রানপন চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারছিলাম না। এক পর্যায়ে নাকে মুখে পানি ঢুকতে শুরু করে। একনাগাড়ে আল্লাহকে ডাকছি। এমন সময় মনে হল পেছন থেকে কে যেনও আমাকে ধাক্কা দিল। পিঠে কারো হাতের ছোঁওয়া অনুভব করলাম। এরপর আবার! আমি কিছুটা এগিয়ে গেলাম পারের দিকে। আবার ধাক্কা! এবারে প্রায় অনেক জোড়ে। আমি সায়েমদের ফেলান লাঠিটা হাতের নাগালে পেলাম। প্রানপ্রনে আঁকড়ে ধরে রাখলাম। ওরা যখন আমাকে পানি থেকে উপরে তুলে তখন আমি অজ্ঞান ছিলাম। সেই রাতে আমার নানা বাড়িতে হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে যায়। শহর থেকে ডাক্তার নিয়ে আসা হয়। রাত ১১ টার দিকে আমার জ্ঞান ফিরে। আমি নাকি জ্ঞানে ফিরার পর প্রথম কথাটা বলেছিলাম, কলপাড়ে দেখ। জলদি কলপাড়ে যাও কেউ! সেইদিন কলপাড়ে আমার এক মামাত বোনকে সাপে কাটে। সবাই যখন আমাকে নিয়ে আতঙ্কিত তখন সে গিয়েছিলো থালা বাসন মাজার জন্য। আমার কথা শুনে কয়েকজন গিয়ে তাকে সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় পায়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বেঁচে যায় সে! আমি সেদিন বাড়ির সবার উপস্থিতিতে খুলে বলি কি হয়েছিলো। একদম প্রথম থেকে শেষ অবদি। আমার কথা শুনে গ্রামের কিছু বৃদ্ধকে ডেকে আনা হয়। আমার নানু আগেই বলেছিলেন, আমি যেই লোকটিকে দেখেছি তিনি আমার নানার ছোট কাকা। আমার নানাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। গ্রামের কিছু প্রবীণ বৃদ্ধকে বর্ণনা করা হলে তারাও সায় দেয় কথাটায়। আমি ঠিক মানতে পারিনি ব্যাখ্যাটি। তবে এছাড়া আমার আর কোনও উপায়ও ছিল না। কি জানি, হয়তো মৃত্যুর ওপারেও কোনও দুনিয়া আছে। সেখান থেকে আমাদের পরিচিতরা এসে আমাদের সাহায্য করে যায়। হয়তো! আমি নিয়মিত লিখি না। তাই লেখায় ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। আশা করি, আপনারা ক্ষমার চোখে দেখবেন। পাঠিয়েছেনঃ Selim Ahsan Sourav ফেসবুক আইডিঃ Shopnil Projaproti

একটি ভৌতিক গল্প - [ ছায়ামানুষ ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Monday, September 19, 2011 at 10:58pm
ঘুমের সমস্যা তীর্থর কোন কালেই ছিল না । ওর ঘুম পড়তে সময় লাগে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট । যেখানে হোক ঘাড়টা কাত করে একটু শোয়ার অপেক্ষা । শোয়ার পর থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওর ঘুম এসে যাবে । আর ঘুমটাও যা তা টাইপ না; একেবারে গণ্ডারের চামড়া টাইপ পুরু । একবার ঘুমালে বোম মেরেও ওর ঘুম ছুটানো যায় না । এত পুরু ঘুম । গণ্ডারের যেমন কাতুকুতু দিলে পুরু চামড়া ভেদ করে জায়গা পর্যন্ত পৌছাতে এক সপ্তাহ সময় লাগে , তেমন পুরু ওর ঘুম ।
কিণ্তু ক’দিন ধরে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে । ঠিক রাত তিনটা পাঁচ মিনিটে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে । প্রথমদিন যখন ঘুম ভাঙল ও ভাবল স্বপ্নের ভিতর বোধহয় ঘুম ভেঙে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে । কিণ্তু চোখ পিটপিট করে যখন উপরে টিনের চালটা দেখল তখনই বুঝতে পারল স্বপ্ন নয় ও বাস্তবেই জেগে উঠেছে । ও ধড়মড় করে উঠে বসল । কোন সমস্যা নাকি?
নাহ, সমস্যা তো কোথাও নেই । চারিদিক সুনসান নীরব । ঝিঝি পোকারা্ও ডাক ভুলে ঘুমিয়ে পড়েছে । টেবিলের ড্রয়ারের পিছন দিকে একটা সিগারেটের প্যাকেট লুকানো আছে । তা থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরা্ল । টিনের চালের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে থেকে টানতে লাগল । প্রথম কয়েকটা টান ভাল লাগল । তারপর টানতে গেলেই গলা জ্বলতে লাগল । তীর্থ সিগারেটটা অ্যাশ ট্রেতে পিষল । তারপর অ্যাশট্রেটা বইয়ের তাকের পিছনে লুকিয়ে রাখল । বডি স্প্রেটা বের করে সারা ঘরে স্প্রে করল । সিগারেট খাওয়া মা ধরতে পারলে ঝামেলা করে । কী দরকার ঝামেলা বাড়িয়ে? এমনিতেই ঝামেলার অন্ত নেই ।
টেবিলে রাখা মামের বোতল থেকে এক ঢোক পানি খেল তীর্থ । তারপর আবার শুয়ে পড়ল । একসময় ঘুম এসে গেল ।
এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ পঞ্চম দিনেও একই ঘটনা ঘটল । তীর্থ একটা করে সিগারেট খায়,একঢোক করে পানি খায়, আবার ঘুমিয়ে পড়ে ।
কিণ্তু ষষ্ঠ দিনে সমস্যা হয়ে গেল । ম্যাচে যে কাঠি ছিল না তা ও খেয়াল করেনি আগে । সিগারেটটা ঠোটে ঠেকিয়ে দেখল ম্যাচে কাঠি নেই । মেজাজ কতটা খারাপ হয়! ও খাট থেকে উঠল । বারান্দায় থালাবাসনের তাকে ম্যাচ-ট্যাচ থাকতে দেখেছে । হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় এল । ম্যাচটা নিয়ে আবার ঘরে এল । তারপর সিগারেটটা ধরাল । সিগারেটটা বেশী ধোঁয়া দিচ্ছে । বোধহয় ড্যাম্প । ও বাইরের দিকের জানালাটা খুলে দিল । যাক , ধোঁয়াগুলো বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে । ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা ।
তীর্থর জানালার পিছনেই কবরস্থান । কবরস্থান বললে যে একটা ভীতিকর অনুভূতির কথা জাগে এটি দেখলে তা তীর্থর কখনও জাগে না । কারন বাড়ির পাশেই কবরস্থান তো; থেকে থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে । এখন কবরস্থানকে যেন বাড়ির একটা অংশ বলেই মনে হয় ।
এই কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে তীর্থ জমে গেল । পুরো কবরস্থানটা আলোয় আলোকিত । যেন ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের সব ফ্লাড লাইট এখানে লাগানো হয়েছে । তীর্থর গায়ে কাটা দিয়ে উঠল । বাগানে তো আলো থাকার কথা না । তবে?
যা দেখে অভ্যস্ত তার ব্যতিক্রম কিছু দেখলেই মানুষ অন্যরকম আচরণ করে । কেউ ভয় পায়, কেউ বিরক্ত হয়, কেউবা আবার দার্শনিক হয়ে যায় । তীর্থ ভয় পেল । প্রচণ্ড রকম ভয় । তাড়াতাড়ি করে সে জানালা বন্ধ করে দিল । ভয়ে তার গা হাত পা কাঁপতে লাগল । সে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল । উঠে অ্যাশট্রেটা বইয়ের তাকের পিছনে লুকিয়ে রাখার সাহসটুকু তার হল না । টেবিল থেকে বোতল তুলে একঢোক পানি খাবে ,ভয়ে সেটিও করতে পারল না ।
সপ্তম দিনেও একই ঘটনা । রাত তিনটা পাঁচ মিনিটে তীর্থর ঘুম ভেঙে গেল । ভয় ভয় করতে লাগল ওর । তবে গতকালকের মত নয় । ও স্বাভাবিক ভাবেই সিগারেট ধরাল । কিণ্তু ওর মন টানছে বাইরের দিকের জানালাটা । মনে মনে বলল জানালা সে ভুলেও খুলবে না । কখখনো না । কিণ্তু মানুষের কৌতুহল বড় খারাপ জিনিষ । একসময় সে জানালাটা খুলল ।
জ্বলছে । আলো জ্বলছে ।
তীর্থ তাকিয়ে থাকল আলোর দিকে যেন ও একটা পিপীলিকা । তাকিয়ে থাকতে থাকতে আলোটার মোহে পড়ে গেল ও । তাকিয়েই থাকল অপলক । এক টানা তাকিয়ে থাকার ফলে ওর চোখে একটা ঘোর তৈরী হল । ওর একবার মনে হতে থাকল আলোটা মাটির ভিতর থেকে বের হচ্ছে , আর একবার মনে হতে লাগল আলোটা আকাশ থেকে আসছে ।
ভোরের দিকে আলো আস্তে আস্তে উধাও হয়ে গেল । তীর্থ ঢলে পড়ল বিছানায় । একটানা ঘুমাল দু’টো পর্যন্ত । সারাদিনে আর কিছুই করল না ।
রাতে আবার ঘুমাল । আবার ঘুম থেকে জাগল । সময় তখন রাত তিনটা পাঁচ মিনিট । জানালা খুলল । মোহাবিষ্টের মত তাকিয়ে থাকল আলোটার দিকে । ভোর বেলা চলে গেল আলো । তীর্থ ঘুমিয়ে পড়ল । একটানা ঘুমাল দু’টো পর্যন্ত ।
আবার রাত । আবার দিন ।
একটা চক্রে পড়ে গেল তীর্থ । দিন দু’টো পর্যন্ত ঘুম আর রাত জেগে আলো দেখা । দিনের হিসাব গুলিয়ে গেল তার ।
ঠিক কতদিন পর ও বলতে পারবে না, একদিন দেখল আলোটায় পরিবর্তন এসেছে । ঠিক যেন SOS পাঠানোর ভঙ্গিতে আলো জ্বলছে আর নিভছে । প্রথমে খুব দ্রুত তিনবার আলো জ্বলছে আর নিভছে , তারপর একটু বিরতি দিয়ে একটু দীর্ঘ সময় ধরে আলো জ্বলছে আর নিভছে , তারপর আবার দ্রুত তিনবার জ্বলছে আর নিভছে । ঠিক যেন বিপদে পড়া মানুষ SOS পাঠাচ্ছে ।
তীর্থর একবার মনে হল যা হয় হোক তার কী ? সে ঘুমিয়ে পড়বে । কিণ্তু সে ঘুমাতে পারল না । পতঙ্গ যেমন আগুনের দিকে এগিয়ে যায় তেমনি আকর্ষণ সে অনুভব করল আলোটার প্রতি । ধীর পায়ে উঠল । ঘরের দরজা খুলল । বাইরের গেটের দরজা খুলল । তীর্থর ভিতর থেকে কেউ একজন বলল,’তীর্থ ফিরে যা ,ফিরে যা তীর্থ ‘। হয়তো অবচেতন মন বলল । তীর্থ ফিরল না । কারন সে আর তখন মানুষ নেই । সে পতঙ্গ হয়ে গেছে । আলোর নেশা সে ছুটাতে পারছে না । তীর্থ আলোটার দিকে এগিয়ে গেল । কবরস্থান এক পা দু’পা করে তার দিকে এগিয়ে আসছে । তীর্থ একসময় আলোর সীমানায় চলে এল । আলোর বলয়টাকে স্পর্শ করল । একসময় আলোর কেন্দ্রে চলে এল । আলোর কেন্দ্রে যেই এল অমনি আলো নিভে গেল । ঝুপ করে নেমে এল অন্ধকার । তীর্থর ঘোর কেটে গেল ।
তীর্থ বুঝতে পারল না রাতের বেলা কবরস্থানে কেন এল, কিভাবেও বা এল । গা ছমছম করতে লাগল ওর । ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল । তখনই অন্ধকার থেকে কেউ একজন কথা বলে উঠল । ঠিক যেন মানুষের গলা নয় । অপার্থিব একটা স্বর । অনেক দূর থেকে পানির উপর দিয়ে ভেসে আসছে যেন সেটি ।
“আমাদের বিপদে ফেলে কই যাও তুমি মিয়া?”
তীর্থ ভয় পেয়ে গেল । ফিসফিস করে বলল,
“কে , কে কথা বলে ?”
“এখন চিনবে না তুমি একটু পরে ঠিকই চিনবে ।”
“কে আপনি সামনে আসেন না কেন?”
ভয়ে তীর্থ তোতলাতে থাকে ।
“এরকম 420 একটা লোক আমাদের জগতে ক্যান পাঠালা মিয়া ।”
“কী বলছেন আপনি ? না পেঁচিয়ে ঠিকমত কথা বলেন ।”
তীর্থ সাহসী হওয়ার চেষ্টা করল ।
“ভুলে গেলা মিয়া? মাহতাব বিশ্বাসকে এখনই ভুলে গেলা?”
“মাহতাব বিশ্বাস কে ? মাহতাব বিশ্বাস ….।”
কথা বলতে বলতে তীর্থ থেমে যায় । মাহতাব বিশ্বাস তার আব্বার নাম । মাসখানেক হল মারা গেছে লোকটা । তীর্থ ছাড়া আর কারো জানার কথা নয় যে মাহতাব বিশ্বাস মারা যায় নি , তাকে মেরে ফেলা হয়েছে । সুনিপুণ কৌশলে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ।
দুনিয়ায় লোকটার কাজ বলতে ছিল শুধু খাওয়া , ঘুম আর জুয়া খেলা । জুয়া খেলে যদি কোনদিন জিতত তা ও একটা বলার মত কথা হত । ‘জুয়া খেলত’ না বলে বলা উচিৎ ‘জুয়া খেলে হারত’ । এই হারতে হারতে বাড়িতে একটা মূল্যবান জিনিস বলতে লোকটা রাখেনি । সব বিক্রি করে দিয়েছে । তীর্থর HSC পরীক্ষার সময় কী ঘটনাটা না ঘটাল !
সেবার কুলের সময় । তীর্থদের কুল গাছ তিনটায় ভালই কুল হয়েছিল । তীর্থর মা বলেছিল এই কুল বেচে তীর্থর পরীক্ষার তিন হাজার টাকা দেয়া হবে । বাড়িতে আয়ের তো কোন পথ নেই । মা এটা সেটা করে চালান । তো তীর্থর গুণধর বাপ মাহতাব বিশ্বাস কী করলেন?
কুল পেকে গেছে । সেদিন দুপুরে এক লোক এল বাড়িতে । এসেই হাক ছাড়ল,
“মাহতাব চাচা বাড়িত আছেন নাকি?”
মাহতাব চাচা বাড়িতে ছিলেন না । তীর্থর মা বাইরে বেরিয়ে এলেন । লোকটা বলল,
“চাচা আমাকে কুল দেবার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন । কুলগুলো আজ বিকেলে নিয়ে যাব ।”
তীর্থর সেবার HSC পরীক্ষা দেয়া হয় নি ।
লোকটা আর কিছু না পারুক সন্তান উৎপাদন করতে কার্পণ্য করে নি । ছেলে আর মেয়ে মিলে মোট আট সন্তান তার । তীর্থর মা’র এক একটা দিন যেন একটা বছর ।অল্প দিনেই বুড়ি হয়ে গেলেন । তীর্থ বাপকে দু’চোখে সহ্য করতে পারত না । কথাও বলত না তার সাথে । লোকটাকে কিছুই বলত না সে । না একটা ভাল কথা না একটা খারাপ কথা ।
কিণ্তু এবার আর কিছু না বলে পারল না ।
তীর্থর বড়বোনের বিয়ে । বরপক্ষকে একটা মোটরবাইক ছাড়া আর কিছুই দিতে হবে না । রেডিও টিভিতে যৌতুক বিরোধী কত কিছু দেখানো হয় আসলে সবই বৃথা । তলে তলে যৌতুক ঠিকই বেঁচে আছে তার স্ব-মহিমায় ।
তীর্থর মা আলমারি থেকে তার বাবার দেয়া গয়নাগুলো বের করলেন । মাহতাব বিশ্বাসের হাতে দিয়ে বললেন,
“একটু দরদাম করে বিক্রি করো । দেখো মোটরসাইকেলের টাকা যেন শর্ট না পড়ে ।”
মোটরসাইকেলের টাকা শর্ট পড়ে নি ।কারন মোটরসাইকেল কেনাই লাগেনি । মাহতাব বিশ্বাস সব টাকা একরাতে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ।
তীর্থর মা বিছানায় পড়ে গেলেন । তীর্থর বোনের বিয়ে ভেঙে গেল । মাহতাব বিশ্বাস নিশ্চিন্তে তার খাওয়া ঘুম চালিয়ে যেতে লাগলেন ।
তীর্থর আর সহ্য হল না । সে ভাবল এই লোকটা বেঁচে থাকলে তাদের কোন লাভ নেই । বরং লোকটা বেঁচে থাকলে তাদের মা বাঁচবে না । তাই চরম সিদ্ধান্তটাই সে নিল ।
পটাশিয়াম সায়ানাইডটা জোগাড় করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল ।
তীর্থ কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এল । অশরীরী লোকটা বলল,
“কী মিয়া কথা কও না ক্যান? এরকম 420 একটা লোক আমাদের জগতে ক্যান পাঠালা মিয়া ? কী কথা কও না ক্যান মিয়া ?”
তীর্থ কথা বলতে পারে না । লোকটাই আবার কথা বলে,
“অই হারামজাদা এই জগতে এসেই আত্মা কেনা-বেচা, বন্ধক রাখারাখি করতে শুরু করেছে । আমাদের জগৎ মনে করো একেবারে নরক গুলজার অবস্থা । তোমার জগৎ তো তুমি রক্ষা করেছ মিয়া , আমাদের জগৎ কে রক্ষা করবে ?
তীর্থ কথা বলে না ।
“কী মিয়া, মনে মনে বলতাছ আমাদের জগৎ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে, তাই না ?”
তীর্থ সায় জানাল ।
অশরীরী লোকটা হাসল । বলল,
“ঠিক ই কইছো মিয়া । আমাদের জগৎ আমরাই রক্ষা করব । সে জন্যেই তো এত কষ্ট করে তোমাকে ধরে আনা হল ।”
“আমাকে ধরে এনেছ ? কেন ?”
তীর্থ অবাক হয় ।
“অবাক করলা মিয়া ! একটা 420 মানুষ খুন করে পৃথিবী থেকে একটা 420 আত্মা আমাদের জগতে পাঠালা । এখন এই 420 আত্মাটাকে খুন করে অন্য জগতে কে পাঠাবে ? তুমিই তো । তাই তো তোমাকে ধরে আনা হল ।”
“তা কিভাবে সম্ভব ? মানুষ হয়ে আমি আত্মা কিভাবে খুন করবো ? দেখবও বা কিভাবে ?”
অশরীরী লোকটা খনখনে গলায় হাসল । বলল,
“তুমিও আত্মা হয়ে গেলে এই সমস্যাটা তো আর থাকে না । ঠিক কিনা ?”
তীর্থ শিউরে উঠল । আত্মা হওয়া মানে তাকেও কী মেরে ফেলা হবে ? ওর শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা শীতল স্রোত নেমে গেল । এই অনুভূতিটার কথা এতদিন বইয়েই পড়ে এসেছে কেবল ।আজ উপলব্ধি করল ।
“কী মিয়া, চুপচাপ ক্যান্ । আত্মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও ।”
তীর্থ খিচে দৌড় দিবে কিনা ভাবল । পথ দেখে নেয়ার জন্য একবার পিছনেও তাকাল । যা দেখল তাতে ওর ঘাড়ের কাছের চুল খাড়া হয়ে গেল । দেখল হাজার হাজার অশরীরী শ্বেত ছায়া তাকে ঘিরে একটা বৃত্ত তৈরী করেছে । আস্তে আস্তে বৃত্ত ছোট করছে ওরা । আর কিছুক্ষণের ভিতর তীর্থকে ধরে ফেলবে । তার কিছুক্ষণ পর সে আত্মা হয়ে যাবে । তীর্থ জায়গায় জমে গেল । একবিন্দু নড়তে পারল না । ছায়ারা এগিয়ে আসছে । এগিয়ে আসছে…..।
তীর্থর হঠাৎ কামিনীর মুখটা মনে পড়ল । কামিনী তাকে অনেক ভালবাসে ।
আচ্ছা, সে আত্মা হয়ে গেলে কামিনী তখন কেমন আচরণ করবে?

হ্যালোইনের রাত - By টিনটিন রকস (Exclusive)

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Thursday, September 15, 2011 at 10:30pm
( হরর স্পেশাল )

হ্যালোইনের জঙ্গল পার্টিতে অংশগ্রহন করতে এসেছে ওরা তিন বোন। এঞ্জেলা, নিনা আর মিশেল। নিনা আর মিশেল বয়সে বড়, এঞ্জেলা ওদের অনেক ছোট। ১৬ বছরে পড়ল এবার। বাইরের জগৎ সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। দুই বোনের সাথে এবার প্রথমবারের মতো যোগ দিচ্ছে হ্যালোইন জঙ্গল পার্টিতে। পার্টিতে যারা অংশগ্রহন করবে সবাই এসে গেছে। কিছু বয়স্ক দম্পতি, কয়েকজন ইয়াং ছেলেমেয়ে, বাচ্চাকাচ্চা আর এঞ্জেলারা তিন বোন-সব মিলে মোটের উপর ৩৫-৪০ জন হবে। ঠিক রাত ১০-৩০ মিনিটে বাস ছেড়ে দিবে। এঞ্জেলারা তিন আসনের একটা বেঞ্চ দখল করে বসে গেল। বাসের মধ্যে বাচ্চাদের হৈচৈ আর অন্যান্নদের উল্লাস চিৎকারে কান ঝালাপালা হয়ে আসছে। অনেকেই ভ্যাম্পয়ার আর ওয়্যারউল্ফের মুখোস পড়ে একে অন্যকে হাস্যকর ভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এঞ্জেলা বসেছে সীটের করিডর সাইডে। লাল একটা হুডওয়ালা গাউন তার পরনে। চুপচাপ বসে আছে ও। ব্যাপারটা চোখ এড়ালোনা নিনার। "কি হয়েছে তোর," নিনা জিজ্ঞেস করলো।
এঞ্জেলা ইশারায় পিছনে বসা ভ্যাম্পায়ারের মুখোশ পড়া এক লোককে দেখালো, যে এক দৃষ্টিতে এঞ্জেলার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানোর ভঙ্গিটা কেমন যেন রহস্যময়, কিছুটা ভয়ঙ্করও। নিনা এঞ্জেলাকে লোকটার দিকে তাকাতে মানা করলো। ছোট বোনটা সুন্দরী, বেশ সুন্দরী। লোকজন একটু লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতেই পারে। এতে ওদের যায় আসে না। আজ হ্যালোইনের রাত। ওরা তিনবোন আজ খুব এনজয় করবে, শুধু ওরা তিনজন। রাত ১২-০৪ মিনিটে বাস এসে পৌছালো শহরের বাইরে অবস্থিত "উল্ফ ফরেস্ট" নামক জঙ্গলের সামনে। নেকড়ে আর ভালুকের অভয়ারন্য এই বন। তবে ওরা বেশ ভিতরের দিকে থাকে। জঙ্গলের এই দিকটাতে আসে না বললেই চলে। হৈচৈ করতে করতে সবাই বাস থেকে নেমে পড়লো। আগে থেকেই ৪ জন লোক পাঠানো হয়েছিল। তারা ক্যাম্পের ব্যাবস্থা করেই রেখেছে। বয়স্ক লোকেরা ক্যাম্প ফায়ারের ধার ঘেষে বসলো, বাচ্চারা এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো। যুবক যুবতীরা যুগল ভাবে ঘুরতে লাগল এদিক সেদিক। কিন্তু ভাম্পায়ারের মুখোশ পরা রহস্যময় লোকটাকে কোথাও দেখা গেলনা। নিনা ওর ছোট দুই বোনকে নিয়ে বনের ভেতর দিকে ঘুরতে বের হলো। বিশাল এক পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে আকাশে। এত সুন্দর দৃশ্ব্য আগে কখনও দেখেনি এঞ্জেলা । আকাশ আর পূর্ণিমার আলোয় স্নান করা জঙ্গল দেখতে দেখতে দুই বোনের পিছন পিছন যেতে লাগলো ও। সৌন্দর্য দেখতে এতই ব্যাস্ত ছিল যে কখন বোনদের ছেড়ে পথ হারিয়েছে বুঝতে পারেনি এঞ্জেলা। যখন বুঝতে পারলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। চারদিকে তাকিয়ে চমকে উঠল এঞ্জেলা। আশেপাশে কেউ নেই। একদম নিশ্চুপ বনভূমি। বোনদের কাছে শোনা গল্পগুলো মনে পড়ে গেল এঞ্জেলার। হ্যালোইনের এই রাতে জেগে ওঠে সব দানোবেরা। ভ্যাম্পায়ার আর ওয়্যারউল্ফরা মেতে ওঠে রক্তখেলায়। শরীরটা একটু ছমছম করে উঠল এঞ্জেলার। পিছনে একটা শব্দ হতেই ঘুরে তাকালো ও। প্রথমে কিছুই দেখতে পেল না। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো মুখোশ পরা সেই লোকটা একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখোশের ভিতর থেকে লোলুপ চোখদুটো এঞ্জেলার দিকে তাকিয়ে নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে হাসছে যেন। প্রচন্ড ভয় পেল এঞ্জেলা। বুকের ভিতর হৃৎপিন্ডটা প্রচন্ড ভাবে লাফাচ্ছে। লোকটা ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। এঞ্জেলা পিছাতে শুরু করলো। হঠাৎ ঘুরে দৌড়াতে শুরু কররো ও। মুখ থেকে মুখোশটা খুলে ফেলল লোকটা তারপর পিছু নিল এঞ্জেলার।

হাটতে হাটতে অনেক দূর এসে খেয়াল হলো এঞ্জেলা নেই ওদের সাথে। চমকে উঠলো ওরা দুইবোন। চারদিকে খোঁজ করতে লাগলো এঞ্জেলার। কিন্তু কোথাও নেই। ভয় পেয়ে গেল মিশেল।
"কোথায় যেতে পারে এঞ্জেলা?" ভীত কন্ঠে প্রশ্ন করলো ও।
"জানিনা, বনের মধ্যে পথ হারানো অস্বাভাবিক কিছুনা" অনিশ্চিত কন্ঠ নিনার, "চলো আরো ভালো করে খুজে দেখি।" খুজতে খুজতে বনের আরো গভীরে চলে আসলো ওরা। হঠাৎ একটা কিছুতে পা বেধে পড়ে গেল নিনা। উঠে দাড়িয়েই তাকালো জিনিষটার দিকে। মানুষের আকৃতির কিছু একটা পড়ে আছে। এগিয়ে গেল ওটার দিকে। ভালো করে তাকাতেই চিনতে পারলো জিনিষটা। এঞ্জেলার গাউন। হুড দিয়ে মুখটা ঢাকা। ততক্ষনে মিশেলও চলে এসেছে। ফুঁপিয়ে কেদে উঠল সে। পড়ে থাকা বডিটার মুখ থেকে খুব ধীরে হুডটা সরালো নিনা।
তাকালো বডিটার মুখের দিকে। না, এঞ্জেলা নয়। একজন যুবক ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এঞ্জেলার গাউনের ভিতর থেকে। "আমাকে বাঁচাও," ফিসফিস করে বলে উঠলো যুবকটা।
"কে তুমি, কি হয়েছে তোমার?" নিনা জিজ্ঞেস করলো।
"ও, ওই মেয়েটা..." বলে পিছন দিকে আঙ্গুল তুললো লোকটা। ঘুরে তাকালো নিনা আর মিশেল। পেছনে দাড়িয়ে আছে এঞ্জেলা। চোখে বিস্মিত দৃষ্টি। একটা হালকা নীল রঙের টি-শার্ট আর সাদা স্কার্ট ওর পরনে। গাউনের ভিতরে এগুলো পড়ে ছিল সে, যেটা এখন লোকটার গায়ে জড়ানো। এঞ্জেলার দিকে এগিয়ে গেল নিনা। "তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের সাথে সাথেই থাকতে?"
"আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম।" ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল এঞ্জেলা, "আর ঐ লোকটা.........."
"ভালোই তো," লোকটার দিকে তাকিয়ে হাসলো নিনা, "দারুন এক সুদর্শন যুবককে পেয়েছ তুমি। দারুন ভাগ্য তোমার।"
"কিন্তু আমি যে কিছুই পারিনা, কোনই অভিজ্ঞতা নেই আমার।" এঞ্জেলা বলল।
"তাতে কি? আমরা সবাই-ই নতুন ছিলাম কোন না কোন সময়। ওর কাছে যাও, এঞ্জেলা। তোমার উষ্ণ ছোঁয়া দাও ওকে।" একটু ভাবলো এঞ্জেলা। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল লোকটার দিকে। যুবকটা তাকিয়ে থাকলো রূপসীনির দিকে। এঞ্জেলা সরাসরি লোকটার শরীরের উপর উঠে বসলো। সামান্য ভয় কাজ করছে ওর মধ্যে। কিন্তু ভয়টা কাটিয়ে উঠল ও। একটানে নিজের টি শার্ট টা খুলে ফেলল। যুবকের মধ্যে আবার সেই লোলুপতা ফিরে আসলো। লোভনীয় চোখ নিয়ে তাকালো এঞ্জেলার অন্তর্বাস পড়া শরীরের দিকে। কিন্তু একি! হঠাৎ করেই যেন এঞ্জেলার শরীরে গজাতে লাগলো ঘন কালো লোম। ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকলো সে। চোখের নীল মনি হঠাৎ পরিনত হলো হলুদ বর্ণে। ফাঁক হয়ে গেল এঞ্জেলার মুখটা, চোয়ালের কোনার দুই দাঁত প্রথমে সরু আকার ধারন করলো তারপর অনেকটা লম্বা হয়ে গেল, অনেকটা শ্বাপদ প্রাণীর দাঁতের মতো। চাঁদের আলোয় ঝিকিয়ে উঠলো দাঁতদুটো। মুহুর্তে বদলে গেল তার সুন্দর মুখখানা। নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কর এক পিশাচীনিতে পরিনত হলো সে। রাতের নিঃশব্দতা ভেদ করে কুৎসিত ভয়ঙ্কর কন্ঠে চিৎকার করে উঠল পিশাচীনি। তারপর মুখটা নামিয়ে আনলো যুবকের ঘাড়ের কাছে। সুচাঁলো দাঁতদুটো ফুটিয়ে দিল যুবকের দপদপ করতে থাকা ঘাড়ের রগে। তারপর অভুক্তের মতো চুষে খেতে লাগলো যুবকের গরম তরল রক্ত যেন অনন্তকাল ধরে ভীষন, ভীষন পিপাসার্ত সে। ভোর হয়ে আসছে। পার্টির লোকজন ফেরার জন্য বাসে উঠে পড়েছে। এঞ্জেলারা তিনবোন নিজেদের আগের সেই সীটেই বসে নিজেদের মধ্যে আড্ডায় জমে উঠেছে। বাচ্চা আর যুবক-যুবতীদের কোলাহলে মুখর হয়ে আছে বাসের ভিতরটা। কিন্তু কেউ খেয়াল করলো না, আসার সময় বাসটার সবগুলো আসন একেবারে পরিপূর্ণ থাকলেও, যাওয়ার সময় একটা আসন যাচ্ছে একদম ফাঁকা। বাসটা রওনা হতেই জঙ্গলের ভিতর থেকে করুন কন্ঠে বিলাপ করে উঠল একটা নেকড়ে, যেন বিদায় জানালো হ্যালোইনের ভয়ঙ্কর রাতটাকে।

প্রতিশোধ (ভৌতিক গল্প) - By রোদঁশী

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Friday, September 16, 2011 at 10:10pm
" নাহ! ওদের হাত থেকে আমরা বোধহয় কখনোই বাচঁবো না"
এভাবেই নিজের রাগ প্রকাশ করছিলো আনিকা হোস্টেলে নতুন আসা মেয়ে নিতুর কাছে।আনিকা পড়ে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ। কলেজের হোস্টেলে থাকে ও।হঠাৎ করে বাসার সবাইকে ছেড়ে এখানে একা একা থাকতে ওর প্রথম প্রথম বেশ খারাপ লাগতো।এখন সবার সাথে মানিয়ে নিয়েছে ও নিজেকে।বাসার কথা খুব বেশি মনে পড়ে না এখন।আর তাছাড়া এখানে সবাই ওর মতো একা থাকে,কারোর বাবা মাই সাথে থাকে না।তাই ওরা থাকতে পারলে ও কেন পারবে না।এভাবেই নিজেকে দিনের পর স্বান্তনা দিয়েছে আনিকা।হোস্টেলে থাকতে ভালোই লাগে এখন।সকালে সবাই একসাথে কলেজে যায়।ক্লাস শেষে রুমে ফিরেই আড্ডা।আবার মাঝে মাঝে সবাই মিলে ঘুরতে যায় বিকালে।এভাবেই প্রতিটা দিন কেটে যাচ্ছে আনিকা ও তার বান্ধবীদের।ওদের হোস্টেল জীবনটা পুরোপুরি সুখের হতো যদি হোস্টেলে শুধু ওরা,কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েরা থাকতো।কলেজের হোস্টেল ১টা হওয়ায় ফার্স্ট ও সেকেন্ড ইয়ার একসাথে থাকে।সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েরা ফার্স্ট ইয়ার কে কখনোই বেশি পাত্তা দিতে চায় না এবং যখন-তখন অপমান করে বসে।বিশেষ করে হোস্টেলের দোতালার ২৩০ নং রুমে থাকা সেকেন্ড ইয়ারের রুমকি,কনক ও মিতুল খুব বেশি জ্বালায় ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েদের।আর যদি হোস্টেলে নতুন কোন মেয়ে আসে তাহলে তো কথাই নাই।অন্ততঃ ১ সপ্তাহ তার পিছনে লেগে থাকে ওরা।আনিকারা মাঝে মাঝে ভাবে ১টা মেয়ে কিভাবে অন্য মেয়েদের এতো বিরক্ত করে।মাত্র ২ দিন হলো নীতু হোস্টেলে এসেছে আর ওরাও যথারীতি নীতুকে নাজেহাল করে ছাড়ছে।১ম দিন ডাইনিং এ যে অপমান করলো ওরা নীতুকে;বেচারী শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো আনিকার দিকে আর আনিকা দাঁত কিড়মিড় করে বলল "ওদের হাত থেকে আমরা বোধহয় আর কখনোই বাচঁবো না।" ওদের কটুক্তি থেকে বাচঁতে তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে রুমে এসে দরজা লক করলো ওরা ৪জন-শ্রাবণ,সৌমি,আনিকা ও নীতু।কিন্তু একটু পরেই দরজায় নক করা শুনে বুঝলো বজ্জাত ৩টা এসেছে।অনিচ্ছা স্বত্তেও দরজা খুলল শ্রাবণ।রমে ঢুকেই কনক বলল "ইহ!গন্ধে তোদের রুমে ঢোকা যাচ্ছে না,তোরা কি বিছানায় হাগু করিস নাকি? "রাগে শ্রাবণ কিছু বলতে পারলো না।তবে সৌমি বেশ রাগেই বলল "কনক আপু আমাদের পরীক্ষা কাল,আমরা এখন পড়বো।"এক ধমকে সৌমিকে চুপ করিয়ে দিলো কনক তারপর কিছুক্ষণ নীতুকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে চলে গেলো।নীতুর হোস্টেলের ১ম রাতটা কাটলো কান্না কাটি করে।
এধরনের যন্ত্রণা তবুও মেয়েরা সহজে মেনে নিতো,কিন্তু কনকদের ভয় দেখানো টাইপ জ্বালাতন হজম করতে মেয়েদের বেশ কষ্ট হতো।।
কনক কলেজের ১ ম্যাডামের কাছ থেকে জেনেছিলো যে অনেক বছর আগে হোস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে ১টা মেয়ে মারা গিয়েছিলো;হোস্টেলের সিঁড়িতে মেয়েটির রক্তাক্ত দেহ পাওয়া গিয়েছিলো।এটা স্রেফ ১টা দূর্ঘটনা ছিলো কিন্তু কনকরা হোস্টেলের মেয়েদের বলতো যে ঐ মেয়েটির আত্মা নাকি রাতে হোস্টেলের করিডর ধরে হাটাহাটি করে।যদিও কেউ কোনদিন এমন কিছুই দেখেনি কিন্তু কনকদের মুখে এই কথা শুনে ভয় সবাই ঠিকই পেতো।আর মাঝে মাঝে তো কনকরা কোন কোন মেয়েকে করিডরে দাড় করিয়ে রাখতো।।
কোন ১ সন্ধায় রুমকি ও মিতুল এমন কিছু করে মজা লোটার হামলা চালায় আনিকাদের রুমে।রুমে ঢুকেই আনিকাকে বলল "যা করিডরে গিয়ে দাড়িয়ে থাক,যতক্ষণ না আমরা তোকে ভিতরে আসতে বলি"।বুকের ভিতর শুরু হওয়া সাইক্লোনকে পাত্তা না দিয়ে আনিকা করিডরে চলে এলো।হোস্টেলটা অনেক আগের বলে করিডরটা চওড়ায় অনেক বড়।করিডরের এক মাথায় নিচে নামার সিঁড়ি আর অন্য মাথায় সারি দিয়ে বাথরুম।হেমন্তের হালকা শীতে সন্ধা হলেও হোস্টেলের মেয়েরা যে যার রুমে দরজা লক করে হয়ত পড়ছে বা গল্প করছে।আর বাইরে নিস্তব্ধ পরিবেশে নিরেট অন্ধকারে একা দাড়িয়ে আছে আনিকা।অন্ধকার এতো গাড়ো কেন তা ভাবতেই আনিকার মনে পড়লো আজ অমাবস্যা।।হঠাৎ এক ঝটকা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেলো করিডরে।আনিকা দাড়িয়ে আছে ঠিক ওদের রুমের সামনে,করিডরের মাঝামাঝি।মনে হলো হাওয়াটা আসলো আনিকার ডানদিক অর্থাৎ সিঁড়ির দিক থেকে।আচমকা বয়ে যাওয়া হাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রায় আত্‌কে উঠলো আনিকা।অমাবস্যার রাত তবুও ষ্পস্ট দেখলো সিঁড়িতে কেউ দাড়িয়ে আছে।কে ওখানে ভবতেই একটুখানি আলো জ্বলে আবার নিভে গেলো।সেই আলোতে যা দেখল আনিকা তাতে তার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা ভয়ের স্রোত বয়ে গেলো এবং কান ফাটানো চিৎকার দিয়ে সে পড়ে গেলো মেঝেতে।ওদিকে সিঁড়িতে দাড়িয়ে থাকা কনক জোরে হাসতে যেয়ে থেমে গেলো।মুখে সস মেখে একটা ছোটো টর্চ ঠিক মুখের সামনে রেখে একবার অন করেই অফ করে দিয়েছিলো সে।রক্তাক্ত ১টা মুখ দেখেছে ভেবে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে করিডরে পড়ে আছে আনিকা।এতটা করতে চায়নি কনক।দৌড়ে আনিকার কাছে গেলো সে।অন্য দিকে হোস্টেলের প্রায় সব মেয়ে করিডরে এসে হাজির।রুমে নিয়ে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হলো আনিকার।হোস্টেল সুপারের ঝাঁড়ি খেয়ে চুপচাপ এক কোণায় দাড়িয়ে আছে কনক,মিতুল ও রুমকি।এতে অবশ্য ওদের কিছুই হয়নি।তবে কনককে দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুটা লজ্জিত।সে নিজে থেকেই আনিকাকে সরি বলে আসল ঘটনা খুলে বলল এবং ওরা ৩জনই বলল এ ধরনের ফাজলামি তারা আর করবে না।আনিকা স্বাভাবিক হওয়ার পর যে যার রুমে চলে গেলো।কনকরা রুমে গিয়ে ঢুকলো তখন প্রায় রাত ১১টা বেজে গেছে।এত তাড়াতাড়ি ওরা ঘুমায় না তাই ৩জনে আড্ডা দিতে বসলো।গল্পে গল্পে যে কখন রাত ১টা বেজে গেছে ওরা টেরই পায়নি ।ঘড়ির দিকে চোখ পড়া মাত্রই শুয়ে পড়লো মিতুল ও রুমকি আর বাথরুমে যাবে বলে বের হলো।পুরা হোস্টল তখন ঘুমিয়ে পড়েছে।কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা বাথরুমে এসে ঢুকলো কনক।হাসি ঠাট্টায় এতক্ষণ মনে ছিলো না সন্ধার কথা;এখন মনে পড়লো এবং মনে মনে অনুতপ্ত হলো কনক।হঠাৎই মৃদু শব্দ করে বাথরুমের লাইটটা নিভে গেলো।কনক এতটা ভীতু না হলেও এত রাতে হঠাৎ আলো নিভে যাওয়ার গাঁ ছমছম করে উঠলো ওর।হাতড়ে পাতড়ে বাথরুমের দেয়াল ধরে ধরে দরজা খুঁজতে লাগলো কনক।কারো নিঃশ্বাস ওর ঘাড়ে অনুভব করা মাত্রই পিছনে তাকালো কনক।কিন্তু তাকিয়ে লাভ কি;ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেলো না ও।অথচ নিজের ঘাড়ে কারো নিঃস্বাশ ফেলার মত গরম হাওয়া সে অনুভব করেছে;কিন্তু বাথরুমে তো আর কেউ নেই।দৌড়ে ওখান থেকে চলে যেতে ইচ্ছা হলো কনকের।আরো দ্রুত দরজা খুঁজতে লাগলো সে।দরজার ছিটকানিতে হাত ঠেকা মাত্রই দরজা খুলে দৌড়ানো শুরু করলো কনক।দৌড়ে ৪-৫ কদম আসার পর কিছুতে ধাক্কা খেয়ে দাড়িয়ে যাওয়ার মত থামলো কনক।স্পষ্ট দেখলো কেউ দাড়িয়ে আছে সিঁড়িতে।শুধু দাড়িয়েই আছে না আস্তে আস্তে সামনে আসতে শুরু করেছে।আর তখনি হঠাৎ কোথা থেকে একটুখানি আলো জ্বলে আবার নিভে গেলো।সেই আলোতে কনক দেখলো রক্তাক্ত বীভৎস একটা মেয়ের মুখ।তীব্র চিৎকার দিতে চাইলো কনক কিন্তু মুখ হা করলেও গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হলো না।এবার সে অনুভব করলো ঠিক তার পিছনেই কেউ দাড়িয়ে আছে।চিন্তাটা মাথায় আসায় পিছনে তাকাতেই আবারো আত্‌কে উঠলো কনক।ঠিক তার পিছনেই দাড়িয়ে আছে একটু আগে সিঁড়িতে দেখা রক্তাক্ত মেয়েটি,যার বীভৎস পঁচা গলা মুখটি কনকের ঠিক ১হাত সামনে।পঁচা মাংসের গন্ধে বমি এসে গেলো কনকের।তখনি মেয়েটি ১হাত বাড়িয়ে দিলো কনকের দিকে।এবার কনকের মুখ দিয়ে বিকট শব্দ বের হলো এবং সে জ্ঞান হারালো।আর্শ্চয্যজনকভাবে তখনি বাথরুমের লাইটটা জ্বলে উঠলো। ।
কনকের জ্ঞান ফেরেনি আর কখনো,তাই সেদিন কি ঘটেছিলো কেউ জ্বানলো না কখনো।আনিকার সাথে কনক যা করেছিলো সেদিন সন্ধায়,ঠিক ১২ বছর আগে কোন এক সন্ধায় একই ঘটনা ঘটেছিলো ফার্স্ট ইয়ারের মেয়ে তাহিয়ার সাথে।আনিকা স্বাভাবিক হলেও তাহিয়া স্বাভাবিক হতে পারে নাই তাই অন্যমনষ্ক হয়ে ছাদে হাটাহাটি করার সময় নিচে পড়ে মারা যায় সে।হয়ত ১২ বছর পর প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছিলো সে।।

ছায়াসঙ্গী — - হুমায়ূন আহমেদ

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, September 17, 2011 at 11:01pm
প্রতি বছর শীতের ছুটির সময় ভাবি কিছুদিন গ্রামে কাটিয়ে আসব। দলবল নিয়ে যাব- হৈচৈ করা যাবে। আমার বাচ্চারা কখনও গ্রাম দেখেনি- তারা খুশি হবে। পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি করতে পারবে। শাপলা ফুল শুধু যে মতিঝিলের সামনেই ফোটে না, অন্যান্য জায়গাতেও ফোটে তাও স্বচক্ষে দেখবে।
আমার বেশির ভাগ পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারি না। এটা কেমন করে জানি লেগে গেল। একদিন সত্যি সত্যি রওনা হলাম।
আমাদের গ্রামটাকে অজ পাড়াগাঁ বললেও সম্মান দেখানো হয়। যোগাযোগ-ব্যবস্থার এমন সুন্দর সময়েও সেখানে পৌঁছাতে হয় গরুর গাড়িতে। বর্ষার সময় নৌকা, তবে মাঝখানে একটা হাওর পড়ে বলে সেই যাত্রা অগস্ত্যযাত্রার মতো।
অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে ভালো লাগল। দেখলাম আমার বাচ্চাদের আনন্দবর্ধনের সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। কোত্থেকে যেন একটা হাড়জিরজিরে বেতো ঘোড়া জোগাড় করা হয়েছে। এই ঘোড়া নড়াচড়া করে না, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। খুব বেশি বিরক্ত হলে দীর্ঘনিশ্বাসের মতো একটা শব্দ করে এবং লেজটা নাড়ে। বাচ্চারা এতবড় একটা জীবন্ত খেলনা পেয়ে মহাখুশি। দু-তিনজন একসঙ্গে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে থাকে।
তাদের অসংখ্য বন্ধু-বান্ধবও জুটে গেল। যেখানেই যায় তাদের সঙ্গে গোটা পঞ্চাশেক ছেলেপুলে থাকে। আমার বাচ্চারা যা করে তাতেই তারা চমৎকৃত হয়। আমার বাচ্চারা তাদের বিপুল জনপ্রিয়তায় অভিভূত। তারা তাদের যাবতীয় প্রতিভা দেখাতে শুরু করল-কেউ কবিতা বলছে, কেউ গান, কেউ ছড়া।
আমি একগাদা বই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার পরিকল্পনা- পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়া। শুয়ে বসে বই পড়া, খুব বেশি ইচ্ছা করলে খাতা-কলম নিয়ে বসা। একটা উপন্যাস অর্ধেকের মতো লিখেছিলাম, বাকিটা কিছুতেই লিখতে ইচ্ছা করছিল না। পান্ডুলিপি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। নতুন পরিবেশে যদি লিখতে ইচ্ছা করে।
প্রথম কিছুদিন বই বা লেখা কোনোটাই নিয়ে বসা গেল না। সারাক্ষণই লোকজন আসছে। তারা অত্যন্ত গম্ভীর গলায় নানান জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনায় উৎসাহী। এসেই বলবে- ‘দেশের অবস্থাডা কী কন দেহি ছোডমিয়া। বড়ই চিন্তাযুক্ত আছি। দেশের হইলডা কী? কী দেশ ছিল আর কী হইল?’
দিন চার-পাঁচেকের পর সবাই বুঝে গেল দেশ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গল্পগুজবও তেমন করতে পারি না। তারা আমাকে রেহাই দিল। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। গ্রামের নতুন পরিবেশের কারণেই হোক বা অন্য কোনও কারণেই হোক আমি লেখালেখির প্রবল আগ্রহ বোধ করলাম। অসমাপ্ত পান্ডুলিপি নিয়ে বসলাম। সারাদিন লেখালেখি কাটাকুটি করি, সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সঙ্গে করে বেড়াতে বের হই। চমৎকার লাগে। প্রায় রাতেই একজন দুজন করে ‘গাতক’ আসে। এরা জ্যোৎস্নাভেজা উঠোনে বসে চমৎকার গান ধরে-
“ও মনা
এই কথাটা না জানলে প্রাণে বাঁচতাম না।
না না না-আমি প্রাণে বাঁচতাম না।”
সময়টা বড় চমৎকার কাটতে লাগল। লেখার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়তেই লাগল। সারাদিনই লিখি।
এক দুপুরের কথা- একমনে লিখছি। জানালার ওপাশে খুট করে শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখি খালিগায়ে রোগামতো দশ-এগারো বছরের একটা ছেলে গভীর আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে আগেও দেখেছি। জানালার ওপাশ থেকে গভীর কৌতূহলে সে আমাকে দেখে। চোখে চোখ পড়লেই পালিয়ে যায়। আজ পালাল না।
আমি বললাম- কী রে?
সে মাথাটা চট করে নামিয়ে ফেলল।
আমি বললাম- চলে গেলি নাকি?
ও আড়াল থেকে বলল- না।
‘নাম কী রে তোর?’
‘মন্তাজ মিয়া।’
‘আয় ভেতরে আয়।’
‘না।’
আর কোনও কথাবার্তা হল না। আমি লেখায় ডুবে গেলাম। ঘুঘুডাকা শ্রান্ত দুপুরে লেখালেখির আনন্দই অন্যরকম। মন্তাজ মিয়ার কথা ভুলে গেলাম।
পরদিন আবার এই ব্যাপার। জানালার ওপাশে মন্তাজ মিয়া। বড় বড় কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম- কী ব্যাপার মন্তাজ মিয়া? আয় ভেতরে।
সে ভেতরে ঢুকল।
আমি বললাম, থাকিস কোথায়?
উত্তরে পোকা-খাওয়া দাঁত বের করে হাসল।
‘স্কুলে যাস না?’
আবার হাসি। আমি খাতা থেকে একটা সাদা কাগজ ছিঁড়ে তার হাতে দিলাম। সে তার এই বিরল সৌভাগ্যে অভিভূত হয়ে গেল। কী করবে বুঝতে পারছে না। কাগজটার গন্ধ শুঁকল। গালের উপর খানিকক্ষণ চেপে রেখে উল্কার বেগে বেরিয়ে গেল।
রাতে খেতে খেতে আমার ছোট চাচা বললেন- মন্তাজ হারামজাদা তোমার কাছে নাকি আসে? আসলে একটা চড় দিয়ে বিদায় করবে।
‘কেন?’
‘বিরাট চোর। যা-ই দেখে তুলে নিয়ে যায়। ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দিবে না। দুই দিন পরপর মার খায় তাতেও হুঁশ হয় না। তোমার এখানে এসে করে কী?’
‘কিছু করে না।’
‘চুরির সন্ধানে আছে। কে জানে এর মধ্যে হয়তো তোমার কলম-টলম নিয়ে নিয়েছে।’
‘না, কিছু নেয়নি।’
‘ভালো করে খুঁজে-টুজে দ্যাখো। কিছুই বলা যায় না। ঐ ছেলের ঘটনা আছে।’
‘কী ঘটনা?’
‘আছে অনেক ঘটনা। বলব একসময়।
পরদিন সকালে যথারীতি লেখালিখি শুরু করেছি। হৈচৈ শুনে বের হয়ে এলাম। অবাক হয়ে দেখি মন্তাজ মিয়াকে তিন-চারজন চ্যাংদোলা করে নিয়ে এসেছে। ছেলেটা ফোঁপাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে প্রচন্ড মার খেয়েছে। ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছে। একদিকের গাল ফুলে আছে।
আমি বললাম, কী ব্যাপার?
শাস্তিদাতাদের একজন বলল, দেখেন তো এই কলমটা আপনের কি না। মন্তাজ হারামজাদার হাতে ছিল।
দেখলাম কলমটা আমারই, চার-পাঁচ টাকা দামের বলপয়েন্ট। এমন কোনও মহার্ঘ বস্তু নয়। আমার কাছে চাইলেই দিয়ে দিতাম। চুরি করার প্রয়োজন ছিল না। মনটা একটু খারাপই হল। বাচ্চা বয়সে ছেলেটা এমন চুরি শিখল কেন? বড় হয়ে এ করবে কী?
‘ভাইসাব, কলমটা আপনার?’
‘হ্যাঁ। তবে আমি এটা ওকে দিয়ে দিয়েছি। ছেড়ে দিন। বাচ্চা ছেলে এত মারধর করেছেন কেন? মারধর করার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করে নেবেন না?’
শাস্তিদাতা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, এই মাইরে ওর কিছু হয় না। এইডা এর কাছে পানিভাত। মাইর না খাইলে এর ভাত হজম হয় না।
মন্তাজ মিয়া বিস্মিত চোখে আমাকে দেখছে। তাকে দেখেই মনে হল সে তার ক্ষুদ্র জীবনে এই প্রথম একজনকে দেখছে যে চুরি করার পরও তাকে চোর বলেনি। মন্তাজ মিয়া নিঃশব্দে বাকি দিনটা জানালার ওপাশে বসে রইল। অন্যদিন তার সঙ্গে দুএকটা কথাবার্তা বলি, আজ একটা কথাও বলা হল না। মেজাজ খারাপ হয়েছিল। এই বয়সে একটা ছেলে চুরি শিখবে কেন?
মন্তাজ মিয়ার যে একটা বিশেষ ঘটনা আছে তা জানলাম আমার ছোট চাচির কাছে। চুরির ঘটনারও দুদিন পর। গ্রামের মানুষদের এই একটা অদ্ভুত ব্যাপার। কোন ঘটনা যে গুরুত্বপূর্ণ, কোনটা তুচ্ছ তা এরা বুঝতে পারে না। মন্তাজ মিয়ার জীবনের এত বড় একটা ব্যাপার কেউ আমাকে এতদিন বলেনি, অথচ তুচ্ছ সব বিষয় অনেকবার করে শোনা হয়ে গেছে। মন্তাজ মিয়ার ঘটনাটা এই-
তিন বছর আগে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি মন্তাজ মিয়া দুপুরে প্রবল জ্বর নিয়ে বাড়ি ফেরে। সেই জ্বরের প্রকোপ এতই বেশি যে শেষ পর্যন্ত মন্তাজ মিয়ার হতদরিদ্র বাবা একজন ডাক্তারও নিয়ে এলেন। ডাক্তার আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই মন্তাজ মিয়া মারা গেল। গ্রামে জন্ম এবং মৃত্যু দুটোই বেশ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা হয়। মন্তাজ মিয়ার মা কিছুক্ষণ চিৎকার করে কাঁদল। তার বাবাও খানিকক্ষণ ‘আমার পুত কই গেলরে’ বলে চেঁচিয়ে স্বাভাবিক হয়ে গেল। বেঁচে থাকার প্রবল সংগ্রামে তাদের লেগে থাকতে হয়। পুত্রশোকে কাতর হলে চলে না।
মরা মানুষ যত তাড়াতাড়ি কবর দিয়ে দেওয়া হয় ততই নাকি সোয়াব এবং কবর দিতে হয় দিনের আলো থাকতে থাকতে। কাজেই জুম্মাঘরের পাশে বাদ আছর মন্তাজ মিয়ার কবর হয়ে গেল। সবকিছুই খুব স্বাভাবিকভাবে।
অস্বাভাবিক ব্যাপারটা শুরু হল দুপুর রাতের পর, যখন মন্তাজ মিয়ার বড় বোন রহিমা কলমাকান্দা থেকে উপস্থিত হল। কলমাকান্দা এখান থেকে একুশ মাইল। এই দীর্ঘ পথ একটি গর্ভবতী মহিলা পায়ে হেঁটে চলে এল এবং বাড়িতে পা দিয়েই চেঁচিয়ে বলল, তোমরা করছ কী? মন্তাজ বাঁইচ্যা আছে। কবর খুঁইড়া তারে বাইর কর। দিরং কবরা না।
বলাই বাহুল্য, কেউ তাকে পাত্তা দিল না। শোকে-দুঃখে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়। কবর দিয়ে দেওয়ার পর নিকট আত্মীয়-স্বজনরা সবসময় বলে-“ও মরে নাই।” কিন্তু মন্তাজ মিয়ার বোন রহিমা এই ব্যাপারটা নিয়ে এতই হৈচৈ শুরু করল যে সবাই বাধ্য হল মৌলানা সাহেবকেডেকে আনতে।
রহিমা মৌলানা সাহেবের পায়ে গিয়ে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, মন্তাজ বাঁইচ্যা আছে- আপনে এরে বাঁচান। আপনে না বললে কবর খুঁড়ত না। আপনে রাজি না হওয়া পর্যন্ত আমি পাও ছাড়তাম না। মৌলানা সাহেব অনেক চেষ্টা করেও রহিমাকে ঝেড়ে ফেলতে পারলেন না। রহিমা বজ্রআঁটুনিতে পা ধরে বসে রইল।
মৌলানা সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন- বাঁইচা আছে বুঝলা ক্যামনে? রহিমা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, আমি জানি।
গ্রামের মৌলানারা অতি কঠিনহৃদয়ের হয় বলে আমাদের একটা ধারণা আছে। এই ধারণা সত্যি নয়। মৌলানা সাহেব বললেন- প্রয়োজনে কবর দ্বিতীয়বার খোঁড়া জায়েজ আছে। এই মেয়ের মনের শান্তির জন্যে এটা করা যায়। হাদিস শরীফে আছে…
কবর খোঁড়া হল।
ভয়াবহ দৃশ্য!
মন্তাজ মিয়া কবরের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। পিটপিট করে তাকাচ্ছে। হঠাৎ চোখে প্রবল আলো পড়ায় চোখ মেলতে পারছে না। কাফনের কাপড়ের একখ- লুঙ্গির মতো পেঁচিয়ে পরা। অন্য দুটি খন্ড সুন্দর করে ভাঁজ করা।
অসংখ্য মানুষ জমা হয়ে আছে। এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে কারো মুখে কোনও কথা সরল না। মৌলানা সাহেব বললেন- কীরে মন্তাজ?
মন্তাজ মৃদুস্বরে বলল, পানির পিয়াস লাগছে।
মৌলানা সাহেব হাত বাড়িয়ে তাকে কবর থেকে তুললেন।
এই হচ্ছে মন্তাজ মিয়ার গল্প। আমি আমার এই জীবনে অদ্ভুত গল্প অনেক শুনেছি, এ রকম কখনো শুনিনি।
ছোট চাচাকে বললাম, মন্তাজ তারপর কিছু বলেনি? অন্ধকার কবরে জ্ঞান ফিরবার পর কী দেখল না-দেখল এইসব?
ছোট চাচা বললেন- না। কিচ্ছু কয় না। হারামজাদা বিরাট বজ্জাত।
‘জিজ্ঞেস করেননি কিছু?’
‘কত জনে কত জিজ্ঞেস করছে। এক সাংবাদিকও আসছিল। ছবি তুলল। কত কথা জিজ্ঞেস করল-একটা শব্দ করে না। হারামজাদা বদের হাড্ডি।’
আমি বললাম, কবর থেকে ফিরে এসেছে-লোকজন তাকে ভয়-টয় পেত না?
‘প্রথম প্রথম পাইত। তারপর আর না। আল্লাহ্‌তায়ালার কুদরত। আল্লাহ্‌তায়ালার কেরামতি আমরা সামান্য মানুষ কী
বুঝব কও?’
‘তা তো বটেই। আপনারা তার বোন রহিমাকে জিজ্ঞেস করেননি সে কী করে বুঝতে পারল মনত্মাজ বেঁচে আছে?’
‘জিজ্ঞেস করার কিছু নাই। এইটাও তোমার আল্লাহ্‌র কুদরত। উনার কেরামতি।’
ধর্মকর্ম করুক বা না-করুক গ্রামের মানুষদের আল্লাতায়ালার ‘কুদরত’ এবং কেরামতির’ উপর অসীম ভক্তি। গ্রামের মানুষদের চরিত্রে চমৎকার সব দিক আছে। অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে এরা প্রচুর মাতামাতি করে, আবার অনেক বড় বড় ঘটনা হজম করে। দার্শনিকের মতো গলায় বলে ‘আল্লাহ্‌র কুদরত’।
আমি ছোট চাচাকে বললাম, রহিমাকে একটু খবর দিয়ে আনানো যায় না? ছোট চাচা বিস্মিত হয়ে বললেন, কেন?
‘কথা বলতাম।’
‘খবর দেওয়ার দরকার নাই। এম্নেই আসব।’
‘এম্নিতেই আসবে কেন?’
ছোট চাচা বললেন- তুমি পুলাপান নিয়া আসছ। চাইরদিকে খবর গেছে। এই গেরামের যত মেয়ের বিয়া হইছে সব অখন নাইওর আসব। এইটাই নিয়ম।
আমি অবাকই হলাম। সত্যি সত্যি এটাই নাকি নিয়ম। গ্রামের কোনো বিশিষ্ট মানুষ আসা উপলক্ষে গ্রামের সব মেয়েনাইওর আসবে। বাপের দেশের আসার এটা তাদের একটা সুযোগ। এই সুযোগ তারা নষ্ট করবে না।
আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেউ কি এসেছে?
‘আসব না মানে? গেরামের একটা নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে না?’
আমি ছোট চাচাকে বললাম, আমাদের উপলক্ষে যেসব মেয়ে নাইওর আসবে তাদের প্রত্যেককে যেন একটা করে দামি শাড়ি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়, একদিন খুব যত্ন করে দাওয়াত খাওয়ানো হয়।
ছোট চাচা এটা পছন্দ করলেন না। তবে তাঁর রাজি না হয়েও কোনও উপায় ছিল না। আমাদের জমিজমা তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করছেন।
গ্রামের নিয়মমতো একসময় রহিমাও এল। সঙ্গে চারটি ছোট ছেলেমেয়ে। হতদরিদ্র অবস্থা। স্বামীর বাড়ি থেকে সে আমার জন্যে দুটা ডালিম নিয়ে এসেছে।
আমার স্ত্রী তাকে খুব যত্ন করে খাওয়াল। খাওয়ার শেষে তাকে শাড়িটি দেওয়া হলো। মেয়েটি অভিভূত হয়ে গেল। এ রকম একটা উপহার বোধহয় তার কল্পনাতেও ছিল না। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। আমি তাকে আমার ঘরে ডেকে নিলাম। কোমল গলায় বললাম, কেমন আছ রহিমা?
রহিমা ফিসফিস করে বলল, ভালো আছি ভাইজান।
‘শাড়ি পছন্দ হয়েছে?’
‘পছন্দ হইব না! কী কন ভাইজান! অত দামি জিনিস কি আমরা কোনোদিন চউক্ষে দেখছি!’
‘তোমার ভাইয়ের ব্যাপারটা জানতে চাচ্ছিলাম। তুমি কী করে বুঝলে ভাই বেঁচে আছে?’
রহিমা অনেকটা সময় চুপ করে থেকে বলল, কী কইরা বুঝলাম আমি নিজেও জানি না ভাইজান। মৃত্যুর খবর শুইন্যা দৌড়াইতে দৌড়াইতে আসছি। বাড়ির উঠানে পাও দিতেই মনে হইল মন্তাজ বাঁইচ্যা আছে।
‘কীজন্যে মনে হল?’
‘জানি না ভাইজান। মনে হইল।’
‘এইরকম কি তোমার আগেও হয়েছে? মানে কোনও ঘটনা আগে থেকেই কি তুমি বলতে পার?’
‘জ্বি না।’
‘মন্তাজ তোমাকে কিছু বলেনি? জ্ঞান ফিরলে সে কী দেখল বা তার কী মনে হল?’
‘জ্বি না।’
‘জিজ্ঞেস করনি?’
‘করছি। হারামজাদা কথা কয় না।’
রহিমা আরও খানিকক্ষণ বসে পানটান খেয়ে চলে গেল।
আমার টানা লেখালেখিতে ছেদ পড়ল। কিছুতেই আর লিখতে পারি না। সবসময় মনে হয় বাচ্চা একটি ছেলে কবরের বিকট অন্ধকারে জেগে উঠে কী ভাবল? কী সে দেখল? তখন তার মনের অনুভূতি কেমন ছিল? মন্তাজ মিয়াকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে, আমার মনে হয় জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে না। সবসময় মনে হয় বাচ্চা একটি ছেলেকে ভয়স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়াটা অন্যায় কাজ। এই ছেলে নিশ্চয়ই প্রাণপণে এটা ভুলতে চেষ্টা করছে। ভুলতে চেষ্টা করছে বলেই কাউকে কিছু বলতে চায়
না। তবু একদিন কৌতূহলের হাতে পরাজিত হলাম। দুপুরবেলা।
গল্পের বই নিয়ে বসেছি। পাড়াগাঁর ঝিম-ধরা দুপুর। একটু যেন ঘুম-ঘুম আসছে। জানালার বাইরে খুট করে শব্দ হল। তাকিয়ে দেখি মন্তাজ। আমি বললাম- কী খবররে মন্তাজ?
‘ভালো।’
‘বোন আছে না চলে গেছে?’
‘গেছেগা।’
‘আয় ভেতরে আয়।’
মন্তাজ ভেতরে চলে এল। আমার সঙ্গে তার ব্যবহার এখন বেশ স্বাভাবিক। প্রায়ই খানিকটা গল্পগুজব হয়। মনে হয় আমাকে সে খানিকটা পছন্দও করে। এইসব ছেলে ভালোবাসার খুব কাঙাল হয়। অল্পকিছু মিষ্টি কথা, সামান্য একটু আদর এতেই তারা অভভূত হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে বলে আমার ধারণা।
মন্তাজ এসে খাটের এক প্রান্তে বসল। আড়ে আড়ে তোমাকে দেখতে লাগল। আমি বললাম, তোর সঙ্গে কয়েকটা কথা
বলি, কেমন?
‘আইচ্ছা।’
‘ঠিকমতো জবাব দিবি তো?’
‘হুঁ।’
‘আচ্ছা মন্তাজ, কবরে তুই জেগে উঠেছিলি, মনে আছে?’
‘আছে।’
‘যখন জেগে উঠলি তখন ভয় পেয়েছিলি?’
‘না।’
‘না কেন?’
মন্তাজ চুপ করে রইল। আমার দিক থেকে অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নিল। আমি বললাম, কী দেখলি- চারদিক অন্ধকার?
‘হ।’
‘কেমন অন্ধকার?’
মন্তাজ এবারও জবাব দিল না। মনে হচ্ছে সে বিরক্ত হচ্ছে।
আমি বলালম, কবর তো খুব অন্ধকার তবু ভয় লাগল না?
মন্তাজ নিচুস্বরে বলল, আরেকজন আমার সাথে আছিল সেইজন্য ভয় লাগে নাই।
আমি চমকে উঠে বললাম, আরেকজন ছিল মানে? আরেকজন কে ছিল?
‘চিনি না। আন্ধাইরে কিচ্ছু দেখা যায় না।’
‘ছেলে না মেয়ে?’
‘জানি না।’
‘সে কী করল?
‘আমারে আদর করল। আর কইল, কোনও ভয় নাই।’
‘কীভাবে আদর করল?’
‘মনে নাই।’
‘কী কী কথা সে বলল?’
‘মজার মজার কথা-খালি হাসি আসে।’
বলতে বলতে মন্তাজ মিয়া ফিক করে হেসে ফেলল।
আমি বললাম, কীরকম মজার কথা? দুএকটা বল তো শুনি?
‘মনে নাই।’
‘কিছুই মনে নাই? সে কে এটা কি বলেছে?’
‘জ্বি না।’
‘ভালো করে ভেবেটেবে বল তো-কোনোকিছু কি মনে পড়ে?’
‘উনার গায়ে শ্যাওলার মতো গন্ধ ছিল।’
‘আর কিছু?’
মন্তাজ মিয়া চুপ করে রইল।
আমি বললাম, ভালো করে ভেবেটেবে বল তো! কিছুই মনে নেই?
মন্তাজ মিয়া অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, একটা কথা মনে আসছে।
‘সেটা কী?’
‘বলতাম না। কথাডা গোপন।’
‘বলবি না কেন?’
মন্তাজ জবাব দিল না।
আমি আবার বললাম, বল মন্তাজ, আমার খুব শুনতে ইচ্ছা করছে।
মন্তাজ উঠে চলে গেল।
এই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।বাকি যে-ক’দিন গ্রামে ছিলাম, সে কোনোদিন আমার কাছে আসেনি। লোক পাঠিয়ে খবর দিয়েছি তবু আসেনি। কয়েকবার নিজেই গেলাম। দূর থেকে দেখতে পেয়ে সে পালিয়ে গেল। আমি আর চেষ্টা করলাম না।
কিছু রহস্য সে তার নিজের কাছে রাখতে চায়। রাখুক। এটা তার অধিকার। এই অধিকার অনেক কষ্টে সে অর্জন করেছে। শ্যাওলাগন্ধী সেই ছায়াসঙ্গীর কথা আমরা যদি কিছু নাও জানি তাতেও কিছু যাবে আসবে না।

(( লেখাটি প্রকাশের বিশেষ কারণ , আমাদের সবার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যার ক্যানসারে আক্রান্ত । তিঁনি এখন নিউইয়র্ক সিটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন । আশার কথা হচ্ছে , তাঁর ক্যানসার ততটা গুরুতর পর্যায়ে যায়নি । আসুন আমরা সবাই সৃস্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যাতে তিঁনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন এবং আমাদের মাঝে পূনরায় ফিরে আসতে পারেন ))

।। একটি অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, September 18, 2011 at 10:33pm
আমি যেই ঘটনা টার কথা বলতে যাচ্ছি সেটা ঘটেছে প্রায় ৮-৯ মাস আগে। ঘটনাটা যার সাথে ঘটেছে তিনি আমাদের পাড়াতেই থাকেন। আগে তার সম্পর্কে কিছু বলে নেই। ছেলেটির নাম নজরুল। আমরা তাকে কবি ভাই বলেও ডাকি। খুব হাসি খুশি আর মজার মানুষ নজরুল ভাই। আড্ডা দিতে অনেক পছন্দ করেন। আড্ডা জমলে তাকে ১-২ বেলা খাবার না দিলেও চলবে। নাজ্রুল ভাইয়ের সব চেয়ে প্রিয় বন্ধুর নাম পলাশ। স্কুল লাইফ থেকে উনাদের ফ্রেন্ডশিপ। বলা যায় ১ আত্মা ২ শরীর। পলাশ ভাইও নজরুল ভাইকে ছাড়া কিছু বুঝেন না। মাঝে মাঝে আমাদের বিরক্ত লাগত। সারাদিন সুপার গ্লু এর মত একজন আরেকজনের সাথে লেগে আছে। আমরা মাঝে মাঝে ফাজলামি করে বলতাম, আপনারা মনে হয় জামাই বউ। একজনের জন্ম আরেকজনের জন্য। যাক, এইবার মূল ঘটনায় আসি। আকবর পলাশ ভাই গিয়েছিলেন ময়মনসিংহে উনার এক আত্মীয়ের বাসায়। বলা বাহুল্য, নাজ্রুল ভাইও গেলেন তার সাথে। অজ পারা গাঁ। খাবার পানির খুবই সমস্যা। বাজারও বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কি মি দূরে। যেদিন গেলেন তার দুদিন পর থেকেই পানির কারনে তাদের পেতে সমস্যা দেখা দিল। তখন তারা ঠিক করলেন বাজার থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে আনবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ২ বন্ধু মিলে রওনা দিলেন বাজারের দিকে। ভাবলেন কথা বলতে বলতে চলে যাবেন। কিন্তু রৌদ্রের মধ্যে ৩ কি মি রাস্তা হেঁটে যাওয়া আসলেই কষ্টের। ২ জনে গরমে ঘেমে অবস্থা করুন। যাক শেষ পর্যন্ত বাজারে পৌঁছলেন। কিন্তু এই এলাকার মানুষ মনে হয় মিনারেল ওয়াটার থেকে পান, বিড়ি, সিগারেট বেশি খায়। যাক অনেক হেঁটে একটা দোকান থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল পাওয়া গেলো। ২ লিটারের মাত্র ২ টা বোতল ছিল দোকানির কাছে। যাক একটু বেশি দাম দিয়ে ২ টা বোতলই কিনে ফেললেন পলাশ ভাই। একটা তো সাথে সাথে খুলে খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। ঠিক তখন এক মহিলা, বয়স আনুমানিক ৭০-৭৫ বছর হবেন, কোথা থেকে এসে যেনও হাজির হলেন। তিনি নজরুল ভাইয়ের কাছে একটু পানি চাইলেন। একে তো ভর দুপুর তার উপর এতো গরম, নজরুল ভাই একটু বিরক্ত হলেন। মনে মনে ভাবলেন, এতো পানির তৃষ্ণায় নিজেদের জান যায় যায় আবার নিজের কেনা পয়সার পানি ফাউ দিবেন নাকি? মাথা খারাপ? পলাশ ভাই তো বলেই ফেললেন যে, খালাম্মা কোত্থেকে উদয় হলেন? এতখন তো দেখছিলাম না। মাটি ফুরে বের হলেন নাকি? টেকা পয়সা চাইলে কিন্তু দিতে পারুম না। মহিলাটা বলল, না না বাবা। একটু পানি দাও। আর কিছু লাগব না। নজরুল ভাই বললেন, আমরা আগে খেয়ে নেই এরপর বোতল সহ দিয়ে দিবো। মহিলাতা দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাদের পানি খাওয়া দেখতে লাগলো। অবশেষে নজরুল ভাই খেয়ে বাকি পানিটা মহিলাকে বাড়িয়ে দিলেন। পানির বোতলটা নিয়ে মহিলাটা কোথায় যেনও চলে গেলেন। এরপর নজরুল ভাই আর পলাশ ভাই একটা রিকশা ঠিক করে বাড়িতে চলে এলেন। সেখান থেকে ফিরে ১ মাসের মাথায় পলাশ ভাই একটি সি এন জি দুর্ঘটনায় মারা যান। নজরুল ভাইয়ের কান্না সেদিন কেউ থামাতে পারলো না। আমরাও অনেক কষ্ট পেলাম। কয়েকদিন পর আমরা কষ্টটা ভুলে গেলাম। কিন্তু নজরুল ভাই এর পর থেকে প্রায়ই তার কবরের পাশে গিয়ে কাদতেন। ২-৩ সপ্তাহ পর থেকে নজরুল ভাই যেনও কেমন হয়ে গেলেন। তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেলো। ঘটনা কি জিজ্ঞেস করলে তিনি এড়িয়ে যেতেন। আগে যেই লোকটা রাত ১০ টার আগে ঘরে ধুঁকতেন না তিনি এখন সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হন না। অনেক চাপাচাপির পর নজরুল ভাইয়ের চাচাতো ভাই এর কাছ থেকে জানতে পারলাম, নজরুল ভাই আজকাল প্রায়ই পলাশ ভাইকে দেখতে পান। পলাশ ভাই তাকে ডাকেন। সন্ধ্যার পর একদিন নাকি তিনি সরাসরি নজরুল ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর ২-৩ দিন নজরুল ভাইয়ের অনেক জোর ছিল। এই ঘটনা শোনার পর সবাই মিলে পানি পড়া এনে খাওয়ালাম নজরুল ভাইকে। এরপর প্রায় সব ঠিক। মাস দুই পর নজরুল ভাই সুস্থ হতে লাগলেন। কিন্তু পলাশ ভাইকে খুব মিস করতেন। মাস দুয়েক পর তার খালার অসুস্থতার খবর পেয়ে নজরুল ভাইয়ের মা বাবা গেলেন তাকে দেখতে। বাড়ি খালি হয়ে যাবে ভেবে নজরুল ভাই রয়ে গেলেন। রাতে যথারীতি খাওয়া দাওয়ার পর একটু টিভি দেখে নজরুল ভাই শুয়ে পড়লেন। মাঝ রাতে তার ঘুমটা হটাত ভেঙ্গে যায়। উনার নিজের কাছে শরীরটা একটু ভারি ভারি মনে হল। তন্দ্রার ঘোরে তিনি দেখলেন পলাশ ভাই আসছে। পলাশ ভাই তাকে বললেন, চল, তোকে আমি নিতে এসেছি। আমি আর একা থাকতে পারছি না। আমি আগেও চেষ্টা করছিলাম, তুই আসিস নাই। আজকে তোকে নিয়েই যাবো। নজরুল ভাই বললেন, আমি যাবো না। এরপর অনেক্ষন টানাটানি চলল। প্রথমে পলাশ ভাই তাকে খাট থেকে টেনে নামালেন, এরপর দরজার দিকে টেনে নিয়ে চললেন। নজরুল ভাই শত চেষ্টা করেও আটকাতে পারলেন না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। শেষ মুহূর্তে নজরুল ভাই যখন বাঁচার আশা ছেড়ে দিলেন তখন কোথা থেকে যেনও সেই মহিলা এসে হাজির হল। মহিলাটা পলাশ ভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে দিলেন। সাথে সাথে নজরুল ভাইয়ের শরীরটা হাল্কা হয়ে গেলো। নজরুল ভাই তখন মহিলাটাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যখন আমাকে বাঁচালে তখন আর আগে বাঁচালে না কেন? এতো কষ্ট তো পেতাম না। তখন মহিলাটা বলল, বাবা তুমিও তো আমাকে পানির কষ্ট দিয়েছিলে। তখন আমি তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছিলাম। কিন্তু সাথে সাথে তো দাও নি। মহিলাটি এই বলে গায়েব হয়ে গেলো। নজরুল ভাইয়ের সাথে সাথে ঘর কেটে গেলো। তিনি নিজেকে ঘরের সামনে আবিষ্কার করলেন। তখন আজান হচ্ছিল। তিনি দেখলেন, তার সাড়া গায়ে নঝের আঁচড়। এরপর তাবিজ এনে দেয়া হল, এবং সাড়া ঘোরে পানি ছিটিয়ে দেয়া হল। মিলাদ পড়ানো হল। অনেকদিন নানাবিধ অসুখে ভোগার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। পাঠিয়েছেনঃ Pinak Dey ফেসবুক আইডিঃ Pinak Dey বাংলায় রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন)

ভৌতিক গল্প : রক্ত চাই!!!

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Sunday, September 18, 2011 at 10:30pm
রাত দুইটা বাজে। এবার উঠতে হবে। টাইড খেলা অনেক হয়েছে। আর ভাল লাগছে না। যদিও তাসের এই পর্ব সারারাতই চলবে। মামুন বিদায় নিল। বন্ধুরা নাছড় বান্দা। কেউ ছাড়তে চাই না। চাদঁ রাত বলে কথা। সারারাত ক্লাবে হই হুল্লর। আজ আবার একটা ছাগল চুরি করা হয়েছে। রান্না ভাল হয়নি। কেমন একটা বমি বমি লাগছে। মামুন ঢাকায় থাকে। ঈদের সময় শুধু বাড়ি আসা। চাদঁ রাতে পাড়ার এই ক্লাবটির চেহেরায় বদলে যায়। প্রায় সব বন্ধু ই জড়ো হয়। এবার শুধু নয়ন নেই। ডিভি পেয়ে আমেরিকা চলে গেছে। নয়নের উদ্দেশ্যে শোকগাথাঁ লেখা হয়েছে। কাশেম লিখেছে। কবি হিসাবে এই মফস্সল শহরে তার আবার খানিক নাম ডাক আছে। ভোর চারটায় আরেকবার গলা ভেজানোর ব্যবস্থা আছে। মামুন শত প্রলোভন উপেক্ষা করে বেড়িয়ে পড়ল। শরিরটা আসলেই খারাপ করেছে। মাথার ভিতর একটা ভোতাঁ যন্ত্রনা। ক্লাব থেকে বেরিয়ে বাড়ির সর্টকার্ট পথ ধরল। ধানক্ষেতের আল দিয়ে। রাত ভালই হয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মোবাইলে চার্জ নেই। অনভস্ত্যতায় পথ চলতে একটু কষ্টই হচ্ছে। হঠ্যাৎ করে বমি চলে এসেছে। আর আটকাতে পারল না। ধান ক্ষেতের পাশেই বসে পড়ল। মনে হচ্ছে আর দাড়াতে পারবে না। আশেপাশে কাউকে খোজাঁর চেষ্টা করল। কেউ কি আছে। অন্ধকারে ভাল করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এখনো অনেক পথ। একটু পানি পেলে ভাল লাগত। কুলি করা দরকার। ঠিক এসময় সজল দা এসে উপস্থিত
: কিরে, মামুন না। কি হয়েছে তোর।
: সজল দা। খুব খারাপ লাগছে
: দাড়া। আমাকে ধরে দাড়া।
: মনে হয় পারব না। একটু পানি খাওয়াতে পারবে।
: পানি নেই। ধর স্প্রাইট খা।
: দেও।
মামুন স্প্রাইট দিয়েই কুলকুচি করল। আরেকবার বমি হয়ে গেল।
: সজল দা, আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবা।
: শোন আমার বাসাতো কাছেই। তুই চল। আগে কিছুক্ষন রেস্ট নিবি।
মামুন বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিল। সজল দা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের অংকের মাষ্টার। মামুনদের দু-ব্যাচ সিনিয়ার। অসম্ভব ভাল। কিছু মানুষ থাকে উপকার করার জন্য জন্মায় সেই টাইপের। মামুন সজলের হাত ধরে উঠে দাড়াল। দু-জনেই নিরবে এগিয়ে চলছে। গুনগুন করে সজল দা কি যেন একটা গাইছে। মামুনের তখন শোনার মত অবস্থা নেই। হঠ্যাৎ সজল দা মামুনের হাত শক্ত করে ধরল।
: কি হয়েছে?
: সামনে দেখ।
সামনে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাফনের কাপড় পড়ে পাচঁটা লাশ পড়ে আছে ধান ক্ষেতের উপর। হালকা নড়ছেও। ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল কেন জানি।
: চল
: কি ওগুলো
: চল না। যেয়ে দেখি।
: যাবা
: দুর গাধা। তুইতো ভয়েই আধমরা হয়ে গেলি।
: আমিতো এমনিতেই আধঁমরা। কিছু দেখলে কিন্তু ফুল মরা হয়ে যাব।
: বকবক করিস না। চল
কিছু দুর যেয়েই ঘটনা পরিস্কার হল। ধান ক্ষেতের উপর কে যেন কাপড় শোকাতে দিয়েছে। সাদা কাপড়। সেগুলোই দূর থেকে লাশের মত লাগছে। দু-দজনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। সজল দা'র গানটা এবার বোঝা যাচ্ছে। নজরুল সংগীত।
শাওনো রাতে যদি..................
........................................................................................................................................................................
........................................................................................................................................................................
মামুন শুয়ে আছে সজল দা'র বাড়িতে। বাসা পর্যন্ত যেতে পারে নি। সজল দা'র বাড়ির সামনে আরেকবার বমি। কিছুতেই সজল দা ছাড়ল না। একটা এভোমিন পাওয়া গেছে। বৌদিও খুব ভাল। সাক্ষাত প্রতিমা'র মত চেহারা। মামুনের বিছানা গুছিয়ে দিল। বেশি কথা না বাড়িয়ে মামুন চুপচাপ শুয়ে পড়ল। ছোট্ট একটা বাড়ী সজল দা দের। তিন রুমের। উপরে টিন। সজল দা বৌদি' পাশের রুমে। বাসায় বোধহয় আর কেউ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। সজল দা'র একটা ছোট বোন ছিল। রাজশ্রী। মামুনের সাথে একটা অনৈতিক সম্পর্কও কিভাবে যেন গড়ে উঠেছিল যৌবনের প্রথম বছরে। বেশি দূর আর এগোয়নি। মামুন ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে চলে এল। পরের বার গিয়ে শোনে বিয়ে হয়ে গেছে। সে অনেক দিন হল। শুনেছি এখন তিন ছেলে মেয়ের মা।মামুন রাজশ্রীর চেহারাটা মনে করা চেষ্টা করছে। কিছুতেই মনে পড়ছে না। আর দু-চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না। কখন ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই। হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। অদ্ভুত একটা শব্দে। মনে হচ্ছে এ ঘরে কোন মহিলা নামাজ পড়ছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে নামাজ পড়ার সময় যেমন আওয়াজ হয় সেরকম আওয়াজ। মামুন চোখ বন্ধ করে ফেলল। মনে মনে বলার চেষ্টা করল সে ভুল শুনেছে। গাছের শব্দ হতে পারে। কিছুক্ষন পর আর আওয়াজ পাওয়া গেল না। চোখ খুলে আরেক বিষ্ময়। সজল দা দের ঘরে টাঙিয়ে রাখা কৃষ্ঞ এর ছবিটা যেন মামুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। অদ্ভুত ভঙ্গিতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মামুন চোখ বন্ধ করে ব্যাখ্যা দ্বার করাবার চেষ্টা করল। দূরের কোন আলো জানলা দিয়ে ছবির উপর পড়ে এমন হতে পারে। মামুন চোখ খোলার আগেই মনে হল পুরো খাট ধরে কেউ যেন ঝাকি দিচ্ছে।কলেমা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল প্রান পনে। এতে ভয় দূর হয়। কিছুতেই মনে পড়ছে না। এ সময় গগন বিদারি একটা চিৎকার ভেসে এল। কোন পিচাশের পক্ষেই এরকম আ্ওয়াজ করা সম্ভব। মামুন লাফ মেরে উঠল। সজল দা সজল দা বলে প্রান পনে চিল্লাতে লাগল। কোন সাড়া শব্দ নেই। দরজা খুলে বাইরে যাবার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলতেই যে দৃশ্য দেখল তাতে আত্বারাম খাচাঁ হবার যোগাড়। বৌদি দাড়িয়ে আছে। সিনেমায় দেখা রক্তচোষা ড্রাকুলাদের মত লাগছে।দাতে রক্ত লেগে আছে। সারা শরিরে রক্ত। কুৎসিত শব্দ করছে। কাচাঁ মাঙসের গন্ধ এসে নাকে লাগল। মামুনের দিকে এগিয়ে আসছে। নখ গুলো বেশ বড় বড়। মামুন ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল। কিন্তু একেবারে নিখুত কাজ। সোজা মামুনের গলায় দাতঁ বসে গেছে। অজগরের খড়গোশ ধরার মত মামুনকে জাপটে ধরে রক্ত চুষতে লাগল। প্রথমবারের মত মায়ের মুখটা মনে পড়ছে।
..........................................................................................................................................................................
..........................................................................................................................................................................
মামুনের লাশ পাওয়া গেল পরদিন সকালে ঝিলের ধারে। সজল বড়ুয়াই প্রথম দেখে। পরে সবা্ইকে খবর দেয়। পুলিশি তদন্ত চলছে। কি হয়েছিল ঠিক কেউ বলতে পারে না। তবে মামুনের গলায় দুটো ফুটো ছিল এটা নিশ্চিত।..........

লেখক : কবিরনি

ভৌতিক গল্প : বুড়ো ফ্র্যাঙ্ক ও আমি

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Thursday, September 22, 2011 at 9:46pm
স্কলারশিপটা খুব তাড়াহুড়া করেই হয়ে গিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না বিলেত যাব কি যাব না। পরিবারের সবাই বলল এমন সুযোগ হাতছাড়া করাটা ঠিক হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম স্কলারশিপটা এক্সেপ্ট করে ফেলার। প্রায় ষোল ঘন্টা জার্নি করে যখন হিথ্রো এয়ারপোর্টে এসে পৌছলাম তখন ভোর প্রায় পাঁচটা। এয়ারপোর্টে আমাকে রিসিভ করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে যাকে পাঠানো হয়েছিল সে আমার পি,এইচ,ডি প্রফেসার ফ্র্যাঙ্ক গ্রীণ এর অধীঃনস্থ আরেক পি,এইচ,ডি স্টুডেন্ট। নাম ম্যাথিউ জেরী। বয়স ত্রিশ কি বত্রিশ হবে। সুদর্শন যুবক। গাড়িতে জানতে পারলাম পার্টটাইমে পি,এইচ,ডি করবার সাথে সাথে সে ইউনিভার্সিটির স্টাফ হিসেবেও কাজ করছে আর তাই আমাকে রিসিভ করার দায়িত্বটি সে সেচ্ছায় গ্রহণ করে। আমার পি,এই্চ,ডি’র বিষয় হল চাইল্ড সাইকোলজি আর ম্যাথিউ পি,এইচ,ডি করছে ডিপেনডেন্ট এল্ডার’স সাইকোলজি নিয়ে। আমাদের দু’জনের বিষয়ে খানিকটা মিলও আছে বলা যেতে পারে। কারন বৃদ্ধ বয়সে মানুষের মন অনেক সময় শিশু সুলভ আচরণ করে আর তাছাড়া তাঁর বিষয়টি সেইসব বৃদ্ধদের সাথে জড়িত যারা শেষ বয়সে তাদের সন্তান সন্ততির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যেমনটি তাঁরা শিশুকালে নির্ভরশীল ছিলেন তাদের বাবা মা’র উপর। আর এই মিলের কারনেই হয়ত ম্যাথিঊ আমাকে রিসিভ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিল। গাড়ি করে হোস্টেলে পৌছতে প্রায় দু’ঘন্টা লেগে গেল। আমাকে আমার রুমের চাবি দিয়ে ম্যাথিউ চলে গেল, যাবার আগে বলে গেল প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক আজ বিকেলে আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে আসবেন। আমি যেন বিকেলের আগেই ঘুম থেকে উঠে পরি। রুমে ঢুকে আমি সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙল দুপুর তিনটার দিকে। এটা কি এখানকার বিকেল কিনা বুঝতে পারলাম না। আরেকটু ঘুমাতে ইচ্ছা হচ্ছিল কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক আবার চলে আসেন কিনা তাই ভেবে আর ঘুমালাম না। আমি স্যুটকেস খুলে কাপড় গুছাতে শুরু করলাম এমন সময় দরজায় কে যেন ধাক্কা দিল। দরজা খুলে দেখলাম এক বৃদ্ধ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ইনি ফ্র্যাঙ্ক হবার কথা না। কারন ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে আমার যেসব ইমেইল আদান প্রদান হয়েছিল তাতে করে আমার অনুমান ফ্র্যাঙ্ক এর বয়স পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন হবে। আর এই বৃদ্ধের বয়স কম করে হলেও পঁচাত্তর। বৃদ্ধ হাসিমুখে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে অদ্ভুত ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন, হ্যালো জোবেইর ( জোবায়ের)। আই এম ফ্র্যাঙ্ক! হাউ আর ইউ ডুইং?
আমি তখন বুঝতে পারলাম ইনিই আমার প্রফেসার। জবাবে হাসিমুখে আমিও তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। মনে মনে বললাম, তুই এই সময় এলি কেন বুড়ো? আমি ত ভেবেছিলাম আরেকটু পড় আসবি। বুড়ো যেন আমার মনের কথা বুঝতে পারল। সে বলল, এম আই টু আরলি জোবেইর?
আমি বললাম, নো নো ইটস অলরাইট।
আমার অবশ্য তখন ইচ্ছা হচ্ছিল আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে, কিন্তু এটা ত আর প্রফেসর কে বুঝতে দেয়া যাবেনা। কারন এর হাতেই এখন আমার সব কিছু। বুড়ো চাইলে আমি পি,এইচ,ডি ডিগ্রী পেতেও পারি আবার না চাইলে আমাকে এম,ফিল ডিগ্রী দিয়েও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
এরপর ফ্র্যাঙ্ক আমাকে অনুরোধের সুরে জিজ্ঞেস করে, খুব বেশী ক্লান্তবোধ না করলে তাঁর সাথে এখন বাহিরে গিয়ে এক কাপ কফি খেতে আমি আগ্রহী কিনা? যদিও আমার সেই মুহুর্তে বাহিরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছিল না কিন্তু আমি তাঁকে মুখের উপর নাও করতে পারলাম না। রুম থেকে বেরিয়ে আমরা দুজন নিচের কফি শপে গেলাম। সময়টা বিকেলের দিকে হওয়ায় কফি শপে বসবার জায়গা পেলাম না। কাগজের মগে কফি নিয়ে আমরা দুজন বাহিরে কোথাও বসার জায়গা খুঁজতে লাগলাম। সেদিন রবিবার হওয়ার কারনে বাহিরের বেঞ্চগুলাতেও ছিল ছাত্রছাত্রীদের ভীর। দু’টা সাইনবোর্ডে দেখতে পেলাম লেখা ‘সামনে চার্চ’ আর ‘সামনে পার্ক’। ফ্র্যাঙ্ক আমাকে পার্কে যাবার প্রস্তাব দিল। আমি ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে কফিতে চুমুক দিয়ে পার্কের দিকে এগোতে থাকলাম। তখন সন্ধ্যা প্রায় হবে হবে করছিল। কফির সাথে আমার হঠাত সিগারেট ধরাবার ইচ্ছা হল, তাই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। আমার সিগারেট এর প্যাকেট বের করা দেখে ফ্র্যাঙ্ক কে কিছুটা বিরক্ত মনে হল, তাই প্যাকেট আবার পকেটে ভরে ফেললাম। তা দেখে ফ্র্যাঙ্ক ভদ্রতার খাতিরে বলল, তুমি চাইলে সিগারেট ধরাতে পার, তবে আমার সিগারেটের ধোঁয়ায় সমস্যা হয় বলে আমাকে একটু ক্ষমা করতে হবে। তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য পার্কে গিয়ে অপেক্ষা করতে পারি, তুমি আস্তে ধীরে সিগারেট খেতে খেতে পার্কে আসতে পার। আমি এর জবাবে বিনয়ের সুরে বললাম, তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি এমনিতেই খুব বেশী সিগারেট খাইনা। তাই এখন না খেলেও কোন অসুবিধা নেই।
আমি আসলে তখন মিথ্যা বলেছিলাম কারন আমার দিনে প্রায় একটা প্যাকেট শেষ করতে হত। ফ্র্যাঙ্ক যেন আমার মিথ্যা ধরে ফেলে নিজ মনেই মিটি মিটি হাসছিল। তারপর অল্প কিছুদূর এগোনোর পর আমরা পার্কের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। ফ্র্যাঙ্ক এর আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল সে এখন আমাকে আমার রিসার্চ এর টপিক উপর ছোটখাট একটা লেকচার দেওয়ার চেষ্টা করবে।
-আমি কি তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি জোবেইর?
-অবশ্যই ফ্র্যাঙ্ক।
-তুমি এত দূর থেকে এখানে কেন পি,এইচ,ডি করতে এসেছ?
এ প্রশ্নে আমি কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক কে তা বুঝতে না দিয়ে বললাম,
-আমি চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে খুব বেশী আগ্রহী বলেই এখানে এসেছি। সেটা আপনাকে আগেই বলেছি ইমেইলে। তাছাড়া উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য সবচেয়ে কাছের দেশ বলতে আমরা বিলেতকেই জানি। আমেরিকা ত আরো অনেক দূরে।
-আই সি। তোমার পুরা নাম তো জোবেইর বিন ইসলাম তাইনা?
-হ্যাঁ।
-তুমি কি ইসলাম ধর্মে পুরোপুরি বিশ্বাস কর?
-হঠাত এ কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
-কেন জিজ্ঞেস করছি তা কাল জানতে পারবে। আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।
ফ্র্যাঙ্ক এর এরুপ আচরণ আমার কাছে কিছুটা রুক্ষ্ম মনে হয়েছিল। তবে তাঁর সাথে আমি কোন বাক বিতর্কে যেতে চাচ্ছিলাম না বলে জবাব দিলাম,
-হ্যাঁ পুরোপুরি বিশ্বাস করি।
ফ্র্যাঙ্ক তখন সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, তাহলে ত তোমার শয়তানকেও বিশ্বাস করা উচিত তাই না জোবেইর?
এর জবাবে আমি কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একবার মনে হচ্ছিল ফ্র্যাঙ্ক আমাকে কথার জালে ফাঁসিয়ে যাচাই করে দেখতে চাচ্ছে আমি কতটা আধুনিক আর তাঁর অধীনে পি,এইচ,ডি করার উপযুক্ত কিনা। তাই আমি বললাম, আমি আসলে এইসব ব্যাপার নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। তবে আমি ভূত টুতে বিশ্বাস করি না। ফ্র্যাঙ্ক তখন কিছুটা রেগে গিয়ে বলল, আমি কিন্তু ভূতের কথা বলিনি জোবেইর। আমি শয়তানের কথা বলেছি। শয়তান আর ভূত এক জিনিস নয়।
আমি তখন প্রসংগ পাল্টাবার জন্য হাসিমুখে বললাম, দেখুন একটু পরেই সন্ধ্যা হবে, আমি আসলে এই মুহুর্তে এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি না। আমি একটু ভীতু টাইপের। একথা বলে নিজেই হাসতে শুরু করলাম। ফ্র্যাঙ্ক আমার হাসি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে জিজ্ঞেস করল,
-তুমি কি জানো তোমার এই স্কলারশিপটা তুমি এত তাড়াহুড়ো করে কেন পেয়েছ? এখনত ফেব্রুয়ারী মাস। এ মাসে ত সেশান শুরু হয় না। সেশান শুরু হয় সেপ্টম্বর মাসে।
-সেশান কোন মাসে শুরু হয় তা আমার জানা নেই। কিন্তু আপনারাই ত আমাকে এখন আসতে বলেছেন।
- তোমাকে আসতে বলা হয়েছে কারন তুমি যেই বিষয় নিয়ে গবেষনা করতে যাচ্ছ তা নিয়ে আগে গবেষনা করেছিল ভারতীয় এক ছাত্র। সে হিন্দু ছিল বলে শয়তানে বিশ্বাস করত না। তাই সে তাঁর গবেষনা সম্পূর্ন করতে পারেনি।
ফ্র্যাঙ্ক এর এমন অদ্ভুত কথায় তখন আমার কিছুটা মেজাজ খারাপ হল। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই ফ্র্যাঙ্ককে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হাস্যকর কথা বলছেন আপনি। শয়তান এর সাথে আমার রিসার্চের সম্পর্ক কি?
-তাও কাল জানতে পারবে। তবে এখন শুধু জেনে রাখ ‘ভাসকার’ কখনোই আমাকে বিশ্বাস করেনি। কারন সে ছিল ভারতের গোল্ড মেডেলধারী একজন স্কলার। আমি অনেকভাবেই তাঁর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে আমার অস্তিত্ব অগ্রাহ্য করেছিল। আর তাই পরে তাকে আমি পাগল বানিয়ে দিয়েছি। সে এখন আছে আগ্রার পাগলা গারদে।
আমার কেন জানি তখন খুব ভয় করতে শুরু করল আর মনে হতে লাগল ফ্র্যাঙ্ক যা বলছে তা সব সত্যি। আর যদি সত্যি হয় তাহলে এটা আমার সেই প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক না। এটা অন্য কেউ। একথা মনে করার পর আমি আর ভয়ে কোন কথা বলতে পারলাম না। ফ্র্যাঙ্ক আপন মনে বলে গেল,
-দেখ জোবেইর তুমি নিজেই জান এ ধরনের স্কলারশিপ পাওয়া তোমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তুমি বাংলাদেশের সাধারন একজন স্কলার। তোমার মাস্টার্সের রেজাল্ট তেমন ভাল ছিলনা। শুধুমাত্র অনার্সে তুমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলে। তাই ফ্র্যাঙ্ক তোমাকে ভাসকার এর পুরা ঘটনাটা গোপন করে ইমেইল করেছিল স্কলারশিপের অফার দিয়ে, যেন তুমি সহজেই তা গ্রহন কর। এতে ভাসকার এর করা অসমাপ্ত রিসার্চ সম্পূর্ণ হবে আর ফ্র্যাঙ্ক এর অধীনেও আরেকজন স্কলারের নাম যুক্ত হবে। ফ্র্যাঙ্ক ভাসকার এর কথাটা গোপন করেছিল কারন কোন ভাল স্কলার অন্যের করা রিসার্চ থেকে পি,এইচ,ডি’র রিসার্চ কখনোই শুরু করতে চাইবে না। তাই সে তোমাকে বেছে নিয়েছিল। আর এখন যদি তুমি আমার কথা না শুন তাহলে কিন্তু তোমার অবস্থা ভাসকার এর চেয়েও করুন হবে কারন তুমি আমাকে বিশ্বাস কর। আর বিশ্বাস কর বলেই তোমার স্নায়বিক চাপের উপর তোমার কোন নিয়ন্ত্রন থাকবে না। হয়ত এদেশের শীতল মাটিতেই তোমাকে সারাজীবন ঘুমিয়ে থাকতে হবে।
ফ্র্যাঙ্ক এর কথা শেষ হবার সাথে সাথেই হঠাত চার্চের ঘন্টা বাজতে শুরু করল। সন্ধ্যা তখন পুরোপুরি হয়ে এসেছে। আশে পাশে আবছা অন্ধকার। ফ্র্যাঙ্ক এবার আমাকে কিছুটা ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করল, চুপ করে আছ কেন? বল তুমি কি আমার অস্তিত্বের প্রমাণ চাও?
আমি কিছুটা সাহস নিয়েই বললাম, হ্যাঁ চাই।
আমার জবাব শুনে ফ্র্যাঙ্ক রাগে ফোস্ ফোস্ করতে শুরু করল। এক পর্যায়ে প্রচন্ড রেগে গিয়ে সে বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়াল আর পার্কের ঘাসে শিশুদের মত হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করল। খুবই অদ্ভুদভাবে লক্ষ্য করলাম ফ্র্যাঙ্ক এর হাত পা আর মাথা পুড়ে কাল হয়ে গেছে, শুধু পরনের পোশাকটা অক্ষুন্ন আছে। ফ্র্যাঙ্ক এর তখন মুখমন্ডল বলে কিছু ছিল না। যা ছিল তাকে শুধুমাত্র মাংসপিন্ড বলা চলে। তবে চোখের জায়গাতে বড় কাল দু’টি গর্ত হয়ে আছে। ফ্র্যাঙ্ক তখন পাঁচ-ছয় বছর বয়েসী শিশুদের মত গলায় কাঁদতে কাঁদতে বলল, এই দুষ্ট লোকটা আমাকে চুলোর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর চুলার সুইচ অন করে দিয়ে আমায় অনেক্ষন শক্ত করে ধরে রাখল। তারপর আমাকে বলল লাইটার জ্বালাতে। আমি যেই লাইটার জ্বালালাম আর অমনি আমার সারা শরীরে আগুন ধরে গেল। তারপর থেকে আমি ওইখানে একা একা শুয়ে থাকি। আমাকে আমার আম্মুর কাছে নিয়ে চলো। একথা শুনার পর আমি পাশে তাকিয়ে ভাল করে দেখার চেষ্টা করলাম। অন্ধকারের জন্য স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না, তবে বুঝতে পারলাম পার্কের পাশেই একটা কবরস্থান রয়েছে। এরপর আমি ভয়ে বুকের মাঝে প্রচন্ড চাপ অনুভব করতে শুরু করলাম। আমি তখন ভয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। সম্ভবত আমি সেখানেই জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরে পাবার পর জানতে পারলাম আমি গত রাতে পার্কের বেঞ্চের কাছে পরেছিলাম। চার্চের পাদ্রীরা সন্ধ্যায় প্রার্থনা সেরে পার্কের ভিতর দিয়ে যাবার সময় আমাকে পরে থাকতে দেখে আর ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে আসে। পরে ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম ফ্র্যাঙ্ক এর চেহারা অবিকল গতকালের সেই বুড়োর মত কিন্তু বয়স ঠিকই পঞ্চাশের ঘরে। আমি ফ্র্যাঙ্ক কে সব ঘটনা খুলে বললাম। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক আমার কোন কথাই বিশ্বাস করল না। বরং মনে করল আমি আমার পরিবার থেকে এতদূর এসে একাকিত্ববোধ করছি বলে এখন দেশে যাবার বাহানা করছি। ফ্র্যাঙ্ক কে ভাসকার এর কথা জিজ্ঞেস করায় সে ভাসকার এর পাগল হয়ে যাবার কথা স্বীকার করল এবং সে যে ভাসকার এর ঘটনা টা গোপন করেছিল তাঁর জন্য তাকে কিছুটা লজ্জিতও মনে হল। কিন্তু আমি কিভাবে ভাসকার এর কথা জানলাম সেই যুক্তি দিতে চাইলে সে সেটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা জানা কোন বড় ব্যাপার নয়। হয়ত হোস্টেলের কারো কাছ থেকে জেনেছি কিংবা ম্যাথিউই আমাকে বলেছে। এ নিয়ে ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে আমার তীব্র বাক বিতন্ড লেগে যেতে শুরু করেছিল, আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে যাব। শেষে ম্যাথিউর সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ করলাম আমাকে একটা প্লেনের টিকেট কিনে দেবার ব্যাবস্থা করে দিতে। ম্যাথিউ সানন্দে আমার অনুরোধে রাজি হল এবং নিজে ড্রাইভ করে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিল। গাড়িতে যাবার সময় শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছিল ফ্র্যাঙ্ক সেজে যে আমার কাছে এসেছিল সে বুড়োর বেশ ধরেছিল কেন? কিন্তু কোনভাবেই কোন যুক্তি খুঁজে বের করতে পারলাম না। গাড়ি থেকে নামবার সময় ম্যাথিউ আমাকে জিজ্ঞেস করল আমাকে ভিতরে এগিয়ে দিবে কিনা। আমি বললাম না থাক দরকার নেই। এই বলে তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করতে যাব এমন সময় খেয়াল করলাম ম্যাথিউ অদ্ভুত ভংগিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে তখন অবিকল সেই বুড়োর মত গলা করে বলল, তোমাকেও আমায় বিশ্বাস করবার জন্য ধন্যবাদ। লেখক : মিঃ ভূত

ভৌতিক গল্প : জ্বিন কন্যা - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, September 21, 2011 at 10:56pm
কে কে ওখানে ।
আমি ।
আমি কে ?
বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ । কোন উত্তর নেই । তারপর একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলার শব্দ । আমি আবার ও জিজ্ঞেস করলাম । আমি কে ? কথা বলছেন না কেন ?
আমি !
আমি কে ? আমি আবারও ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম ।
আমি কেউ না ।
তবে আমার ঘরে কি করছেন ? কি ভাবে এসেছেন ? দরজা খুললো কে ? এক সাথে এতোগুলো প্রশ্ন করে আমি প্রায় হাপিয়ে উঠলাম । এমনিতেই আমার হার্টের অবস্থা ভাল নয় । এখন তো মনে হচ্ছে ভয়ে হার্ট ফেল করবে । ঘুমিয়ে ছিলাম ; হঠাৎ খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । প্রথমে ভেবে ছিলাম ইদুর টিদুর হবে । কাজের মেয়েটার উপড়ে মেজাজ খারাপ হলো ,কতো দিন বলেছি রাতে শোয়ার আগে তেলাপোকা ,ইদুর এর ঔষুধ ছিটিয়ে ঘুমাতে । না তার কোন খবর নেই । মনে হয় এনে দেওয়া ঔষুধ গুলোর কথা মেয়েটা ভুলেই গেছে । কাল নিজেই ছিটিয়ে দিতে হবে । রাতে এমনিতেই আমার ঘুম হয়না ।তাও আজ লেট নাইটে শুয়েছি । ভোরে অফিস ধরতে হবে । একবার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসবে না । আমার স্ত্রী তিথি ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু’দিনের জন্য বাবার বাড়ী গেছে । পুরো বাসায় আমি একা ।
অফিস থেকে ফিরে সামান্য লেখা লেখির চেষ্টা করা আর টিভি দেখা ছাড়া করার তেমন কিছু নেই । আজ ইস্পিলবার্গের একটা ছবি দেখে শুতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি । মনে হয় আধা ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি এর মধ্যে খুট খুট শব্দ করে যন্ত্রনা শুরু হয়েছে । একবার মনে হলো ইদুর রান্না ঘরে শব্দ করছে । ঘুমের মধ্যেই হুস হুস শব্দ করে ইদুর তারাতে চেষ্টা করলাম ।
হুস , হুস করে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি আবার শুরু হচ্ছে খুট খুট শব্দ করা । খেয়াল করে দেখলাম আমি হুস হুস করলে কিছু সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে খুট খুট শব্দ । চোখ লেগে আসতেই আবার সেই খুট খুট শব্দ । কখন যে হুস হুস করতে করতে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার বা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে আলতো করে টানছে । চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরে সড়ে গেছে । আমি চোখ হালকা করে তাকালাম । পুরো ঘর অন্ধকার । বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতে ভুলে গেছি ? এখন দেখছি বাতি নিবানো । যতো দূর মনে মনে আছে -টিভি বন্ধ করে শন্করের একটা বই পড়ছিলাম । ঘরের বাতি জ্বলছিল । তা হলে বাতিটা নেভালো কে ?
পায়ের আঙুলে আবার কেউ র্স্পশ করলো । আমি ভয় পেতে শুরু করছি কেননা চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । ইদুরের চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । আমি মশারি টানিয়ে শুয়েছি । শোয়ার আগে বেশ ভাল মতো মশারী গুজে তারপর শুয়েছি । ভেতরে ইদুর থাকলে আগেই দেখতে পেতেম । হঠাৎ ভুতের কথা মনে হলো ? ভুত নয় তো ? ভুতের কথা মনে হতে ভয় বেড়ে গেলো । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । নড়তে পারছি না । মনে হলো নড়াচড়া করলে কেউ আমাকে মেরে ফেলবে । আবার ভয় পাচ্ছি দেখে নিজের উপড়ই রাগ লাগছে । কেউ শুনলে হাসবে । ছেলেটার কথা মনে হলো । ভাবলাম ও ,ও মনে হয় আমার চাইতে বেশী সাহসী ।
বা পাটা আমি একটু নাড়ালাম । এমন ভাবে নাড়ালাম যেনো ঘুমের মধ্যে নাড়াচ্ছি । সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শটা বন্ধ হয়ে গেলো । মনে হলো কেউ পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিল । এবার ভাবলাম , ইদুর হবার প্রশ্নই আসে না । আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে পরে আছি । ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । চারিদিকে শুনশান নীরবতা , একটু আগে হয়ও খুট খুট শব্দটাও এখন আর হচ্ছে না । হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে থাকা চাদরটা ধরে টানছে । আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম । নিজের ঘরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুক্ষিন হবো কল্পনাও ছিল না । ভয়ে হাত পা একেবারে জমে যাচ্ছে । শরীর থেকে চাদরটা একটু একটু করে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । যে করছে কাজটা , বুঝা যাচ্ছে সে খুব ধীরে সু্স্থেই কাজটা করছে ।
কি করবো বুঝতে পারছিনা । বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাই হচ্ছে আসল ব্যাপার । শুধু মাত্র বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখার কারনে ৭০% লোক মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ যায় । পরিসংখ্যানটা কোথায় যেন পড়েছিলাম । আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম ।
একবার ভাবলাম জোরে চিৎকার করে উঠি । তাতে চাদর টেনে যে আমাকে ভয় দেখাতে যাচ্ছে সে উল্টো ভয় পেয়ে যাবে ।
তার পরই মনে হলো চোর নয় তো ? বেশ কিছু দিন যাবত মহল্লায় চোরের আনাগোনা বেড়ে গেছে । সেদিও নাকি জ্বানালা দিয়ে বাড়ী ওয়ালির ব্যাগ থেকে মোবাইল ,টাকা নিয়ে গেছে চোর । কিন্তু আমার বিছানাটা তো জানালা থেকে বহু দূরে । জানালাও বন্ধ । তবে কি চোর আগেই ঘরের ভেতরে ডুকে ছিল ? এখন আফসোস হচ্ছে কেন শোয়ার পূর্বে চেক করে শুলাম না ।
অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার ফলে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । পায়ের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠলো । আবচ্ছা আলোয় একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে । আমি চোখ কুচকে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । মনে হলে কেউ একজন মেঝেতে হাটু ঘেরে খাঁটের উপর কুনি রেখে বসে আছে । ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো । শুয়ে থেকেও স্পষ্ট নারী অবয়বটা দেখতে পাচ্ছি । ঘারের উপরে উড়তে থাকা চুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । আমার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে । কখন যে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকিয়ে আছি বলতে পারবো না । হঠাতই অবয়বটা আমার পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো । আমার মনে হলো , সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি তাকিয়ে আছি । আমি চোখ বন্ধ করার সাহস পেলাম না । দু’জন চোখাচোখি তাকিয়ে থাকলাম । আমি মুহুত কাল ভুলে গেছি । চুপ করে পরে আছি । হঠাৎ ঘরের ভেতর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো । মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমি দু’হাত দিয়ে খাটের কিনার আকড়ে ধরে থাকলাম । এক সময় বাতাস হঠাৎ ই থেমে গেল ।
অবয়বটা এক সময় উঠে দাঁড়ালো ।আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম , কিন্তু পারলাম না । মনে হলো গলার ভেতরের সব রস কেউ নিংরে বেড় করে নিয়েছে । তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম । ভয় পেলে চলবে না । ভয় পেলে চলবে না । বাঁচতে হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই । শুধু মাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার কারণে ৭০% লোক বেঁচে যায় । সঙ্গে সঙ্গে একটা হিন্দি ছবির ডায়ালোগ মনে হলো -জো ডরগায়া ও মর গায়া ।
আমি শরীরের সকল শক্তি এক করতে চেষ্টা করলাম । তখনই আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা ছুটে গেলো কে কে ওখানে ? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলাম না । মনে হলো আমার গলায় অন্য কেউ কথা বলছে । আমি আবার ও একই প্রশ্ন করলাম -কে কে ওখানে ?
এবার মৃর্দু একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো ।
আমি আবার বললাম কে ?
-আমি । খুব আস্তে উত্তর এলো । কেউ খেয়াল না করলে শুনতে পেত না ।
-আমি কে ? ভয়ে আমার হাত পা অসার হয়ে আছে ।
-আমি কেউ না ,বলে আবয়বটা হেসে উঠলো । যেন নিক্কন হয়ে কানে বাজছে । আমি মুগ্ধ হলাম । তিথির ভাষায় অতি তারাতারি মুগ্ধ হয় গাধা মানবরা । নিজেকে আমার কাছে গাধা মানব মনে হলো ।
-আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? নিজেকে কেমন শিশু শিশু মনে হলো ।
এবার কোন উত্তর এলো না । তবে আবয়বটা উঠে গিয় ঘরের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে পরলো । মশারির ভেতর থেকেও দেখতে পাচ্ছি চেয়ারটা দুলছে । কেউ একজন হেলান দিয়ে বসে আছে চেয়ারটাতে । আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো ? হাত নাড়িয়ে চিমটি কাটার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি চেয়ারটার দিকে । (২) পৃথিবীতে কোন কিছুই যেমন স্থায়ি নয় । তেমনি আমার ভয়টাও স্থায়ি হলো না । খুব ধীরে ধীরে ভয়টা কেটে যাচ্ছে । গুন গুন করে একটা শব্দ হচ্ছে । মনে হলো আমার ঘরে থাকা আবয়বটা গান গাচ্ছে । কিন্তু আমার পরিচিত কোন সুরে নয় , অচেনা কোন সুরে । তিথি যেমন ঘরের কাজ করতে করতে আমন মনে সুর ভাজে , তেমনি । আমি সুরটা ধরতে চেষ্টা করে পারলাম না । না । এমন সুর আগে কখন ও শুনিনি । তবে সুরের মাদকতায় ভেসে গেল পুরো ঘর । আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি । আর ভাবছি কি করা যায় । একবার মনে হলো হাউমাউ করে কেঁদে কেটে যদি মাপ চাই তবে কেমন হয় । নিজেরই পছন্দ হলো না ব্যাপারটা । আমার মাথা কাজ করতে শুরু করছে । চিন্তা করতে পারছি দেখে ভাল লাগল । একবার ভাবলাম হেলুসিনেশন নয় তো ? নিজের মুখ দিয়েই বিরক্তি সূর্চক শব্দ “চুক”বেড় হয়ে এলো । সঙ্গে সঙ্গে আবয়বটির দোল খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো ।
আপনি কে ? দয়া করে বলবেন ?
মনে হলো একটা দীর্ঘস্বাস পরলো ।
এবাবে অর্যাচিত ভাবে কাউকে আমার ঘরে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি এবং অসুস্থি বোধ করছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? কি চান ?
-আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । আপনি ঘুমান । আবাও সেই হাসির শব্দ ।
-কিন্তু এবাবে কেউ ঘরে বসে থাকলে তো আমার ঘুম আসবে না ।
-চলে যেতে বলছেন ?
আপনি কে ? কেনো এসেছেন তা যদি বলতেন । আমি কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম ।
-আমি আফরোজা । এসেছি তাকাফুল শহর থেকে । আমি মানুষ সম্প্রদায়ের কেউ নই । আমি জ্বিন সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে মেয়েটি হেসে উঠলো । জ্বিন ; শুনে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথা থেকে হালকা চাপা ফুলেন মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে , পুরো ঘর মো মো করছে । হাসির শব্দে আমি আবার বিমহিত হলাম ।
আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর । আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা । নিজেকে আবারাও কেমন হেবলা মনে হলো । তিথির কথা মনে হলো ও যদি জানে গভীর রাতে ঘরে বসে আমি কোন জ্বিন মেয়ের হাসির প্রশংসা করছি তা হলে ও কি করবে ?
আপনার স্ত্রীর কথা ভাবছেন ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
খুব ভালবাসেন বুঝি ? বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো । রকিং চেয়ারটি আবার দুলছে । আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো , এখন কি আপনার ভয় লামছে ?
আমি না, বললাম । আমি মিথ্যা বললাম ।
মানুষরা খুব সহজে মিথ্যা বলতে পারে । বলে মেয়েটি আবার হাসছে । মিথ্যা বলে ধরা খাবার জন্য কেমন লজ্জা লাগছে ।
আমার একবার মনে হলো বাতি জ্বালাবো কি না ?
দয়া করে বাতি জ্বালাবেন না । আমি বাতি সহ্য করতে পারিনা । আর একটু পরে আমি চলে যাবো ।
আমি চমকে উঠলাম এ যে দেখছি আমার থর্ট রিড করতে পারছে ।
আপনি কেন এসেছিলেন ...........আমি প্রশ্নটা শেষ করতে পারলাম না ।
-এমনিতেতো আসিনি । আছে একটা কারণ আছে ।
কি কারন ?আমি কারন যানার জন্য অস্থির হলাম । আমার ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটিকে দেখি ।
-আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না ? মেয়েটি হাসতে হাসতে বললো ।
জ্বি । আমি ছোট্র করে উত্তর দিলাম ।
আমাকে না দেখাই ভাল । আমরা দেখতে মানুষের মতো নই । আমরা হচ্ছি আগুনের তৈরি । আর মানুষ হচ্ছে মাটির । আমাদের কোন নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই । আমরা যে কোন আকার ধারন করতে পারি । যে কোন জায়গাতে যেতে পারি । শুধু মাত্র আসমানের নিদিষ্ট্য একটা সীমা পর্যন্ত ।
তা হলে এটা কি আপনার আসল আকৃতি নয় ?
না ।
আপনি কি তা হলে মেয়ে নন ?
আমি মেয়ে জ্বিন । আমাদের মধ্য ছেলে মেয়ে দুটো প্রজাতি আছে । মানুষের মধ্যে আছে তিনটি ।
মানুষের মধ্যে তিনটি ? একটি নারী এবং অন্যটি পুরুষ । আমি আরেকটি খুঁজে পেলাম না । মাথা কাজ করছে না ।
আমি এখন যাবো ।
কেন এসেছিলেন তা তো বললেন না ?
আরেক দিন বলবো ।
তার মানে এখনই চলে যাবেন ?
হ্যা , আযান এর সময় হয়ে এসেছে । আমি যাই ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমন সময় মসজিত থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো । মেয়েটি হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ।
আমি তরিঘড়ি করে উঠে বাতি জ্বালালাম । না ! কেউ নেই । চেয়ারটা দুলছে । আমার মাথাটা কেমন করে উঠলো । অজানা কোন ভয়ে শরীর ছমছম করছে । কোন মতে বিছানায় বসে পরলাম । পরিশেষ : যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালে । সবাই মনে করলো আমি হঠাতই মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম । আমি ও কাউকে কিছু বললাম না । সব নিজের ভেতরে চেপে রাখলাম । বললে সবাই হয়তো হাসবে । তবে আশ্চযের বিষয় হলো এটা যে -মেডিকেল বোর্ড তন্ন ,তন্ন করে খুঁজেও আমার হার্টে কোন অসুখ খুঁজে পেলো না । যেনো রাতারাতি সব উবে গেছে । ডাক্টারা সবাই বললো মিরাকল ! মিরাকল ! কিন্তু আমি মনে মনে আফরোজাকে ধন্যবাদ দিলাম । সকল মিরাকলের পেছনেই কারো না কারো হাত থাকে । এখন আমার যখনই গভীর রাতে ঘুম ভাঙে তখনই আমি নিজের অজান্তে আফরোজা নামক জ্বিন কন্যাকে খুঁজি ।।

শেষ

একটি ভৌতিক গল্প - [ ছায়ামানুষ ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Monday, September 19, 2011 at 10:58pm
ঘুমের সমস্যা তীর্থর কোন কালেই ছিল না । ওর ঘুম পড়তে সময় লাগে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট । যেখানে হোক ঘাড়টা কাত করে একটু শোয়ার অপেক্ষা । শোয়ার পর থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওর ঘুম এসে যাবে । আর ঘুমটাও যা তা টাইপ না; একেবারে গণ্ডারের চামড়া টাইপ পুরু । একবার ঘুমালে বোম মেরেও ওর ঘুম ছুটানো যায় না । এত পুরু ঘুম । গণ্ডারের যেমন কাতুকুতু দিলে পুরু চামড়া ভেদ করে জায়গা পর্যন্ত পৌছাতে এক সপ্তাহ সময় লাগে , তেমন পুরু ওর ঘুম ।
কিণ্তু ক’দিন ধরে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে । ঠিক রাত তিনটা পাঁচ মিনিটে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে । প্রথমদিন যখন ঘুম ভাঙল ও ভাবল স্বপ্নের ভিতর বোধহয় ঘুম ভেঙে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে । কিণ্তু চোখ পিটপিট করে যখন উপরে টিনের চালটা দেখল তখনই বুঝতে পারল স্বপ্ন নয় ও বাস্তবেই জেগে উঠেছে । ও ধড়মড় করে উঠে বসল । কোন সমস্যা নাকি?
নাহ, সমস্যা তো কোথাও নেই । চারিদিক সুনসান নীরব । ঝিঝি পোকারা্ও ডাক ভুলে ঘুমিয়ে পড়েছে । টেবিলের ড্রয়ারের পিছন দিকে একটা সিগারেটের প্যাকেট লুকানো আছে । তা থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরা্ল । টিনের চালের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে থেকে টানতে লাগল । প্রথম কয়েকটা টান ভাল লাগল । তারপর টানতে গেলেই গলা জ্বলতে লাগল । তীর্থ সিগারেটটা অ্যাশ ট্রেতে পিষল । তারপর অ্যাশট্রেটা বইয়ের তাকের পিছনে লুকিয়ে রাখল । বডি স্প্রেটা বের করে সারা ঘরে স্প্রে করল । সিগারেট খাওয়া মা ধরতে পারলে ঝামেলা করে । কী দরকার ঝামেলা বাড়িয়ে? এমনিতেই ঝামেলার অন্ত নেই ।
টেবিলে রাখা মামের বোতল থেকে এক ঢোক পানি খেল তীর্থ । তারপর আবার শুয়ে পড়ল । একসময় ঘুম এসে গেল ।
এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ পঞ্চম দিনেও একই ঘটনা ঘটল । তীর্থ একটা করে সিগারেট খায়,একঢোক করে পানি খায়, আবার ঘুমিয়ে পড়ে ।
কিণ্তু ষষ্ঠ দিনে সমস্যা হয়ে গেল । ম্যাচে যে কাঠি ছিল না তা ও খেয়াল করেনি আগে । সিগারেটটা ঠোটে ঠেকিয়ে দেখল ম্যাচে কাঠি নেই । মেজাজ কতটা খারাপ হয়! ও খাট থেকে উঠল । বারান্দায় থালাবাসনের তাকে ম্যাচ-ট্যাচ থাকতে দেখেছে । হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় এল । ম্যাচটা নিয়ে আবার ঘরে এল । তারপর সিগারেটটা ধরাল । সিগারেটটা বেশী ধোঁয়া দিচ্ছে । বোধহয় ড্যাম্প । ও বাইরের দিকের জানালাটা খুলে দিল । যাক , ধোঁয়াগুলো বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে । ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা ।
তীর্থর জানালার পিছনেই কবরস্থান । কবরস্থান বললে যে একটা ভীতিকর অনুভূতির কথা জাগে এটি দেখলে তা তীর্থর কখনও জাগে না । কারন বাড়ির পাশেই কবরস্থান তো; থেকে থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে । এখন কবরস্থানকে যেন বাড়ির একটা অংশ বলেই মনে হয় ।
এই কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে তীর্থ জমে গেল । পুরো কবরস্থানটা আলোয় আলোকিত । যেন ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের সব ফ্লাড লাইট এখানে লাগানো হয়েছে । তীর্থর গায়ে কাটা দিয়ে উঠল । বাগানে তো আলো থাকার কথা না । তবে?
যা দেখে অভ্যস্ত তার ব্যতিক্রম কিছু দেখলেই মানুষ অন্যরকম আচরণ করে । কেউ ভয় পায়, কেউ বিরক্ত হয়, কেউবা আবার দার্শনিক হয়ে যায় । তীর্থ ভয় পেল । প্রচণ্ড রকম ভয় । তাড়াতাড়ি করে সে জানালা বন্ধ করে দিল । ভয়ে তার গা হাত পা কাঁপতে লাগল । সে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল । উঠে অ্যাশট্রেটা বইয়ের তাকের পিছনে লুকিয়ে রাখার সাহসটুকু তার হল না । টেবিল থেকে বোতল তুলে একঢোক পানি খাবে ,ভয়ে সেটিও করতে পারল না ।
সপ্তম দিনেও একই ঘটনা । রাত তিনটা পাঁচ মিনিটে তীর্থর ঘুম ভেঙে গেল । ভয় ভয় করতে লাগল ওর । তবে গতকালকের মত নয় । ও স্বাভাবিক ভাবেই সিগারেট ধরাল । কিণ্তু ওর মন টানছে বাইরের দিকের জানালাটা । মনে মনে বলল জানালা সে ভুলেও খুলবে না । কখখনো না । কিণ্তু মানুষের কৌতুহল বড় খারাপ জিনিষ । একসময় সে জানালাটা খুলল ।
জ্বলছে । আলো জ্বলছে ।
তীর্থ তাকিয়ে থাকল আলোর দিকে যেন ও একটা পিপীলিকা । তাকিয়ে থাকতে থাকতে আলোটার মোহে পড়ে গেল ও । তাকিয়েই থাকল অপলক । এক টানা তাকিয়ে থাকার ফলে ওর চোখে একটা ঘোর তৈরী হল । ওর একবার মনে হতে থাকল আলোটা মাটির ভিতর থেকে বের হচ্ছে , আর একবার মনে হতে লাগল আলোটা আকাশ থেকে আসছে ।
ভোরের দিকে আলো আস্তে আস্তে উধাও হয়ে গেল । তীর্থ ঢলে পড়ল বিছানায় । একটানা ঘুমাল দু’টো পর্যন্ত । সারাদিনে আর কিছুই করল না ।
রাতে আবার ঘুমাল । আবার ঘুম থেকে জাগল । সময় তখন রাত তিনটা পাঁচ মিনিট । জানালা খুলল । মোহাবিষ্টের মত তাকিয়ে থাকল আলোটার দিকে । ভোর বেলা চলে গেল আলো । তীর্থ ঘুমিয়ে পড়ল । একটানা ঘুমাল দু’টো পর্যন্ত ।
আবার রাত । আবার দিন ।
একটা চক্রে পড়ে গেল তীর্থ । দিন দু’টো পর্যন্ত ঘুম আর রাত জেগে আলো দেখা । দিনের হিসাব গুলিয়ে গেল তার ।
ঠিক কতদিন পর ও বলতে পারবে না, একদিন দেখল আলোটায় পরিবর্তন এসেছে । ঠিক যেন SOS পাঠানোর ভঙ্গিতে আলো জ্বলছে আর নিভছে । প্রথমে খুব দ্রুত তিনবার আলো জ্বলছে আর নিভছে , তারপর একটু বিরতি দিয়ে একটু দীর্ঘ সময় ধরে আলো জ্বলছে আর নিভছে , তারপর আবার দ্রুত তিনবার জ্বলছে আর নিভছে । ঠিক যেন বিপদে পড়া মানুষ SOS পাঠাচ্ছে ।
তীর্থর একবার মনে হল যা হয় হোক তার কী ? সে ঘুমিয়ে পড়বে । কিণ্তু সে ঘুমাতে পারল না । পতঙ্গ যেমন আগুনের দিকে এগিয়ে যায় তেমনি আকর্ষণ সে অনুভব করল আলোটার প্রতি । ধীর পায়ে উঠল । ঘরের দরজা খুলল । বাইরের গেটের দরজা খুলল । তীর্থর ভিতর থেকে কেউ একজন বলল,’তীর্থ ফিরে যা ,ফিরে যা তীর্থ ‘। হয়তো অবচেতন মন বলল । তীর্থ ফিরল না । কারন সে আর তখন মানুষ নেই । সে পতঙ্গ হয়ে গেছে । আলোর নেশা সে ছুটাতে পারছে না । তীর্থ আলোটার দিকে এগিয়ে গেল । কবরস্থান এক পা দু’পা করে তার দিকে এগিয়ে আসছে । তীর্থ একসময় আলোর সীমানায় চলে এল । আলোর বলয়টাকে স্পর্শ করল । একসময় আলোর কেন্দ্রে চলে এল । আলোর কেন্দ্রে যেই এল অমনি আলো নিভে গেল । ঝুপ করে নেমে এল অন্ধকার । তীর্থর ঘোর কেটে গেল ।
তীর্থ বুঝতে পারল না রাতের বেলা কবরস্থানে কেন এল, কিভাবেও বা এল । গা ছমছম করতে লাগল ওর । ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল । তখনই অন্ধকার থেকে কেউ একজন কথা বলে উঠল । ঠিক যেন মানুষের গলা নয় । অপার্থিব একটা স্বর । অনেক দূর থেকে পানির উপর দিয়ে ভেসে আসছে যেন সেটি ।
“আমাদের বিপদে ফেলে কই যাও তুমি মিয়া?”
তীর্থ ভয় পেয়ে গেল । ফিসফিস করে বলল,
“কে , কে কথা বলে ?”
“এখন চিনবে না তুমি একটু পরে ঠিকই চিনবে ।”
“কে আপনি সামনে আসেন না কেন?”
ভয়ে তীর্থ তোতলাতে থাকে ।
“এরকম 420 একটা লোক আমাদের জগতে ক্যান পাঠালা মিয়া ।”
“কী বলছেন আপনি ? না পেঁচিয়ে ঠিকমত কথা বলেন ।”
তীর্থ সাহসী হওয়ার চেষ্টা করল ।
“ভুলে গেলা মিয়া? মাহতাব বিশ্বাসকে এখনই ভুলে গেলা?”
“মাহতাব বিশ্বাস কে ? মাহতাব বিশ্বাস ….।”
কথা বলতে বলতে তীর্থ থেমে যায় । মাহতাব বিশ্বাস তার আব্বার নাম । মাসখানেক হল মারা গেছে লোকটা । তীর্থ ছাড়া আর কারো জানার কথা নয় যে মাহতাব বিশ্বাস মারা যায় নি , তাকে মেরে ফেলা হয়েছে । সুনিপুণ কৌশলে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ।
দুনিয়ায় লোকটার কাজ বলতে ছিল শুধু খাওয়া , ঘুম আর জুয়া খেলা । জুয়া খেলে যদি কোনদিন জিতত তা ও একটা বলার মত কথা হত । ‘জুয়া খেলত’ না বলে বলা উচিৎ ‘জুয়া খেলে হারত’ । এই হারতে হারতে বাড়িতে একটা মূল্যবান জিনিস বলতে লোকটা রাখেনি । সব বিক্রি করে দিয়েছে । তীর্থর HSC পরীক্ষার সময় কী ঘটনাটা না ঘটাল !
সেবার কুলের সময় । তীর্থদের কুল গাছ তিনটায় ভালই কুল হয়েছিল । তীর্থর মা বলেছিল এই কুল বেচে তীর্থর পরীক্ষার তিন হাজার টাকা দেয়া হবে । বাড়িতে আয়ের তো কোন পথ নেই । মা এটা সেটা করে চালান । তো তীর্থর গুণধর বাপ মাহতাব বিশ্বাস কী করলেন?
কুল পেকে গেছে । সেদিন দুপুরে এক লোক এল বাড়িতে । এসেই হাক ছাড়ল,
“মাহতাব চাচা বাড়িত আছেন নাকি?”
মাহতাব চাচা বাড়িতে ছিলেন না । তীর্থর মা বাইরে বেরিয়ে এলেন । লোকটা বলল,
“চাচা আমাকে কুল দেবার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন । কুলগুলো আজ বিকেলে নিয়ে যাব ।”
তীর্থর সেবার HSC পরীক্ষা দেয়া হয় নি ।
লোকটা আর কিছু না পারুক সন্তান উৎপাদন করতে কার্পণ্য করে নি । ছেলে আর মেয়ে মিলে মোট আট সন্তান তার । তীর্থর মা’র এক একটা দিন যেন একটা বছর ।অল্প দিনেই বুড়ি হয়ে গেলেন । তীর্থ বাপকে দু’চোখে সহ্য করতে পারত না । কথাও বলত না তার সাথে । লোকটাকে কিছুই বলত না সে । না একটা ভাল কথা না একটা খারাপ কথা ।
কিণ্তু এবার আর কিছু না বলে পারল না ।
তীর্থর বড়বোনের বিয়ে । বরপক্ষকে একটা মোটরবাইক ছাড়া আর কিছুই দিতে হবে না । রেডিও টিভিতে যৌতুক বিরোধী কত কিছু দেখানো হয় আসলে সবই বৃথা । তলে তলে যৌতুক ঠিকই বেঁচে আছে তার স্ব-মহিমায় ।
তীর্থর মা আলমারি থেকে তার বাবার দেয়া গয়নাগুলো বের করলেন । মাহতাব বিশ্বাসের হাতে দিয়ে বললেন,
“একটু দরদাম করে বিক্রি করো । দেখো মোটরসাইকেলের টাকা যেন শর্ট না পড়ে ।”
মোটরসাইকেলের টাকা শর্ট পড়ে নি ।কারন মোটরসাইকেল কেনাই লাগেনি । মাহতাব বিশ্বাস সব টাকা একরাতে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ।
তীর্থর মা বিছানায় পড়ে গেলেন । তীর্থর বোনের বিয়ে ভেঙে গেল । মাহতাব বিশ্বাস নিশ্চিন্তে তার খাওয়া ঘুম চালিয়ে যেতে লাগলেন ।
তীর্থর আর সহ্য হল না । সে ভাবল এই লোকটা বেঁচে থাকলে তাদের কোন লাভ নেই । বরং লোকটা বেঁচে থাকলে তাদের মা বাঁচবে না । তাই চরম সিদ্ধান্তটাই সে নিল ।
পটাশিয়াম সায়ানাইডটা জোগাড় করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল ।
তীর্থ কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এল । অশরীরী লোকটা বলল,
“কী মিয়া কথা কও না ক্যান? এরকম 420 একটা লোক আমাদের জগতে ক্যান পাঠালা মিয়া ? কী কথা কও না ক্যান মিয়া ?”
তীর্থ কথা বলতে পারে না । লোকটাই আবার কথা বলে,
“অই হারামজাদা এই জগতে এসেই আত্মা কেনা-বেচা, বন্ধক রাখারাখি করতে শুরু করেছে । আমাদের জগৎ মনে করো একেবারে নরক গুলজার অবস্থা । তোমার জগৎ তো তুমি রক্ষা করেছ মিয়া , আমাদের জগৎ কে রক্ষা করবে ?
তীর্থ কথা বলে না ।
“কী মিয়া, মনে মনে বলতাছ আমাদের জগৎ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে, তাই না ?”
তীর্থ সায় জানাল ।
অশরীরী লোকটা হাসল । বলল,
“ঠিক ই কইছো মিয়া । আমাদের জগৎ আমরাই রক্ষা করব । সে জন্যেই তো এত কষ্ট করে তোমাকে ধরে আনা হল ।”
“আমাকে ধরে এনেছ ? কেন ?”
তীর্থ অবাক হয় ।
“অবাক করলা মিয়া ! একটা 420 মানুষ খুন করে পৃথিবী থেকে একটা 420 আত্মা আমাদের জগতে পাঠালা । এখন এই 420 আত্মাটাকে খুন করে অন্য জগতে কে পাঠাবে ? তুমিই তো । তাই তো তোমাকে ধরে আনা হল ।”
“তা কিভাবে সম্ভব ? মানুষ হয়ে আমি আত্মা কিভাবে খুন করবো ? দেখবও বা কিভাবে ?”
অশরীরী লোকটা খনখনে গলায় হাসল । বলল,
“তুমিও আত্মা হয়ে গেলে এই সমস্যাটা তো আর থাকে না । ঠিক কিনা ?”
তীর্থ শিউরে উঠল । আত্মা হওয়া মানে তাকেও কী মেরে ফেলা হবে ? ওর শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা শীতল স্রোত নেমে গেল । এই অনুভূতিটার কথা এতদিন বইয়েই পড়ে এসেছে কেবল ।আজ উপলব্ধি করল ।
“কী মিয়া, চুপচাপ ক্যান্ । আত্মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও ।”
তীর্থ খিচে দৌড় দিবে কিনা ভাবল । পথ দেখে নেয়ার জন্য একবার পিছনেও তাকাল । যা দেখল তাতে ওর ঘাড়ের কাছের চুল খাড়া হয়ে গেল । দেখল হাজার হাজার অশরীরী শ্বেত ছায়া তাকে ঘিরে একটা বৃত্ত তৈরী করেছে । আস্তে আস্তে বৃত্ত ছোট করছে ওরা । আর কিছুক্ষণের ভিতর তীর্থকে ধরে ফেলবে । তার কিছুক্ষণ পর সে আত্মা হয়ে যাবে । তীর্থ জায়গায় জমে গেল । একবিন্দু নড়তে পারল না । ছায়ারা এগিয়ে আসছে । এগিয়ে আসছে…..।
তীর্থর হঠাৎ কামিনীর মুখটা মনে পড়ল । কামিনী তাকে অনেক ভালবাসে ।
আচ্ছা, সে আত্মা হয়ে গেলে কামিনী তখন কেমন আচরণ করবে?

। আকাঙ্খা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, September 24, 2011 at 10:35pm
ঘটনাটি যখন ঘটেছিলোঃ সাল ১৯৮০। ঘটনাটি আসলে দেখেছে আমার মামা। আমার নানা একজন মাউলানা সাহেব। তিনি তার ছেলে (আমার মামা) কে চট্রগ্রামে একটি মাদ্রাসায় পড়তে পাঠান। আমার মামা যেই মাদ্রাসায় ছিলেন সেই মাদ্রাসার পাশে একজন বিরাট ধনী লোক থাকতেন। সেই লোক প্রতি শুক্রবারে মাদ্রাসা থেকে ১০ জন ছাত্রকে নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন এবং তাদের খাওয়াতেন। সিরিয়াল অনুযায়ী সব ছাত্ররাই তার বাসায় খানা খেতে যেত। তো, একবার সেই সিরিয়াল অনুযায়ী একবার আমার মামার সময় এলো। মামা এবং তার সাথের আর ১০ জন ছাত্র যাওয়ার জন্য তৈরি হলেন। রেডি হবার পর দেখা গেলো ৯ জন আছেন, কিন্তু আসাদ নামের একজন ছেলে, যার বাকিদের সাথে যাবার কোথা ছিল, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সবাই খুব হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াতে লাগলো। মাদ্রাসার প্রায় সব জায়গাতেই দেখা হল, কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। হটাত কেউ একজন বলল, “আসাদের তো জ্বর। ও ছাদে মুয়াজ্জিনের রুমে ঘুমাইছে!” তারপর এক ছাত্র সেই রুমে নক করল। কিন্তু ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলল না। এইবার সে জোড়ে জোড়ে বাড়ি দিতে লাগলো। কিন্তু তারপরও ভেতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ এলো না। শেষমেশ ছেলেটি কার্নিশের উপর দাঁড়িয়ে জানলা দিয়ে ভেতরে উকি দিল। ছেলেটি উকি দিয়ে খুব ভয়ঙ্কর কিছু একটা দেখল। দেখার সাথে সাথে বিকট চিৎকার দিল এবং হুড়মুড় করে ছাদে এসে পড়লো। ছাদে এসেই সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জ্ঞান ফেরার পর হুজুর তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, “তুই কি দেখেছিলি?” সে বলল, “আমি দেখলাম আসাদের ড্রেস পড়া একটা মোটা অজগর সাপ বিছানায় শুয়ে আছে!” একথা শুনে হুজুর সবাইকে বললেন যে আসাদকে যেনও কেউ কিছু না বলে। তারপর কিছুদিন পড়ে আসাদ সুস্থ হলে হুজুর তাকে কাছে ডেকে বলেন, বাবা আসাদ, তুমি যে একজন জীন সেটা আমরা সবাই টের পেয়েছি। তুমি যদি এখানে থাকো তাহলে সব ছাত্র তোমার ভয়ে চলে যাবে। তাই তোমার কাছে অনুরোধ যে, তুমি এখান থেকে চলে যাও। এরপর আসাদ নামের সেই জীনটি ঐ মাদ্রাসা থেকে চলে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে সে হুজুরকে নিজের সম্পর্কে কিছু কোথা বলে গিয়েছিলো, যেমন, আসাদ তার প্রকৃত নাম নয়। তার নাম আমানুল্লাহ। তার বয়স ৩৮৬ বছর এবং তার মত অনেক জীন বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানুষের রূপ ধরে মানুষের সাথে পড়াশোনা করে। আসাদ রূপি আমানুল্লাহ আর বলেছিল যে, জীনরা যখন অসুস্থ থাকে তখন তারা কোন রূপে থাকে তা নিজেরাও বুঝতে পারে নাহ। ঘটনাটি দিয়েছেনঃAhmad Emran বাংলা রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন)

ভৌতিক গল্প : বুড়ো ফ্র্যাঙ্ক ও আমি

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Thursday, September 22, 2011 at 9:46pm
স্কলারশিপটা খুব তাড়াহুড়া করেই হয়ে গিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না বিলেত যাব কি যাব না। পরিবারের সবাই বলল এমন সুযোগ হাতছাড়া করাটা ঠিক হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম স্কলারশিপটা এক্সেপ্ট করে ফেলার। প্রায় ষোল ঘন্টা জার্নি করে যখন হিথ্রো এয়ারপোর্টে এসে পৌছলাম তখন ভোর প্রায় পাঁচটা। এয়ারপোর্টে আমাকে রিসিভ করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে যাকে পাঠানো হয়েছিল সে আমার পি,এইচ,ডি প্রফেসার ফ্র্যাঙ্ক গ্রীণ এর অধীঃনস্থ আরেক পি,এইচ,ডি স্টুডেন্ট। নাম ম্যাথিউ জেরী। বয়স ত্রিশ কি বত্রিশ হবে। সুদর্শন যুবক। গাড়িতে জানতে পারলাম পার্টটাইমে পি,এইচ,ডি করবার সাথে সাথে সে ইউনিভার্সিটির স্টাফ হিসেবেও কাজ করছে আর তাই আমাকে রিসিভ করার দায়িত্বটি সে সেচ্ছায় গ্রহণ করে। আমার পি,এই্চ,ডি’র বিষয় হল চাইল্ড সাইকোলজি আর ম্যাথিউ পি,এইচ,ডি করছে ডিপেনডেন্ট এল্ডার’স সাইকোলজি নিয়ে। আমাদের দু’জনের বিষয়ে খানিকটা মিলও আছে বলা যেতে পারে। কারন বৃদ্ধ বয়সে মানুষের মন অনেক সময় শিশু সুলভ আচরণ করে আর তাছাড়া তাঁর বিষয়টি সেইসব বৃদ্ধদের সাথে জড়িত যারা শেষ বয়সে তাদের সন্তান সন্ততির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যেমনটি তাঁরা শিশুকালে নির্ভরশীল ছিলেন তাদের বাবা মা’র উপর। আর এই মিলের কারনেই হয়ত ম্যাথিঊ আমাকে রিসিভ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিল। গাড়ি করে হোস্টেলে পৌছতে প্রায় দু’ঘন্টা লেগে গেল। আমাকে আমার রুমের চাবি দিয়ে ম্যাথিউ চলে গেল, যাবার আগে বলে গেল প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক আজ বিকেলে আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে আসবেন। আমি যেন বিকেলের আগেই ঘুম থেকে উঠে পরি। রুমে ঢুকে আমি সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙল দুপুর তিনটার দিকে। এটা কি এখানকার বিকেল কিনা বুঝতে পারলাম না। আরেকটু ঘুমাতে ইচ্ছা হচ্ছিল কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক আবার চলে আসেন কিনা তাই ভেবে আর ঘুমালাম না। আমি স্যুটকেস খুলে কাপড় গুছাতে শুরু করলাম এমন সময় দরজায় কে যেন ধাক্কা দিল। দরজা খুলে দেখলাম এক বৃদ্ধ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ইনি ফ্র্যাঙ্ক হবার কথা না। কারন ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে আমার যেসব ইমেইল আদান প্রদান হয়েছিল তাতে করে আমার অনুমান ফ্র্যাঙ্ক এর বয়স পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন হবে। আর এই বৃদ্ধের বয়স কম করে হলেও পঁচাত্তর। বৃদ্ধ হাসিমুখে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে অদ্ভুত ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন, হ্যালো জোবেইর ( জোবায়ের)। আই এম ফ্র্যাঙ্ক! হাউ আর ইউ ডুইং?
আমি তখন বুঝতে পারলাম ইনিই আমার প্রফেসার। জবাবে হাসিমুখে আমিও তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। মনে মনে বললাম, তুই এই সময় এলি কেন বুড়ো? আমি ত ভেবেছিলাম আরেকটু পড় আসবি। বুড়ো যেন আমার মনের কথা বুঝতে পারল। সে বলল, এম আই টু আরলি জোবেইর?
আমি বললাম, নো নো ইটস অলরাইট।
আমার অবশ্য তখন ইচ্ছা হচ্ছিল আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে, কিন্তু এটা ত আর প্রফেসর কে বুঝতে দেয়া যাবেনা। কারন এর হাতেই এখন আমার সব কিছু। বুড়ো চাইলে আমি পি,এইচ,ডি ডিগ্রী পেতেও পারি আবার না চাইলে আমাকে এম,ফিল ডিগ্রী দিয়েও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
এরপর ফ্র্যাঙ্ক আমাকে অনুরোধের সুরে জিজ্ঞেস করে, খুব বেশী ক্লান্তবোধ না করলে তাঁর সাথে এখন বাহিরে গিয়ে এক কাপ কফি খেতে আমি আগ্রহী কিনা? যদিও আমার সেই মুহুর্তে বাহিরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছিল না কিন্তু আমি তাঁকে মুখের উপর নাও করতে পারলাম না। রুম থেকে বেরিয়ে আমরা দুজন নিচের কফি শপে গেলাম। সময়টা বিকেলের দিকে হওয়ায় কফি শপে বসবার জায়গা পেলাম না। কাগজের মগে কফি নিয়ে আমরা দুজন বাহিরে কোথাও বসার জায়গা খুঁজতে লাগলাম। সেদিন রবিবার হওয়ার কারনে বাহিরের বেঞ্চগুলাতেও ছিল ছাত্রছাত্রীদের ভীর। দু’টা সাইনবোর্ডে দেখতে পেলাম লেখা ‘সামনে চার্চ’ আর ‘সামনে পার্ক’। ফ্র্যাঙ্ক আমাকে পার্কে যাবার প্রস্তাব দিল। আমি ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে কফিতে চুমুক দিয়ে পার্কের দিকে এগোতে থাকলাম। তখন সন্ধ্যা প্রায় হবে হবে করছিল। কফির সাথে আমার হঠাত সিগারেট ধরাবার ইচ্ছা হল, তাই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। আমার সিগারেট এর প্যাকেট বের করা দেখে ফ্র্যাঙ্ক কে কিছুটা বিরক্ত মনে হল, তাই প্যাকেট আবার পকেটে ভরে ফেললাম। তা দেখে ফ্র্যাঙ্ক ভদ্রতার খাতিরে বলল, তুমি চাইলে সিগারেট ধরাতে পার, তবে আমার সিগারেটের ধোঁয়ায় সমস্যা হয় বলে আমাকে একটু ক্ষমা করতে হবে। তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য পার্কে গিয়ে অপেক্ষা করতে পারি, তুমি আস্তে ধীরে সিগারেট খেতে খেতে পার্কে আসতে পার। আমি এর জবাবে বিনয়ের সুরে বললাম, তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি এমনিতেই খুব বেশী সিগারেট খাইনা। তাই এখন না খেলেও কোন অসুবিধা নেই।
আমি আসলে তখন মিথ্যা বলেছিলাম কারন আমার দিনে প্রায় একটা প্যাকেট শেষ করতে হত। ফ্র্যাঙ্ক যেন আমার মিথ্যা ধরে ফেলে নিজ মনেই মিটি মিটি হাসছিল। তারপর অল্প কিছুদূর এগোনোর পর আমরা পার্কের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। ফ্র্যাঙ্ক এর আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল সে এখন আমাকে আমার রিসার্চ এর টপিক উপর ছোটখাট একটা লেকচার দেওয়ার চেষ্টা করবে।
-আমি কি তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি জোবেইর?
-অবশ্যই ফ্র্যাঙ্ক।
-তুমি এত দূর থেকে এখানে কেন পি,এইচ,ডি করতে এসেছ?
এ প্রশ্নে আমি কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক কে তা বুঝতে না দিয়ে বললাম,
-আমি চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে খুব বেশী আগ্রহী বলেই এখানে এসেছি। সেটা আপনাকে আগেই বলেছি ইমেইলে। তাছাড়া উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য সবচেয়ে কাছের দেশ বলতে আমরা বিলেতকেই জানি। আমেরিকা ত আরো অনেক দূরে।
-আই সি। তোমার পুরা নাম তো জোবেইর বিন ইসলাম তাইনা?
-হ্যাঁ।
-তুমি কি ইসলাম ধর্মে পুরোপুরি বিশ্বাস কর?
-হঠাত এ কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
-কেন জিজ্ঞেস করছি তা কাল জানতে পারবে। আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।
ফ্র্যাঙ্ক এর এরুপ আচরণ আমার কাছে কিছুটা রুক্ষ্ম মনে হয়েছিল। তবে তাঁর সাথে আমি কোন বাক বিতর্কে যেতে চাচ্ছিলাম না বলে জবাব দিলাম,
-হ্যাঁ পুরোপুরি বিশ্বাস করি।
ফ্র্যাঙ্ক তখন সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, তাহলে ত তোমার শয়তানকেও বিশ্বাস করা উচিত তাই না জোবেইর?
এর জবাবে আমি কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একবার মনে হচ্ছিল ফ্র্যাঙ্ক আমাকে কথার জালে ফাঁসিয়ে যাচাই করে দেখতে চাচ্ছে আমি কতটা আধুনিক আর তাঁর অধীনে পি,এইচ,ডি করার উপযুক্ত কিনা। তাই আমি বললাম, আমি আসলে এইসব ব্যাপার নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। তবে আমি ভূত টুতে বিশ্বাস করি না। ফ্র্যাঙ্ক তখন কিছুটা রেগে গিয়ে বলল, আমি কিন্তু ভূতের কথা বলিনি জোবেইর। আমি শয়তানের কথা বলেছি। শয়তান আর ভূত এক জিনিস নয়।
আমি তখন প্রসংগ পাল্টাবার জন্য হাসিমুখে বললাম, দেখুন একটু পরেই সন্ধ্যা হবে, আমি আসলে এই মুহুর্তে এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি না। আমি একটু ভীতু টাইপের। একথা বলে নিজেই হাসতে শুরু করলাম। ফ্র্যাঙ্ক আমার হাসি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে জিজ্ঞেস করল,
-তুমি কি জানো তোমার এই স্কলারশিপটা তুমি এত তাড়াহুড়ো করে কেন পেয়েছ? এখনত ফেব্রুয়ারী মাস। এ মাসে ত সেশান শুরু হয় না। সেশান শুরু হয় সেপ্টম্বর মাসে।
-সেশান কোন মাসে শুরু হয় তা আমার জানা নেই। কিন্তু আপনারাই ত আমাকে এখন আসতে বলেছেন।
- তোমাকে আসতে বলা হয়েছে কারন তুমি যেই বিষয় নিয়ে গবেষনা করতে যাচ্ছ তা নিয়ে আগে গবেষনা করেছিল ভারতীয় এক ছাত্র। সে হিন্দু ছিল বলে শয়তানে বিশ্বাস করত না। তাই সে তাঁর গবেষনা সম্পূর্ন করতে পারেনি।
ফ্র্যাঙ্ক এর এমন অদ্ভুত কথায় তখন আমার কিছুটা মেজাজ খারাপ হল। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই ফ্র্যাঙ্ককে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হাস্যকর কথা বলছেন আপনি। শয়তান এর সাথে আমার রিসার্চের সম্পর্ক কি?
-তাও কাল জানতে পারবে। তবে এখন শুধু জেনে রাখ ‘ভাসকার’ কখনোই আমাকে বিশ্বাস করেনি। কারন সে ছিল ভারতের গোল্ড মেডেলধারী একজন স্কলার। আমি অনেকভাবেই তাঁর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে আমার অস্তিত্ব অগ্রাহ্য করেছিল। আর তাই পরে তাকে আমি পাগল বানিয়ে দিয়েছি। সে এখন আছে আগ্রার পাগলা গারদে।
আমার কেন জানি তখন খুব ভয় করতে শুরু করল আর মনে হতে লাগল ফ্র্যাঙ্ক যা বলছে তা সব সত্যি। আর যদি সত্যি হয় তাহলে এটা আমার সেই প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক না। এটা অন্য কেউ। একথা মনে করার পর আমি আর ভয়ে কোন কথা বলতে পারলাম না। ফ্র্যাঙ্ক আপন মনে বলে গেল,
-দেখ জোবেইর তুমি নিজেই জান এ ধরনের স্কলারশিপ পাওয়া তোমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তুমি বাংলাদেশের সাধারন একজন স্কলার। তোমার মাস্টার্সের রেজাল্ট তেমন ভাল ছিলনা। শুধুমাত্র অনার্সে তুমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলে। তাই ফ্র্যাঙ্ক তোমাকে ভাসকার এর পুরা ঘটনাটা গোপন করে ইমেইল করেছিল স্কলারশিপের অফার দিয়ে, যেন তুমি সহজেই তা গ্রহন কর। এতে ভাসকার এর করা অসমাপ্ত রিসার্চ সম্পূর্ণ হবে আর ফ্র্যাঙ্ক এর অধীনেও আরেকজন স্কলারের নাম যুক্ত হবে। ফ্র্যাঙ্ক ভাসকার এর কথাটা গোপন করেছিল কারন কোন ভাল স্কলার অন্যের করা রিসার্চ থেকে পি,এইচ,ডি’র রিসার্চ কখনোই শুরু করতে চাইবে না। তাই সে তোমাকে বেছে নিয়েছিল। আর এখন যদি তুমি আমার কথা না শুন তাহলে কিন্তু তোমার অবস্থা ভাসকার এর চেয়েও করুন হবে কারন তুমি আমাকে বিশ্বাস কর। আর বিশ্বাস কর বলেই তোমার স্নায়বিক চাপের উপর তোমার কোন নিয়ন্ত্রন থাকবে না। হয়ত এদেশের শীতল মাটিতেই তোমাকে সারাজীবন ঘুমিয়ে থাকতে হবে।
ফ্র্যাঙ্ক এর কথা শেষ হবার সাথে সাথেই হঠাত চার্চের ঘন্টা বাজতে শুরু করল। সন্ধ্যা তখন পুরোপুরি হয়ে এসেছে। আশে পাশে আবছা অন্ধকার। ফ্র্যাঙ্ক এবার আমাকে কিছুটা ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করল, চুপ করে আছ কেন? বল তুমি কি আমার অস্তিত্বের প্রমাণ চাও?
আমি কিছুটা সাহস নিয়েই বললাম, হ্যাঁ চাই।
আমার জবাব শুনে ফ্র্যাঙ্ক রাগে ফোস্ ফোস্ করতে শুরু করল। এক পর্যায়ে প্রচন্ড রেগে গিয়ে সে বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়াল আর পার্কের ঘাসে শিশুদের মত হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করল। খুবই অদ্ভুদভাবে লক্ষ্য করলাম ফ্র্যাঙ্ক এর হাত পা আর মাথা পুড়ে কাল হয়ে গেছে, শুধু পরনের পোশাকটা অক্ষুন্ন আছে। ফ্র্যাঙ্ক এর তখন মুখমন্ডল বলে কিছু ছিল না। যা ছিল তাকে শুধুমাত্র মাংসপিন্ড বলা চলে। তবে চোখের জায়গাতে বড় কাল দু’টি গর্ত হয়ে আছে। ফ্র্যাঙ্ক তখন পাঁচ-ছয় বছর বয়েসী শিশুদের মত গলায় কাঁদতে কাঁদতে বলল, এই দুষ্ট লোকটা আমাকে চুলোর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর চুলার সুইচ অন করে দিয়ে আমায় অনেক্ষন শক্ত করে ধরে রাখল। তারপর আমাকে বলল লাইটার জ্বালাতে। আমি যেই লাইটার জ্বালালাম আর অমনি আমার সারা শরীরে আগুন ধরে গেল। তারপর থেকে আমি ওইখানে একা একা শুয়ে থাকি। আমাকে আমার আম্মুর কাছে নিয়ে চলো। একথা শুনার পর আমি পাশে তাকিয়ে ভাল করে দেখার চেষ্টা করলাম। অন্ধকারের জন্য স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না, তবে বুঝতে পারলাম পার্কের পাশেই একটা কবরস্থান রয়েছে। এরপর আমি ভয়ে বুকের মাঝে প্রচন্ড চাপ অনুভব করতে শুরু করলাম। আমি তখন ভয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। সম্ভবত আমি সেখানেই জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরে পাবার পর জানতে পারলাম আমি গত রাতে পার্কের বেঞ্চের কাছে পরেছিলাম। চার্চের পাদ্রীরা সন্ধ্যায় প্রার্থনা সেরে পার্কের ভিতর দিয়ে যাবার সময় আমাকে পরে থাকতে দেখে আর ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে আসে। পরে ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম ফ্র্যাঙ্ক এর চেহারা অবিকল গতকালের সেই বুড়োর মত কিন্তু বয়স ঠিকই পঞ্চাশের ঘরে। আমি ফ্র্যাঙ্ক কে সব ঘটনা খুলে বললাম। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক আমার কোন কথাই বিশ্বাস করল না। বরং মনে করল আমি আমার পরিবার থেকে এতদূর এসে একাকিত্ববোধ করছি বলে এখন দেশে যাবার বাহানা করছি। ফ্র্যাঙ্ক কে ভাসকার এর কথা জিজ্ঞেস করায় সে ভাসকার এর পাগল হয়ে যাবার কথা স্বীকার করল এবং সে যে ভাসকার এর ঘটনা টা গোপন করেছিল তাঁর জন্য তাকে কিছুটা লজ্জিতও মনে হল। কিন্তু আমি কিভাবে ভাসকার এর কথা জানলাম সেই যুক্তি দিতে চাইলে সে সেটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা জানা কোন বড় ব্যাপার নয়। হয়ত হোস্টেলের কারো কাছ থেকে জেনেছি কিংবা ম্যাথিউই আমাকে বলেছে। এ নিয়ে ফ্র্যাঙ্ক এর সাথে আমার তীব্র বাক বিতন্ড লেগে যেতে শুরু করেছিল, আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে যাব। শেষে ম্যাথিউর সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ করলাম আমাকে একটা প্লেনের টিকেট কিনে দেবার ব্যাবস্থা করে দিতে। ম্যাথিউ সানন্দে আমার অনুরোধে রাজি হল এবং নিজে ড্রাইভ করে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিল। গাড়িতে যাবার সময় শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছিল ফ্র্যাঙ্ক সেজে যে আমার কাছে এসেছিল সে বুড়োর বেশ ধরেছিল কেন? কিন্তু কোনভাবেই কোন যুক্তি খুঁজে বের করতে পারলাম না। গাড়ি থেকে নামবার সময় ম্যাথিউ আমাকে জিজ্ঞেস করল আমাকে ভিতরে এগিয়ে দিবে কিনা। আমি বললাম না থাক দরকার নেই। এই বলে তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করতে যাব এমন সময় খেয়াল করলাম ম্যাথিউ অদ্ভুত ভংগিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে তখন অবিকল সেই বুড়োর মত গলা করে বলল, তোমাকেও আমায় বিশ্বাস করবার জন্য ধন্যবাদ। লেখক : মিঃ ভূত

ভৌতিক গল্প : জ্বিন কন্যা - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, September 21, 2011 at 10:56pm
কে কে ওখানে ।
আমি ।
আমি কে ?
বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ । কোন উত্তর নেই । তারপর একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলার শব্দ । আমি আবার ও জিজ্ঞেস করলাম । আমি কে ? কথা বলছেন না কেন ?
আমি !
আমি কে ? আমি আবারও ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম ।
আমি কেউ না ।
তবে আমার ঘরে কি করছেন ? কি ভাবে এসেছেন ? দরজা খুললো কে ? এক সাথে এতোগুলো প্রশ্ন করে আমি প্রায় হাপিয়ে উঠলাম । এমনিতেই আমার হার্টের অবস্থা ভাল নয় । এখন তো মনে হচ্ছে ভয়ে হার্ট ফেল করবে । ঘুমিয়ে ছিলাম ; হঠাৎ খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । প্রথমে ভেবে ছিলাম ইদুর টিদুর হবে । কাজের মেয়েটার উপড়ে মেজাজ খারাপ হলো ,কতো দিন বলেছি রাতে শোয়ার আগে তেলাপোকা ,ইদুর এর ঔষুধ ছিটিয়ে ঘুমাতে । না তার কোন খবর নেই । মনে হয় এনে দেওয়া ঔষুধ গুলোর কথা মেয়েটা ভুলেই গেছে । কাল নিজেই ছিটিয়ে দিতে হবে । রাতে এমনিতেই আমার ঘুম হয়না ।তাও আজ লেট নাইটে শুয়েছি । ভোরে অফিস ধরতে হবে । একবার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসবে না । আমার স্ত্রী তিথি ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু’দিনের জন্য বাবার বাড়ী গেছে । পুরো বাসায় আমি একা ।
অফিস থেকে ফিরে সামান্য লেখা লেখির চেষ্টা করা আর টিভি দেখা ছাড়া করার তেমন কিছু নেই । আজ ইস্পিলবার্গের একটা ছবি দেখে শুতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি । মনে হয় আধা ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি এর মধ্যে খুট খুট শব্দ করে যন্ত্রনা শুরু হয়েছে । একবার মনে হলো ইদুর রান্না ঘরে শব্দ করছে । ঘুমের মধ্যেই হুস হুস শব্দ করে ইদুর তারাতে চেষ্টা করলাম ।
হুস , হুস করে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি আবার শুরু হচ্ছে খুট খুট শব্দ করা । খেয়াল করে দেখলাম আমি হুস হুস করলে কিছু সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে খুট খুট শব্দ । চোখ লেগে আসতেই আবার সেই খুট খুট শব্দ । কখন যে হুস হুস করতে করতে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার বা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে আলতো করে টানছে । চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরে সড়ে গেছে । আমি চোখ হালকা করে তাকালাম । পুরো ঘর অন্ধকার । বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতে ভুলে গেছি ? এখন দেখছি বাতি নিবানো । যতো দূর মনে মনে আছে -টিভি বন্ধ করে শন্করের একটা বই পড়ছিলাম । ঘরের বাতি জ্বলছিল । তা হলে বাতিটা নেভালো কে ?
পায়ের আঙুলে আবার কেউ র্স্পশ করলো । আমি ভয় পেতে শুরু করছি কেননা চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । ইদুরের চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । আমি মশারি টানিয়ে শুয়েছি । শোয়ার আগে বেশ ভাল মতো মশারী গুজে তারপর শুয়েছি । ভেতরে ইদুর থাকলে আগেই দেখতে পেতেম । হঠাৎ ভুতের কথা মনে হলো ? ভুত নয় তো ? ভুতের কথা মনে হতে ভয় বেড়ে গেলো । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । নড়তে পারছি না । মনে হলো নড়াচড়া করলে কেউ আমাকে মেরে ফেলবে । আবার ভয় পাচ্ছি দেখে নিজের উপড়ই রাগ লাগছে । কেউ শুনলে হাসবে । ছেলেটার কথা মনে হলো । ভাবলাম ও ,ও মনে হয় আমার চাইতে বেশী সাহসী ।
বা পাটা আমি একটু নাড়ালাম । এমন ভাবে নাড়ালাম যেনো ঘুমের মধ্যে নাড়াচ্ছি । সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শটা বন্ধ হয়ে গেলো । মনে হলো কেউ পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিল । এবার ভাবলাম , ইদুর হবার প্রশ্নই আসে না । আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে পরে আছি । ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । চারিদিকে শুনশান নীরবতা , একটু আগে হয়ও খুট খুট শব্দটাও এখন আর হচ্ছে না । হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে থাকা চাদরটা ধরে টানছে । আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম । নিজের ঘরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুক্ষিন হবো কল্পনাও ছিল না । ভয়ে হাত পা একেবারে জমে যাচ্ছে । শরীর থেকে চাদরটা একটু একটু করে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । যে করছে কাজটা , বুঝা যাচ্ছে সে খুব ধীরে সু্স্থেই কাজটা করছে ।
কি করবো বুঝতে পারছিনা । বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাই হচ্ছে আসল ব্যাপার । শুধু মাত্র বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখার কারনে ৭০% লোক মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ যায় । পরিসংখ্যানটা কোথায় যেন পড়েছিলাম । আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম ।
একবার ভাবলাম জোরে চিৎকার করে উঠি । তাতে চাদর টেনে যে আমাকে ভয় দেখাতে যাচ্ছে সে উল্টো ভয় পেয়ে যাবে ।
তার পরই মনে হলো চোর নয় তো ? বেশ কিছু দিন যাবত মহল্লায় চোরের আনাগোনা বেড়ে গেছে । সেদিও নাকি জ্বানালা দিয়ে বাড়ী ওয়ালির ব্যাগ থেকে মোবাইল ,টাকা নিয়ে গেছে চোর । কিন্তু আমার বিছানাটা তো জানালা থেকে বহু দূরে । জানালাও বন্ধ । তবে কি চোর আগেই ঘরের ভেতরে ডুকে ছিল ? এখন আফসোস হচ্ছে কেন শোয়ার পূর্বে চেক করে শুলাম না ।
অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার ফলে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । পায়ের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠলো । আবচ্ছা আলোয় একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে । আমি চোখ কুচকে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । মনে হলে কেউ একজন মেঝেতে হাটু ঘেরে খাঁটের উপর কুনি রেখে বসে আছে । ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো । শুয়ে থেকেও স্পষ্ট নারী অবয়বটা দেখতে পাচ্ছি । ঘারের উপরে উড়তে থাকা চুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । আমার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে । কখন যে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকিয়ে আছি বলতে পারবো না । হঠাতই অবয়বটা আমার পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো । আমার মনে হলো , সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি তাকিয়ে আছি । আমি চোখ বন্ধ করার সাহস পেলাম না । দু’জন চোখাচোখি তাকিয়ে থাকলাম । আমি মুহুত কাল ভুলে গেছি । চুপ করে পরে আছি । হঠাৎ ঘরের ভেতর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো । মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমি দু’হাত দিয়ে খাটের কিনার আকড়ে ধরে থাকলাম । এক সময় বাতাস হঠাৎ ই থেমে গেল ।
অবয়বটা এক সময় উঠে দাঁড়ালো ।আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম , কিন্তু পারলাম না । মনে হলো গলার ভেতরের সব রস কেউ নিংরে বেড় করে নিয়েছে । তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম । ভয় পেলে চলবে না । ভয় পেলে চলবে না । বাঁচতে হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই । শুধু মাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার কারণে ৭০% লোক বেঁচে যায় । সঙ্গে সঙ্গে একটা হিন্দি ছবির ডায়ালোগ মনে হলো -জো ডরগায়া ও মর গায়া ।
আমি শরীরের সকল শক্তি এক করতে চেষ্টা করলাম । তখনই আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা ছুটে গেলো কে কে ওখানে ? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলাম না । মনে হলো আমার গলায় অন্য কেউ কথা বলছে । আমি আবার ও একই প্রশ্ন করলাম -কে কে ওখানে ?
এবার মৃর্দু একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো ।
আমি আবার বললাম কে ?
-আমি । খুব আস্তে উত্তর এলো । কেউ খেয়াল না করলে শুনতে পেত না ।
-আমি কে ? ভয়ে আমার হাত পা অসার হয়ে আছে ।
-আমি কেউ না ,বলে আবয়বটা হেসে উঠলো । যেন নিক্কন হয়ে কানে বাজছে । আমি মুগ্ধ হলাম । তিথির ভাষায় অতি তারাতারি মুগ্ধ হয় গাধা মানবরা । নিজেকে আমার কাছে গাধা মানব মনে হলো ।
-আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? নিজেকে কেমন শিশু শিশু মনে হলো ।
এবার কোন উত্তর এলো না । তবে আবয়বটা উঠে গিয় ঘরের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে পরলো । মশারির ভেতর থেকেও দেখতে পাচ্ছি চেয়ারটা দুলছে । কেউ একজন হেলান দিয়ে বসে আছে চেয়ারটাতে । আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো ? হাত নাড়িয়ে চিমটি কাটার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি চেয়ারটার দিকে । (২) পৃথিবীতে কোন কিছুই যেমন স্থায়ি নয় । তেমনি আমার ভয়টাও স্থায়ি হলো না । খুব ধীরে ধীরে ভয়টা কেটে যাচ্ছে । গুন গুন করে একটা শব্দ হচ্ছে । মনে হলো আমার ঘরে থাকা আবয়বটা গান গাচ্ছে । কিন্তু আমার পরিচিত কোন সুরে নয় , অচেনা কোন সুরে । তিথি যেমন ঘরের কাজ করতে করতে আমন মনে সুর ভাজে , তেমনি । আমি সুরটা ধরতে চেষ্টা করে পারলাম না । না । এমন সুর আগে কখন ও শুনিনি । তবে সুরের মাদকতায় ভেসে গেল পুরো ঘর । আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি । আর ভাবছি কি করা যায় । একবার মনে হলো হাউমাউ করে কেঁদে কেটে যদি মাপ চাই তবে কেমন হয় । নিজেরই পছন্দ হলো না ব্যাপারটা । আমার মাথা কাজ করতে শুরু করছে । চিন্তা করতে পারছি দেখে ভাল লাগল । একবার ভাবলাম হেলুসিনেশন নয় তো ? নিজের মুখ দিয়েই বিরক্তি সূর্চক শব্দ “চুক”বেড় হয়ে এলো । সঙ্গে সঙ্গে আবয়বটির দোল খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো ।
আপনি কে ? দয়া করে বলবেন ?
মনে হলো একটা দীর্ঘস্বাস পরলো ।
এবাবে অর্যাচিত ভাবে কাউকে আমার ঘরে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি এবং অসুস্থি বোধ করছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? কি চান ?
-আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । আপনি ঘুমান । আবাও সেই হাসির শব্দ ।
-কিন্তু এবাবে কেউ ঘরে বসে থাকলে তো আমার ঘুম আসবে না ।
-চলে যেতে বলছেন ?
আপনি কে ? কেনো এসেছেন তা যদি বলতেন । আমি কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম ।
-আমি আফরোজা । এসেছি তাকাফুল শহর থেকে । আমি মানুষ সম্প্রদায়ের কেউ নই । আমি জ্বিন সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে মেয়েটি হেসে উঠলো । জ্বিন ; শুনে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথা থেকে হালকা চাপা ফুলেন মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে , পুরো ঘর মো মো করছে । হাসির শব্দে আমি আবার বিমহিত হলাম ।
আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর । আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা । নিজেকে আবারাও কেমন হেবলা মনে হলো । তিথির কথা মনে হলো ও যদি জানে গভীর রাতে ঘরে বসে আমি কোন জ্বিন মেয়ের হাসির প্রশংসা করছি তা হলে ও কি করবে ?
আপনার স্ত্রীর কথা ভাবছেন ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
খুব ভালবাসেন বুঝি ? বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো । রকিং চেয়ারটি আবার দুলছে । আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো , এখন কি আপনার ভয় লামছে ?
আমি না, বললাম । আমি মিথ্যা বললাম ।
মানুষরা খুব সহজে মিথ্যা বলতে পারে । বলে মেয়েটি আবার হাসছে । মিথ্যা বলে ধরা খাবার জন্য কেমন লজ্জা লাগছে ।
আমার একবার মনে হলো বাতি জ্বালাবো কি না ?
দয়া করে বাতি জ্বালাবেন না । আমি বাতি সহ্য করতে পারিনা । আর একটু পরে আমি চলে যাবো ।
আমি চমকে উঠলাম এ যে দেখছি আমার থর্ট রিড করতে পারছে ।
আপনি কেন এসেছিলেন ...........আমি প্রশ্নটা শেষ করতে পারলাম না ।
-এমনিতেতো আসিনি । আছে একটা কারণ আছে ।
কি কারন ?আমি কারন যানার জন্য অস্থির হলাম । আমার ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটিকে দেখি ।
-আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না ? মেয়েটি হাসতে হাসতে বললো ।
জ্বি । আমি ছোট্র করে উত্তর দিলাম ।
আমাকে না দেখাই ভাল । আমরা দেখতে মানুষের মতো নই । আমরা হচ্ছি আগুনের তৈরি । আর মানুষ হচ্ছে মাটির । আমাদের কোন নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই । আমরা যে কোন আকার ধারন করতে পারি । যে কোন জায়গাতে যেতে পারি । শুধু মাত্র আসমানের নিদিষ্ট্য একটা সীমা পর্যন্ত ।
তা হলে এটা কি আপনার আসল আকৃতি নয় ?
না ।
আপনি কি তা হলে মেয়ে নন ?
আমি মেয়ে জ্বিন । আমাদের মধ্য ছেলে মেয়ে দুটো প্রজাতি আছে । মানুষের মধ্যে আছে তিনটি ।
মানুষের মধ্যে তিনটি ? একটি নারী এবং অন্যটি পুরুষ । আমি আরেকটি খুঁজে পেলাম না । মাথা কাজ করছে না ।
আমি এখন যাবো ।
কেন এসেছিলেন তা তো বললেন না ?
আরেক দিন বলবো ।
তার মানে এখনই চলে যাবেন ?
হ্যা , আযান এর সময় হয়ে এসেছে । আমি যাই ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমন সময় মসজিত থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো । মেয়েটি হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ।
আমি তরিঘড়ি করে উঠে বাতি জ্বালালাম । না ! কেউ নেই । চেয়ারটা দুলছে । আমার মাথাটা কেমন করে উঠলো । অজানা কোন ভয়ে শরীর ছমছম করছে । কোন মতে বিছানায় বসে পরলাম । পরিশেষ : যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালে । সবাই মনে করলো আমি হঠাতই মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম । আমি ও কাউকে কিছু বললাম না । সব নিজের ভেতরে চেপে রাখলাম । বললে সবাই হয়তো হাসবে । তবে আশ্চযের বিষয় হলো এটা যে -মেডিকেল বোর্ড তন্ন ,তন্ন করে খুঁজেও আমার হার্টে কোন অসুখ খুঁজে পেলো না । যেনো রাতারাতি সব উবে গেছে । ডাক্টারা সবাই বললো মিরাকল ! মিরাকল ! কিন্তু আমি মনে মনে আফরোজাকে ধন্যবাদ দিলাম । সকল মিরাকলের পেছনেই কারো না কারো হাত থাকে । এখন আমার যখনই গভীর রাতে ঘুম ভাঙে তখনই আমি নিজের অজান্তে আফরোজা নামক জ্বিন কন্যাকে খুঁজি ।।

শেষ

ভৌতিক গল্প : বন্ধু নিখিলেস (১ম পর্ব) - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, September 24, 2011 at 11:20pm
বৈশাখ মাসের দুপুর ।
মাথার উপড় সূর্য যেন খসে পরছে । বাতাস না তো লু হাওয়া । শরীরে লাগলে পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে । আমার আর রন্জুর শরীর দিয়ে ঘাম টপ টপ করে পরছে । তোজার মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই । বাস থেকে নেমে একটা ভ্যান নিয়ে ছিলাম । সেটাও অধেক পথ এসে বললো আর যাবে না । যাবেই বা কি করে বলা নেই কওয়া নেই সামনের চাকাটা হঠাৎই ভেঙ্গে দুমরে মুচরে গেল । অজ্ঞতা বাকি পথ টুকু পায়ে হেঁটেই হওনা হলাম । কৈই ভেবে ছিলাম অনেক দিন পর গ্রামে ভ্রমনটা ফাটাফাটি হবে । না এখন দেখছি গরমে আর জার্নিতেই অবস্হা টাইট । দু’পাশের ধান ক্ষেতের মাঝ খান দিয়ে একে বেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে আমরা চলেছি । গন্তব্য আমাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু নিখিলেশের বাড়ি ।
হারিয়ে যাওয়া বন্ধু বলছি এ কারনে যে , আমরা তখন মাত্র সেকেন্ড ইয়ার শেষ করেছি । আমি ; রন্জু ,নিখিলেস আর তোজাম্মেল জহুরুল হক হলের ৩২৭ নম্বরে থাকি । চার জনে দস্তির চুড়ান্তু । নিজেদের আন্ডার ওয়ারটা ছাড়া আর বাদবাকি সব কিছু ভাগা ভাগি করে ব্যবহার করি । কে কার জন্য কতোটা করতে পারছি সেটাই ছিল মুখ্য বিষয় । ছাত্র হিসাবের চার জন তুখোর । পাল্লা দিয়ে চলে পড়া শুনা । এ সেমিষ্টারে আমি ফাস্ট তো পরেরটায় রন্জু ,তার পরেরটায় নিখিলেস । ব্যতিক্রম শুধু তোজা মানে তোজাম্মেল । সব সেমিষ্টারে থার্ড । এর কারন হলো , শালায় পড়াশুনা খুব একটা করে না । আমাদের তৈরি নোট দিয়ে দিব্ব্যি চালিয়ে যাচ্ছিল । তবে ছাত্র হিসাবে তোজাও তুখোর । কোন একটি বিষয় ওকে দু’বার পড়তে শুনিনি । সেই সময় এক রাতে নিখিলেস ব্যাগ টেগ গুছিয়ে রাড়িতে চলে গেল । আর ফিরলোনা । ওর এভাবে চলে যাওয়াটাকে আমরা মেনে নিতে পারলাম না । অনেক খোঁজা খুঁজির পরে ও যখন ওকে পেলাম না তখন আমরা ঠিক করলাম শালাকে খুঁজে বেড় করে তবেই ছাড়বো । এর মধ্যে ওর একটা চিঠি পেয়েছি -তাতে ও এভাবে চলে যাবার জন্য ক্ষমা চেয়েছে । কিন্তু ক্ষমা আমরা করতে পারলাম না । এভাবে একটি ছেলে লেখা পড়া বন্ধ করে চেলে যেতে পারে না । নিশ্চই এর পেছনে কোন কার আছে । আর আমরা এখন চলেছি সেই কারন বেড় করতে ।
কিছুটা পথ হাঁটার পরেই রন্জু বসে পরলো -না আমি আর যাচ্ছি না । মালোয়ানটারে আমার কোন দরকার নাই । আমি আর হাঁটতে পারমু না । তোরা খুইজা নিয়া আয় আমি হারামজাদারে দু’ইডা জুতার বারি মারি । নিখিলেস কে আমরা রেগে গেলে মালাউন বলে খেপাতাম ।
আমার দু’ইডাও মাইরা দিস বলে ওর পাশে বসে পরলো তোজা ।
সালা এতো দু’র জানলে কে আসতো ? মোনালিসার সঙ্গে পককোন খেতে খেতে ওর ফ্লাটে বসে আড্ডা মারতাম না আইছি গাইয়া ভুতটারে খুঁজতে । রন্জু পকেট থেকে সিগারেট বেড় করতে করতে বললো ।
তুমি কি মামা শুধু আড্ডাতেই ক্ষান্ত হইতা এইডা আংগোরে বিশ্বাস করতে কও ? তোজা আমার দিকে চেয়ে চোখ মারে ।
ঐ শালা আমার বউ এর লগে আমি আড্ডা মারি না অন্য কিছু করি তোর বাপের কি ?
না , মামা আমার বাপের এখন আর কিছু না । বুড়া হইয়া গেছে । তয় মামা আমার কিন্তু অনেক কিছু ; বলে তোজাম্মেল ঝট করে সড়ে যায় ।
আবে যা , তোর ঐ কালা বগের ঠ্যাং সুস্মিতার সঙ্গে যাইয়া যা করবি কর । মোনার দিকে চোখ দিবি তো চোখ তুইলা লামু । রন্জু মাটির একটা ঢিল তুলে তোজাকে ছুড়ে পারে ।
তোজা বসে পরাতে ঢিলটা ওর মাথার উপড় দিয়ে গিয়ে ঝোপের মধ্যে পরে । সঙ্গে সঙ্গে কেউ একেজন বলে উঠে -ওই ঢিল মারে কে রে ?
ঝোপের ভেতর থেকে হঠাৎ শব্দ আসায় আমরা হকচোকিয়ে গেলাম ।
আমি বললাম - আমরা ;
আমরা কারা ? ঝোপের ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠে ।
আপনি কে ? ঝোপের ভিতরে কি করেন ? রন্জু পাল্টা প্রশ্ন করে ।
কি করি মানে ? ওই তোরা কারারে ? বলতে বলতে ঝোপের ভেতরে থেকে কালো করে একটা লোক বেড় হয়ে আসে । হাতে একটা রাম দা ।
আমি যখন দৌড় দেবো কিনা ভাবছি । রন্জু তখন দু’পা সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে - চাচা সালাম - আমারা শহর থেইকা আইছি ।
হেইডা তো দেইখাই বোঝা যায় । তয় ঢিল মারছো কেন ? সন্মধন তুই থেকে তুমিতে আসায় আমার সাহস ফিরে আসে আমি বলি- এক বন্ধুর খোঁজে এসেছি । ঢিলটা আপনাকে মারা হয়নি । ভুল করে ওদিকে চলে গেছে । আর আপনি যে ঝোপরে ভেতর আছেন তা ও আমরা বুঝতে পারিনি ।
চোখ কান খোলা না রাখলে বুঝবা কেমনে ? তয় কার বাড়ী যাইবা কইলা ?
মানে আমরা এক বন্ধুরে খুঁজতে এসেছি ।
আরে বাবা হেয় তো কোন না কোন বাড়ীতেই থাকে ? হেই বাড়ীর নাম কি ?
সেটা তো বলতে পারবো না । তবে আমাদের বন্ধুর নাম নিখিলেস চৌধুরী । ইউনিভারসিটির রেজি:ষ্টারে এই জল্লা গ্রামের কথাই লেখা আছে । এটা তো জল্লা গ্রামই নাকি ? আমি পকেট থেকে নিখিলেসের ঠিকানা বেড় করতে করতে বলি ।
কি নাম কইলা নিখিলেস চৌধুরী ? আমার মনে হলো লোকটা একটু অবাক হয়েই নামটা উচ্র্চারন করলো ।
জ্বি । আমি মাথা নাড়ালাম । এটা কি জল্লা গ্রাম না ?
হ ; এইটা জল্লা গ্রামই । গ্রামের ভেতরেই চৌধুরী বাড়ি । যাও তোমরা । এই পথ ধইরা সোজা চইলা যাও । লোকটা আর দাঁড়ালো না । অনেকটা তারা হুরা করেই ঝোপের আড়ালে চেলে গেল । আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ।
কি হইলো রে মামা ? রন্জু আমার কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো ।
বুঝলাম না আমি অবাক হয়ে উত্তর দিলাম ।
আমার মনে হয় ভয় খাইছে । তোজা হাসতে হাসতে বললো ।
কিসের ভয় আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ।
আবে আংগোরে না , মনে হয় চৌধুরী বাড়ি যামু শুইনা ভয় খাইছে । তোজা হাসছে ।
চিকার মতো হাসছোস কেন - চৌধুরী বাড়ি নাম শুইনা ভয় পাইবো কেন ? রন্জু তোজার মাথায় চাটি মেরে জিজ্ঞেস করে ।
আর কেন জানছস না চৌধুরীরা জমিদার আর জমিদারগো মাইনসে কেন ভয় পাইতো । তোজা জ্ঞান দিতে শুরু করেছে ।
কেন ? কপাল কুচকে রন্জু জিজ্ঞেস করে ।
আবে শালায় অত্যাচারের জন্য । এইডাও বুঝোস না ?
যা । সেই দিন আর নাই । রন্জু নাক ছিটকায় ।
আহা গবেষনা বন্ধ কর চল সামনে হাঁটি । আমার খিদায় পেট চো চো করছে । আমি পেটে হাত দিয়ে বললাম ।
আমারও খিদা লাগছে । তোজা বললো । চল পা চালাই ।
একবার দেখমু না চাচায় ঝোপের আড়ালে কি করে ? রন্জু ঝোপের দিকে তাকিয়ে বলে ।
বাদ দে তো । যা ইচ্ছা করুক ।
আমি রন্জুর হাত টেনে হাটতে লাগলাম ।
(২)
জল্লা গ্রামটা বেশ বড় । আমারা প্রথমে গিয়ে পৌছালাম বাজারে । বাজারটা প্রায় লোক শূন্য বলা চলে । দু’তিনটা দোকান খোলা । বাকি সব গুলো বন্ধ । ঘরিতে তখন সাড়ে চারটা বাজে । কালো কাঠের তক্কার বেড়ায় ঘেরা একটা হোটেলে ডুকে ভাতের অডার দিলাম । হোটেলের ক্যাশে ১০ কি ১২ বছরের একটি ছেলে বসে ছিল । আমরা ডুকে বসতেই ছেলেটা এসে টেবিলে তিনটা প্লেট দিয়ে বললো কি খাবেন ?
কি কি আছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
এখানেই সব । হাতের ডান পাশে একটা গ্লাস ভাঙা সোকেসের মধ্যে ছোট ছোট তিনটা থালা । তার একটাতে ছোট মাছের বুনা , মাঝ খানেরটাতে কি একটা মাংস আর শেষেরটাতে হাতের পান্জার মতো লম্বা কি একটা মাছ ।
ঐ ডা কি মাছরে পিচ্চি ? তোজা লম্বা মাছটা দেখিয়ে প্রশ্ন করলো ।
আমার নাম পিচ্চি না মাহাবুব । ঐডা পুয়া মাছ ।
বাব্বা ! তো বাবা মাহাবুব পুয়া মাছটা আবার কি ?
তোজা আমার দিকে তাকায় । মনে হয় পোয়া মাছ হবে । আমি মাছের দিকে তাকিয়ে বলি ।
হ । পুয়া মাছ । ছেলেটা বলে ।
আর ঐডা কি ?
রন্জু মাঝখানের থালাটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে ।
ঐ ডা গরুর মাংস । আর এইডা কাচকি বুনা । কুনডা দিমু ?
সবই দে ।
সব খাইবেন ? ছেলেটা অবাক হয়ে তাকায় ।
আরে বাবা তিনডা বাটিতে তিনজনরে দে । যেইডা ভাল লাগে হেইডা বেশি খামু ।
খেতে শুরু করে বুঝলাম । খাবার খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না । এমন ঝাল যে নাক মুখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো । মাংসটা কোন অবস্হাতেই নরম করতে পারলাম না । খাওয়ার পালা শেষ করে আমরা সিগারেট ধরালাম ।
মাহাবুব টেবিল থেকে প্লেট নিয়ে যাচ্ছে ।
তুই কি নিখিলেসকে চিনিস ? রন্জু জিজ্ঞেস করে ।
না । মাহাবুব টেবিল মুছতে মুছতে উত্তর দেয় ।
চৌধুরী বাড়ি চিনোস ?
হু ; চিনি ।
আমরা ঐ বাড়ী যামু ।
ঐ বাড়ী যাইবেন ? ছেলেটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ।
হু । মনে হইল অবাক হইছোস ?
ঐ বাড়িতে কেউ থাকেনি ? কার কাছে যাইবেন ?
নিখিলেসের কাছে যামু । রন্জু ছেলেটার সঙ্গে কথা বলছে ।
ঐ নামে কাউরে চিনি না । ছেলেটা আর দাঁড়ায় না ।
মহাবুব চা হইবো রে ? তোজা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ।
না ।
কোথাও থেউকা আইনা দিতে পারবি না ?
না । আপনারা উডেন হোডোল বন্ধ করমু ।
বলোস কি ? আমি চমকে উঠে বললাম । এখন বাজে কয়টা যে হোটেল বন্ধ করবি ? আমি ঘড়ি দেললাম সোয়া পাঁচটা বাজে ।
আপনেরা উডেন ।
তোর বিল দে ।
১০০ টাহা দেন । এহানে যা খাইবেন পয়ত্রিশ টাহা । তিন জনে হইছে ১০৫ টাহা । পাচঁ টাহা মাপ । ১০০ টাহা দেন ।
ছেলেটা সত্যি সত্যি হোটেলের ঝাপ নামাতে লাগলো । আমরা টাকা দিয়ে বেড় হয়ে এলাম । বেড় হবার আগে জেনে নিলাম চৌধুরী বাড়ি যাবার রাস্তা । হোটেল থেকে বেড় হয়ে দেকি যে দুটো দোকান খোলা ছিল সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে । আমি অবাক হয়ে বললাম- কোন ভুতরা জায়গায় এলামরে বাবা । মাহাবুবের দেখানো পথ ধরে আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা সাকোর কাছে এসে পৌছালাম । আমরা যে রাস্তাটা দিয়ে হাটছি সেটা মাটির একটা রাস্তা ।অতি মাত্রায় নির্জন । কেমন গা ছমছম করে । তারউপরে সন্ধ্যা হয়ে আসছে । রাত্রিরে কোথায় থাকবো তা ভেবে আমি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে আছি । ওদের দু’জনের মধ্যে কোন চিন্তা দেখছি না । দু’জনই বেশ নিশ্চিন্তে হাঁটছে । তোজা একটু পর পর ভাঙা গলায় গান গাইছে -সোয়া চাঁদ পাখি আমার সোয়া চাঁদ ..............................।
( ৩)
সাকোটা পার হয়ে আমরা যখন এপারে এসে দাঁড়ালাম । তখন কোথাও থেকে অস্পস্ট ভাবে আযানের শব্দ এসে কানে লাগলো । সেই সঙ্গে ঠুং ঠুং ঘন্টির শব্দও শুনতে পেলাম । সাকো থেকে চিকন দু’টো পথ দু’দিকে চলে গেছে । আমরা কোন পথটা দিয়ে যাবো বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে রইলাম । দু’টো পথই ঝাপসা দেখাচ্ছে । সন্ধ্যা হয়ে গেছে । ঝি ঝি পোকাদের ডাক শোনা যাচ্ছে ।
কি রে কোন দিকে যামু ? রন্জু জিজ্ঞেস করলো ।
বুঝতে পারছি না । দুটো পথের দিকে ভালকরে তাকিয়ে আমি বললাম - ডান দিকের পথটা বেশি পরিস্কার মনে হচ্ছে । মনে হয় এগিকটা দিয়ে লোক চালাচল আছে এদিকটা দিয়েই চল ।
ঠিক আছে চল । রন্জুর বলা শেষে যেই পা বাড়াবো ওমনি প্রায় হুট করে বাম পাশের রাস্তাটা থেকে একটা লোক উদয় হলো । ধুতি ফোতুয়া পরে আছে । আমাদেরকে দেখে বললো -নমস্কার । আমরা মাথা নাড়ালাম । আপনারা কি নিখিলেস বাবুর কাছে এসেছেন ? আমরা সবাই প্রায় এক সঙ্গে মাথা নেড়ে হ্যা বললাম ।
চলুন আমার সাথে বাবু আপনাদের নিতে পাঠিয়েছেন ।
আমাদের নিতে এসেছেন আপনি ? আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম ।
আপনারা ঢাকা থেকে এসেছেন তো ?
হ্যা ।
বাবুর আপনাদের সঙ্গে লেখা পড়া করতেন তো ?
কে নিখিলেস ?
জি । আমি তেনার কথাই বলছি ।
হ্যা । ও আমাদেরে সঙ্গেই পড়তো ।
তা হলেতো ঠিকই আছে । আমি আপনাদেরই নিতে এসেছি । তিনি আপনাদের এগিয়ে নিতে পাঠিয়েছেন । দেন তো বাবুরা আপনাদের ব্যাগগুলো আমাকে দেন । এই তোরা কৈই গেলি ?
অন্ধকার থেকে বল্লম হাতে কালো মোটা দুটো লোক বেড় হয়ে এলো ।
নে নে বাবুদের ব্যাগ গুলো নিয়ে নে । তা বাবুরা আমার না হেমন্ত । আমি বাবুর খাসলোক হুকুমের গোলাম । আপনারা নিশ্চিন্তে আমার সঙ্গে চুলুন ।
কিন্তু নিখিলেস কি ভাবে জানলো যে আমরা আসছি ?
তোজা হেমন্তের দিকে তাকিয়ে বললো ।
তিনি সব জানেন বাবু । না জানলে কি চলে ? এতো বড় জমিদারী চালানো কি চাট্রিখানি কথা ।
কি বললে ছাগলটা জমিদার নাকি ? রন্জু কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে মোটা লোক দুটো রন্জুকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো । কি বললি তুই বাবুকে কি বললি বলে দু’জনই রন্জুর বুক বরাবর বল্লম তাক করলো ।
আরে করে কি ?করে কি ? বলে আমি হেমন্তর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম ।
এ্যই মুখ্যর দল তোরা থাম । তেনারা বাবুর বন্ধু মানুষ । তেনারা বাবুকে যা ইচ্ছে বলতে পারে ।সর সর পোড়ামুখোরা সড়ে যা বলছি ।
কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকে দু’জন সরে গেল । তারপর আমাদের ব্যাগ গুলো তুলে নিয়ে হাটতে লাগলো । রন্জুর ব্যাগটা পরে রইল মাটিতে । ওরা সড়ে যেতেই আমরা দ্রুত গিয়ে রন্জুকে মাটি থেকে তুলে নিলাম । হেমন্ত রন্জুর ব্যাগটা মাটি থেকে তুলতে তুলতে বললো -বাবুরা কিছু মনে মনে নেবেন না । এরা গ্রাম্য মুর্খ্য-সুখ্য মানুষ কিছু বুঝে না । রন্জু ভেবাচেকা খেয়ে গেছে । ও উঠে প্যান্ট ঝাড়তে লাগলো ।
চলেন বাবুরা । তারা তারি পা চালান । তিনি আপনাদের প্রতিক্ষায় আছেন । এমন সময় কোথা থেকে অ----উ--------উ করে শেয়ালের ডাক শুনা গেলো । আমারা দ্রুত পা চালালাম । হেমন্ত যেন উড়ে চলছে । আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি । রন্জ একদম চুপ মেরে গেছে । কোন কথা বলছে না । রাস্তার দু’পাশে ঘন ঝোপ জঙ্গল । হঠাৎ আমার কাছে মনে হলো আমাদের ফলো করে কারা যেন ঝোপ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ছুটে চলছে । দু ‘ একবার তাকিয়ে আমি দেখতে চেষ্টা করলাম । কিন্তু নিকোষ কালো অন্ধকার ছাড়া কিছুই চোখে পরলো না । তোজার দিকে তাকালাম ও’ও আমার দিকে তাকাল । হেমন্ত প্রায় উধাও হয়ে গেছে । আমরা প্রায় আন্দাযের উপড় হাটছি । এক সময় চোখে কিছু না দেখে আমি ডাক দিলাম - হেমন্ত বাবু ? হেমন্ত বাবু ?
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমার পেছন থেকে জবাব এলো -এ্যাই যে বাবু আমি । একটু পিছিয়ে পরেছিলাম ।
আপনি পিছিয়ে পরেছিলেন ? আপনি তো আমাদের সামনে সামনে হাঁটছিলেন । তোজা আর আমি প্রায় এক সাথে বলে উঠলাম ।
কৈই বাবুরা আমি তো পেছনেই ছিলাম । হয়তো অন্ধকারে ঠাওর করতে পারেননি । চলেন বাবুরা চলেন দেরি হয়ে যাচ্ছে আবার ছুটতে লাগলো ।
হেমন্ত এখটু আস্তে হাটেন না । আমাদের হাঁটতে তো কষ্ট হচ্ছে ।
জ্বি বাবু । বলে হেমন্ত প্রায় আমার গা ঘেষে হাটতে লাগলো । আরো প্রায় আধা ঘন্টা হাটার পর আমরা বিশাল একটা বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালাম । বাড়ী না বলে একে প্রাসাদ বলাই ভাল । বিশাল গেট ঢেলে ডুকতেই বিশাল উঠান উঠানের শেষ মাথায় প্রাসাদের ভেতরে ঢুকার সিঁড়ি । সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে নিখিলেস । ওর দুপাশে আরো দু’জন বাতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে । আমারা কাছে যেতেই নিখিলেস দু’সিড়ি নেমে এলো । একে একে আমরা সবাই হাত মেলালাম । যে নিখিলেশের জন্য এতোটা ছুটে আসা সে নিখিলেসকে যোনো আমরা পেলাম না ।
কোথায় জানি সুতা ছিড়ে যাওয়ার টের পেলাম । আসরে রন্জুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাই পুরো পরিস্থিকে পাল্টে দিয়েছে । নিখিলেস কিন্তু আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট স্বাভাবিক আচড়ন করার চেষ্টা করলো -রন্জুর মুখ কালো দেখে নিখিলেস ওর কাঁধে হাত রেখে বললো- তুই মন খারাপ করিস না । দেখ আমি জানোয়ারটাকে কি করি । তার পরেই হাক দিলো কৈই রে জানোয়ার দু’টো কৈই ?
উঠানের এক পাশ থেকে সেই লোক দুটো বেড় হয়ে এলো - ওদের কে দেখেই নিখিলেস চিৎকার করে উঠলো -তোরা আমার বন্ধুর শরীরে হাত দিছোস কোন সাহসে । নিখিলেসের এমন রুপ আমরা কোন দিন দেখিনি ।
লোক দুটো মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে । নিখিলেস ওর ডান হাতটা মেলে ধরলো সঙ্গে সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়ে একজন একটা তরবারি ওর হাতে তুলে দিল । বাতির আলো খোলা তরবারিটা যেন রক্তের নেশায় চকচক করে উঠলো । আমরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই । নিখিলেস সিঁড়ি থেকে নেমে লোক দুটৌর কাছে গিয়ে দাড়াঁল । তারপর যে লোকটা রন্জুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো সে লোকটাকে তরোয়ালের আগা দিয়ে ঠেলে আলাদা করে ফেললো । অজানা কোন আসংন্কায় আমি ডাক দিলাম নিখি ? নিখিলেস আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । আমি বুঝলাম নিখিলেস লোকটাকে ভয় দেখিয়ে রন্জুকে খুশি করতে চেষ্টা করছে । নিখিলেস লোকটাকে বললো বসে পর । লোকটা বিনা বাক্যে মাথা নীচু বসে পরলো । নিখিলেস লোকটার ঘাড়ে তরোয়ালটা রেখে বললো -আমার বন্ধুর শরীরে হাত দেয়ার অর্থ হচ্চে মৃত্যু । আমি বুঝেছি নিখি মজা করছে । হঠাৎ নিখি বলে উঠলো রন্জু এটা তোর জন্য -জয় মা কালি বলেই নিখিলেস তরোয়ালটা মাথার উপরে তুলে নীচে নামিয়ে আনলো । আমারা কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটার মাথা শরীর থেকে ছিটকে মাটিতে পরলো । তীরের বেগে বের হওয়া রক্ত এসে আমাদের শরীরে লাগলো । আমরা সবাই ভয়ে আতন্কে এক সঙ্গে চিৎকার করে উঠলাম । আমাদের পেছনে দাঁড়িয় থাকা সবাই এক সঙ্গে বলে উঠলো জয় মা কালি । আমি বমি করে দিলাম । TO BE CONTINUED.....
[Next part will be published tomorow]

।। যাত্রাপালা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, September 25, 2011 at 10:41pm
(এটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা, প্রাইভেসীর জন্য লেখায় বর্ননাকারীর নাম লিখি নাই। হতেও পারে সে ব্যাক্তিটি আমি!)
আমি জানি এ লেখাটি অনেকেই বিশ্বাস করবে না। কেউ কেউ বলবে হেল্যুসিনেশন, কেউ বলবে অপটিক্যাল ইল্যুশন কেউ বলবে ডিসঅর্ডার। যে যাই বলুক, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাক বা না থাক, তিনজন মানুষের মনের কোনে ক্ষত হয়ে থাকা বাস্তব এ ঘটনাটি নির্ভেজাল সত্য!!! (কারণ, আমি মেস হিস্টিরিয়া হতে শুনেছি, মেস হেল্যুসিনেশন হতে শুনিনি কখনও!!!) ঘটনাটা আজ থেকে ৮-১০ বছর আগের। শীতকালীন ছুটিতে কলেজ বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দুদিন পরই জানলাম আমাদের পাশের গ্রামে যাত্রাপালার আয়োজন করেছে। শহুরে জীবনে এসব সংস্কৃতির সাথে পরিচিত না থাকায় খুব ইচ্ছে করছিল সরাসরি যাত্রা দেখার। রাতে ডিনার সেরে আমরা ১০টার দিকে রওয়ানা হলাম ওই স্থানে। কারণ যাত্রা ১০টায় শুরু হয়ে একটানা রাত ১টা পর্যন্ত চলবে। তখন শীতকাল ছিল, আমি আমার এক চাচাতো ভাই ফারুক আর দুঃসম্পর্কের এক সমবয়সী চাচা আমজাদকে নিয়ে রওয়ানা দিলাম। সমবয়সী বলে ওকে আমজাদ বলেই ডাকি। পথে আরো বেশ কজন সঙ্গী পেলাম। অবশেষে রাত সাড়ে দশটায় পৌছলাম। দেখলাম যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। পালার নাম “কমলার বনবাস”। টেলিভিশনে একবার যাত্রা দেখেছিলাম কিন্তু ওই যাত্রা আর এই যাত্রার মাঝে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। যাত্রার প্রতিটি পর্বের বিরতিতে একটি করে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনী হচ্ছিল(No Nudity). ওসব বাদ দিলে ভালই লাগছিল যাত্রা! রাত পৌনে বারটার দিকে হঠাৎ করে এলাকার মুরুব্বিরা সদলবলে হাজির হয়ে অশ্লীলতার অভিযোগে যাত্রা পন্ড করে দিলেন এবং মাইকযোগে সবাইকে যার যার বাড়ি চলে যেতে অনুরোধ করেন। সবার সাথে সাথে আমরাও রওয়ানা হলাম বাড়ীর পথে । কিছুদুর যাওয়ার পর সবাই দাড়িয়ে গেল। সবাই ভাবছিল এতক্ষনে হয়তো আয়োজক কমিটি একটা রফাদফা করে ফেলেছেন! শেষে বিরক্ত হয়ে আমি আমজাদ ও ফারুককে নিয়ে রওয়ানা দিলাম এবং তারাতারি পৌছানোর জন্য রাস্তার বদলে ফসলি জমির বিশাল মাঠের উপর দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।তখন সবার ফসল কাটার পর্ব শেষ তাই জমির আইলের পরিবর্তে জমির উপর দিয়েই হাটা শুরু করলাম। কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পর টের পেলাম আজ প্রচুর কুয়াশা জমেছে। যাত্রা পেন্ডেলের আলোর কারণে এতক্ষন সমস্যা না হলেও ঘন কুয়াশার কারণে দশ হাত দুরের জিনিস ও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। কুয়াশা যেন আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। ক্ষীন চাঁদের আলো থাকায় দেখে শুনে পা ফেলতে পারছি। তার পরও আমাদের এলাকার জমি, চোখ বেঁধে দিলেও পৌছাতে পারব এমন আত্মবিশ্বাস আছে আমাদের। তাই ভয়ের বদলে উপভোগই করছিলাম! কিছুদুর যাওয়ার পর দেখলাম একটি মেয়ে জমিতে পড়ে আছে! পড়নে তার যাত্রাবালাদের পোষাক। উপুড় হয়ে পড়ে আছে সে। আমজাদ বলল, মনে হয় মুরুব্বীরা আক্রমন করেছিল তাই সে এদিক দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে ভয়ে বেহুশ হয়ে গেছে। তাকে সনাক্ত করার জন্য উল্টালাম। ততক্ষনে চক্ষু আমাদের কপালে! একি! ও গায়ে পোষাক নেই! সারা শরীরে অসংখ্য ক্ষত, গলায় ওড়ানা পেচানো; চোখ দুটো খোলা যেন বের হয়ে যাচ্ছে! উল্টানো শরীরে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল তাই প্রথম দেখায় বুঝতে পারি নি। ওকে উল্টানোর জন্য ওর হাত ধরার সময় কেমন যেন একটা অনুভুতি হল। সিম্পটম দেখে ফারুক বলল, “রেপড বিফোর মার্ডার! এক্ষুনি পালা!!” কেউ দেখে ফেললে আমাদের সন্দেহ করবে তাই তিনজন একসাথে দিলাম দৌড়! ট্রাকে এ দৌড় দিলে সম্ভবত বিশ্বরেকর্ডটা ওসাইন বোল্টের হতনা! সে যাই হোক, দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় মনে খটকা লাগল। আমরা কি সঠিক পথে যাচ্ছি??? কিছুদুর যেতেই দেখলাম আমাদের যে পথে যাওয়ার কথা ছিল আমরা তার উল্টোদিকে আরেক ইউনিয়নের এক গ্রামে চলে এসেছি। একবার ভাবলাম এ গ্রামে এক ফুপু থাকে, ওনার বাসায় চলে যাই। সকালে রওয়ানা হবো। ফারুক বলল ওর মা ওর জন্য অপেক্ষা করবে কারণ ফারুকদের কাচারি ঘরে নতুন দরজা লাগানো হয়েছে কিন্তু বাইরের দিকে তালা লাগানোর ব্যবস্থা নাই। এদিকে পরদিন যদি শুনে যে ওখানে ধর্ষন ও হত্যা হয়েছে এবং আমরা আমাদের গ্রামের পরিবর্তে এখানে এসেছি তবে ফুপা আমাদের সন্দেহ করতে পারেন, এমনকি পুলিশের কাছে তুলে দিতে পারেন।তাইআবার যাত্রা শুরু করলাম। এবার ভাবলাম পথ হারানোর সম্ভাবনা নাই কারণ, একটা ছোট নালা সোজা আমাদের গ্রামে প্রবেশ করেছে তাই আমরা নালার পাশ দিয়ে হাটা দিলাম। সেদিন যদি বুঝতাম আমাদের সামনে কঠিন বিপদ তবে ওই গ্রামেই থেকে যেতাম! আমরা যে নালার পাশ দিয়ে হাটছি ওই পথে আমাদের গ্রাম আনুমানিক ৫কিঃমিঃ দুরে। আমরা ভুতে বিশ্বাসী ছিলাম না তাই নির্ভয়ে হাটা দিলাম। অর্ধেক পথ আসার পর আমরা যে স্থানে পৌছলাম তার থেকে নিকটতম বসতির দুরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার! প্রায় আয়তকার ফসলি জমির মাঠ। গুগল ম্যাপ থেকে দেখলে যেন ফুটবল মাঠ! ধান চাষের সময় এ মাঠের দৃশ্য যে কত মনমুগ্ধকর তা অকল্পনীয়! প্রায় ১০/১৫ কদম যাওয়ার পর দেখলাম আরেক যাত্রাবালা পড়ে আছ ঠিক আমাদের সামনে। আমজাদ বলল “খাইছে, আমার তো মনে হয় সব যাত্রাবালারাই ধর্ষনের শিকার হয়েছে। কাল পুলিশ এসে আশেপাশের গ্রামগুলো তছনছ করে ফেলবে”। ফারুক আমাদের নিষেধ করল যেন কাউকে যেন হাত না লাগাই। সে যাই হোক আমরা মনে সাহস সঞ্চয় করে সামনের দিকে হাটা দিলাম। ১৫/২০ কদম যাওয়ার পর একটা গোঙ্গানির মত আওয়াজ পাওয়া গেল। “সে বেঁচে আছে” বলে পিছনে ফিরে তাকিয়েই চক্ষু চড়ক গাছ! খিলখিল করে হেসে উঠল সে। আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে সে। সেকি ভয়ঙ্কর চাহনি! কুয়াশার মাঝেও তাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সেই মেয়েটাকে যাকে মৃত পড়ে থাকতে দেখেছিলাম কিছুক্ষন আগে। আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে! নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল। আমাদের দিকে তাকিয়ে সে সূর করে গেয়ে উঠল একটু আগেই যাত্রাপালায় শোনা গানের লাইন “যেওনা, যেওনা, রহিম গো......” সূরের মুর্ছনায় শরীর অবস হয়ে যাচ্ছিল আমার। এমতাবস্থায় আমজাদ হ্যাচকা টানে আমাকে ঘুড়িয়ে বলল ভা---গো---! আবার দৌড়াতে শুরু করলাম; ঘন্টাখানেক আগের মত ধর্ষক হিসেবে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে না, ভূতের ভয়ে! সুরা, দুয়া, দুরুদ যা যা মনে ছিল চিৎকার করে বলতে লাগলাম। কিছুদুর যাওয়ার যা দেখি একি আমরা তো সেই স্থানে চলে এসেছি যেখানে প্রথমবার মেয়েটাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলাম! দেখলাম মেয়েটা এখনো পড়ে আছে । ভাবলাম এটা সত্যিকারের মৃতদেহ আর নালার পাশেরটা ভূত। ভাবামাত্রই মেয়েটা উঠে দাড়ালো। আর আমাদের দিকে তেড়ে আসল আর খিলখিল করে হাসতে লাগল। আবার দিলাম দৌড়! আমরা সেই যাত্রা পেন্ডেলের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু কিছুদুর যেতেই দেখি মেয়েটা সামনের দিক থেকে আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। আবার উল্টোদিকে দৌড় শুরু করার আগে বাঁচাও বলে চিৎকার করতে লাগলাম। ভাবলাম এখানে চিৎকার করলে লোকজন শুনতে পাবে কিন্তু একি?? গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছেনা! দৌড় শুরু করলাম। কিন্তু কোনদিকে? তার খবর নেই কারো! প্রায় মিনিট পনের দৌড়ানোর পর মনে হল আমাদের পিছনে কেউ নেই। তাই একটু রেস্ট নেয়ার জন্য থামলাম। আমাদের এত স্টেমিনা নাই যে সারারাতই স্প্রিন্টারদের মত দৌড়াতে পারব। মিনিটখানেক সময় দাড়ানোর পর দেখি, তিনদিক থেকে তিনজন ছুটে আসছে! ওরা আমাদের থেকে অনেক দুরে ছিল তখনও। অবাক হলাম, কুয়াশার কারণে ১০-১৫ ফুট দুরের জিনিস দেখা যায়না কিন্তু শ-দেড়শ ফুট দুরের তিনজনকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! এ কি করে সম্ভব? আমাদের শুধু একটা দিকই খোলা। এবার আমাদের মুখ খুলল। ফারুক কাপঁতে কাঁপতে বলল “এদিকে যাবনা। এটা সম্ভবত ওদেরই ফাঁদ! আমরা বুঝে উঠতে পারছিনা আমরা কি করব??? একদিকে মাথা কাজ করছেনা, তার উপর পায়ের ব্যাথা! ওরা আরও কাছাকাছি চলে আসছে।অবশেষে আমজাদ ক্ষীন কন্ঠে বলল, শেষবারের মত কালেমা তৈয়বা পড়ে নে যাতে ঈমানের সাথে মরতে পারি। তিনজন একসাথে কালেমা পড়ে যে দিকটা খোলা সে দিকেই দৌড় শুরু করলাম। থাক ফাঁদের ভয়! যার নাম নিয়ে দৌড় দিলাম সেই আল্লাহ্ ই শেষ ভরসা। আমাদের দৌড়াচ্ছি আর পিছনে তাকাচ্ছি। দেখলাম ওরা আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে পারছেনা। হঠাৎ আমাদের ডাকতে লাগল, “দাঁড়া! দাঁড়া কইচি! নয়তো ভাল হবে নে”! অবাক হলাম। কারণ, যেদিকেই গেলাম সেদিকেই তাদের উপস্থিতি তবে কেন দাঁড়া বলে ডাকাডাকি??? ভাবলাম আমরা সঠিক পথেই এগুচ্ছি! নিরাপদ স্থানের দিকেই যাচ্ছি! আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি তিনটা বিশালাকৃতির চিতা বাঘে পরিণত হয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে এবং মাত্র ১০ সেকেন্ডেই দুরত্ব অর্ধেকে কমিয়ে ফেলেছে। হৃদকম্পন সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে! আর মাত্র ১০ সেকেন্ড বাকী! শেষবারের মত তাকাতেই দেখি ঘোড়া আকৃতির চিতাবাঘ, চোখ দিয়ে তার অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে!! তিন জন সমানতালে দৌড়াচ্ছি। আর মনে মনে মৃত্যুর কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছি! পেছনের পায়ের আওয়াজ ক্ষীন থেকে জোড়ালো হচ্ছে! আমরা দৌড়াচ্ছি সমানতালে। ওদের নিঃশ্বাসের শব্দে অনুভুত হচ্ছে মাত্র ১০ ফিট দুরে ওরা! পিছনে তাকানোর সাহস পেলামনা। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করছি এমনি আমজাদের চিৎকার “ লাফ দে, সামনে দেয়াল”। ঠিক তখনি আমার ঘাড়ে গরম বাতাসের মত অনুভুত হল! “আল্লাহু আকবার” চিৎকার দিয়ে প্রায় তিনফিট উঁচু দেয়াল পার হলাম। ভুমি স্পর্শ করার সময় মনে হল একটা মাঁচার উপর পড়েছি! মড়মড় করে মাঁচা ভাংতেই জ্ঞান হারালাম! তারপর যখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম, তখন ক্ষীণ দৃষ্টিতে দেখি আমার শরীরে একটা সাদা কাপড়। ভাবলাম, খোদা হয়তো আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তাই মৃত্যু যন্ত্রণা টের পাইনি। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না। উপরের দিকে যাই দেখি সব সাদা! হাত দিয়ে নিজের শরীর স্পর্শ করে দেখতে লাগলাম পরকালে দেহ কি মানুষাকৃতির থাকে কি না। মুনকার নাকিরের (কবরের প্রশ্নকারী ফেরেশতা) জন্য অপেক্ষা করছি সেই সময় একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। “আমার বাবার জ্ঞান ফিরেছে”। একি? এত দেখি আম্মার চিৎকার! আস্তে করে চোখ কঁচলে দেখলাম আম্মা আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ছে । ঝাপিয়ে পড়ার মূহুর্তে দেখলাম একপাশে দেয়ালে লেখা – রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ডাস্টবিনে ফেলুন। আদেশক্রমে –জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ! মা আমাকে ধরে কাদঁছে আর বলছে “তিনদিন ধরে আমি না ঘুমিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও”। আমি আবার জ্ঞান হারালাম। এভাবে ১৫-২০ দিন চিকিৎসার পর, মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং চিকিৎসক ও মনোবিদদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমি সুস্থ হয়ে উঠি। পরে জানতে পারি, আমাদের গ্রামের এক মধ্যবয়সী লোক সেদিন ভোরে কবর জিয়ারত করার জন্য কবরস্থানে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পান একটা কবর ভাঙ্গা, তার ভিতর একজন সহ আশেপাশে আরো দুইজন মানুষ পড়ে আছে! ভয় পেয়ে গ্রামে গিয়ে ঘটনা জানায় সে। উৎসুক গ্রামবাসী এসে আমাদের তিনজনকে অচেতন অবস্থায় থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। দুইজনের জ্ঞান ফিরলেও আমার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আমাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে একজন বুজুর্গ আলেমকে প্রথমে কথাগুলো খুলে বলার পর তিনি বলেন, আমরা কবরস্থানে প্রবেশ করায় বেঁচে গেছি। সম্ভবত কিছু দুষ্ট জিনের খপ্পরে পড়েছিলাম আমরা। ওরা সাধারনত এভাবে কৌশলে দলবদ্ধ মানুষদের বিচ্ছিন্ন করে ভয় দেখিয়ে মজা পায়। এধরণের ঘটনা আরো নাকি ঘটেছে এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আমরা তিনজন একসাথে ছিলাম এবং তিনজনই কবরস্থানে প্রবেশ করায় আমাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারেনি তারা। কারণ কবরস্থান পবিত্র যায়গা এবং তারা সেখানে কোন ক্ষতিসাধন করতে পারেনা। চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানলাম, অতিমাত্রায় ভয়, ক্লান্ত শরীর থাকায় আমরা জ্ঞান হারিয়েছিলাম সেদিন। আমাদের উঠতি বয়সের কারণে হৃৎপিন্ড সবল ছিল বিধায় হার্টএটাক হয়নি! আরো জানলাম, সেদিন মুরুব্বীদের সাথে সমঝোতা হওয়ায় আধা ঘন্টা বিরতির পর যাত্রা শুরু হয় এবং সবাই নাকি রাত রাত দেড়টা পর্যন্ত অশ্লীল নৃত্যসমেত যাত্রা উপভোগ করেছেন । যাত্রাদলের সবাই বহাল তবিয়তে তাদের গন্তব্যে ফিরেছেন এবং যাত্রাদলের প্রধান আবার আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বি:দ্র: এই গ্রুপের অনেক লেখকই তাদের গল্পে কবরস্থানকে ভুত-প্রেতের আবাসস্থল বলে মনে করেন যা তাদের গল্পে ফুটে উঠে। তাদের বলছি, কবরস্থানে ভুত-প্রেত থাকে না। এমনকি কবরস্থানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে না। যদি ঘটে থাকে তবে তা মানুষ দ্বারা ঘটিত হতে পারে যা এলাকাবাসী ভূতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছে!!!

লেখক: মো: আরিফুর রহমান (সোহান) ফেসবুক আইডি: Arifur Rahman Suhan

।। অদ্ভুত রাত এবং একটি সাদা পরী ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, September 27, 2011 at 11:09pm
২০১০ সালের জুন মাস। রাত ১ টায় গুলশানে একটা DJ Party থেকে বাসায় ফিরলাম। আমার বাসা ছিল শনির-আখড়ায়। বাসায় আসার পর আম্মুর মুখে বকা শুনে গোছল করে বিছানায় গেলাম ঘুমানোর জন্য। আজ ডিনার করবো না। আমার রুম থেকে বাহিরে যাবার জন্য একটা দরজা ছিল। বাড়িটা দুতলা। একটু পুরনো। আমরা ৩ মাস হল বাড়িটাতে উঠেছি। আমি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হটাত আনুমানিক রাত ২.৩০ এর দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে যায় নাকি ব্যাপারটা স্বপ্নে দেখি তা আজো একটা রহস্য। যাই হোক, আমি দেখলাম আমার গায়ে একটা সাদা কাপড় জড়ানো। কেউ যেনও আমাকে সেই সাদা কাপড়টা সহ টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার সাথে করে। আমি ঘুমানোর আগে দেখেছিলাম যেই দরজা দিয়ে বাইরে যাওয়া যায় সেটা লাগানো ছিল। ভুল হবার প্রশ্নই আসে না, কারন আমি নিজে চেক করে ঘুমিয়েছিলাম। সেই সময় দেখলাম দরজাটা হা করে খোলা।
হটাত অনুভব করলাম আমার শরীরে কেউ বা কিছু একটা যেনও হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হাতটা আশ্চর্য রকমের ঠাণ্ডা।
যখন ব্যাপারগুলো এতটা অনুভব করতে পারছিলাম তখন শেতাকে স্বপ্ন হিসেবে আখ্যায়িত করা সম্ভব না। আমি তাকিয়ে দেখলাম কেউ যেনও সত্যি সত্যিই আমার হাত ধরে বসে আছে। আমি যা দেখলাম তা আমার মোটেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। দেখলাম, আমার সাড়া গায়ে সাদা কাপড় জড়ানো। আমি আমার রুমে নেই। উপরে খোলা আকাশ আর পাশের পড়ে থাকা স্তুপ দেখে বুঝতে পারলাম আমি আমাদের বাসার ছাদে আছি এখন। আমার পাশে এক ভয়ঙ্কর সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। সেই মেয়ে খুব শক্ত করে আমার হাত ধরে রেখেছে আর ক্রমশই আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটার গায়েও অনেক সুন্দর একটা সাদা কাপড় দেখলাম। চাঁদের আলোতেও সেই কাপড় ঝলমল করছিলো।
আমার বারংবার মনে হচ্ছিল যে এটা বাস্তবে ঘটা সম্ভব না। পুরো ব্যাপারটাই কল্পনা। আমার ভয়ঙ্কর কোনও দুঃস্বপ্ন। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু গলা দিয়ে কোনও শব্দ বের হল না। আমি বারবার তার হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। পারলাম না। আমার সব চেষ্টা বিফলে গেলো। মেয়েটা সাঁড়াশির মত শক্ত করে আমার হাতটা ধরে রাখল। আমার হটাত মনে হল, আমার মাথায় কিছু একটা বসে পড়ছে। খুব ভারি। আমার গায়ে প্রবলভাবে কোনও কিছুর চাপ অনুভব করতে পারলাম। শেষবারের মত তাকিয়ে মেয়েটার মুখটা চোখে পড়লো। এরপর আর কিছুই মনে নেই। আমি জ্ঞান হারাই।
সকালে চোখ খুলে দেখি আমি হসপিটালে। আমার মা আমার পাশে বসে কাঁদছে। দেখলাম আমার আর অনেক আত্মীয়রাও আছে সেখানে। সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠার স্পষ্ট দেখতে পেলাম। দেখলাম আমার ছোট চাচা, যিনি ইংল্যান্ডে থাকেন, তিনিও চলে এসেছেন। হাসপাতালে আমাকে কেউই কিছু বলল না। ২ দিন পর আমাকে বাসায় নিয়ে আশা হল। এরপর জানতে পারলাম, আমি একটানা ৬ দিন অজ্ঞান ছিলাম। সেদিন সকালে আম্মু আমার রুমে গিয়ে আমাকে পায়নি। তিনি দেখেন রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো। এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখা যায় আমি সেখানে নেই, কিন্তু বিছানায় কিছু রক্ত পড়ে আছে। একদম তাজা রক্ত। সেদিন সাড়া বাড়ি খুঁজাখুঁজি করে আমাকে পাওয়া যায় ছাদে, সিঁড়ির পাশে পড়ে ছিলাম আমি। আমাকে এরপর অনেক কবিরাজের কাছে নেয়া হয়েছে। সবাই বলেছেন যে, এটা একটা পরী ছিল। আমরা এখন বাসাবোতে থাকি। আমি সুস্থ আছি আল্লাহর রহমতে। কিন্তু এখনও মাঝে মাঝে সেই রাতের কথা মনে পড়ে। আঁতকে উঠি। সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাড়া করে ফেরে আমাকে। শেয়ার করেছেনঃ Naim Hasan ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/naim.hasan1 বাংলা রি রাইটিং - তিথি (অ্যাডমিন)

।। কলেজ হোস্টেল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, September 27, 2011 at 10:47pm
আমি অক্ষর্। আমি আমাদের কলেজ হোস্টেলে থাকি। আমাদের কলেজ হোস্টেল নিয়ে অনেক ভয়ের কাহীনি আছে। একটি কাহীনি আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করছি।

আমাদের হোস্টেল বিল্ডিংটা অনেক পুরানো। হোস্টেলের পিছনেই, একদম হোস্টেলের সাথে লাগানো একটি অনেক বড় এবং অনেক পুরানো কবরস্থান। কাহীনিটা আজ থেকে ৪/৫ বছর আগের্। সে সময় আমাদের যে বড় ভাইরা হোস্টেলে থাকতো তাদের নিয়ে এই কাহীনি। সে সময় যে ভাইয়ারা থাকত তাদের মধ্যে সুমন নামে একটা ভাইয়া ছিল। সুমন ভাইয়া একদিন অনেক রাত পর্যন্ত পড়ছিলো। হোস্টেলের বাকি সবাই ঘুমায় গেছিলো। একসময় হঠাৎ তার টয়লেট এর চাপ পায়্। তখন সুমন ভাই তার রুম্-মেট ফিরোজ ভাই কে ডেকে নিয়ে টয়লেটে যায়্। সুমন ভাই টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়্, আর ফিরোজ ভাই বাহিরে দাড়ায় থাকে।
ফিরোজ ভাই অনেকক্ষন প্রায় ৩০মিনিট বাহিরে দাড়ায় থাকে। এর পর সে বিরক্ত হয়ে সুমন ভাই কে ডাকতে থাকে। কিন্তু সুমন ভাই কোনো উত্তর দেয় না। ফিরোজ ভাই রেগে গিয়ে টয়লেটের দরজা ধাক্কাতে থাকে। তবুও সুমন ভাই কোনো উত্তর দেয় না। এবার ফিরোজ ভাই ভয় পেয়ে যায়্। সে হোস্টেলের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে আসে। সবাই মিলে অনেকক্ষন ডাকাডাকি ও দরজা ধাক্কায়্। কিন্তু সুমন ভাই কোনো উত্তর ই দেয় না। এর পর সবাই মিলে টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে ফেলে। দেখতে পায় ____

সুমন ভাইয়ের পা দুটো উপর দিকে আর মাথাটা টয়লেটের প্যানের গর্তের ভিতরে ঢুকানো। সুমন ভাই মরে গেছে।

এই গল্পটা সত্যি নাকি মিথ্যা আমি জানি না। কিন্তু এখনো ওই টয়লেটের প্যানের গর্তের মুখটা চার দিকে ভাঙ্গা। আর আমরা এখন যে বন্ধুরা হোস্টেলে থাকি, তারা খুব দরকার না হলে রাতের বেলায় ওই টয়লেটে যাই না। শেয়ার করেছেনঃ অক্ষর

।। জ্বীনের বাদশা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, September 28, 2011 at 10:33pm
আমার গল্প সব সাধারণ টাইপের। কঠিন ভয়ের কোন ভূতের অভিজ্ঞতা আমার নেই। তাই পাঠকদের প্রতি অনুরোধ কঠিন ভয় পেতে চাইলে দয়া করে অন্য গল্প পড়ুন ; )। তবে একটা গ্যারান্টী দিতে পারি যে এই গল্পের প্রতিটি বর্ণনা ১০০% সত্যি। আপনারা আমার আগের গল্পটি পড়ে থাকলে অবশ্যই ভূত বিষয়ে আমার অতি আগ্রহ বা অতি ভয়ের বিষয়ে কিছুটা জানেন। ছোট বেলা থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস। ক্লাসের বই ছাড়া পৃথিবীর যে কোন বই পেলেই মোটামুটি হুমড়ি খেয়ে পড়ি। শেষ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই। কোন কোন সময় দিনে ২টি বইও শেষ করে ফেলতাম। আর যদি সেটা হত রহস্য, গোয়েন্দা বা ভৌতিক কাহিনী তাহলে তো কথাই নেই! আমরা তিন বোন ছিলাম। ভূত বিষয়ে আমাদের তিন বোনেরই নানারকমের জল্পনা কল্পনা চলত। বাসায় থাকত ভূতের বই। "ভিরানা", "পুরানি হাওয়ালি”‌ "তাহখানা", "বিশ সাল বাদ" এসব সিনেমা দেখতে দেখতে মুখস্ত। ছোটবেলার অনেক অভ্যাসের মত ভূত বিষয়ে আমার ফ্যান্টাসি কেন যেন এখনও যায়নি। তবে সুবিধা হল ছোটবেলায় অনেক ইচ্ছে পূরণ করা সম্ভব না হলেও এখন কোন ইচ্ছেপূরণে আর বাঁধা নেই। গল্পের প্রয়োজনেই হয়ত আমাকে আমার বা আমার পরিবারের পরিচয় দিতে হবে, তবে স্থানটির উল্লেখ করছিনা। কেউ কেউ অনুমান করতে পারেন ; )। ২০০৮ সালের দিকের ঘটনা। আমি কোন একটা জেলায় ডিসি অফিসে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে কাজ করি। আমার বর একই জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। আমার বর আমার সিনিয়র হওয়াতে তার সুযোগ সুবিধা বেশী থাকায় আমার জন্য নির্দিষ্ট কোয়ার্টারে না থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কোয়ার্টারে থাকি। চাকুরীতে যোগদানের পর ৪ বছর আলাদা আলাদা জায়গায় কাজ করার পর এই প্রথম একই জায়গায় ২ জনের পোষ্টিং। পুরো পরিবারের মহানন্দে দিন কাটছে। ঢাকা থেকে ৪ ঘন্টার দূরত্ব হওয়ায় সহকর্মীরা ছাড়া অন্য কেউ তেমন একটা আমাদের বাসায় বেড়াতে আসেনা। একদিন আমার বাবার এক বন্ধু যিনি জেলা সদরেই থাকেন আমাদের বাসায় বেড়াতে এলেন। মুনীর চাচাকে ছোটবেলা থেকেই চিনতাম, বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তাই বিভিন্ন বিষয়ে গল্প চলছে। কথায় কথায় চাচা বলছিলেন ব্যবসা ভালো যাচ্ছেনা, বিভিন্ন সময়ে লস হয়েছে। একটু পরই বললেন জেলা সদরের কাছাকাছি একটা উপজেলায় মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছেন। আমি চোখ বড় করে বললাম, "আড়াই লক্ষ টাকা!!! আপনার না ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে!" তখন তিনি বললেন এক জ্বীনের বাদশার কথা! বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিপদে যার কাছে গিয়ে উনি হাতে হাতে ফল পেয়েছেন। তার জন্যই এত চাঁদা। ততক্ষণে আমার মোটামুটি হার্ট এটাকের মত অবস্থা!! বলে কি!! জ্বীনের বাদশা!! সারাজীবন যা খুঁজেছি সে এখানেই আছে! এই জেলায়!! সাথে সাথে ধরে বসলাম "জ্বীন দেখব"। চাচা হেসে জানালেন, জ্বীন অবশ্যই দেখাবেন, তবে সেই উপজেলায় তার বাড়ীতে যেতে হবে। তিনি কখনো বাইরে যাননা। আমিও বেঁকে বসলাম। বললাম, আপনি সেই হুজুরকে আমাদের সালাম দেবেন আর বলবেন আমরা তাকে আমাদের বাসায় আসার জন্য অনুরোধ করেছি। আমার পীড়াপীড়িতে চাচা তখনি জ্বীনের বাদশার মোবাইলে ফোন দিলেন। আমাদের পরিচয় পাওয়ার পর কিছুক্ষন না না করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি জেলা সদরে আমদের বাসায় আসতে রাজী হলেন। সময় দিলেন শুক্রবার। মাগরিবের আযানের আগেই তিনি চলে আসবেন। প্রস্তুতি হিসেবে ২ হালি কলা আর মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখতে বললেন। এরপর চাচা বিভিন্ন সময়ে জ্বীনের কাছে থেকে কি কি উপকার পেয়েছেন তা গল্প করতে লাগলেন। আর চলে যাওয়ার সময় বলে গেলেন কলা, মিষ্টি তিনিই নিয়ে আসবেন। আরও বলে দিয়ে গেলেন যে ঘরটিতে জ্বীন আনা হবে সে ঘরটি কিভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে। আমি সীমাহীন কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সময় যেন আর কাটেনা। ঢাকায় বোনদের ফোন করে জানালাম শুক্রবারে কি হতে যাচ্ছে। মেজ বোনের বাচ্চার পরীক্ষা সামনে, সে না আসলেও বড় বোন চলে এলো। আস্তে আস্তে সেই দিন চলে এলো। আমি জ্বীন দেখতে চাইলেও কিছুতেই আমার রুম বা আমার ছেলের রুমে আসর বসানোর আয়োজন করতে চাইলামনা ; )। প্রায়ই বিভিন্ন কাজে আমার বরকে বাইরে থাকতে হয়। তখন যদি একা একা ভয় পাই! বেছে নিলাম একদম কর্ণারের ছোট রুমটি যেটাতে শান্ত (আমার ছেলের ফুফাতো ভাই) থাকে। বিছানায় জায়নামাজ বিছানো হল। বিছানা মোটামুটি অনেক বড়। ওটাতেই সবার জায়গা হয়ে যাবে। শুধু একটা বাড়তি চেয়ার বিছানার পাশে জায়নামাজ দিয়ে ঢেকে রেডী রাখা হলো যেটাতে জ্বীন বসবে। সারাঘরে এয়ার ফ্রেশনার ছড়িয়ে দেয়া হলো। মাগরিবের আযানের ১৫/২০ মিনিট আগেই মুনীর চাচা জ্বীনের বাদশাকে নিয়ে চলে এলেন। চাচার হাতে কলা, মিষ্টি। আমার আর আমার বরের সাথে হুজুরকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভদ্রলোককে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। অতি সাধারণ দেখতে মাঝারি উচ্চতার একজন ভদ্রলোক। মুখে বুক পর্যন্ত লম্বা কাঁচা-পাকা দাঁড়ি। বয়স সত্তুরের কাছাকাছি হবে। পরণে হুজুরদের মত লম্বা সাদা পাঞ্জাবী। মুখে পান। বাবা-মা বা অতি মুরুব্বীজন ছাড়া কাউকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। হুজুরকে মুখে সালাম দিতেই চাচা চোখ ইশারা করতে লাগলেন, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার জন্য। অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাই করতে হলো। আমার বড় বোনকে দেখলাম পায়ে হাত দিয়ে সালামের ভয়ে পিছন থেকে কেটে পড়ছে! আমি সাথে সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিলাম, সেও আমার মত পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে বাধ্য হলো আর আমার দিকে কটমট চোখে তাকাতে লাগলো ; )। তাদের সাথে আর কারো আসার কথা না থাকলেও দেখি বাচ্চা একটা মেয়ে এসেছে। মেয়েটির বয়স
১৩/১৪ বছরের বেশী হবেনা। আপাদমস্তক ঢাকা, শুধু মুখ দেখা যাচ্ছে। মেয়েটি কে জিজ্ঞাসা করতেই হুজুর বললেন তার এক আত্নীয়া, ২/৩ দিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। বাসায় কেউ ছিলোনা তাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। তবে অসুবিধা নেই, এই মেয়ে আসরে বসবেনা বা ওই রুমে ঢুকবেনা। মাগরিবের নামাজ শেষ হলে জ্বীন ডাকার সময় হল। সবাইকে অযু করতে হবে। ভয়ে ভয়ে অযু করছি, কারণ চাচা বলেছে অযু শুদ্ধ না হলে জ্বীন চড়-থাপ্পর মারতে পারে। হায় হায় বলে কি! এরকম হলে তো কেলেংকারী হয়ে যাবে! আমার বর কেটে পড়তে চাইছে মনে হলে করুন চোখে তাকে থাকতে অনুরোধ করলাম। কারণ ততক্ষণে আমার ভয় লাগা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের ধর্মে জ্ব্বীনের অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানি। কিন্তু কেউ একজনের অনেকগুলো পোষা জ্বীন রয়েছে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে ফল বা বিভিন্ন রোগের ঔষধ এনে দেয় তা বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছেনা। এদিকে জ্বীন ডাকার ঘটনা গোপন ছিলোনা। ইতিমধ্যে আমাদের বাংলোর হাউজ গার্ড, ড্রাইভার, বডিগার্ডসহ অন্যান্য লোকজন সবাই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, সবারই জ্বীন দেখার ইচ্ছা। হুজুর সবার ইচ্ছায় পানি ঢেলে বাসার চারপাশ থেকে সবাইকে চলে যেতে বললেন, কেউ থাকলে ঘরের ভিতরে থাকবে, নাহলে দূরে সরে যেতে হবে। আর পুরো বাড়ীর সব লাইটও বন্ধ করে অন্ধকার করে ফেলতে বললেন। বাসা অন্ধকার করার ফাঁকে একজন বডিগার্ডকে আস্তে করে বললাম তারা যেন বাংলোর আশে পাশেই লুকিয়ে থাকে, যেকোন অস্বাভাবিক জিনিষ লক্ষ্য করে। তারা মাথা নেড়ে চলে গেলো। আমার বরের বোন কথা বলতে পারেনা বা কানে শুনতে পায়না। তাকে হুজুরের সাথে আসা মেয়েটিকে ড্রয়িং রুমে পাহারা দিতে বলে আমরা পাশের নির্ধারিত রুমে ঢুকলাম। বিছানায় এমনভাবে বসলাম যাতে হুজুর মধ্যে থাকে, আর জ্বীনের জন্য নির্ধারিত চেয়ারের উল্টোদিকে থাকে। আমার বোন, এক খালা, হুজুর, আমি, আমার বর, সবশেষে মুনীর চাচা। এই রুমের মোট ৪টা দরজা। সবগুলোই ভেতর থেকে বন্ধ, শুধু মনে করতে পারছিনা ড্রয়িং রুমের সাথের লাগানো দরজাটির ছিটকিনি বন্ধ করা হয়েছিল কিনা। তবে ধাক্কা দিয়ে ভালোভাবে লাগানো ছিলো এটা শিওর। যাই হোক সবাই বসার পর হুজুর লাইট অফ করতে বললেন। ছোট টর্চ জ্বালিয়ে, সব লাইট বন্ধ করে তারপর টর্চও অফ করে দিলাম। হুজুর কঠিন ভাবে নিষেধ করে দিলেন যাতে কোনভাবেই মাঝখানে লাইট অন করা না হয় তিনি না বলা পর্যন্ত। তাহলে যে করবে তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। লাইট অফ হওয়ার সাথে সাথে হুজুর আমাদের মনে মনে দোয়া পড়তে বললেন এবং নিজেও জোরে জোরে দোয়া পড়তে শুরু করলেন। তিনি মাঝে মাঝে বাংলায়ও আঞ্চলিক ভাষায় মন্ত্রের মত কবিতা উচ্চারণ করছিলেন, জ্বীনকে আসার জন্য অনুরোধ করছিলেন। কিছুক্ষন এরকম চলার পর হঠাৎ দরজায় জোরে একটা শব্দ হল। আমাদের বাংলোটা পুরাতন আমলের হওয়ায় দরজা খুললে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ হয়। এই শব্দটা ওরকম ছিলনা, কোন জিনিষ দিয়ে আঘাত দিলে যেরকম হয় অনেকটা সেরকম। সাথে সাথে একটা পুরুষ কন্ঠস্বর বলে উঠলো "আসসালামু আলাইকুম"। নাকি গলায় কেউ খুব দ্রুত কথা বলছে, এছাড়া মুখ গোল করে প্রতিটি শব্দের সাথে জিভ বের করে উচ্চারণ করলে যেমন হয় তেমন শোনাচ্ছে শব্দগুলো। জ্বীনটি সম্পর্কে আমাদের আগেই বলা হয়েছিলো। তার বয়স ৩০০ বছর। আসবে কোহকাফ নগরী থেকে। তার নামটা যদিও এই মূহুর্তে মনে পড়ছেনা। জ্বীন এসেই মুনীর চাচাকে জিজ্ঞাসা করলো "মুনীর, কেমন আছ?" তিনিও মহা বিগলিত স্বরে উত্তর দিলেন "আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভাল।" তারপর আগে কোন একটা সমস্যায় সমাধান বলেছিলেন সেটি কাজ করেছিলো কিনা জিজ্ঞেস করলেন। চাচাও হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলেন। এরপর কার কি সমস্যা জিজ্ঞাসা করা হল। আমি আর আমার বোন ভয়ে কোন কথা বলিনি!!! পুরোটা সময় আমি কথার উৎস লক্ষ্য করছিলাম। হুজুর আমার এক পাশে কথা বলছেন, চাচা আরেক পাশে কথা বলছেন। জ্বীনের কথাও বিপরীত দিক থেকে আসছে। কথার গতি যা ছিল তাতে জায়গা অদল বদল করে এক ব্যক্তির দুজন হিসেবে কথা বলা সম্ভব না। এছাড়া অন্ধকারে জায়গা বদল করলে শব্দ হবেই যা আমাদের টের পাওয়ার কথা ছিলো। টেপ রেকর্ডারে পূর্বে ধারণকৃত কথা বাজানোও সম্ভব না, কারণ আমাদের খালা ২/১ টি প্রশ্ন করেছিলেন (যা এখন মনে পড়ছেনা), যার উত্তর পূর্ব নির্ধারিত রেকর্ড বাজিয়ে দেয়া সম্ভব না। কিন্তু উত্তর তো সে দিয়েছিলো। তাই আমি নিশ্চিত ঘরে তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা জ্বীনের উপস্থিতি ছিল। মাঝখানে সে কলা ফুঁ দিয়ে সকলের দিকে একটি করে কলা ছুঁড়ে দেয়। পরে খেয়ে ফেলতে বলে। তারপর আরো কিছুক্ষন কথা চালিয়ে গেলেন চাচা, আমাদের জিজ্ঞাসা করতে বললেন কিছু জানতে চাই কিনা! কিন্তু আমি আস্তে করে না বলাতে রাগ করেই কিনা বুঝলামনা সাথে সাথেই সালাম দিয়ে জ্বীন চলে গেল। কিন্তু এবার শব্দ হল বাইরের দিকে দরজায়। আর শব্দটা কপাটের যে দিকে আমরা বসা সেদিকে ছিলোনা, পরিস্কার বোঝা গিয়েছিলো বাইরের দিকে হয়েছে। সাথে সাথে বাইরে একটা ডাল ভাঙ্গার শব্দ পেলাম। সাথে সাথে টর্চ জ্বালালাম। আমরা ৫ জন ছাড়া কেউ নেই ঘরে! যে যেখানে বসা ছিলাম সেখানেই আছি। দৌড়ে বাইরে গিয়ে ড্রাইভার-বডিগার্ডকে কিছু দেখেছে কিনা জিজ্ঞাসা করতেই তারা আম গাছের একটা ভাঙ্গা ডাল নিয়ে এল। বলল তারা এতক্ষন এখানেই দাড়িয়েছিল, যেই দরজায় শব্দ হয়েছিল সেটার পাশে। শব্দটা তারাও শুনেছে, তাদের সামনেই ডালটি ভেঙ্গে পড়েছে গাছ থেকে! তারা ছাড়া আর কোন মানুষ ছিলোনা সেখানে! তবে আমার সর্বশেষ সন্দেহ ছিল সেই মেয়েটির দিকে। কিন্তু সে যদি অন্ধকারে ওই রুম থেকে এই রুমে আসে তাহলে শব্দ পাওয়া যাওয়ার কথা। দরজা যদি ছিটকিনি নাও দেয়া থাকে তাহলেও শব্দহীনভাবে অন্ধকারে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দরজা আবার আটকানো মোটামুটি অসম্ভব। তার উপর মেয়েটি এই বাড়ীতে কখনো আসেনি, যে রুমে বসেছিলাম, সেই রুমেও কখনো ঢোকেনি, তাই শব্দহীনভাবে সে ঢুকেছিলো এটাও যদি আমি ধরে নেই, অন্ধকারে তার চেয়ার খুঁজে পাওয়ার কথা না। সব বিচারে এই সম্ভাবনাও বাদ দেয়া যায়। আমাদের বাড়ীতে বাইরে থেকে লুকিয়ে কোন লোক ঢুকবে এটাও অসম্ভব, সারাক্ষন হাউজগার্ড থাকে। তাছাড়া আমাদের বাসায় এসে প্রতারণার জন্যও অনেক সাহস দরকার। তাহলে? কি ঘটেছিলো সেদিন?? যাই হোক এই দিনের ঘটনাটি খুব ভালোভাবে শেষ হয়নি সেদিন। আমার বর- যে খুবই ধার্মিক, সে ভালো মানুষ তো দূরের কথা চোর-ডাকাতকেও কোনদিন ধমক দিয়ে কথা বলেনা, কেন যেন হুজুরের উপর একটু রেগে যায়, আর কিছু কড়া কথা বলে। হুজুরটি খুব মন খারাপ করে চলে গিয়েছিলেন। কারণটা মনে পড়ছেনা। তিনি এখন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাইরের একটা দেশে আছেন। আমি তাকে গল্পটি ট্যাগ করব আর তার নিজের মুখেই শুনব কি কারণে সেদিন তিনি হুজুরের উপর ক্ষেপেছিলেন। এরপর এই হুজুরকে নিয়ে আরেকদিন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিলো। সেবার তার বাড়ীতে গিয়েছিলাম আমরা। সেই ঘটনা নাহয় আরেকদিন বলা যাবে... ; ) শেয়ার করেছেনঃ মারিনা নাজনীন লক্ষ্য করুনঃ উনি গল্পের শুরুতেই খুব সুন্দর করে বলে দিয়েছেন যে এখানে হয়তো খুব বেশি ভয় পাওয়ার মত কিছু ছিল না।। এবং আপনাদের অনুরোধও করেছেন বেশি ভয় খুঁজলে যেনও লেখাটা না পড়েন।। কমেন্ট করার সময় ব্যাপারটা মাথায় রাখলে ভালো করবেন।। - অ্যাডমিন

ভৌতিক গল্প : নাশ (প্রথম অংশ) - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Tuesday, September 27, 2011 at 11:00pm
(১)
তিথির সঙ্গে আমার পরিচয় রমনা পার্কে । ছোট ফুপার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি মৎস্য ভবনে তার অফিসে । তিনিই আমাকে দেখা করতে বলেছেন । অনেকদিন যাবৎ একটা চাকরির জন্য ধরনা দিচ্ছিলাম । এই হবে ; এই হচ্ছে করে বছর চলে যাচ্ছে; কিন্তু চাকরি হচ্ছে না । ফাঁকে আজ এটা কর ; তো কাল ওটা নিয়ে আয় । এই করে নানান কাজ আমাকে দিয়ে দিব্যি করিয়ে নিচ্ছেন ফুপা ফুপি দু’জনই । গরিবের বউ যেমন সবার ভাবী হয় । তেমনি আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কারো একটি বেকার ছেলে থাকলে সেও সবার সম্পতি হয়ে যায় । আমার অবস্থাও তাই ।
গতরাতে ফুপি বাসায় ফোন করে আমাকে সকাল ১১টার সময় ফুপার সঙ্গে তার অফিসে দেখা করতে বলেছেন । বাবার ধারনা ফুপা আমার চাকরির খোঁজে জান দিয়ে দিচ্ছেন । শুধু মাত্র আমার অযোগ্যতার কারনেই চাকুরী হচ্ছে না । বাবা আজ প্রায় বছর খানেক হলো প্যারালাইসট হয়ে বিছানায় । বাম পা,হাত একেবারে নাড়াতে পারেন না । মেজাজ ও তাই প্রায়ই চড়ে থাকে । আমি কিছু করতেও পারছিনা । বলতেও পারছি না । আমি ফুপার অফিসে চলে এসেছি সকাল পৌনে ১১টায় । কিন্তু এসে শুনি ফুপা মিটিং এ ব্যস্ত । আমাকে ২টার পর দেখা করতে বলেছেন । বাকী সময়টুকু কি করি ?
ফুপার অফিস থেকে বেড় হয়ে রমনা পার্কে ঢুকে গেলাম । এ সময়টাতে পার্কের পরিবেশ বেশ শান্ত থাকে । সকালের স্বাস্থ্য-সচেতনদের চাপটা কমে যাওয়ায় পার্কেটা বেশ নিরিবিলি হয়ে পরে । আমি হাঁটতে হাঁটতে লেকের পারে এসে পরি । মাথার ভেতর চিন্তা আছে খালি একটা বেঞ্চ দেখে লম্বা ঘুম দেবো । তারপর ফুপার সঙ্গে দেখা করে অন্য করণীয় ঠিক করা যাবে । লেকের পাড়ে একটা জটলা চোখে পড়লো । আমার কৌতুহল বরাবর বেশি । কাছে গিয়ে আমি কি হচ্ছে দেখার জন্য উকি দিলাম । শাড়ী পরা ফর্সা করে একটা মেয়ে বসে আছে বেঞ্চিতে । তার সামনে বিশাল আকৃতির একটা কালো রং এর কুকুর মাটিতে মুখ লম্বা করে শুয়ে আছে । এতো বড় কুকুর সাধারনত দেখা যায় না । কুকুটাই মানুষের কৌতুহলের কারন । আমি বরাবর ওপর দিকের একটি বেঞ্চিতে শুয়ে পড়লাম । উদ্দেশ্য কি হয় দেখা । কখন যে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম বলতে পারবনা । চোখ খুলে দেখি মেয়েটা আমায় ডাকছে ।
আকাশ কালো হয়ে আছে । খুব সম্ভব বৃষ্টি হবে । আমি উঠে বসে বললাম ,
- আপনি ? আমার চোখে মুখে বিস্ময় ।
-আমাকে একটু কোথাও পৌছে দেবেন ? আমি এখানকার কিছু চিনি না । মেয়েটি বিনয়ের সঙ্গে বললো ।পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই বিশাল আকৃতির কুকুরটি ।
আমি বললাম - কোথায় যাবেন ?
-আমি জানিনা । নিরাপদ কোথাও । মেয়েটি খুব আস্তে আস্তে বললো । আমি অবাক হলাম এ মেয়ে বলে কি ? এটা কোন কথা হলো ? আমি ঘড়ি দেখলাম আড়াইটা বাজে । ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলাম । আজ খবর আছে । ফুপা নিশ্চয়ই চৌদ্দ গোষ্টি উদ্ধার করবে ।
-আপনি বলুন কোথায় যাবেন আমি আপনাকে পৌচ্ছে দেবো । আমি শোয়া থেকে উঠতে উঠতে বললাম । মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী । টানা টানা চোখ । কমলা ফর্সা গায়ের রং । আমি উপেক্ষা করতে পারছি না ।
-আমার নাম তিথি । আমি আসলে এখানে নতুন । কাউকে চিনি না । কাউকে বিশ্বাস ও করতে পারছিনা । তাই বলছিলাম আপনি যদি একটু উপকার করতেন ।
মেয়েটির কথায় বিনয় ঝরে পরছে । এমন বিনয়ের সুরে বহুদিন কেউ কথা বলেনি আমার সঙ্গে । তাই মনে মনে ঠিক করলাম আমি মেয়েটিকে সাহায্য করবো ।
-কিন্তু আমার তো একটু কাজ আছে । মানে আমাকে এখনই ফুপার অফিসে যেতে হবে । আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম ।
-কোন অসুবিধা নেই । আপনি আপনার কাজ আগে শেষ করুন তারপর না হয় আমাকে হেল্প করবেন ।
-বেশ চলুন তা হলে । বলে ; আমি কুকুরটির দিকে তাকালাম । আমাকে তাকাতে দেখে মেয়েটি বললো ।
এটা আমার কুকুর । ওর নাম রন । কোন ভয় নেই । আমার উপর কেউ আঘাত না করলে ও কিছু বলবেনা । আমরা হাঁটতে শুরু করলে কুকুটিও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে লাগলো । কিছু বলতে হলো না ।
(২)
এমনিতে ফুপার অফিসে ঢুকতে হলে নানান রকমের ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। একজন পাশ দেখে তো অন্য জন ফোন করে । আরেকজন বসিয়ে রাখে নানান যন্ত্রনা । কিন্তু আজ কিচ্ছু লাগলো না । আমরা বিনা বাঁধায় ভেতরে ঢুকে গেলাম । সেই সঙ্গে আমি বেশ অবাক হলাম । এখন ফুপার তেমন কোন ব্যস্ততা নেই । দেখে মনে হলো তিনি বেশ ফুর ফুরা মেজাজে আছেন । আমি মেয়েটিকে রিসিপসনে বসিয়ে ফুপার রুমে গেলাম । ফুপা কি জানি লিখছিলেন । ফুপা আসবো বলতেই;
তিনি মাথা তুলে বললেন - আরে এসো এসো । তোমার জন্যই তো বসে আছি । বসো । কি খাবে বলো ? আমি কিছু না বলতেই তিনি বললেন - তা হলে বস । আমি হাতের কাজটা শেষ করে তোমার সঙ্গে বসছি । ফুপা লিখছেন । আমি বসে আছি তার সামনের চেয়ারে । অফিসটা বেশ পরিপাটি করে গুছানো । সরকারী অফিসারদের অফিস যেমন হয় ।
ফুপা বেল বাজাতেই । পিয়ন আসলো । তিনি লেখা কাগজটা তাকে দিয়ে বললেন এটা পরিমল বাবুকে দিয়ে দাও ।
তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন - তো মিয়া জগলু কি খবর ? বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরছো খুব । মেয়েটি কে হে বাবা ? তিনি হেসে জিজ্ঞেস করলেন । আমি তাকিয়ে দেখলাম ফুপার বাম পাশে রাখা সিসি টিভিতে তিথি মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে ।
আমি থতমত খেয়ে গেলাম । কোন রকম বললাম ।
না ! মানে !
-আরে মানেটানে রাখো । এখন তো তোমাদেরই বয়স । আনন্দ ফুর্তি করো । আমাদের মতো বুড়ো হলে আর সময় পাবে না । তোমার ফুপিকে দেখনা ? সারা দিন পীর ফকির নিয়ে আছে । ফুপি আবার কোন এক ফকিরের মুরিদ হয়েছেন । প্রতি শনিবার তিনি ফকির বাবার কথা মতোন রোজা রাখেন ।
ফুপার কথা বার্তায় আমি বেশ অবাক হলাম । তিনি এভাবে কোনদিন আমার সঙ্গে কথা বলেনি । আজ কি হলো !
- তা ওকে ওখানে না বসিয়ে রেখে ভেতরে নিয়ে আসো । আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দাও । ফুপা সিসি টিভিতে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো ।
-না । মানে । আমি কিছু বলতে চাইলাম ।
-আরে যাও । যাও ; নিয়ে আসো । ফুপা আমায় তারা দিলেন ।
এমন সময় কিছুক্ষন আগে আসা সেই পিয়নটি ভেতরে এসে ফুপাকে একটি কাগজ দিলো । ফুপা তাতে সাইন করে লোকটির হতে দিয়ে বললো রিসিপসনে বসা ম্যাডামকে ভেতরে নিয়ে আসো । আমি আর কিছু বললাম না । বাসায় ফিরেছি সন্ধ্যা ৭টায় । তিথিকে নিয়ে বেশ কয়েকটি হোটেলে গিয়েছি । ওর থাকার ব্যব্স্থা করবার জন্য । কিন্তু কোন লাভ হয়নি । কোথাও ওর পছন্দ হয়নি । তার উপর সঙ্গে এতো বড় একটা কুকুর নিয়ে কেউ হোটেলে থাকতে দিতে রাজি হলো না । শেষমেশ বাসায় নিয়ে এলাম । মনে মনে ভাবলাম আমার ছোট বোন লাবনির সঙ্গে আজকের রাতটা থাক । কাল কোন মহিলা হোস্টেলে ব্যবস্থা করে দেবো ।
বাসায় ঢুকে দেখি ফুপি বাবার ঘরে বসে আছে । আমাদের বাড়ীটা এল সেপটের একতলা । লম্বা করে একটানা ঘরগুলো তৈরি । কর্ণারের রুমটাতে বাবা মা থাকেন । তারপরটায় লাবনি । আর প্রথমটায় আমি আর আমার ছোট ভাই তমাল । এক পাশে রান্না ঘর অন্য পাশে বার্থরুম । সামনে প্রায় পাঁচ ফিট খোলা জায়গা । সেখানে সারি করে তিনটে নারিকেল গাছ । তার ফাঁকে ফাঁকে নানান জাতের ফুলের গাছ । বাগানের গাছ গুলো লাবনির হাতে লাগানো । কয়েক টাতে আবার ফুলও ফুঁটেছে ।
বাসায় ঢুকতেই তিথির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে লাবনি আমাকে হাত ধরে ওর ঘরে নিয়ে গেল । তিথি বাহীরে দাঁড়িয়ে আছে ।
-ভাইয়া তুমি মনে হয় উনাকে নিয়ে ফুপার অফিসে গিয়েছিলে ?
আমি হ্যাঁ বললাম । তারপর লাবনি যা বললো তা হলো । ফুপি নাকি সন্ধ্যার পর বাসায় এসে উঠেছে । এবং মা বাবাকে বলছে আমি নাকি কোন মেয়ে নিয়ে ঘোরা ফেরা করছি । সংসারের প্রতি কোন খেয়াল নাই । বংশের মান-সম্মান ও নাকি মাটিতে মিশে গেলো । উনি কাউকে মুখ দেখাতে পারছেন না । নিজ ভাইয়ের ছেলে এমন হবে তিনি তা কল্পনাও করতে পারেননি । এখন উনার মেয়ে তিশা ,লাবনিকে কি ভাবে বিয়ে দিবেন ? কোন ছেলে আর এ বংশে বিয়ে করবে ?
আমি হেসে লাবনিকে সব খুলে বলায় ও বললো ভাইয়া কোন সমস্যা নেই । তিথি আপু আমার সঙ্গে থাকতে পারবে । বলে ঘর থেকে বেড় হয়ে এসে ও তিথিকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল ।
আমি বাবার রুমে ঢুকলাম । ফুপি বাবার ঘরে বসে কাঁদছেন। মা দাঁড়িয়ে আছেন বাবার কাছে খাটে আলতো করে হেলান দিয়ে ।
-ঐ যে তোমাদের গুনধর পুত্র এসেছে । আমাকে ঢুকতে দেখে শাড়ির আঁচলে মুখ মুছে ফুপি বললেন ।
-আহা: ফুপি আপনি কি শুরু করেছেন । মেয়েটি বিপদে পরেছে তাই সাহায্য করছি । এর মধ্যে অন্য কোন কিছু নাই । আপনি শুধু শুধু কান্না কাটি করছেন । আমি বিরক্ত হয়ে বললাম ।
-তুই বললেই হলো অন্য কোন কিছু নাই ? জলজ্যান্ত একটা মেয়ে নিয়ে সারা শহরের পার্কে , পার্কে , হোটেলে , হোটেলে ঘুরে এখন বাসায় এনে তুলেছিস । আবার বলছিস অন্য কিছু নাই ? আমাদের বোকা মনে করেছিস ? বল মেয়েটি কে ?
-মা ; মেয়েটা বিপদে পড়েছে । ঢাকাতে ওর থাকার কোন জায়গা নেই । তাই হোটেলে গিয়েছিলাম ও থাকার ব্যবস্থা করতে । তোমরা যা মনে করছো উনি সেরকম মেয়ে নন ।
-আমাদের চিনাতে হবে না তোকে ; কে কেমন মেয়ে । ভাইয়া তোমরা কি করবে কর আমি এর শেষ না দেখে বাসায় ফিরছি না । ফুপি আবার কাদঁতে লাগলেন । বাবা কোন কথা বলছেন না । চুপ করে শুয়ে আছেন । তার মাথা কাঁপছে ।
-সালমা যখন বলছে তুই মেয়েটিকে অন্য কোথাও রেখে আয় বাবা । মা বললেন ।
-কোথায় রাখবো ? আজকের রাতটা তিথির সঙ্গে থাকুক কাল না হয় কোন মহিলা হোস্টেলে রেখে আসবো । আমার বোন যদি এ রকম বিপদে পড়তো আমি কি তাকে সাহায্য না করে পারতাম মা ? তোমরা ই কি পারতে তাকে বাসা থেকে বেড় করে দিতে । আমার লাবনির সঙ্গে কথা হয়েছে । ওর বলেছে ওর মেয়েটি থাকায় ওর কোন অসুবিধা হবে না ।
-আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবো বলে ফুপি ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন ।
আমি মাকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম । কিছুক্ষন পর ফুপি তিথি আর লাবনিকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন । এ্যই তুই একটু বাইরে যা । ফুপি হাসছেন । একহাত দিয়ে ধরে আছেন তিথির হাত । আমি আবাক হলাম ; এবং হাপ ছেড়ে বাঁচলাম যাক আপাততো সমস্যার সমাধান হয়েছে । আমি আমার ঘরে এসে খাটে পা ঝুলিয়ে শুয়ে পরলাম । আসার সময় দেখলাম বারান্দায় কুকুরটি বসে আছে । বাদল আমাদের কাজের ছেলেটা কুকুরটিকে বিস্কুট দিচ্ছে । কিন্তু কুকুরটা কিছু খাচ্ছে না । আমি বাদলকে চা দিতে বললাম।
(৩)
সে রাতেই আমার আর তিথির বিয়ে হয়ে গেলো । ফুপির এক কথা , এমন মেয়ে হাজারে একটা । আমার মতো নিবোর্ধের শত জনমের ভাগ্য এমন মেয়ে বউ হিসাবে পাওয়া ।
তিথির ঘটনা হলো বাবা মা মারা যাবার পর ও মামা মামির কাছে মানুষ । মামা এক বুড়োর সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক করছে বলে মামী ওকে গোপনে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন । লাবনি আর তমাল মিলে আমাদের বাসর ঘর সাজিয়ে দিয়েছে । ফুলের গন্ধে কেমন মাতাল মাতাল লাগছে । বাসায় বেশ খাবার দাবার রান্না বান্না হয়েছে । ফুপা আর তিশাও এসেছে । তিশাকে আজ বেশ মলিন মনে হলো । আমার সাথে কোন কথা বলেনি। শুধু একবার ঘরে এসে বললো । আমাকে একবার বলতে পারতে । আমি কারো পথের কাটা হতাম না । আমি হাসলাম । বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠলো । তিথির সারা শরীরে অলন্কার । আমি বেশ অবাক হলাম । ও কে জিজ্ঞেস করলাম এতো গয়না কোথায় পেলে ? ও হেঁসে বললো আমার মা আমার জন্য রেখে গিয়েছিল । আমি সাথে করে নিয়ে এসেছি । এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো । ভাইজান ঘুমিয়ে পড়েছেন ?বাদলের গলা । আমি দরজা খুলে দিতে ও একটা ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো । তাতে এক গ্লাস দুধ আর বিস্কটের একটা প্যাকেট রাখা । বাদল চলে যেতেই তিথি উঠে দাঁড়ালো । আমি দরজা বন্ধ করে খাটে এসে বসলাম । তিথি দুধের গ্লাসটি আমার হাতে দিয়ে হেসে বললো নাও নতুন জীবন শুরু করো । আমি হাসলাম । নিজের হাসি নিজের কাছে কেমন বোকা বোকা মনে হলো । দুধ খাওয়া শেষ হতে তিথি আমাকে বললো চোখ বন্ধ করো ।
-আমি বললাম কেনো ?
-আহা : করো না । আমি দু হাতে চোখ বন্ধ করলাম । ও বললো কিচ্ছু দেখবে না বলে দিলাম । আমি চোখ বন্ধ করে আছি এদিকে মনে হচ্ছে যুগ যুগ সময় চলে যাচ্ছে । আমি তাকাবার জন্য চোখ খুলবো এমন সময় তিথি বললো -
- এবার চোখ খোল । আমি চোখ খুললাম । আমার সামনে তিথি দাড়িয়ে আছে । ওর শরীরে কোন কাপড় নেই । ডিম বাতির আধো আলোয় ফর্সা ধবধবে শরীর দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম । তিথি আমাকে বুকে টেনে নিল । আমার মনে হলে আমি গভীর অতলে তলিয়ে গেলাম । কখন যে ঘুমিয়েছি মনে নেই । হঠাৎ একটা খস খস একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । মনে হল কে যেন মেজেতে পা ঘষে ঘষে ঘরের ভেতর এ মাথা ও মাথা হাঁটছে । কিন্তু তাকিয়ে দেখি কেউ নেই । হয়তো মনের ভুল হবে । তিথির দিকে তাকালাম । ও গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে । ঘন ঘন শ্বাষ ফেলছে । কেমন যেন মায়া মায়া লাগল । ঠিক যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা । রাতের ঘটনাটা মনে করতে চেষ্টা করলাম । কিন্তু পারলাম না । আমি চাদরটা ওর গলা পর্যন্ত টেনে দিয়ে বিছানা থেকে নামলাম পানি খাব বলে । টেবিলের ওপর পানি আর জগ । আমি পানি ঢেলে খাচ্ছি হঠাৎ কেন যেন মনে হলো তিথি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি চকিত পেছন ঘুরলাম । নাহ্ ও ঘুমাচ্ছে । আমি বার্থরুম থেকে এসে শুয়ে পড়লাম । তিথির বুক থেকে কাপরটা সরে গেছে আমি আবার তা ঠিক করে দিচ্ছ এমন সময় মনে হলো কে যেন বারান্দায় ঠিক ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া শব্দটার মতো পা টেনে টেনে হাঁটছে । এতো রাতে কে হাঁটবে ? ঘড়িতে বাজে রাত ৩টা ২ । আমি উঠে গিয়ে একটানে দরজা খুলে ফেললাম । না । কেউ নেই । কুকুরটা আমার দরজার সামনেই বসে আছে । দরজা খুলতে দেখে মুখ তুলে তাকালো আমার দিকে । কয়েক মুহুতের জন্য মনে হলো ওর চোখ দুটো যেনো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে । আমি দরজা বন্ধ করে এসে শুয়ে পরলাম ।
ভোরে মার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গলো । চোখ খুলে দেখি মা আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আমায় ডাকছে আর বলছো খোকা দেখে যা বউ মা কি করেছে । উঠ উঠ । তারাতারি উঠ । আমাকে উঠাবার জন্য টানতে লাগলেন । আমি ভয় পেয়ে গেলাম । কি আবার করলো ? মার মুখে হাসি দেখে কিছুটা আস্তত্ব্য হলাম । আমি বিছানা থেকে উঠে -
উঠে মার পিছু পিছু বাবার ঘরে এসে দেখি বাবা খাঁটে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন । কেউ ধরে নেই । তিথি বাবার পায়ে কি যেন মালিশ করছে ।আমি ঢুকতেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসল অসম্ভব সুন্দর হাঁসি। আমি মুগ্ধ হলাম । ওকে গতকালের চেয়ে আজ আরো বেশি সুন্দর মনে হলো । লাবনি বললো ভাইয়া দেখ ভাবি বাবাকে ভাল করে দিয়েছে। বাবা উঠে দাঁড়ালেন । আমি ছুটে গেলাম ধরার জন্য । তিনি হাতের ইশারা দিয়ে আমাকে ধরতে না করলেন । এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে হাঁটতে লাগলেন । খুশিতে আমার লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করলো । আমি ; মা ; লাবনি কেঁদে ফেললাম । বাবা বিরবির করে বলতে লাগলেন চমৎকার অতি চমৎকার । চলবে >>>>>>>>>>>>>>>>>>

ভৌতিক গল্প : নাশ ( শেষ অংশ) - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, September 28, 2011 at 10:51pm
(৪)
তিথি এ বাড়ীতে আসার পর বেশ কয়েকটি উপাধি পেয়েছে । তার মধ্যে লাবনি দিয়েছে কুকুর রাণী । আর তমাল ডাকছে মান্ডা কবিরাজ বলে । আর আমি লাজ লজ্জার উর্ধ্বে উঠে কখনও জান কখনও বা জানু বলে ডাকছি । মহা আনন্দে কাটছে আমাদের দিন ।পুরো পরিবারটি আনন্দে হাসছে । সন্ধ্যার পর ছাদে বসে সবাই মিলে গাইছি চাঁদের হাসির বাঁধ ভেংছে উছলে পরে আলো ....। এর মধ্যে ফুপার সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে । মৎস অধিদপ্তরে সহকারী পরিদর্শক হিসাবে আমি আগামি মাসে যোগদিচ্ছি । ফুপু এসেছিলেন তার ফকির বাবাকে নিয়ে । বাবাকে দেখে গেছেন । আমি বাসায় ছিলাম না । বেচারা খুব একটা খুশি হতে পারেনি আমাদের বাড়ীতে নাকি শয়তানের আছড় লেগেছে । ফুপুও তার কথায় বিরক্ত হয়ে ফকির বাড়ীতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে । তিথির দিকে নাকি বার বার কেমন করে তাকাছিল আর বির বির করে কি সব দোয়া কালাম পড়ছিল । সেদিন যতোক্ষন ঐ ফকির ব্যাটা বাসায় ছিল তিথির কুকুরটাও নাকি ততোক্ষন বেশ অশান্তু হয়ে ছিল । এরও আগে দু’তিন বার ফুপু ঐ ফকিরকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছেন । কিন্তু এবার মনে হয় শেষ আসা । তিথির কারিশমার কাছে ব্যাটার সব কেরামতি ফেল । তমাল তো বলই ফেলেছি ভাবির কেরামতিতে ব্যাটার ঈষা হচ্ছে । তাই তারা তারি ভেগেছে । যাবার আগে কুকুরটাকে তারাতে বলেছে । বলেছে সব নাশ হয়ে যাবে । সাবধান । সাবধান ।
মা সামান্য ভয় পেলেও সবাই খুব হেসেছি । তিথির দিকে কেমন করে নাকি তাকাচ্ছিল শুনে আমার রাগ লেগেছিল । কুকুরটার প্রতি বাদল ও বেশ বিরক্ত । বেশ কয়েকবার আমাকে এসে বলেছে- ভাইয়া কুকুটা আমাকে দেখে কেমন জানি করে । মনে হয় কামরাতে আসবে । ভাইয়া একটু ভাবিকে বলে ওকে শান্ত করে দেন না ।
আমিও খেয়াল করেছি ব্যাপারটা । বাদলকে দেখলেই কুকুটা গরর.....গরর...... একটা শব্দ করে । আমি বলেছি তুই তো ভাবিকে বল ।
আমাদের কাছে প্রথম দু:সংবাদটা আসে ২১ তারিখ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার সময় । আমি তখন বাহীরে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছি এমন সময় তিশার ফোন । ফুপা নাকি অফিসে অসু্স্ত হয়ে পরেছে । তাই ও আমাকে একটু ফুপার অফিসে যেতে বললো । আমি দিরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ফুপার অফিসে ছুটলাম ।
ফুপার অফিস পুলিশের গাড়িতে , সাংবাদিকে একাকার হয়ে আছে । কাউকে ভেতরে ডুকতে দেওয়া হচ্ছে না । আমি পরিচয় দিতে একজন আমাকে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলো । ফুপার রুমে ঢুকে দেখি ফুপাকে মাটিতে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে ।ফুপার মাথাটা একদিকে কাত হয়ে আছে । জ্বিবটা সামান্য বেড় হয়ে আছে । চোখ দুটো খোলা । ফুপা আত্ম হত্যা করেছে । সকালে পিয়ন রুমে ঢুকে দেখে ফুপা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে । ফুপার রুমটাতে এসি থাকা সত্বেও ফুপা নাকি দু’দিন আগে ফ্যান লাগিয়েছিল ।কাউকে কাউকে বলতে শুনলাম । ফুপা নাকি দুর্নীতে গলা পযন্ত ডুবে ছিলেন । ফুপার সেই পিয়নটা আমাকে ডেকে নিয়ে বললো - আপনার সঙ্গে আসা সেই কুকুরওয়ালা ম্যাডাম এসেছিলেন আজ সকালে । তিনি বেড় হয়ে যেতে স্যার আমার কাছে চা চাইলেন । আমি যখন চা দিয়ে এলাম স্যারকে তখন খুব মনমরা দেখতে পেলাম । কিছু হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে স্যার মাথা নেড়ে না করলেন । তারপর ছোট স্যারের কাগজ নিয়ে স্যারের রুমে ডুকে দেখি স্যার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন । তিথির এসেছিল শুনে আমি বেশ অবাক হলাম । তিথি তো সারা সকাল আমার সঙ্গে তবে ও কখন এখানে এলো ? নিশ্চই পিয়নটা ভুল দেখেছে । আমি নিশ্চিত হবার জন্য জিজ্ঞেস করলাম কুকুরটা সঙ্গে ছিলো ? কেননা তিথি কোথাও কুকুরটা ছাড়া যায় না । পিয়ন মাথা নেড়ে না করলো । আমি মনে মনে ঠিক করলাম এ ব্যাপারে তিথিকে কিছু বলার দরকার নেই । শুধু শুধু বেচারী মনে কষ্ট পাবে ।
পুলিশ ব্যাপারটা তদন্ত করছে । আজিমপুরে লাশ দাফন করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল । ফুপুর অবস্থা খুব খারাপ । মা আর লাবনি ফুপুর বাসায় চলে গেছেন । রাতে সেখানেই থাকবে । গোসল করে কোন রকম খেয়ে আমি শুয়ে পরলাম । রাতে ঘুমাতে পারলাম না ঠিক মতো । সারা রাত্রি মনে হলো । কে যেন ঘরের ভেতর পায়চারি করছে । দু’একবার দেখার চেস্টা করেও কিছু দেখতে পেলাম না । রাতে ফুপাকে স্বপ্ন দেখলাম । আরো দেখলাম তিথির কুকুরটা আমাকে তারা করছে আমি ভয়ে ছুঁটছি তো ছুঁটছিই । কোথাও আশ্রয় পাচ্ছি না । ছুটতে ছুটতে আমি একটা বাড়ীতে ঢুকে পরলাম । সেখানে ফুপির সেই ফকির বাবাকে দেখতে পেলাম । সাদা কাপড় পরা দরবেশের মতো একজনকে ঘিরে সবাই বসে আছে । সাদা কাপড় পরা লোকটি আমাকে তার পাশে বসতে বললো । আমি বসে পরলাম । লোকটি আমার হাতে কিছু একটা দিলো । আমি হাত মুঠ করে রাখলাম । মনে হলো আমার হাতের মুঠোর ভেতর গরম কয়লা দিয়ে দেওয়া হয়েছে । আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো । আমি চোখ খুলে দেখি তিথি আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে ।কুকুরটা ঘরের ভেতর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ দুটো দিয়ে যেন আগুন ঠিকরে বেড় হচ্ছে । যেন তিথির হুকুমের অপেক্ষায় আছ হুকুম পেলেই আমাকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে । আমি ভয়ে জ্ঞান হারালাম ।
(৫)
ফুপা মারা যাবার ঠিক পনেরো দিনের মাথায় সকাল বেলা মার হৈই ছৈই এ ঘুম ভাঙ্গলো । সকাল থেকে নাকি বাদলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । বাদল তো কখনও এমন করে না । সেই ছোট বেলা থেকে ও আমাদের সঙ্গে আছে । কাউকে না বলে দোকানেও যায়না । বাদল রান্না ঘরেই শোয় । গতরাতে ও যেখানে শুয়েছিল । বিছানা পত্র তেমনিই আছে । বাহিরে বের হবার গেটেও তালা দেয়া । তা হলে ও গেল কোথায় !
আমি মাকে বললাম- আছে হয়তো আশে পাশে কোথাও । চলে আসবে । তুমি চিন্তা করো না তো মা । বলে আমি আবার শুয়ে পরলাম । তিথিকে দেখলাম মার সাথে নাস্তা বানাচ্ছে ।
আবারও চেচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো । এবার বেশ বিরক্ত হলাম । বাইরে এসে দেখি পাশের বাসায় একটি ছেলে হাত নেড়ে নেড়ে সবাইকে কি যেন বলছে । কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বললো জগলু ভাই দেখে যান ; দেখে যান । ছেলেটা বাসা থেকে বেড় হয়ে গেল । আমি আর তমাল ছুটলাম ও পেছন পেছন । আমাদের বাসার কিছুটা সামনে হাতের বাম পাশে যে ডাস্ট বিনটা আছে , ওটার কাছে একটা জটলা দেখতে পেলাম । কাছে গিয়ে যা দেখলাম । তাতে আমার মৃত্যু হলে অবাক হতাম না । ডাস্টবিন এর মধ্যে বাদল এর কাটা মাথা পরে আছে । আমার মাথা ঘুরে উঠলো । বমি পেয়ে গেলো । কোন রকম তমাল এর গায়ে ভর দিয়ে বাসায় ফিরলাম ।
দুপুর নাগাত অন্য একটি এলাকায় বাদল এর দেহের অন্যান্য অংশ পাওয়া গেল । বাসায় পুলিশ এসেছে । আমাদের সবাইকে থানায় যেতে হবে । যতোই বলছি আমরা কিচ্ছু জানিনা । এস আই নাসির তা মানছে না । আমাদের বাসার ছেলে আমরা কেন মারবো । তাও আবার এমন ভয়াবহ ভাবে । সাথে থাকা পাতলা মতো একটা সেপাই বলছে স্যার থানাতে নিয়ে প্যাদানি দিলে শুর শুর করে সব বেড় করে দেবে । বাসায় মানুষের ভিড় উপচে পরছে । কি করবো বুঝতে পারছিনা । এলাকার কয়েকজন মুরুব্বী ও আছেন । তারা আমাদের হয়ে কথা বলছেন । আমাদের বাড়ীর ছেলেকে আমরা কেন মারবো ? কিন্তু এস আই নাসির এক কথা আমরা এর সঙ্গে কোন না কোন ভাবে জড়িত । আমরাই খুন করে বাহীরে ফেলে দিয়ে এসেছি । তাই আমাদের থানায় যেতেই হবে । কোটই প্রমান করবে আমরা খুনি না সাধু ।
মা আর লাবনি সকাল থেকে কেঁদে চলেছে । বাবা কিছু বলছেন না । যা কিছু করার আমিই চেস্টা করছি ।এস আই এর সঙ্গে চিল্লাচিল্লির একপর্যায় তিথি বের হয়ে এলো ঘর থেকে ।
-আপনি পেয়েছেন কি ? যা ইচ্ছা তাই করবেন ? টাকা খাওয়ার ফন্ধি করছেন ? না ? তিথি রেগে মেগে বললো কথা গুলি । ওর কথায় এস.আই নাসিরের শরীরে যেন আগুন লেগে গেলো ।
চিৎকার করে বললো এ্যই মেয়ে চুপ । একদম চুপ । আমি তিথিকে থামাতে গেলাম । তিথি আমাকে সরিয়ে দিয়ে বললো । -কেন সত্যি কথায় শরীরে ফোস্কা পরেছে ? একটা ফোন করবো শরীরে আর পুলিশের কাপড় থাকবে না । রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করবি । তিতির এ জাতিয় কথায় আমি বেশ অবাক হলাম ।
-কর কর তোর কোন বাপেরে ফোন করছি কর । এস.আই লাঠি নিয়ে তিথির দিকে তেরে গেল । আমি ভয় পেয়ে গেলাম । আবার না মেরে বসে ।
তিথি সত্যি সত্যি ফোন করে বললো - নে কথা বল ; আমার বাবার সাথে কথা বল । ছাগল কোথাকার ? এস.আই তিথির হাত থেকে ফোনটা একরকম ছিনিয়ে নিলো ।
তরপর খুব ভাবের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো কে বলছেন ? আমি এস.আই নাসির বলছি । কয়েক মিনিটের মধ্যে নাসিরের চেহারায় পরির্বতন চলে এলো ।
-জ্বী স্যার । ইয়েস স্যার । কোন সমস্যা নেই স্যার । ভুল হয়ে গেছে স্যার । ক্ষমা চাচ্ছি স্যার । আর কোন দিন হবে না স্যার । আমি এখনই মাপ চাচ্ছি স্যার । স্যার ; স্যার ভুল হয়ে গেছে । নাসির মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে । আবারও আমি বেশ অবাক হলাম । তিথির এমন কোন পাওয়ারফুল আত্মীয়ের কথা তো ও কখনও বলেনি আমাকে । যার কথায় এস.আই নাসিরের মতো লোকের মুখে ফেনা উঠে যায় । তখনই মনে হলো আমি আসলে তিথি সর্ম্পকে তেমন কিছু জানিনা । নাসির ফোনটা তিথির হাতে দিয়ে । আমাদের সবাইকে আরো একধাপ অবাক করে দিয়ে ওর পা জড়িয়ে ধরলো । ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে । মাপ করে দিন ।
তিথি রাগে কাঁপছে । ফর্সা শরীর লাল হয়ে গেছে । কোন রকম পা ছাড়িয়ে বললো । এই মুহুর্তে বাসা খালি করে দিতে এবং প্রকৃত খুনিকে খুঁজে বের করতে তা না হলে খুব খারাপ হবে । বলে ও আর দাঁড়ালো না ভেতরে চলে গেলো । পুলিশ দল তারা হুরো করে বাড়ী থেকে বেড় হয়ে গেলো । যাবার আগে অন্য সবাইকে যারা এতোক্ষন মজা দেখছিল সবাইকে বাসা থেকে বের করে গেট বন্ধ করে দিয়ে গেল । হঠাৎ করেই বাড়ীটা নিরব হয়ে গেলো । রাতে বাসায় পায়ের শব্দ বেড়ে গেছে । কে যেন বারান্দার এ মাথা ও মাথা হেঁটে বেড়ায় । আমি বেশ কয়েকবার দেখতে চেষ্টা করেও কাউকে দেখতে পাইনি । এখন শব্দটা শুধু আমিই শুনিনা । মা , লাবনি ,তমাল সবাই শুনতে পায় । বাড়িতে কেমন একটা ভৌতিক পরিবেশ বিরাজ করছে । কয়েক দিন যাবত লক্ষ্য করছি তিথি সারাক্ষন কেমন চুপ চাপ হয়ে থাকে । জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না । কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে ও । খুব একটা বাসার বাহীর বেড় হতে চায় না ।
আমি মনে করেছি বাদল এর মৃত্যুটা সবার মনে বেশ দাগ কেটে গেছে । মা তো সব সময়ই কাঁদেন । এর মধ্যে ফুপি ফোন করে ছিলেন । তিনি নাকি আজকাল কি সব উল্টা পাল্টা দেখছেন । প্রায় রাতেই নাকি দেখেন ফুপা ড্রয়িংরুমে বসে আছে । তিনি আবার ফকিরের কাছে খুব যাতায়াত করছেন । দু’তিন জন ফকির বাসা পাহারা দিচ্ছে । ফুপাকে নাকি শয়তান মেরেছে । মা আর লাবনিকে নাকি আরো কি সব বলেছেন । আমার সঙ্গে কথা বলতে চান । বেশ কয়েকবার ফোন করেছেন । আমি যাবো যাচ্ছি করেও শেষ পর্যন্ত আর যাইনি ।এসব ভুত পেতে আমি বিশ্বাষ করি না । আসলে ফুপুর বাসায় যাবার মতো সময়ও পাইনি । আমি কাজে যোগ দিয়েছি । ৯টা ৫টা অফিস করছি । নতুন চাকরী অনেক কাজ । কিন্তু কেমন যেন এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে সব কিছু । তাল মেলাতে পালছি না ।
৬)
রাত বাজে ১ট কি দুইটা হবে । লাবনি শুয়েছিলো বিছানায় । হঠাৎ বারান্দা থেকে সেই পায়ের শব্দ ভেসে এলো । লেংচে লেংচে কেউ হাঁটছে । আজ দেখতেই হবে কে প্রতিদিন এভাবে হাঁটে । একবার মনে হলো বাবা নাতো ? কিন্তু এতো রাতে বাবা কেন হাঁটবে ?লাবনি বিছানা থেকে উঠে পরলো । কেউ বারান্দার ওপর প্রান্ত থেকে হেঁটে হেঁটে এদিকটায় আসছে । পাশের বিছানায় তমাল ঘুমাচ্ছে লাবনি কয়েকবার তমালকে ডাকল । কিন্তু তমালের গভীর ঘুমে আচ্ছন । লাবনি বিছানা ছেড়ে দরজার কাছে গেল । যতোটা সম্ভব শব্দ না করে আলতো করে খুলে ফেললো দরজার উপড়ের দিকের ছিটকিনি ।তারপর অপেক্ষায় থাকলো দরজা পর্যন্ত শব্দটা আসার । শব্দটা একটু একটু করে এগিয়ে আসছে । লাবনি আপেক্ষা করছে । ওর শরীর কেমন জানি অজানা এক ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে । দরজার কাছে শব্দটা আসতেই ও একটানে খুলে ফেললো দরজা । প্রায় সাথে সাথে বারান্দার জ্বলতে থাকা লাইটা নিবে গেল । লাবনি ভয় পেলেও দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। চোখে অন্ধকারটা সয়ে আসতেই ও দেখতে পেল । ঠিক ওর দরজার সামনের ফ্লরে কুকুরটা বসে আছে তার ঠিক পাশে বসে আছে তিথি আর তিথির গা ঘেষে বসে আছে বাদল । তিনজন মাথা নিচু করে কিছু একটা খাচ্ছিল । দরজা খোলার শব্দে এক সঙ্গে সবাই মুখ তুলে তাকালো লাবনির দিকে । ভয়ে লাবনির মনে হলো ও মরে যাবে । বুক হাপারের মতো লাফাচ্ছে । ফ্লরের দিকে চোখ যেতেই লাবনি স্পস্ট দেখতে পেলো এক- দেড় বছরের একটা বাচ্চা ছেলের দেহ পরে আছে । সেটাতে কামর বসিয়ে খাচ্ছে তিন জন । তিথি লাবনির চোখে চোখে তাকালো । তিথির বুকের উপড়টা ভেসে যাচ্ছে রক্তে । ঠোট বেয়েও রক্ত ঝরছে । বাকী দু’জন কচমচ করে বাচ্চাটাকে খাচ্ছে । লাবনির হাত দু’টো যেন দরজার সঙ্গে আটকে আছে । ও চিৎকার করতে চেষ্টা করে পারলোনা । মুখ দিয়ে মৃদু গরগর শব্দ ছাড়া আর কিছু বেড় হলো না । তিথি মাটি থেকে শূন্যে ভাসছে । একটা আঙুল তুলে লাবনি কে কোন শব্দ করতে নিষধ করলো । তিথি ভাসতে ভাসতে ওর দিকে আসতেই লাবনি এক পা দু পা করে পিছিয়ে গেল । তিথি ও লাবনির সাথে সাথে ওর রুমে ঢুকে গেল ।এবং সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল । আর প্রায় সাথে সাথেই একটি আত্মচিৎকারে রাতের নিস্তব্দতাকে ভেঙ্গে খান খান করে দিলো । পরের দিন লাবনিকে পাওয়া গেল ওর ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় । আমাদের সবার পাগল হবার মতো অবস্থা । ফুপি এসেছেন । আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলেছেন তোর বউকে এখুনি তারা । ও একটা ডাইনী সবাইকে শেষ না করে ছাড়বে না । তুই কাল অবশ্যই আমার বাসায় আসবি । লাবনিকে আজিমপুরে দাফন করে এসে দেখি মা বাবা দুজনকেই ফুপি নিয়ে গেছেন । সন্ধ্যা নাগাত তমালও চলে গেল । পুরো বাড়িতে আমি কেমন যেন একলা হয়ে গেলাম । তিথি কিন্তু বেশ স্বাভাবিক । যেন কিছুই হয়নি । দু’একবার মনে হয় গুন গুন করে গান গাইতে শুনলাম । গোছল করে এসে দেখি - কুকুরটি আমার ঘরে খাটের কাছে বসে আছে । আর লাবনি খাটে বসে ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছে । আমি কপাল কুচঁকে চিৎকার করে উঠলাম -ও’টা ঘরের ভেতর কেন ? কি পেয়েছো তুমি ? বেড় করো বেড় করো । আমি কুকুরটাকে মারার জন্য কিছু খুঁজতে লাগলাম । আমার হঠাৎ চেচামেচিতে কুকুরটা গরগর করে উঠলো। একবার তাকাল তিথির দিকে । যেন হুকুম পেলেই আমাকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে ।
তিথি মুখের কেমন একটি ভঙ্গি করে ইশারা করতেই কুকুরটি ঘর থেকে বেড় হয়ে গেল । তিথিও দরজা টেনে দিয়ে ঘর থেকে বেড় হয়ে গেল ।
তিথি আমার পা ধরে নাড়া দিলো । আমি অনুভব করলাম ঠান্ডা একটা হাত আমার পা ধরে নাড়াচ্ছে । বাদল লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে এল । তারপর কুকুরের মতো হামাগুরি দিয়ে আমার মুখের কাছে মুখ এনে শুকতে লাগলো । খাটের আরেক পাশে এসে লাবনি আমাকে উল্টে দিল । আমি টের পেলাম ও’র শরীরে অসম্ভব জোর । তিথি আমার বুকের উপর উঠে বসেছে । আমি বুঝতে পারলাম ঘুমের ভান করে পরে থেকে কোন লাভ হবে না । ও’র দিকে তাকালাম ।তারপর বললাম ছাড় ছাড় আমাকে শয়তানী । তিথি হাসছে । ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে বেড় হয়ে এসেছে দুটো ধারালো দাঁত । আমি ওকে বুকের উপড় থেকে সড়াতে চেষ্টা করলাম । কিন্তু পারলাম না । বিশ্রী একটা গন্ধে ভরে গেছে ঘর । তিথি আমার গলার কাছে ওর মুখ নিয়ে আসছে । আমি প্রাণপন চেস্টা করছি নিজেকে বাঁচাতে । কিন্তু হাত পা এক ফোঁটা নাড়াতে পারছিনা । আমার দম ভারী হয়ে আসছে । মনে হলো আমি মরে যাবো । বুকের উপড় যেন পাথর চেপে বসেছে ।
ঠিক এমন সময় ঘরের ভেতর ঢুকলো ফুপিসহ আরো কয়েক’জন ফকির । তারা একত্রে চিৎকার করে উঠলো ছাড় ছাড় বলছি শয়তান । ছাড় । এক জন কিছু পানি ছুড়ে মারলো । লাফ দিয়ে তিথি নেমে গেল আমার বুকের উপর থেকে । লাবনি ,বাদল ,কুকুটাও লাফিয়ে পরলো মাটিতে । প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একজন বল্লম জাতীয় কিছু একটা ঢুকিয়ে দিলো কুকুটির পেটে । ফিনকি দিয়ে রক্ত বেড় হয়ে এলো । কয়েক ফোঁটা আমার চোখে মুখে পড়লো । লোকটি শরীরের সব শক্তি দিয়ে কুকুরটাকে চেপে ধললো মাটির সঙ্গে । কয়েটা জোরে ঝাকি দিয়ে কুকুরের শরীরটা স্হির হয়ে গেল ।
তিথি বাতাসে ভাসছে । ওর দিকে সবাই পানি ছুড়ে মারছে আর বলছে যা , যা । তিথি ভয়ন্কর ভাবে শব্দ করছে । লাবনি আর বাদলকে কয়েক জন ঘিরে ফেলেছে । সবাই বেশ জোরে জোরে বিভিন্ন আয়াত পড়ছে আর পানি মারছে । শরীরে পানি পরার সঙ্গে সঙ্গে ওদের মুখ যন্ত্রনায় বিকৃত হয়ে যাচ্ছে ।
সাদা দাঁড়ি ওয়ালা একজন দু’মুঠো মাটি ছুড়ে দিতেই মাটিতে তিথিকে ঘিরে একটি আর লাবনি আর বাদলকে ঘিরে আরেকটি দুটো র্সাকেল হয়ে গেল । তারপর উনি বললেন - তোর খেলা শেষ । তুই আর এ রেখা থেকে বেড় হতে পারবিনা ।
-তোদের সবাই কে মেরে ফেলবো । ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলবো । কুত্তার বাচ্চারা কেউ বাচঁবি না। সব মরবি শুয়োরের জাত । তিথি অসভ্য ভাষায় গালাগালি করছে । পরক্ষনেই আমার দিকে তাকিয়ে সেই আগের নরম কন্ঠ স্বরে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো জগলু আমার জান আমাকে বাঁচাও । জান ওরা সব শয়তান আমাকে বাঁচাও । আমাকে বাঁচাও । সাদা দাঁড়িওয়ালা আমাকে পেছনে টেনে এনে বললো - খবরদার ওর কথায় কান দেবে না । তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো তোর খেলা শেষ । তিনি নিজ মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন । তারপর বিরবির করে দোয়া পড়তে পড়তে দু’মুঠো মাটি ছুঁড়ে দিতেই । তিথি ,লাবনি, বাদল এর শরীরে আগুন ধরে গেল । কয়েক মুর্হুতের মধ্যে জ্বলে উঠা আগুনে পুড়ে তিথি,লাবনি ,বাদল কয়লা হয়ে গেল । কুকুরটাকে তিনি পুড়িয়ে ফেলতে বললেন । দু’জন টেনে বাহীরে এনে কুকুরটার শরীরে আগুন দিয়ে দিলো । তিথি ; লাবনি ,আর বাদলের ছাইগুলো একজন একটা কাচের বোয়মে তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেড় হয়ে গেলো । দাঁড়িওয়ালা আমার শরীরে এক মুঠো মাটি ছিটিয়ে দিয়ে এক বোতল পানি ঢেলে দিতেই আমি জ্ঞান হারালাম । পরিশেষ : কেউ খেয়াল করলো না । সবাই যখন জগলুদের বাড়িটি থেকে জগলুকে সহ বেড় হয়ে গেলো । ঠিক তখন দুটো নারিকেল গাছের মাঝখানে বসে আছে একটি দুই কি তিন বছরের মেয়ে । অবিকল তিথির মতো দেখতে। আর তার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্র একটি কালো রঙ এর কুকুর । >>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>শেষ >>>>>>>>>>>>>>>>>>>

ভৌতিক গল্প : বন্ধু নিখিলেস (১ম পর্ব) - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, September 24, 2011 at 11:20pm
বৈশাখ মাসের দুপুর ।
মাথার উপড় সূর্য যেন খসে পরছে । বাতাস না তো লু হাওয়া । শরীরে লাগলে পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে । আমার আর রন্জুর শরীর দিয়ে ঘাম টপ টপ করে পরছে । তোজার মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই । বাস থেকে নেমে একটা ভ্যান নিয়ে ছিলাম । সেটাও অধেক পথ এসে বললো আর যাবে না । যাবেই বা কি করে বলা নেই কওয়া নেই সামনের চাকাটা হঠাৎই ভেঙ্গে দুমরে মুচরে গেল । অজ্ঞতা বাকি পথ টুকু পায়ে হেঁটেই হওনা হলাম । কৈই ভেবে ছিলাম অনেক দিন পর গ্রামে ভ্রমনটা ফাটাফাটি হবে । না এখন দেখছি গরমে আর জার্নিতেই অবস্হা টাইট । দু’পাশের ধান ক্ষেতের মাঝ খান দিয়ে একে বেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে আমরা চলেছি । গন্তব্য আমাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু নিখিলেশের বাড়ি ।
হারিয়ে যাওয়া বন্ধু বলছি এ কারনে যে , আমরা তখন মাত্র সেকেন্ড ইয়ার শেষ করেছি । আমি ; রন্জু ,নিখিলেস আর তোজাম্মেল জহুরুল হক হলের ৩২৭ নম্বরে থাকি । চার জনে দস্তির চুড়ান্তু । নিজেদের আন্ডার ওয়ারটা ছাড়া আর বাদবাকি সব কিছু ভাগা ভাগি করে ব্যবহার করি । কে কার জন্য কতোটা করতে পারছি সেটাই ছিল মুখ্য বিষয় । ছাত্র হিসাবের চার জন তুখোর । পাল্লা দিয়ে চলে পড়া শুনা । এ সেমিষ্টারে আমি ফাস্ট তো পরেরটায় রন্জু ,তার পরেরটায় নিখিলেস । ব্যতিক্রম শুধু তোজা মানে তোজাম্মেল । সব সেমিষ্টারে থার্ড । এর কারন হলো , শালায় পড়াশুনা খুব একটা করে না । আমাদের তৈরি নোট দিয়ে দিব্ব্যি চালিয়ে যাচ্ছিল । তবে ছাত্র হিসাবে তোজাও তুখোর । কোন একটি বিষয় ওকে দু’বার পড়তে শুনিনি । সেই সময় এক রাতে নিখিলেস ব্যাগ টেগ গুছিয়ে রাড়িতে চলে গেল । আর ফিরলোনা । ওর এভাবে চলে যাওয়াটাকে আমরা মেনে নিতে পারলাম না । অনেক খোঁজা খুঁজির পরে ও যখন ওকে পেলাম না তখন আমরা ঠিক করলাম শালাকে খুঁজে বেড় করে তবেই ছাড়বো । এর মধ্যে ওর একটা চিঠি পেয়েছি -তাতে ও এভাবে চলে যাবার জন্য ক্ষমা চেয়েছে । কিন্তু ক্ষমা আমরা করতে পারলাম না । এভাবে একটি ছেলে লেখা পড়া বন্ধ করে চেলে যেতে পারে না । নিশ্চই এর পেছনে কোন কার আছে । আর আমরা এখন চলেছি সেই কারন বেড় করতে ।
কিছুটা পথ হাঁটার পরেই রন্জু বসে পরলো -না আমি আর যাচ্ছি না । মালোয়ানটারে আমার কোন দরকার নাই । আমি আর হাঁটতে পারমু না । তোরা খুইজা নিয়া আয় আমি হারামজাদারে দু’ইডা জুতার বারি মারি । নিখিলেস কে আমরা রেগে গেলে মালাউন বলে খেপাতাম ।
আমার দু’ইডাও মাইরা দিস বলে ওর পাশে বসে পরলো তোজা ।
সালা এতো দু’র জানলে কে আসতো ? মোনালিসার সঙ্গে পককোন খেতে খেতে ওর ফ্লাটে বসে আড্ডা মারতাম না আইছি গাইয়া ভুতটারে খুঁজতে । রন্জু পকেট থেকে সিগারেট বেড় করতে করতে বললো ।
তুমি কি মামা শুধু আড্ডাতেই ক্ষান্ত হইতা এইডা আংগোরে বিশ্বাস করতে কও ? তোজা আমার দিকে চেয়ে চোখ মারে ।
ঐ শালা আমার বউ এর লগে আমি আড্ডা মারি না অন্য কিছু করি তোর বাপের কি ?
না , মামা আমার বাপের এখন আর কিছু না । বুড়া হইয়া গেছে । তয় মামা আমার কিন্তু অনেক কিছু ; বলে তোজাম্মেল ঝট করে সড়ে যায় ।
আবে যা , তোর ঐ কালা বগের ঠ্যাং সুস্মিতার সঙ্গে যাইয়া যা করবি কর । মোনার দিকে চোখ দিবি তো চোখ তুইলা লামু । রন্জু মাটির একটা ঢিল তুলে তোজাকে ছুড়ে পারে ।
তোজা বসে পরাতে ঢিলটা ওর মাথার উপড় দিয়ে গিয়ে ঝোপের মধ্যে পরে । সঙ্গে সঙ্গে কেউ একেজন বলে উঠে -ওই ঢিল মারে কে রে ?
ঝোপের ভেতর থেকে হঠাৎ শব্দ আসায় আমরা হকচোকিয়ে গেলাম ।
আমি বললাম - আমরা ;
আমরা কারা ? ঝোপের ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠে ।
আপনি কে ? ঝোপের ভিতরে কি করেন ? রন্জু পাল্টা প্রশ্ন করে ।
কি করি মানে ? ওই তোরা কারারে ? বলতে বলতে ঝোপের ভেতরে থেকে কালো করে একটা লোক বেড় হয়ে আসে । হাতে একটা রাম দা ।
আমি যখন দৌড় দেবো কিনা ভাবছি । রন্জু তখন দু’পা সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে - চাচা সালাম - আমারা শহর থেইকা আইছি ।
হেইডা তো দেইখাই বোঝা যায় । তয় ঢিল মারছো কেন ? সন্মধন তুই থেকে তুমিতে আসায় আমার সাহস ফিরে আসে আমি বলি- এক বন্ধুর খোঁজে এসেছি । ঢিলটা আপনাকে মারা হয়নি । ভুল করে ওদিকে চলে গেছে । আর আপনি যে ঝোপরে ভেতর আছেন তা ও আমরা বুঝতে পারিনি ।
চোখ কান খোলা না রাখলে বুঝবা কেমনে ? তয় কার বাড়ী যাইবা কইলা ?
মানে আমরা এক বন্ধুরে খুঁজতে এসেছি ।
আরে বাবা হেয় তো কোন না কোন বাড়ীতেই থাকে ? হেই বাড়ীর নাম কি ?
সেটা তো বলতে পারবো না । তবে আমাদের বন্ধুর নাম নিখিলেস চৌধুরী । ইউনিভারসিটির রেজি:ষ্টারে এই জল্লা গ্রামের কথাই লেখা আছে । এটা তো জল্লা গ্রামই নাকি ? আমি পকেট থেকে নিখিলেসের ঠিকানা বেড় করতে করতে বলি ।
কি নাম কইলা নিখিলেস চৌধুরী ? আমার মনে হলো লোকটা একটু অবাক হয়েই নামটা উচ্র্চারন করলো ।
জ্বি । আমি মাথা নাড়ালাম । এটা কি জল্লা গ্রাম না ?
হ ; এইটা জল্লা গ্রামই । গ্রামের ভেতরেই চৌধুরী বাড়ি । যাও তোমরা । এই পথ ধইরা সোজা চইলা যাও । লোকটা আর দাঁড়ালো না । অনেকটা তারা হুরা করেই ঝোপের আড়ালে চেলে গেল । আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ।
কি হইলো রে মামা ? রন্জু আমার কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো ।
বুঝলাম না আমি অবাক হয়ে উত্তর দিলাম ।
আমার মনে হয় ভয় খাইছে । তোজা হাসতে হাসতে বললো ।
কিসের ভয় আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ।
আবে আংগোরে না , মনে হয় চৌধুরী বাড়ি যামু শুইনা ভয় খাইছে । তোজা হাসছে ।
চিকার মতো হাসছোস কেন - চৌধুরী বাড়ি নাম শুইনা ভয় পাইবো কেন ? রন্জু তোজার মাথায় চাটি মেরে জিজ্ঞেস করে ।
আর কেন জানছস না চৌধুরীরা জমিদার আর জমিদারগো মাইনসে কেন ভয় পাইতো । তোজা জ্ঞান দিতে শুরু করেছে ।
কেন ? কপাল কুচকে রন্জু জিজ্ঞেস করে ।
আবে শালায় অত্যাচারের জন্য । এইডাও বুঝোস না ?
যা । সেই দিন আর নাই । রন্জু নাক ছিটকায় ।
আহা গবেষনা বন্ধ কর চল সামনে হাঁটি । আমার খিদায় পেট চো চো করছে । আমি পেটে হাত দিয়ে বললাম ।
আমারও খিদা লাগছে । তোজা বললো । চল পা চালাই ।
একবার দেখমু না চাচায় ঝোপের আড়ালে কি করে ? রন্জু ঝোপের দিকে তাকিয়ে বলে ।
বাদ দে তো । যা ইচ্ছা করুক ।
আমি রন্জুর হাত টেনে হাটতে লাগলাম ।
(২)
জল্লা গ্রামটা বেশ বড় । আমারা প্রথমে গিয়ে পৌছালাম বাজারে । বাজারটা প্রায় লোক শূন্য বলা চলে । দু’তিনটা দোকান খোলা । বাকি সব গুলো বন্ধ । ঘরিতে তখন সাড়ে চারটা বাজে । কালো কাঠের তক্কার বেড়ায় ঘেরা একটা হোটেলে ডুকে ভাতের অডার দিলাম । হোটেলের ক্যাশে ১০ কি ১২ বছরের একটি ছেলে বসে ছিল । আমরা ডুকে বসতেই ছেলেটা এসে টেবিলে তিনটা প্লেট দিয়ে বললো কি খাবেন ?
কি কি আছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
এখানেই সব । হাতের ডান পাশে একটা গ্লাস ভাঙা সোকেসের মধ্যে ছোট ছোট তিনটা থালা । তার একটাতে ছোট মাছের বুনা , মাঝ খানেরটাতে কি একটা মাংস আর শেষেরটাতে হাতের পান্জার মতো লম্বা কি একটা মাছ ।
ঐ ডা কি মাছরে পিচ্চি ? তোজা লম্বা মাছটা দেখিয়ে প্রশ্ন করলো ।
আমার নাম পিচ্চি না মাহাবুব । ঐডা পুয়া মাছ ।
বাব্বা ! তো বাবা মাহাবুব পুয়া মাছটা আবার কি ?
তোজা আমার দিকে তাকায় । মনে হয় পোয়া মাছ হবে । আমি মাছের দিকে তাকিয়ে বলি ।
হ । পুয়া মাছ । ছেলেটা বলে ।
আর ঐডা কি ?
রন্জু মাঝখানের থালাটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে ।
ঐ ডা গরুর মাংস । আর এইডা কাচকি বুনা । কুনডা দিমু ?
সবই দে ।
সব খাইবেন ? ছেলেটা অবাক হয়ে তাকায় ।
আরে বাবা তিনডা বাটিতে তিনজনরে দে । যেইডা ভাল লাগে হেইডা বেশি খামু ।
খেতে শুরু করে বুঝলাম । খাবার খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না । এমন ঝাল যে নাক মুখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো । মাংসটা কোন অবস্হাতেই নরম করতে পারলাম না । খাওয়ার পালা শেষ করে আমরা সিগারেট ধরালাম ।
মাহাবুব টেবিল থেকে প্লেট নিয়ে যাচ্ছে ।
তুই কি নিখিলেসকে চিনিস ? রন্জু জিজ্ঞেস করে ।
না । মাহাবুব টেবিল মুছতে মুছতে উত্তর দেয় ।
চৌধুরী বাড়ি চিনোস ?
হু ; চিনি ।
আমরা ঐ বাড়ী যামু ।
ঐ বাড়ী যাইবেন ? ছেলেটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ।
হু । মনে হইল অবাক হইছোস ?
ঐ বাড়িতে কেউ থাকেনি ? কার কাছে যাইবেন ?
নিখিলেসের কাছে যামু । রন্জু ছেলেটার সঙ্গে কথা বলছে ।
ঐ নামে কাউরে চিনি না । ছেলেটা আর দাঁড়ায় না ।
মহাবুব চা হইবো রে ? তোজা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ।
না ।
কোথাও থেউকা আইনা দিতে পারবি না ?
না । আপনারা উডেন হোডোল বন্ধ করমু ।
বলোস কি ? আমি চমকে উঠে বললাম । এখন বাজে কয়টা যে হোটেল বন্ধ করবি ? আমি ঘড়ি দেললাম সোয়া পাঁচটা বাজে ।
আপনেরা উডেন ।
তোর বিল দে ।
১০০ টাহা দেন । এহানে যা খাইবেন পয়ত্রিশ টাহা । তিন জনে হইছে ১০৫ টাহা । পাচঁ টাহা মাপ । ১০০ টাহা দেন ।
ছেলেটা সত্যি সত্যি হোটেলের ঝাপ নামাতে লাগলো । আমরা টাকা দিয়ে বেড় হয়ে এলাম । বেড় হবার আগে জেনে নিলাম চৌধুরী বাড়ি যাবার রাস্তা । হোটেল থেকে বেড় হয়ে দেকি যে দুটো দোকান খোলা ছিল সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে । আমি অবাক হয়ে বললাম- কোন ভুতরা জায়গায় এলামরে বাবা । মাহাবুবের দেখানো পথ ধরে আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা সাকোর কাছে এসে পৌছালাম । আমরা যে রাস্তাটা দিয়ে হাটছি সেটা মাটির একটা রাস্তা ।অতি মাত্রায় নির্জন । কেমন গা ছমছম করে । তারউপরে সন্ধ্যা হয়ে আসছে । রাত্রিরে কোথায় থাকবো তা ভেবে আমি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে আছি । ওদের দু’জনের মধ্যে কোন চিন্তা দেখছি না । দু’জনই বেশ নিশ্চিন্তে হাঁটছে । তোজা একটু পর পর ভাঙা গলায় গান গাইছে -সোয়া চাঁদ পাখি আমার সোয়া চাঁদ ..............................।
( ৩)
সাকোটা পার হয়ে আমরা যখন এপারে এসে দাঁড়ালাম । তখন কোথাও থেকে অস্পস্ট ভাবে আযানের শব্দ এসে কানে লাগলো । সেই সঙ্গে ঠুং ঠুং ঘন্টির শব্দও শুনতে পেলাম । সাকো থেকে চিকন দু’টো পথ দু’দিকে চলে গেছে । আমরা কোন পথটা দিয়ে যাবো বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে রইলাম । দু’টো পথই ঝাপসা দেখাচ্ছে । সন্ধ্যা হয়ে গেছে । ঝি ঝি পোকাদের ডাক শোনা যাচ্ছে ।
কি রে কোন দিকে যামু ? রন্জু জিজ্ঞেস করলো ।
বুঝতে পারছি না । দুটো পথের দিকে ভালকরে তাকিয়ে আমি বললাম - ডান দিকের পথটা বেশি পরিস্কার মনে হচ্ছে । মনে হয় এগিকটা দিয়ে লোক চালাচল আছে এদিকটা দিয়েই চল ।
ঠিক আছে চল । রন্জুর বলা শেষে যেই পা বাড়াবো ওমনি প্রায় হুট করে বাম পাশের রাস্তাটা থেকে একটা লোক উদয় হলো । ধুতি ফোতুয়া পরে আছে । আমাদেরকে দেখে বললো -নমস্কার । আমরা মাথা নাড়ালাম । আপনারা কি নিখিলেস বাবুর কাছে এসেছেন ? আমরা সবাই প্রায় এক সঙ্গে মাথা নেড়ে হ্যা বললাম ।
চলুন আমার সাথে বাবু আপনাদের নিতে পাঠিয়েছেন ।
আমাদের নিতে এসেছেন আপনি ? আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম ।
আপনারা ঢাকা থেকে এসেছেন তো ?
হ্যা ।
বাবুর আপনাদের সঙ্গে লেখা পড়া করতেন তো ?
কে নিখিলেস ?
জি । আমি তেনার কথাই বলছি ।
হ্যা । ও আমাদেরে সঙ্গেই পড়তো ।
তা হলেতো ঠিকই আছে । আমি আপনাদেরই নিতে এসেছি । তিনি আপনাদের এগিয়ে নিতে পাঠিয়েছেন । দেন তো বাবুরা আপনাদের ব্যাগগুলো আমাকে দেন । এই তোরা কৈই গেলি ?
অন্ধকার থেকে বল্লম হাতে কালো মোটা দুটো লোক বেড় হয়ে এলো ।
নে নে বাবুদের ব্যাগ গুলো নিয়ে নে । তা বাবুরা আমার না হেমন্ত । আমি বাবুর খাসলোক হুকুমের গোলাম । আপনারা নিশ্চিন্তে আমার সঙ্গে চুলুন ।
কিন্তু নিখিলেস কি ভাবে জানলো যে আমরা আসছি ?
তোজা হেমন্তের দিকে তাকিয়ে বললো ।
তিনি সব জানেন বাবু । না জানলে কি চলে ? এতো বড় জমিদারী চালানো কি চাট্রিখানি কথা ।
কি বললে ছাগলটা জমিদার নাকি ? রন্জু কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে মোটা লোক দুটো রন্জুকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো । কি বললি তুই বাবুকে কি বললি বলে দু’জনই রন্জুর বুক বরাবর বল্লম তাক করলো ।
আরে করে কি ?করে কি ? বলে আমি হেমন্তর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম ।
এ্যই মুখ্যর দল তোরা থাম । তেনারা বাবুর বন্ধু মানুষ । তেনারা বাবুকে যা ইচ্ছে বলতে পারে ।সর সর পোড়ামুখোরা সড়ে যা বলছি ।
কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকে দু’জন সরে গেল । তারপর আমাদের ব্যাগ গুলো তুলে নিয়ে হাটতে লাগলো । রন্জুর ব্যাগটা পরে রইল মাটিতে । ওরা সড়ে যেতেই আমরা দ্রুত গিয়ে রন্জুকে মাটি থেকে তুলে নিলাম । হেমন্ত রন্জুর ব্যাগটা মাটি থেকে তুলতে তুলতে বললো -বাবুরা কিছু মনে মনে নেবেন না । এরা গ্রাম্য মুর্খ্য-সুখ্য মানুষ কিছু বুঝে না । রন্জু ভেবাচেকা খেয়ে গেছে । ও উঠে প্যান্ট ঝাড়তে লাগলো ।
চলেন বাবুরা । তারা তারি পা চালান । তিনি আপনাদের প্রতিক্ষায় আছেন । এমন সময় কোথা থেকে অ----উ--------উ করে শেয়ালের ডাক শুনা গেলো । আমারা দ্রুত পা চালালাম । হেমন্ত যেন উড়ে চলছে । আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি । রন্জ একদম চুপ মেরে গেছে । কোন কথা বলছে না । রাস্তার দু’পাশে ঘন ঝোপ জঙ্গল । হঠাৎ আমার কাছে মনে হলো আমাদের ফলো করে কারা যেন ঝোপ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ছুটে চলছে । দু ‘ একবার তাকিয়ে আমি দেখতে চেষ্টা করলাম । কিন্তু নিকোষ কালো অন্ধকার ছাড়া কিছুই চোখে পরলো না । তোজার দিকে তাকালাম ও’ও আমার দিকে তাকাল । হেমন্ত প্রায় উধাও হয়ে গেছে । আমরা প্রায় আন্দাযের উপড় হাটছি । এক সময় চোখে কিছু না দেখে আমি ডাক দিলাম - হেমন্ত বাবু ? হেমন্ত বাবু ?
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমার পেছন থেকে জবাব এলো -এ্যাই যে বাবু আমি । একটু পিছিয়ে পরেছিলাম ।
আপনি পিছিয়ে পরেছিলেন ? আপনি তো আমাদের সামনে সামনে হাঁটছিলেন । তোজা আর আমি প্রায় এক সাথে বলে উঠলাম ।
কৈই বাবুরা আমি তো পেছনেই ছিলাম । হয়তো অন্ধকারে ঠাওর করতে পারেননি । চলেন বাবুরা চলেন দেরি হয়ে যাচ্ছে আবার ছুটতে লাগলো ।
হেমন্ত এখটু আস্তে হাটেন না । আমাদের হাঁটতে তো কষ্ট হচ্ছে ।
জ্বি বাবু । বলে হেমন্ত প্রায় আমার গা ঘেষে হাটতে লাগলো । আরো প্রায় আধা ঘন্টা হাটার পর আমরা বিশাল একটা বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালাম । বাড়ী না বলে একে প্রাসাদ বলাই ভাল । বিশাল গেট ঢেলে ডুকতেই বিশাল উঠান উঠানের শেষ মাথায় প্রাসাদের ভেতরে ঢুকার সিঁড়ি । সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে নিখিলেস । ওর দুপাশে আরো দু’জন বাতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে । আমারা কাছে যেতেই নিখিলেস দু’সিড়ি নেমে এলো । একে একে আমরা সবাই হাত মেলালাম । যে নিখিলেশের জন্য এতোটা ছুটে আসা সে নিখিলেসকে যোনো আমরা পেলাম না ।
কোথায় জানি সুতা ছিড়ে যাওয়ার টের পেলাম । আসরে রন্জুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাই পুরো পরিস্থিকে পাল্টে দিয়েছে । নিখিলেস কিন্তু আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট স্বাভাবিক আচড়ন করার চেষ্টা করলো -রন্জুর মুখ কালো দেখে নিখিলেস ওর কাঁধে হাত রেখে বললো- তুই মন খারাপ করিস না । দেখ আমি জানোয়ারটাকে কি করি । তার পরেই হাক দিলো কৈই রে জানোয়ার দু’টো কৈই ?
উঠানের এক পাশ থেকে সেই লোক দুটো বেড় হয়ে এলো - ওদের কে দেখেই নিখিলেস চিৎকার করে উঠলো -তোরা আমার বন্ধুর শরীরে হাত দিছোস কোন সাহসে । নিখিলেসের এমন রুপ আমরা কোন দিন দেখিনি ।
লোক দুটো মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে । নিখিলেস ওর ডান হাতটা মেলে ধরলো সঙ্গে সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়ে একজন একটা তরবারি ওর হাতে তুলে দিল । বাতির আলো খোলা তরবারিটা যেন রক্তের নেশায় চকচক করে উঠলো । আমরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই । নিখিলেস সিঁড়ি থেকে নেমে লোক দুটৌর কাছে গিয়ে দাড়াঁল । তারপর যে লোকটা রন্জুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো সে লোকটাকে তরোয়ালের আগা দিয়ে ঠেলে আলাদা করে ফেললো । অজানা কোন আসংন্কায় আমি ডাক দিলাম নিখি ? নিখিলেস আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । আমি বুঝলাম নিখিলেস লোকটাকে ভয় দেখিয়ে রন্জুকে খুশি করতে চেষ্টা করছে । নিখিলেস লোকটাকে বললো বসে পর । লোকটা বিনা বাক্যে মাথা নীচু বসে পরলো । নিখিলেস লোকটার ঘাড়ে তরোয়ালটা রেখে বললো -আমার বন্ধুর শরীরে হাত দেয়ার অর্থ হচ্চে মৃত্যু । আমি বুঝেছি নিখি মজা করছে । হঠাৎ নিখি বলে উঠলো রন্জু এটা তোর জন্য -জয় মা কালি বলেই নিখিলেস তরোয়ালটা মাথার উপরে তুলে নীচে নামিয়ে আনলো । আমারা কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটার মাথা শরীর থেকে ছিটকে মাটিতে পরলো । তীরের বেগে বের হওয়া রক্ত এসে আমাদের শরীরে লাগলো । আমরা সবাই ভয়ে আতন্কে এক সঙ্গে চিৎকার করে উঠলাম । আমাদের পেছনে দাঁড়িয় থাকা সবাই এক সঙ্গে বলে উঠলো জয় মা কালি । আমি বমি করে দিলাম । TO BE CONTINUED.....
[Next part will be published tomorow]

ভৌতিক গল্প : বন্ধু নিখিলেস (২য় পর্ব) - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Sunday, September 25, 2011 at 8:23pm
পেছন থেকে কয়েক জন আমাদের শক্ত করে ধরে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো । আমি পেছন ফিরে দেখলাম -লোকটার কাটা শরীরটা কাটা মাছের মতো লাফাচ্ছে । আমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে গেলাম ।
(৪)
যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম তখন দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি । আমাকে ঘিরে বসে আছে তোজা ,আর রন্জু মেঝেতে একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আছে নিখি মানে নিখিলেস । পরনে দুধ সাদা পান্জবি আর ধৌতি । দেয়ালে একটা মশাল জ্বলছে ।
কি রে কেমন বোধ করছিস ? আমাকে তাকাতে দেখে নিখিলেস জিজ্ঞেস করলো । আমি কিছু না বলে রন্জু আর তোজার দিকে তাকালাম । ওদের মুখ থমথমে হয়ে আছে ।
শুন ! গরম পানি দেওয়া হয়েছে যা গোসল করে ফ্রেস হয়ে নে । তোদের সঙ্গে অনেক কথা আছে ; আমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো নিখি ।
তুই একটা মানুষ মেরে ফেললি নিখি ? আমি বলে উঠলাম ।
ওরা জন্মেছেই মরার জন্য । সব পরে বলবো , যা গোসল করে খেতে আয় ; বলে নিখিলেস হাতে তালি দিলো । সঙ্গে সঙ্গে দু’জন মহিলা এসে ঘরে ডুকলো । নিখি বললো ওদের গোসল খানায় নিয়ে যাও । ভাল করে সেবা করো । সাবধান ওরা আমার বন্ধু । আমরা উঠে মেয়ে দুটোর পেছন পেছন হাঁটতে লাগলাম । মনে হচ্ছে সারা শরীর অবস হয়ে আছে । কোথায় পা ফেলছি বুঝতে পারছি না । রন্জু আমার পাশ দিয়ে হাঁটছিল আমি ওর কাঁদে হাত রাখলাম ।
অনেক বদলে গেছে রে । অনেক বদলে গেছে ,ফিসফিস করে বললো রন্জু । ঘর থেকে বেড় হয়ে বারান্দা দিয়ে যাবার সময় দেখলাম দু’জন লোক উঠানটা পানি দিয়ে ধুচ্ছে । আমার মাথা আবারও গুলিয়ে উঠলো ।
ধৈর্য্য ধর । আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে, এরা কেউ নরমাল না । রন্জু খুব নীচু স্বরে কথাটা বললেও সামনে হাঁটতে থাকা মহিলাটা আমাদের দিকে ফিরে বললো -সে চিন্তা ভুলেও করবেন না বাবুরা । তেনারা ছিড়ে টুকরা টুকরা কইরা ফেলবে । ভুল কইরেন না । এখান থেকে পালানোর কোন পথ নাই । মহিলাটা আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো -কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ এসে নাকে লাগলো । আমি মুখ সরিয়ে নিলাম ।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা বিশাল একটা গোসল খানায় এসে দাঁড়ালাম । দুটো বড় বড় বাথটাবে পানি টলমল করছে । বার্থটাবের পাশে পরপর সাজানো চারটে পিতলের ঘটি রাখা । মহিলা দু’টো আমাদের জামা খুলে দিতে উদ্দ্যত হলে আমরা সড়ে গেলাম । তোজা বললো -আপনারা বাহিরে গিয়ে দাঁড়ান আমরা গোসল শেষে আপনাদের ডাকবো । মহিলা দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে বেড় হয়ে গেল ।
রন্জু বললো - এরা স্বাভাবিক না। এখন বুঝতে পারছি ,চৌধুরী বাড়ির নাম শুনার পরে সবাই কেন এমন চমক চমকে উঠছিল ।
তয় এখন কি করমু ? তোজা জিজ্ঞেস করে ।
কি আর ওরা যা বলে তাই করমু , ভায়ে ভায়ে থাকতে হবে । সুযোগ এলে প্রথম সুযোগেই পালামু ।
কিন্তু ঐ মহিলা যে কইলো ............... আমি রন্জুর গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বললাম ।
আরে রাখ ; অমন কথা ভয় দেখানোর জন্য অনেকে কয় । আমাদের ভয় পেলে চলবে না । মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে ।
আমার কিন্তু মনে হয় না মহিলা মিথ্যা বলেছে , তোজা আমার কথার সমর্থন দেয় ; একটু থেমে আবার বলে -
আর দেখোছ না একেক জন ক্যামন অন্ধকারে মিশে থাকে ? ডাক দিলে সঙ্গে সঙ্গে এসে হাজির হয় । আমার কিন্তু দোস্ত অনেক ভয় করছে ।
ভয়ের কিছু নাই । আমরা যতোক্ষন নিখির কথা মতো চলমু ততোক্ষন মনে হয় না কেউ আমাদের কোন ক্ষতি করার সাহস পাবে । আমি রন্জুর কথার সমর্থনে মাথা নাড়ারাল ।
এখন চল তারাতারি গোসল করে নিখির কাছে যাই । দেরি করলে ও আবার সন্দেহ করতে পারে । রন্জু সাট প্যান্ট খুলে একটা ঘটি হাতে তুলে নিয়ে শরীরে পানি ঢালতে লাগলো ।
তোর কি মনে হয় এটা আমাদেরই নিখিলেস ? সাট খুলতে খুলতে তোজা আমাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে ।
বিন্দু মাত্র সন্দেহ নাই ,এটাই আমাদের নিখিলেস । তোদের মনে আছে নিখির বাম হাতে একটা কাটা দাগ ছিলো ?
আমি মাথা নাড়লাম ছিলো । ছিল ।
আমি ঐ দাগটা আজও ওর হাতে দেখেছি । রন্জু বিজ্ঞের মতো বললো । নে এখন তারাতারি গোসল কর । বলে রন্জু মাথায় পানি ঢাললো ।
গোসল করে আমরা রুমে এসে জামা কাপড় পাল্টালাম । হেমন্ত এসে আমাদের ড্রাইনিং রুমে নিয়ে গেল । বিশাল একটা রুম । মাথার উপড় ঝাড় বাতি জ্বলছে । মার্বেল পাথরের টেবিলের চর্তুর দিকে চেয়ার সাজানো । টেবিলের এক মাথায় টেবিলের এক মাথায় বসে আছে নিখিলেস । টেবিলের উপড় নানান রকমের খানা খাদ্য । হঠাৎ খাবারের গন্ধ নাকে এসে লাগাতে পেট চো চো করে উঠলো ।
এদিকটায় বোস । নিখিলেস দু’হাত তুলে ওর দুপাশের চেয়ারগুলো আমাদের দেখিয়ে দিলো । আমি আর তোজা একপাশে অন্যটাতে রন্জু বসলো । নিখিলেস বললো নে শুরু কর । আমরা খেতে শুরু করলাম । কোন খাবারেই তেমন টেষ্ট বুঝতে পারলাম না । মুখে দেবার পর মনে হলো আজব কিছু চিবিয়ে চিবিয়ে গিলছি । আমাদের খাবার পরিবেশন করা জন্য জনা দুই লোক দাঁড়িয়ে আছে । সবাই নিখিলেসের সামনে নিচের দিকে চেয়ে আছে । হেমন্তু এসে নিখিলেসের কানে কানে ফিস ফিস করে কিছু বললো । সঙ্গে সঙ্গে নিখিলেস উঠে দাঁড়িয়ে বললো-তোরা খা আমি আসছি।তারপর দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো -খেয়াল রেখিস বাবুদের কিছু লাগবে কিনা ।
জি বাব । প্রায় এক সঙ্গে সবাই বলে উঠলো । নিখিলেস হেমন্ত কে নিয়ে বেড় হয়ে গেল । আমরা কোন কথা বললাম না । চুপচাপ খেয়ে দেয়ে মেয়ে গুলোর পিছু পিছু বারান্দা দিয়ে আগের সেই রুমটাতে এসে বসলাম । চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘরটা গোছগাছ করা হয়েছে । বিছানায় নতুন চাদর লেগেছে । জানালার পাশে দুটো সিঙ্গেল সোফা দেখতে পাচ্ছি । আমি জানালার কাছে হাতল ওয়ালা চেয়ারটাতে বসেছি । রন্জু আর তোজা বিছানায় । রন্জু জানালাটার দিকে তাকিয়ে বললো এটা কি খোলা যায় না ?
খুলে দেবো বাবু ? দু’জন মহিলার একজন বললো ।
দিননা প্লিজ । খুব গরম লাগছে ।
একজন এগিয়ে এসে আমার উপড় দিয়ে জানালা খুলে দিতে লাগলো । আমি চেয়ার থেকে উঠে যাবার কোন সুযোগ পেলাম না । মহিলা হাত উঁচিয়ে যখন জানালার উপরের সিটকিনিটা খুলছিল তখন তার শরীরটা আমার হাতের সঙ্গে প্রায় চেপে থাকলো । আমি অসস্থির মধ্যে পরে গেলাম । আমার মনে হলো মহিলা ইচ্ছা করেই একটু বেশি সময় নিয়ে জানালাটা খুললো । জানালা খোলা শেষে মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে সড়ে গেল । আমি কেমন অসুস্থি নিয়ে রন্জু আর তোজার দিকে তাকালাম । দেখলাম ব্যাপারটা ওরা যেন খেয়ালাই করলো না । জানালাটা খুলতেই দমকা একটা হাওয়া এসে আমাদের চোখে মুখে লাগলো । অন্ধকারের মধ্যেও দেখতে পেলাম সামনে একটা পুকুর । হালকা চাঁদের আলোয় পানি চকচক করছে । হাসনা হেনা ফুলের গন্ধ এসে নাকে লাগলো ।
দারুন দৃশ্য তো । বলে তোজা জানালার কাছে এগিয়ে গেল । আমরা মুগ্ধ হয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম । হঠাৎ মহিলাদের একজন বলে উঠলো -বাবু বেশি রাতে জানালা খোলা রাখবেন না ।
কেন ? আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
এমনি বাবু ! নানান জিনিষ আছে ।
কি নানান জিনিষ ? আমি আবার জানতে চাইলাম ।
সে আমরা বলতে পারবো না । আমরা তাহলে এখন যাই । বলে দু’জনই ছুটে বেড় হয়ে গেল । রন্জু উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল । আমরা তিনজন খাটে পা তুলে আরাম করে বসলাম । নানা বিষয় কথা বলতে বলতে চোখ লেগে এসেছিল ।
হঠাৎ দরজায় খুট খুট শব্দ হতে আমি আর রন্জু উঠে বসলাম । দু’জন দু’জনার মুখ চাইয়া করছি কে হতে পারে তা ভেবে । এমন সময় দরজাটা আপনা আপনি খুলে গেল - ভেতরে ডুকলো নিখিলেস । আমি অবাক হলাম সিটকিনি লাগানো দরজা আপনা আপনি খুললো কি ভাবে ? আমাদের বসে থাকতে দেখে নিখি বললো-কিরে ঘুমিয়ে পরেছিলি নাকি ? তারপর ও খোলা জানালাটার দিকে একবার তাকাল ।
জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস আসছে । সারা দিন জার্নি করেছি তো তাই মনে হয় চোখ লেগে এসেছিল- রন্জু হাই তুলতে তুলতে বললো ।
তা তুই কি মনে করে ?
তোদের বউ দি এসেছে ।
বলিস কি ? তুই বিয়েও করেছিস নাকি ? বলে আমরা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম । তোজা ও উঠে গেছে । তা আসতে বল বউদি কে ভেতরে আসতে বল ।
তমা ভেতরে আস । নিখিলেস দরজার দিকে তাকিয়ে বললো ।
মাথায় কাপড় দেয়া খুব ফর্সা গোল চেহারার বিশ পচিশ বছরের শাড়ি পরা একটা মেয়ে ভেতরে ডুকলো । পেছনে আর দু’জন মেয়ে । তাদের একজন হাতে একটা ট্রে ধরে আছে । তাতে চার পাঁচটি গ্লাসে লাল রঙের কিছু একটা পর্দাথ । খুব সম্ভব শরবত হবে ।
আমরা এক সঙ্গে সবাই বললাম -বউদি নমস্কার ।
নিখিলেসের বউ হেসে বললো-নমস্কার । তারপর আমাদের হাতে একটা করে গ্লাস তুলে দিয়ে বললো -আপনাদের জন্য ডালিমের শরবত , আমি নিজে তৈরি করে এনেছি , পান করুন ভাল লাগবে ।
আমরা শরবত মুখে দিলাম । নিখিলেশ ও নিলো এক গ্লাস । ও ডগডগ করে পুরো শরবতটা একবারে শেষ করে ফেললো । আমার শরবতটা মুখে দেবার পর মনে হলো নোনা কিছু একটা মুখে দিয়েছি । আমি খেতে পারলাম না । নিখিলেসের বউ এর অনুরোধে আর দু’ডোক গিলে রেখে দিলাম । নিখিলেস কাল কথা হবে বলে বউসহ চলে গেল । আমার ভেতটা ক্যামন গুলাতে লাগলো । আমি টেবিলের উপড়ে রাখা জগ থেকে পানি খেলাম । জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি পুকুরের পানি কেমন চকচক করছে । হঠাৎ একটা ঝোপের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম একটা কুকুরের মতো কি যেন বসে আছে । মুখটা লম্বা । চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে । আমি রন্জুকে দেখিয়ে বললাম ওটা কিরে ?
কৈই ?
ঐ যে বা দিকের ঝোপের পাশে বসে আছে কুকুরের মতো । আমি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললাম ।
মনে হচ্ছে তো কুকুরই ।
কিন্তু কুকুরের মুখ কি এতো লম্বা হয় ? তোজা আমার মনের কথাটাই বললো ।
হা মুখটাতো ওতি লম্বা মনে হচ্ছে । নেকড়ে টেকরে নাতো ?
রন্জু একটু চিন্তিত ভাবে বললো ।
এখানে নেকড়ে আসবে কোথা থেকে ?
আমি কি করে বললো কোথা থেকে এসেছে ? মনে হলো তাই বললাম । এমনিতে যে ভুতরা পরিবেশে আছি তাতে কুকুর না হয়ে এপরিবেশে নেকড়েই মানায় । রন্জু কিন্চিত হেসে বললো ।
ঐ দেখ আরেকটা তোজা হাত দিয়ে দেখালো । আমরা অবাক হয়ে দেখলাম সত্যিই আরেক এসে আগেরটার পাশে বসেছে । তার পর আরেকটা ,তারপর আরেকটা ; এমন করে প্রায় শ’খানেক নেকড়ে এসে পুরো পুকুরটাকে ঘিরে গোল হয়ে বসলো । আমারা সবাই বড় বড় চোখ করে দেখছি । কারো মুখে কোন কথা সরছে না । এখন বুঝতে পারলাম মহিলা কাদের কথা বলেছিল যে ,তেনারা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে । হঠাৎ নেকড়েগুলো আকাশের দিকে মুখ করে আ-----------উ-------উ----উ করে একসঙ্গে ডেকে উঠলো । আমাদের সবার কানে তালা লেগে যাবার যোগার হয়েছে । আমরা পরস্পর মুখ চাওয়া চায়ি করলাম । আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি চাঁদটা মেঘে ডেকে গেছে হাঠাৎ করেই যেন অন্ধকার নেমে এলো । রন্জু তারাহুরো করে জানলাটা বন্ধ করে দিলো ।
(৫)
অনেকক্ষন যাবৎ সবাই চুপচাপ শুয়ে আছি । কেউ কথা বলছি না । কথা বলতে ভালও লাগছে না । মনে মনে সবাই একই চিন্তা করছি কখন ভোর হবে আর এখান থেকে পালাবো । আমি ঘড়ি দেখলাম ত টা দুই মিনিট । কেমন একটা দুপ দুপ শব্দ ভেসে আসছে জানালার ওপাশ থেকে । মনে হচ্ছে কেউ ঘাসের উপড় জোরে জোরে পা ফেলে হাঁটছে । রন্জু আমাগকে বললো দেখবি নাকি কে হাটছে ?
আমি কিছু বলার আগেই ও আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে জানালার কাছে গিয়ে কোন শব্দ না করে জানালাটা একটু ফাঁক করে বাহিরে তাকিয়ে থাকলো ।
আমি শুয়ে শুয়ে দেখছি ও কি করে । রন্জু জানালা থেকে চোখ না সড়িয়েই একটা হাত পেছনে দিয়ে আমায় ডাকতে লাগলো ।
আমি উঠে এসে ওর পেছনে দাঁয়ে বললাম কি ? রন্জু ফিসফিস করে বলল ,চুপ কোন কথা বলবি না , দেখ ; বলে আমাকে দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য একটু সড়ে দাঁড়াল ।
আমি জানালার ফাঁকটুকু দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে চমকে উঠলাম - সন্ধ্যায় নিখিলেস যে লোকটার মাথা কেটে ফেলেছিল সে লোকটা বাহিরে হাঁটছে । এক হাতে একটা লাঠি অন্য হাত দিয়ে নিজের কাটা মাথাটা ধরে আছে । আমি ভয়ে ছিটকে পেছনে চলে এলাম , কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলাম ; রন্জু বললো কোন শব্দ করিস না । ভয়ে আমার শরীর অবস হয়ে যাচ্ছে , হাত পা গুলো মনে হলো কাঁপছে । আমি চেয়ারে বসে পরলাম । নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না । মরা মানুষ আবার হাঁটে কি ভাবে ?
এদিকে আয় এদিকে আয় রন্জু আবার আমাকে ডাকলো । আমি এগিয়ে গিয়ে বাহির তাকালাম - দেখি মাথা কাটা লোকটা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে । অন্ধকার থেকে বেড় হয়ে এলো নিখিলেশ । পা পযর্ন্তু কেমন কালো একটা আলখাল্লা পরে আছে । ও এসে সোজা দাঁড়ালো মাথা কাটা লোকটার সামনে । নিখিলেশের সামনে লোকটা হাঁটু ঘেরে বসে পরলো । নিখিলেশ লোকটার কাটা মাথাটা হাতে তুলে নিয়ে লোকটার কাটা ঘারের উপড় রাখলো তারপর কাটা গলাটার উপর হাত বুলিয়ে দিতেই কাটা মাথাটা শরীরের সঙ্গে লেগে গেল ।
আমরা আবার ও বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে গেলাম । বিস্ময়ের গোর কাটতে না কাটতেই দেখলাম - মাথাটা জোড়া লাগতেই লোকটা এলো মেলো এদিক ও দিক পা ফেলে আবার এসে দাঁড়ালো নিখিলেসের সামনে , নিখিলেস ওর বাম হাতটা লোকটার কাধে রাখতেই লোকটা মাটিতে বসে পরলো । পুকুর পাড় থেকে নেকরে গুলো এসে লাইন দিয়ে লোকটার পেছনে বসেছে । নিখিলেস একবার চাদের দিকে তাকিয়ে আমাদের জানালার দিকে তাকালো । ভয়ে আমি আর রন্জু চট করে সড়ে গেলাম । দু’জনই কাঁপছি । বুকটা হাপারের মতো লাফাচ্ছে । আমার হঠাৎ মনে হলো আমি মরে যাবো । কিন্তু বাহিরে কি হচ্ছে তা দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না । রন্জু এগিয়ে যেতেই আমিও ও’র পেছন পেছন এগিয়ে গেলাম । বাহিরে তাকিয়ে দেখি নিখিলেস ওর আলখাল্লার পকেট থেকে চকচকে একটা ছুরি বেড় করে নীজের হাতে একটা পোচ দিলো -সঙ্গে টপটপ করে রক্ত বেড় হয়ে এলো । নিখিলেস কাটা মাথা ওয়ালার মুখের উপড় ওর হাতটা ধরেতেই লোকটা মুখ হা করলো .টপটপ করে লোকটার মুখের ভেতর নিখিলেসের হাত থেকে রক্ত পরতে লাগলো । সঙ্গে সঙ্গে নেকড়েগুলো আ------উ---উ--------করে ডেকে উঠলো । লোকটা পিছিয়ে গিয়ে নেকড়ে গুলোর সঙ্গে চাঁদের দিকে মুখ করে গলা মেলাল । আমি স্পষ্ট দেখলাম নিখিলেশের রক্তে লোকটার মুখ আর বুক কালো হয়ে আছে । নিখিলেশ ও চাঁদের দিকে মুখ করে আ------উ---উ--------করে ডেকে উঠলো । আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম নিখিলেশ ডেকে উঠতেই নেকড়েগুলো ডাক বন্ধ করে দিয়ে - জঙ্গলের ভেতর ছুটে পালাল । নিখিলেশ ডাকতেই থাকলো । হঠাৎ খেয়াল করলাম কাটা মাথা ওয়ালা লোকটা আস্তে আস্তে নেকড়েতে পরিনত হয়ে যাচ্ছে । পুরোপুরি নেকড়েতে পরিনত হতেই নেকড়েটা আমাদের দিকে তাকাল । ভয়ে আমাদের কল্জে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । বুঝতে পারছিনা স্বপ্ন না বাস্তব্যে দেখছি । নেকড়েটা জানালা দিকে তাকিয়ে তাকালো নিখিলেসের দিকে । নিখিলেসও তাকালো জানালার দিকে আমার কাছে মনে হলো ওরা বুঝতে পেরেছে আমরা ওদেরকে দেখছি । আমি রন্জুকে ধরে পেছনে টেন আনলাম । ফিসফিস করে বললাম -বাচঁতে হলে আমাদের পালাতে হবে । অবশ্যই পালাতে হবে । হাঠাৎ জানালায় খরররর খরররর শব্দ হতে লাগলো । মনে হলো নেকড়েটা নোখ দিয়ে আচড় কাটছে । রন্জু আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি করমু ? আমি বললাম চুপ করে থাক । হঠাৎ বারান্দা থেকে পায়ে হাটার শব্দ ভেসে এলো । মনে হলো কে যেনো হেটে আমাদের দরজার দিকেই আসছে । রন্জু একলাফে খাট থেকে নেমে গিয়ে জানালার কাছে থাকা একটা সিঙ্গেল সোফা টানতে লাগলো । আমিও নেমে দিয়ে হাত লাগালাম । দু’জন মিলে যেই না দরজায় সোফাটা চাপা দিয়েছি ওমনি দরজায় শব্দ হলো । সেই জানালার খরররর খরররর শব্দ ।
হঠাৎ তোজা শোয়া থেকে উঠে বসে বললো পানি খাবো । আমাকে পানি দে ।
আমি টেবিল থেকে গ্লাসে ঢেলে ওক পানি দিলাম । পানি খাওয়া শেষ করে ও বললো- কি হয়েছি ?
রন্জু বললো কে যেন ঘরে ঢুকতে চাচ্ছে ।
কে ঘরে ঢুকতে চাচ্ছে ? তোজা পাল্টা প্রশ্ন করলো ।
জানি না । আমি ফিসফিস করে বললাম ।
হয়েছে শুয়ে পর বলে তোজা শুয়ে পরলো । আমি আর রন্জু বাকি রাত টুকু বসে কাটালাম ।
দরজায় দুম ধাম শব্দে ঘুম ভাংলো আমাদের । মনে হচ্ছে দরজাটে কেউ ভেঙ্গে ফেলবে । জানালার ফাক ফোকর দিয়ে ঘরে আলো আসছে । আমরা বুঝতে পারলাম বেশ বেলা হয়ে গেছে । রন্জু উঠে জানালাটা খুলে দিল । আলোতে পুরো ঘরটা যেন নেচে উঠলো । দরজায় আবার শব্দ হতেই রন্জু জিজ্ঞেস করলো কে ?
বাবু আমি । অনেক বেলা হয়েছে । উঠবেন না ।
আমি হাত ঘড়ি দেখে চমকে উঠলাম ২ টা বাজে ।

ভৌতিক গল্প : বন্ধু নিখিলেস (শেষ অংশ) - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Monday, September 26, 2011 at 8:16pm
আমি হাত ঘড়ি দেখে চমকে উঠলাম ২ টা বাজে । রন্জু আর আমি মিলে দরজার সামনে থেকে সোফাটা সড়িয়ে দরজাটা খুলে দিলাম । আমাদের বয়সিই একজন দাড়িয়ে আছে । আমাদের দরজা খুলতে দেখে বললো - বাবুরা নমস্কার । আমি বললাম - তুমি কে ?
জি ; আমার নাম নগেন । আমি এ বাড়িতে কর্ম করি ।
কাল কি তোমাকে দেখেছি ?
না বাবু আমি রাতে এখানে থাকি না । সন্ধ্যায় চলে যাই বাবু !
কেন চলে যাও ? ভুতের ভয়ে ? রন্জু সরাসরি জিজ্ঞেস করলো ।
নগেন কিছু বলেনা , চুপকরে থাকে ।
কি হলো কথা বলছো না কেন ? রন্জু চিৎকার করে উঠে ।
বাবুরা খাতে আসে , খাবার দেয়া হয়েছে । বলে নগেন আর দাড়ায় না চুটে চলে যায় । রন্জু আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে তারাতারি রেডি হয়েনে চলে যেতে হবে । হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে আমরা জামা কাপড় পরে নেই । নগেন এসে আবার দরজায় দাঁড়ায় বাবুরা খেতে আসেন ।
রন্জু বলে নগেন ভেতরে আসো । নগেন নড়ে না । দরজায়ই দাঁড়িয়ে থাকে ।
আমি জানি তুমি ওদের মতো না , নগেন তুমি আমাদের হেল্প করো । আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই ।
বাবুরা খেতে আসেন । নগেন মাথা নীচু করে বলে ।
তুমি আমাদের হেল্প করবে কিনা বলো ? রন্জু দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই নগেন চেলে যায় । তোরা ব্যাগ গুছিয়ে রাখ আমি আসছি বলে রন্জু ও নগেন এর পেছন পেছন যেতে চায় -আমি ওর হাত চেপে ধরে বলি -একা যাবার দরকার নেই । যা করবার একসাথেই করবো । নগেন কে হাত করতে হবে । আমার মনে হয় না কারো হেল্প ছাড়া একান থেকে বেড় হতে পারবো ।
তুই ঠিক বলেছিস । চল এখন খেতে যাই । তোজা এগিয়ে এসে বললো ।
তাই চল । আমরা আবার ড্রাইনিং রুমে চলে এলাম । টেবিলে নানান রকমের খাবার সাজানো আছে । টেষ্ট গতরাতের মতো না । স্বার্দ বোঝা যাচ্ছে । টেবিলের পাশে শুধু নগেন দাঁড়িয়ে আছে ।
আমরা আর ওকে আমাদের সাহায্য করার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না ।
রন্জু খেতে খেতে বললো -খাবারটা ফাস্ট ক্লাস হয়েছে । নগেন রান্না করেছে কে ?
জি আমি বাবু । নগেন মুখ নীচু করে বলে ।
তুমি বখশিস পাবে । দাঁড়াও খেয়ে নেই ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রন্জু সত্যি সত্যি নগেন এর সামনে একটা ১০০ টাকার নোট মেলে ধললো । নাও ,তোমার বখশিস ,
বাবু লাগবে না ।
লাকবে না কেনো ?
নাও বলছি ।
লাগবে না বাবু ।
ভয় নেই কেউ কিছু বলবে না । তুমি নাও ।
আচ্ছা বলো নিখিলেস কোথায় ?
বাবু বাহিরে গেছেন । রাতে ফিরবেন ।
আর আর ওর বউ কোথায় ?
তিনিও বাবুর সঙ্গে গেছেন ।
দেখো নগেন আমার কাছে মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই । গতরাতে আমরা সব যেনে গেছি । আমি জানি ওরা সব পিশাচ দিনের বেলায় কোথাও লুকিয়ে থাকে রাতে বেলায়ই শুধু বেড় হয় ।
আমি কিছু জানিনা বাবু । বলে নগেন চলে যেতে উদ্দত হয় । রন্জু খপ করে ওর হাত চেপে ধরে বলে -ঠিক আছে রাতে যখন নিখিলেশ আসবে আমরা তখন ওকে বলবো তুমি আমাদের বলেছো ও’নাকি পিশাচ ।
বাবু আমাকে মারবেন না । আপনাদের পায়ে পরি ,বলে নগেন সত্যি সত্যি রন্জুর পা জড়িয়ে ধরলো ।
আমার কথা শুনলে তোক কথাও আমি শুনবো । রন্জু পা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো । উঠ ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শোন ,তারপর সিদ্ধান্ত নে কি করবি ।
নগেন চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাড়াঁলো । বলেন বাবু কি করতে হবে ।
তুই এখানে কি ভাবে এলি । এখানে তো কারো কাজ করার কথা নয় । আমার যতোদূর মনে হয় এখানে কেউ দিনের বেলাতেও আসার কথা না । তুই কিবাবে এলি ?
বাবু আমি শুধু দিনের বেলায় আসি । ভুতের বাড়ি বলে নোক জন এদিকটাতে আসে না , আমি বাবু সপ্তাহে দু’দিন সকালে এসে ঝাড়পোছ করে বিকেল বিকেল চলে যাই । মাসে হাজার তিনেক টাকা পাই বাবু । হেমন্ত বাবু আমাকে নিয়োগ দিয়েছে । অভাবের সংসার বাবু না করতে পারিনি ।
নিখিলেস কবে মারা গেছে ? রন্জু আন্ধাজের উপর ঢিল মারে ?
সে বাবু আমি জানিনা ।
হুম ; তুই থাকিস কোথায় ?
বাবু বাজারের কাছে ।
আসিস কোন পথ দিয়ে ?
বাবু বাড়ীর পেছনে একটা সংক্ষিপ পথ আছে ।
চল আমাদের দেখিয়ে দিবি ।
বাবু তেনারা আমাকে মেরে ফেলবেন । নগেন কান্না করে উঠে । আমার মায়া লাগে । আহারে অভাবে পরে মানুষ কি না করে ।
তোর কোন চিন্তু নেই । তুই শুধু এখন শুধু আমাদের পথটা দেখিয়ে দে । তুই চলে যাবার পরে আমরা চলে যাবো । কেউ বুঝতে পারবে না তুই আমাদের পালাতে সাহার্য্য করেছিস ।
বাবু তেনারা আমাকে মেরে ফেলবেক্ষন ।
না দেখালেও মেরে ফেলবে । আমি সিনেমার বিলেনদের মতো হেসে বললাম ।
নগেন এর পেছন পেছন গিয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত পথটা দেখে এলাম । বাড়ির পেছনের প্রাচিরের দেয়াল মাঝ খান দিয়ে ছোট্র একটা পায়ে হাটার রাস্তা চলে গেছ দূরে একটা গ্রামের দিকে । ফিরে এসে যটপট ব্যাগগুলো কাধে নিয়ে যেই না ঘর থেকে বেড় হতেছি , অমনি শুরু হলো প্রচন্ড বেগে বাতাস । মনে হলো ; আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমরা ঘরে ফিরে দরজা বন্ধ করে দিলাম । তোজা বললো -নিখিলেস আমাদের বাধা দিচ্ছে নাতো ?
না । ভুলে যাসনে এটা বৈশাখ মাস । মনে হয় কালবৈশাখি ঝড় শুরু হয়েছে । রন্জু জানালাটা একটু ফাঁক করে বাহিরে তাকাল । আমিও দাড়ালাম ওর পাশে । বাহিরে তাকিয়ে দেখি প্রচন্ড বাতাসে পুকুরের পাশের নারিকেল গাছ গুলো যেন একেবারে ভেংগে পড়তে চাইছে । ঘরের ভিতর হুর হুর করে বাতাস ডুকছে । পর পর প্রচন্ডে শব্দ করে দুটো বাজ পরলো । পুরো বাড়িসহ আমরা কেঁপে উঠলাম । আমি জোরে জোরে পড়তে লাকলাম -লাইলাহা ইন্তা আন্তা .....................জোয়ালমিন । (৬) যখন ঝড় থামলো তখন অনেক রাত হয়ে গেছে । হেমন্ত এসে দরজায় কড়া নাড়লো । আমরা দু’টো লোহার রড যোগার করে দরজার পেছনে লুকিয়ে রেখেছি । এছাড়া আমাদের কাছে আত্মরক্ষার জন আর কিছু নেই । অনেকক্ষন দরজা নোক কড়ার পর রন্জু দরজা খুলে দিল । দরজা খুলার আগে ও আমাদের বললো খবরদার ওরা যেন বুঝতে না পারে আমরা সব যেনে গেছি । হেমন্ত ভেতরে ডুকে বললো -নমস্কার বাবুরা ।
সারাদিন ছিলেন কোথায় হেমন্ত বাবু । রন্জু হেমন্তকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠলো ।
-বাবুর সঙ্গে গিয়েছিলাম বাবু । আপনাদের কোন অসুবিধা হয়নিতো ।
না , সুবিধা ও খুব একটা হয়নি । খালি বাড়িতে কারইবা ভাল লাগে বলুন ?
আমি দু:খিত বাবু । লোকজন কম হওয়ায় এমনটা হয়েছে ।
তা নিখিলেসের বউ কে ও তো কোথাও পেলাম না । কোথা থেকে এক লোক এসে খাবার দিয়ে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল । তারপর শুরু হলো এই বিচ্ছিরি ঝড় ।
ঠাকুরান ও গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে । হেমন্ত রন্জুর সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে ।
তা কৈই নিখিলেস ? ওকে ডাকেন কথা বলি ।
কর্তা নেডি হয়ে তবেই আসবে । আপনাদের কিছু লাগলে বলেন আমি লোক বলে দিচ্ছি ।
না কিছু লাগবে না ।
ঠিক আছে বাবু আমি তা হলে আসি । বলে হেমন্ত চলে গেল । রন্জু দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে বললো -মনে হয় কিছু বুঝতে পারেনি ।
এখন কি করবি ? তোজা জিজ্ঞেস করলো ।
শোন রাতে কোন অবস্থাতেই পালাতে পারবো না । কোন মতে আজকের রাতটাও এখানে পাড় করে দিতে হবে । সকাল পর্যন্ত যদি বেঁচে থাকি তখন দেখা যাবে । বলে রন্জু খাটে পা ঝুলিয়ে বসে পরলো ।
অনেক রাত করে নিখিলেস এলো । সাদা ধূতি আর পান্জাবি পরে আছে । সারাদিন না থাকার জন্য অনেক দু:খ প্রকাশ করলো । আরো বললো কয়েকটা দিন তোদের বউ দিদি কে নিয়ে যেতে হবে । তোরা আরামে থাক । কোন সমস্যা হবে না । তোজা চলে যাবার কথা বলতেই নিখিলেসের চোখ দু’টো লাল হয়ে উঠলো -বললো কেন ? কেন যাবি ? এখানে কি অসুবিধা হচ্ছে তোদের ? রন্জু বললো কোন অসুবিধাই হচ্ছে না । বরং শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে অনেক আরামে আছি । তুই আমাদের নিয়ে চিন্তা করিস না । রন্জুর কথায় নিখিলেসের মুখে হাসি ফিরে এলো - সাদা চকচকে দাঁতগুলো বেড় করে ও বললো এই না হলে বন্ধু । আমাদের কথার মাঝখানে যথারিতি নিখিলেসের বউ শরবত নিয়ে এলো । আমরা শুধু সৌজন্য রক্ষার জন্য আমি আর রন্জু গ্লাস গুলো নিয়ে মুখে দিলাম । তোজার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর পুরো গ্লাস সাবার করে দিয়েছে । হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে ও বললো - বউদি দারুন শরবত বানিয়েছেন , একেবারে শরবতে এপি । নিখিলেসের বউ রন্জুর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো । তোজার উপড় আমার কেমন ঘা জ্বালা করে উঠলো । নিখিলেসরা চলে যাবার সাথে সাথে আমি তোজার মাথায় চাটি মেরে বললাম তুই এভাবে শরবত খেলি কেনো ?
তোজা শুতে শুতে বললো -বারে , খাবার জিনিষ খাবো না ?
ওতে যদি কিছু মেশানো থাকে ? এমনিতেই ক্যামন রক্তের মতো মনে হয় । দেখলেই শরীর গিনগিন করে উঠে । আমি ঘরের ভেতরই থুতু ফেললাম ।
কৈই আমার তো ভালই লাগলো । তোজা শুয়ে পরলো । রন্জু চুপচাপ কি যেন ভাবছে আমি ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কোন জবাব না পেয়ে কাধ ধরে নাড়ালাম -কি রে , কি ভাবছিস ?
হুম !
কি ভাবছিস ? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম ।
ভাবছি আমাদের নিয়ে নিখি’র প্লানটা কি ? যদি মেরে ফেলে চাইতো তবে সহজেই মেরে ফেলতে পারে । কিন্তু তা না করে আমাদের যখন বাঁচিয়ে রেখেছে তখন বুঝতে হবে আমাদের নিয়ে নিশ্চই ওর কোন প্লান আছে ।
আমার ও তাই মনে হয় ; নিশ্চই কোন না কোন প্লান আছে ।
কি আর প্লান হয়তো আমাদেরও ভুত বানিয়ে ফেলবে । তারপর একসাথে সারা জীবন এখানে কাটিয়ে দেবো ,বলে তোজা খেক খেক করে হাসতে লাগলো ।
তোর খুব সাহস হয়েছে বলে মনে হচ্ছে -আমি তোজার দিকে তাকিয়ে বললাম ;
নিখির বউটা দেখেছিস দোস ! যোস না ?
এই শালার কাছে কেউ মানুষ ,ভুত - প্রেত নিরাপদ না । বলে রন্জু তোজাকে একটা ঘুষি মারলো ।
কেন তোমার মোনালিসার দিকে তো তাকাই নাই ; তয় তোমার জ্বলে কেন ?
শালা ওর দিকে তাকিয়ে দেখ না একবার , আমি না মোনাই তোকে জুতা মারবে ।
আব্বে যা । দূরে গিয়া মর ; গন্ধ লাগে । বলে তোজা সড়ে গেল । হঠাৎ ওদের দু’জনের এই খুনসুটি আমার কাছে অনেক ভাল লাগল ।
রন্জু তোজার উপরে উঠে ওকে ছোট ছোট ঘুসা মারছে । তোজা হাসতে হাসতে বলছে -ঠিক আছে ; ঠিক আছে দোস্ত তোকে মরতে হবে না নিখিলেস মরুক আর ও’র বউকে নিয়ে আমি ফুতি করি । তোজা হাসতে লাগলো ।
হঠাৎ বারান্দা থেকে ঝুম ঝুম শব্দ ভেসে এলো । আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম -চুপ ! শুন বারান্দায় কে যেন হাঁটছে ;
আসলেই বারান্দা থেকে নুপুরের শব্দ ঝুম ঝুম ভেসে এলো । মনে হলো কে যেন অতি সঙ্গেপনে পা ফেলে ফেলে এদিকটাতেই এগিয়ে আসছে । আমরা তিন জন মুখ চাওয়া চায়ি করলাম । রন্জু লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে সোফাটা দরজায় দিয়ে দিল । তারপর দরজায় কান লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইল । আমি আর তোজা গিয়ে ওর পাশে দাড়াঁলাম । নুপুরের ঝুম ঝুম শব্দটা দরজায় কাছে এসে কিছু সময় থেমে আবার বারান্দার অন্য পাশে চলে গেল । আমার হঠাৎ ভয় লেগে গেলো । রন্জুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাতে একটা রড তুলে নিয়েছে । আমি কিছু বলতে গেলে ও হাত ঠোটের কাছে নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করে হাত দিয়ে পেছনে সড়ে যেতে বললো । আমি ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলাম কি করবি ? তোজার হাতে রডটা দিয়ে রন্জু দরজা থেকে আস্তে সোফাটা সড়িয়ে ফেললো । ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে আসছে । আমি ওর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছি । একহাত দিয়ে তোজার ঘাড় খামছে ধরে আছি । সোফা সড়িয়ে রন্জু চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো । এদিকে নুপুরের শব্দটা বারান্দার অন্য প্রান্ত থেকে আবার আমাদের দিকে আসতে লাগলো । আমার সারা শরীর হিম হয়ে আসছে । বুক ধকধক করছে । দোয়া দুরুত পড়তে গিয়ে এলো মেলো করে ফেলছি । রন্জু দেয়াল থেকে মশালটা নামিয়ে এক হাতে নিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়াল , তারপর নুপুরের শব্দটা দরজা বরাবর আসতেই -একটানে খুলে ফেললো দরজা । কয়েক মুর্হুতের জন্য মনে হলো কে যেন চট করে বাতাসে মিশে গেল । আমরা বারান্দায় নেমে এক প্রান্তু থেকে অন্য প্রান্তু পর্যন্তু তাকালাম । অন্ধকারে কাউকে দেখতে পেলাম না । রন্জু বললো চল -সামনে গিয়ে দেখি ; আমি ওর হাত টেনে ধরে বললাম - কোন দরকার নেই । ভেতরে আয় । ঘরে ডুকে দরজা বন্ধ করে সোফাটা দরজার সামনে দিয়ে দিলাম ।
বিছানায় বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বলতে পরবো না ; হঠাৎ ঝাকুনিতে ঘুম ভাংলো - চোখ খুলে তাকাতেই রন্জু বললো, তোজা কৈই ? তোজা কৈই ।
আমি চট করে বিছানার দিকে তাকালাম যেখানে তোজা শুয়ে ছিল । দেখি বিছানা শুন্য । তোজা নেই । এদিকটায় তাকাতেই দেখি দরজা জানালা হাঁট করে খোলা । জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস আসছে । বাতাসে দেয়ালে মশালটা নিভু নিভু করছে । রন্জ ঝট করে বিছানা থেকে নেমে । লোহার রডটা হাতে নিলো । আমি ওর গা ঘেষে দাঁড়ালাম , মশালটা নিয়ে আয় বলে রন্জু ছুটে গেল বারান্দার দিকে । বারান্দায় গিয়ে দেখি তোজা বারান্দার শেষ মাথা দিয়ে সিঁড়িতে নেমে যাচ্ছে । রন্জু ডাক দিলো তোজাম্মেল । তোজা ফিরেও তাকালো না । আমরা বুঝলাম ও ঘোরের মধ্যে হাঁটছে । আমি আর রন্জু ছুটতে লাগলাম আমরা যখন বারান্দার শেষ মাথায় পৌছালাম তোজা তখন আমদের জানালার সামনের খোলা জায়গাটাতে চলে গেছে । ওর সামনে সামনে ওর দিকে একটা হাত বাড়িয়ে পেছন ফিরে হাটছে নিখিলেসের বউ । আমরা ওকে ডাকতে ডাকতে পেছন পেছন ছুটলাম । আমাদের দেখে নিখিলেসের বউ মুখ বিকৃত করে গরররর করে উঠলো । নিখিলেসের বউ পাতলা একটা গাউন পরে আছে । বাতাসে গাউনটা পতপত করে কাঁপছে । মুখের দু’পাশ দিয়ে লালা গড়িয়ে পরছে । মনে হলো আমাদের ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলছে...

ভৌতিক গল্প : জ্বিন কন্যা - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, September 21, 2011 at 10:56pm
কে কে ওখানে ।
আমি ।
আমি কে ?
বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ । কোন উত্তর নেই । তারপর একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলার শব্দ । আমি আবার ও জিজ্ঞেস করলাম । আমি কে ? কথা বলছেন না কেন ?
আমি !
আমি কে ? আমি আবারও ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম ।
আমি কেউ না ।
তবে আমার ঘরে কি করছেন ? কি ভাবে এসেছেন ? দরজা খুললো কে ? এক সাথে এতোগুলো প্রশ্ন করে আমি প্রায় হাপিয়ে উঠলাম । এমনিতেই আমার হার্টের অবস্থা ভাল নয় । এখন তো মনে হচ্ছে ভয়ে হার্ট ফেল করবে । ঘুমিয়ে ছিলাম ; হঠাৎ খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । প্রথমে ভেবে ছিলাম ইদুর টিদুর হবে । কাজের মেয়েটার উপড়ে মেজাজ খারাপ হলো ,কতো দিন বলেছি রাতে শোয়ার আগে তেলাপোকা ,ইদুর এর ঔষুধ ছিটিয়ে ঘুমাতে । না তার কোন খবর নেই । মনে হয় এনে দেওয়া ঔষুধ গুলোর কথা মেয়েটা ভুলেই গেছে । কাল নিজেই ছিটিয়ে দিতে হবে । রাতে এমনিতেই আমার ঘুম হয়না ।তাও আজ লেট নাইটে শুয়েছি । ভোরে অফিস ধরতে হবে । একবার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসবে না । আমার স্ত্রী তিথি ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু’দিনের জন্য বাবার বাড়ী গেছে । পুরো বাসায় আমি একা ।
অফিস থেকে ফিরে সামান্য লেখা লেখির চেষ্টা করা আর টিভি দেখা ছাড়া করার তেমন কিছু নেই । আজ ইস্পিলবার্গের একটা ছবি দেখে শুতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি । মনে হয় আধা ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি এর মধ্যে খুট খুট শব্দ করে যন্ত্রনা শুরু হয়েছে । একবার মনে হলো ইদুর রান্না ঘরে শব্দ করছে । ঘুমের মধ্যেই হুস হুস শব্দ করে ইদুর তারাতে চেষ্টা করলাম ।
হুস , হুস করে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি আবার শুরু হচ্ছে খুট খুট শব্দ করা । খেয়াল করে দেখলাম আমি হুস হুস করলে কিছু সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে খুট খুট শব্দ । চোখ লেগে আসতেই আবার সেই খুট খুট শব্দ । কখন যে হুস হুস করতে করতে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার বা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে আলতো করে টানছে । চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরে সড়ে গেছে । আমি চোখ হালকা করে তাকালাম । পুরো ঘর অন্ধকার । বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতে ভুলে গেছি ? এখন দেখছি বাতি নিবানো । যতো দূর মনে মনে আছে -টিভি বন্ধ করে শন্করের একটা বই পড়ছিলাম । ঘরের বাতি জ্বলছিল । তা হলে বাতিটা নেভালো কে ?
পায়ের আঙুলে আবার কেউ র্স্পশ করলো । আমি ভয় পেতে শুরু করছি কেননা চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । ইদুরের চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । আমি মশারি টানিয়ে শুয়েছি । শোয়ার আগে বেশ ভাল মতো মশারী গুজে তারপর শুয়েছি । ভেতরে ইদুর থাকলে আগেই দেখতে পেতেম । হঠাৎ ভুতের কথা মনে হলো ? ভুত নয় তো ? ভুতের কথা মনে হতে ভয় বেড়ে গেলো । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । নড়তে পারছি না । মনে হলো নড়াচড়া করলে কেউ আমাকে মেরে ফেলবে । আবার ভয় পাচ্ছি দেখে নিজের উপড়ই রাগ লাগছে । কেউ শুনলে হাসবে । ছেলেটার কথা মনে হলো । ভাবলাম ও ,ও মনে হয় আমার চাইতে বেশী সাহসী ।
বা পাটা আমি একটু নাড়ালাম । এমন ভাবে নাড়ালাম যেনো ঘুমের মধ্যে নাড়াচ্ছি । সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শটা বন্ধ হয়ে গেলো । মনে হলো কেউ পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিল । এবার ভাবলাম , ইদুর হবার প্রশ্নই আসে না । আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে পরে আছি । ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । চারিদিকে শুনশান নীরবতা , একটু আগে হয়ও খুট খুট শব্দটাও এখন আর হচ্ছে না । হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে থাকা চাদরটা ধরে টানছে । আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম । নিজের ঘরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুক্ষিন হবো কল্পনাও ছিল না । ভয়ে হাত পা একেবারে জমে যাচ্ছে । শরীর থেকে চাদরটা একটু একটু করে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । যে করছে কাজটা , বুঝা যাচ্ছে সে খুব ধীরে সু্স্থেই কাজটা করছে ।
কি করবো বুঝতে পারছিনা । বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাই হচ্ছে আসল ব্যাপার । শুধু মাত্র বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখার কারনে ৭০% লোক মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ যায় । পরিসংখ্যানটা কোথায় যেন পড়েছিলাম । আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম ।
একবার ভাবলাম জোরে চিৎকার করে উঠি । তাতে চাদর টেনে যে আমাকে ভয় দেখাতে যাচ্ছে সে উল্টো ভয় পেয়ে যাবে ।
তার পরই মনে হলো চোর নয় তো ? বেশ কিছু দিন যাবত মহল্লায় চোরের আনাগোনা বেড়ে গেছে । সেদিও নাকি জ্বানালা দিয়ে বাড়ী ওয়ালির ব্যাগ থেকে মোবাইল ,টাকা নিয়ে গেছে চোর । কিন্তু আমার বিছানাটা তো জানালা থেকে বহু দূরে । জানালাও বন্ধ । তবে কি চোর আগেই ঘরের ভেতরে ডুকে ছিল ? এখন আফসোস হচ্ছে কেন শোয়ার পূর্বে চেক করে শুলাম না ।
অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার ফলে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । পায়ের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠলো । আবচ্ছা আলোয় একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে । আমি চোখ কুচকে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । মনে হলে কেউ একজন মেঝেতে হাটু ঘেরে খাঁটের উপর কুনি রেখে বসে আছে । ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো । শুয়ে থেকেও স্পষ্ট নারী অবয়বটা দেখতে পাচ্ছি । ঘারের উপরে উড়তে থাকা চুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । আমার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে । কখন যে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকিয়ে আছি বলতে পারবো না । হঠাতই অবয়বটা আমার পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো । আমার মনে হলো , সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি তাকিয়ে আছি । আমি চোখ বন্ধ করার সাহস পেলাম না । দু’জন চোখাচোখি তাকিয়ে থাকলাম । আমি মুহুত কাল ভুলে গেছি । চুপ করে পরে আছি । হঠাৎ ঘরের ভেতর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো । মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমি দু’হাত দিয়ে খাটের কিনার আকড়ে ধরে থাকলাম । এক সময় বাতাস হঠাৎ ই থেমে গেল ।
অবয়বটা এক সময় উঠে দাঁড়ালো ।আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম , কিন্তু পারলাম না । মনে হলো গলার ভেতরের সব রস কেউ নিংরে বেড় করে নিয়েছে । তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম । ভয় পেলে চলবে না । ভয় পেলে চলবে না । বাঁচতে হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই । শুধু মাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার কারণে ৭০% লোক বেঁচে যায় । সঙ্গে সঙ্গে একটা হিন্দি ছবির ডায়ালোগ মনে হলো -জো ডরগায়া ও মর গায়া ।
আমি শরীরের সকল শক্তি এক করতে চেষ্টা করলাম । তখনই আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা ছুটে গেলো কে কে ওখানে ? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলাম না । মনে হলো আমার গলায় অন্য কেউ কথা বলছে । আমি আবার ও একই প্রশ্ন করলাম -কে কে ওখানে ?
এবার মৃর্দু একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো ।
আমি আবার বললাম কে ?
-আমি । খুব আস্তে উত্তর এলো । কেউ খেয়াল না করলে শুনতে পেত না ।
-আমি কে ? ভয়ে আমার হাত পা অসার হয়ে আছে ।
-আমি কেউ না ,বলে আবয়বটা হেসে উঠলো । যেন নিক্কন হয়ে কানে বাজছে । আমি মুগ্ধ হলাম । তিথির ভাষায় অতি তারাতারি মুগ্ধ হয় গাধা মানবরা । নিজেকে আমার কাছে গাধা মানব মনে হলো ।
-আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? নিজেকে কেমন শিশু শিশু মনে হলো ।
এবার কোন উত্তর এলো না । তবে আবয়বটা উঠে গিয় ঘরের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে পরলো । মশারির ভেতর থেকেও দেখতে পাচ্ছি চেয়ারটা দুলছে । কেউ একজন হেলান দিয়ে বসে আছে চেয়ারটাতে । আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো ? হাত নাড়িয়ে চিমটি কাটার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি চেয়ারটার দিকে । (২) পৃথিবীতে কোন কিছুই যেমন স্থায়ি নয় । তেমনি আমার ভয়টাও স্থায়ি হলো না । খুব ধীরে ধীরে ভয়টা কেটে যাচ্ছে । গুন গুন করে একটা শব্দ হচ্ছে । মনে হলো আমার ঘরে থাকা আবয়বটা গান গাচ্ছে । কিন্তু আমার পরিচিত কোন সুরে নয় , অচেনা কোন সুরে । তিথি যেমন ঘরের কাজ করতে করতে আমন মনে সুর ভাজে , তেমনি । আমি সুরটা ধরতে চেষ্টা করে পারলাম না । না । এমন সুর আগে কখন ও শুনিনি । তবে সুরের মাদকতায় ভেসে গেল পুরো ঘর । আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি । আর ভাবছি কি করা যায় । একবার মনে হলো হাউমাউ করে কেঁদে কেটে যদি মাপ চাই তবে কেমন হয় । নিজেরই পছন্দ হলো না ব্যাপারটা । আমার মাথা কাজ করতে শুরু করছে । চিন্তা করতে পারছি দেখে ভাল লাগল । একবার ভাবলাম হেলুসিনেশন নয় তো ? নিজের মুখ দিয়েই বিরক্তি সূর্চক শব্দ “চুক”বেড় হয়ে এলো । সঙ্গে সঙ্গে আবয়বটির দোল খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো ।
আপনি কে ? দয়া করে বলবেন ?
মনে হলো একটা দীর্ঘস্বাস পরলো ।
এবাবে অর্যাচিত ভাবে কাউকে আমার ঘরে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি এবং অসুস্থি বোধ করছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? কি চান ?
-আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । আপনি ঘুমান । আবাও সেই হাসির শব্দ ।
-কিন্তু এবাবে কেউ ঘরে বসে থাকলে তো আমার ঘুম আসবে না ।
-চলে যেতে বলছেন ?
আপনি কে ? কেনো এসেছেন তা যদি বলতেন । আমি কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম ।
-আমি আফরোজা । এসেছি তাকাফুল শহর থেকে । আমি মানুষ সম্প্রদায়ের কেউ নই । আমি জ্বিন সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে মেয়েটি হেসে উঠলো । জ্বিন ; শুনে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথা থেকে হালকা চাপা ফুলেন মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে , পুরো ঘর মো মো করছে । হাসির শব্দে আমি আবার বিমহিত হলাম ।
আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর । আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা । নিজেকে আবারাও কেমন হেবলা মনে হলো । তিথির কথা মনে হলো ও যদি জানে গভীর রাতে ঘরে বসে আমি কোন জ্বিন মেয়ের হাসির প্রশংসা করছি তা হলে ও কি করবে ?
আপনার স্ত্রীর কথা ভাবছেন ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
খুব ভালবাসেন বুঝি ? বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো । রকিং চেয়ারটি আবার দুলছে । আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো , এখন কি আপনার ভয় লামছে ?
আমি না, বললাম । আমি মিথ্যা বললাম ।
মানুষরা খুব সহজে মিথ্যা বলতে পারে । বলে মেয়েটি আবার হাসছে । মিথ্যা বলে ধরা খাবার জন্য কেমন লজ্জা লাগছে ।
আমার একবার মনে হলো বাতি জ্বালাবো কি না ?
দয়া করে বাতি জ্বালাবেন না । আমি বাতি সহ্য করতে পারিনা । আর একটু পরে আমি চলে যাবো ।
আমি চমকে উঠলাম এ যে দেখছি আমার থর্ট রিড করতে পারছে ।
আপনি কেন এসেছিলেন ...........আমি প্রশ্নটা শেষ করতে পারলাম না ।
-এমনিতেতো আসিনি । আছে একটা কারণ আছে ।
কি কারন ?আমি কারন যানার জন্য অস্থির হলাম । আমার ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটিকে দেখি ।
-আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না ? মেয়েটি হাসতে হাসতে বললো ।
জ্বি । আমি ছোট্র করে উত্তর দিলাম ।
আমাকে না দেখাই ভাল । আমরা দেখতে মানুষের মতো নই । আমরা হচ্ছি আগুনের তৈরি । আর মানুষ হচ্ছে মাটির । আমাদের কোন নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই । আমরা যে কোন আকার ধারন করতে পারি । যে কোন জায়গাতে যেতে পারি । শুধু মাত্র আসমানের নিদিষ্ট্য একটা সীমা পর্যন্ত ।
তা হলে এটা কি আপনার আসল আকৃতি নয় ?
না ।
আপনি কি তা হলে মেয়ে নন ?
আমি মেয়ে জ্বিন । আমাদের মধ্য ছেলে মেয়ে দুটো প্রজাতি আছে । মানুষের মধ্যে আছে তিনটি ।
মানুষের মধ্যে তিনটি ? একটি নারী এবং অন্যটি পুরুষ । আমি আরেকটি খুঁজে পেলাম না । মাথা কাজ করছে না ।
আমি এখন যাবো ।
কেন এসেছিলেন তা তো বললেন না ?
আরেক দিন বলবো ।
তার মানে এখনই চলে যাবেন ?
হ্যা , আযান এর সময় হয়ে এসেছে । আমি যাই ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমন সময় মসজিত থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো । মেয়েটি হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ।
আমি তরিঘড়ি করে উঠে বাতি জ্বালালাম । না ! কেউ নেই । চেয়ারটা দুলছে । আমার মাথাটা কেমন করে উঠলো । অজানা কোন ভয়ে শরীর ছমছম করছে । কোন মতে বিছানায় বসে পরলাম । পরিশেষ : যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালে । সবাই মনে করলো আমি হঠাতই মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম । আমি ও কাউকে কিছু বললাম না । সব নিজের ভেতরে চেপে রাখলাম । বললে সবাই হয়তো হাসবে । তবে আশ্চযের বিষয় হলো এটা যে -মেডিকেল বোর্ড তন্ন ,তন্ন করে খুঁজেও আমার হার্টে কোন অসুখ খুঁজে পেলো না । যেনো রাতারাতি সব উবে গেছে । ডাক্টারা সবাই বললো মিরাকল ! মিরাকল ! কিন্তু আমি মনে মনে আফরোজাকে ধন্যবাদ দিলাম । সকল মিরাকলের পেছনেই কারো না কারো হাত থাকে । এখন আমার যখনই গভীর রাতে ঘুম ভাঙে তখনই আমি নিজের অজান্তে আফরোজা নামক জ্বিন কন্যাকে খুঁজি ।।

শেষ

।। আমরা তিনজন ও একটি রাত ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, July 28, 2011 at 11:33pm
মাস দেড়েক আগের কথা।। রাতে খেয়ে আমি সুমন আর মিলু যে যার মত পড়ছিলাম।। সারাদিন প্রচুর খাটুনি ছিলো।। ল্যাব আর ক্লাস।। ঘুম ঘুম ভাব সবার চোখে।। তারপরেও কেন যেন ঘুম আসছিল না।। তিন জন গল্প শুরু করলাম।। যদি ঘুম আসে এই ইচ্ছায়।। মিলু বোতল নিয়ে পানি আনতে গেল।। আমি আর সুমন প্লান করলাম মিলু ফিরে আসার সময় ওকে দরজার পাশ থেকে ভয় দেখাব।। তাড়াতাড়ি লুকিয়ে পড়লাম আমরা।। মিলূ দরজা খুলতেই আমরা হো হো করে হেসে উঠি।। কিন্তু মিলুর কোন ভাবান্তর হল না!!
আমরা হতাশ হয়ে বসে পড়লাম।। আমার কাছে বিস্কুট ছিলো।। তাই খেয়ে পানি খেলাম আমরা।। মিলু বলল,“আমার কাছে একটা নতুন ইংলিশ ম্যুভি আছে।। ভ্যাম্পায়ারের।। চল দেখি সবাই মিলে”।। অনেকদিন ধরে রুমে একসাথে মুভি দেখা হয় না।। ওর কথায় আমি আর সুমন রাজি হয়ে গেলাম।। মিলুর খাটে গিয়ে বসলাম।।
বুধবার রাত।। একটা মুড়ি পার্টি হলে মন্দ হয় না।। পাশের রুমের ইমরানকে ডাকলাম।। ইমরান মুড়ি আনতে গেল।। আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম।। মুড়ি ঢালার জন্য মিলুর খাটে পেপার বিছানো হল।। মুড়ির গন্ধ পেয়ে এর মধ্যে আবার কোত্থেকে যেন মাসুদ এসে হাজির হয়েছে।। আজকের পার্টি জমবে ভালই।। মুভি শুরু হয়ে গিয়েছে।। হরর মুভি দেখে আমাদের ভয় লাগার বদলে চরম হাসি পাচ্ছিল।। ভ্যাম্পায়ারদের কীর্তিকলাপ দেখে মজা পাচ্ছিলাম।। মুভির নাম ড্রাকুলা।। নায়ক হল ম্যাট্রিক্স মুভির নিও।। তিনটা নারী যে উদাম ভঙ্গিতে নায়কের রক্ত চোষার চেষ্টা করছে তাতে করে আমাদের ভয় লাগার বদলে যৌন সুরসুরিতে কেপে কেপে উঠছি।। মিলু তো ভাল মুভি চালিয়েছে দেখছি।।
মাসুদের আবার এইসব মুভিতে হাল্কা এলার্জি আছে।। ও ফোনে কথা বলার নাম করে বারান্দায় গেল।। মনে হয় ছাত্রীহল থেকে জরুরি কোন ফোন।। অবশ্য জিজ্ঞেস করলে বলবে যে তার ছোটবেলার বন্ধু কল দিয়েছিল।। মুড়ি খাওয়া শেষ হবার সাথে সাথে যেন আমাদের মুভি দেখার আগ্রহ দমে গেল।। মিলু বলল,“চল বারান্দায় বসে চাঁদ দেখি”।। সুমন আর আমার তেমন কোন সাড়া না পেয়ে একাই গেল বারান্দায়।। আবার ডাকলো আমাদের।। বেচারা ডাকছে, না গেলে খারাপ দেখায়।। তাই আমি আর সুমন গেলাম তার আতলামিতে সামিল দিতে।। না, আসলেই বেশ ভাল চাঁদ উঠেছে।। পুরো পরিস্কার আলো, বই পড়া যাবে মনে হয়।। প্রাচীন মণীষীদের কথা মনে পড়ে গেলো।। তারা তো আলোর অভাবে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় পড়তেন।। আচ্ছা আমি বুঝিনা, উনারা দিনের বেলায় কি করতেন?? ঘুমাতেন নাকি ঘোড়ার ঘাস কাটতেন!! এমন সময় সুমনের ফোনে একটা কল এল।। বেশ বিরক্ত মনে হল সুমনকে।। এত রাতে কল এলে কার না বিরক্ত লাগার কথা!! তাও আবার ঘুম ধরছে না এমন রাতে।। রিসিভ করতে করতেই কলটা কেটে গেল।। কেটে যাবার একটু পরেই মিলুর ফোনে কল।। সাথে সাথেই আমার ফোনে।। আমিও রিসিভ করতে পারলাম না, কেটে গেল তার আগেই।।আমরাতো তিনজনেই অবাক।। কে মজা করতেছে আমাদের সাথে?? সেট বের করে আমরা নাম্বারগুলো দেখলাম।। ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার, তবে একটার সাথে আরেকটার মিল আছে।। কিন্তু আমাদের আর রাতের বেলা খুজতে ইচ্ছে করল না কী সেই মিল।। আমরা আবার গল্প করতে শুরু করলাম।। কিছুক্ষন পরে আবার কল, সুমনের কাছে।। এইবার ও রিসিভ করল।। ওপাশ থেকে কি বলল আমরা জানিনা, তবে সুমনকে দেখে মনে হল কিছু সিরিয়াস হবে হয়ত।। ও শুধু “হ্যা হ্যা” করতে লাগল।। শেষে “আসছি” বলে কল কেটে দিল।। আমি আর মিলু কিছু বুঝলাম না,হাবার মত একে অপরের দিকে তাকালাম।। সুমন ফোন রেখে বলল, “ঢাকা মেডিকেল থেকে কল করছিল।। তাদের কাছে একটা মুমূর্ষু রোগী আসছে কিছুক্ষণ আগে, প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।। রক্ত দরকার।। এই মুহূর্তে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে সুমন কে কল দিছে সেখানকার লোক।। যেতে বলছে এখনি।। সুমন তারাতারি ড্রেস চেঞ্জ করে নিল।। আমাদেরকেও রেডি হতে বলল।। আমি আর মিলু ভাবলাম ওকে এত রাতে একলা ছাড়া ঠিক হবে না।। তাই আমরাও রেডী হয়ে নিলাম।। রুমে তালা দিয়ে বের হলাম হল থেকে।। রিকশা পাওয়া যাবে না এত রাতে, হেটেই রওনা দিলাম।। বুয়েট থেকে তো আর বেশি দূরে না, হেটে যেতে কয়েক মিনিট লাগবে মাত্র।। আর রাস্তা তো আমাদের চেনাই আছে।।
আমি কানে এফ.এম. রেডীও লাগালাম।। মিলু আর সুমন গল্প করতে করতে এগুতে থাকে।। আমি হালকা হালকা শুনতে পাচ্ছি মিলু আতলামি শুরু করছে।। চাদের বর্ণনা দিচ্ছে, জ্যোতস্নার গুণকীর্ত্তন করছে।।। আমি মনে মনে হাসতে থাকি।। যে ছেলেটা প্রোগ্রামিং করতে গিয়ে খাওয়া-গোসল ভুলে যায় তার মুখে মেঘে ঢাকা চাদের কথা শুনে একটু অবাকই হতে হয়।। বুয়েট শহীদ মিনার পার হয়ে আমরা আহসানুল্লাহ হলের পাশ দিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে চলতে থাকি।। আমি খেয়াল করলাম, আসলেই সুন্দর চাদ উঠেছে।। ই.এম.ই. বিল্ডিং এর ঠিক উপরে,যেন ছাদে উঠলেই ছোয়া যাবে।। হা হা হা,আমিও দেখি মিলুর মত আতেল্ হয়ে গেলাম! বকশী বাজার মোড়ে গেলাম খুব তাড়াতাড়ি।। আজবতো!! একদম ফাকা।। সবগুল দোকান বন্ধ।। অবশ্য এত রাতে খোলা থাকার কথাও না।। তবে পেনাং তো বন্ধ থাকার কথা না!! আমি খেয়াল করলাম মেডিকেলের হলের দিকে।। সব লাইট বন্ধ মনে হচ্ছে।। সবচেয়ে ভয় পেলাম তখনই যখন দেখি রাস্তায় আজ কোন টহল পুলিশ নাই।। এরকম তো হবার কথা না!! একটা মানুষজন নাই, গাড়িও না।। আমার খুব ভয় পেতে লাগল।। তবে ভাব নিলাম যেন কিছুই হয় নি।। ওরা দুজন জানতে পারলে পরে জ্বালিয়ে মারবে।। তাই চুপচাপ ওদের সাথে হাটতে থাকলাম।।
আমরা মোড় ধরে যাচ্ছি।। মিলু জিজ্ঞেস করল,“বামে যাব নাকি ডানে যাব”?? আমি কিছু বললাম না।। সুমন বলল ,“ইমারজেন্সিতে যেতে বলেছে।।” তাই সোজা চানখারপোলের দিকে এগোতে থাকলাম।। রাস্তার দু পাশের দোকান গুলোর সাটারগুলোকে কেমন জানি জেলখানার রডের মত মনে হচ্ছে।। আমি সুমন আর মিলুর মুখের দিকে তাকালাম।। ওদের মুখও শুকনো লাগছে।। বুঝতে পারলাম, ওরাও ভয় পাচ্ছে।। কিন্তু স্বীকার করছে না, আমার মত ভাব নিচ্ছে।। অবশেষে আমরা ইমারজেন্সি গেটের কাছে পৌছালাম।। আজই প্রথম দেখলাম এখানকার ফার্মেসী বন্ধ।। অথচ আমি দেখছি সারারাত এগুলো খোলা থাকে।। কাউকে যে জিজ্ঞেস করব ব্লাড সেন্টারটা কোনদিকে তারও চান্স নাই।। কেউ থাকলে তো জিজ্ঞেস করা যায়!!
আন্দাজে আমরা চলতে থাকি।। দেখি কে যেন ঘুপটি মেরে কলাপ্সিবল গেটের পাশে বসে আছে।। সারা গায়ে চাদর জড়ানো, মাথায় মাফলার পেচানো।। আমার তো হাসি পেয়ে যাচ্ছিল।। এই গরমের সময়ে এমন পোশাক দেখলে কার না হাসি পাবে!! তবে আমার হেসে ফেলার আগেই মিলু ফিসফিস করে ওঠে, ,“এই যে, শুনতে পাচ্ছেন”??
এক বার ডাক দিতেই লোকটা মাথা তুলে তাকালো।। মনে হয় জেগেই ছিলো।। আমি অন্ধকারেও খেয়াল করলাম তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।। কেন জানি মনে হচ্ছে লাললাল একটা আভা।।
সুমন বলল ,“ব্লাড নেয় কোথায় বলতে পারেন??”
লোকটা এমন ভাবে তাকালো যেন আমরা তাকে প্রশ্ন করে মহা অপরাধ করে ফেলেছি।। এক্ষুণি আমাদের গর্দান নেয়া হবে।।
“এত দেরি হল কেন??” কর্কশ কণ্ঠে কে যেন কথা বলে ওঠে।। খেয়াল করে দেখলাম লোকটি বলছে।। মানুষের স্বর যে এমন বাজে আর বিশ্রি হতে পারে আমার জানা ছিল না।। “আমি কি সারারাত জেগে থাকব নাকি??”
আমি খুব অবাক হলাম।। বাপরে!! মনে হয় আমরা আমাদের নিজের প্রয়োজনে এসেছি!! তাকে সময় দিয়ে আমরা দেরি করে ফেলেছি।।
“আসেন আমার সাথে” বলেই গেট খুলে ভেতরে যেতে বলে আমাদের।। আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের জন্যই বসে ছিল লোকটা।। আমরা তাকে ফলো করলাম।। ভেতরে ঢুকলাম।। আমাদের কে একটা ওয়ার্ডের দিকে নিয়ে গেল।। আমাদেরকে ভেতরে দিয়েই সে বাইরে চলে গেল।। যাবার সময় বলে গেল আমরা যেন কথা না বলি আর বাইরে না যাই।।
সুমন কিছু বলতে যাচ্ছিল।। মিলু ওকে আটকাল।।
লোকটা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।। বুঝলাম না দরজা বন্ধ করার কী আছে??
আমি কান থেকে রেডিও এর হেডফোন খুলে ফেলি।। কেন যেন ভয়টা বেশি লাগছে।। এবার বলেই ফেললাম ওদের ভয়ের কথাটা।। ওরাও স্বীকার করল।।
আধা ঘন্টা ধরে বসে আছি কারও আসার নামগন্ধ নাই।। আমরা জড়সড় হয়ে বসে আছি চুপচাপ।। কার মুখে কোন কথা নাই।।
হঠাৎ ভেতরের দরজা খুলে গেল।। কিন্তু কাউকে দেখা গেল না।। সুমন গিয়ে উকি দিল।। কেউ নাই ভেতরে।। ফিরে আসার সময় একটা কন্ঠ ডেকে ওঠে,“সুমন, তুই প্রথমে আয়”!! “তুই তোকারি করে ডাকছে কেন?”আমি মিলুকে জিজ্ঞেস করলাম।।
আমার কথা শেষ না হতেই আবার ভেসে আসে সেই কন্ঠ।“কে কথা বলে রে?? যে বলছিস সে আসবি সুমনের পর।তারপর অন্যজন”।।
আমার রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়।। আমি আর মিলু কেন?? আমাদের তো রক্ত দেবার কথা না।। তাহলে??
আমার মাথা ঘুরে ওঠে।। মিলুর দিকে যে তাকাব সেই সাহস টাও পাচ্ছি না।। মনে হচ্ছে তাকিয়ে দেখব মিলু আমার দিকে লাল লাল চোখে তাকিয়ে আছে।। আমি আমার পায়ের দিকে তাকাই।। দেখি ফোটা ফোটা রক্ত।। ভাল করে খেয়াল করে দেখি পুরো মেঝে জুড়েই রক্ত।। কেউ যেন কিছুক্ষণ আগে মুছে দিয়ে গেছে।।
এরকম ভাবে তো রক্ত পড়ে থাকার কথা না।। আমি মিলুকে দেখাব ভাবলাম।। ওর দিকে তাকাতেই যে দরজা দিয়ে ঢুকেছিলাম তা খুলে গেল।। দেখি পাহারাদার লোকটা।। তবে চাদর আর মাফলার নাই।। খালি গায়ে এসেছে।। গায়ে একফোটা মাংস নাই।। হাড় জিড়জিড়ে।। দেখে আমার তো পড়ে যাবার মত অবস্থা।। কোনমতে মিলুকে আকড়ে ধরি।।
“তোদের মোবাইল ফোনগুলো দিয়ে দে।। তাড়াতাড়ি”!!আমি নিজের অজান্তেই আমার পকেট থেকে আমারটা বের করে মিলুর হাতে দেই।। মিলু আমাদের দুইটা ফোন তার হাতে তুলে দেয়।।
লোকটা হাসতে থাকে।। আমি তাকিয়ে দেখি লোকটার উপরের পাটির দুইটা দাত বড়বড়।। আমার রক্ত হিম হয়ে আসে।। আমার ধারনা মিলুও দেখেছে।। সিওর হলাম যখন দেখলাম মিলু আমার হাত শক্ত করে আকড়ে ধরেছে।।
আমার মনে হল আজ বোধ হয় আমি শেষ।। আজই মনে হয় আমাদের জীবনের শেষ রাত।। আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম।। চোখ বন্ধ করে ফেললাম।। বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ আমার গলায় কামড় বসালো।। চোখ বন্ধ করে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম আমাদের দুজনকে কিছু অশরীরী প্রাণী কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে।। আমি চোখ খুলতে পারছি না।।
হঠাত সুমনের কথা মনে হল।। বেচারা মনে হয় এতক্ষণে শেষ।। আমার কান্না আসে।। ভাবলাম চীতকার করি।। দিতে গেলাম।। দেখি গলায় জোর নাই।। কেউ যেন আমার গলা চেপে ধরে রেখেছে।। আমি চোখ খুললাম।। দেখি সত্যি সত্যি আমার গলা চেপে ধরে আছে কিম্ভুত কিমাকার একটা প্রানী।। জীভটা ইয়া বড় হয়ে আছে।। একহাতে আমার গলা আর অন্য হাতে মিলুর গলা চেপে ধরে আছে।। আমাদের টেনে নিয়ে এগুতে থাকে ভেতরের ঘরের দিকে।। যেখানে সুমনকে নিয়ে গেছে।।
আমি বাধা দিতে থাকি।। মিলুও পিছু টান দেয়।। লোকটার গায়ে প্রচণ্ড শক্তি।। আমাদের দুজনকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে।। চামড়া ঢিলা মানুষের গায়ে এত শক্তি হতে পারে আমার জানা ছিল না।। অবশ্য ওটাতো মানুষ না,রক্ত খেকো মানুষ।।
আমি আমার শেষ সময়টুকু ভাবতে থাকি।। এমন সময় বীকট একটা চীতকার।। সুমনের কন্ঠ মনে হল।। তারমানে ও এখনো বেচে আছে।। চীতকারটা আরো কাছে আসতে থাকে।। মনে হচ্ছে সুমন দৌড়াচ্ছে আর চীতকার করছে।। খুব কাছে দরজার ওপাশে এসে গেছে মনে হচ্ছে।। হঠাত দরজা খুলে গেল।। সুমন দৌড়াচ্ছে।। সুমনের ধাক্কায় আমাদের যে লোকটা ধরে ছিল পড়ে যায়।। আমি আর মিলুও পড়ে যাই।।
“আমীন পালা,দৌড়া”।। সুমন ডেকে ওঠে।। আমি আর মিলু কী বুঝলাম জানি না।। মনে নাই।। শুধু মনে আছে প্রচন্ড একটা দৌড় দিয়েছিলাম সেই রাতে।। পিছনে ফিরে তাকাইনি।। কলাপ্সিবল গেট খোলা ছিলো।। তারা ভাবতে পারেনি যে এমন হতে পারে!! তাই আর গেট লাগায়নি।।
এখনো ভাবি যদি গেটটা বন্ধ থাকত তবে কী হত!!
না আর ভাবতে চাই না সেই রাতের কথা, যেটা মনে হলে এখনো গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।।
ইমারজেন্সি থেকে বের হয়ে দেখি আকাশে চাঁদ নাই, সবদিকে অন্ধকার।। দৌড়ানোর সময় মিলু পড়ে গিয়েছিলো হোচট খেয়ে।। আর আমার পায়ের যে আঙ্গুলটা উঠে গেছে ডাক্তার বলেছে আর ভাল হবে না।। তাতে কী!! বেঁচে যে আছি সেটাই বা কম কী!! বাস্তবে যে এমন হবে কল্পনাও করিনি কখনো।।
সুমনের গলায় দাঁত বসিয়ে ছিল।। রুমে ফিরে দেখি সারা শরীর রক্তে মাখামাখি।। এখনো সারেনি পুরোপুরি।। আর কিছুদিন লাগবে মনে হয়।। তবে দাগটা থেকে যাবে মনে হয় সারাজীবন!!

শেয়ার করেছেনঃ Areef Ameen Facebook ID: www.facebook.com/shishiir

।। ভয় ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, September 29, 2011 at 10:19pm
অনেক রাত এখন। ১২টার মত হবে। ট্রেনটা চলছে। ঝিক ঝিক্, ঝিক ঝিক্। ট্রেন চলার একটানা শব্দ নেশা দরিয়ে দেয়। রাজীবের প্রায় ঘুম চলে এল। অনেকদিন পর সে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। এক ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করে সে। কোম্পানির প্রয়োজনেই ঢাকার বাইরে আসা। চট্টগ্রামে কোম্পানির এক নতুন অফিস খোলা হবে। ঐ জন্য সেখানকার বিভিন্ন গ্রামে ঘোরাঘুরি করতে হবে। লোকজনকে জানাতে হবে কোম্পানির বিষয়ে। বিরক্তিকর কাজ! লোকজনের কাছে যাও, তাদের তেল মারো, জঘন্য অবস্থা! কিন্তু কি আর করা? কোম্পানির এম্প্লয়ি সে, উপায় তো নেই। রাজীব ভাবছে চাকরীটা ছেড়ে দেবে। কিন্তু আরেকটা চাকরী না পাওয়া পর্যন্ত এটা তো ছাড়া যাবে না। রাজীব আড়-মোড়া ভাঙলো। ঘরিতে সময় দেখে একটু চিন্তিত হল সে। লোকজন স্টেশনে থাকবে তো? ও যে গ্রামে যাচ্ছে তার নামটা বড় অদ্ভূত, 'পরিনগর'। গ্রামে ওর থাকার জন্য একটা বাংলোর ব্যবস্থা আছে। মনোজ নামে এক দারোয়ান আছে ও বাড়ির। ওই রাজীবকে স্টেশন থেকে নিয়ে যাবে। একটা সিগারেট ধরাল রাজীব। হালকা শীত শীত লাগছে। ট্রেনের হুইসেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাজীব জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। স্টেশন দেখা যাচ্ছে একটা। এটাই বোধহয় পরিনগর্, নাকি? হ্যা, বোর্ড দেখা যাচ্ছে। শরীরে গোটাকয়েক ঝাকুনি দিয়ে ঘুম ঘুম ভাবটা কাটালো সে। স্টেশনে তেমন লোকজন নেই, বাইরে কোন গাড়িও দেখা যাচ্ছে না। দুই-একটা রিক্সা যাও আছে, সব শালারা ভাং খেয়ে চিৎ হয়ে আছে। 'রেকলেস !' মনে মনে গাল দেয় সে। হঠাৎ আওয়াজ শুনে চমকে উঠ্ল সে। ' ভাই সাহেব্, কই যাইবেন্?'। পিছনে ফিরে দেখে লুঙ্গি আর শার্ট পরা এক লোক। 'ভাই সাহেব্, জবাব দিলেন না তো, কই যাইবেন্?' 'জ্বি, আমি রাজীব চৌধুরি, লাইফ ইন্সুরেন্স কোর্পোরেশন থেকে এসেছি।' 'সালাম সাহেব, আমি মনোজ্।' 'ওহ ! আপনি ই সেই লোক্? ঠিক আসে, চলুন্। কিন্তু গাড়ি-ঘোড়া তো কিছুই দেখছি না। যাব কিভাবে?' 'চিন্তা নিয়েননা। বেশি দুরে না বাড়িটা। হাইটা গেলে আধ ঘন্টা লাগবো। চলেন, আর দেরি কইরেন না।' 'ঠিক আছে, চলুন।' 'সাহেব একটা কথা...' 'কি কথা?' 'আমরা যে রাস্তায় যাইতেছি সেইটা ভালো রাস্তা না..' 'রাস্তা কি অনেক ভাঙা?' 'না...' 'তাহলে রাস্তা ভালো না মানে কি?' 'মানে আপনার বোঝা লাগবে না। শুধু একটা কথা, কনো শব্দ শুনলে ভুলেও সেই দিকে তাকাইবেন না।' মনোজের কন্ঠ শুনে রাজীবের শিরদাড়া বেয়ে এক ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। কি যেন ছিল ওই কন্ঠে ! রাজীব আর কিছু না বলে হাটতে থাকে। নিঝুম রাত। রাস্তার দুই পাশের গাছগুলো যেন তাকিয়ে আছে তার দিকে ! টেনশন হচ্ছে রাজীবের্, আর টেনশন হলেই ওর সিগারেটের নেশা জাগে। সিগারেট ধরালো সে। আরে ! কোথায় গেলো লোকটা? আজব তো ! রাজীব চারপাশে তাকালো। হঠাৎ চাপা হিস হিস শব্দে কে যেন বলে উঠলো,

'সিগারেট নিভান ! জলদি !'

রাজীব ভয় পেয়ে গেল। সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলল। মনোজ রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

'পথে আর সিগারেট ধরাইবেন না।'

চারিদিক নিশ্চুপ। ওরা হাটতে থাকে। সামনেই একটা মন্দির দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ নানা ধরণের শব্দ আসতে লাগলো ওর কানে। চাপা আর্তনাদ্, হাসি, কান্নার শব্দ। রাজীবের গলা শুকিয়ে গেলো। নিচু স্বরে সে মনোজকে বলল,

'এগুলো কিসের শব্দ?'

মনোজ ধমকে উঠলো চাপা স্বরে, 'চুপ! চুপ কইরা থাহেন! ওরা হাটতে থাকল। মন্দির অতিক্রম করতেই শব্দগুল কমে আসতে লাগল। রাজীব ভাবল শব্দের কারণ মনোজকে আবার জিগ্গেস করবে। কিন্তু কি জেন ভেবে আর জিগ্গেস করল না। রাজীব হঠাৎ পাথরের মত জমে গেল। ওর মনে হতে লাগল কে বা কারা যেন ওদের পিছে হাটছে। রাজীব অনেক কষ্টে পিছনে তাকাবার ইচ্ছাটাকে দমন করলো। হাটতেই থাকল সে। পুরো পথ জোছনালোকিত। কিন্তু চাঁদটাকে কেন যেন বড় বিষণ্ন মনে হচ্ছে। জোছনার আলোটাও কেমন যেন মরা-মরা। এসব ভাবতে ভাবতে সে অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ছিলো। হঠাৎ সে দাড়িয়ে পড়তে বাধ্য হল। মনোজ আবার কোথায় গেল?

'আমি এইহানে।' চাপা স্বরের আওয়াজ। আওয়াজটা ওর অন্তরে যেন কাঁপুনি ধরিয়ে দিল! 'আপনি পানিতে কি করছেন্?' রাস্তার পাশে এক জলাশয়ে হাটু পানিতে দারিয়ে আছে সে। 'এইহানে আহেন।' 'এখানে আসেন মানে! আমি কি পানিতে নামবো নাকি?' 'হ, যাইতে চাইলে পানিতেই নামতে হইব।' 'মানে কি! আপনার মাথা ঠিক আসে? 'কথা বাড়াইবেন না। জলদি আহেন্। নাইলে বিপদ হইব।' অগত্যা বাধ্য হয়ে জলাশয়ে নামতেই হল তাকে। মনোজের কাছে আসতেই সে বলে উঠল, 'পানিতে তাকাইবেন না। সামনে তাকায়া চলেন। যত জলদি পারেন চলেন। থামলেই বিপদ!' 'কিসের বিপদ?' জানতে চাইল রাজীব। মনোজ উত্তর না দিয়ে সামনের দিকে হাটতে থাকলো। অপর পাড়ের দিকে যাচ্ছে তারা। হঠাৎ রাজীবের পায়ে কি যেন ঠেকল। মনোজের কথা ভুলে গিয়ে সে পানিতে তাকালো। দেখল জোছনা আলোয় ওর পায়ের কাছে এক মড়ার খুলি চিক চিক করছে। অন্তরটা কেঁপে উঠলো ওর। মনোজকে ডাকবে বলে মাথা তুলল। কিন্তু মনোজ কোথায়? আরে! এটা কোন জায়গা? জলাশয়টাত এমন ছিল না! রাজীব ভয়ে কেঁপে উঠল। সে সোজা দ্রুত হাটতে শুরু করলো। কোথা থেকে যেন এক বিকট হাসির আওয়াজ ভেসে এলো। কলজেটা শুকিয়ে গেল ওর্। রাজীব থামল না। ছুটতে চেষ্টা করল। হঠাৎ কি যেন ওর পা টেনে ধরল। সে প্রাণপণ চেষ্টা করল ছুটতে কিন্তু পারলো না। পানিতে পড়ে গেল সে। কোন রকমে হাচ্ঁড়ে-পাচ্ঁডে এগুতে চেষ্টা করল। কিছু দূর এগুতেই ওর হাতটাও কে যেন টেনে ধরল। চিৎকার করে উঠলো রাজীব। পানিতে হাবু-ডুবু খেতে লাগল। কোথাও যেন এক শিয়াল ডেকে উঠল করুণ স্বরে। সে দেখল ক্রমেই চাঁদটা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। হঠাৎ কে যেন বলে উঠল, 'ভাই সাহেব, আমার হাতটা ধরেন---' রাজীব দেখল একটা শীর্ণ হাত এগিয়ে আসছে তার দিকে। রাজীব প্রাণপণে চেষ্টা করল হাতটা ধরতে। কিন্তু পারলো না। হাতটা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। হঠাৎ কি যেন ওর গলা পেঁচিয়ে ধরল। বাঁধন ক্রমেই শক্ত হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছে না সে। বুক ভারী হয়ে আসছে ওর। ক্রমেই পানিতে ডুবে যাচ্ছে সে। চাঁদ পুরোপুরি ঢেকে যাচ্ছে মেঘে।

'' না --------!!!!!'' চিৎকার করে উঠলো রাজীব। সর্বাংগ ঘামে ভেজা। গলা শুকিয়ে কাঠ। বিছানার পাশে রাখা গ্লাস থেকে ঢক - ঢক করে পানি খেল সে। ' ওহ্! কি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন!' বলে উঠলো সে। ঘড়িতে সময় দেখলো। রাত চারটা বাজে। বাথরুমে গিয়ে মুখ ধুতে শুরু করল সে। হঠাৎ তার গলার দিকে চোখ পরল। অবাক হয়ে গেল সে। গলায় কিসের যেন পেঁচিয়ে ধরার দাগ। নিজের হাত আর পায়ের দিকে তাকালো সে। একই রকম দাগ দেখতে পেলো। ভয় পেয়ে গেলো সে। আজ তো ওর পরিনগর যাবার কথা। কি ঘটতে চলেছে আজ--------?? শেয়ার করেছেনঃ কবি

।। এক রাতে ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, October 2, 2011 at 10:53pm
ঘটনাটা ২ বছর আগের। আমি রাতে ঘুমাই না। সারারাত পিসিতে কাজ করি। যেই রাতের ঘটনা, সে রাতে আমি পিসিতে গেম খেলছিলাম। তখন রাত ২ টার মত বাজে। হটাত বাসায় কলিং বেলের আওয়াজ বেজে উঠলো। আমি চিন্তা করলাম, এতো রাতে কে আসবে? আমি চিন্তা করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আমার আআবু আগেই দরজা খুলে ফেলছেন। দেখি দরজায় আমাদের বাসার ৫ তালার আঙ্কেল আসছেন। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আঙ্কেল কি ঘটনা? কি হয়েছে? উনি বললেন, উনি ঘুমাতে পারছেন না। উনার রুমে নাকি কিসের খুব আওয়াজ হচ্ছে। উনার দুটো বাচ্চা আছে। বাচ্চা দুটোও ঘুমুচ্ছে। ওহ, একটা কথা বলে রাখি। আমাদের বিল্ডিং ৬ তালা। আমরা থাকি একদম উপরের তলায়। মানে ৬ তালায়। আঙ্কেলরা আমাদের নিচের তলায় থাকেন। তো, আব্বু আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি কোনও সাউন্ড করেছি কিনা। আমি বললাম, না। তখন তিনি আমাকে বললেন, ঠিক আছে, এক দৌড়ে ছাদে দিয়ে দেখে আসো, কেউ আছে কিনা? এই কথা শোনার সাথে সাথে আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো। আমি মানুষ হিসেবে খুব একটা সাহসী না। তাও সাহস করে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ছাদের দরজা খোলা আর রেলিং ধরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কাছে যাওয়ার পর মেয়েটা আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। দেখলাম, উনি আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের আপু। তো, আমি আর কিছু বললাম না। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, আপু ভালো আছেন? সে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। আমি তখন নিচে নেমে এসে আঙ্কেলকে জানাই। আঙ্কেল খুব রাগ করেন আর বলেন, যে এতো রাতে একটা মেয়ে একা ছাদে কি করে? আঙ্কেল তখনই বলেন যে ঐ পাউর বাসায় যাবেন কমপ্লেইন করার জন্য। আমি বললাম, আঙ্কলে সকালে ব্যাপার টা নিয়ে বললেই হবে। কিন্তু তিনি খুব রেগে যান এবং বলেন যে, না, এখুনি যাবো। আমি আর কি বলবো, আমি বলি, আচ্ছা ঠিক আছে। তো আমি রুম থেকে বের হয়ে ঐ আপুর বাসায় নক করি। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া এসে দরজা খুলে দেন। তিনি যে ঘুম থেকে উঠে আসছেন সেটা উনাকে দেখেই বোঝা যায়। আঙ্কেল উনাকে জিজ্ঞেস করেন যে, উনার বোন কোথায়? ভাইয়া বলেন যে, ঘুমুচ্ছে। আঙ্কেল রেগে গিয়ে বলেন যে, না, সে ঘুমুচ্ছে না। সে ছাদে! ভাইয়া তখন গিয়ে দেখে যে আপু সত্যই ঘুমুচ্ছেন। আঙ্কেল তখন আমাকে ধমক দেন। এবং তারপর থেকে আর আমার সাথে কথা বলেন না। সে বলে আমি নাকি বেয়াদব। কিন্তু এই ঘটনার পর একমাত্র আমিই জানি সে রাতে কি ঘটেছিলো। আমি জানি যে, আমার দেখায় ভুল ছিল না। আমি ১০০% নিশ্চিত। এরপরও আমাদের বাসায় এমন অনেক প্যারানরমাল ব্যাপার ঘটে। এমনকি সেই আঙ্কেল নিজেই একদিন ফেস করেন। সেগুলো নাহয় আরেকদিন বলবো। ঘটনাটি পাঠিয়েছেনঃ Lochon Corleone ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/profile.php?id=100001782407882

। একটি রিকশা ভ্রমন ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, October 1, 2011 at 10:34pm
ঘটনাটি ঘটে ফেব্রুয়ারী মাসের কোনও এক শুক্রবারে। তারিখ মনে নেই। আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মাঝে মাঝে কাজ শেষে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। কখনো কখনো রাত ২ টাও বেজে যায়। আমরা মেইনলি ফরেন কোম্পানিগুলোর সাথে ডিল করি। তাই অনেক সময় কাজের প্রেসার বেশি থাকলে যত রাতই হোক, কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে হয়। এমনি ভাবে একদিন রাত ২ টার দিকে অফিস থেকে বের হয়েছি। মনটা অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি ভালো ছিল। আজকে বিকেলে শুনেছিলাম আমার প্রমোশন হতে যাচ্ছে। অনেকদিনের একটানা খাটাখাটনির ফল পেতে যাচ্ছি। যারপরনাই উৎফুল্ল। যাই হোক, অফিস থেকে বের হয়ে কিছুটা সামনে এগুলেই একটা মোড় পড়ে। এখানে যত রাতই হোক, সি এন জি অবশ্যই পাওয়া যায়। কৃষ্ণপক্ষ দেখে কিনা জানি না, কিন্তু আকাশ আজ বেজায় কালো। শীতের দাপট কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও রাত্রিবেলা ভারী পোশাক গায়ে দিয়ে হাঁটতে হয়। শার্টের উপর একটা চাদর চাপিয়ে হাঁটতে লাগলাম। মোড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম। আশ্চর্য লাগলো। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু সি এন জি তো দূরের কথা, কোনও মানুষ পর্যন্ত চোখে পড়লো না। টেনশনে পড়ে গেলাম। সিগারেট খাওয়ার অভ্যাসটা প্রায় চলে গেছে। কিন্তু কেন যেনও এই টেনশনে একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করল। ব্যাগ হাতড়ে কয়েকদিন আগের একটা দুমড়ানো সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। কপাল ভালো, সাথে ম্যাচটাও পেলাম। বুক ভোরে দম নিতেই দেখলাম টিং টিং করতে করতে একটা রিকশা আসছে। রিকশাওয়ালা শীতে কাবু হয়ে গেছে যেনও! কোমর পর্যন্ত সাদা চাদর দিয়ে মুড়ানো। সাদা রঙটা কেন যেনও চোখে লাগছে। এতো সাদা রঙ সচারচর দেখা যায় না। রাস্তার পাশের নিয়ন আলোয়ও স্পষ্ট ঝিক ঝিক করতে দেখলাম চাদরটা। রিকশাওয়ালা আমার হাতনাড়া দেখে আমার প্রায় পায়ের কাছে এনে রিকশা থামাল। কমলাপুর যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলাম। ঘাড় নেড়ে বলল যাবে। জিজ্ঞেস করলাম কত দিতে হবে। কিছু বলল না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম। এবার একটু চড়া গলায়। চাদরের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে আমার দিকে তাকাল সে। রিকশাটা রাস্তা থেকে ভালো দূরেই থেমেছিল। আলো কম থাকায় মুখখানি ভালো ভাবে দৃষ্টি গোচর হল না। তবে যা দেখলাম, তা ভড়কে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। মুখ ভর্তি গর্ত গর্ত দাগ। আগের দিনে পক্স/গুটিবসন্ত হলে নাকি মানুষের এমন দাগ হতো। কিন্তু লোকটার বয়স খুব বেশি বলে মনে হল না। ভাঙ্গা, খসখসে গলায় বলল, ৩০ টাকা দিয়েন। এমনিতেই রাত্রি প্রায় আড়াইটা, তার উপর রাস্তা পুরো ফাঁকা। দিনের বেলায় এই রাস্তায় ৩০ টাকায় রিকশা পাওয়া দুর্লভ। ব্যাটার অন্য কিছু মতলব আছে কিনা বুঝতে চেষ্টা করলাম। দেরি হয়ে যাচ্ছে, বাসায় ফেরা দরকার। অগত্যা উঠে বসলাম। রিকশা ধীর গতিতে এগুতে লাগলো। ফাঁকা রাস্তা, চাইলেই ঝড়ের বেগে চালানো যায়, তা না করে এমন ধীর ভাবে চালানোর কোনও মানে হয়? পেছন থেকে অস্থির গলায় বললাম, একটু জোড়ে টানো। কথাটা সে কানে তুলল নাকি বুঝা গেলো না। রিকশার গতি তেমনই রইলো। রেগে ঘাঁট মেরে বসে রইলাম। রাত বেশি বলে, নইলে নির্ঘাত ব্যাটার কপালে খারাবি ছিল। হটাত আমাকে চমকে দিয়ে রিকশাওয়ালা বলে উঠলো, দিনের বেলা হইলে আমারে পাইতেন না। মারতেন কেমনে?
কিছুক্ষণের জন্য থ মেরে গেলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম আসলেই কিছু শুনেছি কিনা। নাকি আমার অস্থির মনের উল্টাপাল্টা কল্পনা। রিকশাওয়ালা ভয়ঙ্কর ভাবে হেসে উঠলো। বলল, কল্পনা না। আপনি ঠিকই শুনছেন! হৃৎপিণ্ডটা ধিম ধিম করে হাতুরির মত পিটাচ্ছিল। যেকোনো মুহূর্তে যেনও গলা দিয়ে বের হয়ে আসবে। বহু কষ্টে, সমস্ত শক্তি এক করে বললাম, তুমি কে? লোকটা আবারো একটা ভয়ঙ্কর পিলে চমকানো হাসি দিয়ে বলল, ঘাবড়ায়ইয়েন না। আপনার কোনও ক্ষতি করবো না! শীতের মধ্যেও আমার কানের নিচে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিল। জীবনে প্রথমবারের মত এমন কোনও পরিস্থিতিতে পড়েছি। একমনে আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলাম। যত রকমের দোয়া দরুদ শিখেছিলাম, একের পর এক পড়তে লাগলাম। রাস্তা প্রায় শেষ, আর কিছুটা পথ এগুলেই আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় এসে যাবো। রিকশা আচমকা ব্রেক করে থেমে গেলো। কর্কশ গলায় বলল, নামুন! আমি লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে পড়লাম। দৌড় দিবো নাকি দাঁড়িয়ে থাকবো মনস্থির করতে পারছিলাম না। কোথায় যেনও শুনেছিলাম, এদের অপমান করতে নেই। দাঁড়িয়ে থাকবো ঠিক করলাম। মাথা নিচু করে মানিব্যাগ বের করলাম। ব্যাটা থেমেছে তো থেমেছে একদম অন্ধকারে এসে থেমেছে। মানিব্যাগে আলো ঢুকছে না। সাহস করে পকেট থেকে নোকিয়া ফোনটা বের করলাম। টর্চ লাইট মোবাইল। আলো ফেললাম মানিব্যাগে। টাকা বের করে যেই দিতে যাবো, অমনি আলোটা ঘুরে লোকটার মুখের উপর পড়লো।
শুধু একটুকরো কঙ্কাল। শরীরের অংশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কোঠরে চোখ নেই। নাকের জায়গায় দুটো ফুটো। ভয়ে মুখ দিয়ে এমনিতেই চিৎকার বেরিয়ে গেলো। আমার ভয় পাওয়া দেখে সেটি আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কর্কশ গলায় হেসে উঠলো। অবশেষে নিজের মনশক্তির উপর কন্ট্রোল হারালাম। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে আমার মা-বাবার রুমে। আমাকে ঘিরে উৎকণ্ঠি মানুষের ঢল দেখতে পেলাম। পরবর্তীতে জেনেছিলাম, আমাকে নাকি অফিসের বাইরের সেই মোড়ে সকালে ঝাড়ু দিতে এসে পড়ে থাকতে দেখে সিটি কর্পরেশনের লোকেরা। ছিনতাইকারী ধরে মেরে তেরে ফেলল নাকি ভেবে আমাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে তারা। মারাত্মক কোনও সমস্যা না খুঁজে পাওয়ায় সেখান থেকে আমাকে রিলিজ করা হয়। তারপর উনারা আমাকে বাসায় নিয়ে আসেন। চোখ খুলেই গতরাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। মা-বাবার শত বাঁধা অমান্য করে ছুটে গেলাম আমার ঘরে। টেবিলের উপর আমার মানিব্যাগটা দেখতে পেলাম। তড়িঘড়ি করে খুলে ফেললাম। খুচরো টাকা যেই পকেটে রাখি সেই পকেটে সব টাকাই দেখতে পেলাম। এমনকি ৫ টাকার দুটো কয়েন এবং ২ টাকার তিনটি নোট সবই ছিল। ক্যাশ টাকা যেমন যা ছিল তেমনি আছে। শুধু খুঁজে পেলাম না একটি ২০ টাকার আর একটি ১০ টাকার নোট! শেয়ার করেছেনঃ শুভ্র আহমেদ। ফেসবুক আইডিঃ Suvro Ahmed Rehan

ভৌতিক গল্প : ফাঁড়া - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, October 1, 2011 at 10:56pm
(১)
ছোট বেলা থেকেই আমি দেখতে খুব সুন্দর । ছেলেদের এতোটা সুন্দর না হলেও চলে । তার উপর আবার তিন বোনের পর আমি একমাত্র পুত্র সন্তান । তাই মানুষ এবং অন্যান্য সব কিছুর নজর থেকে বাঁচাবার জন্য আমার শরীরে তাবিজ কবজের কোন অভাব হইনি কখনও । বাবা মা তো আছেনই খালা ফুপুরাও সবসময় বাড়াবাড়ি রকমের আধিখ্যেতা করতেন । এ যে কেমন যন্ত্রনা তা বলে বোঝানো যাবে না । কখনও কোথাও একা যেতে পারতাম না । করো সঙ্গে মেলামেশা নিষেধ ছিলো । স্কুল বাসা ; বাসা স্কুল এইছিলো আমার ছেলেবেলার জীবন । আমার বাবা এমনিতে ছিলেন বেশ গম্ভীর স্বভাবের মানুষ । সবাই তাকে খুব ভয় করতো । শুধু আমার বেলাতেই বাবা ছিলেন একটু ভিন্ন । আমার সকল অন্যায় ছিলো বাবার কাছে মাপ । মার কথা তো বাদই দিলাম । তবে আমিও ছিলাম বেশ চাপা স্বভাবের পারত পক্ষে কাউকে কষ্ট দিতাম না । দুস্টামিও খুব একটা করতাম না । আমার বোনেরা কোন জিনিষ পত্র ভাঙ্গলে আমার নাম করে বেঁচে যেতো । বোনদের দোষ নিজে স্বীকার করে আমিও বেশ মজা পেতাম । তবে লেখা পড়ায় আমি ছিলাম খুব ভাল । এই একটা জিনিষ নিয়ে আমি বেশ অহংকার বোধ করতাম । পড়া লেখা করতে আমার বেশ ভাল লাগতো । এছাড়াও আমার বাগানে সময় কাটাতে , নিজ হাতে গাছ পালা লাগতে খুব ভাল লাগতো । এ অভ্যেসটা আমার এখনও আছে । একাজটা আমি এখনও করি । সময় পেলেই বাগানে বসে যাই । আমার আর একটি প্রিয় কাজ ছিল রাজ হাঁস পোষা । ছোট বেলাতে আমার বেশ কয়েক রঙের রাজ হাঁস ছিলো । এসব করেই আমি বড় হতে থাকি । ঢাকাতে আমাদের বেশ কয়েটা বাড়ী থাকার পরও আমার ২০ বছর বয়স পর্যন্ত আমরা ঢাকার বাহিরে ছিলাম । তা ও আমার জন্য । কোন একজন ফকিরের নির্দেশে এমনটা করেছেন বাবা মা । ফকিরের নির্দেশ মোতাবেক আমার জীবনে নাকি তিনটি ফারা আছে । একটি খুব ছোট বেলায় । দ্বিতীয়টি ২৫ বছর বয়সে । আর তৃতীয়টি শেষ বয়সে । প্রথম দুটো ফারা কাটাতে পারলে বেঁচে থাকার গেরান্টি ছিলো ৮০ বছর । অশরীরী চাপ যাকে বলে । প্রথম ফারাটি আসে আমার ৮ বছর বয়সে । পানিতে পরে গিয়ে । বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে সবার আড়ালে পানিতে পরে গিয়ে মরতে বসেছিলাম । কিন্তু আমার মেজ বোনের কল্যানে আমি যে যাত্রায় বেঁচে গেলেও আমার বোনটি মরে গিয়েছিলো । যে কস্ঠ আমি কোন দিন ভুলবো না । কোন দিন না । বোন হারাবার যন্ত্রনা না যে কি তা বলে কয়ে শেষ করা যাবে না । সবাই ফারা বললেও আমি এটাকে এক্সডেন্ট হিসাবে দেখি ।
(২)
ঢাকা ইউনিভারসিটি থেকে আমি ম্যানেজমেন্টে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছিলাম । তাই ইউনিভারসিটিতে চাকুরী ও ছিলো পাকা । জয়েনও করেছিলাম । কিন্তু কিছুদিন যেতেই বুঝলাম শিক্ষকতা আমার জন্য নয় ।শিক্ষক হতে হলে যে জ্ঞান ,যে ধর্য্য থাকা প্রয়োজন তার কোনটাই আমার ছিলো না । তাছারা প্রতিদিন একই ক্লাস । একই লেকচার । অল্পদিনেই কেমন হাপিয়ে উঠি । তাই বাবার মত না থাকা সত্তেও চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলাম ওয়ান্ড ব্যাংকের একটি রুরাল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে । আজ ঢাকা তো কাল রাজশাহী পরশু দিনাজপুর । দারুন লাগছিল আমার । বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম কয়েকটি দিন । কিন্তু ঐ ফারা আমার পেছন লেগেই ছিলো । একটি প্রজেক্ট নিয়ে রওনা হয়েছি ঢাকার অদূরে কালিগন্জে । সঙ্গে ওয়াল্ড ব্যাংকের গাড়ী । আষার মাস । আকাশ এই মেঘলা তো এই পরিস্কার । এই হাঁসছে এই কাঁদছে । মফসলে থাকার ফলে আমি রোড ঘাট কোথাও তেমন চিনিনা । সে ক্ষেত্রে ড্রাইভার রমিজ মিয়াই ভরসা । ঝানু লোক । বাংলাদেশের এমন কোন জায়গা নেই যে ব্যাটা চিনে না বা যায়নি । তিন দিনের কাজ । দু’দিন থাকতে হতে পারে । শেষ দিন ফিরে আসবো । এদিকে আমার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে পুরোদমে । বোনদের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে বাসা প্রায় খালি । তাই মা,বাবা চাচ্ছিলেন ছেলের বউ দিয়ে শূন্য বাড়ী পূণ্য করতে ।
আমরা রওনা হয়েছি দুপুর ২টার দিকে । রমিজ মিয়া বলেছে রাস্তা ঘাট ভাল হলে তিন কি চার ঘন্টায় পৌছে যাওয়া যাবে । সারাদিনই আকাশ কেমন মেঘলা হয়ে আছে । সকাল থেকে কয়েক পশলা বৃস্টি হয়ে গেছে । আমি গাড়িতে চোখ বন্ধ করে বসে আছি । ঘুমিয়েই গেছিলাম । হঠাৎ প্রচন্ড ব্রেক কষার শব্দে সেই সঙ্গে ঝাকিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । চোখ খুলে দেখি রমিজ মিয়া একটি মেয়ের সঙ্গে বেশ জোড়ে জোড়ে কথা বলছে ।
কি হয়েছে রমিজ ?আমি জিজ্ঞেস করতে রমিজ মিয়া বললো দেখুন না স্যার ; বলা নাই কওয়া নাই । কোথা থেকে গাড়ির সামনে এসে পড়লো মেয়েটা। আর একটু হলে তো মরতো । তখন তো আমাকে জেলের ভাত খেতে হতো । এখন সড়তে বলছি তাও সড়ছে না । এ্যাই যে সরেন । সরেন বলছি । রমিজ হম্বি তম্বি করছে ।
আমি বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে আসছে ।গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে । মেয়েটির বয়স আনুমানিক বিশ বাইশ হবে । শরীরে বেশ দামি পোষাক । দেখে গ্রাম্য মেয়ে বলে মনে হয় না । শরীরের রং বেশ ফরসা । আমি হাতের ইশারায় মেয়েটাকে কাছে ডাকলাম ।
মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে এলো ।
গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার ? কোন সমস্যা ?
মেয়েটি মাথা নেড়ে যা বললো তা হলো । সে এই গ্রামে নতুন এসেছে । বাসা থেকে বেড় হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছে । বাধ্য হয়ে সাহায্যের জন্য আমাদের গাড়ি থামিয়েছে । আমি বললাম আমরা ও তো এখানকার কিছু চিনি না । আপানাকে কি ভাবে সাহায্য করবো ?
মেয়েটি বললো জ্বী, আমি কালিগন্জ জমিদার বাড়িতে যাবো । প্লিজ আমাকে একটু পৌছে দিন । জমিদার মোসলে উদ্দিন আমার দাদু হন । যে কাউকে বললেই জমিদার বাড়ী দেখিয়ে দেবো । প্লিজ একটু পৌছে দিন না । মেয়েটি বলার ভঙ্গিতে কিছু একটা ছিলো আমি না করতে পারলাম না ।
দরজা খুলে দিয়ে আমি ওপর পাশে চেপে বসলাম । রমিজকে বললাম আগে জমিদার বাড়িতে যেতে । মেয়েটি গাড়িতে বসতেই কেমন একটা চাপা ফুলের গন্ধে নাকে ভেসে এলো । আমি চোখ বন্ধ করে আছি । মেয়েটি ও চুপ করে আছে । এর মধ্যে টের পেলাম আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে । মেয়েটি রমিজকে তারা দিচ্ছে তারাতারি যাবার জন্য । রমিজ চোখ মুখ শক্ত করে গাড়ি চালাচ্ছে । বোঝা যাচ্ছে পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি চালাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ।
মেয়েটিকে আমি জিজ্ঞেষ করলাম আপনি কোথায় থাকেন ?
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমার নাম এলেনা । আমি নিউইর্য়কে থাকি । বাবার সঙ্গে গতকাল এসেছি ।আজ আমার বিয়ে । ঘুরতে ঘুরতে কি ভাবে যে এত দূর চলে এসেছি বুঝতে পারছি না ।
আজ আপনার বিয়ে ? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেষ করলাম ।
হ্যা । আজ আমার বিয়ে । মেয়েটি গম্ভির মুখে বললো ।
গ্রামের সরু রাস্তা । তার উপরে বৃষ্টি । আমি রমিজ কে তারা দিতে সাহস পাচ্ছি না । তা ছাড়া মেয়েটিকে আমার কেমন জানি ভাল লাগছে । এই যে মেয়েটি অস্থির হয়ে পাশে বসে আছে আমার কাছে তা কেমন জানি ভাল লাগছে । মনে হচ্ছে মেয়েটি যখন গাড়ি থেকে নেমে যাবে তখন আমার কষ্ট লাগবে । হয়তো আমি মরে যাবো । অদ্ভুত এক মায়া কাজ করছে আমার ভেতর । নিজের এলো মেলো চিন্তায় আমি নিজেই অবাক হলাম । চাপা ফুলের গন্ধে পুরো গড়ি মো মো করছে । বাহীরে ঝুম বৃস্টি । এ যেনো এক অন্য জগত ।
(৩)
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বিশাল একটা বাড়ীতে আলো জ্বলছে । বিয়ে বাড়ীর আলোসজ্জা দ্বারা বাড়ীটি সজ্জিত । আমরা গাড়ি নিয়ে ভেতরে ডুকলাম গেলাম । বিশাল জমিদার বাড়ির বিশাল উঠান । তবে কোন লোকজন দেখা যাচ্ছে না । মনে হয় বৃষ্টির জন্য সবাই ঘরের ভেতর অবস্থান করছে । উঠান জুড়ে বিশাল সামিয়ানা টানানো । উঠানের এক পাশে বড় বড় হাড়ি ,পাতিল রাখা । দেখে বুঝা যায় বড় রকমের রান্না বান্নার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে । কিন্তু লোকজন কোথায় ? আমার উৎসুক চোখ লোকজন খুঁজছে । রমিজ গাড়ীটি থামাতেই মেয়েটি বললো আমরা এসে পরেছি । বলে দরজা খুলে দৌড়ে গেলো সামনে একটি আধ খোলা দরজার দিকে । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতেই দামি পোষাক আশাক পড়া কয়েকজন বের হয়ে এলো । মেয়েটি আমাদের দেখিয়ে কিছু বলছে । আমি রমিজকে গাড়ি ঘুরাতে বললাম । যেনো বের হতে সুবিধা হয় ।
লোকজন সমতে মেয়েটি গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো । আমি ভদ্রতা করার জন্য নেমে দাড়ালাম । মেয়েটি হেসে একটি মধ্য বয়স্ক লোককে দেখিয়ে বললো আমার বাবা । আমি সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে ধরলাম ।
লোকটি আমার হাতে ধরতেই আমি চমকে উঠলাম । প্রচন্ড ঠান্ডা একটি হাত । যেনো একটি ঠান্ডা স্রোত আমার শিরদারা বেয়ে নেমে গেলো ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আমার মেয়েকে সাহাষ্য করবার জন্য । চলুন ভেতরে চলুন । লোকটি হেঁসে বললো ।
- জ্বি ; কিছু মনে করবেন না । আজ নয় । আমাদের একটু তারা আছে । আজ বসতে পারবো না ।
-আরে তা কি হয় । কিছু একটা মুখে দিয়ে তবেই যেতে হবে । লোকটি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বললো ।
মেয়েটি বললো । চলুনতো । বৃষ্টি কমুক তখন যাওয়া যাবে ।
এমন সময় একটি লোক এসে বললো ছোট হজুর বড় হজুর মেহমান নিয়ে ভেতরে যেতে বলেছেন ।
আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি আমার হাত ধরে বললো চুলুন তো । You May go after some later .
আমি আর কিছু বললাম না । চলতে শুরু করলাম ।
বিরাট হল রুম । দুপাশে সারি সারি চেয়ার সাজানো । দেয়ালে বড় বড় বাঁধানো ছবি টাননো। মাথার উপর ঝাড়বাতি । রুমের শেষ প্রান্তে দু-টো সিংহাসন আকৃতির চেয়ার রুমটির গাম্ভির্য নিয়ে এসেছে । কেমন রাজা বাদশাদের দরবার মনে হচ্ছে । বয়স্ক একজন লোক ভেতরে ডুকে দুটো চেয়ারের একটিতে বসলো । আমাদের কাছে পরে আসা লোকটি বয়স্ক লোকটির কানে কানে কিছু বলতেই । বয়স্ক লোকটি হাতের ইশারায় সবাইকে বসতে বললেন । আমি অবাক হলাম একটু আগেও দুপাশে রাখা চেয়ার গুলো খালি ছিলো । এখন দেখছি প্রতিটি চেয়ারে লোক বসে আছে । এতোগুলো লোক কখন এলো ? আমি কাউকে আসতে দেখলাম না কেন ? নাকি আগেই সবাই বসে ছিলো ? কি আজব ! আমি কি তবে ভুল দেখলাম ? আমার পেছনে একটি চেয়ার রাখা হলো । বয়স্ক লোকটি আমাকে ইশারা করলো বসতে । আমি বসে পড়লাম । মেয়েটি আর তার বাবা আমার পেছনেই দাঁড়িয়ে রইলো ।
আপনাকে ধন্যবাদ । আমার নাতনিকে সাহায্য করার জন্য । আপনি আমার মেহেমান । লোকটির কন্ঠস্বরে মনে হলো ঘরের আলো গুলো কেঁপে কেঁপে উঠলো । ভদ্রলোক ঠিক যেন বাংলা বলছেন না । অন্য কোন একটি ভাষার টান স্পস্ট । আমি কেমন জানি ভয় পেয়ে গেলাম । হঠাৎ নার্ভাস ফিল করছি । আমি কিছু বলতে পারলাম না । চুপ করে বসে আছি । লোকটি আবার বলতে শুরু করলো -
আজ আমার নাতনির বিয়ে । আপনি বিয়ে শেষ হলে যাবেন । কোন অসুবিধা হবে না । আরাম করুন । আমি আবারও কিছু বলতে পারলাম না । কে যেনো আমার কন্ঠরোধ করে আছে । আমি কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু কোন শব্দ বেড় হলো না । কি করবো বুঝতে পারলাম না । সঙ্গে সঙ্গে বাবা মার কথা মনে হলো । অজানা কোন বিপদের আশংকায় দেহ মন কেঁপে উঠলো । ফকিরের সেই ফারার কথা মনে হলো । আমি সত্যিকারের ভয় পেলাম ।
যান বিশ্রাম করুন । ওকে নিয়ে যাও । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো আসুন । আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো উঠে মেয়েটির পিছু পিছু রওনা হলাম । মেয়েটি আমাকে নিয়ে হল রুম থেকে বের হয়ে । বিশাল বারান্দা ধরে দোতালায় উঠার সিঁড়ি দিয়ে বড় একটি ঘরে নিয়ে এলো তারপর হেঁসে বললো ।
-এটাই আপনার বিশ্রামের জায়গা । আরাম করুন । আমি ইতি মধ্যে অনেকটা ঠিক হয়ে এসেছি । আমি বললাম আপনারা কি শুরু করলেন বলুন তো ? আমার অনেকে কাজ পরে আছে ।আমাকে যেতে হবে । আমি যাচ্ছি বলে ঘুরে দাঁড়ালাম ।
মেয়েটি আমাকে কোন বাঁধা দিলো না ।
আমি দরজা দিয়ে আবার বারান্দায় বের হয়ে এলাম । জোড়ে জোড়ে পা চালিয়ে নীচে নেমে গেলাম । নীচে নামতেই দেখি তিন চারজন লোক দাঁড়িয়ে আছে এক হাতে বড় রাম দা । অন্য হাতে মানুষের কাটা মাথা ধরে আছে । মাথাগুলো থেকে টপ টপ করে রক্ত ঝরছে । আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে উপড়ে চলে এলাম । মেয়েটি এখন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে দেখে - আমি চিৎকার করে বললাম নীচে মানুষ খুন করে কিছুলোক দাঁড়িয়ে আছে ।
মেয়েটির মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো না । মুখ কঠিন করে বললো -
ওরা বিদ্রোহ করেছিল । তাই হত্যা করা হয়েছে । কেউ দাদুর কথা না শুনলে এমনই হয় । আপনিও ইচ্ছা করলে না শুনে পারেন ।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটির তাকিয়ে আছি ।
আপনার কোন ভয় নেই । আমার বিয়েটা হয়ে যাক । তারপর চলে যাবেন । একটু সাবধানে থাকবেন । ঘর থেকে বেড় হবেন না । কিছু দরকার হলে এ দড়িটি ধরে টান দেবেন লোক চলে আসবে । মেয়েটি দরজা টান দিয়ে চলে গেলো । আমি ঘরটির মাঝে একা হয়ে পরলাম ।
(৪)

হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিলাম । শুয়ে থেকেই বুঝতে পারছি বেশ বড় একটি খাটে শুয়ে আছি । ঘরময় আবচ্ছা আলো । এমন সময় হঠাৎ দরজায় খুট খুট শব্দে উঠে বসলাম । পরপর কয়েকবার শব্দ হলো । তারপর বিরতি দিয়ে আবারও খুট খুট শব্দ । আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম কে কে ?
কোন উত্তর এলো না । কিন্তু আবারও শব্দ হলো খুট খুট খুট ।
আমি বিছানা থেকে নেমে পড়লাম । একটানে দারজা খুলে ফেললাম । ঠান্ডা একটা হাওয়া এসে লাগলো শরীরে । কেউ নেই । শুন্য বারান্দা খাঁ খাঁ করছে । আমি বের হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে নাকি ।হয়তো পালাবার এটা একটি মোক্ষম সময় হতে পারে ।
আমি আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলাম । কোথাও কেউ নেই ।
মনে মনে রমিজ কে খুঁজছি । কে জানে কেমন আছে ?
ঠিক এমন সময় কানে একটি চাপা কান্নার শব্দ ভেসে এলো । কে যেন থেমে থেমে কাঁদছে । বারান্দা দিয়ে সোজা হাঁটতেই কান্নার শব্দ আরো স্পস্ট হলো । কান্নার শব্দ ধরে আমি একটি ঘরের বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম । দরজায় কান পেতে শুনলাম । ঘরের ভেতর থেকেই আসছে কান্নার শব্দ । এখন আরো ভাল ভাবে শুনা যাচ্ছে । আমি দিধায় আছি দরজায় নক করবো কিনা ।
দরজার উপড় আস্তে হাত রাখতেই খুলে গেল দরজা ।
প্রথমটায় চোখে কিছু পড়লো না । ঘর প্রায় অন্ধকার । কান্নার শব্দ থেমে গেছে । নাকে এসে লাগলো তীব্র চাপা ফুলের ঘ্রাণ । এ ঘরটিও দেখতে আমি ঘরটিতে আছি সেটির মতো দেখতে । আসবারপত্র প্রায় এক । মাঝখানে একটি বড় খাট । এক পাশে একটি বড় আলমিরা । একটি ছোট টেবিল । টেবিলের সামনে একটি চেয়ার উল্টে পরে আছে মাটিতে । দু’পা ভেতরে ঢুকে খাটের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম । এমন দৃশ্য আমি কোন দিন দেখিনি । খাটের মাঝ খানে সিলিং এর সঙ্গে ঝুলছে এলেনা নামের মেয়েটি । হাত দু-টো দু পাশে ছড়ানো । মাথাটা সামনের নীচের দিকে নামানো ।শরীরটা আলতো ভাবে দুলছে । ভয়ে আমি হতবাক হয়ে গেলাম । কি করবো বুঝতে পারছি না । হাত পা কাঁপছে ।
হঠাতই চারিদিকে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো । নানান শব্দে মাথার ভেতরটা ঘুরছে । বারান্দা দিয়ে কারা যেনো দৈড়ে করছে । আমি টেবিল এর গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । কি করবো বুঝতে পারছি না । কেন জানি মনে হল আমি মারা যাচ্ছি । দোয়া দুরুদ পড়তে চাইলাম কিন্তু কিছু মনে করতে পারছি না । গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ।
ঠিক এমন সময় দরাম করে সময় দরজা খুলে গেলো । আমি চমকে উঠলাম । আর একটু হলে প্রায় চিৎকার করে উঠতাম ।ভয়ে বুক বেশ জোড়ে জোড়ে উঠানামা করছে । ভেতরে ঢুকলো এলেনা । আমি আবারও চমকে উঠলাম ।
আপনি এখানে ?আসুন আমার সঙ্গে আসুন ।
বলেই আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো বাহিরের দিকে । দরজা দিয়ে বেড় হতে হতে আমি খাটের দিকে তাকালাম । দেখলাম লাশটা তখন ঝুলছে ।
আমি কোন রকম বললাম ওটা কে ?
কেউ না । আপনি পালান । বাড়ীতে প্রজারা আগুন দিয়েছে । দাদুকে মেরে ফেলেছে । সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই মেরে ফেলছে আপনি পালান । মেয়েটির সঙ্গে বারান্দা ধরে ছুটতে ছুটতে আমি দেখলাম পুরো বাড়ী জ্বলছে । আপনাকে পালাতে হবে । আসুন আমার সঙ্গে । মেয়েটি আমার হাত ধরে বারান্দা দিয়ে আরো জোড়ে ছুটতে লাগলো । আমাদের আশ পাশ দিয়ে নানা লোকজন ছোটাছুটি করছে । আমি আগুনের আচ টের পাচ্ছি । মেয়েটি আমাকে নিয়ে দোতালায় চলে এলো । এ ঘর ও ঘর ধাক্কা দিয়ে দেখছে কোন ঘরে ঢোকা যায় ।
অবশেষে বারান্দার শেষ মাথায় এসে একটা জানালা দেখিয়ে বললো এখান দিয়ে লাফিয়ে পড়ুন । আমি দাঁড়িয়ে আছি । কি করবো বুঝতে পারছি না । তাড়াতাড়ি করুন । প্রজারা দেখলে কেটে ফেলবে । জাষ্ট গো । জাষ্ট গো বলে মেয়েটি আমায় ঠেলে জানালায় তুলে দিলো । আমি লাফিয়ে পড়লাম অন্ধকারে । পরিশেষ : দোতালা থেকে লাফিয়ে পরার ফলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি । দু-দিন পর হাসপাতালে জ্ঞান আসে । রমিজের অবস্হা নাকি আরো খারাপ । প্রায় পাগল হয়ে গেছে । কাউকে চিনতে পারছে না । যাকে দেখছে তাকেই কামড়াতে আসছে । ওকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে পাবনায় । প্রায় দু মাস পর সুস্হ্য হয়ে আমি আবার কালিগন্জে যাই । যাওয়ার পথে একটু থামি জমিদার বাড়ীর সামনে । বাড়ীর পুরো কাঠামো পুড়ে গেছে । স্থানিয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম । আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে জমিদারের অত্যাচারে অতিষ্ট প্রজার নাকি বাড়িটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল । জমিদার মোসলে উদ্দিন কে প্রজারা হত্যা করে । জমিদারের নাতনিসহ আর সবাই আগুনে পুড়ে মারা যায় । অথচ পুরো ঘটনাটি আমার চোখের সামনে ঘটলো দু মাস পূর্বে । একে কি বলবো আমি ভৌতিক ঘটনা না আমার সেই ফারা ।।

।। একটি ডাক্তারী অভিযান এবং আমার অভিজ্ঞতা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, October 3, 2011 at 10:34pm ১৯৯৫ সাল। পৌষ মাসের শীতে তখন সবাই বেশ কাবু। তারিখ আর বার আমার ঠিক মনে নেই। আমি তখন চট্রগ্রাম ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিলাম। আমার হবি ছিল ছুটি পেলেই কোনও না কোনও আত্মীয়ের বাসা থেকে বেরিয়ে আসা। যাই হোক, তেমনি এক ছুটিতে আমার এক কাজিনের বাসায় বেড়াতে গেলাম। তিনি থাকেন বান্দরবানে বাজার টাইপের একটা ছোটখাট এলাকায়। তিনি ঐ এলাকার একজন নামকরা ডাক্তার। দিন বা রাত যেকোনো সময়ই উনার ডাক পড়ত। সেদিন রাতে খাওয়াদাওয়ার পর রুমে এসে বেশ আরাম করে বসে একটা সিগারেট ধরালাম। ২ টান না দিতেই কে যেনও দরজায় নক করল। ঠক ঠক! দরজা খুলে দেখলাম আমার কাজিন। তিনি বললেন, উনার ড্রাইভার ছুটিতে গেছে, আর এই মুহূর্তে উনার একটি জরুরী ডাক পড়েছে। তাই আমার যদি সমস্যা না হয়, তবে তিনি আমাকে নিয়ে যেতে চান। সেই রুগীর বাসা থেকে এক লোক এসেছে। কি আর করা! কপালে সিগারেটের সুখ সইল না! তড়িঘড়ি করে রেডি হলাম। ঘড়িতে তখন রাত ১১.৩০ বাজে। বাইরে আমার কাজিনের ১৯৮০ মডেলের নিসান সেন্টরা দাড় করানো ছিল। তাতে চেপে রউনা হলাম। গাড়িতে আমি, আমার কাজিন, আর সেই লোকটা। গাড়ির অবস্থা খুবই নাজুক। বান্দরবানের পাহারি রাস্তায় চলতে চলতে এইটার মেয়াদ প্রায় শেষ। যাই হোক, ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে প্রায় নিভু নিভু হেড লাইটের আলোতে কোনোরকমে গন্তব্বে পৌঁছলাম। রাত তখন ১২ টার বেশি হবে। এলাকাটা খুব গহীন। ৪-৫ টা শুধু কুঁড়ে ঘর আর চারপাশে পাহার আর জঙ্গল। ঠাণ্ডাও পড়েছে অনেক। লোকটা আমাদের রাস্তায় অপেক্ষা করতে বলে লণ্ঠন আনার জন্য সরু একটা পথ ধরে হনহন করে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম সেই পথ দিয়ে অন্য একটা লোক আসছে। কাছে আসতেই দেখলাম, লোকটার চেহারা খুব হাসি খুশি টাইপের। কিন্তু কেন যেনও দেখলে একটু অস্বস্তি হয়। লোকটি আমাদের দেখে বললেন, “কে? ডাক্তার বাবু নাকি? ঐদিকে তো রুগীর হয়ে গেলো! হি হি!” এই বলে লোকটি আমাদের সামনে দিয়ে হনহন করে হেঁটে অন্ধকারে কোথায় যেনও মিশে গেলো। গাড়িতে টর্চ ছিল, তা হাতে নিয়েই ছিলাম। আলো জ্বালিয়ে দেখলাম। কিছুই দৃষ্টিগোচর হল না। খানিক বাদে সেই লোকটি লন্ঠন হাতে ফিরে এলো। আমি গাড়িতে বসলাম আর আমার কাজিন গেলো লোকটার সাথে। ১০ মিনিটও হয়নি, দেখলাম আমার কাজিন যেনও ভূতের তাড়া খেয়ে ফিরে আসছে। হনহন হনহন করে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো। আমি ওর অনুপস্থিতির সুযোগে একটা সিগারেট ধরিয়েছিলাম। কিন্তু সে ফিরে আসায় এইবারও অর্ধেক টেনে ফেলে দিতে হল। আমার কাজিন খুব দ্রুত গাড়িতে বসে বলল, চল! কিছুদূর যাওয়ার পর আমার কাজিন আনমনে বলল, “আচ্ছা, যে লোকটি আমাদের খবর দিয়েছিল যে রুগি মারা গেছে তাকে ভালো মত খেয়াল করেছিলি? আমি বললাম, হ্যাঁ! একটু আজব টাইপের। চেহারাটা দেখলে মনে হয় সারাক্ষণ হাসছে! আমার কাজিন কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বলল, “গিয়ে দেখি ঐ লোকটিই রুগী ছিল। অনেক আগেই মারা গেছে। মোড়ে একপাশে কাত হয়ে পড়ে ছিল। বাসায় ও কেউ ছিল না। বাসার একমাত্র লোকটা আমাদের আনার জন্য গিয়েছিলো। আসলে কি ঘটলো বলতো?” এই বলে আমার কাজিন আরেকটু পাশ চেপে আমার একদম গা ঘেঁষে বসলো। যিনি পাঠিয়েছেনঃ Roban Mahmud ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/robanbd

।। অভ্যাস ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, October 4, 2011 at 10:35pm
আমি একজন স্টুডেন্ট। মেসে থাকি। মেসের বাকি সবাই আমার মতই স্টুডেন্ট। যেহেতু সবাই পড়াশোনা নিয়ে বিজি থাকে, ক্লাসে যেতে হয়, টিউশনি করতে যেতে হয়, তাই আমরা আর রান্না বান্নার ঝামেলা না করে সিদ্ধান্ত নেয় যে একটা বুয়া রেখে নিবো। সে শুধু রান্না বান্না করবে আর ঘর ঝাড়ু দেবে। মেস লাইফ শুরু হবার আগে কত কথাই না শুনতাম বুয়াদের নামে! বুয়ারা চোর, ফটকাবাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নতুন বুয়া আসার পর দেখলাম উনি একদমই তেমন নন। বরং পুরোই বিপরীত। এভাবে দিন যেতে থাকে। বুয়া আমাদের মেসে কাজ করেন প্রায় ৩ মাস যাবত। বুয়ার টাইম শিডিউল ছিল অনেকটা এইরকম। উনি দিনে ২ বার আসতেন। সকালে এসে দুপুরের খাবার এবং সন্ধ্যায় এসে রাতের খাবার রান্না করে দিয়ে যেতেন। যেই রাতের ঘটনা বলছি, সেই রাতে বুয়া সকালে এসে দুপুরের খাবার রান্না করে দিয়ে গেলেন কিন্তু সন্ধ্যায় আর আসলেন না। আমরা বুয়ার বাসায় গেলাম খোঁজ করার জন্য। গিয়ে দেখলাম উনি খুবই অসুস্থ। মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। আমরা দেরি না করে ডাক্তার ডাকলাম এবং ঔষধ যা লাগে সব কিনে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আসার পর বুঝতে পারলাম যে আজ রাতে খাওয়া হবে না। তখন মোটামুটি অনেক রাত। রাত ১১ টা সাড়ে ১১ টা হবে। আমরা খাবারের হোটেলের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। কোনও দোকানেই খাবার পেলাম না। বেশিরভাগই বন্ধ। যেগুলো খোলা আছে তাতে খাবার শেষ। কি আর করা! ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসায় ফিরে এলাম। আমি ঐ মাসের জন্য মেসের ম্যানেজার ছিলাম। মেসের কিছু দায়িত্ব আমার উপর ছিল। যেমন, কয়টা খাবার হবে তা বুয়াকে জানানো। কি রান্না করতে হবে তা বাজার করে দেয়া। দিনের খরচ হিসেব করা ইত্যাদি। এসব কাজ ঘুমনোর আগে করতাম। তাই প্রায়ই ঘুমুতে দেরি হয়ে যেত। সেদিনও দেরি করেই ঘুমুতে গিয়েছিলাম। রাতে সব দরজা জানালা চেক করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। হটাত আমার মনে হল, সদর দরজায় কে যেনও নক করছে। আমি পাত্তা দিলাম না। এতো রাতে আবার কে আসবে! কিন্তু বারবার দরজায় নক করা চলতেই থাকল। আমি বিরক্ত হয়ে কে দরজা নক করছে দেখার জন্য উঠে যাই। আমি দরজার কাছাকাছি যেতেই নক করা বন্ধ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকল। আমি দরজা না খুলে ভেতর থেকে কয়েকবার কে? কে? বলে চিৎকার করলাম। কিন্তু কোনও উত্তর পেলাম না। শেষে বিরক্ত হয়ে এসে বিছানায় আবার শুয়ে পড়লাম। এক মিনিট যেতে না যেতেই আবার নকের আওয়াজ পেলাম। এবার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। নির্ঘাত কোনও বদমাশ পোলাপানের কাজ। আমি বিছনা থেকে খুব সাবধানে উঠে পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগিয়ে যাই। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, এবারো আমি দরজার কাছাকাছি পৌঁছুতেই নক বন্ধ হয়ে গেলো। এবার আর কে? বলে ডাক দিলাম না। সরাসরি দরজা খুলে ফেললাম! দরজা খুলতে ম্যাক্সিমাম ৩ সেকেন্ড সময় লেগেছিল আমার। খুলে দেখি করিডর ফাঁকা। দরজাটা একটু চাপিয়ে আমি মেইন দরজার কাছাকাছি এলাম (আমরা নিচতলায় থাকতাম) মেইন গেট বন্ধ ছিল। এতো দ্রুত নক করে, দেয়াল তপকিয়ে চলে যাওয়া কারো পক্ষে আসলে সম্ভব ছিল না। ধরে নিলাম, যেই করুক, সে উপরে গিয়েছে। আমি দরজা খোলা রেখে উপরে যাওয়ার সাহস পেলাম না। চোর এসে ঘর সাফ করে দিয়ে যেতে পারে এই ভয়ে। ঘরে ঢুকে দরজা ভালো করে লাগিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। আমাদের মেসের দরজা আর আমার রুমের দরজার মাঝে আর একটা দরজা আছে। সেই দরজাটাও লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম এবার। রাত তখন ৩.৩০ এর মত বাজে। শুতে না শুতেই মনে হল আমার আমার রুমের দরজায় কেউ নক করছে। এবার আমি প্রচণ্ড অবাক হলাম। এতো রাতে আমার রুমে কে নক করবে? মনে করলাম, পাশের রুমের হিমেল সম্ভবত টয়লেটে যাবার জন্য উঠে নক করেছে। উঠে দরজা খুলে দিলাম। কেউ নেই! রুমের সামনে বারান্দার মতন জায়গাটা পুরোপুরি খালি। আমি অবাক হলেও ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো। কার কাজ জানার চেষ্টা না করে, সামনের রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আবারো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সামনের রুমের লাইট জ্বালানো থাকলে তা আমার রুমে থেকে বোঝা যায়। কিন্তু, শোওয়ার সাথে সাথে খেয়াল করলাম, সামনের রুম থেকে কোনও আলো আসছে না। এবার সত্যি সত্যি ভয় করতে লাগলো। কারন আমার রুমে কারেন্ট আছে। তাই কারেন্ট চলে গেছে এটা ভাবা যায় না। তার উপর সামনের রুমের লাইটটা নতুন। যাই হোক, আমি একটা চারজার লাইট হাতে নিয়ে সামনের রুমের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখে লাইটের সুইচ অফ করা। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি নিজ হাতে সুইচ অন করে আলো জ্বালিয়েছিলাম। লাইটটা অন করলাম। সাথে সাথে কিচেন থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ আসতে লাগলো। কেউ যেনও বটি দিয়ে কিছু কাটছে। আমি ভয়ে ঢোক গিললাম কয়েকটা। আসতে আসতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। রান্নাঘরের সুইচটা অন করে আমি যা দেখলাম, তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দেখি, কয়েকটা পেয়াজ আর মরিচ বটির উপর উঠে সুন্দর ভাবে নিজ থেকেই কাটছে। তারপর কুচি পেয়াজ গুলো নিচে রাখা বাটিতে আপনাআপনি জমা হচ্ছে। আমি একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।
সকালে জ্ঞান ফেরার পর আমাকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করলাম। মেস মেম্বাররা সবাই আমার মাথার চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছিলো জিজ্ঞেস করতেই আমি ওদের পুরো ঘটনা খুলে বললাম। শুনতে শুনতে ওদের মুখ কেমন যেনও গম্ভীর হয়ে গেলো। তারপর এক মেস মেম্বার পারভেজ বলল, “বুয়া খালা আর নেই! সকালে উনার মেয়ে এসেছিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলে গিয়েছে কথাটা!” আমি শোকে আর ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। রাতে যা দেখেছিলাম তা কি বুয়া খালার আত্মা? হয়তবা মারা যাবার পরও অভ্যাসবশত রাতের খাবার তৈরি করার জন্য চলে এসেছিলেন। কিংবা অন্য কিছু! কেই বা বলতে পারে! ঘটনার অংশটুকু আমরা এভাবেই বুঝে নিয়েছিলাম। আপনাদের কি মনে হয়? বাংলা রি রাইট করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন) যিনি পাঠিয়েছেনঃ Istiaque Hossain Ullash (উল্লাস) ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/ihullash

।। কবরস্থানের রহস্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, October 5, 2011 at 10:42pm
ছোটবেলা থেকেই ব্যাখ্যার অতীত বিষয়সমূহ নিয়ে আমার সীমার অতীত আগ্রহ ! এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে আমার কোন ক্লান্তি নেই। তাই রহস্যের খোঁজ পেলে আর দেরি করি না, ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। আর এধরণের ঘটনা সংগ্রহের জন্য নানা ধরণের লোকের সাথেই কথা বলতে হয়। এবারও তেমনি এক লোকের সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ এসে গেল। লোকটির নাম করিম মিয়া। তিনি মৃত মানুষের জন্য কবর খোঁড়া এবং দাফন কাজ সমাধা করেন। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি একাজ করে আসছেন। আর আমি যে ধরণের গল্পের জন্য হয়রান সে ধরণের ঘটনা তার জীবনের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। গত বছর আমার এক আত্মীয়ের লাশ দাফনের সময় তার সাথে পরিচয়। তখন তার মুখে বেশ কিছু কাহিনী শোনা হয়। যদিও তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক কাহিনী সে বলতে চায়নি সেদিন; অনেক জোর করার পরও। আমি আমার মোবাইল নাম্বার তাকে দিয়ে আসি এবং প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে বলি। এর মাঝে কেটে গেছে অনেকদিন। তার কথা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। হঠাৎ গতকাল অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন পেলাম । হুম, সেই লোকের ফোন ! তার চেয়ে বড় কথা তিনি তার ঘটনাটি আমাকে বলতে চান। এই ঘটনা কাউকে না বলে নাকি তিনি শান্তি পাচ্ছেন না। তাছাড়া অন্য কেউ এই ঘটনা বিশ্বাসও করবে না। তো পরদিনই দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। করিম মিয়া বলল যে কবরস্থানে তিনি এ ঘটনার শিকার সেখানেই তিনি এ কাহিনী বলতে চান। আর সময়টাও রাতে হলে তার জন্য ভালো হয়। আমার কোন আপত্তি ছিল না। সময় ঠিক করলাম রাত ১২ টা।
আমি পৌঁছে গেছিলাম সময় মত। কবরস্থানের একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বেশ রাত, আর জায়গাটাও কেমন নির্জন। তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। যদিও সেসবে পাত্তা দিলাম না। একটু পর ধীর পায়ে কারও এগিয়ে আসার শব্দ পেলাম। হ্যাঁ, করিম মিয়াই হবে। ছোটখাটো গড়নের করিম মিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে আসছিল। কাছে এসে বলল, “ভাইসাব, একটু দেরি কইরা ফেললাম।” এই বলে আমাকে নিয়ে কবরস্থানের একটু সামনে বসার মত একটা জায়গায় বসে পড়ল। কোন রকম ভূমিকা ছাড়াই সে তার কাহিনী শুরু করল...... (এখানে করিম মিয়ার ভাষায় আঞ্চলিকতা উহ্য রাখা হল) ___সেদিন ছিল পূর্ণিমা। চাঁদের পূর্ণ আলোয় সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। আমি আর আমার নিত্যদিনের সঙ্গী জহির মিলে একটা কবরে বেড়া লাগানোর কাজ শেষ করে বাসার দিকে রওনা হলাম। কবরস্থানের গেটের কাছে এসে দেখলাম দুইজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পরনে সাদা পাঞ্জাবী, মুখে শুভ্র দাড়ি। তাদের হাতে একটা লাশ কাফনে মুড়িয়ে রাখা। দেখে বুঝলাম কোন বাচ্চার লাশ হবে। তারা বলল বাচ্চার লাশ দাফন করতে হবে। আমি বললাম লাশ দাফনের আগে স্থানীয় হুজুরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। আমি লোক দুজনকে দাঁড়াতে বললাম।হুজুরের বাসা একটু সামনেই। আমি আর জহির হুজুরের বাসার দিকে হাঁটা দিলাম। যাওয়ার সময় দেখেছিলাম লোক দুটি গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে। হুজুরের সাথে কথা হল। তিনি আমাদেরকে তিনি আমাদেরকে কবরস্থানে গিয়ে দাঁড়াতে বললেন। তিনি কিছুক্ষণ পর এসে লোকগুলোর সাথে কথা বলবেন। তো আমরা আবার ফিরে চললাম। রাত তখন আরেকটু গভীর। চারপাশ চাঁদের আলোয় ভিন্ন অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কবরস্থানের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। কিন্তু সেই দুই লোককে কোথাও দেখতে পেলাম না। একটু অবাক হলাম। জহির গেট খুলে কবরস্থানের ভিতর ঢুকল। আমি বাইরেই খুঁজতে লাগলাম তাদের। তাদের তো ভিতরে ঢুকার কথা নয় ! অনেক খুঁজেও না পেয়ে ধীর পায়ে কবরস্থানের ভিতরে ঢুকলাম। সেই সময় জহিরের বিকট চিৎকার শুনলাম। একটা চিৎকারই কানে আসল। দৌড়ে গেলাম চিৎকার লক্ষ্য করে। কিছুদূর যাওয়ার পর চোখের সামনে যে দৃশ্য দেখতে পেলাম, তাতে সর্বাঙ্গে কাঁপন ধরে গেল। সেই লোকদুটির হালকা অবয়ব চোখে পড়ছিল, তারা পেছন দিকে মুখ করে আছে। তাদের হাতে সেই বাচ্চার কাফনে মোড়ান লাশ। লাশের উপরের দিকে কাপড় ছিঁড়ে নেয়া হয়েছে। মাথাটা আলগে ধরে দুজনে মিলে গভীর আগ্রহে লাশটিকে নখ দিয়ে আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত করছে। তাদের মুখ থেকে একধরণের জান্তব এবং উল্লাসিত গোঁ গোঁ জাতীয় আওয়াজ ভেসে আসছিল। একটু পাশেই পড়ে আছে জহিরের নিথর দেহ। প্রাণ আছে কিনা ঠিক বোঝা গেল না। এসব দৃশ্য আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবস্থা এমন, যে অজ্ঞান হতেও ভুলে গেছি !! মনে হচ্ছিল দাঁড়িয়ে থেকেই মৃত্যু ঘটবে আমার ! আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের গভীর আওয়াজে হঠাৎ সেই জন্তুগুলো ঘুরে তাকাল আমার দিকে। সে এক অদ্ভুত, ভয়ংকর চেহারা। ঘাড়ের উপর গোলাকার এক মাংসের স্তূপ। সেখানে চোখ, নাক, ঠোঁটের কোন অস্তিত্ব নেই। ঘাড়ের উপরে মাংসের পিণ্ডটি অনেকটা তরল জাতীয়, কেঁপে কেঁপে উঠছে ! তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল; চোখহীন অথচ ভয়ানক প্রখর সে দৃষ্টি, মুখে সূক্ষ্ম হাসির রেখা। আর সহ্য করা সম্ভব হল না। নিঃশব্দে লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পাই। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন সেই হুজুর। জহিরকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাদেরকে আমি কিছু জানাই নি। শুধু বলেছি ভয়ংকর কিছু ঘটেছিল। হুজুর আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি। এই ঘটনা আর কাউকে বলতে পারিনি। আজ আপনাকে বলে স্বস্তি পেলাম...... ঘটনা শুনতে শুনতে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছিলাম। বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, বড় অদ্ভুত কাহিনী। ঠিক বিশ্বাস হয় না !
করিম মিয়া হেসে উঠে বলল, না হইলেই ভালো। অনেক রাত হইছে, আপনার ফিরা উচিত।
তার এ কথায় সম্বিত ফিরে পেলাম। আসলেই অনেক রাত। উঠে দাঁড়ালাম আমি; ফিরতে হবে। করিম মিয়া, যাই তাহলে। আপনার সাথে পরে একদিন এই বিষয়ে আরও কথা বলব।
উঠে দাঁড়াতেই মোবাইল বেজে উঠল। অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল। কল ধরতেই পরিচিত এক কণ্ঠ বলে উঠল, ভাইজান ! বড় বিপদে পইরা গেছি। আজকে আর আসতে পারলাম না ! ঘটনা হইছে কি......
ঘটনা কি, তা আর শোনা হল না। মোবাইল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমার বিস্ফোরিত চোখ করিম মিয়ার দিকে। করিম মিয়া ধীরে ধীরে মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল। তার ঘাড়ের উপর মাংসের দলা কিলবিল করছে। মুখে অপার্থিব এক ব্যাঙ্গের হাসি, চোখহীন অথচ তীব্র এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে...!

.............................................................................................................................................................................. **গল্প প্রথম পুরুষে লেখা হইছে। তাই বলে গল্পের আমি আর এই আমি অবশ্যই এক না !!

গল্পের লেখকঃ Junayed Rahimin ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/J.Rahimin

।। আধিয়ার - প্রথম খন্ড ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, October 6, 2011 at 10:30pm
বিয়ের মাত্র এক মাস হয়েছে। শ্বশুড় সাহেব অসুস্থ শুনে বৌকে নিয়ে দেখতে গিয়েই বিপদ হল। নতুন জামাইকে আলুর বস্তা ধরিয়ে দিয়ে কেউ কোল্ড স্টোরেজে পাঠাবে এটা আশা করিনি। তারওপর কলেজ পাস জামাই আমি। এলাকায় একটা সুনাম আছে আমার- সেই আমাকেই কিনা আমার নতুন শ্বশুড় আব্বা তার এই বছরের আলু গুলো বস্তায় বেধে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “বাজান, শরীলটা ভাল ঠেকতেছে না। আলুর বস্তা গুলা একটু ঠাকুরগাঁও গিয়া কোল্ড স্টোরেজে রাইখা আসো। ঘরে তো ছেলে পেলে নাই। তুমিই যখন আসছো – একটু কষ্ট কইরা আলু গুলা দিয়াসো। আমার নাম বললেই হবে। রিসিটে নাম্বার দিয়া দিবে। রিসিট নিয়া আসবা সাবধানে। বস্তা প্রতি দুইশো পনেরো টাকা লাগবে। টেরাক দিয়া দিছি। নিয়া পৌছায়া দিবে।” বোগল ঘ্যাস ঘ্যাস করে চুলকাতে চুলকাতে বললেন কথাগুলো। হাত পাখার ডাট দিয়ে পিঠে চুলকালেন, ঘামাচি হয়েছে তার।
আমি কোনো মতে মুখে হাসি টেনে বললাম, “অবশ্যই আব্বা। কোনো চিন্তা করবেন না। যাবো আর আসবো।”
“রাস্তা খারাপ। যাবো আর আইবো বললে হবে না। যাইতে যাইতে সন্ধ্যা হইয়া যায়। স্টোরের মালিক আমার বদনু মানুষ। সাত্তার আলী। সে তোমার আর ড্রাইভারের থাকার ব্যবস্থা কইরা দিবে সেখানে। পরের দিন টেরাক নিয়া চলে আসবা।”
“জী আচ্ছা আব্বা।” ঘাড় কাত করে বললাম। আমার স্ত্রী পারুল পাংশু মুখে খাটের স্ট্যান্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আব্বাকে বাধা দেয়ার সাহস নেই তার। তবে আমার শ্বাশুড়ি আম্মা একটু চেষ্টা করলেন কথা বলার, “ ইয়ে, নতুন জামাই মানুষ। শিক্ষিত পোলা। তারে দিয়া এইসব কাজে না পাঠাইলে হয় না?”
ধমকে উঠলেন আব্বা, “তুমি চুপ করো। মহিলা মানুষ- বুদ্ধি শুদ্ধি তোমার হাটুর নিচে। শিক্ষিত পোলা দেখেই তো হিসাব পাতির কাজ দিয়া পাঠাইতেছি। অন্য কাউরে দিলে তো সব উল্টায় পাল্টায় দিবো!”
আমি জোর করে হাসি আনলাম মুখে, “জী আব্বা ঠিক বলেছেন। হিসাব কিতাবের ব্যপার। যে কেউ কি আর বুঝবে? আমার যাওয়াটাই ভাল হবে।”
“উত্তম বলছো জামাই। এই জন্যই তোমারে আমার এত পছন্দ। ভাল কথা, আমার বন্ধু সাত্তার আলীরে আমি মোবাইল ফোনে সব বইলা রাখছি। তুমি খালি নিয়া যাবা বস্তাগুলা। বাকি কাজ তার। সে কিন্তু আমার মত গেরস্থ না। খুব শিক্ষিত মানুষ। আমাদের আমলের বি.এ. পাস। বিরাট বড়লোক। আদব লেহাজের সাথে চলবা। সে যেন মন্দ কথা না বলে তোমারে নিয়া।” আব্বা বোগল যে হারে চুলকাচ্ছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে পাঞ্জাবীর বোগল আজকে ছিঁড়েই উঠবেন। নতুন খদ্দরের পাঞ্জাবী কিনে এনেছিলাম তার জন্য। কিন্তু ওনার হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে পাঞ্জাবীটা কাপড়ের না, বিচ্ছুটি পাতার পাঞ্জাবী।
“জী আব্বা।” আমি মাথা কাত করে উঠে পরছিলাম। উনি বললেন, “জামাই, তোমার পছন্দ বড় ভাল।”
“জী আব্বা?” বুঝতে না পেরে ফিরে তাকালাম।
“এই যে পাঞ্জাবীটা আনছো- খুব ভাল পাঞ্জাবী। কিন্তু মাড়ের গন্ধটা একদম সহ্য করবার পারিনা। তাই আতর মাখছি। আতর মাখলেই ঈদ ঈদ লাগে।” দেখলাম একটা শিশি থেকে আতর নিয়ে পাঞ্জাবীতে লাগাচ্ছেন। এই নিয়ে তেরো চৌদ্দবার আতর মাখলেন, “মাখবা নাকি একটু?”
একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “ না আব্বা। আপনি মাখেন।”
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

আমার শ্বশুড় বাড়ি হল ময়দানদীঘি নামের একটা জায়গায়, পঞ্চগড় জেলার পূর্ব দিকে। এখানে প্রায় সব পরিবারই কৃষি নির্ভর পরিবার। তার মধ্যে আমার শ্বশুড় শমসের মিয়া হলেন বিশাল ধনী কৃষক। মাইলের পর মেইল জমি তার। তার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করেছি এক মাস হল। শ্বশুড় বাড়ি আসতে না আসতেই আলুর বস্তা নিয়ে ঠাকুরগাঁও যেতে হবে- ভাবিনি।
এখান থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের দূরত্ব দুই ঘন্টার রাস্তা। তবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা খারাপ বলে সময়টা আরো বেশি নেয়। আলুর বস্তা ট্রাকে নিয়ে আরো আগে বের হওয়া যেত। কিন্তু বের হতে হতে বিকেল তিনটা বেজে গেল আমার। বেশ অসন্তুষ্ট মনে ঠাকুরগাঁও যাচ্ছি। ড্রাইভার মতিন পাশে। গান ধরেছে হেড়ে গলায়- “আমার লাইন হইয়া যায় আঁকা বাঁকা ভাল না হাতের লেখা..........”
লাইন আঁকা বাঁকার সঙ্গে রাস্তার সম্পর্ক কোথায় বুঝলাম না। সে একবার ডানে যায়, একবার বামে। ট্রাক জমির মধ্যে নামিয়ে দেবে যেন! আমি প্রমাদ গুণছি মনে মনে। ঠাকুরগাঁও আদৌ পৌছাবো তো? নাকি ট্রাক উল্টে জমির মধ্যে পরবো?
“দুলাবাই? মুখের কন্ডিশন এরুম ক্যা?” মতিন দাঁত বের করে হাসল।
“তুমি ভাল করে ট্রাক চালাও। সন্ধ্যার আগে আগে ঠাকুরগাঁও যেতে হবে।” থম থমে গলায় বললাম।
“রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ দুলাবাই। যাতি যাতি রাত্তির নামিবি।” গ্রামের কাঁচা রাস্তা দেখিয়ে বলল ও।
“এটা তো আরো ভালো কথা!” বিড়বিড় করলাম। হাতে একটা চিরকুটে কোল্ড স্টোরেজের ঠিকানা দেয়া- “হিমাদ্র কোল্ড স্টোরেজ, বাঘাই পট্টি, ঠাকুরগাঁও।”
কতক্ষণে যে পৌছাবো......
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

হাত ঘড়িতে সাড়ে ন’টা বাজে। হিমাদ্র কোল্ড স্টোরেজে এসে আলুর বস্তাগুলো নামিয়ে তাতে নাম্বার দিয়ে স্টোরে জমা দিতে দিতে দেরি হয়ে গেল। কোল্ড স্টোরেজের মালিক সাত্তার আলী অনেক সাহায্য করলেন এ সময়। নিজের লোক দিয়ে বস্তা গুলো আনলোডিং এর কাজ করে দিলেন। ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি। মাথা ভর্তি পাঁকা চুল। মুখে পাতলা গোঁফ। চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা পরে থাকেন সারাক্ষান। হঠাৎ করে দেখলে ভার্সিটির প্রোফেসর বলে মনে হয়। খুব ফর্সা আর শক্ত সামর্থ একটা চেহারা। দেখেই বোঝা যৌবন কালে অসম্ভব সুদর্শন ছিলেন। নতুন জামাই বলে খুব খাতির যত্ন করলেন। মতিনকে আবার ট্রাক নিয়ে উত্তরে যেতে হবে এখান থেকে। আব্বা কোনো কাজ দিয়ে দিয়েছেন ওকে। কোল্ড স্টোরেজের লোকদের সাথে আগেই খেয়ে নিল। সাত্তার সাহেব চাচ্ছিলেন মতিন ওনার বাসায় খেয়ে যাক এক বেলা, কিন্তু ওর নাকি তাড়া আছে। জরুরী কাজ দিয়েছেন শ্বশুড় আব্বা। মালপত্র নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।
সাত্তার আলী আমাকে নিয়ে কোল্ড স্টোরেজের পেছনের দিকে ওনার বিশাল টিনের বাড়িতে এলেন। হিমাদ্র কোল্ড স্টোরেজ আর টিনের বাড়িটা একেবারে সামনা সামনি। কোল্ড স্টোরেজের বিল্ডিংটা পাঁচ তলা বিল্ডিং এর সমান উঁচু, অনেক বড়। পেছনে জেনারেটর হাউস আর কুলার মেশিনের ঘর। রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোঁকার শব্দ ছাপিয়ে মেশিনের শব্দ রাতের বাতাস ভারী করে রেখেছে।
আমি টিনের বাড়িটার একটা ঘরে বসে আছি। বাংলা ঘরের মত অনেকটা। বাড়িটা দেখলেই বোঝা যায় খুব শখ করে বানিয়েছেন সাত্তার আলী। নাস্তা দিয়েছে। একটু পর রাতের খাবার দেবে। আমি বসে বসে গল্প করছি সাত্তার আলীর সাথে।
“চাচা, এত টাকার কারবার, কিন্তু বাড়িটা পাঁকা না করে টিন শেডের করলেন কেন?”
“তোমার চাচী আম্মার ইচ্ছা। উনার ভয় একদিন ভূমিকম্প হবে আর ছাদ ভেঙ্গে পরবে মাথার উপর, টিন শেডের হলে তো আর তেমন কিছু হবে না যদি ভেঙ্গে পরে- তাই।” হাসতে লাগলেন।
চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিলাম। ওপরে গাঢ় স্বর ভাসছে। গরুর দুধ দিয়ে বানানো। চুমুক দিতেই শরীরটা ঝরঝরে লাগা শুরু করল।
“চাচী আম্মা কি ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ? নাকি বাড়ি দূরে?”
“সোঁনাগাজী। দূর আছে। বছরে একবার যায় ঘুরে আসতে। নয়তো সারা বছরে বাড়ির কাজ নিয়ে পরে থাকে।” দরজা দিয়ে বাহিরে রান্না ঘরের দিকে তাকালেন, চাচী সেখানে বসে রান্না করছেন লাকড়ির চুলায়। গলা উঁচিয়ে বললেন, “কই? তাড়াতাড়ি করো। জামাই মানুষ- কতক্ষণ না খাওয়ায় রাখবা?”
শুনতে পেলাম চাচী বলছেন, “এই তো হয়ে গেছে। তোমরা গল্প করো। আমি ঠিক ঠাক করে নেই।” কড়াইয়ের তেলে মাছ ভাজার শব্দ হচ্ছে, বাতাস মোঁ মোঁ করছে সেই ঘ্রাণে। আমার পেটের ক্ষিদেটা আরো চাগিয়ে উঠল। সেটাকে ঢাকতে সাত্তার সাহেবের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম। ভদ্রলোক বেশ বাঁচাল স্বভাবের মানুষ, প্রচুর কথা বলেন। সারাক্ষণ চেষ্টা করেন বইয়ের মত শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে, তবে মাঝে মাঝে আঞ্চলিকতা এসে পরে। কথা বলে জানা গেল ভদ্রলোকের তিন মেয়ে, কোনো ছেলে নেই। তিন মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। দুই জন থাকে দুবাই স্বামী বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে, আরেক জন থাকে পঞ্চগড় শহরে। এই বিশাল বাড়িতে মানুষ বলতে এখন সাত্তার সাহেব, তার স্ত্রী জয়গুণ নাহার আর কামলা মোতালেব থাকে। মোতালেব রাত কানা মানুষ। তাই সন্ধ্যা হতে না হতেই খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। সাত্তার সাহেবের ধারণা মোতালেব আসলে রাত কানা না, কাজ যাতে কম করতে হয় তাই রাত কানার ভান করে থাকে। কারণ এই রাত কানা মোতালেবই গত বছর রাতের বেলা একটা সিঁদেল চোরকে ধরে গামছা দিয়ে বেধে রেখেছিল! সেই থেকেই গ্রামের লোকজন মোতালেবকে খুব তেয়াজ করে চলে। তাদের ধারণা মোতালেবের গায়েবি শক্তি আছে। রাতে না দেখতে পেলেও দৈব শক্তি বলে সব দেখতে পায়। তবে তার নাকি একটা বদ অভ্যাস আছে, ছোট থেকেই লুকিয়ে কেরোসিন তেল চুরি করে খায়। এ বাড়ির কোনো হারিকেনে তাই তেল থাকে না। মোতালেবকে দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সে এখন ঘুমাচ্ছে। সন্ধ্যার সময় তাই কোল্ড স্টোরেজের এক লোক দিয়ে বাজার করিয়ে এনেছেন সাত্তার সাহেব।
ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমে ঘামছি দর দর করে। মাথার ওপর হলুদ একটা বাতি জ্বলছে আর একটা ফ্যান ঘটর ঘটর করে ঘুরছে। বেশ জোরেই ঘুরছে- কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার গায়ে বাতাস লাগছে না! আমি হাত পাখা দিয়ে নিজেকে বাতাস করছি। সামনে সাত্তার সাহেব না থাকলে শার্টের দু একটা বোতাম খুলে বুকে পেটে বাতাস দেয়া যেত। কিন্তু ওনার সামনে তো আর তা করা সম্ভব না। নতুন জামাই বলে কথা।
সাত্তার সাহেবের বোধ হয় এত গরম লাগছে না। অনর্গল কথা বলে যাচ্ছেন, “তা জামাই, শুনলাম তুমি নাকি লেখা লেখি করো? টুকটাক বই পত্রও বের হয়েছে। সত্য নাকি?”
নড়ে চড়ে বসলাম। এই তথ্যটা পুরোপুরি ঠিক না। লেখা লেখি করার অভ্যাস আছে আমার ঠিকই। তবে হাজার চেষ্টা করেও বই বের করতে পারিনি। প্রকাশকদের কাছে পান্ডুলিপি নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে জুতার শুঁকতলা ক্ষয়ে গেছে- কিন্তু লেখা প্রেসের মুখ আর দেখেনি। লেখার হাত নাকি আমার যাচ্ছে তাই। ভাষা জ্ঞান ভাল না। তবে এক প্রকাশক গোপনে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, “লেখা ছাপাইতে পারি- তয় একতা কথা, আমার কোম্পানির রাতের কাজের জন্য কিছু চটি বই লেখে দিতে হইবো। চটি বই কি জিনিস জানো তো?” হলুদ দাঁত বের করে হেহ হেহ করে হেসেছিল। ঢোক গিলে শুকনো মুখে চলে এসেছিলাম সেদিন। তখনই লেখা ছাপানোর চেষ্টার ইস্তিফা দিয়ে দিয়েছি। আমাকে দিয়ে লেখা লেখি সম্ভব না।
কিন্তু সাত্তার সাহেবকে তো আর এত কিছু বলা সম্ভব না। নিশ্চই আমার শ্বশুড় আব্বা বড় মুখ করে কথা গুলো বলেছেন। এখন যদি অন্য কিছু বলি তাতে শ্বশুর আব্বা কষ্ট পাবেন শুনলে। তাই ইতস্তত গলায় বললাম, “এই টুকি টাকি আর কি। তেমন বেশি কিছু না।”
“খুব ভালো অভ্যাস। ছাড়বা না, সবাই পারে না এইসব জিনিস।” বেশ ভরাট গলায় বললেন, “এক কালে আমিও চেষ্টা করেছিলাম লেখার, পারিনি।”
আমি মাথা ঝাঁকালাম কেবল, জোর করে হাসলাম। বাড়িটার মেঝেটাই পাঁকা। দেয়াল, ছাদ- সব টিনের। খোলা জানালা দিয়ে হঠাৎ করে বেশ জোরে সোরে বাতাস আসা শুরু করেছে। উল্টো পাল্টা বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে। বাহিরে তাকালেন গা ছম ছম করে ওঠে। কোল্ড স্টোরেজ আর এই বাড়িটা ছাড়া এই এলাকায় দেড় দুই কিলোমিটারেও কোনো বাড়ি ঘর নেই। চারপাশে ভূট্টা আর পাটের বিছানো ক্ষেত। এগুলোর মালিক নাকি সাত্তার সাহেব। অন্ধকারে বাড়ির সীমানার বাহিরের ক্ষেত গুলোর দিকে তাকালে কেমন অদ্ভূত লাগে, জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম দমকা ঝড়ো বাতাসে ভূট্টা আর পাট ক্ষেতের লম্বা গাছ গুলো ধীরে ধীরে দুলছে, ঢেউ বয়ে যাচ্ছে যেন। বাহিরে চাঁদ নেই, কৃষ্ণপক্ষের রাত চলছে।
সাত্তার সাহেব খোলা দরজা দিয়ে বাহিরের আকাশটা দেখলেন এক নজর, “জামাই, বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। তোমার চাচী একা একা পাক ঘরে ভয় পাবে- আসো, বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসি।” উনি একটা চেয়ার নিয়ে বাহিরে বারান্দায় এলেন। আমিও একটা চেয়ার উঠিয়ে তাঁর পিছু পিছু এলাম।
এখানে বাতাস অনেক। ঘরের ভেতরের মত গুমোট ভাবটা নেই। গরম লাগছে না। ভালই লাগছে। বাতাসের ছোটা ছুটির মাঝে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি হঠাৎ হঠাৎ হায়ে এসে পরছে।
“তুমি একটু বসো। কারেন্ট চলে যেতে পারে। হারিকেন জ্বালিয়ে আনি। মোতালেবের অত্যাচারে তো কেরোসিন লুকিয়ে রাখতে হয়।”
দেখলাম ভেতরের ঘরের আলমারি খুলে কেরোসিনের বোতল বের করলেন। দেয়ালে হারিকেন ঝোলানো ছিল- সেটা নামিয়ে আগে কেরোসিন ভরলেন। তারপর হারিকেন জ্বালালেন। আমি চুপচাপ বসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। উঠানের অন্য প্রান্তে রান্নাঘর। খোলা রান্না ঘর, লাকড়ির চুলাতে রান্না করছেন চাচী। তার ওপাসে কলতলা, যদিও বাড়িতে মোটর রয়েছে। তারপরো টিউবয়েলের ব্যবস্থা আছে।
চারপাশে নিচু জমিতে ভূট্টা আর পাট ক্ষেত। বাড়ি আর কোল্ড স্টোরেজটা জমির লেভেলে থেকে সামান্য উঁচুতে। যত দূর চোখ যায় ভূট্টা আর পাটের বিছানো ক্ষেত। অন্ধকারের সমুদ্র যেন। উঠানের এক পাশে কয়েকটা আমগাছ আর পেয়ারা গাছ। বাতাসের চোটে এদিক সেদিক দুলছে যেন মাতাল হয়ে। আকাশে থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
সাত্তার সাহেব হারিকেন জ্বালিয়ে আমার সামনে এসে বসার সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেল।
“বললাম না কারেন্ট যাবে! এই পল্লি বিদ্যুতের লাইন এত খারাপ!” বিরক্তি মেশানো গলায় বললেন তিনি। ফিরে রান্না ঘরের দিকে চেঁচিয়ে বললেন, “জয়গুণ, ভয় পেলে ডাল দিও। আমরা বারান্দাতেই আছি।”
রান্না ঘরে এখন চেরাগ জ্বালিয়েছেন জয়গুণ নাহার। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ ছাপিয়ে চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, “ভয়ের কি আছে? বয়স কি কম হয়েছে নাকি! এই বয়সে আবার কিসের ভয়?”
“ভয় না পেলেই ভাল।” চেয়ার টেনে বসলেন। হারিকেনের হলদে আলোয় তাঁর দিকে তাকালাম, “আমি এসে আসলে আপনাদের অনেক ঝামেলায় ফেলে দিলাম। চাচীর অনেক কষ্ট হচ্ছে। সাহায্য করারও কেউ নেই দেখি। একা ওনাকে এত সব ঝামেলায় না ফেললেই ভাল হত।” একটু অপ্রস্তুত গলায় বললাম।
হা হা করে উদার গলায় হাসলেন সাত্তার সাহেব, “আরে রাখো তো তোমার ভদ্রতা! নতুন জামাই তুমি। শমসের আলীর জামাই মানে আমারও জামাই। তোমার জন্য আরো অনেক কিছু করা উচিত ছিল। তাহলে ভাল লাগত নিজের কাছে। এগুলো তো সামান্য।”
আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, “কোল্ড স্টোরেজে জেনারেটর আছে এখানে আনলেন না কেন?”
“ছিল। কিন্তু লাইনে সমস্যা করছে কয়দিন ধরে।”
আমি কিছু বললাম না আর। একা দুজন বয়স্ক মানুষ আমার মেহেমানদারী করছেন- ভেবেই কেমন যেন খারাপ লাগছে। অন্ধকার জমি গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম এক দৃষ্টিতে।
“একে বারে বিরান জায়গায় বাড়ি করেছেন। থাকেন কিভাবে?” হঠাৎ প্রশ্ন করলাম সাত্তার সাহেবকে।
চশমাটা খুলে নাকের দুপাশের গভীর দাগ গুলোয় আঙ্গুল বোলালেন, “অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি আগে থেকেই ঘর কুনো স্বভাবের মানুষ ছিলাম। একা থাকতে ভাল লাগত। অবশ্য আগে ঘরটা এত খালি ছিল না। মেয়ে গুলো থাকতে বাড়িটা ভরা থাকত। বিয়ের পর চলে যাওয়ায় এখন বাড়িটা খালি হয়ে গেছে। জমি গুলো যে দেখছো- রাতের বেলা দেখা যাচ্ছে না, ওখানে আধিয়ারদের বাড়ি আছে ছাড়া ছাড়া ভাবে। আমার জমিতে থেকে চাষ করে খায়। তুমি তো এই এলাকার ছেলে- আধিয়ার মানে বোঝো তো?”
“জানি, বর্গা চাষী।”
সন্তুষ্টির ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালেন, “হ্যা। ওদের বাড়ি গুলো জমির মধ্যে, তাই এখন বোঝা যাচ্ছে না। দিনের বেলা দেখা যায়। তাই একেবারে যে বিরান জায়গা- তা বলা যাবে না।” “কবে থেকে আছেন এখানে? মানে আপনার পৈতৃক ভিটা কি এখানেই ছিল?”
“নাহ। শহরের দিকে ছিল। এখানে এসেছি তো কোল্ড স্টোরেজ দেয়ার পর। একটু নিরিবিলি জায়গা পছন্দ আমার। তোমার চাচীও এ রকম জায়গায় থাকতে চেয়েছিল- তাই চলে এলাম বাড়ি করে।”
বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বারান্দায় বসে থাকায় গায়ে বৃষ্টির ছিটে এসে পরছে। ভালই লাগছে।গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি আসায় হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
সাত্তার সাহেব চেয়ার টেনে সরে বসলেন, “আমার আবার একটুতেই ঠান্ডা লাগে, ভিজি না তাই।”
আমি হাসলাম কেবল। কিছু বললাম না। টিনের চালে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে । শব্দটা শুনতে খুব ভালো লাগছে। একটানা বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ। তাকিয়ে দেখলাম সাত্তার সাহেব এক দৃষ্টিতে জমি গুলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। চোখে ভূলও দেখে থাকতে পারি- মনে হল তার মুখে অদ্ভূত একটা যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠেছে। অন্ধকার জমির দিকে স্থির চোখে চেয়ে আছেন।
ভাবলাম জিজ্ঞেস করবো- কিন্তু তার আগেই আস্তে আস্তে বললেন, “তুমি তো লেখা লেখি করো জামাই? জীবনে ব্যাখ্যাতীত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখেছো?”
প্রশ্নটা কোন দিক থেকে করলেন বুঝতে পারলাম না, “ভূতের গল্প? মানে ভূতুড়ে ঘটনা? নাহ। আমি এমনিতেই ভীতু স্বভাবের মানুষ। ভূতুড়ে কিছু দেখলে জানে পানি থাকবে না আমার।”
“আমি দেখেছি।” একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকালেন।
“কি রকম?” সামান্য কৌতুহলি গলায় বললাম।
“আমি প্রায় ত্রিশ বছর আগে এখানে আমার কোল্ড স্টোরেজটা দিয়েছিলাম। তখনকার ঘটনা। আমার জমিতে আধিয়ার তখন অল্প। দুই তিনটা পরিবার হবে। আর আমার বড় মেয়ের বয়স তখন তিন কি চার। ছোট দুটো তখনো হয়নি। ঐ দিকে- ” হাত তুলে অন্ধকার জমির দিকে দেখালেন- একটু আগে সে দিকেই তাকিয়েছিলেন। “ওখানে একটা আধিয়ারের বাড়ি ছিল। মাটির বাড়ি। এখন নেই। বাড়িটা যার ছিল, মানে আধিয়ারটার নাম হল তাজল শেখ। পঞ্চগড় থেকে এসেছিল। শক্ত সামর্থ জোয়ান মানুষ। ওর বৌটা ছিল ঠিক ওর অর্ধেক বয়সের। সুলতানা। তের কি চোদ্দ হবে বয়স। বিয়ে করে এখানেই প্রথম এনে তুলেছিল। শ্যামলা রঙের হালকা পাতলা মেয়েটা। একা থাকতে পারতো না, দৌড় দিয়ে তোমার চাচীর কাছে চলে আসতো যখন তখন। এটা সেটা করে দিত। ভীশণ ভাল একটা মেয়ে। দেখতেও খুব সুন্দর ছিল। বয়স কম বলে সারাক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতো। সেজে গুজে থাকতে খুব পছন্দ করত। তাজল প্রায়ই নানা রকম চুড়ি, লেস ফিতা, কাজল কিনে দিত মেয়েটাকে। আমার বড় মেয়েটা তখন কথা বলতে পারে বেশ ভাল মত, ওটাকে নিয়ে কোথায় কোথায় যে ঘুরে বেড়াতো সে-ই জানে। আমিও কিছু বলতাম না। ছোট মানুষ- ছটফটে স্বভাবের তো হবেই। আমার কোল্ড স্টোরেজে প্রায়ই গিয়ে হাজির হত- বলত ঠান্ডা কুয়াশার মত স্টোর রুমে যেতে নাকি খুব মজা লাগে। আমিও কিছু বলতাম না, ছেলে মানুষ, নতুন বিয়ে হয়েছে – বাচ্চা স্বভাবটা এত তাড়াতাড়ি যায় নাকি। তাই নিষেধ করতাম না। বরং চারপাশে এ রকম ছটফটে স্বভাবের কাউকে পেয়ে ভালই লাগত, একা নির্জন এই জায়গাটাকে সুলতানা মাতিয়ে রেখেছিল বলতে পারো।
তাজল শেখ সারা দিন জমিতে চাষ বাষ নিয়ে পরে থাওক্ত, সুলতানা থাকত তোমার চাচীর সঙ্গে। তাজল মাটি কুপিয়ে সারাদিন খেটে যেত। বেশ ভাল একটা ছেলে – নামায কালামও পড়তো নিয়মিত। কত বার দেখেছি ভর রদ্দুরে জমিতে গামছা বিছিয়ে নামায পড়ছে। ওদের দুজনকে দেখলে এমনিতেই কেন জানি মনটা ভাল হয়ে যেত। ভাল মানুষ গুলোর ভেতরে বোধ হয় আল্লাহ নিজে কিছু দিয়ে দিয়েছেন। দেখলেই মন ভাল হয়ে যায় সে জন্য।”
কিন্তু ভাল মানুষ বেশি দিন থাকে না আমাদের মাঝে। দুনিয়ার বড় অদ্ভূত নিয়ম! তাজল একদিন জমি কোপাতে গিয়ে মাটির নিচে বাঁকা ভাবে বসে থাকা একটা মূর্তি আবিষ্কার করে। মূর্তিটা কালো রঙের শিবের মূর্তি। গলায় সাপ প্যাঁচানো। কিন্তু কিছু পার্থক্য রয়েছে। শিবের মূর্তিতে কোনো বাড়তি হাত ছিল না, এটায় আছে। তিন জোড়া হাত। সব থেকে বড় পার্থক্যটা হল এই শিবের মূর্তি কোমড়ের নিচ থেকে মাছের মত আঁশ আর পায়ের জায়গায় ঘোড়ার খুড়ের মত। অনেকটা গ্রিক পুরাণের কাহিনীর মত। আদৌ সেটা শিবের মূর্তি কিনা বোঝা গেল না। দৈর্ঘে চার ফুটের মত। তাজলের কোঁদালের আঘাতে মূর্তিটার কাঁধের দিকে বিশাল একটা জায়গা কেটে গেছে।
ঘটনাটা ঘটেছিল ভর দুপুরে। জমিতে কয়েকজন মিলে কাজ করার সময় হয়েছে। মাটি কোপানোর সময় শক্ত কিছুতে লাগতেই তাজল বাকিদের ডেকে মাটি খুঁড়তে শুরু করে। খুঁড়তে গিয়ে মূর্তি বের হয়। যারা যারা ওখানে ছিল- সবাই দেখেছে কোঁদালের কোপে মূর্তিটার কাঁধের দিক থেকে জীবন্ত প্রাণির মত ফিনকি দিয়ে রক্ত পরছে, কালচে রক্ত!
আমি অবশ্য যখন যাই তখন রক্ত টক্ত দেখিনি, তবে কাঁধের কাছটা কেটে মাংস বের হয়ে থাকার মত ফাঁক হয়েছিল তখনো। ব্যপারটা জানা জানি হতেই আশে পাশের মন্দির গুলো থেকে পুরোহিতরা চলে আসে দেখতে। একটা শিব মন্দির থেকে কয়েক জন ঠাকুর এসে মূর্তিটাকে গোসল করিয়ে নিয়ে চলে যায়। আমি বাধা দেইনি। কারো দেবতা আটকে রাখার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। যদিও আমি আমার জমিতে দেবতার মূর্তি থাকার পেছনে কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। কিভাবে এলো পুরোহিতরাও জানে না। কেবল অনুমান করলেন হয়ত বহু বছর পূর্বে এখানে কোনো মন্দির জাতীয় কিছু ছিল, সেখান থেকেই এসেছে এটা। এর থেকে ভাল কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া গেল না
যা হোক। কাহিনী এর পর থেকে ঘটতে সুরু করে। যদিও বেশ ছোট ঘটনা।
তাজলের কাঁধে দু দিন পরেই আপনা আপনি বিশাল একটা কাটা ক্ষত সৃষ্টি হয়। মূর্তিটার কাঁধে যে রকম ঠিক সে রকম, কোনো কিছু দিয়ে কাটেনি। এমনি এমনি হয়ে গেল! দিন রাত চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পরে। আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার সেলাই করতে গিয়ে সুঁই ভেঙ্গে ফেলতে লাগলেন বারবার। অবাক হয়ে বললেন, “আশ্চর্য! এনার চামড়া মানুষের নাকি লোহার? ঢুকছেই না সূঁচ!” আমি নিজেও টিপে দেখলাম- লোহার মত হয়ে আছে কাটা জায়গাটার চারপাশের চামড়া! আর বরফের মত ঠান্ডা! ভীষণ অবাক হলাম! ক্ষত স্থান গরম হয় বলে জানতাম, এটা এমন কেন?
সেলাই করা সম্ভব হল না। ডাক্তার সাহেব রক্ত পরা থামাতে আয়োডিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। বাড়ি নিয়ে এলাম। তবুও রক্ত থামে না। এদিকে সুলতানা তো কান্না কাটি করে ঘর ভাসিয়ে দিচ্ছে তাজলের রক্ত দেখে। তোমার চাচী আর আমি মিলেও ধরে রাখতে পারছি না মেয়েটাকে।
তাজল খুবই শক্ত সামর্থ ছেলে। টানা দশ দিন এভাবে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পড়ল, তবু ছেলেটা দিব্যি চলে ফিরে বেরাচ্ছে। এর মাঝেই একদিন আমাকে একা ডেকে জানাল তার কোমরের নিচ থেকে পঁচন ধরেছে। কেমন মাছের মত আঁশে ঢেকে যাচ্ছে। আমাকে দেখালো পা আর ঊরুর অবস্থা। আমি তো দেখে থ হয়ে গেলাম। ইলিশ মাছের মত জ্বলজ্বলে রুপালী আঁশে ঢেকে গেছে কোমর থেকে পা পর্যন্ত। পায়ের আঙ্গুল গুলো পঁচে যাচ্ছে....... আমি মহা দুশ্চিন্তায় পরে গেলাম।
তাজল মাথা চুলকে বলল, “সাত্তার ভাই, মোর মনে হয় ওই মূর্তি কুপাইয়া এই ব্যারাম ধরাইছ। নাইলে এতদিন তো ভালা আছিলাম।”
“কি করতে বলো তাহলে আমাকে?”
“গিয়া মূর্তিটার কাছে মাফ চাইয়া আসিম? ঠাকুরক কহিম মন্ত্র পড়ে পূজা দেয়ে দেক?”
“এরকম করে যদি লাভ হয়- করে দেখতে পারো। আমিও গেলাম তোমার সাথে।”
সেদিন আমি আর তাজল সন্ধ্যার দিকে রওনা হলাম পূর্ব দিকের শিব মন্দিরে। দশ মাইলের বেশি পথ। তাজল পায়ের পঁচন ব্যাথায় হাটতেই পারছে না। তবু দাঁতে দাঁত চেপে হেটে যাচ্ছে।
আমরা যতক্ষণে পৌছালাম- রাত হয়ে গেছে। গিয়ে দেখি নতুন কাহিনী- মন্দির গত পরশু রাতে আপনা আপনি ভেঙ্গে পরেছে! ভেতরের সব মূর্তি মাটির নিচে চলে গেছে! একটা মূর্তিও নেই! আমাদের সেই মূর্তিটাও না।
কি আর করা, তবুও পুরোহিত দিয়ে ছোট একটা পূজা দেয়ালাম। চলে এলাম তাজলকে নিয়ে। কিন্তু আসার বেলা তাজল হাটতেই পারলো না, ওর পায়ের আঙ্গুল পঁচে খুব খারাপ অবস্থা, গোড়ালির দিকটা কাঠের মত শক্ত হয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন খুড়ের মত অবস্থা.......ভীষণ জ্বর তারওপর। শরীর পুড়ে যাচ্ছে। আমি উপায় না দেখে একটা মোষের গাড়ি ভাড়া করলাম।
ফেরার পথে সারা রাত জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকতে লাগল তাজল শেখ। প্রায় সব কথাই অর্থহীন, বিজাতীয় ভাষায় ও কি সব বলল। মনে হল কথাগুলো তাজল না, অনয কেউ বলছে। একতা কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল- বারবার বলছিল বলে বুঝতে পেরেছিলাম কথাটা-
“মোক ঠান্ডায় নিয়ে যা, মোক খুব গরম লাগেছে। মুই আলো বাতাসত রহিবা পারিমনে......” তাজল শেখ মারা যায় এক মাসের মাথায়। মৃত্যুর পূর্বে ওর দুপা পঁচে গিয়ে খুড়ের মত হয়ে গিয়েছিল। পিঠের মেরুদন্ডের দিকে টিউমারের মত হয়ে দুই জোড়া হাতের মত তৈরি হয়েছিল- কিন্তু খুব ছোট। সারাক্ষণ মাটির বাড়ির মেঝেতে শুয়ে থাকতো। আর বিড়বিড় করে বলত ওকে বরফ দিয়ে চেপে ধরে রাখতে। কয়েকবার বলেছিল মাটি খুড়ে তাকে মাটি দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢেকে দিতে। কোনোটাই করা হয়নি। সুলতানা ওর ওসুখ দেখে পাগলের মত হয়ে যায়। তাজল মারা যাওয়ার দিন রাতে নাকি একটা কালো সাপ এসে ওর গলায় পেঁচিয়ে বসেছিল। মারা যায় তারপর। সুলতানা তাজলের মৃত্যুর পাগল হয়ে গিয়েছিল।”
ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফ্বলল্বন সাত্তার সাহেব। আমি চুপচাপ তাঁর কথাগুলো শুনছিলাম, উনি থামতেই বললাম, “এখানেই শেষ? তাজল আসলে ঐ মূর্তিটার রূপ ধরে মারা গিয়েছিল- তাই না? এরপর? এরপর আর কিছু হয়নি?”
হাসলেন বিচিত্র ভাবে, কাঁশলেন খুক খুক করে, “এর পরেই তো আসল কাহিনীর শুরু। বললাম না ব্যাখ্যাতীত ঘটনা? তাজলের মৃত্যুর পরেই আসল ঘটনা শুরু হয়েছিল। যেটার কোনো ব্যাখ্যা আমি আজ পর্যন্ত ভেবে বের করতে পারিনি।”
বৃষ্টি বাড়ছে ক্রমশ। আমি অন্ধকার জমির দিকে তাকালাম নিজের অজান্তেই। গা শির শিরে একটা অনুভূতি হল........... লেখকের নামঃ মো ফরহাদ চৌধুরী শিহাব

TEXTILE ENGINEERING COLLEGE, CHITTAGONG ফেইসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

। আধিয়ার শেষ খন্ড ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, October 7, 2011 at 10:35pm
রাতের খাবার খেয়ে বারান্দায় বসে আছি আমি, সাত্তার সাহেব ও তাঁর স্ত্রী জয়গুন নাহার। বাহিরে গুড়ি গুড়ি মিহি বৃষ্টি, হাল্কা বাতাস। কারেন্ট আসেনি এখনো। আমিবসেছি চেয়ারে। সাত্তার সাহেব মাদুর বিছিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছেন। হুক্কা টানছেন। গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে। চারপাশে মিষ্টি জাফরানের ঘ্রাণ। জয়গুন নাহারস্বামীর পাশে বসে পানের খিলি সাজাচ্ছেন। “এরপর কি হল? তাজল মারা যাবার পরের ঘটনা?” কৌতুহলি কন্ঠে জানতে চাইলাম আমি।
হুকার পাইপে বারদুয়েক টান দিয়ে এক রাশ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আমার দিকে তাকালেন সাত্তার সাহেব, চোখে বিচিত্র একটা দৃষ্টি, “এরপরের ঘটনাটা একটুআজব -অবাস্তব বলে মনে হবে তোমার”।
জয়গুন নাহারকে দেখলাম সামান্য ভীত চোখে অন্ধকার জমিটার দিকে তাকালেন একবার। চাপা গলায় বললেন, “রাত বিরাতে কিসব শুরু করলা? জামাই মানুষ,ভয় টয় পাবে তো!” “আরে পাবে না। সাহস আছে ছেলের”। আমার দিকে তাকালেন। আমি ঢোক গিললাম। “তাজল শেখ মারা যাওয়ার দিনের ঘটনা। কবরটা দেয়া হয়েছিল এখান থেকে এক মাইলের মত পূবে একটা গোরস্থানে। অল্প কয়েকটা কবর মাত্র সেখানে।বেশিদিন হয়নি ওখানে গোরস্থানের জন্য জমি দেয়া হয়েছে। জঙ্গল ধরনের জায়গা। বড় বড় বাঁশঝাড় আর ঝোপে ভরা। দিনের বেলাতেই যেতে কেমন লাগে যেন।রাতের বেলাতো ওটার ধারে কাছ দিয়েও মানুষ যায় না। তাজলের কবরটা দেয়া হল জঙ্গলের মাঝামাঝি একটা জায়গায়। সরু পথ কেটে জঙ্গলের ভেতর তাজনেরকবর পর্যন্ত নেয়া হয়েছিল। তাজলের জানাযার সময় অনেক মানুষ এসেছিল ওকে দেখতে। তাই কবর দিতে দিতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। প্রচন্ড গরম পড়েছিল সেদিন।কবর দিতে গিয়ে সবাই ঘেমে নেয়ে একাকার। সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টির ভাব শুরু হল। ঘন মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, গর্জন করছে গম্ভীরস্বরে। গোরস্থানের বাঁশঝাড়গুলো একবার এদিক দুলছে আরেকবার ওদিক। দাফনের কাজ শেষে সবাই মোনাজাত ধরেছি সবে এমন সময় বৃষ্টি নামল চারপাশ ঝাপিয়ে। এমনিতেই সন্ধ্যা তার ওপর ঘন মেঘের জন্য চারপাশে অন্ধকার নেমেএসেছে। জানাযার নামাজে মুসল্লি যতজন হয়েছিল-দাফনের সময় এসেছে একেবারেই কম। মাত্র আটজন। ইমাম সাহেব সবে হাত তুলে দোয়া পড়ানো শুরু করেছেন তখন নামল বৃষ্টি। আমরা কবরটা চারপাশ থেকে ঘিরে মোনাজাত করছি। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়াতে খারাপলাগছে না। গরমের হাত থেকে বাঁচা গেল। চোখ বন্ধ করে মোনাজাত করছি।
প্রথম দিকে কেমন একটা গোঁ গোঁ চাপা শব্দ হচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল না শব্দটা কোথা থেকে আসছে। হঠাৎ ঘটল ঘটনাটা। প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে আচমকা কবরেরভেতর থেকে কাঁচা মাটি ফুঁড়ে একটা কালো কুচকুচে হাত বের হয়ে এলো! বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা হাতটার গায়ে লেগে থাকা কাদা মাটি ভিজিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।আমরা যারা ছিলাম ওখানে ব্যাপারটা অনেকেই প্রথমে খেয়াল করল না কারণ মোনাজাত করছিল সবাই নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে। সম্ভবত আমিই প্রথমদেখলাম ব্যাপারটা। জমে গেলাম বরফের মত। আমার থেকে বড়জোড় দুই হাত সামনে কবরের ভেতর থেকে হাতটা কব্জি সহ আরো একটু বেরিয়ে এসেছে!কয়লার মত কালো হাত। দ্বিতীয় ধাক্কায় অন্য হাতটা বের হয়ে এলো কবর ফুঁড়ে! সেই হাতে একটা ত্রিশূ্ল ধরা! ত্রিশূলের চকচকে ফলা বজ্রপাতের আলোয়জ্বলজ্বল করছে! আমি শুনতে পেলাম বাকিরা ভয়ঙ্কর আতংকে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পালানো শুরু করেছে! আমিই কেবল নড়তে পারছিনা। আমার দুই পা যেনহাজার মণ ভারি হয়ে গেছে। মাটি থেকে তুলতেই পারছি না। বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে দেখলাম কবরের বাঁশ চাটাই সব ঠেলে নিচ থেকে কালো কুচকুচে একটা মানুষের মাথা বের হল কবরের মাটির ওপর! বজ্রপাতের সাদাআলোতে দেখতে পেলাম হলুদ রঙের দুটো চোখে মানুষটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে! মানুষের চোখের মণি এরকম হলুদ হতে পারে না! লোকটার গলায়পেঁচানো কালো বিষধর একটা সাপ! ফণা তুলে হিস্ হিস্ করছে…… আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বোধহীন জড়বস্তুর মত সেখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমার চোখের সামনে মানুষটা কবর ভেঙে উঠে এল মাটির ওপর। কাদামেখে আছে লোকটার গায়ে। সাদা কাফনটা দিয়ে কোমড়ের অংশটা পেঁচিয়ে রেখেছে। তাজল শেখ! এত কালো ছিল না দাফনের আগেও….. এখন দেখতে ওকে ঠিক সেই শিব মূর্তিটার মত লাগছে অবিকল….. তাজল আমার দিকে তাকিয়ে চিনতে পারার মতকোনো ভাব দেখালো না। হলুদ রঙের জ্বলন্ত চোখে আমার দিকে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে খুরওয়ালা পায়ে সাবলীল ভঙ্গিতে হেঁটেবৃষ্টির মাঝে জঙ্গলের ভেতর হারিয়ে গেল! ওর পিঠে আরো দুইজোড়া হাত টিউমারের মধ্য থেকে নড়ছে….
আমি নিজের পায়ের উপর ভর টিকিয়ে রাখতে পারছিলাম না। কেবল মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর অশুভ-অশূচি কিছু একটা ঘটছে…….
ঘটনাটা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল সারা গ্রাম জুড়ে। এমনকি শিব মন্দিরের পুরোহিতদের কান পর্যন্ত চলে গেল। সেই রাতেই মন্দিরের পুরোহিতরা চলে এলোগোরস্থানে। তাদের কথা অনুযায়ী তাজল শেখ হল তাদের দেবতা- তার শরীরে শিব ভর করেছে। কবরটার ভেতরে তখন হাজার হাজার সাপ কিলবিল করছে যখনপুরোহিতরা যায় ওখানে। কিন্তু তাজল শেখকে পাওয়া যায়নি। বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। মশাল জ্বালিয়ে সারা জঙ্গল তন্ন তন্ন করে খুঁজল মন্দিরের সবাই। বারবার বলতে থাকল তারা- তাদের দেবতা মন্দির ছেড়ে চলে এসেছে বলে মন্দিরটা ভেঙে গেছে। মাটির নিচে চলে গেছে মূর্তিগুলো। তাই তাদের দেবতাকে খুঁজে বেরকরতে হবে।
কিন্তু চারপাশের দশ মাইল চষে ফেলার পরও তাজল শেখকে পাওয়া যায়নি। সে রাত থেকে আমার প্রচন্ড জ্বর শুরু হল। এমন জ্বর বহুদিন হয়নি। কাউকেইচিনতে পারছিলাম না। কেবল বিছানায় শুয়ে কাথার নিচে কাঁপছিলাম থরথর করে আর পাগলের মত প্রলাপ বকছিলাম।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

সুলতানার কোনো আত্বীয় স্বজন ছিল না। কারণ তাজল শেখ মারা যাবার সময় কেউ আসেনি। থাকলে নিশ্চই আসতো। স্বামী মারা যাওয়ায় মেয়েটা পাগলের মতহয়ে গিয়েছিল। তোমার চাচী সুলতানাকে এবাড়িতে এনে রেখেছিল কিছুদিন। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলত না। একা একটা ঘরে সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে বসেথাকত। কিছু খেতেও চাইত না। ফেলে দিত সব। জয়গুন অনেক চেষ্টা করেও সুলতানাকে কিছু খাওয়াতে পারত না। দেখতে দেখতে হাসিখুশি মেয়েটা চোখেরসামনে শেষ হয়ে যেতে লাগল। শুঁকিয়ে চোয়ালের হাড় বের হয়ে এল। বড় মায়া লাগত মেয়েটাকে দেখে। আমার জ্বর থেকে সেরে উঠতে পাঁচদিন সময় লাগল। সুস্থ হবার পর প্রায়ই গিয়ে সুলতানাকে বোঝাতাম খাওয়া দাওয়া করার জন্য। মানুষ মারা যাবে এটাইতোস্বাভাবিক। এভাবে ভেঙে পরলে তো জীবন চলবে না। ওর বয়স কম। সামনে ওর পুরো জীবনটা পরে আছে। কিন্তু এত কথা বলে কোনো লাভ হত না। মূর্তির মতযে মেয়েটা বসে থাকত তো থাকতই। কোনো কথাই বলত না।
প্রায় রাতেই মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে ফিরে আসলে সুলতানার ঘরের দিক থেকে শুনতে পেতাম একা একা কথা বলছে মেয়েটা। শুনে মনে হয় যেন কারোসঙ্গে কথা বলছে -কেবল অন্যজনের কথা শোনা যাচ্ছেনা। আমি পাগলের প্রলাপ ভেবে পাত্তা দিতাম না। তাজল শেখের কবর থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনাটা সুলতানাকে কেউ বলেনি। বললে কি করত কে জানে। এমনিতেই তাজলের শোকে পাথর হয়ে আছে। আমি শুক্রবার বিকেলে আমাদের বাড়িতে হুজুর এনে মিলাদ দেয়ালাম। কারণ তাজল শেখ মারা যাবার পর থেকেই এই বাড়িটা কেমন যেন হয়ে গেছে। যদিও এবাড়িতে তাজল থাকত না। কিন্তু সুলতানা আসার পর থেকে এ বাড়িতে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। খুব বেশি সাপ বের হচ্ছে বাড়ির নানান জায়গাথেকে। হাঁস মুরগি গুলো সব মরতে শুরু করেছে একে একে। আর বাড়ির চারপাশে কে যেন মাটি খুঁড়ে বড় গর্তের মত করে রাখে প্রতিরাতে। মিলাদের পরদিন কাজের চাপে সারাদিন বাসায় আসতে পারলাম না। গঞ্জে যেতে হয়েছিল মালপত্র নিয়ে আসতে। সেসময় এখানে লোক এসে কোল্ড স্টোরেজ়েবস্তা দিয়ে যেত না। গঞ্জে আমার মূল অফিসে দিয়ে যেত। আমাকে নিয়ে আসতে হত। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। নামাজের পর ফিরলাম। রাতে আমি মসজিদথেকে ফিরে সবে বাড়িতে পা রেখেছি অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল। বাড়ির কোথাও কোনো আলো নেই। কারেন্ট না থাকতে পারে কিন্তু হারিকেন তো জ্বলবে-সেটাওজ্বলছে না। আমি হাতের টর্চ দিয়ে এদিক সেদিক দেখলাম। জয়গুন কিংবা আমার বড় মেয়ে কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। অবাক হলাম ভীষণ। এমনকি চারপাশেঅদ্ভুত একটা নিস্তব্ধতা, কোনো ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দও নেই। হাঁস মুরগির খোঁপ গুলোতেও কোনো আওয়াজ হচ্ছে না! সারা বাড়ি যেন কবর হয়ে আছে!
আমি জয়গুনের নাম ধরে সবে ডাকতে যাবো- মুখ খুলেছি- হঠাৎ শুনতে পেলাম সুলতানা ওর ঘরটা থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, অস্পষ্ট গলায় কিছু বলছে। বোঝাযাচ্ছে না। আমি টর্চের আলো ফেললাম ওর ঘরটার দিকে, জানালা বন্ধ, দরজাও বন্ধ। অন্ধকারে ভয় পেয়ে কাঁদছে নাকি? আমি এগিয়ে গেলাম তাড়াতাড়ি। ওরঘরটার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় ধাক্কা দিতে যাবো-থমকে গেলাম আমি। স্পষ্ট শুনতে পেলাম একটা পুরুষ কন্ঠে কেউ বলছে, “মোর নগত কাহো আসিবাপারিবা নাহায় …….”
কন্ঠটা শুনে জমে গেলাম। তাজল শেখের গলা! শুনতে পেলাম সুলতানা ভাঙা গলায় বলছে, “মুই যাম, মুই একলা রহিবা পারিবা নহু।”
আমি দরজার ফাঁক দিয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকালাম ভেতরে কি হচ্ছে দেখার জন্য। কিন্তু তার আগেই আমার হৃদপিন্ডটা ধরাস করে উঠল। আমি দরজার যে অংশেচোখ রেখে তাকাতে গেছি- ঠিক সেখানেই হলুদ একটা চোখ আমার দিকে ওপাশ থেকে চেয়ে আছে দরজার ওপাশ থেকে! গোরস্থানের সেই তাজলের চোখগুলো!
আমি আতংকে পেছন দিকে ছিটকে এলাম। পায়ে পা বেঁধে হোচট খেয়ে পরে গেলাম উঠানে। টর্চটা হাত থেকে গড়িয়ে অন্যদিকে চলে গেল। আমি ভয়ার্ত চোখেদেখলাম সুলতানার ঘরের দরজা খুলে গেল। চাঁদের ঘোলাটে আলোয় দেখা গেল তাজল শেখের সেই দেবতা রুপটা একহাতে ত্রিশূল নিয়ে, গলায় সাপ পেঁচানো-কালো কুচকুচে মুখে হলুদ দুটো চোখ। জ্বলন্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! অন্য হাতে সুলতানার একটা হাত ধরে রেখেছে। আমি নড়তে পারছিলাম না ভয়েরচোটে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তাজল সুলাতানার হাত ধরে নেমে এল উঠানে। আমার দিকে না তাকিয়ে দুজন সোজা হেঁটে যেতে লাগল ওদের মাটির বাড়িটার দিকে!পুরো দৃশ্যটায় ভয়ংকর একটা অশুভ আর অবাস্তব ব্যাপার রয়েছে। আমার মনে হচ্ছে আমি খুব ভয়াবহ একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি। কারণ আমি চাঁদের আলো আর পরেথাকা টর্চের আলোতে আবছা ভাবে দেখতে পাচ্ছি সুলতানার ঘরের খোলা দরজাটা দিয়ে-সিলিং থেকে সুলতানা ঝুলে রয়েছে ঘরের ভেতর! ওর শাড়িটা ফাঁস বানিয়েগলায় দেয়া, ব্লাউজ আর পেটিকোট পরনে। দু’পা সোজা হয়ে রয়েছে, আঙ্গুল গুলো মাটির দিকে!
বিস্ফোরিত চোখে অন্য দিকে তাকালাম। এখনো চাঁদের আলোয় দেখা যাচ্ছে সুলতানা ওর স্বামীর দেবতা মূর্তির হাত ধরে ওদের পুরনো ভিটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেজমির আল দিয়ে। সুলাতানা যদি ওখানে থাকে-তবে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে কে?
আমি হাঁচড়ে পাচড়ে উঠে টর্চ হাতে দৌড়ে ঘরটায় ঢুকলাম। সুলাতানা ঘরে ফাঁস দিয়ে ঝুলে রয়েছে। এক নজর দেখেই বোঝা গেল ফাঁসটা এখন না, বেশ আগেইখেয়েছিল। ফুলে রয়েছে সারা শরীর!
আমি খুব একটা সাহসী মানুষ তা বলব না। তবে সে সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারলাম। জয়গুন আর বড় মেয়েকে না দেখতে পাওয়ার কারণটা বুঝতে পারলাম।সম্ভবত লাশটা দেখে ভয়ের চোটে অন্য আধিয়ারদের বাড়িতে চলে গেছে। আমি নেই- ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। হয়ত অন্যদের ডেকে আনার আগেই আমি চলেএসেছিলাম।
সুলতানার লাশটা নামাতে গেলাম না আমি। পুলিশি ব্যাপার। ওরা আসুক আগে। কতক্ষন আগে ফাঁস খেয়েছিল কে জানে। লাশটা দ্রুত ফুলে যাচ্ছে।
আমি উঠানে বেরিয়ে এলাম টর্চ হাতে। দেখতে পেলাম চারপাশের জমিগুলোর আধিয়ারদের বাড়ি থেকে হারিকেন হাতে লোকজন ছুতে আসছে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে।
আমি তাজলদের মাটির বাড়িটার দিকে তাকালাম। শিরশির করে উঠল গা।
ভোররাতে পুলিশ যখন আসে তার একটু আগে সুলতানার লাশটা বেশি ফুলে গিয়ে শাড়ি ছিঁড়ে মেঝেতে পড়ে যায়। ঠিক একই সময়ে তাজলদের মাটির বাড়িটাঅদ্ভুতভাবে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। একেবারে মিশে যায় বাড়িটা……” থামলেন সাত্তার সাহেব।
আস্তে আস্তে বললাম, "সুলতানা এমন করল কেন?"
হাসলেন তিনি, "সংসার। সংসার বড় আজব জিনিস। । বেধে রাখা যায় না, আবার ছেঁড়ার পরেও জোড়া দেয়ার বড় পাগল নেশায় টানে....... সুলতানাকে সংসারের নেশায় ধরেছিল, তাজলের সংসারের নেশা। কাটাতে পারেনি সেটা। ফাঁসিতে ঝুলে নতুন করে ছেঁড়া সম্পর্কটা জুড়ে দিতে চেয়েছিল।" চুপ হয়ে গেলেন দীর্ঘ কয়েকটা মুহূর্তের জন্য। চারপাশে ঝিঁ ঝিঁ পোঁকার একঘেয়ে ডাক।
আমি ঢোক গিললাম, “তারপর?”
“তারপর অনেক ঘটনা ঘটেছিল, সব বলার মত না। তবে একটা ব্যাপার- ওরা মারা যাওয়ার পর আমার কোল্ড স্টোরেজে প্রায় রাতেই তাজল আর সুলতানাকে ঘুরেবেড়াতে দেখেছে অনেকে। আমি নিজেও তালা বন্ধ করতে গিয়ে বেশ কয়েক রাতে দেখেছি। আবছা অন্ধকারের মাঝে কোল্ড স্টোরেজের ভেতরে বাঁশের তাকগুলোতেবস্তার উপর পা ঝুলিয়ে বসে রয়েছে তাজল শেখ।পায়ে ঘোড়ার খুর,গলায় সাপ। চুপচাপ বসে আছে প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝে। কুয়াশার মত ধোঁয়া ওর চারপাশে ঘুরপাকখাচ্ছে। অদ্ভুত সুরে বিজাতীয় ভাষায় গুনগুণ করে গান গাওয়ার মত করে কিছু একটা বলে তাজল শেখ। কাকে বলে জানিনা। কিন্তু ঐ সময়টায় পুরো এলাকার সবঝিঁ ঝিঁ পোকা, শিয়াল, খাটাস- একদম চুপ মেরে যায়। কোনো প্রাণের সাড়া পাওয়া যায় না।”
হুক্কা টানতে গিয়ে খেয়াল করলেন আগুন নিভে গেছে। বিরক্ত হলেন যেন পাইপটার উপর। ফেলে দিলেন একপাশে পাইপটা। দীর্ঘ নীরবতা।
“জামাই, অনেক রাত হয়েছে। ঘুমায় পরো বাবা।” জয়গুন চাচী বললেন এক সময়।
আমি মাথা কাত করে উঠে দাঁড়ালাম। চারপাশে কুয়াশার মত বৃষ্টি, তার মাঝেই মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের ঘোলাটে আলো ছড়িয়ে পরেছে চারপাশের ক্ষেত গুলোতে। চাঁদের আলোতে মিহি বৃষ্টি। হঠাৎ খেয়াল করলাম চারপাশে ঝিঁ ঝিঁ পোকা, শিয়াল, কুকুর- কোনো কিছুর ডাক শোনা যাচ্ছে না! গায়ে কাঁটা দিল! কেন যেন মনে হল অন্ধকার জমির সেই জায়গাটায় আলের ওপর থেকে কেউ একজন জ্বলজ্বলে হলুদ চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে এইদিকে। চোখের ভূল কিনা বুঝতে পারলাম না। তবে হঠাৎ যেন লাগল সেখানে কম বয়সী একটা মেয়ের আবছা অবয়ব প্রকট হচ্ছে ধীরে ধীরে প্রথম জনের পাশে ..............

লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব TEXTILE ENGINEERING COLLEGE, CHITTAGONG. ফেইস বুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

।। অতৃপ্ত ছায়া ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, October 8, 2011 at 11:05pm
আমার দাদীর ছোট বোনের মেয়ে আরমিন।।আরমিন ফুপ্পি আমেরিকায়ে থাকেন। শুধু মাত্র বিজনেসর কাজে ওনার বাংলাদেশে আসা হয়।। কয়েকমাস থাকার পর তিনি আবার চলে যান আমেরিকায়।। গত বছর তিনি বেশ সময় নিয়েই দেশে এসেছিলেন।। ওনার খুব কাছের একজন বান্ধুবি যার সাথে উনি ওনার পড়ালেখা শেষ করেছেন, তার মা আরমিন ফুপ্পিকে খুবই পছন্দ করতেন।। এমন কি উনি বলতেন যে আরমিন ফুপ্পি ওনার দ্বিতীয় মেয়।। সেই মহিলার উত্তরায় বিশাল বাড়ি রয়েছে।। সেখানে মহিলা একা থাকতেন।। যতটুকু শুনেছি যে মহিলাটি অত্যন্ত নামাযি এবং পরদানশিল ছিলেন।। কিন্তু অসুস্থতায়ে ভুগতে ভুগতে কয়েকমাস আগে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। উনি জানতেন যে ওনার কাছে আর বেশি সময় বাকি নেই, তাই মৃত্যুর আগে তিনি আরমিন ফুপ্পি কে বলেছিলেন- আরমিন ফুপ্পি যতদিন বাংলাদেশে আছে ততদিন মহিলার বাসায়ে থাকে। এ বাসায়ে ফুপ্পি সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবেন। মৃত্যুর আগে এমন একটি অনুরধ করায় ফুপ্পি তা নির্দ্বিধায়ে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু মহিলাটি আরও বলে গিয়েছিল যে - যেহেতু তুমি মেয়ে, তোমার একা থাকা মোটেই ঠিক হবে না, অবশ্যই অন্য কাউকে নিয়ে থাকবে। আরমিন ফুপ্পি বলেছিলেন যে তিনি একাই থাকতে পারবেন, ওনার অভ্যাস আছে, এর আগেও পরিবার ছাড়া অনেক বার বাংলাদেশে এসে থেকেছেন। কিন্তু মহিলাটি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিল না যে ফুপ্পি এ পুরো বাসাটিতে একা থাকবেন। পরবরতিতে ফুপ্পি রাজি হলেন আরেকজনের সাথে থাকার, আর তিনি হলেন আমার আপন ছোট ফুপ্পি- আরবা। আরবা ফুপ্পি প্রথমে এক কথায়ে রাজি হয়ে গেলেন যে তিনি আরমিন ফুপ্পি কে সঙ্গ দেওয়ার জন্য কিছুদিন ঐ বাসায়ে থাকবেন। সেই বয়স্ক মহিলা মৃত্যুর আগে যা জেনে গিয়েছিলেন তা হল- আরমিন এবং আরবা ফুপ্পি একসাথেই থাকছেন এই বাসায়। তার ২-১ দিনের মধ্যেই মহিলাটি মারা যায়। এবার ঘটনাটি একটু অন্যদিকে চলে যায়। আরবা ফুপ্পি কিছুদিন পর কিছু অসুবিধার জন্য আরমিন ফুপ্পির সাথে থাকতে মানা করে দেয়। তিনি আরমিন ফুপ্পির কাছে ওনার অসুবিধার কথা বললে আরমিন ফুপ্পি বলেন যে কোন সমস্যা নেই, উনি একাই থাকতে পারবেন। তা ছাড়া আর কিছু দিন ই তো! তারপর তো তিনি চলেই যাবেন। এভাবে তিনি একাই থাকতে শুরু করেন এবং সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। এর মাঝে একদিন আরবা ফুপ্পির বাসায়ে আরমিন ফুপ্পির দাওয়াত ছিল। আরমিন ফুপ্পি ঐ বাসায়ে বেড়াতে যান এবং সবাই মিলে এক পর্যায় গল্পে জুড়ে যান। আরবা ফুপ্পির শোবার ঘরের বিছানায় বসে ওনারা গল্প করেছিলেন। দুই ফুপ্পি তো ছিলেন ই আরও ছিলেন আরবা ফুপ্পির ছেলের বউ এবং ওনার এক বান্ধুবি। ওনাদের কথোপকথন চলতে থাকে, এক পর্যায় আরমিন ফুপ্পি কথা প্রসঙ্গেই বলেন ওনার ঐ বাসায়ে একা থাকার কথা।। আরবা ফুপ্পি সাথেসাথে বলেন- " আপা আসলেই আমি থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে পারলাম না! " এবার যা হল তা সত্যিই অবিশ্বাস যোগ্য। একটা বীভৎস কণ্ঠে কে জানি বলে উঠল- "আপনি চুপ থাকেন... আপনি থাকার সময় থাকলেন না, ওনাকে একা রেখে গেলেন ওই বাসায়ে, আর এখন এত বড় বড় কথা বলছেন কি করে?" সবাই চমকে উঠল হটাত এ কথা শুনে, কারন কথাটি যে বলছিল সে হল আরবা ফুপ্পির ছেলের বউ।। উপস্থিত সবাই খুবই অবাক হলেন বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে।।
কিন্তু আরমিন ফুপ্পি স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলেন ওকে -" তুমি এত কিছু জান কি করে? যা হবার হয়েছ, এখন আমার সাথে কারও থাকার দরকার নেই, আর তোমাকে না বলেছিলাম আমার বাসায়ে এসে একদিন ঘুরে যেতে? এখনও তো নতুন বউকে আমার ঐ বাসায়ে একদিন নিতেও পারলাম না!"
মায়েশা অর্থাৎ আরবা ফুপ্পির বউ মাথা নিচু করে উত্তর দিল- " কে বলেছে আমি যাই নাই আপনার বাসায়?? আমি তো প্রতিদিন কত্তবার যাই, এইত এইমাত্রই তো ঘুরে আসলাম ওখান থেকে, আপনার বাসা সাজানো আমার খুব ই ভাল লেগেছে" বলে ও চুপ করে নিচেই তাকিয়ে থাকল। আরবা ফুপ্পি খুব ই অবাক হলেন এবং চিন্তা করতে থাকলেন, মেয়ে বলছে কি? ও তো জানতই না যে আমার ওইখানে গিয়ে থাকার কথা ছিল কিন্তু আমি পারি নি।। তাহলে ও এখন এত কিছু জানল কিভাবে!! আর ও তো কোনোদিন ঐ বাসায় যায় নি, তাহলে এগুলো কি বলছে! আরমিন ফুপ্পি কিছুক্ষন পর বলল আমার মাথা খুব ব্যাথা করছে আমাকে কোন মেডিসিন থাকলে দাও। মায়েশা সাথে সাথে বলল আমি দিচ্ছি। আরবা ফুপ্পি আরমিন ফুপ্পির মাথা টিপে দিতে চাইলে হথাত মায়েশা তার হাত সরিয়ে দেয়, এবং বলে আপনি ওনাকে ধরবেন না।। আরবা ফুপ্পি ওনার বান্ধুবির দিকে তাকালে দেখলেন যে বান্ধুবি পুরো স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।। সে একটা টু শব্দও করল না।। মায়েশা আরমিন ফুপ্পির সাথে খুব ভাল ব্যাবহার করছিল তাই আরমিন ফুপ্পি খুবই খুশি হলেন। কিন্তু যখন ই আরবা ফুপ্পি আরমিন ফুপ্পির সাথে কথা বলতে যান মায়েশা তাকে আটকিয়ে দিচ্ছিল। রাগ হয়ে আরবা ফুপ্পি মায়েশাকে বলে- তুমি আপাতত এখান থেকে যাও।। এ কথা বলায় ও খুবই রাগ হয়ে যায়, এবং মাথা নিচু করেই পুরো ৪৫ মিনিট ও নিজেই একনাগারে কথা বলতে থাকে। রুমে উপস্থিত সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, ওর কথা খুবই অন্যরকম লাগছিল, ও বারবারই আরবা ফুপ্পি কে আঘাত করে কথা বলছিল।। আরবা ফুপ্পি কাজের মেয়েকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসতে বলে। উনি মায়েশা কে দেখেন যে ও একবার ও মাথা তুলে ওনার দিকে তাকায় নি। পুরো সময় নিচু করে রেখেছে এবং কোন ভাবেই অর চোখের অনুভূতি দেখতে দিচ্ছিল না।। উনি শুধু ওকে বলে- মায়েশা তুমি বিছানার সামনের চেয়ারটায় এসে বস, এবং তিনি আয়তুল কুরসি পড়া শুরু করলেন। মায়েশার মদ্ধে কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।। ও খুবই ছটফট করতে থাকে এবং খুব নিচু কণ্ঠে বলতে থাকে মা খুব খারাপ লাগছে। আরবা ফুপ্পি ওর হাত ধরে আয়তুল কুরসি পরতেই থাকেন একনাগারে। অনেক্ষন ছটফট করার পর ও অজ্ঞ্যান হয়ে পরে। পরবরতিতে অর জ্যান ফিরলে ওকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় ও তখন খুব সাভাবিকভাবেই বলে যে ওর কোন কিছুই মনে নেই। মুলত ঐ দিন যা হয়েছিল তা দুই ফুপ্পি ঐখানেই বুঝতে পেরেছিলেন। আরমিন ফুপ্পি ঐ রাতে ওনার বাসায়ে গিয়ে আরবা ফুপ্পিকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন যে তিনি বুঝতে পারেন তার সাথে এই বাসায় আরেকজন ও থাকে। মাঝেমাঝে সে যে আশপাশে আছে তা তিনি অনুভব ও করতে পারেন। আর শুধু বাসায় না সে ফুপ্পির সাথে সবজায়গায় যায়।। ঐদিন মায়েশার উপর কোন অশরীরী কছু ভর করেছিল, শুধু মাত্র তার রাগ ঝাড়ার জন্য। সেইটি ঐ মহিলারই ছায়া, কেননা আর কেও এত গভীর ভাবে ঐ বাসায় থাকার কথাটা জানত না এবং আরবা ফুপ্পির উপর তার রাগ একটি কারনেই। কারন সে জানত আরবা ফুপ্পি আরমিন ফুপ্পির সাথে থাকবে, কিন্তু তার মৃত্যুর পর আরবা ফুপ্পি আর থাকেন নি।।

।। অশুভ ছায়া ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, October 9, 2011 at 10:52pm
আজকে আমি যে ঘটনাটি শেয়ার করবো সেটা ঘটেছে ১০-১২ বছর আগে। আমার আম্মু আব্বু দুজনেই সরকারি চাকুরী করেন। উনাদের চাকরীর সুবাদে আমরা অনেক জায়গায় থেকেছি, যেমন, মাধবপুর, হবিগঞ্জ, পলাশ, ছুনারঘাট, ত্রিশাল।
আবারো আব্বুর বদলী হল। এবার হল কিশোরগঞ্জ। আব্বুর পৈত্রিক নিবাস। তাই আব্বু ঠিক করলেন যে এবার আর কোথাও যাবেন না। এখানেই থেকে যাবেন। তাই তিনি একটা ভালো বাড়ি দেখতে লাগলেন কেনার জন্য। কিনেও ফেললেন। আমরা উঠলাম নতুন বাড়িতে। কিন্তু বাড়িতে যারা আগেই ভাড়া থাকতো তারা যেতে রাজি হল না। বরং আবদার করল ভাড়াটিয়া হিসেবে এখানেই থেকে যেতে। আব্বু শেষমেশ রাজি হলেন। ভাড়াটিয়ারা ছিলেন হিন্দু। যাকে নিয়ে এই ঘটনা তিনি ঐ ভাড়াটিয়া পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। আমাদের থেকে বয়সে অনেক বড়। আমার বড় ভাইয়ার সমবয়সী।
উনার নাম ছিল রনি। খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলনে তাই উনাকে বেশিরভাগ সময়ই বাসায় পাওয়া যেত না। সারাদিন এটা সেটা করে বেড়াতেন। একদিন তিনি গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। মাছ ধরা শেষে তিনি যথারীতি বাসায় ফিরে এলেন। আমাদের বাসার পাশেই ছিল একটা মেহেগনি গাছ। গাছে মেহেগনি ফল ধরেছিল। তো, রনি ভাই সেই ফল পাড়ার জন্য গাছে উঠে বসলেন। গাছতা যেই দিকে ছিল ঐদিকে ছিল নরসুন্দা নদী। আমাদের বাড়ির দিকটা নদীর পার থেকে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। রনি ভাই ফল পারছিলেন। হটাত কি যেনও হল আর রনি ভাই ঝটকা খেয়ে গাছ থেকে নিচে পড়ে গেলেন। গাছ থেকে পরেই তিনি গড়িয়ে যেতে লাগলেন। আমার বড় ভাই ছিলেন পাশেই। তিনি এই কাণ্ড দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেললেন। কিন্তু সেই হেংলা পাতলা ছেলেটিকে আমার বড় ভাই টেনে তুলতে পারছিলেন না। আমার ভাই নিয়মিত ব্যায়াম করেন, এবং উনার শরীর স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো। তিনি রনি ভাইকে টেনে তুলতে পারছেন না এই কথাটা আমার কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হতো না যদি না আমি সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতাম। ভাইয়া যতই তাকে টেনে ধরার চেষ্টা করেন তিনি ততই নিচে নেমে যান। যেনও নিচ থেকে কেউ তাকে বড় কোনও শক্তি দিয়ে টানছে। আস্তে আস্তে তিনি কাঁটা তারের বেড়ার দিকে যেতে লাগলেন। রনি ভাই শুধু চেঁচাচ্ছে আর বলছে, আমাকে বাঁচাও, আমাকে নিয়ে গেলো! এরপর অনেক কষ্টে উনাকে উপরে টেনে তলা হয়। টেনে তোলার খানিকপর উনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান হারানোর আগে তিনি শুধু একটা কথাই বলেন যে, আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাছ থেকে ফেলে দিলো।
তখন লোকজন কবিরাজের উপর বিশ্বাস করতো। তাই এলাকার স্বনামধন্য কবিরাজকে ডেকে নিয়ে আশা হল। আধ্যাত্মিক কোনও ক্ষমতা তার ছিল কিনা জানি না, তবে হিন্দু হলেও তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ মুখস্ত করেছিলেন। তিনি এসে একটা সাদা রমালে কর্পূর জাতীয় কিছু নিয়ে কি যেনও করলেন। তারপর রনি ভাইয়ের মাকে বললেন, তোমার ছেলে আজ মাছ মারতে গিয়েছিলো? মহিলা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। এরপর কবিরাজ বললেন, ছেলে ভুল করে ফেলেছে। কবরের উপর বসে মাছ মারা ঠিক হয়নি। এরপর তিনি একটা তাবিজ জাতীয় কিছু দিয়ে চলে গেলেন।
রনি ভাইয়ের জ্ঞান ফিরলে পড়ে জানা যায় যে, উনি আসলেই একটা কবরের উপর বসে মাছ ধরেছিলেন। পরে যখন তিনি গাছে উঠেন তখন তার কেবলি মনে হতে থাকে তাকে কে যেনও খুব জোড়ে ঠেলছে। এবং এরপর হটাত ধাক্কা দিয়ে তাকে নিচে ফেলে দেয়। নিচে পড়ে যাওয়ার পর তিনি উঠার চেষ্টা করলে কে যেনও তার পা জড়িয়ে ধরে এবং তাকে গড়িয়ে কাঁটা তারের বেড়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর আমার ভাইয়া তাকে টেনে উপরে তুলেন।
এই ঘটনার পর থেকে রনি ভাইয়ের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। উনি আর কোনোদিন মাছ মারতে যাননি। এমনকি সেই গাছের আসে পাশেও যেতেন না। শোনা ঘটনা হলে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। কিন্তু চোখের সামনে দেখা ঘটনা কি চোখের ভুল বলে কাটানো যায়? বাংলা রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (এডমিন) যিনি পাঠিয়েছেনঃ Mahfuz Murshed , DRMC , NX. ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/mahfuz.murshed

।। দুটো অদ্ভুত ঘটনা ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, October 10, 2011 at 10:21pm
আমার জন্ম চট্রগ্রামের কদমতলিতে। ওই বাড়িতে কত যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটত তা বলে শেষ করা যাবে না। তার মধ্যে আজকে দুটো বলছি। ঘটনাটা আমার বড় দুবোনের সাথে ঘটেছে। ওরা তখন ছোট। আমি সদ্য হয়েছি। মা আর বাবা এক খাটে ঘুমায় আর আমার বড় দু বোন পাশের রুমে আমার দাদির আমলের বিশাল উচু খাটে ঘুমায়। একরাতে আমরা সবাই ঘুমাচ্ছি। হটাত পাশের রুম থেকে আমার দুবোনের আর্তচিত্কার শোনা যায়। আমার বাবা ঘুম থেকে উঠে "লা ইলাহা ইল্লান্তা..." বলতে বলতে কিছু না বুঝেই আপুদের রুমে দৌড়ে গেলেন আর সাথে সাথে লাইট জ্বালালেন। দেখলেন আপুরা খাটে বসে রান্না ঘরের দরজার দিকে তাকিয়া আছে আর ভয়ে থর থর করে কাপছে। ওদের পুরা মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিলো। অনেক দুরুদ পরে ওদেরকে ফূ দিয়ে শান্ত করা হয়। তারপর আমার দুই আপুই যা বলল তা হচ্ছে, ওরা শুয়ে ছিল। হটাত ওরা দেখল, বিছানার সামনে একটা শাড়ি পরা মহিলা কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে ওদের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। আপুরা যখন ভয়ে চিত্কার করে উঠলো, তখন মহিলাটা আস্তে আস্তে ওদের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। সেই রাত ঘরের সবার কিভাবে কেটেছিল তা আমার জানা নেই। আমি ঘটনাটি পরে আমার আব্বু আম্মু এবং আপুদের কাছ থেকে শুনি। পরের ঘটনাটা আরো আগের। আমার বাবা মার তখন নতুন বিয়ে। আমার মায়ের বয়স তখন খুব কম। সংসারে মাত্র তারা দুজন। একরাত বাবার আসতে অনেক রাত হচ্ছে। আমার মা বারান্দার গ্রিল ধরে দেখতে দেখতে কাঁদছে আর অপেক্ষা করছে বাবার জন্য(উল্লেখ্য, এতো রাতে একা ঘরে ভয় লাগাতাই স্বাভাবিক) রাত তখন ১২টার মত হবে। হটাত আমার মা এর মনে হলো, ঘরের সামনে যে জায়গা টুকু, ঐখান হটাত করে এক ধুতি পরা লোক আসল। ঠিক আমাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আমার মায়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে দু হাত জোর করে মন্ত্র পড়া শুরু করলো। তারপর হটাত এক সময় মাটির ভিতর সোজা ঢুকে যেতে আরম্ভ করলো। আমার মা এইসব এক নিঃশ্বাসেই দেখলেন। ঠিক ওই সময় দূর থেকে আমার বাবাকে আসতে দেখে মা শান্ত হলো। পরের দিন পাশের বাড়ির এক মহিলার কাছে মা গল্প করতে গেল, যা কে মা চাচি বলে ডাকত। ওনাকে আমার মা সব ঘটনা বলল, সাথে এটাও বলল, আমি আসলে বুঝতে পারছি না এটা চোখের ভুল কিনা। কারণ তখন আমি এত কাঁদছিলাম যে হয়তো ঝাপসা চোখে কি দেখতে কি দেখেছি! তখন ওই মহিলা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললেন, বউ তুমি তো নতুন বিয়ে করে এসেছ, একা থাক, বললে ভয় পাবে তাই তোমাকে বলিনি। এই পুরো জায়গাটা এক হিন্দু জমিদারের। ওর অনেক সম্পত্তি ছিল। যেগুলো ও মাটিতে পুতে রাখত। শত্রুরা ওকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। তারপর থেকে এই এলাকাটা অনেক ভূতুড়ে অশিরীরীরা ঘুরে বেড়ায়। কাল তুমি যা দেখেছ ঠিকই দেখেছ! আর যদি এখানে থাক তাহলে আরো অনেক কিছু দেখবে। শুধু ওদের থেকে সাবধান থেকো! এরপর আরো অনেক অনেক ঘটনা ঘটেছে আমাদের ঘরের সবার সাথে। যেই সব আত্তীয় আমাদের বাসায় থাকতে আসত, তারাও দেখছে। আমরা এখন ঢাকায় আছি ২৩ বছর। জানি না ওই জায়গাটা এখনো এরকমই আছে কিনা। যিনি পাঠিয়েছেনঃ Nowsheen ফেসবুক আইডিঃ Crystal Heart

।। একটি হত্যা এবং অন্যান্য ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, October 11, 2011 at 11:02pm
হয়তো বা গল্পটি খুব ভয়ের নয়। তবে এখানের প্রতিটি বর্ণনা নিখুঁত এবং সত্য। যারা খুব বেশি ভয়ের গল্প পড়তে চান, তাদের বলছি। গল্পটি পড়ে হতাশ হতে পারেন। তাই নিজ দায়িত্বে পড়ুন।
এই ঘটনাটি আমি আমার কাকার মুখে শুনি। আমার কাকা একজন সরকারি চাকুরীজিবি। চাকুরীর খাতিরে উনাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। একদিন আমাদের বাসায় আসার পর আমরা ৩ ভাইবোন মিলে উনাকে ধরি উনার এইসব ঘুরাঘুরির কাহিনীগুলো শোনার জন্য। কাকা আমাদের নানা ধরনের কাহিনী শোনান। কিছু কাহিনী শুনে তো আমরা হাসতে হাসতে শেষ। অবশেষে আমার ছোট ভাই নিলয় কাকাকে জিজ্ঞেস করল, ভূত প্রেত জাতীয় কোনও কাহিনী কাকা জানেন বা দেখেছেন কিনা। কাকা একটু খানি কি যেনও ভাবলেন, তারপর বললেন, একবার চোখের সামনেই দেখেছিলাম। কিন্তু তোমরা ছোট মানুষ, ভয় পাবে, এই বলে তিনি কাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু নিলয় নাছোড়বান্দার মত লেগে রইলো। আসলে, আমি এই ব্যাপারগুলো একটু ভয় পাই, তাই খুব একটা ইচ্ছে ছিল না জানার জন্য। কিন্তু কৌতূহলের কাছে পরাজিত হলাম। তাই কাকা যখন ঘটনাটি বলছিলেন, তখন আমিও কান খাড়া করে শুনতে লাগলাম।
কাকা সেবার অফিসিয়াল কাজে কুমিল্লার লাকসামে গিয়েছিলেন। একদিন উনার অফিসের বস তাকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত করেন। কাকার খাওয়া দাওয়ার প্রতি তেমন আগ্রহ কোনও কালেই ছিল না। শুধুমাত্র নাম রক্ষার্থে উনি রাজি হন। যাই হোক, রাতের খাওয়ার পর খানিকক্ষণ বস এবং উনার ওয়াইফের সাথে গল্প করে তিনি যখন বের হন তখন ঘড়ির কাঁটা ১১ টা পেরিয়ে গেছে। উনার বস বলছিলেন লোক দিয়ে দেয়ার জন্য কিন্তু কাকা রাজি হলেন না। বাসা সেখান থেকে খুব একটা দূরে ছিল না। হেঁটে যেতে ২০-২৫ মিনিট লাগে আর রিকশা পেলে তো কথাই নেই। কাকা বিদায় নিয়ে হেঁটে এগুতে লাগলেন। চাঁদের আলোতে পথ ঘাঁট পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। দূরে মাথের উপর আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে কৃষকরা। ধান কাটার পর যেইসব শুখনো খড় কুটা পড়ে থাকে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পরিষ্কারের ঝামেলা নেই। কাকা কিছুদূর এগিয়ে ডানে মোড় নিলেন। এই পথ দিয়ে কিছুদূর গেলেই রিকশা স্ট্যান্ড পাওয়া যাবে। সেখানে রিকশা পাওয়া গেলে ভালো, না পাওয়া গেলে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। কাকা সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কিছুই পেলেন না। হটাত রাস্তা দিয়ে হনহন করে কাউকে হেঁটে আসতে দেখলেন তিনি। সেই লোক এসে কাকার পাশেই দাঁড়ালেন। অনেক রাত্রি। এমনিতে কাকা খুব মিশুক প্রকৃতির। কিন্তু ঐ লোকের মধ্যে কথা বলার কোনও গরজ দেখা গেলো না। একমনে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। কাকা কয়েকবার গলা খাঁকারি দিলেন। কিন্তু আগুন্তক লোকটি শুনল কিনা বোঝা গেলো না। এবার কাকা নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন, যাবেন কোথায়? উত্তর নেই। কাকা আরেকটু উঁচা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ভাইজান, যাবেন কোনদিকে? লোকটি চমকে কাকার দিকে তাকাল। আমতা আমতা করে বলল, আমাকে বললেন?
কাকা একটু অবাক হলেন, এখানে আর কেউ নেই যে জিজ্ঞেস করতে হবে “আমাকে বললেন”। কিছুটা রাগ হল উনার। তারপরও চেপে গিয়ে বললেন, জি আপনাকে বলছি। যাবেন কতদুর?
লোকটি উত্তর দিলো, এইতো সামনের স্কুলের ধাঁরে।
কাকা বললেন, ওহ। এতো রাত, রিকশা তো মনে হয় পাওয়া যাবে না। চলেন গল্প করতে করতে হেঁটে চলে যাই।
লোকটিকে দেখে বোঝা গেলো না, সে ইচ্ছুক না অনিচ্ছুক। তবে কিছুক্ষণ ভাবার পর রাজি হয়ে গেলো।
কোনও রকম কথা ছাড়াই পথ চলতে লাগলেন দুজন। কাকা নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করলেন, কোন বাড়িতে থাকেন আপনি? আমি করিম সাহেবের বাড়িতে থাকি। ১ মাসের মত হল এসেছি। চলে যাবো কয়েকদিন পর।
লোকটি খুব নিছু গলায় বলল, আমি আগে মোল্লা সাহেবের বাড়িতে থাকতাম।
ওহ, এখন কোথায় থাকেন?
এই থাকি আরকি। আশেপাশেই।
কাকা কিছুটা অবাক হলেন। গ্রামের লোকেরা বাড়ির ঠিকানা দিয়ে সচারচর একে অন্যকে চিনে। এই লোকের মধ্যে পরিচিত হবার তেমন একটা ইচ্ছে দেখা গেলো না।
তো, ভাইজান, আপনি করেন কি? আমি একজন সরকারি চাকুরীজীবী। একটা কাজে এসেছিলাম আপনাদের গ্রামে।
লোকটি আনমনে উত্তর দিলো, আগে শিক্ষক ছিলাম। মোল্লার বাড়িতে উনার মেয়েকে পড়াতাম। তারপর কিসে কি হল। আমাকে নিয়ে নানান কথা উঠলো। আমি নাকি উনার মেয়ের সাথে প্রেম করি। এরপর চাকরিটা চলে গেলো। আমাকে বের করে দিলো বাসা থেকে।
কাকা অবাক হয়ে শুনছিলেন। এবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর? আপনি কিছু বললেন না?
লোকটি অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠলো। না ভাই, আমি কিছুই বলি নি। এমনকি মোল্লা বাড়ির বড় ছেলে যখন আমাকে তার ভাড়া করা গুন্ডা দিয়ে পিটালো তখনো কিছু বলিনি। বলার শক্তি ছিল না। মার খেয়ে সারারাত পড়ে ছিলাম রাস্তার পাশের বনে। কেউ দেখেনি। আপনি নতুন, তাই হয়তো জানেন না। এলাকার সবাই জানে।
কাকার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বলল, আপনার কথা শুনে কষ্ট পেলাম ভাই। কেউ প্রতিবাদ করল না। একটা নির্দোষ লোক মার খেলো। কেউ কিছু বলল না।
লোকটি আবারো হেসে বলল, বাদ দেন ভাই। স্কুল তো চলে এলো। আমি ডানে মোড় নেব। আপনি কোন পথে যাবেন?
কাকা বললেন, স্কুলের পিছনেই আমার বাড়ি।
আচ্ছা ভাই, গেলাম তাহলে। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।
কাকা লোকটাকে বিদায় দিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। হটাত মনে পড়লো লোকটার নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। সাথে সাথে ঘুরে লোকটিকে ডাক দিতে গেলেন।
সেখানে কেউ ছিল না। লোকটি কাকাকে বিদায় দিয়েছেন ২০ সেকেন্ডও হয়নি। এতো অল্প সময়ের মাঝে কোনোদিকে যাওয়া সম্ভব না। কাকা তবুও আঁতিপাঁতি করে খুজলেন। কিছুই মাথায় আসলো না। অবশেষে, কিছু বুঝে না পেয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলেন।
পরের দিন সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময় কাকার দেখা হয় করিম সাহেবের সাথে। কোশল বিনিময়ের পর কাকা উনাকে প্রশ্ন করলেন, মোল্লা বাড়ির শিক্ষক সম্পর্কে কিছু জানেন কিনা।
করিম সাহেব প্রথমে একটু অবাক হলেন। বললেন, আপনাকে উনার সম্পর্কে কে বলল?
কাকা বললেন, উনার সাথে দেখা হয়েছিলো আমার। বেচারার মনে অনেক কষ্ট দেখলাম। উনার সাথে অবিচার হয়েছে। বারবার আমাকে সে কথা বলছিল।
করিম সাহেব কথাটি শুনে চমকে উঠলেন। এতটাই চমকালেন যে উনার হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেলো।
কাকা লক্ষ্য করলেন ব্যাপারটা। বললেন, কোনও সমস্যা?
করিম সাহেব ভয়ার্ত গলায় বললেন, উনার সাথে আপনার কথা হয় কিভাবে? উনাকে তো বছর চারেক আগে পুরানো রিক্সা স্ট্যান্ডের পাশের জঙ্গল থেকে মৃত উদ্ধার করা হয়। লোকজন বলাবলি করছিলো, মোল্লা সাহেবের ছেলের কাজ। পুলিশ এসেছিলো। কিন্তু কোনও সুরাহা করতে পারেনি সুত্রের অভাবে।
কাকা যেনও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আস্তে আস্তে বললেন, উনার সাথে কি মোল্লা সাহেবের মেয়ের কোনও সম্পর্ক ছিল?
করিম সাহেব বললেন, জি। মোল্লা সাহেব মেয়েকে বিয়ে দেয়ার অনেক চেষ্টা করছিলো। কিন্তু মেয়ে ঐ শিক্ষককে পছন্দ করতো। তাই রাজি হচ্ছিল না। শেষে যখন শিক্ষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, সেদিনই মেয়ে ঘরে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। কিন্তু আপনাকে এতো সব বলল কে বলুন তো?
কাকা আপনমনে মাথা নাড়লেন। আর বললেন, আচ্ছা, ঐ শিক্ষক দেখতে কেমন ছিলেন?
দেখতে শুনতে ভালোই ছিলেন। কথাবার্তা খুব একটা বলতেন না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতেন শুধু। আর হ্যাঁ, কপালে একটা কাঁটা দাগ ছিল।
কাকা এবার চমকে উঠলেন। শেষবার যখন লোকটার মুখের দিকে ভালোভাবে তাকিয়েছিলেন তখন উনি ঐ কাঁটা দাগটা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন! বাংলা রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (এডমিন) যিনি পাঠিয়েছেনঃ নুসরাত মেহজাবিন স্বর্ণা
ফেসবুক আইডিঃ Nusrat Mehjabin (Shorna) ভাইয়ারা এবং আপুদের বলছি, আমাদের গল্পগুলো আপনারা চাইলে খুব সহজেই আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। শেয়ার করার জন্য গল্পের নিচে Share/Re-share লেখাটি Click করতে পারেন। শুভ ভৌতিক রাত্রি। - তিথি

।। শায়লা (একটি হরর গল্প) ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, October 13, 2011 at 10:42pm
প্রিয় সোনামণি আমার, আমি জানি না মা এই চিঠিটা তোমার কাছে কবে পৌছাবে...তোমার বয়স তখন কত...কি করছ তুমি,কোথায় পড়ছ...কিছুই জানি না...আমি ওদের বলেছি এই চিঠিটা তোমার দাদুমণির কাছে পৌছে দিতে...যখন তুমি বড় হবে...তখন পড়বে...তাহলে হয়ত তোমার মা,এই অভাগিনী মাকে ঘিরে থাকা সব প্রশ্নের কয়েকটার জবাব অন্তত পাবে...।

আজ তোমাকে একটা গল্প শোনাব মা...মনে আছে,তোমাকে ছোটবেলায় শোনাতাম? পার্থক্য এইযে এই গল্পটা সত্য...প্রতিটা বাক্য,প্রতিটা শব্দ সত্য...

গল্পটা একটা ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে,ঠিক তোমার মত|টুকটুকে লাল দু্টো গাল...দুটো বেণি করা পেছনে...নাম ছিল শায়লা। খুব মায়ের ভক্ত ছিল সে...সারাদিন মায়ের পেছন পেছন ঘুরতো,রাতে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। তেমনি এক রাতে কি কারণে যেন ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মেয়েটা পাশ ফিরে শুয়ে দেখে ওর মা আর শুয়ে নেই পাশে। ওদের বাসাটা ছিল ঠাকুরগাঁও এর পুরনো এক জমিদার বাড়ী,শায়লার নানুর বাড়ি। নানু-নানী কেউ বেঁচে নেই,বাসায় থাকে কেবল শায়লা,শায়লার মা আর বাবা। দোতলা সেই বাড়ীর নিচতলা থেকে এক গোঙ্গানির শব্দ শুনে ঘুমজড়ানো চোখে মাকে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে আসে শায়লা। সিঁড়ির গোড়ায় এসে দেখা দৃশ্যটা তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওর মনে থাকবে। রান্নাঘরের পাশে ওর বাবা কেমন করে যেন শুয়ে আছে,তার মায়ের হাতে একটা ধারাল ছুরি...সেই ছুরি ধরা হাত ক্রমাগত ওর আব্বুর বুকে ওঠানামা করছে...শায়লা তখনো বুঝতে পারছিল না আসলে কি হচ্ছে...আব্বু কেন এমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে,আব্বুর বুকে লাল লাল ওগুলো কি...আম্মু চিৎকার করে কাঁদছেই বা কেন। "আম্মু..." ডাক শুনে চমকে ফিরে তাকালো ওর আম্মু...আম্মুর চোখ দুটোতে উদভ্রান্ত ভাব থেকে বিস্ময়,তারপর বেদনা আর সবশেষে অসহায় একটা ভাব ভর করল। "শায়লা,মা আমার,তুই যা,তুই ঘরে যা মা,নইলে...নইলে...ও..." আম্মুর গলাটা ভেঙ্গে আসছিল কষ্টে। এই দিনটার কথা,এই শেষ কথাগুলো শায়লা পরবর্তি ২০ বছর হাজার হাজার বার নিজের মাথায় নেড়েচেড়ে দেখেছে। ওদিন ওর আম্মুর গলায় কি যেন ছিল , শায়লা ধরতে পারেনি,কিন্তু ওর মনে প্রচন্ড ভয় ঢুকে গিয়েছিল । সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উপরে চলে আসে ও...খাটের তলায় গুঁটিশুটি মেরে শুয়ে ছিল সারারাত। সারারাত কেঁদেছে,ফিসফিস করে ওর মাকে ডেকেছে...জোরে ডাকার সাহস পায়নি...ও জানত ও ডাকলে আম্মু যেখানেই থাকুক ছুটে এসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরত...ওর সব ভয় দূর করে দিত...কিন্তু তাই কি? ওর ভয়ের কারণ যে এখন অনেকটা ওর আম্মুই...

ওই দিনের ওই ঘটনার ব্যাখ্যা অনেক সহজ ছিল সবার কাছে, দাম্পত্য কলহের জের ধরে ওর মা ওর বাবাকে খুন করেছে । ব্যাপারটা এতটাই সাধারণ। যা হবার তাই হয়েছিল। ওর মাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। খুন করার ব্যাপারটা ওর মা অস্বীকার করেননি। আসলে কিছুই বলেন নি তিনি...স্তব্ধতা চেপে ধরেছিল তাকে,তিনি আর কোন কথা বলেন নি ফাঁসিতে ঝোলার আগ পর্যন্ত। শায়লা আর কখনো দেখেনি তার মাকে ওই রাতের পর। ওর খালার বাসায় বড় হয়েছে,খালা চান নি স্বামীহন্তা কোন রমণীর "আছর" এই কোমলমতি শিশুর উপর পড়ুক।

শৈশব খুব অসাধারণ একটা সময় বুঝলে মামণি? প্রকৃতি খুব সুন্দর করে আপন হাতে সব দুষ্ট স্মৃতিকে ধামাচাপা দিয়ে রাখে মস্তিস্কের গোপন কোন কোঠরে। তাই স্বাভাবিক এক মেয়ের মতই বেড়ে উঠল শায়লা। খালা বুদ্ধিমতি রমণী ছিলেন।গ্রামে থাকতেন তিনি। গ্রামের অন্যান্যদের "আহা উহু ইশ" থেকে বাঁচার জন্য খালুকে তাগাদা দিয়ে ৩+১ মোট ৪ ছেলেমেয়ে সমেত শহরে চলে এলেন।

তারপর গল্পটা চলো এগিয়ে নিয়ে যাই বিশ বছর...এর মাঝে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে,শায়লা বড় হয়েছে।পড়াশোনা শেষ করেছে। আরিফ নামে একটা অসাধারণ রাজপুত্রের মত এক ছেলের সাথে পরিচিত হয়েছে,লুকোচুরি করে প্রেম করেছে, পালিয়ে বিয়ে করেছে, খালার বাসায় কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়েছে,খালা মেনেও নিয়েছেন। তারপর শায়লার ঘর আলো করে একটা ফুটফুটে মেয়ে এসেছে...ওর নাম শায়লার সাথে মিলিয়ে রাখা হল নায়লা। হ্যা, তোমার নামে নাম। অদ্ভুত না?

আরিফ ছিল সরকারী চাকরিজীবি । স্বল্প বেতনের চাকরি। ভালই চলে যাচ্ছিল। বিপত্তি বাঁধল প্রমোশন পাবার পর। প্রমোশন পেয়ে আরিফ বদলি হল ঠাকুরগাঁও ...

খালা প্রচন্ড বিরক্ত। তিনি কিছুতেই শায়লাকে ওই "শকুইন্যা" যায়গায় যেতে দেবেন না। টাঙ্গাইল থেকে সরাসরি বাসে উঠে একাই তিনি চলে এলেন শায়লাদের বাসায় ওদের আটকানোর জন্য। বিষম বিপদ। বদলি আটকানো কি আর এত সোজা নাকি?হয় ঠাকুরগাঁও,নয়ত চাকরিই বাতিল। নয়ত আরিফের পুরো সপ্তাহ ঠাকুরগাওয়ে থাকা,সপ্তাহ শেষে ফিরে আসা। এটা তো আরো রিস্কি।তাছাড়া নায়লার স্কুলের বয়স হয়ে যাচ্ছে। ঠাকুরগায়ে তো অন্তত এই অজপাড়াগায়ের থেকে ভাল স্কুল কলেজ থাকবে। শায়লা খালাকে আস্বস্ত করল, কোন সমস্যা নেই,তারা ভাল থাকবে। খালা আর কিছু বললেন না। দোয়া দরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলেন।

ঠাকুরগাঁয়ে কোয়ার্টারেই থাকার কথা শায়লাদের। কিন্তু বিপত্তি ওখানেও। জানুয়ারী মাস।আগের কর্মকর্তার ছেলের এস এস সি পরীক্ষা আর ৩-৪ মাস পর।তিনি আরিফকে ধরে বসলেন এই কয়দিন "একটু ব্যাবস্থা করে নিতে"।এদিকে নায়লার স্কুল শুরু হয়ে যাবে এ মাসেই। অনেক ঘুরেও বাসা ভাড়া পাওয়া গেল না।যেন হঠাৎ করেই ঠাকুরগায়ের সব বাসা ভাড়া হয়ে গেছে। হ্যা, যা ভাবছ তাই...অনিচ্ছা সত্তেও শায়লারা তাদের নানুবাড়িতে এসে উঠলো।

রাজবাড়ীটা শহর থেকে খুব বেশী দূরে না। কিন্তু মফস্বল তো,একটু বেশীই নির্জন। আশে পাশে ঘরবাড়ী বলতে কিছু নেই তা কিন্তু নয়। শায়লার কিন্তু বাড়িটা বেশ পছন্দ হয়ে গেল। যে চাঁপা আতংক নিয়ে সে এখানে এসেছিল তা বাড়ির ভেতর এক পা দিতেই রীতিমত উধাও। ছোটবেলার অসাধারণ সব স্মৃতি ঘিরে ধরতে থাকে শায়লাকে। উঠোনের লিচু গাছের সাথে ঝোলানো দোলনাটা এখনো আছে। এখনো আছে সেই শান বাঁধানো পুকুর ঘাট যেখানে ওইটুকু বয়সেই সাঁতার শিখে গিয়েছিল শায়লা...ওর আম্মু...হঠাৎ থামিয়ে দিল চিন্তাটাকে ও। বাড়ি দেখাশোনা করার লোক ছিল আগে থেকেই।পুরোনো বিশ্বস্ত পরিবার । নানুদের পুরনো লোক। পুকুরের মাছ আর পেছনের ক্ষেত চাষ করে উঠোনের এক কোণে চালাঘরে থাকে পরিবারটি। তাই বাড়িটা পরিষ্কার পরিচ্ছনই ছিল। একটু আধটু মাকড়সার ঝুল আর ধুলো বালি এই যা। শাড়িটা কোমরে পেঁচিয়ে কাজে লেগে গেল ও।

নায়লার মজা আর দেখে কে। সরকারি কোয়ার্টার অনেক ঘুপচি হয়। শুধু নানুবাড়িতে (শায়লার খালার বাড়ি) গেলেই এত খোলা মাঠ পায় ও। আর রাজবাড়ি দেখে তো ওর মনে হয় নিজেকে প্রিন্সেস মনে হচ্ছে।

নিচতলায় অনেকটা জুড়েই বৈঠকখানা।দুপাশ দিয়ে দুটো সিড়ি উঠে গেছে দোতলায়। সিলিং এ টানা পাখা লাগানো আছে। যদিও পরবর্তীতে পাশে ইলেক্ট্রিক ফ্যান লাগানো হয়েছে, তবুও টানা পাখাটা আছে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল শায়লা। ঊপরেই সবগুলো বেডরুম। বেশীরভাগই তালাবদ্ধ। চাচাকে ডেকে আগেই চাবি নিয়ে রেখেছিল ও। মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে যেন। এতগুলো বছর ধরে এতগুলো প্রশ্ন শায়লার মনের ভেতর, যেগুলোকে সে কখনও আমল দেয় নি,সেগুলো আজ বারবার মনে উঁকি দিচ্ছে। বাবা মায়ের আর ওর শোবার ঘরে ঢুকল শায়লা। সবকিছু আগের মতই মনে হচ্ছে...নাহ অনেক পরিবর্তন। দেয়ালে মায়ের হাতে কাজ করা চুমকি দিয়ে বানানো ওয়ালম্যাট টা নেই। আব্বু র আম্মুর স্টুডিওতে গিয়ে তোলা ছবিটাও বোধহয় ছিল এই দেয়ালে,নাকি ওইটায়?মনে নেই আর শায়লার। আগেকার দিনের খাট। অনেক উচু। খাটের পাশে রেলিং দেয়া। সিঁড়ি পর্যন্ত আছে। "আম্মু...খাবো..." চমকে বাস্তবে ফিরে এল শায়লা। তাড়াতাড়ি নিচে গেল।কিছু একটা খাবার ব্যাবস্থা করতে হবে। একটা নতুন জিনিস দেখল শায়লা সিড়ি দিয়ে নামার সময় । দুইপাশে দুই সিড়ির মাঝখানে, নিচতলায়, বৈঠকখানার পেছনের দেয়ালে একটা জলরঙ্গে আঁকা ছবি। অসাধারণ হাতের কাজ। একটা মহিলার ছবি। নববধুর সাজে, মাথাটা নিচের দিকে কিঞ্চিত ঝুকানো,যেন লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। ছবিটা দেখে শায়লার মনটা ভাল হয়ে গেল।

দিন কাটতে লাগল।আরিফ সারাদিন বাইরেই থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নায়লার টিফিন বানিয়ে ওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে (সারাদিনের এ কাজটা সবচেয়ে কঠিন!!), রেডি করে স্কুলে দিয়ে আসা,টুকটাক কাজ করে আবার ওকে নিয়ে আসা,তারপর আবার নায়লাকে গোছল করিয়ে খাইয়ে দাইয়ে আবার ঘুম পাড়ানো (ফাঁকে নিজেরো একটু ঘুমিয়ে নেয়া),বিকালে উঠে নায়লার সাথে বাইরে খেলা,সন্ধ্যায় ওকে নিয়ে পড়তে বসা, রাতে আরিফ আসতো,একসাথে খাওয়া...এইত,নায়লাকে নিয়েই পুরো দিনটা এভাবেই কেটে যায়...

ব্যাপারটা তখন শুরু হল। তারিখটা ঠিক মনে নেই। কোন এক পূর্ণিমা রাতের কথা। পূর্ণিমা,কারণ সেদিন ঠাকুরগাও শহরে বিদ্যুৎ ছিল না। অথচ ঘর ভর্তি আলো। শায়লা... আহ, আর লুকিয়ে লাভ কি। তুমি তো নিশ্চয়ই এতক্ষনে বুঝতেই পেরেছ আমিই শায়লা। আর তুমিই এই গপের নায়লা?তোমার মনে আছে আম্মু সেই বাসাটার কথা?...ওই যে সেই ছবিটার কথা?

যাই হোক কাহিনীতে ফিরে আসি। আমি সেদিন তোমাদের জন্য রান্নাবান্না শেষ করে রান্নাঘর থেকে মোমটা নিয়ে বের হয়ে ছবিটার সামনের টেবিলে মোমটা রাখতে গিয়ে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। ছবির মেয়েটা আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে...মোম মাটিতে পড়ে নিভে গেল। আমি নড়তে পারছিলাম না। তুমি তখন উপরে, হোমওয়ার্ক করছিলে। ধীরে ধীরে মোমটা তুলে নিয়ে হাতড়ে হাতড়ে রান্নাঘরে গিয়ে মোমটা জ্বালালাম। সাহস পাচ্ছিলাম না। ব্যাপারটা চোখের ভুল ছিল কি না সেটা যাচাই করার মত সাহস তখন আমার ছিল না। চোখের ভুল না হলে? যাই হোক উপরে গেলাম। বিদ্যুৎ আসলো আরিফ আসারও অনেক পরে ... যখন চাঁদের আলোটাই আমাদের জন্য ভাল ছিল।

সকালে উঠে ছবিটা দেখে হাসি পেল। সবই আগের মত... সেদিনই রাতের কথা। এবার বিদ্যুৎ ছিল। ছবিটার লোকেশন এমন যায়গায় যে সিড়ি থেকে উপরে উঠতে গেলেই ওটা চোখে পড়ত। উপরে ওঠার সময়ই দেখলাম এবার। এবার ভয়ংকর কিছুনা। এবার নববধু সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথায় ঘোমটা নেই। আমি এবার আর পালালাম না। সিড়িতেই দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। হঠাৎ স্পষ্ট দেখলাম বধু মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল। মুখ দিয়ে একটা চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এল আমার। কিন্তু পলক ফেলতেই ঘোমটা নতমুখসমেত সেই আগের নববধূ।

(পরের খণ্ডে সমাপ্ত)

।। শায়লা (একটি হরর গল্প) ।। (শেষ পর্ব)

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, October 14, 2011 at 10:34pm
আরিফকে কিছুই বললাম না। পরদিন সকালে চাচা কে ডাকলাম। ছবিটা দেখালাম। তিনি চিনতে পারলেন না। তিনি বললেন ওটা নাকি অনেকদিন ধরেই এখানে ঝোলানো। কেউ কখনো সরায় নি। আমি আকার ইঙ্গিতে জানার চেষ্টা করলাম এ নিয়ে কোনপ্রকার কিংবদন্তী আছে নাকি। কিন্তু তেমন কিছুই পেলাম না।

এরপর কিছুদিন শান্তিতে গেল। বড়জোড় এক সপ্তাহ। এখন কেন জানি ছবিটার উপর একটা কৌতুহল তৈরী হয়েছে...অবচেতন মনেই চোখ চলে যায় ছবিটার কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা দেখার জন্য। সবুরে মেওয়া ফলল। ছবির মেয়েটা হঠাৎ একদিন উধাও। সবই আছে,ছবির ফ্রেম, জলরং। কিন্তু এখন ওটা শুধুই ফাঁকা এক জলরঙ্গের ছবি। Abstract মনে হতে পারে। এবার কিন্তু আর পলক ফেললে মেয়েটা ফিরে এলনা। মেয়েটা উধাও হয়েই রইল। একদিন,দুদিন। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটা যে নেই এটা কেন যেন কেউ লক্ষ্যই করল না। দুদিন পরও যখন মেয়েটা ফিরে এলনা, কেউ খেয়ালো করল না মেয়েটা নেই,তখন আরিফকে বললাম ছবিটার কথা। আরিফ তো হেসেই উড়িয়ে দিল। ওকে নিয়ে নিচে গেলাম। মেয়েটা ফিরে এসেছে। কেন যেন একটা স্বস্তির পরশ বয়ে গেল শরীর দিয়ে। এর পর ছবিটাকে প্রায়ই নড়াচড়া করতে দেখতাম। ঠিক নড়াচড়া নয়,নানা রকম অবস্থানে। ও মনে হয় আমার উপস্থিতিতে অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছিল। অন্য কাউকে দেখাতে গেলে আগের মত হয়ে যেত। আমার সামনেই অন্যরকম ।

কতটা সহজ হয়ে গিয়েছিল তা টের পেয়েছিলাম আর কিছুদিন পর। সেদিন কি যেন কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ চোখের কোণে নড়াচড়া দেখে তাকালাম, দেখি মেয়েটা নড়ছে। নড়ছে মানে নড়ছে। নববধূ র গহনাগুলো খুলে খুলে রাখছে...। আমি তাকিয়ে আছি খেয়াল করে হাসল। মেয়েটার হাসি অনেক সুন্দর ছিল। দাঁত অসমান ছিল মেয়েটার, হাসির ঔজ্জ্বল্য আরো বেড়ে গিয়েছিল তাতে।

এরপর আমার যেন কী হয়েছিল। আমি যখনি সময় পেতাম ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। মেয়েটা হাসত। ঠোট নাড়ত, কথা বলার চেষ্টা করত বোধহয়,কিছুই শোনা যেত না। মাঝে মাঝে বিয়ের শাড়ির বদলে আটপৌড়ে শাড়ি পরেও আসত। আমার অনেক প্রশ্ন ছিল। ও কে। কেন এখানে সে। কিভাবে সে নড়াচড়া করে ইত্যাদি । কিন্তু ও কিছু শুনতে পেত না। আমি যেমন কিছু পাই না।

ব্যাপারটার অস্বাভাবিকত্ব আমার চোখে তখন ধরা পড়ছিল না। আরিফ প্রথম খেয়াল করল যেদিন,সেদিন আমি নায়লাকে,মানে তোমাকে স্কুল থেকে আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে স্কুলে ঢুকিয়ে বাসায় এসে সেই যে দাড়িয়েছি ছবির সামনে, আমার হুশ ফিরল আরিফের ঝাঁকুনিতে। আমার মাথা তখনো কেমন যেন লাগছিল। আরিফের কথা মাথায় ঢুকছিল না। চাচামিয়া কয়েকদিন ধরেই ব্যাপারটা খেয়াল করেছিলেন, তিনি সুযোগমত লাগিয়ে দিলেন। আরিফ আরো ক্ষেপে গেল। আমি কিছুই শুনছিলাম না,শুধু হঠাৎ যখন শুনলাম "আমি ওটা পুড়িয়ে দেব"...তখন মাথায় যেন আগুন ধরে গেল। আমি নাকি "না না" করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।

এরপরের একদিনের ঘটনা আমার আবছা আবছা মনে আছে । আরিফ বাকিটুকু বলেছিল আমাকে। আমাকে বিছানায় শুইয়ে আরিফ চাচামিয়া কে পাঠিয়েছিল ডাক্তারের কাছে...তারপর ও গিয়ে ছবিটা পুড়িয়ে দিয়েছিল...

ঘটনা এখানেই শেষ হবার কথা ছিল।

পরদিন আরিফ অফিসে যাওয়ার আগে তোমাকে স্কুলে দিয়ে গেল। অফিসে গিয়ে সে খালা কে ফোন করেছিল। খালাকে সে পুরোপুরি কিছু না বলে শুধু জিজ্ঞাসা করেছিল ছবিটার কথা... খালার বয়স হয়েছে। তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে আঞ্চলিক ভাষায় অনেক কথা বললেন যার সারমর্ম এই,এই ছবিটা অনেকদিন ধরেই ও বাড়িতে ছিল। তার বাবারো জন্মের আগে। কিন্তু শায়লার বাবা তো ওটা পুড়িয়ে দিয়েছিল, ওটা ওখানে থাকার কথা না...

আরিফ দৌড়ে বাসায় আসে...আমার এ সময়টায় আবছা মনে আছে, আমার জ্ঞান ফেরার পর আমি কেন যেন আবার ওই ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়াই,হ্যা,ছবিটা যথাস্থানেই ছিল...আমি ওকে দেখতে পাই...ও আমাকে দেখে নড়েচড়ে ওঠে,হেসে ওঠে,যেন বহুদিনের পুরনো সখী ফিরে এসেছে...এবার আমি ওর হাসির শব্দ শুনতে পাই...কি প্রাণোচ্ছল সে হাসি!!!...আমিও হেসে ওঠি...খিল খিল করে...ও আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়...এই প্রথমবার...এই প্রথমবার ওর হাত ফ্রেমের বাইরে আসে...আমিও হাত বাড়াই...এত আনন্দ...এত আনন্দ তখন আমার মনে...!!!...ওকে ছুঁয়ে দিলাম...কেমন যেন ভেজা ভেজা...পুরো হাতটা ধরলাম...ভেজা হাতটা ক্রমে ক্রমে শুকিয়ে আসছে...আমি হাত ধরে টান দিলাম...ও বেরিয়ে এল ফ্রেমের বাইরে, পুরোপুরি বাইরে...ওর পুরো শরীর জলরঙ্গের...আস্তে আস্তে ও শুকিয়ে রক্ত মাংসের মানুষে পরিণত হচ্ছে...ওকে দেখতে আমারই মতন লাগছে যেন...

এবার আমি জ্ঞান হারাই নি...আরিফের আসার শব্দ শুনে ও আমাকে চোখ টিপ দিয়ে আবার ফ্রেমের ভেতর ঢুকে যায়...আরিফ আসে...আরিফ একনজর ছবিটা দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে... আমাকে বলে..."এখানে আর এক মুহূর্তও না"... আমার মনের ভেতর হাহাকার করে ওঠে...মন হাঁচড়ে পাঁচড়ে অজুহাত খুজতে থাকে... আমি যাব না...কিছুতেই না..."আজ রাতটা...শুধু আজ রাতটা..." মনের ভেতর কে যেন বলে ওঠে... "আজ রাতটা থেকে যাই...খুব দুর্বল লাগছে..." আরিফ আমার ক্লান্ত রোগতপ্ত চেহারা দেখে রাজী হয়ে যায়...

সেদিন রাত...নিচে কে যেন বিড়বিড় করে গান গাইছে...আর আমার নাম ধরে ডাকছে..."শায়য়য়য়লা...শায়য়য়লা..." আমার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে...আমি ঊঠে বসি বিছানায়...সারাদিনের টেনশনে আরিফ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন...নায়লাও ঘুমাচ্ছিল আমার পাশে... পা টিপে টিপে বাইরে বেরোই...নিচে নামি...ছবির সামনে গিয়ে দেখি ছবি ফাঁকা...খুব আনন্দ লাগে...তাহলে ও এখন আমাকে ছাড়াই বেরুতে পারে... রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে ও...আলো আঁধারিতে কেমন যেন পরিচিত লাগছে মুখটা...কিন্তু... এ ত... আমার মুখ... আমার মনে এই প্রথম অশুভ ছায়া উঁকি দেয়... হাত দুটো ওর পেছনে...ওর পায়ের প্রতিটি পদক্ষেপে নূপুরের শব্দ হচ্ছে...কেন যেন ওর হাসি...নুপুরের শব্দ আগের মত অত মধুর লাগছে না... উপরে পায়ের শব্দ...আরিফের ঘুম ভেঙ্গেছে...আমাকে বিছানায় না পেয়ে আরিফ নিচে নেমে আসছে.. ও এখনো হাসছে...ওর হাত পেছন থেকে সামনে এল হঠাৎ...ওর হাতে কি ঠিকমত বোঝা যাচ্ছে না...একপাশের সিড়ি দিয়ে আরিফ নামছে,আমি ছবির ফ্রেমের সামনে আর ও আরেকপাশের সিড়ির সামনে...ও এগিয়ে আসতে থাকে...ওর হাতে ধরা জিনিসটা উপরে উঠতে থাকে আস্তে আস্তে... আমার চোখে পড়ে জিনিসটা...সাথে সাথে বিদ্যুৎ চমকের মত সব বুঝে যাই আমি...সবকিছু...অতিত,বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব একাকার হয়ে যায় চোখে্র সামনে...সব... কিন্তু আমার কিছু করার নেই...আমি বর্তমানের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছি...আমার মুক্তি নেই...২০ বছর আগে দেখা ঘটনাপ্রবাহ আবারো ঘটতে থাকে...আমি এগিয়ে যাই ওকে আটকাতে...আমি আরিফকে মরতে দিতে পারি না...আমি জানি বাঁচাতে পারবো না...কিন্তু চেষ্টা তো আমাকে করতেই হবে...আরিফ তাকিয়ে আছে...আমি চেপে ধরেছি "ও"র ছুরিটা ...জানি আরিফ "ও"কে দেখতে পারছে না...ও দেখছে আমার হাতে ছুরিটা ধরা...কিন্তু আমি থামাতে চাইছি ওকে...ওর গায়ে অমানুষিক শক্তি...ওর ছুরি ধরা হাত এখন মাথার ওপর...আমার হাতও ওটার উপর...আরিফ বিষ্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়া আছে...ওকে আঘাত করার আগ মুহূর্তে ও আমাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করে..."কেন?" আমার মুখ থেকে আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসে আর ওর মুখ থেকে অট্টহাসি... অবশেষ তখন বুঝতে পারলাম ওইদিন আমার ঘুম ভেঙ্গেছিল কিসের শব্দে... আমার আর ওর ছুরি ধরা হাত ছোবল মারে আরিফের বুকে...আরিফ পড়ে যায়...আমি পারলাম না প্রথম আঘাতটা ঠেকাতে...দ্বিতীয়টাও না...না তৃতীয়টা... "আম্মু..." বাকিটুকু তো তোমার মনেই আছে,তাইনা নায়লা?

নায়লা...আমি আর তোমার বাবা তোমাকে আমাদের জীবন থেকেও বেশী ভালবাসি, ভালবেসে যাব...আমি তোমার বাবাকে খুন করিনি...এটা তুমি জান...আমার মত আজীবন এই কষ্টটা তোমাকে বয়ে বেড়াতে হবে না আর...এটাই তোমার জন্য আমার বিদায়ী উপহার... তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ মা...তুমি ওই ছবির ধারে কাছেও যেও না .....পারলে বাড়িটা পুড়িয়ে ফেলো... অতীত,আর বর্তমান তো ধ্বংস হয়েছে...ভবিষ্যৎ যেন নিরাপদ থাকে...এই কামনায়

ইতি তোমার মা শায়লা

------------------------ নায়লার দাদীর রেখে যাওয়া চিঠি টা আজই জেলখানায় নায়লার হাতে পৌছেছে... নায়লা দীর্ঘশ্বাস ফেলে..."বড় দেরী করে ফেললে মা..." "অসুবিধা নেই মা...আমার কাছে সারাজীবন আছে..."...জেলখানার গার্ডের কাছে খাতা কলম নিয়ে চিঠি লিখতে বসে নায়লা... এখন আর বাংলাদেশ সরকার ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয় না...

(পালিয়ে বিয়ে করায় শায়লার প্রতি আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল আরিফের পরিবারের , শায়লা আরিফের খুনিও বটে...তাই শায়লার ফাঁসি হবার আগে লেখা এই চিঠি কখনোই নায়লার হাতে পৌছেনি...দাদী মারা যাবার পর সেটা ওর এক চাচা ওর কাছে পাঠায়) লেখকঃ Amin-Al-Maksud
ফেসবুক আইডিঃ চন্দ্রাহত মাকসুদ
ফেসবুক প্রোফাইলঃ http://www.facebook.com/MaXuD

।। মৃত্যুর কাছাকাছি ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, October 19, 2011 at 11:07pm
আমার মেঝো কাকা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ জেদি আর একরোখা ছিলেন। দাদুর নির্দেশ অমান্য করে রাত বিরাতে গ্রামের বন্ধুবান্ধবের সাথে চলে যেতেন দূরে যাত্রা দেখতে অথবা মাছ শিকারে। প্রথমেই বলে নেই, গ্রামে গঞ্জে রাতে মাছ ধরার অন্যতম কারন হল, তখন মাছ ধরা পড়ে বেশি। তাই মানুষ বেশিরভাগ সময়ই রাত হলে মাছ ধরতে যায়। এমনি ভাবে একদিন আমার কাকা তার কয়েক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে প্রায় ২ মাইল দূরের একটা ঝিলে। ঐ ঝিলে প্রচুর শাপলা ফুটতো। আর ঝিলটি নাকি গভিরতায় অনেক বেশি ছিল। তাই সাধারণত মানুষ খুব একটা যেত না সেখানে মাছ মারার জন্য। ঐ ঝিল নিয়ে অনেক খারাপ কথা ছড়িয়ে আছে গ্রাম জুড়ে। প্রায় প্রতি বছরই ৩-৪ জন মানুষ ঐ ঝিলে ডুবে মারা যায়। তাদের মাঝে অনেকেই ভালো সাঁতারু ছিলেন। তো, এসব কথা জানত বলে দাদা দাদু মানা করলো যাওয়ার জন্য। কিন্তু কাকা জেদ ধরলেন যে তার যেতেই হবে। ভয়ে সরে গেছেন ভেবে পড়ে তার বন্ধুরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে এটা কাকা মেনে নিতে পারছিলেন না। যাই হোক, উনারা খুব আয়োজন করে ৪ বন্ধু মিলে গেলেন মাছ ধরতে। কাকা এবং উনার বন্ধু কাশেম লুঙ্গী কাছা দিয়ে প্রায় কোমর পানিতে নেমে গেছেন। উদ্দেশ্য ছিল একটু গভীরে গিয়ে জাল মারা। একটু বলে নেই, সেদিন আমাবস্যা ছিল। তেমন আলো ছিল না চারপাশে। তাই উনারা একটা হ্যাজাক বাতি নিয়ে গিয়েছিলেন। যাই হোক, উনারা জাল মেরে ঠিকঠাক ভাবেই উঠে এলেন। উপরে যেই দুজন ছিলেন তারা অপেক্ষায় ছিলেন। আস্তে আস্তে জাল গুটাতে লাগলেন। কাকারাও এর মাঝে ঝিল থেকে উঠে পড়েছেন। ৪জন মিলেই ঝিলের পারে দাঁড়িয়ে জাল গুটাচ্ছিলেন। হটাত কিসের যেনও আওয়াজ হল পেছন থেকে। কে যেনও ধমক দিল মনে হয়। হ্যাজাকের আলো ছিল, সেই আলোতে পেছনে ঘুরে দেখলেন উনারা। কাউকে দেখলেন না। ভাবলেন হয়তো মনে ভুল। আবারো জাল টানতে লাগলেন।
হটাত কি যেনও হল, উনাদের হাত থেকে জালের দড়ি খুব দ্রুত সরে যেতে লাগলো। মনে হতে লাগলো কে যেনও খুব শক্তি দিয়ে উনাদের হাত থেকে সেই জালটা ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। চারজন শক্ত সামর্থ্য জওয়ান, এদের হাত থেকে জাল টেনে নিয়ে যাওয়ার মত কোনও মাছ সেই ঝিলে ছিল না। কাকারা প্রান প্রন চেষ্টা করতে লাগলেন জালটা থামানোর জন্য। তাল সামলাতে না পেরে কাকার এক বন্ধু পা পিছলে পড়ে গেলেন। পড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে হরহর করে গভীর পানির দিকে তলিয়ে যেতে লাগলেন। মনে হতে লাগলো, কেউ যেনও তার পা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কাকারা বিস্ফোরিত চোখে তা দেখতে লাগলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কাকার সেই বন্ধু বার বার পানির নিচে ডুবে যান আর যখনই মাথা উপরে উঠে তখনই চিৎকার করে সাহায্য করতে বলেন। কাকার বন্ধুরা হই হই করে পিছনের দিকে চলে যেতে লাগলেন। তারা ঝিল থেকে উপরে উঠে মাটির রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কিন্তু কাকার মনে হয় বুদ্ধি জ্ঞান লোপ পেয়েছিল। উনি বিমুরের মত সামনে, আর গভীর পানির দিকে যেতে লাগলেন। পেছন থেকে কাকার বন্ধুরা চিৎকার করছিলো, যাসনে, যাসনে করে। কিন্তু কাকা উনাদের কথা না শুনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। হটাত কাকা আবিষ্কার করলেন উনার পায়ের নিচ থেকে মাটিগুলো যেনও ধপ করে সরে গেলো। দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু ক্ষণিকের মধ্যে পানিতে ডুবে গেলেন কাকা। হটাত অনুভব করলেন কে যেনও পানির নিচে টানছে তাকে। খুব শক্তি তার প্রতিপক্ষের। একে তো পানির নিচে, তার উপর টান সামলাতে পারলেন না কাকা। ডুবতে লাগলেন। নাক দিয়ে পানি ঢুকতে লাগলো। ফুসফুসের জমা করা বাতাস গুলো বুদ বুদের মত করে বেরিয়ে গেলো চিৎকারের সাথে। যেহেতু পানির নিচে তাই কোনও আওয়াজ হল না। আস্তে আস্তে দমে যেতে লাগলেন কাকা। শেষবারের চেষ্টার মত সরব শক্তি দিয়ে লাথি মারলেন নিচের দিকে।
অনুভব করলেন কিছু একটার গায়ে ঠেকল পা টা। অনেকটা মানুষের শরীরের মত লাগলো। কাকার মনে হল হয়তো পানির নিচে কেউ আছে যে তাকে নিচ থেকে টানছে। নিজেকে বাঁচানোর একটা তাগিদ ফিরে এলো। যদি পানির নিচের মানুষটার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় তাহলে হয়তো বেচে যাবেন। নিজের সব শক্তি এক করে একটু ঝুঁকলেন কাকা। নিজের পায়ের কাছে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলেন। এলোপাথাড়ি কয়েকটা আঘাতের পর একটা গিয়ে লাগলো কারো মাংশ পেশিতে। কাকার এক পা থেকে বাঁধন ছুটে গেলো। এবার কাকা দিগুন উদ্যমে আবারো হাত চালালেন, কয়েকটা মারার পো মনে হতে লাগলো হয়তো এ যাত্রা বাঁচবেন না, ঠিক তখনই আর একটা ঘুষি গিয়ে লাগলো সেই মাংশ পিণ্ডে। দ্বিতীয় পাটাও মুক্ত হলে এবার। টর্নেডোর গতিতে উপরে উঠতে লাগলেন কাকা। উনার হাতটা শরীরের পাশে ছিল। হটাত হাতে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলেন কাকা। মনে হল কে যেনও ধারালো কিছু বসিয়ে দিলো উনার হাতে। কোনমতে উপরে উঠলেন কাকা। উপরে উনার বুন্ধুরা বন্ধুর বিপদ দেখে ঝুঁকি নিয়েই ঝিলে নেমে পড়েছিলেন। কাকাকে দেখেই উনাকে টেনে নিয়ে চললেন রাস্তার দিকে। জ্ঞান হারালেন কাকা। পরদিন সকালে কাকার জ্ঞান ফিরে আসে। এরপর একটানা ২৬ দিন উনি জ্বরে ভুগেন। এরপর আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকেন। ওহ, কাকার সেই বন্ধুটিকে পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। ঝিলটি আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও কোথাও পায়নি গ্রামের লোকেরা।
আমার কাকার হাতের সেই তীব্র ব্যাথাটি কিসের ছিল জানা যায়নি। তবে মানুষ কামর দিলে যেমন হয় তেমন একটা দাগ পরে যায় কাকার হাতে। সেই হাত তিনি আর ব্যাবহার করতে পারেননি পরে। এমনকি এখন পর্যন্ত উনি হাতটা নাড়তে পারেন না। বাংলায় রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (এডমিন) যিনি পাঠিয়েছেনঃ মশিউর রাহমান মিশুক
ফেসবুক আইডিঃ Moshiur Mishuk

রহস্য- রোমাঞ্চ-ভৌতিক গল্প : আজরাইল

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Wednesday, October 26, 2011 at 10:31pm
ঘটনার শুরু আজ থেকে চার বছর আগে এক রাতে। আমি সিলেট এর ওসমানী মেডিকেল এ একটা সেমিনার শেষ করে নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিলাম ঢাকায়। সাধারণত আমার পাজেরো টা আমার খুব প্রিয় হওয়াতে আমি কাউকে ড্রাইভার রাখিনি। সেদিন ও আমি নিজেই চালিয়ে নিয়ে আসছিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে খানিক টা ঘুম ঘুম ভাব আসলেও মন টা সতেজ ছিল- কারন সেই সেমিনারে আমি আমার গবেষনার জন্য পেয়েছি প্রচুর হাততালি। সাংবাদিক রা ফটাফট ছবি তুলে নিয়েছিল আমার। পরদিন পত্রিকায় আমার ছবি সহ লিড নিউজ ও হবার কথা ই ছিল এবং হয়েছিল ও তাই। আমি একটা বিশেষ হার্ট সার্জারি আবিষ্কার করেছিলাম- যেটা আজ পৃথিবীর সব দেশে দেশে রোগীদের জীবন বাঁচাচ্ছে- মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন জীবনের।সেমিনারের সফলতা তাই জুড়ে ছিল আমার মনে প্রানে।
রাস্তায় যেতে যেতে সেদিন আমি গান শুনছিলাম। গানের তালে তালে ধীর গতিতে গাড়ি চালাই আমি। বেশি গতি আমি কখনোই তুলিনা।সেদিন ও ৫০ এর কাছাকাছি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। সিলেট থেকে রওনা দিয়ে উজানভাটি এলাকার কাছাকাছি আসতেই হটাত করে আমার সামনে এক সাদা পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধ লোক এসে দাঁড়ায়। রাত তখন প্রায় দুইটা। এই সময় রাস্তায় হাইওয়ের গাড়ি গুলো ছাড়া কোন যানবাহন ও ছিলনা। হটাত করে আমার সামনে কোত্থেকে লোকটা এসে পড়ল কিছু বুঝে ওঠার আগেই। আমি ও লোকটাকে বাঁচাতে গিয়ে ও পারলাম না। সোজা সেই লোকের ঊপর চালাতে বাধ্য হলাম। আর সেখানেই গাড়ির সামনের অংশে বাড়ি খেয়ে লোকটা ছিটকে পড়ল হাত পাঁচেক দূরে। আমি হার্ড ব্রেক কষে সেইবৃদ্ধের কাছে ছুটে গেলাম। কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ। মাথার কাছটায় আঘাতে মৃত্যু বরন করেছে বৃদ্ধ ততক্ষনে। জীবনে ও আমি কোন দিন এক্সিডেন্ট করিনি।সেটাই ছিল আমার প্রথম এক্সিডেন্ট। আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কিভাবে কি করব বুঝে ঊঠতে না পেরে কিছুক্ষন ঝিম মেরে থাকলাম সেখানেই। তারপর বৃদ্ধকে গাড়িতে তুললাম। পাশে বসিয়ে আবার ড্রাইভ করলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।
ঢাকায় পৌছে সোজা মেডিক্যাল এ নিয়ে গেলাম লাশ টাকে। সেখানে গিয়েই পুলিশ কে জানানো হল। পুলিশ এসে আমার কাছ থেকে জবানবন্ধি নিয়ে লাশ টা থানায় নিয়ে গেল। আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম পুলিশ কে সব খুলে বলব। কিন্তু পরে কি ভেবে যেন আমি মিথ্যে বলি। পুলিশ ও আমার কথা গুলো কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই বিশ্বাস করে। নিজের কাছে আমি কিছু টা অপরাধী বোধ করলে ও নিজের ইমেজ বাঁচাতে এই মিথ্যেটা আমাকে বলতেই হয়েছে।
তারপর কেটে গেছে অনেক গুলো মাস। আমি আমার আবিষ্কৃত প্যারা সার্জারি সিস্টেম এর জন্য অনেক গুলো পুরষ্কার ও পাই। খ্যাতি আর অর্থ দুটোই এসে ধরা দেয় আমাকে। ধীরে ধীরে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বেড়ে চলে আমার। নিজেকে কিছুটা ঈশ্বরের সমপর্যায়ের ভাবতে থাকি। এরজন্য মিডিয়া ও কম দায়ী নয়।খবরের পাতায় কারো না কারো জীবন বাঁচানোর জন্য আমি ঊঠে আসতে থাকি নিয়মিত ভাবে। ধীরে ধীরে আমি অনেক অনেক বেশী অহংকারী হয়ে ঊঠি। কাউকেই পরোয়া না করার একটা ভাব চলে আসে আমার মাঝে। মানুষ কে আমি মনে করতে শুরু করি হাতের পুতুল। আমি চাইলেই যেকোন মৃত্যু পথযাত্রীর জীবন বাচিয়ে দিতে পারতাম। এই জন্য আমার কাছেই ছুটে আসতে লাগল হাজারো মানুষ। এই যশ আর খ্যাতি যখন তুঙ্গে তখন আমার কাছেই রুগী হয়ে আসেন বাংলাদেশের প্রথিত যশা রাজনীতিবিদ রেজোয়ানুল হক। আমি বাকি সবার মত উনাকেও আস্বস্থ করেছিলাম যে উনার কিছু ই হবেনা।
যেদিন উনার অপারেশন – সেদিন আমি আরো দুটি হার্ট অপারেশন করে ফেলেছিলাম। তাই কিছু টা ক্লান্তি ছিল। একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপারেশন গুলো করতে হয়। তাই ক্লান্তি ভর করে সহজেই। আমি ক্লান্ত থাকলে ও মনে মনে পুলকিত ছিলাম কারন এর পরেই আমি রেজোয়ানুল হকের অপারেশন করবো। উনাকে যখন অজ্ঞান করা হল তখন আমি নিজের কস্টিউম পড়ছি। জুনিয়র ডাক্তার কে দিয়েই এগুলো করাই আমি। আমি শুধু গিয়ে কাটাকাটির কাজ টা করি। সেদিন ও জুনিয়র তিনজন ডাক্তার মিলে সব প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা সেরে আমাকে কল দিল। আমি ও গেলাম। আর গিয়েই শুরু করলাম অপারেশন। ওপেন হার্ট সার্জারি ছিল সেটা। আমি যখন সব কেটে কুটে মাত্র হার্ট টাকে দেখতে লাগলাম এমন সময় আমার চোখ গেল ওটি রুমের বাম কোনায়। সেখানে আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে সেই বৃদ্ধ। আমি দেখে চোখের পলক ফেলতেই দেখি উনি নেই। হ্যালুসিনেশন মনে করে আবার অপারেশন শুরু করলাম। রেজোয়ানুল হকের হার্ট এর নিলয় এর দুটো শিরায় চর্বি জমেছিল। আমি সেগুলো পরিষ্কার করতে করতে হটাত করে কানের কাছে একটা কাশির শব্দ শুনলাম। প্রথমে পাত্তা দিলাম না। কারন এইখানে কোন ভুল হলেই রোগী মারা যাবেন। আমার কোন রকম ভুলের কারনে এতবড় মানুষ টার মৃত্যু হবে ভেবে আমি আবার মনযোগ দিলাম। কিন্তু আবার কাশির শব্দ আসল। কাশিটা আসছিল বাম দিক থেকে। আমি বামে মাথা ঘুরিয়ে দেখি বৃদ্ধ হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঠোট নাড়ার আগেই বলে ঊঠল –
“বাবাজি তুমি তো উনাকে বাঁচাতে পারবানা”
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি আকাশ পাতাল চিন্তা করে চলেছি। একজন মৃত মানুষ কিভাবে আমার পাশে এসে দাড়াতে পারে সেটাই মাথায় আসছিল না। আমি কোন উত্তর দেবার আগেই সেই লোকটি বলল-
“ কি বুঝতে পারছো নাতো? শোনো- আমি জানি তুমি অনেক চেষ্টা করবে উনাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু পারবেনা”- বলেই আবার হেসে দিল সাদা পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধ।
আমি বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। কি বলব বুঝতে পারছিনা। উনাকে কি বলবো বুঝতে বুঝতে কাটিয়ে দিলাম পাঁচ সেকেন্ড। তারপর আবার মনযোগ দিলাম অপারেশনে। রোগীর অপারেশন সাকসেস হল। আমি ও হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। সেলাই করে দিয়ে শেষ বার ড্রেস করতে দিয়ে আমি মাস্ক খুলতে যাব এমন সময় হটাত করে রোগীর পালস রেট গেল বেড়ে। মেশিন গুলো যেন চিৎকার শুরু করে দিয়েছে।
হটাত করে বুকের ভেতর ধপধপ করা শুরু করল। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে রোগীর প্রেশার দেখলাম- বেড়েই চলেছে প্রেশার। হটাত করে এই অবস্থা হবার কথা না। আমি কয়েকজন ডাক্তারকে বললাম প্রেশারের ইনজেকশন দিতে। ওরা সেটা দিতেই প্রেশার ডাউন হওয়া শুরু করল। কিন্তু আবার ও বিপত্তি। এবার প্রেশার কমতে লাগল। আমি আবার টেনশনে পড়ে গেলাম। কিন্তু কোনভাবেই কিছু করতে পারলাম না। রোগীর হার্ট বিট ভয়ানক ভাবে কমতে কমতে একেবারে শুন্য হয়ে গেল নিমিশে। এবং আমি তাকিয়ে তাকিয়ে রেজোয়ানুল হকের মরে যাওয়া দেখলাম। প্রথম বার আমার সামনে এক রোগী বলে কয়ে মরে গেল- আমি কিছুই করতে পারলাম না।
আমি আমার রুমে এসে বসে পড়লাম। রাগে আমার গা জ্বলতে শুরু করল। নিজেকে অনেক অসহায় মনে হতে লাগল। পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় রেজোয়ানুল হকের পাশাপাশি আমার হতাশাগ্রস্থ মুখ ও প্রকাশিত হল। মিডিয়া এমন এক জিনিস- কাঊকে মাথায় তুলতে দেরী করেনা- কাউকে মাটিতে আছাড় মারতে ও দেরী করেনা। আমাকে ও মাটিতে নামিয়ে আনল ওরা। আমার বিরূদ্ধে হত্যা মামলা রজু করা হল সেই নেতার দলের লোকজনের পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকার আমার পাশে ছিল বলে মামলা ধোপে টেকেনি। টাকা পয়সা খাইয়ে পুলিশ আর আদালতের সবকটাকে কিনে নিয়েছিলাম।
তারপর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমি ও ফিরে আসি বাস্তব জীবনে। রোগীদের সেবায় মনযোগ দেই। ছোটখাট অপারেশন এ যোগ যেই। এরপর আসতে আসতে আমার জীবন স্বাভাবিক হয়ে ঊঠে।কিন্তু এর ঠিক ছয় মাস পড়েই এই মহিলা ডাক্তার কে অপারেশনের দায়িত্ব পরে আমার উপর। আমি নিরুপায় ছিলাম। উনাকে আমি কর্মজীবনে শ্রদ্ধা করতাম। আমার শিক্ষিকা ছিলেন। উনার হার্টে ব্লক ধরা পড়াতে উনাকে অপারেশনের দায়িত্ব উনি নিজেই আমাকে দেন। খুব ছোট অপারেশন। হরহামেশাই এই ধরনের অপারেশন হত-এখন ও হয়। হার্টের যে ধমনী গুলো ব্লক হয়ে যায় সেগুলোতে রিং পড়ানোর কাজ। আমি প্রথমে রাজি হইনি। কিন্তু রোগীর পীড়াপীড়ি তে রাজি হই।
অপারেশন টেবিলের সামনে এসেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। কারন সেখানে সেই দিনের মতই বাম কোনায় বসে ছিল সেই বৃদ্ধ। উনাকে দেখেই বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠে আমার। অজানা আশংকায় কেঁপে উঠে মন।
কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাকে অপারেশন করতে হয়। আমি ও শুরু করি। হার্টের ধমনী একটাতে রিং পড়ানো শেষ করে আরেকটা যখন ধরবো এমন সময় কানের কাছে ফিসফিস করে বৃদ্ধ সেই আগের মতই বলল-
“বাবাজি- আজকা ও তুমি উনারে বাচাতি পারবানা”
হাসি হাসি মুখের ভেতর যেন রাজ্যের ঘৃণা। আমি উনার চেহারার দিকে এক পলক তাকিয়েই আবার কাজ শুরু করলাম। কিন্তু রিং পড়াতে গিয়েই হটাত করে ভুল করে কেটে গেল ধমনী টা। গলগল করে রক্ত বের হতে শুরু করল। নিরুপায় হয়ে তিন চার জন মিলে সেই রক্ত বন্ধ করে ধমনী পরিষ্কার করে জোড়া লাগাতে বসল। আমি নিজেও হাত দিলাম। কিন্তু যা হবার তাই হল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে রোগীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেল। আমি রক্তের জন্য লোক পাঠালাম। কিন্তু সামান্য ও পজেটিভ রক্ত সেখানে ছিলনা। এতবড় একটা হাসপাতালে ও পজেটিভ রক্ত না পেয়ে সেই ডাক্তার আপা মারা গেলেন চোখের সামনে। আমার কিছু ই করার ছিলনা।
এরপর একদম ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি। আমার পরিবার থেকে বিয়ে করার জন্য চাপ আসল। আমি ও বিয়ে করলাম। মিতি- আমার বৌ- লক্ষ্মী বৌ আমার। যাকে বলে একেবারেই আটপৌরে মেয়ে। বিয়ে হয়েছে আমাদের মাত্র তিন সপ্তাহ। এরমাঝেই আমাকে করেছে আপন। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকলে যা হয়- বিয়ের তিন সপ্তাহের মাথায় ওর আব্দার রাখতে গেলাম কক্সবাজার এ। সেখানে প্রথম দিনেই একটা আছাড় খেল মিতি বাথরুমে। প্রথমে আমি তেমন কিছু না বলে পাত্তা না দিলে ও পরে বুঝতে পারি মিতির কোন একটা বিশেষ সমস্যা হয়েছে।
তখনই আমি মিতিকে নিয়ে আসি ঢাকায়। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারি মিতির মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে আছাড়ের ফলে। খুব দ্রুত মিতিকে অপারেশন করাতে হবে। নিজের স্ত্রী বলে মিতির অপারেশন আমি করতে চাইনি। কিন্তু সেই মুহূর্তে সব ভাল ভাল সার্জন রা দেশের বাইরে থাকাতে আমাকেই দায়িত্ব নিতে হল। আমি ও মেনে নিলাম অর্পিত দায়িত্ব।
আমি এখন বসে আছি মিতির রুমের সামনে। আরেকটু পর মিতির অপারেশন। আমি মিতির দিকেই তাকিয়ে ছিলাম- কিন্তু হটাত করে চোখ গেল মিতির কেবিনের বাম কোনায়। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে সেই বৃদ্ধ। জানিনা কি হবে আজকে। যে কোন ভাবে মিতিকে বাঁচাতেই হবে। কিন্তু আজরাইলের বেশে বৃদ্ধের মুচকি হাসি দেখে আমার আশার প্রদিপ নিভতে শুরু করে দিয়েছে…… (সমাপ্ত) লিখেছেন : নষ্ট কবি

ভৌতিক গল্প : ফাঁড়া - [ মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন ]

by ভূত ও ভৌতিক -> ভয়ঙ্কর , রোমহর্ষক এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব গল্প on Saturday, October 1, 2011 at 10:56pm
(১)
ছোট বেলা থেকেই আমি দেখতে খুব সুন্দর । ছেলেদের এতোটা সুন্দর না হলেও চলে । তার উপর আবার তিন বোনের পর আমি একমাত্র পুত্র সন্তান । তাই মানুষ এবং অন্যান্য সব কিছুর নজর থেকে বাঁচাবার জন্য আমার শরীরে তাবিজ কবজের কোন অভাব হইনি কখনও । বাবা মা তো আছেনই খালা ফুপুরাও সবসময় বাড়াবাড়ি রকমের আধিখ্যেতা করতেন । এ যে কেমন যন্ত্রনা তা বলে বোঝানো যাবে না । কখনও কোথাও একা যেতে পারতাম না । করো সঙ্গে মেলামেশা নিষেধ ছিলো । স্কুল বাসা ; বাসা স্কুল এইছিলো আমার ছেলেবেলার জীবন । আমার বাবা এমনিতে ছিলেন বেশ গম্ভীর স্বভাবের মানুষ । সবাই তাকে খুব ভয় করতো । শুধু আমার বেলাতেই বাবা ছিলেন একটু ভিন্ন । আমার সকল অন্যায় ছিলো বাবার কাছে মাপ । মার কথা তো বাদই দিলাম । তবে আমিও ছিলাম বেশ চাপা স্বভাবের পারত পক্ষে কাউকে কষ্ট দিতাম না । দুস্টামিও খুব একটা করতাম না । আমার বোনেরা কোন জিনিষ পত্র ভাঙ্গলে আমার নাম করে বেঁচে যেতো । বোনদের দোষ নিজে স্বীকার করে আমিও বেশ মজা পেতাম । তবে লেখা পড়ায় আমি ছিলাম খুব ভাল । এই একটা জিনিষ নিয়ে আমি বেশ অহংকার বোধ করতাম । পড়া লেখা করতে আমার বেশ ভাল লাগতো । এছাড়াও আমার বাগানে সময় কাটাতে , নিজ হাতে গাছ পালা লাগতে খুব ভাল লাগতো । এ অভ্যেসটা আমার এখনও আছে । একাজটা আমি এখনও করি । সময় পেলেই বাগানে বসে যাই । আমার আর একটি প্রিয় কাজ ছিল রাজ হাঁস পোষা । ছোট বেলাতে আমার বেশ কয়েক রঙের রাজ হাঁস ছিলো । এসব করেই আমি বড় হতে থাকি । ঢাকাতে আমাদের বেশ কয়েটা বাড়ী থাকার পরও আমার ২০ বছর বয়স পর্যন্ত আমরা ঢাকার বাহিরে ছিলাম । তা ও আমার জন্য । কোন একজন ফকিরের নির্দেশে এমনটা করেছেন বাবা মা । ফকিরের নির্দেশ মোতাবেক আমার জীবনে নাকি তিনটি ফারা আছে । একটি খুব ছোট বেলায় । দ্বিতীয়টি ২৫ বছর বয়সে । আর তৃতীয়টি শেষ বয়সে । প্রথম দুটো ফারা কাটাতে পারলে বেঁচে থাকার গেরান্টি ছিলো ৮০ বছর । অশরীরী চাপ যাকে বলে । প্রথম ফারাটি আসে আমার ৮ বছর বয়সে । পানিতে পরে গিয়ে । বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে সবার আড়ালে পানিতে পরে গিয়ে মরতে বসেছিলাম । কিন্তু আমার মেজ বোনের কল্যানে আমি যে যাত্রায় বেঁচে গেলেও আমার বোনটি মরে গিয়েছিলো । যে কস্ঠ আমি কোন দিন ভুলবো না । কোন দিন না । বোন হারাবার যন্ত্রনা না যে কি তা বলে কয়ে শেষ করা যাবে না । সবাই ফারা বললেও আমি এটাকে এক্সডেন্ট হিসাবে দেখি ।
(২)
ঢাকা ইউনিভারসিটি থেকে আমি ম্যানেজমেন্টে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছিলাম । তাই ইউনিভারসিটিতে চাকুরী ও ছিলো পাকা । জয়েনও করেছিলাম । কিন্তু কিছুদিন যেতেই বুঝলাম শিক্ষকতা আমার জন্য নয় ।শিক্ষক হতে হলে যে জ্ঞান ,যে ধর্য্য থাকা প্রয়োজন তার কোনটাই আমার ছিলো না । তাছারা প্রতিদিন একই ক্লাস । একই লেকচার । অল্পদিনেই কেমন হাপিয়ে উঠি । তাই বাবার মত না থাকা সত্তেও চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলাম ওয়ান্ড ব্যাংকের একটি রুরাল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে । আজ ঢাকা তো কাল রাজশাহী পরশু দিনাজপুর । দারুন লাগছিল আমার । বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম কয়েকটি দিন । কিন্তু ঐ ফারা আমার পেছন লেগেই ছিলো । একটি প্রজেক্ট নিয়ে রওনা হয়েছি ঢাকার অদূরে কালিগন্জে । সঙ্গে ওয়াল্ড ব্যাংকের গাড়ী । আষার মাস । আকাশ এই মেঘলা তো এই পরিস্কার । এই হাঁসছে এই কাঁদছে । মফসলে থাকার ফলে আমি রোড ঘাট কোথাও তেমন চিনিনা । সে ক্ষেত্রে ড্রাইভার রমিজ মিয়াই ভরসা । ঝানু লোক । বাংলাদেশের এমন কোন জায়গা নেই যে ব্যাটা চিনে না বা যায়নি । তিন দিনের কাজ । দু’দিন থাকতে হতে পারে । শেষ দিন ফিরে আসবো । এদিকে আমার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে পুরোদমে । বোনদের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে বাসা প্রায় খালি । তাই মা,বাবা চাচ্ছিলেন ছেলের বউ দিয়ে শূন্য বাড়ী পূণ্য করতে ।
আমরা রওনা হয়েছি দুপুর ২টার দিকে । রমিজ মিয়া বলেছে রাস্তা ঘাট ভাল হলে তিন কি চার ঘন্টায় পৌছে যাওয়া যাবে । সারাদিনই আকাশ কেমন মেঘলা হয়ে আছে । সকাল থেকে কয়েক পশলা বৃস্টি হয়ে গেছে । আমি গাড়িতে চোখ বন্ধ করে বসে আছি । ঘুমিয়েই গেছিলাম । হঠাৎ প্রচন্ড ব্রেক কষার শব্দে সেই সঙ্গে ঝাকিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । চোখ খুলে দেখি রমিজ মিয়া একটি মেয়ের সঙ্গে বেশ জোড়ে জোড়ে কথা বলছে ।
কি হয়েছে রমিজ ?আমি জিজ্ঞেস করতে রমিজ মিয়া বললো দেখুন না স্যার ; বলা নাই কওয়া নাই । কোথা থেকে গাড়ির সামনে এসে পড়লো মেয়েটা। আর একটু হলে তো মরতো । তখন তো আমাকে জেলের ভাত খেতে হতো । এখন সড়তে বলছি তাও সড়ছে না । এ্যাই যে সরেন । সরেন বলছি । রমিজ হম্বি তম্বি করছে ।
আমি বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে আসছে ।গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে । মেয়েটির বয়স আনুমানিক বিশ বাইশ হবে । শরীরে বেশ দামি পোষাক । দেখে গ্রাম্য মেয়ে বলে মনে হয় না । শরীরের রং বেশ ফরসা । আমি হাতের ইশারায় মেয়েটাকে কাছে ডাকলাম ।
মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে এলো ।
গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার ? কোন সমস্যা ?
মেয়েটি মাথা নেড়ে যা বললো তা হলো । সে এই গ্রামে নতুন এসেছে । বাসা থেকে বেড় হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছে । বাধ্য হয়ে সাহায্যের জন্য আমাদের গাড়ি থামিয়েছে । আমি বললাম আমরা ও তো এখানকার কিছু চিনি না । আপানাকে কি ভাবে সাহায্য করবো ?
মেয়েটি বললো জ্বী, আমি কালিগন্জ জমিদার বাড়িতে যাবো । প্লিজ আমাকে একটু পৌছে দিন । জমিদার মোসলে উদ্দিন আমার দাদু হন । যে কাউকে বললেই জমিদার বাড়ী দেখিয়ে দেবো । প্লিজ একটু পৌছে দিন না । মেয়েটি বলার ভঙ্গিতে কিছু একটা ছিলো আমি না করতে পারলাম না ।
দরজা খুলে দিয়ে আমি ওপর পাশে চেপে বসলাম । রমিজকে বললাম আগে জমিদার বাড়িতে যেতে । মেয়েটি গাড়িতে বসতেই কেমন একটা চাপা ফুলের গন্ধে নাকে ভেসে এলো । আমি চোখ বন্ধ করে আছি । মেয়েটি ও চুপ করে আছে । এর মধ্যে টের পেলাম আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে । মেয়েটি রমিজকে তারা দিচ্ছে তারাতারি যাবার জন্য । রমিজ চোখ মুখ শক্ত করে গাড়ি চালাচ্ছে । বোঝা যাচ্ছে পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি চালাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ।
মেয়েটিকে আমি জিজ্ঞেষ করলাম আপনি কোথায় থাকেন ?
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমার নাম এলেনা । আমি নিউইর্য়কে থাকি । বাবার সঙ্গে গতকাল এসেছি ।আজ আমার বিয়ে । ঘুরতে ঘুরতে কি ভাবে যে এত দূর চলে এসেছি বুঝতে পারছি না ।
আজ আপনার বিয়ে ? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেষ করলাম ।
হ্যা । আজ আমার বিয়ে । মেয়েটি গম্ভির মুখে বললো ।
গ্রামের সরু রাস্তা । তার উপরে বৃষ্টি । আমি রমিজ কে তারা দিতে সাহস পাচ্ছি না । তা ছাড়া মেয়েটিকে আমার কেমন জানি ভাল লাগছে । এই যে মেয়েটি অস্থির হয়ে পাশে বসে আছে আমার কাছে তা কেমন জানি ভাল লাগছে । মনে হচ্ছে মেয়েটি যখন গাড়ি থেকে নেমে যাবে তখন আমার কষ্ট লাগবে । হয়তো আমি মরে যাবো । অদ্ভুত এক মায়া কাজ করছে আমার ভেতর । নিজের এলো মেলো চিন্তায় আমি নিজেই অবাক হলাম । চাপা ফুলের গন্ধে পুরো গড়ি মো মো করছে । বাহীরে ঝুম বৃস্টি । এ যেনো এক অন্য জগত ।
(৩)
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বিশাল একটা বাড়ীতে আলো জ্বলছে । বিয়ে বাড়ীর আলোসজ্জা দ্বারা বাড়ীটি সজ্জিত । আমরা গাড়ি নিয়ে ভেতরে ডুকলাম গেলাম । বিশাল জমিদার বাড়ির বিশাল উঠান । তবে কোন লোকজন দেখা যাচ্ছে না । মনে হয় বৃষ্টির জন্য সবাই ঘরের ভেতর অবস্থান করছে । উঠান জুড়ে বিশাল সামিয়ানা টানানো । উঠানের এক পাশে বড় বড় হাড়ি ,পাতিল রাখা । দেখে বুঝা যায় বড় রকমের রান্না বান্নার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে । কিন্তু লোকজন কোথায় ? আমার উৎসুক চোখ লোকজন খুঁজছে । রমিজ গাড়ীটি থামাতেই মেয়েটি বললো আমরা এসে পরেছি । বলে দরজা খুলে দৌড়ে গেলো সামনে একটি আধ খোলা দরজার দিকে । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতেই দামি পোষাক আশাক পড়া কয়েকজন বের হয়ে এলো । মেয়েটি আমাদের দেখিয়ে কিছু বলছে । আমি রমিজকে গাড়ি ঘুরাতে বললাম । যেনো বের হতে সুবিধা হয় ।
লোকজন সমতে মেয়েটি গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো । আমি ভদ্রতা করার জন্য নেমে দাড়ালাম । মেয়েটি হেসে একটি মধ্য বয়স্ক লোককে দেখিয়ে বললো আমার বাবা । আমি সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে ধরলাম ।
লোকটি আমার হাতে ধরতেই আমি চমকে উঠলাম । প্রচন্ড ঠান্ডা একটি হাত । যেনো একটি ঠান্ডা স্রোত আমার শিরদারা বেয়ে নেমে গেলো ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আমার মেয়েকে সাহাষ্য করবার জন্য । চলুন ভেতরে চলুন । লোকটি হেঁসে বললো ।
- জ্বি ; কিছু মনে করবেন না । আজ নয় । আমাদের একটু তারা আছে । আজ বসতে পারবো না ।
-আরে তা কি হয় । কিছু একটা মুখে দিয়ে তবেই যেতে হবে । লোকটি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বললো ।
মেয়েটি বললো । চলুনতো । বৃষ্টি কমুক তখন যাওয়া যাবে ।
এমন সময় একটি লোক এসে বললো ছোট হজুর বড় হজুর মেহমান নিয়ে ভেতরে যেতে বলেছেন ।
আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি আমার হাত ধরে বললো চুলুন তো । You May go after some later .
আমি আর কিছু বললাম না । চলতে শুরু করলাম ।
বিরাট হল রুম । দুপাশে সারি সারি চেয়ার সাজানো । দেয়ালে বড় বড় বাঁধানো ছবি টাননো। মাথার উপর ঝাড়বাতি । রুমের শেষ প্রান্তে দু-টো সিংহাসন আকৃতির চেয়ার রুমটির গাম্ভির্য নিয়ে এসেছে । কেমন রাজা বাদশাদের দরবার মনে হচ্ছে । বয়স্ক একজন লোক ভেতরে ডুকে দুটো চেয়ারের একটিতে বসলো । আমাদের কাছে পরে আসা লোকটি বয়স্ক লোকটির কানে কানে কিছু বলতেই । বয়স্ক লোকটি হাতের ইশারায় সবাইকে বসতে বললেন । আমি অবাক হলাম একটু আগেও দুপাশে রাখা চেয়ার গুলো খালি ছিলো । এখন দেখছি প্রতিটি চেয়ারে লোক বসে আছে । এতোগুলো লোক কখন এলো ? আমি কাউকে আসতে দেখলাম না কেন ? নাকি আগেই সবাই বসে ছিলো ? কি আজব ! আমি কি তবে ভুল দেখলাম ? আমার পেছনে একটি চেয়ার রাখা হলো । বয়স্ক লোকটি আমাকে ইশারা করলো বসতে । আমি বসে পড়লাম । মেয়েটি আর তার বাবা আমার পেছনেই দাঁড়িয়ে রইলো ।
আপনাকে ধন্যবাদ । আমার নাতনিকে সাহায্য করার জন্য । আপনি আমার মেহেমান । লোকটির কন্ঠস্বরে মনে হলো ঘরের আলো গুলো কেঁপে কেঁপে উঠলো । ভদ্রলোক ঠিক যেন বাংলা বলছেন না । অন্য কোন একটি ভাষার টান স্পস্ট । আমি কেমন জানি ভয় পেয়ে গেলাম । হঠাৎ নার্ভাস ফিল করছি । আমি কিছু বলতে পারলাম না । চুপ করে বসে আছি । লোকটি আবার বলতে শুরু করলো -
আজ আমার নাতনির বিয়ে । আপনি বিয়ে শেষ হলে যাবেন । কোন অসুবিধা হবে না । আরাম করুন । আমি আবারও কিছু বলতে পারলাম না । কে যেনো আমার কন্ঠরোধ করে আছে । আমি কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু কোন শব্দ বেড় হলো না । কি করবো বুঝতে পারলাম না । সঙ্গে সঙ্গে বাবা মার কথা মনে হলো । অজানা কোন বিপদের আশংকায় দেহ মন কেঁপে উঠলো । ফকিরের সেই ফারার কথা মনে হলো । আমি সত্যিকারের ভয় পেলাম ।
যান বিশ্রাম করুন । ওকে নিয়ে যাও । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো আসুন । আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো উঠে মেয়েটির পিছু পিছু রওনা হলাম । মেয়েটি আমাকে নিয়ে হল রুম থেকে বের হয়ে । বিশাল বারান্দা ধরে দোতালায় উঠার সিঁড়ি দিয়ে বড় একটি ঘরে নিয়ে এলো তারপর হেঁসে বললো ।
-এটাই আপনার বিশ্রামের জায়গা । আরাম করুন । আমি ইতি মধ্যে অনেকটা ঠিক হয়ে এসেছি । আমি বললাম আপনারা কি শুরু করলেন বলুন তো ? আমার অনেকে কাজ পরে আছে ।আমাকে যেতে হবে । আমি যাচ্ছি বলে ঘুরে দাঁড়ালাম ।
মেয়েটি আমাকে কোন বাঁধা দিলো না ।
আমি দরজা দিয়ে আবার বারান্দায় বের হয়ে এলাম । জোড়ে জোড়ে পা চালিয়ে নীচে নেমে গেলাম । নীচে নামতেই দেখি তিন চারজন লোক দাঁড়িয়ে আছে এক হাতে বড় রাম দা । অন্য হাতে মানুষের কাটা মাথা ধরে আছে । মাথাগুলো থেকে টপ টপ করে রক্ত ঝরছে । আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে উপড়ে চলে এলাম । মেয়েটি এখন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে দেখে - আমি চিৎকার করে বললাম নীচে মানুষ খুন করে কিছুলোক দাঁড়িয়ে আছে ।
মেয়েটির মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো না । মুখ কঠিন করে বললো -
ওরা বিদ্রোহ করেছিল । তাই হত্যা করা হয়েছে । কেউ দাদুর কথা না শুনলে এমনই হয় । আপনিও ইচ্ছা করলে না শুনে পারেন ।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটির তাকিয়ে আছি ।
আপনার কোন ভয় নেই । আমার বিয়েটা হয়ে যাক । তারপর চলে যাবেন । একটু সাবধানে থাকবেন । ঘর থেকে বেড় হবেন না । কিছু দরকার হলে এ দড়িটি ধরে টান দেবেন লোক চলে আসবে । মেয়েটি দরজা টান দিয়ে চলে গেলো । আমি ঘরটির মাঝে একা হয়ে পরলাম ।
(৪)

হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিলাম । শুয়ে থেকেই বুঝতে পারছি বেশ বড় একটি খাটে শুয়ে আছি । ঘরময় আবচ্ছা আলো । এমন সময় হঠাৎ দরজায় খুট খুট শব্দে উঠে বসলাম । পরপর কয়েকবার শব্দ হলো । তারপর বিরতি দিয়ে আবারও খুট খুট শব্দ । আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম কে কে ?
কোন উত্তর এলো না । কিন্তু আবারও শব্দ হলো খুট খুট খুট ।
আমি বিছানা থেকে নেমে পড়লাম । একটানে দারজা খুলে ফেললাম । ঠান্ডা একটা হাওয়া এসে লাগলো শরীরে । কেউ নেই । শুন্য বারান্দা খাঁ খাঁ করছে । আমি বের হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে নাকি ।হয়তো পালাবার এটা একটি মোক্ষম সময় হতে পারে ।
আমি আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলাম । কোথাও কেউ নেই ।
মনে মনে রমিজ কে খুঁজছি । কে জানে কেমন আছে ?
ঠিক এমন সময় কানে একটি চাপা কান্নার শব্দ ভেসে এলো । কে যেন থেমে থেমে কাঁদছে । বারান্দা দিয়ে সোজা হাঁটতেই কান্নার শব্দ আরো স্পস্ট হলো । কান্নার শব্দ ধরে আমি একটি ঘরের বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম । দরজায় কান পেতে শুনলাম । ঘরের ভেতর থেকেই আসছে কান্নার শব্দ । এখন আরো ভাল ভাবে শুনা যাচ্ছে । আমি দিধায় আছি দরজায় নক করবো কিনা ।
দরজার উপড় আস্তে হাত রাখতেই খুলে গেল দরজা ।
প্রথমটায় চোখে কিছু পড়লো না । ঘর প্রায় অন্ধকার । কান্নার শব্দ থেমে গেছে । নাকে এসে লাগলো তীব্র চাপা ফুলের ঘ্রাণ । এ ঘরটিও দেখতে আমি ঘরটিতে আছি সেটির মতো দেখতে । আসবারপত্র প্রায় এক । মাঝখানে একটি বড় খাট । এক পাশে একটি বড় আলমিরা । একটি ছোট টেবিল । টেবিলের সামনে একটি চেয়ার উল্টে পরে আছে মাটিতে । দু’পা ভেতরে ঢুকে খাটের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম । এমন দৃশ্য আমি কোন দিন দেখিনি । খাটের মাঝ খানে সিলিং এর সঙ্গে ঝুলছে এলেনা নামের মেয়েটি । হাত দু-টো দু পাশে ছড়ানো । মাথাটা সামনের নীচের দিকে নামানো ।শরীরটা আলতো ভাবে দুলছে । ভয়ে আমি হতবাক হয়ে গেলাম । কি করবো বুঝতে পারছি না । হাত পা কাঁপছে ।
হঠাতই চারিদিকে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো । নানান শব্দে মাথার ভেতরটা ঘুরছে । বারান্দা দিয়ে কারা যেনো দৈড়ে করছে । আমি টেবিল এর গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । কি করবো বুঝতে পারছি না । কেন জানি মনে হল আমি মারা যাচ্ছি । দোয়া দুরুদ পড়তে চাইলাম কিন্তু কিছু মনে করতে পারছি না । গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ।
ঠিক এমন সময় দরাম করে সময় দরজা খুলে গেলো । আমি চমকে উঠলাম । আর একটু হলে প্রায় চিৎকার করে উঠতাম ।ভয়ে বুক বেশ জোড়ে জোড়ে উঠানামা করছে । ভেতরে ঢুকলো এলেনা । আমি আবারও চমকে উঠলাম ।
আপনি এখানে ?আসুন আমার সঙ্গে আসুন ।
বলেই আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো বাহিরের দিকে । দরজা দিয়ে বেড় হতে হতে আমি খাটের দিকে তাকালাম । দেখলাম লাশটা তখন ঝুলছে ।
আমি কোন রকম বললাম ওটা কে ?
কেউ না । আপনি পালান । বাড়ীতে প্রজারা আগুন দিয়েছে । দাদুকে মেরে ফেলেছে । সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই মেরে ফেলছে আপনি পালান । মেয়েটির সঙ্গে বারান্দা ধরে ছুটতে ছুটতে আমি দেখলাম পুরো বাড়ী জ্বলছে । আপনাকে পালাতে হবে । আসুন আমার সঙ্গে । মেয়েটি আমার হাত ধরে বারান্দা দিয়ে আরো জোড়ে ছুটতে লাগলো । আমাদের আশ পাশ দিয়ে নানা লোকজন ছোটাছুটি করছে । আমি আগুনের আচ টের পাচ্ছি । মেয়েটি আমাকে নিয়ে দোতালায় চলে এলো । এ ঘর ও ঘর ধাক্কা দিয়ে দেখছে কোন ঘরে ঢোকা যায় ।
অবশেষে বারান্দার শেষ মাথায় এসে একটা জানালা দেখিয়ে বললো এখান দিয়ে লাফিয়ে পড়ুন । আমি দাঁড়িয়ে আছি । কি করবো বুঝতে পারছি না । তাড়াতাড়ি করুন । প্রজারা দেখলে কেটে ফেলবে । জাষ্ট গো । জাষ্ট গো বলে মেয়েটি আমায় ঠেলে জানালায় তুলে দিলো । আমি লাফিয়ে পড়লাম অন্ধকারে । পরিশেষ : দোতালা থেকে লাফিয়ে পরার ফলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি । দু-দিন পর হাসপাতালে জ্ঞান আসে । রমিজের অবস্হা নাকি আরো খারাপ । প্রায় পাগল হয়ে গেছে । কাউকে চিনতে পারছে না । যাকে দেখছে তাকেই কামড়াতে আসছে । ওকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে পাবনায় । প্রায় দু মাস পর সুস্হ্য হয়ে আমি আবার কালিগন্জে যাই । যাওয়ার পথে একটু থামি জমিদার বাড়ীর সামনে । বাড়ীর পুরো কাঠামো পুড়ে গেছে । স্থানিয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম । আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে জমিদারের অত্যাচারে অতিষ্ট প্রজার নাকি বাড়িটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল । জমিদার মোসলে উদ্দিন কে প্রজারা হত্যা করে । জমিদারের নাতনিসহ আর সবাই আগুনে পুড়ে মারা যায় । অথচ পুরো ঘটনাটি আমার চোখের সামনে ঘটলো দু মাস পূর্বে । একে কি বলবো আমি ভৌতিক ঘটনা না আমার সেই ফারা ।।

।। সংগৃহীত গল্প – ১০ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, October 26, 2011 at 10:39pm ।। সিংহাসন - নষ্ট কবি ।। আজ আপনাকে এক অদ্ভুত গল্প শোনাবো। যদি ও জানি আপনি এর এক দন্ড ও বিশ্বাস করবেন না। ভাববেন আমি পাগল কিনবা বদ্ধ উন্মাদ। কিনবা মানসিক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসা কেউ।কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি আজ যে কথা গুলো বলবো তাতে বিন্দু মাত্র মিথ্যা লুকানো নেই। আমি লেখক হতে পারি, বানিয়ে বানিয়ে প্রচুর গল্প লিখতে পারি - কিন্তু আমি আজ যে জিনিসটা নিয়ে আপনাদের কাছে লিখছি সেটা আমার সামনেই আছে। একটা সামান্য সিংহাসন মাত্র এটা। আমি এটাতে বসেই লিখছি আপনার কাছে। আমি এটা সম্পর্কে যা যা লিখবো সব সত্য লিখবো এটা প্রতিজ্ঞা করেই শুরু করলাম। ঘটনার শুরু যখন আমি মেসে থাকি- ঢাকায় এক অভিজাত এলাকায়।বাবার অনেক টাকা থাকায় আমোদ ফুর্তিতে আমি ছিলাম একেবারেই মত্ত। আমি পড়তাম এক অভিজাত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে। সারাদিন আড্ডা- নেশা করা- বিভিন্ন যায়গায় হটাত করে চলে যাওয়া ছিল আমার নিত্য দিনের অভ্যাস। আমি কুমিল্লার ধর্ম সাগরে নেশা করে নৌকায় ঘুরেছি- সমুদ্রে চাঁদের আলোর নিচে বসে বসে বন্ধুদের মাঝে বিলিয়েছি ঘুমের মন্ত্র। নীল পাহাড়ে গিয়েছি একদম ঠান্ডার মাঝে। এসব করে অভিজ্ঞতা ও আমার কম হয়নি। আমি সেই অভিজ্ঞতা গুলো জমিয়েই লিখেছি ১০ টা উপন্যাস। সব গুলোই বই আকারে আছে। আপনারা হয়ত "নীলাভ তারার কালচে আলো" উপন্যাস টা পড়েছেন। এইত কদিন আগে ঈদে এটা থেকে নাটক হয়ে গেল। জাহিদ হাসান আর জয়িতা অভিনয় করেছিল। যাই হোক সেই এক সময় আমি গিয়েছিলাম সুন্দর বন। সময়টা বেশিদিন আগের না। মাত্র তিন মাস আগে। প্রথমে গিয়েছিলাম খুলনা- সেখান থেকে বরগুনা ঘুরে সুন্দরবন । একসপ্তাহ ছিলাম আমি সেখানে- সাথে ছিল আমার তিন মেস মেট। আমরা একসাথেই পড়ি। লেখা পড়া শেষ হবার উপলক্ষে আমাদের এই ট্যুরের স্পন্সর আমি। ফেরার আগেই ছয়দিন আমরা অনেক অনেক আনন্দ করেছি। টাকা খাইয়ে এক বনবিভাগের লোক কে আমরা ঢুকে ছিলাম চিত্রা হরিণ শিকার করতে। আমি নিজেই একটা মেরেছি। সেটার মাংস পুড়িয়ে খেয়েছি নদীর পাড়ে। আমি যেখানেই যাই অঢেল টাকা নিয়ে যাই। সেবার ও নিয়েছিলাম অনেক টাকা। ইচ্ছা ছিল সব ঊড়িয়ে খালি হাতে দেশে ফিরব। কিন্তু হলনা। সুন্দরবন থেকে ফেরার পথে আমরা খোঁজ পেলাম একটা বজরার। এটা এক সৌখিন মানুষ সুজন মোল্লার। উনার বজরা তে আমরা ঊঠেছিলাম শুধু মাত্র নৌকা ভ্রমণের জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়েই আমরা জানতে পারি এই বজরা ছিল কুখ্যাত ডাকাত করিম মোল্লার। এবং এই সুজন মোল্লা তার ই সন্তান। শুনে তো আমরা অনেক ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু আমাদের সুজন মোল্লা অভয় দেয়। সে এখন ডাকাতি করেনা। তার বাবার রেখে যাওয়া অঢেল টাকা আছে। সে কোন কাজ করেনা- পায়ের উপর পা তুলে খায়। এভাবে কথায় কথায় আমাদের সাথে সুজন মোল্লার বেশ ভাব হয়। আমরা সেইদিন রাতে বজরায় একসাথে জোছনা দেখলাম। পরদিন আমাদের তিনজন কে সুজন মোল্লা কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখালো। সেগুলো ছিল তার ই বাবার রেখে যাওয়া ডাকাতির মাল পত্র। এর মাঝে একটা সিংহাসন দেখলাম আমি। দেখেই আমার খুব ভাল লেগে গেল। আমি এটার কাহিনী জানতে চাইলেই উনি বললেন আজ থেকে প্রায় বছর পঞ্চাশ আগে একবার ডাকাতি করতে গিয়ে আরেক ডাকাত এর সাথে লড়াই করে এই সিংহাসন কেড়ে নেন করিম মোল্লা। সেই ডাকাত- যে এই সিংহাসন এর মালিক ছিল - সে এটা পেয়েছিল তার বাবার কাছ থেকে। তার বাবা ছিল ব্রিটিশ আমলের কুখ্যাত ডাকাত নিরঞ্জন পালী। তিনি এটা নিয়ে এসেছিলেন উত্তর বাংলার জমিদার জ্ঞানদা চরণ মজুমদার এর সভাকক্ষ থেকে। নিরঞ্জন পালী বেশ হিংস্র ছিলেন। তিনি যখন এই সিংহাসন কেড়ে নিতে যান তখন এটাতেই বসা ছিলেন জ্ঞানদা চরণ। একটা তলোয়ার জ্ঞানদা চরণের পেটে আমুল বসিয়ে লাশ সহ সিংহাসন নিয়ে আসেন তার আস্তানায়। সেখান থেকে হাত ঘুরে এই বজরায়। এটা পাওয়ার পর প্রায় ১৫০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখন ও সিংহাসনটার অদ্ভুত জেল্লা দেখে আমি অবাক হলাম।সিংহাসন এর উচ্চতা আনুমানিক চার ফুট। সবার উপরে একটা ময়ুরের মাথা আর পালক। সেই পালকে গাথা শ'খানেক মুক্তা আর নীলা। দুই হাতলে আছে অদ্ভুত সিংহ খচিত কারুকাজ। হাতলের শেষে সিংহের মুখ হা করে আছে। আর চোখ দুটো তে উজ্জ্বল পাথর। পিঠের নিচে আছে মখমলের নরম আবরন। পায়া চারটার মাঝে জ্বল জ্বল করছে সাতটা করে নীলা। কালচে রং এর কাঠের আবরনে এখন ও কেমন যেন রাজা মহারাজা আবেশ ছড়িয়ে আছে। আমি অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে ছিলাম সিংহাসনটার দিকে। আসলে এই রকম একটা জিনিস এই ভাঙ্গা বজরাতে থাকতে পারে সেটা নিজের চোখেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। যাদুঘরে রাখার মত এই সম্পদ এই আস্তাকুড়ে নৌকায় পড়ে আছে ভাবতেই মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আমার সাথে এক লাখের মত টাকা ছিল। আমি সুজন মোল্লা কে তখন ই সিংহাসনটা কেনার জন্য আবদার করলাম।সুজন মোল্লা ও না করেনি। আমাদের কে জিনিস গুলো দেখানো মানেই ছিল এগুলো আমাদের কাছে বিক্রি করে তার পেট চালানোর ধান্ধা। কিন্তু সে যা দাম চাইল তাতেই মাথায় হাত পড়ল আমার। সেই এই সিংহাসন এর দাম হাঁকল দশ লাখ টাকা। আমি ঊষ্ণা প্রকাশ করতেই সে একজন জহুরী ডাকাল। সেই জহুরী প্রতিটা পাথর আমাদের সামনে পরীক্ষা করে জানাল প্রতিটি পাথর ই মহামুল্যবান। সব মিলিয়ে এই সিংহাসন এর দাম কম করে হলেও কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আমি সেই দিনেই আব্বাকে ফোন করে টাকার ব্যাবস্থা করলাম। উনি সাথে দুইজন লোক ও পাঠিয়ে দিলেন। ঐ লোক গুলো সিংহাসনটাকে নিয়ে রওনা দেয় আমার মেসে এর উদ্দেশ্যে। আমি ঢাকায় পৌছানোর একদিন পরেই ঢাকায় পৌছায় আমার সিংহাসনটা। কিন্তু এটা আনার পরদিন ই এক অদ্ভুত কান্ড ঘটে। রাতে আমি একটা অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজ এ দেরী করে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে ঊঠে দেখি সিংহাসন এর বসার যায়গায় মরে পড়ে আছে একটা বাচ্চা ইদুর।আমি কাজের বুয়া কে ইদুরটা সরাতে বলেই চলে গেলাম ভার্সিটি। যখন ঘরে ফিরি তখন সন্ধ্যা। আমি কলিং বেল অনেক বার টিপে ও কেউ খুলে না দিলে দাড়োয়ান ডেকে দরজা ভাঙ্গার ব্যাবস্থা করি। এবং দরজা ভেঙ্গে আমার রুমে গিয়ে যা দেখি তার জন্য আমি কোনদিন প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম সিংহাসন এর উপর কাজের বুয়া অদ্ভুত ভাবে পড়ে আছে।
নাক দিয়ে রক্তের একটা ধারা। আর কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। দেখে আমি হতভম্ভ। তাড়াতাড়ি হাসপাতাল নিয়ে যাই। সেখানে জানায় সে মারা গেছে অনেক ক্ষন আগে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে। ডাক্তার পুলিশ কেস করতে বলেছিল। আমি টাকা খাইয়ে ডাক্তার কে ম্যানেজ করি। টাকা খাইয়ে দাড়োয়ানের মুখ ও বন্ধ করি। এবং কাজের বুয়ার পরিবার কে দশহাজার টাকা দিয়ে চুপ থাকতে বলে ছেড়ে দেই সেই মেস। এবং সিংহাসনটাকে পাঠিয়ে দেই আমার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে আব্বাই আমাকে সেটা পাঠিয়ে দিতে বলেন। এবং আমার দুর্ভাগ্যের শুরু সেখান থেকেই। দুই সপ্তাহ পর বাসা থেকে জরুরী ফোন আসল। বলা হল আমার খালা খুব অসুস্থ। আমি যেন চলে আসি। আমি তড়িঘড়ি করে গিয়ে দেখি খালা মারা গেছেন। আমি লাশের মুখ টা দেখতে চাইতেই দেখলাম খালার নাকের কাছে জমে থাকা লালচে রক্ত। বুঝতে বাকি থাকল না যে খালা সেই সিংহাসন এ বসেই মারা গেছেন। আমি সেইদিন ই জানাজার পর ফোন করলাম সুজন মোল্লা কে। সে আমাকে জানাল এই সিংহাসন অভিশপ্ত। কেউ এটাতে বসলেই সে একটা ঘোরের মাঝে চলে যায়। তারপর সে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই ঘুম কখনো ভাঙ্গে না। এতেই সুজন মোল্লার বাবা করিম মোল্লা মারা যান। এটাতেই মারা যায় সুজন মোল্লার মেয়ে জামাই।এই কথা আমাকে আগে কেন জানায় নি জানতে চাইতেই ঐ পাশ থেকে ফোন কেটে দেয় সুজন মোল্লা। বুঝলাম ডাকাতি না করলে ও স্বার্থের জন্য করেনা কিছু বাকি নেই তার। দশ লাখ টাকার জন্য মেরে ফেলেছে দুজন মানুষ কে। আমি সেই দিন ই লুকিয়ে ফেললাম সিংহাসনটাকে। বাড়িটা বিশাল আমাদের। পুরোনো বাড়ি- অনেক গুলো রুম। আমি একটা স্টোর রুমে লুকিয়ে ফেললাম সেটাকে। কিন্তু থামাতে পারলাম না মৃত্যু। ঠিক দুইদিন পর খবর আসল আমার বড় ভাই মারা গেছেন। আমি গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখলাম ভাইয়ার ও একই অবস্থা। নাকের কাছে এক ফোঁটা রক্ত। বুঝলাম ভাইয়া কোন একটা কাজে সেই স্টোর রুমে গিয়েছিলেন। গিয়েই চেয়ারটা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে বসে পড়ে। আর মারা যায়। আমি প্রায় উন্মাদ হয়ে গেলাম।ভাইয়ার মৃত্যু কে আমার আম্মা মেনে নিতে পারেন নি। তিনি পরদিন স্ট্রোক করে মারা যান। এবং একে একে আমাদের পরিবারের এগার জন এই সিংহাসন এ বসে বসে মারা গেলেন। আমি শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কিছু ই করার ছিলনা। কারো কাছে বিক্রি ও করতে পারছিলাম না লুকিয়ে ও রাখতে পারলাম না। যেন একের পর এক মানুষ কে টেনে নিয়ে মারে ইচ্ছা মত সিংহাসনটা।আমাদের পারিবারিক গোরস্থানে একটু আগে আমার আব্বাকে কবর দিয়ে এসে সিংহাসনটাতে বসেই লিখছি এই সব। বিশ্বাস করেন এর একবিন্দু ও মিথ্যা না। আমি যা যা লিখেছি তার সব সত্য। যেমন একটু আগে থেকে আমি একটা খুব সুন্দর মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি। চমৎকার একটা শাড়ি পড়ে আছে। হাতে একটা থালা। তাতে নানা রকম ফল। আমি লেখার ফাঁকে ফাঁকে মেয়েটাকে দেখছিলাম। এখন মেয়েটা আস্তে আস্তে সামনে এসে আমাকে ফল খাওয়ালো। আমি ও খেলাম।কি ফল জানিনা। কোনদিন খাইনি। কিন্তু আশ্চর্য স্বাদ। মেয়েটা এরপর থালাটা মাটিতে রেখে নাচ শুরু করল। আমি ঊঠে মেয়েটার সাথে নাচতে চাইলাম। কিন্তু আমাকে জোর করে বসিয়ে দিল আরো দুই জন হটাত করে উদয় হওয়া মেয়ে। তারপর আমাকে একজন একটা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগল। আরেকজন একটা রুপার পাত্রে ঢেলে দিল মদ। আমি মদ খেয়ে মাতাল হতে শুরু করেছি। তাই লিখতে পারছিনা। হয়ত এটাই আমার জীবনের শেষ ক্ষন। কারন একটু আগেই নাকের কাছে একটা সরু রক্তের ধারা টের পেয়েছি। কিন্তু কিছুই করার নেই। আমি ঊঠতে পারছি না সিংহাসন ছেড়ে। মেয়েটার নাচের তাল বেড়েই চলল। কেউ একজন হাতের তালি দিয়ে তবলার বোল দিচ্ছে। মেয়েটা নেচে চলেছে। তা ধিন ধিন ধা তা ধিন ধিন ধা- না তিন তিন না- তেটে ধিন ধিন ধা- ধা- আহ মাথার চার পাশ কেমন যেন হালকা হয়ে আসছে। এখন সামনে শুধু মেয়েটা নাচছে। আর কিছু শুনতে পারছিনা। খুব ঘুম পাচ্ছে। প্রচন্ড ঘুম। আমি ঘুমালাম- জীবনের শেষ ঘুম। আপনি এই সিংহাসন টাকে ধবংস করে দেবেন। ভুলেও লোভে পড়ে এতে বসবেন না। বসলেই নিশ্চিত মৃত্যু ................
ইতি রাওসিভ হাসান.।.।

দুই মাস পর বর্ষা যাদুঘরে এসেছে ওর মা বাবার সাথে।ওর খুব শখ পুরাতন জিনিস পত্র দেখার। তাই প্রতিমাসে সে আসে জাতীয় যাদুঘরে। দেশের প্রায় প্রতিটি যাদুঘরে ও ঘুরে ঘুরে সব মুখস্থ করে ফেলেছে। কিন্তু সে এখন তিন তলার ডান পাশের রুমে নতুন যে সিংহাসন টার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা সে আগের বার আসার সময় দেখেনি। তাই মন যোগ দিয়ে সিংহাসন এর সামনে লেখা বর্ণনা পড়তে লাগল। তাতে লেখা- " পশ্চিম বাংলার জমিদার জ্ঞানদা চরণ এর হারিয়ে যাওয়া সিংহাসন এটা। পাওয়া গেছে গাজিপুরের হাসান পরিবারে। সিংহাসনটা জ্ঞানদা চরণ নিজে বসার জন্য বানায় নি। সেটা বানিয়ে ছিলেন তার ভাই রুক্ষদা চরণের জন্য। এটা ছিল একটা মরন ফাঁদ। এই সিংহাসন এর সব খানেই মেশানো আছে একধরনের অজানা বিষ। এই সিংহাসন এ বসলেই এই বিষ প্রবেশ করে বসা ব্যাক্তির উপর। তারপর আস্তে আস্তে ঐ ব্যাক্তির মৃত্যু হয়। জ্ঞানদা চরণ তার ভাইকে মারার জন্য এটা বানালে ও কুখ্যাত ডাকাত নিরঞ্জন পালী এটাকে হস্তগত করে। এর পর প্রায় ২০০ বছর এটার অস্তিত্ব অজানা ছিল। একমাস আগে হাসান ফ্যামিলির রাওসিব হাসানের মৃতদেহ আবিষ্কারের মাধ্যমে এটা ঊঠে আসে সভ্যতার সামনে। নিরীহ দর্শন এই সিংহাসন হত্যা করেছে প্রায় ৪০ জনের মত নিরীহ মানুষ কে। তাই এটা থেকে দূরে থাকুন ................ লেখাটা পড়েই বর্ষা খুব ভয় পেল। তারপর দৌড়ে চলে গেল ওর বাবার কাছে।

।। সংগৃহীত গল্প – ০৯ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, October 25, 2011 at 10:35pm ।। ভৌতিকবাড়ি - অনীশ দাস অপু ।। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো মার্ক। দৃশ্যটা দেখে হতভম্ব হয়ে গেল মুহূর্তের জন্য। মুখটি মড়ার মতো সাদা, চোখ আর থুতনির নিচে কালো রঙের পোঁচ। ব্যাকব্রাশ করা কালো চুল চকচকে কালো একটা টুপির মতো লাগছে। হাসার সময় ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ঘণ্টাখানেক আগে লাগানো একজোড়া শ্বদন্ত।
‘মার্ক, রেডি হয়ে নাও,’ একটা কণ্ঠ ভেসে এল দোরগোড়া থেকে। ‘ওরা এসে পড়বে এখুনি।’
আয়নার সামনে থেকে ঘুরলো মার্ক। তাকালো প্রধান সহকারী এলিয়টের দিকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। এলিয়টের সুদর্শন চেহারাটা মেকআপ নেওয়ার ফলে এ মুহূর্তে বিকৃত দেখাচ্ছে। তবে পিশাচবাড়িতে আসা মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপতে তারা নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসলো। কিন্তু মার্কের কালো পোশাক পরা প্যাঁকাটি শরীর আর শুকনো মুখটার দিকে একবারের বেশি কেউ তাকায় না।
পিশাচবাড়ির ভারী ওককাঠের পাল্লাজোড়া ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে খুলে যেতে ওদিকে মনোযোগ ফেরালো মার্ক। স্পিকারে বেজে উঠেছে পরিচিত যন্ত্রসংগীত। হরর ছবির মিউজিক ট্র্যাকের মতো, শুনলেই শিরদাঁড়া বেয়ে বরফজল নামতে থাকে মার্কের। ঘরের অন্ধকার কোণে দাঁড়িয়ে আছে মার্ক। দর্শনার্থীরা এখনই ঢুকবে ভিতরে। শুরু করবে ট্যুর।

একে একে ওরা পা রাখলো এন্ট্রাস হল-এ, চেহারায় ফুটে আছে নার্ভাস ভঙ্গি। ঘরের মধ্যে হঠাৎ ঝলসে উঠলো বিদ্যুৎ। লাউডস্পিকারে ভেসে এল বজ্রনিনাদ। লাফিয়ে উঠলো সবাই। তারপর এলিয়ট মসৃণ গলায় পিশাচবাড়ি দেখার জন্য স্বাগত জানালো সকলকে, সতর্ক করে দিল ঘরগুলোর অন্ধকার ছায়া আর ওঁৎ পেতে থাকা আতঙ্কের ব্যাপারে। মার্ক ঈর্ষা নিয়ে লক্ষ্য করলো মেয়েগুলো হাঁ করে তাকিয়ে আছে এলিয়টের দিকে। তারপর কান ফাটানো, কর্কশ একটা চিৎকার শোনা যেতে রেডি হয়ে গেল মার্ক। এবার ওর বলার পালা।
‘এদিক দিয়ে আসুন, ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ,’ কণ্ঠে যতটা সম্ভবত থমথমে ভাব ফুটিয়ে তুললো মার্ক। ‘আমার সঙ্গে সিটিংরুমে চলুন।’ দর্শকরা ওর দিকে প্রত্যাশা নিয়ে তাকালো একবার, তারপর সদর দরজার দিকে পা বাড়ালো। হাতে ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে দলটার পেছনে থাকলো মার্ক।
সিটিংরুমে সবার আগে গটগট করে ঢুকে পড়লো এক স্বর্ণকেশী। প্রায় সাথে সাথে সে এমন গগনবিদারী চিৎকার দিল, বাকিদের আত্মা কেঁপে গেল। আড়ষ্ট হাসি ফুটলো তাদের ঠোঁটে, চোখে ভয়। দরজা বন্ধ করে দিল মার্ক। দর্শনার্থীদের পেছন পেছন অন্ধকার সিটিংরুমে ঢুকলো। এখানে চেয়ার এবং সোফায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মোমের লাশ। স্পটলাইটের আলোয় আলোকিত তাদের শরীর। কী ভয়ংকর চেহারা একেক জনের!
মার্ক লাশগুলোর দিকে না-তাকানোর চেষ্টা করলো। ওগুলো ওর কলজে শুকিয়ে দেয়। এক রোগা তরুণ, ঘাড়ে গোটা চারেক আঘাতের চিহ্ন, চিৎ হয়ে পড়ে আছে সোফায়। মুখখানা মৃত্যুযন্ত্রণায় বীভৎস দেখাচ্ছে। এদের দিকে না-তাকাতে চাইলেও চোখ বারবার ওদিকেই চলে যেতে চায়। মার্ক জোর করে দর্শকদের দিকে নজর ফেরালো। বিকট চেহারার সব লাশ দেখে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে গেছে বলে শুনেছে মার্ক। আজ সেরকম কোনো ঘটনা না। শুধু একটি মেয়ে ভয়ানক আঁতকে উঠলো কাঁধে মার্কের আঙুলের টোকায়। মার্ক তাকে সামনে বাড়তে বলছে। পিশাচবাড়ির পরের অংশ লাইব্রেরি। লাইব্রেরির দরজা খোলার সময় উত্তেজনায় হাত কাঁপছিল মার্কের। দরজা খুলে দর্শকদের ইঙ্গিত করলো ভিতরে ঢুকে পড়তে। উঁকি দিল লাইব্রেরি ট্যুর গাইড লিসার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। ওর দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লিসা। ভারী ও কালো মেকআপের কারণে ভয়ঙ্কর লাগছে চোখজোড়া। লিপস্টিকে রাঙানো লাল ঠোঁটে রহস্যময় হাসি। তারপর, বেড়ালের মতো, লিসা আঁধারের মাঝে যেন পিছলে চলে এল মার্কের পাশে। ‘আজ রাতে পার্টি আছে, মার্ক,’ ফিসফিস করলো সে কানের কাছে মুখ এনে। ‘কিছুক্ষণ পরেই...দেরি কোরো না।’
মেয়েটা দীর্ঘ একটা সময় তাকিয়ে রইলো মার্কের দিকে, তারপর লাইব্রেরির আঁধারে মিশে গেল যেখানে মোমের তৈরি পাঠকরা চেহারায় তীব্র আতঙ্কের মুখোশ এঁটে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
দলের শেষ দর্শক লাইব্রেরিতে ঢোকার পরে মার্ক অনিচ্ছাসত্ত্বেও বন্ধ করে দিল দরজা। লিসাকে আর দেখা যাচ্ছে না। উত্তেজনায় মাথাটা হঠাৎ কেমন ঘুরে উঠলো। পিশাচবাড়িতে অল্প ক’দিন হল কাজ করছে মার্ক, অন্যান্য গাইডরা ওকে পাত্তাই দিতে চায় না, সেই তাদের সঙ্গে আজ আর কিছুক্ষণ বাদে পার্টি। ভাবা যায়!
আজকের দিনটি যেন অসহ্য ধীর গতির। ফুরোতেই চায় না। দর্শকদের একেকটি দল সিটিংরুম থেকে লাইব্রেরিতে যাচ্ছে, লিসার সঙ্গে চোখাচোখি হচ্ছে মার্কের। প্রতিবার ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে মেয়েটা, যেন পার্টি কখন শুরু হবে সেজন্য ওরও তর সইছে না।
রাত ৮:৪৫। আলোকিত ডায়ালে সময় দেখল মার্ক। বিনোদন পার্ক বন্ধ হবার এখনও পনেরো মিনিট বাকি। আরেকটি দল সম্ভবত আসবে পিশাচবাড়ি দেখতে। তারপর নিভে যাবে স্পটলাইট, বিল্ডিং-এর দরজা বন্ধ হয়ে যাবে আজকের দিনের জন্য, গাইডরা বাড়ি ফিরবে। মিস্টার হিলারের চোখ এড়িয়ে গাইডরা কীভাবে পার্টি দেবে মাথায় ঢুকছে না মার্কের। পিশাচবাড়ির কঠিন ম্যানেজার এ লোক, তার নজর ফাঁকি দিয়ে কারও এদিক-সেদিক কিছু করার জো নেই।
দর্শনার্থীদের শেষ দলটা ওককাঠের দরজা দিয়ে ঢুকতে যাচ্ছে এন্ট্রাস হল-এ, ঠিক আগে আগে এলিয়ট একপাশে টেনে নিল মার্ককে। ‘লিসা তোমাকে পার্টির কথা বলেছে?’ জিজ্ঞেস করলো সে।
মুচকি হেসে মাথা দোলালো মার্ক, এই প্রথমবার এলিয়টকে ভালো লাগলো তার।
‘হিলার যেন তোমাকে দেখতে না পায়,’ নিচু গলা এলিয়টের। ‘এই শেষ দলটাকে সিটিংরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে তুমি কোথাও লুকিয়ে পড়বে। হিলার প্রতিরাতে ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে বের হয়, মোমের মূর্তিগুলোর কেউ কোনো ক্ষতি করলো কিনা পরীক্ষা করে দেখে। সে চলে যাবার পরে আমরা সবাই বেরিয়ে আসবো।’
মার্ক জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল কোথায় ওরা মিলিত হবে, দরজা খোলার শব্দে চট করে নিজের জায়গায় ফিরে গেল এলিয়ট। শেষবারের মতো বেজে উঠলো ভৌতিক সংগীত, মার্কের শিরদাঁড়া বেয়ে আবার বরফ-জল নামলো। হঠাৎ মনে হলো আজ রাতটা শুধু মজার নাও হতে পারে। পার্টিতে যাওয়া মানে চাকরির ঝুঁকি নেওয়া। লিসার চোখ আর পারফিউমের কথা মনে পড়তে চিন্তাটা ঝেড়ে ফেললো মার্ক। লিসার জন্য যে-কোনো ঝুঁকি নেওয়া যায়।
সিটিংরুমে শেষ দলটাকে নিয়ে দুরুদুরু বুকে ঢুকলো মার্ক। এ দলের লোকজন যা দেখছে তাতেই চেঁচিয়ে ঘর ফাটাচ্ছে। লাইব্রেরির দরজা যখন খুললো মার্ক, সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে সে। দেখলো, লিসা স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে ঠোঁটে হাসি এঁকে। শেষ লোকটা লাইব্রেরিতে ঢোকার পরে লিসা চলে এল মার্কের কাছে, ‘বেশিক্ষণ লাগবে না,’ ফিসফিস করলো সে। তারপর লাইব্রেরির আঁধারে মিশে গেল।
মার্কের হাঁটুজোড়া দুর্বল ঠেকল, হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। লাইব্রেরি এবং সিটিংরুমের মাঝখানের দরজাটা বন্ধ করে দিল সে, ঘরের অন্ধকার কোণগুলোতে ফ্ল্যাশলাইট ঘোরালো। সাধারণত রাতের এ সময়টাতে সে দর্শকদের শেষ দলটার সাথে বেরিয়ে পড়ে পিশাচবাড়ি থেকে, হাঁটা দেয় বাড়ির উদ্দেশে। মনে পড়লো বাসায় ফিরতে দেরি হবার কথা জানাবার এখন আর সুযোগ নেই। মা চিন্তা করবেন। কিন্তু কোনোকিছুর জন্য পার্টি মিস করতে পারবে না মার্ক।
সিটিংরুমটা রেইলিং দিয়ে ঘেরা, যাতে দর্শক হাত বাড়িয়ে মোমের মূর্তি ছুঁতে না পারে। মার্ক রেইলিং টপকালো। দেখলো, দুই মোমের মহিলার আতঙ্কিত চেহারা থেকে ইঞ্চি কয়েক দূরে আছে সে। গায়ে কাঁটা দিল মার্কের, ওগুলোর ছায়ার আড়ালে হামাগুড়ি দিয়ে এগোলো। ফ্ল্যাশলাইটের সরু আলোর রেখায় আলোকিত হয়ে উঠলো মখমলের পর্দা। এটা মূর্তিগুলোর ব্যাকড্রপ হিসাবে কাজ করে। এ পর্দার পেছনে কী আছে তা নিয়ে কখনও মাথা ঘামায়নি মার্ক। আজ দেখবে কী আছে। ইতস্তত ভঙ্গিতে সে পর্দার একটা কোণ তুলে আলো ফেলল। দ্রুত কী একটা ছুটে গেল মেঝে দিয়ে। লাফ মেরে পিছিয়ে এল মার্ক, এদিক-ওদিক তাকালো। লুকানোর জায়গা খুঁজছে। পর্দার পেছনে লুকিয়ে পড়ার মতো তেমন জায়গা নেই। এমন সময় সদর দরজা খোলার শব্দ শুনলো মার্ক। ঝট করে পর্দার আড়ালে চলে গেল সে এবং সুইচ টেপার শব্দে পাথরের মূর্তির মতো জমে গেল। আলোয় ভেসে গেছে ঘর। 2 ঘড়ি দেখলো মার্ক। ন’টা বাজে। নিশ্চয় হিলার, পিশাচবাড়ি বন্ধ করার আগে রাতের টহল দিতে এসেছে। মাথাটা সামান্য কাত করে পর্দার সরু একটা ফাঁক দিয়ে তাকালো মার্ক। ম্যানেজার কার্পেটে মোড়া প্যাসেজ ধরে হাঁটছে, সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করছে প্রতিটি মূর্তি, উঁকি দিয়ে দেখে নিচ্ছে আসবাবের পেছনদিকটা। মোমের মূর্তির মতোই স্থির হয়ে রইলো মার্ক যতক্ষণ পর্যন্ত না হিলার তার টহল শেষ করলো। শেষে বাতি নেভালো সে, চলে গেল লাইব্রেরিতে।
অন্ধকারে সেই সড়সড় শব্দটা আবার শুনতে পেল মার্ক। যেন ইঁদুর ছুটে যাচ্ছে মেঝে দিয়ে। পায়ে ওটার শরীরের স্পর্শ পেল সে। বহুকষ্টে উদ্গত চিৎকারটা ঠেকিয়ে রাখলো মার্ক, একটানে পর্দা সরালো, তারপর দৌড় দিল। অন্ধকারে একটা মূর্তির গায়ে হোঁচট খেয়ে কাঁপা হাতে ফ্ল্যাশলাইট জ্বাললো মার্ক, পেতলের রেইলিং-এর কাছে মূর্তিগুলোর দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগোলো। এখানে বসলো মার্ক। নিভিয়ে দিল আলো। এখন ওর কাজ অপেক্ষা করা। হিলার তার টহল শেষ করে কখন ফিরে যাবে আর তারপর পার্টি শুরু হবে সে অপেক্ষার প্রহর গোনা।
অন্ধকারে মনে মনে হাসলো মার্ক, লিসা পাশের ঘরেই আঁধারে লুকিয়ে আছে ভেবে। লিসাও হয়তো মার্কের কথাই ভাবছে। লাইব্রেরিঘরের দরজা খুলে লিসার কাছে চলে যেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে মার্কের। হিলারের কাজ এতক্ষণে শেষ হয়ে যাবার কথা। তবে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ওকে থামিয়ে রাখলো। মার্ক ঠিক করেছে অপেক্ষা করবে। এলিয়ট, লিসা কিংবা গাইডদের অন্য কেউ সময় হলেই এ-ঘর থেকে ওকে ডেকে নিয়ে যাবে। তা ছাড়া মার্ককে বসে থাকতেই হবে। কারণ ওদের সঙ্গে কোথায় সাক্ষাৎ হবে বলেনি ওকে কেউ।
মিনিটগুলো ঘণ্টার মতো লাগলো মার্কের কাছে। উত্তেজনা বাড়ছে। চিন্তা করলো, হিলার পিশাচবাড়ির কোন জায়গাটায় এ মুহূর্তে থাকতে পারে। দোতলার কাজ শেষ করে মাটির নিচের জেলখানার মতো সেলারটাতে হয়তো উঁকি দিচ্ছে। আবার ঘড়ির দিকে তাকালো মার্ক। পোনে দশটা। শিউরে উঠলো সে হিম বাতাসে। এয়ার কুলার চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুনেছে রাতের বেলা গোটা বিল্ডিংকে বরফ-ঠাণ্ডা করে রাখা হয়, যাতে মোমের মূর্তিগুলো শক্ত থাকে।
সিধে হলো মার্ক, সিটিংরুমের লাল কার্পেটে মোড়া সরু প্যাসেজে পায়চারি করতে লাগলো। এলিয়ট আর লিসার কথা ভাবছে। ঘরের তাপমাত্রা দ্রুত নামছে, বাড়ছে ঠাণ্ডা। কালো জ্যাকেটের কলার টেনে দিল মার্ক। রাত দশটার সময় সিদ্ধান্ত নিল এন্ট্রান্স হল-এ যাবে সে, এলিয়ট নিশ্চয় ওখানে আছে।
দরজা খুললো মার্ক। ফ্ল্যাশলাইটের আলো ফেললো ছোট ঘরটিতে। আশা করছে যে-কোনো মুহূর্তে হুম করে লাফ মেরে ওর সামনে চলে আসবে এলিয়ট। কিন্তু ঘর সম্পূর্ণ খালি। কালো, প্যানেল করা দেয়ালের কোথাও লুকোবার জায়গা নেই। ভয় লাগলো মার্কের, হেঁটে গেল দুইপাল্লার দরজার দিকে। এ দরজা দিয়ে দর্শকরা ঢোকে। দুটি পাল্লাতেই তালা মারা। ধাক্কা দিল মার্ক। খুললো না। ভয়ের ঠাণ্ডা একটা হাত থাবা বসালো মার্কের কলজেতে, একছুটে সিটিংরুম থেকে ঢুকে পড়লো লাইব্রেরিতে, হিলার আশপাশে থাকতে পারে, সে শঙ্কা আর কাজ করছে না মনে।
‘লিসা!’ অন্ধকারে হাঁক ছাড়লো মার্ক। কণ্ঠটা প্রতিধ্বনি তুলে ফিরে এল ওর কাছে। তারপর ঘরের মখমলের মতো মসৃণ আঁধারে ডুবে গেল। ভয়ের আরেকটা ধাক্কা দাঁড়া করিয়ে রাখলো মার্ককে। হয় এলিয়ট এবং লিসা ওকে নিয়ে খেলছে, নতুবা ওদের কথা বুঝতে ভুল করেছে সে। আতঙ্কিত মার্ক মনে করার চেষ্টা করলো ওরা কী বলেছিল। ওর পরিষ্কার মনে পড়ছে লিসা আজ রাতে পার্টির কথা বলেছিল আর এলিয়ট বলেছিল হিলার চলে না-যাওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে।
ঘরের মোমের মূর্তিগুলোর উপরে আলো ফেললো মার্ক। বীভৎস মুখগুলো দেখছে, এক স্বর্ণকেশী সুন্দরী মহিলার চেহারায় স্থির হলো। ওটা লিসা। মোমের মুখখানায় একই রকম টলটলে বাদামি চোখ আর লাল টকটকে অধর। তবে ঠোঁটের উপরে চারটে সাদা কাটা দাগ। ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় মুখখানা ভীষণ জ্যান্ত মনে হলো, যেন ওর দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ঠোঁট বেঁকে গেছে বিদ্রƒপাত্মক হাসির ভঙ্গিতে। ভয়ানক চমকে গেল মার্ক। আলো সরিয়ে নিল ভৌতিক মুখের উপর থেকে, লাইব্রেরির দরজা দিয়ে একছুটে ঢুকে পড়লো ডাইনিংরুমে।
‘এলিয়ট! লিসা!’ কাঁপা গলায় ডাকলো সে। কোনও জবাব নেই। আছে শুধু খালি পিশাচবাড়ির গভীর নীরবতা। ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় দেখা গেল ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে কয়েকজন। হাঁ হয়ে আছে মুখ, বিষাক্ত খাবার খাওয়ার যন্ত্রণায় অস্থির। ছুটতে শুরু করলো মার্ক, দ্রুত থেকে দ্রুততর হল গতি, দোতলায় বেডরুমে চলে এল। এখানেও শুধু মৃত্যু আর হত্যার বিকট দৃশ্য। একেকটি ঘরের দরজা খুলছে মার্ক ক্ষীণ আশা নিয়ে, ওকে পার্টির কোনো গাইড উল্লসিত অভ্যর্থনা জানাবে। কিন্তু প্রতিটি ঘর খালি। এখন শুধু নিচতলার জেলখানাটা দেখা বাকি।
নড়বড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো মার্ক, প্রতি পদক্ষেপে পুরনো কাঠের তক্তা ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে আপত্তি জানালো। শেষ আশা জেলখানার দরজার সামনে চলে এল মার্ক। কিন্তু দরজা খুলতে শুধু নিকষ আঁধার ওকে ভেংচি কাটলো।
প্রচণ্ড রাগে শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছে মার্কের। ওকে আচ্ছা বুদ্ধু বানিয়েছে এলিয়ট এবং লিসা। আজ রাতে পার্টি-ফার্টি কিচ্ছু নেই। ওকে পিশাচবাড়িতে একা ফেলে রেখে যাবার বুদ্ধি করেছিল ওরা। পরিকল্পনা সফল হয়েছে। এ মুহূর্তে হয়তো একসাথেই রয়েছে দুজনে, মার্কের বোকা বনে যাবার কথা ভেবে হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে। লাল কার্পেট বিছানো রাস্তায় আলো ফেললো মার্ক। সোজা জেলখানার দিকে চলে গেছে। ওর দুপাশে নির্যাতিত লাশের সারি। ওদিকে তাকালো না মার্ক। সে শুধু বাইরে যাবার দরজাটা খুঁজছে। এখান থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে পড়া যায় ততই মঙ্গল।
কার্পেট বিছানো রাস্তার শেষ মাথায় চলে এল মার্ক, কতগুলো লাল পর্দার সামনে এসে হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেছে রাস্তা। একটানে পর্দা সরিয়ে ফেললো মার্ক। পর্দার পেছনে একটা দরজা। এ দরজা খুলে পিশাচবাড়ির বাইরে যাওয়া যায়। জোরে দরজায় ধাক্কা দিল মার্ক। একটুও নড়লো না দরজা। দমাদম ঘুসি মারলো, কাঁধ দিয়ে ঠেলা দিলো। কোনও লাভ হলো না। বন্ধই রইলো দরজা। অবশেষে ভয়ংকর সত্যটা উপলব্ধি করতে পারলো মার্ক : আজ রাতের মতো সে বন্দি পিশাচবাড়িতে।
আবার দরজায় ঘুসি মারলো মার্ক। ব্যথার চোটে আর্তচিৎকার ছাড়লো। নানা দুশ্চিন্তা কালো বাদুড়ের মতো ডানা ঝাপটাতে লাগলো মস্তিষ্কে। পিশাচবাড়ির কোন ঘরে সে রাতটা কাটাবে বুঝতে পারছে না। একেকটা ঘরের কথা মনে পড়ে আর শিউরে ওঠে। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘর হলো এই জেলখানা। খুন হয়ে যাবার ভয়ে ভীত প্রাণীর মতো সে জেলখানার কার্পেট মোড়ানো রাস্তা দিয়ে পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে। সিঁড়ি বেয়ে বেডরুমে যাবে।
মাঝামাঝি পথ পেরিয়েছে মার্ক, আঁধার ভেদ করে ওর সামনে থেকে একটা শব্দ ভেসে এল। ভয়ে হিম হয়ে গেল গা। কান খাড়া করলো মার্ক। দ্বিতীয়বার শব্দটা শুনতে পেল। ইঁদুর-টিদুর হবে হয়তো, নিজেকে সান্ত্বনা দিল মার্ক, কিন্তু মস্তিষ্কের একটা অংশ এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হলো না। কোনো মানুষ করেছে শব্দটা, পায়ের আওয়াজের মতো, অন্ধকারে ধীরগতিতে এগিয়ে আসছে ওর দিকে।
ছুটলো মার্ক, ফ্ল্যাশলাইটের আলো ফেলছে ডানে-বামে, চকিতে তাকাচ্ছে মোমের বিকট মূর্তিগুলোর দিকে। একটা মূর্তি দেখে চমকে গেল এক স্বর্ণকেশী সুন্দরী, গাঢ় বাদামি চোখ, লাল টুকটকে অধর। জেলখানায় এ মূর্তি আগে দেখেনি ও। এটাকে না সে কয়েক মিনিট আগে লাইব্রেরিতে দেখে এসেছে?
সিঁড়ির গোড়ায় পৌঁছে গেছে মার্ক, কাঁপা পায়ে কয়েক কদম ওঠার পরে হোঁচট খেল। মাথাটা দারুণ জোরে বাড়ি খেল এক জল্লাদের লোহার মূর্তির সাথে। সিঁড়িতে কয়েক মুহূর্ত চিৎ হয়ে পড়ে রইলো মার্ক, নড়াচড়ার শক্তি নেই। বোঁ বোঁ ঘুরছে মাথা। এমন সময় পায়ের শব্দ আবার শুনতে পেল ও। সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছে। 3 হাঁচড়ে-পাঁচড়ে হাঁটু মুড়ে বসলো মার্ক, পাগলের মতো খুঁজছে ফ্ল্যাশলাইট। পড়ে যাবার সময় কোথাও ছিটকে গেছে ওটা, আলোও নিভে গেছে। অন্ধকারে খামোকাই হাতড়ে বেড়ালো মার্ক।
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ ক্রমে কাছিয়ে আসছে। মার্ক টলতে টলতে সিধে হলো, দৌড়ালো দোতলার ঘরগুলোর দিকে। হলওয়ের শেষ মাথায়, দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো, হাঁপাচ্ছে বেদম। মখমলের মতো ঘন অন্ধকার আর কবরের মতো নিস্তব্ধ। ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়মিত হয়ে এল মার্কের। কল্পনা, মনকে বোঝালো ও। আসলে সে এতক্ষণ কল্পনা করেছে। কোথাও কেউ নেই তো! আর ঠিক তখন দোতলার হলওয়েতে প্রতিধ্বনি তুললো পায়ের আওয়াজ। মার্ককে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে, ধীরে এবং উদ্দেশ্য নিয়ে, আঁধার ভেদ করে।
গলা দিয়ে উঠে আসা চিৎকারটাকে গিলে ফেললো মার্ক, সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ের গতিতে নামতে শুরু করলো, যাচ্ছে ডাইনিংরুমের দিকে। পায়ের শব্দটা দ্রুত হলো। অনুসরণকারীও এবার ছুটছে। প্যাসেজে মোড় নিতে ভুলে গিয়েছিল মার্ক, প্রচণ্ড বাড়ি খেল তামার রেইলিং-এ। ব্যথায় ফুসফুসের সমস্ত বাতাস যেন বেরিয়ে গেল, ওর গলা থেকে বেরিয়ে আসা আর্তনাদ বিশাল শূন্যঘরে প্রতিধ্বনি তুললো। টলমল পায়ে পিছিয়ে এল মার্ক, চোখে সর্ষেফুল দেখছে। এমন সময় হাসির শব্দটা শুনতে পেল নিচু গলায়, খনখনে ভৌতিক হাসি বেরিয়ে এল আঁধার ফুঁড়ে। আতঙ্কের স্রোত ওকে অবশ করে ফেলছে, তবু দরজার দিকে ছুটলো সে। এ দরজা ডাইনিংরুমকে আলাদা করে ফেলেছে লাইব্রেরি থেকে। এক ধাক্কায় দরজা খুলে লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়লো মার্ক, গলা ফাটিয়ে চেঁচালো, ‘লিসা!’
ওর কণ্ঠ ওকে ব্যঙ্গ করতেই যেন ফিরে এল প্রতিধ্বনি হয়ে। সিটিংরুমের দরজার দিকে অনুমান করে ছুটলো মার্ক, কিন্তু ওখানে পৌঁছার আগেই লাইব্রেরিতে পায়ের শব্দ শুনতে পেল সে। অটল ও অশুভ পায়ের আওয়াজ, ওকে খুঁজছে অন্ধকারে। দরজার পাল্লা হাতড়াচ্ছে মার্ক, ঘাড়ের কাছে ফোঁস করে তপ্ত নিশ্বাস ফেললো কেউ। তারপর, পেছনের অন্ধকারে, ঘরঘরে গলার হাসি শোনা গেল। মুখ হাঁ করেছে মার্ক, চিৎকার দেবে, ধারালো কিছু একটা বিদ্যুৎবেগে ঢুকে গেল ওর ঘাড়ে, দড়াম করে মেঝেতে আছড়ে পড়লো মার্ক পিশাচবাড়ির আরেক শিকার হয়ে। পরদিন বিকেলে লিসা লাইব্রেরিঘরে ঢুকলো রুটিন কাজটা করতে। মার্ক কখন আসবে, তর সইছে না ওর। কাল রাতে ছেলেটা কীরকম ভয় পেয়েছে জানার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে সে। লাইব্রেরির মোমের মূর্তিগুলোর গায়ে টর্চের আলো ফেললো লিসা। লক্ষ্য করলো স্বর্ণকেশী মহিলা তার আগের জায়গায় নেই, মেঝেতে একটা শরীরের উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে। এক মুহূর্তের জন্য দম বন্ধ হয়ে এল লিসার। সে নিশ্চিত ওখানে এর আগে কেউ ছিল না।
সামনে পা বাড়ালো লিসা, ঝুঁকলো। স্বর্ণকেশীকে ঠেলে সরিয়ে দিল। মোমের একটা মূর্তি। এক তরুণের। মুখটা আতঙ্কে বিকৃত। লিসা ভয়ে চিৎকার দিতে গিয়েও সামলে নিল নিজেকে। চেহারাটা অবিকল মার্কের মতো। হাত বাড়ালো লিসা। ছুঁল মুখখানা। ঠাণ্ডা মোমের স্পর্শ পেল হাতে।

।। সংগৃহীত গল্প – ০৮ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, October 24, 2011 at 10:26pm ।। লোকটা - সুস্ময় পাল ।। -বাবা?
-কি বাবা?
-ঐটা কি?
-কোনটা?
-ঐযে বারান্দায়?
-বারান্দায়, বারান্দার কোথায়?
-ঐ ত কোণায়,কালো করে।
-কালো করে ঐটা? ও আচ্ছা,ঐটা ত বাবা কাপড়।এখন তুমি ঘুমাও,চোখ বন্ধ করে ঘুমাও।
-কিন্তু বাবা, ঐটা ত কাপড় না। ঐটা একটা মানুষ। আমাদের দিকে পিঠ দেখিয়ে আছে।
-না বাবা, ঐখানটায় কাপড় ছাড়া কিছুই নেই।তুমি এখন ঘুমাও।
-কিন্তু বাবা......।
-তোমাকে না ঘুমাতে বলেছি? চুপ করে ঘুমাও।
ধমক খেয়ে রিপন চোখ বন্ধ করে ফেলল।আমি তার বুকে হাত দিয়ে চাপড় মারতে থাকি।
রিপন আমার ছেলে,একমাত্র ছেলে।তার বয়স ছয় বছর,একটা প্রাইমারি স্কুলের নার্সারীতে পড়ে।সে আমাকে ভয় পায়।তার মা মানে আমার স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে সে আমাকে ভয় পাওয়া শুরু করে।কেন ভয় পায় জানি না।হয়ত আমার মুখটা তার কাছে ভয়ঙ্কর মনে হয়েছে।
আমি একজন শিক্ষক।বাসার কাছের একটা হাই স্কুলে গণিতের সিক্ষক হিসেবে আমার বেশ নামডাক আছে।ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর সব অঙ্ক আমিই করিয়ে থাকি।সে কারণে অনেক ছাত্রই আমার কাছে পড়তে আসে।আমার বাসাটা ছোট,তাই আলাদা বাসা নিয়ে সেখানে প্রাইভেট পড়াই।এ কারণে আমাকে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়।বাসায় ফিরি রাত নয়টায়,সাড়ে নয়টায়।বাসায় আসার পর হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে বসে শংকরের রান্না করা খাবারগুলো খেয়ে ছেলেটার কাছে যাই।রিপন আমাকে ভয় পেলেও রাতের বেলা খেয়েদেয়ে না ঘুমিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে।তাই খাবার খেয়ে এসে তাকে ঘুম পাড়াতে হয় আমাকে।সে ঘুমিয়ে গেলে আমি আমার কিছু কাজ করে এরপর ঘুমাতে আসি।ততক্ষণে বারোটার কাছাকাছি বেজে যায়।
আজ শুক্রবার ছিল।তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে বাপ-বেটায় মিলে কিছুক্ষণ টিভি দেখেছি।টিভিতে এ চ্যানেল ও চ্যানেল ঘুরতে ঘুরতে এক চ্যানেলে এসে দেখি ভূতের সিনেমা চলছে।তা-ই দেখলাম গত দেড় ঘন্টা ধরে।আর রাত জেগে সে ভূতের সিনেমা দেখে এখন রিপন ভুলভাল বকতে আরম্ভ করেছে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।শেলি মারা গেছে এক বছর হল।এ এক বছরে রিপনের মাঝে কিছু পরিবর্তন এসেছে।সে কিছুটা লম্বা হয়েছে,তার গায়ের রঙ আরেকটু পরিষ্কার হয়েছে,সে এক ক্লাস উপরে উঠেছে এবং সবচেয়ে যে পরিবর্তনটা চোখে পড়ে সেটা হচ্ছে সে আগের থেকে চুপচাপ হয়েছে।আগে সে সারা ঘর দৌড়াদৌড়ি করত।এখন তার মা নেই,তার মধ্যে সেই চঞ্চলতাও আর চোখে পড়ে না।শংকরের কাছে শুনেছি রিপন স্কুল থেকে ঘরে ফিরে মন খারাপ করে তার নিজের ঘরে বসে থাকে।তখন শংকরকেই মানে আমাদের ঘরের কাজের ছেলেটাকে ওকে ধরে নিয়ে স্নান করাতে হয়,খাবার খাওয়াতে হয়,পড়াতে বসাতে হয়।অবশ্য রিপন পড়ায় ফাঁকি দেয় না।
রিপন ঘুমিয়ে গেছে।তার গায়ে চাদরটা দিয়ে আমি লাইট নিভিয়ে নিজের ঘরে চলে আসি।এখন আমাকে কিছু কাজ করতে হবে।আগামীকাল ষষ্ঠ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার গণিত প্রশ্নটা জমা দিতে হবে।সেটাই তৈরি করব এখন।

-বাবা?
-কি?
-জানো,আজকে আবার ঐ লোকটাকে দেখেছি।
-কোন লোকটা?
-ঐ যে,ঐ দিন যে লোকটা আমার দিকে হেঁটে আসছিল,সে লোকটা।
-কে তোমার দিকে হেঁটে আসছিল?
-ঐ যে,কালো পোশাক পরা লোকটা।বাবা জানো,ওর মুখটা না রক্তে মাখা।বাবা,আমার খুব ভয় করে।
-বাবা শোন,তুমি যাকে দেখ,সে আসলে কেউ না।তুমি ভুল দেখেছ।আসলে তুমি বিকেলে খেল না ত,তাই এমন সব দেখ।কালকে থেকে তুমি সামনের মাঠে খেলতে যাবে।তাহলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।কেমন বাবা?
-কিন্তু বাবা,ঐ লোকটাকে আমি দেখেছি।সে আমাকে ধরতে চাইছিল।আমি মানা করায় সে ধরেনি।বাবা,ও ধরলে আমি মারা যাব।
আমি চমকে উঠি।রিপন এসব কি বলছে?ঐদিন রাতের বেলা ভূতের সিনেমাটা দেখার পর থেকে সে এমন করছে।আমাকে সে এখন বিভিন্ন কথা বলে।একদিন বলেছিল,সে ঐ বারান্দায় মানুষটাকে দেখেছে,তার মুখ রক্তে মাখা ছিল।এরপর একদিন বলে সে লোকটাকে তার দিকে হেঁটে আসতে দেখেছে।ঐদিন সে খুব ভয় পেয়েছিল।আর আজ বলছে লোকটা তাকে ধরতে চায়।ধরলে সে নাকি মারা যাবে।কি অলুক্ষণে কথা!
আমি রিপনকে জড়িয়ে ধরি।তার কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলি,“শোনো বাবা,তুমি ভয় পেও না।লোকটা তোমার কিছু করতে পারবে না।আমি তোমায় বাঁচাব,ঠিক আছে?”
রিপন আস্তে করে মাথা নেড়ে বলে,“ঠিক আছে”।
“তাহলে তুমি এখন ঘুমাও।কালকে বাবার স্কুল আছে না?ঘুমাও।”রিপন চোখ বন্ধ করে।আমি তার বুকে ক্রমাগত হাত দিয়ে চাপড়াতে থাকি।

-বাবা?
-কি বাবা?
-লোকটা আমাকে ধরতে আসছে বাবা।বাবা আমাকে বাঁচাও।
রিপন ছটফট করতে থাকে।আমি তাড়াতাড়ি তার পাশ থেকে উঠে একটা ঘুমের ওষুধ আর টেবিলের ওপর রাখা জলের গ্লাসটা নিয়ে তার কাছে এগিয়ে যাই।দেখি রিপন চোখ বড়বড় করে কিসের দিকে যেন তাকিয়ে আছে।আমি আর দেরি করি না।তাকে ওষুধটা খাইয়ে দিই।দশ-পনের মিনিট ধরে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করে সে নিস্তেজ হয়ে যায় এবং এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
আমি লাইটটা বন্ধ করে তার পাশে শুয়ে পড়ি।ঘুমানোর চেষ্টা করতে করতে ভাবি রিপন কি এমন দেখে ভয় পাচ্ছে।তার কি কোন মানসিক সমস্যা হল নাকি সত্যিই কোন অশরীরী........।
আমার হাত-পা কাঁটা দিয়ে উঠে।তাড়াতাড়ি রিপনকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলি।

আজ রিপনকে সমাধিস্থ করা হবে।তাকে নতুন কাপড় পড়ানো হয়েছে,কাপড় পড়ানোর আগে তাকে স্নান করানো হয়েছে।এখন সামনে খুঁড়ে রাখা কবরে তাকে শুইয়ে আমাকে চিরদিনের মত বিদায় জানাতে হবে।
আমার সব আত্মীয়স্বজন এসেছে।তারা অবাক হয়ে দেখছে আমাকে কারণ আমার চোখে জল নেই,আমি কান্না করতে পারছি না।সব কান্না গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।তারা আরো বেশি অবাক হচ্ছে আরেকটা ব্যাপার দেখে।সেটা হচ্ছে আমি তাদের রিপনের মৃত্যুর কারণ বলতে পারছি না।এ না বলতে পারাটা লোকেরা ঠিক মানতে পারছে না।
ঐ রাতের পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিপন আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে।তার হলদে ফর্সা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে এবং ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে আছে।সেই ফাঁকের কাছে দুটো মাছি ভনভন করে উড়ছে।
এ দৃশ্যটা আমি সহ্য করতে পারিনি।শুধু আমি কেন,কোন বাবাই তার ছেলের এ ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে ঠিক থাকতে পারবে না।আমি অজ্ঞান হয়ে যাবার আগ মুহূর্তে শংকরের নাম ধরে দুটো ডাক দিয়েছিলাম।
এরপর কিছু সময়ের জন্য আমার জ্ঞান ফিরেছিল।আমি তখন দেখেছি শংকর রিপনের পাশে দাঁড়িয়ে ভেউভেউ করে কাঁদছে আর একজন ডাক্তার রিপনকে চেক করছে।আমি আবার জ্ঞান হারাই।
পরে বহু কষ্টে শংকর আমার জ্ঞান ফিরিয়ে এনেছিল।জ্ঞান আসার পর আমি চিৎকার করছিলাম ‘রিপন’ ‘রিপন’ বলে।

রিপনকে বিদায় জানাবার পর শংকরের দাদা এসে তাকে নিয়ে যায়।সে চায় না তার ভাই এমন ‘অভিশপ্ত’ ঘরে থাকুক।শংকর যেতে চায়নি।কিন্তু আমি তাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।আমিও চাই না এখানে থেকে তার কিছু হোক।

শংকরটা চলে যাবার পর আমি একা হয়ে গেছি।এ একাকিত্ব আমার সহ্য হচ্ছে না,তাছাড়া এ বাসাটা আমার কাছে আর ভালোও লাগছে না।তাই অন্য বাসা খুঁজছি,যেখানে গেলে রিপনের স্মৃতি মাখা এ ঘরটা আমাকে আর কষ্ট দিবে না।
বাসা ছাড়ার পিছনে অবশ্য আরো একটা কারণ আছে।সে কারণটা সম্পর্কে আমি কাউকে কিছু বলিনি।কারণ আমি যদি বলি তাহলে লোকেরা আমাকে পাগল মনে করবে।কারণটা সম্পর্কে ভাবলেই আমার গা শিউরে উঠে আর মনে হয় রিপন এক বর্ণ মিথ্যে বলেনি!
কারণটা আর কিছুই না। কয়েকদিন আগে আমি একটা কালো পোশাক পরা লোককে রিপনের বিছানার উপর বসে থাকতে দেখেছি যে আমার দিকে পিছন ফিরে ছিল!

।। ছাঁয়া ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, October 23, 2011 at 10:21pm আমি তখন মেডিকেল কলেজের ফিফ্থ ইয়ার এর ছাত্রী। ঢাকায় বাসা হবার কারনে অন্য সব ছাত্রীদের মত আমাকেও মেডিকেল কলেজের হলেই থাকতে হত। সেদিন ইভিনিং শিফ্ট সেরে হলে ফিরতে অনেক রাত হয়েছিল বলে তাড়াহূড়ো করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম আর প্রায় সাথে সাথেই ঘুম এসে গেল। ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখলাম কলেজের মর্গে লাশ কাঁটার বিছানায় আমি শুয়ে আছি আর ফরেনসিক বিভাগের এক ডাক্তার একে একে আমার পড়নের সমস্ত পোশাক খুলে ফেলছেন। বুঝলাম আমি তখনও জীবিত, কিন্তু সবাই ভাবছে আমি মরে গেছি আর তাই পোস্টমর্টেমের জন্য আমাকে এখানে রাখা হয়েছে। আমি তখন হাত পা নাড়তে কিংবা কোন শব্দ করতে পারছিলাম না, শুধু বুঝতে পারছিলাম ডাক্তার এখন আমার পোস্টমর্টেম না করে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আমাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে কাপড় গুলা দূরে একটি বিছানায় সরিয়ে রাখলেন তিনি। তারপর ডাক্তার আমার দিকে এগুতেই হঠাৎ আমার মোবাইলের পরিচিত রিং-টোন শুনতে পেলাম। বুঝলাম বিছানায় রাখা আমার কাপড়ের ভিতর থেকে মোবাইল ফোন বাঁজছে। রিং এর আওয়াজ ক্রমেই বেড়ে চলেছে আর ডাক্তার ক্রমশ এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। হঠাত মনে হল এটা একটা দুঃস্বপ্ন। তাই প্রাণপনে ঘুম ভাংগার চেষ্টা করলাম আর এক সময় ঘুম ভেংগে গেল। ঘুম ভাংগার পর দেখলাম সত্যি আমার মোবাইলে রিং হচ্ছে। মনে মনে কলার কে ধন্যবাদ দিলাম, কারন তিনি ফোন না করলে ঘুমের মাঝে আরো কত কি হত কে জানে! -হ্যালো -ভাল আছ এষা? -হ্যাঁ। কে বলছেন? -কেন চিনতে পারছ না? -না। কে হাসান ভাই নাকি? -না হাসান না। -তাহলে কে? -তুমি এখন কি পড়ে আছ এষা? স্কার্ট না সালোয়ার কামিজ? -থাপড়ায় গালের দাঁত ফেলে দিব হারামীর বাচ্চা। এই বলে ফোন রেখে দিয়ে কলারের নাম্বার চেক করলাম। অপরিচিত নাম্বার, মোবাইলে সেইভ করা ছিল না। ব্যাটা জানত যে আমি ঘুমাচ্ছি, তাই ফোন ধরার আগে নাম্বার চেক করব না। তাই পরিচিত মানুষের মত কথা বলার চেষ্টা করছিল। হঠাত মনে হল আমিই বা হাসান ভাই নাকি জিজ্ঞেস করলাম কেন? হাসান ভাই ত মারা গেছেন অনেকদিন হল। রাগ নামিয়ে আবার ঘুমাবার চেষ্টা করলাম। রাত তখন ক’টা বাজে জানতে ইচ্ছা হচ্ছিল, কিন্তু মোবাইলের আলো চোখে লাগবে বলে আর সময় দেখলাম না। এর কিছুক্ষন পর আবার ফোন বেঁজে উঠল। বুঝতে পারলাম ওই বদমাশ লোকটা আবার ফোন করেছে। তাই কল রিসিভ করলাম না। ফোন বন্ধ করে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম আর হঠাত লোড শেডিং শুরু হল। এখন যে আর গরমে ঘুম আসবে না তা পুরোপুরি নিশ্চিত। তবু গরমে হাসফাস করতে করতে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন কাজ হল না। পাশের খাঁটের দুই রুমমেট তখন রুমে ছিল না। বোধহয় ওদের আজ নাইট ডিউটি। থাকলে নাহয় ওদের সাথে গল্প করে সময় পার করা যেত।

অনেক্ষন অপেক্ষার পরও ইলেকট্রিসিটি না আসায় মনে হল এভাবে কষ্ট করে শুয়ে থাকার কোন মানে হয় না। ছাঁদে গিয়ে বসে থাকি, তাতে গরম কিছুটা হলেও কম লাগবে। মোবাইল অন করে মোবাইলের আলোয় পথ দেখে ছাঁদে চলে এলাম। ছাঁদে আসার পর আবার মোবাইল বাঁজতে শুরু করল। এবার কল না কেঁটে বদমাশটা কে কিছু শক্ত কথা শুনিয়ে দেবার কথা ভাবলাম। তা না হলে ব্যাটা হয়ত কালও আবার ফোন করবে। তাই ফোন ধরে ধমকের সুরে বললাম, -হ্যালো কে আপনি? -আমি অনেক দূর থেকে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি এষা। প্লিজ আমায় ভুল বুঝো না। -আপনি কে সেটা কি বলবেন? নাহলে আমি ফোন রেখে দিব। -আমি হাসান। -আপনি হাসান ভাই না আমি জানি। কারন হাসান ভাই মারা গেছেন। আপনি কে সত্যি করে বলুন। -সত্যি এষা আমি হাসান। আমি এখন ছাঁদে তোমার কাছে এলে কি তুমি আমায় বিশ্বাস করবে?

একথা শুনার পর আর কথা বাড়ানোর সাহস রইল না। বুঝতে পারলাম লোকটা আশে পাশের কোন বিল্ডিং থেকে আমাকে দেখতে পাচ্ছে। তাই কল কেটে দিলাম। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হল। কিছুদিন আগেই মোবাইলের সিম পাল্টেছি। এরই মাঝে হয়ত ক্লাসের কারো কাছ থেকে নাম্বারটা কেউ পেয়ে গেছে। অথবা ক্লাসের কেউই আমাকে ফোন করে পরীক্ষা করছে। আমি তাঁর কথায় সাড়া দিলে হয়ত কথা রেকর্ড করে ক্লাসের সবার কাছে তা কোনভাবে পৌছে দিবে আর আমাকে খারাপ সাজাবার চেষ্টা করবে। এ অবস্থায় আর ছাঁদে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না, কারন লোকটা আমায় ঘুমাবার পোশাকে দেখতে পাচ্ছে। তবে অন্ধকার থাকায় তা নিয়ে আমি খুব একটা শঙ্কিত হলাম না। আমি তখন ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভিতর আশে পাশের বিল্ডিং গুলার দিকে তাকিয়ে কিছু বের করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না। তাই রুমে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। মোবাইলের আলো জ্বেলে ছাঁদের দরজার দিকে এগুতে যাব আর ঠিক তখন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম কে যেন আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে উঠল, এষা যেয়ো না দাঁড়াও। আমি আসছি। একথা শুনার পর প্রচন্ড ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাবার মত অবস্থা হল। মনে হল যেন ছাঁদে আমি ছাড়া আর অন্য কেউও আছে। ভয়ে আমি তখন মারা যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম ছাঁদে যে আছে সে যদি মানুষ হয় তাহলে হয়ত আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আর যদি সেটা অন্য কিছু হয় তাহলে যেন সেটা আমার চোখের সামনে না আসে, কারন আমি সেই ভংকর দৃশ্য সহ্য করতে পারব না। কিছু বুঝে উঠবার আগেই আরো একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। হঠাত কোথা থেকে যেন একটা আলোর ঝলকানি এসে ছাঁদের মেঝেতে পড়ল আর আমি দেখতে পেলাম মেঝেতে একটা কালো ছাঁয়া মূর্তি বসে আসে।ছায়ামূর্তিটার মানুষের মত হাত পা আছে কিন্তু শরীরের গঠন মানুষের মত নয়। আমায় দেখতে পেয়ে ছায়ামূর্তিটা দ্রুত পানির ট্যাংকির দিকে হামাগুড়ি দিয়ে চলে গেল আর ধীরে ধীরে পানির ট্যাংকির দেয়ালে মিশে যেতে শুরু করল। এর পরে কি হয়েছিল আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। সম্ভবত আমি সেখানেই জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরে পাবার পর জানতে পারি আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম আর চিৎকার করে মা’কে ডাকছিলাম। আমার চিৎকার শুনে নিচ থেকে ছাত্রীরা ছুটে এসে আমাকে রুমে নিয়ে যায়।

মেডিকেলের ছাত্রী হিসেবে ভূত প্রেতে বিশ্বাস করাটা আমার মোটেই শোভা পায় না। তবুও আমি পরবর্তীতে এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারিনি। জানিনা হাসান ভাই কি সত্যি সত্যি সেদিন আমাকে স্বপ্নের ওই ডাক্তারের হাত থেকে বাঁচাতে এসেছিলেন কিনা। কারন সেই স্বপ্ন আমি এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছিলাম। এই স্বপ্নের পিছনে একটা কারনও আছে, তবে সেই কারনের সাথে এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই বলে তা উল্লেখ করছি না।

এষা ময়মনসিংহ

চিঠিটি পড়ার পর এষাকে ফোন করলেন সিদ্দিকুর রহমান। -হ্যালো স্লামালাইকুম -মিস্ এষা বলছেন? -জ্বী। কে বলছেন প্লিজ? -আমি মাসিক হরর পত্রিকার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান । -ও আচ্ছা। আমার লেখাটা কি ছাঁপানো হচ্ছে? -জ্বী। তবে তাঁর আগে আপনার আরো সাহায্যের প্রয়োজন। -বলুন আমি কি করতে পারি? -আপনি বোধহয় জানেন আমাদের চিঠিপত্র বিভাগে এ ধরনের লেখার সাথে সম্পাদকের দাড় করানো একটা ব্যাখ্যা থাকে। আর সেটার জন্য আপনার সাহায্যের প্রয়োজন। -আমাকে কি আপনাদের অফিসে আসতে হবে? -যদি আসতে পারেন তাহলে খুবই ভাল হয়। আর নাহলে ফোনেই কাজটা সেরে নেয়া যাবে। কখন ফোন করলে আপনার সাথে সময় নিয়ে কথা বলা যাবে? -আমি আসলে এখন একটু ব্যাস্ত আছি। আপনি চাইলে আমি নিজেই কাল আপনাকে ফোন করব অথবা আপনাদের অফিসে এসে দেখা করে যাব। -আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। -আপনাকেও। ভাল থাকবেন।

ফোন রাখার পর সিদ্দিকুর রহমান তাঁর রহস্য ডায়েরীর একটি খালি পাতা খুলে বসলেন। সেখানে দ্রুত কিছু নোট লিখে ফেললেনঃ

১) হাসান সাহেব কে? প্রথমে যেই লোকটি টেলিফোন করেছিল তাঁর গলার স্বর কি হাসান সাহেবের মত ছিল? ধরে নেয়া যাক হ্যাঁ। আর সে কারনেই এষা তাকে প্রথমে হাসান সাহেব মনে করেছিল। কিন্তু এষা কেন ফোনে হঠাত একজন মৃত মানুষের কথা স্মরণ করবে? তাহলে কি হাসান সাহেব এষার খুব কাছের কেউ ছিলেন যাকে এষা এখনো প্রত্যাশা করে? সেই তীব্র প্রত্যাশা থেকে কি এষা মনে করে হাসান ভাই তাঁর কাছে এসেছিল তাঁকে সেই ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারের হাঁত থেকে রক্ষা করার জন্যে? আর তাই সে সাধারন একটা ব্ল্যাংক কল কে হাসান সাহেবের কল মনে করে অনেক কিছু ভেবে বসে? হতে পারে হাসান সাহেবের মৃত্যুর সময় এষা তাঁর কাছে ছিল না, তাই তাঁর অবচেতন মন সব সময় চাইত হাসান সাহেবের সাথে শেষ আরেকটিবার দেখা করতে? কিন্তু মৃত মানুষের কোনভাবেই ফিরে আসা সম্ভব না বলে তাঁর অবচেতন মন সেই ইচ্ছা নিয়ে হতাশায় ভুগছিল। তাই সেদিন সেই স্বপ্ন আর ব্ল্যাংকল এর সাথে কোন সংযোগ ঘটিয়ে তাঁর অবচেতন মন সাধারন কোন ছাঁয়া কে হাসান সাহেবের ছাঁয়ামূর্তিতে রুপান্তর করে? যদি তাই হয় তাহলে এই ঘটনার প্রভাবক হিসেবে অন্য কোন ঘটনা কাজ করেছে যা এষা তখন খেয়াল করেনি। সেই না জানা ঘটনা কে বের করতে পারলেই অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে।

২) এষা লিখেছে কেউ তাঁর কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলেছিল এবং সে তা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিল। এই স্পষ্ট শুনতে পাবার ঘটনাই হাসান সাহেবের ছাঁয়ামূর্তির ঘটনার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়াও আরেকটি কারন এই ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বকে জোড়ালো করতে পারে। এষা লিখেছে তাঁর তখন দুই ধরনের ভয় হচ্ছিল। প্রথমত ছাঁদে যা ছিল তা যদি মানুষ হয় তাহলে তাঁর বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত সেটা যদি মানুষ না হয় তাহলে সে প্রচন্ড ভয় পাবে। একজন মেডিকেলের ছাত্রী হিসবে এষা কখনো ভূত প্রেত বিশ্বাস করত না। তাই লোকলজ্জার ভয়ে তাঁর জাগ্রত মন চাচ্ছিল এটা যেন কোন মানুষ না হয়, কারন এষা জানে ভূত বলে কিছু নেই, আর এটা মানুষ না হলে ভূত হবারও সম্ভাবনা নেই, হয়ত মনের ভুল হতে পারে যা ভাল করে লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে। অপরদিকে এষার অবচেতন মন প্রচন্ডভাবে হাসান ভাই কে প্রত্যাশা করছিল। সেই ভয়ংকর মূহুর্তে এষার চেতন ও অবচেতন দু’টা মনের ইচ্ছাই এক হবার কারনে এষা ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেছিল।

ঘটনার ব্যাখ্যা দাড় করাতে অবশ্যই আমাদের কোন অলৌকিক ঘটনা কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এষার কানে কে ফিস ফিস করে কথা বলেছিল? আশেপাশে যদি কেউ না থাকে তাহলে একমাত্র মোবাইল ফোনেই সে কথা শুনতে পাবে। কিন্তু এষা তখন কলারের সাথে কথা বলছিল না। তাই মোবাইলে সে ফিস ফিস কন্ঠটি শুনেনি। আবার এষা লিখেছে সে মোবাইলের আলোয় পথ দেখে ছাঁদের দরজার দিকে এগুচ্ছিল। তাহলে কি হতে পারে সে যখন মোবাইলে আলো জ্বালবার জন্য মোবাইলের বোতামে চাপ দেয় তখন সেই কলারের কল রিসিভ হয়ে যায় আর সেই কলার কাছের কোন বিল্ডিং থেকে এষাকে ছাঁদের দরজার দিকে না যেতে বলে? আর মোবাইলের সে কথাই এষার কানের কাছে ফিস ফিস করে কথা বলার মত মনে হয় কারন সে জানত না সে ভুলে কল রিসিভ করে ফেলেছে? এই ব্যাখ্যা যুক্তি সংগত।

৩) এখন ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করতে হলে যে কারনটি দাড় করানো যেতে পারে তা হল এষা যা দেখেছিল তা ঘুমের ঘোরে দেখেছিল। অর্থাৎ, এষা লিখেছে ছাঁদে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল কারন লোডশেডিং হচ্ছিল। কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোন ছাঁয়ামূর্তি দেখা সম্ভব নয়। তাহলে এষা আরো আগেই অন্য কোন কারনে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু জ্ঞান ফিরে পাবার পর সেই ভয়ের কারন তাঁর মনে থাকে না বরং অজ্ঞান থাকাকালীন সময়ে স্বপ্নে যেই ছাঁয়ামূর্তি দেখতে পায় তাকেই সে সত্যিকার ছাঁয়ামূর্তি বলে মনে করেছিল।

এবার ধরা যাক এষা সত্যি ছাঁয়ামূর্তি দেখার পর জ্ঞান হারিয়েছিল।আর যদি এষা সত্যি ছাঁয়ামূর্তি দেখে জ্ঞান হারায় তাহলে অবশ্যই সেই সময় কিছুটা হলেও আলো ছিল। এষার মতে ছাঁয়ামূর্তিটা এসেছিল একটা আলোর ঝলকানির মাধ্যমে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় তখন হঠাত ইলিকট্রিসিটি চলে আসে বলে আসে পাশের বাড়িগুলা তে আলো জ্বলে উঠে আর এষা সেই আলোকেই আলোর ঝলকানি মনে করে? এই ঘটনা কে সাহায্য করতে আরেকটি ঘটনার বাস্তব রুপান্তর প্রয়োজন। এষা কেন ইলিক্ট্রিসিটি ফিরে আসা খেয়াল করবে না? হতে পারে সে ইলেক্ট্রিসিটি ফিরে আসার সময় প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল অর্থাৎ ছাঁয়ামূর্তিটাকে দেখেছিল? আর যদি ছাঁয়ামূর্তিটা কে দেখেই থাকে তাহলে সেই ছাঁয়ামূর্তিটা এষার কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে গেল কেন? হতে পারে এষার কাছের বিল্ডিং থেকে যেই মানুষ টা এষার সাথে কথা বলছিল হঠাত ইলেকট্রিসিটি চলে আসবার কারনে সে দ্রুত জানালা থেকে সরে যায় আর তাঁর ছাঁয়া ধীরে ধীরে দেয়ালে মিলিয়ে যায়? কিন্তু এষা লিখেছে ছাঁয়ামূর্তির মানুষের মত হাত পা ছিল কিন্তু শরীরের গঠন মানুষের মত না। শরীরের গঠন মানুষের মত না বলতে সে কি বুঝিয়েছে? ছাঁয়ামূর্তিটিকে যদি তাঁর অবচেতন মন নিয়ে আসে তাহলে সেই অবচেতন মন তাঁর শরীরের গঠন মানুষের মত করে কেন আনল না? আর সে যদি কোন মানুষের সাধারন ছাঁয়া দেখেও ভয় পায় তাহলেই বা সেই ছাঁয়ার শরীর মানুষের মত ছিল না কেন? এখানেই যুক্তি কাজ করছে না। তাই ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্ব সত্যি কি মিথ্যা তা মোবাইলে ফিস ফিস কন্ঠ শুনবার মত সহজে প্রমাণ করা গেল না।

৪) ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তার কে? এষা কেনই বা এধরনের স্বপ্ন আগে দেখত? তা একমাত্র এষার সাথে কথা বলেই জানা যাবে।

৫) উপরের কোন যুক্তিই কাজ করবে না যদি হাসান সাহেব এষার খুব কাছের মানুষ না হয়ে থাকেন। অর্থাৎ এষার অবচেতন মন যদি হাসান সাহেব এর দেখা পেতে না চায়। কিন্তু তা হবার সম্ভাবনা কম কারন এষা চিঠির শেষে লিখেছে যে হাসান সাহেব কি সত্যি এষা কে ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার এর হাত থেকে রক্ষা করতে এসেছিল কিনা তা সে জানে না। খুব কাছের মানুষ না হলে দূরের কাউকে এভাবে ছুটে আসার কথা এষা কখনো চিন্তা করবে না। আর এসব কারনেই এষার সাথে কথা বলে আরো কিছু তথ্য জানতে হবে, যা রহস্য সমাধানে সাহায্য করবে। আপাতত শুধু একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে যে এষা আসলে মোবাইলে সেই কলারের ফিস্ ফিস্ কন্ঠ শুনেছিল। এই সূত্র ধরেই সামনে এগুতে হবে। এখন এষাকে যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে হবে তা হলঃ

১) হাসান সাহেব কে ছিলেন? ২) জ্ঞান ফিরে পাবার পর এষা মোবাইলে সেই কলারের কল কতবার রিসিভ করেছিল সেটা কি চেক করেছিল ? দু’বার না তিনবার? ৩) সেই কলারের নাম্বার নিশ্চয়ই এষা মোবাইল থেকে সংগ্রহ করে রেখেছিল? সেই নাম্বারে কি পরে কখনো ফোন করা হয়েছিল কলারের সন্ধান জানতে? ৪) ছায়াঁমূর্তির শরীরের গঠন তাঁর কাছে মানুষের মত মনে হয়নি কেন? ৫) ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তার কে?

এর পরদিন সিদ্দিকুর রহমান এষার সাথে ফোনে কথোপকথোন সেরে নিলেন এবং মূল পাঁচটি প্রশ্নের জবাব তাঁর ডায়েরীতে লিখে রাখলেনঃ

১) হাসান সাহেব এষার মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টুডেন্ট ছিলেন। এষার সাথে তাঁর বিয়ে হবার কথা ছিল। হাসান সাহেব এম,বি,বি,এস শেষ করে লন্ডনে চলে যান লেখাপড়ার জন্য কিন্তু লন্ডনে একটা রোড এক্সিডেন্টে তিনি মারা যান দু’বছর আগে। হাসান সাহেবের সাথে এষার সম্পর্ক খুব বেশিদিনের ছিল না বলে এষা হাসান সাহেবের পরিবার এর ঠিকানা জানত না। তাই হাসান সাহেবের মৃত্যুর সংবাদটি পায় হাসান সাহেবের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে।

২) কল কতবার রিসিভ করা হয়েছিল কিংবা কলারের নাম্বার কি ছিল তা এষা জানতে পারেনি,কারন তাঁর মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে গিয়েছিল। সে যখন চিৎকার করে জ্ঞান হারায় তখন তাঁর চিৎকার শুনে হলের ছাত্রীরা ছুটে এসে তাকে রুমে নিয়ে যায়, আর পরবর্তীতে কেউ তাঁর ফোনটি সরিয়ে ফেলে।

৩) তিন নম্বর মন্তব্য অনুযায়ী -জানা যায় নি।

৪) এষা বলতে চাচ্ছে ছাঁয়ামূর্তির বুক থেকে কোমরের দিকটা ছিল অস্বাভাবিক রকমের চওড়া অর্থাৎ তাঁর শরীরের অনুপাত কখনোই মানুষের মত ছিল না। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার ছিল যে ছাঁয়ামূর্তির দুপাশে দু’টি পাখা ছিল। এই পাখার কারনেই সে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছিল যে এটা কোন মানুষের ছাঁয়া নয়।

৫) ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তার এষা কে পছন্দ করতেন। হাসান সাহেবের মৃত্যুর পর এষার সাথে তাঁর কিছুটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে অনেক রোগীর অভিযোগে সেই ডাক্তারের নামে একটা স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়লে এষা সেই সম্পর্ক কে আর এগুতে দেয়না। কিন্তু ডাক্তার তারপরও এষাকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে যায়।

এর প্রায় পনের দিন পর ‘মাসিক হরর’ পত্রিকায় সম্পাদকের ব্যাখ্যা সহ এষার চিঠিটি ছাঁপা হয়। সম্পাদকের ব্যাখ্যার খানিকটা অংশঃ …………লন্ডনে হাসান সাহেবের একটা রোড এক্সিডেন্ট হয় ঠিকই কিন্তু তিনি তাতে মারা যান না। বেঁচে গেলেও তিনি শারীরিকভাবে পংগু হয়ে যান এবং হুইল চেয়ার ব্যাবহার করতে শুরু করেন। এমতাবস্থায় তিনি এষা ও তাঁর পরিবারের কথা চিন্তা করে এষা কে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন।কারন এই পংগুত্বকে এষা সহজভাবে নিলেও এষার পরিবার হয়ত সার্বিকভাবে এই বিয়েতে খুশী থাকবে না, তাছাড়া তিনিও চান না তাঁর ভালবাসার মানুষটি সারাজীবন একজন হুইলচেয়ারে বসে থাকা মানুষের সাথে ঘর করুক। তাই তিনি তাঁর বন্ধুর মাধ্যমে এষাকে তাঁর মৃত্যুর খবরটি পৌছে দিয়েছিলেন। হাসান সাহেবের বাবা মা গ্রামে থাকতেন বলে এষাও পরে আর তাঁর বাবা মা’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। লন্ডন থেকে ডিগ্রী নিয়ে হাসান সাহেব তখন দেশে ফিরে এসেছিলেন। সম্ভবত অল্প কিছুদিন পর তিনি আবার লন্ডন ফিরে যেতেন কারন ফোনে তিনি বলেছিলেন তিনি অনেক দূর থেকে এষার সাথে দেখা করতে এসেছেন। এষা যেন জানতে না পারে তাই তিনি এষার হোস্টেলের পাশের একটি বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন কিছুদিনের জন্যে। হাসান সাহেব যেহেতু একই মেডিকেলের ছাত্র ছিলেন তাই তাঁর জন্য এ কাজটি করা খুব একটা অসুবিধের কিছু ছিল না। তিনি কিছুদিন এষা কে লুকিয়ে লুকিয়ে সেই বাড়ী থেকে দেখে চোখ জুড়াতেন। কখনো ভাবেন নি এষার সামনে তিনি যাবেন। এষা সাধারনত বিকেলের মধ্যে হলে ফিরে আসে, কিন্তু সেদিন এসেছিল অনেক রাত করে। তাই তিনি এষাকে দেখতে পাননি। আর এই না দেখার কষ্ট তাকে এষাকে ফোন করতে বাধ্য করে, কারন হয়ত পরদিনই তিনি দেশে ছেড়ে চলে যাবার কথা ভাবছিলেন। ফোন ধরার পর এষা যখন জিজ্ঞেস করে কে ফোন করেছে তখন তিনি ভুল করে বলে ফেলেন ‘কেন চিনতে পারছ না?’ এর জবাবে এষা হাসান সাহেবের কন্ঠ চিনে ফেললে তিনি তা অস্বীকার করেন আর তাঁর মিথ্যা কে আরো জোড়ালো করার জন্য তিনি ইচ্ছে করে এষাকে অশ্লীল একটা প্রশ্ন করেন বসেন, যেন এষা এটা কে একটা ব্ল্যাংক কল হিসেবে মনে করে। এষার অবচেতন মন সব সময়………………… এষাকে ছাঁদে দেখে হাসান সাহেব প্রচন্ডভাবে এষার সাথে কথা বলতে ইচ্ছাপোষন করেন।তখন ছিল গভীর রাত। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে মানুষের আবেগ অনেক সময় প্রবণ হয়ে উঠে এবং তা অনেক কিছু মানতে চায় না। তাই এই পর্যায়ে তিনি এষার সাথে দেখা করে সব কিছু খুলে বলতে চেয়েছিলেন। সেই সময় হঠাত ইলেকট্রিসিটি চলে আসে আর এষা হুইল চেয়ারে বসা হাসান সাহেবের ছাঁয়া ছাঁদের মেঝেতে দেখতে পায়। এষা যে হাসান সাহেবের ছাঁয়া দেখতে পেয়েছে তা তিনি বুঝতে পারেন এবং সেকারনে দ্রুত তিনি জানালা থেকে সরে যান। এখন প্রশ্ন থাকতে পারে হাসান সাহেব ত এষার সাথে দেখা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাহলে তিনি কেন দ্রুত সরে গেলেন? হতে পারে ইলেকট্রিসিটি চলে আসার পর তিনি এষাকে ছাঁদে আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন আর তখন তিনি মত পাল্টান।চারদিকের আলো তাঁর আবেগ কে দমন করতে সাহায্য করে। অথবা এমনো হতে পারে এষাকে শোবার পোষাকে দেখে ফেলায় এষা লজ্জিত হতে পারে বলে তিনি পাশের বাড়িতে থাকবার বিষয়টি গোপন করতে চেয়েছিলেন। এষাকে ফোন করা থেকে শুরু করে এষার জ্ঞান হারানো পর্যন্ত যা কিছু হয়েছিল তার সব কিছুর মূলে রয়েছে হাসান সাহেবের অনিয়ন্ত্রিত আবেগ। আর সেই আবেগ হাসান সাহেবকে অনেক যুক্তিহীন সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা দ্রূত সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করেছিল। তিনি যখন হুইল চেয়ারে করে জানালা থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছিলেন তখন এষা তাঁর হুইল চেয়ারের ছাঁয়াকে ছাঁয়ামূর্তিটির পাখা ভেবে ভুল করে। আর তখনই এষা নিশ্চিত হয়ে যায় এটা কোন মানুষের ছাঁয়া নয়। হাসান সাহেবের হুইল চেয়ারে করে দ্রুত সরে যাবার ঘটনা কে এষা ছাঁয়ামূর্তির হামাগুড়ি দিয়ে দূরে সরে যাওয়া মনে করে………… ফরেনসিক বিভাগের সেই ডাক্তারের সাথে এষার কিছুটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আর পরবর্তীতে তা এগুতে পারেনি ডাক্তারের স্ক্যান্ডালের কারনে ( সম্ভবত স্ক্যান্ডালটি নারীঘটিত কোন ব্যাপার ছিল )। তাই সেই সব মিলিয়ে এষা প্রায় সেই ডাক্তার কে নিয়ে এধরনের স্বপ্ন দেখত। সেদিন হাসান সাহেবের ফোনের রিং এ এষার কাঁচা ঘুম ভেংগে যায় আর ফোন ধরে সে হাসান সাহেবের কন্ঠ শুনতে পায়। হাসান সাহেবের পরিচিত কন্ঠ ও সেই স্বপ্ন এষার অবচেতন মনকে হাসান সাহেবের ছাঁয়ামূর্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে সাহায্য করে আর এষা তখন ভয়ে জ্ঞান হারায়।

আমার এই ব্যাখ্যা শুধুমাত্র এষার সাথে কথোপকথোনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ব্যাখ্যা তখনই গ্রহনযোগ্য হবে যদি হাসান সাহেব মারা না যান। তা জানা সম্ভব নয় কারন হাসান সাহেবের একমাত্র বন্ধু যাকে এষা চিনত তিনি কিছুদিন আগে মারা যান। এছাড়াও মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রি অফিস থেকে হাসান সাহেবের গ্রামের ঠিকানা সংগ্রহ করতে চাইলে খুবই অদ্ভুতভাবে হাসান সাহেবের ঠিকানার পাতাটি ছেঁড়া পাওয়া যায়। তবে এষার বর্ণিত ছাঁয়ামূর্তির সাথে প্রাচীন গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর পাখাওয়ালা শয়তানের মিল পাওয়া যায়। কাহিনীর বর্ণনা অনুযায়ী শয়তান অমাবশ্যার রাতে প্রজননের জন্য মৃত আত্মার উপর ভর করে কুমারী মায়েদের সাথে মিলনের মাধ্যমে নতুন শয়তানের জন্ম দেয়। আর তার জন্য অবশ্যই পরিচিত মানুষের বেশ ধরা প্রয়োজন। হতে পারে এষার গর্ভে তখন ওই ডাক্তারের সন্তান ছিল যা সে সবসময় গোপন করে চলেছে এবং তাই সে লেখাতেও স্বপ্নের কারন উল্লেখ করেনি। হয়ত আমার কাছে সেই পৌরাণিক কাহিনীর শয়তানের কথা শুনে এষা নিজেই রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করে হাসান সাহেবের ঠিকানার পাতাটি ছিঁড়ে ফেলে, কেননা হাসান সাহেবের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটিত হলে হয়ত নতুন কোন অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে যা এষা কাউকে জানতে দিতে চায়না।

।। ভৌতিক জঙ্গল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, October 22, 2011 at 10:40pm
২০০৯ সালের এপ্রিল মাস। আমার এস, এস, সি পরীক্ষার পর আমি আমার খালার বাড়ি সাতক্ষিরার শ্যাম নগর থানায় বেড়াতে যাই। আমার মা বাবা দুজনই জব করেন, তাই আমাকে বাসে তুলে দেয়া হয় আর আমি একাই যাই। পথে আমাদের বাসটা নষ্ট হয়ে যায় এবং সেটা ঠিক করতে প্রায় ২ ঘণ্টার মত সময় লাগে। যখন আমি সাতক্ষিরায় পৌঁছাই তখন রাত প্রায় ১০ টা। আমি বাস থেকে নেমে দেখলাম আমার খালু আর খালাতো বোন আমাকে নিতে এসেছে। বাস স্ট্যান্ড থেকে আমার খালার বাসায় যেতে মিনিট দশেক সময় লাগে। আমরা মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। কেন যেনও মনে হচ্ছিল রাস্তা ঘাঁট একটু বেশি নির্জন। আমার খালু একটু আগে আগে হাঁটছেন আর আমি আর আমার বোন পিছে পিছে। আমিই নিরবতা ভাঙলাম। আমার আপুকে জিজ্ঞেস করলাম রাস্তা এতো সুনসান কেন? আপু উত্তরে বলল, তাদের বাড়ির পাশের জঙ্গলে ২ দিন আগে একটা লোককে কে বা কারা যেনও খুব করে ফেলে রেখে গেছে। এই কথা শুনে আমার কেন যেনও একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। কেন যেনও মনে হতে লাগলো পেছনে কেউ হাঁটছে। ২-৩ বার ভয়ে ভয়ে পেছনে ফিরলাম কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। এভাবে ভয় পেতে পেতে কোনোভাবে খালার বাসায় এসে পৌঁছলাম। খালার বাসা ২ তলা। বিশাল এই বাড়িতে উনারা শুধুমাত্র ৩ জন থাকেন। আমার খালা, খালু, আর আমার খালাতো বোন। বাড়ির চারপাশে ঘন বোন জঙ্গল। কেমন যেনও গা ছমছম করে। আবার নাকি কাকে সেখানে খুব করে ফেলে রেখে গেছে। ভাবতেই ভয় লাগছিল। সেদিন রাতে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে কেমন যেনও ক্লান্তি অনুভব করছিলাম। খালাদের প্রকাণ্ড অট্টালিকায় নিচে ৫ খানা ঘর আর উপরে ৩ টি ঘর। এক একটি ঘর যেনও এক একটি খেলার মাঠ। যাই হোক, আমার জন্য নিচ তোলার একটি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমে একটু ভয় করছিলো একা একা থাকতে, কিন্তু মনে সাহস আনলাম। এবং এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত তখন কয়টা বাজে আমি জানি না, কিন্তু হটাত আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। গ্রীষ্মকাল ছিল তাই আমার মাথার কাছের জানালাটা খোলা ছিল। ঐ জানালা দিয়ে সেই জঙ্গলটা দেখা যায় যেখানে ২ দিন আগে খুনটা হয়েছে। যাই হোক, জানালার দিকে চোখ পড়তেই খুব ভয় পেলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও কোনও একটা অভয়বের উপস্থিতি লক্ষ্য করলাম মনে হল। সেটা নাড়াচাড়া করছিলো! আমি শুধু এতটুকু দেখেই ভয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলাম। আমার চিৎকারের কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি খালা, খালু ছুটে আসলেন। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে। তো, আমি বললাম আমি কি দেখেছি। কিন্তু উনারা বললেন যে এটা মনের ভুল। আলো জ্বালানোর পর আমার কাছেও ব্যাপারটা হাস্যকর মনে হচ্ছিল। তাই আমিও সেই কথাটা মেনে নিলাম। সেইদিন রাতে এরপর আমি আর আমার খালাতো বোন এক সাথে ঘুমাই। এরপর দিন দুপুরের পর আমাকে নিয়ে তারা বেড়াতে বের হন। আমরা বেড়াতে বেড়াতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাড়ি ফেরার পথে আবার সেই জঙ্গলটা পড়ে। জঙ্গলটা দেখে আমার আবার গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো। খানিকটা ভয় ভয় করতে লাগলো। ভয় কাটানোর জন্য আমি আর আমার খালা গল্প করতে করতে এগুচ্ছিলাম। এর মাঝে আমরা খেয়াল করিনি যে আমার খালাতো বোন আমাদের সাথে নেই। আমরা যখন প্রায় বাড়ির কাছাকাছি তখন দেখলাম আপু আমাদের সাথে নেই। সবাই আপুকে খুঁজাখুঁজি শুরু করলাম কিন্তু আপুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ মেশ কিছু মানুষজন জোগাড় করে সেই জঙ্গলে যাওয়া হল। সেখানে গিয়ে দেখা যায় আপু মাটিতে পড়ে আছে। তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২ দিন সেখানে থাকার পর আপু বাসায় ফিরে। সবাই জিজ্ঞেস করায় সে সবাইকে সেদিনের ঘটনা খুলে বলে। সেদিন সে আমাদের পেছন পেছন আসছিলো এমন সময় কে যেনও তাকে পেছন থেকে তার নাম ধরে ডাকছিল। সে পেছনে ফিরে দেখে কেউ নেই, কিন্তু ডাকটা বারবার কানে আসছে। তাই সে ডাক শুনে পেছন দিকে যেতে লাগলো। সে নাকি বুঝতে পারছিল না যে সে কি নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছে না কি কেউ তাকে সম্মোহন করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে লাশটা পাওয়া গিয়েছিলো সেখানে গিয়ে আপু দেখল লাশটি মাটিতে পড়ে আছে। লাশটির দু চোখ খোলা এবং সেই দু চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। আপুর নাকি এতো টুকুই মনে আছে। এরপর জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে। এরপরের দিনই আমি ঢাকায় ফিরে আসি। আমি সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা এখনো ভুলতে পারিনি। যিনি পাঠিয়েছেনঃ Nusrat Jahan Ivy ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/nusrat.j.ivy বাংলা রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (এডমিন)

।। সংগৃহীত গল্প – ০২ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, August 2, 2011 at 11:28pm
২০১০ সালের জুলাই মাসের ০৬ তারিখে আমরা চার বন্ধু সাতক্ষীরায় একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম ৩ মাসের জন্য। বাড়িটি অবস্থিত ছিল নির্জন স্থানে বিলের ধারে। আশেপাশে বাড়ি ছিল মাত্র দুটি। তবে ঐ দুটি বাড়ি আমাদের এই বাড়িটি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল। সচরাচর ঐ দুইটি বাড়ির মানুষদের সাথে আমাদের দেখা হতো না। আমাদের চার বন্ধুর মধ্যে তিন জন এক রুমে থাকতাম আর বিহীন নামে আমার আর এক বন্ধু একা এক রুমে থাকত।
আমরা রাতে বাইরে বের হতাম না। আর কোনদিন বের হলেও সবাই একসাথে বের হতাম। সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতাম কারণ আমাদের পরীক্ষা চলছিল। জুলাই মাসের ১৭ তারিখে আমাদের এই বাড়িতে এক অবাক করা ঘটনা ঘটে গেল। রাত আনুমানিক ২.৩০ মিনিটের দিকে আমাদের ঘরের দরজায় আঘাতের শব্দ হচ্ছিল খুব জোরে। আমাদের তিন বন্ধুর ঘুম ভেঙে যায়। আমরা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দেখি বিহীন ঘর্মাক্ত অবস্থায় আমাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সারা শরীর কাঁপছে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে, মুখে কোন কথা নেই। দরজা খুলতেই আমাদের রুমের ভিতরে ঢুকে মেঝের ওপর দড়াম দিয়ে পড়ে গেল বিহীন। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম। বিহীন অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে, চোখে মুখে পানি ছিটাতে লাগলাম আমরা। সাথে সাথে বাড়ি মালিককে ফোন দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি মালিক আসল। বাড়ি মালিকের সাথে স্থানীয় মসজিদের এক ইমাম ছিল। আমরা তিন বন্ধু বুঝতে পারছিলাম না বাড়ি মালিকের সাথে ইমাম কেন। ইমাম বিহীনের চোখে মুখে বিড়বিড় করে কিসব পড়ে ফুঁক দিল, চোখে-মুখে পানির ছিটা দিল। মিনিট পাঁচেক পরে বিহীন তাকালো কিন্তু তখনো ওর চোখে আমরা একটি ভয়ের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছিলাম। ওর যে কি হলো আমরা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ইমাম সাহেব ও বাড়ি মালিক বিহীনকে আমাদের রুমে রাখতে বলল। ঐ দিন সারা রাত আমাদের চোখে ঘুম ছিল না। উতকন্ঠার মধ্যে রাত কাটিয়েছিলাম আমরা তিন বন্ধু। পরের দিন সকালে বিহীনের কাছ থেকে ঘটনাটি জানার চেষ্টা করলাম। ঘটনাটি শুনে আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
গায়ের লোম কাঁটা দিচ্ছিল আমাদের। রাতে আড্ডা শেষ করে বিহীন ওর রুমে চলে গিয়েছিল। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিহীন জানালা বন্ধ করে। কিন্তু রাত ২.২০ মিনিটের দিকে বিকট এক শব্দে বিহীনের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই জানালার দিকে চোখ যায় ওর। প্রথমে অবাক হয় বিহীন কারণ ঘুমানোর আগেতো সে জানালা বন্ধ করেছিল। কিন্তু জানালা খুললো কিভাবে। কিছু না ভেবেই আবার জানালা বন্ধ করতে উঠে যায় সে। কিন্তু জানালা বন্ধ করতে যেয়েই ঘটে বিপত্তি। বাইরে তাকাতেই সে দেখে যে, একজন লোক বাইরে মাটির ওপর উপুড় হয়ে বসে আছে। শুধু পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে যে একজন মানুষ, পুরুষ কি মহিলা বোঝা যাচ্ছিল না। বিহীন চেচিয়ে উঠে জিজ্ঞাসা করে,কে ওখানে? তখন লোকটি উঠে দাঁড়ায়। লোকটি উঠে দাঁড়াতেই বিহীনের চোখ আমড়া আমড়া হয়ে যায়। নিথর হয়ে যায় বিহীনের সারা শরীর। বিহীন যে কতটা ভয় পেয়েছিল তখন তা আমাদের সাথে কথা গুলো বলার সময় আমরা বুঝতে পারছিলাম। কারন তখনও বিহীন প্রচন্ড ঘামছিল। লোকটি বিহীনের দিকে এগিয়ে আসছিল আস্তে আস্তে আর লোকটি যখন এগিয়ে আসছিল তখন বিহীন দেখল যে লোকটির কোন মাথা নেই শুধু শরীরটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। বিহীন তখন বেসামাল অবস্থায় ঘরের আলো জ্বালে আর দরজা খুলে আমাদের দরজায় নক করে। ঘটনাটি শুনে আমরা কোন কিছুই আবিস্কার করতে পারছিলাম না। কারণ আমরা ভুত, প্রেত বিশ্বাস করতাম না।
এই ঘটনার পর থেকে প্রায় রাতে বাড়ির ছাদে শিলবাটার শব্দ হতো। কখনও দূর থেকে ভেসে আসতো মেয়ে কন্ঠের হাঁসি। কখনও মুমূর্ষ রোগীর আর্তনাদ। কিন্তু এসব কিছুতে আমরা কর্ণপাত করতাম না। সেপ্টেম্বর মাসের ০৩ তারিখে আবারও এক কাহিনী ঘটে আমাদের ঐ বাড়িতে। ঐ দিনও কাহিনীটি ছিলো বিহীনকে নিয়ে। বিহীন বিকাল বেলা কিছু কেনাকাটর জন্য শহরের উদ্দেশ্যে বের হয়। ঐ দিন সন্ধ্যায় আমরা তিনজন পড়ছিলাম। হঠাত করেই বিদ্যুত চলে যায়। তখন আমরা তিনজন গল্প করছিলাম অন্ধকারে। কিছুক্ষণ পর বিহীনের গলা শোনা যায়, হাবীব গেট খোল। তখন হাবীব চাবি নিয়ে যেয়ে বারান্দার গেট খুলে দেয়। বিহীন আমাদের রুমে ঢুকে ওর খাটের উপর বসে। হাবীব জিজ্ঞাসা করে, কিরে আজ এত দেরী হলো যে, কোথায় ছিলি? বিহীন উত্তর দেয়, ঐ একটু কাজ ছিল। বিহীন রুমে আসার মিনিট সাতেক পরে হাবীব বলে, দোস্ত সিগারেট দে, সিগারেট খাবো। বিহীন উত্তর দেয়, আমার কাছে নেই যা ছিলো শেষ হয়ে গেছে। রাজু বলে, আমার কাছে একটা আছে এইটা ধরা। তখন বিহীন বলে, দাঁড়া এখন ধরাতে হবে না আমি দোকান থেকে আর তিনটা নিয়ে আসি একসাথে ধরাবানে। আমরাতো অবাক হয়ে যায় বিহীন আমাদের পিছনে এক টাকা খরচ করে না আর সে আমাদের কে তিনটা সিগারেট খাওয়াবে। আমি বলি, বিহীন এটাকি জোকস্‌? তখন বিহীন উঠে দাড়িয়ে বলে, তোরা ওয়েট কর আমি আসছি। বিহীন চাবি নিয়ে তালা খুলে বেরিয়ে যায়। বিহীন আসবে ভেবে আমরা আর গেট লক করিনা। বিহীন বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই বিদ্যুত চলে আসে। মিনিট বিশেক পরেও বিহীন আসে না। কিন্তু আমাদের ঐ বাড়ি থেকে মুদি দোকনে যেতে-আসতে বড়জোর দশমিনিট লাগবে। বিহীন আসছে না দেখে আমরা গেট লক করে দিই। ওকে নিয়ে না ভেবে আমরা আবার পড়তে বসি। কিছুক্ষণ পর বিহীনের ফোন আসে আমার ফোনে। বিহীন বলে, দোস্ত আমিতো এ্যাকসিডেন্ট করেছি। তখন আমি বলি, কোথায়? - শহরের ভিতরে মটর সাইকেলের সাথে।
- তুই আবার শহরে গেলি কখন?
- ক্যান তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? বিকালেতো তোর সামনে দিয়েই আসলাম।
- তুইতো সিগারেট আনার নাম করে বেরিয়ে গেলি মিনিট বিশেক হলো। এখন বলছিস শহরে?
বিষয়টি আমাদের কাছে ঘোলাটে লাগছিল। আমরা সবাই বিহীনকে আনার জন্য বাড়িতে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ি। হাসপাতালে গিয়ে সব কিছু বলি বিহীনের সাথে। বিহীন সবকিছু শুনে অবাক হয়। তখন আমাদের মনে একটি ভীতি ঢুকে যায়। ঐ দিন রাতে আমরা হাসপাতালেই থাকি সবাই। পরের দিন স্থানীয় মসজিদের ঐ হুজুরের কাছে বিষয়টি খুলে বলি। তখন সে আমাদের কাছে ঐ বাড়ি সম্পর্কে একটি ঘটনা খুলে বলে। সে বলে- তোমাদের সাথে প্রতিনিয়তই যে ঘটনা গুলি ঘটছে সেটি নতুন কিছু নয়। এর আগেও এই বাড়িটি তিনবার ভাড়া হয়েছে। কিন্তু তারাও এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বিধায় বাড়ি ছেড়েছে। এই বাড়িটি সলেমান নামে এক ভদ্র লোক প্রথম ভাড়া নেয়। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকত। বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার ৪ মাসের মাথায় সলেমান নামের ঐ লোক তার স্ত্রীকে মেরে ফ্যানের সাথে টাঙিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। তার পর থেকে যারা ঐ বাড়িটি ভাড়া নিয়েছে তারা বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাড়িটাতে বেশিদিন থাকতে পারেনা।
এই সব ঘটনা শোনার পর ঐ দিনই আমরা বাড়িটি ছেড়ে দিই।

সংগ্রহ করেছেনঃ Ethan Martin ফেসবুক আইডিঃ http://www.facebook.com/mri44
। নিশুত রাতের অতিথি ।। আলতাখালি গ্রামের একমাত্র হাইস্কুলের একমাত্র অঙ্কের শিক্ষক জোনাব আলী। স্কুলের একমাত্র আবাসিক শিক্ষকও তিনি। বয়স চল্লিশোর্ধ হয়ে গেলেও এখনো বিয়ে করেননি। স্কুলের পাশেই ছোট্ট টিনের চালাঘরে তার একাকি বসবাস। জোনাব আলী যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষ। ভূত প্রেত জাতিয় অতিপ্রাকৃত বিষয়ে তার কোনরূপ বিশ্বাস নেই। তাই স্কুলের এই বিশাল নির্জনতায় রাত-বিরেতে একা থাকতে তার মোটেও সমস্যা হয় না। এক সন্ধ্যায় তিনি হারিকেনের টিমটিমে আলোয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে কী একটা উপন্যাস পড়ছিলেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন উঁ উঁ উঁ উঁ...... আওয়াজ করে দূরে কোথায় কেউ যেন কাঁদছে। জোনাব আলী জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। কৃষ্ণপক্ষের আঁধার তখন ভালোই ঘনিয়েছে। মনে হচ্ছে জানালায় কেউ ঘনকালো পর্দা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তিনি বই পড়ায় মন দিতে যাবেন এমন সময় আবার সেই কান্না – উঁ উঁ উঁ উঁ........ ! জোনাব আলী উঠে বসলেন। এমন দুঃখের কান্না এই রাতে এখানে কে কাঁদতে এলো? হারিকেনটা হাতে নিয়ে বাইরের দাওয়ায় এসে দাঁড়ালেন তিনি। দাওয়ার সামনে থেকেই স্কুলের মাঠ শুরু হয়েছে। মাঠ পেড়িয়ে ওপাশে স্কুলের দোতলা বিল্ডিং। হারিকেনটা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করলেন কাউকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু না ঘুঁট ঘুঁটে অন্ধকারে কিছু দেখার জো নেই। আলোটা উঁচু করে ধরেই তিনি দাওয়া থেকে মাঠে নামলেন। কোন দিক থেকে কান্নার আওয়াজটা এসেছে ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না। এমন সময় আবার সেই কান্নার আওয়াজ – উঁ উঁ ঊঁ ঊঁ......। তিনি বুঝতে পারলেন আওয়াজটা আসছে স্কুল বিল্ডিং-এর ওদিক থেকে। ধীর পায়ে তিনি সেদিকে হাটা শুরু করলেন। রাত নেমেছে একটু আগে। অথচ মনে হচ্ছে কত না জানি গভীর রাত। চারিদিকে থম ধরা এক নিস্তব্ধতা। তার মাঝেই কোথায় এক রাতের পাখি ডেকে উঠলো – কুপ! কুপ! কুপ! কুপ! ..... বিল্ডিং-এর কাছে এসে এদিক ওদিক আলো বাড়িয়ে দেখলেন তিনি। কেউ নেই কিছু নেই এখানে। তখন আবার সেই কান্না শোনা গেল – উঁ উঁ ঊঁ ঊঁ......। এবার জোনাব আলী বুঝলেন কান্নাটা আসছে স্কুলের পেছন থেকে। ওখানে ছোট খাটো একটা দীঘি আছে। দীঘির চার পাশটা জুড়ে নানা গাছ-গাছালির ভীড়ে ছোটখাটো একটা জঙ্গল তৈরি হয়েছে। বিল্ডিং পাশ কাটিয়ে তিনি সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবার আলো উঁচু করতেই তিনি দীঘির পাড়ে এক আবছায়া মুর্তি দেখতে পেলেন। আরেকটু এগিয়ে যেতেই ছায়ামুর্তি স্পষ্ট হলো। দীঘির দিকে মুখ করে এক নারী দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা শাড়ি। মাথায় ঘোমটা টানা। মেয়েটির বয়স যে খুব বেশি না তা পেছন থেকে দেখেও বোঝা যায়। আলোর আভাস পেয়ে মেয়েটি তার ঘোমটা আরো লম্বা করে টেনে দিলো। তার মুখ থেকে তখনো ফোঁপানোর আওয়াজ আসছে। জোনাব আলী জিজ্ঞেস করলেন – কে তুমি ? এতো রাতে এখানে কী করছো? মেয়েটি কোনো জবাব দিল না। কেবল কান্নার দমক একটু বাড়লো তার। জোনাব আলী আবারো একই কথা জিজ্ঞেস করলেন। এবার মেয়েটি জবাব দিলো – আমার নাম বিন্দু। - এতো রাতে এখানে কী করছো ?
- আমার স্বামী মারা গেছে কয় দিন আগে। তাই শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমারে বাইর কইরা দিছে ঘর থিকা। (মেয়েটি আবার উঁ উঁ করে কেঁদে ওঠে) শুনে জোনাব আলী খুব দুঃখ পান। বলেন – তা তোমার বাবার বাড়ি কই? সেখানে যাও নাই কেন ? মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতেই বলে - বাপের বাড়ি অন্য গ্রামে অনেক দূরে। এত রাইতে যাওয়া যাবে না। জোনাব একটু ভাবেন, তারপর বলেন - তা হলে কী আর করা, আজ রাতে আমার বাড়িতেই থাকো। যদিও আমি একা থাকি তারপরও তোমার ভয়ের কোনো কারণ নেই। নিজেকে আমি সৎ-চরিত্রবান বলেই জানি। আগামি কাল ভোরে তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো না হয়। ********************************************************************** পনের বছর পরের কথা – জোনাব আলীর বয়স এখন ষাট। রিটায়ারমেন্টের পর আজ তার বিদায় সংবর্ধণা হয়েছে স্কুলে। ছাত্র শিক্ষক মিলে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মঞ্চে উঠে তাঁর সহকর্মীরা বক্তৃতা দিতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরাও
চোখের পানি ফেলেছে। তাদের এতো প্রিয় অঙ্কের শিক্ষক আজ বিদায় নিচ্ছেন। এখন সন্ধ্যা ঘানিয়েছে। তিনি স্কুলের পাশে তাঁর ঘরে বসে নানা কথা চিন্তা করছেন। জীবনটা তো একা একাই পার করে দিলেন। আগামিকাল এই স্কুল, এই ঘর ছেড়ে তাঁর নিজের গ্রামে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে বলতে গেলে নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। এই বুড়ো বয়সে তা কি তিনি পারবেন? নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনের কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে। কত যে স্মৃতি তাঁর এই স্কুলকে ঘিরে! হঠাৎ দরজার কড়া নড়ে উঠলো। কেউ এসে দাঁড়িয়েছে বাইরে ঘরের দাওয়ায়। জানালা দিয়ে তিনি বাইরে তাকালেন। আজো কৃষ্ণ পক্ষের রাত। জানালার বাইরে নিকশ কালো আঁধার। তিনি দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলেন – কে? বাইরে থেকে পুরুষ কন্ঠের জবাব এলো – স্যার, আমাকে আপনি চিনবেন না। তবে আপনার সাথে খুব জরুরী কিছু কথা ছিল। একটু যদি দরজাটা খোলেন! জোনাব আলী দরজা খুলে হারিকেনের আলোয় এক অপরিচিত মুখ দেখলেন। ভদ্রলোক কালো স্যুট পড়ে আছেন। মুখে মৃদু হাসি। তিনি তাঁকে ভেতরে আসতে বললেন। ভদ্রলোক ভেতরে ঢুকেই টেবিলের পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসে পড়লেন। জোনাব আলী বসলেন তার পাশের চেয়ারে। হাসি মুখে বললেন – আপনি কে চিনতে পারিনি। দয়াকরে যদি আপনার পরিচয় বলতেন! তাঁর মনে মৃদু সন্দেহ হচ্ছে এ নিশ্চই তাঁর কোনো প্রাক্তন ছাত্র। কিন্তু ভদ্রলোক তাঁকে হতাশ করে বললেন – স্যার আমি আপনার পরিচিত কেউ নই। বলতে পারেন আমি একজন শখের গোয়েন্দা। আপনি আগামি কাল এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবেন। তার আগে ভাবলাম আপনার সাথে কিছু কথাবার্তা বলি। জোনাব আলীর ভ্রু কুঁচকে গেল, বললেন – আপনার সাথে আমার কী কথা থাকতে পারে? ভদ্রলোক হাসলেন – স্যার আমার আসলে কিছু প্রশ্ন ছিল। আপনার কি মনে পড়ে অনেক বছর আগে এক রাতে আপনার এই ঘরে একটা মেয়ে আশ্রয় নিয়েছিল? জোনাব আলী চমকে উঠলেন। তিনি কোনো কথা বললেন না। তবে তাঁর চোখের দৃষ্টি তিক্ষ্ণ হলো। লোকটি আবারো প্রশ্ন করলো – মনে পড়ে স্যার? মেয়েটির নাম ছিল বিন্দু। শাদা শাড়ি পরে ছিল। স্বামী মরার পর তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। আপনি তাকে দয়া করে আশ্রয় দিয়েছিলেন এক রাতের জন্য, মনে পড়ে? জোনাব আলী অস্বস্তি ঢাকতে চশমা খুলে পাঞ্জাবির খুঁটে কাঁচ পরিষ্কার করতে করতে বললেন – এতো দিন পরে আমাকে এ প্রশ্ন করছেন কেনো? লোকটি হাসি মুখে বলল – কারণ স্যার সেই রাতের পর থেকে মেয়েটির আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আপনি কি বলবেন তার কী হয়েছিল? জোনাব আলী আবারো চমকে উঠলেন ভীষণ। তাঁর হাত থেকে চশমাটা মাটিতে পড়ে গেল এবং চশমা তুলতে গিয়ে তিনি জমে গেলেন। একটা তিব্র ভয়ের স্রোত তার শিরদাঁড়া বেয়ে নিচে নেমে গেল। লোকটি কথা বলছে আর পা নাচাচ্ছে এক নাগাড়ে। সেই পায়ের দিকেই তিনি তাকিয়ে আছেন। হারিকেনের আবছা আলোয় তিনি দেখতে পাচ্ছেন স্যুট পড়া
থাকলেও লোকটির পায়ে কোনো জুতো নেই এবং সেই পা উল্টো দিকে ঘোরানো। যেন কেউ মুচড়ে পা দুটোকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। জোনাব আলী ভয়কে কিছুটা জয় করে উঠে বসলেন। তিনি চোখে ভুল দেখছেন বলে নিজেকে প্রাবোধ দিলেন। কিন্তু তারপর যে ঘটনা ঘটলো তার জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। হঠাৎ লোকটি হেলমেট খোলার মতো করে নিজের মাথাটা আলতো টানে খুলে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিল। যেন এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যপার। মাথাহীন শরীরটা টেবিলে হাতের আঙুল দিয়ে বাজানা বাজালো। মাথাটার মুখে হাসি ঝুলে আছে তখনো। হাসি মুখে টেবিল থেকেই সে বলল – স্যার কিছু মনে করবেন না। আমার মাথার ওজনটা একটু বেশি তাই মাঝে মাঝে খুলে রাখতে হয়। জোনাব আলী ভয়ে পুরোপুরি জমে গেছেন। মুখ থেকে কোনো কথা বেরুলো না। এটা তিনি কী দেখছেন? ভূত-প্রেতে তাঁর মোটেই বিশ্বাস নেই। কিন্তু চোখের সামনে যা ঘটছে তা তিনি অস্বিকার করেন কী করে? ধরহীন মুন্ড আবার কথা বলল - স্যার এখনো কি মনে পড়ে নাই। ভালো করে ভেবে দেখুন। মেয়েটিকে আপনি ঘরে নিয়ে আসলেন। অল্প বয়সী মেয়ে। সে আপনার রান্নার তোরজোর দেখে নিজেই এগিয়ে এলো। আপনাকে বসে থাকতে বলে নিজে রান্না ঘরে গেল রান্না করতে। আপনি অন্ধকারে বসে জানালা দিয়ে তাকে দেখছিলেন। মেয়েটি তরকারি কাটছিল। তার ঘোমটা তখান খশে পড়েছে। হারিকেনের আর জ্বলন্ত চুলোর আলোয় আপনি দেখলেন এক অপূর্ব সুন্দর মুখ। মনে পড়ে স্যার? জোনাব আলী জবাব দেবেন কী, তিনি তখন কেমন একটা ঘোরের ভেতর চলে গেছেন। মুন্ডু বলে চলল – মেয়েটির আঁচল খশে পড়েছিল ঝুঁকে তরকারি কাটতে গিয়ে। আপনি তখন মেয়েটির দিক থেকে কিছুতেই দৃষ্টি সরাতে পারছিলেন না। আপনি মেয়েটির পায়রার মতো বুকের গড়ন দেখলেন। তার মোমের মতো ত্বকে আলোর ঝিলিক দেখলেন। মনে পড়েছে স্যার ? আপনি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। ধীর পায়ে দুয়ার ডিঙিয়ে মেয়েটির হাত ধরেছিলেন শক্ত করে। দুর্বল মেয়েটি বাধা দিতে চেয়েও পারেনি। আপনার দীর্ঘ দিনের ক্ষুধার্থ দেহে তখন পৌরুষের বান ডেকেছে। আপনি মেয়েটিকে ঘরে এনে স্রেফ ঝড় বইয়ে দিলেন। আপনার যুক্তি, ভয়, দ্বিধা, দ্বন্দ, ন্যায়, নীতি সব উবে গেল। আপনি মেয়েটিকে বলাৎকার করলেন। আশ্চর্য স্যার এত বড় ঘটনার কিছুই কি আপনার মনে পড়ছে না? যখন আপনার হুঁশ হলো তখন মেয়েটি নগ্ন, বিছানায় কোঁকাচ্ছে যন্ত্রনায়। আপনি তখনো তার উপর উপবিষ্ট। আপনার মনে হলো এই ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামে ছিছিক্কার পড়ে যাবে। আপনার আদর্শ শিক্ষক জীবনের ইতি ঘটবে। পুলিশি ঝামেলা হবে। এসব ঝামেলা এড়াতে আপনি তাই খুব ঠান্ডা মাথায় তবে দ্রুত ভেবে চিন্তে একটি কাজ করলেন। মেয়েটির মুখে বালিশ চেপে ধরলেন। স্যার কিছু কি মনে পড়েছে? আপনি স্কুলের মাঠে গিয়ে ইট সংগ্রহ করে আনলেন। মৃত মেয়েটিকে বস্তায় ভরলেন। ইটগুলোকে একট ব্যাগে ভরলেন। তারপর সব নিয়ে দীঘির পাড়ে গেলেন। সেই রাতের নির্জনতায় আপনি মেয়েটিকে দীঘির তলায় আশ্রয় দিলেন। কেউ আর তাকে খুঁজে পেলো না। অবশ্য কেউ খুঁজলোও না। শ্বশুর বাড়ির লোকজন তো তাড়িয়ে দিয়েই খালাশ। বাপের বাড়ির লোকজন মেয়েটির নিরুদ্দেশের খবর শুনে ভেবেছে আপদ গেছে। মুন্ডুটি একটু চুপ করে তবে তার হাসি তখনো ঝুলে আছে ঠোঁটে। ধরটি তখনো আঙুল দিয়ে টেবিলে বাজনা বাজাচ্ছে – ঠক্ ঠকা ঠক্ ঠক্ । মুন্ডু আবার কথা বলে – কী হলো স্যার ? এখনো আপনার মনে পড়েনি? জোনাব আলীর তখন উত্তর দেবার জো ছিলনা। তিনি ঘোর লাগা পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছেন। তার মুখ থেকে লালা ঝরা শুরু হয়েছে। দৃষ্টি ঝাপসা। কানে কেমন শো শো আওয়াজ। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন ঘরের দরজা আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে। অন্ধকারেও সেখানে একটি উজ্জ্বল শাদা হাতের উপস্থিতি দেখলেন তিনি। একটা সপ্ সপ্ আওয়াজ হলো। ভেজা পায়ে কেউ যেন হাটছে এবং একটু পরেই মেয়েটি ঘরে ঢুকলো। এ সেই বিন্দু। পুরো শরীর থেকে পানি ঝরছে। শাদা শাড়ির ভেজা আঁচল মাটিতে লুটাচ্ছে। তার পুরো শরীর জুড়ে আলোর দ্যুতি। তার দেহের ভাঁজ আরো মোহনীয় হয়েছে যেন। কামাতুর দৃষ্টি নিয়ে সে জোনাব আলীর দিকে এগিয়ে এলো ধীর পায়ে। রিনরিনে গলায় বলল – সার আপনে কেমন আছেন সার? আপনের বিরহে আমি দেওয়ানা হইছি সার! কাছে এসে জোনাব আলীর একটা হাত ধরে সে তার নরম বুকে ঠেকালো – সার আপনেরে ছাড়া আমার চলবে না সার! আপনে আমার লগে চলেন। আপনেরে লইয়া সুখে ঘর করমু ! আপনেরে অনেক সুখ দিমু! খল খল করে হেসে ওঠে সে। জোনাব আলীর মুখ থেকে একটা ঘর ঘর আওয়াজ বের হয়। তারপর সে লুটিয়ে পড়ে ঘরের মেঝেতে। পরের দিন ভোরে স্কুলের লোকজন জোনাব আলীকে বিদায় দিতে এসে দেখে তিনি ঘরের মেঝেতে মরে পড়ে আছেন। সবাই খুব আফসোস করে - আহা লোকটা খুব ভালো ছিল ! কেবল একটা জিনিসই কেউ ভেবে পায় না, ঘরের মাটির মেঝেটা এমন ভিজে আছে কেন? যিনি পাঠিয়েছেনঃ মারুফ রায়হান ফেসবুক আইডিঃ Maruf Raihan

।। রাতের আতঙ্ক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, October 31, 2011 at 10:35pm
ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার নানা ভাইয়ের সাথে। নানা ভাই তখন মাঝ বয়সের ছিলেন। ঘরে নানুজান আর উনাদের ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার। পরবর্তীতে নানুজানের কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেছি আমি এবং আমার অন্য ভাইবোন। নানা ভাই আমাদের গ্রামেরই একটা স্কুলে হেড মাস্টার ছিলেন। ঘটনা অনেক আগের। ১৯৮০ সালের দিকের। তো, তখন গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ এর তেমন প্রচলন ছিল না। বেশিরভাগ মানুষই কুপি বা হারিকেন ব্যাবহার করতো। নানা ভাই স্কুল থেকে মাঝে মাঝে ফিরতে দেরি হয়ে যেত। দেরি হয়ে গেলে উনি সেখানে নামাজ আদায় করে তারপর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা করতেন। উনার কাকা বিদেশ থেকে একটা টর্চ লাইট পাঠিয়েছিলেন। সেই টর্চের আলোই মাঝে মাঝে হতো উনার পথ চলার সম্বল। যেদিনের ঘটনা, সেদিনও নানা ভাই একটু রাত করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় একটা পুরনো বট গাছ পড়ে। দিনের বেলায়ও জায়গাটা কেমন যেনো অন্ধকার অন্ধকার থাকে। একটা জমাত বাধা বাতাস যেনো পাক খায়। তখন গ্রামে লোকজন বলতে বেশি মানুষ ছিল না। দেখা যেত, পুরো গ্রাম মিলে হয়তো ২০০ মানুষ। তাই সবারই সবার সাথে চেনা জানা ছিল। যাই হোক, নানা ভাই সেই বট গাছের কাছাকাছি আসার সময় হটাত দুটো ছায়ামূর্তির মতন দেখতে পান। অন্ধকারে হটাত নাড়া ছাড়া দেখায় তিনি একটু চমকে যান। আস্তে করে আলো ফেলে দেখার চেষ্টা করেন কাউকে দেখা যায় কিনা। আলো ফেলার খানিক আগেও যেখানে আওয়াজটা হয়েছিলো, আলো ফেলতেই দেখলেন জায়গাটা ফাঁকা। তবে যেখানে আওয়াজ হয়েছিলো সেখানে কিছু বটের শাখা নড়ছে। নানা ভাই জিজ্ঞেস করেন ওখানে কেউ আছেন কিনা। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এবার নানা ভাই একটু সাহস নিয়ে বুকে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে এগুতে থাকেন। খানিকটা পথ যাওয়ার পর উনার ভয় আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগে। এরপর আর খানিকটা গেলেই বাড়ি। নানা ভাই দ্রুত পায়ে পথ চালালেন। হটাত পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো। কে যেনো পা হেঁচড়ে হেঁচড়ে হাঁটছে। নানা ভাই ঘুরে পেছন দিকে টর্চ মারলেন। একটা লোক আসছে দূর থেকে। নানা ভাই হেঁড়ে গলায় ডাক দিলেন, কেডা গো বলে। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। এদিকে নানা ভাইকে চমকে দিয়ে হটাত সেই মূর্তিটা বাতাসের বেগে সামনে আসতে লাগলো। যেনো উড়ে আসছে। এবার নানা ভাই ভয় পেয়ে দৌড় লাগাতে যাবেন। হটাত খেয়াল করলেন, মূর্তিটার চোখ এই অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে। অনেকটা পশুর মত। কিন্তু বলা বাহুল্য, সে সময় ভাল্লুক বা ঐ জাতীয় কোনো পশু এমন করে পথে ঘাঁটে উঠে আসতো না। আর সেই মূর্তি টা একজন স্বাভাবিক মানুষের আকৃতি নিয়েই এগুচ্ছিল। নানা ভাই আর সহ্য করতে পারলেন না। ঝেরে দৌড় মারলেন পেছনে ঘুরে। দৌড় মেরে কিছুদূর যেতেই পিঠে কিছুর ছোঁওয়া অনুভব করলেন। দাঁড়ালো কোনো কিছুর আঁচড় মনে হল। নানা ভাই, চিৎকার করে আরো জোরে দৌড় লাগালেন। এবার পেছন থেকে সেই মূর্তিটা(হয়তো, কারন সেটি কি ছিল তা নানা ভাই দেখতে পারেন নি) এসে ধাক্কা দিয়ে উনাকে ফেলে দিল। জ্ঞান হারানোর আগে নানা ভাইয়ের শুধু এতটুকুই মনে ছিল। পরদিন উনাকে পথের পাশের এক ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। উনার পিঠে রক্তের মাখামাখি। সবাই মিলে ধরাধরি করে বাসায় আনার পর গ্রামের চিকিৎসক উনাক প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। উনার পিঠে বড় বড় নখের আঁচড় লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো এতো গভীর ছিল যে অনেকটা কেটে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো। নানা ভাইকে জরুরী ভাবে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করা হয়। উনি প্রায় ১ মাস পর সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপরের দিন সেই বট গাছের ডালে একজনের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। সেই লোকটা কে ছিল তা ঐ গ্রামের মানুষের অজানা। সেই রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়। এই ঘটনার পড়ে নানা ভাই এর সাথে আরো একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সেটি আজকে আর লিখলাম না। তবে, আমার মনে হয়েছে, দুটো ঘটনা এক করলে হয়তো এর কোনো উপসংহার টানা যায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি অনেক বড়। তাই আজকে আর শেয়ার করলাম না। আপনারা চাইলে পরবর্তীতে লিখে আমি এডমিনের কাছে পাঠিয়ে দিবো। যিনি পাঠিয়েছেনঃ Selim Rayhan ফেসবুক আইডিঃ Selim Rayhan বাংলা রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন)

।। সংগৃহীত গল্প – ১১ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, October 28, 2011 at 10:32pm ।। নিশুত রাতের অতিথি ।। আলতাখালি গ্রামের একমাত্র হাইস্কুলের একমাত্র অঙ্কের শিক্ষক জোনাব আলী। স্কুলের একমাত্র আবাসিক শিক্ষকও তিনি। বয়স চল্লিশোর্ধ হয়ে গেলেও এখনো বিয়ে করেননি। স্কুলের পাশেই ছোট্ট টিনের চালাঘরে তার একাকি বসবাস। জোনাব আলী যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষ। ভূত প্রেত জাতিয় অতিপ্রাকৃত বিষয়ে তার কোনরূপ বিশ্বাস নেই। তাই স্কুলের এই বিশাল নির্জনতায় রাত-বিরেতে একা থাকতে তার মোটেও সমস্যা হয় না। এক সন্ধ্যায় তিনি হারিকেনের টিমটিমে আলোয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে কী একটা উপন্যাস পড়ছিলেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন উঁ উঁ উঁ উঁ...... আওয়াজ করে দূরে কোথায় কেউ যেন কাঁদছে। জোনাব আলী জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। কৃষ্ণপক্ষের আঁধার তখন ভালোই ঘনিয়েছে। মনে হচ্ছে জানালায় কেউ ঘনকালো পর্দা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তিনি বই পড়ায় মন দিতে যাবেন এমন সময় আবার সেই কান্না – উঁ উঁ উঁ উঁ........ ! জোনাব আলী উঠে বসলেন। এমন দুঃখের কান্না এই রাতে এখানে কে কাঁদতে এলো? হারিকেনটা হাতে নিয়ে বাইরের দাওয়ায় এসে দাঁড়ালেন তিনি। দাওয়ার সামনে থেকেই স্কুলের মাঠ শুরু হয়েছে। মাঠ পেড়িয়ে ওপাশে স্কুলের দোতলা বিল্ডিং। হারিকেনটা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করলেন কাউকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু না ঘুঁট ঘুঁটে অন্ধকারে কিছু দেখার জো নেই। আলোটা উঁচু করে ধরেই তিনি দাওয়া থেকে মাঠে নামলেন। কোন দিক থেকে কান্নার আওয়াজটা এসেছে ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না। এমন সময় আবার সেই কান্নার আওয়াজ – উঁ উঁ ঊঁ ঊঁ......। তিনি বুঝতে পারলেন আওয়াজটা আসছে স্কুল বিল্ডিং-এর ওদিক থেকে। ধীর পায়ে তিনি সেদিকে হাটা শুরু করলেন। রাত নেমেছে একটু আগে। অথচ মনে হচ্ছে কত না জানি গভীর রাত। চারিদিকে থম ধরা এক নিস্তব্ধতা। তার মাঝেই কোথায় এক রাতের পাখি ডেকে উঠলো – কুপ! কুপ! কুপ! কুপ! ..... বিল্ডিং-এর কাছে এসে এদিক ওদিক আলো বাড়িয়ে দেখলেন তিনি। কেউ নেই কিছু নেই এখানে। তখন আবার সেই কান্না শোনা গেল – উঁ উঁ ঊঁ ঊঁ......। এবার জোনাব আলী বুঝলেন কান্নাটা আসছে স্কুলের পেছন থেকে। ওখানে ছোট খাটো একটা দীঘি আছে। দীঘির চার পাশটা জুড়ে নানা গাছ-গাছালির ভীড়ে ছোটখাটো একটা জঙ্গল তৈরি হয়েছে। বিল্ডিং পাশ কাটিয়ে তিনি সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবার আলো উঁচু করতেই তিনি দীঘির পাড়ে এক আবছায়া মুর্তি দেখতে পেলেন। আরেকটু এগিয়ে যেতেই ছায়ামুর্তি স্পষ্ট হলো। দীঘির দিকে মুখ করে এক নারী দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা শাড়ি। মাথায় ঘোমটা টানা। মেয়েটির বয়স যে খুব বেশি না তা পেছন থেকে দেখেও বোঝা যায়। আলোর আভাস পেয়ে মেয়েটি তার ঘোমটা আরো লম্বা করে টেনে দিলো। তার মুখ থেকে তখনো ফোঁপানোর আওয়াজ আসছে। জোনাব আলী জিজ্ঞেস করলেন – কে তুমি ? এতো রাতে এখানে কী করছো? মেয়েটি কোনো জবাব দিল না। কেবল কান্নার দমক একটু বাড়লো তার। জোনাব আলী আবারো একই কথা জিজ্ঞেস করলেন। এবার মেয়েটি জবাব দিলো – আমার নাম বিন্দু। - এতো রাতে এখানে কী করছো ?
- আমার স্বামী মারা গেছে কয় দিন আগে। তাই শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমারে বাইর কইরা দিছে ঘর থিকা। (মেয়েটি আবার উঁ উঁ করে কেঁদে ওঠে) শুনে জোনাব আলী খুব দুঃখ পান। বলেন – তা তোমার বাবার বাড়ি কই? সেখানে যাও নাই কেন ? মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতেই বলে - বাপের বাড়ি অন্য গ্রামে অনেক দূরে। এত রাইতে যাওয়া যাবে না। জোনাব একটু ভাবেন, তারপর বলেন - তা হলে কী আর করা, আজ রাতে আমার বাড়িতেই থাকো। যদিও আমি একা থাকি তারপরও তোমার ভয়ের কোনো কারণ নেই। নিজেকে আমি সৎ-চরিত্রবান বলেই জানি। আগামি কাল ভোরে তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো না হয়। ********************************************************************** পনের বছর পরের কথা – জোনাব আলীর বয়স এখন ষাট। রিটায়ারমেন্টের পর আজ তার বিদায় সংবর্ধণা হয়েছে স্কুলে। ছাত্র শিক্ষক মিলে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মঞ্চে উঠে তাঁর সহকর্মীরা বক্তৃতা দিতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরাও
চোখের পানি ফেলেছে। তাদের এতো প্রিয় অঙ্কের শিক্ষক আজ বিদায় নিচ্ছেন। এখন সন্ধ্যা ঘানিয়েছে। তিনি স্কুলের পাশে তাঁর ঘরে বসে নানা কথা চিন্তা করছেন। জীবনটা তো একা একাই পার করে দিলেন। আগামিকাল এই স্কুল, এই ঘর ছেড়ে তাঁর নিজের গ্রামে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে বলতে গেলে নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। এই বুড়ো বয়সে তা কি তিনি পারবেন? নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনের কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে। কত যে স্মৃতি তাঁর এই স্কুলকে ঘিরে! হঠাৎ দরজার কড়া নড়ে উঠলো। কেউ এসে দাঁড়িয়েছে বাইরে ঘরের দাওয়ায়। জানালা দিয়ে তিনি বাইরে তাকালেন। আজো কৃষ্ণ পক্ষের রাত। জানালার বাইরে নিকশ কালো আঁধার। তিনি দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলেন – কে? বাইরে থেকে পুরুষ কন্ঠের জবাব এলো – স্যার, আমাকে আপনি চিনবেন না। তবে আপনার সাথে খুব জরুরী কিছু কথা ছিল। একটু যদি দরজাটা খোলেন! জোনাব আলী দরজা খুলে হারিকেনের আলোয় এক অপরিচিত মুখ দেখলেন। ভদ্রলোক কালো স্যুট পড়ে আছেন। মুখে মৃদু হাসি। তিনি তাঁকে ভেতরে আসতে বললেন। ভদ্রলোক ভেতরে ঢুকেই টেবিলের পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসে পড়লেন। জোনাব আলী বসলেন তার পাশের চেয়ারে। হাসি মুখে বললেন – আপনি কে চিনতে পারিনি। দয়াকরে যদি আপনার পরিচয় বলতেন! তাঁর মনে মৃদু সন্দেহ হচ্ছে এ নিশ্চই তাঁর কোনো প্রাক্তন ছাত্র। কিন্তু ভদ্রলোক তাঁকে হতাশ করে বললেন – স্যার আমি আপনার পরিচিত কেউ নই। বলতে পারেন আমি একজন শখের গোয়েন্দা। আপনি আগামি কাল এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবেন। তার আগে ভাবলাম আপনার সাথে কিছু কথাবার্তা বলি। জোনাব আলীর ভ্রু কুঁচকে গেল, বললেন – আপনার সাথে আমার কী কথা থাকতে পারে? ভদ্রলোক হাসলেন – স্যার আমার আসলে কিছু প্রশ্ন ছিল। আপনার কি মনে পড়ে অনেক বছর আগে এক রাতে আপনার এই ঘরে একটা মেয়ে আশ্রয় নিয়েছিল? জোনাব আলী চমকে উঠলেন। তিনি কোনো কথা বললেন না। তবে তাঁর চোখের দৃষ্টি তিক্ষ্ণ হলো। লোকটি আবারো প্রশ্ন করলো – মনে পড়ে স্যার? মেয়েটির নাম ছিল বিন্দু। শাদা শাড়ি পরে ছিল। স্বামী মরার পর তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। আপনি তাকে দয়া করে আশ্রয় দিয়েছিলেন এক রাতের জন্য, মনে পড়ে? জোনাব আলী অস্বস্তি ঢাকতে চশমা খুলে পাঞ্জাবির খুঁটে কাঁচ পরিষ্কার করতে করতে বললেন – এতো দিন পরে আমাকে এ প্রশ্ন করছেন কেনো? লোকটি হাসি মুখে বলল – কারণ স্যার সেই রাতের পর থেকে মেয়েটির আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আপনি কি বলবেন তার কী হয়েছিল? জোনাব আলী আবারো চমকে উঠলেন ভীষণ। তাঁর হাত থেকে চশমাটা মাটিতে পড়ে গেল এবং চশমা তুলতে গিয়ে তিনি জমে গেলেন। একটা তিব্র ভয়ের স্রোত তার শিরদাঁড়া বেয়ে নিচে নেমে গেল। লোকটি কথা বলছে আর পা নাচাচ্ছে এক নাগাড়ে। সেই পায়ের দিকেই তিনি তাকিয়ে আছেন। হারিকেনের আবছা আলোয় তিনি দেখতে পাচ্ছেন স্যুট পড়া
থাকলেও লোকটির পায়ে কোনো জুতো নেই এবং সেই পা উল্টো দিকে ঘোরানো। যেন কেউ মুচড়ে পা দুটোকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। জোনাব আলী ভয়কে কিছুটা জয় করে উঠে বসলেন। তিনি চোখে ভুল দেখছেন বলে নিজেকে প্রাবোধ দিলেন। কিন্তু তারপর যে ঘটনা ঘটলো তার জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। হঠাৎ লোকটি হেলমেট খোলার মতো করে নিজের মাথাটা আলতো টানে খুলে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিল। যেন এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যপার। মাথাহীন শরীরটা টেবিলে হাতের আঙুল দিয়ে বাজানা বাজালো। মাথাটার মুখে হাসি ঝুলে আছে তখনো। হাসি মুখে টেবিল থেকেই সে বলল – স্যার কিছু মনে করবেন না। আমার মাথার ওজনটা একটু বেশি তাই মাঝে মাঝে খুলে রাখতে হয়। জোনাব আলী ভয়ে পুরোপুরি জমে গেছেন। মুখ থেকে কোনো কথা বেরুলো না। এটা তিনি কী দেখছেন? ভূত-প্রেতে তাঁর মোটেই বিশ্বাস নেই। কিন্তু চোখের সামনে যা ঘটছে তা তিনি অস্বিকার করেন কী করে? ধরহীন মুন্ড আবার কথা বলল - স্যার এখনো কি মনে পড়ে নাই। ভালো করে ভেবে দেখুন। মেয়েটিকে আপনি ঘরে নিয়ে আসলেন। অল্প বয়সী মেয়ে। সে আপনার রান্নার তোরজোর দেখে নিজেই এগিয়ে এলো। আপনাকে বসে থাকতে বলে নিজে রান্না ঘরে গেল রান্না করতে। আপনি অন্ধকারে বসে জানালা দিয়ে তাকে দেখছিলেন। মেয়েটি তরকারি কাটছিল। তার ঘোমটা তখান খশে পড়েছে। হারিকেনের আর জ্বলন্ত চুলোর আলোয় আপনি দেখলেন এক অপূর্ব সুন্দর মুখ। মনে পড়ে স্যার? জোনাব আলী জবাব দেবেন কী, তিনি তখন কেমন একটা ঘোরের ভেতর চলে গেছেন। মুন্ডু বলে চলল – মেয়েটির আঁচল খশে পড়েছিল ঝুঁকে তরকারি কাটতে গিয়ে। আপনি তখন মেয়েটির দিক থেকে কিছুতেই দৃষ্টি সরাতে পারছিলেন না। আপনি মেয়েটির পায়রার মতো বুকের গড়ন দেখলেন। তার মোমের মতো ত্বকে আলোর ঝিলিক দেখলেন। মনে পড়েছে স্যার ? আপনি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। ধীর পায়ে দুয়ার ডিঙিয়ে মেয়েটির হাত ধরেছিলেন শক্ত করে। দুর্বল মেয়েটি বাধা দিতে চেয়েও পারেনি। আপনার দীর্ঘ দিনের ক্ষুধার্থ দেহে তখন পৌরুষের বান ডেকেছে। আপনি মেয়েটিকে ঘরে এনে স্রেফ ঝড় বইয়ে দিলেন। আপনার যুক্তি, ভয়, দ্বিধা, দ্বন্দ, ন্যায়, নীতি সব উবে গেল। আপনি মেয়েটিকে বলাৎকার করলেন। আশ্চর্য স্যার এত বড় ঘটনার কিছুই কি আপনার মনে পড়ছে না? যখন আপনার হুঁশ হলো তখন মেয়েটি নগ্ন, বিছানায় কোঁকাচ্ছে যন্ত্রনায়। আপনি তখনো তার উপর উপবিষ্ট। আপনার মনে হলো এই ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামে ছিছিক্কার পড়ে যাবে। আপনার আদর্শ শিক্ষক জীবনের ইতি ঘটবে। পুলিশি ঝামেলা হবে। এসব ঝামেলা এড়াতে আপনি তাই খুব ঠান্ডা মাথায় তবে দ্রুত ভেবে চিন্তে একটি কাজ করলেন। মেয়েটির মুখে বালিশ চেপে ধরলেন। স্যার কিছু কি মনে পড়েছে? আপনি স্কুলের মাঠে গিয়ে ইট সংগ্রহ করে আনলেন। মৃত মেয়েটিকে বস্তায় ভরলেন। ইটগুলোকে একট ব্যাগে ভরলেন। তারপর সব নিয়ে দীঘির পাড়ে গেলেন। সেই রাতের নির্জনতায় আপনি মেয়েটিকে দীঘির তলায় আশ্রয় দিলেন। কেউ আর তাকে খুঁজে পেলো না। অবশ্য কেউ খুঁজলোও না। শ্বশুর বাড়ির লোকজন তো তাড়িয়ে দিয়েই খালাশ। বাপের বাড়ির লোকজন মেয়েটির নিরুদ্দেশের খবর শুনে ভেবেছে আপদ গেছে। মুন্ডুটি একটু চুপ করে তবে তার হাসি তখনো ঝুলে আছে ঠোঁটে। ধরটি তখনো আঙুল দিয়ে টেবিলে বাজনা বাজাচ্ছে – ঠক্ ঠকা ঠক্ ঠক্ । মুন্ডু আবার কথা বলে – কী হলো স্যার ? এখনো আপনার মনে পড়েনি? জোনাব আলীর তখন উত্তর দেবার জো ছিলনা। তিনি ঘোর লাগা পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছেন। তার মুখ থেকে লালা ঝরা শুরু হয়েছে। দৃষ্টি ঝাপসা। কানে কেমন শো শো আওয়াজ। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন ঘরের দরজা আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে। অন্ধকারেও সেখানে একটি উজ্জ্বল শাদা হাতের উপস্থিতি দেখলেন তিনি। একটা সপ্ সপ্ আওয়াজ হলো। ভেজা পায়ে কেউ যেন হাটছে এবং একটু পরেই মেয়েটি ঘরে ঢুকলো। এ সেই বিন্দু। পুরো শরীর থেকে পানি ঝরছে। শাদা শাড়ির ভেজা আঁচল মাটিতে লুটাচ্ছে। তার পুরো শরীর জুড়ে আলোর দ্যুতি। তার দেহের ভাঁজ আরো মোহনীয় হয়েছে যেন। কামাতুর দৃষ্টি নিয়ে সে জোনাব আলীর দিকে এগিয়ে এলো ধীর পায়ে। রিনরিনে গলায় বলল – সার আপনে কেমন আছেন সার? আপনের বিরহে আমি দেওয়ানা হইছি সার! কাছে এসে জোনাব আলীর একটা হাত ধরে সে তার নরম বুকে ঠেকালো – সার আপনেরে ছাড়া আমার চলবে না সার! আপনে আমার লগে চলেন। আপনেরে লইয়া সুখে ঘর করমু ! আপনেরে অনেক সুখ দিমু! খল খল করে হেসে ওঠে সে। জোনাব আলীর মুখ থেকে একটা ঘর ঘর আওয়াজ বের হয়। তারপর সে লুটিয়ে পড়ে ঘরের মেঝেতে। পরের দিন ভোরে স্কুলের লোকজন জোনাব আলীকে বিদায় দিতে এসে দেখে তিনি ঘরের মেঝেতে মরে পড়ে আছেন। সবাই খুব আফসোস করে - আহা লোকটা খুব ভালো ছিল ! কেবল একটা জিনিসই কেউ ভেবে পায় না, ঘরের মাটির মেঝেটা এমন ভিজে আছে কেন? যিনি পাঠিয়েছেনঃ মারুফ রায়হান ফেসবুক আইডিঃ Maruf Raihan

।। সংগৃহীত গল্প – ১২ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, October 29, 2011 at 10:19pm ।। রাতের আতঙ্ক--শাহনেওয়াজ চৌধুরী ।। একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে শহরে গিয়েছিল তানজিম। ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল। চাকরির ইন্টারভিউ শেষ হয়েছে দুপুর নাগাদ। সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ডে চলে এলো ও। বাস ছাড়তে তখনো আধঘণ্টা বাকি আছে জেনে বাসস্ট্যান্ডের পাশেই একটা চায়ের দোকানে এক কাপ চা আর একটা বনরুটি খেয়ে বাসে উঠে বসলো তানজিম।
বাস ছাড়লো নির্দিষ্ট সময়ের পনেরো মিনিট পরে। তাতেই প্যাসেঞ্জাররা ড্রাইভারের ওপর মহাখাপ্পা।
কিন্তু বাস তো ছেড়েছে, আধাঘণ্টার মতো চলার পর বাসের চাকা পাংচার হয়ে গেল। প্যাসেঞ্জারদের বাস থেকে নামিয়ে চাকা বদলাবদলি করতে অনেকটা সময় কেটে গেল। তারপর বাস যখন ফেরিঘাটে এলো, তখন আরেক বিপত্তি। ফেরি এপারে ঘাট থেকে মাত্রই ছেড়ে গেছে। তার মানে ওপারে বাস-গাড়ি আর যাত্রী নামিয়ে আবার নতুন করে ফেরি লোড করে ফিরতে ঘণ্টাখানেক লেগে যাবে।
যাহোক, এতসব বিড়ম্বনা কাটিয়ে বাস যখন তানজিমদের বাড়ির কাছাকাছি স্টপেজে এসে থামলো, তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। অথচ সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছে যাবার কথা ছিল। তা সন্ধ্যা তো দূরের কথা, রাতও এগিয়েছে অনেক দূর।
বাড়ির কাছের স্টপেজ বলতে অন্যান্য স্টপেজের চেয়ে এই স্টপেজ থেকে বাড়ি কাছে হয় তানজিমদের। কিন্তু পথের দূরত্ব একেবারে কম নয়। যদিও রিকশা-ভ্যানে চড়ে গ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু এত রাতে সেসব পাওয়ার আশা দুরাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবু রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো তানজিম। শীতের কুয়াশা বেশ জেঁকে বসেছে! চলতে চলতে পুরো যাত্রার ওপর বিরক্তি ধরলো তানজিমের। ভাবে চাকরি তো হবেই না, শুধু শুধু এই কষ্ট ভোগ করা!
সত্যিই, তানজিম এতোটাই ক্লান্ত যে, বাসস্টপেজ থেকে বাড়ি পর্যন্ত যে পথটুকু হেঁটে আসতে হয়েছে, অন্যান্য সময় হলে রিকশায় না এসে হেঁটে এলেও গায়ে লাগতো না, কিন্তু এখন বেশ গায়ে লাগলো। আর এখন চৌধুরীদের বাগানের কাছাকাছি এসে ক্লান্তিটা যেন আরো জেঁকে ধরেছে! বাড়ির একদম কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলেই কি ক্লান্তিটা এভাবে জেঁকে বসেছে? চৌধুরীদের এই বাগানটা পেরোলেই তানজিমদের বাড়ি।
বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তানজিমের খেয়াল হলো বেশ অন্ধকার! সামান্য দূরত্বেও কিছু দেখা যাচ্ছে না! তানজিম ভাবে চৌধুরীদের বাগানটা কি রাতের বেলা সবসময় এমন অন্ধকার থাকে? মনে পড়ছে না ওর। বেশ ঘন ঘন গাছে বাগানটা সয়লাব। সেই জমিদার আমলের বাগান। বুড়ো গাছপালা এখনো জানান দেয় গাছপালা আর বাগানের প্রতি রাজ-রাজড়াদের কতোটা ঝোঁক ছিল! ঘন বাগানে এই গাছপালাগুলো যেমন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি দাঁড়িয়ে আছে তাদের প্রাসাদটা। পুরনো আমলের বাড়ি বলে, ওটা না পারছে দাঁড়িয়ে থাকতে না পারছে পুরোপুরি ভেঙে পড়তে। তাই ইট-সুরকি, পলেস্তরা খসে খসে বয়সের কথা জানান দিলেও রাজ-রাজড়াদের পুরনো আমলের মজবুত বাড়ি বলে হয়তো এখনো ভেঙে পড়েনি ওটা। কিন্তু লতাপাতা আর দেয়ালের গায়ে পরগাছা জন্মে বাড়িটাকে ঢেকে ফেলেছে! বাগানের পুবদিকে চৌধুরীদের বাড়ি। পশ্চিমে একটা মসজিদ। মসজিদের বাঁ পাশ দিয়ে বিশাল এক দীঘি। এই মসজিদটাতে লোকজন এখনো নামাজ পড়ে বলে এটাকে মেরামত-টেরামত করে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু রাজার আমলের মসজিদের সেই জৌলুস আর নেই। বাগান পেরোতে পেরোতে অন্ধকারে তানজিমের পথ চলতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু এত রাতে মসজিদে আলো জ্বলতে দেখে ওর চমক লাগে। তানজিম ভাবে আজ কি বিশেষ কোনো রাত? এতো রাতে লোকজন মসজিদে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল?
আর কী ঝকমকে আলো জ্বলছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। রাতের বেলায় তানজিমও তো মাঝে মাঝে মসজিদে এসেছে। কিন্তু তখন তো এত আলো ঝলমলে মনে হয়নি!
দূর থেকে এসব ভাবতে ভাবতে তানজিম যখন মসজিদের কাছাকাছি এলো, তখন আতর-লোবানের গন্ধে মন ভরে গেল ওর। মসজিদের কাছাকাছি আসতেই তানজিম দেখলো কয়েকজন লোক লাশের খাটিয়া কাঁধে তুলে দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তে কবরস্থানের দিকে চলেছে! তানজিম ভাবলো গ্রামের কেউ মারা গেছে হয়তো! কিন্তু যে লোকগুলোকে লাশ নিয়ে যেতে দেখলো, তাদের কাউকে চিনতে পারলো না ও। লোকজনের মধ্যে নিজের বাবাকেও খুঁজলো। তাকে দেখতে না পেয়ে ভাবলো বাবা হয়তো এতো রাতে আসেননি। তার এ্যাজমার সমস্যা আছে। তাই শীতের রাতে বের হননি হয়তোবা! তাই বলে এতোগুলো লোকের মধ্যে কাউকে চিনতে পারলো না সে! অবাক-বিস্ময়ে ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো তানজিম।
বাড়িতে এসে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না এ প্রসঙ্গে। মা ভাত বাড়লেন। মুখ-হাতে ধুয়ে এসে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো তানজিম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবার সঙ্গে দেখা হতেই তানজিম জিজ্ঞেস করল, বাবা, আমাদের গ্রামে কে মারা গেছে?
ছেলের প্রশ্ন শুনে ভ্র কুঁচকালেন আজিম উদ্দিন। কই? কেউ মরেনি তো!
বাবার কথা শুনে ভারী এক হোঁচট খেল তানজিম। গত রাতের দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠলো ওর। হ্যাঁ, স্পষ্ট দেখেছে ও ঝলমলে আলো জ্বলছে মসজিদে। খাটিয়ায় কাফনে মোড়ানো লাশ নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। বাবার কথার সাথে তো এসবের কিছুই মিলছে না। কেউ যদি মারা না-ই যায়, তাহলে মিলবেই বা কেমন করে!
তুই কোথায় শুনলি, গ্রামে লোক মরেছে? আজিম উদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন।
তানজিম ভাবল বাবা যেহেতু বললেন গ্রামে কেউ মরেনি, সেহেতু গতরাতের ঘটনা বললে ওকে নিয়ে হাসাহাসি পড়ে যেতে পারে। তাই ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাইল তানজিম। কিন্তু গতরাতের ঘটনা মোটেই অবিশ্বাস করতে পারছে না ও। ঘটনাটা মনে পড়লেই মসজিদ থেকে ভেসে আসা আতর-লোবানের গন্ধ নাকে লাগে যেন। ঝলমলে আলো চোখে ভেসে ওঠে।
তানজিমের ঘোর কাটে না। বাবা বলেছেন গ্রামে কেউ মরেনি, দু’চারজন বন্ধু-বান্ধবকে জিজ্ঞেস করেও একই কথা জানলো। তাহলে সেই রাতে কার লাশ...। ভাবতে ভাবতে মনের ভেতরে এক ভয়ার্ত শিহরণ বয়ে যায়। দিনরাত কেবল এই ঘটনাটা ঘুরপাক খায় তানজিমের মনে। এর দু’দিন পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। ভয়ংকর এক স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলো তানজিম। শীতের মধ্যেও দরদর করে ঘামলো। কিছুটা শান্ত হয়ে স্বপ্নটার কথা মনে করতে চেষ্টা করলো। কিন্তু না, একদম মনে করতে পারলো না। শুধু এইটুকু বুঝল স্বপ্নটা বেশ ভয়ংকর ছিল। হুট করে একটা বিষয় মনে পড়ল তানজিমের সেদিন মসজিদের ওখানে যে লোকগুলোকে দেখেছিল, তাদের একজনকেও তো চিনতে পারেনি ও। তার মানে তাদের কেউই এই গ্রামের কেউ নয়! এই গ্রামের হলে তো চেনাই যেত। এবার ভয়ে আতঙ্কে ভরে উঠল তানজিমের মন। এই ক’দিনে তানজিম সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরেছে। কারণ দিনের বেলায়ই চৌধুরীদের বাগানের ভেতর দিয়ে আসতে সাহস হয় না ওর, রাত হয়ে গেলে তো কথাই নেই।
এরমধ্যে ঢাকায় যে ফার্মে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছিল তানজিম, সেখান থেকে এ্যাপয়েনমেন্ট লেটার এসেছে। পরবর্তী মাসের এক তারিখে জয়েন করতে হবে। হাতে আর মাত্র ৭ দিন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো তানজিম। সে ভাবে, চাকরিটা তো তার দরকার ছিলই, কিন্তু গ্রামে থেকে সেই রাতের ঘটনাটা যে তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, আর রাত হলেই বারবার ওই ঘটনা মনে পড়লে তাকে যে আতঙ্ক জড়িয়ে রাখে, ঢাকায় গেলে এই সমস্যা থেকে তো পরিত্রাণ পাওয়া যাবে!
হাতে যদিও সাতটা দিন আছে, তবু তানজিম ভাবলো, এর আগেভাগেই ঢাকায় যাবে। গ্রাম থেকে পালাতে পারলেই যেন বেঁচে যায় সে! তাছাড়া আগেভাগে গিয়ে একটা মেস খুঁজে উঠে পড়তে হবে।
ঢাকায় এসে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে একটা মেস পেয়ে গেল তানজিম। মেসে টুকটাক সমস্যা তো আছেই। টিনসেডের পাকা বাড়ি। সামনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা। তিন-চারটা গাছ রয়েছে। কিন্তু বাথরুম-টয়লেট বাইরে। ঘর থেকে বেরিয়ে সামনের উঠোনের মতো জায়গাটা পেরিয়ে বাথরুম-টয়লেট আর কলতলায় যেতে হয়। এই অসুবিধা সত্ত্বেও নিরিবিলি পরিবেশের কারণে মেসটা পছন্দ হলো তানজিমের। বাড়িঘরে ঘিঞ্জি ঢাকা শহরে এমন নিরিবিলি থাকার জায়গা খুব কম মেলে। রুমমেটকেও পছন্দ হলো। বেশ মজার মানুষ জাফর হোসেন। মধ্য বয়স্ক। একটা বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেন। তানজিম তাকে ‘জাফর ভাই’ বলে ডাকে। অল্প ক’দিনেই ওর সঙ্গে বেশ ভাব জমে গেল। ছুটির দিনে দু’জন একসঙ্গে ঘুরতে বের হয়। তানজিম গ্রাম থেকে এসেছে। ঢাকা শহরটা তার অচেনা। জাফর ভাই নিজ উদ্যোগেই এখানে-ওখানে নিয়ে যায় ওকে। তার আসল উদ্দেশ্য তানজিমকে ঢাকা শহর চেনানো।
তানজিম ভাবে যাক, এখানে ভালোই কাটবে।
একরাতে খেয়েদেয়ে ঘুমানোর আগে মুহূর্তে বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে গল্প করছিল তারা দু’জন।
এ প্রসঙ্গে-ও প্রসঙ্গ ঘুরে জাফর ভাই হঠাৎ বললেন, এখানে একটু সাবধানে থাকবেন। এই মেসে একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে একবার। আমার ধারণা সেই ঘটনার পর আরো কিছু ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। এই মেসের অন্যান্য মেম্বাররা তা খেয়াল করে কিনা জানি না। কিন্তু আমি খেয়াল করেছি। জাফর ভাইয়ের কথা শুনে বুক কেঁপে উঠলো তানজিমের। ভাবলো গ্রামে থাকতে যে আতঙ্ক তাকে আঁকড়ে রেখেছিল, ঢাকায় এসেও সেই একই অবস্থায় পড়তে হলো!
জাফর ভাই বললেন, আমাদের পাশের রুমে আলম ভাই থাকতেন। লোকটার একটা বড় গুণ ছিল নিজের কাজ নিজে করতেন। তো গতবার শীতে, একদিন সকাল বেলা তার লেপটা রোদে দেবেন বলে অফিসে যাবার আগে টিনের উপর মেলে দিয়ে গেলেন। সন্ধ্যায় মুখে অফিস থেকে ফিরে মই বেয়ে লেপটা নিয়ে নেমে আসার সময় উপুড় হয়ে পড়ে জায়গায় মরে গেলেন লোকটা। এমনভাবে উপুড় হয়ে পড়েছিলেন যে, তার ঘাড় মটকে গেল! আমরা অবাক এইটুকু উঁচু থেকে এভাবে কেউ পড়ে! সে যাক, এই নিয়ে সন্দেহজনকভাবে থানা-পুলিশ হলো। কিন্তু প্রমাণ হলো তাকে কেউ খুন করেনি। নিছক এক্সিডেন্ট। আমাদের বিস্ময় কাটে না তবু এই সামান্য উঁচু থেকে পড়ে এমনিভাবে কেউ মরতে পারে! আর পড়লেও এইটুকুতেই মরার মতো ঘটনা ঘটার কথা নয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই অশুভ কিছু থাকতে পারে। এই যেমন অশরীরি কিছুর প্রভাব। এই জায়গাটা নিরিবিলি তো। তাছাড়া, তখন মেসেও তেমন কেউ ছিল না। অফিস থেকে ফেরেনি সবাই। একটু থেমে জাফর ভাই বললেন, কিন্তু আলম ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে একটা বিষয় খেয়াল হলো আমার। মাঝরাতে আমাদের মেসের টিনের চালে কে যেন হেঁটে বেড়ায়! সেই হেঁটে বেড়ানোর শব্দ এতই সূক্ষ যে, নিবিড়ভাবে কানখাড়া করে না রাখলে টের পাওয়া যায় না। যত গাঢ় ঘুমেই ডুবে থাকি আমি, টিনের চালে কারো হাঁটার শব্দে ঠিকই ঘুম ভেঙে যায়। শুধু তাই নয়, ঠিক এ সময় একটা বেড়ালের ডাক শোনা যায়। বেড়ালটা এমনভাবে ডাকে, শুনে মনে হবে কোনো বাচ্চা কাঁদছে! কথার মাঝে আবার একটু থামলেন জাফর ভাই। তারপর বললেন, আপনি এই মেসে নতুন। রাতে ঘুম থেকে উঠে হয়তো টয়লেটে যেতে হতে পারে! একটু সাবধানে থাকবেন।
তানজিম এতক্ষণ যাবৎ শুনছিল ঠিকই, কিন্তু ভয়ে শরীর শক্ত হয়ে এলো ওর। এরপর থেকে প্রতি রাতেই তানজিমের এমন অবস্থা হয়। জাফর ভাই ঘুমিয়ে পড়ে, তানজিমের ঘুম আসে না কিছুতেই। রাত একটু ভারী হতেই ও টের পায় টিনের চালে কেউ যেন হাঁটছে! আর প্রতিদিন সকাল হলে ভাবে যে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে পরিত্রাণের আশা করেছে সে, সেই আতঙ্ক শহরেও তার পিছু ছাড়লো না! তাই ঠিক করলো এই মেসে আর বেশিদিন থাকবে না সে। কোনো কোনো রাতে কান খাড়া করে টিনের চালের ওপরে হাঁটার শব্দ শুনতে চেষ্টা করে তানজিম আসলেই কেউ টিনের চালে হাঁটাহাটি করছে কিনা। শুনে তার কখনো মনে হয় ওসব আসলে ভ্রম! আবার মনে হয় না, অবিকল মানুষের হাঁটার শব্দ ভ্রম হয় কী করে! এই ধারণা থেকে রাতের বেলা প্রস্রাবের বেগ হলেও ঘর থেকে বের হতো না তানজিম। প্রস্রাব চেপে রাখতো। কিন্তু একদিন তার পেটে গন্ডগোল বাঁধলো। দুপুরের পর অফিসে বসেই ব্যাপারটা টের পেল সে। আগের রাতে মেসের রান্নাটা ভালো ছিল না। তরকারি অতিরিক্ত তেল আর ঝালে মাখামাখি। তাই এই পেটে গন্ডগোল। যদিও দুপুর থেকেই ওষুধপত্র খেতে শুরু করেছে, কিন্তু ওষুধের কাজ করতেও তো কিছুটা সময় লাগবে! মেসে ফিরে একটু পরপরই টয়লেটে যেতে হচ্ছে। তাই চিন্তা বাড়ে রাত বাড়লে মেসের সবাই ঘুমিয়ে পড়লে, তখন টয়লেটে যেতে হলে একা কেমন করে যাবে? জাফর ভাইও নেই। অফিস থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়ে আজ সকালেই গ্রামের বাড়ি গেছে। উনি থাকলে না হয় ঘুম থেকে জাগিয়ে হলেও তাকে মেসের বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রেখে টয়লেটে যেতে পারতো তানজিম!

ঘুমিয়ে পড়েছিল তানজিম। শরীর এতোটাই দুর্বল, ঘুমিয়ে না পড়ে উপায় আছে? রাত আড়াইটা নাগাদ হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তানজিমের। টয়লেটে যাবার প্রয়োজন অনুভব করলো। এ কারণেই বোধহয় ঘুম ভেঙেছে তার। কিন্তু টয়লেটে যেতে সাহস পাচ্ছে না। কান খাড়া করে টিনের চালে হাঁটাহাটির শব্দটা শোনার চেষ্টা করলো। নাহ্, কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। একবার, দু’বার, তিনবার... পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শব্দটা শোনার চেষ্টা করলো। কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। এতে বোধহয় কিছুটা সাহস জন্মালো তানজিমের মনে। রুমের দরজা খুলে বাইরে বের হলো। ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকালো। তারপর একরকম দম বন্ধ করে টয়লেটের দিকে ছুটলো। একদম এদিক-ওদিক তাকালো না। কিন্তু টয়লেট থেকে বেরিয়ে যখনই রুমের দিকে পা বাড়াবে, অমনি খুব কাছ থেকে বেড়ালের কাঁইকুঁই ডাক শুনতে পেল তানজিম। শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো তার। খুব ধীরে পা ফেলতে লাগলো, যেন তার শরীর ঘেঁষে আছে ভয়ংকর কিছু একটা! একটু নড়াচড়া করলেই বিপদ। বেড়ালের কাঁইকুঁই ডাকাডাকি একতরফা চলছেই। আর শব্দটা ক্রমশ খুব সূ² হচ্ছে। তানজিমের মনে হলো এটা কোনো বেড়ালের ডাক নয়, কোনো ছোট্ট শিশুর ডাক। ভীষণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশুটি! বেড়ালের মতো পা টিপে টিপে রুমের দিকে চলেছে তানজিম। বেড়ালের ডাকটা এমন শোনালো, ভয়ে-আতঙ্কে শরীরটা যেন অসাড় হয়ে গেল তানজিমের। যেন তাকে দেখেই বেড়ালটা এভাবে ডেকে উঠলো। কিন্তু এমন ডাক যে অশুভ, তানজিম তা খুব ভালো করে বুঝতে পারে। একটু থেমে আরেকবার ডেকে উঠল বেড়ালটা। শুরু থেকেই তানজিম বেড়ালের ডাক হিসেবে ধরে নিলেও, এবার আর ডাকটা কিছুতেই বেড়ালের ডাক বলে মনে হলো না। একবার নয় পরপর তিনবার শোনা গেল ডাকটা। আর প্রতিবারই কানে বাজলো আতঙ্ক জড়ানো তরঙ্গ। ভয়ে জড়োসড়ো অবস্থা তানজিমের। তখনই সে দেখলো একটা নয়, চার-পাঁচটা ভয়ানক কালো বেড়াল জ্বলজ্বলে চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি তো নয়, যেন ভয়ংকর হিংস্রতা ঝরে পড়ছে চোখগুলো থেকে।
এমন পরিস্থিতিতেও তানজিমের মনে হলো ওই জন্তুগুলো সাধারণ বেড়াল নয়, যেন ভয়ংকর কোনো দানব! এর বেশি কিছু বোঝার সুযোগ হয়নি তানজিমের। সকালবেলায় মেসের সবাই তাকে কলতলায় অজ্ঞান অবস্থায় পেল।

।। সংগৃহীত গল্প – ১৩ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, October 30, 2011 at 9:59pm ।। লাল চোখ ।। রাত দশটা খড়মপাড়া গ্রামের জন্য বেশ অনেকই রাত। ফইজু মেম্বার ভাবে নাই কাজ শেষ করতে করতে এত রাত হয়ে যাবে। কিন্তু এই এলাকার মাতবর সে। চেয়ারম্যান থাকে সদরে। তাই গ্রামের বিচার আচার আর শালিশ-দরবার সব ফইজু মিঞাকেই সমলাতে হয়। দেখা যায় দরবার শেষ হয়ে গেলেও অনেকে ঘিরে ধরে তাকে, মিষ্টি পিচ্ছিল কথা বলে। তো আজকেও এমনি একটা বিচার ছিল। প্রবাসী শ্রমিক মনির হোসেনের স্ত্রী বেলায়াতীর সাথে প্রতিবেশী আছির মন্ডলের একটা গোপন কচলাকচলি দেখে ফেলে ভাতৃবধু সুফিয়া। তারপর হাকডাক, কান্নাকাটি আর ঝগড়া-ঝাটির পর আজকের এই শালিস। এরই মধ্যে ফইজু মিঞার সমবয়সী আছির মন্ডল তলে তলে রসময় সমঝোতায় চলে আসে তার সাথে। শালিস শেষে বেলায়েতীর সাবিত্রী রায় নিয়ে জনসমাগম বাড়ী চলে যায়। আর সাঝবেলা আধো আলো আঁধারে কি দেখতে কি দেখা আর সেটা নিয়ে হাক ডাক করার জন্য তিরস্কৃত হয় সুফিয়া। তারও আধা ঘন্টা পর ফইজু মিঞা বুঝতে পারে আসলেই বেলায়াতী বেশ উদার। তার বাধানো তাগড়া শরীরেও হাপ ধরে গিয়েছে এক দ্রুত আপ্যায়নে। কাজ কাম শেষে বাড়ীর পথ ধরে ফইজু মিঞা। ফটফটে জোৎস্না আছে, গ্রাম্য পথ চলতে তেমন কোন সমস্যাই হচ্ছিল না। নিথর গভীর রাত, নুন্যতম শব্দহীন সুনসান চরাচর। তেল মারা বয়সী হারকিউলিস সাইকেল প্যাডেলে প্যাডেলে সামান্য কোঁকিয়ে উঠছে শুধু। ফজিুর সারা শরীরে একটা আরামদায়ক অবসাদ। তবে, নাপাক শরীরে একটু অস্বস্তি লাগছে। কারন গায়েবী মাখলুকাতগুলো নাপাক শরীরের গন্ধ পায়, একা পেলে যা তা উৎপাত করে। কার্তিকের মাঝরাত। ঝলক ঝলক হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে মাঝে মধ্যে। হঠাৎ একটা কালো বিড়াল হুস করে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে দৌড়ে পার হয়ে গেলো। আর একটু হলে সাইকেলের নীচে চাপা পড়তো। ফইজু মিঞা থামে। লুঙ্গীর কোট থেকে বিড়ি ম্যাচ বের করে আগুন জ্বালায়। কষিয়ে টান বসায়। কেমন যেন একটা অব্যক্ত অস্বস্তি ফুটে উঠছে মনের পটে। নাহ্! এত রাতে এমন একা একা বের হওয়া ঠিক হয় নি। আবজইল্ল্যা আসতে চেয়ে ছিল সাথে। কিন্তু সাইকেলে ডাবলিং করার হ্যাপায় তাকে ফিরিয়ে দিয়ে ছিল ফইজু। এখন সামান্য আফসোস হচ্ছে। কেমন যেন একটা বোবা ভয় ধীরে ধীরে কুয়াশার মত দলা পাকাচ্ছে অসম সাহসী ফইজু মিঞার গোটা অস্তিত্বকে কেন্দ্র করে। পল পল করে পার হয় কিছু বোবা সময়। উষ্ণ ঘাম বুক গলা ভিজিয়ে দিচ্ছে তার। একটা দিশেহারা ভাব তাকে যখন গ্রাস করতে যাচ্ছিল ঠিক তখন দূর থেকে ভেসে আসলো কয়েকজন মানুষের কন্ঠস্বর। উঠে দাঁড়িয়ে পাছায় ঘাম ভেজা করতল মোছে ফইজু। অবারিত জোৎস্নায় চোখ সরু করে তাকায়। তিনজন ছেলে বয়সী মানুষ আসছে। হঠাৎ যেন কর্পূরের মত উবে গেল সব ভয়। জাদরেলী হাঁক ছাড়লো, ‘ কারা যায়’? কাছে এসে পাশের গ্রামের যুবকত্রয়ের সলাজ উত্তর, বাজারের ভিডিও দোকানে রাতের বিদেশী ফিলিম দেখে বাড়ী ফিরছে তারা। ফইজু মিঞা সাইকেল ঠেলে হাটতে থাকলো তাদের সাথে। বেশ অনেকটা পথ এক সাথে যাওয়া যাবে। সংকোচিত যুবকদের বিদেশী ফিলিম দেখার কুফল বর্ণনা করতে করতে দিঘীর পাড়ে পৌছে গেল। এবার যুবকত্রয় ভিন্ন পথে যাবে। ফইজু মিঞার বাড়ী এখান থেকে আর মাইলখানেক মাত্র। চলে যাওয়া যাবে একটানে। বিদায় নিল যুবকেরা। তারা চোখের আড়ালে যেতেই আবার স্বমহিমায় ফিরে এল সেই পুরাতন ভয়। যেন কাছাকাছি কোথাও ঘাপটি মেরে লুকিয়ে ছিল এতক্ষণ। নিরিবিলি পেয়ে লাফিয়ে চেপে বসেছে ফইজু মিঞার ঘাড়ে। বাতাসে হাত চালিয়ে কি যেন উড়িয়ে দিয়ে আবার রওনা হল দোটানায় পড়া ফইজু। দিঘীর উঁচু পাড় থেকে নিচে নেমে গেছে রাস্তাটা। অনেক দূর পর্যন্ত প্যাডেল মারতে হয় না। শুধু হ্যান্ডেল ধরে বসে থাকলেই হয়। জোরে জোরে কয়েকটি চাপ দিয়ে পা দুটোকে জিরাতে দিল ফইজু। ঝড়ের বেগে সা সা করে ছুটে চলছে সাইকেল। আরো কিছু বাড়তি গতি দিতে সজোরে প্যাডেল দাবায় ফইজু। হঠাৎ আবিস্কার করে চেইন পড়ে গেছে। হতাশ হয়ে সাইকেল থেকে নামে সে। মনের মধ্যে কেমন যেন কু ডাকছে। বোধ হচ্ছে সাইকেল থেকে নামাটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু কি আর করা। না, চেইনটা পড়েনি! মাঝ বরাবর দুই খন্ড হয়ে ছিঁড়ে গেছে! বাকীটা পথ সাইকেল ঠেলে নিয়ে যেতে হবে। দিঘী পাড়ে রাস্তার দুপাশে যেমন ঘন ছনের ঝোপ ছিল, এখানটা একদম পরিস্কার। সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায় ধূ ধূ চরাচর। হাশেম মুন্সীর পাথার। এই বিস্তীর্ণ পাথারের পরই শুরু হয়েছে ফইজুদের গ্রাম। গ্রামের একেবারে মাঝামাঝিতে তার বাড়ী । কিছু দূর যাবার পর ফইজু মিঞা দেখলো মেটে রাস্তার উত্তর পাশে বেশ কয়েকজন মানুষ বসে আছে। আরো একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল দশ-বারো জন যুবক বয়সী ছেলে রাস্তার পাশে বসে দুলে দুলে কি যেন বই পড়ছে। পরনে লম্বা সাদা জামা আর মাথায় গোল টুপি। চারপাশটা কেমন যেন একটা লালাচে আভায় আলোকিত হয়ে আছে। এই কটকটে জোৎস্না চেষ্টা করলে হয়তো কিছু পড়া যায় কিন্তু এতো জায়গা থাকতে রাস্তায় বসে পড়াশুনা করতে দেখে ফইজুর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠলো। ‘কে রে তোমরা, এখানে কি কর’? পিলে চমকানো হাঁক দাগালো ফইজু মিঞা। সবগুলো যুবক শান্তভাবে এক সাথে তাকালো ফইজু মিঞার দিকে। হঠাৎ অন্তরাত্মা খাঁচা হয়ে গেল ফইজু মিঞার। যুবক গুলোর চোখের জায়গায় যেন গনগনে অঙ্গার বসানো। ধক্ব ধক্ব করে জ্বলছে। লাল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে চারপাশ। কেমন একটা পোড়া পোড়া গন্ধ। পড়া বন্ধ করে ধীরগতিতে নড়ে উঠে যুবকেরা। যেন তার অপোতেই বসে ছিল এতো সময়। বিস্ফোরিত চোখে ফইজু দেখে চার হাত পায়ে ভর করে দ্রুতগতিতে তার দিকেই ছুটে আসছে তারা। ওওওরে.... বাবা গো......! বলে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড় দিল ফইজু মিঞা। ঢেলায় আঘাত খেয়ে পায়ের নখ উল্টে গেছে, কাদায় পিছলা খেয়ে লুঙ্গী ছিড়ে গেছে, কোন অনুভূতি নেই ফইজুর। যে কোন মূহুর্তে যেন ফেটে যাবে ফুসফুস। বাড়ীর পেছনের ডেঙ্গা দিয়ে ট্টটি ও মুরগীর ঘরের ফাঁক গলে দাওয়ায় আছড়ে পড়ে সে। গোঁ গোঁ শব্দ করে হঠাৎ নীথর হয়ে যায় সে। বাড়ীর লোকজন কুপি হারিকেন নিয়ে বের হয়ে এসে দেখে চিৎ হয়ে পড়ে আছে নিস্পন্দন ফইজু মিঞার প্রাণহীন দেহ। চোখ দুটো আর দাতের পাটিগুলো বিস্ফোরিত ভাবে খুলে আছে। দাঁতের ফাক গলে বের হয়ে আছে লম্বাটে শুষ্ক জিহবা। মারা গেছে ফইজু মিঞা। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আলগা বাতাস লাগা লাশ। কান্নার রোল উঠলো ফইজুর বউ আর বাধা মুনীদের মাঝে। আর্তনাদে যেন চিরে দুই ভাগ হয়ে যাবে কালো আকাশ। হিম শীতল দেহটাকে গোসল করালো পড়শীরা। নিঃসন্তান ফইজু মিঞার জন্য বিলাপ করার জন্য আধবুড়ো বউ ছাড়া আর তেমন কেউ নেই। বউও মূর্চ্ছা খেয়ে পড়ে আছে। তার শুশ্র“সা করছে পাড়ার নারীরা। সিদ্ধান্ত হলো আলগা লাগা মরা গোর দিতে দেরী করা যাবে না। রাত পোহালেই ফজরের নামাজ শেষে জানাজা দিয়ে দেয়া হবে। ফজরের নামাজ শেষ পর্যায়ে লম্বা সালাম দিয়ে ডানে বামে ঘাড় ঘোরালেন ঈমাম সাহেব। মুসল্লীরা অবাক হয়ে দেখলেন জামাতে শরীক হয়েছে অপরিচিত দশ-বারো জন যুবক বয়সী তালিবুল এলেম। তাদের আচার আচরনে কেমন যেন অদ্ভুত একটা মিল। সবাই যেন একজন কিংবা একজনেরই প্রতিচ্ছায়া সবাই। এপাড়া বা আশেপাশের গ্রামের নয় এটা নিশ্চিত। কারন, এই এলাকার মানুষেরা এমন তুষার সফেদ কুর্তা গায়ে দেয় না। এবার জানাজা নামাজ। এক কাতারে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লো যুবকেরা। জানাজা শেষে অন্যদের একরকম জোর করে সরিয়ে দিয়েই লাশের খাটিয়া কাঁধে তুলে নিল চার যুবক। তারপর হন হন করে হাঁটা ধরলো গোরস্থানের দিকে। অন্ধকার ভোরে কোন মুসল্লীই তাদের গতির সাথে তাল মেলাতে পারছে না। মসজিদের বয়স্ক ঈমাম আর হাফেজ মুয়াজ্জিন কিছু একটা সন্দেহ করতে লাগলো। কিন্তু সবকিছু বুঝে উঠার আগে হামিদার ছাড়া বাড়ীর মোড় ঘুরেই যেন শুণ্যে মিলিয়ে গেল লাশের খাটিয়া আর তার বাহকেরা। কোথাও দেখা গেল না তাদের। শুধু চারপাশ ম ম করছে আতর আর লোবান পোড়া গন্ধে। ফইজু মিঞার লাশ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। Share Please!

।। সংগৃহীত গল্প – ১৪ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, November 1, 2011 at 10:55pm ।। অমীমাংসিত কাহিনী ।। (যেহেতু সংগৃহীত তাই কয়েকজন হয়তো আগে পড়েছেন।। যারা পড়েননি এই গল্পটি তাদের জন্য।। আর আরেকটা কথা, এই গল্প আগে কখনো আমাদের পেইজে দেয়া হয় নি।। মূলত, ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে গল্পটি।। ধন্যবাদ) মাঝ রাতে দরজায় কড়া নারার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি বিরক্ত ভাব নিয়ে দরজা খুললাম। দরজা খুলেই বিস্মিত কণ্ঠে বললাম- আরে তুই? এতো রাতে?
আকাশ একগাল হেসে বললো- দোস্ত অনেকদিন তোকে দেখি না। তোকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই চলে আসলাম। আজ রাতটা তোর সাথেই কাটাবো।
আকাশ আমার ছোট কালের বন্ধু। আমরা একই সাথে বড় হয়েছি। আমার বাসা থেকে ওর বাসা প্রায় দু-কিলোমিটার দূরে। অনেকদিন তার সাথে বিভিন্ন ব্যস্ততার জন্য দেখা করতে পারি নাই। প্রায় এক মাস হতে যাচ্ছে। আমার সাথে শুধু মাত্র দেখা করবার জন্য এতো রাতে সে চলে আসবে বাসায় তা ভাবতেই পারছি না। এই না হলে বন্ধুত্ব।
তুই কি বাহিরেই দাড়িয়ে থাকবি? ভিতরে আস? গল্প করি দুই বন্ধু মিলে সারারাত।
নারে দোস্ত ঘরে বসবো না। চল বাহির থেকে ঘুরে আসি।
আমি অবাক হয়ে বললাম- সে কিরে! এতো রাতে কোথায় যাবি? আর তুই এতো সাহসী হলী কবে থেকে? কিছুদিন আগেও না সন্ধ্যার পর তুই ভূতের ভয়ে বাসার বাহির হতি না?
এখন কি আর সেই দিন আছে! চল বাহিরে চল। আকাশ একগাল হেসে উত্তর দিলো।
আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে তাই নারে আকাশ?
হু
আচ্ছা তোর হয়েছি কি বলতো? আসবার পর থেকেই এতো চুপচাপ কেন?
আকাশ মৃদু হেসে বললো- না এমনিতেই। এখন থেকে ভাবছি একাই থাকবো। সন্ধ্যার সময় ডিসিশন নিয়েছিলাম। সারারাত ছিলামও একা। কিন্তু এখন খুব বেশি ভয় করছিলো তাই তোকে ডেকে নিয়ে আসলাম।
আমি আবারো অবাক হয়ে বললাম- একা ছিলি, ভয় করছিলো এগুলোর মানে কি? তুই সারারাত কোথায় ছিলি?
বাড়ির বাহিরে।
কেন? বাসা থেকে কি তোকে বের করে দিয়েছে?
নারে বাহির করে নাই। আর বাহির করবে কেন? আমি নিজেই বের হয়ে এসেছি।
কেন?
আকাশ আমার হাত ধরে বললো- দোস্ত আমার বাসায় একটু যাবি? আম্মু আমার জন্য খুব কাঁদছে। আম্মুকে একটু বলে দিয়ে আসবি আমি ভালো আছি। খুব ভালো আছি। আমার জন্য যেন কান্নাকাটি না করে।
আমি অবাক হয়ে বললাম- আমিতো তোর কথাবার্তা কিছুই বুঝতেছি না। কি সব বলছিস? বাসা থেকে কেন বের হয়ে এসেছিস। কি হয়েছে? চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি?
নারে দোস্ত আজকে আর বাসায় যাবো না। পরে আরেকদিন বাসায় যাবো। তুই একটু যাবি দোস্ত। আম্মু খুব কান্নাকাটি করছে। বলেই আকাশ আমাকে জরিয়ে ধরে কাদা শুরু করলো।
এখন রাত সারে তিনটা। আমি আকাশের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি। আকাশকে কিছুতেই আনা যায় নি। ওকে বলেছিলাম তুই গিয়ে আমার রুমে বস আমি খালাম্মাকে বলে দিয়ে আসছি তুই আমার কাছে আছিস এবং ভালো আছিস। সে তাও করে নাই। রাস্তায়ই দারিয়ে আছে। আমি খালাম্মার সাথে কথা বলে বাহির হবার পর নাকি আমার সাথে আমার বাসায় যাবে। কি ঘটেছে কিছুই বুঝছি না। আকাশের কান্নার জন্য বাধ্য হয়েই এতো রাতে আকাশের বাসায় আমার আসতে হয়েছে।
আমি নিথর পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছি। খালাম্মা আমাকে জরিয়ে ধরে অজর ধারায় কাঁদছেন। আমি খালাম্মাকে কি ভাবে শান্তনা দেব বুঝতে পারছি না। আমার কাছে সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। পুরো বাড়ি জুরেই কান্নার শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে অনেক মানুষ। পুলিস এসে আকাশের লাশ নিয়ে যাচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় আকাশ তার রুমে গলায় ফাঁস আটকিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
আমার আস্তে আস্তে বোধশক্তি লোপ পাচ্ছে। এ আমি কি শুনছি। আমি তাহলে এতক্ষণ কার সাথে ছিলাম? আকাশই তো তার বাসায় আমাকে আসতে বললো। আকাশের লাশটি পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে। শেষ বারের মতো আকাশকে দেখলাম আমি। আমার সমস্ত পৃথিবী দুলো উঠলো। মনে হচ্ছে সবকিছু দুলছে। চোখ এর সামনে থেকে সবাই আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। আমি আসতে আসতে অন্ধকার একটা জগতে হারিয়ে যাচ্ছি। দূরে কে যেন কান্না করছে। তার মাঝে কে যেন বলছে- আম্মুকে বলিস, আমি ভালো আছি।

।। রাতের আতঙ্ক ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, October 31, 2011 at 10:35pm
ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার নানা ভাইয়ের সাথে। নানা ভাই তখন মাঝ বয়সের ছিলেন। ঘরে নানুজান আর উনাদের ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার। পরবর্তীতে নানুজানের কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেছি আমি এবং আমার অন্য ভাইবোন। নানা ভাই আমাদের গ্রামেরই একটা স্কুলে হেড মাস্টার ছিলেন। ঘটনা অনেক আগের। ১৯৮০ সালের দিকের। তো, তখন গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ এর তেমন প্রচলন ছিল না। বেশিরভাগ মানুষই কুপি বা হারিকেন ব্যাবহার করতো। নানা ভাই স্কুল থেকে মাঝে মাঝে ফিরতে দেরি হয়ে যেত। দেরি হয়ে গেলে উনি সেখানে নামাজ আদায় করে তারপর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা করতেন। উনার কাকা বিদেশ থেকে একটা টর্চ লাইট পাঠিয়েছিলেন। সেই টর্চের আলোই মাঝে মাঝে হতো উনার পথ চলার সম্বল। যেদিনের ঘটনা, সেদিনও নানা ভাই একটু রাত করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় একটা পুরনো বট গাছ পড়ে। দিনের বেলায়ও জায়গাটা কেমন যেনো অন্ধকার অন্ধকার থাকে। একটা জমাত বাধা বাতাস যেনো পাক খায়। তখন গ্রামে লোকজন বলতে বেশি মানুষ ছিল না। দেখা যেত, পুরো গ্রাম মিলে হয়তো ২০০ মানুষ। তাই সবারই সবার সাথে চেনা জানা ছিল। যাই হোক, নানা ভাই সেই বট গাছের কাছাকাছি আসার সময় হটাত দুটো ছায়ামূর্তির মতন দেখতে পান। অন্ধকারে হটাত নাড়া ছাড়া দেখায় তিনি একটু চমকে যান। আস্তে করে আলো ফেলে দেখার চেষ্টা করেন কাউকে দেখা যায় কিনা। আলো ফেলার খানিক আগেও যেখানে আওয়াজটা হয়েছিলো, আলো ফেলতেই দেখলেন জায়গাটা ফাঁকা। তবে যেখানে আওয়াজ হয়েছিলো সেখানে কিছু বটের শাখা নড়ছে। নানা ভাই জিজ্ঞেস করেন ওখানে কেউ আছেন কিনা। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এবার নানা ভাই একটু সাহস নিয়ে বুকে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে এগুতে থাকেন। খানিকটা পথ যাওয়ার পর উনার ভয় আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগে। এরপর আর খানিকটা গেলেই বাড়ি। নানা ভাই দ্রুত পায়ে পথ চালালেন। হটাত পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো। কে যেনো পা হেঁচড়ে হেঁচড়ে হাঁটছে। নানা ভাই ঘুরে পেছন দিকে টর্চ মারলেন। একটা লোক আসছে দূর থেকে। নানা ভাই হেঁড়ে গলায় ডাক দিলেন, কেডা গো বলে। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। এদিকে নানা ভাইকে চমকে দিয়ে হটাত সেই মূর্তিটা বাতাসের বেগে সামনে আসতে লাগলো। যেনো উড়ে আসছে। এবার নানা ভাই ভয় পেয়ে দৌড় লাগাতে যাবেন। হটাত খেয়াল করলেন, মূর্তিটার চোখ এই অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে। অনেকটা পশুর মত। কিন্তু বলা বাহুল্য, সে সময় ভাল্লুক বা ঐ জাতীয় কোনো পশু এমন করে পথে ঘাঁটে উঠে আসতো না। আর সেই মূর্তি টা একজন স্বাভাবিক মানুষের আকৃতি নিয়েই এগুচ্ছিল। নানা ভাই আর সহ্য করতে পারলেন না। ঝেরে দৌড় মারলেন পেছনে ঘুরে। দৌড় মেরে কিছুদূর যেতেই পিঠে কিছুর ছোঁওয়া অনুভব করলেন। দাঁড়ালো কোনো কিছুর আঁচড় মনে হল। নানা ভাই, চিৎকার করে আরো জোরে দৌড় লাগালেন। এবার পেছন থেকে সেই মূর্তিটা(হয়তো, কারন সেটি কি ছিল তা নানা ভাই দেখতে পারেন নি) এসে ধাক্কা দিয়ে উনাকে ফেলে দিল। জ্ঞান হারানোর আগে নানা ভাইয়ের শুধু এতটুকুই মনে ছিল। পরদিন উনাকে পথের পাশের এক ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। উনার পিঠে রক্তের মাখামাখি। সবাই মিলে ধরাধরি করে বাসায় আনার পর গ্রামের চিকিৎসক উনাক প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। উনার পিঠে বড় বড় নখের আঁচড় লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো এতো গভীর ছিল যে অনেকটা কেটে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো। নানা ভাইকে জরুরী ভাবে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করা হয়। উনি প্রায় ১ মাস পর সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপরের দিন সেই বট গাছের ডালে একজনের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। সেই লোকটা কে ছিল তা ঐ গ্রামের মানুষের অজানা। সেই রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়। এই ঘটনার পড়ে নানা ভাই এর সাথে আরো একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সেটি আজকে আর লিখলাম না। তবে, আমার মনে হয়েছে, দুটো ঘটনা এক করলে হয়তো এর কোনো উপসংহার টানা যায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি অনেক বড়। তাই আজকে আর শেয়ার করলাম না। আপনারা চাইলে পরবর্তীতে লিখে আমি এডমিনের কাছে পাঠিয়ে দিবো। যিনি পাঠিয়েছেনঃ Selim Rayhan ফেসবুক আইডিঃ Selim Rayhan বাংলা রি রাইটিং করেছেনঃ তিথি (অ্যাডমিন)

এই ঘটনা অথবা ঘটনাগুলো যখন ঘটে তখন আমার বয়স ছিল ৯ বছর। এখন আমি ১৫ বছরের একজন কিশোর। আমরা ঐ সময় বোস্টনে(আমেরিকার একটি শহর) থাকতাম। আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স মাত্র ৩ মাস। উনাকে কেউ একজন মেরে আমাদের ক্লোজেটে(এক প্রকারের আলমারি) আটকে রেখেছিলো। আমি এক বিন্দু মিথ্যে বলছি না। আমি পরবর্তীতে এই কথাগুলো আমার খুবই বিশ্বস্ত মানুষের কাছ থেকে শুনতে পাই।

আমার বয়স যখন ৯ বছর তখন আমি মাঝে মাঝে আমার খাটের নি...চ থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ শুনতে পেতাম। আমি এই শব্দের ভয়ে মাঝে মাঝে খুব ভীত এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। এই শব্দটি আমি শুনতে থাকি যতদিন না আমার বয়স ১১ পার হয়। যখন ১১ পার হয় তখন থেকে প্রায় এক বছর আমি কোনরূপ শব্দ শুনতে পাই নি।

কিন্তু এরপর এটি আরো ভয়ঙ্কর রূপে ফিরে আসে আমার জীবনে!

আমি হটাত করে আরো ভয়ঙ্কর ব্যাপার সেপার টের পেতে থাকি। মাঝে মাঝে গভীর রাতে ভয়ঙ্কর কোনো চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত। মাঝে মাঝে দেখতাম দেয়ালে কারো ছায়া হেঁটে বেড়াচ্ছে। চিৎকারের আওয়াজ শুনে মনে হতো কোনো আহত ব্যাক্তি যেনো প্রচণ্ড ব্যাথায় ছটফট করছে।

আমি যা বর্ণনা করতে চাচ্ছি তা খুবই কঠিন। অসম্ভব বলা যায়। কারন কিছু ঘটনা মুখে বলে বা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। একবার হটাত আমার মাঝে কিছু একটা ভর করে। আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি। এই সময়ে আমি আমার টেবিলে কাগজের উপর কলম দিয়ে কিছু একটা লিখি এবং লেখা শেষে বেহুশ হয়ে পড়ে যাই। যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন দেখি সেই কাগজে লেখা ছিল, “তোমার পালা আসছে! খুব শীঘ্রই!”

তখন আমার স্কুল প্রায় শেষের দিকে। ১৪ বছর বয়সে যখন আমি স্কুল শেষ করে ফেলি তখন সেই আওয়াজ এবং চিৎকারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। একদিন আমি বাড়ি থেকে ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করে বের হয়ে যাই। তখন বাড়িতে আমার বাবা এবং মা (সৎ মা) কেউই ছিলেন না। একটা পুলিশ ভ্যান আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে আমার সব কথা শোনার পর কর্তৃপক্ষ আমাকে মেন্টাল হসপিটালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ধারণা আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। কারন আমি তাদের বলেছিলাম সেইসব চিৎকারের কথা। এমনকি আমি যেই রাতে আমার বিছানার খাটের নিচে একজন পুরুষ মানুষের বিকৃত লাশ দেখতে পাই সেই ঘটনাও চেপে যাই নি।

আমার বাবা এবং সৎ মা আমার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেন। লাভ হয়নি। আমাকে ব্যালমাউন্ট হসপিটালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে আমাকে ১ বছর রেখে চিকিৎসা করা হয়। কোনো লাভ হয় নি। সেই আওয়াজ এবং চিৎকার এখনও প্রতিদিন আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। এখন আমি আর ভয় পাইনা। শুধু অপেক্ষা করি সেই বড়দিনের, যেদিন আসল ঘটনা ঘটবে।

(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

ইংলিশ থেকে বাংলা ট্রান্সলেসন করে দেয়া হলো। ভুল ভ্রান্তি থাকলে ক্ষমা করবেন। - তিথি

।। শ্মশানঘাট ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, November 2, 2011 at 10:21pm
যারা ভূতে বিশ্বাস করেন না, বা করতে চান না তাদেরকে আজকে একটা সত্য ঘটনা শুনাব- আমি সবসময় ঢাকা থেকে রাত্রে বাড়িতে যায়। কারন ছুটি পাই কম আবার চিন্তা করি রাত্রে চলে গেলে পরদিন সকালটা বাসা থেকেই শুরু করা যাবে। ছাত্র অবস্থায় ক্লাস শেষ করেই রওনা হয়ে যেতাম। এখনও অফিস শেষ করেই সোজা মহাখালী – তারপর ময়মনসিংহ – হালুয়াঘাট। মোটামুটি ছয়ঘন্টা। একদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ী রওনা হলাম। আমাদের বাজারে যেতে যেতে রাত ১২ টা বেজে গেল। বাজারে গিয়ে দেখি সুবাস।আমার বাল্য বন্ধু। আমাকে দেখেই বলল আমরা তো প্রতিদিন রাত্রে কদমতলী আড্ডা মারি, তুই খেয়ে চলে আসিস
বাজারেই আমার বাসা। বাসায় গিয়ে আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করলাম।১টার দিকে বাজারে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ভাবলাম সবাই হয়তো চলে গেছে। আমি দুইটা সিগারেট কিনে কদমতলী রওনা হলাম। বাজার থেকে কদমতলী সিকি কি.মি.। তখন আষাঢ় মাস। আকাশে চাদও আছে। কিন্তু আষাঢ়ের মেঘ এবং চাদের আলো দু্ইটা মিলে একটা অদ্ভুদ আলো-আধারের খেলা চলছে- এই কালো অন্ধকার, আবার যেন ভরা পূর্ণিমা। একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তা হাটছি। কিছুটা ভয়ও লাগছে। এমন রাতে একা একা হাটলে ভূত-প্রেতের কথা একটু বেশীই মনে পড়ে। বামের ঘন জঙ্গল থেকে ঝি ঝি পোকার শব্দে একটা অদ্ভুদ সুর যেন সৃষ্টি হচ্ছে। যে সুরের তালে তালে নিজেকে নিয়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গল থেকে দু-একটি কাক বড্ড বেসুরো কন্ঠে কা কা করছে। মনে হচ্ছে কোন মাংসখেকো রাক্ষস যেন কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কদমতলীর কাছাকাছি যে জায়গায় শশানঘাটটা ঠিক সে জায়গায় চলে আসলাম। এইখান থেকে আমাদের যে জায়গায় বসে আড্ডা দেওয়ার কথা সেই জায়গা টা স্পষ্ট দেখা যায়। আমি কাউকেই দেখতে পেলাম না। মনের ভিতর একটা ভয়ও জেগে উঠল। এই কারনে গভীর জঙ্গলের পাশ দেয়ে পিছনেও যেতে ইচ্ছে করছেনা। কারন এই জায়গার বামদিকে কংশ নদী, আর ডানদিকে খোলা মাঠ – যার ধরুন গা শিরশির করা অন্ধকার ভাবটা এইখানে নেই। আমি সোজা কদমতলী গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নদীর ঢেউ দেখছি। ভয়টা কাটানোর জন্য একটু জোড় করেই যেন অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। মাঝে মাঝে কয়েকটা কলাগাছ নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে কোন লাশ ভেসে যাচ্ছে। মৃত প্রাণীর গন্ধে বমি হওয়ার অবস্থা। হঠাৎ……হঠাৎ………..একটি কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে হাত বিশেক দূরে ঠিক আমার বাম দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ঘোমটা দেওয়া মহিলা বসে আছে। আর ঐ খান থেকেই কান্নার আওয়াজ আসছে। ভয়ে আমার আত্না চলে যাওয়ার যোগাড়। শরীর দিয়ে ঘাম পানির মত বের হচ্ছে। যেন আমি কোন ঝড়নার নিচে দাড়িয়ে আছি। ডাকব ডাকব ভেবেও না ডেকে সোজা বাসার দিকে রওনা হলাম।
বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে আম্মাকে সব ঘটনা খুলে বললে আম্মা বলল সুবাস তো ময়মনসিংহ গিয়েছিল তিনদিন আগে, সেতো আসবে আরও পরে। আমিতো অবাক তাহলে সুবাসের চেহারা নিয়ে আমাকে কে বলেছিল কদমতলী যাওয়ার জন্য। শেষে আম্মা যা বলেছিল তা ছিল এইরকম-”৮৮ সালের বন্যার সময় নৌকায় করে বরযাত্রী বউ নিয়ে যাওয়ার সময় কদমতলী নৌকা ডুবে যায়। সবাই তীরে উঠলেও কনে আর উঠতে পারিনি। সেই থেকে এখনও মাঝে মাঝে কনেকে কদমতলী তে কাদতে দেখা যায়। আরও অনেকেই দেখেছে।”

যিনি পাঠিয়েছেনঃ Soikat Gazi

।। প্যারানরমাল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, November 5, 2011 at 11:31pm
আপনারা প্যারানরমালে বিশ্বাস করেন? আমি করি। আমি কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না, কিন্তু দেখার বাইরেও যে প্যারালাল আরেকটা জগত আছে, মানুষের জীবনের ওপর অদৃশ্য কিছু প্রভাবক আছে তা মানি। এই প্রবল বিশ্বাসের কারনেই মনে হয় মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতা আমার হয়। মামার মৃত্যু নিয়েও হয়েছে। চোখের সামনে খুব কাছের কারও ক্যানসারে মৃত্যু আমি দেখিনি। মামাকেই প্রথম দেখলাম। আক্ষরিকভাবে একদম আমাদের চোখের সামনে মামা মারা গেল। মামার অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হচ্ছিলো, কিন্তু মারা যাচ্ছে এটা আমি মে মাসের শুরুর দিকেও কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না। আমার একটা প্রবল দুরাশা ছিল মামা সেরে উঠবে, আবার সুস্থ হবে, বিশ্বাসের কারণ যাই হোক না কেন। কিন্তু ঠিক ঐ সময়টাতে আমি একরাতে একটা স্বপ্ন দেখলাম যে মামা বেঁচে নেই। স্বপ্নে কি দেখেছিলাম ঘুম থেকে উঠে আমার কিচ্ছু মনে পড়ছিল না, শুধু এটা মনে ছিল যে স্বপ্নের থিমটা হচ্ছে মামা আর নেই। অনেকে বলবে ওরকম সময়ে অমন স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক; নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা। ঠিক, আমিও তা মানি। কিন্তু এখানে পার্থক্য হচ্ছে নানার মৃত্যুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমি যখনই কারো মৃত্যু নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, সেটা সত্যি হয়েছে। এবং এর সবগুলাই ছিল কাছের মানুষদের নিয়ে, আমার প্রিয় মানুষদের নিয়ে। যাই হোক, ঘুম থেকে উঠে মনটা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেল। আমি ওই প্রথম বুঝে গেলাম মামা আর বাঁচবে না। সময় হয়ে গেছে। এখানে একটা কথা বলে নেই। আমি গত বছর মাঝামাঝি সময়েই আরেকটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, মামা খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। এটার কথা আমার মনে পড়েছে গত ২০ মে (মামার মৃত্যুদিন) এর পরে। এটার কথা এর আগে হয় মনে পড়েনি, বা পড়লেও রিলেট করতে পারিনি। যাই হোক, তৃতীয় ঘটনাটা ঘটলো মামা মারা যাবার ঠিক সপ্তাহ খানেক আগে। এবারও স্বপ্ন। এবার পরিষ্কার দেখলাম মামা মারা গেছে। মামার দেহ মগবাজারে নানার বাসার দোতলায় ডাইনিং রুমের মেঝেতে রাখা, নানি মামার পায়ের কাছে একটা চেয়ারে বসা, আর নানা তার পুরানো ঘরে বিছানার ওপর জায়নামাজে চোখ বন্ধ করে বসে আছে; বেঁচে থাকতে ঠিক যেভাবে বসে থেকে নামাজ পড়তো! স্বপ্নের মধ্যেই আমার মনে হচ্ছিলো নানা যেন তার প্রিয় ছেলের জন্য দোয়া করতে ওপার থেকে চলে এসেছে। এবং এখন সে তার ছোট ছেলেকে নিরাপদে নিয়ে চলে যাবে। যে রাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মামা আইসিইউ তে গেল সেদিন না কি মামার খুব ডেলিরিয়াম হচ্ছিলো। পায়ের কাছে মামা নানার ছবি দেখেছিলো; মামিকে বলেছিলো “আব্বাকে দেখছি পায়ের কাছে। আব্বার ছবি। সরায় রাখো। আমার পায়ে লাগবে।“ আমার স্বপ্নের সাথে মামার ডেলিরিয়ামের ধরনটা একটু বেশি কাকতালীয় হয়ে গেল না? এবার শেষ ঘটনা। ১৮ মে আমি অফিস থেকে ফেরার পথে স্কয়ারে গেলাম। ১৪০৭ এ গিয়ে দেখি রুমে পুশা-শামা (মামার দুই ভাতিজি, আমার বড়-মামাতো বোনেরা), মামি, নানি, মামার বড়ছেলে, এরা আছে। মামা যেন একটু অস্থির, একটু পর পর রুমের এক কোন থেকে আরেক কোনের দিকে তাকাচ্ছে। আর নিঃশব্দে কি যেন একটা বিড়বিড় করে বলছে। প্রথমে ডেলিরিয়াম মনে হয়েছিলো। পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখি পুরোপুরি সচেতন, ঘোরের কোন চিহ্নও নেই; আমার তখন মনে হল মামা কোন দোয়া/সুরা পড়ছে। খানিকক্ষণ পরে মামিকে কি যেন একটা বলার চেষ্টা করলো ফিসফিস করে, কিন্তু মামি বুঝতে পারলো না দেখে ঐ অবস্থাতেই একটা নিরুপায় করুন হাসি দিয়ে হাল ছেড়ে দিলো। শ্বাসকষ্ট ছিলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠে পড়লাম। বেডের হাতলে রাখা মামার হাতের ওপর হাত বুলিয়ে দেয়াতে আমার দিকে তাকাল। কিছু বোঝার আগেই আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, “মামা, গেলাম। আবার পরে আসবো। খোদা হাফেজ।” মামা ঘাড় ঘুরিয়ে হাত নেড়ে বিদায় দিলো। কথা বলার চেষ্টা করে নি। মামার সাথে ঐটাই আমার শেষ কথা, বেঁচে থাকা অবস্থায় শেষ দেখা। এর ঘণ্টা দুয়েক পরেই প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। দেন আইসিইউ। এখানে বলি, কারো কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় আমার মুদ্রাদোষ হচ্ছে সবসময় “ওকে তাহলে, দেখা হবে” বলে কথা শেষ করা। একদম সবসময়! “খোদা হাফেজ” আমি খুব রেয়ারলি বলি। বিদায় নিয়ে বের হবার পরে আমার মনে হল “পরে আসবো” কথাটা কেন বললাম? একটু চিন্তা নিয়েই বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে ঠান্ডা হচ্ছি, একটু পরেই নানির ফোন। কান্নাজড়ানো কণ্ঠ ভেসে আসলো, “রাতুল, তোর মামা আর নাই! শীগগির আয়!” আমি আম্মাকে নিয়ে সাথে সাথে আবার স্কয়ারের দিকে রওনা দিলাম, ঐ রাতেই। অর্থাৎ মামাকে যা বলে বিদায় নিয়েছিলাম। এবার শুধু পার্থক্যটা ছিল, মামা আর পৃথিবীতে নেই এটা জেনে। কিন্তু শেষ ঘটনাটা এটা না। শেষ ঘটনাটা কি ছিলো সেটা এবার বলবো। মামা আইসিইউ তে যায় ১৮ মে রাতে। সারারাত আমরা অনেক মানুষ জেগে/হাফ জেগে আইসিইউ করিডরের সামনে কাটালাম। এটা জানা হয়ে গিয়েছিলো মামার বাঁচার আর কোন আশা নেই। ১৯ তারিখ দিনের বেলা ডিসিশন হল বড়মামা এসে (২১ তারিখে) যদি ভেন্টিলেশন খুলে নেয়ার ডিসিশন নিতে হয়, নিবে। সে কথামত সবাই ধরে নিল ২১ মে সকাল পর্যন্ত মামা ভেন্টিলেশন মেশিন দিয়ে হলেও বেঁচে আছে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম ১৯ তারিখ রাতে ইমেডিয়েট ফ্যামিলি ছাড়া হাসপাতালে আর কারো থাকার দরকার নেই। থাকবে শুধু মামি, মামির ভাবি, আর আমার আম্মার মামাতো বোন চুমকি খালা। আমার নিজেরও থাকার কথা ছিল না। রাত ১২টা বাজে বাজে এমন সময় মনে হল থেকেই যাই। অ্যাট লিস্ট একজন পুরুষ আত্মীয় রাতে থাকুক। আমি জানতাম না একটু পরে আম্মার মামাত ভাই রাজিব মামাও আসবে। আমি হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে হাল্কা ডিনার নিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের রিসেপশনের সামনে থাকা অনেকগুলা সোফার একটাতে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তখন রাত প্রায় পৌনে একটা। জানিও না কখন রাজিব মামা এসে উপরে গিয়ে মামিদের আইসিইউ-এর দরজার সামনে থেকে ডানদিকে একটু ভিতরে একটা প্যাসেজের কোনায় শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছে। ওখান থেকে আইসিইউ দেখা যায় না, আইসিইউ থেকে নার্স এসে রোগীর অ্যাটেনডেন্টকে খুঁজলে কাউকে দেখতে পাবে না। ভোর ঠিক সাড়ে চারটার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। জেগে দেখি আমি ঠাণ্ডায় কাঁপছি। জ্বর, কাশি, সর্দি, কিচ্ছু না; কিন্তু দাঁতকপাটি লেগে যাচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো শরীরের সব রক্ত জমে বরফ হয়ে গেছে, এত ঠাণ্ডা! নরমালি আমার এত ঠাণ্ডা লাগে না। তাকিয়ে দেখি আশে পাশে অনেক মানুষ আমার মতই ওখানে থাকা সোফাগুলায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি ছাড়া কারো মধ্যে ঠান্ডাজনিত বিন্দুমাত্র অস্বস্তির ভাব নেই। এখানে আরেকটা কথা বলি, আমি এভারেজের চেয়ে বেশি ঘামি, যত ঠান্ডাই হোক; এসির মধ্যে আমার কখোনও তেমন প্রব্লেম হয় না। যাই হোক, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমি রিসেপশন করিডর থেকে লিফটের উইং-এ আসলাম। ঠাণ্ডা কমে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখি রাজিব মামাও ঘুম ভেঙ্গে উঠে এগিয়ে আসছে। লিফটে উঠে দুইজনে লেভেল ফোরে আইসিইউ-তে চলে আসলাম। এসে দেখি গোটা করিডরে মাত্র একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন (মামিরা তো আগেই বলেছি একটু ভিতরের দিকে ছিল)! এছাড়া গোটা ফ্লোরে আইসিইউ-র সামনে একটা মানুষ নেই। অথচ আগের দিনেই দেখেছিলাম আমরা ছাড়াও অন্যান্য রোগীর বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজনেরা আছে। যাই হোক, আগে থেকে এনে রাখা একটা কম্বলে নিজেদের ঢেকে আমি আর রাজিব মামা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আবার ঘুমিয়ে গেলাম। ঠিক আধা ঘণ্টা পরে (ভোর পাঁচটা) আমার ঘুম আবার ভেঙ্গে গেল। দেখি আইসিইউ থেকে একজন মেল নার্স বের হয়ে আসছে। বের হয়ে বলল “বেড#১৩ এর কে আছেন?” আমার মাথার মধ্যে কেউ যেন বলে দিলো, মামার বেড নম্বরই ১৩! আমি ধড়মড় করে উঠে রাজিব মামাকে বললাম “মামিকে ডাকেন। বলেন ভিতর থেকে ডাকতে আসছে!” আমার ভুল হয়নি। রাজিব মামা মামিকে ডাক দেয়াতে মামি জেগে উঠে তাড়াহুড়া করে ভিতরে গেল। স্বাতী মামি উঠে দোয়া দরূদ পড়ছে। কিন্তু ততক্ষণে মামা নেই। মামি একটু পরে বাইরে এসে দেয়াল ধরে তার সদ্যমৃত স্বামীর জন্য কেঁদে উঠলো। পরে ডাক্তারের মুখে শুনেছিলাম মামার দ্বিতীয় অ্যারেস্টটা হয় ভোর ৪ টায়, আর শেষবারটা হয় ভোর সাড়ে ৪টায়, মানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা অবস্থায় ঠিক যখন প্রবল ঠাণ্ডায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখন আমার কথা হচ্ছে; ডাক্তারের সময় অনুযায়ি মামাকে যখন প্রোনাউন্স করা হলো (ভোর ৫টা ৫ মিনিট), তখন করিডরে আমি আর রাজিব মামা ছাড়া আমাদের আর কেউ ছিল না। আমরা ঐ সময় ওখানে না থাকলে মামার মৃত্যুর পরে নার্স এসে কাউকে পেতো না। মামি উঠে নিজে থেকে পরের বার মামার অবস্থা চেক অন করতে না যাওয়া পর্যন্ত মামার দেহকে ঐ অবস্থাতেই বেডে শুয়ে থাকতে হত, কতক্ষণের জন্য কে জানে? ঠিক সেকেন্ড অ্যাটাকের সময়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, হঠাৎ চরম ঠান্ডার প্রভাবে আইসিইউ-র ফ্লোরে সময়মত চলে আসা, আবার মামার মৃত্যুর পর নার্স ডাক দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, এগুলা শুনতে যতই সহজ আর কাকতালীয় হোক, আমার কাছে এত সহজ না। মামা যতদিন বেঁচে ছিল, প্রয়োজনে/বিপদে-আপদে আমার জানাত, বন্ধুবান্ধবের সাথে সাথে আমাকেও ইনফরম করে রাখতো। অনেকে বলতে পারেন আমি পাগলের প্রলাপ বকছি, ইম্যাজিনিং থিংগস, বা কল্পনার যোগফল মেলাচ্ছি; কিন্তু আমি নিশ্চিত, মামা ঐ ভোররাতে চলে যাবার আগে এসে কোন এক উপায়ে তার সেই চিরপরিচিত ভঙ্গিতে আমাকে বলেছে, “উপরে আয়। আমি চলে যাচ্ছি। তোরা এই সময়টা আমার কাছাকাছি থাক।” আর সেজন্যই ঘুম ভেঙ্গে ঠিক সময় ঠিক জায়গামত থাকা হয়েছিলো আমাদের। আমি মামাকে এর পরে আর স্বপ্নে দেখিনি। এখন পর্যন্ত না। মামার বন্ধুবান্ধব, নানি, মামি, কলিগরা হয়তো দেখেছে, কিন্তু আমি না। তবে আমি জানি আমি দেখবো। আজ হোক, কাল হোক, দুই মাস পরেই হোক, মামা আমাকে দেখা দিবেই। দেখা দিয়ে জানাবে সে এখন কেমন আছে। মারা যাওয়ার পরে মামার চেহারায় একটা প্রশান্তির চাপ ছিল, হাসিহাসি মুখটা আবার ফিরে এসেছিল। শুধুমাত্র চুলহীন মাথা, আর ঠোঁটে একটা জ্বরঠোসা ছাড়া ফেটাল রোগটার কোন প্রভাব মুখে ছিল না। বরং মনে হচ্ছিলো মামা যেন অবশেষে পরম শান্তিতে ঘুমানোর সুযোগ পেল, যার জন্য অপেক্ষাটা ছিল বহুদিনের। প্রতিদিনই মামার কথা আমার মনে পড়ে; মনে পড়ে হাজারটা স্মৃতি, হাসি, কান্না, আনন্দের ছোট ছোট অজস্র টুকরাগুলার কথা। কম তো না, ৩৩ বছরের পরিচয়! কিছু সম্পর্ক মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যায় না, জন্মান্তরে এগুলার রেশ রয়ে যায়। আর একারনেই আমি জানি মামাকে আমি দেখবো, খুব শিগগিরই দেখবো। আমার সাথে দেখা না করে কি ছোটমামা পারে?

।। সীমানা পেরিয়ে ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, November 3, 2011 at 11:46pm
ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে ৭টায় অফিস থেকে বের হলো আসিফ। ৫টায় অফিস শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বেসরকারী অফিসের যা অলিখিত নিয়ম - বড় কর্তার মর্জিমাফিক অফিসটাইম পালন করতে হয়। বাসায় সুমাইয়া অপেক্ষায় আছে। আর একমাত্র ছেলে আমান, বয়স ৩ বছর। একটু তাড়াতাড়ি হাটার চেষ্টা করে আসিফ। আজ সকালে আমান বায়না ধরেছিলো গাড়ীর জন্যে। একটা খেলনা গাড়ী কিনতে হবে। মাস শেষের দিকে টানাটানি লেগেই থাকে।২৫ তারিখের পর থেকে চিন্তা লেগে যায় বাকী কয়টা দিন কিভাবে চলবে। বেতন হবে আবার পরের মাসের ৭/৮ তারিখে। মাসের শেষে ধার করে চলা আর পরের মাসের শুরুতে সে ধার শোধ করে দেওয়া প্রতি মাসের রুটিন। ছোট চাকরি আসিফের। গালভরা পদবী-সিনিয়র অফিস সেক্রেটারী। কিন্তু কাজ কেরানীর চাইতেও অধম। বড় সাহেব যে দয়া করে বাসার বাজার করায় না সেটাই বেশী। অফিস থেকে বের হয়েই সামনের স্টেশনারী থেকে এক ব্যাটারী চালিত ছোট্ট কিন্তু চমৎকার একটি গাড়ী কিনলো। দাম নিলো ২২৫ টাকা। অফিস থেকে বাসা বেশ দুরে। হাটলে ২৫ মিনিটের পথ। প্রতিদিন এ পথটুকু হেটেই যায় আসিফ। পথে একটি ছোট পার্ক পড়ে। রাস্তা পার হয়ে পার্কের একগেট দিয়ে ঢুকে উল্টোদিকের আরেক গেট দিয়ে বের হয়ে আরেকটু হাটলেই বাসা। পার্কের এ সর্টকাটের কারনে পথ অনেকখানি কমে যায়। পার্কের এলাকাটা বেশ নিরিবিলি। রাস্তা প্রায় ফাকা। পার্কের সামনের রাস্তাটা প্রায় পার হয়ে এসেছে এমন সময় ধাক্কাটা খেলো। একটু আনমনেই হাটছিলো সে। বামদিক থেকে সজোরে ধাক্কা লাগালো প্রাইভেট কারটি। উড়ে পার্কের দেয়ালে গিয়ে পড়লো, মাথা সজোরে ঠুকে গেলো। চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো আসিফের। চোঁখ মেলে তাকালো আসিফ। মাথাটা ঝিমঝিম করছে আর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। উঠে দাড়ালো। রাস্তায় দুরে দুরে কিছু গাড়ি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যে গাড়ীটা ধাক্কা মেরেছে সেটার কোনো হদিস নেই। মনে মনে একটু হাসলো আসিফ। অনিচ্ছাকৃত অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা সবারই আছে। কে আর চায় থানা-পুলিশের হাঙ্গামায় জড়াতে! বাবুর খেলনা গাড়ির প‌্যাকেটটা খুজলো আশেপাশে। পেলো রাস্তার একপাশ ঘেঁষে। পরম মমতায় প‌্যাকেটটা তুলে নিলো হাতে। ছড়ে গেছে কয়েক জায়গায়, তবে বড় কোন ক্ষতি হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। পার্কের ভিতরে ঢুকলো আসিফ। একটু দুর্বল দুর্বল লাগছে। আঘাতটা বেশ জোরদার মনে হচ্ছে। মাথার ফাকা ফাকা ভাবটা কাটছে না। সন্ধ্যার পরে পার্কটা মোটামুটি ফাঁকা। গেটের কাছেই একটা বেঞ্চ দেখে বসে পড়লো। প‌্যাকেটটা রাখলো পাশে। একটি বিশ্রাম নিতে পারলে মন্দ হবে না। বাসার কথা আবার মনে পড়লো। সুমাইয়া আর বাবু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। প্রতিদিন তো আটটায় বাসায় যায়, আজ না হয় একটু দেরী করেই গেলো। ছোট সংসার হলেও নিজের চাকরীর উপরেই ভরসা। তাই একটু টানাটানি লেগেই থাকে। তবুও ৫ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করা সংসার থেকে ভালোবাসা এখনো পালিয়ে যায় নি। দুজনের ভিতরে ভালোবাসাটা এখনো আগের মতোই অটুট আছে। আমান আসার পথে সেটা ত্রিমাত্রিক রূপ পেয়েছে। জীবনটা অনেক অর্থবহ মনে হয় আসিফের। শুধূ যদি আয়টা আরেকটু বাড়ানো যেতো! মনে মনে ঠিক করে দু-একটা টিউশনি করাবে। যদিও এতে বাসায় একটু কম সময় দিতে পারবে কিন্তু সংসারে টানাটানিটা একটু কমবে। আবার আমারেন ভবিষ্যতের জন্যেও কিছু একটা ভাবতে হয়। মাথাটা আবার ঝিম ঝিম করতে লাগলো আসিফের। মাথায় হাত দিয়ে নিশ্চিত হলো কোথাও কেটে যায় নি বা রক্তপাত হচ্ছে না। কিন্তু সবকিছু এমন ঝাপসা হয়ে আসতে চাচ্ছে কেন! উঠে দাড়ালো আসিফ। দ্রুত বাসায় গেলেই ভালো হবে। প্রায় অন্ধকার পার্কে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলে অনেকরকম সমস্যা হতে পারে। পার্কের অন্য গেটের দিকে পা বাড়াতে যাবে এমন সময় পিছনের গেট থেকে একটা হট্টগোল কানে আসলো আসিফের। সাথে পুলিশের গাড়ীর সাইরেনও শোনা যাচ্ছে। জটলার শব্দ বাড়ছে। কি ব্যাপার দেখতে আসিফ পিছন ঘুরে যে গেট দিয়ে পার্কে ঢুকেছিলো সেটা দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো। অবাক হলো সে। এতো লোক আসলো কখন! ২০/২৫ জন লোক দাড়িয়ে আছে পার্কের দেয়াল ঘেষে- যেখানে আসিফ পড়েছিলো এক্সিডেন্টের পরে। রাস্তায় একটা টহল পুলিশের গাড়ী দাড়িয়ে আছে। দুজন পুলিশের হেলমেট দেখা যাচ্ছে জটলার ভিতরে। সবাইকে দুরে সরে যেতে বলছে। আরেকজন ওয়্যারলেসে কথা বলছে। এগিয়ে গোলো আসিফ। কে যেন শুয়ে আছে জটলার ভিতরে। অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছড়ানো রক্ত চোখে পড়লো। তার ভিতরে শুয়ে আছে-কে ও! চেনা চেনা লাগছে না? এবার মাথাটা আবার ঝম ঝম করে করে উঠলো আসিফের। এক পুকুর রক্তের ভিতরে শুয়ে আছে আসিফ নিজেই! মাথাটা পুরো থেঁতলানো। পার্কের দেয়ালে বাড়ি খেয়েই কি থেতলে গেছে! হঠাৎ করেই সুমাইয়া আর আমানের কথা মনে হলো আসিফের। ওরা বাসায় অপেক্ষা করছে একজন স্বামী আর একজেন বাবার জন্যে। বাসার দিকে পা চালাতে চাইলো আসিফ। কিন্তু পারলো না। পা যেনো আটকে আছে চট্ চটে রক্ত স্রোতে। বুকটা হাহাকার করে উঠলো আসিফের। চেতনা ফিকে ফিকে হতে হতে এক সময় মিলিয়ে গেলো অসীম শূন্যতায় । একটা এ্যম্বুলেন্সে লাশটা তোলা হলো। তার আগে সুরৎহাল রিপোর্ট তৈরী করলো পুলিশ। ছবি তুললো কতগুলো। সাইরেন দিতে দিতে এ্যম্বুলেন্সটা ছুটে চললো গন্তব্যের পানে। অন্ধকারে কেউ দেখলো না- পার্কে ঢোকার পর প্রথম বেঞ্চে জায়গায় জায়গায় ছড়ে যাওয়া ছোট্ট একটা প‌্যাকেট পড়ে আছে। (বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে)
- নাইমুর ফেরদৌস

।। প্যারানরমাল ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Sunday, November 6, 2011 at 12:31am
আপনারা প্যারানরমালে বিশ্বাস করেন? আমি করি। আমি কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না, কিন্তু দেখার বাইরেও যে প্যারালাল আরেকটা জগত আছে, মানুষের জীবনের ওপর অদৃশ্য কিছু প্রভাবক আছে তা মানি। এই প্রবল বিশ্বাসের কারনেই মনে হয় মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতা আমার হয়। মামার মৃত্যু নিয়েও হয়েছে। চোখের সামনে খুব কাছের কারও ক্যানসারে মৃত্যু আমি দেখিনি। মামাকেই প্রথম দেখলাম। আক্ষরিকভাবে একদম আমাদের চোখের সামনে মামা মারা গেল। মামার অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হচ্ছিলো, কিন্তু মারা যাচ্ছে এটা আমি মে মাসের শুরুর দিকেও কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না। আমার একটা প্রবল দুরাশা ছিল মামা সেরে উঠবে, আবার সুস্থ হবে, বিশ্বাসের কারণ যাই হোক না কেন। কিন্তু ঠিক ঐ সময়টাতে আমি একরাতে একটা স্বপ্ন দেখলাম যে মামা বেঁচে নেই। স্বপ্নে কি দেখেছিলাম ঘুম থেকে উঠে আমার কিচ্ছু মনে পড়ছিল না, শুধু এটা মনে ছিল যে স্বপ্নের থিমটা হচ্ছে মামা আর নেই। অনেকে বলবে ওরকম সময়ে অমন স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক; নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা। ঠিক, আমিও তা মানি। কিন্তু এখানে পার্থক্য হচ্ছে নানার মৃত্যুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমি যখনই কারো মৃত্যু নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, সেটা সত্যি হয়েছে। এবং এর সবগুলাই ছিল কাছের মানুষদের নিয়ে, আমার প্রিয় মানুষদের নিয়ে। যাই হোক, ঘুম থেকে উঠে মনটা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেল। আমি ওই প্রথম বুঝে গেলাম মামা আর বাঁচবে না। সময় হয়ে গেছে। এখানে একটা কথা বলে নেই। আমি গত বছর মাঝামাঝি সময়েই আরেকটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, মামা খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। এটার কথা আমার মনে পড়েছে গত ২০ মে (মামার মৃত্যুদিন) এর পরে। এটার কথা এর আগে হয় মনে পড়েনি, বা পড়লেও রিলেট করতে পারিনি। যাই হোক, তৃতীয় ঘটনাটা ঘটলো মামা মারা যাবার ঠিক সপ্তাহ খানেক আগে। এবারও স্বপ্ন। এবার পরিষ্কার দেখলাম মামা মারা গেছে। মামার দেহ মগবাজারে নানার বাসার দোতলায় ডাইনিং রুমের মেঝেতে রাখা, নানি মামার পায়ের কাছে একটা চেয়ারে বসা, আর নানা তার পুরানো ঘরে বিছানার ওপর জায়নামাজে চোখ বন্ধ করে বসে আছে; বেঁচে থাকতে ঠিক যেভাবে বসে থেকে নামাজ পড়তো! স্বপ্নের মধ্যেই আমার মনে হচ্ছিলো নানা যেন তার প্রিয় ছেলের জন্য দোয়া করতে ওপার থেকে চলে এসেছে। এবং এখন সে তার ছোট ছেলেকে নিরাপদে নিয়ে চলে যাবে। যে রাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মামা আইসিইউ তে গেল সেদিন না কি মামার খুব ডেলিরিয়াম হচ্ছিলো। পায়ের কাছে মামা নানার ছবি দেখেছিলো; মামিকে বলেছিলো “আব্বাকে দেখছি পায়ের কাছে। আব্বার ছবি। সরায় রাখো। আমার পায়ে লাগবে।“ আমার স্বপ্নের সাথে মামার ডেলিরিয়ামের ধরনটা একটু বেশি কাকতালীয় হয়ে গেল না? এবার শেষ ঘটনা। ১৮ মে আমি অফিস থেকে ফেরার পথে স্কয়ারে গেলাম। ১৪০৭ এ গিয়ে দেখি রুমে পুশা-শামা (মামার দুই ভাতিজি, আমার বড়-মামাতো বোনেরা), মামি, নানি, মামার বড়ছেলে, এরা আছে। মামা যেন একটু অস্থির, একটু পর পর রুমের এক কোন থেকে আরেক কোনের দিকে তাকাচ্ছে। আর নিঃশব্দে কি যেন একটা বিড়বিড় করে বলছে। প্রথমে ডেলিরিয়াম মনে হয়েছিলো। পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখি পুরোপুরি সচেতন, ঘোরের কোন চিহ্নও নেই; আমার তখন মনে হল মামা কোন দোয়া/সুরা পড়ছে। খানিকক্ষণ পরে মামিকে কি যেন একটা বলার চেষ্টা করলো ফিসফিস করে, কিন্তু মামি বুঝতে পারলো না দেখে ঐ অবস্থাতেই একটা নিরুপায় করুন হাসি দিয়ে হাল ছেড়ে দিলো। শ্বাসকষ্ট ছিলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠে পড়লাম। বেডের হাতলে রাখা মামার হাতের ওপর হাত বুলিয়ে দেয়াতে আমার দিকে তাকাল। কিছু বোঝার আগেই আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, “মামা, গেলাম। আবার পরে আসবো। খোদা হাফেজ।” মামা ঘাড় ঘুরিয়ে হাত নেড়ে বিদায় দিলো। কথা বলার চেষ্টা করে নি। মামার সাথে ঐটাই আমার শেষ কথা, বেঁচে থাকা অবস্থায় শেষ দেখা। এর ঘণ্টা দুয়েক পরেই প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। দেন আইসিইউ। এখানে বলি, কারো কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় আমার মুদ্রাদোষ হচ্ছে সবসময় “ওকে তাহলে, দেখা হবে” বলে কথা শেষ করা। একদম সবসময়! “খোদা হাফেজ” আমি খুব রেয়ারলি বলি। বিদায় নিয়ে বের হবার পরে আমার মনে হল “পরে আসবো” কথাটা কেন বললাম? একটু চিন্তা নিয়েই বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে ঠান্ডা হচ্ছি, একটু পরেই নানির ফোন। কান্নাজড়ানো কণ্ঠ ভেসে আসলো, “রাতুল, তোর মামা আর নাই! শীগগির আয়!” আমি আম্মাকে নিয়ে সাথে সাথে আবার স্কয়ারের দিকে রওনা দিলাম, ঐ রাতেই। অর্থাৎ মামাকে যা বলে বিদায় নিয়েছিলাম। এবার শুধু পার্থক্যটা ছিল, মামা আর পৃথিবীতে নেই এটা জেনে। কিন্তু শেষ ঘটনাটা এটা না। শেষ ঘটনাটা কি ছিলো সেটা এবার বলবো। মামা আইসিইউ তে যায় ১৮ মে রাতে। সারারাত আমরা অনেক মানুষ জেগে/হাফ জেগে আইসিইউ করিডরের সামনে কাটালাম। এটা জানা হয়ে গিয়েছিলো মামার বাঁচার আর কোন আশা নেই। ১৯ তারিখ দিনের বেলা ডিসিশন হল বড়মামা এসে (২১ তারিখে) যদি ভেন্টিলেশন খুলে নেয়ার ডিসিশন নিতে হয়, নিবে। সে কথামত সবাই ধরে নিল ২১ মে সকাল পর্যন্ত মামা ভেন্টিলেশন মেশিন দিয়ে হলেও বেঁচে আছে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম ১৯ তারিখ রাতে ইমেডিয়েট ফ্যামিলি ছাড়া হাসপাতালে আর কারো থাকার দরকার নেই। থাকবে শুধু মামি, মামির ভাবি, আর আমার আম্মার মামাতো বোন চুমকি খালা। আমার নিজেরও থাকার কথা ছিল না। রাত ১২টা বাজে বাজে এমন সময় মনে হল থেকেই যাই। অ্যাট লিস্ট একজন পুরুষ আত্মীয় রাতে থাকুক। আমি জানতাম না একটু পরে আম্মার মামাত ভাই রাজিব মামাও আসবে। আমি হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে হাল্কা ডিনার নিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের রিসেপশনের সামনে থাকা অনেকগুলা সোফার একটাতে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তখন রাত প্রায় পৌনে একটা। জানিও না কখন রাজিব মামা এসে উপরে গিয়ে মামিদের আইসিইউ-এর দরজার সামনে থেকে ডানদিকে একটু ভিতরে একটা প্যাসেজের কোনায় শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছে। ওখান থেকে আইসিইউ দেখা যায় না, আইসিইউ থেকে নার্স এসে রোগীর অ্যাটেনডেন্টকে খুঁজলে কাউকে দেখতে পাবে না। ভোর ঠিক সাড়ে চারটার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। জেগে দেখি আমি ঠাণ্ডায় কাঁপছি। জ্বর, কাশি, সর্দি, কিচ্ছু না; কিন্তু দাঁতকপাটি লেগে যাচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো শরীরের সব রক্ত জমে বরফ হয়ে গেছে, এত ঠাণ্ডা! নরমালি আমার এত ঠাণ্ডা লাগে না। তাকিয়ে দেখি আশে পাশে অনেক মানুষ আমার মতই ওখানে থাকা সোফাগুলায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি ছাড়া কারো মধ্যে ঠান্ডাজনিত বিন্দুমাত্র অস্বস্তির ভাব নেই। এখানে আরেকটা কথা বলি, আমি এভারেজের চেয়ে বেশি ঘামি, যত ঠান্ডাই হোক; এসির মধ্যে আমার কখোনও তেমন প্রব্লেম হয় না। যাই হোক, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমি রিসেপশন করিডর থেকে লিফটের উইং-এ আসলাম। ঠাণ্ডা কমে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখি রাজিব মামাও ঘুম ভেঙ্গে উঠে এগিয়ে আসছে। লিফটে উঠে দুইজনে লেভেল ফোরে আইসিইউ-তে চলে আসলাম। এসে দেখি গোটা করিডরে মাত্র একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন (মামিরা তো আগেই বলেছি একটু ভিতরের দিকে ছিল)! এছাড়া গোটা ফ্লোরে আইসিইউ-র সামনে একটা মানুষ নেই। অথচ আগের দিনেই দেখেছিলাম আমরা ছাড়াও অন্যান্য রোগীর বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজনেরা আছে। যাই হোক, আগে থেকে এনে রাখা একটা কম্বলে নিজেদের ঢেকে আমি আর রাজিব মামা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আবার ঘুমিয়ে গেলাম। ঠিক আধা ঘণ্টা পরে (ভোর পাঁচটা) আমার ঘুম আবার ভেঙ্গে গেল। দেখি আইসিইউ থেকে একজন মেল নার্স বের হয়ে আসছে। বের হয়ে বলল “বেড#১৩ এর কে আছেন?” আমার মাথার মধ্যে কেউ যেন বলে দিলো, মামার বেড নম্বরই ১৩! আমি ধড়মড় করে উঠে রাজিব মামাকে বললাম “মামিকে ডাকেন। বলেন ভিতর থেকে ডাকতে আসছে!” আমার ভুল হয়নি। রাজিব মামা মামিকে ডাক দেয়াতে মামি জেগে উঠে তাড়াহুড়া করে ভিতরে গেল। স্বাতী মামি উঠে দোয়া দরূদ পড়ছে। কিন্তু ততক্ষণে মামা নেই। মামি একটু পরে বাইরে এসে দেয়াল ধরে তার সদ্যমৃত স্বামীর জন্য কেঁদে উঠলো। পরে ডাক্তারের মুখে শুনেছিলাম মামার দ্বিতীয় অ্যারেস্টটা হয় ভোর ৪ টায়, আর শেষবারটা হয় ভোর সাড়ে ৪টায়, মানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা অবস্থায় ঠিক যখন প্রবল ঠাণ্ডায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখন আমার কথা হচ্ছে; ডাক্তারের সময় অনুযায়ি মামাকে যখন প্রোনাউন্স করা হলো (ভোর ৫টা ৫ মিনিট), তখন করিডরে আমি আর রাজিব মামা ছাড়া আমাদের আর কেউ ছিল না। আমরা ঐ সময় ওখানে না থাকলে মামার মৃত্যুর পরে নার্স এসে কাউকে পেতো না। মামি উঠে নিজে থেকে পরের বার মামার অবস্থা চেক অন করতে না যাওয়া পর্যন্ত মামার দেহকে ঐ অবস্থাতেই বেডে শুয়ে থাকতে হত, কতক্ষণের জন্য কে জানে? ঠিক সেকেন্ড অ্যাটাকের সময়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, হঠাৎ চরম ঠান্ডার প্রভাবে আইসিইউ-র ফ্লোরে সময়মত চলে আসা, আবার মামার মৃত্যুর পর নার্স ডাক দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, এগুলা শুনতে যতই সহজ আর কাকতালীয় হোক, আমার কাছে এত সহজ না। মামা যতদিন বেঁচে ছিল, প্রয়োজনে/বিপদে-আপদে আমার জানাত, বন্ধুবান্ধবের সাথে সাথে আমাকেও ইনফরম করে রাখতো। অনেকে বলতে পারেন আমি পাগলের প্রলাপ বকছি, ইম্যাজিনিং থিংগস, বা কল্পনার যোগফল মেলাচ্ছি; কিন্তু আমি নিশ্চিত, মামা ঐ ভোররাতে চলে যাবার আগে এসে কোন এক উপায়ে তার সেই চিরপরিচিত ভঙ্গিতে আমাকে বলেছে, “উপরে আয়। আমি চলে যাচ্ছি। তোরা এই সময়টা আমার কাছাকাছি থাক।” আর সেজন্যই ঘুম ভেঙ্গে ঠিক সময় ঠিক জায়গামত থাকা হয়েছিলো আমাদের। আমি মামাকে এর পরে আর স্বপ্নে দেখিনি। এখন পর্যন্ত না। মামার বন্ধুবান্ধব, নানি, মামি, কলিগরা হয়তো দেখেছে, কিন্তু আমি না। তবে আমি জানি আমি দেখবো। আজ হোক, কাল হোক, দুই মাস পরেই হোক, মামা আমাকে দেখা দিবেই। দেখা দিয়ে জানাবে সে এখন কেমন আছে। মারা যাওয়ার পরে মামার চেহারায় একটা প্রশান্তির চাপ ছিল, হাসিহাসি মুখটা আবার ফিরে এসেছিল। শুধুমাত্র চুলহীন মাথা, আর ঠোঁটে একটা জ্বরঠোসা ছাড়া ফেটাল রোগটার কোন প্রভাব মুখে ছিল না। বরং মনে হচ্ছিলো মামা যেন অবশেষে পরম শান্তিতে ঘুমানোর সুযোগ পেল, যার জন্য অপেক্ষাটা ছিল বহুদিনের। প্রতিদিনই মামার কথা আমার মনে পড়ে; মনে পড়ে হাজারটা স্মৃতি, হাসি, কান্না, আনন্দের ছোট ছোট অজস্র টুকরাগুলার কথা। কম তো না, ৩৩ বছরের পরিচয়! কিছু সম্পর্ক মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যায় না, জন্মান্তরে এগুলার রেশ রয়ে যায়। আর একারনেই আমি জানি মামাকে আমি দেখবো, খুব শিগগিরই দেখবো। আমার সাথে দেখা না করে কি ছোটমামা পারে?

।। সংগৃহীত গল্প – ১৫ ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, November 7, 2011 at 12:03am ।। মৃত্যুর ছায়া।। ঘটনার শুরু আজ থেকে চার বছর আগে এক রাতে। আমি সিলেট এর ওসমানী মেডিকেল এ একটা সেমিনার শেষ করে নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিলাম ঢাকায়। সাধারণত আমার পাজেরো টা আমার খুব প্রিয় হওয়াতে আমি কাউকে ড্রাইভার রাখিনি। সেদিন ও আমি নিজেই চালিয়ে নিয়ে আসছিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে খানিক টা ঘুম ঘুম ভাব আসলেও মন টা সতেজ ছিল- কারন সেই সেমিনারে আমি আমার গবেষনার জন্য পেয়েছি প্রচুর হাততালি। সাংবাদিক রা ফটাফট ছবি তুলে নিয়েছিল আমার। পরদিন পত্রিকায় আমার ছবি সহ লিড নিউজ ও হবার কথা ই ছিল এবং হয়েছিল ও তাই। আমি একটা বিশেষ হার্ট সার্জারি আবিষ্কার করেছিলাম- যেটা আজ পৃথিবীর সব দেশে দেশে রোগীদের জীবন বাঁচাচ্ছে- মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন জীবনের।সেমিনারের সফলতা তাই জুড়ে ছিল আমার মনে প্রানে।

রাস্তায় যেতে যেতে সেদিন আমি গান শুনছিলাম। গানের তালে তালে ধীর গতিতে গাড়ি চালাই আমি। বেশি গতি আমি কখনোই তুলিনা।সেদিন ও ৫০ এর কাছাকাছি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। সিলেট থেকে রওনা দিয়ে উজানভাটি এলাকার কাছাকাছি আসতেই হটাত করে আমার সামনে এক সাদা পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধ লোক এসে দাঁড়ায়। রাত তখন প্রায় দুইটা। এই সময় রাস্তায় হাইওয়ের গাড়ি গুলো ছাড়া কোন যানবাহন ও ছিলনা। হটাত করে আমার সামনে কোত্থেকে লোকটা এসে পড়ল কিছু বুঝে ওঠার আগেই। আমি ও লোকটাকে বাঁচাতে গিয়ে ও পারলাম না। সোজা সেই লোকের ঊপর চালাতে বাধ্য হলাম। আর সেখানেই গাড়ির সামনের অংশে বাড়ি খেয়ে লোকটা ছিটকে পড়ল হাত পাঁচেক দূরে। আমি হার্ড ব্রেক কষে সেইবৃদ্ধের কাছে ছুটে গেলাম। কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ। মাথার কাছটায় আঘাতে মৃত্যু বরন করেছে বৃদ্ধ ততক্ষনে। জীবনে ও আমি কোন দিন এক্সিডেন্ট করিনি।সেটাই ছিল আমার প্রথম এক্সিডেন্ট। আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কিভাবে কি করব বুঝে ঊঠতে না পেরে কিছুক্ষন ঝিম মেরে থাকলাম সেখানেই। তারপর বৃদ্ধকে গাড়িতে তুললাম। পাশে বসিয়ে আবার ড্রাইভ করলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।

ঢাকায় পৌছে সোজা মেডিক্যাল এ নিয়ে গেলাম লাশ টাকে। সেখানে গিয়েই পুলিশ কে জানানো হল। পুলিশ এসে আমার কাছ থেকে জবানবন্ধি নিয়ে লাশ টা থানায় নিয়ে গেল। আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম পুলিশ কে সব খুলে বলব। কিন্তু পরে কি ভেবে যেন আমি মিথ্যে বলি। পুলিশ ও আমার কথা গুলো কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই বিশ্বাস করে। নিজের কাছে আমি কিছু টা অপরাধী বোধ করলে ও নিজের ইমেজ বাঁচাতে এই মিথ্যেটা আমাকে বলতেই হয়েছে।

তারপর কেটে গেছে অনেক গুলো মাস। আমি আমার আবিষ্কৃত প্যারা সার্জারি সিস্টেম এর জন্য অনেক গুলো পুরষ্কার ও পাই। খ্যাতি আর অর্থ দুটোই এসে ধরা দেয় আমাকে। ধীরে ধীরে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বেড়ে চলে আমার। নিজেকে কিছুটা ঈশ্বরের সমপর্যায়ের ভাবতে থাকি। এরজন্য মিডিয়া ও কম দায়ী নয়।খবরের পাতায় কারো না কারো জীবন বাঁচানোর জন্য আমি ঊঠে আসতে থাকি নিয়মিত ভাবে। ধীরে ধীরে আমি অনেক অনেক বেশী অহংকারী হয়ে ঊঠি। কাউকেই পরোয়া না করার একটা ভাব চলে আসে আমার মাঝে। মানুষ কে আমি মনে করতে শুরু করি হাতের পুতুল। আমি চাইলেই যেকোন মৃত্যু পথযাত্রীর জীবন বাচিয়ে দিতে পারতাম। এই জন্য আমার কাছেই ছুটে আসতে লাগল হাজারো মানুষ। এই যশ আর খ্যাতি যখন তুঙ্গে তখন আমার কাছেই রুগী হয়ে আসেন বাংলাদেশের প্রথিত যশা রাজনীতিবিদ রেজোয়ানুল হক। আমি বাকি সবার মত উনাকেও আস্বস্থ করেছিলাম যে উনার কিছু ই হবেনা।

যেদিন উনার অপারেশন – সেদিন আমি আরো দুটি হার্ট অপারেশন করে ফেলেছিলাম। তাই কিছু টা ক্লান্তি ছিল। একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপারেশন গুলো করতে হয়। তাই ক্লান্তি ভর করে সহজেই। আমি ক্লান্ত থাকলে ও মনে মনে পুলকিত ছিলাম কারন এর পরেই আমি রেজোয়ানুল হকের অপারেশন করবো। উনাকে যখন অজ্ঞান করা হল তখন আমি নিজের কস্টিউম পড়ছি। জুনিয়র ডাক্তার কে দিয়েই এগুলো করাই আমি। আমি শুধু গিয়ে কাটাকাটির কাজ টা করি। সেদিন ও জুনিয়র তিনজন ডাক্তার মিলে সব প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা সেরে আমাকে কল দিল। আমি ও গেলাম। আর গিয়েই শুরু করলাম অপারেশন। ওপেন হার্ট সার্জারি ছিল সেটা। আমি যখন সব কেটে কুটে মাত্র হার্ট টাকে দেখতে লাগলাম এমন সময় আমার চোখ গেল ওটি রুমের বাম কোনায়। সেখানে আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে সেই বৃদ্ধ। আমি দেখে চোখের পলক ফেলতেই দেখি উনি নেই। হ্যালুসিনেশন মনে করে আবার অপারেশন শুরু করলাম। রেজোয়ানুল হকের হার্ট এর নিলয় এর দুটো শিরায় চর্বি জমেছিল। আমি সেগুলো পরিষ্কার করতে করতে হটাত করে কানের কাছে একটা কাশির শব্দ শুনলাম। প্রথমে পাত্তা দিলাম না। কারন এইখানে কোন ভুল হলেই রোগী মারা যাবেন। আমার কোন রকম ভুলের কারনে এতবড় মানুষ টার মৃত্যু হবে ভেবে আমি আবার মনযোগ দিলাম। কিন্তু আবার কাশির শব্দ আসল। কাশিটা আসছিল বাম দিক থেকে। আমি বামে মাথা ঘুরিয়ে দেখি বৃদ্ধ হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঠোট নাড়ার আগেই বলে ঊঠল – “বাবাজি তুমি তো উনাকে বাঁচাতে পারবানা” আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি আকাশ পাতাল চিন্তা করে চলেছি। একজন মৃত মানুষ কিভাবে আমার পাশে এসে দাড়াতে পারে সেটাই মাথায় আসছিল না। আমি কোন উত্তর দেবার আগেই সেই লোকটি বলল-
“ কি বুঝতে পারছো নাতো? শোনো- আমি জানি তুমি অনেক চেষ্টা করবে উনাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু পারবেনা”- বলেই আবার হেসে দিল সাদা পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধ।

আমি বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। কি বলব বুঝতে পারছিনা। উনাকে কি বলবো বুঝতে বুঝতে কাটিয়ে দিলাম পাঁচ সেকেন্ড। তারপর আবার মনযোগ দিলাম অপারেশনে। রোগীর অপারেশন সাকসেস হল। আমি ও হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। সেলাই করে দিয়ে শেষ বার ড্রেস করতে দিয়ে আমি মাস্ক খুলতে যাব এমন সময় হটাত করে রোগীর পালস রেট গেল বেড়ে। মেশিন গুলো যেন চিৎকার শুরু করে দিয়েছে।

হটাত করে বুকের ভেতর ধপধপ করা শুরু করল। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে রোগীর প্রেশার দেখলাম- বেড়েই চলেছে প্রেশার। হটাত করে এই অবস্থা হবার কথা না। আমি কয়েকজন ডাক্তারকে বললাম প্রেশারের ইনজেকশন দিতে। ওরা সেটা দিতেই প্রেশার ডাউন হওয়া শুরু করল। কিন্তু আবার ও বিপত্তি। এবার প্রেশার কমতে লাগল। আমি আবার টেনশনে পড়ে গেলাম। কিন্তু কোনভাবেই কিছু করতে পারলাম না। রোগীর হার্ট বিট ভয়ানক ভাবে কমতে কমতে একেবারে শুন্য হয়ে গেল নিমিশে। এবং আমি তাকিয়ে তাকিয়ে রেজোয়ানুল হকের মরে যাওয়া দেখলাম। প্রথম বার আমার সামনে এক রোগী বলে কয়ে মরে গেল- আমি কিছুই করতে পারলাম না।

আমি আমার রুমে এসে বসে পড়লাম। রাগে আমার গা জ্বলতে শুরু করল। নিজেকে অনেক অসহায় মনে হতে লাগল। পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় রেজোয়ানুল হকের পাশাপাশি আমার হতাশাগ্রস্থ মুখ ও প্রকাশিত হল। মিডিয়া এমন এক জিনিস- কাঊকে মাথায় তুলতে দেরী করেনা- কাউকে মাটিতে আছাড় মারতে ও দেরী করেনা। আমাকে ও মাটিতে নামিয়ে আনল ওরা। আমার বিরূদ্ধে হত্যা মামলা রজু করা হল সেই নেতার দলের লোকজনের পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকার আমার পাশে ছিল বলে মামলা ধোপে টেকেনি। টাকা পয়সা খাইয়ে পুলিশ আর আদালতের সবকটাকে কিনে নিয়েছিলাম।

তারপর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমি ও ফিরে আসি বাস্তব জীবনে। রোগীদের সেবায় মনযোগ দেই। ছোটখাট অপারেশন এ যোগ যেই। এরপর আসতে আসতে আমার জীবন স্বাভাবিক হয়ে ঊঠে।
কিন্তু এর ঠিক ছয় মাস পড়েই এই মহিলা ডাক্তার কে অপারেশনের দায়িত্ব পরে আমার উপর। আমি নিরুপায় ছিলাম। উনাকে আমি কর্মজীবনে শ্রদ্ধা করতাম। আমার শিক্ষিকা ছিলেন। উনার হার্টে ব্লক ধরা পড়াতে উনাকে অপারেশনের দায়িত্ব উনি নিজেই আমাকে দেন। খুব ছোট অপারেশন। হরহামেশাই এই ধরনের অপারেশন হত-এখন ও হয়। হার্টের যে ধমনী গুলো ব্লক হয়ে যায় সেগুলোতে রিং পড়ানোর কাজ। আমি প্রথমে রাজি হইনি। কিন্তু রোগীর পীড়াপীড়ি তে রাজি হই।

অপারেশন টেবিলের সামনে এসেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। কারন সেখানে সেই দিনের মতই বাম কোনায় বসে ছিল সেই বৃদ্ধ। উনাকে দেখেই বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠে আমার। অজানা আশংকায় কেঁপে উঠে মন।

কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাকে অপারেশন করতে হয়। আমি ও শুরু করি। হার্টের ধমনী একটাতে রিং পড়ানো শেষ করে আরেকটা যখন ধরবো এমন সময় কানের কাছে ফিসফিস করে বৃদ্ধ সেই আগের মতই বলল- “বাবাজি- আজকা ও তুমি উনারে বাচাতি পারবানা” হাসি হাসি মুখের ভেতর যেন রাজ্যের ঘৃণা। আমি উনার চেহারার দিকে এক পলক তাকিয়েই আবার কাজ শুরু করলাম। কিন্তু রিং পড়াতে গিয়েই হটাত করে ভুল করে কেটে গেল ধমনী টা। গলগল করে রক্ত বের হতে শুরু করল। নিরুপায় হয়ে তিন চার জন মিলে সেই রক্ত বন্ধ করে ধমনী পরিষ্কার করে জোড়া লাগাতে বসল। আমি নিজেও হাত দিলাম। কিন্তু যা হবার তাই হল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে রোগীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেল। আমি রক্তের জন্য লোক পাঠালাম। কিন্তু সামান্য ও পজেটিভ রক্ত সেখানে ছিলনা। এতবড় একটা হাসপাতালে ও পজেটিভ রক্ত না পেয়ে সেই ডাক্তার আপা মারা গেলেন চোখের সামনে। আমার কিছু ই করার ছিলনা।

এরপর একদম ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি। আমার পরিবার থেকে বিয়ে করার জন্য চাপ আসল। আমি ও বিয়ে করলাম। মিতি- আমার বৌ- লক্ষ্মী বৌ আমার। যাকে বলে একেবারেই আটপৌরে মেয়ে। বিয়ে হয়েছে আমাদের মাত্র তিন সপ্তাহ। এরমাঝেই আমাকে করেছে আপন। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকলে যা হয়- বিয়ের তিন সপ্তাহের মাথায় ওর আব্দার রাখতে গেলাম কক্সবাজার এ। সেখানে প্রথম দিনেই একটা আছাড় খেল মিতি বাথরুমে। প্রথমে আমি তেমন কিছু না বলে পাত্তা না দিলে ও পরে বুঝতে পারি মিতির কোন একটা বিশেষ সমস্যা হয়েছে।

তখনই আমি মিতিকে নিয়ে আসি ঢাকায়। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারি মিতির মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে আছাড়ের ফলে। খুব দ্রুত মিতিকে অপারেশন করাতে হবে। নিজের স্ত্রী বলে মিতির অপারেশন আমি করতে চাইনি। কিন্তু সেই মুহূর্তে সব ভাল ভাল সার্জন রা দেশের বাইরে থাকাতে আমাকেই দায়িত্ব নিতে হল। আমি ও মেনে নিলাম অর্পিত দায়িত্ব।

আমি এখন বসে আছি মিতির রুমের সামনে। আরেকটু পর মিতির অপারেশন। আমি মিতির দিকেই তাকিয়ে ছিলাম- কিন্তু হটাত করে চোখ গেল মিলির কেবিনের বাম কোনায়। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে সেই বৃদ্ধ। জানিনা কি হবে আজকে। যে কোন ভাবে মিতিকে বাঁচাতেই হবে। কিন্তু আজরাইলের বেশে বৃদ্ধের মুচকি হাসি দেখে আমার আশার প্রদিপ নিভতে শুরু করে দিয়েছে…… সংগ্রহ করে যিনি পাঠিয়েছেনঃ Maruf Billah Ahsanullah University of Science and Technology

।। ক্যাথেড্রাল – প্রথম পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Monday, November 7, 2011 at 11:04pm মোঃ ফরহাদ চৌধুরী (শিহাব) একটানা ড্রাইভ করতে করতে বিরক্তি এসে গেছে। তার ওপর রাত নেমেছে দু ঘণ্টা হল। বৃষ্টি শুরু হয়েছে সন্ধ্যার পর থেকে। যাচ্ছি এক বন্ধুর বাসায়। সে আবার ফরেষ্ট অফিসার। খাগড়াছড়ি যাবার পথে হিয়াকো নামের একটা জায়গা আছে, যার আগের প্রায় ছয় সাত কিলোমিটার পথটা পুরোটাই পাহাড়ি পথ। যেন তেন পাহাড়ি পথ বললে ভূল হবে। রীতিমত ভয়াবহ রকমের খাঁড়া আর সরু। সুপাশে গভীর খাদ আর জংগল। বৃষ্টির কারণে রাস্তা এমনিতেই পিচ্ছিল হয়ে আছে, তার ওপর যখন খাড়া উঁচু পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আমার পুরনো ফোর্ডটা তোলার চেষ্টা করি- ইঞ্জিন প্রায় ইহলোক ত্যাগ করে করে অবস্থা। এমন ভাবে গোঁ গোঁ করা শুরু করে যে দম আটকে আসে- এই বুঝি বন্ধ হয়ে গেল! ইঞ্চি ইঞ্চি করে যেন উঠতে থাকে। আমি তিল তিল করে ঘামতে থাকি, গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে এক্সেলেটরে পা চেপে ধরি। শামুকের গতিতে উঠতে থাকে গাড়িটা। দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকি। কোন সময় চাকা হড়কাবে- আর গাড়ি সোজা পেছনে নেমে গিয়ে খাদে পরবে ঠিক নেই। একা হলেও না হয় কথা ছিল। সঙ্গে আমার স্ত্রী মাহিন। সে আবার কনসিভ করছে ছয় মাস হল। ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়া মুশকিল। কিন্তু সে এসব শুনলে তো। কনসিভ করার পর থেকেই ওর মাথায় ভূত চেপেছে ঘোরাঘুরি করার। সারা বাংলাদেশ চষে ফেলেছে আমাকে নিয়ে। আজ এখানে তো কাল ওখানে। আমি কিছু বললেই মুখ কালো করে ফেলে, “দেখো, এ সময় কিন্তু মেয়েদের সব সময় হাসি খুশি রাখতে হয়। তুমি এরকম করো কেন? একটু ঘুরলে কি হয়? সারাক্ষণ মুখ প্যাঁচার মত করে থাকো!” আমি আর কি বলবো। লাভ ম্যারেজ করেছি বলে ঠেকে গেছি। এরেঞ্জ ম্যারেজ হলেও না হয় একটু ঝারি টারি দেয়া যেত। কিন্তু এমন করুণ মুখ করে তাকায় যে কিছুই বলতে পারি না।
পাহাড়ি এলাকায় রাত যে ঝুপ করে নেমে আসে সেটা বই পত্রে পড়েছিলাম এতদিন। আজকে সচোক্ষে দেখলাম। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ঘুট ঘুটে অন্ধকার। যেন কালি গুলে দেয়া হয়েছে। তার ওপর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দশ হাত সামনে কি আছে দেখা যায় না। তাই গাড়ির স্পিড কমাতে হল। গাড়ি কখনো দুটো পাহাড়ের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে, কখনো বা পাহাড়ের ওপর দিয়ে। পাশাপাশি দুটো গাড়ি যাওয়া কঠিন। আর মাঝে মাঝেই লোহার পুরনো ব্রীজ। ভেঙ্গে চুরে এমন অবস্থা যে দুপাশ দুটো গাড়ি ওঠে না এই ভয়ে যে ভেঙ্গে পরতে পারে। চারপাশের জঙ্গল আর পাহাড় নিয়ে পুরো এলাকাটা অদ্ভূত এক রহস্যময়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ হঠাৎ করে বুকের ভেতর অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়। আমি গাড়ি চালাচ্ছি বলে এত কিছু দেখার সময় পাচ্ছি না। গাড়ির হেড লাইটের আলো বৃষ্টির কারণে আটকে যাচ্ছে অল্প গিয়ে। তাই সাবধানে ড্রাইভ করে যাচ্ছি। আশেপাশে আর কোথাও আলো নেই। আর খুব একটা গাড়িও দেখতে পাচ্ছি না। আধ ঘন্টা পরপর হয়ত দু একটা জিপ গাড়ি চোখে পরে। সেগুলো আগাগোড়া মানুষ আর মালপত্রে বোঝাই। এক তিল জায়গাও বাকি নেই। ‘চাঁদের গাড়ি’ নাম সে সব জিপের। পাহাড়ি রাস্তায় এসব গাড়িই উপযুক্ত, আমার পুরনো ফোর্ড না।
মাহিন আমার পাশে বসে কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনছে আর গভীর মনোযোগ দিয়ে জানালার কাঁচ নামিয়ে বাহিরের অন্ধকার দেখছে। বৃষ্টির ছটা এসে যে তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই।
আমি সামনের দিকে চোখ রেখে ওকে বললাম, “ জানালার কাঁচ নামিয়েছো কেনো? বৃষ্টি আসছে ভেতরে। বন্ধ করো।”
“উফ! সব কিছুতেই এমন করো কেন? একটু ভিজলে কি দুনিয়া উল্টে যাবে?” বিরক্ত হল মাহিন।
“ দুনিয়া না ওল্টালেও জ্বর টর বাধাবে। তুমি তো আর একা না, সঙ্গে বাচ্চাটাও কষ্ট পাবে।” গম্ভীর গলায় বললাম।
“ তোমাকে ওসব ভাবতে হবে না। আমার বৃষ্টিতে ভিজে অভ্যাস আছে। বাবুর কিছু হবে না।” আবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।
স্টিয়ারিং হুইলে হাত রেখে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম, “ তুমি যে এরকম আগে জানলে বিয়েই করতাম না! সারা জীবন আমার এখন জার্নি করে করে যাবে!”
ফিরে তাকালো মাহিন, হাসতে লাগল, “কেন বাবা? আমি কি করেছি?”
“কি করোনি? বিয়ের পর দিনই তোমার শখ হল বাচ্চা নেয়ার। তাও বাংলাদেশে বসে না! বিশ্ব ভ্রমন করে! সারা দুনিয়া ঘোরালে হানিমুনে! তারপর কনসিভ করার পর এখন সারা দেশ ঘোরাচ্ছো! তোমার ছেলে তো ওয়ার্ল্ড ম্যাপ নিয়ে দুনিয়ায় আসবে! ক্রিস্টোফার কলম্বাস! মা এত গুলো বাঁশ দিলো, কলম্বাস বাবাজী কত গুলো দেয় কে জানে!”
মাহিন হেসে ফেলল আবার, “ ছেলেই হবে কে বলল তোমাকে? মেয়েও তো হতে পারে।”
“আমি আর কোনো ছেলের জীবনে এত বড় দূর্ঘটনা সহ্য করতে পারবো না! তুমি এক মেয়েই আমার এ হাল করে ফেলেছো। তোমার মেয়ে হবে তোমার দশ গুণ। সে যে ছেলেকে বিয়ে করবে – সে নিশ্চই নাসার বিজ্ঞানী কিংবা এস্ট্রনট হবে- তার হানিমুন করার শখ হবে মঙ্গল গ্রহে। মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে জামাই বাবাজীকে বলবে- “ওগো শুনছো? চল না হানিমুনে মঙ্গল কিংবা চাঁদে যাই?” গম্ভীর মুখে মাহিনের দিকে তাকালাম।
মাহিন হাসল না দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। তাকিয়ে রইল আমার দিকে, “তুমি না হেসে কথা বল কেমন করে রবি?”
“কেন? আমি আবার কি করলাম?” রাস্তার দিকে চোখ ফেরালাম।
“তুমি গম্ভীর মুখে এমন সব কথা বল যে মানুষ শুনলে হাসতে হাসতে মুখ একদিনে দুই ইঞ্চি চওড়া করে ফেলবে।” ঠান্ডা গলায় বলল।
“তুমি তো হাসছো না।” নাকের ডগা চুলকালাম।
আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। মাহিন হঠাৎ করেই ঝুঁকে এলো আমার দিকে। শার্টের কলার টেনে বাম কানে কামড় দিলো, ফিসফিস করে বলল, “ এজন্যই তোমাকে আমার এত ভালো লাগে। হট কফি! লাবু জানু!”
গত এক বছরে মাহিনকে চেনা হয়ে গেছে। ওর হুট হাট ভালবাসা এ নিয়ে তিনটা কার একসিডেন্ট করিয়েছে আমার। তাই ওর নাকের ডগা তর্জনী দিয়ে ঠেলে ওকে সিটে বসিয়ে দিলাম শান্ত মুখে, “ মি টু মাহি। এবারের দফায় গাড়ি নিয়ে খাদে লাফাতে চাচ্ছি না জান! বংশের বাতি নিয়ে কথা।” গাড়ি চালানোয় মন দিলাম।
মাহিন হেসে ফেলল। লজ্জা পেয়েছে। সেটা ঢাকার জন্যই হাসছে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো ও। আড় চোখে ওর দিকে তাকালাম। জানালা দিয়ে আসা বৃষ্টি-বাতাসে ওর ঘন চুল গুলো উড়ছে, গলায় এদিক সেদিক এনে এনে ফেলছে। আমি জোর করে অন্য দিকে তাকালাম। বিড়বিড় করলাম, “ড্রাইভিং আইনে সুন্দরী বৌ নিয়ে ড্রাইভ করাটা নিষিদ্ধ করা হলে ভাল হত। পাশে এরকম বৌ থাকলে পাহাড় থেকে গাড়ি নিয়ে লাফিয়ে স্কাই ডাইভিং করার শখ জাগে!”
ফিরে তাকালো মাহিন, চোখে দুষ্টুমী ধরে ফেলেছে- এরকম একটা হাসি। শুনতে পেয়েছে বোধ হয় কথাটা। কেবল গম্ভীর গলায় বলল, “গাড়ি চালাও। এদিকে তাকাতে হবে না।”
“জী ম্যাডাম সেটাই তো করছি। নেক্সট টাইম আপনাকে বোরখা ছাড়া গাড়িতে তোলা যাবে না।” গাড়ির স্পিড বাড়ালাম। বৃষ্টি কমে এসেছে। আমার বন্ধুর বাংলোটা আরো দু কিলোমিটার, ম্যাপের কথা অনুযায়ি।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

যার বাসায় যাচ্ছি তার নাম রাকিব। আমার কলেজ জীবনের বন্ধু । দুজন দুই প্রফেশনে চলে আসার পরও যোগাযোগটা ছাড়িনি । ঢাকায় গেলে প্রাই আমার বাসায়আসে । মাহিনকে নিয়ে অবশ্য এবারই প্রথম আসা এখানে। আগে ছিল সিলেটে। এখানে এসেছে অল্প কিছুদিন হল ।
বাংলোটা পাহাড়ের ওপর। দূর থেকেই বোঝা যায় পাহাড়ের ওপর যে একটা বিরাট দোতলা বাংলো আছে। কারণ বাংলোর বাউন্ডারির উঁচু দেয়াল গুলোর চারকোনায় বসানো বড় বড় সার্চ লাইটের আলো রাতের অন্ধকার চিরে চারপাশের পাহাড়ি জংগলে গিয়ে পরেছে। বেশ কিছু খাকি পোশাকধারী গার্ড পাহারা দিচ্ছেবাংলোর গেট। কুকুরের ডাক শুনে বোঝা গেলো শিকারী কুকুরও রয়েছে বাংলোয় ।
রাকিব বোধ হয় গেটের আশে পাশেই ছিল, আমি গাড়ি নিয়ে গেটের সামনে হর্ন বাজাতেই বিশাল লোহার গেট খুলে গেল। দেখি সাদা ট্রাক স্যুট পরে হাসি মুখেদাঁড়িয়ে আছে রাকিব। আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো, “কিরে? পথে আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? ভাবী ঠিক আছে?” ওর পাশে বিশাল একটা কুকুর,কালো রঙের। এটাই বোধ হয় চেঁচাচ্ছিল।
আমি গাড়িটা ভেতরের চত্বরে নিয়ে একটা পানির ফোয়ারার পাশে পার্ক করতে করতে ভেতর থেকেই বললাম, “ চারপাশে যে সিকিউরিটির বহর দেখলাম-ভাবলাম ভূল করে প্রধান মন্ত্রীর বাস ভবনে চলে আসিনি তো!”
হাসতে লাগল রাকিব, “এখানে জংলী জানোয়ার আর হাতি আছে। তাই এত সব ব্যবস্থা। মাঝরাতে নয়তো হাতির অত্যাচারে গাছে উঠে থাকতে হবে।”
মাহিন দরজা খুলে নামল। রাকিবের দিকে তাকিয়ে হাসল, “ কেমন আছেন রাকিব ভাই? বিয়ের সময়ই কেবল দেখেছিলাম আপনাকে। আর তো ঢাকায় এলেননা?”
“আমার আর যাওয়ার সুযোগ হয় নাকি? গরু মহিষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে সারা জীবন গেল! ফরেস্ট ছেড়ে আসলে কোথাও গিয়ে থিতু হওয়াটা কঠিন। এখানেই আটকেআছি তাই। আপনার কি খবর? পথে আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?” আমি গাড়ি থেকে নেমে আড় মোড়া ভাংতে ভাংতে বললাম, “ ওকে জিজ্ঞেস না করে আমাকে জিজ্ঞেস কর। ও তো জার্নির পোঁকা, ওকে বিয়ে করে আমি ফেঁসেগেছি! সারা জীবন চাক্কার ওপর কাটাতে হবে যে অবস্থা শুরু হয়েছে!”
হাসতে লাগল রাকিব, “ ভেতরে চল। ইভা আছে। ভাবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই।”
আমি ব্যাগ নিতে যাচ্ছিলাম। নিষেধ করল, “ তোর নেয়া লাগবে না। লোক আছে। নিয়ে নেবে।” গলা চড়িয়ে ডাকল, “ আসগর? এসে মাল পত্র গুলো নিয়র যাওতো।” একজন মধ্য বয়সী লোক বেরিয়ে এল। দাড়িওয়ালা, শক্ত সামর্থ চেহারা। গলায় গামছা। গাড়ির ডিক্কি থেকে ব্যাগ নামিয়ে নিয়ে আমাদের আগে আগে চলেগেল ভেতরে।
আমরা ভেতরে ড্রইং রুমে ঢুকতেই ইভাকে দেখতে পেলাম। সোফায় বসে টিভি দেখছিল। আমাদেরকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো, আমার দিকে তাকিয়েহাসল, “ রেবু চাচা? কেমন আছো?” হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেকের জন্য।
আমি শিস দিয়ে উঠলাম, “ওরে সর্বনাশ! তুই এই দুই বছরে এত বড় হয়ে গেছিস! তোকে তো চিনতেই পারিনিও প্রথমে। একেবারে হলিউডের নায়িকা! বয়ফ্রেন্ডজুটেছে নাকি?” এগিয়ে ওর হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিলাম। “নে পরিচয় করিয়ে দি, এ হল তোর চাচি, মাহিন।”
মাহিন অবাক হয়ে বলল, “ রাকিব ভাইয়ের এত বড় মেয়ে আছে! জানতামই না! আপনাকে তো দেখেও বোঝা যায় না!”
রাকিব উদার গলায় হাসল, “ আর বলবেন না ভাবী! চাইল্ডহুড ম্যারেজ, চাইল্ডহুড ভালবাসা, চাইল্ডহুড ডটার! আমার আঠারো আর ওর মার বয়স ছিল চোদ্দ-যখন ইভা হয়।”
আমি হাসলাম, “ কলেজে থাকতে প্রায়ই ক্লাসে নিয়ে আসতো ইভাকে। মার কাছে একদমই থাকতে চাইতো না। বাপ পাগল মেয়ে। ক্লাসের সবাই যে কত ওকেকোলে নিয়ে ঘুরেছে!” ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। লজ্জা পেয়েছে বেচারি।। লাল হয়ে গেছে ।
“ভাবী কোথায়? ইভা একা এসেছে নাকি?” সোফায় বসলাম।
“ ছোট ছেলেটার পরীক্ষা চলছে। শেষ হলে দুজনেই আসবে। ইভার পরিক্ষা আগেই শেষ। তাই বললাম বাড়িতে একা বসে মাছি মারার চেয়ে এখানে এসে ঘুরে যা।ভাল লাগবে। ব্যস চলে এলো।”
“ কোন ক্লাসে পড়ো এখন?” মাহিন জিজ্ঞেস করল ইভাকে।
“ ক্লাস টেন।”
“ সায়েন্স?”
“ হ্যা।”
“ বাহ। আর কদিন পরেই তো ম্যাট্রিক দিয়ে কলেজে উঠে যাবে!”
ঠিক এ সময় আসগর এসে বলল, “ মালপত্র রাখে দিছি। খানা লাগাবো সাব?”
রাকিব ব্যস্ত গলায় বলল, “ কথা অনেক হবে। আগে গোসল টোসল সেরে ফ্রেস হয়ে নে। আসগর তুই খাবার দে। লম্বা জার্নি করে এসেছে। পথে কি না কিখেয়েছে।”
“ ভাই ব্যস্ত হবার কিছু নেই। আমাদের এখনো খিদে পায়নি।” মাহিন ভদ্রতা করে বলল। যদিও জানি দুজনেরই অবস্থা খারাপ খিদের চোটে।
“ ওসব বলে লাভ নেই। বাচ্চার কথাও ভাবতে হয়। তাড়াতাড়ি যান। খাবার দেয়া হচ্ছে।” এক রকম ঠেলে পাঠিয়ে দিল আমাদের গেষ্ট রুমে। বেশ বড় সড় গেষ্টরুম। ব্যাগ গুলো এখানে এনে রেখেছে। আমি বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরলাম লম্বা হয়ে।
মাহিন হ্যান্ড ব্যাগটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বলল, “ কি হল? শুয়ে পরলে যে? ওঠো। আগে তুমি যাও বাথরুমে। গোসল করে নাও।”
“ তুমি যাও। আমি একটু গড়িয়ে নেই।”
হাত ধরে টানল, “ তুমি যাও তো! আমার সময় নেবে। তুমি গোসল করে ফেলো।”
কি আর করা। উঠে পরলাম। টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ভেতর থেকেই শুনতে পেলাম মাহিন গুন গুন করে গান ধরেছে, ব্যাগ খুলে কাপড় চোপড় বেরকরছে। রাতে খাবার টেবিলে বসে রাকিব মাহিনকে বলল, “ আমি শুনেছিলাম আপনি নাকি পুরাতত্ত্ব-প্রত্নতত্ত্বের ওপর পড়াশোনা করেছেন?”
পানির গ্লাসটা নামিয়ে রাখল মাহিন, “ হ্যা, আর্কিওলোজি ছিল আমার সাবজেক্ট। বেথুনে করেছিলাম।”
“বাহিরেই ছিলেন?”
“নাহ। স্কুলে থাকতে চলে গিয়েছিলাম। পড়াশোনা শেষে চলে এসেছি।” মাহিন একটু থেমে যোগ করল, “ শুনলাম আপনি নাকি আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য আলাদা ভাবে রবিকে বলেছিলেন?”
আমি কাতল মাছের একটা পিস তুলে নিলাম, “হ্যা। বেশ কয়েক মাস ধরে তুই বলছিলি মাহিনকে এখানে নিয়ে আসতে- ব্যাপারটা কি?” চোখ নাঁচালাম, “ আমার বউয়ের প্রেমে পড়েছিস নাকি?”
মাহিন টেবিলের নিচ দিয়ে আমার পায়ে লাথি দিল। কথা বার্তায় আমি বরাবরই একটু সিগন্যাল-বেরিকেড বিহীন। সামনে ইভা থাকলেও অতটা পাত্তা দিলাম না। সবাই বড় হয়েছে।
রাকিব হাসতে লাগল, “ তাহলে তো তোর ভাবী আমাকে দোনলা বন্দুক হাতে ম্যারাথনের দৌড়ানি দিবে!”
“তাহলে ঘটনাটা কি? ঝেড়ে কেঁশে ফেল। আমি গোয়েন্দা বিভাগের লোক। গলা শুনেই বলে দিতে পারি কি হচ্ছে না হচ্ছে। ফোনে তোর গলা শুনেই বুঝেছি কোনো একটা ঘাপলা বেধেছে কোথাও।” ঝোল দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে নির্লিপ্ত গলায় বললাম।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত চুপ হয়ে থাকল রাকিব। তারপর ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল, “আমি অত ভনিতায় যাবো না, সরাসরি পয়েন্টে চলে আসি। ভূমিকা বেশি হয়ে গেলে মূল ঘটনা আর বোঝা যায় না।” পানির গ্লাস তুলে ঢক ঢক করে সবটা খেয়ে ফেলল। আমি মাহিন আর ইভার দিকে তাকালাম। দুজনেই কৌতুহলি মুখে তাকিয়ে আছে রাকিবের দিকে।
গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখল, “ ভ্যাটিক্যান প্রাসাদ কিংবা ভ্যাটিক্যান সিটির নাম শুনেছিস?” প্রশ্নটা আমাকেই করা হয়েছে।
“খ্রিস্টানদের মক্কা? রোমান ক্যাথলিক চার্চ, মানে পোপের মূল ক্যাথেড্রালটা ভ্যাটিক্যান সিটিতেই, ইটালিতে। হঠাৎ এটার কথা জিজ্ঞেস করলি কেন?”
“গুড। যদিও গোয়েন্দার লোক তুই। তাও ভাবলাম জানিস কি না।” সন্তুষ্টির ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো রাকিব। “ছোট চার্চ গুলোকে কেবল চার্চ বা গির্জা বলে। কিন্তু কোথাও ওটার এডমিনিষ্ট্রেশন চালানোর জন্য প্রিষ্ট, হায়ার প্রিষ্ট, নান, পোপ- নিয়ে কাউন্সিল থাকে। সেটা যেখানে হয় সেটা বিশাল কোনো চার্চেই হয়। তাই ঐ বিশাল চার্চকে আলাদা ভাবে বোঝানোর জন্য অন্য নাম দেয়া হয়- ক্যাথেড্রাল। দুনিয়াতে ক্যাথেড্রালের সংখ্যা খুব বেশি না। হাতে গুণলেই হয়। বাংলাদেশি আছে মাত্র দুটো। ময়মনসিংহ আর রাজশাহীতে। আর কোথাও নেই।” থামল একটু। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম ওর পরবর্তী কথা গুলো শোনার জন্য।
“তোরা তো জানিসই যে ক্যাথেড্রালে থাকে খুব দামি দামি ভাস্কর্য আর চিত্রকর্ম। ভ্যাটিক্যান প্রাসাদের উদাহারণটাই দেয়া যায়। ওখানে এঞ্জেলোর খুব মূল্যবান কিছু কাজ রয়েছে। Sistine Chapel Ceiling অন্যতম। ক্যাথেড্রালের সিলিং জুড়ে তিনশোটার মত চিত্র। বাইবেল থেকে নেয়া চিত্রলিপি। নানান ঘটনার। জানিস এসব?”
আমি মাথা নাড়ালাম, “নাহ। এত সব আমি জানি না।” মাহিনকে দেখালাম, “ একে জিজ্ঞেস কর। আমার জ্ঞানের দৌড় শেষ।” খেতে লাগলাম।
মাহিন একটু অবাক হয়ে বলল, “ সবখানে থাকে না। যদি কেউ দান করে কিংবা ক্যাথেড্রাল কর্তৃপক্ষ বানানোর নির্দেশ দেয়- তাহলেই ওসব স্থান পায়। মাইকেল এঞ্জেলোকে মোট বারোটা দৃশ্য বাইবেল থেকে আঁকতে বলা হয়েছিল। সে সময়ের পোপ জুলিয়াস টু, মানে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস কাজটা এক রকম প্রতিশোধ কিংবা ঈর্ষান্বিত হয়ে চাপিয়ে দিয়েছিল এঞ্জেলোর ওপর। তিনি জানতেন যে এঞ্জেলো ভাস্কর, চিত্র শিল্পী নয়। কিন্তু ছবি আঁকার কাজ দেন, সেটাও ক্যাথেড্রালের আভ্যন্তরীণ ছাদ জুড়ে। কাজটা করার জন্য সে সময় অত উঁচুতে পৌছানো সম্ভব ছিল না। মাইকেল এঞ্জেলোই সর্ব প্রথম Scaffolding বা মাঁচা তৈরি করেন। অনেকই জানে না এঞ্জেলো যে আর্কিটেক্ট ছিলেন। সে সময়ের পোপের খুব প্রিয় পাত্র ছিলেন আর্কিটেক্ট ডোনেতো ব্রামান্তে। তাকে ভার দেয়া হয়েছিল ছাদ পর্যন্ত পৌছাবার জন্য মাঁচা তৈরি করার। কিন্তু তিনি খুব ভূয়া টাইপের জিনিস বানিয়েছিলেন দেখে এঞ্জেলো হেসেছিল সেটা নিয়ে। সেখানেই সমস্যা হল। ডোনেতো নালিশ করলেন পোপ জুলিয়াসকে। তিনি এখন এঞ্জেলোকেই ডেকে বললেন নিজে যেন এ রকম কিছু বানিয়ে দেখান। তখন প্রথম বানানো হয় Scaffolding। ১৫০৮ থেকে শুরু করে ১৫১২ পর্যন্ত রাত দিন পরিশ্রম করে The Book of Genesis থেকে মোট তিনশোটার বেশি ছবি আঁকেন। প্রায় অন্ধ হয়ে যান তিনি। কিন্তু পোপদের অত্যাচার থামেনি। ১৫৩৫ এর দিকে পোপ তৃতীয় পল তাকে আবার ডেকে আরো কিছু ছবি আঁকতে দেন ক্যাথেড্রালে। তখন Adam and eve, Garden of Eden, Great flood – এসব এঁকে দেন। শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন রাত দিন অমানুষিক কষ্ট করে ছবি আঁকার কারণে। অবাক করা ব্যাপার ছিল সে সময় ক্যাথেড্রালে এঞ্জেলোর কোনো ভাস্কর্য দেয়া হয়নি। পরে হয়েছিল।” থামল মাহিন।
ইভা আর আমি খুব মনোযোগ দিয়ে মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে কথা গুলো শুনছিলাম।
“হুম।” চেয়ারে হেলান দিল রাকিব। আঙ্গুল দিয়ে প্লেটের ভাত গুলোর মাঝে বৃত্ত আঁকছে আপন মনে।
“ তুই বলেছিলি ভূমিকা করবি না। এখন তো মনে হচ্ছে ভূমিকা দিয়ে ইতিহাস বই বানিয়ে ফেলেছিস?” গলা খাকারি দিলাম।
কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকার পর রাকিব মাহিনের দিকে সরাসরি তাকাল, “ তিন মাস আগে এখানে পাহাড়ী এলাকায় বিশাল ঢল নেমেছিল বৃষ্টির পানি জমে। ঢলের কারণে অনেক গভীরে খাদের ভেতর দিকের পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে সরে গিয়েছে। এবং মাটি ভেঙ্গে পাহাড়ের ভেতর থেকে অবিকল ভ্যাটিক্যান সিটির “প্রাসাদ” বেরিয়েছে অল্প একটু। বাকিটা মাটির নিচে, মানে পানির নিচে এবং পাহাড়ের ভেতরে। বোঝা গেল?”
আমি মাহিনের দিকে তাকালাম। দেখলাম বিস্ময়ে ওর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যাচ্ছে। ফিসফিস করে বলল, “ ভ্যাটিক্যানের ক্যাথলিক চার্চ?”
“শুধু চার্চ না, ভেতরের সব কিছুই। মাটি খুঁড়ে যতটুকু ঢুকতে পেরেছি Sistine Chapel Ceiling অবিকল একই ভাবে আঁকা চার্চের ছাদ জুড়ে। এবং অসংখ্য মূর্তি রয়েছে – যেগুলো আসল ভ্যাটিক্যান প্রাসাদে নেই। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হল এখানে মাটির নিচে অতিরিক্ত একটা কক্ষ আছে যেখানে সমাধী রয়েছে বেশ কিছু মানুষের। সেখানের একটা ফলকে লেখা –
“Michelangelo di Lodovico Buonarrati Simoni (||)
1758 nov – 1832”
মাহিনকে দেখে মনে হল ও আকাশ থেকে পরেছে! কেবল বিড়বিড় করে বলল, “ দ্বিতীয় মাইকেল এঞ্জেলো? ইতিহাসে এই নামে কেউ নেই! সমাধীটা কার?”
রাকিব কাষ্ট হাসি হেসে চেয়ারে হেলান দিল, “এখানেই তো প্রশ্ন। পাহাড়ের ভেতর এই প্রাসাদ এলো কোত্থেকে? কে বানালো? কেনই বা বানিয়েছে? এত জায়পগা থাকতে এখানে কেন? আর তার থেকে বড় কথা এই সমাধীটা আসল ভ্যাটিক্যানে নেই। আসল এঞ্জেলোকে ক্যাথেড্রালে কবর দেয়া হয়নি। এই সমাধী কক্ষের প্রতিটা কবরই প্রকৃত ভ্যাটিক্যান কিংবা ইতিহাসের কোনো না কোনো ব্যক্তির দ্বিতীয় বা তৃতীয় নামের কেউ। এত দিন জানতাম মৌর্জ সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে এদেশে। ভ্যাটিকেনের থাকবে- এটা আশা করিনি!”
আমি কেবল একটা শব্দ উচ্চারণ করলাম, “মিডিয়া?”
“ওপর থেকে কড়া নিষেধ। খবরটা যেন না ছড়ায়। বাহিরের থেকে কাউকে আনা যাবে হবে না। আগে নিজস্ব লোক দিয়ে কাজ করানো হবে। মাহিনকে তাই আনতে বলেছিলাম।”
“দেশে আরো বাঘা বাঘা আর্কিওলোজিষ্ট আছে।” শান্ত গলায় বললাম।
“জানি। কিন্তু এখনো কোনো হদিসই বের করতে পারছে না তারা। তার ওপর কিছু দিন আগে আর্কিওলোজিষ্ট ড. এজাজ আহমেদ খুন হয়েছেন রাতের বেলা ওখানে। তাই, পুলিশি গন্ধ লেগে গেছে ব্যাপারটায়। মাহিনকে ডেকেছি যাতে ও একটু দেখে আন্দাজ করে কেমন করে হল এসব।”
“ সি ইজ প্রেগনেন্ট, তোর ধারণা যেখানে মানুষ খুন হয় সেখানে আমি এ অবস্থায় ওকে পাঠাবো?”
“সে জন্যই তো তোকেও ডেকেছি। ওর সিকিউরিটি হিসেবে। মাহিনকে ডাকার মূল কারণ হল মাহিন প্রচুর ঘোরাঘুরি করেছে। ভ্যাটিক্যান আমি বইয়ে পড়েছি। মাহিন নিজে দেখেছে। ও ভাল বুঝবে সব। অবশ্য তোর নিষেধ থাকলে আমার কিছু বলার নেই। কারণ এটা ব্যক্তিগত ভাবে আমি বলেছি।”
আমি কিছু বলার আগেই মাহিন বলে উঠল, “ আমি দেখবো জায়গাটা। দ্বিতীয় এঞ্জেলোকে দেখার ইচ্ছাটা দমাতে পারছি না।”
আমি পানির গ্লাসটা খালি করে ওর দিকে তাকালাম গম্ভীর মুখে, “তুমি বুঝে বলছো কথাটা?”
“হ্যা।” আমার দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকালো মাহিন। একটা হাত বাড়িয়ে মৃদু চাপ দিল আমার হাতে।
আমি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললাম, “ঠিক আছে। তোমার কলম্বাস পেটে থাকতেই এত দৌড়াচ্ছে- বের হলে যে কই কই যায় চিন্তায় আছি!”
(চলবে)

লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব।
From: Textile Engineering College, Chittagong
ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

।। ক্যাথেড্রাল - দ্বিতীয় পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, November 8, 2011 at 10:23pm
মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব

খুব সকাল বেরিয়ে পরলাম আমরা। রাকিবের কথা অনু্যায়ী সেই ক্যাথেড্রালটার দূরত্ব এখান থেকে আরো দশ বারো কিলোমিটার দূর। তারওপর পায়ে চলা পথ রয়েছে এক মাইলের মত। আমার একার পক্ষে ওখানে যাওয়া কঠিন কিছু না, কিন্তু মাহিনকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। ওর এ অবস্থায় হাঁটা চলা করাই ঠিক না, যে কিনা পাহাড় বাইতে যাচ্ছে! এবং তাকে এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত মনে হল না। জিন্স পরেছে, আর সাদা একটা ফুল শার্ট। মাথায় লাল রংয়ের একটা রুমাল, পায়ে কেডস, পিঠে ব্যাকপ্যাক। তাতে নানা রকম টুকিটাকি জিনিস পত্র। সঙ্গে ইভাও যাচ্ছে। মাহিনের মতই জিন্স আর শার্ট পরেছে। দুজনে বসেছে জিপের পেছনে। আমি আর রাকিব সামনে। ড্রাইভ করছে রাকিব। আমার ফোর্ডে করে অতদূর পাহাড়ি পথ যাওয়া সম্ভব না, তাই রাকিবের জিপে করে যাচ্ছি। জিপটা একদম নতুন। ঝকঝকে চেহারা। বাহিরের আকাশ মেঘলা। বৃষ্টি আসার ভয়ে জিপের উপরের তেরপাল তুলে দেয়া। রাকিব সিগারেট ধরাল। প্যাকেটটা বাড়াল আমার দিকে। আমি বললাম, “নাহ, ছেড়ে দিয়েছি”।
“সেকিরে! তোর মত গাঞ্জা খোর সিগারেট ছেড়েছে!” চোখ কপালে তুলল।
হাসলাম, “বিয়ের পর আর মাহিনের অত্যাচারে খেতে পারিনি। খেতে গেলেই কাঁচি নিয়ে সিগাররেট কেটে দু টুকরো করে ফেলে”।
দাতের ফাঁক রকিব কেবল বলল, “ওউ! শেষ কালে বুড়ো বয়েসে এসে ধরা!” আমি বাহিরে তাকালাম, আকাশের ঘনকালো জমাট মেঘ গুলো পাহাড়ের মাঝামাঝি ঝুলে আছে। খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমাদের গাড়িটা মেঘের ওপরে উঠে যাচ্ছে।ঘন কুয়াশার মত। পরক্ষণেই হয়ত আবার নেমে যাচ্ছে। জীপের উইন্ড শীল্ড ভিজিয়ে দিচ্ছে ঘন মেঘ। ওয়াইপার মুছে যাচ্ছে উইন্ডশীল্ড। পেছনে মাহিন আর ইভা কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। আমি চুপচাপ পাহাড় গুলো আর খাদের ঘন জংগল গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি। এত ঘন জঙ্গল যে মনে হচ্ছে ঘন সবুজ কার্পেট বিছিয়ে আছে। অনেক বড় বড় গাছ মেঘ ফুঁড়ে ওপরে উঠে গেছে। কোথাও কোনো পাখি দেখতে পাচ্ছি না। কেবল হঠাৎ হঠাৎ রাস্তার উপর দিয়ে শেয়াল আর কাঠ বেড়ালি দৌড়ে পার হচ্ছে। রাকিব সাবধানে গাড়িটা চালাচ্ছে, নইলে দুই একটা কাঠ বেড়ালি রাস্তায় পিষে যেত গাড়ির চাকার নিচে পরে। চারপাশে নিরেট নিস্তব্ধতা! মাহিন পেছন থেকে হঠাৎ বলল, “রাকিব ভাই, ক্যাথেড্রলটার সিকিউরিটির জন্য লোক রেখেছেন?”
“রেখেছি মানে? দিন রাত আঠাশ জন সশস্ত্র গার্ড রয়েছে। ক্যাম্প করেছি পাহাড়ের গোড়ায় আর চারটা পাহাড়ের চূঁড়ায়। যাতে কেউ চুরি টুরি করতে না পারে। সার্চ লাইট দিয়ে,তাঁর কাটা দিয়ে, বলতে পারেন দূর্ভেদ্য করে ফেলা হয়েছে চারপাশ। তবে সমস্যা হল জায়গাটা এতই বিশাল যে এত অল্প মানুষ দিয়ে গার্ড দেয়া কঠিন। বলতে পারেন ছোট খাট একটা শহর। মাটির নিচে এত বড় জিনিষ ডেবে গেছে যে কয় দিকে লোক লাগাবো? পোঁচার, ডাকাত চোর এসবের উৎপাত ঠেকানোই মুশকিল। ব্যাপারটা বেশি দিন ধামা চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। প্রায় রাতেই ক্যাথ্যড্রালে চোর ঢুকছে আমাদের চোখ এড়িয়ে। চুরি করার চেষ্টা করছে দামি মুর্তি গুলো। খুব ভারী বলে সুবিধা করতে পারছে না। কিন্তু ছোট খাট অনেক জিনিস পত্র এর মাঝেই গায়েব করে দিয়েছে।”
মাহিন হাত ঘড়ি দেখে বলল “আর কত দূর?”
“এসে গেছি প্রায়। ঐ সামনের চূড়াটা দেখেছেন? ওখান থেকে আরো এক কিলোমিটার যেতে হবে।” রকিব বলল।
ইভা বলল, “ হেটে যেতে খারাপ লাগে না। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হয় মাইল খানেক। কিন্তু ফেরার সময় জান বের হয়ে যায় এই রাস্তা দিয়ে উপরে উঠতে।”
“তুই আগে এসেছিলি নাকি?” জিজ্ঞেস করলাম।
“ হ্যা,দুবার ঘুরে গেছি। ক্যামেরা দিয়ে অনেক ছবি তুলেছি। ভিডিও করেছি।” গর্ব করে বলল ইভা।
মাহিন আফসোস করল, “আগে বলবে না? আমি একটু দেখে নিতাম।”
“ক্যামেরা আজকেও এনেছি”। ইভা ওর ব্যাক প্যাক ইঙ্গিত করে বলল।
“আছে নাকি? ছবি গুলো দেখা তো?” বললাম আমি।
“এখানে নেই। ল্যাপটপে ঢুকিয়ে রেখেছি। ম্যামোরি ভরে গিয়েছিল।” ইভা জানাল।
“ও তাহলে আর কি করা? সচোক্ষেই দেখা যাক।” আমি আবার বাহিরে তাকালাম। পাহাড়ের চূড়াটার কাছে চলে এসেছি। এতক্ষণ খেয়াল করিনি- মেঘের জন্য বোঝা যাচ্ছিল না। এখানে ফরেস্টের গার্ডদের একটা চেক পোষ্ট। রাকিব জিপ নিয়ে যেতেই খাকি পোশাক পরা দুজন গার্ড এসে সালাম দিল। রাকিব গাড়ি থেকে নামল, “তোমরা গাড়িটা পার্ককরে রাখো। আমি এনাদের নিয়ে ক্যাথেড্রালে যাচ্ছি। সকালের বেচের ডিউটির গার্ডরা গেছে?
“জ্বী, স্যার।” রোবটের গলায় জবাব দিল একজন।
আমরা গাড়ি থেকে নামতেই গাড়িটা একজন নিয়ে এক পাশে পার্ক করে রাখল। রাকিব আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হাটার জন্য তৈরী? একমাইল কষে হাটা দিতে হবে এখন।”
আমি পায়ে ভার বদল করলাম, “হুম।” মেঘের মাঝ দিয়ে রাকিবের দেখানো দিকে তাকালাম। মনে হল বিশাল কোনো কুয়াশা সমুদ্র। তার মাঝ দিয়ে দূরে দূরে চার-পাঁচটাপাহাড়ের মাথা দ্বীপের মত জেগে আছে। অদ্ভুত সুন্দর। বিড় বিড় করলাম, “এই মেঘের সমুদ্রের নিচেই সেই ক্যাথেড্রাল?” রাকিব শুনে হাসল, “হ্যা। রীতিমত একটা শহর লুকিয়ে আছে মাটির নিচে!” চেক পোষ্ট থেকে হাঁটতে লাগলাম পাহাড়ের কাঁচা পথ ধরে। মাটি কেটে রাস্তা করা হয়েছে। আঁকা বাঁকা ভাবে পাহাড়ের গা ঘেষে পথটা চলে গেছে ক্রমশ নিচের দিকে। জংগল চারপাশে। পাহাড়ের গায়ে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য দেবদারু গাছ। রেইনট্রির মত বিশালাকার একেকটা লম্বা গাছ। সূর্যের আলো প্রায় আটকে দিয়েছে ঘন ডাল পালা। হাটতে খারাপ লাগছিল না। সারাটা রাস্তা মাহিনের এক হাত ধরে রাখলাম শক্ত করে। যাতে পা পিছলে কোনো দূর্ঘটনা না ঘটায়। মাহিন এক ফাঁকে বলল নিচু স্বরে, “আস্তে ধর হাত ব্যথা করছে তো।” আমি এক হাত ছেড়ে অন্য হাত ধরলাম ওর। তবুও শক্ত করেই ধরে রাখলাম। জংগলটার ভেতর এই দিনের বেলাতেও মশার উৎপাত। পাহাড়ের ঢালের এই বিশাল জংগল যেন আমাজানের জংগল। মশা আর সাপ খোঁপ দিনের বেলাতেও ছোটাছুটি করছে। সতর্ক থাকলাম। মাহিনকে এখানে নিয়ে আসা উচিত হয়নি- আফসোস হতে লাগল। সব সময় ওর কথা শুনতে গেলে ওর যে ক্ষতি হবে এটা বোঝানোই মুশকিল। দীর্ঘ পথ। এক ঘন্টা লাগিয়ে পৌঁছালাম। রাস্তাটা যেখানে গিয়ে থেমেছে ওটা একটা ক্যাম্প। ফরেষ্ট গার্ডদের ক্যাম্প। পাহাড়ের চূড়ায় সেটা। এতক্ষন উচুঁ পাথাড় থেকে এক মেইল হেটে নেমে এই পাহড়ের চূড়ায় এসেছি দেখে ভীষণ অবাক লাগল। তার মানে ক্যাথেড্রালের অংশটা আরো অনেক নিচে! ঢোক গিললাম। কম করে হলেও হাজার মিটার নিচে হবে!
এখানেও মেঘের ছোটাছুটি। রাকিব দুজন গার্ড নিয়ে নিল এবার সঙ্গে।
আমি মেঘের জন্য ঠিকমত কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। পাশ থেকে মাহিন হতভম্ভ হয়ে বলল, “ও মাই গড! আমি স্বপ্ন দেখছি? না সত্যি না এটা?”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। মাহিন শক্ত করে আমার হাত খাঁমচে ধরল উত্তেজনায়, ওর দেখানো দিকে তাকালাম।
মেঘের কুয়াশা সামনে থেকে সরে যেতেই দেখলাম আমরা একে বারে পাহাড়ের কিনারে দাড়িয়ে আছি। নিচে অনেক গভীর খাদ। আমাদের পাহড়ের গায়ে গা লাগানো আরো বিশ পঁচিশটা পাহাড়। বিশাল একটা বৃত্ত তৈরী করেছে পাহাড় গুলো, ব্যাস আনুমানিক দুই মাইল হবে! বিশাল এই সার্কেল ভ্যালির মাঝখানটা ঠিক কুয়ার মত গভীর। আর পাহাড় গুলো সেই কুয়ার বৃত্তাকার দেয়াল! ভয়াবহ ঘন জংঙ্গল, তার মাঝ দিয়েও দেখা যাচ্ছে গভীর খাদের মাঝামাঝি ছোট ছোট অনেক পাহাড়। সেই পাহাড় গুলো লেগে আছে বড় বড় পাহাড় গুলোর গায়ে। এবং ভেঙ্গে আলাদা হয়ে আছে কয়েকটা পাহাড়ের ঢাল। নিচে টল টলে পানির লেক। সেই লেকে প্রতিবিম্ব করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক ক্যাথেড্রালের সামনের অংশ! এবং সেটার অর্ধেক পানির নিচে ডুবে আছে, বাকি অংশ পাহাড়ের ভেতর। এই বৃত্তাকার সার্কেল ভ্যালির পাহাড়ের পেটের ভেতর বাকি অংশ ঢুকে আছে। হাজার হাজার লতা পাতা আর আগাছা দিয়ে ক্যাথেড্রালের বেরিয়ে থাকা মুখটা বন্ধ হয়ে আছে প্রায়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্যাথেড্রালটা পিসারের হেলানো মিনারের মত বাম দিকে অনেকখানি হেলে আছে। কোনো বিশাল ভূমিকম্পে এই পাহাড় ধ্বসে পরেছিল ক্যাথেড্রালের ওপর, একপাশে হেলে গিয়ে মাটির নিচে দেবে গেছে। যুগে যুগে পাহাড় গুলো গিলে নিয়েছে ক্যাথেড্রালটাকে। আর পানি জমে তৈরি হয়েছে লেক। লেকের পানি ফুঁড়ে যিশু খ্রিষ্টের একটা মূর্তি উঠে দাঁড়িয়ে আছে। এত ওপর থেকেও মূর্তিটা দেখে অনুমান করা যাচ্ছে ক্যাথেড্রালের চত্বরে বানানো হয়েছিল খ্রিষ্টের দু হাত মেলা ক্রুশ বিদ্ধ এই মূর্তি! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
মাহিন কেবল অস্ফূট একটা শব্দ করল। অনুভর করলাম আমার বাহুতে ওর নখের চাপ আরো বেড়েছে....... পাহাড়ের গায়ে মাটি কেটে সিঁড়ির মত ছোট ছোট ধাপ তৈরি করা হয়েছে। সবার আগে নামতে লাগল একজন গার্ড। তার পেছনে রাকিব, আমি, মাহিন, ইভা আর সব শেষে আরেকজন গার্ড। সিঁড়ির পাশেই রেলিং এর মত বাঁশের খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে দিয়েছে। নামার সময় দড়ি ধরে নামছি। যাতে পা হড়কে গেলেও দড়ি ধরে পতন ঠেকানো যায়। গত রাতের বৃষ্টির কারণে মাটির সিঁড়ি গুলো কাঁদা কাঁদা – পিচ্ছিল হয়ে আছে। মাহিনকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি কেবল। এক হাতে ওকে ধরে রেখেছি।
খুব ধীরে ধীরে নামছি আমরা। রাস্তা কিংবা সিঁড়ি যাই বলা হোক না কেন সেটা কখনো খাঁড়া ভাবে নেমে যাচ্ছে, কখনো আঁকা বাঁকা ভাবে এদিক সেদিক হয়ে চলে গেছে পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে। তারওপর দুপাশের ঝোপ ঝার আছে। সেগুলোর ডাল পালার আচোঁড় লেগে এর মধ্যেই দু তিন জায়গায় হাত ছড়ে গেছে আমার। বাকিদের খবর জানি না।
আমরা যতই নামছি, ততই ক্যাথেড্রালের অবয়ব আর লেকের মূর্তিটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। খ্রিষ্টের মূর্তিটার গায়েও যে প্রচুর লতা পাতা জন্মেছে বোঝা যাচ্ছে এখন। প্রায় কালো হয়ে এসেছে মূর্তিটা। যত নামছি ততই বিশাল হচ্ছে ক্রুশ বিদ্ধ যিশুর মূর্তি। রীতিমত দানবীয় আকৃতি! ক্যাথেড্রালটাও যে বিশাল একটা প্রাসাদের মত বড় সেটা এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আমার ঘড়ির হিসাবে প্রায় চল্লিশ মিনিট লাগল নিচে লেকের পাড়ে পৌছাতে। সেখানেই আরো একটা ক্যাম্প। তাবু, অস্ত্র আর গার্ড দিয়ে ভরা। ক্যাম্পটা লেকের ঠিক অন্য পাশে, ক্যাথেড্রালের মুখোমুখি। মাঝখানে খ্রিষ্টের মূর্তি লেকের পানির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ক্যাম্পের কাছে আসতেই দেখলাম বাহিরে আগুণ জ্বালিয়ে খাবার রান্না করছে গার্ড গুলো। কয়েকজন পুলিশকেও দেখলাম। বয়ষ্ক কয়েকজন ভারিক্কি চেহারার লোকও রয়েছে, স্যুট টাই পরা। বোঝাই যাচ্ছে বড় কোনো আর্কিওলোজিষ্ট এঁরা। কয়েকজন লোক ক্যামেরা আর স্ট্যান্ড নিয়ে ছোটা ছুটি করছে। রীতিমত হূলস্থূল কারবার।
আমি রাকিবের দিকে তাকালাম শূণ্য দৃষ্টিতে, “তুই না বললি মিডিয়া নট এলাউড? এত ক্যামেরা কেন?”
হাসতে লাগল রাকিব, “এরা মিডিয়ার লোক না। এখানে যেসব আর্কিওলোজিষ্ট কাজ করছেন- তাদের লোক। সার্ভে করার জন্য ক্যামেরা লাগে।”
আমি মাহিনের দিকে ফিরলাম। এক কোনায় দাঁড়িয়ে নিজের দু হাত টিপছে। আমার দিকে বিষ দৃষ্টিতে তাকালো, “কলম্বাসে আব্বা, তুমি আমার দু হাতের হাড় মাংস এক করে ফেলেছো!” দেখলাম দু হাতে লাল হয়ে বসে আছে আমার হাতের ছাপ! বেশ জোরেই ধরেছিলাম মনে হচ্ছে। কাঁচুমাঁচু মুখে বললাম, “ইচ্ছা করে করি নাই মাহি। ভয় পাচ্ছিলাম পরে টরে যাও যদি। তাই শক্ত করে ধরেছিলাম।” আড় চোখে দেখলাম একপাশে ইভা মিটিমিটি হাসছে আমাদের কথা শুনে।
রাকিব আমার কাঁধে চাপড় দিয়ে বলল, “আয় পরিচয় করিয়ে দেই এখানকার আর্কিওলোজিষ্টদের সাথে।” মাহিনের দিকেও তাকাল। এগিয়ে এলো মাহিন।
পুলিশদের সাথে কথা বলছিল দুজন বয়ষ্ক গম্ভীর মুখো ভদ্রলোক। রাকিব তাঁদের কাছে নিয়ে গেল আমাদের। সামান্য কেঁশে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করল, “স্যার?”
ফিরে তাকালেন দুজন। এক জনের মুখে সাদা ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, মাথায় টাক। হাল্কা পাতলা চেহারা। অন্যজন মোটা সোটা গোঁফওয়ালা। চোখে ভারী লেন্সের চশমা। তুলনা মূলক ভাবে বয়ষ্ক।
ফ্রেঞ্চ কাট ভদ্রলোক বললেন, আরে রাকিব সাহেব। কখন এলেন?” কেমন একটা দেঁতো হাসি দিলেন।
“মাত্র এলাম। আমার দুজন বন্ধুকেও এনেছি সঙ্গে।” আমাদের দেখাল।
একটা ভ্রূঁ উঁচু হয়ে গেল ফ্রেঞ্চ কাট ভদ্রলোকের, সন্দিহান গলায় বললেন, “মিডিয়া?”
“ না স্যার। এরা মিডিয়ার কেউ না। এ হল আমার বন্ধু মেজর শাহরিয়ার রবি আর ওর ওয়াইফ মাহিন আহমেদ। মাহিন আর্কিওলোজিতে পড়াশোনা করেছে।”
মাহিনের পেটের দিকে আড় চোখে তাকালেন ফ্রেঞ্চ কাট, ভদ্রলোকের ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল, “আর্কিওলোজির ছাত্রী? ভাল ভাল। তা এ অবস্থায় চলা ফেরা করাটা আসলে ঠিক না। তাছাড়া এখানে অনেক বড় সড় ব্যপার ঘটেছে। দুনিয়া খবর পেলে রীতিমত হৈ চৈ শুরু হবে, সারা পৃথিবী হামলে পরবে এখানে। কোটি কোতি টাকার জিনিষ পত্র! মাটি খুঁড়লেই টাকা!”
মাহিনকে দেখলাম মিইয়ে গেছে। মুখ কালো করে ফেলেছে।
রাকিব ভদ্রতার হাসি হেসে বলল, “পরিচয় করিয়ে দেই, ইনি ড. আবু তালেব। বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ আর উনি প্রোফেসর নারায়ণ গাঙ্গুলি। পেশায় প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং শিক্ষক।” ফ্রেঞ্চ কাটের নাম তাহলে আবু তালেব। মোটা লোকটাই প্রোফেসব নারায়ণ গাঙ্গুলি। আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম হ্যান্ডশেকের জন্য, “হ্যালো স্যার। নাইস টু মিট ইউ।”
ড. আবু তালেব তার সেই তাচ্ছিল্য মার্কা হাসিটা দিয়ে আমার হাতটা ধরলেন। কিন্তু হাত ধরেই বুঝলেন ধরা ঠিক হয়নি। আমি হাসি মুখে হাতটা চাপ দিয়ে ঝাঁকিয়ে দিতেই ওনার তাচ্ছিল্য মার্কা হাসিটা উবে গেল। আগামী কয়েক ঘন্টা গ্লাস ধরে পানি খেতে গেলে আমার কথা মনে পরবে তার।
দ্বিতীয় জনের সঙ্গে হাল্কা ভাবেই হাত মেলালাম। মাহিন কেবল মুখে সালাম দিল দু জনকে। মুখ কালো করে রেখেছে সে। বোধ হয় ড. আবু তালেবের কথা গুলো ভাল লাগেনি। তবে প্রোফেসর নারায়ণ গাঙ্গুলি খুব ভাল ব্যবহার করলেন, “তুমিও আর্কিওলোজিতে পড়েছো? কোথায় পড়তে?”
“বেথুনে।”
“ও! খুবভাল খুব ভাল। তুমি আসায় খুব লাভ হল মা, এই বুড়ো বয়সে চোখে কম দেখি। সাথে ছোট কেউ থাকলে কাজে সুবিধা হবে।” মাথা নাড়াতে নাড়াতে আপন মনে অন্য দিকে চলে গেলেন প্রোফেসর নারায়ণ।
রাকিব ইঙ্গিতে চোখ টিপে বুঝিয়ে দিল নারায়ণ গাঙ্গুলি আত্নভোলা গোছের লোক। আমার বেশ ভাল লাগল তাঁকে। মাহিনকেও দেখলাম ওর মুখে হাসি ফুটেছে।
ড. আবু তালেব গলা খাকারি দিয়ে নিজের দিকে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলেন, “কোটি কোটি টাকার ব্যাপার বুঝলে? সো ডোন্ট ট্রাই টু ডিসক্লোজ দ্য সিক্রেট অব দিস ক্যাথেড্রাল। বড় লোক হয়ে যাবে এসব বেঁচলে।”
আমি গাল চুলকালাম, “বেঁচলে দেশ বড় লোক হবে। খারাপ না। ভালই তো।”
ড. আবু তালেব চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন আমার দিকে এক মুহূর্তের জন্য। বোধ হয় আমার কথাটা পছন্দ হয়নি তার। রাকিবের দিকে তাকিয়ে কর্তৃত্ব ভরা গলায় বললেন, “এদেরকে সব ঘুরিয়ে দেখিয়েছো? ঘুরিয়ে দেখাও। কিন্তু কিছুতে হাত দিও না। নষ্ট হয়ে গেলে সমস্যা। কবে কার জিনিষ ঠিক নেই। সাবধান থাকবে তাই।” বলে ব্যস্ত ভঙ্গিতে অন্যদিকে চলে গেলেন।
আমি বিরক্ত মুখে তাকালাম রাকিবের দিকে, “এই চোরটাকে কোত্থেকে ধিরে আনলি? কথা শুনেই তো মনে হচ্ছে সব খালি করে দেয়ার তালে আছে!”
হেসে ফেলল রাকিব, “আমার দোষ নাই। ওপর থেকে কড়া আদেশ ড. আবু তালেব এখানে কাজ করবেন তার টিম নিয়ে। কেউ যেন তার ওপর খবরদারি না করে। শুনেছি ওপর মহলে বেশ ভাল যোগাযোগ আছে ড. তালেবের।”
মাহিন শুকনো মুখে বলল, “আর প্রোফেসর নারায়ণ? তিনিও ওনার দলে?”
“আরে নাহ। নারায়ণ স্যারকে ড. তালেব নিজেই ডেকে এনেছেন। কারণ নারায়ণ স্যার ওনার থেকেও বড় আর্কিওলোজিষ্ট। নিজের কাজের স্বার্থে ডেকে এনেছেন।”
“তাই নাকি।” নাকের ডগা চুলকালাম, “ডেখে বেশ ভালই মনে হল ভদ্রলোককে। আত্নভোলা।”
কাষ্ট হাসি হাসল রাকিব, “আত্নভোলা এবং ভয়াবহ রাগী মানুষ। পান থেকে চুন খসলেই ক্ষেপে যান।”
“ওরে বাবা! তাই নাকি! দেখে তো একবারও মনে হল না।।” অবাক হলাম।
“হুম। খুব রাগী। একটু উল্টা পাল্টা কাজ করলেই ধমক মারেন যার তার সামনে। তবে মানুষ হিসেবে খুবই ভাল।” রাকিব আরেকটা সিগারেট ধরালো, “নৌকা ঠিক করা আছে। উঠে যা। লেকটা ঘুরিয়ে ক্যাথেড্রালে নিয়ে যাবে মাঝি। তোরা যা।”
“তুই?”
“আমি সিগারেটটা শেষ করে কিছু কাগজ পত্র দেখে আসছি। তোরা খ্যাথেড্রালের মুখে অপেক্ষা করিস। আমি টর্চ আর হ্যালমেট নিয়ে আসবো।”
লেকের ঘাটে তিনটা নৌকা বাঁধা ছিল। একটায় আমি, মাহিন আর ইভা উঠলাম। খাকি পোশাক পরা গার্ড একজন দাড় বাইতে লাগল। লেকের পানি স্বচ্ছ, পরিষ্কার। নিচের সব দেখা যায়। নানান জাতের মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে নিচে। অনেক গভীর। তবুও বোঝা যাচ্ছে নিচে অনেক মূর্তি রয়েছে। বেশির ভাগই মাটি চাপা পড়ে আছে। কোনোটার হাত বেরিয়ে আছে, কোনোটার মাথা। দেখে বোঝা যাচ্ছে নিচের মূর্তি গুলো যিশুর মূর্তিটার মত এত বড় না, দশ বারো ফুট করে হবে উচ্চতা। পানির ওপর দিকে ছুই ছুই করেছে সেগুলোর মাথা। তবে পানির ওপরে কেবল যিশুর মূর্তিটাই বেরিয়ে রয়েছে। বাকি মূর্তি গুলো পানির খুব কাছাকাছি উঠে রয়েছে। মাঝে মাঝে নৌকার তলা লেগে যেতে চায় সেগুলোর গায়ে! মাছ গুলো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে সেই মূর্তি গুলোর ফাঁক দিয়ে দৌড়াচ্ছে! অদ্ভূত দৃশ্য!
নোউকা ছাড়াও লেকের পাশ দিয়ে হেটে ক্যাথেড্রালে পৌছানো যেত। কিন্তু অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ লেকের পরিধি প্রায় বারো তের কিলোমিটারের কম না। ঘুরে গেলে অন্তত ছয়- সাত কিলোমিটার পথ। তাই নৌকায় করে যাচ্ছি। যিশুর বিশাল মূর্তিটার কাছাকাছি আসার পর হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ব্রাজিলের জেজাস ক্রাইষ্টের সেই মূর্তির চেয়ে কোনো অংশে কম নয় এটা। লতা পাতা ঝুলছে ছড়ানো দুই হাত থেকে। সারা শরীরে কালো শ্যাওলা আর শামুকের ভীড়। ফার্ণ আর লতা দিয়ে শরীরটা প্রায় ঢেকে আছে। প্রকৃত রঙ বোঝার উপায় নেই।
ইভা ওর ক্যেমেরা দিয়ে একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছে। আমি আর মাহিন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছি।
মূর্তিটার পাশ কাটিয়ে ক্যাথেড্রালের মূল চত্বরের দিকে এগোতে লাগলাম। পানির নিচ দিয়ে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিশাল বিশাল সিঁড়ির একেকটা ধাপ। যেগুলো উঠে গেছে ক্যাথেড্রালের মূল ফটকের দিকে। আমাদের নৌকাটা থামল। ক্যাথেড্রালটা সত্যি সত্যি বাম দিকে হেলে আছে প্রায় বিশ পঁচিশ ডিগ্রীর মত। মানে স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বিশ পঁচিশ ডিগ্রী বামে হেলে রয়েছে। মাহিন নৌকা থেকে পানিতে নামল। অবাক হয়ে বলল, “ভ্যাটিকেনের ক্যাথেড্রাল! কোনো পার্থক্যই নেই! কেবল এটা আরেকটু বড়!” ওর কন্ঠই বলে দিল ভীষণ অবাক হয়েছে সে।
আমিও ওর পাশে নামলাম। পাহাড়ের ভেতর থেকে মুখ বের করে রেখেছে লতা পাতায় ঢাকা বিশাল প্রাসাদ। ছবিতে দেখা ভ্যাটিকেনের রোমান ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গে কোনো পার্থক্যই নেই! একই রকম বিশাল বড় বড় পিলারের ওপর ছাদটা দাঁড়িয়ে আছে! ওপর থেকে মোটা মোটা শেকড় আর লতা ঝুলছে।
মাহিন ফিসফিস করে বলল, “যে বানিয়েছে এটা- মানতেই হবে অসাধারণ শিল্পী ছিল! তিন শতাব্দী পরও টিকে আছে পাহাড়ের ভেতর!” (চলবে) লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব।
From: Textile Engineering College, Chittagong
ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

।। ক্যাথেড্রাল - তৃতীয় পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Wednesday, November 9, 2011 at 10:51pm মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব

পানি থেকে ফটকের চৌকাঠের মত জায়গাটায় উঠে এলাম আমরা। এখানে ইলেক্ট্রিক তার আর হলুদ বাল্ভ দেখা যাচ্ছে দেয়ালে। বোধ হয় জেনারেটর থেকে লাইন দেয়া। সার্ভে টিমের লোকেরাই বসিয়েছে। গার্ড লোকটা আমাদের পৌছে দিয়ে চলে গেল নৌকা নিয়ে। একবার ভাবলাম লোকটাকে থাকতে বলি। পরে আর বললাম না। দিনের বেলা কয়েক মিনিটে কি হবে এখানে? তাছাড়া রাকিব তো আসছেইএকটু পর। মাহিন ইভাকে নিয়ে হাটতে লাগল। ইভা আগেও এসেছে, তাই চিনবে ভাল। আমি দাঁড়িয়ে না থেকে ওদের পেছন পেছন হাটতে লাগলাম। দিনের আলোতেও ক্যাথেড্রালের সব জায়গা আবছা অন্ধকার। চারপাশে তীব্র শ্যাওলা আর শামুক পঁচা গন্ধ। গন্ধটা সহ্য করা যাচ্ছে না। মাহিন আর ইভা রুমাল বের করে নাকে দিল। আমি শ্যাওলা বাঁচিয়ে সাবধানে হাটছি। ফ্লোর অস্বাভাবিক পিচ্ছিল হয়ে আছে পানি আর শ্যাওলা মিলে।
মাহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ করিডোর ধরে ডানে হেটে গেলে মূল প্রার্থনা কক্ষ। সোজা গেলে দরবার হলটা পাওয়া যাওয়ার কথা।”
চারপাশে মাটি আর মাটি। দেয়াল গুলো সব ঢেকে আছে মাটি দিয়ে। সার্ভের লোকজন শাবুল দিয়ে খুঁড়ে মাটি সরিয়ে অনেকটা পরিষ্কার করেছে। দেয়ালের কারুকার্য চোখে পরছে আবছা ভাবে।
আমি মাহিনের পেছন পেছন হাটতে লাগলাম। রাকিবের কথা মত ভেতরের ছাদ জুড়ে এঞ্জেলোর Sistine chapel celling থাকার কথা। মাহিন সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে বোধ হয়। কারণ করিডোরের এখান সেখান থেকে বেরিয়ে থাকা জঙ্গলের মাঝ দিয়ে আমাদেরকে নিয়ে এলো বিরাট একটা দরজার কাছে। ফেলে আসা করিডোরটার দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে সুড়ঙ্গ! পাহাড়ের ভেতর কেটে কেটে করিডোরটা বের করেছে সার্ভের লোকেরা। কিন্তু সুড়ঙ্গের মত হয়ে আছে। আলো বাতাস আসার জায়গা নেই। ইভা বড় একটা টর্চ নিয়ে এসেছে।ওটা জ্বালালো। সামনে দরজার ওপাশে ঘুট ঘুটে অন্ধকার।
টর্চ হাতে নিয়ে ইভা আমাদের দিকে তাকাল, “দরবার কক্ষ এটাই সম্ভবত। এসো।” পথ দেখালো। আমরা দুজন ওর পেছন পেছন ঢুকলাম।
ভেতরে ভ্যাপসা একটা গন্ধ। তবে টর্চের আলোয় বোঝা গেল বাহিরের মত বেহাল দশা ভেতরের নয়। ভেতরটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নই রয়েছে। মাটি ঢোকেনি। তবে আগাছা ঠিকই রয়েছে চিপায় চাপায়।
ঘুট ঘুটে অন্ধকার হল রূম। ইভার টর্চের আলোই যা কিছু সম্বল। মাহিন ওর হাত থেকে টর্চটা নিয়ে চারপাশে ঘোরাতেই অস্ফূট একটা চিৎকার দিল। আমি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বলা যেতে পারে মাহিন আর আমি দুজনেই জমে গেলাম।
আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষের মূর্তি। শুধু মানুষ না, ঘোড়া, বাঘ, সিংহ, হাতি- নানান ধরণের মূর্তি। সব গুলো এতই বেশি জীবন্ত যে মনে হচ্ছে এখনই চলা শুরু করবে! কম হলেও শ’খানেক মূর্তি! ময়লা আর শ্যাওলা ধরে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। অবাক করার মত ব্যপার হল প্রতিটা মূর্তির চোখ গুলো দামি কোনো পাথর দিয়ে বানানো। আলো পরার সঙ্গে সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে। মূর্তি গুলো আমাদের আকৃতির-ই। বাহিরের গুলোর মত দানবীয় নয়।
মাহিন ফিসফিস করে বলল, “মূল ভ্যাটিকেন প্রাসাদে এসব মূর্তি নেই রবি! এগুলো বানিয়েছে কে?”
আমি অর হাত থেকে টর্চটা নিয়ে ওপরে ছাদের দিকে তাক করলাম। স্তম্ভিত হতে হল দ্বিতীয় বারের মত। আমি ভ্যাটিকেন প্রাসাদে যাইনি। বইয়ে দেখেছি। ভেতরের ছাদটা ছাতার মত অনেকটা। সেখানে ভাগ ভাগ করে উজ্জ্বল রঙ দিয়ে তিনশো’র বেশি ছবি এঁকেছিলেন মাইকেল এঞ্জেলো। বাইবেলের ঘটনা নিয়ে।
আমাদের মাথার ওপরের ছাদেও অবিকল একই দৃশ্য! মলিন হয়ে এসেছে সব চিত্র লিপি- তবুও টর্চের আলোয় বোঝা যাচ্ছে ছবি গুলো।
মাহিন শব্দ করে ঢোক গিলল, “মনে হচ্ছে আমি ভ্যাটিকেনে দাঁড়িয়ে আছি! এত নিখুঁত করে কে তৈরি করেছে এই ক্যাথেড্রাল? ছবি গুলো রবি আমাকে ধরো। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে আমার।”
আমি ধরে ফেললাম মাহিনকে। মাহিন মোহ গ্রস্থের মত আমার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই যেন বিড়বিড় করে বলল, “কে বানিয়েছে জানি না, কিন্তু এটা ঠিক- পৃথিবী খুব বড় মাপের কোনো শিল্পীকে হারিয়েছে সময়ের স্রোতে। কেউ তার সৃষ্টি কর্ম গুলো দেখতে পায়নি......”
আমি শংকিত গলায় বললাম, “মাহি তুমি ঠিক আছো তো? খারাপ লাগছে?”
হাসল মাহিন, “নাহ। একটু বেশি শকড হয়েছি এসব দেখে। তাই মাথা ঘোরাচ্ছে। একটু বসে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে আমার ডায়েরিটা আর কলম দাও। লেখবো।”
আমি তাড়াতাড়ি ওকে মেঝেতে বসিয়ে ওর ব্যাগ থেকে ডায়েরি আর কলম বের করে দিলাম। টর্চের আলোয় নোট নেয়া শুরু করল মাহিন। ইভাকে বলল সব মূর্তি গুলোর আলাদা আলাদা ভাবে ছবি তুলতে। ইভা ছবি তোলা শুরু করল। আর আমাকে ছোট একটা তর্চ ধরিয়ে দিল মাহিন, সঙ্গে এনেছিল মনে হয়, “তুমি পুরো হল রুমের একটা ম্যাপ আঁকো। কোথায় কোনো মূর্তি আছে লিখে দাও একটা কাগজে।”
আমি একটা প্যাড আর পেন্সিল নিয়ে শুরু করে দিলাম কাজ। গুণতে গিয়ে দেখলাম মোট একশো পঁচিশটা মূর্তি এখানে। কোনটা কিসের মূর্তি সেটা ম্যাপে দেখাতে লাগলাম। সব মূর্তি গুলোর নাম আর ছোট বর্ণনা দিতে পারলেও পাঁচটা মূর্তির নাম দিতে পারলাম না। দেখে মনে হচ্ছে অন্য কোনো আমলের রাজা-সম্রাট হবে।
মাহিনকে ডাকলাম, “মাহি, এখানে পাঁচটা মূর্তি বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোনো রাজা বাদশার মূর্তি।”
মাহিন অন্য দিকে ছিল। আমার কথা শুনে এগিয়ে এলো অনেক গুলো মূর্তি পেরিয়ে, “কৈ দেখি? কোন মূর্তি?”
আমার দিকে কৌতুহলি মুখে তাকাল। আমি টর্চের আলো দিয়ে দেখালাম- পাশাপাশি পাঁচটা মূর্তি দাঁড়ানো। সামনের জন অস্বাভাবিক বেটে। মাথায় একটা পাদ্রীদের টুপি। গায়ের পোশাকও পাদ্রীদের মত। হাতে একটা লাঠি। চেহারাতেই স্পষ্ট- বামন।
বাকি চারজন চার ধরণের পোশাক পরা। মাহিন এক পলক দেখেই বলে উঠল, “এরা তো ইতিহাসের চার বিখ্যাত রাজা! কিং ডেভিড, আলেকজান্ডার দি গ্রেট, চার্লস দি গ্রেট, জুলিয়াস সিজার! কিং ডেভিড হল ইসরায়েলের রাজা! খ্রিষ্ট পূর্ব ১০১০ থেকে ৯৭০ পর্যন্ত শাসন করেছেন। বেথেলহেম থেকে তার জীবনের শুরু। মেষপালক থেকে সম্রাট হন পরে। আর আলেকজান্ডারের কথা বাদ-ই দিলাম। সবাই চেনে। চার্লস দি গ্রেট রোমান সম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন। ৭৪২ থেকে ৮১৪ পর্যন্ত জীবন কাল তাঁর। অনেক প্রতাপশালী রোমান সম্রাট ছিলেন। জুলিয়াস সিজারকে তো প্রায় সবাই চেনে।”
আমি হা হয়ে গেলাম, “তুমি কি সব মুখস্ত করে রাখো?”
“পড়তে পড়তে মুখস্ত হয়ে গেছে।” হাসল মাহিন।
বেটে বামন পাদ্রীটাকে দেখালাম, “এটা কে?”
“নাহ। একে তো চিনলাম না।” এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলল মাহিন।
আমি টর্চের আলো ফেললাম ওটার মুখে। শ্যাওলায় ঢেকে আছে ওপরটা। কেবল হীরের মত জ্বলজ্বল করছে চোখের নীলচে মণি দুটা। দামি কোনো রত্ন হবে। কেমন অদ্ভুত একটা হাসি ফুটে আছে মূর্তিটার ঠোঁটের কোনায়। মনে হচ্ছে জীবন্ত! লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ভাবটা দেখে মনে হচ্ছে পেছনের চার সম্রাটের বাদশা সে!
মাহিন ছুয়ে দেখল মূর্তিটা। মন্তব্য করল, “পাথরের। পাথর কেটে বানিয়েছে।” বিচিত্র একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওটার দিকে।
বাহিরে করিডোরে পদশব্দ আর রাকিবের গলা শোনা গেল, “রবি? মাহিন? ইভা? কোথায় তোরা?”
ইভা গলা চড়িয়ে ডাকল, “এইখানে বাবা! হল রূমে!”
বেশ কয়েকটা টর্চের আলো দেখা গেল দরজার কাছে।
“বাহ! আগে আগেই চলে এসেছে! কিছু ধরোনি তো?” মুখ দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু গলা শুনেই বোঝা গেল ড. আবু তালেব।
তেঁতো হয়ে গেল মনটা। এরকম লোকের সঙ্গে আর্মিতে বহু ঘুরেছি। পন্ডিত স্বভাবের এসব ছাগলকে সহ্য করা আমার পক্ষে কঠিনতর কাজ!
শুনতে পেলাম প্রোফেসর নারায়ণ গম্ভীর গলায় বলছেন, “ধরতে না দিলে বুঝবে কেমন করে কেমন জিনিস? নবিশের মর যত সাওব কথা বার্তা!” মাথায় টর্চ লাগানো হ্যালমেট নিয়ে হল রূমে ঢুকলেন।
মাহিন হাসি চাপল মুখে হাত দিয়ে। রাকিবের কথা দেখছি ঠিক। নারায়ণ গাঙ্গুলিও কম বদ মেজেজী না। তবে সেটা ভালোর দিকে। ড. আবু তালেবের মত খারাপ দিকের না। যদিও ড. তলেবকে দেখে মনে হল না প্রোফেসরের কথা গায়ে মেখেছেন। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে এদিক ওদিক টর্চ মেরে দেখে নিচ্ছেন যেন মূর্তি গুলোকে কিছু করেছি নাকি আমরা।
মাহিন গলা উঁচিয়ে প্রোফেসর নারায়ণকে জিজ্ঞেস করল, “স্যার, এই বামন মূর্তিটা কার বলতে পারবেন? বাকি চারটা তো চার রাজার তাই না?”
“খাসা বলেছো! বুদ্ধি আছে দেখি মেয়ের।” খুশি হলেন তিনি। এগিয়ে এলেন, “বেটে পাদ্রীকে আমিও চিনি না। অনেক ঘেটেছি। পাইনি। মনে হয় কারিগর নিজের আদলে বানিয়েছিলেন, কিংবা শখের বশে এমনি বানিয়েছেন একটা বামনকে।”
মাহিন বিড়বিড় করল, “কারিগর নিজেই না তো?”
“হতে পারে বললামই তো।” মাথা চুলকাতে দিয়ে প্রোফেসর সাহেব আবিষ্কার করলেন সেখানে হ্যালমেট, “চল, ভেতরে গিয়ে দেখি। অনেক কিছু দেখার আছে।” আগে আগে হাটতে লাগলেন। আমরা ওনার পেছন পেছন হাটতে লাগলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ড. আবু তালেব টর্চ আর ছোত স্ক্রু ড্রাইভার হাতে একটা ঘোড়ার চোখের পাথরটা ওঠানোর চেষ্টা করছেন। আমি কাঁশি দিতেই তাড়াতাড়ি স্ক্রু ড্রাইভার পকেটে ঢুকিয়ে আমাদের সঙ্গে হাটতে লাগলেন। রাকিবও দেখেছে ব্যপারটা। টর্চের আলোয় ভাল করে মুখ দেখা যাচ্ছে না কারোই, তবে বোঝা গেল গম্ভীর হয়ে গেছে ওর মুখ। আমি গলা খাদে নামিয়ে ওকে বললাম, “তোর তালেব ভাই তো দেখি সিঁদেল চোরের গুষ্টির! রাতে এখানে লোক না লাগিয়ে তালেবের তাবুতে পাহারা লাগাস। হাত টানের অভ্যাস আছে দেখি ব্যাটার!”
রাকিব ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল, “সেটাই করতে হবে দেখছিঃ। ঘরের ইঁদুরই যখন বেড়া কাটবে- তাহলে আর এত পাহারা বসিয়ে লাভ কি?”
আমি গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ালাম। আমরা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মত কিছু একটা দিয়ে হাটছি। মাথার ওপর ছাদ নেমে এসেছে। কোথাও কোথাও এতই নিচে নেমে এসেছে যে ঝুঁকে হাটতে হয়। দেয়াল থেকে নানা রকম লতা পাতা ঝুলছে। চারপাশের মাটিতে আঁশটে কেমন একটা গন্ধ। কয়েক জায়গায় সুড়ঙ্গের মেঝেতে পানি জমে রয়েছে। হাটার সময় ছপ ছপ শব্দ করছে। কেউ কথা বললেই সুড়ুঙ্গের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। সামনের দিক থেকে এক নাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছেন প্রোফেসর নারায়ণ গাঙ্গুলি, “আমি প্রথমে নিজেই অবাক হিয়ে গিয়েছিলাম। অবিকল একই রকম করে এখানে কে ভ্যাটিকেনের ক্যাথেড্রাল বানালো? পরে খোঁড়া খুঁড়ি করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম হুবহু ভ্যাটিকেন প্রাসাদের আদলে বানানো হয়নি। কয়েকটা কক্ষ অতিরিক্ত রয়েছে মাটির নিচে। পানি জমে ছিল। পাম্প বসিয়ে পানি সেঁচে পরিষ্কার করেছি। নিচে বিশাল একটা সমাধী কক্ষ আছে, যেটা মূল ভ্যাটিকেনে নেই।”
মাহিন বলল, “আমরা কি এখন সেখানে যাচ্ছি স্যার?”
“হ্যা। দেখলে বুঝবে কি হূল স্থূল কারবার করে গেছে এই ক্যাথেড্রালের কারিগররা।”
অনুভব করলাম সুড়ঙ্গটা ক্রমশ নিচু হচ্ছে। নেমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পাহাড়ের আরো গভীরে প্রবেশ ক্রেছে। রাকিবের দিকে তাকালাম, অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না, “এত যে ভেতরে যাচ্ছি বাতাসে অক্সিজেন আছে তো? নাকি শ্বাস বন্ধ হয়ে মরতে হবে?”
“আরে নাহ। ভেতরে বাতাস আছে ঠিকই। জেনারেটরের লাইন দেয়া আছে। কোনো আগুণ জ্বালানো হয়নি। বাতাস খারাপ না। তাছাড়া ভেতরে সিগারেট টানাও নিষেধ। নারায়ণ গাঙ্গুলি নিজেই তাঁর চুরুটের প্যাকেট লেকের পানিতে ফেলে দিয়েছেন, নয়ত ভূলে যদি ভেতরে এসে ধরিয়ে বসেন।”
আমি দুবার পা পিছলাতে গিয়েও সামলে নিলাম। মাহিনকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি। পা পিছলালে আর দেখতে হবে না!
আমাকে বেশিক্ষণ ভয় পেতে হল না। সুড়ঙ্গের অন্য মাথায় একটা উঁচু মঞ্চের মত চত্বরে বেরিয়ে এলাম। পাথরের মঞ্চ। রাকিব কোথাও সুইচ টিপে দিতেই ম্লান হলুদ বাল্ভ জ্বলে উঠল পুরো রূমটা জুড়ে।
অবাক হয়ে তাকালাম আমি। বিরাট কোনো সমাধী কক্ষে দাঁড়িয়ে আছি আমরা! লম্বা লম্বি ভাবে প্রায় কোয়ার্টার মাইল। প্রস্থেও অনেক বড়। বড় বড় থামের ওপর নিচু ছাদটা ঝুঁকে আছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে সিঁড়ি ধাপে ধাপে নেমে গেছে নিচের সমাধী গুলোর দিকে। নিচে হাটু পানি জমে আছে। হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় কোয়ার্টার মাইল লম্বা একটা সুইমিং পুল! কিংবা বড় কোনো দীঘি! তার মাঝ দিয়ে পানি টেনে তোলা হয়েছে। পুরো রূমটার দেয়ালে তার দিয়ে হলুদ বাল্ভ ঝুলিয়ে দিয়েছে সার্ভের লোকজন। ম্লান আলোতে সব কিছু অদ্ভূত লাগছে। মনে হচ্ছে পরাবাস্তব জগতের কোনো দৃশ্য দেখছি! ঘাড়ের কাছে শিরশির করে উঠল। ওপরে তাকালাম। ছাদটা এত নিচু এখানে যে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে পারবো। সিঁড়ি দিয়ে নামলে ছাদের সঙ্গে পার্থক্য বাড়তে থাকে। মাহিন ফিসফিস করে বলল, “ওহ খোদা! এখানে তো কম করে হলেও দুইশো কবর হবে!”
মাথা ঝাঁকালেন প্রোফেসর গাঙ্গুলি, “হ্যা। মোট দুইশো সতেরোটা কবর আছে।”
পেছন থেকে গলা উঁচিয়ে ড. আবু তালেব বললেন, “আমাদের ধারণা এগুলো সেই সব শ্রমিকদের কবর যারা এই ক্যাথেড্রালের নির্মান কাজ করেছে।”
আমি ফিরে তাকালাম, ওনার মুখ দেখে মনে হল না এটা তার ধারণা। নারায়ণ সাহেবের হতে পারে।
“হ্যা। আমার তাই ধারণা, এগুলো লেবারদের কবর হতে পারে। কবরগুলোয় ভারতীয়দের নাম আর জন্ম সাল, মৃত্যু সাল দেয়া আছে। শংকর নারায়ণ, হেমন্ত- এসব নাম।” মাহিনকে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে গেলেন।
নিচে পানি আসলেই অনেক কম। প্রোফেসর সাহেব গাম বুট পরে এসেছেন। পা দিতেই দুই বিঘতের মত পানির নিচে ঢুকল পা। মাহিন কেডস খুলে জিন্সের পা গুটিয়ে নিল। আমিও এগিয়ে গেলাম। কেডস খুলে সিঁড়িতে রেখে ওর হাত ধরে পানিতে নামলাম। বরফের মত ঠান্ডা পানি। পা দেয়ার সাথে সাথে মনে হল পা দুটো জমে গেল! মাহিনের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম, চোখ টিপে নিচু গলায় বললাম, “মাহি জানু, জমে গেলাম তো ঠান্ডায়! কাছে আসো, একটু গরম হয়ে নি!”
চোখ গরম করে তাকাল আমার দিকে ও, “এক দম চুপ। কি সব অসভ্য কথা বার্তা! জায়গা অজায়গা বোঝো না?”
প্রোফেসর সাহেব অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। আমরা তাড়াতাড়ি তাঁর পিছু ধরলাম। ঠান্ডায় এর মাঝেই হি হি করে কাঁপা শুরু করেছি। বাকিরা এলো না। আগেও এসেছে। মাহিন ইভার কাছ থেকে ক্যামেরাটা চেয়ে নিল। ঠান্ডা পানিতে নতুন করে নামার দরকার নেই ইভার।
আমরা একতা প্যাসেজের মত জায়গা দিয়ে হাটছি। দুপাশে সারি সারি কবর। শ্যাওলা ঢেকে কালো হয়ে গেছে কবরগুলো। জায়গায় জায়গায় শামুক বসে আছে।
মাহিনকে সতর্ক করে দিলাম, “সাবধানে হাঁটো। পঁচা শামুকে পা কেটো না আবার।”
মাথা ঝাঁকালো কেবল।
প্রোফেসর হাটতে হাটতে আমাদের একেবারে রূমের শেষ প্রান্তে নিয়ে এলেন। এতক্ষণ আমি করব গুলোর নাম ফলক দেখছিলাম। সব ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের নাম, এমনকি যেখান থেকে এসেছে সেসব জায়গা গুলো আসাম, ত্রিপুরা, বিহার- এসব ভারতীয় অঙ্গ রাজ্য। তবে কোনো বিশেষত্ব নেই।
কিন্তু রূমের শেষ মাথায় পাঁচটা সাওমাধী আলাদা আলাদা ভাবে উঁচুতে বেদীর মত করে তৈরি করা। পানি থেকেও দুহাত উঁচু। ম্লান আলোতেও বোঝা গেল এই পাঁচটা কবরকে ঘষে মেজে সাফ করা হয়েছে।
প্রোফেসর সাহেবের হেলমেটের টর্চের আলো গিয়ে পরল কবর গুলোর ওপর। পাশাপাশি পাঁচটা কবর। মাঝখানের কবরটা অস্বাভাবিক ছোট। দেখেই মনে হল বাচ্চা কারো কবর। নামটার ওপর চোখ পরতেই বিষ্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার আর মাহিনের। খোদাই করে লেখাঃ
“Michelangelo di Lodivico Buonarroti Simoni (||)
Date of Birth: 1758 Nov. Death: 1832 August”
মাহিন বিড়বিড় করে বলল, “লোকটা বামন ছিল!”
মাথা ঝাঁকালেন প্রোফেসর নারায়ণ গাঙ্গুলি, “হ্যা। দুপাশের কবর গুলো দেখো- কিছু বুঝতে পারো?”
ওনার কথা মত দুপাশের চারটা কবরের দিকে তাকালাম। তাসের স্পেড, ক্লাব, হার্ট আর ডায়মন্ড আঁকা চারটা কবরের ওপর আলাদা আলাদা ভাবে! বেশ বড় করে আঁকা।
স্পেড আঁকা কবরটার নাম ফলকে লেখাঃ
“King David- (ll)
1755 – 1820”
স্পেড বা পান পাতা চিহ্নটা পুরো কবর জুড়ে বিশাল করে আঁকা। তার ডানপাশে ক্লাব বা তিন ফোটা পাতার মত চিহ্ন দেয়া কবর। সেটায় লেখাঃ
“Alexander lV of Macedon
1754 – 1821”
সেটার ডান পাশে বামনের কবরটা। তারও ডানে রয়েছে হার্ট আঁকা কবর। লেখা রয়েছেঃ
“Charlemagne – ll (Charles the Great 2)
1750 – 1821”
এবং তার পাশে ডায়মন্ড আঁকা কবর –
“Julius Sizar - (ll)
1759 – 1832”
মাহিন অবাক হয়ে বলল, “সবাই তো ইতিহাস খ্যাত ব্যক্তি। যদিও কারো নামের দ্বিতীয় বলে কেউ নেই! আলেকজান্ডার ফোর বলে কেউ নেই! এদের আগের সিরিয়ালটা পর্যন্ত রয়েছে! এরা কারা?”
“সেটা পরে বের করা যাবে। তার আগে একটা জিনিষ খেয়াল করে দেখো। তাসের চারটা সিম্বল দেয়া কবর গুলোয়।” হাসলেন নারায়ণ গাঙ্গুলি। “কি মনে হয় এটা দেখলে?” চোখে বুদ্ধিদীপ্ত হাসির ঝলক। যেন মাহিনকে ধাঁধাঁয় ফেলে মজা পাচ্ছেন।
মাহিন কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল কবর গুলোর দিকে। মাথা চুলকালো। তারপর দেখলাম ওর মুখ হঠাৎ একশো ওয়াট বাল্ভের মত জ্বলে উঠেছে। উত্তেজিত কন্ঠে বলল, “বুঝেছি স্যার! তাস খেলার চার রাজা ইতিহাসের বিখ্যাত চার জন রাজার পরিচয় বহন করে! স্পেড হল কিং ডেভিড! এখানেও তাই আঁকা! ডেভিডের কবরের ওপর স্পেড বা পানপাতা আঁকা! বাকি গুলোতেও তাই! ক্লাব হল আলেকজান্ডারের প্রতীক, হার্ট হল চার্লস দি গ্রেট আর ডায়মন্ড হল.......”
“জুলিয়াস সিজারের প্রতীক।” শেষ করে দিলেন কথাটা প্রোফেসর সাহেব। মুখের হাসিটা আরো চওড়া হল, “নাহ, তোমার বুদ্ধি আহে বলতেই হবে! আবু তালেবটা তো সাইন বোর্ড নিয়ে ঘরে! মাথায় গোবর পোঁড়া!”
আমি আড় চোখে মঞ্চটার দিকে তাকালাম। শুনতে পেয়েছে কিনা বোঝা গেল না আবু তালেবের মুখ দেখে। এত দূর থেকে শোনার কথা না, কিন্তু বেশি নির্জন জায়গা বলে শুনে থাকতেও পারেন।
মাহিনের এসব খেয়াল নেই, ও উত্তেজিত গলায় বলল, “স্যার, হল রূমের ঐ পাঁচ মূর্তির সাথে এগুলোর কোথাও যোগাযোগ আছে, তাই না? ঐ বামনের মূর্তিটার মতই কিন্তু এই এঞ্জেলোর কবরটা। আর ঐ চার মূর্তির মতই কিন্তু এই বাকি চার কবর। ঠিক না স্যার?”
“হুম। আমারও তাই ধারণা।”
“কিন্তু ....” থেমে গেল মাহিন।
“কি?” চশমা ঠিক করলেন নারায়ণ গাঙ্গুলি।
“এতগুলো ভারতীয় কবরের মাঝে এই পাঁচটা বিদেশী নামধারী রাজা আর ভাষ্করের কবর কেনো? নাকি ছদ্ম নাম?”
শ্রাগ করলেন প্রোফেসর, “হতে পারে ছদ্ম নাম। এছাড়া আর ভালো কোনো যুক্তিও নেই।”
“হ্যা স্যার। খেয়াল করে দেখুন সবার জন্ম-মৃত্যুর সাল গুলো খুব কাছাকাছি। একই সময়ের ছিল সবাই। একটু আগে পরে মারা গিয়েছিল। মনে হচ্ছে মূল আর্কিটেক্ট এই পাঁচ জন।”
আমি পায়ের ভার বদল করলাম, “এই হরতন, রুইতন, চিরতন আর ইসকাপনের ঘটনাটা বুঝলাম না। বামন শিল্পী নিজের মূর্তি ঠিকই বানিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি চারজনের জায়গায় ইতিহাসের মূল চার রাজাদের মূর্তি বানালো কেন?”
কাঁশলেন প্রোফেসর নারায়ণ, “সেটাই তো কোটি টাকার প্রশ্ন মেজর সাহেব! ইতিহাস অনেক বড় ধাক্কা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তিন শতক মাটির নিচে চাপা পরে থাকা ইতিহাস খুব সোজা কথা না। সেটা যদি হয় ভ্যাটিকেন আর এঞ্জেলো রিলেটেড!” চোখ নাঁচালেন, “কি মনে হয়? রহস্যময়, তাই না?” (চলবে) লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব।
From: Textile Engineering College, Chittagong
ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

। ক্যাথেড্রাল - চতুর্থ পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Thursday, November 10, 2011 at 10:15pm মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব প্রচণ্ড খিদে পেয়েছিলো সবারই। ক্যাথেড্রালের মূল ফটকের সেই নৌকা ভেড়ানো ঘাটে যখন এলাম তখন বিকেল তিনটা বাজে। ভেতরে থাকা অবস্থায় বোঝাযায়নি- বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সামনের লেকের পানিতে ঝমঝমিয়ে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামছে। নৌকাটা সিঁড়ির কাছে বাঁধা। রাকিব চিন্তিত গলায় বলল- “বৃষ্টি শুরু হয়ে তো সমস্যা করে ফেলল! এমনিতেই পাহাড়ী এলাকা, ড্রেনেজ সিস্টেম জঘন্য। একটু বৃষ্টি হলেই চারপাশের যত পানিএসে এই লেকে জমা শুরু হয়। পানি বাড়তে থাকলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে।”
মাহিন বোধহয় বুঝতে পারেনি কথাটা। অবাক হয়ে বলল, “মানে? কি ঝামেলা হবে?”
ফিরে তাকালো রাকিব, “আগে লেকে এত পানি ছিল না। সামনে লেকের নিচের মূর্তিগুলো ওপর দিকে বেড়িয়েছিল । গত দু’সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে লেকের পানিবেড়েছে । চারপাশের উঁচু পাহাড়গুলো থেকে পানি গড়িয়ে এসে লেকে জমা হয়েছে । ফলে মূর্তিগুলো পানির নিচে চলে গেছে । এই হারে বৃষ্টি চলতে থাকলেক্যাথেড্রালের ফটকের মুখটাও পানির নিচে চলে যাবে। এই সিঁড়িগুলো কিন্তু আগে ওপরেই ছিল। এখন পানি উঠেছে।”
মাহিন ব্যাপারটা বোঝার সাথে সাথে চিন্তিত হয়ে পড়ল, “ভেতরে পানি ঢুকলে তো সমস্যা ! রিসার্চের কাজ তো আটকে যাবে! তাছাড়া অনেক জিনিস নষ্ট হয়েযেতে পারে।”
রাকিব এক মুহূর্ত লেকের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোদের থেকে যেতে হবে আজকে। যাওয়ার সময় নেই হাতে। বৃষ্টি কখন থামে ঠিক নেই। চাচ্ছিলাম তোরা থেকে একটু দেখলি সব?” আমার দিকে ফিরল, “মিডিয়া থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন লাগছে। তাই তুই থাকলে ভাল হত।”
আমি কিছু বললাম না। কেবল মাথা ঝাকালাম।
প্রফেসর নারায়ণ পকেট ডায়েরীতে কিছু লিখছিলেন একটা মোটা পিলারের গায়ে হেলান দিয়ে। সেদিকে তাকিয়েই আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “মেজর সাহেব,পানি আটকাবার কোনো ব্যবস্থা বাতলাতে পারবেন? যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে আর আবহাওয়া বার্তার কথা মতে আগামী পাঁচ ছ’দিন এরকম ভারি বৃষ্টি চলবে। ভেতরেরিসার্চের কাজ চালাতে হবে তখন ইঁদুর চোবানি খেতে খেতে।”
আমি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম, “কি করতে হবে আমাকে?”
ডায়েরীর পাতা থেকে মুখ তুললেন তিনি, চোখে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি, “সেটা আমার থেকে তুমি ভালো বলতে পারবে। নদীর গতিপথ যদি কৃত্রিম ভাবে পালটানো যেতেপারে-বদ্ধ লেকের পানি নয় কেন?” চোখ মটকালেন।
আমি দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ধীরে ধীরে একটা হাসি ফুটল, “আপনি যে একটা জিনিয়াস সেটা দেখে কেউ বলতে পারবেনা!” বৃষ্টির কারণে লেকের অন্যপাশের ক্যাম্পে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই খিদের চোটে সবার অবস্থাই খারাপ । রাকিব বার বার ঘড়ি দেখছে। সন্ধ্যা নেমে গেলে সমস্যায়পড়তে হবে। বাসায় যাওয়াটা তখন অনেক কঠিন হয়ে যাবে । বিশেষ করে মাহিনের এ অবস্থায় বাংলোতে ফেরাটা কঠিন। ফটকের চত্বরে পায়চারি করছে রাকিবঅনেকক্ষণ হল। মাহিন সিঁড়িতে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে রয়েছে। ওর পাশে ইভা। চিন্তিত ভঙ্গিতে কথা বলছে দু’জন। ড. আবু তালেব একটা ভাঙ্গা পাথরের বেঞ্চেবসে বিরক্ত মুখে বৃষ্টি দেখছেন। কেবল প্রোফেসর সাহেব কে খুব একটা বিচলিত মনে হল না। ডায়েরি খুলে কিসব হিসাব কষে যাচ্ছেন। লিখছেন এক নাগারে। খুবব্যস্ত। আমি ঘাঁটালাম না তাকে। রাকিবকে কেবল বললাম, “তোর এই পুরো সার্কেল ভ্যালির একটা নিখুঁত ম্যাপ দিস আমাকে। একটা ছোট পাহাড়ি ছড়া কাটতেহবে লেকের পানির ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করতে।”
সিগারেট ধরালো, “দেয়া যাবে। আগেতো ক্যাম্পে যাই। ক্যাম্পের লোকগুলোর কাছে ছাতা নেই। নাহলে একটা ব্যবস্থা করে ফেলা যেত।”
আমি প্রবল বৃষ্টির মাঝ দিয়ে খ্রিষ্টের মূর্তিটার হাতের নিচ দিয়ে অন্য পাড়ের ক্যাম্পের দিকে তাকালাম। দুই মাইল দূরে। এত দূর থেকে বোঝাও যাচ্ছে না ঠিকমতঅন্যপাশে ক্যাম্প আছে কি নেই। বৃষ্টির কারণে ধোঁয়াটে হয়ে আছে সব।
এর মাঝেই শব্দ করে ক্যাথেড্রালের একপাশের পাহাড়ের বিশাল অংশের মাটি ধ্বসে পড়ল লেকের পানিতে। আমি চমকে উঠলেও রাকিব খুব একটা চমকালো না ।সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, “বৃষ্টির কারণে ক্যাথেড্রালের বাহিরের মাটির আলগা আস্তরণ খসে পড়ছে! মানে পাহাড়ে ভাঙ্গন ধরেছে!”
আমি খুব অবাক হলাম । ডান দিকে গলা বাড়িয়ে তাকালাম। আসলেই। ক্যাথেড্রালের দ্বিতীয় তলার বারান্দাটা বেরিয়ে এসেছে পাহাড় ভেঙ্গে পড়ায়!
মাহিন সিঁড়ি থেকে উঠে এল শুকনো মুখে। আমি এক নজর তাকিয়ে বুঝলাম কিছু বলতে চাচ্ছে। গলা নামিয়ে বললাম, “কোনো প্রবলেম?”
মাহিন এদিক সেদিক তাকিয়ে দ্বিধান্বিত গলায় বলল, “রাতটা বোধহয় এখানেই থেকে যেতে হবে আজ রবি।”
“সেরকমই তো মনে হচ্ছে আমারও।” অন্যদিকে তাকালাম । “এলাম ছুটি কাটাতে- আর তুমি কিনা পুরাত্বত্ত নিয়ে বসে পড়েছো!”
মাহিন অনুযোগের সুরে বলল, “এরকম করো কেন? একটু শখ করে সার্ভের কাজ করলে দোষ কি? কত নতুন কিছু শিখতে পারছি।”
“হুম বুঝলাম।” মাথা ঝাঁকালাম, “তারমানে রাতে থেকে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছো?”
“হ্যা……” একটু সংকোচ করলো যেন,গলা নামিয়ে বলল, “কিন্তু একটা প্রবলেম হয়ে গেল যে রবি।”
“কি প্রবলেম?” মাথা ঝুঁকিয়ে আনলাম ওর কাছে ।
“ইয়ে………বোঝইতো! এই টাইট জিন্স পরে রাত কাটানো আমার দ্বারা সম্ভব না!” আড়চোখে অন্যদের দিকে তাকালো ।
“অ! এক্সট্রা কাপড়ের যখন দরকারই পড়বে সাথে নিয়ে আসতে পারোনা? টাইট জিন্স ছাড়া থাকা যায় না?”
“চুপ করো তো! সবার সামনে…..!” লজ্জা পেল। “রাতে জিন্স পড়ে ঘুমাতে পারব না। ছোটো ব্যাগটায় নাইটি আছে”।
হাসলাম আমি, “চিন্তা করোনা। আমি গিয়ে তোমার ছোট ব্যাগটা নিয়ে আসছি। ঘন্টাখানেক লাগবে”। নৌকাটার দিকে পা বাড়াতেই রাকিব অবাক গলায় বলল, “এই বৃষ্টির মাঝে নৌকা নিয়ে কই যাবি?” “একটু দরকার আছে। বাংলোয় যেতে হবে । তোর কোনো গার্ডকে বললে গাড়িতে করে পৌঁছে দিতে পারবে না?” নৌকায় বসে দাঁড় তুলে নিলাম।
“দিবে না কেন? কিন্তু ভিজে যাবি তো!”
“আরে রাখ! আর্মিতে ড্রেনে গোসল করে করে দিন পার করেছি! এটাতো শাওয়ার!” নৌকা দিয়ে লেকের তুমুল বৃষ্টির মাঝে বেরিয়ে এলাম। অদ্ভুত! যেন অন্যকোনো জগতে প্রবেশ করেছি! চারপাশে কেবল বৃষ্টির পানির আছড়ে পড়ার শব্দ! গায়ে হুল ফোঁটাচ্ছে সূচের মত বৃষ্টির কণাগুলো। ভালো লাগছে ভীষণ! যিশুরক্রুসবিদ্ধ মূর্তিটা পাশ কাটানোর সময় খেয়াল করলাম মুর্তিটার চারপাশে একহাত জুড়ে জায়গা দিয়ে পানি উঠছে! যেন নিচে কোনো পানির উৎস আছে! পানি উঠছেবেশ জোরেই। অবাক হলাম। রাকিব কিংবা প্রফেসর নারায়ণ দেখেছেন এটা? গাড়িতে করে বাংলোয় আসার পথে গাড়ির ড্রাইভার মিজানের সঙ্গে অনেক কথা হল। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে।বৃষতি থামার নাম নেই। ক্যাথেড্রালের সামনেরক্যাম্পে গিয়ে তখন বলে এসেছিলাম খাবার পাঠিয়ে দিতে রাকিবদের কাছে। পারলে যেন ওদেরকে নিয়ে আসে।এত বড় ক্যাম্পে কোথাও ছাতা নেই দেখে খুব বিরক্তহয়েছিলাম। যেখানে টানা দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে সেখানে ছাতা থাকবেনা-এ কেমন কথা? তাঁবু থাকলে আর রেইনকোট থাকলেই হল? এখানে গিয়ে তো আরধমক দেয়া সম্ভব না, কেউ অফিস স্টাফ না আমার-তাই নরম গলায় অনুরোধ করে এলাম রেইনকোট পাঠিয়ে দেয় যেন মাহিনদের।এর বেসি আর কি করতেপারি? আমি নিজেও একতা রেইনকোট চেয়ে নিয়ে এসেছি। একমাইল খাড়া পাহাড় বৃষ্টিতে ভিজে বাইতে গেলে নিউমোনিয়া ধরে যাবে!
গাড়িতে করে আসার সময় হঠাৎ মনে পড়ল ড. এজাজ আহমেদ নামে কেউ খুন হয়েছে ক্যাথেড্রালের ওখানে। যখন গিয়েছিলাম তখনও পুলিশ দেখেছি- অথচএকবারও ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করার কথা মাথায় আসেনি আমার কিংবা মাহিনের। ক্যাথেড্রাল দেখে এতই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে খুনের কথা বেমালুম ভুলেগিয়েছিলাম! ড্রাইভারের নেমট্যাগে লেখা “মিজান।” পাশপাশি বসেছিল দু’জন। “মিজান সাহেব”।
“জী স্যার?” রাস্তার উপর চোখ রেখে বলল।
“শুনলাম ড. এজাজ আহমেদ নামে কেউ একজন খুন হয়েছিল ক্যাথেড্রালে? ব্যপারটা কি বলেন তো?”
“উনি প্রথম আর্কিওলোজিষ্ট হিসেবে এখানে এসেছিলেন। দু সপ্তাহ আগের কথা। তখনও ড. তালেবের টিম এখানে আসেনি। একদিন রাতে ক্যাথেড্রালের ভেতরে গিয়েছিলেন একা একা। কাউকে কিছু বলে যাননি। পরদিন সকাল থেকেই উনি লাপাত্তা। অনেক খোঁজা খুঁজির পর ওনার লাশ পাওয়া গেল মাটির নিচের বড় সমাধী কক্ষটায়। পানিতে ভাসছিল লাশটা উপুর হয়ে। পিঠে ছয়টা পুরনো আমলের জং ধরা চাকু ঢুকে ছিল খাড়া ভাবে।” একটু থামল।
“খুন? নাকি দূর্ঘটনা? এসব জায়গায় তো বুবি ট্র্যাপ জাতীয় জিনিস থাকে খুব।”
হাসল সে, “নাহ, বুবি ট্র্যাপ জাতীয় কিছু না। প্রোফেসর সাহেব প্রথম দিন ঘুরেই বলে দিয়েছিলেন এটা নিখাঁদ একটা ক্যাথেড্রাল, গুপ্তধনের কিছু নেই যে বুবি ট্র্যাপ থাকবে। ড. এজাজের ব্যাপারটা আসলেই খুন। কে বা কারা করেছে এটা অবশ্য জানতে পারিনি। ছুরির হাতলে হাতের ছাপ ছিল না।”
আমি ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললাম, “ড. তালেবের টিম খুনের পর এসেছিল?”
“টিম পরে এসেছিল। কিন্তু ড. তালেব এক দম শুরু থেকেই ছিলেন এখানে। ওপর মহলে অনেক প্রভাব ওনার।”
“কিভাবে বুঝলেন?”
“খুনের পর উনি ব্যাপারটাকে ব্লাষ্ট হতে দেননি। যদি বাহিরের দেশ এই ক্যাথেড্রাল সম্পর্কে খোঁজ পেয়ে যায়, তাই। মিডিয়াকেও থামিয়ে রেখেছেন। ফোন করে ইচ্ছা মত লোক আনাচ্ছেন আমাদের ফাঁড়ি থেকে।”
আমি বাহিরের অন্ধকারের মাঝ দিয়ে আবছা পাহাড় গুলোর দিকে তাকালাম। আপন মনেই বিড়বিড় করে বললাম, “ড. তালেবকে তো সুবিধার লোক মনে হয়নি এক বারও। ড. এজাজকে আবার খুন টুন করে বসেননি তো? ক্রেডিট অনেক বড় শব্দ। বইয়ের পাতায় নিজের নাম দেখতে অনেকেই ভালবাসে, পাগল থাকে এক রকম!”
দাঁত বের করে হাসল মিজান, “শুধু আপনি না, ক্যাম্পের সবারই তাই ধারণা। কিন্তু সাহস করে কেউ বলে না। প্রোফেসর সাহেব তো এজন্যই ড. তালেবকে সহ্য করতে পারেন না। বোধ হয় উনিও তাই ভাবেন।”
“আচ্ছা প্রোফেসর সাহেব কবে এসেছিলেন এখানে?” বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই বললাম।
“ড. এজাজ খুন হবার দুই দিন আগে। খুব ভাল বন্ধু ওনারা। তারাই তো এক সাথে মিলে মাটির নিচের সমাধীটা বের করেছেন। প্রোফেসর সাহেব ঝানু মানুষ, আসার সঙ্গে সঙ্গে সমাধীটা বের করে ফেলেছেন।”
“ও....... ড. তালেবের টিমে নাকি কাজ করেন প্রোফেসর সাহেব?”
“হ্যা। মানে টাকা দেয় ড. তালেব। কিন্তু কাজ সব করেন প্রোফেসর সাহেবই। আমার তো মনে হয় সারা জীবন প্রোফেসরকে ঠকিয়ে খেয়ে এসেছে ড. তালেব।”
আমি আর কোনো কথা বললাম না। রাকিবের কথা বলে ক্যাম্প থেকে পুর সার্কেল ভ্যালির একটা ম্যাপ নিয়ে এসেছি। কৃত্রিম একটা নালা বানাতে হবে। দিনের বেলা জায়গাটা ঘুরে দেখতে হবে। নয়তো শুধু ম্যাপ দেখে বোঝা সম্ভব না। জানালার কাঁচ তুলে দিয়ে হেলান দিলাম সিটে। বৃষ্টির বেগ বেড়েছে। বাংলোয় পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বেজে গেল। আমি মিজানকে অপেক্ষা করতে বলে দৌড়ে গেষ্ট রূমে গিয়ে মাহিনের ছোট ব্যাগটা নিয়ে নিলাম। খুব খিদে পেয়েছিল। আসগরকে বলতেই চট করে দুটো ডিম ওমলেট করে দিল। পাউরুটি দিয়ে খেয়ে নিলাম। মিজানকে খেতে ডাকলাম এর মাঝে একবার। খাবে না, খেয়ে বেরিয়েছে।
রাকিবের বিশাল কালো কুকুরটা মালিককে না দেখে আমার চারপাশে ঘুর ঘুর করছিল যখন খাচ্ছিলাম। আসগর জিজ্ঞেস করল, “বড় সাব আসবেন না আজকে?”
“নাহ। কাজে আটকে গেছে।”
“তাইলে কুকুরটারেও নিয়া যান। মালিক ছাড়া কিছু খায় না। সকাল থেকে না খেয়ে আছে। সাবকে দেখলে হয়ত কিছু খাবে।”
আড় চোখে বিশালদেহী কুকুরটার দিকে তাকালাম। কুকুর টুকুর আমার এমনিতেই অপছন্দ। আর সেটা যদি হয় এরকম দানবীয় কুকুর তাহলে তো কথাই নেই। অস্বস্তি ভরা গলায় বললাম, “কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করলেই তো পারো। গাড়িতে করে এত দূর পথ নিয়ে যাবো এটাকে? চিল্লা ফাল্লা করে তো মাথা ঘোল করে দেবে।”
“চিল্লাবে না সাব। পোষা কুকুর। চুপচাপ থাকবে। চেন বাধে দিবো। আপনি নিয়া যাবেন। না খায়ে আছে তো। মায়া লাগে।”
আমি কুকুরটার দিকে তাকালাম। পেছনের দুই পা ভাজ করে বসে আছে। মনোযোগ দিয়ে আমার খাওয়া দেখছে। চোখে মুখে কৌতুহল। হিংস্র বলে মনে হল না। সামনের দুই থাবায় থুত্নি রেখে শুয়ে পড়ল।
আমি শুঁকনো মুখে বললাম, “ঠিক আছে। চেন দিয়ে ভাল করে বেধে দাও। আমি খেয়ে এখনই বেরুবো।” ফেরার পথ পুরো রাস্তা আমি প্রায় সামনের দিকে ঝুকে থাকলাম। কারণ কুকুরটাকে জিপের পেছনে তোলা হলেও বেটা একদম আমার ঘাড়ের কাছে মুখ এনে রেখেছে! যেন মিজানের কাছ থেকে ড্রাইভিং শিখবে! জিহ্বাটা ঝুলিয়ে রেখে আমার সিটার মাথার কাছেই- কি জঘন্য!
অন্ধকারের জন্য দেখা না গেলেও বুঝতে পারলাম মিজান আমার কুকুর ভীতি দেখে হাসছে নিঃশ্বব্দে। আমি আর কি করবো- বাঘ, ভালুক, সাপ-খোঁপে আমার ভয় নেই। কিন্তু সৃষ্টি জগতে এই কুকুর জিনিসটাকেই আমার যত ভায়! এক মাইলের মত সেই পাহাড়ী পথ পুরোটাই কুকুরটাকে সামলালো মিজান। আমি দূরে দূরে রইলাম। চারপাশে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। দুজনের হাতেই টর্চ। কুকুরটা জিহবা দুলিয়ে আগে আগে হাটছে। কাঠ বেড়ালি কিংবা পাহাড়ী ইঁদুর দেখলেই ‘হুফ হুফ’ করে ধমক দিচ্ছে, সাথে সাথে পালাচ্ছে ওগুলো। তখন মাথা ঘুরিয়ে বীরের মত তাকাচ্ছে আমার দিকে। আমি তখন অন্য দিকে তাকাই।
বৃষ্টি থেমে গেছে। কিন্তু কুয়াশার থেকে একটু ভারী মিহি ধরণের কুয়াশা বৃষ্টি হচ্ছ। রেন কোট থেকে মাথা বের করলেই চুল ভিজে যাচ্ছে। টর্চের আলোতে দেখতে পাচ্ছি কুকুরটার কালো শরীরটাও ভিজে চকচক করছে। চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকা আর গিরগিটিদের ডাক। তার বাহিরে অখন্ড নিস্তব্ধতা।
ক্যাম্পে মাহিনদের কাছে যখন পৌছালাম তখন বাজে নয়টার মত। লেকের তীরে ক্যাম্প ফায়ার জ্বালিয়েছে কয়েকটা। দূর থেকে দেখলে কেমন পিকনিক- বার্বিকিউ মনে হয়।
আজ রাতে নতুন অতিথিদের জন্য আরো দুটো তাবু বানানো হয়েছে দেখলাম। দূরে অন্ধকারের মাঝে ক্যাথেড্রালটা প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। তবে জেনারেটরের ম্লান হলুদ বাল্ভ গুলোর কারণে সেটার আবছা অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে। মাহিনরা এপাশে ক্যাম্পে চলে এসেছে। আর একটু আগে বাইশজন অস্ত্রধারি গার্ডকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ক্যাথেড্রালের পাহারার জন্য। রেডিওতে প্রতি আধ ঘন্টা পরপর যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বড় সার্চ লাইট জ্বলছে পাহাড় গুলোর ওপর থেকে। সারা জঙ্গলময় ছুটে বেড়াচ্ছে সেই আলো। লেকের ওপরের যিশুর মূর্তির ওপর সার্চ লাইটের আলো পরলেই অদ্ভূত একটা গা গা শিরশিরে অনুভূতি হয়। যিশুর ক্রুশ বিদ্ধ অনেক মূর্তি দেখেছি। কিন্তু এটা কেমন যেন অন্য রকম। সামনের দিকে গলা বাড়িয়ে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে রয়েছেন! যেন এখনই ক্রুশ থেকে হাত খুলে ঝাঁপিয়ে পরবেন সামনের অদৃশ্য প্রতিপক্ষের ওপর। সার্চ লাইটের আল ওপর থেকে পরার কারণেই সেটা আরো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ভ্রুঁ কুঁঞ্চিত করে রেখেছেন যিশু। দুই ঠোঁটে চাপা ক্রোধ। চোখের লাল পাথর গুলো জ্বলছে আলো পরে। অন্য ভূবনের কেউ মনে হয় যেন! আমি ক্যাম্পে এসে মাহিনকে খুঁজলাম এদিক সেদিক তাকিয়ে। দূরে একটা পাথরের ওপর পা ঝুলিয়ে একা একা বসে আছে, টর্চ জ্বালিয়ে নিজের ডায়েরীতে কিছু লিখছে আর ইভার সেই ক্যামেরাটার মনিটরে বারবার কি যেন দেখছে। ওর আশে পাশে কেউ নেই। কেবল ক্যাম্প ফায়ারের আগুণ জ্বলছে সামনে। কাছাকাছি যাওয়ার পর দেখলাম পাশেই একতা বড় কফির মগ রাখা। কফি খাচ্ছে একটু পর পর। গভীর মনোযোগের সাথে ডায়েরী লিখছে। আমি যে এসেছি খেয়াল করেনি একদম।
মৃদু কাঁশলাম।
ডায়েরী থেকে চোখ তুলে তাকাল এক নজর আমার দিকে। আবার লেখতে থাকল, “কখন আসলে?”
“এই তো, পাঁচ মিনিট হল।” ওর কফির মগটা হাতে নিয়ে সেখানে বসে পরলাম।
“আমার ব্যাগ এনেছো?”
“হ্যা।” পায়ের কাছে ফেলে রাখা ব্যাগটা দেখালাম, “কি লেখো?”
“এই তো ক্যাথেড্রালের কোথায় কি আছে সেটা।” ইভার ক্যামেরাটার মনিটরে সেই হল রূমের মূর্তি গুলোর ছবি দেখছে এক এক করে।
“খেয়েছো? নাকি কফি দিয়েই চলছে কাজ?”
“হু। খেয়েছি। তুমি?”
“আমি হাল্কা খেয়ে এসেছি। এখানে খেতে হবে। কি দিয়ে খেলে?” আড় মোড়া ভাঙ্গার মত করলাম হাত পা সোজা করে।
“নাস্তা করেছি শুধু। রাতের খাবার খাইনি। তোমার সঙ্গে খাব।” ডায়েরিতে লিখেই যাচ্ছে।
“বাহ! একেবারে স্বামী ভক্ত স্ত্রী! স্বামীকে ছাড়া খাওয়া যায় না! আহা!” হাসলাম। দূরে তাকালাম রাকিবের কুকুরটা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুখে একটা বড় সড় হাড্ডি। ভাল জায়গা খুঁজছে বসে খাওয়ার জন্য। এদিকে না এলিই বাঁচি।
মাহিনের দিকে তাকালাম আবার। ক্যাম্প ফায়ারের লালচে আলোতে অদ্ভূত সুন্দর লাগছে ওকে। এক গোছা চুল এসে পরেছে মুখের ওপর, না সরিয়ে লিখে যাচ্ছে। চোখে গাবদা গোবদা একটা চশমা। লেখা লেখির সময় ছাড়া কখনো পরে না এটা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম বোধ হয়, মাহিন মুখ তুলে তাকাতেই চোখা চোখি হল। চশমার ওপাশের চোখ দুটোটে হাসি ফুটল, “কি? ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেনো?”
“তোমাকে দেখি।”
“আমাকে দেখার কি হল? ঘরের বৌকে মানুষ তো ফিরেও দেখে না।” হাসল।
“আমি তো ঘার ঘুড়িয়ে নাইন্টি ডিগ্রী এঙ্গেলে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি। তুমি কি আমার বৌ না?” গম্ভীর গলায় বললাম।
“ও! তাই নাকি! এই এক বছরেও তাহলে পুরনো হইনি।” চশমার ওপর দিয়ে ভ্রুঁ নাঁচাতে গিয়ে হেসে ফেলল।
“বিয়ের সময় শ্বশুড় মহাশয় তো এক্সপেয়ার ডেট জাতীয় কোনো সিল টিল দেয়নি। দিলে বোঝা যেত।”
ডায়েরীটা খটাস করে বন্ধ করে বলল, “এই চুপ! সব সময় অসভ্য সব কথা বার্তা!”
উদাস গলায় বললাম, “আমি যা-ই বলি সবই তো তোমার কাছে অসভ্য কথা বার্তা! বিয়ের সময় ভাগ্যিস দুই ঘর এই পাশে আমি কবুল বলেছিলাম। নাহলে সেখানেও বলে বসতে ‘এই চুপ! অসভ্য কথা বার্তা বলবে না’!”
খপ করে মাহিন আমার রেন কোটের কলার চেপে ধরল দুই হাতে। ক্যাম ফায়ারের আগুণে দেখতে পেলাম অদ্ভূত একটা দৃষ্টি ফুটে উঠেছে ওর চোখের তাঁরায়, ঠোঁটের কোনে রহস্যময় একটা হাসি। কলার টেনে ওর কাছে নিয়ে এল আমাকে, ফিসফিস করে বলল, “অসভ্য ছেলে! আর্মিতে এসব শিখেছো?”
“আই.এস.এস.বি. তে অসভ্যরাই চান্স পায়। তোমার গর্ব করা উচিত।” ওর চশমাটা খুলে নিলাম। “এত হাই ভোল্টেজের চোখ তোমার- দুনিয়ার সব ছেলে এক দৃষ্টিবাণেই কাত হয়ে যাবে, চশমা পরে থেকো ওদের সামনে। আমার সামনে না পরলেও চলবে।”
“কেন? তোমাকে কাত করার জন্য?” আরো কাছে এল।
“সে তো কবেই হয়েছি। চার্জের জন্য। তোমার চোখে তাকালে মনে হয় কয়েক কিলোওয়াট চার্জ হয়ে গেছে শরীরে! আগামি দশ দিন হাইকিং করেও শেষ হবে না।”
“ও! তাই বুঝি?” ঝুঁকে এসে আমার ডান কান কামড়ে দিল, ফিসফিস করে বলল, “লাবু কলম্বাসের আব্বু!”
আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম, ওর গাঢ় নিঃশ্বাস টের পাচ্ছি আমার ঠোঁটের ওপর। বিড়বিড় করে বললাম, “যে হারে কান কামড়া কামড়ি করো- তোমার কলম্বাস বাবাজী দুনিয়ায় এসেও মনে হয় আমার কানের পেছনে পরবে!”
হেসে ফেলল মাহিন। প্রথমে ভাবলাম আমার কথা শুনে হেসেছে। কিন্তু ও আমার মাথার পেছনের চুল খামচে ধরে বামে ঘুরিয়ে ক্যাম্প ফায়ারের দিকে ফেরাল, “দেখো কান্ড!” হাসি চেপে বলল ও।
তাকিয়ে দেখি ক্যাম্প ফায়ারের কমে আসা আগুণের কাছে গিয়ে পেছনের পা উঁচিয়ে ছট কাজ করছে রাকিবের কুকুরটা! মুখে হাড্ডি। আগুণ হয়তো আরো অনেক পরে নিভত, কিন্তু জল বর্ষণের কারণে সেটা এখনি নিভে গেল! লেজ নাড়াতে নাড়াতে অন্য দিকে চলে গেল কুকুর মহাশয়। অন্ধকার হয়ে গেল আমাদের এ পাশটা। আমি গম্ভীর গলায় বললাম, “বাহ! কুকুর সাহেবের তো জ্ঞান বুদ্ধি অনেক! আরো দুটো হাড্ডি পাওয়া উচিত! এত দিন জানতাম খুঁটি ছাড়া এনাদের কাজ কর্ম হয় না, এই প্রথম দেখছি অগ্নি কুন্ডে এ কাজ করতে! সাহসী কুকুর! কুকুরদের মিলিটারিটে ঢুকলে এতদিনে জেনারেল হয়ে এত!”
মাহিন ফিক করে হেসে দিল।
সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘুরে ওকে শক্ত করে চেপে ধরলাম। মাহিন ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ক-কি! ছাড়ো তো! অসভ্য!” দূর্বল হয়ে এসেছে কন্ঠটা.....
ওর কাঁপা নিঃশ্বাস টের পাচ্ছি। ফিসফিস করে বলল, “পাজি কোথাকার......” শেষ করতে পারল না কথাটা। সে রাতে আমি আর মাহিন নিভে যাওয়া ক্যাম্প ফায়ারের ওখান থেকে যখন মূল ক্যাম্পের দিকে চলে আসছিলাম তখন হঠাৎ মনে হল আমাদের পেছন দিয়ে কেউ পা হেঁচড়ে চলে গেল! মাহিন টের পায়নি। আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকালাম। সেই পাথরটার পাশের গাছ দুটোর ডাল নড়ছে। পাখি টাখি বসেছিল নাকি? কিন্তু এই এলাকায় তো পাখি দেখলাম না একতাও। পা হেঁচড়ে হাটলো কে?
“কি হল? দাঁড়ালে যে?” মাহিন হাত ধরে টানল, “চল না, খিদে পেয়েছে তো!”
“হু, চল।” হাটতে লাগলাম। খেয়াল করলাম পেছন আবারও পা হেঁচড়ে হাটার শব্দ হল আর পানির শব্দ পেলাম, অনেকটা ঝপ করে পরার মত শব্দ।
ঝট করে পেছনে ঘুরলাম। দূর থেকে আসা ক্যাম্প ফায়ারের ম্লান আলতে মনে হল লেকের এই অংশের পানিতে হাল্কা ঢেউ। কিছু একটা নামলে যেমন বৃত্তাকার ঢেউ হয় তেমন।
মাহিনের দিকে ফিরতে যাবো হঠাৎ চোখ চলে গেল পাথরের পাশের গাছ গুলোর দিকে। ভ্রুঁ আপনা আপনি কুঁচকে গেল। একটা গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে! একটু আগেও তো দুটো গাছ দেখেছিলাম মনে হয়! নাকি চোখের ভূল? একটা গাছ-ই ছিল? চারপাশে এত বেশি জঙ্গল আর গাছপালা যে পাথরের পাশের গাছ “দুটো” বুঝতে ভূল হতেই পারে। হয়ত একটাই দেখেছি। অন্ধকারে দুটো লেগেছে। মাহিনকে নিয়ে চলে এলাম সবার কাছে। কিন্তু খুঁত খুঁত করতে লাগল মনটা। কোনো কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার এড়িয়ে গেছি কিংবা মিস করেছি মনে হচ্ছে বার বার।
(চলবে)

লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব।
From: Textile Engineering College, Chittagong
ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

।। ক্যাথেড্রাল - পঞ্চম পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Friday, November 11, 2011 at 10:21pm মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব

সকাল দশটা বাজে। সার্কেল ভ্যালির ম্যাপটা হাতে একটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দাঁড়িয়ে আছি একা একা। একটা দূরবীন নিয়ে পুরো এলাকাটা দেখছি। প্রফেসরনারায়ণ গাঙ্গুলির কথা শুনে নালা কাটার কাজে হাত দেয়াটা বোকামী হয়েছে এখন বুঝতে পারছি। দূরবীন দিয়ে চারপাশটা এক নজর দেখেই দমে গেছি। পুরাসার্কেল ভ্যালিটাকে বিশাল কোনো ফানেল কিংবা চোঙ কল্পনা করলে সেটার নিচের অংশটা হবে এই বিশাল লেকটা। দুই কিলোমিটার ব্যাসের এই লেকেরচারপাশের পরিধিই হবে বারো তেরো কিলোমিটারের মত। এই পুরো অংশটা লেক। যত পানি আছে এলাকার-সব গড়িয়ে এসে জমা হয় এখানে। এটাই সবচেয়েনিচু জায়গা। খাল কেটে সারা জীবনেও পানি কমানো সম্ভব না। হতাশ মুখে ম্যাপটা ভাঁজ করে রাখলাম পকেটে। আকাশের দিকে তাকালাম। ঘন কালো মেঘে ছেয়েআছে পুরো আকাশটা। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। ক্যাথেড্রালের গবেষনার জন্য প্রকৃতির উপরই নির্ভর করতে হবে। বৃষ্টি হলে লেকের পানি বাড়বে।তাতে ক্যাথেড্রালে ঢোকার মুখটা বন্ধ হয়ে যাবে। আর বৃষ্টি না হলে নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাওয়া যাবে।
দূরবীনটা দিয়ে লেকটার দিকে তাকালাম আবার। সবুজাভ পানিগুলো স্থির হয়ে আছে। বাতাসের কারণে হালকা তরঙ্গের রেশ। তবে কোনো স্রোত নেই। যিশুর মূর্তিটাদানবের মত ঠিক লেকের কেন্দ্রবিন্দুতে হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছন বরাবর ক্যাথেড্রাল। মাহিনরা সবাই এখন ক্যাথেড্রালের ভেতরে। খালি নৌকাগুলোক্যাথেড্রালের মূল ফটকের সিঁড়ির গোঁড়ায় বেঁধে রাখা। এপাশের ক্যাম্পের দিকে দূরবীন ঘোরালাম। রাকিবের কুকুরটাকে দেখা গেল। একা একা ঘুরে বেরাচ্ছে।গার্ডগুলো ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে পুরো লেকটা ঘিরে যতটা পারছে টহল দিচ্ছে। পুরো এলাকার পাহাড় আর জঙ্গল গুলোতে চোখ বোলালাম। কোথাও কোনো পাখিদেখতে পেলাম না। আশ্চর্য! জঙ্গলেই না পাখি থাকে। এখানে দেখি একটা পাখিও নেই।
ক্যাথেড্রালের দিকে আবার দূরবীন ঘোরালাম। বিশাল কোনো রাজপ্রাসাদ লেক আর পাহাড়ের নিচে ডুবে আছে! একপাশে কাত হয়ে আছে। গতকাল বিকেলে পাহাড়ভেঙে দোতলার বারান্দার যে অংশটা বেরিয়েছিল সেটার দিকে তাকালাম। কালো হয়ে আছে বারান্দা আর ভাঙ্গা রেলিংটা। বামপাশে কাত হয়ে আছে সমস্তবারান্দাটা। কেউ হাঁটতে পারবেনা, পিছলে সোজা লেকের পানিতে পড়বে। ভাঙ্গা রেলিং এর শেষ মাথায় একটা নারী মূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেটাও কালো। হেলেরয়েছে। কখন যে ভেঙ্গে পানিতে আছড়ে পড়বে কে জানে। মূল ভ্যাটিকানের ক্যাথেড্রালে এরকম কোনো মূর্তির অস্তিত্ব নেই, কেবল ছাদের রেলিং বা কার্ণিশে মূর্তি আছে যতটা জানি। মাহিন হয়ত আরো ভালো জানবে।
দূরবীন নামিয়ে ফেলেছিলাম প্রায় হঠাৎ মনে হল বারান্দাটার ওপর দিকে কিছু একটা নড়ে উঠল। সাথে সাথে তাকালাম। পাহাড়ের ভাঙ্গা অংশ থেকে একটা গাছঝুলে রয়েছে বারান্দাটার ওপর। তীক্ষ্ণ চোখে তাকালাম। গাছটার ডাল নড়ছে এখনো, কেউ ছিল নাকি একটু আগে? থাকলেও ওরকম বিদঘুটে একটা জায়গায় কিকরতে যাবে? পড়ে তো হাত পা ভাঙ্গবে!
তাকিয়ে রইলাম অনেক্ষণ। কাউকে দেখতে পেলাম না। চোখে দেখার ভূল হতে পারে। দূরবীন নামিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে লাগলাম ক্যাম্পের দিকে। মাঝামাঝি একটু নেমে কি মনে হতে দূরবীণ দিয়ে আবার তাকালাম বারান্দাটার দিকে। আগের মতই সব। দূরবীণ কোমরে ঝুলিয়ে আবার নামতে যাবো- থমকে গেলাম হঠাৎ। ঝট করে দূরবীণ তুলে আবার ক্যাথেড্রালের বারান্দায় তাকালাম – সেই ঝুলে থাকা গাছটা নেই! মাটি ভেঙ্গে পড়ে গেল নাকি? লেকের দিকে তাকালাম। কৈ? সব তো স্বাভাবিক! গাছটা গেল কোথায়! ঢোক গিললাম। দিনে দুপুরে ভূতুড়ে কান্ড! পাহাড়টা অনেক উঁচু। নামতে অনেক সময় নিচ্ছে। দুবার পা হড়কে যেতে যেতে সামলে নিলাম। মাটি খাঁমচে নামার সময় একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম- ছোট ছোট পাথর, ইট আর থামের মত কিছু জিনিস হাতে লাগল। পা পিছলে যাবার সময় দুই বারই মাটি ভেঙ্গে সবে গিয়েছিল। ভাঙ্গা অংশ থেকে বেরিয়ে এসেছে কোনো ভবনের বারান্দার রেলিং এর অংশ বিশেষ। খটকা লাগল। পায়ে কেডস ছিল, তা দিয়েই লাথি দিয়ে কিছু অংশের মাটি চেঙ্গে সরালাম। আবার লাথি মারতেই পাথুরে কিছুতে খুব জোরে বাড়ি লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে ওখানেই বসে পড়লাম। ব্যথাটা হজম করে ভাওল করে তাকাতেই যা দেখলাম তাতে পায়ের ব্যথাটা মুহূর্তেই উবে গেল।
ভাঙ্গা অংশটা দিয়ে বেরিয়ে আছে একটা নারী মূর্তির মুখের অংশ! চোখ গুলোতে দামী নীল পাথর। এতই নিখুঁত যে মনে হল কালো মূর্তিটা আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে!
আমি বিষ্ময়ের ধাক্কাটা কাটাতেই দু হাতে খাঁমচে মাটি সরাতে লাগলাম। অনেকটা ক্ষ্যাপা মানুষের মত। মাটি খুব নরম। টান দিলেই ছুটে যাচ্ছে। দেখতে দেখতেপুরো মূর্তিটা বের করে ফেললাম। পায়ের দিকে খুঁড়তেই দেখলাম একটা রেলিং এর ওপর বসানো মূর্তিটা। কোনো বারান্দার রেলিং। কেমন যেন সন্দেহ হল।দূরবীনটা হাতে নিয়ে ক্যাথেড্রালের বাম দিকের সেই বারান্দাটার দিকে তাকালাম। সেখানেও রেলিং এর ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা রমণী মূর্তি। এত দূর থেকেওবোঝা যাচ্ছে- অবিকল একই মূর্তি! এখানেরটাও একটা রেলিং এর ওপর দাঁড়ানো......
আমি আস্তে আস্তে আমার সামনে দাঁড়ানো মূর্তিটার দিকে তাকালাম। বিচিত্র একটা সম্ভাবনা উঁকি দিল মনের ভেতর। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। চারপাশেরপাহাড়গুলোর দিকে তাকালাম এক নজর। বৃত্তাকার ভাবে লেকটাকে ঘিরে রেখেছে। কেন্দ্রে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ মূর্তি, লেকের নিচেও অসংখ্য মূর্তি।
যতটা মনে পড়ে মূল ভ্যাটিকান প্রাসাদটাও ঠিক এরকম বৃত্তাকার। প্রাচীর আর ভবন দ্বারা ঘেরা, মাঝখানে বিশাল একটা চত্বর। আর এখানের ক্যাথেড্রালটাপাহাড়ের যেখান থেকে বেরিয়ে রয়েছে- মূল ভ্যাটিকানের ওরকম একটা জায়গায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে পোপ জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এখানে বৃত্তাকার ভবনেরবদলে রয়েছে সার্কেল ভ্যালি……… তার মানে হল- এই পাহাড়গুলোর ভেতরেই সেই বৃত্তাকার ভবনগুলো রয়েছে! যেগুলো গোল হয়ে ঘুরে গিয়ে ভ্যাটিকানের প্রাসাদেযুক্ত হয়েছে! বারো তেরো কিলোমিটার পরিধির এই বৃত্তাকার পাহাড়গুলো তিনশো বছর পূর্বে ক্যাথেড্রালের অনুষদ ভবন ছিল! মাটি চাপা পড়ে এখন পাহাড় হয়েগেছে! ভ্যাটিকান সিটির ক্যাথেড্রালের চেয়েও কয়েকগুণ বড় এই ক্যাথেড্রাল!
হা হয়ে গেলাম আরো একবারের জন্য। বানালো কি করে এই ক্যাথেড্রাল? হিসেব করলে এটাই তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্যাথেড্রাল! মাটি আর পাহাড় খুঁড়লেরীতিমত কোনো শহর বেরিয়ে পরবে! বৃষ্টি নেমেছে। বেশ জোরে সোরেই। আমি গায়ে রেইনকোট চাপিয়ে নৌকার দাঁড় বাইছি। ক্যাথেড্রালে যাচ্ছি। নৌকায় আর কেউ নেই। প্রায় মধ্য দুপুর। কিন্তুচারপাশে এত কম আলো যে সন্ধ্যা নেমে এসেছে মনে হয়। আকাশে ঘন কালো মেঘ। লেকের পানিতে বড় বড় ফোঁটাগুলো আছড়ে পড়ছে বিচিত্র শব্দ তুলে। লেকেরনিচে ডুবে থাকা মূর্তিগুলো বোঝা যাচ্ছে না বৃষ্টির পানি পড়ার কারণে। ক্রুশবিদ্ধ খ্রিস্টের মূর্তিটা পাশ কাটাবার সময় লক্ষ করলাম আজও একহাত জায়গা জুড়েপানি উঠছে মূর্তিটার নিচ থেকে। নিচে পানির উৎস আছে নাকি? এভাবে পানি উঠছে কেন? বৃষ্টি হলেই কেবল পানি ওঠে। কারণ গতকাল প্রথমবার যখন এপাশদিয়ে যাচ্ছিলাম তখন পানি উঠতে দেখিনি- তখন বৃষ্টিও হচ্ছিল না। ক্যাথেড্রালের সিঁড়ির কাছে নৌকা ভেড়ালাম। দুই কিলোমিটার নৌকা বাওয়া মুখের কথা না। দুই হাতের পেশি টন টন করছে। বার কয়েক হাত ঝাঁকালাম। এদিকসেদিক তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। ভেতরে বোধহয় সবাই। গতকাল আসার সময় কোথায় কি আছে দেখেছি ভালমত। তাই একা একাই ঢুকে পড়লাম। হল রুমপেরিয়ে আরো কয়েকটা বড় বড় রুমে ঢুকলাম। জেনারেটরের লাইন দেয়া। হলুদ লাইট জ্বলছে সব রুমগুলোয়। অবাক হয়ে দেখছি ঘরগুলো। দেয়াল গুলো নানানলতাপাতা আর আগাছা-শ্যাওলায় ঢেকে গেলেও বর্ণীল চিত্রকর্ম আর খোদাই করা শিলালিপি গুলো ঢাকতে পারেনি। পকেট থেকে একটা টিস্যু পেপার নিয়ে বড়ঘরটার দেয়ালের নিচের দিকে একটা মাঝারি সাইজের পেইন্টিং মুছে শ্যাওলা সরালাম। কাঁচ দিয়ে বাঁধানো। তাই এত বছরেও নষ্ট হয়নি। খুব উজ্জ্বল রঙ দিয়েবাইবেলের great flood এর একটা দৃশ্য এঁকেছেন শিল্পী। আমি ছবি কম বুঝি। মান কেমন তাও বুঝিনা। তবে এটুকু বুঝতে পারলাম খুব নিখুঁত একটা ছবি এটা!এতই জীবন্ত যে মনে হচ্ছে ছবির ভেতরের উন্মাত্ত সাগরের পাহাড় প্রমাণ ঢেউ এখনি আছড়ে পড়বে ছবির ফ্রেম ছাড়িয়ে এই ঘরের ভেতর। ফ্রেমের কোনার দিকেশিল্পীর সাক্ষর- Angelo (।।). কিন্তু ছবির নামটা পড়তে গিয়ে ভ্রূ কুঁচকে গেল আপনাআপনি- “The Great Flood of Cathedral” ।
অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকালাম। নূহ নবীর সেই বজরা ভাসছে সাগরের ওপর, পাহাড়ের মত বিশাল বিশাল ঢেউ। ক্যাথেড্রালের তো কোনো চিহ্নই নেই!
হাত বুলালাম কাঁচের কভারের উপর। প্রফেসর নারায়ণ কি এগুলো দেখেননি এখনো? প্রশ্ন জাগলো মনে। পেছনে পায়ের শব্দ হতেই ফিরে তাকালাম। মাহিন আররাকিব ঢুকেছে এই রুমে। আমাকে দেখে রাকিব অবাক হল, “কখন এলি? সাড়া শব্দ পেলাম না যে।”
“এইতো মিনিট দশেক হবে।” মাহিন আমার পেছনের ছবিটার দিকে তাকালো, “কি দেখছিলে?”
“এই ছবিটা। ছবির নাম দেয়া ক্যাথেড্রালের বন্যা। অথচ ক্যাথেড্রালের কোনো চিহ্নই নেই।”
চোখে চশমা লাগিয়ে কৌতুহলী মুখে এগিয়ে এল, “এই রুমটা একটা আর্ট গ্যালারি। পরে দেখবো ভেবে আর আসিনি।” ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়েদেখতে লাগল। একেবার কাঁচের সামনে চোখ এনে দেখল। দেখলাম বিচিত্র একটা হাসি ফুটে উঠেছে ওর মুখে।
“কি ব্যাপার?”
“এই দ্বিতীয় মাইকেল এঞ্জেলোর তো ভক্ত হয়ে যাচ্ছি আমি- যতই দেখছি!”
“মানে?”
“দারুণ এক জিনিয়াস ছিল লোকটা-মানতেই হবে!”
“হেয়ালি রেখে আসল কথা বলো তো।” অধৈর্য্য হলাম। রাকিবও এগিয়ে এল। চোখে মুখে কৌতুহল। ফিরে তাকাল মাহিন, মুখে হাসি-যেন বিরাট কিছু আবিষ্কারকরে ফেলেছে।
“এখানে একসাথে তিনটার মত পেইন্টিং আছে।”
“বুঝলাম না।” রাকিব বোকার মত আমার দিকে তাকালো।
“বুঝিয়ে দিচ্ছি। রাকিব ভাই, আপনি ছবিটার ডানদিকে যান। আর রবি যাও বাম দিকে। দেখো তো কি দেখা যায়?”
আমি কোনো প্রশ্ন করলাম না। যা বলল করলাম। বামপাশে গিয়ে ছবিটার দিকে তাকানোর সাথে সাথে অদ্ভুত জিনিস দেখলাম! একটু আগে দেখা বজরা আরসাগরের ছবি বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে! তার জায়গায় দেখা যাচ্ছে বিশাল একটা ক্যাথেড্রালের ছবি! সেটার সামনে সূর্য ডোবার আলোতে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ মুর্তি!এই ক্যাথেড্রাল্টাই-কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আগের ছবিটা……. হঠাৎ বুঝে ফেললাম পুরো ব্যাপারটা! আগেকালের ছোটো বাচ্চাদের বেল্টের বাকলসে এক ধরনেরকার্টুন আঁকা থাকত প্লাস্টিকের পরতে। দুই দিক থেকে দেখতে দুই রকম। মনে হত কার্টুনটা নড়ছে। আসলে দুই ধরনের সরু উচু নিচু লাইনিং দিয়ে ঐ ছবিগুলোতৈরী করা হতো। দুই দিকে দুই রকম ভাবে দেখাতো সেইজন্য। এখানেও তাই! আমি বামপাশে এসেছি বলে এখানে অন্য ছবি দেখাচ্ছে, সামনে গেলে আবার- Great Flood। হেঁটে রাকিবের পাশে আসতেই তৃতীয় দৃশ্য দেখলাম। ক্যাথেড্রালটা পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, সূর্য ডুবে গেছে। অন্ধকার ছবি। তার মাঝেও অষ্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে ক্যাথেড্রালের দরজা জানালাগুলো দিয়ে খুব বড় বড় শূড়ের মত কিছু বের হয়ে রয়েছে! এটার কোনায় একই লেখা- “The Great Flood of Cathedral”, তবে শেষে একটা সাল উল্লেখ করা-1832, July.
মাহিনের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। মিটিমিটি হাসছে ও। দু’হাত বুকে আড়াআড়ি ভাজ করে রেখেছে, “বোঝা গেল? এখানে মোটে তিনটা সরু উঁচু লাইনিং দিয়েছবিটা এঁকেছে এঞ্জেলো সাহেব। কত চালাক ছিল বুঝতে পারছো?”
বিমূঢ়ের মত মাথা নাড়ালাম, “আমাকে মেরে ফেললেও জীবনে এইরকম কিছু আমার মাথা দিয়ে বের হবে না! লোকটা আদৌ মানুষ ছিল নাকি দেবতা?”
“কি ছিল জানি না” ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল, “তবে আসলে এঞ্জেলোর চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না এটা পরিষ্কার।”
রাকিব বাকি পেইন্টিং গুলোর দিকে তাকালো, “বাকিগুলোও ফেলে না রেখে দেখা উচিত। ক্যাথেড্রালটা বোধহয় বড় কোনো বন্যায় ডুবেছিল। এখানে তো বৃষ্টি হলেইপাহাড় ধ্বসে।”
আমি পকেট থেকে রুমাল বের করে বাকি পেইন্টিংগুলোও মোছা শুরু করে দিলাম। আমার দেখা দেখি রাকিবও শুরু করল। মাহিনও বসসে থাকল না। মোছার সঙ্গেসঙ্গে ছবিগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিল। কাজ এগুতে লাগল দ্রুত। সর্বমোট ১৯টা পেইন্টিং। ঘন্টাখানেকের মধ্যে মাহিন ঘোষনা দিল এই উনিশটা ছবিতেতিনটা করে মোট সাতান্নটা ছবি এঁকেছেন দ্বিতীয় এঞ্জেলো সাহেব। তারমধ্যে উনিশটা হল বাইবেলের Great Flood এর কিছু দৃশ্য। বাকি আটত্রিশটা ছবি হল এইক্যাথেড্রাল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দৃশ্য! পাশাপাশিভাবে এই আটত্রিশটা ছবিকে সাজালে যা দাঁড়ায় তার সারাংশ হলঃ প্রবল বর্ষনের কারণে খ্রিষ্টের মূর্তিটার নিচ থেকে ফোয়ারার মত পানি উঠত। পানিতে ডুবে যায় চত্বরটা। দ্রুত ক্যাথেড্রালের চারপাশ ডুবে যেতে থাকে। পাহাড়ধ্বস শুরু হয়। একে একে সব ভবন মাটি চাপা পরতে থাকে। রাতের অন্ধকারে কোনো বিশাল শূড়ওয়ালা প্রাণী ক্যাথেড্রালটাকে গ্রাস করে মাটির নিচে হারিয়ে যায়।পাহাড় ধ্বসে পড়ে ক্যাথেড্রালের ওপর। চিরতরে হারিয়ে যায় এই ক্যাথেড্রাল।
আমি অবাক হয়ে মাহিনের দিকে তাকালাম, “এই ছবিগুলো ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে এঁকেছিল নাকি এঞ্জেলো? আসলেও তো তাই ঘটেছে। যদিও শূঁড়গুলোর কোনোব্যখ্যা পাচ্ছি না। কিন্তু পাহাড় ধ্বসের কারণেই তো এটা ডুবে গেছে। এতসব ভবিষ্যদ্বাণী করল কি করে?”
মাহিন দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল ছবিগুলোর দিকে। তারপর আস্তে আস্তে বলল, “এগুলো কোনোটাই ভবিষ্যদ্বাণী না রবি……..দ্বিতীয় এঞ্জেলো খুব কাছ থেকেএই ঘটনাগুলো দেখেছিলেন। তারপর এঁকেছেন। সাল আর তারিখ দেখলেই বোঝা যায়। ক্যাথেড্রাল ধ্বংস হয়েছিল ১৮৩২ জুলাই, মোট উনিশ দিনে আটত্রিশ ধাপে।আর শিল্পী মারা গিয়েছিলেন ১৮৩২ নভেম্বর। কবরের গায়ে লেখা।” আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো, “ক্যাথেড্রাল মাটি চাপা পরার পরও উনি এর ভেতরেইছিলেন! একা একা এই ছবিগুলো এঁকেছিলেন! মৃত্যু্র পূর্ব মুহূর্তে নিজের জন্য বানিয়ে রাখা কবরে ঢুকে পড়ে ওপরের পাথরটা টেনে দিয়েছিলেন! কিংবা হয়তকবরটাতে ঢোকার সময় পাননি, তার আগেই মারা গিয়েছিলেন। পাথরের ফলকে এমনি আন্দাজে লিখে রেখেছিলেন নভেম্বরে মারা যাবেন।”
“এটা কি তুমি জেনে বলছো? নাকি আন্দাজে?” “অনুমান। যুক্তি মিলিয়ে অনুমান করছি। এর থেকে ভাল কোনো ব্যখ্যা আপাতত আমার কাছে নেই। প্রফেসর সাহেবকে দেখালে হয়ত উনি আরো ভালোকোনো যুক্তি দিতে পারবেন।” ক্লান্ত গলায় বলল।
আমি ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে। বিশাল বিশাল শূড়গুলোর ওপর চোখ আটকে যাচ্ছে বার বার…….কি প্রাণী এটা?
(চলবে)

লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব।
From: Textile Engineering College, Chittagong
ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com

।। ক্যাথেড্রাল - ষষ্ঠ পর্ব ।।

by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Saturday, November 12, 2011 at 10:35pm মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব

পরের এক সপ্তাহ কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি হল না। ড. আবু তালেবের লোকজন মাটি খুঁড়ে ক্যাথেড্রালের আরো বেশ কয়েকটা রূম বের করল। মাটির নিচে ডানজন পাওয়া গেল গেল অনেক বড়। ঠিক কি কাজে ব্যবহার করা হত সেটা বোঝা গেল না। তবে ডানজনের অল্প নিচ দিয়েই পাতাল নদীর মত একটা অববাহিকা পাওয়া গেল। প্রফেসর নারায়ণের ধারণা মতে যিশুর মূর্তির নিচের পানির উৎসটা এই পাতাল নদীর সঙ্গে যুক্ত। বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে গেলে অতিরিক্ত পানি খ্রিষ্টের মূর্তির নিচ থেকে বেরিয়ে আসে।
এ কদিন আমি ডানজনটায় ঘুরে বেড়াতাম একা একা। প্রচুর লতা পাতা আর ঝোপঝার এখানে, রীতিমত জঙ্গল। বোঝাই যায় না কি আছে। এখানেও গাছ পালার মত হাজার হাজার ডাল পালা এদিক সেদিক ছড়িয়ে রয়েছে। কোত্থেকে যে শুরু আর কোথায় যে শেষ বোঝার জো নেই। ডানজনের ভেতরে নামলেই বিচিত্র একটা শব্দ পাওয়া যেত। অনেকটা চিকন সুরে শিস দেয়ার মত। আমি শব্দের উৎসটা হাজার চেষ্টা করেও খুঁজে পাইনি। বড় বড় গাছের শেকড় আর মোটা মোটা লতা পাতা ছাড়া আর কিছু নেই এখানে। শিস দেয় কে?
এর মাঝে আরো কিছু ঝামেলা বাঁধলো। ইভার জ্বর ধরায় বাসায় পাঠিয়ে দিল রাকিব। মেয়ে বাসায় একা একা কি করবে- তাই রাকিবও চলে গেল। অন্য দিকে টানা বৃষ্টির কারণে দ্রুত ক্যাথেড্রালের ফটক দিয়ে পানি ঢোকা শুরু করল। লেকের পানির লেভেল বেড়ে গেছে। আমি কয়েকজন গার্ডকে নিয়ে বস্তায় বালু ভরে ক্যাথেড্রালের দরজাটা বন্ধ করে দিলাম উঁচু করে। তাতে ভেতরে পানি ঢোকা বন্ধ হল সাময়িক ভাবে। কিন্তু কতক্ষণ? বৃষ্টি তো থামার নামই নিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ঠিকই ক্যাথেড্রালে পানি ঢুকবে। বস্তা দিয়েও ঠেকানো সম্ভব না লেকের পানি।
প্রফেসর গাঙ্গুলি লোক লাগিয়ে সেই পাঁচটা সমাধী ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছেন গত পরশু থেকে। কেন ভাংছেন জানি না। প্রায়ই দেখি এক হাতে একটা গ্লাভস পরে এটা সেটা নেড়ে চেড়ে দেখেন আর গম্ভীর মুখে ডায়েরিতে নোট টুকে নেন।
দ্বিতীয় কিং ডেভিডের কবরটা ভাঙ্গা হয়েছে সবার প্রথমে। গতকাল সকালে ভাঙ্গা হয়। আমি নিজেও ছিলাম। ভেতরে কিছুই পাওয়া যায়নি। কেবল কংকালের হাঁড় গোড় আর মলিন কাপড়। দেখে কোনো রাজা বলে মনে হল না। বেশ ভূষা এক কালে হয়তো যাও বা ছিল- এখন বলার মত নেই। দাঁত বের করে হাসছে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে। মাহিন খুব হতাশ হলেও প্রফেসর গাঙ্গুলি হননি। এক হাতে গ্লাভস পরে হাঁড় গুলো ধরে ধরে দেখছেন। দেখলাম কংকালের ফিমারের হাঁড় দুটো তুলে কি যেন মাপলেন। তারপর কলম দিয়ে খসখস করে ডায়েরিতে লিখলেন কিছু।
গত কাল সারাদিনে উল্লেখ যোগ্য কোনো ঘটনা না ঘটলেও রাতে একটা অঘটন ঘটল। গত রাতে ক্যাথেড্রালের পাহারায় যে কয়জন গার্ড পাঠানো হয়েছিল- মোট দশজন গার্ড, তার মধ্যে পাঁচ জন গার্ড গায়েব হয়ে গেল। বাকি পাঁচ জনকে পেলাম মৃত অবস্থায়।
প্রতি আধ ঘন্টা পরপর রেডিওতে যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল গার্ড গুলোর সঙ্গে। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এমনিতেই তখন প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল। ক্যাথেড্রালের দিকে সার্চ লাইটের আলো ফেলা থাকলেও বোঝা যাচ্ছিল না কি হচ্ছে ভেতরে। বার কয়েক গুলির শব্দ শোনা যায়। তারপর সব নিস্তব্ধ। রেডিওতেও যোগাযোগ করা যায়নি।
আমার ঘুম এমনিতেই হাল্কা। একটু শব্দ হলেই জেগে উঠি। গত রাতে গুলির শব্দ হবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাবুর বাহিরে লোকজনের ব্যস্ত হৈ চৈ আর উত্তেজিত কথা বার্তা শুনে উঠে বসলাম। মাহিন ঘুমাচ্ছে- ঘুমাক। ওকে না জাগিয়ে বেরিয়ে এলাম।
বাহিরের অন্ধকার আর ঝড় বৃষ্টির মাঝেই দেখলাম সার্চ লাইটের আলো পাগলের মত ছুটে বেরাচ্ছে ক্যাথেড্রালের ওপর। যিশুর মূর্তির ওপর যতবার আলো পড়ছে ততবার মনে হচ্ছে ঝড়ের মাঝে ক্রুদ্ধো চোখে তাকিয়ে রয়েছে এদিকে!
আমি ড. তালেবকে দেখে এগিয়ে গেলাম, “কি হয়েছে? এত হৈ চৈ কেন?”
বিরক্ত মুখে তাকালেন আমার দিকে। ভাল করে রেইন কোটের হুডটা টেনে নিলেন মুখের ওপর, “ক্যাথেড্রালের গার্ড গুলোর কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। রেডিওর ধারে কাছে নেই একটাও। তারওপর ক্যাথেড্রালের দিক থেকে গোলা গুলির শব্দ এসেছে। মনে হচ্ছে ঝামেলা লেগেছে। চোর ডাকাত ঢুকেছে নাকি!”
“লোক পাঠিয়েছেন?” ক্যাথড্রালের দিকে তাকালাম। ভিজে যাচ্ছি বৃষ্টিতে। রেইন কোট ভূলে পরা হয়নি।
“যাবে এখন। আপনি যাবেন?” ড. তালেব জিজ্ঞেস করলেন।
“হু। আপত্তি নেই। সঙ্গে আর্মস থাকলে আরেকটু ভাল হত আর কি।” কপালের ওপর এসে পরা চুল গুলোকে আঙ্গুল দিয়ে পেছনে পাঠিয়ে দিলাম।
“সমস্যা নেই। গার্ডদের থেকে একটা পিস্তল চেয়ে নিন আমার কথা বলে, দিয়ে দেবে।”
“আপনি যাবেন না?”
“আমি আবার গোলাগুলির মাঝে গিয়ে কি করবো?” ইতস্তত গলায় বললেন। আমি আর কিছু বললাম না।
নৌকা তৈরি হয়ে ছিল। আমি গিয়ে ওঠা মাত্র ছেড়ে দিল। মোট বারো জন গার্ড আর আমি। আসার সময় একটা রিভলভার নিয়ে এসেছি। মাত্র ছ’টা গুলি। কাজে না লাগলেই খুশি হব। আর্মি লাইফের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বলে গুলি ছুড়লে সংখ্যাটা ছয়ের নিচে আসলে কাজে দেয় না। নূন্যতম ছয়টা গুলি করতে হয় প্রতি পক্ষকে ধরাশায়ি করতে। এক গুলিতে বাজি মাতের ঘটনা গল্প উপন্যাসেই থাকে। বাস্তবে ব্যপারটা ভিন্ন।
ক্যাথেড্রালে যখন যাচ্ছিলাম নৌকায় করে, সার্ক্স লাইটের আলো বার বার এসে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল।
ক্যাথেড্রালের সিঁড়িতে নেমেই আমি গার্ডের দলটাকে তিন ভাগে ভাগ করে তিন দিকে পাঠিয়ে দিলাম। আমার সঙ্গে নিলাম দুই জনকে। মূল দরজার বালির বস্তার সামনে এসে দু দিকে বসলাম আমি আর একজন গার্ড। এখানে হাটু পানি। অন্যজন লাফিয়ে টর্চ আর অস্ত্র হাতে ভেতরে ঢুকে গেল। ও সংকেত দেয়া মাত্র আমরা দুজন লাফিয়ে ঢুকলাম বালির বস্তার বাঁধ ডিঙ্গিয়ে।
কিন্তু ভেতরে ঢুকে ছোট খাট ধাক্কার মত খেলাম। টর্চের আলোয় দেখা যাচ্ছে করিডোরের অল্প পানিতে উপুর হয়ে আছে একজন গার্ডের লাশ! এক নজর দেখেই বোঝা গেল শরীরের কোনো হাঁড় আস্ত নেই। খুব শক্তিশালী কিছু একটা একে পেঁচিয়ে চাপ দিয়ে হাড় মাংস এক করে ফেলেছে! মাংসের দলার মত পরে আছে লাশটা।
আমি খুব সাবধানে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম করিডোর ধরে। স্যাস্টিন চ্যাপেলের ছবির সেই হল রূমে ঢুকে যেটা দেখলাম তাতে জমে গেলাম সবাই।
দানবের মত কিছু একটা আরো চার জন গার্ডকে এই বিশাল রূমের ছাদে, দেয়ালে আর ফ্লোরে প্রচন্ড আক্রোশে ছুড়ে মেরেছে! অনেক গুলো মূর্তি ভেঙ্গে মেঝেতে পড়ে আছে। বাকি গুলো কোনো কোনোটা হেলে গেছে। ছাদের কাঁচের ছবির অংশ গুলোর জায়গায় জায়গায় রক্ত লেগে আছে, দেয়ালে রক্ত, মাথা ফেটে মগজ লেপ্টে আছে দেয়ালের অনেক ওপর দিকে। এখানে শত শত মূর্তির ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাশ গুলো। দেয়াল আর ছাদে গুলির ছিদ্র। বোঝাই যাচ্ছে ফায়ারিং এই ঘরেই হয়েছিল। হল রূমের বদ্ধ বাতাসে এখনো বারুদের গন্ধ। বেশিক্ষণ আগে ঘটেনি ঘটনা। আন্য পাঁচ জনকে পেলাম না তন্ন তন্ন করে খুঁজেও। গায়েব হয়ে গেছে যেন একেবারে!
সমস্ত ফ্লোর জুড়ে সবুজাভ এক ধরণের তরল, চিটচিটে পদার্থ। লাশ গুলোর গায়েও লেগে আছে সবুজাভ তরল গুলো। দূর থেকে ডানজনের সেই হাল্কা শিসের মত শব্দটা ভেসে আসছে....... বজ্রপাতের আলো আসছে ছাদের ফাটল দিয়ে......
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এভাবে কাউকে খুন করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না! দানবের পক্ষেই সম্ভব! ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

পরদিন সকালে মাহিনকে ঘটনা গুলো জানালাম। শুনে কেমন যেন ঝিম মেরে রইল অনেক্ষণ।
“মাহিন আমি তোমাকে আর তোমার কলম্বাসকে নিয়ে ভয়ে আছি। জীবনে দূর্ঘটনা তো আর কম দেখিনি। এখানে পরপর খুন হচ্ছে। তার মাঝে তোমাকে এভাবে ছেড়ে দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি না। আমার মনে হয় তোমার এখন ফেরা উচিত।” হাতের নখ গুলোর দিকে অহেতুক তাকিয়ে রইলাম।
মাহিন করুণ চোখে তাকাল, “এ রকম ইন্টারেস্টিং একটা সাইট থেকে এ অসময়ে – মাঝ পথে চলে যেতে হবে? প্লিজ রবি...........”
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললাম, “তোমাদের ভাল দিকটা ভাবা আমার দায়িত্ব। কিন্তু কিছু চাপিয়ে দেবো না তোমার ওপর। আশা করি তুমি তোমার আমার সন্তানের মঙ্গলের জন্যই সিদ্ধান্ত বদলাবে।”
বাহিরে পুলিশ এসেছে লাশ গুলো নিতে। ড. আবু তালেব আসলেই কড়িৎ কর্মা লোক। পুলিশি ঝামেলা কিভাবে সামলাতে হয় ভাল করেই জানেন। সে ভাবেই কাজ করলেন। ব্যপারটা নিয়ে তাই খুব একটা হৈ চৈ হল না আর। ড. এজাজ আহমেদের খুনের ব্যপারে বলতে পারি না, তবে গত রাতের খুন গুলো কোনো মানুষ যে করেনি এটা হলপ করে বলতে পারি। তাই এই প্রথমবার ড. আবু তালেবের চতুরামিটা খারাপ লাগল না।
মাহিন আর আমি তাবুর ভেতরে বসেছিলাম। সকাল দশটা বাজে। প্রফেসরের “কবর খোঁড়া” টিম এতক্ষণে চলে গেছে ক্যাথেড্রালে পাঁচ সমাধী ভাঙতে। ভেতরে বসেই শুনতে পেলাম প্রফেসর লোক গুলোকে বলছেন, “আজকে অন্য সমাধী গুলো ভাঙ্গার দরকার নেই। ড্রিল করে বেটে কবরটাই আগে খোলো।”
মাহিন আমার দিকে তাকাল অর্থ পূর্ণ দৃষ্টিতে, “বাকি তিন সম্রাটের কবর একই রকম হবে- তাই দ্বিতীয় এঞ্জেলোর কবরটা ভাঙবে আজ। সময় বাঁচল।”
আমি মাহিনের দিকে ফিরে তাকালাম, “এখনই যেতে চাও? নাকি আরেকটু পরে যাবে?”
“দেখি। একটু পরেই যাবো। ড্রিলিং এর সময় উড়তে থাকা ধূলো বালি সহ্য করতে পারি না।” ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করল মাহিন। চোখে বড় চশমাটা লাগিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাতে লাগল।
আমি আপন মনে গত রাতে নেয়া পিস্তলটা নিয়ে ম্যাগাজিন খোলা-বন্ধ করতে লাগলাম। ফেরত দিতে ভূলে গেছি। আপন মনেই বললাম, “আচ্ছা পুরাতত্ত্বের কাজ করার সময় হাতে গ্লাভস, ব্রাস এসব থাকার দরকারটা কি?”
ডায়েরী থেকে মুখ না তুলে বলল মাহিন, “যাতে কোনো ক্ষতি না হয় অ্যানটিকের। স্পট পড়ে গেলে অ্যানটিকের ভ্যালু কমে যায়।”
“অ!” আর কিছু বললাম না।

ভারি ড্রিল মাশিনের একটানা গোঁ গোঁ শব্দ আর ধূলো বালিতে বদ্ধ সমাধী কক্ষটা অসহ্য লাগছিল। দেয়ালে শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে প্রচন্ড শব্দ তুলেছে। আমি মাহিনের সঙ্গে উঁচু সিড়িঁর প্লাটফর্মে বসে আছি। নিচের ঠান্ডা পানিতে নামছি না। আগে এঞ্জেলোর কবর ভাঙ্গে হোক। তারপর যাবো। মাঝে মাঝেই উবু হয়ে তাকিয়ে দেখছি কাজ কত দূর হল। প্রফেসর সাহেব পাঁচ কবরের একটা কবরের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে ডায়েরী লিখছেন। একটা সমাধীর ওপর যে বসে আছেন- সেটা তাঁর মুখ দেখে বোঝা গেল না। যেন সোফায় বসে আছেন! ভাল করে তাকিয়ে বুঝলাম ওটা আলেকজান্ডারের সমাধীটা।
কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তারওপর ছোট কবর। তাই দ্রুত কবরের ওপরের আস্তরণ বাঙ্গার কাজ এগোচ্ছে।
দুপুর হয়ে এসেছে প্রায়। ড্রিল মেশিনের এক ঘেয়ে শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। কেউ কথা বলছে না। আমি এক দৃষ্টিতে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছি অনেকক্ষণ ধরে। হঠাৎ মাহিন আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভূত গলায় বলল, “কেন যেন মনে হচ্ছে কবরটার ভেতর কিছু পাবো না।”
“মানে?” অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
“জানি না আসলে......” বিভ্রান্তের মত দেখালো ওকে। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ড্রিলিং করতে থাকা লোকটার গলা শুনলাম, “প্রফেসর- কাজ শেষ। পাথরটা সরানো যাবে এখন।”
মাহিন তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে ছুটল পানি ভেঙ্গে সমাধীটার দিকে। আমিও পেছন পেছন এলাম। পা জমে যাচ্ছে ঠান্ডায়। প্রফেসর হাত নেড়ে ইসারা করলেন পাথরটা সরাতে সমাধীর ওপর থেকে।
বড় দুটো শাবল দিয়ে চাড় মেরে ধীরে ধীরে সরাতে লাগল আয়তাকার পাথরটা। আমি মাহিনের দিকে তাকালাম। উত্তেজিত মুখে তাকিয়ে রয়েছে সমাধীটার দিকে। আমিও কৌতুহলি মুখে তাকালাম। দ্বিতীয় এঞ্জেলো সাহেবের কংকাল দেখতে কেমন হবে আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম।
ধীরে ধীরে ইঞ্চি ইঞ্চি করে পাথরটা সরতে থাকল। ভীষণ ভারী পাথরটা। তিন জন লোক মিলে ঠেলছে শাবল দুটো। সরতে অনেক সময় নিচ্ছে। প্রায় তিন চার মিনিট লাগিয়ে পাথরটা সরানো হল। মাহিন উৎসুক মুখে এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিতেই পালটে গেল মুখোভাব। আমি নিজেও এগিয়ে গেলাম। ভেতরে প্রচুর মাকড়শার জাল আর ময়লা। কোনো কংকাল কিংবা লাশ নেই! তার বদলে রয়েছে বিশাল একটা মোটা ড্রয়িং খাতার মত একটা খাতা। কালো হয়ে এসেছে কভারটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে। আমার পাশে এসে গলা বাড়িয়ে উঁকি দিলেন প্রফেসর নারায়ণ। অবাক গলায় বললেন, “লাশের বদলে ডায়েরী? তারমানে দ্বিতীয় এঞ্জেলোর আসল কবর এটা না?” কন্ঠ শুনেই বোঝা গেল খুব হতাশ হয়েছেন।
মাহিন আস্তে আস্তে বলল, “যখন সবাই ড্রিল মেশিন নিয়ে কবর খোলায় লেগে গেল- তখনই আন্দাজ করেছিলাম এটাতে দ্বিতীয় এঞ্জেলোর লাশ থাকবে না। একে তো সীল করা কবর, তার ওপর এত ভারী পাথর উনি নিজের ওপর টেনে নিতে পারতেন না একা একা কখনই। কারণ উনিই শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। একা একা কবরে ঢুকে পাথর টেনে নেয়া ওনার পক্ষে অসম্ভব।”
আমি মাহিনের দিকে তাকালাম। জ্বলজ্বল করছে ওর চোখ দুটো। একপাশে ফেলে রাখা প্রফেসর নারায়ণের ব্রাশ তুলে নিল কাঁপা হাতে। কবরের ভেতরের খাতাটার কভারটা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করল খুব সাবধানে।
পরিষ্কার করার পর কভারের নামটা বেরিয়ে এল। গুঁটিগুঁটি হাতে রূপালি অক্ষরে খুব আগের বাংলা লিপিতে লেখাঃ-
“মাইকেল অঞ্জন মিত্তির
জয়পুর, বিহার।”
খুব সাবধানে খাতাটা দু হাতে তুলে নিল মাহিন। সম্মোহিতের মত বিড়বিড় করে বলল, “তাহলে দ্বিতীয় মাইকেল এঞ্জেলোর আসল নাম – অঞ্জন মিত্তির! বাঙ্গালী!!”
প্রথম পাতাটা ওল্টাতেই চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল তেল রঙ্গে আঁকা ছবি- একটা চেয়ারে বসে জমিদারদের মত তাকিয়ে রয়েছে একজন বামন কিশোর। মুখে শিশুর সারল্য মাখা হাসি...... দ্বিতীয় এঞ্জেলো! যার আসল নাম অঞ্জন মিত্তির।
(চলবে)

লেখকের নামঃ মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব।
From: Textile Engineering College, Chittagong
ফেসবুক আইডিঃ Nithor Shrabon Shihab
ই-মেইল আইডিঃ Rudroaimel@yahoo.com
Top of Form
Bottom of Form
Top of Form
[pic][pic][pic][pic]
Bottom of Form

Similar Documents

Free Essay

Ghost Story

...various resorts around the water in both states. After World War II and till this day, the area went under major renovations to change from a resort area to year round residences. A fellow friend of mine and resident of Bergen County was kind enough to share her experiences with the supernatural, all which occurred right under her own roof. It is not surprising that an area with so much history and life would generate ghostly phenomena. What makes this ghost story so interesting is that it is so unexpected. Sitting on a cold bench, right before practice, I figured I would ask around to see if anyone had any good ghost stories to tell. Little did I know that I would find one that would send chills down my spine. As the oldest sibling growing up in their two story house in Bergen county, Dana remembers a lot of her childhood as well as her brothers, who is only a couple of years younger. She made known that her house was in fact a vacation home that had the luxury of having the lake right in the backyard. It is a two-story house and after moving in they decided to put on addition. Prior to the addition and back when it was just a vacation home, a family who had two little boys occupied the house. The events that took place...

Words: 1084 - Pages: 5

Free Essay

Ghost Stories

...office for support him with international workers from neighbor countries. Nils may contract with another construction party to work together with the existing one. In this way, Nils can finish the job on time with higher cost. Or simply outsource a firm. Superstitions and ghost stories going around the region is another dimension of the challenge. Nils has to find a way to deal with it too. Maybe he can ask hotel management to hire a temporary specialist to change the image. 2) What would you do and why? Discuss briefly. (10 marks) I am from Turkey and I am very familiar to superstitions which imposes behavior of publics. In these kind of cases, it is not so likely and easy to convince a person to believe there is no such thing as ghost. Instead of fighting against paranormal with rationalist point of view, I would come up with an idea from Thai’s own belief set. In other words, Ghost stories could be a part of Thai culture and most of the people may believe the existence of evil spirits. However 95% of the Thailand population follow Buddhism religion which encourages people to approach to those evil spirits with kindness and goodness. Buddha himself teaches his followers not to scare from these ghosts. If I were Nils, I would use Buddhist religion against Thai culture and tradition. Moreover, I would start a campaign to attract people thanks to the holiness of the region. If it is necessary to be cruel, I can even...

Words: 345 - Pages: 2

Free Essay

The Three Ghost Stories

...Three Ghost Stories Charles Dickens This eBook was designed and published by Planet PDF. For more free eBooks visit our Web site at http://www.planetpdf.com/. To hear about our latest releases subscribe to the Planet PDF Newsletter. Three Ghost Stories THE SIGNAL-MAN ‘Halloa! Below there!’ When he heard a voice thus calling to him, he was standing at the door of his box, with a flag in his hand, furled round its short pole. One would have thought, considering the nature of the ground, that he could not have doubted from what quarter the voice came; but instead of looking up to where I stood on the top of the steep cutting nearly over his head, he turned himself about, and looked down the Line. There was something remarkable in his manner of doing so, though I could not have said for my life what. But I know it was remarkable enough to attract my notice, even though his figure was foreshortened and shadowed, down in the deep trench, and mine was high above him, so steeped in the glow of an angry sunset, that I had shaded my eyes with my hand before I saw him at all. ‘Halloa! Below!’ From looking down the Line, he turned himself about again, and, raising his eyes, saw my figure high above him. ‘Is there any path by which I can come down and speak to you?’ 2 of 97 Three Ghost Stories He looked up at me without replying, and I looked down at him without pressing him too soon with a repetition of my idle question. Just then there came a vague vibration in the...

Words: 21786 - Pages: 88

Premium Essay

El Paso Ghost Stories

...El Paso is home to many tales of ghostly spirits and haunted locations, ranging from schools, hotels, and hospitals. El Pasoans have an obsession and fixation on terrifying paranormal stories, with thousands of eye witness testimonies of paranormal experiences on the internet. Although some of these tales are false, there are some stories that date back till the 1900s, and people keep encountering paranormal activities in these specific places till this day. One of these stories is none other than the urban legend of El Paso High School, being one of the oldest operating high schools in El Paso, “the lady on the hill”, as nicknamed by El Pasoans, is filled with history and paranormal activity dating back 35 years ago. Eye witness testimonies have revealed that El Paso High Schools fourth floor, the auditorium, and the tunnels it contains are where all the legends started and prove to be the one of the scariest...

Words: 1067 - Pages: 5

Premium Essay

Mrs Grose Ambiguity

...Henry James’s book, The Turn of the Screw, is a mysterious, yet well written novel that has captivated readers since 1898. Its complex characters create a dramatic tone that adds suspense to the novel. James leads the readers to draw conclusions about the characters that lure them into the plot so they will further enjoy the story. Mrs. Grose seems to be a simple character, but is essential to the novel; she possesses a degree of ambiguity that adds to the complexity of her character and of the novel. Mrs. Grose is a simple woman, a foil to the governess, and an insight to critical information, however each one of these defines her complex nature. Mrs. Grose’s ambiguity exposes her complex identity that is hidden by her simple nature. When...

Words: 1178 - Pages: 5

Premium Essay

Karmin The Ghost Story

...Boom! Gracie jumped as the ghost,Karmin ran across her tv screen,popcorn flying all over her room. “That would never happen in real life ,this is a terrible movie”she said as she turned off the tv.Gracie got into bed and just layed there thinking about the movie as she fell into a deep sleep.Every night she has crazy dreams,she has a bold imagination.When she awoke she was very confused,it was dark and she couldn’t see anything.She stood up off the freezing dirty concrete ground feeling around for her light switch.She found it across the room and turned it on.She screamed when she saw her reflection in the huge mirror causing the hair on the back of her neck to stand up.Then she heard a noise,it was like someone running up wood stairs. Then she saw it,Karmin the ghost from the movie she was watching a few short hours ago.Gracie was so scared,she just stood there in shock.Then she screamed. Gracie’s point of view...

Words: 448 - Pages: 2

Premium Essay

Conflict Killed the Cat

...die. Eventually everyone’s father dies. Hamlet is sad and angry at the same time. I think that Hamlet is resentful towards his mother, Gertrude. Hamlet feels that his mother has not mourned his father appropriately, that her mourning was too brief. He is also angry with her and his uncle for getting married. Hamlet feels that the marriage was too soon after the late King’s death. I think Hamlet is also bothered by the fact that Gertrude married her brother-in-law. Hamlet views it as being incestuous. There are more layers added to Hamlet’s mind. The ghost of his father appears to him in the fifth scene of the first act. The ghost tells Hamlet that he was murdered by his own brother. The ghost accuses King Claudius of pouring poison in his ear while he slept in the garden one afternoon. Hamlet is overwhelmed with this revelation. “O, my prophetic soul! My uncle!” (Shakespeare, 1600, p. 928). The ghost tells Hamlet that he must avenge his...

Words: 861 - Pages: 4

Free Essay

Hamlet

...of Hamlet, the ghost of King Hamlet comes back to the kingdom to tell his son, Hamlet, how he did not suffer a natural death, but rather was sinfully murdered. His death occurred because his own brother and Hamlet’s uncle, Claudius, poured poison down King Hamlet’s ear while he was asleep, so that he could take over the Royal Throne of Denmark. King Hamlet’s ghost then commands Hamlet to fulfill his duty and seek revenge for him by killing Claudius. The ghost reappears later in the play, since Hamlet has still not managed to kill Claudius up to this point, and reminds him to stay focused on fulfilling the commandment he has given him. The ghost claims that he has come back to whet, or sharpen, his request for the death of Claudius, which seems to have been blunted, or dulled, by Hamlet’s actions. Hamlets purpose has been blunted throughout the play in many ways, and he fails to quickly take action for avenging the death of his father. Hamlet is not sure whether he believes the story of King Hamlet’s murder, one of the reasons for Hamlet’s inaction. Hamlet thinks that, “The spirit that [he] have seen may be a and the hath power T’ assume a pleasing shape…” (II. 627-629). Hamlet thinks that an evil spirit may have taken the ghostly form of his late King and father and this causes him to have second thoughts on what this ghost has commanded him to do to Claudius. He thinks that there is a chance that Claudius may not have murdered his father, and that the ghost may just be trying...

Words: 947 - Pages: 4

Premium Essay

Death In Hamlet Research Paper

...Hamlet’s plan, struggle, and inevitable death Shakespeare’s Hamlet is a very controversial story of how the entire royal family of Denmark was wiped out. Hamlet is doomed to die, but in his death Denmark would be purged of its evil. Through murderous plots and schemes, it is revealed that King Hamlet’s brother Claudius murdered him. Hamlet is the son of the late King Hamlet, he was supposed to be the next king, but Claudius quickly married Hamlet’s Mother to take the crown. During the play, it is shown why Hamlet is a considered a revenge tragedy. Throughout the play Hamlet’s view of death prevents him from taking action, but through accepting his fate he is able to finally kill his uncle, without thinking about his death. After Hamlet meets...

Words: 1871 - Pages: 8

Premium Essay

Hamlet Allusions

...Jake Nevins 3/15/13 English foundations honors 2 Mrs. Muratori Research paper hamlet INTRO Hamlet is a tragedy by William Shakespeare where the main character, Hamlet, Thesis: In William Shakespeare’s Hamlet mythological and biblical allusions informs us of Hamlet’s inevitable fall. Throughout the play, Hamlet uses many mythological allusions to show his feelings towards other characters such as Claudius, Gertrude and the old king as well as inform us of his “fall”. After Queen Gertrude is re-married to Claudius, Hamlet shows his feelings when he compares the late King Hamlet to Claudius. Hamlet tells his mother, "So excellent a king, that was to this / Hyperion to a satyr." (Ham. I ii 139-40). This allusion shows Hamlet's high praise for his dead father as well as his extreme hatred for Claudius. Hyperion is the Greek sun god. By comparing his dead father to Hyperion, Hamlet does not just connect his father to a titan, but also the source of light and with that hope and happiness. The sun is what also sustains life. Hamlet is alluding to how his father was a great king, a strong and dynamic leader that cared for his family and strength of Denmark. The sun also symbolizes warmth and glory which are qualities reflected upon his father. A good king, like the sun, is also a keeper of the peace who watches from above. It is evident that Hamlet greatly loved his father and is stunned by how his mother quickly moved on after his death to marry...

Words: 1095 - Pages: 5

Free Essay

Ghost

...The themes in the Canterville Ghost The Canterville Ghost is a ghost story. Ghost stories belong to the genre called horror literature, whose purpose is to scare the reader with situations that cause horror or fear. The most common technique is suspense, the slow insinuating of a doubt or of a frightening revelation, which keeps the reader interested.    This story can be defined an inverted ghost story, because a lot of elements are different from the traditional ones. The main difference is the fact that Mr Otis is not scared by the ghost, while usually people should be. Moreover, the Ghost itself is frightened by the Otis twins.    There is also comic relief bordering on farce, including buckets of water balanced on half-open doors. But the story has a dark centre. The crime and retribution which led to the haunting is ghastly, and this is really not a comedy at all, but a tale of redemption through the power of love. The innocent girl of the family, appropriately called Virginia, prays for the ghost and endures terrifying if unnamed experiences to release the ghost.   Also, The Canterville Ghost is both a parody of the traditional ghost story and a satire of the American way of life. Wilde obviously intends to satirize American materialism, but he pokes fun at English traditional culture as well. American vs. British society: “The Canterville Ghost” is a study in contrasts. Wilde takes an American family, places them in a British setting, then, through a series...

Words: 361 - Pages: 2

Premium Essay

Theme Of Ambiguity In The Turn Of The Screw

...Turn of the screw was published in 1898 and written by Henry James. It is a Gothic novella detailing the disturbing and ambiguous events that a young governess experiences during her time at Bly, the country house is which the children and their caretakers live. From the beginning of her stay at Bly and up until the end of the novella, the young Governess is plagued by visions of spectral figures (a man named Quint and a woman called Miss Jessel) that seem to take particular interest in the Governesses young charges( a boy named Miles and his younger sister named Flora). It is hinted, by the head of the house, that the spectral figures, which were previous caretakers of the children before their ambiguous deaths, engaged in illicit activities that led to the corruption of the children; corruption of innocence coincidentally being the main worry of the Governess (as well a main literary theme of the book) and she goes to great lengths to protect them from such. Also prevalent throughout the novella is the theme of ambiguity and uncertainty. The Governess is constantly led, whether by maid staff or by her own introspection, to question if the apparitions she saw are real or just simply delusions generated by her psyche. The latter of which would hint at insanity. Another thing that contributes to the theme of ambiguity and uncertainty is the children’s seemingly perfect behavior and exceptional innocence. Accounts from the older child’s school contradict the general consensus of...

Words: 434 - Pages: 2

Premium Essay

Examples Of Mental Illness In Hamlet

...In the book, Hamlet, some of the characters show symptoms of having mental health disorders. In the story the king gets killed and Hamlet, his son, wants to get to the bottom of it. The king's ghost comes back to give Hamlet hint to how he was killed. Hamlet figures out it was his uncle that poisoned the old king so he is now the new king, Claudius. Claudius has married Hamlet's mother, Gertrude and took the throne. Claudius killed him by dropping poison in his ear. Hamlet then turns a little crazy and starts seeking revenge on his uncle. He starts acting weird and mistreating his girlfriend to bring suspicion to him by Claudius. He kills his love, Ophelia's father, in the process of seeking revenge. Ophelia then starts showing very depressed...

Words: 506 - Pages: 3

Free Essay

Ghost of Bd

...Chapter-1 | 3 | 2.1 | What is Ghost | 3 | 2.2 | Frequently Repetitive Ghost Character in Bengali Literature | 3 | 3 | Chapter-2 | 5 | 3.1 | The Impact of Ghost Story in Bengali Literature | 5 | 3.2 | Some Stories of Ghosts in The Context of Bangladesh | 7 | 3.2.1 | The Ghostly Footsteps | 7 | 3.2.2 | Shahin Er Golpo | 8 | 4 | Chapter-3 | 9 | 4.1 | The Impact of Ghost Story in Bengali Cinema | 9 | 5 | Conclusion | 10 | 6 | References | | Index Abstract: There are many cultures in the world. The most common part of every culture is stories, and we will find Ghost stories which is available in every culture. Our culture is Bengali culture. Ghost stories are the noticable part of our literature. Everyone of all age loves Ghost stories. Bengali Ghost stories are little different from other because of the culture, environment, religion and the way of life. Ghost stories have great effect on our film industry and drama. Ghosts are an important part of folklore in Bengal. Fairy tales, both old and new often use the concept of ghosts. In modern day Bengali literature as well, references to ghosts may be often found. 1. Introduction Ghost stories belong to the genre called horror literature, whose purpose is to scare the reader with situations that cause horror or fear. The most common technique is suspense, the slow insinuating of a doubt or of a frightening revelation, which keeps the reader interested. Ghosts are an important part of folklore in Bengal...

Words: 3157 - Pages: 13

Free Essay

People's Belief in Ghost

...People’s Belief in Ghost Have you ever walked down a dark alley at midnight? If so, maybe you started hearing strange sounds or voices without seeing someone there. Suddenly, a dog starts barking at nothing and you felt a cold shiver down your backbone for no apparent reason. If you experienced these things, it could be a good reason to believe in ghosts. Theoretically, a ghost is the soul of a person who has died and somehow has gotten stuck between two worlds. Normally, they do not know that they are dead and they still live amongst us. A ghost can be perceived by the senses of living people, such as by sight (apparition), hearing (sound, voice) and touch. Many stories have documented that ghosts are real but many people think they are just people’s illusions. Ghost is a popular topic throughout the millennium. They have appeared in numerous works and art forms, from the play “Macbeth” by Shakespeare to the Christian Bible and even some folk ghost stories have been released. The existence of ghosts was still a big mystery of mankind over hundreds of years. Some people believe in ghosts while others do not. To convince people of the existence of ghosts, there are several stories that can be told. One of them is the United States White House’s haunted story. The White House, where the United States President lives and work, has long been considered as the worst haunted place in that country. Harry Truman, America’s 33rd president, had affirmed that...

Words: 1922 - Pages: 8